রংপুর বদরগঞ্জ পৌরসভায় ভোটের আগের রাতেও তুমুল আলোচনা আওয়ামী লীগ তার ঘর ঠিক রাখতে পারবে কি না। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ করা আওয়ামী লীগ নেতা কত ভোট পান, তার ওপর নির্ভর করতে পারে জয় পরাজয়।
এই পৌরসভায় মেয়র পদে প্রার্থী চার জন। নৌকা নিয়ে আছেন আওয়ামী লীগের আহসানুল হক চৌধুরী টুটুল, ধানের শীষ নিয়ে বিএনপির ফিরোজ আহমেদ, হাতপাখা নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের মাসুদ রানা (হাতপাখা) এবং দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়াই করা আওয়ামী লীগেরই নেতা আজিজুল ইসলাম।
এই এলাকায় বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি ও জনসমর্থন বেশি ছিল না কখনও। তবে এবার তারা এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। জাতীয় পার্টির শক্তিশালী অবস্থান থাকলেও এবার দলটির প্রার্থী না থাকার সুফল ঘরে তুলতে চায় দলটি। বিএনপি মনে মনে জাতীয় পার্টির তৃণমূলের সমর্থকরা সরকারবিরোধী। আর তারা ভোট দেবেন তাদেরকেই।
যদিও বিএনপি প্রার্থী অনেকটা নিষ্ক্রিয়। তার দাবি, সরকারি দলের বাধাই এর কারণ।
এই পৌরসভায় সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৬ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৩ জন প্রার্থী হয়েছেন।
পৌরসভায় মোট ভোটার ১৯ হাজার ৭৮২ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ৯ হাজার ৭২২ জন আর নারী ১০ হাজার ৬০ জন।
নৌকা মার্কার প্রার্থী রংপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য আহসানুল হক চৌধুরী ডিউকের ছোট ভাই। তাকে দলের ভেতর থেকে চ্যালেঞ্জ করা আজিজুল ইসলাম ১৯৮৫ থেকে ৮৭ সাল পর্যন্ত ছিলেন বদরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত রংপুর কারমাইকেল কলেজের নির্বাচিত জিএস, ১৯৮৮ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সহসাধারণ সম্পাদক, ৯২ সাল থেকে ৯৫ সাল পর্যন্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসম্পাদক। ২০০৮ সাল পর্যন্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
কিন্তু পদ পদবি নিয়ে অভিমান করে জাতীয় পার্টিও সাবেক সংসদ সদস্য আনিসুর রহমান মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ হয়ে তিনি সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দলে যোগ দেন। পরে ফিরে আসেন।
আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘জনগণের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। সে কারণেই তারা আমার লোকজনকে হুমকি দিচ্ছে। শুধু সুষ্ঠু ভোট হওয়ার অপেক্ষায়। সুষ্ঠু ভোট হলে আমি শতভাগ নিশ্চিত। এর আগের নির্বাচনেও আমাকে কৌশলে মাত্র ১ হাজার ভোটের ব্যবধান দেখিয়ে পরাজিত করেছে।’
আওয়ামী লীগের প্রার্থী আহসানুল হক চৌধুরী টিটুল বলেন, ‘সরকার আমাদের। এমপি আমাদের। আমাদের সরকার ব্যাপক উন্নয়ন করছে। আমি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে বিজয়ী হলে আরও উন্নয়ন করব। আমি মনে করি, লোকজন আমাকে ভোট দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।’
বিএনপি প্রার্থী ফিরোজ আহমেদ বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে তার আশঙ্কা আছে।
এই পৌরসভা গত ২০ বছর ধরেই আওয়ামী লীগের দখলে। তবে এলাকায় যেসব সমস্যা নিয়ে ভোটারদের মধ্যে আলোচনা, তার অনেক কিছুরই সমাধান হয়নি। সড়ক ভাঙা, ড্রেন নির্মাণ হয়নি, পানি নিষ্কাশন আলোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। প্রতিবারই নানা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়, কিন্তু ভোটের পরে খবর নেই।
পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের কুতুবপুর গ্রামের ভ্যানচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হামরা ভোট দিয়ে কী করি। হামার বাড়ির আস্তার (রাস্তার) উপর নদী। সেডি একনা পুল আছে, সেটাও ঠিক করে না। এ্যাকনা ভ্যান নিয়ে যামো তাও যায় না। ভাঙা সড়ক দিয়ে কষ্ট করি ভ্যান নিয়ে যাই। কাইও আস্তা (রাস্তা) ঠিক করে না। হামরাই ঠিক করি যাওয়া আইসে করি। যাই হামাক আস্তা (রাস্তা) ঠিক করি দিবে, তাকে ভোট দেমো। হামরা আস্তা ভালো হলেই হয়।’
সাত নং ওয়ার্ডের স্কুল শিক্ষক জুহুরুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকার তো অনেক উন্নয়ন করছে। আমরা সরকারের লোককে ভোট দিব। ...বৃষ্টি হলেই রাস্তায় এখনো পানি জমে, ড্রেন ঠিক নাই। পানি যায় না ঠিক মতো। এগুলো দ্রুত সমাধান করা দরকার।’
বয়োবৃদ্ধ ব্রজেন চন্দ্র রায় বলেন, ‘ভালো কাম করবে সেমন লোক চাই, কাইও তো ভালো কাম করে না বাহে। ভোট আইসলে ভোট চায়, এটা দেমো সেটা দেমো কিছু তো দেয় না বাহে। বিপদে কাকো পাওয়া যায় না। হামারগুলের পাশোত যাই দাঁড়াইবে তাকেই ভোট দেমু। দেকি কাই কি কয়, কী দিবের চায়, তারপর ভাবিচিন্তি ভোট দেমো।’
পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আসলে স্থানীয় নির্বাচনে মানুষ দল দেখে না, দেখে বিপদে, উপকারে কাকে পাশে পায় তাকেই খোঁজে মানুষ। আমরাও তাই করছি’।
নারী ভোটার শেফালী বেগম বলেন, ‘বাহে ভোট গেইলে তো কাইও আর খোঁজ নেয় না। ডাকেও পাওয়া যায় না। এলা ভোট আইচচে সবাই আসোছে। হামার দাদির জন্যে একনা বিধবা কার্ড করি চাচি, কাইও দেয় না। যাই গরিবের জন্যে কাজ করবে তাহে ভোট দিমো। মার্কা টার্কা বুজি না।’
জেলা নির্বাচন অফিসার দেলোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজুল ইসলাম আমাদেরকে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলেছি। নির্বাচন নিয়ে কোন চাপ নেই। সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি’।
আরও পড়ুন:আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, তার সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করা হবে বলে মন্তব্য করেছন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
রাজধানীর মতিঝিল থানার আয়োজনে সোমবার বিকেলে ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আব্বাস বলেন, ‘নির্বাচনের পর যে দলই ক্ষমতায় আসুক, আমরা একসাথে মিলেমিশে কাজ করব।’
তিনি বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচনে জনগণ যাকে চায় সেই রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। যারা নির্বাচন নিয়ে গড়িমসি করছেন, তারা বিএনপিকে ভয় পায়।’
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘গণহত্যার বিচার হতেই হবে। যারা গণহত্যা করেছে, তারাই এ দেশে মানুষের সকল অধিকার হরণ করেছে।
‘তারা জুলাইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে দেশের শিশু বাচ্চাদেরকে গুলি করে হত্যা করেছে, গুলির নির্দেশ দিয়েছে। তারা কেউ যেন বিচারের হাত থেকে রেহাই না পায়, সেই বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘তবে বিচারের দোহাই দিয়ে নির্বাচনকে দূরে ঠেলে দেওয়া যাবে না। সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচনি প্রক্রিয়া একসাথে চলবে।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার প্রসঙ্গে আব্বাস বলেন, ‘সংস্কার ঘোষণা দিয়ে হয় না। ২০২২ সালে আমাদের নেতা তারেক রহমান ঘোষণা দিয়েছেন। বর্তমান সময়ে যারা দেশকে বিভাজনের মাধ্যমে সংস্কার করতে চান, তাদেরকে বলতে চাই, আমাদের ছোট্ট একটা দেশকে ভাগ করে সংস্কার এ দেশের মানুষ কাম্য নয়।’
আরও পড়ুন:বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নামে করা আটটি মামলার কার্যক্রম বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে।
এসব রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
গত বছরের ৩০ অক্টোবর বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ রুল মঞ্জুর করে রায় দিয়েছিলেন। রায়ে মামলাগুলো বাতিল করা হয়।
উচ্চ আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল প্রমুখ।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার ও রাসেল আহমেদ।
বাস পোড়ানোর অভিযোগে দারুস সালাম থানায় ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০ ফেব্রুয়ারি, ১ মার্চ, ৩ মার্চ এবং যাত্রাবাড়ী থানায় ২৪ জানুয়ারি, ২৩ জানুয়ারি ও ২৪ জানুয়ারি এসব মামলা করা হয়। পরে এসব মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
এ অবস্থায় ২০১৭ সালে পৃথকভাবে মামলার কার্যক্রম বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন বেগম খালেদা জিয়া। তখন হাইকোর্ট রুল জারি করে মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। সেই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল মঞ্জুর করে রায় দেন হাইকোর্ট।
বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবীরা বলেন, আদালত ওইসব মামলায় রুল অ্যাবসলিউট করেছেন। এর অর্থ হলো মামলাগুলো বাতিল হয়ে গেল। এ মামলাগুলো আর থাকল না।
তারা জানান, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে করা এসব বানোয়াট মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
আরও পড়ুন:কিশোরগঞ্জে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নবগঠিত কমিটি।
এতে কমিটির কিশোরগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক ইকরাম হোসেন বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি, স্বৈরাচারের অন্যতম দোসর, তিনি ছিলেন ফ্যাসিস্টের ১৫ বছরের অন্যতম সহযোগী। হাজার হাজার মানুষকে গুম, খুন, হত্যা করে বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেওয়া, আয়নাঘরে বন্দি করেছেন, বনবাসে পাঠিয়েছেন, পাচার করেছেন, নির্মমভাবে অত্যাচার করে হত্যা করার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার যতটুকু দায় রয়েছে, কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল)-এর সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নুরও ততটুকু দায় রয়েছে।
‘স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার অন্যতম সহযোগী চুন্নুর বিরুদ্ধেও কিশোরগঞ্জের ছাত্রসমাজ অবিলম্বে ব্যবস্থা নেবে। সে যে স্পর্ধা দেখাচ্ছে, সে যে মাঠে আসতে চাচ্ছে, আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, তাকে ছাত্রসমাজ রুখে দেবে।’
দুপুরে জেলা পাবলিক লাইব্রেরিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিশোরগঞ্জ জেলার নবগঠিত কমিটির পরিচিতি ও কর্মপরিকল্পনা সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলন হয়।
এর আগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্য সচিব আরিফ সোহেল ৩২১ সদস্যের কমিটির অনুমোদন দেন। এতে ইকরাম হোসেনকে কিশোরগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক ও ফয়সাল প্রিন্সকে সদস্য সচিব করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার উদ্দেশে ইকরাম হোসেন বলেন, ‘দিল্লিতে বসে আপনি যদি কোনো ধরনের চক্রান্ত করেন, ষড়যন্ত্র করেন, তাহলে আপনি ইতিমধ্যে লক্ষ করেছেন, এই তরুণ বিপ্লবীরা ঘুমিয়ে যায় নাই। আপনি যে স্পর্ধা দেখিয়েছেন ছাত্রলীগ, যুবলীগের গুন্ডা বাহিনী, তারা দুই হাজার ছাত্র-জনতাকে শহীদ করার পরও ন্যূনতম তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই, তাদের কোনো অনুশোচনা নেই।
‘আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, যাদের হাতে দুই হাজার ছাত্র-জনতার রক্ত লেগে আছে, যারা ছাত্র-জনতাকে পঙ্গু করেছে, নিঃস্ব করেছে, তাদের আওয়ামী লীগের ব্যানারে কোনো রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। কিশোরগঞ্জেও আওয়ামী লীগের ব্যানারে কোনো রাজনীতি চলবে না। যারাই স্পর্ধা দেখাবে, আমরা তাদের প্রতিহত করব।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সদস্য সচিব ফয়সাল প্রিন্স, মুখ্য সংগঠক শরিফুল হক জয়, মুখপাত্র সাব্বিরুল হক তন্ময়, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন মিয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান রনি, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ইয়াজ ইবনে জসীম, যুগ্ম সদস্য সচিব আদিফুর রহমান, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক রহমত উল্লাহ চৌধুরী হাসিনসহ অনেকে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তাদের একজন বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ পৌরসভায় প্রকল্পের নামে শত শত কোটি টাকা লুটপাট করেছে ফ্যাসিস্টরা। এলজিইডি, রোডস এন্ড হাইওয়ে, পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীরা টাকার পাহাড় গড়েছে।
‘আন্দোলনে নিহত ও আহতদের নিয়ে মামলা বাণিজ্য হয়েছে। আমরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রকৃতপক্ষে যারা দোষী, তাদের বিরুদ্ধেই মামলা করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘৬ মাস পরে কমিটি হইছে। কমিটি দরকার তাই হইছে। আমাদের দরকার দেশকে সংস্কার করা। ৫ আগস্টের পর কারা বাসস্ট্যান্ড দখল করছে, তা কি আমরা জানি না? যতদিন পর্যন্ত দেশটাকে সুন্দর করতে না পারি, ততদিন পর্যন্ত থাকব।
‘আমরা ক্ষমতার জন্য এখানে আসিনি। চাকরির বাজারও দখল করে রেখেছে। মন্ত্রীর ছেলে মন্ত্রী হবে, এমন বাংলাদেশ আমরা চাই না।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুমের শিকার হয়ে গোলাম আযমের মৃত্যু হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা ও মহানগর জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে আয়োজিত জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
নারায়ণগঞ্জের সাবেক এমপি শামীম ওসমানের উদ্দেশে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের তৎকালীন জামায়াতের আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা করে শহরের এক গডফাদার নারায়ণগঞ্জের সড়কে ৭২ ফুট লম্বা ব্যানার টানিয়েছিলেন।
‘ডিসি, এসপির উপস্থিতিতে গডফাদার শামীম ওসমান বলেছিলেন, আমার বিরুদ্ধে খুনের অগ্রিম মামলা করে রাখেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পতিত আওয়ামী সরকারের জুলুমের শিকার হয়ে গোলাম আযম সাহেব মারা যান।’
তিনি বলেন, ‘গডফাদার আজ কোথায়? নারায়ণগঞ্জে নেই। এত অহংকার, দাম্ভিকতা ভালো না। সন্ত্রাসকে কখনও প্রশ্রয় দিতে হয় না। না হলে দুনিয়াতেই তার করুণ পরিণতি ভোগ করতে হয়।’
নারায়ণগঞ্জ মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির মুহাম্মদ আব্দুল জব্বারের সভাপতিত্বে ওই সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, ঢাকা অঞ্চল দক্ষিণের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোবারক হোসাইনসহ অনেকে।
আরও পড়ুন:স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন (এলজিআরডি) ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে বর্তমান সরকার শিগগিরই পদক্ষেপ নেবে।
তিনি বলেন, ‘প্রথমত এটা অত্যন্ত ইতিবাচক যে, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও এক ধরনের ঐকমত্য তৈরি হচ্ছে। দেশের মানুষ তৎকালীন ক্ষমতাসীন ওই দলের অগণতান্ত্রিক এবং একগুঁয়েমি মনোভাব ও কার্যকলাপ মেনে নিতে পারেনি বলেই ৫ আগস্টের আগে ও পরে তাদের মধ্যে দলটি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এমন ঐকমত্য তৈরি হলে সরকারের জন্য যেকোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সহজ হবে।’
বার্তা সংস্থা বাসসকে শুক্রবার দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন আসিফ মাহমুদ।
রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে সরকার শিগগিরই কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, সাধারণ মানুষ কিংবা রাজনৈতিক দল, যে বা যারাই হই না কেন, আমরা এ দেশের জনগণকে রিপ্রেজেন্ট করি। ফলে ৫ আগস্টের পরে জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা ও চাওয়ার জায়গা আছে, সেগুলোকে প্রাধান্য দেওয়াটাই আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। সে জায়গা থেকে বিএনপির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের যে দাবি উঠেছে, আমি বিষয়টিকে সাধুবাদ জানাতে চাই।’
অন্তর্বর্তী সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, ‘বিচারিক প্রক্রিয়া ছাড়াও চারটি আইন রয়েছে, যেখানে সরকার নির্বাহী আদেশে যেকোনো দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে এটার লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্কটা (আইনি কাঠামো) কী হবে, এ বিষয়ে সরকার এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।’
আরও পড়ুন:অভিনেত্রী ও নির্মাতা মেহের আফরোজ শাওনকে হেফাজতে নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
রাজধানীর ধানমন্ডির বাসা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে ডিএমপি ডিবির যুগ্ম কমিশনার তালেবুর রহমান ইউএনবিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, মেহের আফরোজ শাওনকে তার নিজ বাসা থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়েছে। রাষ্ট্রবিরোধী মন্তব্য করার কারণে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
সম্প্রতি শাওনের রাজনৈতিক অবস্থান ও কিছু মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা হয়। এরই মধ্যে আজ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিল ডিবি।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির মঙ্গলবার এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘শেখ হাসিনার শাসনামলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ কর্তৃক সংঘটিত সকল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের যথাযথ বিচার ও সন্ত্রাসীদের সাজা নিশ্চিত করার দাবিতে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।’
এতে বলা হয়, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে ভূমিকা পালনকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ এবং প্রতিষ্ঠানের প্রধান বরাবর স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করা হবে।
মন্তব্য