করোনায় সে এক দিন গেছে মানুষের। ঘর থেকে বের হওয়া নিষেধ। এটা ধরা, ওটা ছোঁয়া মানা। কাজকর্ম সব বন্ধ। সে বড় দুর্দিন। গত বছরের এই সময়টা দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছে সারাদেশের মানুষের।
সিলেট জেলায় ছয় আসনে সাংসদ ছয় জন। পাঁচ জনই তখন ঢাকায়। ব্যতিক্রম ছিলেন কেবল একজন। করোনা সংক্রমণের প্রথম পর্যায়ের প্রায় পুরোটা সময় নিজ সংসদীয় এলাকায় ছিলেন সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী।
কেবল এলাকায় ছিলেনই না, সেই দুর্দিনে বাড়ি বাড়ি খাদ্যসামগ্রী নিয়ে গেছেন তিনি। বিনামূল্যে নিত্যপণ্যের দোকান বসিয়েছিলেন। যেখান থেকে টাকা ছাড়াই নিজের প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে যেতে পেরেছে মানুষ। এছাড়া কেউ মোবাইল ফোনে চাহিদার কথা জানালেই প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিজ নেতাকর্মীদের দিয়ে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন। করোনায় চাকরি হারিয়ে দেশে ফেরা এবং দেশে টাকা পাঠাতে না পারা প্রবাসীদের পরিবারের পাশেও দাঁড়িয়েছিলেন এই সাংসদ।
এমন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে করোনাকালের মানবিক মুখ হয়ে উঠেছিলেন মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী, যার ডাকনাম কয়েস। করোনার সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা এখন অতীত। দেশে করোনার টিকা এসেছে। এবার সুদিন ফেরার প্রত্যাশা। করোনামুক্ত পৃথিবীতে শ্বাস নেওয়ার অপেক্ষা। তবে সেই সুদিন আসার আগে নিজে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন কয়েস। বৃহস্পতিবার দুপরে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। গত ৮ মার্চ তার করোনা শনাক্ত হয়।
সিলেট-৩ (ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা) আসনে টানা তিনবার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন কয়েস। ২০০৯ সালে সংসদে যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিল উত্থাপন করে আলোচনায় আসেন কয়েস। তবে সবকিছু ছাপিয়ে করোনাকালীন মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসিত হন তিনি। আর বৃহস্পতিবার চলে গেলেন সকল আলোচনা-সমালোচনার উর্ধ্বে।
তার নির্বাচনি এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনার কারণে গত বছরের ২২ মার্চ সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণার আগেই ঢাকা থেকে নিজ এলাকায় চলে আসেন কয়েস। এরপর সাধারণ ছুটির মোড়কে লকডাউন থাকাকালীন সময়ে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন মানবিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যায় এই সাংসদকে।
স্থানীয়রা জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর সাংসদ কয়েস প্রথমে নিজ এলাকার জনগণকে সচেতন করতে প্রচারাভিযান শুরু করেন। এ সময় করণীয় নির্ধারণে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে একাধিক বৈঠক করেন। লকডাউন ঘোষণার পর বিপাকে পড়া মানুষদের জন্য খাদ্য সহায়তা প্রদান শুরু করেন। এছাড়া ধান কাটার মৌসুমে নিজ এলাকার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে ধান কাটতে মাঠে নামেন তিনি। গত বছর রমজান মাস শুরু হওয়ার পর অসহায় মানুষদের বাড়ি বাড়ি ইফতারসামগ্রীও পৌঁছে দিয়েছেন তিনি।
করোনাকালে সাংসদ কয়েসের এই মানবিক কর্মকাণ্ড ব্যাপক প্রশংসিত হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও তার কার্যক্রম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। গত বছরের এপ্রিলে এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপ হয়েছিল সাংসদ কয়েসের। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। যেভাবে ভোট চাইতে জনগণের দুয়ারে গিয়েছিলাম, এখন সেভাবে খাবার নিয়ে জনগণের দুয়ারে যাচ্ছি। আমি প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশ পালন করছি।’
সরকারি বরাদ্দের পাশপাশি নিজের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে অর্ধকোটি টাকা সহায়তার কথা জানিয়েছিলেন তিনি।
কয়েস বলেছিলেন, ‘প্রশাসনের কর্মকর্তারা যদি মাঠে নেমে কাজ করতে পারেন, আমরা জনপ্রতিনিধিরা কেন পারব না? শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে এখন সকল জনপ্রতিনিধিকে মানুষের পাশে থাকা উচিত।’
সেদিন আলাপচারিতায় কয়েস আরও জানিয়েছিলেন, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের সময় তিনি দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। তখন স্কাউট সদস্য হিসেবে নোয়াখালীতে গিয়েছিলেন ত্রাণ নিয়ে। সেই থেকে সব দুর্যোগে ত্রাণ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থেকেছেন।
দুর্দিনে পাশে থাকা মানুষটির আচমকা এই বিদায়ে শোকস্তব্ধ তার নির্বাচনি এলাকার মানুষজন।
আরও পড়ুন: টিকা নিয়েও করোনায় এমপি মাহমুদ উস সামাদের মৃত্যু
ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত আলী বলেন, ‘করোনার দুঃসময়ে অনেক সাংসদ নির্বাচনি এলাকায় ছিলেন না। ব্যতিক্রম শুধু কয়েস। তিনি করোনার পুরোটা সময় এলাকায় অবস্থান করে মানুষকে সহায়তা করেছেন। তিনি ছিলেন আমাদের দুর্দিনের বন্ধু। আজ তিনিই করোনায় চলে গেলেন।’
দক্ষিণ সুরমা উপজেলার রাখালগঞ্জের প্রবীণ বাসিন্দা আসকর আলী বলেন, ‘করোনার সময়ে খাবারসামগ্রী নিয়ে আমাদের এলাকায়ও এসেছিলেন কয়েস। মানুষকে সাধ্যমতো সহায়তা করেছেন। যে কোনো প্রয়োজনে তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেছেন। আজ এই লোকটিই চলে গেলেন।’
মরদেহ আসবে শুক্রবার
মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েসের মরদেহ আগামীকাল শুক্রবার (১২ মার্চ) সিলেট আসবে। শুক্রবার সকাল ১১টায় হেলিকপ্টারযোগে ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকায় তার নিজ বাড়িতে নিয়ে আসা হবে মরদেহ। এরপর বাদ আসর বাড়ির পাশের মাইজগাও মাঠে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে অবস্থা বিবেচনায় সময় পরিবর্তন হতে পারে।
১৯৫৫ সালে জন্ম নেওয়া কয়েসের বয়স হয়েছিলো ৬৫ বছর। তিনি স্ত্রী ও এক ছেলে রেখে গেছেন।
মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর ব্যক্তিগত সহকারী জুলহাস আহমদ জানান, তাকে গত রোববার রাতে সিলেট থেকে নিয়ে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি সোমবার সকালে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। বিকালে ফলাফল পজিটিভ আসে। এর আগে ১০ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে করোনার টিকা নেন। টিকা নেওয়ার পর তার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছিল না।
কয়েস সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও শেখ রাসেল শিশু কিশোর পরিষদের মহাসচিবের দায়িত্বে ছিলেন।
আরও পড়ুন:সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শককে (প্রশাসন) প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) এই কমিটি গঠন করা হয় বলে জানান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফয়সাল হোসেন।
হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় ইতোমধ্যে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এছাড়া এই ঘটনায় ইমিগ্রেশন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এসপি) তাহসিনা আরিফকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। একইসঙ্গে মো. আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জের সদর থানায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. আজহারুল ইসলাম ও এসবির এটিএসআই মো. সোলায়মাকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এর আগে সকালেই খবর ছড়িয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুইবার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করা আবদুল হামিদ বুধবার শেষ রাতে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে দেশ ছেড়েছেন। তিনি চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে গেছেন বলে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
জুলাই অভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। কিশোরগঞ্জ সদর থানার একটি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আব্দুল হামিদকেও আসামি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করে আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন করেছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার আইন ও বিচার বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রাপ্ত অভিযোগ ও অভিযুক্তের সংখ্যা, দ্রুত বিচার-নিষ্পত্তির প্রয়োজন, কাজের চাপ ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালটি গঠন করা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের সদস্য পদে নিয়োগ পেয়েছেন, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মঞ্জুরুল বাছিদ এবং মাদারীপুরের জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহের স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান ও সদস্যরা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকের প্রাপ্য বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা প্রাপ্ত হবেন।
এছাড়া প্রজ্ঞাপনে বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার, বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বিদ্যমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
ভারত ও পাকিস্তানের চলমান সংঘাতকে ঘিরে যশোরের ৭০ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। তবে বিজিবি টহল জোরদারের পাশাপাশি গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোয় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।
বিজিবির দেওয়া তথ্যমতে, যশোরে ৭০ কিলোমিটার এই সীমান্ত রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে সাতক্ষীরার ৭০ ব্যাটালিয়ন রয়েছে। সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নীরব নজরদারির সঙ্গে বিজিবি জোরদার করেছে টহল। এলাকাবাসীও সীমান্তের দিকে নজর রাখছেন।
সীমান্তবাসী আল মামুন জানিয়েছেন, এখনও যশোর সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। বিএসএফের অপতৎপরতায় কোনো প্রকার অনুপ্রবেশ বা চোরাচালান বিজিবির কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রতিহত করতে প্রস্তুত এলাকাবাসী।
সীমান্ত এলাকার জনপ্রতিনিধি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তানের থাকলেও এই সীমান্ত এখন স্বাভাবিক। তবে আগে ৫০০ গজ অন্তর একজন বিএসএফ সদস্য দায়িত্ব পালন করলেও এখন ৩০০ গজ অন্তর দেখতে পাওয়া গেছে। এটা কিছুটা ভাবিয়ে তুলেছে। যদি বিএসএফ কোনোরকম তৎপরতা দেখায়, তাহলে বিজিবিকে সঙ্গে নিয়ে তা প্রতিহত করা হবে।’
৪৯ বিজিবির কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী জানান, সীমান্তে বিজিবিকে কঠোর আবস্থানে রাখা হয়েছে।
নিরাপওা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ভারত থেকে যাতে কোনো অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে, সেজন্য বিজিবিও টহল ব্যবস্থা জোরদার করেছে।
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে থেমে থাকা রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সে বাসের ধাক্কায় নারীসহ ৫ জন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন আরও ৩ জন। হতাহতের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ মে) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের নীমতলি এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন— আব্দুস সামাদ ফকির, তার ছেলে বিল্লাহ ফকির, মেয়ে আফসানা ও এ্যাম্বুলেন্স চালক। অপরজনের নাম জানা যায়নি।
আহতরা জানান, তাদের বাড়ি মাদারীপুরের সদর উপজেলার মিঠাপুকুর এলাকায়। বিল্লাল ফকিরের স্ত্রী রোজিনা বেগম (৩০) অন্তঃসত্ত্বা। চলতি মাসের ২৩ তারিখ তার বাচ্চা প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ রয়েছে। তবে গতরাত থেকে তার ব্যাথা হচ্ছিল। এজন্য সকালে একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে তাতে পরিবারটির ১০ জন মিলে ঢাকার পথে আসছিলেন। ঢাকার ধানমন্ডি এলাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার কথা ছিল। অ্যাম্বুলেন্সে করে রওনা দেওয়ার পর এক্সপ্রেসওয়ের নীমতলি এলাকায় আসার পর সেটির চাকা ব্লাস্ট হয়ে যায়। এরপর রাস্তার ডান পাশে চাপিয়ে সেটির চাকা মেরামত করছিলেন চালক। আর তারা কয়েকজন অ্যাম্বুলেন্সের ভিতরে বসে ছিলেন, আর কয়েকজন পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। মেরামত প্রায় শেষের দিকে গোল্ডেন লাইন পরিবহনের একটি বাস পিছন থেকে এসে সজোরে অ্যাম্বুলেন্সে ধাক্কা দেয়।
এদিকে, গোল্ডেন লাইন পরিবহনের বাসটির হেল্পার সাইফুল ইসলাম শান্ত জানান, তারা কুষ্টিয়া থেকে যাত্রীবোঝাই বাসটি নিয়ে আসতেছিলেন ঢাকার আব্দুল্লাহপুর এলাকায়। নীমতলি এলাকায় এক্সপ্রেসওয়ের ডান পাশের লেনে দাঁড় করানো ছিল অ্যাম্বুলেন্সটি। তখন দ্রুতগতির বাসটি চালক ফয়সাল (৪০) ব্রেক করেও থামাতে পারেনি। সজোরে গিয়ে ধাক্কা লাগে থেমে থাকা অ্যাম্বুলেন্সের পিছনে।
এদিকে হাসাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী জানান, মাওয়ার নিমতলা এলাকায় একটি অ্যাম্বুলেন্সে বাস ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে একজন মারা যান। আর আহতদের সবাইকে ঢাকা মেডিকেল পাঠান হয়েছে। ঢাকা মেডিকেলে কেউ মারা গিয়েছে কিনা সেটি তার জানা নেই। তবে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। ঘটনাস্থলে যেই নারী নিহত হয়েছেন তার লাশ পুলিশ হেফাজতে আছে। বাস, অ্যাম্বুলেন্স দুটিই জব্দ করা হয়েছে।
ইভটিজিংয়ের অভিযোগকে কেন্দ্র করে মুন্সীগঞ্জের উত্তর ইসলামপুর এলাকায় তিন জনকে হত্যার মামলায় তিন জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক মাসুদ করিম এ রায় দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো—রাকিবুল হাসান সৌরভ ওরফে সৌরভ প্রধান, শিহাব প্রধান এবং রনি বেপারী। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি তাদের এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন—শাকিব প্রধান, শামীম প্রধান, অনিক বেপারী, রায়হান এবং জাহাংগীর ওরফে ছোট জাহাঙ্গীর।
তাদেরকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর বিল্লাল হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।ৎ
এক মেয়েকে ইভটিজিং করা নিয়ে ২০২১ সালের ২৪ মার্চ উত্তর ইসলামপুর এলাকায় আওলাদ হোসেন মিন্টুর বাড়ির সামনে অভি, ইমনসহ অন্যদের নিয়ে সালিশ হয়। সেখানে তাদের ইভটিজিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
পরে উভয় পক্ষের মধ্যে আপস করে দেয়া হয়। তবে, এর কিছু সময় পর অভির নেতৃত্বে কয়েকজন ইমন, শাকিব ও আলফাজের ওপর অতর্কিত হামলা করে। এ সময় ইমন বাঁশ দিয়ে অভিকে আঘাত করতে গেলে তা গিয়ে লাগে সৌরভের গায়ে। সৌরভের সাথে ইমন ও শাকিবের হাতাহাতি হয়।
এ ঘটনায় সৌরভের বাবা জামাল হোসেন আওলাদ হোসেনের কাছে তাৎক্ষণিক বিচার দাবি করে। পরে রাত ১১টার দিকে আবার সালিশে বসেন তারা।
এ সময় জামাল হোসেনের লোকজন আওলাদ হোসেন, আফজাল হক, ইমন, শাকিবদের ওপর হামলা করে। অভি ও শিহাব ইমনকে, রনি আওলাদ হোসেনকে এবং শিহাব শাকিবকে ছুরিকাঘাত করে। তাদের চিৎকারে লোকজন এলে জামালদের লোকজন পালিয়ে যায়। আহত তিন জনকে উদ্ধার করে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক ইমনকে মৃত ঘোষণা করেন।
উন্নত চিকিৎসার জন্য অপর দুই জনকে নেওয়ার পথে শাকিব মারা যান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আওলাদ হোসেন ২৫ মার্চ মারা যান। এ ঘটনায় ২৬ মার্চ আওলাদ হোসেনের স্ত্রী খালেদা আক্তার মুন্সীগঞ্জ থানায় ১২ জনের নামে মামলা করেন।
মামলাটি তদন্ত করে মুন্সীগঞ্জ সিআইডির ইন্সপেক্টর আসলাম আলী অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়।
মামলার বিচার চলাকালে আদালত ২৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
লালদিয়ার চরে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার টার্মিনালে ৮০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)’র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে বার্ষিক এফডিআই ৭০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি নয়। একটি প্রকল্প থেকেই যদি ৮০০ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ আসে, তবে তা আমাদের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। বিডা’র পক্ষ থেকে আমরা এই প্রকল্পের অগ্রগতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।’
বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া চর ও বে টার্মিনাল পরিদর্শন শেষে তিনি একথা বলেন।
এরপর তিনি চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করেন।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিদর্শন শেষে বিডা চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা রাজনৈতিক রাজধানী আর চট্টগ্রাম হবে আমাদের বাণিজ্যিক রাজধানী। বাংলাদেশের যে সম্পূর্ণ উন্নয়ন লক্ষ্যের দিকে আমরা এগুচ্ছি, তার মূল অংশ চট্টগ্রাম। অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য চট্টগ্রাম একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।’
তিনি আরো বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে- দেশের মানুষের জন্য, বিশেষ করে চট্টগ্রামের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করা। অর্থনৈতিক উন্নয়ন সব সরকারের প্রথম এজেন্ডা দেওয়া উচিত আর অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এসব টার্মিনালকে আমরা যত বেশি বিশ্বমানের করতে পারব, তত বেশি ব্যবসার জন্য কন্ট্রিবিউশন করা যাবে।
লালদিয়ার চরে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলার প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আসবে এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এখানে কোনো বিনিয়োগ করা হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ইতিহাস তৈরির সুযোগ আছে। বাংলাদেশকে ম্যানুফেকচারিং হাব করা সরকারের লক্ষ্য। লালদিয়া গ্রিন পোর্ট হবে। ৮০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে। বিষয়টি আমরা খুবই সিরিয়াসলি ট্র্যাক করার চেষ্টা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। পোর্ট ক্যাপাসিটি এখন লিমিটেড। ছয় গুণ করার পরও আমরা ভিয়েতনামের ধারে কাছেও যাব না। তাই এক্সপার্ট প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিতে হবে, যাতে কম জায়গায় বেশি অপারেশন করা যায়। বাংলাদেশকে একটি উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে হলে বন্দরসমূহের উন্নয়ন জরুরি। এজন্য বিশ্বসেরা বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আমাদের কাজ করতে হবে।’
বিডা চেয়ারম্যান জানান, দেশে একটি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গঠনে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং সম্ভাব্য স্থান হিসেবে আনোয়ারা পরিদর্শন করা হয়েছে।
২০২৪ সালে লালদিয়া টার্মিনালে কার্যক্রম শুরু করে এপিএম টার্মিনালস। শুরুতে ৩০০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা থাকলেও আজ বেজা চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়িয়ে ৮০০ মিলিয়ন ডলার করা হয়েছে।
এপি মোলার মায়ের্স্ক-এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালস বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ও সরকার-থেকে-সরকার ভিত্তিতে বিওটি (বিল্ড-অপারেট-ট্রান্সফার) পদ্ধতিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।
খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ৮১ জন ভারতীয় নাগরিককে ঠেলে দিয়েছে (পুশ-ইন) ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ( বিএসএফ)। বুধবার (৭ মে) জেলা প্রশাসন ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জেলার মাটিরাঙ্গার শান্তিপুর সীমান্ত দিয়ে ২৭ জন, পানছড়ি উপজেলার রুপসেন পাড়া সীমান্ত দিয়ে ৩০ জন, তাইন্দংয়ের আচালং বিটিলা বিওপি সীমান্ত দিয়ে ২৩ জন, রামগড় সীমান্ত দিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন ১ জনসহ মোট ৮১ জন বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পুশ-ইন করিয়েছে ভারতীয় বাহিনী।
তাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। জানা যায়, খাগড়াছড়ির পানছড়ি সীমান্তে আসা ৩০ জনকে বুধবার রাত ৮টা নাগাদ পানছড়ির লোগাং বাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। মাটিরাঙ্গায় অনুপ্রবেশকারীদের বিভিন্ন বিওপিতে বিজিবি নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে।
এদিকে, খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা, পানছড়িসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় মুসলিম নাগরিকদের বাংলাদেশে পুশ ইনের ঘটনায় সীমান্তজুড়ে ভয় ও আতঙ্ক ছড়িতে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন যাপন করছেন। দেশের সীমান্ত নিরাপত্তায় বিজিবিকে সর্তক পাহারায় রাখা হয়েছে। টহল জোরদারের পাশাপাশি বিজিবিকে সহায়তা করার জন্য জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে স্থানীয় গ্রামবাসীদের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বুধবার (৭ মে) ৬৬ জন ভারতীয় নাগরিকের অনুপ্রবেশের ঘটনা নিশ্চিত করেছেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক নাজমুন আরা সুলতানা।
তিনি জানান, ‘বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে প্রবেশ করা সবাইকে বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা হেফাজতে রেখেছে বিজিবি। মানবিক সহযোগিতা বিবেচনায় তাদের খাবারের ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। তাদের সব ধরনের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।’
বুধবার (৭ মে) ভোর রাতে ভারতীয় এ নাগরিকদের সীমান্ত পার করে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে বাধ্য করে বিএসএফ। জানা গেছে, ভারতের গুজরাট থেকে প্রায় সাড়ে চার শত জনকে আটক করে দুটি বিমানে তাদের ত্রিপুরায় নিয়ে আসা হয়। পরে বিএসএফের তত্ত্বাবধায়নে গাড়িতে করে পুশ ইনের জন্য বিভিন্ন সীমান্তে জড়ো করা হয় তাদের।
অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে মাটিরাঙ্গা ও পানছড়ি সীমান্তে বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফকে ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
মন্তব্য