পাঁচ বছর বয়সের ইকমরামুল। শারীরিক প্রতিবন্ধী। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার অষ্টগ্রামের বাসিন্দা। বাবা নেই। বাড়িতে শুধু মা আর পাঁচ ভাই।
ইকরামুলের পড়ালেখা করার ইচ্ছে। কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতির কারণে মা তার সেই সাধ পূরণ করতে পারছেন না।
শিশুটির স্বপ্ন পূরণের সারথী প্রচেষ্টা স্কুল ব্রাহ্মণবাড়িয়া। মা এখানে ভর্তি করেছে তাকে।
২০১৭ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই ইউনিয়নের বাসিন্দা পারভীন হকের উদ্যোগে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
তার মেয়ে রোভাইদা হক এখন স্কুলটি পরিচালনা করছেন। তাদের বাড়ির ছাদের উপরেই চলে পাঠদান।
রোভাইদা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে মাস্টার্সের ছাত্রী। শিক্ষার অভাবে যারা ছন্নছাড়া তাদের নিয়েই গড়েছেন স্কুলটি।
ছাত্র সংখ্যা বাড়তে বাড়তে দাঁড়িয়েছে ৪৫ জনে। এই উদ্যোগের কথা ছড়িয়ে পড়ার পর বাবা-মা তাদের ছেলে মেয়েদের নিয়ে আসছেন এই স্কুলে।
কেউ কেউ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার পাশাপাশি এখানেও আসে শিক্ষা নিতে।
প্রচেষ্টা স্কুলে যারা পড়ান তাদের মধ্যে কয়েক জন বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থী। আরও আছেন রোভাইদা হকের বোন রাভিদা হক ও তার মা পারভীন হক।
প্রত্যেক বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার চলে পাঠদান। তবে স্কুলের সনাতন পদ্ধতিতে নয়।
পড়ার ফাঁকে ফাঁকে কেউ শুনাচ্ছেন গল্প, কেউ কেউ করছেন হাসি ঠাট্টা। মাঝে মাঝে দেয়া হয় মজার মজার টিফিন।
এই স্কুল থেকে ঈদেও শিশুদের দেয়া হয় উপহার।
গত মঙ্গলবার শিশুদের দিয়েছে শীতকালীন উপহার। এর মধ্যে ছিল কম্বল, পেন্সিল বক্স, রাবার, রেজার, খাতা, কেচি, সাবান ও পেট্রলিয়াম জেলি।
এ সময় রোভাইদা হকের পরিচালনায় উপস্থিত ছিলেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পারভীন হক, শরীফ আহমেদ খান, নাফিজ হাসান, রাসলে আহমেদ, ক্লিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রতিষ্ঠাতা আবু বক্কর সিদ্দিক, সদস্য সাজিব আহমেদ, কোহিনুর আক্তার, এইচ এম আনসারি, রাকিব হোসেন।
চট্টগ্রাম প্রচেষ্টা স্কুলের শান্ত গুপ্ত, ইয়াছিন, আরাফাত, সাকিব, প্রচেষ্টা স্কুল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদস্য রাভিদা হক, নাফিজ হাসান, রাসেল আহমেদও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষার্থী তামিমা বলে, ‘ভাইয়া-আপুরা আমাদের অনেক আদর করে পড়ায়। আবার পড়ার জন্য আমাদের খাতা-বই-কলম দেয়। শীতের জন্য আমাদেরকে কম্বল দিসে, মেরিল দিসে।’
একটি শিশুর মা বলেন, এই স্কুলে তার মেয়েকে খুব যত্ন নিয়ে পড়ায়। তার কাছ থেকে কোনো টাকা পয়সা নেয় না।
স্কুলটির পরিচালক রোভাইদা হক জানান, প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ নামের একটি বেসরকারি সংস্থার অধীনে এই স্কুলটি খোলা হয়। এর আরেকটি শাখা আছে চট্টগ্রামে।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘পড়াশোনায় শিশুদের মনযোগ ধরে রাখতে যা যা করা দরকার, সে চেষ্টা আমরা করি। … ছড়া, কবিতা পাঠ করার সময় যদি একটু অভিনয় করে দেখানো যায়, তাহলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেটি পড়ার ও মনে রাখার উৎসাহ আরো বেড়ে যায়।’
আরও পড়ুন:সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন দশম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সরকার দেশের ৬৫ হাজার ৫০২ জন প্রধান শিক্ষকের বেতন স্কেল বিদ্যমান ১১তম গ্রেড (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত) এবং ১২তম গ্রেড (প্রশিক্ষণবিহীন) থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণে সম্মতি দিয়েছে।
‘এর ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ করা হল। এ উদ্যোগ প্রধান শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং তাদের সামাজিক মর্যাদা সুসংহত করবে। ফলে তারা প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে আরও সৃজনশীল ও উদ্দীপ্ত ভূমিকা পালন করবেন। এতে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আরও উন্নত ও গতিশীল শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে।’
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, এর মাধ্যমে সরকার প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রতি তার দায়বদ্ধতা ও সম্মান প্রদর্শন করছে। এ পদক্ষেপ প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
‘প্রধান শিক্ষকরা অন্যান্য শিক্ষকমণ্ডলী, অভিভাব ও সকল স্তরের অংশীজনের সহায়তায় প্রাথমিক শিক্ষার মান কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত করবেন, এটি সরকারের প্রত্যাশা।’
এর আগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডে দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার মর্যাদা ও বেতন পাবেন বলে গত ১৩ মার্চ রায় দেয় আপিল বিভাগ।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি করে সেদিন বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের আপিল বেঞ্চ ওই আদেশ দেয়।
২০১৪ সালের ৯ মার্চ তৎকালীন সরকার প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করার ঘোষণা দেয়। ওই দিনই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করলেও পরে মন্ত্রণালয় প্রশিক্ষিত প্রধান শিক্ষকদের জন্য ১১তম ও অপ্রশিক্ষিত প্রধান শিক্ষকদের জন্য ১২তম গ্রেডে বেতন ঠিক করে দেয়। এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতিসহ প্রধান শিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলন করে আসছিল।
পরে গত বছরের ৪ মার্চ ১১তম ও ১২তম গ্রেড নির্ধারণের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি রিয়াজ পারভেজসহ সংক্ষুব্ধ ৪৫ শিক্ষক।
এর আগে ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডসহ গেজেটেড পদমর্যাদা দিতে নির্দেশ দিয়েছিল বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরীর হাই কোর্ট বেঞ্চ। ওই রায়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন উভয় প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১০ম গ্রেড পদমর্যাদায় ২০১৪ সালের ৯ মার্চ থেকে কার্যকর করতে বলা হয়।
এ বিষয়ে সরকারের করা আপিলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে আপিল খারিজ করে দিয়ে ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি রায় দেয় তৎকালীন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ।
হাই কোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগের ওই রায় দীর্ঘ তিন মাসেও কার্যকর না করায় প্রধান শিক্ষকেরা আদালত অবমাননার মামলা করেন।
ওই রায় কার্যকর না করায় কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না তার কারণ দর্শাতে একই বছরের ২৭ জুন হাই কোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ বিবাদীদের এক মাসের সময় দেয়।
পরবর্তীতে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ চূড়ান্ত শুনানি শেষে সিভিল রিভিউ পিটিশনটি নিষ্পত্তি করে গত ১৩ মার্চ রায় দেয়।
দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতনস্কেল দশম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। সোমবার (২৮ জুলাই) অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
এখন থেকে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৫ হাজার ৫০২ জন প্রধান শিক্ষক দশম গ্রেডে বেতনভাতা পাবেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয় দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৫ হাজার ৫০২ জন প্রধান শিক্ষক বিদ্যমান ১১তম গ্রেড (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত) ও ১২তম গ্রেড (প্রশিক্ষণবিহীন) থেকে দশম গ্রেডে উন্নীত করতে সম্মতি দেওয়া হয়েছে।
সারাদেশে সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৪ জুলাইয়ের স্থগিত হওয়া অনুষ্ঠান আগামী ৩১ জুলাই বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ অনুষ্ঠান পালনের জন্য দেশের প্রতিটি প্রাইমারি স্কুল ২ হাজার ৫০০ টাকা করে বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-২ এর অধিশাখার উপসচিব মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন সরকার সই করা এক পত্রে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা ২০২৫’-এর আগামী ২২ থেকে ২৪ জুলাই তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল যা স্থগিত করা হয়েছিল। ওই অনুষ্ঠান আগামী ৩১ জুলাই বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে গত ২২ জুলাই মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা ২০২৫’-এর আগামী ২৪ জুলাই সকল অনুষ্ঠান পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ২৪ জুলাই সারাদেশের সকল প্রাইমারি স্কুলে একযোগে এ অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল।
পাবলিক পরীক্ষার আদলে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে না এবারও। চলতি বছর অষ্টম শ্রেণিতে চালু করা হচ্ছে ১৫ বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া বৃত্তি পরীক্ষা পদ্ধতি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৃত্তি পরীক্ষা চালুর বিষয় নিয়ে সম্প্রতি একটি সভাও করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব নাম প্রকাশ না করে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষা ফের চালু করতে ২০ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বেগম বদরুন নাহার। ঢাকা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা এ বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা পুনঃপ্রবর্তন নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গত বছরও জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা হয়নি। নেওয়া হয়নি বৃত্তি পরীক্ষাও। এ বছর থেকে দীর্ঘসময় পর অষ্টম শ্রেণিতে আবার চালু হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা।
মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা যায়, আগে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া নির্দিষ্ট শতাংশের ছাত্র-ছাত্রীকে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হতো।
বর্তমানে বৃত্তি পরীক্ষার নতুন নীতিমালা এখনো না থাকায় কত শতাংশ শিক্ষার্থীকে এ পরীক্ষায় বসতে পারবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
এর আগে সবশেষ ২০০৯ সালে অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষা নিয়েছিল সরকার। এরপর অষ্টম শ্রেণিতে চালু করা হয় জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা। পাবলিক পরীক্ষার আদলে এই পরীক্ষা নেওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়ে কোচিংনির্ভরতা। ফলে অষ্টম শ্রেণিতে এই পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানানো হচ্ছিল নানা মহল থেকে।
এদিকে অব্যাহত সমালোচনার মুখে ২০২৩ সালে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা না নিয়ে একই সিলেবাসের আদলে অষ্টম শ্রেণিতে বার্ষিক পরীক্ষার নেয় তৎকালীন সরকার। চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর গত বছরও হয়নি জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা। নেওয়া হয়নি বৃত্তি পরীক্ষাও।
সম্প্রতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত এসেছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এবার এলো অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত।
৪৮তম বিসিএস (বিশেষ) পরীক্ষা-২০২৫ এর লিখিত (এমসিকিউ টাইপ) পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (বিপিএসসি) পরীক্ষার্থীদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা জারি করেছে।
বুধবার (১৬ জুলাই) বিপিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) মাসুমা আফরীনের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পরীক্ষার্থীদের সকাল ৮টা থেকে ৯টা ৩০ মিনিটের মধ্যে নির্ধারিত পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের জন্য শুধু প্রবেশপত্র ও কালো কালি ব্যবহৃত বলপেন সঙ্গে রাখা যাবে। ৯টা ৩০ মিনিটে হলের মূল ফটক বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং এর পর আর কোনো পরীক্ষার্থীকে হলে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, পরীক্ষার হলে আসার সময় প্রবেশপত্র ও কালো কালির বলপেন ছাড়া অন্য কোনো নিষিদ্ধ সামগ্রী আনা যাবে না। আনলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এতে পরীক্ষার্থীদের নিজ নিজ প্রবেশপত্রে উল্লিখিত পরীক্ষাকেন্দ্রের নাম দেখে নিশ্চিতভাবে যথাযথ কেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
পরীক্ষার সুষ্ঠু ও শৃঙ্খলাপূর্ণ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে সময় হাতে রেখে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছানোর জন্যও বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য ৪৮তম বিশেষ বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) লিখিত (এমসিকিউ-টাইপ) পরীক্ষা ১৮ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষা শুরু হবে সকাল ১০টায় এবং চলবে দুপুর ১২টা পর্যন্ত।
শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন না নিয়েই পাঠদান এবং এইচএসসি পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণের অভিযোগ উঠেছে সাভারের আশুলিয়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটির এই গাফিলতিতে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১৮৬ জন পরীক্ষার্থী।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সোমবার এই তথ্য জানানো হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা জেলার সাভার উপজেলাধীন আশুলিয়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উচ্চমাধ্যমিক পাঠ্যক্রমে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে সমাজকর্ম, পরিসংখ্যান ও ভূগোল বিষয়ে পাঠদানের কোনো অনুমোদন না থাকায় কলেজ কর্তৃপক্ষ ১৮৬ জন শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন এবং ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফরমপূরণ করেছে কলেজের অনুমোদনপ্রাপ্ত ভিন্ন ৩টি বিষয়ে।
এতে আরো বলা হয়েছে, কলেজ কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা শুরুর অনেক আগেই পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র পেয়েছে এবং তাতে সমাজকর্ম, পরিসংখ্যান ও ভূগোল বিষয়ে পরীক্ষা দানের সুযোগ না থাকা সত্ত্বেও বোর্ডের সঙ্গে তারা কোনোরূপ যোগাযোগ করেনি। আবশ্যিক ৫টি পত্রের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ৯ জুলাই ২০২৫ তারিখে কলেজ কর্তৃপক্ষ বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে ১৮৬ জন পরীক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র পরিবর্তন করে দেয়ার জন্য মৌখিকভাবে অনুরোধ করে। কিন্তু ইতোমধ্যে পূর্ব নির্ধারিত সংখ্যক প্রশ্নপত্র সকল কেন্দ্র সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা হেফাজতে পাঠিয়ে দেয়ায় র্ব্ডো এদের পক্ষে কিছু করার ছিল না।
এতে উল্লেখ করা হয়, আশুলিয়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ছাড়াও ঢাকা বোর্ডের আওতাধীন আরও ৬টি কলেজে অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে। তবে তাদের সংখ্যা মাত্র ২২ জন। অন্যদিকে আশুলিয়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১৮৬ জন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ শতভাগ দায়ী। এ ধরনের অনিয়ম প্রশ্রয় দিলে শিক্ষাঙ্গনে অনিয়ম ও অস্থিরতা আরও বাড়বে এবং চাপের মুখে আরেকটি অনিয়মকে প্রশ্রয় দেয়ার উদাহরণ সৃষ্টি হবে।
যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে যশোর সদর উপজেলার একটি এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্তদের ভুলে রসায়নে ফেল করেছিল ৪৮ জন পরীক্ষার্থী। রসায়ন পরীক্ষার ব্যবহারিক নম্বর যোগ না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়।
ঘটনার তিন দিন পর রবিবার (১৩ জুলাই) ফলাফল সংশোধন করে প্রকাশ করা হয়। সংশোধিত ফলে দেখা যায়, ওই ৪৮ পরীক্ষার্থীর সবাই পাস করেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই জিপিএ-৫ পেয়েছে।
যশোর সদর উপজেলার পুলেরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। ওই কেন্দ্রে পরীক্ষা দেওয়া ৩২৯ শিক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগের ৪৮ জনের রসায়নের ব্যবহারিক নম্বর যোগ না হওয়ায় তাদের ফলাফল ফেল হিসেবে প্রকাশিত হয়েছিল। বিষয়টি বোর্ড কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হলে রোববার সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হয়।
ওই ৪৮ জনের একজন সাড়াপোল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিয়ারাজ ইসলাম। সে জানায়, জিপিএ-৫ পাব বলেই আত্মবিশ্বাস ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) প্রকাশিত ফলে ১০টি বিষয়ের মধ্যে আটটিতে জিপিএ-৫, একটিতে এ গ্রেড এবং রসায়নে ফেল দেখানো হয়। তবে সংশোধিত ফলে তার জিপিএ-৫ এসেছে।
মিয়ারাজ বলে, ‘এই কয়দিন বাবা-মাসহ পরিবারের কারও খাওয়া-ঘুম ছিল না। বাড়ির সবার মন খারাপ ছিল। এখন জিপিএ-৫ পেয়ে সবাই খুব খুশি।’
বোর্ড সূত্রে জানা যায়, যশোর সদরের পুলেরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে এ বছর ছয়টি বিদ্যালয়ের ৩২৯ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগের ৪৮ জন শিক্ষার্থী ছিল।
১০ জুলাই প্রকাশিত ফলাফলে বিজ্ঞান বিভাগের সব শিক্ষার্থীকে রসায়নে অকৃতকার্য দেখানো হয়। ফল বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দেখেন, রসায়নে সবাই ফেল করেছে।
এরপর সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়গুলো কেন্দ্র সচিব খান জাহান আলীর কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি ফল সংশোধনের জন্য যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে আবেদন করেন।
বোর্ডে যাচাই করে দেখা যায়, ওই শিক্ষার্থীদের রসায়ন বিষয়ের ব্যবহারিক নম্বর যুক্ত করা হয়নি। পরে কেন্দ্র থেকে পাঠানো ব্যবহারিক নম্বর যোগ করে রোববার সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হয়।
কেন্দ্র সচিব খান জাহান আলী বলেন, ‘কেন বিজ্ঞান বিভাগের সবার রসায়নে ফেল দেখানো হলো তা আমরা বুঝতে পারিনি। ফল সংশোধনের আবেদন করার পর শিক্ষাবোর্ড গিয়ে সংশোধন করা হয়।’
যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আবদুল মতিন বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে রসায়ন বিষয়ের ব্যবহারিক নম্বর পাঠানো হয়নি। ফলে ৪৮ শিক্ষার্থীর ফলাফল অসম্পূর্ণ ছিল এবং সবার ফল ফেল এসেছে। কেন্দ্রের ভুলেই এমনটা হয়েছে। রোববার সংশোধিত ফল দিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, কেন্দ্রের এই ভুল বা অবহেলার জন্য কেন্দ্র সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য