নওগাঁর সাপাহারে অভিযান চালিয়ে চার ক্লিনিককে ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সোমবার বিকেলে উপজেলা সদরে বিভিন্ন ক্লিনিকে অভিযান চালানো হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহরাব হোসেন।
সোহরাব হোসেন জানান, দি নিউ পপুলার ক্লিনিককে ১৫ হাজার, সিটি ক্লিনিককে ২০ হাজার, জনসেবা ক্লিনিককে ২০ হাজার ও রয়েল ক্লিনিককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অনুমোদন ছাড়া ক্লিনিক পরিচালনা, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও সার্বক্ষণিক প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার-নার্স না থাকায় এসব ক্লিনিককে অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে।
অভিযানে সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রুহুল আমিন, স্যানিটারি অফিসার সাখাওয়াত হোসেন ও সাপাহার থানার পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহরাব হোসেন জানান, জনস্বার্থে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
চট্টগ্রামে নিখোঁজের ৮ দিন পর বুধবার উদ্ধার হয়েছে শিশু আবিদা সুলতানা আয়নীর মরদেহ। আর বস্তাবন্দি এই মরদেহ প্রতিদিন গিয়ে দেখে আসত অভিযুক্ত রুবেল। লোকজনের দৃষ্টির আড়ালে রাখতে সে খড়কুটো দিয়ে ওই বস্তা ঢেকে রাখত নিয়মিত।
বুধবার দুপুরে ডবলমুরিং এলাকায় নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের পুলিশ সুপার (এসপি, চট্টগ্রাম মেট্রো) নাঈমা সুলতানা।
তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন (২১ মার্চ) রাত ৯টার পর আখির মরদেহ বস্তাবন্দি করে সবজির ভ্যানে করে ত্রিফল দিয়ে ঢেকে মুরগি ফার্ম এলাকার ডোবায় ফেলে আসে রুবেল। রাত ১০টার দিকে আঁখির পরিহিত স্যান্ডেল, পায়জামা ও হিজাব কনকা সিএনজি স্টেশনের দক্ষিণ পাশের নালায় ফেলে দেয় সে। ডোবায় মরদেহ ফেলে আসার পর থেকে রুবেল প্রতিদিন মরদেহের অবস্থা দেখে আসত এবং লোকজনের দৃষ্টির আড়ালে রাখতে খড়কুটো দিয়ে ঢেকে দিত।’
২১ মার্চ বিকেলে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানার কাজীর দিঘি এলাকার বাসা থেকে আরবি পড়তে বেরিয়ে নিখোঁজ হয় ১০ বছর বয়সী আবিদা সুলতানা আয়নী ওরফে আঁখি মনি। নিখোঁজের ৮ দিন পর বুধবার ভোরে পার্শ্ববর্তী পুকুরপাড়া মুরগি ফার্ম এলাকার একটি জলাশয় থেকে শিশুটির বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পিবিআই। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হত্যায় জড়িত সন্দেহে সবজি বিক্রেতা রুবেলকে আটক করে পিবিআই।
সংবাদ সম্মেলনে নাঈমা সুলতানা জানান, পাহাড়তলী থানায় দায়ের করা সাধারণ ডায়েরি ও আঁখি মনির মায়ের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২৩ মার্চ ছায়া তদন্ত শুরু করে পিবিআই। সিসিটিভি ফুটেজ ও শিশুটির স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে স্থানীয় সবজি বিক্রেতা রুবেলকে শনাক্ত করে তারা৷
‘মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রুবেলকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে রুবেল আঁখি মনিকে বিড়ালছানার প্রলোভন দেখিয়ে পার্শ্ববর্তী একটি খালি ভবনের চতুর্থ তলায় নিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে। পরে তার দেখানো মতেই মঙ্গলবার ভোরে আঁখি মনির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘আটক রুবেলের স্বীকারোক্তি ও দেখানো মতে মঙ্গলবার ভোর সোয়া ৫টার দিকে পাহাড়তলী থানার মুরগি ফার্ম বাজারের পাশে আলমতারা পুকুর এলাকার ডোবার আবর্জনায় চটের বস্তায় বাঁধা অবস্থায় শিশুটির অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহে কালো রঙের একটি গেঞ্জি ছাড়া আর কোনো কাপড় ছিল না। পরবর্তীতে আটক রুবেলের তথ্যে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পাহাড়তলীর পোর্ট কানেকটিং রোডে কনকা সিএনজি স্টেশনের দক্ষিণ পাশের নালা থেকে শিশুটির স্যান্ডেল, পায়জামা ও হিজাব উদ্ধার করা হয়।
‘তিন মাস আগে স্বামী আবুল হাশেমের সঙ্গে বিয়েবিচ্ছেদ হওয়ায় আঁখি মনিকে নিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে এসে মায়ের বাসায় ওঠেন বিবি ফাতেমা। মেয়েকে স্থানীয় বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে একটি তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরি নেন তিনি।’
পিবিআই এসপি জানান, সবজি বিক্রির সুবাদে আঁখি মনির নানী বিবি খাদিজার সঙ্গে পরিচয় ছিল রুবেলের। মাস তিনেক আগে একটি বিড়ালছানা ধরতে গিয়ে রিকশার সঙ্গে ধাক্কা লাগে আঁখি মনির। তখন শিশুটির সঙ্গে পরিচয় হয় রুবেলের। সব সময় রুবেলের কাছে বিড়ালছানা চাইতো আঁখি, রুবেলও বোনের বাসা থেকে আঁখিকে বিড়ালছানা এনে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
ঘটনার আগের দিন, ২০ মার্চ এক বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে বিড়ালছানা আনতে রুবেলের বাসায় যায় আঁখি। ওইদিন বেলা ১১টায় সবজি বিক্রির সময় নিজেদের বাসার নিচে রুবেলের সঙ্গে কথা হয় আঁখির। সে সময় বিকেলে বিড়ালছানা দেয়ার কথা বলে আঁখিকে পার্শ্ববর্তী একটি নির্দিষ্ট স্থানে যেতে বলে রুবেল।
বিকেলে আঁখি ওই নির্দিষ্ট স্থানে গেলেও রুবেলের দেখা না পেয়ে ফিরে আসে সে। পরদিন স্কুলের সামনে রুবেলকে দেখে বিড়ালছানার কথা জিজ্ঞেস করে সে। ওই সময় স্কুল শেষে আঁখিকে আগের নির্ধারিত স্থানে যেতে বলে রুবেল। স্কুল শেষে আঁখি পোশাক পরিবর্তন করে হিজাব পরে নির্ধারিত স্থানে যায়। হিজাব পরায় শুরুতে রুবেল চিনতে না পারলেও আঁখির ডাকে চিনতে পারে৷ তখন আঁখিকে কৌশলে রুবেল তার ফুফুর ভবনের চতুর্থ তলার খালি বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করে। এ সময় আঁখি চিৎকার করলে গলাটিপে ও বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে রুবেল।
আঁখি হত্যা ও ধর্ষণের প্রতিবাদে সহপাঠীদের মানববন্ধন
চট্টগ্রামে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া আবিদা সুলতানা আয়নী ওরফে আঁখি মনিকে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদ এবং অভিযুক্তের বিচার দাবিতে বুধবার মানববন্ধন করেছে ওর সহপাঠীরা। আয়নীর স্কুল সরাইপাড়া হাজি আব্দুল আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মানববন্ধনে যোগ দেন অভিভাবকরাও।
বুধবার দুপুরে নগরীর পাহাড়তলী থানার সাগরিকা মোড় এলাকায় এই মানববন্ধন হয়।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত রুবেলের ‘ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই’ স্লোগান দিতে থাকে। শিক্ষার্থীদের অভিবাবক এবং শিক্ষকরাও দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘটনায় জড়িত সবজি বিক্রেতা রুবেলের যথোপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান।
আঁখি মনির সহপাঠী সুমাইয়া আক্তার সানজিদার বাবা মো. সেলিম বলেন, ‘এক সময় আমাদের বাসা পাশাপাশি ছিল। কিছুদিন আগে আমরা বাসা চেঞ্জ করে একটু দূরে চলে গেছি। বাচ্চাটি আমার মেয়ের সঙ্গে হাজী আব্দুল আলী স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়তো। দুজনের বন্ধুত্বও ছিল। ঘটনাটি শুনে খুবই খারাপ লাগছে। আমরা খুনির ফাঁসি চাই।’
বর্ষা ও আয়াতের পথ ধরে আয়নী আঁখি
আবিদা সুলতানা আয়নী হত্যাকাণ্ডের আগে চট্টগ্রামে গত বছরের অক্টোবর ও নভেম্বরে নিখোঁজের পর দুটি শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
২৪ অক্টোবর চিপস কিনতে বের হয়ে নগরীর জামালখান এলাকায় নিখোঁজ হয় ৭ বছর বয়সী মার্জনা হক বর্ষা। এর তিন দিন পর একই এলাকার একটি নালা থেকে বর্ষার বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে লক্ষণ দাশ নামের এক দোকান কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এরপর ১৫ নভেম্বর নগরীর ইপিজেড থানার বন্দরটিলা নয়ারহাট বিদ্যুৎ অফিস এলাকার বাসা থেকে পার্শ্ববর্তী মসজিদে আরবি পড়তে যাওয়ার সময় নিখোঁজ হয় আলিনা ইসলাম আয়াত। পরদিন এ ঘটনায় ইপিজেড থানায় নিখোঁজের ডায়েরি করেন তার বাবা সোহেল রানা।
নিখোঁজের ৯ দিন পর সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িত সন্দেহে আয়াতের পরিবারের ভাড়াটিয়া আবির আলীকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে আয়াতকে অপহরণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে বলে আদালতে জবানবন্দি দেয় আবির। এরপর পিবিআইয়ের কয়েক দফা চেষ্টায় নগরীর আকমল আলী সড়কের আশপাশে বিভিন্ন জলাশয় থেকে আয়াতের খণ্ডিত পা ও মাথা উদ্ধার করা হয়। সে সময় আয়াতের ওই মৃত্যুর ঘটনাও নাড়া দেয় সবাইকে।
ধর্ষণ মামলার বাদীকে ৫০ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করে সংসার শুরু করায় পাবনা-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজুকে ধর্ষণের মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫ এর বিচারক বেগম সামছুন্নাহার বুধবার এই অব্যাহতির আদেশ দেন।
এর আগে ১৩ মার্চ একই আদালত বাদীকে বিয়ের শর্তে আরজুকে জামিন দিয়েছিল। সে অনুযায়ী বাদীকে বিয়ে করেন আসামি।
গত বছরের ২২ এপ্রিল শিক্ষানবিশ এক আইনজীবী আদালতে মামলাটি করেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০০০ সালের ডিসেম্বরে বাদীর সঙ্গে প্রথম স্বামীর বিয়েবিচ্ছেদ হয়। সে সময় ওই নারী একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে চাকরি করা অবস্থায় অনেকটা নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করছিলেন। স্বজনরা তাকে ফের বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন।
একপর্যায়ে ২০০১ সালের শেষের দিকে চাচার মাধ্যমে আসামি আরজুর সঙ্গে পরিচয় হয় বাদীর। আরজু নিয়মিত ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তাকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে একপর্যায়ে সফল হন। আরজু তাকে জানান, তার প্রথম পক্ষের স্ত্রী মারা গেছেন। একাকীত্বের অবসান ঘটাতে নতুন সংসার শুরু করতে চান তিনি। ওই নারী আরজুর প্রেমে পড়ে তার বিয়ের প্রস্তাবে সাড়া দেন। ২০০৩ সালের ১০ ডিসেম্বর তারা বিয়ে করেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০০৮ সালের ১৬ জানুয়ারি ওই দম্পতির একটি মেয়ে সন্তান হয়। এ সন্তান গর্ভে আসার সময় থেকে আরজু বিভিন্ন ছলচাতুরির মাধ্যমে ভ্রূণ নষ্ট করার চেষ্টা করেন। ওই নারীর দৃঢ়তায় তার সে চেষ্টা সফল হয়নি।
মামলার বিবরণে আরও বলা হয়, সন্তান হওয়ার পর আরজুর আচার-আচরণে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। তিনি ওই নারীর বাসায় আসা কমিয়ে দেন। এ ছাড়া ফ্ল্যাট কিনে দেয়ার কথা বলে ওই নারীর বাবার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা এবং নারীর জমানো ৮ লাখ টাকা নিলেও ফ্ল্যাট কিনে দেননি আরজু। তিনি টাকাও ফেরত দেননি।
পরে খোঁজ নিয়ে ওই নারী জানতে পারেন, আরজুর প্রথম পক্ষের স্ত্রী জীবিত। তার ঘরে মেয়েসন্তান আছে এবং স্ত্রীর সঙ্গেই থাকেন তিনি।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, আসামি বাদীর কাছে ফারুক হোসেন নামে পরিচয় দিলেও প্রকৃতপক্ষে তার নাম খন্দকার আজিজুল হক আরজু। শারীরিক সম্পর্ক করার জন্যই বিয়ের নামে প্রতারণা করেছেন তিনি। আরজু কয়েকবার নিজে এবং ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে বাদীকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালান। একপর্যায়ে বাদীর সঙ্গে বিয়ে এবং তার ঔরসের সন্তানকে সরাসরি অস্বীকার করেন তিনি।
মামলার তদন্তে বাদীর মেয়ে সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। এতে ওই সন্তান বাদীর গর্ভজাত এবং আরজু তার জন্মদাতা বলে তথ্য-প্রমাণ উঠে আসে।
আরও পড়ুন:কিশোরগঞ্জের নিকলীতে আবাসিক হোটেল থেকে হাসপাতালে নেয়া এক তরুণীকে মৃত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
এ ঘটনায় তরুণীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যুবককে আটক করেছে পুলিশ।
নিকলী সদরের ‘হাওর প্যারাডাইজ’ হোটেল থেকে বুধবার বেলা ১১টার দিকে তরুণীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখান থেকে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে।
২২ বছর বয়সী ওই তরুণীর নাম তামান্না আক্তার। তিনি কুলিয়ারচর উপজেলার পশ্চিম জগন্নাথপুর এলাকার ওয়াহিদ মিয়ার মেয়ে।
এ ঘটনায় আটক ২৯ বছর বয়সী হুয়ামুন কবীরের বাড়ী কটিয়াদী উপজেলার আচমিতা গ্রামে।
নিকলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মনসুর আলী আরিফ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিকলী উপজেলা কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তনুশ্রী সাহা বলেন, ‘বেলা সোয়া ১১টার দিকে স্বামী পরিচয়ে হুমায়ুন কবীর নামে একজন হাসপাতালে তরুণীকে নিয়ে আসেন। তার সঙ্গে আরেকজন লোক ছিল। তিনি হোটেল কর্তৃপক্ষের নাকি অন্য কেউ বলতে পারছি না, তবে এই যুবতীকে হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তার গলায় কালো দাগ পাওয়া গেছে। পরে পুলিশ এসে মরদেহ নিয়ে গেছে।’
এ বিষয়ে কথা বলতে হাওর প্যারাডাইজ হোটেল কর্তৃপক্ষের নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
নিকলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মনসুর আলী আরিফ জানান, গত ২৫ মার্চ হুমায়ুন কবীর ও তামান্না আক্তার স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে হাওর প্যারাডাইজ হোটেলের ৬০৯ নম্বর কক্ষে ওঠেন। আজ সকালে হাসপাতাল থেকে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করে। তরুণীর গলায় কালো দাগ পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে শ্বাসরোধে তার মৃত্যু হয়েছে।
তিনি জানান, এ ঘটনায় স্বামী পরিচয় দেয়া হুমায়ুন কবীরকে হাসপাতাল থেকে আটক করা হয়েছে। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হবে।
আরও পড়ুন:চাঁদপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুই কিশোরের মরদেহ নিয়ে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল।
নিহতদের স্বজন ও হাসপাতালের স্টাফদের মধ্যে বুধবার দুপুরে কয়েক দফা হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। মৃত ঘোষণার পরপরই স্বজনদের মরদেহ নিতে না দেয়ায় হাসপাতালের স্টাফদের ওপর হামলা করে স্বজনরা। এতে হাসপাতালের ৫ জন স্টাফ আহত হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল সূত্র জানায়, চাঁদপুর শহরের পুরান বাজার এলাকার পূর্ব শ্রীরকমদি এলাকায় বুধবার দুপুরে নিহত দুই কিশোরের মরদেহ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সুশান্ত তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
পরে তাদের মরদেহ হাসপাতাল হেফাজতে রেখে দেয়া হয়। কিছুক্ষণ পর স্বজনদের মরদেহ নিতে হাসপাতালের স্টাফদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে। একপর্যায় মরদেহ না দিলে ইমারজেন্সি রুমে এসে স্টাফদের ওপর হামলা করে। এতে দায়িত্বে থাকা ৫ স্টাফ আহত হয়।
এদিকে মমতাজ নামের একজন জানায়, সকালে চাঁদপুর শহরের পুরান বাজার পূর্ব শ্রীরামদী এলাকায় কিশোররা মাঠে ফুটবল খেলছিল। ওই সময় ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে মাঠে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে। এতে খেলার ছলে বিদ্যুতের তার জড়িয়ে দুইজন নিহত হন। এ সময় তাদের উদ্ধার করতে গেলে এক বৃদ্ধ গুরুতর আহত হন।
নিহতরা হলেন, পুরানবাজার পূর্ব শ্রীরকমদি এলাকার শামীম ও মিনহাজ নামের দুই কিশোর। গুরুতর আহত হলে তাদের সদর হাসপাতালে আনার পর ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় হাফেজ খান নামের এক বৃদ্ধ গুরুতর আহত হন।
চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুর রশিদ বলেন, পুরান বাজারের পূর্ব শ্রীরকমদি এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট দুই কিশোরের মরদেহ থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের লোকজন হাসপাতালের স্টাফদের ওপর হামলার ঘটনায় আরিফুল্লাহ নামের এক যুবককে আটক করা হয়েছে। আমরা পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিব।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের উখিয়ায় পাহাড় কাটতে গিয়ে মাটি চাপা পড়ে তিন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। এ সময় আহত হয় আরও দুইজন।
উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের মুহুরী পাড়ায় বুধবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী নিউজবাংলাকে এসব বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহতরা হলেন, কুতুপালং ক্যাম্প ১/ইস্টের বি/১ ব্লকের মোহাম্মদ ওয়ারেসের ছেলে সৈয়দ আকবর, ক্যাম্প ১/ডব্লিউর সি/১৪ ব্লকের জাহিদ হোসেন ও ক্যাম্প ১৭ এর এইচ/১০৭ সাব ব্লকের নুর কবির।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের বরাতে ওসি মোহাম্মদ আলী জানান, পাহাড় কেটে সমতল করার কাজ করছিলেন একদল রোহিঙ্গা শ্রমিক। এ সময় পাহাড়ের মাটি ধ্বসে পড়লে তিন শ্রমিক চাপা পড়েন। এ সময় স্থানীয়রা একজনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে। পরে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আরও দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করে।
উখিয়া ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ইনচার্জ এমদাদুল হক জানান, প্রথমে দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে সৈয়দ আকবরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:পদ্মাসেতুর এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহনের গতিসীমা নিয়ন্ত্রণে শিবচর হাইওয়ে পুলিশের বিশেষ অভিযান চলছে এক্সপ্রেসওয়েতে। মহাসড়কের একাধিক স্থানে হাইওয়ে পুলিশ অবস্থান নিয়ে যানবাহনের গতিসীমা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।
গতিসীমা লঙ্ঘন করায় ৩০টি যানবাহনকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত মামলা দিয়েছে পুলিশ।
জানা গেছে, গত ১৯ মার্চ এক্সপ্রেসওয়ের কতুবপুর এলাকায় ইমাদ পরিবহনের একটি বাস ভয়াবহ দূর্ঘটনার শিকার হলে ১৯ জনের মৃত্যু হয়। এরপর থেকে গতিসীমা নিয়ন্ত্রণে তৎপর হয় হাইওয়ে পুলিশ।
শিবচর হাইওয়ে থানা সূত্র জানিয়েছে, গতিসীমা লঙ্ঘন করায় বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ৩০টি যানবাহনকে মামলা দেয়া হয়। এর আগে গত সোমবার ১৯৪টি এবং গতকাল মঙ্গলবার ১৫৪টি মামলা করে পুলিশ। গতিসীমা নিয়ন্ত্রণে এক্সপ্রেসওয়েতে হাইওয়ে পুলিশের তিনটি টিম একযোগে কাজ করছে।
শিবচর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু নাঈম মো. মোফাজ্জেল হক বলেন, ‘গতিসীমা লঙ্ঘন করায় গত ৩দিনে ৩৭৮টি মামলা হয়েছে। আমাদের একাধিক টিম মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করছে।’
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় এক আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গুরুতর আহত হয়ে জেলার বাজিতপুরে জহুরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এ বিষয়ে তারা কোনো লিখিত অভিযোগ পাননি।
উপজেলার পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের মহিষবেড় এলাকায় নলা বিল থেকে বাড়ি ফেরার পথে রোববার রাত ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
স্বজনরা জানান, অতর্কিত পুলিশি হামলা-নির্যাতনের শিকার হন মো. সিরাজ উদ্দিন। পুলিশের বেধড়ক বুটের লাথি ও লাঠিপেটায় তার বাম পায়ের ঊরুর হাড় ভেঙে যায়। এ ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীল হয়ে গেছে, ফুলে জখম হয়ে যায় তার। এক পর্যায়ে সিরাজের চিৎকার শুনে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় স্থানীয়রা।
গুরুতর আহত ৪৫ বছর বয়সী কৃষক সিরাজ উদ্দিন পাকুন্দিয়া উপজেলার পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা। তার বাবা আশ্রাব আলী এই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি।
সিরাজের ভাই মো. রিয়াজ উদ্দিন জানান, নলা বিলে মাছের খাদ পাহাড়া দিতে যায় তার ভাই সিরাজ। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে এএসআই নুরুল হকসহ অন্য পুলিশ সদস্যেরা পথরোধ করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। এ সময় সিরাজ প্রতিবাদ করায় এএসআই নুরুল হক ক্ষিপ্ত হয়ে সিরাজের বাম উরু লক্ষ্য করে বুট দিয়া লাথি মারে। এ লাথিতে সিরাজের বাম উরুর হাড় ভেঙ্গে গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে পড়ে যান।
তারপর ভাঙ্গা স্থানে আরও কয়েকটি লাথি মারে এবং গলায় পা দিয়া চেপে ধরে নূরুল হক। এ সময় তার সাথে থাকা অন্য পুলিশ সদস্যরাও সিরাজকে মারধর করে। সিরাজের চিৎকার শুনে স্থানীয় বাসিন্দারা এগিয়ে এলে তারা সটকে পড়ে। পরে তাকে উদ্ধার করে ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সিরাজ সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
রিয়াজ উদ্দিন আরও জানান, এ বিষয়ে পাকুন্দিয়া থানায় গিয়ে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি তিনি। তাই এ ঘটনায় আদালতে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
কৃষক সিরাজ উদ্দিনের স্ত্রী জেসমিন আক্তার বলেন, ‘তার স্বামীকে ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসক জানান, তার আঘাতগুলো গুরুতর। অপারেশন লাগতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘তিনটা কন্যা সন্তান নিয়ে এমনিতেই ভালভাবে চলতে পারছিনা। যে মানুষটার উপার্জনে সংসার চলে পুলিশে মেরে সে মানুষটার পা ভেঙ্গে দিয়েছে। এখন খুবই বিপদে আছি। এমন বর্বরোচিত হামলার তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করি।’
৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. মস্তুফা জানান, সিরাজ উদ্দিন খুব ভালো লোক। সে সাবেক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আশ্রব আলীর ছেলে।
তিনি বলেন, ‘কেউ অপরাধ করলে পুলিশ তাকে আটক করতে পারে। তবে তার শরীরে এভাবে আঘাত করতে পারে না। আমি এ ঘটনাটি শুনেই ওই পুলিশ সদস্যের মোবাইলে ফোন করি। ঘটনার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেই সে মোবাইল ফোন কেটে দেয়। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’
এ বিষয়ে কথা বলতে আহুতিয়া তদন্ত কেন্দ্রের সহকারী উপপুলিশ পরিদর্শক নূরুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। তার দাবি তিনি সেখানে যাননি।
পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সারোয়ার জাহান বলেন, ‘এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেনি। অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য