সিরাজগঞ্জে চুরির অভিযোগ পেয়ে নিখোঁজের তিন ঘণ্টা পর আড়াই মাসের শিশুকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সদর উপজেলার বহুলী ইউনিয়নের কদমপাল গ্রামে সকাল নয়টার দিকে বাড়ি থেকে মেয়ে ছোঁয়া মনি চুরি হয়েছে এমন অভিযোগ করেন শিশুটির বাবা।
এই অভিযোগে পাশের ভদ্রঘাট বাজার থেকে শিশুটিকে তার খালার কাছ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় খালাকে আটক করা হয়।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাহাউদ্দিন ফারুকী নিউজবাংলাকে জানান, তিন সন্তানকে নিয়ে তাদের মা নার্গিস বেগম রাতে ঘুমান। পাশের ঘরে ঘুমান তাদের বাবা সুলতান। সকালে ঘুম থেকে উঠে বোনকে দেখতে না পেয়ে বিষয়টি বাবাকে জানান সুলতানের বড় মেয়ে। তখন তিনি পুলিশকে খবর দেন।
তিনি আরও জানান, পরে শিশুটির মা দাবি করেন, পরপর তিনটি মেয়ে হওয়ায় পারিবারিক অশান্তি চলছিল। তিনি তার বোনকে শিশুটি দত্তক দেন। কিন্তু বিষয়টি তার স্বামী না জানায় পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ শিশুটির বাবা, মা, খালা ও নানাকে আটক করে হেফাজতে নিয়েছে।
এর আগে ৬ মার্চ জেলার কামারখন্দে নিজ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয় ২১ দিন বয়সী শিশু কাওসার হোসেন। নিখোঁজের চার ঘণ্টা পর তাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে দুজনকে আটক করা হয়।
ফেব্রুয়ারি মাসে সিরাজগঞ্জে হাসপাতাল থেকে দুটি শিশু চুরির ঘটনা ঘটে।
২৭ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল সাখাওয়াত এইচ মেমোরিয়াল হাসপাতাল থেকে সদ্যোজাত শিশু সামিউল চুরি হয়।
এই ঘটনার চার দিন আগে সিরাজগঞ্জের ২৫০ শয্যার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল থেকে ২৩ দিনের শিশু মাহিম চুরি হয়।
দ্বিতীয় ঘটনার দিন রাতেই জেলার আলোকদিয়া গ্রামের এক বাড়ি থেকে সামিউলকে জীবিত ও মাহিমকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। আটক করা হয় দুই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছয়জনকে।
আটক ছয়জন হলেন সলঙ্গা থানার সয়রন বিবি, তার মেয়ে আলপনা খাতুন, ছেলে রবিউল ইসলাম ও তার স্ত্রী ময়না খাতুন এবং একই গ্রামের খাদিজা খাতুন ও মিনা খাতুন।
তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই দিনই সাখাওয়াত এইচ মেমোরিয়াল হাসপাতালের এক পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ।
দুই শিশু চুরি হওয়ার ঘটনা নিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার (এসপি) হাসিবুল আলম জানান, আটক আল্পনা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিশু চুরির অভিযোগ স্বীকার করেছেন। প্রথমে চুরি করা এক শিশু মারা যাওয়ায় চার দিন পর হাসপাতাল থেকে আরেক শিশুকে চুরি করেন অভিযুক্তরা।
এসপি বলেন, ‘আল্পনা জানিয়েছেন, সন্তান না হওয়ায় স্বামী তাকে ছেড়ে আরেকজনকে বিয়ে করার হুমকি দেন। এরপর গর্ভধারণের মিথ্যা দাবি করে মাস কয়েক আগে মা সয়রন বিবির কাছে চলে আসেন তিনি।’
এরপর মা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে হাসপাতাল থেকে নবজাতক চুরির পরিকল্পনা করেন।
১ মার্চ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের তত্ত্বাবধায়কের নিরাপত্তাকর্মী গোপাল চন্দ্র দাসকে আটক করে পুলিশ।
আরও পড়ুন:নাটোরের সিংড়া উপজেলা চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন পাশাকে অপহরণ ও মারধরের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সিংড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হাসান ইমাম এবং সাধারণ সম্পাদক মোহন আলীকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ ডলার ও সাধারণ সম্পাদক শফিউল আযম স্বপন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
একই বিজ্ঞপ্তিতে বিএমএম ওয়াহিদুজ্জামান পিন্টুকে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সোহেল রানা মুন্নুকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউল আযম স্বপন জানান, সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবীব রুবেল এবং দেলোয়ার হোসেন পাশা মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছিলেন। এরপর গত ১৫ এপ্রিল জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের ভেতর থেকে লুৎফুল হাবীব রুবেলের পক্ষ থেকে দেলোয়ার হোসেন পাশাকে অপহরণ করে নির্যাতন করে তার সমর্থকরা। এই ঘটনায় দেশব্যাপি সমালোচনা শুরু হলে পলকের নির্দেশে তার শ্যালক রুবেল মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন।
তিনি বলেন, ফলে অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার পাশাকে মঙ্গলবার একমাত্র পার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেন রির্টানিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ শেখ। এই ঘটনায় বিভিন্ন মিডিয়ার খবর ও পুলিশের তদন্তে সিংড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হাসান ইমাম এবং সাধারণ সম্পাদক মোহন আলী সম্পৃক্ততা পায় পুলিশ। ফলে তাদের দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
তদন্তে প্রমাণিত ৩৫ রোহিঙ্গাকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে কক্সবাজারে কতজন রোহিঙ্গাকে ভোটার করা হয়েছে- তা জানতে চেয়েছে উচ্চ আদালত।
এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ দেয়। খবর বাসসের
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত।
আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া জানান, ২০১৬ সাল থেকে কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কিছু ক্ষমতাধর কথিত জনপ্রতিনিধির যোগসাজশে অর্থের বিনিময়ে অসংখ্য রোহিঙ্গাদেরকে জাল ঠিকানা, ভুয়া বাবা-মা সাজিয়ে ও জাল কাগজপত্র তৈরি করে জন্ম নিবন্ধন, ভোটার আইডিসহ দেশের নাগরিকত্ব দিতে সরাসরি সহায়তা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তিনি জানান, ওই ইউনিয়নে অন্তত ৩৭০ জন রোহিঙ্গাকে জন্ম নিবন্ধন ও ভোটার আইডি দেয়া হয়। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় স্থানীয় এক বাসিন্দা ৩৮ জন রোহিঙ্গার নাম উল্লেখ করে বিবাদীদের প্রতি অভিযোগ দাখিল করেন। ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর বিষয়টি নিয়ে একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। প্রতিবেদনে ৩৮ জনের মধ্যে ৩৫ জন রোহিঙ্গার বিষয়ে সত্যতা পাওয়া যায়।
আইনজীবী আরও জানান, এতে ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের জড়িতদের প্রমাণ পাওয়া যায় এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছেন। কিন্তু এসব রোহিঙ্গাকে নাগরিকত্ব দেয়া সংক্রান্ত কাগজপত্র বাতিল করে তাদের নাম ভোটার তালিকে থেকে বাদ দেয়ার জন্য জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এসব রোহিঙ্গাদের ভোটার রেখেই ওই ইউনিয়ন পরিষদের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করা হয়। এ অবস্থায় স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ হামিদ হাইকোর্টে রিট করেন।
শুনানি শেষে বিবাদীদের প্রতি চার সপ্তাহের রুল জারি করে ভোটার তালিকা থেকে তদন্তে প্রমাণিত রোহিঙ্গাদের নাম বাদ এবং আগামী ৬ জুনের মধ্যে কক্সবাজার জেলায় কতজন রোহিঙ্গাকে ভোটার করা হয়েছে- তা তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে আজ উচ্চ আদালত।
রিটে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিব, রেজিস্ট্রার জেনারেল ও সংশ্লিষ্ট ১৭ জনকে বিবাদী (রেসপনডেন্ট) করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নতুন তিন বিচারক নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন বুধবার জারি করা হয়েছে। খবর বাসসের
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন বিচারককে তাদের শপথ গ্রহণের তারিখ হতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করেছেন।
নবনিযুক্ত আপিল বিভাগের বিচারপতিগণ হলেন-বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ, বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি কাশেফা হোসেন।
তীব্র গরমে জনসাধারণকে স্বস্তি দিতে মাঠে নেমেছে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন।
জেলার জনবহুল স্থানগুলোতে খোলা হয়েছে সুপেয় পানির বুথ, যেখান থেকে পথচারীসহ সাধারণ মানুষ বিনা মূল্যে পানি ও স্যালাইন পান করতে পারছেন। একই সঙ্গে বুথ থেকে নিম্ন আয়ের শ্রমিক-কর্মজীবীদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে ছাতা।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু জাফর রিপন বুধবার বেলা ১১টার দিকে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
জেলা প্রশাসনের এমন উদ্যোগের সুফল পাওয়া লোকজন জানিয়েছেন তাদের স্বস্তির কথা।
এ বিষয়ে ডিসি আবু জাফর রিপন জানান, জেলার ৬৮টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভাসহ শতাধিক স্থানে জনসচেতনতার অংশ হিসেবে বসানো হচ্ছে বুথ। এসব বুথ থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী পানি ও ছাতা নেয়া যাবে।
তিনি আরও জানান, স্বাস্থ্য সচেতনতায় জেলার সর্বত্র করা হচ্ছে মাইকিং। যতদিন অসহ্য দাবদাহ থাকবে, এ কার্যক্রম ততদিন চলবে।
কর্মসূচির উদ্বোধনের সময় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অফিফা খানসহ জেলা প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
একই দিন মুন্সীগঞ্জ সেবা কেন্দ্র নামের একটি বেসরকারি সংগঠন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও পুরাতন কাচারি এলাকায় বিনা মূল্যে শরবত বিতরণ করে পথচারীদের কাছে।
আরও পড়ুন:মিয়ানমারে জান্তাবাহিনী ও সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর চলমান সংঘাতের মধ্যে এবার কক্সবাজারের টেকনাফে একটি গুলির খোসা এসে পড়েছে।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে উপজেলার জাদিমুড়া সিআইসি অফিসের জানালায় এসে পড়ে ওই গুলির খোসা। এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
জাদিমুড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি আহমদ বলেন, মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি থেকে এপারের ক্যাম্প-২৭ সিআইসি অফিসের জানালায় একটি গুলির খোসা এসে পড়ে ছিদ্র হয়ে যায়।
হোয়াইক্যংয়ের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, রাতে মিয়ানমারের ওপারে চলা গোলাগুলির শব্দে ভয়ে লবণচাষিরা ঘরে ফিরে আসতে বাধ্য হন। গোলাগুলির বিকট শব্দে ঘরে থাকতে পারিনি। রাতভর থেমে থেমে গোলাগুলি হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও দায়িত্বশীল কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গত ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইনে বিদ্রোহীদের সঙ্গে জান্তার সংঘাত চলছে। এরই মধ্যে ঘুমধুম-উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে এসে পড়ে মর্টারশেল ও গুলি। এ নিয়ে সীমান্তে উত্তেজনা রয়েছে।
বেশ কিছুদিন মিয়ানমার থেকে কোনো গুলি বা মর্টারশেল দেশে না এসে পড়লেও ওপারের শব্দ আসছে এপারে। মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সদস্যরা পালিয়ে আশ্রয় নেন বাংলাদেশে।
উপজেলা নির্বাচন থেকে মন্ত্রী ও এমপিদের স্বজনরা সরে না দাঁড়ালে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বুধবার দলের সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
কাদের বলেন, ‘দলীয় সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রীদের নিকটাত্মীয় এবং স্বজনদের প্রার্থী না হতে দলীয় যে নির্দেশনা, তা না মানলে সময়মতো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় পেরিয়ে গেছে। এদের মধ্যে অনেকেই বলেছেন যে, আমরা বিষয়টি আরও আগে অবহিত হলে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হতো। তারপরও কেউ কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন, কেউ কেউ করেননি।
‘নির্বাচন কমিশনে সময়সীমা শেষ হয়ে গেলে কেউ ইচ্ছা করলে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারেন। এ বিষয়টা চূড়ান্ত হতে নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এখানে কেউ অমান্য করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে দলে; সময়মতো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিষয়ে কাদের বলেন, ‘আমাদের দলে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশনের বিষয়টি আছে। দল যার যার কর্মকাণ্ড বিবেচনায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশলে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নিয়ে থাকে। চূড়ান্ত পর্যায়ে যারা প্রত্যাহার করবে না, এ ব্যাপারে দলের সিদ্ধান্ত সময়মতো নেয়া হবে।’
চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেও কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে কি না, এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সাধারণ ক্ষমা একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে দলীয় রণকৌশল। সেটা হতেই পারে। সেটা দলের সভাপতি নিতে পারেন। নির্বাচন হওয়া পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ আছে।’
বিএনপির সমাবেশের দিনে আওয়ামী লীগেরও সমাবেশ থাকে—সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির সন্ত্রাস থেকে জনগণকে রক্ষায় কর্মসূচি দেয় আওয়ামী লীগ। বিএনপি একতরফা সমাবেশ করতে গেলে সন্ত্রাস, আগুন সন্ত্রাসের আশঙ্কা থেকেই যায়। জনগণের জানমাল রক্ষায় সরকারি দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব আছে।
‘আমরা মাঠে থাকলে তারা এসব অপকর্ম করতে মানসিকভাবে চাপে থাকবে। সে জন্য আমরা কর্মসূচি দিই। বিএনপির চোরাগোপ্তা হামলা প্রতিহত করতে জনগণের স্বার্থে আমাদের কর্মসূচি থাকা উচিত।’
আরও পড়ুন:ছিয়াত্তর বছর বয়সী আবদুর রহিম স্ত্রীকে হারিয়েছেন দেড় যুগ আগে। পরিবারের সদস্য বলতে এক ছেলে, তাও থাকেন প্রবাসে। ছেলে প্রবাসে যাওয়ার পর অন্য ঘরে চলে গেছেন ছেলের বৌও। তাই রান্না-বান্না থেকে শুরু করে সব কিছুই করতে হয় নিজেকে।
জীবন যুদ্ধে তিনি কখনও দমে যাননি, তবে এবার হার মেনেছেন টিউবওয়েলের পানির কাছে। ১৫ থেকে ১৬ বার টিউবওয়েল চাপার পরেও মিলছে না এক গ্লাস পানি। তাই পানি সংকটের কারণে গোসল থেকে শুরু করে গৃহস্থালির সব কাজ হচ্ছে ব্যাহত।
তাই অধিকাংশ সময় বাড়ির পাশে থাকা মসজিদে গিয়ে পানির চাহিদা পূরণ করছেন আবদুর রহিম।
এদিকে গৃহবধূ ছানোয়ারা খাতুন গৃহস্থালির সব কাজ করেন একাই। বাড়িতে রয়েছে তিনটি গাভি ও চারটি ছাগল। এর মধ্যেই আজ সপ্তাহ দুয়েক ধরে টিউবওয়েলে উঠছে না পানি। খাওয়া থেকে ওজু, গোসল সব কিছুতেই বেগ পেতে হচ্ছে পানি সংকটের কারণে।
ছানোয়ারা খাতুন জানান, তীব্র তাপদাহের মধ্যে আজ সপ্তাহখানেক ধরে বাড়িতে থাকা গরুর গোসল করাতে পারেননি তিনি, তবে নিজে প্রতিবেশীর বাড়িতে গিয়ে গোসল করে আসেন।
মেহেরপুরের গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের হস্তচালিত টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। ফলে এলাকার মানুষের মধ্যে পানির সংকট এখন চরমে পৌঁছেছে। একদিকে গৃহস্থালির কাজে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে বোরো চাষে পানির সংকটের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বললে তারা সুপেয় পানির সংকটের কথা জানান। বিশেষ করে মুজিবনগর উপজেলার, জয়পুর, আমদহ, তারানগর, বিশ্বনাথপুর; সদর উপজেলার শালিকা, আশরাফপুর, আমদাহ, বুড়িপোতা, আলমপুর এবং গাংনী উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নের আমতৈল, মানিকদিয়া, কেশবনগর, শিমুলতলা, রইয়েরকান্দি, সহড়াবাড়িয়া, মিনাপাড়া, ভোলাডাঙ্গা, কুমারীডাঙ্গা কাথুলি ইউনিয়নের গাঁড়াবাড়িয়া, ধলাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় চলতি শুষ্ক মৌসুম শুরু থেকেই সুপেয় পানির সংকট প্রকট হচ্ছে।
দীর্ঘ সময় ধরে অনাবৃষ্টি, ভূ-গর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার, অপরিকল্পিতভাবে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তোলা, এবং পুকুর-খাল-বিল ভরাটের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সীমান্তবর্তী মেহেরপুর জেলার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমেই নিচে নামছে। আগামীতে বৃষ্টিপাত না হলে পরিস্থিতি আরও অবনতি হবে বলেও জানান তারা।
গ্রামবাসীরা বলছেন, গ্রীষ্মকাল শুরু না হতেই এবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। অথচ গ্রামে সুপেয় পানির জন্য নলকূপই শেষ ভরসা।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলার গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সুপেয় পানির স্তর প্রতি বছর ১০ থেকে ১১ ফুট নিচে নামছে। ১০ বছর আগেও এই এলাকায় ৬০ থেকে ৭০ ফুটের মধ্যে ভূ-গর্ভস্থ সুপেয় পানির স্তর পাওয়া যেত। অথচ এখন পানির জন্য যেতে হয় ৩০০ ফুটেরও বেশি গভীরে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, গত কয়েক বছরে এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ সুপেয় পানির স্তর ১০ থেকে ১৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। ফলে অকেজো হয়ে পড়েছে হস্তচালিত অনেক টিউবওয়েল। যেখানে আগে ভূগর্ভের ৫০ থেকে ৬০ ফুট গভীরতা থেকেই পাওয়া যেত সুপেয় পানি। গত এক দশকে ক্রমেই পানির স্তর নিচে নেমে গেছে।
জেলায় গভীর-অগভীর মিলিয়ে ৯ হাজার ৯১৩টি নলকূপ আছে। এর মধ্যে অকেজো হয়ে পড়ে আছে ২ হাজার ২৩৯টি।
গাংনী উপজেলার ভোলাডাঙ্গা গ্রামের পল্লি চিকিৎসক মতিন বলেন, ‘আমি ২০ বছর ধরে গ্রামে গ্রামে চিকিৎসা দিয়ে বেড়াই। আজ ১০ দিন ধরে আমার বাড়ির নলকূপে পানি উঠছে না। রোদের মধ্যে সারা দিন গ্রাম গ্রাম ঘুরে বাড়ি এসে যদি পানি না পাই তাহলে কেমন লাগে? আমি তাই মসজিদের নলকূপে গিয়ে গোসল সেরে আসি।’
একই এলাকার দিনমজুর সিরাজ বলেন, ‘আমি সারা দিন মাঠে কাজ করি। বাড়িতে দুটি গরুও পালন করি অথচ গরু দুটি আজ কয়দিন গা ধোয়াতে পারিনি। আবার মাঠে এক বিঘা ধানের আবাদ আছে, তাতে সেচ দিতে গিয়ে বিপদে পড়তে হচ্ছে। যেখানে দুই ঘণ্টা মেশিনে পানি দিলে হয়ে যেতো। সেখানে এখন চারটা ঘণ্টা পানি দিয়েও হচ্ছে না।’
এ অঞ্চলের আবহাওয়া নির্ণয়কারী চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘কয়েকদিন ধরেই চুয়াডাঙ্গাসহ এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এখানে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অঞ্চলে আপাতত আজকে বৃষ্টির সম্ভবনা নেই।’
মেহেরপুরের জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন জানান, সুপেয় পানির সমস্যা নিরূপণে যেসব এলাকায় সংকট সেখানে ১০টি বাড়িকে কেন্দ্র করে একটি ৯০০ ফুট গভীর নলকূপ স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে সরকার। এসব এলাকায় ৫০০টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হবে, তবে অতিবৃষ্টি ও পানির অপচয় রোধ করা না গেলে পানি সংকটের সমাধান মিলবে না।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য