পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ২০১০ সালের ৬ এপ্রিল চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দুধপুকুরিয়া-ধোপাছড়ি এলাকাকে বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করে। এই বনে দুর্লভ প্রজাতির বিভিন্ন গাছের পাশাপাশি বন্য প্রাণীর অবাধ বিচরণ রয়েছে।
কিন্তু সংরক্ষিত এই বনের মধ্যে চট্টগ্রামের পটিয়া-হাইদগাঁও দিয়ে রাঙ্গুনিয়া পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করতে চায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। এ জন্য ৩৩ লাখ ৫৯৫ টাকার একটি প্রকল্পও নেয়া হয়েছে।
তবে শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের অনাপত্তিতে প্রকল্পটি ঝুলে গেছে। এই প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।
বন বিভাগের দাবি, সড়কটি নির্মাণ করা হলে বন্য প্রাণীর এই অভয়ারণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সওজকে বন বিভাগ জানায়, ১৯২৭ সালের (সংশোধিত) বন আইনে বন অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে রাস্তা নির্মাণ বা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম নিষিদ্ধ।
দুধপুকুরিয়া-ধোপাছড়ির মধ্যে সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, সেটা ২০১০ সালে বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে সংরক্ষিত ঘোষণা করে সরকার। সেজন্য বন অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না নিয়ে কোনো কার্যক্রম শুরু না করার অনুরোধ জানানো হচ্ছে সওজকে।
সওজের দাবি, সড়কটি করলে লাখ লাখ মানুষ সুবিধা পাবে। চট্টগ্রামের সঙ্গে বান্দরবান ও কক্সবাজারের সড়ক যোগাযোগ উন্নত হবে। এতে করে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
সওজের উন্নয়ন প্রকল্পে বলা হয়, পটিয়া-অন্নদাদত্ত-হাইদগাঁও-রাঙ্গুনিয়া মহাসড়কটি নির্মাণ করা গেলে বিভাগীয় শহর চট্টগ্রাম এবং পর্যটন নগরী কক্সবাজারের মধ্যে সরাসরি সহজ ও নিরাপদ যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে উঠবে। যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে।
এটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের একটি প্রকল্প বিধায় এর আওতায় যেসব সড়ক ও সেতু নির্মাণ করা হবে, তাতে কোনো ধরনের টোল দিতে হবে না। পরিবহন পরিচালন ও ভ্রমণ ব্যয় সাশ্রয় বিবেচনায় অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হবে যাতায়াতকারীরা। প্রস্তাবিত প্রকল্পের অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নযোগ্য।
দোহাজারী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সড়কটি পটিয়া-অন্নদাদত্ত-হাইদগাঁও-রাঙ্গুনিয়ার পশ্চিম খুরুশিয়া-কালিন্দিরানী সড়ক-দুধপুকুরিয়া-চন্দনাইশের ধোপাছড়ি-শঙ্খতীরের ডলুপাড়া-বালাঘাটা হয়ে বান্দরবানের সঙ্গে মিলিত হবে।
‘মহাসড়কটি নির্মাণ করা গেলে বান্দরবান-দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া, রাজস্থলী, কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী এলাকায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত করা সহজ হবে। এসব এলাকার মানুষকে এখন বান্দরবান কিংবা কক্সবাজার যেতে হলে রাউজান, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম শহর ঘুরে যাতায়াত করতে হয়।
‘বান্দরবান থেকে চট্টগ্রামগামী বাস কিংবা পণ্যবাহী যান বর্তমানে সাতকানিয়ার কেরানীহাট-চন্দনাইশ হয়ে যাতায়াত করে। মহাসড়কটি নির্মাণ করা গেলে বান্দরবানের পর্যটন খাত এবং সেখানকার উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণেও আমূল পরিবর্তন আসবে।’
সুমন সিংহ বলেন, ‘রাঙ্গুনিয়ার যে অংশে সড়ক নির্মাণ করা হবে সেখান থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে অভয়ারণ্য এলাকা অবস্থিত। বন বিভাগের যেটুকু অংশে সড়ক হবে, সেখানে তেমন কোনো গাছপালা নেই। তা ছাড়া পাহাড় কিংবা গাছপালা না কেটেই সড়কটি নির্মাণ করা যাবে। শুধু দক্ষিণ বন বিভাগের বাধার কারণে মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পটি আটকে আছে।’
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দোহাজারী এলজিইডি থেকে পটিয়া, রাঙ্গুনিয়া হয়ে বান্দরবান পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের একটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগকে।
প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী রাঙ্গুনিয়ার সংরক্ষিত দুধপুকুরিয়া-ধোপাছড়ি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যের মধ্য দিয়ে সড়কটির একাংশ নির্মাণ করা হবে, যা পরিবেশ, বন ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করবে। সেজন্য বন বিভাগ প্রস্তাবটিতে আপত্তি জানিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সড়কটি নির্মাণ হলে এই সংরক্ষিত বনের প্রাণীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি হবে। সংরক্ষিত বনের মধ্যে সড়ক নির্মাণ করা হলে সড়কের দুই পাশে অবৈধ দোকানপাটসহ নানা ধরনের স্থাপনা গড়ে উঠবে। অনুপ্রবেশকারীদের বনের মধ্যে প্রবেশ করে জবরদখলের প্রবণতাও বেড়ে যাবে। তখন সীমিত লোকবল দিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না। এ বনের অভ্যন্তরে অনেক দুর্লভ প্রজাতির গাছ আছে, সেগুলোও তখন রক্ষা করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।’
পরিবেশবাদীরাও সংরক্ষিত বনাঞ্চলে সড়ক নির্মাণকে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ ও পাখির জন্য বড় ধরনের হুমকি মনে করছেন।
পরিবেশবিদ ও বাংলাদেশ পরিবেশন আন্দোলনের (বাপা) সহসভাপতি ইদ্রিছ আলী নিউজবাংলাকে বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে দুধপুকুরিয়া-ধোপাছড়ির বন্যপ্রাণীরা। এসব বন্য প্রাণী এবং দুর্লভ প্রজাতির বৃক্ষ বনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করছে। সে জন্য এ অভয়ারণ্যে ও আশপাশেও কোনো সড়ক নির্মাণ না করার দাবি জানাচ্ছি।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের তথ্যমতে, ২০১০ সালে অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণার পর তৎকালীন পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি একই সালের ৯ মে এ বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য উদ্বোধন করেন।
‘ইন্টিগ্রেটেড প্রটেক্টেড এরিয়া কো-ম্যানেজমেন্ট’ প্রজেক্টের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সহযোগিতায় এ বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য প্রতিষ্ঠা করা হয়। দুধপুকুরিয়া, পূর্ব ও পশ্চিম খুরুশিয়া, পশ্চিম ধোপাছড়ি ও জঙ্গল ধোপাছড়ি মৌজার ৪ হাজার ৭১৬ একর এলাকাজুড়ে রাঙ্গুনিয়া-চন্দনাইশ উপজেলার মাঝামাঝিতে এ অভয়ারণ্যটির অবস্থান। এ অভয়ারণ্যে প্রাকৃতিক ছড়া, বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি, আদিবাসী পল্লী, বুনো অর্কিড, শতবর্ষী বিভিন্ন প্রজাতির গাছ, নিবিড় বাঁশ বন ও ঘন বেত বাগান আছে।
কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপে ঘরে ঢুকে এক নারী ও তার মেয়েকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
গত সোমবারের ঘটনায় বৃহস্পতিবার টেকনাফ মডেল থানায় অভিযোগটি করেন ছেনুয়ারা বেগম নামের নারী।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত সোমবার রাত দুইটার দিকে শাহপরীর দ্বীপের পূর্ব উত্তরপাড়া এলাকার নুর মোহাম্মদের স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগমের ঘরের দরজা ভেঙে আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন প্রবেশ করেন। তারা ছেনুয়ারা ও তার মেয়ের হাত-পা বেঁধে মুখে কাপড় ঢুকিয়ে এলোপাতাড়ি লাথি ও ঘুষি মারেন। একপর্যায়ে মা ও মেয়ে উভয়কে বিবস্ত্র করেন আইয়ুব ও তার লোকজন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, হামলাকারীরা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বর্ণ ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যান। যাওয়ার সময় তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের বিষয়ে কাউকে জানানো হলে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যান৷
এ বিষয়ে ছেনুয়ারা বেগম বলেন, ‘সন্ত্রাসী আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন যুবক আমার বাড়িতে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রবেশ করে। পরে বাড়ি থেকে আমাকে জোরপূর্বক কয়েকজন লোক বের করে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে এবং আমার মেয়েকে নির্যাতন করে স্বর্ণ ও টাকা নিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া বিষয়ে কাউকে বললে মেরে ফেলা হবে বলে চলে যায়।’
থানায় অভিযোগের পর আয়ুব হুমকি দিয়েছে জানিয়ে ছেনুয়ারা বলেন, ‘সেই আয়ুব খান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বলে, মামলা হলে কী হবে? জামিন নিয়ে বাহির হয়ে আমাকে আর আমার মেয়েকে মেরে ফেলা হবে বলে প্রাণনাশের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে আমি টেকনাফ মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।’
এ বিষয়ে সাবরাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রেজাউল করিম রেজু বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি এবং সঠিক তদন্ত করে পুলিশকে সহযোগিতা করব।’
অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘আমি ঘটনার সত্যতা পেয়েছি এবং আমি মামলা করার জন্য ওসি বরাবর সুপারিশ করেছি।’
টেকনাফ মডেল থানার ওসি ওসমান গণি বলেন, ‘আরও গভীরভাবে তদন্ত করে দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে।’
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজারে বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা নাশকতা মামলায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এমএ মুহিতসহ ১৪ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
উচ্চ আদালতের মঞ্জুরকৃত জামিন শেষ হওয়ায় তারা আদালতে হাজির হন।
মৌলভীবাজার মডেল থানায় ২০২৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে করা দুটি রাজনৈতিক মামলার ১৪ জন আসামি হাজির হলে আদালত তাদের সবার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করে।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- জেলা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক মুহিতুর রহমান হেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলে সাবেক সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর স্বাগত কিশোর দাস চৌধুরী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আহমেদ আহাদ, যুবদলের এমএ নিশাদ, যুবদলের সিরাজুল ইসলাম পিরুন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নুরুল ইসলাম, যুবদলের ওয়াহিদুর রহমান জুনেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুল হান্নান, স্বেচ্ছাসেবক দলের রোহেল আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের মামুনুর রশিদ ও যুবদলের জাহেদ আহমেদ।
মৌলভীবাজার জেলা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. ইউনুছ মিয়া জানান, ২০২৩ সালে নাশকতার অভিযোগে করা মামলায় মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন আসামিরা। আদালত শুনানি শেষে আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি থানাধীন সাজেকে শ্রমিকবাহী ডাম্প ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
বাঘাইছড়ি থানার সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল আওয়াল বুধবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তিনজনকে মৃত বলে জানান।
এর আগে বিকেলে সাজেকের উদয়পুর সীমান্ত সড়কের ৯০ ডিগ্রি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশের ভাষ্য, খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের উদয়পুর সীমান্তবর্তী সড়ক নির্মাণের জন্য ডাম্প ট্রাকে ১৪ জন শ্রমিক জামান ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সেতুর কাজে যাচ্ছিলেন। পথে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ের ঢালে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে ছয়জনের মৃত্যু হয়।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরিন আক্তার সাংবাদিকদের জানান, যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি খুবই দুর্গম এলাকা। আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী, তবে তাৎক্ষণিকভাবে কারও নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলায় ৭ (সাত) বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে সৈয়দ সরাফত আলী নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআইয়ের পরিদর্শক রিপন চন্দ্র গোপের নেতৃত্বে একটি অভিযানিক দল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
৬০ বছর বয়সী সৈয়দ সরাফত আলী রাজনগর থানার করিমপুর চা বাগান এলাকার বাসিন্দা।
পিবিআই জানায়, শিশুটিকে বাঁশের বাঁশি বানিয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে গত ১৪ এপ্রিল বেলা পৌনে দুইটার দিকে সৈয়দ সরাফত আলী তার বাড়ির পাশের বাঁশ ঝাড়ের নিচে নিয়ে যান। সেখানে তাকে মাটিতে ফেলে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হলে তিনি আত্নগোপন করেন।
অসুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে গত প্রথমে রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভর্তি করে চিকিৎসা করানো হয়।
এ বিষয়ে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে রাজনগর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
পিবিআই মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, ‘শিশু ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধীর পার পাওয়ার সুযোগ নেই। আইনের আওতায় এনে তাদের বিচার করা হবে। মামলার খুঁটিনাটি বিষয় বিবেচনায় রেখে নিখুঁত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।’
আরও পড়ুন:চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে দায়িত্ব পালনকালে রুহুল আমিন নামে এক ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি যশোরের বেনাপোলে। বাবার নাম কোরবান আলী।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের অধীন সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
শিবগঞ্জ থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন জানান, সোনামসজিদ স্থলবন্দরের পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের মধ্যে ট্রাক পরিদর্শন শেষে দুপুর পৌনে ১টার অফিস কক্ষে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন রুহুল আমিন। সহকর্মীরা তাকে দ্রুত শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন এসএম মাহমুদুর রশিদ জানান, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রুহুল আমিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার আগেই মারা যান। হাসপাতালে যারা নিয়ে এসেছিলেন তারা বলেছেন যে তিনি তৃষ্ণার্ত ছিলেন, পানি খেতে চেয়েছিলেন।
তবে তার মৃত্যু যে হিট স্ট্রোকে হয়েছে এটা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাবে না। অন্য কোনো রোগেও তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। তবে এখন যেহেতু প্রচণ্ড গরম চলছে তাই এটার প্রভাব থাকতে পারে।
সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ২৮৮ জন সদস্যকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া বিআইডব্লিটিএ জেটি ঘাট থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের টাগবোটে তুলে দেয়া হয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, গভীর সাগরে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে অপেক্ষায় থাকা মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ চিন ডুইনে তাদের তুলে দেয়া হবে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সেনা ও সীমান্তরক্ষীদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওই জাহাজ বুধবারই বাংলাদেশের জলসীমায় পৌঁছায়। ওই জাহাজে করেই ১৭৩ জন বাংলাদেশি ফিরে এসেছেন। যারা বিভিন্নভাবে মিয়ানমারে আটকা পড়েছিলেন বা সাজা পেয়ে জেলখানায় ছিলেন।
মিয়ানমার নৌবাহিনীর ওই জাহাজে করে দেশটির ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলও বুধবার দুপুরে কক্সবাজার পৌঁছায়। পরে তারা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়নে বিজিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। সেখানে পৌঁছানোর পর তারা মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের যাচাই-বাছাইসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়।
বিজিবি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ১১টি বাসে করে মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ জেটি ঘাটে নিয়ে আসা হয়।
সেখানে আনার পর ইমিগ্রেশন ও ডকুমেন্টেশনের আনুষ্ঠানিকতা সেরে শুরু হয় হস্তান্তর প্রক্রিয়া। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও কোস্ট গার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশশে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতসহ দেশটির প্রতিনিধি দলের কাছে তাদের হস্তান্তর করেন।
এরপর সকাল ৭টার দিকে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের কর্ণফুলি টাগবোটে তুলে দেয়া হয়। কোস্ট গার্ডের একটি ট্রলার টাগবোটটিকে পাহারা দিয়ে গভীর সাগরে নিয়ে যায়।
দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে, যার আঁচ লেগেছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাতেও। সীমান্তের ওপারের মর্টার শেল ও গুলি এসে এপারে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।
ওই সংঘাতের মধ্যে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ ৩৩০ জনকে প্রথম দফায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেরত পাঠিয়েছিল সরকার।
তাদের মধ্যে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপি ৩০২ জন, তাদের পরিবারের চার সদস্য, দুজন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং চারজন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন।
এরপর বান্দরবান ও কক্সবাজার সীমান্ত নিয়ে কয়েক দফায় আরো ২৮৮ জন সীমান্তরক্ষী ও সেনা সদস্য এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এবার তাদের ফেরত পাঠানো হলো।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মা নদীতে বুধবার রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় দুটি ড্রেজার জব্দ করেছে নৌ-পুলিশ।
মাওয়া নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে উপজেলার মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নের যশিলদিয়ায় বুধবার রাত দেড়টার দিকে পদ্মা নদীতে অভিযান চালানো হয়। ওই সময় নিয়ম অমান্য করে বালু উত্তোলন করায় ওই দুটি ড্রেজার জব্দ করা হয়।
তিনি আরও জানান, ড্রেজার জব্দ করার সময় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। জব্দকৃত ড্রেজার দুটির বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য