বিশ্ব খাদ্যব্যবস্থায় প্রোটিন অন্যতম অপরিহার্য উপাদান। এক্ষেত্রে ডিমকে বলা হয় সবচেয়ে সহজলভ্য, সাশ্রয়ী ও পুষ্টিকর উৎস। মানবজাতির সুস্বাস্থ্য, শিশুর বৃদ্ধি ও মস্তিষ্কের বিকাশে ডিমের গুরুত্ব অপরিসীম। ডিমকে বিশ্বে একটি উন্নতমানের ও সহজলভ্য আমিষজাতীয় খাদ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে ১৯৬৪ সালে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এগ কমিশন (আইইসি) গঠিত হয়। বর্তমানে এই সংস্থার সদস্য সংখ্যা ৮০। সংস্থাটি প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ, স্বাস্থ্যবান ও মেধাবী জাতি গঠন এবং সর্বোপরি ডিমের গুণাগুণ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় প্রথম ‘বিশ্ব ডিম দিবস’ আয়োজন করে, যা পরবর্তী সময়ে প্রতি বছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডিম দিবস। এ বছর বিশ্ব ডিম দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শক্তিশালী ডিম- প্রাকৃতিক পুষ্টিতে ভরপুর’-প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ কেন্দ্রীয় কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) এবং ওয়াপসা-বিবি যৌথভাবে বিশ্ব ডিম দিবস-২০২৫ পালন করছে। বিশ্ব ডিম দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো- বিশ্বজুড়ে মানুষকে ডিমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে সচেতন করা, সাশ্রয়ী মূল্যে উচ্চমানের প্রোটিন ও অপরিহার্য পুষ্টি সরবরাহে ডিমের ভূমিকা তুলে ধরা এবং সব বয়স ও শ্রেণির মানুষের খাদ্য তালিকায় ডিমকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা।
ডিম সুস্বাদু আর সহজলভ্য এক খাবার, যাকে একটি পরিপূর্ণ খাবার হিসেবে গণ্য করা হয় । এতে রয়েছে আমাদের শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয় ১৩টি পুষ্টিগুণ। ডিম সাশ্রয়ী মূল্যে প্রাণিজ প্রোটিনের মধ্যে অন্যতম। ডিমকে বলা হয় ‘গরিবের প্রোটিন’। আবার টেকসই প্রাণিজ প্রোটিনের মধ্যে এর স্থান সবার উপরে।এজন্য একে ‘নিউট্রিয়েন্ট পিল’ বলেও অভিহিত করা হয়। ডিমে থাকা উচ্চমানের প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ ও অ্যামিনো অ্যাসিড শরীরের সুষম বিকাশে অপরিহার্য ভূমিকা রাখে। এটি শুধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে না, বরং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ও মনোযোগ বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। তাই দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় ডিমকে যুক্ত করা মানে এক সহজলভ্য ও প্রাকৃতিক পুষ্টির উৎস নিশ্চিত করা।
বর্তমানে বাংলাদেশে অপুষ্টির হার, মা ও নবজাতকের মৃত্যু হার কমেছে। পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশুদের মধ্যে খর্বাকায় ও কম ওজনের শিশুর সংখ্যাও কমেছে। এর বিপরীতে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগে আমাদের দেশে মাথাপিছু ডিম খাওয়ার সংখ্যা ছিল বছরে গড়ে মাত্র ১০ থেকে ১৫টি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে এ সংখ্যা ১৩৭টি। দেশে দৈনিক ডিম উৎপাদিত হচ্ছে বছরে প্রায় ৬ কোটি ৬৮ লাখ। ২০৩১ সাল নাগাদ ডিম খাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বছরে জনপ্রতি ১৬৫টি।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের প্রাণিসম্পদ খাত জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। এ খাতের জিডিপিতে অবদান ১.৮১ শতাংশ এবং প্রবৃদ্ধির হার ৩.১৯ শতাংশ। কৃষিজ জিডিপির মধ্যে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান ১৬.৫৪ শতাংশ, যা সামগ্রিক কৃষি অর্থনীতিতে এর গুরুত্ব প্রতিফলিত করে। বর্তমানে দেশে প্রায় আড়াই কোটি গরু, ১৫ লাখ মহিষ, ৩ কোটি ছাগল-ভেড়া এবং ৪০ কোটি হাঁস-মুরগি রয়েছে। এ সকল গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির উৎপাদনের মাধ্যমে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে ১৫৫ লক্ষ মেট্রিক টন দুধ, ৮৯.৫৪ লাখ মেট্রিক টন মাংস এবং ২৪৪০ কোটি ডিম উৎপাদিত হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রাণিসম্পদ খাতের ধারাবাহিক উন্নতির ফলে গত এক দশকে ডিম উৎপাদনে অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২৪–২৫ অর্থবছরে দেশে মোট ডিম উৎপাদন হয়েছে ২৪৪০ কোটি, যা এক দশক আগের তুলনায় প্রায় ২.১৬ গুণ বেশি। প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে গত ৯ অর্থবছরের উৎপাদন প্রবণতা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১,৪৯৩.৩১ কোটি, ২০১৭-১৮ অর্বছরে ১,৫৫২ কোটি, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১,৭১১ কোটি, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১,৭৩৬ কোটি, ২০২০-২১ অর্থ বছরে ২,০৫৭.৬৪ কোটি, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২,৩৩৫.৩৫ কোটি, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২,৩৩৭.৬৩ কোটি, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২,৩৭৪.৯৭ কোটি এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২৪৪০ কোটি ডিম উৎপাদিত হয়েছে। ডিম উৎপাদনের এই ধারাবাহিক বৃদ্ধি দেশের মানুষের পুষ্টি ও প্রোটিন চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশে জনপ্রতি ডিম প্রাপ্যতা বছরে ১৩৭টি, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় একটি ইতিবাচক অগ্রগতি। ডায়েটিশিয়ানদের পরামর্শ অনুসারে, একজন পুরুষ সুস্থ জীবনযাপন এবং পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য প্রতিদিন ১টি ডিম খেতে পারেন। ডিম উৎপাদন বৃদ্ধির এই সফলতা এসেছে সরকারি নীতিসহায়তা, আধুনিক খামারব্যবস্থা, বাচ্চা মুরগি ও খাদ্য উৎপাদনে বিনিয়োগ এবং কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে। বর্তমানে ডিম শুধু একটি পুষ্টিকর খাবার নয়, বরং এটি গ্রামীণ অর্থনীতিতে কর্মসংস্থান, খাদ্য নিরাপত্তা ও দারিদ্র্য বিমোচনে বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়নে এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ভূমিকা রাখছে। এই উৎপাদন প্রবৃদ্ধি শুধু দেশের পুষ্টি নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করেনি, বরং গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশে এ খাতে বর্তমানে প্রায় ৬০ লাখ মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে - যার প্রায় ৪০ শতাংশই নারী। গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন ও নারীর ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে দেশীয় পোল্ট্রি শিল্প। মাত্র চার যুগের ব্যবধানে সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর এ খাতটি এখন অনেকটাই আত্মনির্ভরশীলতার দ্বারপ্রান্তে। বর্তমানে পোল্ট্রি মাংস, ডিম, একদিন বয়সি বাচ্চা এবং ফিডের শতভাগ চাহিদা মেটাচ্ছে দেশীয় পোল্ট্রি শিল্প। সাধারন গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জন্য স্বল্পমূল্যে প্রাণিজ আমিষের যোগান দিচ্ছে পোল্ট্রি শিল্প। বাংলাদেশের প্রান্তিক খামারিরা এখনো মোট ডিম উৎপাদনের বড় অংশ যোগান দিয়ে থাকে।
বর্তমানে পোল্ট্রি শিল্প বিকাশে অন্যতম প্রধান অন্তরায় হচ্ছে পোল্ট্রি ফিডের উচ্চ মূল্য। এ কারণে অনেক প্রান্তিক পোল্ট্রি খামারি আশানুরূপ মুনাফা করতে না পারায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রলায়জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় করে কাজ করে যাচ্ছে।
দেশে মাংস, দুধ ও ডিমের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর এবং পোল্ট্রি শিল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অংশীজনের অংশগ্রহণে একাধিক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব সভার আলোচনার ভিত্তিতে একটি বহুমুখী সিদ্ধান্তে উপনীত হয় সরকার। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এবং পোল্ট্রি শিল্পের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পরামর্শে ২০২৪ সালের জন্য মুরগি ও ডিমের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে কৃষি মন্ত্রণালয় সেই প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত মূল্য বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেয়।
একদিন বয়সী বাচ্চা মুরগির উৎপাদন, সরবরাহ ও বিক্রয়মূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশকে একটি কৌশলপত্রের নির্দেশনা অনুসরণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, পোল্ট্রি ফিডের মূল্য কমিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ যৌথভাবে কাজ করছে। ইতোমধ্যে প্রতি কেজি ফিডের দাম ২ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত হ্রাস করা হয়েছে, যা প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ কমাতে সহায়তা করছে।
প্রাণিজ প্রোটিনের প্রাপ্যতা বৃদ্ধি ও গ্রামীণ অর্থনীতি সচল রাখতে সরকার আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা, ভিরুলেন্ট নিউক্যাসেল ডিজিজ ও ইনফেকশাস ব্রঙ্কাইটিসসহ নতুন রোগের ঝুঁকি কমাতে ভ্যাকসিন উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রম চলছে।
খামারিদের উৎপাদন ব্যয় কমাতে বিদ্যুৎ বিলে কৃষির ন্যায় ২০ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা চলছে। একই সঙ্গে সারা বছরব্যাপী সুলভ মূল্যে নিরাপদ ডিম সরবরাহের জন্য সংরক্ষণাগার স্থাপনের লক্ষ্যে একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন সম্পর্কিত আইন ও নীতিমালা যুগোপযোগী করার নির্দেশনাও দিয়েছে সরকার। এছাড়া, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সয়াবিন তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সয়াবিন ও এর উপজাতের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ প্রেরণ করেছে।
এসব উদ্যোগের মাধ্যমে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় দেশের প্রাণিজ আমিষ উৎপাদনে স্থিতিশীলতা, ন্যায্যমূল্য এবং প্রান্তিক খামারিদের টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে-যা পুষ্টি নিরাপত্তা ও গ্রামীণ অর্থনীতির জন্য এক ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
মেধাবী ও সবনির্ভর বাংলাদেশ বিনির্মাণে এবং ধনী-দরিদ্রের পুষ্টির বৈষম্য নিরসণকল্পে গরিবের প্রোটিনখ্যাত ডিম উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমাদেরকে আরো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে। এ ব্যাপারে প্রাণিসম্পদ খাতসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের সার্বিক সহযোগিতায় তা বাস্তবায়ন সম্ভব।
লেখক: মো: মামুন হাসান, সিনিয়র তথ্য অফিসার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
৫ আগস্ট ২০২৪ বিপ্লবের সূত্র ধরে অন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতার আসার পর বিশেষ একটি পতিত দল এবং এর দোসর প্রতিবেশী দেশে বিভিন্ন আঙ্গিকে দেশকে অস্থিতিশীল করতে ওঠে পড়ে লেগেছে। কিছুতেই সুবিধা করতে পারছে না বলে শেষ পর্যন্ত ২ লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণ জাল নোট দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য জঘন্য খেলায় মেতে উঠেছে। আর এই চক্রান্ত কাতারভিত্তিক একটি সংবাদ মাধ্যমে জানানো হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে এই অপকর্মে সরাসরি মদদ দিচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশের একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দেশটির নিজস্ব মুদ্রা ছাপানোর ব্যবস্থায় নকল মুদ্রা তৈরি করে দিচ্ছে তারা। এছাড়া বাংলাদেশের টাকশালে ব্যবহৃত মেশিন ও যন্ত্রাংশ ওই দেশেই তৈরি। সেই মেশিনও এ কাজে ব্যবহৃত হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে জাল মুদ্রায় ব্যবহৃত কাগজ এবং বাংলাদেশের নোটের কাগজ একই হওয়ায় সন্দেহ আরও বেড়েছে। বিশাল অঙ্কের জাল নোট তৈরিতে সন্দেহভাজনদের মধ্যে আছেন টাকশালে টাকা তৈরির সাবেক ডিজাইনারসহ ওই পতিত দলের কারিগররা। এরা গোয়েন্দাদের তত্ত্বাবধানে লম্বা সময় নিয়ে জাল টাকা ছাপিয়েছে। এ ধরনের নোট নিজস্ব গোপন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের টাকশালে ছাপা নোটের আদলে নিখুতভাবে তৈরি কাগজের জাল টাকাগুলো পার্শ্ববর্তী দেশে তৈরির পর গোয়েন্দারা চোরাই পথে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এরপর বিভিন্ন হাত ঘুরে এগুলো চলে যাচ্ছে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে। জাল নোট তৈরি এবং দেশে পাঠানো চক্রে গোয়েন্দাদের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশে পলাতক নেতার সরাসরি জড়িত। আর দুপক্ষের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা চক্রটি নতুন একটি চেইন তৈরি করেছে; সেখানে ডিলার থেকে শুরু করে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত সবাই সেই দলের নীতিতে বিশ্বাসী। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জানান, প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার জাল নোট দেশে অনুপ্রবেশের অভিযোগ সত্য হলে এটি অত্যন্ত উদ্বেগনজক। তবে এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের খুব বেশি কিছু করার নেই। সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে। আর সাধারণ মানুষকেও অনেক সচেতন হতে হবে। তিনি আরও বলেন যে বর্তমানে পুরোনো টাকা বাজারে ছাড়া হচ্ছে না, কেবল বাজারে শুধু নতুন টাকা দেওয়া হচ্ছে। এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, বিগত সরকার আমলের রাষ্ট্রীয়ভাবে কাজটি করা হলে বস্তুত এটা ঠেকানো কারও পক্ষে সম্ভব না। কারণ বিগত ১৫ বছরে টাকশালে নিয়োগ পাওয়া বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীই ছিলেন সেই দলের আদর্শের অনুসারী। আর অনেক মেশিনারিজও নেওয়া হয়েছে পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী দেশ থেকে। তিনি উল্লেখ করেন যে, টাকা ডিজাইনের কারিগর, যারা গত এক-দেড় বছরে অবসরে গেছেন; তাদের দ্রুত নজরদারির আওতায় আনা সমীচীন।
উল্লেখ্য যে, ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্যে পার্শ্ববর্তী দেশের গোয়েন্দা সংস্থার মদদে বিভিন্ন রুটে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণ জাল নোট প্রবেশ করানো হচ্ছে। এসব টাকার কাগজ আর বাংলাদেশের নোটে ব্যবহৃত কাগজ একই হওয়ার কারণে খালি চোখে, এমনকি ব্যাংকের যাচাই মেশিনেও এসব জাল নোট চিহ্নিত করা দুরূহ ব্যাপার। আর নিরাপত্তা সুতাসহ হলোগ্রাম প্রিন্ট সবই নিখুঁতভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। বিশেষ ব্যবস্থায় দেশটির নিজস্ব মুদ্রা ছাপানোর ফ্যাসিলিটিতে এসব নোট প্রিন্ট করা হয়েছে বলে বিশ্বস্ত মাধ্যমে জানা গেছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাত এক প্রকারের ধ্বংস করতে এবং বিভিন্ন নাশকতামূলক কার্যক্রমে অর্থায়নের জন্য এসব নকল নোট অত্যন্ত কম মূল্যে দেশের জাল নোট কারবারিদের কাছে বিশেষ ব্যবস্থায় পৌঁছে দিচ্ছেন ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সংশ্লিষ্ট সদস্যরা।
এ ব্যাপারে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, ব্যাপকভাবে জাল টাকার প্রবাহ অর্থনীতির কয়েকটি ক্ষেত্রে আঘাত হানবে। অনিয়ন্ত্রিত জাল টাকা অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি তৈরি করবে। এছাড়া জনগণের মধ্যে টাকার প্রতি আস্থা কমে গেলে নগদ গ্রহণ ও ব্যাংকিং ব্যবস্থায় জটিলতা দেখা দেবে। ইতোমধ্যে গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানিয়েছে যে, এ পর্যন্ত অনলাইন মাধ্যমে জাল নোট ব্যবসায়ীদের শতাধিক পেজ ও গ্রুপ শনাক্ত করে তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, নির্বাচন উপলক্ষে নগদ টাকার প্রবাহ বাড়তে শুরু করেছে। সে ক্ষেত্রে জাল নোট ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য সবাইকে সাবধান থাকতে হবে। সঠিক টাকা চেনার বিভিন্ন নমুনা বা আলামত সংবলিত পোস্টার দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবিলম্বে টানিয়ে দেওয়া জরুরি। ইতোমধ্যে জাল নোট চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে জাল নোট বেচাকেনার বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। চটকদার অফার দিয়ে ক্রেতা আকৃষ্ট করছে সংঘবদ্ধ চক্রটি। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সিক্রেট গ্রুপ তৈরি করে সেখানে ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করছে। এদিকে জাল টাকা বানানোর প্রসিকিউটর (জাল টাকা বানানো শেখানো হয়) নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে জাল নোটের ভিডিও আপলোড করা হয়েছে।
এটি সত্য যে, অর্থনীতির নিয়মানুযায়ী টাকা ছাপালে সেই টাকার বিপরীতে নিরাপত্তা ডিপোজিট থাকে। এ ক্ষেত্রে তা নেই। তাই অর্থনীতিবিদরা বলে থাকেন যে, একটি অর্থনীতি পঙ্গু করতে হলে অর্থনীতিকে অস্থির করে তুলতে জাল টাকাই যথেষ্ট। এতে অসংলগ্ন গ্যালোপিং মূল্যস্ফীতি হয়। অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। আর মানি মার্কেটের ওপর সাধারণ মানুষের বিশ্বাস থাকে না। দেশের সব অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন খাতের ওপর পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে নেতিবাচক আঘাত হানে। আর এই টাকার পরিমাণ হিসাবের বাইরে থাকে বলে সঠিক পরিকল্পনা নেওয়াও সম্ভব হয় না। শুধু তাই নয় ব্যাষ্টিক অর্থনীতি এবং সামষ্টিক অর্থনীতি উভয়ই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তা ছাড়া এই ভিত্তিহীন টাকার ভেলোসিটি বেশি থাকে বলে দ্রুত হাত থেকে হাতে ছড়িয়ে যায়। আর একটি কথা, সমগ্র কর্মকাণ্ড ক্যান্সরাস অর্থনীতির আওতার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে। তখন আর কিছু করার থাকে না। তাই গোয়েন্দাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জোর তৎপর হতে হবে। শুধু তাই নয়, আপামর জনসাধারণকে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। ব্যক্তি স্বার্থ উপেক্ষা করে দেশের স্বার্থ বড় করে দেখতে হবে। এ ক্ষেত্রে একটি কথা না বললেই নয়; হয়তো অনেকেই ১৯৭৩-৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের কথা অবহিত আছেন। আর এই দুর্ভিক্ষের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল প্রতিবেশী দেশের জাল নোট। পরিশেষে এই বলে ইতি টানছি যে, এই দুঃখী বাংলাদেশ আপনার, আমার এবং সবার। আর সেই মানসিকতা নিয়ে যেভাবে, যেখানে পারেন, এই জাল নোটকে রুখতে হবে। নতুবা এর পরিণতি হবে ভয়ানক।
লেখক: অর্থনীতিবিদ এবং লেখক হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সম্মাননা ও পদকপ্রাপ্ত।
বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিয়েশন কাউন্সিল উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নে এবং কর্মসংস্থান যোগ্য দক্ষতা তৈরিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে চাপ দেওয়ার জন্য দুর্দান্ত কাজ করছে। মানসম্মত শিক্ষার উন্নয়নের জন্য, শিক্ষকদের বিদেশে অত্যন্ত দক্ষ জার্নাল প্রকাশ করতে হবে। তবে, সম্মানিত জার্নালে প্রকাশের জন্য রেমিট্যান্সের ওপর ২০% কর একটি উল্লেখযোগ্য বাধা। এই কর গবেষকদের ওপর ভারী আর্থিক বোঝা চাপিয়ে দেয়। আমলাতান্ত্রিক বাধাগুলো রেমিট্যান্স প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তোলে। আমরা সরকারকে গবেষণা প্রকাশনাকে জাতীয় বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করার এবং এই কর প্রত্যাহার করার আহ্বান জানাচ্ছি। এর ফলে মান বৃদ্ধি পাবে, আন্তর্জাতিকভাবে দৃশ্যমানতা বৃদ্ধি পাবে এবং উদ্ভাবন উৎসাহিত হবে। আমরা ইউজিসিকে এই উদ্যোগকে সমর্থন করার এবং স্থানীয় জার্নাল র্যাঙ্কিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি। গবেষণার করপোরেট পৃষ্ঠপোষকতার জন্য কর ছাড়ের প্রয়োজন: করপোরেশনগুলোর জন্য- কোম্পানিগুলোকে তাদের অবদানের ২০% কেন্দ্রীয়, সরকার-অনুমোদিত ‘জাতীয় গবেষণা ফাউন্ডেশনে’ অথবা প্রকাশনার ফলাফলের সাথে সম্পর্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুদান থেকে সরাসরি কর্তন করার অনুমতি দিন। কীভাবে বাস্তবায়ন করবেন: গবেষণার স্বীকৃতি তহবিলগুলো- এমন গবেষণা প্রকল্পগুলোর জন্য ব্যবহার করা উচিত যার স্পষ্ট লক্ষ্য যোগ্য জার্নাল তালিকায় প্রকাশ এবং বিশ্ব র্যাঙ্কিং অনুসারে আন্তর্জাতিক মানীকরণ। এই চ্যানেলগুলো জাতীয় লক্ষ্যকে সরাসরি সমর্থন করে জনসাধারণের জ্ঞান সৃষ্টিতে বেসরকারি এবং সরকারি-বেসরকারি খাতের তহবিলকে অগ্রাধিকার দেবে।
একজন শিক্ষকের ভূমিকা শ্রেণিকক্ষের নির্দেশনার বাইরেও বিস্তৃত; এটি সমালোচনামূলক চিন্তা-ভাবনাকে অনুপ্রাণিত করা, নৈতিক মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখা এবং শিক্ষার্থীদের দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। তবে, যখন একজন শিক্ষকের ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা তাদের বিপথে নিয়ে যায় তখন এটি এই মহৎ পেশার প্রতি গভীর অবমাননা। একজন সহকর্মীর ক্যারিয়ারের ক্ষতি করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে দূষিত মিথ্যা ছড়িয়ে দেওয়া - যা একটি শান্তিপূর্ণ ভবনে ‘আগুন’ বলে চিৎকার করার মতো। একটি গুরুতর নৈতিক লঙ্ঘন। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ভবনে ‘আগুন’ বলে চিৎকার করার মতো বিদ্বেষপূর্ণ মিথ্যা প্রচারের মাধ্যমে একজন সহকর্মীর ক্যারিয়ার নষ্ট করা একটি গুরুতর নীতিগত লঙ্ঘনের প্রতিনিধিত্ব করে। এই ধরনের আচরণ কেবল একাডেমিক পরিবেশকে বিষাক্ত করে না বরং একটি সুস্থ প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় আস্থা ও সৌহার্দ্যকেও ভেঙে দেয়। আমাদের একাডেমিক সম্প্রদায়ের অখণ্ডতা রক্ষা করার জন্য প্রতিষ্ঠিত প্রাতিষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে এই ধরনের ক্ষতিকারক আচরণে জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহি করা অপরিহার্য। কিন্তু সেই মহিলা শিক্ষিকা সাবেক এক পরিচালকের অধীনে একজন রাজনীতিবিদের ক্ষমতা ব্যবহার করে মাফিয়ার মতো কাজ করেছিলেন। এখন সময়ের সাথে সাথে তিনি পিএইচডিতে কোনো মৌলিক জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও সেই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক। সত্যিই এই নিকৃষ্ট মানুষগুলো নিজের ইচ্ছায় শিক্ষকতায় আসেনি বরং চাকরি এবং ব্যবসা পাওয়াই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। মূল ধারণা হলো- একটি দেশের একাডেমিক গবেষণার মান এবং পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য সরাসরি অনুঘটক হিসেবে ২০% কর ছাড় ব্যবহার করা। এটি একটি কৌশলগত বিনিয়োগ: বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত জার্নালে আর্টিকেল প্রসেসিং চার্জ (এপিসি) এবং প্রকাশনা ফি এর কার্যকর খরচ কমানো। উচ্চমানের প্রকাশনা স্থানগুলোকে লক্ষ্য করার জন্য গবেষক এবং প্রতিষ্ঠানগুরোকে উৎসাহিত করা। মা গবেষণা প্রকাশনার জন্য ২০% কর ছাড় নীতি প্রণয়ন: এই প্রসঙ্গে, স্পষ্টতই প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধ। একটি হাইব্রিড পদ্ধতি-বিকল্প A: প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা তহবিলের ওপর কর ছাড়/ছাড়-বিশ্ববিদ্যালয়/গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জন্য: প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রকাশনা সহায়তার জন্য বিশেষভাবে বরাদ্দকৃত তহবিলের ওপর ২০% কর ছাড় অথবা বর্ধিত ১২০% কর্তন দাবি করার অনুমতি দিন। এর মধ্যে রয়েছে এপিসি, পৃষ্ঠা চার্জ এবং রঙের চিত্র ফি।
একটি ‘যোগ্য জার্নাল তালিকা’ অবশ্যই নিম্নলিখিত বিষয়গুলোতে তালিকাভুক্ত জার্নালগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে: স্কোপাস (বিশেষ করে শীর্ষ কোয়ার্টাইলগুলোতে - Q1/Q2) ,ABDC জার্নাল মানের তালিকা (A*, A, B), CABELL এর শ্বেত তালিকা (তাদের কালো তালিকাভুক্ত শিকারি জার্নালগুলোর সম্ভাব্য বাদসহ) একটি ‘গবেষণা প্রকাশনা অনুদান তহবিল’ প্রতিষ্ঠা করুন: প্রতিষ্ঠানের অর্থ বিভাগ এটি পরিচালনা করতে পারে। গবেষকরা APC-এর জন্য অর্থ প্রদানের জন্য এই তহবিল থেকে অনুদানের জন্য আবেদন করেন। কর সুবিধার সূত্রপাত: প্রতিষ্ঠানটি অর্থবছরের শেষে এই তহবিল থেকে বিতরণ করা মোট পরিমাণের ওপর ২০% কর সুবিধা পায়
কর ছাড়ের ফলে নীট খরচ কমবে, তবে অন্যান্য কৌশলগুলো মোট খরচ কমাতে পারে। জাতীয় প্রাতিষ্ঠানিক সাবস্ক্রিপশন: সরকারের উচিত প্রধান প্রকাশকদের (যেমন, এলসেভিয়ার, স্প্রিংগার, উইলি) সাথে দেশব্যাপী ‘পড়ুন এবং প্রকাশ করুন’ চুক্তি নিয়ে আলোচনা করা। এই চুক্তিগুলো প্রায়শই সাবস্ক্রাইব করা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংশ্লিষ্ট লেখকদের জন্য ছাড়যুক্ত বা সীমিত APC করে। উন্মুক্ত বিজ্ঞান পরিকাঠামো প্রচার করুন: স্বনামধন্য ডায়মন্ড-প্ল্যাটিনাম ওপেন অ্যাক্সেস জার্নালগুলোতে বিনিয়োগ করুন এবং প্রচার করুন (যা পাঠক এবং লেখকদের জন্য বিনামূল্যে)। স্থানীয় জার্নালগুলোকে পছন্দসই ডাটাবেসে সূচিবদ্ধ করার জন্য সহায়তা করে এটি করা যেতে পারে। প্রাক-জমা পিয়ার পর্যালোচনা পরিষেবা: গবেষকদের জন্য পেশাদার সম্পাদনা এবং পরিসংখ্যানগত পর্যালোচনা পরিষেবাগুলোতে ভর্তুকি দিন। এটি শীর্ষ জার্নালগুলোতে গ্রহণযোগ্যতার হার বৃদ্ধি করে, ব্যয়বহুল একাধিক জমা চক্র এবং প্রত্যাখ্যান রোধ করে। কেন্দ্রীভূত গবেষণা পোর্টাল: গবেষকদের প্রকাশনা প্রক্রিয়া আরও দক্ষতার সাথে নেভিগেট করতে সহায়তা করার জন্য গাইড, জার্নাল ফাইন্ডার সরঞ্জাম এবং টেমপ্লেট সহ একটি ওয়ান-স্টপ পোর্টাল তৈরি করুন।
গুণমান এবং বৈশ্বিক মানদণ্ডে সঞ্চয় পুনর্বিনিয়োগ নিশ্চিত করা কর সুবিধাকে একটি গবেষণা উন্নয়ন পরিকল্পনা (RIP) এর সাথে সংযুক্ত: কর ছাড় দাবিকারী প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে বার্ষিক RIP জমা দিতে হবে। এই পরিকল্পনায় কর ছাড় থেকে প্রাপ্ত সঞ্চয় কীভাবে পুনর্বিনিয়োগ করা হবে তা রূপরেখা দিতে হবে। জাতীয় সার্টিফিকেশন সংস্থাকে এই পরিকল্পনা অনুমোদন করতে হবে। RIP-কে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গবেষণা মেট্রিক্সের উন্নতি লক্ষ্য করতে হবে: উদ্ধৃতি প্রভাব: উচ্চতর ক্ষেত্র-ওজনযুক্ত উদ্ধৃতি প্রভাব (FWCI) লক্ষ্য করুন। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সাথেসহ লেখক প্রকাশনা বৃদ্ধি। SDG সারিবদ্ধকরণ: জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে গবেষণা অবদান। নতুন গবেষকদের জন্য বীজ অনুদান: তাদের প্রকাশনা রেকর্ড শুরু করার জন্য। প্রশিক্ষণ কর্মশালা: একাডেমিক লেখা, গবেষণা পদ্ধতি এবং পিয়ার-রিভিউ প্রক্রিয়া নেভিগেট করার ওপর। গবেষণা ডাটাবেস এবং সফটওয়্যার ক্রয়: SPSS,Eviews, NVivo, Bloomberg টার্মিনাল ইত্যাদির সাবস্ক্রিপশন।
প্রশিক্ষণ কর্মশালা: একাডেমিক লেখালেখি, গবেষণা পদ্ধতি এবং পিয়ার-রিভিউ প্রক্রিয়া নেভিগেট করার ওপর। গবেষণা ডাটাবেস এবং সফটওয়্যার ক্রয়: SPSS, NVivo, ব্লুমবার্গ টার্মিনাল ইত্যাদির সাবস্ক্রিপশন। আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য সহায়তা: গবেষণা উপস্থাপন এবং সহযোগী নেটওয়ার্ক তৈরি করা। প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের বার্ষিক প্রকাশনা আউটপুট, প্রদত্ত APC, আদায় করা কর সঞ্চয় এবং কীভাবে সেই সঞ্চয় পুনর্বিনিয়োগ করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে রিপোর্ট করতে হবে। গবেষণা বৃদ্ধির জন্য ধাপে ধাপে কর্মপরিকল্পনা নীতিমালা প্রণয়ন: যোগ্য, উচ্চমানের জার্নালে APC-তে প্রাতিষ্ঠানিক এবং করপোরেট ব্যয়ের জন্য ২০% কর ক্রেডিট প্রদানের জন্য একটি স্পষ্ট আইন প্রণয়ন করুন। একটি গবেষণা সার্টিফিকেশন সংস্থা তৈরি করুন: প্রাতিষ্ঠানিক RIP-গুলোকে স্বীকৃতি দেওয়ার এবং তাদের সম্মতি নিরীক্ষা করার জন্য একটি বিদ্যমান সংস্থা প্রতিষ্ঠা করুন বা ক্ষমতায়ন করুন। সম্মতি বাস্তবায়ন করুন: কর ছাড় চালু করুন, যোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের RIP জমা দিতে এবং কার্যকর করতে হবে। পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়ন: দেশের গবেষণা আউটপুট, বিশ্বব্যাপী সূচকগুলোতে (যেমন SCImago) র্যাঙ্কিং এবং নীতির সাথে এর সম্পর্ক ট্র্যাক করুন। তালিকা এবং কৌশল পরিমার্জন করতে এই তথ্য ব্যবহার করুন। এই লক্ষ্যবস্তু নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে, আপনি কেবল খরচ ভর্তুকি দিচ্ছেন না। আপনি একটি পুণ্যচক্র তৈরি করছেন: ভালো জার্নালে সস্তা প্রকাশনা → আরও উচ্চমানের প্রকাশনা → উচ্চতর প্রাতিষ্ঠানিক এবং জাতীয় র্যাঙ্কিং → উন্নত প্রতিভা এবং বিনিয়োগের আকর্ষণ → এলডিসি স্নাতকোত্তর পরবর্তী একটি শক্তিশালী, আরও স্থিতিস্থাপক জ্ঞান অর্থনীতি। এটি জাতীয় উন্নয়নের পরবর্তী পর্যায়ে প্রয়োজনীয় বৌদ্ধিক মূলধনে সরাসরি বিনিয়োগ। গবেষণার ভিত্তি হলো- শিক্ষার মান, QS র্যাঙ্কিং এবং টাইমস উচ্চশিক্ষার মান উন্নত করা। মানসম্মত শিক্ষা ছাড়া উচ্চশিক্ষা আজকাল অর্থহীন, কারণ চাকরি গুরুত্বপূর্ণ এবং নিজ-কর্মসংস্থানের দক্ষতা বজায় রাখতে হবে। বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিয়েশন কাউন্সিল এখন উচ্চশিক্ষার উন্নতির চেষ্টা করছে। কিন্তু শিক্ষকদের অবশ্যই সৎ, নীতিবান এবং রাজনৈতিকভাবে মুক্ত হতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সম্মান পেতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি এবং উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিত উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আরও গবেষণামুখী হতে হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার সাথে কেন্দ্রীভূত শিক্ষাদান প্রয়োজন যাতে শিক্ষার্থীরা যথাযথ শিক্ষা এবং কর্মসংস্থান দক্ষতা অর্জন করতে পারে। শিক্ষকদের উচিত খারাপ রাজনীতি এবং গীবত করা থেকে বিরত থাকা এবং শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত লাভের জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়। একজন বাবা, একজন অনুষদ সদস্য, যিনি একসময় আমার ছাত্র ছিলেন এবং PGDED প্রোগ্রামে পাঁচটি কোর্স করেছেন, কীভাবে আমার ছেলের Rangsit বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি যাত্রা সম্পর্কে এই ভুল তথ্য ছড়াতে পারেন? তিনি দাবি করেন যে আমার ছেলে কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়নি, কিন্তু এটা ভুল। তিনি প্রথমে তার প্রস্তাব জমা দিতে যান এবং তারপর সেখানে তার পিএইচডি কোর্সওয়ার্ক শুরু করেন।
যখন কোভিড-১৯ মহামারি শুরু হয়, তখন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির ছুটি মঞ্জুর করে, যার ফলে তারা অনলাইনে তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেন। আমার ছেলেকে তার পিএইচডির প্রয়োজনীয়তার অংশ হিসেবে SCOPUS-সূচক জার্নাল দুটি প্রবন্ধ এবং থ্রি থাই ইন্ডিক্সেড জার্নালে প্রকাশ করতেও বলা হয়েছিল। কিন্তু সেই মহিলা আমার ছেলের বিরুদ্ধে আমার ছাত্রদের কাছে গুজব ছড়াচ্ছেন যাতে তার নির্যাতনের শিকার হন। আল্লাহ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।
এই অনুষদ সদস্য মনে হচ্ছে জানেন না যে আমার ছেলে তার পিএইচডির শেষ পর্যায়ে শারীরিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত দিয়ে তিনি তার সুপারভাইজারের সাথে তার চূড়ান্ত খসড়া তৈরিতে কাজ করেছিলেন এবং পরে অভ্যন্তরীণ এবং বহিরাগত উভয় সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত একটি পরীক্ষা কমিটির সামনে তার থিসিসটি উপস্থাপিত করেছিলেন এবং ভাইভা, উপস্থাপনা সিরিজ দিয়েছিলেন।
আমার ছেলের পিএইচডি করার সময় রংসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে তিনি যে গুজব ছড়িয়েছেন তা ভিত্তিহীন। একটি সভ্য সমাজে, এই ধরনের ভুল উপস্থাপনার গুরুতর পরিণতি হতে পারে। তার দাবি যাচাই করার জন্য তার পাসপোর্ট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন ছবি , নথিসহ সমস্ত সহায়ক নথি পাওয়া যায়।
শিক্ষকদের উচিত তাদের নির্দিষ্ট মূল্যবোধ, নীতিশাস্ত্র এবং নৈতিকতার সাথে নিজেদের একীভূত রাখা কারণ তারা দেশের ভবিষ্যৎ নেতাদের জন্য রোল মডেল। শিক্ষায় বিনিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ। আর্থার ওকুনের মতে, প্রাথমিকভাবে তিনি দেখেছিলেন যে বার্ষিক প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারে ২ শতাংশ বৃদ্ধি বেকারত্বের হারে ১ শতাংশ হ্রাসের সাথে সম্পর্কিত। তবে, উৎপাদনশীলতার পরিবর্তন এবং শ্রমবাজারের গতিশীলতার মতো কারণগুলোর কারণে ‘ওকুনের সহগ’ দেশভেদে এবং সময়ের সাথে সাথে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। শিক্ষককে গবেষণার মাধ্যমে আধুনিক শিক্ষাকে যুগোপযোগী করতে হবে।
লেখক: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যবসা ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
আমরা আমাদের প্রতিদিনের সময়ের একটা বড় অংশ পার করি মোবাইলের সাথে। আর মোবাইলকে দেয়া সময়ের সবচেয়ে বড় অংশ কাটাই সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে। এবার একটু ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখেন তো, গত এক সপ্তাহে আপনি কয়টা থট প্রভোকিং বা গভীর চিন্তাকে জাগ্রত করে এমন কিছু দেখেছেন বা পড়েছেন? হয়তো আপনি কিছুক্ষণ ভেবে দু’একটা বিষয়ের কথা মনে করতে পারছেন। এবার আরেকটু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে হয়তো দেখবেন সেগুলাও ঠিক প্রকৃত থট প্রভোকিং বিষয় ছিল না। অথচ খেয়াল করলে দেখতে পাবেন যে গত এক সপ্তাহে অনেক ভাইরাল বিষয় ছিল যেগুলো আপনাকে সত্যিই আন্দোলিত করেছে। কারো স্ট্যাটাস, কারো উপদেশ বাণী, আবার কারো জ্ঞানগর্ভ ভিডিও লাখ লাখ ভিউ বা হাজার হাজার রিয়েকশান পেয়েছে। অনেকে হয়তো ভাবছেন, এতে সমস্যাটা কি? আমরা আজকে সেটা নিয়েই আলোচনা করব যে এসবে আসলেই সমস্যা কোথায় হচ্ছে।
বিখ্যাত ইংলিশ কবি জন কীটসের ‘লামিয়া’ নামের একটা বর্ণনামূলক কবিতা আছে যেটা না পড়ে থাকলে পড়ার অনুরোধ রইলো।কবিতাটি মূলত স্যাড রোম্যান্টিক হলেও কিছু ফিলোসফিক্যাল দিক আছে যেটা উপেক্ষা করা অসম্ভব। লিসিয়াস নামের এক তরুন এক দারুণ সুন্দরীর প্রেমে পড়ে যার নাম লামিয়া। লামিয়াকে একটা জঙ্গলে দেখে লিসিয়াস এতটাই মসগুল হয়ে যায় যে লামিয়ার পরিবার বা বৃত্তান্ত জানার আর প্রয়োজন খুঁজে পায় না। এরপর ওরা সংসার করার সিদ্ধান্ত নেয়। বিয়ের অনুষ্ঠানে অনেকেই আমন্ত্রিত হয় এবং তারা আনন্দে অনুষ্ঠান উদযাপন করতে থাকে। এর মধ্যে একজন ছিল বিজ্ঞ এপলোনিয়াস যে কিনা জানতো যে লামিয়া আসলে একটা রূপধারী সার্পেন্ট বা সাপ। এপলোনিয়াস যখন এটা জানিয়ে দেয় তখন লামিয়া মানুষ থেকে আবার সাপ হয়ে যেয়ে মারা যায়। তখন লিসিয়াস আক্ষেপ করে বলেছিল, ‘ডু নট অল চার্মস ফ্লাই এট দা মেয়ার টাচ অফ কোল্ড ফিলোসফি?’ আসলেই আমাদের জীবনের অনেক আনন্দ, মজা, ফুর্তি যখন দৃঢ় এবং ‘শীতল ফিলোসফির সামনে পরীক্ষা দিতে আসে তখন ফ্যাকাসে হয়ে যায়। এ কারণেই আমরা কখনো কখনো ইচ্ছা করেই জীবনের জটিল ফিলোসফিকে দূরে সরিয়ে রাখতে পছন্দ করি।
গত এক বছরে বেশ কিছু সিনেমা, ওয়েব সিরিজ এবং নাটক দেখেছি। যেগুলো হিট হয়েছে বা বেশি ভিউ পেয়েছে তার বেশিরভাগই থট প্রভোকিং না। এমনকি কিছু কিছু কন্টেন্ট এতটাই দুর্বল যে ভাবতেও অবাক লাগে এসব এত ভিউ পায় কিভাবে। আবার দারুণ থট প্রভোকিং এবং ম্যাসেজ নির্ভর অনেক কন্টেন্ট মুখ থুবড়ে পড়েছে। আমি জানি এখন অনেকেই বলবেন যে বিনোদনের জন্যে নাটক, সিনেমা দেখি; এখানে দর্শন বা ম্যাসেজ থাকার প্রয়োজনীয়তা নেই। সোশ্যাল মিডিয়াতেও একই সমস্যা। দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে কেউ গালাগাল করছে, কেউ ভাত খাচ্ছে, কেউ পানিতে লাফালাফি করছে, কেউ বা ভুলে ভরা জিবন দর্শন দিচ্ছে। সবার একই লক্ষ্য’ অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং ভিউ, রিয়েকশান পাওয়া। আমি অনেক শিক্ষিত মানুষকেও বলতে শুনেছি, ‘এমনিতেই আমাদের জীবনে অনেক জটিলতা, তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় একটু বিনোদন খুঁজলে দোষের কি? দোষের কিছু কি না জানিনা তবে ভালো জিনিসকে প্রমোট না করে ভুল জিনিসকে প্রমোট করলে সেটা সমাজেরই ক্ষতি। এবং সেই ক্ষতির পরিমানটা যে কত বেশি সেটা সাধারণত আমরা উপলব্ধিই করতে পারি না।
ডিপ থিংকিং বা থট প্রভোকিং কোন কিছু সমাজে নিগৃহীত হয় কিন্তু বাই চান্স না। বরং এটা একটা সিস্টেম্যাটিক এরেঞ্জমেন্ট যেটা প্রভাবশালীরা যুগ যুগ ধরে করে যাচ্ছে। এই মানব সভ্যতার ইতিহাস ঘাটলে দেখবেন যুগে যুগে জ্ঞানী মানুষেরা নিগৃহীত হয়েছেন এমন কি তাদের জীবনটা পর্যন্ত দিতে হয়েছে। আমাদের সমাজে মূলত দুই ধরনের মানুষ বাস করে। বুদ্ধিমান যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শাসন করে এবং সাধারণ যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শোষিত হয়। এর বাইরে আরেক শ্রেণির মানুষ আছে যারা সংখ্যায় খুবই কম কিন্তু তারা হচ্ছে প্রকৃত মেধাবী। এই শ্রেণির মানুষ শাসক বা শোষক কোনোটাই হয় না বরং সমাজের বিবেক হিসেবে কাজ করতে চায়। সমস্যা হচ্ছে এই মেধাবী গ্রুপটাকে চতুর শাসকেরা খুব টেকনিক্যালি নিষ্ক্রিয় করে রাখে অথবা তাদের বিপক্ষে আরেক দুষ্টু বুদ্ধিমান চক্রকে সক্রিয় করে দেয়। এই দুষ্টু বুদ্ধিমানেরা জাতির বিবেক হিসেবে কাজ না করে গৃহপালিত বুদ্ধিজীবী বা সুশীল সমাজের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। আবার এই শাসক মানে কিন্তু শুধু রাজনৈতিক বা দেশ শাসককে আমি বুঝাইনি।যারা প্রবল অর্থ, ক্ষমতা এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে সমাজকে ডমিনেট করছে তাদেরকেও বুঝিয়েছি। একটা উদাহরণ দেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় কেন ষ্টুপিড এবং নেগেটিভ কনটেন্ট ভালো এবং থট প্রভোকিং কন্টেন্টের চেয়ে অনেক বেশী প্রোমোশন পায় সেটা কি কখনো ভেবে দেখেছেন? এখানে ডিস্ট্রিবিউশান এলগারিদমের একটা রহস্যজনক ভূমিকা রয়েছে। সমাজ যত ষ্টুপিড বিষয়ে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারবে তত প্রভাবশালীরা নিজেদের শোষণ এবং অন্যায়কে ঢেকে রাখতে পারবে।
ইলেকট্রনিক, প্রিন্টিং বা সোশ্যাল মিডিয়া যেখানেই হোক না কেন যারা নিজের জ্ঞানকে উপস্থাপন করার জন্যে ব্যাস্ত থাকে তারা দ্বিতীয় স্তরের জ্ঞানী মানুষ। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তারা নিজের বুদ্ধির বিনিময়ে আর্থিক, সামাজিক সুবিধা বা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে চায়। এটার একটা বড় নেগেটিভ দিক আছে। প্রকৃত জ্ঞানী মানুষের সান্নিধ্যে এসে সাধারণ মানুষ ইলিউশান অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং থেকে নিজেকে বের করতে পারে না। আমাদের চতুর সমাজ কিছু দুষ্টু বুদ্ধিমানদের সহায়তা নিয়ে আমাদেরকে একটা ভুল উপলব্ধির মধ্যে নিয়ে যায়, আমাদের মধ্যে একটা ইলিউশান তৈরি করে। এই ইলিউশনের প্রভাবে আমরা ভুল জিনিসকে ঠিক মনে করে জিবন পার করে দেই। এখন হয়তো ভাবছেন তাহলে প্রকৃত জ্ঞানী মানুষেরা সাধারণ মানুষকে ইলিউশান অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং থেকে বের করে আনে না কেন? এর প্রধান কারণ আমি আগেই উল্লেখ বলেছি। মিডিয়া, সমাজ, শাসক এরা তাদের প্রমোট করে না। এছাড়া আরেকটা সমস্যা হচ্ছে প্রকৃত জ্ঞানী মানুষেরা ফেইমের পিছনে তো ছুটেই না বরং নিজেদের সমাজ থেকে যথাসম্ভব দূরে সরিয়ে রাখে। এটা নিয়ে অনেক বড় বড় ইউনিভার্সিটি এবং প্রতিষ্ঠান রিসার্চ করেছে। তাদের ফাইন্ডিং হচ্ছে প্রকৃত মেধাবীরা নিজেদের ইন্টারনাল এনালাইসিস এবং উপলব্ধি নিয়ে এত বেশি ব্যস্ত থাকে যে অন্যকে দেয়ার মতো সময় বের করতে পারে না। এছাড়া আরেকটা বড় কারণ হচ্ছে সাধারণ মানুষের স্টুপিডিটি সেসব জ্ঞানীদের জন্যে এত বেশি বিরক্তির কারণ হয় যে তারা নিজেকে গুটিয়ে রাখাকেই শ্রেয় মনে করে। এটা পড়ে হয়তো অনেকেই অসন্তুষ্ট হয়ে গেছেন এবং ভাবছেন যে তারা অহংকারী। আসলে সেটা না। তাদের চিন্তা এবং এনালাইসিস এত বেশি সুক্ষ্ম এবং শক্তিশালী যে স্টুপিডিটি নেয়াটা তাদের জন্যে খুব বেশি ক্লান্তিকর হয়ে যায়। আইনস্টাইন একবার বলেছিলেন, ‘টু থিংস আর ইনফিনিট; ইউনিভার্স এন্ড হিউম্যান স্টুপিডিটি; এন্ড আই এম নট শিওর এবাউট দা ইউনিভার্স’। অর্থাৎ, আইনস্টাইনের মতে এই মহাবিশ্ব এবং মানুষের স্টুপিডি হচ্ছে অসীম যদিও তিনি মহাবিশ্বের অসীমতা নিয়ে সন্দিহান থাকলেও মানুষের অসীম স্টুপিডি নিয়ে কোন রকমের সন্দিহান ছিলেন না।
প্রকৃত জিবন দর্শন কুল বা চার্মিং কিছু না।যেকোন কিছুতে আপনি যখন লজিক এবং রিজনিং খুঁজতে যাবেন তখন দেখবেন অনেক সো কল্ড চার্মিং জিনিস ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে। এই সত্য জানার ভয় থেকেও অনেকে বাস্তবতার মুখোমুখি হতে চায় না। কিন্তু নিজের আত্মার শান্তির জন্যে সত্যকে জানতে হবে। ‘কোল্ড ফিলোসফিকে’ মেনে নিতে হবে। নাহলে সত্য এসে যখন লামিয়ার সাপ রূপ উন্মোচন করবে তখন আর মেনে নিতে পারবেন না। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ঢোল নিজে বাজানো না বরং আপনার আশে পাশে যেসব প্রকৃত জ্ঞানী নিজেকে আড়াল করে রেখেছে তাঁদেরকে খুঁজে বের করুন। তাঁদের কাছ থেকে জীবনের প্রকৃত মানে খুঁজে নেন। যেসব কথা, কাজ এবং ক্রিয়েটিভিটি আপনার গভীর চিন্তাকে জাগ্রত করতে পারে সেসবে মনোনিবেশ করেন। কিছু সময়ের হালকা বিনোদনের আশায় আপনার ভিতরের রিজনিং ক্ষমতাকে মেরে ফেলবেন না।যারা আমাদেরকে শোষণ করে তাদের চাওয়াই হচ্ছে আমাদের ভিতরের এনালাইটিক্যাল ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়া।
‘দা গ্রেটেস্ট এনিমি অফ নলেজ ইয নট ইগনোরেন্স, ইট ইয দা ইলিউশান অফ নলেজ’।– স্টিফেন হকিংস।
লেখক : কথাশিল্পী ও নাট্যকার।
পাহাড় ও অরণ্যের রাখিবন্ধনে চিরসবুজ পার্বত্য চট্টগ্রামের গুরুত্ব বহুমাত্রিক- যা একসময় বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের অধীনে বৃহত্তম একটি জেলা ছিল। আঞ্চলিক, ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ এ অঞ্চল। ভারত মহাসাগরের প্রবেশপথে বঙ্গোপসাগরের উপকূল থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত। মেরিটাইম রুট ও সমুদ্র বন্দরের গুরুত্ব বিবেচনায় ভূ-খণ্ডটি নিছক একটি ভৌগলিক অঞ্চলই নয়, বরং এর উত্তরে ভারতের অংশবিশেষসহ চীন, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর এবং উত্তর-পূর্বে ভারতের সেভেন সিস্টার্স এলাকা এবং পূর্বে মায়ানমার তথা আরাকন অঞ্চল- এসব কিছু মিলিয়ে এটি একটি ভূ-কৌশলগত অতিগুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। গত কয়েক দশক থেকে দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্রের শিকার যা এখনো চলমান। পাহাড়কে অশান্ত করার ক্ষেত্রে বার বার আসছে তৃতীয় পক্ষের নাম।
খাগড়াছড়ির গুইমারায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সহিংসতা ও সংঘর্ষের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সূত্রপাত হয় খাগড়াছড়ির সিঙ্গিনালা এলাকায় মারমা জাতিগোষ্ঠীর এক কিশোরীকে দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগ থেকে। এ ঘটনায় সেনাবাহিনীর সহায়তায় পুলিশ শয়ন শীল নামে ১৯ বছর বয়সি এক তরুণকে গ্রেপ্তার করে। কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে প্রথমে বিক্ষোভ ও পরে সড়ক অবরোধের মতো কর্মসূচি ডাকা হয়। কর্মসূচির কারণে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি, খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরিস্থিতি অবনতি হলে শনিবার দুপুরে খাগড়াছড়ির গুইমারায় ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু এর মধ্যেই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে এবং রামেসু বাজারে আগুন দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অবরোধকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষে হলে তাতে তিনজন নিহত ও সেনাবাহিনীর মেজরসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) বিবৃতিতে সহিংসতার জন্য পাহাড়ি সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট–ইউপিডিএফকে দায়ী করে। সেখানে বলা হয়, বিগত কয়েক দিনের ঘটনা পর্যবেক্ষণে এটি স্পষ্ট যে, ইউপিডিএফ এবং তার অঙ্গসংগঠনসমূহ পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে সুপরিকল্পিতভাবে এলাকার মহিলা এবং স্কুলগামী কোমলমতি শিশুদের বিভিন্ন পন্থায় নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে বাধ্য করছে।
পাহাড়ে হঠাৎ এমন অশান্ত পরিস্থিতিকে দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। গেল কদিন আগে চট্টগ্রাম বন্দর দখলের হুমকি দেন ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার রাজনৈতিক দল ত্রিপুরা মোথা পার্টির শীর্ষ নেতা প্রদ্যুৎ মাণিক্য দেববর্মা। তিনি বাংলাদেশকে ভেঙে ফেলার হুমকিও দেন। যার রেশ কাটতে না কাটতে পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্ত, ছড়িয়ে পড়ছে জনমনে নানা বিভ্রান্তি। ভারতীয় মিডিয়াগুলো উসকানিমূলক খবর ও অপতথ্য ক্যাম্পেইন করছে। ভারতীয় মানবাধিকার সংস্থ রাইটস অ্যান্ড রিস্কস অ্যানালাইসিস গ্রুপ (RRAG)-এর মতো মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে। এই মানবাধিকার গোষ্ঠীটি জানিয়েছে যে, গুইমারার ঘটনাটি চলতি সপ্তাহে জেনেভায় অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে তোলা হবে। অভিযোগ আছে দেশি-বিদেশি বেসরকারি সংস্থাগুলো(এনজিও) দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অধিকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি নিয়ে কাজ করলেও পাহাড় অশান্তের পেছনে তাদেরও ভূমিকা আছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের মোট ১২টি উপজাতি বাস করে। নৃতাত্বিক বিচারে উপজাতি জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই মঙ্গোলীয় শ্রেণিভুক্ত। এখানে বসবাসকারী উপজাতিদের সম্মিলিত সংখ্যা মোট জনসংখ্যার মাত্র ০.৪৫% (দশমিক চার পাঁচ শতাংশ)। তারা বিভিন্ন কারণে বিশেষত নিরাপদ আশ্রয় লাভের সন্ধানে তিববত, চীন, মায়ানমার এবং ভারতের বিভিন্ন পাহাড়ী অঞ্চল থেকে অনধিক ৪০০ বছর আগে বাংলাদেশের ভূখন্ড পার্বত্য চট্টগ্রামে আসে। অধিকাংশ চাকমা ও মারমা বৌদ্ধধর্মের অনুসারী, ত্রিপুরার অধিবাসিরা হিন্দু ধর্মের আর মিজো, বম ও থেয়াং খ্রিস্টান। অন্য কিছু গোত্র আত্মা, প্রাণী ও উদ্ভিদের পূজারী। এদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে চাকমারা নবাগত। অনেকেরই নিজস্ব ভাষা থাকলেও এক উপজাতি অন্য উপজাতির ভাষা বুঝে না। এক উপজাতির সদস্য অন্য উপজাতির সাথে কথা বলার সময় বাংলা ভাষা ব্যবহার করে। প্রতিটি উপজাতি বাংলা ভাষা বুঝে এবং নিজস্ব উপজাতির বাইরে আসলে বাংলা ভাষায় কথা বলে।
ভৌগোলিক আয়তনে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলটি লেবানন, সাইপ্রাস, ব্রুনাই, কাতার, সিঙ্গাপুর, মরিশাস কিংবা লুক্সেমবার্গের আয়তনের চেয়েও বড়। আর অবস্থানগত গুরুত্ব বিবেচনা করলে পার্বত্য চট্টগ্রামের উত্তরে ও খাগড়াছড়ি জেলার পশ্চিমে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, পূর্বে ভারতের মিজোরামের লুসাই পাহাড়পুঞ্জ ও মায়ানমারের অংশ, দক্ষিণে মায়ানমার, পশ্চিমে সমতল উপকূলীয় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা অবস্থিত। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের ২৩৬.৮০ কিলোমিটার, মিজোরাম রাজ্যের সাথে ১৭৫.৬৮ কিলোমিটার এবং মায়ানমারের সাথে ২৮৮.০০ কিলোমিটার আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে। সমস্যা হচ্ছে আন্তঃজেলাগুলোর মধ্যে পর্যাপ্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা, মোবাইল নেটওয়ার্ক, সুপেয় পানির তীব্র সংকট, বিদ্যুাৎ সংকট, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যাবস্থা এখনো কার্যকরভাবে গড়ে উঠেনি- যার ফলে সীমান্ত এলাকা মাদক পাচার, অস্ত্র চোরাচালান ও সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে, যা পাহাড়কে হঠাৎ হঠাৎ অশান্ত করে তুলে। যা পাহাড়ি কিংবা বাঙালি কারোরই কাম্য নয়।
১৯০০ সালের ১ মে ব্রিটিশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি প্রভাব খর্ব করার লক্ষ্যে এবং ওই এলাকার স্থায়ী প্রশাসনিক ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে ‘নোটিফিকেশন ১২৩ পিডি’ চিটাগাং হিল ট্রাক্টস, রেগুলেশন ১৯০০ (Chittagong Hill Tracts Regulation 1900) চালু করে। বৃটিশ বেনিয়া উপনিবেশিকদের এই কৌশলের কারণ ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি প্রভাব ও বসতিস্থাপন প্রক্রিয়া বন্ধ করা এবং সেখানে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার করা। প্রায় জনশূন্য এবং সম্পদ সমৃদ্ধ পার্বত্য চট্টগ্রামের উপর বার্মা, আরাকান, চীন ও উত্তর-পূর্ব ভারতের দূরবর্তী অঞ্চল থেকে আগত বসতি স্থাপনকারী উপজাতিদের যতটুকুই দাবী ছিল, অঞ্চলটির কাছের সংলগ্ন চট্টগ্রামের সমতলবাসী বাঙালি জনগোষ্ঠীর ওই অঞ্চলটির উপর অধিকার বা দাবি কোনো যুক্তিতেই কম ছিল না। কিন্তু স্বার্থান্বেষী বেনিয়া ইংরেজরা ন্যায়পরায়ণতার যুক্তিকে লঙ্ঘন করে ষড়যন্ত্রের বীজ বপন করেছিল। যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমরা এখনো লক্ষ্য করছি।
১৯৫৬ সালে পৃথক অঞ্চলের বিধানের সমাপ্তি ঘটে। এই সালে প্রাদেশিক সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষ মর্যাদা খর্ব করে এবং এর সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটে ১৯৬৪ সালে আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্র সংবলিত শাসনতন্ত্র প্রবর্তনের মাধ্যমে। মৌলিক গণতন্ত্রের আওতায় পার্বত্য চট্টগ্রাম সমতলের রাজনৈতিক ধারায় মিশে যাওয়ায় সমতলের শাসন বহির্ভূত অঞ্চল (Excluded Area) এর মর্যাদারও স্বাভাবিক অবসান ঘটে। ঐ বছর ম্যানুয়েলের ৫১ অনুচ্ছেদ রহিত করে পাকিস্তানের সর্বত্র সকল নাগরিকের অবাধ বিচরণ নিশ্চিত করা হয় ঢাকা হাইকোর্টের এক রায়ে। তখন থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি বসতি গড়ে উঠতে থাকে। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি মাত্র বৃহত্তর জেলা ছিলো। ১৯৮৩ সালে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি এই তিনটি প্রশাসনিক পার্বত্য জেলায় বিভক্ত করা হয়।
১৯৯৬ সালে যে পার্বত্য শান্তি চুক্তি করা হয়েছিল তা ছিল পাহাড়কে শান্ত করবার একটি মাত্র পদক্ষেপ মাত্র, যা পাহাড়ে শান্তি স্থাপনের মূল নিয়ামক হয়ে উঠেনি এখনও। তাই পাহাড়ে শান্তি ফেরাতে পাহাড়ি-বাঙালি ভেদাভেদ ভুলে সকলের সম-অধিকার নিশ্চিতকরণ, ভূমি সংক্রান্ত্র বিরোধের যৌক্তিক নিষ্পত্তি, দল উপদলের আধিপত্যকে যথাযথ আইনের আওতায় আনা, ধর্মীয় উস্কানি কিংবা নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দেশি-বিদেশি সকল ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বেকে অটুট রাখতে হবে। পাহাড়-অরণ্যের মেলবন্ধনে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সম্পদ ও পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটিয়ে এর আঞ্চলিক গুরুত্ব ও ভৌগোলিক সার্বভৌমত্বকে যথাযথ ব্যবহার করে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে হবে।
পরিশেষে বলা যায় যে, বাঙালি-পাহাড়ি দ্বন্দ্ব, ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ, বিভিন্ন দল ও উপদলগুলোর চাঁদাবাজি, অস্ত্র ও উগ্রবাদীগোষ্ঠীর প্রভাব বিস্তার, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব, ধর্মীয় উস্কানি, স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ইত্যাদি কারণগুলোই প্রতিবার কোনো না কোনোভাবে পাহাড়কে অশান্ত করছে। পাহাড়ি কিংবা বাঙালি কেউ পাহাড়ে অশান্তি চান না। পাহাড়কে নিয়ে অপরাজনীতি চলছে, ঘুরে ফিরে আসছে তৃতীয় শক্তির নাম- তাই পাহাড়ে শান্তি ফেরানোর দায়িত্ব সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, অংশীজন, বসবাসকারী সব জাতিগোষ্ঠী ও আমাদের সবার।
তানিম জসিম : প্রাবন্ধিক ও রাজনীতি-বিশ্লেষক। সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বাংলাদেশে আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের মাঝে এখন চরম অর্থনৈতিক অস্থিরতা বিরাজমান। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে মধ্যবিত্তের দুরবস্থা চরমে মূলত চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ক্রমশ আয় কমে যাওয়া এবং মৌলিক চাহিদা পূরণে হিমশিম খাওয়ার কারণে সৃষ্টি হয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে, যার ফলে যাদের জীবনে একসময় সুখের প্রবাহ ছিল স্বাচ্ছন্দ্য ছিল, বর্তমানে যাদের চাকরী নাই বিশেষ করে জুলাই আন্দোলনের পর যাদের কর্মস্থল বন্ধ রয়েছে তারা এখন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। আয় না থাকা, কর্মসংস্থান নাহওয়া এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি—এই দুইয়ের প্রভাবে মধ্যবিত্তরা তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হিমশিম খাচ্ছে। সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক বাস্তবতায় সবচেয়ে নীরব অথচ গভীর সংকটে নিপতিত হয়েছে এই মধ্যবিত্ত শ্রেণি। একসময় যারা ছিল আর্থিকভাবে স্বনির্ভর, আজ তারাই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির কবলে দিশেহারা। ফলে জীবনের মান রক্ষা তো দূরের কথা, বেঁচে থাকাই এখন তাদের জন্য কঠিন হয়ে উঠেছে। সাথে রয়েছে চিকিৎসা ব্যয় ও সন্তানদের শিক্ষা ব্যয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সন্তানের নিয়মিত ফিসমূহ পরিশোধে ব্যর্থ পিতা মাতা মারাত্মক মানসিক বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে রয়েছেন। সংসারের সরবরাহ মিটিয়ে আগে যেখানে মাস শেষে কিছু সঞ্চয় করে সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভাবতেন, তারাই এখন মাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাড়ার দোকানে বাকি করছেন। কেননা আয় অপরিবর্তিত এবং কোথাও কোথাও নাই বললেই চলে, অথচ ব্যয় প্রতিনিয়ত ঊর্ধ্বমুখী। ফলে আয় ও ব্যয়ের ব্যবধান দিনে দিনে বাড়ছে, যা মধ্যবিত্তের জীবনে নির্মম দহন সৃষ্টি করেছে।
পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের প্রায় ৮২ শতাংশ পরিবার তাদের প্রয়োজন মাফিক আয় করতে পারছে না। এক-তৃতীয়াংশ পরিবার সংসার চালাতে গিয়ে ঋণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। খাদ্যের পেছনে মাসিক আয়ের ৫৫ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে। শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসাভাড়ার মতো মৌলিক খাতেও ব্যয় বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। এই পরিসংখ্যান একদিকে যেমন আর্থিক অনিশ্চিয়তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় নীতির ব্যর্থতাও উন্মোচন করে। বর্তমানে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ৭.৫৬ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি ৯.৩৮ শতাংশ। টানা তিন বছরের অধিক সময় ধরে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির অভিঘাত সবচেয়ে নির্মমভাবে আঘাত হেনেছে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর ওপর। যাদের জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য ছিল, তারাই আজ মৌলিক চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছে। এটি মোকাবিলায় সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বরাবরই সীমিত, দুর্বল এবং ব্যবস্থাপনাগত ব্যর্থতায় জর্জরিত। বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন যথার্থই বলেছেন- দারিদ্র্য বৃদ্ধির মূল কারণ দুটি : মূল্যস্ফীতি ও কর্মসংস্থানের সংকট। গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একের পর এক শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন উল্লেখ করার মত এক বেক্সিমকো টেক্সটাইলের প্রায় ৪২ হাজার কর্মীসহ এত বড় একটি প্রতিষ্ঠান আজ প্রায় এক বছর যাবত বন্ধ, গাজী গ্রুপ, নাসা গ্রুপ ও ওই একই কারণে বন্ধ। প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বেকারত্বের এই প্রবণতা কেবল অর্থনৈতিক ব্যর্থতাই নয়, এটি জাতীয় উৎপাদনশীলতার ওপরও একটি দীর্ঘমেয়াদি আঘাত। যখন একজন দক্ষ শ্রমিককে পেশা বদলে রিকশাচালক বা ফেরিওয়ালা হতে হয়, তখন তা শুধু ব্যক্তিগত পতন নয়- তা রাষ্ট্রীয় নীতির অন্তঃসারশূন্যতার বহিঃপ্রকাশ।
তার পর রয়েছে কর্মকর্তাদের
পারিবারিক অসম্মান এবং সামাজিক মর্যদাহানী, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার সুদের হার বাড়ানো, আমদানি শুল্ক হ্রাস এবং মুদ্রানীতিতে কড়াকড়ি আরোপ করলেও, নিত্যপণ্যের বাজারে এর কার্যকর প্রতিফলন অনুপস্থিত।
বাজার ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলার অভাব এবং একশ্রেণির প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেট-নির্ভর অপশাসনে জনগণ কার্যত জিম্মি। চাল, ডাল, তেল, চিনি ও পেঁয়াজের মতো প্রয়োজনীয় পণ্যে সরকারের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা দুর্বল। এই ব্যবস্থাগত শৈথিল্য ও নীতিগত অবস্থান আগামী দিনে পরিস্থিতিকে আরও দুর্বিষহ করে তুলতে পারে তার উপর রয়েছে করের চাপ, জনগণের আয়ের উৎসই ক্রমশ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সেখানে করের সমাধান কি করে স্বাভাবিক হবে আশা করা যায় । মধ্যবিত্তের মুখে হাসি নেই, সামাজিক অনুষ্ঠানমালাতে উপস্থিতিতে তার প্রতিফলন দৃষ্টিগোচর হয়। অধঃপতনের চরম পর্যায়ে ধাবমান আমাদের যুবসমাজসহ সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের জনগণ বিশেষ করে মোবাইলের ব্যবহার সহজলভ্য হওয়াতে যুবক যুবতী কিশোর, শিশু এমন কি বৃদ্ধরাও মোবাইল নির্ভর হয়ে পড়াতে সকলেই এক অজানা কারনে কর্মবিমুখ হয়ে পড়ছেন। বিবেকের কাছে প্রশ্ন করলে উত্তর আসবে, অপারগতা, ব্যর্থতা অযোগ্যতার মূলে রয়েছে অভাব আর এই অভাবের কারণেই হয়তো সমাজে ডিভাইজ নামের বৈজ্ঞানিক অবদানের ফজিলতে আমরা সর্বত্রই বিপর্যস্ত ও নিরাপত্তাহীনতায় ও পংগুত্বে ভুগছি। আমাদের হাত, চোখ ও মস্তিষ্ক ও সময় ওই মোবাইলে সীমাবদ্ধ ফলে বর্তমান সমাজের সকল পর্যায়ে অনেক বেশি সচেতনতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান তৈরি এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দেশে মুল্যস্ফিতি কমানোর দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া অত্যান্ত জরুরি অন্যথায় সমাজে চরম বিপর্যয় আসন্ন।
সমাজের এক বিরাট অংশজুড়ে আছে এই মধ্যবিত্ত শ্রেণি। শহরে জীবনের চাপ, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, সামাজিক প্রত্যাশার চাপ – এই সবকিছু মিলিয়ে তৈরি হয় মধ্যবিত্তের জীবনে এক অদ্ভুত সংকট। আমি আশাবাদি আজকের লেখাটি মধ্যবিত্ত ছেলেমেয়েদের কষ্টের বিষয়টি নিয়ে লেখাটি যা অনেকেরই ভালো লাগবে।
মধ্যবিত্ত পরিবারের জীবন অনেক সময় নীরব কষ্টে ভরা থাকে। সমাজের এই শ্রেণির ছেলেমেয়েরা প্রায়শই তাদের আবেগ, ইচ্ছা এবং চাহিদাগুলো প্রকাশ করতে পারে না। তাদের কষ্টগুলো অনেক সময় অদৃশ্যই থেকে যায়।এই অব্যক্ত বেদনার লাঘব কবে হবে তা কারো জানা নাই তবে আমরা আশা করবো দেশ পরিচালনায় ন্যস্ত কর্তা র্যক্তিরা মধ্যবিত্তের অভাব দূরীকরণে ও কর্মসংস্থানে এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ সকল প্রকার নাগরিক সুবিধা সহজলভ্য করণে দ্রুত সহায়ক হবেন।
লেখক: প্রবন্ধিক, কলামিস্ট।
বাংলাদেশ এখন সংস্কারের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের খসড়া প্রস্তাবগুলো দেশের রাজনৈতিক ভারসাম্য পুনর্গঠনের সম্ভাবনা দেখালেও বাস্তবায়নমুখী চ্যালেঞ্জ ও আস্থাহীনতা বিদ্যমান রয়েছে। কমিশনের আলোচনায় উঠে এসেছে প্রধানমন্ত্রীর সর্বোচ্চ মেয়াদসীমা সংক্রান্ত বিকল্প-ধারা (এক ব্যক্তি সাধারণত সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন বলে এক বিকল্প প্রস্তাব আলোচনায় এসেছে) এবং নির্বাচন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, আইন কমিশন, তথ্য কমিশন ও প্রেস কাউন্সিলের মতো সংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা বৃদ্ধির ধারণাÑএই মূল প্রস্তাবগুলো গণমাধ্যমে খসড়া আলোচনার সারমর্ম হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে।
এই প্রস্তাবগুলোর আলোচনায় সবচেয়ে গভীর শঙ্কা হলো প্রতিষ্ঠানগত নিরপেক্ষতার অভাব, অর্থাৎ যার ওপর সংস্কার বিশ্বাস করলে ভোটব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা ও তথ্যমঞ্চের স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে কিন্তু যদি নিয়োগপ্রক্রিয়ায় দলীয় প্রভাব বজায় থাকে তাহলে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ-ক্ষমতা বাড়ানো কেবল কাগজে বিষয় হবে। নির্বাচন কমিশন, বিচারব্যবস্থা ও মিডিয়া-স্বাধীনতার ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি আস্থা ফিরে না এলে সংবিধানিক পরিবর্তনও টেকসই ফল দেবে না। এই প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় মানবাধিকার ও প্রশাসনিক সংস্কার রিপোর্টগুলো উল্লেখযোগ্য সতর্কবার্তা দিয়ে এসেছে।
বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সুশাসনের ঘাটতি। দুর্নীতি, প্রশাসনিক অস্বচ্ছতা, আইনের দুর্বল প্রয়োগ, দলীয়করণ, বিচারব্যবস্থার ওপর রাজনৈতিক প্রভাবÑএসব সমস্যা সংবিধান পরিবর্তন দিয়েই সমাধান করা সম্ভব নয়। যুক্তরাষ্ট্র বা জার্মানির মতো রাষ্ট্রে সংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের ওপর এমন আস্থা তৈরি হয়েছে যে রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় এলেও প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা ভাঙতে পারে না। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো সেই আস্থা গড়ে ওঠেনি। বর্তমানে দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এই সংস্কার প্রস্তাবগুলোকে বাস্তবায়নযোগ্য করতে হলে তিনটি স্তরে কাজ করতে হবে।
প্রথমত, রাজনৈতিক সদিচ্ছা: সরকার ও বিরোধী দল উভয়ের মধ্যে সংলাপের সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে। সংলাপের মাধ্যমেই আস্থা পুনর্গঠন সম্ভব।
দ্বিতীয়ত, স্বচ্ছ নিয়োগপ্রক্রিয়া: রাষ্ট্রপতির হাতে নিয়োগ ক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব থাকলে তা অবশ্যই স্বচ্ছ, বহুপাক্ষিক ও জবাবদিহিমূলক হতে হবেÑযেমন ন্যাশনাল কাউন্সিল বা একটি স্বাধীন কমিশনের মাধ্যমে।
তৃতীয়ত, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি: প্রশাসন, বিচার বিভাগ, তথ্য কমিশন ও গণমাধ্যমের আর্থিক ও প্রশাসনিক স্বাতন্ত্র্য নিশ্চিত করতে হবে যাতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সুযোগ না থাকে।
এছাড়া দীর্ঘমেয়াদে দরকার একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতিÑযেখানে ক্ষমতা ভাগাভাগি, সহনশীলতা এবং বিরোধী মতের প্রতি শ্রদ্ধা থাকবে। কেবল সংবিধানের ধারা বদলে গণতন্ত্র টেকসই হয় না; বরং তার প্রয়োগে স্বচ্ছতা, রাজনৈতিক সহনশীলতা এবং নাগরিক অংশগ্রহণই মূল চাবিকাঠি।
অতএব, বলা যায়Ñজাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত সাংবিধানিক সংস্কারগুলো নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আশার আলো জ্বালিয়েছে। তবে এই আশাকে বাস্তব শক্তিতে রূপ দিতে হলে প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিক সহযোগিতা, প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা এবং জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার। যদি এই তিনটি উপাদান নিশ্চিত করা যায়, তবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র একটি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করতে পারবে; অন্যথায়, এই সংস্কারগুলোও কেবল কাগজে লেখা প্রতিশ্রুতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, এবং বাংলাদেশ আবারও ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণের পুরোনো চক্রে ফিরে যাবে।
এই বাস্তবতায় বাংলাদেশ এখন এক ‘পরীক্ষামূলক গণতন্ত্রের’ পর্যায়ে আছেÑযেখানে সাংবিধানিক পরিবর্তনগুলো শুধু আইনি রূপ নয়, বরং রাজনৈতিক সংস্কৃতির পুনর্গঠন হিসেবেও দেখা উচিত। কারণ গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখা মানে শুধু নির্বাচন নয়, বরং প্রতিষ্ঠান, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং ক্ষমতার ভারসাম্যকে একসঙ্গে প্রতিষ্ঠা করা।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বোঝার জন্য আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতাগুলো এখানে অলোচনা করা যেতে পারে। পাকিস্তানের ২০১০ সালের অষ্টাদশ সংশোধনী একটি তাৎপর্যপূর্ণ উদাহরণ। এর আগে প্রেসিডেন্টের হাতে সংসদ ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতা ছিল, যা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়াত। অষ্টাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সেই ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয় এবং প্রেসিডেন্ট কার্যত আনুষ্ঠানিক প্রধানে পরিণত হন। এর ফলে সংসদ ও প্রধানমন্ত্রী শক্তিশালী হয়, যদিও রাজনৈতিক সংস্কৃতির দুর্বলতার কারণে সেই কাঠামোও পুরোপুরি স্থিতিশীল হতে পারেনি। আবার ফ্রান্সের আধা-রাষ্ট্রপতি শাসনব্যবস্থা একটি ভিন্ন অভিজ্ঞতা দেয়। সেখানে যদি প্রেসিডেন্ট এক দলে আর প্রধানমন্ত্রী অন্য দলে থাকেন, তবে এক ধরনের বাধ্যতামূলক ক্ষমতা ভাগাভাগি তৈরি হয়, যাকে কোহ্যাবিটেশন (ফ্রান্সের আধা-রাষ্ট্রপতি শাসনব্যবস্থায় এমন এক পরিস্থিতি, যখন প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী ভিন্ন রাজনৈতিক দলের হয়ে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে বাধ্য হন) বলা হয়। এ অভিজ্ঞতা দেখায়, সাংবিধানিক কাঠামো কখনো কখনো জটিল পরিস্থিতিতেও ভারসাম্যের পথ খুঁজে নেয়। ইতালিতে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছেন, যাতে জনগণ সরাসরি ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করবে। এটি হয়তো গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ বাড়াবে, কিন্তু একইসঙ্গে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সীমিত হয়ে যাবে এবং ভারসাম্য নিয়ে নতুন বিতর্ক তৈরি হবে। তুরস্কের অভিজ্ঞতা আবার একেবারেই ভিন্ন। ২০১৭ সালে সংবিধান সংস্কারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী পদই বিলুপ্ত করে দেওয়া হয় এবং প্রেসিডেন্টকে সর্বময় নির্বাহী ক্ষমতা প্রদান করা হয়। এতে প্রেসিডেন্ট একাই নিয়োগ, বাজেট এবং জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। সমালোচকরা বলেন, এ সংস্কার গণতন্ত্রের মৌলিক ভারসাম্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এই উদাহরণগুলো বাংলাদেশকে দেখায়, শুধু সংবিধানের ধারা বদলালেই সব সমাধান হয় না, বরং রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা সমান গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমরা জানি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এক ধরনের নেকিবাচকতা আছে। আর সেই নেতিবাচকতা কি সহজেই কাগজ কলমে লিখিত আকারে প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে করা যাবে? এ বিষয়ে অনেক বড় প্রশ্ন থাকা সত্ত্বেও আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
উন্নত রাষ্ট্রগুলোর অভিজ্ঞতা আরও স্পষ্ট করে দেয় ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার প্রক্রিয়া। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট সরাসরি নির্বাচিত হলেও কংগ্রেস এবং সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে ক্রমাগত ক্ষমতার টানাপড়েন বজায় থাকে। প্রেসিডেন্ট কোনোভাবেই এককভাবে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। এমনকি কংগ্রেস এবং প্রেসিডেন্টের মধ্যে ক্ষমতার একটি ভারসম্য আছে। যুক্তরাজ্যে প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত প্রভাবশালী হলেও সংসদীয় কমিটি, বিরোধী দলের কঠোর নজরদারি এবং শক্তিশালী গণমাধ্যম তাকে সব সময় জবাবদিহির মধ্যে রাখে। জার্মানিতে বড় কোনো নীতি বা নিয়োগ প্রক্রিয়া দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা ছাড়া এগোতে পারে না। সুইডেনে সংসদই কার্যত সরকারের নিয়ন্ত্রক শক্তি। এমনকি জাপানের মতো উন্নত দেশেও প্রধানমন্ত্রী সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। কিন্তু প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলীয় কাঠামোর শক্ত নিয়ন্ত্রণ তাকে সীমাবদ্ধ রাখে। এসব উদাহরণ আমাদের বলে দেয়Ñগণতন্ত্র তখনই টেকসই হয় যখন প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হয় এবং কোনো একটি পদে বা ব্যক্তির হাতে সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয় না।
কিন্তু বাংলাদেশে বাস্তবতা ভিন্ন। কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির হাতে যদি নিয়োগের ক্ষমতা বাড়ানো হয়, কিন্তু সেই প্রক্রিয়ায় দলীয় প্রভাব অটুট থাকে, তবে পরিবর্তনটি কার্যত কাগজে সীমাবদ্ধ থাকবে। বিরোধী দল যদি পুরো প্রক্রিয়ায় আস্থা না রাখে, তবে সংসদীয় কমিটিতে নেতৃত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্তও অর্থহীন হয়ে পড়বে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা। নির্বাচন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন কিংবা আইন কমিশন যদি রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত না হতে পারে, তবে তাদের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরবে না। এর সঙ্গে আছে সুশাসনের ঘাটতি। দুর্নীতি, প্রশাসনিক অস্বচ্ছতা, আইনের দুর্বল প্রয়োগ-এসব সমস্যা শুধু সাংবিধানিক পরিবর্তন দিয়ে সমাধান হয় না। যুক্তরাষ্ট্র বা জার্মানির মতো দেশে প্রতিষ্ঠানগুলো এতটাই শক্তিশালী যে দলীয় প্রভাব সহজে ঢুকতে পারে না। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাতন্ত্র্য নিশ্চিত করা যায়নি।
এ অবস্থায় বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো একটি দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি করা, যেখানে ক্ষমতার একচ্ছত্রকরণ বন্ধ হবে এবং প্রতিটি প্রতিষ্ঠান তার সাংবিধানিক দায়িত্ব স্বাধীনভাবে পালন করবে। নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হতে হবে, সংসদীয় পর্যায়ে বিরোধী দলের মতামতকে সম্মান করতে হবে, এবং বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন ও গণমাধ্যমকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে হবে। এগুলো সম্ভব হলে তবেই সাংবিধানিক সংস্কারের সুফল পাওয়া যাবে। অন্যথায় ক্ষমতার ভারসাম্যের যে স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে, তা কেবল কাগজেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
অতএব বলা যায়, বাংলাদেশের সাংবিধানিক সংস্কার এখন এক ধরনের পরীক্ষামূলক প্রচেষ্টা। এসবের বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, বিরোধী দলের আস্থা, এবং শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ছাড়া এই সংস্কারগুলো কার্যকর হবে না। বিশ্বের অভিজ্ঞতা আমাদের স্পষ্ট বার্তা দেয়- গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে হলে শুধু সংবিধান পরিবর্তন নয়, বরং তার বাস্তবায়নে সুশাসন, স্বচ্ছতা এবং রাজনৈতিক সহনশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। না হলে এই সংস্কারগুলোও থেকে যাবে আংশিক চেষ্টার প্রতিচ্ছবি, আর বাংলাদেশের গণতন্ত্র আবারও ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণের দুষ্টচক্রে আটকে পড়বে।
লেখক: অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
‘প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার’।
বঞ্চিত শিশুদের জীবনোন্নয়নের জন্য শিশু দিবস পালন করা হয় । শিশু বলতে জন্মের পর থেকে পনেরো বছরের বালক বালিকাদের বুঝায় । এই সব শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ তাই এই সব ভবিষ্যৎ নাগরীকদের সুরক্ষার এবং সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তাকে স্মরণ করবার জন্যেই শিশুদিবস পালন করা হয়ে থাকে। শিশুদের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যাওয়াই বিশ্ব শিশু দিবসের মূল লক্ষ্য । ১৯৫৪ সালে এ দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। প্রতি বছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার ‘বিশ্ব শিশু দিবস’ পালন করা হয়ে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বেদনাদায়ক ও ভয়াবহ স্মৃতি বিশ্ব শিশু দিবসের জন্ম দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপে শত শত নিষ্পাপ শিশু মারা যায়। অনেক শিশু অসহায় ও পিতৃমাতৃহীন হয়ে পড়ে। পঙ্গু ও বিকলঙ্গ হয় অনেকে। জাতিসংঘ কল্যাণ তহবিল ইউনিসেফ এই অসহায় শিশুদের কল্যাণ ও নিরাপত্তা বিধানে এগিয়ে আসে এবং বিশ্ববাসীর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৫৪ সালে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই সারা বিশ্বে অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার পালিত হয় ‘বিশ্ব শিশু দিবস’। এই দিবসটি পালনের উদ্দেশ্য হচ্ছে শিশুদের নানাবিধ সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করে তাদের মৌলিক অধিকার আদায় করা। এজন্য এগিয়ে আসতে হবে আমাদের সবাইকে। আজকের শিশু আগামীদিনে দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। একটি নবজাত শিশুর মধ্যে আজ যে প্রাণের সঞ্চার হল তা একদিন ফুলে ফলে প্রস্ফুটিত হবে। বড় হয়ে একদিন সে জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা ও ভবিষ্যৎ স্বপ্ন সফল করবে। কবি ওয়ার্ডস ওয়াতের ভাষায়- ‘Child is the father of a nation’. শিশুর মধ্যে নিহিত রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। কারণ, শিশুই একদিন বড় হয়ে দেশ ও সমাজের দায়িত্ব গ্রহণ করবে। তারা হবে দেশের আদর্শ নাগরিক। এ জন্য চাই শিশুর সযত্ন প্রতিপালন; বিকাশ সাধনের সুষ্ঠু পরিবেশ। শিশুদেরকে আদর, সোহাগ, যত্ন ও সুশিক্ষা দিয়ে বড় করে তোলার জন্য চাই অনুকূল পরিবেশ, উপযুক্ত শিক্ষা। উপযুক্ত অভিভাবক পেলে একটি শিশু আদর্শ মানুষরূপে বড় হয়ে উঠতে পারে। কুরুচিপূর্ণ পরিবেশ, অসৎসঙ্গ ও বিবেচনাহীন অভিভাবকের অধীনে বড় হয়ে অমানুষ, বিবেকহীন ও লম্পট চরিত্রের হতে পারে। সম্ভাবনাময় আগামী দিনের এক সুনাগরিক এভাবেই অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে। পক্ষান্তরে সুশিক্ষা, সুরুচি, শিক্ষিত বিবেকবান অভিভাবক একটি শিশুর অন্তর সুপ্ত ভবিষ্যতের পিতাকে জাগিয়ে তুলতে পারে। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ২৫ ভাগই শিশু।তারাই একদিন সুনাগরিক হয়ে দেশের নেতৃত্ব দেবে। তাই তারা অবহেলিত থাকলে ভবিষ্যাৎ প্রজন্ম মুখ থুবড়ে পড়বে।
অবহেলিত শিশুদের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, স্বাস্থ্য, বাসস্থান ও শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকারগুলো দেওয়া পুরোপুরি সম্ভব হচ্ছে না উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। তাই এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সহ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বিশেষ যত্নবান হতে হবে ।
মন্তব্য