মাঠে চাষ করার মত জমি নাই দুই ছেলে ভ্যান চালিয়ে সংসার চালায়। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা মোবারক হোসেনের পরিবারে। বয়সের ভারে করতে পারেন না ভারী কাজ। একটু একটু করে জমানো টাকা দিয়ে কিনেছিলেন একটি গরু ও একটি ছাগল। স্বপ্ন ছিল কয়েক মাস মোটাতাজা করে বাজারে বিক্রি করে লাভের মুখ দেখবেন। তা আর হলো না।
নওগাঁর মহাদেবপুরে অবৈধভাবে ব্যাটারি পুড়িয়ে সীসা উৎপাদনের একটি কারখানার দূষণের শিকার মোবারকের গরু ও ছাগলটি।
সীসা কারখানার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন স্থানীয়রা ও গবাদি পশু। ধ্বংস হচ্ছে জমির ফসল। ওই এলাকার মাঠের ঘাস খেয়ে গবাদি পশু মারা যাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সরেজমিনে দেখা যায়, নওগাঁর মহাবেপুর উপজেলার খাজুর ইউনিয়নের শাহাজাতপুরে অবস্থিত মেসার্স হাজেরা রাইচ মিলের চারপাশে টিনের তৈরি ঘেরা সীসা কারখানার। কোনো সাইনবোর্ড না থাকলেও কাছে গেলেই বোঝা যায়, ভেতরে রয়েছে একটি কারখানা।
সেখানে পুরনো ব্যাটারি পুড়িয়ে সীসা উৎপাদনের কাজ চলে রাতের অন্ধকারে। কারখানায় ধোঁয়ার কারণে আশপাশের এলাকায় নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। বিভিন্ন রোগে আক্রান্তও হচ্ছে মানুষ। বিশেষ করে আশপাশের জমির আইলের ঘাস খেয়ে এ পর্যন্ত মোবারকসহ স্থানীয় চারজন কৃষকের ছয়টি গরু ও দুটি ছাগল মারা গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
শাহজাদপুর গ্রামের কৃষক মো.মোবারক হোসেন (৬৬) ১৫দিন আগে ১৫ হাজার টাকা একটি গরু কিনেছিলেন মোটাতাজাকরণের জন্য। গত ১২ নভেম্বর সকালে গরু ও ছাগলটিকে ওই কারখানার পাশে জমিতে ঘাস খাওয়ানোর প্রায় দুই ঘণ্টা পর হঠাৎ গরুর মুখ দিয়ে ফেনা উঠতে থাকে। তারপর বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর কিছুক্ষণ পর গরুটি আমার মারা যায় বলে জানান মোবারক। কিছুক্ষণ পর ছাগলটিও বমি করতে করতে মারা যায়। এত দ্রুত মারা যায় যে, চিকিৎসা করানোর সময় পাওয়া যায়নি।
মোবারক বলেন, ‘আমার দুই ছেলে ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। আমাদের খুব অভাবের সংসার। অনেক কষ্ট করে জমানো টাকা দিয়ে গরুটি কিনেছিলাম। আর ছাগল গত এক মাস আগে ৩ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছিলাম। কিছুদিন মোটাতাজা করে বাজারে গরু ও ছাগলকে বিক্রি করব, যাতে করে কয়টা টাকা আয় হয়। কিন্তু আমার আয়ের সম্বল শেষ হয়ে গেল।
‘আমার সুস্থ সবল গরু ও ছাগল মাঠে ঘাস খাওয়ানোর পরেই মারা গেছে। অন্য কোনো রোগ বালাই ছিল না। এর একটিই কারণ ব্যাটারির গলানোর কারণে বিষাক্ত ধোঁয়া জমির ঘাসের সাথে মিশে যায় সেটা খাওয়ার কারণে গরু ও ছাগল মারা গেছে। আমি এর ন্যায় বিচার চাই।’
মোবারক হোসেনের জামাতা মো.শামসুদ্দিন বলেন, ‘পাঁচ দিন আগে সকালে সীসা কারখানার পাশের জমিতে আমার তিনটি গরুকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যাই এর পর দুপুরে গরুকে বাড়িতে নিয়ে আসার কিছুক্ষণ পর গরু তিনটির মুখ দিয়ে বমি হতে থাকে। তার পর মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে থাকে, ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই আমার গরু তিনটি মারা যায়। আমার গরু তিনটির বাজার মূল্য প্রায় দেড় লাখ টাকা।
শাহজাদপুর গ্রামের দিলিপ চন্দ্র রায়, জানান গত ১৫দিন পূর্বে আমার একটি গরু মারা যায় ওই সীসা কারখানার পাশের জমি খাওয়ানোর পর। মুখ দিয়ে ফেনা উঠে গরুটি মারা যায়। আমার সুস্থ গরু কোনো রোগ ছিলনা।
স্থানীয় মুক্তি চন্দ্রা জানান, তিন দিন আগে তার একটি গরু ও একটি ছাগল মারা যায় কারখানার ওখানে জমির ঘাস খেয়ে। কোনো রোগ ছিল না। ঘাস খাওয়ার পর মুখে ফেনা ওঠে মারা যায়।
স্থানীয় খাজুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিউজবাংলাকে বলেন, অবৈধভাবে সীসা গলানো হচ্ছে জানার পর ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার আরিফুল ইসলামকে সেই সীসা কারখানায় কয়েক দিন আগে পাঠালে কারখানার সবাই পালিয়ে যায়। আর যাদের গরু ছাগল মারা গেছে তারা কেউই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে নাই। তারপরও আমি খোঁজ নিয়ে বিষয়টি দেখব।
সীসা কারখানার মালিক বগুড়া সদরের বাসিন্দা আরিফ হোসেনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তারা তো মাত্র চলতি মাসের সাত দিন সীসা গলানোর কাজ করছিলেন। পরে স্থানীয়দের নানা অভিযোগের কারণে কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
‘তবে আমার সীসা গলানোর কারণে ধোঁয়া জমির ঘাসে মিশে যাওয়ার কারণে সেটা খেয়ে গবাদি পশু মারা গেছে কি-না তা আমার জানা নেই।’
সীসা কারখানা চালানোর জন্য প্রশাসনিক অনুমতি ছিল কিনা জানতে চাইলে, ‘অনেকেই তো নিয়মনীতির বাহিরে গিয়ে এমন কাজ করছে। তাদের কি অনুমতি নেয়া আছে’ বলে ফোন রেখে দেন আরিফ।
জাহেরা রাইচ মিলের মালিক হেমায়েত হোসেন ঝন্টু বলেন, ‘স্থানীয়দের গবাদি পশু মারা যাচ্ছে সেই সঙ্গে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে এমন অভিযোগ স্থানীদের কাছ থেকে পাওয়ার পর আমি গত বৃহস্পতিবার আমার রাইচ মিলে ব্যাটারি গলানো বন্ধ করে দেই।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো.মহির উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, পর্যাপ্ত নিয়মকানুন না মেনে খোলা পরিবেশে ব্যাটারি পুড়িয়ে সীসা উৎপাদনের কারণে সেটার বর্জ্য ও ধোঁয়া পরিবেশে যায়, যা পরিবেশ, মানুষ ও গবাদিপশু পাখির মারাত্মক ক্ষতি করে।’
এ বিষয়ে মহাদেবপুর উপজেলা নিবার্হী অফিসার ( ইউএনও ) মো. মিজানুর রহমান ফোনে নিউজবাংলাকে জানান, অবৈধ সীসা কারখানার বিষয়ে জানা নেই। তবে অভিযোগ পেলে আমি অবশ্যই প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
আরও পড়ুন:সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব নিয়ে চলমান বিরোধের জেরে ক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেমসহ সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৩০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, ক্লাবের কথিত সভাপতি মাদকাসক্ত আওয়ামী দোসর আবু সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আল ইমরান ও অমিত ঘোষ বাপ্পাসহ ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা এই হামলা চালায়।
সোমবার (৩০ জুন) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এই হামলায় ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম, ভোরের আকাশের সাংবাদিক আমিনুর রহমান, ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক বেলাল হোসেন, অনির্বানের সোহরাব হোসেনসহ অন্তত ৩০ সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন।
হামলার শিকার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রেসক্লাবে একটি সভা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে আবু সাঈদ ও আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আলিপুর থেকে আনা ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা আমাদের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করে। তাদের হামলায় আমাদের অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক ও সদস্য আহত হয়েছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আবু সাঈদ ও আব্দুল বারী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে প্রেসক্লাব দখল করে রেখেছেন এবং তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই এভাবে হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়।
এই ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় সাতক্ষীরার সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সাংবাদিকরা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনার পর থেকে প্রেসক্লাব এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বাজেট ঘোষণা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দাউদকান্দি পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম।
সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে পৌরসভা হলরুমে এ বাজেট ঘোষণা করা হয়। বাজেটে সর্বমোট আয় ৪২ কোটি ৯১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ও মোট ব্যয় ৩৬ কোটি ৭৪ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়। পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম তার প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে রাজস্ব খাত থেকে ১৩ কোটি ২৩ লাখ ৪১ হাজার ৩ শত ৩১ টাকা ও উন্নয়ন খাত থেকে ২৯ কোটি ৬৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৫ টাকা আহরনের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। বাজেটে উদ্ধৃত্ত ধরা হয়েছে ৬ কোটি ১৭ লাখ ২ হাজার ৩ শত ৭৮ টাকা।
এছাড়াও বাজেটে খাতওয়ারী ব্যয়ের হিসেবে দেখা যায় রাজস্ব খাতে ব্যয় ৯ কোটি ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.হাবিবুর রহমান,পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম, হিসাবরক্ষক শাহাদাত হোসেনসহ পৌরসভার অন্যান্য কর্মকর্তারা।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মাদকাসক্ত হয়ে মাতলামি করার প্রতিবাদ করায় ইয়াছিন (৩৮) ও সিপন( ৩২) নামে দুই যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অপরজনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার মুড়াপাড়া টঙ্গীরঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ ইয়াছিন মুড়াপাড়ার হাউলিপাড়া এলাকার ইদু মিয়ার ছেলে এবং সিপন টঙ্গীরঘাট এলাকার আলাউদ্দিনের ছেলে।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানান, রাত ১১টার দিকে ইয়াছিন তার স্ত্রীকে নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে খালাতো বোনের বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে স্থানীয় সোহরাব নামের এক যুবক মাদকাসক্ত অবস্থায় তাদের উদ্দেশে গালিগালাজ করলে ইয়াছিন প্রতিবাদ করেন। পরে তিনি খালাতো ভাই সিপনকে নিয়ে স্থানীয় অহিদুল্লার বাড়িতে গিয়ে ঘটনার কথা জানান। সেখানেই সোহরাব ক্ষিপ্ত হয়ে পিস্তল দিয়ে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ইয়াছিনের মাথায় ও সিপনের পায়ে গুলি লাগে।
তাদের প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সিপনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ইয়াছিনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা উদ্ধার করেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
নোয়াখালীতে গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক সচরতা বৃদ্ধিতে স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের অংশ গ্রহণের সমন্বিত পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বুধবার সকাল ১১ টার দিকে (২৫ জুন) জেলা প্রশাসকের কার্যালয় তৃতীয় তলায় মিনি কনফারেন্স হলরুমে কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন,নোয়াখালী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইয়াসিন, গ্রাম আদালত নোয়াখালী ম্যানেজার আহসানুল্লাহ চৌধুরী মামুনসহ এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ,সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একটি বিচারাধীন মামলার নথি থেকে এজাহারের কপি রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে গেছে। আদালতের নথি থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই কাগজ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে মামলার বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির ও আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুলকে শোকজ করেছেন বিচারক। তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ঘটনাটি ঘটে গত ২২ জুন যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে। ওই দিন মামলাটির (এসসি-১৬৬৯/২০১৮) সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য নির্ধারিত ছিল। আদালতে আসামি, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ও আসামিপক্ষের আইনজীবী—সবাই উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে বিচারক মো. সালেহুজ্জামান মামলার নথি পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান, নথিতে মামলার এজাহারের কপি নেই। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি আদালতের বেঞ্চ সহকারীকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি জানান, সাক্ষ্য গ্রহণের আগে আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল তার কাছ থেকে নথি নিয়ে গিয়েছিলেন এবং এজাহার দেখে প্রয়োজনীয় তথ্য লিখে নিয়েছিলেন। এরপর তিনি আবার নথি বিচারকের কাছে জমা দেন।
এরপর এজলাসেই বিচারক আইনজীবীর কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারাসহ সিনিয়র আইনজীবীরা এজলাসে হাজির হন। একপর্যায় বিচারক ওই দুইজনকে শোকজ করে আগামী ১৩ আগস্ট মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিচারক এজলাসে ওঠার আগে আইনজীবী মামলার নথি নিয়েছিলেন। পরে ফেরত দেন। আমি নিজে নথিতে কোনো হেরফের করিনি। আইনজীবী কিংবা আইনজীবীর সহকারীর মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটতে পারে।’
অন্যদিকে, আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল জানান, তিনি নথি নিয়েছিলেন ঠিকই, তবে বিচারক এজলাসে চলে আসায় তা যথাযথভাবে বেঞ্চ সহকারীর কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি আসামির চালান কপি থেকে তথ্য নিয়েছেন। এজাহার সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলেও দাবি করেন।
যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ গফুর বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের নজরে এসেছে। একজন আইনজীবী এমন কাজ করতে পারেন না। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছি।’
আদালত ও আইনজীবী সমিতি সূত্র আরও জানায়, আদালতে থাকা মামলার মুল কপি থেকে মামলার এজাহারের কপি সরিয়ে নিয়ে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই। এ ছাড়া এজাহার কপি হারিয়ে গেলেও মামলার বিচারের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ ওই মামলার এজাহারের ফটোকপি রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির কাছে সংরক্ষিত থাকে। এর বাইরেও অনেক মাধ্যমে মামলার এজাহারের কপি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তবে, মুল নথিতে এজাহারের কপি না থাকাটা সমীচীন নয়। এ বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে জানায় সূত্র।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে মিজানুর রহমান রিপন (৪৮) নামের এক স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীকে মারধর ও লাঞ্চিতের ঘটনা ঘটেছে। মিজানুর রহমান রিপন ফিলিপনগর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে।
গত রবিবার সন্ধার দিকে দৌলতপুর উপজেলা পরিষদ বাজারে এই ঘটনা ঘটে। মিজানুর রহমান রিপন ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আমর সংবাদ পত্রিকার দৌলতপুর উপজেলা প্রতিনিধি ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল ডেইলি নিউজ বাংলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে কাজ করে আসছেন। এঘটনায় ওই দিন রাতে ভূক্তভুগী নিজে বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় একটি লিখিত এজাহার দায়ের করেন।
এযাহার সূত্রে জানাযায়, গত ৮ জুন উপজেলার তারাগুনিয়া থানার মোড় এলাকার তারাগুনিয়া ক্লিনিকে আখি খাতুন (২২) নামের এক প্রশুতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় তিনি সহ উপজেলার বেশ কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী সংবাদ প্রকাশ করে। তারি জের ধরে উপজেলা বাজারে থাকা সরকার নিষিদ্ধ ক্লিনিক বেবি নার্সিং হোম এর মালিক আহসান হাবিব কালুর ছোট ছেলে খালিদ হাসান আর্জু উপজেলা বাজারে তাকে মারধর করে।
এবিষয়ে মিজানুর রহমান নামের ওই গণমাধ্যম কর্মী বলেন, গতকাল বিকেলে আমি উপজেলা বাজারে বাড়ির দৈনন্দিন বাজার করছিলাম এসময় খালিদ হাসান আর্জু উপজেলা বাজারের বেবী ক্লিনিক মালিকের ছেলে আমার উপর হামলা চালায়। এসময় সে আমাকে বলে আমার হাসপাতালে যে ডাক্তার আসে সেই ডাক্তারের নামে তুরা নিউজ করেছিস বলে আমার উপর হামলা চালিয়ে বেদড়ক মারধর করে। এঘটনার পর আমি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
গণমাধ্যম কর্মীকে মারধরের বিষয়ে, দৌলতপুর উপজেলার একজন প্রবীন গণমাধ্যম কর্মী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে এটি কখনই কাম্য নয়। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নেওয়া উচিৎ।
এঘটনায় দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি নাজমুল হুদা জানান, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
অভিযুক্ত খালিদ হাসান আর্জু
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী কর্তৃক ফেনী এলাকায় গত '২৪ এর ভয়াবহ বন্যা পরবর্তী বিভিন্ন উন্নয়নমূলক, সংস্কার ও পুর্নগঠন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে।
সোমবার (২৩ জুন) সকাল ১১ টায় ফেনী ছাগলনাইয়া উপজেলার ঘোপাল ইউনিয়নের দুর্গাপুরে হাবিব উল্যাহ খাঁন উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ উপলক্ষে এক আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন, বিবিপি, ওএসপি, জিইউপি, এনএসডব্লিউসি, পিএসসি।
বিমান বাহিনী প্রধান ফেনী এলাকায় বন্যা পরবর্তী উন্নয়নমূলক সংস্কার ও পুর্নগঠন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুদানের চেক হস্তান্তর করেন। হাবিব উল্যাহ খান উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বৃক্ষরোপণ ও পরে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেন। উদ্বোধন উপলক্ষে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সহায়তায় ছাগলনাইয়া উপজেলার হাবিব উল্যাহ খান উচ্চ বিদ্যালয় এর নবনির্মিত শাহীন ভবন উদ্বোধন এবং দুর্গাপুর সিংহনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নুরুল কোরআন ইসলামিয়া মাদ্রাসার উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করেন।
এ ছাড়া বিমান বাহিনী কর্তৃক ফেনী জেলার বন্যা দুর্গতদের সহায়তায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম, বন্যা দুর্গতদের জন্য মেডিকেল সেবা পরিচালনা ও চিকিৎসা সেবা সহায়তা প্রদান কার্যক্রম পরিদর্শন ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন বিমান বাহিনী প্রধান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিমান বাহিনী প্রধান ফেনী জেলায় ২০২৪ সালের আকস্মিক বন্যাকালীন ও বন্যা পরবর্তী সময়ে বিমান বাহিনীর ভুমিকার ভূয়সী প্রসংশা করেন এবং পাশাপাশি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে যে সকল প্রতিষ্ঠান আর্থিক, ত্রাণ ও বিভিন্নভাবে সার্বিক সহায়তা প্রদান করেছেন তাদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বিমান বাহিনীর উন্নয়ন কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতেও বিমান বাহিনী দেশ ও জনগণের পাশে থাকবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন।
তিনি আরো বলেন, বন্যার সাথে তৎকালীন বৈরী আবহাওয়া ও বিছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী পেশাদারিত্বের সাথে বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসে, যা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং ছিল। এ পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা দিকনির্দেশনায় এবং বিমান বাহিনী প্রধানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ভয়াবহ এ বন্যাদুর্গত কুমিল্লা, নোয়াখালী এবং বিশেষ করে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ফেনী জেলায় হেলিকপ্টার ও ইউএভি এর মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে এরিয়াল রেকোনাইসেন্স মিশন পরিচালনা করে বন্যা দুর্গত মানুষের সহায়তায় প্রয়োজনীয় জরুরী উদ্ধার, ত্রাণ বিতরণ ও চিকিৎসা কার্যক্রমে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
বিমান বাহিনীর সূত্র জানায়, সামগ্রিকভাবে বিমান বাহিনী বন্যা পরবর্তী এ পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী উপজেলার বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এতিমখানা, ধর্মীয় উপাসনালয় ও রাস্তা-ঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ এবং সংস্কার কার্যক্রম ইতিমধ্যে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া, দূর্গাপুর, ছাগলনাইয়্যা-এ অবস্থিত হাবিব উল্যাহ্ খান উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্রমবর্ধমান ছাত্র-ছাত্রী ও স্থানীয় জনসাধারণের চাহিদা বিবেচনা করতঃ শাহীন ভবন নামে একটি চারতলা ভিত বিশিষ্ট দুইতলা ভবন আসবাবপত্রসহ নির্মাণ করা হয়েছে, যেটি দুর্যোগকালীন সময়ে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে। এ উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করেছে ঢাকাস্থ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশার ও বিমান বাহিনী ঘাঁটি একে খন্দকার।
অনুষ্ঠানে সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (প্রশাসন), বিমান ঘাঁটি বাশারের এয়ার অধিনায়ক, বিমান বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকতাবৃন্দ, ফেনী জেলা প্রশাসক, সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য