বছর তিনেক আগে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর পাথরডুবি ইউনিয়নের সাবেক ছিটমহল দীঘলটারী দক্ষিণ বাঁশজানী গ্রাম পরিচিতি পায় নারী ফুটবলাদের গ্রাম হিসেবে। গ্রামকে এই পরিচিতি এনে দেয় বাঁশজানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একদল মেয়ে।
২০১৮ সালে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপে তৃতীয় হয় দলটি। কাপ না জিতলেও কোয়ার্টার ফাইনাল ও স্থান নির্ধারণী ম্যাচে হ্যাটট্রিক করে দেশসেরা খুদে ফুটবলার হয় বাঁশজানির স্বরলিকা পারভীন। তার হাতে সেদিন পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সদ্য বিলুপ্ত ছিটমহলে বাংলাদেশিদের পাওয়া প্রথম পুরস্কার স্বরলিকা।
সেই স্বরলিকার এখন ফুটবল মাঠ দাপিয়ে বেড়ানোর কথা থাকলেও স্বামীর সংসারের দায়িত্ব চেপেছে কাঁধে। হাইস্কুলের গণ্ডি না পেরোতেই বিয়ে হয় স্বরলিকার। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে এমন বিয়ের কারণে নিবন্ধনও (রেজিস্ট্রি) করেনি পরিবার। ধর্মীয় রীতিতে ৫ মার্চ মোটর মেকানিক কামরুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে হয় তার।
স্বরলিকার মতো তার দলের সাত ফুটবলারও এখন গৃহবধূ। তাদের পরিবারের দাবি, বাল্যবিয়ে দেয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ দারিদ্র্য। সংসারের খরচ কমাতে তারা মেয়েশিশুদের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন।
স্বরলিকা নিউজবাংলাকে বলে, ‘ইচ্ছে ছিল জাতীয় দলে খেলার। কিন্তু এলাকার লোকজন নানা কথা বলত। বলত, মেয়েরা ফুটবল খেললে বিয়ে হবে না, ভালো ছেলে পাওয়া যাবে না।’
স্বরলিকার বাবা শহিদুল ইসলাম বলেন, কৃষিকাজ করে পাঁচজনের সংসার চালান তিনি।
‘সীমান্ত এলাকা, এডে কোনো কামকাইজ নাই। করোনার জন্য অভাব আরও বেশি হইছে। ভালো ঘর পাইছি। ডিমান্ড ছাড়াই বিয়া দিছি মেয়ের।’
স্বরলিকাদের ফুটবল দলের আরেক ফুটবলার লিশামনির জন্য পাত্র খুঁজছে পরিবার।
লিশামনির মা আমিনা বেগম বলেন, ‘এই তিন বছর থাকি কেউ খোঁজ নেয়নি। স্কুল বন্ধ, পড়াশুনা নাই, মেয়েরা বসি থাকে। ভালো ছেলে পাইছে স্বরলিকার বিয়ে দিছে ওর বাপ-মা। আমিও ভালো ছেলে পাইলে আমার মেয়েকেও বিয়ে দেমো। হামারতো সামর্ত (সামর্থ্য) নাই যে, মেয়েকে পড়াশুনা করামো আর খেলোয়াড় বানামো।’
বাঁশজানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফুটবল দলটিকে প্রশিক্ষণ দেন আতিকুর রহমান খোকন।
আক্ষেপভরা কণ্ঠে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের অগোচরেই মেয়েদের বিয়ে দিচ্ছে তাদের পরিবার। এখন তাদের খেলার মাঠে থাকার কথা। অথচ অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার কারণে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। ওদের কারও মুখের দিকে তাকানো যায় না। কতগুলো সম্ভাবনা চোখের সামনেই শেষ।’
বাঁশজানি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কায়সার আলী বলেন, ‘করোনার সময় স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর তেমন নেয়া সম্ভব হয়নি। অনেকের বিয়ের খবর পরে জানতে পেরেছি। বিয়ের সময় জানতে পারলেও বিয়ে আটকানো যেত। আসলে বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর আমাদের কিছু করার থাকে না।’
জেলার রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের সীমান্তঘেঁষা বাগবান্ধা গ্রামেও ঘটছে এমন বাল্যবিয়ের ঘটনা।
গ্রামের এক বাড়িতে পাওয়া গেল ১৩ বছরের রূপালী খাতুনকে। শ্বশুরবাড়ির মাটির চুলোয় মাছ ভাজতে ভাজতে সে কথা বলে নিউজবাংলার সঙ্গে।
রূপালী জানায়, পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় গেল ডিসেম্বরে বিয়ে হয়েছে। তার স্বামী বাসের হেলপার।
দিনমজুর হেলাল উদ্দিনের মেজো মেয়ে রূপালী। তার বড় বোন সোনালীর বিয়ে হয় ১২ বছর বয়সে।
সদর ইউনিয়নের চাকতাবাড়ি গ্রামের রৌমারী-ঢাকা মহাসড়কের পাশে সরকারি একটি আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করেন তাদের বাবা-মা ও আরও পাঁচ ভাইবোন।
রূপালী বলে, ‘আমার বাবা-মায়ের থাকার জমি নেই। অভাবে পড়েই বিয়ে দিছে। স্কুলও বন্ধ। খাবারের সমস্যা। এ জন্যই বিয়ে দিছে।’
রূপালীর বাবা হেলালকে পাওয়া গেল ওই আশ্রয়কেন্দ্রে। তিনি বলেন, ‘কাজকর্ম নাই। মেয়েকে যত বড় করমো, ততই ডিমান্ড বাড়বে। এখন স্কুলও বন্ধ। অভাবের মধ্যে খরচ বেশি হয়। সে জন্য মেয়েকে কম বয়সেই বিয়ে দিয়েছি। যৌতুক ৩০ হাজার টাকার মধ্যে নগদে ১৫ হাজার টাকা দিয়া বেটি পার করছি। বাকি টাকা আস্তে আস্তে দেমো।’
প্রশাসনের নজর এড়িয়ে এসব বাল্যবিয়ে কীভাবে হচ্ছে, জানতে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ বলেন, পরিবারগুলো তথ্য গোপন করে অন্য উপজেলায় গিয়ে বিয়ে দেয়। ভুয়া জন্মসনদ বানিয়ে নেয় অনেকে। এ জন্য পরে বিপদেও পড়তে হয়। কোনো কারণে বিয়েবিচ্ছেদ করতে হলে কাগজপত্রের অভাবে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে না অভিভাবকরা।
রৌমারীর যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরবেশ আলী নিউজবাংলাকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কয়েক মাসে বাল্যবিয়ে বেড়েছে। লুকিয়ে অন্য উপজেলায় নিয়ে বিয়ে দেয়া হচ্ছে। আবার দেখা যায়, শুধু হুজুর ডেকেই কলেমা পড়িয়ে বিয়ে দেয়া হচ্ছে।
ভূরুঙ্গামারীর পাথরডুবি ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরফান আলী মনে করছেন সীমান্তবর্তী এই এলাকার বাসিন্দাদের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা বাড়ানো গেলে বাল্যবিয়ে কমে আসবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপক কুমার দেব শর্মাও বললেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিয়ে হওয়ার পর তারা খবর পান না। বিয়ের সাক্ষী বা প্রমাণ পাওয়া যায় না বলে আইনি ব্যবস্থাও নেয়া যায় না।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বাল্যবিয়ে ঠেকাতে কড়া নজর রাখার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
বেসরকারি সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম অফিসের হিসাবে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত কুড়িগ্রামে বাল্যবিয়ে হয়েছে ২ হাজার ৭৬১টি।
এর মধ্যে কুড়িগ্রাম সদরে ৬৪২টি, রাজারহাটে ৭২টি, উলিপুরে ২২৫টি, চিলমারীতে ১৩৮টি, রৌমারীতে ৮০টি, রাজিবপুরে ৪৭টি, নাগেশ্বরীতে ১০৭৮টি, ফুলবাড়ীতে ২৮২টি ও ভূরুঙ্গামারীতে ১৯৭টি বাল্যবিয়ে হয়। এর মধ্যে ১ হাজার ৪৭টি বিয়ে ঠেকানো গেছে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে।
সংস্থাটির কুড়িগ্রাম কার্যালয়ের ‘বিল্ডিং বেটার ফিউচার ফর গার্লস’ প্রকল্পের প্রকল্প কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, করোনা পরিস্থিতিতে জরিপ ব্যাহত হওয়ায় জেলায় বাল্যবিয়ের সব হিসাব রাখা যায়নি। বাস্তবে আরও বেশি বাল্যবিবাহ হয়েছে।
করোনাকালে কুড়িগ্রামে বাল্যবিয়ে বাড়ার কথা স্বীকার করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনও।
কুড়িগ্রাম-৪ (রৌমারী, রাজিবপুর ও চিলমারী) আসনের এই সংসদ সদস্য নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আর যাতে বাল্যবিয়ে না হয় সে জন্য ইউএনও ও চেয়ারম্যানরা সজাগ আছেন। আর কোনো বাল্যবিয়ে হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:এক সপ্তাহ পর শুরু হবে এশিয়া কাপ। সংযুক্ত আরব আমিরাতে মহাদেশীয় টুর্নামেন্ট খেলতে যাওয়ার আগে প্রস্তুতিটা দারুণভাবে সারছে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে নেদারল্যান্ডসকে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই ২-০ ব্যবধানে সিরিজ হারিয়েছে বাংলাদেশ। এতে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে হ্যাটট্রিক সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ।
লিটন দাসের অধিনায়কত্বে এমন পারফরম্যান্সে খুশি হয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। এমন ধারাবাহিকতা এশিয়া কাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দারুণ কাজে দেবে বলে জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি।
সিলেটে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় আমিনুল বলেছেন, ‘পরপর তিনটা সিরিজ জিতলাম আমরা। আমার কাছে মনে হয়েছে ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস ছিল অনেক।
ধারাবাহিক উন্নতির দিকটা আমরা দেখতে পাচ্ছি। এই আত্মবিশ্বাস হয়তো ইনশাআল্লাহ এশিয়া কাপেও কাজে লাগবে।’
আত্মবিশ্বাসটা ধরে রেখে ক্রিকেটাররা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও দারুণ কিছু করবেন বলে জানান আমিনুল। তিনি বলেছেন, ‘তাদের এই আত্মবিশ্বাস সামনের ম্যাচগুলোতে কাজে লাগবে। শুধু এশিয়া কাপ না, ২০২৬ সালে বিশ্বকাপও আছে। আশা করি, ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাসটা ধরে রাখা যাবে।’
কোনো ম্যাচ না জিতলেও বাংলাদেশের পকেটে ঢোকবে ৩ কোটি টাকা
ক্রীড়া ডেস্ক
আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর ভারতে মাঠে গড়াবে ২০২৫ নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ। টুর্নামেন্টের কিছু ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে শ্রীলঙ্কায়ও। এই টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে সোমবার প্রাইজমানি ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)।
সেখানে জানানো হয়, এবারের টুর্নামেন্ট শুধু অংশগ্রহণ করলেই আড়াই লাখ ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ কোটি ৩ লাখ টাকা পাবে দলগুলো। তাই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ যদি কোনো ম্যাচ নাও জিতে, তবুও এই বিপুল অঙ্কের অর্থ পকেটে ঢোকবেই।
আইসিসি সোমবার এক মিডিয়া বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এবারের বিশ্বকাপে ১ কোটি ৩৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৬৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকার প্রাইজমানি থাকছে, যা নারী বিশ্বকাপে রেকর্ড। সবশেষ আসরের তুলনায় প্রাইজমানি বেড়েছে ২৯৭ শতাংশ বেড়েছে।
বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন দল পাবে ৪৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। রানার্স-আপ দল পাচ্ছে ২২ লাখ ২৪ হাজার ডলার বা ২৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
দুই সেমিফাইনালিস্ট পাচ্ছে ১১ লাখ ২০ হাজার ডলার করে। বাংলাদেশি মুদ্রায় সেটা ১৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আট দলের টুর্নামেন্টে পঞ্চম, ষষ্ঠ এই দুই দল পাচ্ছে ৭ লাখ ডলার করে (৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা)। সাত ও আট নম্বরে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করা দল দুটির প্রত্যেকেই পাচ্ছে ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার করে। বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
গ্রুপ পর্বের প্রতিটি ম্যাচ জয়ের জন্য দলগুলো পাবে ৩৪ হাজার ৩১৪ ডলার করে। বাংলাদেশি হিসেবে ৪১ লাখ ৬১ হাজার টাকা।
বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড- এই আট দল নিয়ে রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে হবে ২০২৫ নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ। প্রথম রাউন্ডের ২৮ ম্যাচ, দুই সেমিফাইনাল ও ফাইনালসহ টুর্নামেন্টের ৩১ ম্যাচ হবে পাঁচ স্টেডিয়ামে। কলম্বো, ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামের পাশাপাশি ইন্দোরের হোলকার, গুয়াহাটির বর্ষাপাড়া, বিশাখাপত্তনমের ওয়াই এস রাজাশেখর রেড্ডি স্টেডিয়ামে নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ হবে।
চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর মাঠে গড়াবে নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ। আসন্ন এই বৈশ্বিক টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে প্রাইজমানি ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। আগের আসরের তুলনায় এবার প্রাইজমানি বেড়েছে চার গুণ। যা পুরুষদের সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপের চেয়েও বেশি।
এবারের নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের মোট পুরস্কার ধরা হয়েছে ১৩.৮৮ মিলিয়ন ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৫৩ কোটি টাকা। নারীদের এই বিশ্বকাপের পুরস্কার অর্থ ২০২৩ সালের পুরুষদের ওয়ানডে বিশ্বকাপের চেয়েও বেশি। সেবার পুরুষদের আসরে প্রাইজমানি ছিল ১০ মিলিয়ন ডলার।
আইসিসি চেয়ারম্যান জয় শাহ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এটি নারী ক্রিকেটের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। প্রাইজমানির এই ব্যাপক বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা দেখাতে চাই, নারী ক্রিকেটাররা পুরুষদের সমান মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য।’
উল্লেখ্য, ২০২২ নারী বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া পেয়েছিল মাত্র ১.৩২ মিলিয়ন ডলার। এবার চ্যাম্পিয়নদের জন্য প্রাইজমানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৪৮ মিলিয়নে। অন্যদিকে, ২০২৩ সালে ভারতের মাটিতে পুরুষ বিশ্বকাপ জিতে অস্ট্রেলিয়া পেয়েছিল ৪ মিলিয়ন ডলার, যা এবার পেছনে ফেলল নারী ক্রিকেট।
কে কত প্রাইজমানি পাবে
চ্যাম্পিয়ন: ৪.৪৮ মিলিয়ন ডলার, রানার্স-আপ: ২.২৪ মিলিয়ন ডলার, সেমিফাইনালিস্ট: ১.১২ মিলিয়ন ডলার করে,
গ্রুপ পর্বে প্রতি ম্যাচ জয়ের পুরস্কার: ৩৪,৩১৪ ডলার, ৫ম ও ৬ষ্ঠ স্থানে থাকা দল: ৭ লাখ ডলার করে, ৭ম ও ৮ম দল: ২.৮ লাখ ডলার করে, প্রত্যেক অংশগ্রহণকারী দল: ২.৫ লাখ ডলার
অদ্ভুত কারণে অস্ট্রেলিয়ায় একটি খেলার মাঠ ১ মাসের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সংরক্ষিত প্রজাতির একটি দেশি পাখি সেই মাঠে ডিম পাড়ার কারণেই মূলত এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ইয়াহু নিউজের বরাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল জানিয়েছে, গত সপ্তাহে ক্যানবেরা থেকে ২০ মিনিট দূরত্বের জেরাবম্বেরা রিজিওনাল স্পোর্টস কমপ্লেক্সে ফুটবল খেলতে গিয়ে খেলোয়াড়রা জানতে পারেন, মাঠের একদম মাঝখানে এক প্লোভার পাখি ডিম দিয়েছে। ফলে তাদের ম্যাচ সরিয়ে নেওয়া হয় পাশের আরেকটি মাঠে।
প্লোভার পাখি সাধারণত বাচ্চা ফোটানোর পর অত্যন্ত রক্ষণশীল এবং ভয়ানকভাবে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠার কারণে পরিচিত। এ সময় তারা ডানা ঝাপটে, তীব্র শব্দ করে এবং ঝাঁপিয়ে পড়ার মাধ্যমে বাসার কাছ থেকে অনধিকার প্রবেশকারীদের দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করে।
স্থানীয় কাউন্সিল ইয়াহু নিউজ অস্ট্রেলিয়াকে জানায়, আঞ্চলিক স্পোর্টস কমপ্লেক্সের কৃত্রিম ফুটবল মাঠে একটি প্লোভার ডিম দিয়েছে। যে কারণে স্থানীয় বন্যপ্রাণী সংস্থা ওয়াইল্ডকেয়ারের পরামর্শে ক্লাব ম্যাচগুলো পাশের মাঠে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ছোট নথজিরিয়া বা ছোট জিরিয়া নামে পরিচিত এই পাখির চোখ দুটো হলুদ বৃত্তে ঘেরা বলে এদের ইংরেজি নাম ‘লিটল রিংড প্লোভার’।
জানা গেছে, পাখিসংক্রান্ত কারণে মাঠটি সর্বোচ্চ ২৮ দিন পর্যন্ত বন্ধ থাকতে পারে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিল বলেছে, ‘আমাদের দেশি পাখি প্রজাতিগুলো রক্ষায় সক্রিয় হতে হবে। ডিম সরানো প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞদের আনতে হবে এবং অনুমতি নিতে হবে।’ এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে স্থানীয় ফুটবল দলগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে কাউন্সিল। পাশাপাশি তারা খেলা ও অনুশীলন সরিয়ে নিতে সহযোগিতা করেছে এবং কর্তৃপক্ষকে বিকল্প মাঠের ব্যবস্থাও করে দিয়েছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সফলতম ওপেনার ও সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল অবশেষে নিশ্চিত করেছেন, তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় থাকলেও এবার প্রথমবারের মতো সরাসরি জানালেন, ‘এবার নির্বাচন করছি আমি।’ তামিম বলেন, ‘আমি মনে করি, আমার ফোকাস থাকা উচিত সর্বোচ্চ দুটি বা তিনটি বিষয়ের ওপর। এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হলো- বাংলাদেশ ক্রিকেটের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো।’ তামিমের মতে, স্টেডিয়াম নয়, প্রাধান্য পাওয়া উচিত ‘এক্সিলেন্স সেন্টার’ গড়ে তোলায়। তার ভাষায়, ‘আপনার এক্সিলেন্স সেন্টার না থাকলে ১০টি স্টেডিয়াম থেকেও কোনো লাভ নেই।’ এছাড়া স্কুল ক্রিকেট নিয়ে বিসিবিকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ‘আমাদের স্কুল ক্রিকেট কাঠামো খুবই দুর্বল। বিসিবির উচিত এখানে বিনিয়োগ করা,’ বলেন তামিম।
সভাপতি হতে চান কি না, এমন প্রশ্নে সরাসরি জবাব না দিলেও তামিম ইঙ্গিত দেন, পরিচালকের পদে নির্বাচিত হয়ে যদি যথেষ্ট সমর্থন পান, তবে সভাপতির পদে লড়াই করতেও পিছপা হবেন না। ‘আমি মনে করি, ক্রিকেট বোর্ডে এলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো ক্ষমতাও আমার থাকা উচিত,’ বলেন তিনি। বিসিবির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে তামিম বলেন, ‘কে নতুন আইডিয়া নিয়ে আসছেন, কাকে ক্রিকেটের জন্য এখন সবচেয়ে বেশি দরকার, আলোচনা সেদিকে ঘোরা উচিত।’ তামিম জানান, তিনি দুটি ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত থাকায় কাউন্সিলর হওয়া নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই। তিনি বলেন, ‘আমি ক্রিকেটে বিনিয়োগ করেছি। কাউন্সিলর তো আমি হবই।’
বাংলাদেশের ধুঁকতে থাকা ফুটবলে প্রাণ ফিরিয়েছেন হামজা চৌধুরী। গেল মার্চে প্রথমবারের মতো লাল-সবুজ জার্সি গায়ে মাঠে নেমেই বদলে দিয়েছেন অনেক হিসাব। এর পর থেকে তিনি হয়ে উঠেছেন প্রবাসী ফুটবলারদের অনুপ্রেরণা, দেশের ফুটবলের নতুন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
এই মিডফিল্ডার এবার ছুঁলেন এক অনন্য উচ্চতা।
হয়ে গেলেন ইনস্টাগ্রামে ১০ লাখ বা ১ মিলিয়ন অনুসারী পাওয়া প্রথম বাংলাদেশি ফুটবলার। নিজের ফেসবুক পেজে বিষয়টি জানিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন তিনি।
এক পোস্টে লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, ইনস্টাগ্রামে ১ মিলিয়ন অনুসারী হয়েছে আমার। আপনাদের সমর্থনের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ, আমি সত্যিই অনেক কৃতজ্ঞ।’
এদিকে হামজার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শমিত সোম। তার অনুসারীর সংখ্যা ৯ লাখ ৯২ হাজার। অর্থাৎ শিগগিরই তিনি পেরোতে পারেন ১০ লাখের গণ্ডি।
বাংলাদেশ দলে অভিষেকের আগেই ১০ লাখ ফেসবুক অনুসারী পেয়েছিলেন হামজা।
তবে সেখানে তিনি দ্বিতীয়-প্রথম বাংলাদেশি ফুটবলার হিসেবে এই মাইলফলক ছুঁয়েছিলেন জামাল ভূঁইয়া। চলতি বছরের শুরুতে হামজা যোগ দেন সেই তালিকায়।
তবে শুধু অনলাইনে নয়, মাঠের খেলায়ও চমক দেখাচ্ছেন হামজা। গেল ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলে অভিষেক হয় হামজার। মাঝমাঠে দাপট দেখিয়ে ভারতকে নড়বড়ে করেছিলেন তিনি।
যদিও শেষ পর্যন্ত ম্যাচ ড্র করে বাংলাদেশ।
ঘরের মাঠে অভিষেকটা ছিল আরও স্মরণীয়। ভুটানের বিপক্ষে মাত্র ৭ মিনিটের মাথায় গোল করে আন্তর্জাতিক ফুটবলে গোলের খাতা খোলেন তিনি। সেই ম্যাচে বাংলাদেশ জিতে ২-০ ব্যবধানে।
কোচ হাভিয়ের কাবরেরার অধীনে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষেও খেলেছেন হামজা। তবে উন্মাদনা ছড়ালেও শেষমেশ বাংলাদেশ হেরে যায় ২-১ গোলে।
হামজার পথ ধরে এখন দলে এসেছেন শমিত সোম, ফাহামেদুল ইসলামদের মতো খেলোয়াড়রা। বসুন্ধরা কিংসের উদীয়মান তারকা কিউবা মিচেলদের মতো ফুটবলারও অভিষেকের অপেক্ষায়।
চোটের কারণে লিগস কাপের কোয়ার্টার ফাইনালসহ ইন্টার মায়ামির সর্বশেষ দুটি ম্যাচে লিওনেল মেসি খেলতে পারেননি। তিগ্রেসের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে জর্দি আলবা দ্বিতীয়ার্ধে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন। দুজনকেই নিয়েই তাই দুশ্চিন্তায় ছিল ইন্টার মায়ামি। লিগস কাপের সেমিফাইনালে মেসি ও আলবা খেলতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে ম্যাচের দিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল।
ফ্লোরিডার চেজ স্টেডিয়ামে লিগস কাপের সেই সেমিফাইনালে মেসি ও আলবাকে শুরু থেকেই দেখা গেল মাঠে। দুজনের বোঝাপড়া দেখে বার্সেলোনায় তাদের সোনালি দিনগুলো মনে পড়েছে অনেকের। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ লিখেছেন ‘জাস্ট লাইক ওল্ড টাইমস।’
সেটা অবশ্যই ৮৮ মিনিটে মেসি-আলবার যৌথ প্রযোজনায় করা গোলটির জন্য। তবে শুধু এ গোল দিয়ে গোটা ম্যাচের দৃশ্যপট বলা যায় না। প্রথমার্ধে যোগ করা সময়ে গোল করে এগিয়ে গিয়েছিল অরল্যান্ডো সিটি। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের শেষ ১৫ মিনিটে জোড়া গোল করে ম্যাচের গতিপথ পাল্টে দেন মেসি। অরল্যান্ডো সিটিকে ৩-১ গোলে হারিয়ে লিগস কাপের ফাইনালে উঠেছে ইন্টার মায়ামি।
প্রথমার্ধে দাপট বজায় রেখে খেলেছে মায়ামি। মেসিকেও চোট কাটিয়ে মাঠে ফিরে ক্ষুধার্ত মনে হয়েছে। প্রথমার্ধেই গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন। মায়ামি প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে গোল হজম করে ডিফেন্ডার ম্যাক্সিমিলিয়ানো ফ্যালকন বল ‘ক্লিয়ার’ করতে না পারায়। সুযোগটা নেন অরল্যান্ডোর উইঙ্গার মার্কো পাসালিচ। বাঁপায়ের জোরালো শটে গোল করেন। ফ্যালকন এ সময় পাসালিচের হ্যান্ডবলের দাবি তুললেও রেফারি কর্ণপাত করেননি।
মায়ামি খেলায় ফিরেছে ৭৫ মিনিটে পাওয়া পেনাল্টি থেকে। তাদের উইঙ্গার তাদেও আয়েন্দেকে নিজেদের বক্সে ফেলে দেন অরল্যান্ডো লেফট ব্যাক ডেভিড ব্রেকালো। শাস্তি হিসেবে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় ব্রেকালোকে আর অরল্যান্ডো হজম করে পেনাল্টি। গোলকিপারের বাঁ-পাশের পোস্টঘেঁষা শটে গোল করেন মেসি।
১০ জনে পরিণত হওয়া অরল্যান্ডো ম্যাচে পিছিয়েও পড়েছে মেসির কারণেই। তাতে অবশ্য আলবার অবদানও কম না। ৮৮ মিনিটে অরল্যান্ডোর বক্সের মাথায় বাঁ-পাশ থেকে আলবাকে পাস দিয়ে দ্রুত বক্সে ঢোকেন মেসি। বার্সায় দুজনের জুটি দেখে একসময় অভ্যস্ত হয়ে পড়া দর্শক যেন জানতেন এরপর কী হবে। মেসি বক্সে ঢুকতেই একদম মোক্ষম সময়ে একটু ফাঁকায় থাকতে তাকে ফিরতি পাস দেন আলবা। দৌড়ের ওপরই কঠিন কোণ থেকে বাঁ-পায়ের নিখুঁত শটে দূরের পোস্ট দিয়ে গোল করেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি। মায়ামির হয়ে এ বছর তার গোলসংখ্যা ৩৩ ম্যাচে ২৭।
অরল্যান্ডোর ভোগান্তির আরও বাকি ছিল। যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে বাঁ-প্রান্ত দিয়ে ক্লাবটির বক্সে ঢুকে লুইস সুয়ারেজকে পাস দেন ভেনেজুয়েলান মিডফিল্ডার তেলেসকো সেগোভিয়া। ফিরতি পাস পেয়ে ম্যাচের শেষ গোলটি করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময় আগামী সোমবার সকালে ফাইনালে সিয়াটল সাউন্ডার্সের মুখোমুখি হবে মায়ামি। লিগস কাপের ফাইনালে ওঠার মধ্য দিয়ে আগামী বছর কনক্যাকাফ চ্যাম্পিয়নস কাপে খেলার যোগ্যতাও অর্জন করল হাভিয়ের মাচেরানোর দল।
ফাইনালে ওঠার পর মেসি বলেছেন, ‘ম্যাচটা খেলা গুরুত্বপূর্ণ ছিল কারণ প্রতিপক্ষ বেশ কঠিন। এ বছর তাদের বিপক্ষে দুটি ম্যাচেই হেরেছি। প্রথমার্ধে একটু ভয় নিয়ে খেলেছি। কিন্তু তারপর সব সহজ হয়ে যায়।’
মন্তব্য