বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই মুহূর্তে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত বিষয় হলো নির্বাচন। আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এমনকি এ তথ্য নিশ্চত হওয়া গেছে যে স্থানীয় সরকার নয়, বরং সংসদ নির্বাচন ঘিরে পুরোদমে প্রস্তুতি নিচ্ছে সাংবিধানিক এই সংস্থা। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো এবং সরকারের ভেতর নির্বাচন নিয়ে টানাপড়েন কাটছে না। এমনকি বাংলাদেশের রাজনীতি কোন দিকে যাচ্ছে- সেটিও অনুমান করা যাচ্ছে না।
নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান কেমন হবে এবং নতুন রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে নির্বাচনে যাবে সে বিষয়ে কোনো পরিষ্কার ধারণা করা যাচ্ছে না। তরুণ এবং ছাত্রদের নেতৃত্বে নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা শেষ করেছে। তারা কীভাবে মনোয়ন দিবে সে বিষয়ে এখনই চূড়ান্ত কোনো কিছু না জানালেও কোনো কোনো গণমাধ্যম সূত্রে আমর জেনেছি যে এনসিপি ৩০০ আসনেই প্রার্থীতা দিতে পারে। অবশ্য ইতিমধ্যেই বেশ কিছু আসনে অনানুষ্ঠঅনিকভাবে তাদের প্রার্থীতা ঘোষণা করতে দেখো গেছে। আর বিএনপি এবং জামায়াত আলাদাভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে- সে বিষয়ে স্পষ্ট মনে হচ্ছে।
সাধারণ জনগণ চায় দেশে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন। দীর্ঘদিন জনগণ তাদেও অধস্থা নিয়ে নির্বাচনের মাঠে থাকতে পারেনি। এই মুহূর্তে জনগণের আকাঙ্ক্ষাই হলো একটি গ্রহণযোগ্য এবং অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন। এ জন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ইতিবাচক থাকলে জনগণের আস্থার মাত্রাও অধিক ইতিবাচক হওয়ার সুযোগ রয়েছে। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হলে জনগণের আস্থা অনেকাংশে বেড়ে যায়। এবারের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় একটি বিষয় পরিষ্কার যে প্রার্থীর জনপ্রিয়তা না থাকলে নির্বাচনে কোনোভাবেই বিজয়ী হতে পারবে না। কোনো প্রতীক বা দলের মনোয়ন কোনোভাবেই নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার মূল কার্ড হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ দেশে একটি বিরাট জনগোষ্ঠী তরুণ এবং সচেতন। তাদের বেশিরভাগ অংশই এবারই প্রথম ভোট দিতে যাবে।
নির্বাচনের আগেই কোনো রাজনৈতিক দলকে হারিয়ে দেয়ার মানসিকতা থেকেও সকল রাজনৈতিক দলকে বের হয়ে আসতে হবে। একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, বেশ কিছু রাজনৈতিক দল মোটামুটি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনমুখী জনসংযোগের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। কাজেই নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণের রোডম্যাপ এমন হওয়া উচিত যাতে দেশে একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরির মধ্য দিয়ে সকল সংকটের সুষ্ঠু সমাধান হয়।
ইতোমধ্যেই আমরা লক্ষ্য করেছি যে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক প্রার্থী তাদের প্রচারণায় তৎপর হয়ে উঠেছে। কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় সকল পর্যায়ের নেতারা প্রচারণায় মনোযোগ দিয়েছে। আবার জোট গঠনের বিষয়েও যথেষ্ট তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পরিস্থিতি এখন এমন হয়েছে যে, দেশের জনগণ সংস্কার প্রশ্নে নির্বাচন আটকে থাকুক এমনটি আর চায় না। নির্বাচন আগে নাকি সংস্কার আগে- এই প্রশ্নে নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গটি এখন আর গুরুত্ব পাচ্ছে না। দীর্ঘদিন থেকে বাংলাদেশের মানুষের যে প্রাণের আকাক্সক্ষা, ভোট কেন্দ্রে গিয়ে একটি ভোট দেওয়া, সেটা সত্যিকার অর্থে পূরণ হওয়ার চ্যালেঞ্জটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ কথা সত্য যে, নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, তাদের কাছে যে শক্তি, সাহস ও দক্ষতা থাকবে তা দিয়ে দেশের বিদ্যমান কাঠামোগত সমস্যার স্থায়ী সমাধান করার মানসিকতা থাকতে হবে। যেগুলো এ সরকারের (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না, সেগুলো নির্বাচিত সরকার করবে- এমন প্রত্যাশা অনেকেই গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। এখন আমরা দেখতে চাই যে, যেসব দল এবং প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেবে তারা সাধারণ জনগণের জন্য এবং দেশের উন্নয়ন প্রসঙ্গে কী ধরনের পরিকল্পনা হাতে নিতে যাচ্ছে। এমনকি কীভাবে দেশকে উন্নত দেশে পরিণত করা যায়, কীভাবে দেশের জনগণের চাহিদা যথাযথভাবে পূরণ করা যায়- সেসব বিষয়েও পরিষ্কার রোডম্যাপ আসলে ভোটারদের চিন্তা করতে সহজ হবে।
তাছাড়া দেশের মানুষ বিভিন্ন অনলাইন জরিপ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রকাশিত জনগণের মন্তব্যের মধ্য দিয়ে রাজনীতির বাস্তব চিত্র যাচাই করতে পারে। আর এসব চিত্র বাস্তবতার প্রতিফলন হিসেবে দেখা যায়। এখন মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর বক্তব্যে কিংবা তথ্যে রাজনীতিতে লাভবান হওয়া কঠিন। এক কথায় বলা যায়, ধোঁকাবাজির রাজনীতি এখন আর নেই। একথা আমরা সবাই জানি, রাজনীতিতে আস্থা-অনাস্থা এবং বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্নটি অনেক বেশি। পাশাপাশি সন্দেহ-সংশয় তো আছেই। সাম্প্রতিককালে রাজনীতিবিদদের বক্তব্য শুনলে মনে হয় রাজনীতিতে আস্থা এবং বিশ্বাস বলতে কিছু নেই। সকালে এক ধরনের বক্তব্য বিকেলে আবার আরেক ধরনের বক্তব্য দেখা যায়। দিন না ঘুরতেই যদি বক্তব্য এবং মতামত পরিবর্তন ঘটে, তাহলে মাস এবং বছর গেলে তাদের অবস্থান কেমন হবে বা হতে পারে - সেটি অনুমান করা কঠিন কিছু না।
বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ইতিহাসে সংকট ও অনাস্থার পরিবেশ নতুন নয়। অনাস্থার বেড়াজাল থেকে রাজনৈতিক দলগুলো কখনোই বের হতে পারেনি। গণতন্ত্রের নামে এবং গণতন্ত্র রক্ষার অঙ্গীকারে রাজনৈতিক দলগুলো বারবারই রাজনৈতিক অনিশ্চিয়তার মুখে পড়েছে। সাম্প্রতিককালে এমনই এক অনিশ্চিয়তার দোলাচলে ঘুরপাক খাচ্ছে বিদ্যমান রাজনীতি।
ধারণা করা যাচ্ছে যে, দেশে আসন্ন নির্বাচনকেন্দ্রিক সুনির্দিষ্ট নিশ্চয়তার পরিবেশ তৈরি না হলে দেশে সংঘাতময় পরিস্থিতি ব্যাপকতর হতে পারে। এ জন্য একটি সুশৃঙ্খল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে বর্তমানে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে আসতে হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর মূল লক্ষ্য হলো নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া। আর এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে সকল রাজনৈতিক দলই নিজস্ব কৌশল প্রয়োগে ব্যস্ত থাকবে- সেটি স্বাভাবিক। কৌশল প্রয়োগের দিক সকল দলই নিজ নিজ জায়গা থেকে সামনে এগিয়ে যাবে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেরুকরণ ঘটবে- এটি অস্বাভাবিক কিছু না। মূলত নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য রাজনৈতিক মেরুকরণে পরিবর্তন হতে পারে। তবে কোনো দল যদি রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিজ নির্বাচনী আয়োজনের পক্ষে কাজে লাগানোর সুযোগ পায় অথবা কাজে লাগায় তাহলে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সেটি প্রতিবন্ধকতা হিসেবে সামনে আসবে। আর নির্বাচন কমিশনও প্রভাবিত না হয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করলে নির্বাচন ও রাজনীতি দুটিই গ্রহণযোগ্য মাত্রা পাবে। আর এ কারণেই সকল পক্ষকে সমান সুযোগের আওতায় নিয়ে আসার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের।
বাংলাদেশ সংবিধানের ১২০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালনের জন্য যেরূপ কর্মচারীদের প্রয়োজন হইবে, নির্বাচন কমিশন অনুরোধ করিলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনকে সেইরূপ কর্মচারী প্রদানের ব্যবস্থা করিবেন।’ কাজেই নির্বাচন কমিশনই প্রশাসনকে ঢেলে সাজিয়ে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করতে পারে। মূলত নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনের ভূমিকার ওপরই সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্পর্ক রয়েছে। আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনটির তিনটি চ্যালেঞ্জ দৃশ্যমান হতে পারে। প্রথমত: নির্বাচনে বেশিরভাগ জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা; দ্বিতীয়ত: সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান, তৃতীয়ত: ভবিষ্যতে সাধারণ জনগণের ভোটে অংশ নেয়ার বিষয়ে আগ্রহ এবং আস্থা সৃষ্টি করা। কারণ নির্বাচন যদি ভালো হয়, তাহলে নির্বাচনী রাজনীতিতে জনগণের আস্থা তৈরি হবে, আর ভালো না হলে তৈরি হবে স্থায়ী অনাস্থা।
তবে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে হলে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরাই নিজেদের পথের কাঁটা হওয়া থেকে দূরে সরে আসতে হবে। দেশ ও জাতির উন্নয়ন করতে হলে রাষ্ট্রক্ষমতার চাবি হাতে থাকা যেহেতু জরুরি সেহেতু রাজনৈতিক দলগুলোর মূল লক্ষ্য থাকে ক্ষমতায় যাওয়া। ক্ষমতায় যেতে অর্থাৎ আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হতে রাজনৈতিক দলগুলো এখন মরিয়া হয়ে উঠবে- এমনটাই স্বাভাবিক। তবে শিষ্টাচারসম্মত রাজনীতির জন্য জনপ্রতিনিধিদের গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরি। আমাদের নিজেদের বিবেক এবং চিন্তা যদি পরিশীলিত বা মার্জিত না হয় তাহলে কোনোভাবেই ইতিবাচক প্রত্যাশা সফল হবে না। আমরা বাংলাদেশে যে কাঠামেই চয়েস করি না কেন কিংবা যেমন আইনই তৈরি করি না কেন, অথবা যেমন সংস্কারই হোক না কেন, এগুলো বাস্তবায়নের মূলে রয়েছে নাগরিক এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মানসিকতার পরিবর্তন। মানসিকতা পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই একটি গ্রহণযোগ্যমানের উদার নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা পেতে পারে। দেশের সাধারণ জনগণ দেশের রাজনীতির একটি গুণগত পরিবর্তন প্রত্যাশা করে। আর এ কারণে নতুন রাজনৈতিক দলসহ দেশে বিদ্যমান সকল রাজনৈতিক দলের নেতাদের উদ্দেশে বলব আপনারা যদি দেশের রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন চান, তাহলে মনে রাখবেন, রাজনীতি মানে উগ্রতা, প্রতিহিংসা নয়, রাজনীতি মানে শালীনতা, ভদ্রতা এবং সহনশীলতা। আর এসব গুণাবলির মধ্য দিয়ে জনগণের মনে স্থান করে নিতে হবে। রাগ, হিংস্রতা কিংবা প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণ দিয়ে রাজনীতি করলে কখনোই রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসবে না। আমরা সাধারণ জনগণ ভালো এবং নতুন কিছু প্রত্যাশা করি। আর এ জন্য পরিবর্তন শুধু মুখে নয় আচরণে এবং কার্যক্রমে প্রমাণ করা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
লেখক: ড. সুলতান মাহমুদ রানা, অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
সাবেক প্রধান প্রকৌশলী সেখ মোহাম্মদ মহসিন, প্রধান প্রকৌশলী আলি আখতার হোসেন এবং প্রধান প্রকৌশলী গোপাল চন্দ্র দেবনাথ (রুটিন ওয়ার্ক) অবসরে যাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি একজন কর্মদক্ষ প্রধান প্রকৌশলীর শূণ্যতায় ভুগছিল। সে সময়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ মিয়ার নাম প্রস্তাবিত হয়। যিনি বিগত সময়ে এলজিইডির প্রশাসন এবং মানব সম্পদ বিভাগে সফলতার সাথে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্বপালনকালে তার কর্মদক্ষতা প্রশংসিত হয়। এলজিইডি একটি বিকেন্দ্রীকৃত সংস্থা, যার মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম বেশি। গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলে রাস্তাঘাট, পুল, কালভার্ট, পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্প এবং অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন করে থাকে। এলজিইডি বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এবং এক্ষেত্রে প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ মিয়া তার পুরো কর্মজীবনে অভূতপূর্ব ভূমিকা রাখেন। যার স্বীকৃতিস্বরুপ চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এলজিইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আব্দুর রশীদ মিয়াকে (মানবসম্পদ উন্নয়ন, মাননিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশ) এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে আব্দুর রশীদ মিয়া দায়িত্ব নেওয়ার পর, তিনি এলজিইডির স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা এবং উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের দিকেই দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছেন, গতিশীলতা বৃদ্ধিতে নিরলস ভাবে কাজ করছেন। তিনি যোগদানের পর এলজিইডির বিভিন্ন কার্যক্রম তদারকি করেছেন এবং কর্মকর্তাদের সাথে নিয়মিত বৈঠক করে বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছেন। এতে করে প্রানস্পন্দন ফিরতে শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটিতে। আব্দুর রশীদ মিয়া এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে যোগদানের পর, তার কর্মকাণ্ডের মধ্যে মূলত উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের উপদেষ্ঠার এবং সচিবের পরামর্শে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর সাথে আস্থাবৃদ্ধিতে সফলতার সাথে কাজ করে চলছেন । তিনি ইতোমধ্যে তার অভিজ্ঞতার আলোকে কর্মদক্ষতায় দীর্ঘ সময় পর কর্মমুখর করে তুলেছেন প্রতিষ্ঠানটিতে। বিগত সময়ে তিনি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (প্রশাসন)-এ দীর্ঘসময় দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে মানবসম্পদ, পরিবেশ ও জেন্ডার ইউনিটেও কর্মরত ছিলেন। আব্দুর রশীদ মিয়া ২০২৩ সালে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি পান।
তিনি অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (মানবসম্পদ উন্নয়ন, মাননিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশ ইউনিট) হিসেবে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প (পিইডিপি-৪)-এর দায়িত্ব পালন করেন। আব্দুর রশীদ মিয়া মেধাবী, কর্মঠ, দক্ষ ও সৎ প্রকৌশলী হিসেবে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছেন। পেশাদারি উৎকর্ষ সাধনে তিনি দেশে-বিদেশে বিভিন্ন কারিগরি, ব্যবস্থাপনা, পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কর্মশালায় অংশগ্রহণ নেন। তিনি মানব সম্পদ বিভাগে দায়িত্বপালনকালে প্রতিষ্ঠানের জনবল ব্যবস্থাপনা, প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন, এবং কর্মপরিবেশ উন্নয়নে কাজ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে জনবল নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, প্রশিক্ষণ প্রদান, কর্মীর দক্ষতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি, এবং একটি স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ তৈরি করেন। এছাড়াও, মানব সম্পদ বিভাগ কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা দেখাশোনা করে এবং তাদের পেশাগত ও ব্যক্তিগত উন্নয়ন সহায়তায় দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) প্রশাসনে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (প্রশাসন)- হিসেবে আব্দুর রশীদ মিয়া দায়িত্বপালকালে গ্রামীণ এবং শহরাঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন।
এলজিইডি গ্রামীণ অর্থনীতি ও জীবনযাত্রার উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে, গ্রামীণ রাস্তা, বাজার, এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন করা। সে সবে তার কর্মদক্ষতা নানান ভাবে প্রশংসিত হয়। নারীর ক্ষমতায়নে ব্যাপক ভুমিকা রাখেন। আব্দুর রশীদ মিয়া জাপানের বহুজাতিক কোম্পানি মিতসুবিসিতে প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে ১৯৮৯-এ বাংলাদেশ কর্মকমিশন (পিএসসি)-এর মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল ব্যুরো (এলজিইবি)-তে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ২০০৬ সালে পদোন্নতি পেয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে এলজিইডি কুষ্টিয়া জেলায় যোগাদান করেন এবং সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। পরে সিরাজগঞ্জ জেলায় নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবেও কর্মরত ছিলেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে আব্দুর রশীদ মিয়া সহকারী প্রকৌশলী, উপজেলা প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি “ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীনিবাস নির্মাণ শীর্ষক” প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে সফল্যের স্বাক্ষর রাখেন। এটি ছিল পরিচ্ছন্নকর্মীদের জন্য ঢাকায় নির্মিত প্রথম আবাসন প্রকল্প। আব্দুর রশিদ মিয়া রাজশাহী বিভাগ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে রাজশাহী বিভাগের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। আব্দুর রশীদ মিয়া ২০১৯ সালে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি পান। একজন পেশাদার প্রকৌশলী হিসেবে তিনি এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে চলতি দায়িত্ব গ্রহনের পর অনেকটা ঘুড়ে দাড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। দায়িত্বশীল সংশ্লিস্টরা বলছেন প্রতিষ্ঠানটির বৃহৎ স্বার্থে ধারাবাহিকতা ধরে রাখা জরুরী।
বিএনপি অনৈতিক ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বজায় রেখেছে বলে জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি সতর্ক করে বলেন, বিএনপির কোনো সদস্যও যদি অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত থাকে— তবে তাকেও ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, ‘যে কেউ যেকোনো ধরণের অবৈধ, অনৈতিক বা সহিংস কার্যকলাপে জড়িত থাকে—তবে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। যেকোনো ঘটনা ঘটার পর আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত করতে এবং সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করি না। কাল ক্ষেপণ না করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
শুক্রবার (৪ জুলাই) বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, দলের ভেতরে, প্রতিবেশীদের সঙ্গে বা অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যাতে আর কেউ সহিংস আচরণ করার সাহস না করে। ‘২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে আমরা যখনই অভিযোগ পেয়েছি, তখনই আমরা এই ধরণের সমস্ত ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিয়েছি। তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।’
তিনি বলেন, দলের নামে কী ঘটছে এবং কী করা হচ্ছে, তা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিয়মিতই পর্যবেক্ষণ করছেন।
রিজভী বলেন, ‘দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং অন্যায় কাজে লিপ্ত থাকার জন্য আমরা বিএনপি এবং সহযোগী সংগঠনের চার থেকে পাঁচ হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি।’
তিনি বলেন, দল এবং এর সহযোগী সংগঠনের কোনো নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলেই তারা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছেন। ‘এক্ষেত্রে, বিএনপি এবং এর নেতৃত্ব আপসহীন। তারেক রহমান জিরো টলারেন্স নীতিতে এটি করছেন।’
রিজভী বলেন, যে কেউ অপরাধ করলে—সে দলের নেতা হোক বা সদস্য—তাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে। ‘দলের মধ্যে কেউ যাতে কোনো সন্ত্রাসী বা বেআইনি কার্যকলাপে জড়িত না হয়—তা নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
গণতান্ত্রিক নীতির প্রতি দলের স্থায়ী অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে রিজভী বলেন, বিএনপি গত ১৬ বছর ধরে গণতন্ত্রের জন্য ক্রমাগত সংগ্রাম করে আসছে। ‘গণতন্ত্রকে কবর দেওয়া শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে বিএনপি তার আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। তীব্র দমন-পীড়ন সত্ত্বেও আমাদের দল কখনও তা থেকে পিছু হটেনি।’
অবিলম্বে, অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের জন্য দলের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘কেবলমাত্র একটি সত্যিকারের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনই বিএনপির জনপ্রিয়তা প্রকাশ করবে।’
আব্দুল হান্নান মাসউদ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। পুরো জুলাই মাস তিনি পালিয়ে বেড়িয়েছেন। আর আন্দোলনকে একটি সামগ্রিক রূপ দিতে কখনো ফেসবুক লাইভ, কখনো বা সাংবাদিকদের কাছে বার্তা পাঠিয়ে কর্মসূচি চালিয়ে গেছেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে আন্দোলনের সময়কার বিভিন্ন ইস্যুতে স্মৃতিচারণ করেন তিনি। তার কথার মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে সে সময়ের অনেক অজানা কথা। হান্নান মাসউদ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই অন্যায়, অনিয়মের বিরুদ্ধে ছিলেন এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। যার ফলে দ্বিতীয় বর্ষে থাকাকালীন তাকে হল ছাড়তে বাধ্য করে তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তার রাজনীতির শুরুটা হয় ছাত্র অধিকার পরিষদ দিয়ে। ন্যায় ও নীতির ব্যাপারে আপস না করে পরিষদের রাজনীতি থেকেও সরে আসেন তিনি। হান্নান মাসউদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী।
আপনার রাজনীতির যাত্রাটা কবে থেকে শুরু হয়েছে, কী চিন্তা থেকে রাজনীতিতে আসেন আপনি?
হান্নান মাসউদ: আমাদের আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস কেবল জুন থেকে শুরু হয়নি। আমার রাজনীতির শুরুটা ২০২২ সাল থেকে। তখন হল ছেড়ে দিয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদের রাজনীতিতে যোগ দেই। উদ্দেশ্য ছিল জাতীয়ভাবে যে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার্থীদের ওপর যে অত্যাচার চলছিল সেগুলোর প্রতিবাদ করা। আমার চিন্তা ছিল, অন্যায়ের প্রতিবাদ কাউকে না কাউকে করতে হবে। একটি অংশকে অবশ্যই জেগে উঠতে হবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য। যারা সত্য তুলে ধরবে তারা সংখ্যায় যত কমই হোক এক সময় মানুষ এসে তাদের পাশে দাঁড়াবে। এমন চিন্তা থেকে আমার রাজনীতিতে আসা।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে আপনি কোন প্রেক্ষাপটে যুক্ত হয়েছেন?
হান্নান মাসউদ: আমি তখন মোহাম্মদপুরে থাকি। টিউশন থেকে আসার পর আমরা যারা একসাথে রাজনীতি করতাম তাদের মধ্যে অনলাইনে একটি মিটিং হয়। মিটিং এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৫ জুন সন্ধ্যায় আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করি। আমরা ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে যুক্ত করার চেষ্টা করি। শিক্ষার্থীদের ভালো সাড়াও আমরা পাই। সেদিনের প্রোগ্রাম থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নেই যে, ক্রাউড ফান্ডিং করে আমরা আন্দোলন পরিচালনা করবো। ওইভাবেই আমরা আন্দোলনের সকল খরচ বহন করতাম শুরুর দিকে। জুনের ১২ তারিখ পর্যন্ত আমরা বিক্ষোভ মিছিল চালু রাখি।
১২ জুন আমাদের একদল প্রতিনিধি অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে স্মারকলিপি দিতে হাইকোর্টে যায়। তিনি সেদিন আমাদের সাথে দেখা না করলেও আমরা তার অফিসে তা জমা দিয়ে আসি। সেখানে আমরা এক ধরনের ভীতিকর পরিবেশের মুখোমুখি হই। সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর পরিচয়ে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন আমাদের জেরা করেন।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামটি কীভাবে আসে?
হান্নান মাসউদ: ১২ জুন অ্যাটর্নি জেনারেলকে স্মারকলিপি দেওয়ার পর আমরা ৩০ জুন পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেই। ১ জুলাই থেকে আবারও বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করি। ৪ জুলাই কোটা নিয়ে হাইকোর্টের শুনানি ছিল। আমাদের চিন্তা ছিল, সেদিন যদি রায় স্থগিত না করা হয় তবে আমরা এই আন্দোলনের একটি সাংগঠনিক ভিত্তি দাঁড় করাবো। এরপর আমাদের মধ্যে আলোচনায় আমি ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামটি প্রস্তাব করি। সেখান থেকে সর্বসম্মতিক্রমে এই নামটি উঠে আসে।
১৪ জুলাই রাতে শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে ‘রাজাকার’ বলার প্রতিবাদে ‘ তুমি কে আমি কে, রাজাকার, রাজাকার ’ স্লোগান দিয়ে হল থেকে বের শিক্ষার্থীরা। ওই দিনের রাতের ঘটনা নিয়ে কিছু বলেন।
হান্নান মাসউদ: শেখ হাসিনা চীন সফর শেষে দেশে ফেরার পর নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা আমাদের সাথে কথা বলেন। তারা জানায়, মন্ত্রী পর্যায়ের কয়েকজন আমাদের সাথে বসতে চায়। আমি সেখানে খুব জোরালোভাবে বলি যে, দেখেন আমাদের দাবিগুলো খুব পরিষ্কার। আমাদের দাবিগুলো মেনে নেয়ার নিশ্চয়তা দিলে আমরা তাদের সাথে আলোচনায় বসার কথা বিবেচনা করতে পারি। একই সাথে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না এমন নিশ্চয়তা যদি দেয় তবে আমরা বসবো। আমরা সেখানে সিদ্ধান্ত শুনতে যেতে পারি। বড় কোনো আলোচনা করার জন্য আমরা যাব না। এই আলোচনার মধ্যেই আমরা সেখান থেকে চলে আসি। এরপর সেদিন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার সংবাদ সম্মেলন করে হুমকি দেয় যে, আন্দোলনের কারণে জনভোগান্তি হলে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা ভাবছিলাম যে, হয়তো এসব হুমকির কারণে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম হবে। কিন্তু অনেক শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল। ১৪ তারিখ বিকেলে শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের রাজাকারের নাতিপুতি বলে সম্বোধন করেন। সেদিন রাতেই শিক্ষার্থীরা সকল হল থেকে একযোগে মিছিল নিয়ে বের হয়ে শেখ হাসিনার এই মন্তব্যের প্রতিবাদ করে। এর আগে ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের সময় মতিয়া চৌধুরী কোটা আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা বলে সম্বোধন করে। এর প্রতিবাদে তখন মিছিল করা হয়। ২০১৮ সালের ঘটনা আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে কাজ করে। সেদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আমাদের দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। সকল ভয়, রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে নারী শিক্ষার্থীরা সেদিন গভীর রাতে হল থেকে থালা, বাটি বাজাতে বাজাতে বেরিয়ে পড়ে। সেদিন রাতের ঘটনার মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগ সারাদেশের সকল ক্যাম্পাস থেকে অস্তিত্ব হারানো শুরু করে। সেদিনের ঘটনায় ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রলীগের পদত্যাগের হিড়িক পড়ে যায়। অনেক ছাত্রলীগ নেতা সেদিন পদত্যাগ করে।
১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার সূত্রপাত হয় কীভাবে? পরবর্তী অন্যান্য ছাত্রসংগঠন আপনাদের কীভাবে সহযোগিতা করেছিল তখন?
হান্নান মাসউদ : ১৫ জুলাই রাজু ভাস্কর্যে আমাদের অবস্থান কর্মসূচি ছিল। রিফাত, হাসিবসহ কয়েকজন ক্যাম্পাসে মাইকিং করতে হলপাড়ায় যায়। সেখানে একাত্তর হল ছাত্রলীগের কয়েকজন তাদের হামলা করে। এ খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্য থেকে হল পাড়ার দিকে এগিয়ে যায়। তখন মধুর ক্যান্টিনে সাদ্দাম, ইনান, সৈকত ও শয়নের অনুসারীরা লাঠি, অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত ছিল। শিক্ষার্থীদের ওইদিকে গেলেই তারা সেখানে হামলা শুরু করে। এসময় তাদের সাথে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিল। নারী শিক্ষার্থীরাও তাদের এই হামলা থেকে রক্ষা পায়নি। হামলার পর আমরা সিদ্ধান্ত নেই যে, বিক্ষোভ মিছিল করবো। ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, শিবিরের কাছে বিক্ষোভ মিছিল করার ব্যাপারে সহযোগিতা চাই। তাদের তেমন কোন সাড়া না পেয়ে আমরা ১৫-২০ জন মিলে মিছিল করার জন্য হাঁটা দেই। পুলিশ আমাদের দোয়েল চত্বর আটকায়। সেখান থেকে আমাদের আর সামনে যেতে দেওয়া হয়নি। সেখান থেকেই আমরা পরদিন রাজু ভাস্কর্যে বিক্ষোভের ঘোষণা দেই।
১৬ জুলাই রাতে ছাত্রলীগকে হলছাড়া করার প্রক্রিয়ায় ছাত্রদল, শিবির ও অন্যান্য সংগঠনের সাথে কোনো যোগাযোগ হয়েছে আপনাদের?
হান্নান মাসউদ : ১৫ তারিখ সন্ধ্যার পর আমরা আর সেভাবে তাদের সাথে যোগাযোগ রাখিনি। পরদিন আমরা ক্যাম্পাসে গায়েবানা জানাজার আয়োজন করি। সেখানেও পুলিশ আমাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। আমার দুই পায়ে রাবার বুলেট লাগে। আমি তখন পায়ে ব্যথা নিয়ে বসে পড়ি। সূর্যসেন হলের দিকে ছিল পুলিশ আর বঙ্গবন্ধু হলের দিকে ছিল ছাত্রলীগ। তখন সাংবাদিকরা আমাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। সেদিন সন্ধ্যার পরে আসিফ ভাই কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা দেন।
আন্দোলনের এই পর্যায়ে সংকটপূর্ণ একটা সময় অতিবাহিত হচ্ছিল। ১৭ জুলাই সেদিনের ঘটনার ব্যাপারে কিছু বলেন।
হান্নান মাসউদ : আন্দোলনের এই সময়টাতে আমাকে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছিল আমার টিউশনের ফ্যামিলি। স্টুডেন্টের বাবা-মা আমাকে খুব যত্ন করতেন। ওই সময়ে আমাকে তারা নিজেদের বাসায় আশ্রয় দিয়েছেন। পুরো আন্দোলনে আমার জন্য অনেক করেছেন তারা। আন্দোলনের সময় আন্টি নিজের হাতে রান্না করে শিক্ষার্থীদের খাওয়ানোর জন্য বিভিন্ন রাস্তায় নিয়ে যেতেন । ১৭ তারিখ ক্যাম্পাস থেকে চলে যাওয়ার পর ওনার বাসায় আমি ১৯ তারিখ পর্যন্ত ছিলাম। ১৮ তারিখ দুপুরের দিকে আংকেল আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বললেন, শেখ হাসিনা তো পালাবে মনে হয়। শিক্ষার্থীরা সবকিছু ঘেরাও করে রেখেছে। টিভি স্ক্রিনে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ যখন দেখছিলাম, আমার চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছিল। আমার মনে হচ্ছিল, আমরা মনে হয় সফল হতে যাচ্ছি।
১৯ তারিখ রাতে ৯ দফা ঘোষণা করা হয়। আর সেদিন রাতেই নাহিদ ইসলামকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই রাতেই তিন সমন্বয়ক মন্ত্রীদের সাথে বৈঠক করেন। সেদিন আপনার সাথে কী হয়েছিল?
হান্নান মাসউদ: সেদিন সন্ধ্যায় আমাকে ডিবি থেকে ফোন দেয়। সেখানে থাকা তিন সমন্বয়কের একজন আমাকে খুব জোরাজুরি করেন ডিবি কার্যালয়ে যাওয়ার জন্য। আমাকে নানাভাবে চাপ দিতে থাকেন। আমাকে ওই সমন্বয়ক বলেছিলেন, নাহিদ ও আসিফ জামাত-শিবিরের টাকা খেয়ে আন্দোলন করছে। নানাভাবে প্রলোভন দেখাচ্ছিলেন তখন। আমি একবারে স্পষ্ট করে বলেছি আমি যাব না। এক পর্যায়ে আমাকে বলেছিলেন, এই যে এত এত লাশ পড়ছে এটার শেষ কোথায়? আমি বলেছি, হয় শেখ হাসিনার পতন ঘটবে না হয় আমাকে মেরে ফেলবে। তবেই এটার শেষ হবে। সেই একই ফোনে ডিবির সাথেও আমার কথা হয়। তারাও নানাভাবে হুমকি দিয়েছে আমাকে। এই ঘটনার পর আংকেলের বাইকে করে আমি মোহাম্মদপুর গিয়ে আমার আরেক স্টুডেন্টের বাসায় গিয়ে উঠি। সেখানে একদিন থাকি। পরদিন আমার এক মামার বাসায় চলে যাই।
নাহিদ ইসলাম যেদিন গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে যায় সেদিন আপনারা সেখানে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সেদিন আপনাদের সাথে কী কথা হয়েছিল সেখানে?
হান্নান মাসউদ: সেদিন মামার বাসা থেকে আমি গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে আসি। হাসপাতালে আসার আগে আমাদের দুইজন সমন্বয়কের সাথে আমার যোগাযোগ হয়। তাদের মধ্যে একজন বলছিলেন, তার কাছে কারফিউ পাস আছে, গাড়ি আছে। সে আমাকে তার সাথে দেখা করার প্রস্তাব দেয়। আমি সরাসরি না করি। এর আগে কয়েকবার গাড়ি নিয়ে আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলেন তিনি। আমি সরাসরি না করে দিয়েছি। আমি নিজেই সিএনজি করে গণস্বাস্থ্যে যাই। সেখানে যাওয়ার আধাঘণ্টার মধ্যে সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারো সাথেই আমাদের কথা বলতে দেওয়া হয়নি। সেখান থেকে আবার প্রথমদিন যে স্টুডেন্টের বাসায় ছিলাম, তাদের কাছে ফিরে যাই। সে বাসায় যাওয়ার পর জানতে পারি আমার এলাকার এক বড় ভাই আমাকে খুঁজতে এসেছিলেন।
ওই সময়ে আপনারা যে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন, সে ব্যাপারে কিছু বলুন।
হান্নান মাসউদ: সেদিন গণস্বাস্থ্যের সামনে আমরা একটা সংবাদ সম্মেলন করি। সংবাদ সম্মেলন শেষে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা আমাদের ঘিরে ফেলে। আমার এলাকার ওই বড় ভাই (গাফফার) সেদিন গণস্বাস্থ্যে ছিলেন। সাংবাদিকদের সহযোগিতায় তিনি সেদিন অনেক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আমাকে কলাবাগানের একটা বাসায় নিয়ে রাখেন। সেদিন রাতেই সেখান থেকে বোরকা পরিয়ে তিনি রামপুরায় একটা বাসায় নিয়ে যান আমাকে। সেখান থেকে ২৩ তারিখ মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন ভাইয়ের চেম্বারে আসি। উনি যাত্রাবাড়ীতে উনার ভাইয়ের কাছে আমাকে রাখেন। সেখান থেকে ২৫ তারিখ বের হয়ে মোহাম্মদপুর আসি। এর মাঝে নাহিদ ভাই ফোন দিয়ে আহতদের খোঁজ খবর নিতে বলেন। পাশাপাশি আইনজীবীদের নিয়ে একটি লিগ্যাল সেল তৈরি করার পরামর্শ দেন। তিনি একটা মেডিকেল টিম তৈরি করার কথাও বলেন। হাসপাতালে গিয়ে আহতদের খোঁজ নেয়ার পরামর্শ দেন। আমরা সেদিন আহতদের সাথে দেখা করতে উত্তরায় বাংলাদেশ হাসপাতালে যাই । সেখানে গিয়ে দেখতে পাই, পুরো হাসপাতালে আহতদের কোন রেকর্ড নেই। তারা আমাদের কোনোভাবে সহযোগিতা করছিলেন না। তারপরও আমরা একজন আহতের খোঁজ পেয়ে জোর করে তার সাথে দেখা করতে যাই।
সেদিন মাঠপর্যায়ে আর কোনো কার্যক্রম ছিল আপনাদের?
হান্নান মাসউদ: সেখান থেকে বের হয়ে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে যাই। সেখানে গিয়ে আমরা আটকা পড়ি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনের হাতে। তখন গাফফার ভাইকে কল করে একটা অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করি। মাহিন ভাইকে অসুস্থ বানিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে আমরা হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যাই গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনকে ফাঁকি দিয়ে। বের হওয়ার সাথে সাথে কয়েকটা বাইক, মাইক্রো আমাদের ফলো করতে থাকে। ড্রাইভার একরকম রেইস করে মার্কিন দূতাবাসের সামনে নিয়ে যান। দূতাবাসের কর্মকর্তারা আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকলেও তারা আমাদের সেখানে আশ্রয় দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। কিন্তু তারা অন্য একটা ইন্টারন্যাশনাল সংস্থার সাথে আমাদের যোগাযোগ করিয়ে দেয়। সেখানে একরাতের জন্য আমরা ছিলাম।
ওই সময়ে ভিডিও বার্তা ও কর্মসূচি দিতেন কোথা থেকে?
হান্নান মাসউদ: সেখান থেকে বের হয়ে শহীদুল আলম ভাইয়ের সাথে আমাদের যোগাযোগ হয়। উনি গুলশানের একটা স্কুলে থাকার ব্যবস্থা করে দেন আমাদের। সেখান থেকে আমরা কর্মসূচিগুলো দিচ্ছিলাম। সেখানে আমরা তিনদিন ছিলাম। গাফফার ভাইও আমাদের সাথে ছিলেন তখন। উনি আমাদের সেখানে রান্না করে খাওয়াতেন। আমাদের দেখাশুনা উনিই করেছিলেন। এরপর সেখান থেকে বের হয়ে আরেকটি মাধ্যমে আমরা বিহারি ক্যাম্পে চলে আসি। সেখানেও খুব একটা সুবিধাজনক মনে হয়নি। সাথে সাথে বের হয়ে এক ব্যবসায়ীর অফিসে গিয়ে উঠি। সেখানে একদিন থাকার পর সদরঘাট এলাকায় চলে যাই। সেখানেও সেইফ ফিল না হওয়ায় সাথে সাথে বের হয়ে যাই। সেদিন জুলকারনাইন সায়ের ভাইয়ের সাথে আমাদের কথা হয়। তিনি মিরপুরে ওনার এক বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেন। উনার অফিসে গিয়ে আমরা উঠি। সেখানে ২ তারিখ পর্যন্ত আমরা ছিলাম।
২ তারিখ আপনি একটি লাইভ করেছিলেন, সে ব্যাপারে কিছু বলুন।
হান্নান মাসউদ: সেদিন প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে আমাকে কল করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে কল করে স্বপরিবারে সাক্ষাৎ করার জন্য অফার করা হয়। আমাদের ভবিষ্যতে কোন কিছুর অভাব হবে না। দেশের বাহিরে পাঠিয়ে দেয়ার লোভ দেখানো হয়। আমি বলি, আপনার প্রধানমন্ত্রীর হাতে আমার ভাইদের রক্ত লেগে আছে। উনাকে বলেন, আমার ভাইদের রক্ত পরিষ্কার করতে। ওই দিনই মিডিয়ায় দেখি ৩০-৪০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এটা দেখার পর আমি ফেসবুকে লাইভ করি। সেখানে বলি, প্রধানমন্ত্রী আপনার দরজা খোলা রাখার দরকার নেই। আপনি বের হয়ে আসেন। জনগণের টাকা খরচ করে গণভবনে থাকার অধিকার আপনার নেই। আপনার অবশ্যই গণভবন ছাড়তে হবে। সেখানে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দেই আমি। সেদিন এক মহিলা সাংবাদিক এক দফার ঘোষণা দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। এক পর্যায়ে উনি আমাকে বললেন, এক মিনিটের মধ্যে সিদ্ধান্ত নাও। আর যদি সিদ্ধান্ত না নিতে পারো তবে আমরা তোমাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে পারবো না। আমি তখন বলি, আপনি যা ইচ্ছে করেন। মেরে ফেললে মেরে ফেলেন। আমরা এটা দিতে পারবো না। কালকে মাঠ থেকে নাহিদ ভাই এক দফার ঘোষণা দিবেন। তখন নাহিদ ভাইয়ের পরামর্শ ছিল, তোমরা সর্বোচ্চটা ধরে রাখ। না পারলে ঘোষণা দিয়ে দিও। সেখান থেকে বের হয়ে আমরা বনানী চলে যাই। সেখানে একদিন থাকার পর ৩ ও ৪ তারিখ থাকি বারিধারায়।
মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি কেন একদিন এগিয়ে ৪ তারিখ করেছিলেন?
হান্নান মাসউদ: সেদিন আসিফ ভাইকে আমি ফোন দিয়ে মার্চ টু ঢাকা একদিন এগিয়ে আনার পরামর্শ দেই। নাহিদ ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করে একদিন এগিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেই। জুলাইয়ের ৩০ তারিখ থেকে শিবিরের সাথে আমাদের যোগাযোগ হয়। ছাত্রদলের রাকিব ভাইয়ের সাথেও আমাদের যোগাযোগ হয়। ভিডিও করার জন্য তিনি আমাদের ফোন কিনে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমরা নেই নি। এক্ষেত্রে আমরা ৫০ হাজার টাকার ব্যবস্থা করি এবং শিবিরের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। আমরা এই টাকা দিয়ে দুইটা ফোন ক্রয় করি। আমরা সংগঠন হিসেবে শিবিরের সাথে যোগাযোগ করি। কোন ব্যক্তির সাথে নয়।
৫ তারিখ হাসিনার পতন হয়। এ সময় আপনার অনুভূতি কেমন ছিল?
হান্নান মাসউদ: সেদিন খুব আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম। হেঁটে হেঁটে সংসদ ভবন, গণভবনে আসি। কিন্তু সংসদ ভবনে ঢুকিনি। আমার চিন্তা ছিল, যদি কখনো ঢুকি সংসদ সদস্য হয়েই এখানে যাবো। তখন চারদিকে এত এত শুভাকাঙ্ক্ষী.. একেকজন একেক দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। আমাদেরকে আমাদের মত করে সিদ্ধান্ত নিতে দেওয়া হয় নাই। চ্যানেল ২৪-এ আমাদের সেদিন যাওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু নিয়ে যাওয়া হইছে। তখন আমাদের মত করে সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম তাহলে এই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ অন্যরকম হত।
হাসনাত আবদুল্লাহ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক। এই তরুণ সংগঠক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। ছাত্রজীবন থেকেই শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া আদায় এবং যে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রামে লড়াকু হয়ে আন্দোলনে-সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলেনে একাধিকবার নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে সবসময় ছিলেন অগ্রগামী।
২০২৪ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গড়ে ওঠা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর অন্যতম সমন্বয়ক হিসেবে তিনি জাতীয় পর্যায়ে পরিচিতি লাভ করেন। সেই আন্দোলন থেকেই তিনি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকারের পতনের দাবিতে রাজপথ কাঁপিয়ে গড়ে ওঠা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্রে পরিণত হন তিনি। এই সময় রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের শিকার হয়ে তাঁকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। পুলিশের হাতে বন্দি থেকে ট্রমার মধ্য দিয়েও দিনযাপন করতে হয়। দেশের জন্য শহীদি মৃত্যু বরণ করতেও রাজি ছিলেন এই দুঃসাহসী তরুণ। তবুও স্বৈরাচারের কাছে মাথানত করেননি।
ছাত্রজীবনে একজন চৌকস বিতার্কিক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন হাসনাত। যে কোনো বিতর্কে তিনি খুরধার যুক্তি ও চুলচেরা বিশ্লেষণ দিয়ে শোষণের বিরুদ্ধে অবস্থান তুলে ধরতেন। কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার গোপালনগর গ্রামে জন্ম নেওয়া এই তরুণ নেতার স্বপ্ন একটি ন্যায্য, গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলা।
সম্প্রতি বাসস'কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে তার নেতৃত্ব ও অভিজ্ঞতার নানা দিক তুলে ধরেন হাসনাত আবদুল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘আমরা ৯ জুলাই ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে একটা কর্মসূচি দেই, যেটি ঢাকাসহ সারাদেশের ছাত্র জনতা ও সাধারণ মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালিত হয়েছে এ কর্মসূচি। পরবর্তী দুই দিন আমাদের ব্লকেড কার্যক্রম চলে। ‘বাংলা ব্লকেড’ কার্যক্রমের পরে আমরা একদিন বিরতি দেই। সেদিন আমরা আমাদের সমন্বয়ক টিমকে ভাগ করে সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠাই, যেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আমরা ভালো মতো সমন্বয় করতে পারি। সেই দায়িত্বের অংশ হিসেবে আমি কুমিল্লাতে যাই।’
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে গিয়ে ছাত্রদের সাথে কথা বলি। সেখানে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যেখানে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হয়েছে সেই স্থানগুলো পরিদর্শন করি এবং ছাত্রদের নির্দেশনা দেই। একই সাথে আমরা সমন্বয়করা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই। ওই সময় আমাদের সমন্বয়করা ছাত্রলীগ ও পুলিশের তাণ্ডবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। তারাও আন্দোলনকে সমন্বয় করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় যেতে থাকে। পরবর্তীতে যেটি হয়, আন্দোলন দৃঢ় ও ইস্পাত-কঠিন হতে থাকে। সারা দেশের সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে থাকা শিক্ষার্থীরা সুসংগঠিত হতে থাকে। আমরা তখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও সমন্বয়ক নির্বাচিত করি, যাতে করে বিগত দিনের মতো অন্য শিক্ষার্থীদের ওপরেও দায় চাপিয়ে আন্দোলন বেহাত হওয়ার যে ঘটনা ঘটে, তার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়। পরবর্তীতে আমাদের বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত থাকে।’
তিনি বলেন, ‘১৪ জুলাই আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সচিবালয়ের পাশের রাস্তা দিয়ে জিরো পয়েন্ট হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য যাই। ১৪ জুলাই আমরা স্মারকলিপি দিয়ে হলে ফিরি, ওইদিন গণভবনে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার একটা প্রেস কনফারেন্স ছিলো। আমরা দেখি যে সেই প্রেস কনফারেন্সে তিনি (শেখ হাসিনা) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের রাজাকারের নাতি-পুতি বলে সম্বোধন করে বক্তব্য রাখেন। শেখ হাসিনার এমন আপত্তিকর বক্তব্যের পর ওই রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটে। শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ জানাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিবাদী স্লোগান নিয়ে রাজপথে নেমে আসে।’
হাসনাত বলেন, ‘১৪ জুলাই রাতে সবাই যখন যার যার হল থেকে রাস্তায় নেমে আসে, ঠিক তখন আমি একটি টিভি টকশোতে ছিলাম। টকশো শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পথে রওনা হই। এর মধ্যে দেখতে পাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভের বিস্ফোরণে রাতের ঢাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠেছে। তখন আমরা অমর একুশে হল ও সায়েন্স ফ্যাকাল্টির প্রত্যেকটা হল থেকে তাৎক্ষণিকভাবে মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যে আসি। খেয়াল করলে দেখবেন যে, সেদিন রাতে একটা আইকনিক মিছিল ঢাকাসহ সারাদেশ প্রকম্পিত করেছিল একটি শ্লোগান দিয়ে ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার! রাজাকার!!’ আমরা মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমে আসি। সে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের হল থেকে মেয়েরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে আসে। রোকেয়া হল, শামসুন্নাহার হল, ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, কুয়েত মৈত্রী হল থেকেও শিক্ষার্থীরা ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার! রাজাকার!!’ স্লোগান দিয়ে নেমে আসে।’
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘১৫ জুলাই দুপুর বারোটায় আমরা রাজু ভাস্কর্যে একটি কর্মসূচি দেই। ছাত্রলীগ পাল্টা কর্মসূচি দেয়। তবুও আমরা আমাদের কর্মসূচি পরিবর্তন করিনি। রাজু ভাস্কর্য থেকে আমরা যখন হলের দিকে প্রতিদিনকার মতো মিছিল নিয়ে আসতে থাকি, তখনই বিজয় একাত্তর হলে ছাত্রলীগ নৃশংসভাবে আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। এটি দীর্ঘ সময় ধরে চলে। এই সময়ে আমরা দেখি যে তৎকালীন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এই আন্দোলন দমন করার জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট।’ ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দেখেছি ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের ওপর বেপরোয়াভাবে আক্রমণ করে। তারা নারী শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পিটিয়ে আহত করে। আমিও এই আক্রমণের শিকার হই। ওরা আমাকেও বেধড়ক পিটায়। রেজিস্টার বিল্ডিংয়ের সামনে তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের শাকিরুল ইসলাম শাকিল আমাকে বাজেভাবে পিটিয়ে আহত করে। আমার বাঁ পায়ে জখম হয়। সেদিন আমাদের নারী শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা করা হয়। নারী শিক্ষার্থীদের আহত হওয়ার এই ফুটেজ সারা দেশের প্রত্যেকটি বিবেকবান মানুষকে ব্যথিত করেছে।’
তিনি বলেন, এখানে বলে রাখি, ৯ জুলাই ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির আগে সর্বপ্রথম আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন। আমরা তখন শাহবাগে ছিলাম। শাহবাগে আন্দোলন চলাকালীন আমাদের ডেকে নিয়ে যায়। আমাদের সাথে নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ছিলো। তখন টিএসসিতে ওই কর্মকর্তা আমাদের সাথে কথা বলেন। শাহবাগ থানার পুলিশসহ অন্যান্য জোনের পুলিশও ছিলো সেখানে। তিনি জিজ্ঞেস করেন, আমাদের মোটিভ কী? আমরা বারবার বলেছি, রাষ্ট্রের মধ্যে যে বৈষম্য আছে তা নিরসনের জন্য আমরা আন্দোলন করছি। পুলিশ থেকে আমাদের ওপর প্রেশার দিতে থাকে আমরা যেন আন্দোলন তুলে নিই। কিন্তু আমরা বলেছি, শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট ছাড়া আমাদের পক্ষে আন্দোলন বন্ধ করা সম্ভব নয়।’
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘ছাত্রলীগ মনে করেছিল ১৫ জুলাইয়ে হামলা করেই আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া যাবে। কিন্তু ১৬ জুলাই আরও বেশি শিক্ষার্থী শহীদ মিনারে জড়ো হয়। সবাই একত্রিত হওয়ার পর আমরা একটা বিক্ষোভ মিছিল করি।’
১৬ জুলাই দুপুরে আমরা একটি অনলাইন মিটিং করছিলাম। মিটিংয়ে আমি, নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, আসিফ মাহমুদ, বাকের, হাসিব থেকে শুরু করে অন্যরাও উপস্থিত ছিল। এসময় খবর পাই যে রংপুরে আবু সাঈদকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে। তখন আমরা ওই মিটিংয়েই সিদ্ধান্ত নিই আর কোনো সংলাপ হবে না। ‘রক্ত মাড়িয়ে কোনো সংলাপ নয়’।
তিনি বলেন, ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভিসি চত্বরে একটি গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় শিক্ষার্থী এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলের সবাই উপস্থিত হন। হাসনাত বলেন, ‘আমার মনে আছে, গায়েবানা জানাজা চলাকালীন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা আমাদেরকে কনস্ট্যান্টলি ফোর্স করতে থাকে যেন আমরা গায়েবানা জানাজা না করি। কিন্তু সকল প্রেশার উপেক্ষা করে আমরা গায়েবানা জানাজা আদায় করার সিদ্ধান্ত নিই। গায়েবানা জানাজা শেষ করে আমরা যখন কফিন কাঁধে মিছিল নিয়ে ভিসির বাসভবনের সামনে দিয়ে রাজু ভাস্কর্যের দিকে যেতে চাই, তখনই আমাদেরকে দুই দিক থেকে মুহুর্মুহু টিয়ার শেল এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়তে থাকে। আমাদের ওপর টিয়ারশেল সাউন্ড গ্রেনেড ছোঁড়া হলেও আমরা সেটি প্রতিহত করি।’
তিনি বলেন, ‘সেদিন আপনারা দেখেছেন যে পুলিশকে ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয় এবং বিকাল পাঁচটার মধ্যে হলগুলো খালি করার ক্ষেত্রে প্রভোস্টরা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে গিয়ে সবচেয়ে ঘৃণ্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। তৎকালীন ভিসি মাকসুদ কামালকে বারবার অনুরোধ করা হলেও তিনি গণভবনের প্রেসক্রিপশনে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো বন্ধ করে দেন। বিশেষ করে ভিসি এই আন্দোলনকে দমন করার জন্য চেষ্টা করেন। তিনি আমাদেরকে বারবার ফোর্স করেন আমরা যেন আন্দোলনকে প্রত্যাহার করে নিই। আন্দোলন প্রত্যাহার করার ক্ষেত্রে আমরা বারবার বলি যে এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট লাগবে এবং শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নির্যাতন-নিপীড়নের বিচার করতে হবে। আমরা বলি যে, এখন আর এই আন্দোলন থেকে ফেরার পথ নেই। আমরা ভিসির কাছে দাবি জানাই, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া চলবে না। কিন্তু পরবর্তীতে আমরা দেখি বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।’
‘হল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা কীভাবে কী করব তা নিয়ে সন্দিহান অবস্থায় থাকি। তখন আমি সায়েন্স ল্যাবে আমার মামার বাসায় চলে যাই। তখন আমরা সবাই বিক্ষিপ্ত হয়ে যাই। তখন আন্দোলন সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। সারজিস আলমও আমার মামার বাসায় চলে আসে। তখন নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদের সঙ্গে আমরা ফোনে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। এরমধ্যে আমাদেরকে তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও শিক্ষা মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী (নওফেল) সংলাপের প্রস্তাব দেন।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন সাইন্সল্যাবে আমাদের বাসার নিচে আসে এবং আমাদেরকে বলে, মিটিং করার জন্য একটা জায়গায় আমাদেরকে যেতে হবে। তখন আমরা অনীহা প্রকাশ করে বলি, কোনোভাবেই আমরা এই মিটিংয়ে উপস্থিত হতে পারব না। যতক্ষণ পর্যন্ত না, আমাদের সবার সমন্বিত সিদ্ধান্ত হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দ্বারা কোনো মিটিং করা সম্ভব না। তখন তারা আমাদেরকে বলে, হয় মিটিংয়ে যাবেন, না হয় বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন তারা আমাদেরকে নিয়ে পদ্মাতে যায়।’
‘আমাদেরকে পদ্মাতে নিয়ে যাওয়ার পরপরই সেখানে তিন মন্ত্রী প্রবেশ করেন। তারা হলেন, তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। তারা প্রবেশ করার পরেই আমাদেরকে বলেন, আমরা যেন তাদের সাথে মিটিং করি। তখন আমরা প্রত্যাখ্যান করি যে, ওনাদের সাথে আমাদের মিটিং করা সম্ভব না। বারবার আমাদেরকে পুশ করা হয় আমরা যেন ওনাদের সাথে বসি। কিন্তু আমরা কোনোভাবেই ওনাদের সাথে মিটিং করতে রাজি হইনি। চল্লিশ মিনিট অপেক্ষা করার পর তিন মন্ত্রী আমাদের সামনেই বের হয়ে চলে যান। তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ক্ষুব্ধ হয়ে আমাদেরকে সাইন্সল্যাবে না নিয়ে একটি সেইফ হোমে নিয়ে রাখে।’
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘ওই দিন ছিল বৃহস্পতিবার, রাত। পরের দিন শুক্রবার। আমাদেরকে জুমার নামাজ পড়তে দেওয়া হয় নাই। তিন মন্ত্রীর সাথে দেখা না করায় আমাদেরকে সারারাত ইন্ডিভিজুয়ালি (পৃথকভাবে) জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আমাকে একবার, সারজিসকে একবার, এভাবে পালাক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ চলতে থাকে। তারা আমাকে বলে, সারজিস রাজি হয়ে গেছে। সারজিসকে বলে, আমি রাজি হয়ে গিয়েছি। আমার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে বলা হয়, যেহেতু আমার বাবা একসময় বিদেশে থাকতেন। নানানভাবে পারিবারিক বিষয়গুলো টেনে এনে আমাকে ভয়-ভীতি দেখানোর চেষ্টা করা হতে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘একপর্যায়ে আমাকে কিচেন রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন বুঝতে পারি আমি কাকরাইল মসজিদ থেকে বেশি দূরে না। কারণ ওইদিন জুমার নামাজের পরপরই কাকরাইল মসজিদ থেকে একটা বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। তখন এই মিছিলটাকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। এই মিছিলটা সম্ভবত বায়তুল মোকাররমের দিকে যাওয়ার কথা ছিল। জুমার নামাজের পরে আরেকটা টিম আমাদের কাছে আসে এবং তারা আরও বেশি অ্যাগ্রেসিভ হয়। আন্দোলনের সময়ে তখন সর্বপ্রথম আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে প্রথম লাঞ্ছনার শিকার হই। আমাকে কিচেনে একপর্যায়ে থাপ্পড় দেওয়া হয়। আমাকে বলে যে আমার পরিবার তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। যেন নাহিদসহ আরও যারা আন্দোলনকারী আছে তাদেরকে নিয়ে আমরা যেন মিটিং করি।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে প্রেস কনফারেন্সের দিনও প্রেশার দেওয়া হয় এটা বলার জন্য যে, আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। তখন আমরা দেখতে পাই, আমাদের সামনে সাংবাদিকের চেয়েও বেশি আছে এজেন্সির লোকজন। তারা সবাই মোবাইল ও ক্যামেরা হাতে ছিল। আরেকটা খুব ইন্টারেস্টিং বিষয় ছিল যে ক্যাম্পাসের শ্যাডোতে, মল চত্বরে, কলা ভবনের সামনে, লাইব্রেরির সামনে আমরা যাদেরকে দেখে ভাবতাম হলের কর্মচারী বা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরি করে, আমাদেরকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর আমরা খেয়াল করি যে, ওরা সবাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিভিন্ন সংস্থার (ল’ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সির) ফিল্ড স্টাফ।’
তিনি বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন আমাদেরকে প্রেশার দেয়, আমরা যেন মিটিং করি। তারপর থেকে আমি আমার স্মার্টফোন ব্যবহার বন্ধ করে দেই। একটা বাটন ফোন ব্যবহার করা শুরু করি। ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির প্রেস কনফারেন্সের পরে আমি মামার বাসায় না গিয়ে কাঁটাবনে আমার বন্ধুর সাথে থাকি। ওইদিন রাতেই আমি আবার মামার বাসায় চলে আসি। সারজিসকেও সেখানে আসতে বলি। নাহিদ ইসলামকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে নিরাপত্তা বাহিনী সদস্যরা এসে সাইন্সল্যাবের বাসা থেকে আমাদেরকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। উঠিয়ে নিয়ে যাবার পর তারা আমাদেরকে গাড়িতে সারা ঢাকা ঘোরায়। তারপর আমাদেরকে তাদের অফিসে নিয়ে যায়।’
হাসনাত বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনীর অফিসের প্যাটার্ন ছিল এই টাইপের একটা জায়গায় ত্রিশ জনের মতো অফিস করে। বাথরুম হচ্ছে একটা। সারাদিন আমাদেরকে বাথরুমের সামনে বসিয়ে রাখত। বসার জায়গা নাই, শোয়ার জায়গা নাই, কমপ্লিটলি ওই অফিসে পেপার-পত্রিকা সব বন্ধ, মোবাইল বন্ধ, টিভি বন্ধ। সে সময় নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্য আমার সাথে খুবই রূঢ় আচরণ করে। সে খাবারে সমস্যা করেছে এবং সারারাত বাথরুমের সামনে বসিয়ে রাখত। নিরাপত্তা হেফাজত থেকে একদিন আমাদের গার্ডিয়ানদের আসতে বলা হয়। আমার এক ভগ্নিপতি আসেন আমাকে নেওয়ার জন্য। ওনাকে রাত এগারোটা পর্যন্ত বসিয়ে রেখে বলেন, আপনি চলে যান। কোনো ডিসিশন হয় নাই।’
হাসনাত জানান, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে নিয়োজিত ক্যাম্পাসের এক বড় ভাই আমাকে কল দিয়ে বলেন, ‘কালকে তোরা সামনে থাকিস না। দুইটা শার্ট নিয়ে বের হইস। কারণ আমাদের কাছে নির্দেশ আছে আমাদেরকে গুলি চালাতে হবে’। উনি এই কথাটা বলে অঝোরে কান্না করা শুরু করেন। আমি তখন খুব ইমোশনাল হয়ে যাই। তাকে বলি, ভাই আমরা আসলে পয়েন্ট অফ নো রিটার্নে আছি। ৫ আগস্ট ফজরের সময় আমাকে তিনি বলছিলেন, আমরা যেন ফার্স্ট লাইনে না থাকি।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ৫ আগস্ট সকালে বৃষ্টি হয়। সারজিস আলমকে মহাখালী থেকে পিক করার কথা ছিল আমার। আসিফ মাহমুদ পুরান ঢাকার ওইদিকে থাকেন। আমি সারজিসকে বলেছিলাম যদি বৃষ্টি হয় তাহলে হয়তো শেখ হাসিনা বেঁচে যাবে। কারণ এটা সংশয় ছিল যে, বৃষ্টি হলে রাস্তায় মানুষ নামবে না। এটা ভেবে আমার খুব খারাপ লাগে এবং পুরো আন্দোলন চলাকালীন এই সময়টায় আমি খুব ডিসহার্টেনড (হতাশ) হই। তখন আমি সাকিবকে ফোন দেই। ওরা একেবারে ছোট ছোট। থার্ড ইয়ারে পড়ে মাত্র। ওরা ২ আগস্ট থেকেই ক্যাম্পাসে এসে শেখ হাসিনার পতনের স্লোগান দেয়। তখন সাকিব আমাকে বলে, ভাই আপনি আসেন। আমরা বের হবো। বৃষ্টি হোক আর যাই হোক, আমরা বের হবো। তখন সাকিব, রিয়াদ, জামিল আসে। আমিও বের হই। আমি আর আগাতে পারি না। গাড়ি নিয়ে আমরা অনেক ঘুরে বিজয় সরণির ওদিকে যাই। ঢাকায় একদম সুনসান নীরবতা। ওই এলাকায় একটা মানুষও ছিল না। মহাখালী ব্রিজটার ওদিকে এসে আবার আমরা টার্ন নেই। কারণ আমরা সাহস পাচ্ছিলাম না যে পেছনে যাব। কারণ কেউই নাই। তখন আমরা এয়ারপোর্টের দিকে যাওয়া শুরু করি। মহাখালী থেকে তিতুমীরের দিকে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ ছিল। তখন গাড়ি টার্ন নিতে পারে নাই। আমরা সোজা গিয়ে বনানী থেকে টার্ন নেওয়ার চেষ্টা করলাম। সেটিও বন্ধ ছিল। তখন নেভির ওদিকে একটা রাস্তা আছে সেটি দিয়ে মহাখালীর দিকে আসতে আসতে ওখানে দাঁড়াই অনেকক্ষণ।’
তিনি বলেন, ‘তখন দুই ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়। তখন আমি ভাবি যে ‘উই আর ডান’। কিন্তু একটু পর আবার যখন ইন্টারনেট কাজ করা শুরু করে তখন আমরা নিউজ পেলাম সেনাপ্রধান বক্তব্য দিবেন। তখন সাড়ে দশটা-এগারোটার দিকে মানুষ বের হওয়া শুরু করল। এয়ারপোর্ট থেকে মহাখালী পর্যন্ত জনস্রোতটা মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে তৈরি হয়েছে। সব দিক থেকে মানুষ আসা শুরু করছে। তখন আমরা গাড়ি থেকে নামলাম। আর তখন তো মানুষ আর মানুষ। এরপর আমরা গণভবনের দিকে আসলাম। খবর ছড়িয়ে পড়ল স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। সারা বাংলায় বিজয়ের মিছিল শুরু হলো। দেশ মুক্ত হলো দেড় দশকের নিপীড়ন নির্যাতন গণতন্ত্র হত্যাকারী স্বৈরাচারের হাত থেকে। এভাবেই সৃষ্টি হলো নতুন এক বাংলাদেশের, ছাত্র-জনতার বিজয়ের গৌরবগাথা...’
বিশ্বের অন্যতম পরিচিত মেগাসিটি আমাদের রাজধানী ঢাকা। এক সময় সবুজ গাছপালা আর খোলামেলা পরিবেশের জন্য নাম ছিল এই ঢাকার। তবে আধুনিক হয়ে উঠতে গিয়ে শহরটি হারিয়েছে সেই প্রাকৃতিক জৌলুস।
আজ ঢাকার যেদিকেই তাকানো হবে, দেখা যাবে সুউচ্চ সব ভবন, কতশত কারখানা; সবমিলিয়ে একদম আধুনিকতায় মোড়ানো ব্যস্ততম এক মহানগরী। তবে বিনিময়ে হারিয়েছে সেই সবুজ পরিবেশ, বাসযোগ্যতা ও বায়ুমান নিয়ে তৈরি হয়েছে গুরুতর উদ্বেগ।
একদিকে গাছপালার প্রাকৃতিক বাতাসের পরিবর্তে ঢাকার ঘরবাড়ি ও অফিসগুলোতে জায়গা করে নিয়েছে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি)। অন্যদিকে, আশঙ্কাজনকহারে কমে আসছে সবুজ বনভূমির পরিমাণ।
মহানগরী ঢাকা একসময় পরিচিত ছিল ‘বাগানের শহর’ নামে। তবে ১৯৮১ সাল থেকে ব্যাপক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে শহরটি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নগর সম্প্রসারণ হয়েছে, অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতার কারণে রাজধানীর সবুজের পরিমাণ, বিশেষত গাছপালা আশঙ্কাজনকভাবে বিলীন হয়েছে।
অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে হাজার হাজার গাছ কাটা পড়েছে। ফলে বর্তমান সময়ে এসে অতিরিক্ত গরম, বায়ুদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে পড়েছে ঢাকা।
১৯৮১ সালের নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের (ইউডিডি) এক জরিপ অনুযায়ী, ঢাকার প্রায় ১৯ শতাংশ ভূমি সবুজে আচ্ছাদিত ছিল।
আশির দশকের উপগ্রহ চিত্রে দেখা যায়, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, এমনকি ধানমণ্ডি, মিরপুর ও উত্তরার মতো আবাসিক এলাকাগুলোর সড়কের পাশে ও বাড়ির আঙিনায় প্রচুর গাছ ছিল।
সংখ্যায় বলতে গেলে সে সময় ঢাকার কেন্দ্রীয় এলাকায় (তৎকালীন ঢাকা সিটি করপোরেশন অঞ্চলে) আনুমানিক ১ লাখ ৭০ হাজার থেকে ২ লাখ পূর্ণবয়স্ক গাছ ছিল।
ঢাকায় গাছ কাটার হার আধুনিকায়নের গতিকে ছাড়িয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা। নতুন ভবন, রাস্তা ও বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের জন্য পার্ক ও খোলামেলা জায়গা নিশ্চিহ্ন হচ্ছে, ফলে নগর উন্নয়ন ও পরিবেশগত স্থায়িত্বের ভারসাম্য হুমকির মুখে পড়েছে বলে সতর্ক করেছেন তারা।
পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. রেহানা করিম বলেন, ‘ঢাকায় অবকাঠামো বাড়ছে, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা হচ্ছে পরিবেশের বিনিময়ে। উচ্চ ভবন ও বাণিজ্যিক এলাকার জন্য গাছ কাটা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও বায়ুদূষণে ভূমিকা রাখছে শুরু করেছে এই সবুজের অভাব।’
শুধু বিশেষজ্ঞরা নন, ঢাকার গাছপালা আশঙ্কাজনভাবে কমার কারণে শহরটির বসবাসকারীরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
মিরপুরের বাসিন্দা তারেক রহমান বলেন, ‘এখন সব জায়গায় এসি লাগানো হচ্ছে, কিন্তু প্রাকৃতিক ছায়ার যে আরাম ও স্বাস্থ্য উপকারিতা তা এসিতে নেই। যেসব উপাদান এই শহরটিকে বাসযোগ্য করে তুলেছিল, আমরা সেগুলোই হারিয়ে ফেলছি।’
অতিরিক্ত উত্তপ্ত শহর ঢাকা
১৯৮১ সালের হিসাব তো আগেই দেখানো হয়েছে, এবার আসা যাক বর্তমান সময়ে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিবেশ বিভাগ জানিয়েছে, তাদের হিসাবে ২০২৫ সালে ঢাকা শহরের রাস্তার পাশে থাকা পূর্ণবয়স্ক গাছের সংখ্যা ৫০ হাজারেরও কম। আশির দশকের ১৯ শতাংশ বনভূমি এসে এখন ঠেকেছে ৬ শতাংশেরও নিচে।
বর্তমান হিসাব অনুযায়ী, প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য সবুজ জায়গা মাত্র ০ দশমিক ৪২ বর্গমিটার, যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী যেটি হওয়া উচিত ৯ বর্গমিটার।
এতে শহরের তাপমাত্রায় এক লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখা গেছে। ১৯৮১ সালের পর থেকে গ্রীষ্মের গড় তাপমাত্রা ২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া, ধুলাবালি কণার (পিএম ২.৫) মাত্রায় বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে দূষিত পাঁচটি শহরের তালিকায় নিয়মিত থাকতে দেখা যায় ঢাকাকে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে গাছের বিশুদ্ধ বাতাসের অভাব।
অনেকদির ধরেই সরকারের কাছে নগর পরিকল্পনায় বাধ্যতামূলক সবুজ এলাকা ও বৃক্ষরোপণের কড়া নীতি গ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ না নিলে ঢাকা তীব্র তাপপ্রবাহ, বায়ুদূষণ বৃ্দ্ধি ও জনস্বাস্থ্যের অবনতির মতো মারাত্মক পরিবেশগত বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বলেও সতর্ক করেছে তারা।
দশকের পর দশক ধরে বন উজাড়ে
আধুনিকতার পথে অগ্রগতির সঙ্গে টেকসই পরিবেশ বজায় রাখতে গিয়ে ঢাকা আজ একটি প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে—প্রাকৃতিক পরিবেশের বলি না দিয়ে আধুনিক হতে পারবে ঢাকা?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে ঢাকার ক্রমবর্ধমাণ জনসংখ্যা সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি। সরকারি হিসাব বলছে, ১৯৮১ সালে যেখানে ঢাকার জনসংখ্যা ছিল ৩৪ লাখ, ২০২৫ সালের মধ্যে তা বেড়ে ২ কোটি ৩০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
এতে ১৯৮১-১৯৯১ পর্যন্ত এই দশ বছরে দ্রুত নগরায়নের প্রাথমিক লক্ষণস্বরূপ সড়ক সম্প্রসারণ ও প্লট উন্নয়নের কারণে ১০ থেকে ১৫ হাজার গাছ কাটা পড়েছে। পরের ১০ বছরে অর্থনৈতিক মুক্ত বাজার নীতির পর নির্মাণ প্রবৃদ্ধির সময় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ গাছ নিধন করা হয়েছে।
এর পরের দশকে মহাখালী ও খিলগাঁও উড়ালসড়কসহ বড় রিয়েল এস্টেট প্রকল্পের কারণে কাটা হয়েছে আরও অন্তত ৪০ হাজার গাছ।
তবে সবচেয়ে বেশি গাছ কাটা হয়েছে ২০১১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে। মেট্রোরেল ও এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে বিভিন্ন এলাকায় বিশেষত উত্তরা, ফার্মগেট ও শাহবাগ এলাকায় প্রায় ৫০ হাজার গাছ কাটা হয়েছে।
এরপর ২০২১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এই চার বছরে ৫ থেকে ৮ হাজার গাছ কমেছে ঢাকার। বনায়ন নীতি থাকলেও নির্মাণ চলমান থাকায় গাছের পরিমাণ কমেই চলেছে।
এসিতে কেউ পাচ্ছেন ঠান্ডা হাওয়া, কেউ পুড়ছেন গরমে
একসময় কেবল ধনী মানুষের বিলাসের সামগ্রী হিসেবে বিবেচিত হত এসি। কিন্তু এখন ঢাকার তীব্র গরমে এটি একপ্রকার প্রয়োজনীয়তায় পরিণত হয়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই যে এসির ব্যবহার বাড়ছে, এতে যে শুধু তাপমাত্রাই বাড়ছে না, এটি বিদ্যুৎতের চাপ, বায়ুদূষণ ও সামাজিক বৈষম্যকেও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
বাংলাদেশ টেকসই জ্বালানি কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ঢাকায় এসির সংখ্যা গত ১৫ বছরে চারগুণ বেড়েছে। ২০১০ সালের দেড় লাখ ইউনিট থেকে এটি ২০২৪ সালে সাড়ে ৭ লাখে পৌঁছেছে।
আরও পরিষ্কারভাবে বলা হলে, রাজধানীর প্রায় তিনটি মধ্যবিত্ত পরিবারের মধ্যে একটি এখন এসির মালিক। তাপমাত্রা বাড়তে থাকায় এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষজ্ঞরা জানান, ঢাকায় গ্রীষ্মকালে আবাসিক বিদ্যুতের প্রায় ৪০ শতাংশ এসি ব্যবহারেই ব্যয় হয়। ফলে জাতীয় গ্রিডের ওপর চাপ বাড়ে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি পায়।
নগর অধিকারকর্মী ফারুক হোসেন বলেন, ‘ধনীরা এসি চালিয়ে স্বস্তিতে থাকেন, অথচ দরিদ্ররা লোডশেডিং আর অসহনীয় গরমে কষ্ট করে।’ বিশেষ করে বস্তিবাসী ও নিম্নআয়ের শ্রমজীবীরা এতে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, পুরনো মডেলের এসিগুলো হাইড্রোফ্লোরোকার্বন গ্যাস ছাড়ে, যা অত্যন্ত শক্তিশালী গ্রিনহাউজ গ্যাস। যথাযথ নিয়ন্ত্রণ না থাকলে ঢাকার এই শীতলকরণ প্রবণতা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতিগুলো (কিগালি সংশোধনী ও প্যারিস চুক্তি) ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন তারা।
পরিবেশবান্ধব স্থাপত্যবিদ শিরিন কবির বলেন, ‘ঢাকা যদি তার গাছ, পার্ক ও প্রাকৃতিক বাতাস চলাচলের পথ সংরক্ষণ করত, তাহলে এত বেশি কৃত্রিম শীতলকরণের প্রয়োজন হতো না। আমরা এমন শহর তৈরি করছি, যেটিকে বাসযোগ্য রাখতে যন্ত্রের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।’
বেঁচে থাকার জন্য বনায়ন
ঢাকার পরিবেশকে রক্ষা করতে হলে বনায়নের কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
মিশন গ্রিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান রনি ইউএনবিকে বলেন, ‘তীব্র গরম, বায়ুদূষণ ও দ্রুত সবুজ হারানো প্রতিরোধে ঢাকার জন্য পুনরায় বনায়ন অপরিহার্য। ঢাকায় বনায়ন এখন শুধু পরিবেশগত চাহিদা নয়, এটি টিকে থাকার কৌশল। শহরটি দ্রুত তার সবুজ আচ্ছাদন হারাচ্ছে, আর সঙ্গে হারাচ্ছে পরিষ্কার বাতাস, ছায়া ও জীববৈচিত্র্য।’
এ কারণে তিনি মিশন গ্রিন বাংলাদেশের মাধ্যমে গ্রিন ভলান্টিয়ার প্রোগ্রাম শুরু করেছেন বলে জানান। সেখানে তরুণদের সরাসরি শহরকে সবুজ করায় যুক্ত করার আশাও প্রকাশ করেন তিনি।
এই তরুণ পরিবেশকর্মী আরও জানান, তারা গাছ লাগানোর অনুষ্ঠান আয়োজন করেন, সচেতনতা কার্যক্রম চালান এবং ছোট শহুরে বনও তৈরি করে থাকেন। যেমন: ৫৫টি কদমগাছ নিয়ে গড়া ‘কদমতলা ইনিশিয়েটিভ’।
তিনি বলেন, ‘আমার লক্ষ্য পরিবেশগত কাজকে সহজলভ্য, হাতে-কলমে ও সমাজভিত্তিক করে তোলা। আমি বিশ্বাস করি, আজ আমরা যে গাছ লাগাচ্ছি, তা আগামী দিনের জন্য একটি সুস্থ ও বাসযোগ্য ঢাকার প্রতিশ্রুতি।’
সরকার ও বিভিন্ন এনজিওর সৌজন্যেও একাধিক বৃক্ষরোপণ অভিযান চালানো হয়েছে। ২০২০ সাল থেকে এক লাখের বেশি চারা রোপণ করা হয়েছে এই শহরে। তবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, ভাঙচুর, অবহেলা বা অনুপযুক্ত (বিদেশি বা দুর্বল মূলবিশিষ্ট) প্রজাতির গাছের চারা ব্যবহারের কারণে এগুলোর অন্তত ৩০ শতাংশ প্রথম বছরেই মারা গেছে।
ভূমিকা: সমুদ্র বলছে – আমরা কি শুনছি?
ভারতের মহাসাগরের নীল জলরাশির নিচে চলছে এমন এক সংকট যা কোনো একটি দেশের একার নয়—এটি বৈশ্বিক। প্রবাল প্রাচীরগুলো বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে, দুর্লভ সামুদ্রিক প্রজাতিগুলো বিলুপ্তির পথে, কিন্তু এই সমুদ্রের আর্তনাদ ঢাকা পড়ে যাচ্ছে মানুষের শোরগোলে। এমন এক সংকটময় সময়েই আমি সুযোগ পেয়েছি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার, তাও সম্পূর্ণভাবে অর্থায়িত প্রতিনিধি হিসেবে, মালদ্বীপের মাফুশি দ্বীপে অনুষ্ঠিত ইউনিভার্সাল ইয়ুথ লিডারশিপ সামিট (UYLS) ২০২৫-এ।
এই সামিটের আয়োজন করে ইউনিভার্সাল ইয়ুথ মুভমেন্ট (UYM), যেখানে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে তরুণ নেতৃত্ব একত্রিত হয়েছিল—উদ্দেশ্য ছিল আমাদের গ্রহের প্রধান সংকটগুলো নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে কার্যকর সমাধান বের করা। আমাদের দলের প্রেজেন্টেশন ছিল:
‘আমাদের সাগর বাঁচান: বিপন্ন সামুদ্রিক প্রাণী’।
এটি কেবল একটি সম্মেলন ছিল না—এটি ছিল এক জাগরণ, একটি বার্তা, যেখানে পরিবেশ রক্ষায় তরুণদের নেতৃত্বকে তুলে ধরা হয়েছে। আমার জন্য, এটি ছিল জীবনের অন্যতম গভীর ও গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা।
সংকট: বিপন্নতার মুখে সাগরের অভিভাবক–সামুদ্রিক কচ্ছপ: সাগরের অতল গহ্বরে, প্রাগৈতিহাসিক এক প্রাণী—সামুদ্রিক কচ্ছপ, যেটি গত দশ লক্ষ বছর ধরে টিকে রয়েছে, আজ মানুষের লোভ ও দায়িত্বহীনতার কারণে বিলুপ্তির পথে। আমাদের কল্পিত দেশের প্রকৃত অবস্থা বর্তমান পৃথিবীর বাস্তব প্রতিচ্ছবি। আমরা দেখেছি কীভাবে পাচার ও বেআইনি শিকারের ফলে কচ্ছপের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে, নির্মাণ কাজ ও পর্যটনের চাপে ধ্বংস হচ্ছে কচ্ছপের ডিম পাড়ার উপকূল ,প্লাস্টিক দূষণ ও সামুদ্রিক বর্জ্যতে মৃত্যু ঘটছে প্রজাতিগুলোর, বাণিজ্যিক জাল ব্যবহারে কচ্ছপেরা হয়ে যাচ্ছে অনিচ্ছাকৃত শিকার। আমরা বুঝে গিয়েছিলাম—এটি কেবল একটি দলীয় অ্যাসাইনমেন্ট নয়, বরং বাস্তব জীবনের সংকট যার সমাধান আজ জরুরি।
আমাদের ভূমিকা: একটি জাতিসংঘ ভিত্তিক প্রেস কনফারেন্সের রূপে উপস্থাপনা: আমাদের দল একটি জাতিসংঘভিত্তিক সংবাদ সম্মেলনের আদলে উপস্থাপন করেছিল। আমি অভিনয় করেছিলাম সরকারের পরিবেশ সংক্রান্ত আইন উপদেষ্টা হিসেবে। আমাদের দলে ছিল: সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী, পরিবেশ NGO-র প্রতিনিধি, মিডিয়া সাংবাদিক, পরিবেশমন্ত্রী, স্থানীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি । আমরা কঠিন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলাম এবং তুলে ধরেছিলাম বহুমাত্রিক সমাধান।
স্বল্পমেয়াদি সমাধান: প্লাস্টিক বর্জ্য নিষিদ্ধকরণ, সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা চিহ্নিতকরণ, উপকূলীয় উন্নয়ন স্থগিত রাখা ডিম পাড়ার মৌসুমে, কচ্ছপ উদ্ধার হেল্পলাইন চালু করা, জেলেদের সচেতনতা বাড়ানো ও বিকল্প টেকনোলজি দেওয়া।
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা: সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন, পাঠ্যসূচিতে সমুদ্র শিক্ষার অন্তর্ভুক্তি, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে কচ্ছপ পর্যবেক্ষণ, ইকো-ট্যুরিজম প্রচার, আন্তঃদেশীয় চুক্তি ও সমুদ্র সংরক্ষণ সহযোগিতা।
আমার আইনজীবী পরিচয় আমাকে সাহায্য করেছিল বাস্তব সম্মত ও কার্যকর নীতিমালা উপস্থাপন করতে। আমরা বুঝাতে পেরেছিলাম—পরিবেশ সংরক্ষণ কোনো স্বপ্ন নয়, এটি বাস্তবায়নযোগ্য একটি নৈতিক দায়িত্ব।
মালদ্বীপের শিক্ষা: স্বর্গপৃথিবীও ঝুঁকিতে: সামিটের ভেন্যু মালদ্বীপ ছিল এক জীবন্ত শিক্ষা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে দেশটি ইতোমধ্যে ঝুঁকির মুখে পড়েছে। প্রবাল প্রাচীরের ধ্বংস, সমুদ্রদূষণ, এবং অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন—সব মিলিয়ে এখানকার সামুদ্রিক প্রাণীরা আজ বিপন্ন।সাগরপাড়ে হাঁটতে হাঁটতে মনে হয়েছিল—এই দ্বীপ কি একদিন কেবল মানচিত্রে বেঁচে থাকবে?
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট: আমাদের সাগরের গল্পও কি আলাদা?
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও বঙ্গোপসাগরও একই চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। আমরা যেমন ভোগ করছি প্লাস্টিক দূষণ, তেল নিঃসরণ, বর্জ্য ব্যবস্থার অভাব, তেমনি ভোগ করছি অজ্ঞতা ও দায়িত্বহীনতার খেসারত। সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী মানুষরাও জানে না তারা কী হারাতে বসেছে। আমার লক্ষ্য এখন এই শিখন কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় সচেতনতামূলক প্রকল্প শুরু করা, যেখানে স্থানীয় স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নিয়ে সমুদ্র সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করব।
ভবিষ্যতের রূপরেখা: আইন, শিক্ষা এবং সচেতনতার মিলনস্থল
একজন আইনজীবী হিসেবে আমি বিশ্বাস করি যে শক্তিশালী আইন এবং স্থানীয় জনসম্পৃক্ততা মিলেই হতে পারে স্থায়ী সমাধানের চাবিকাঠি। আমি একটি প্রকল্প চালু করতে চাই—‘কমিউনিটি ওশান স্কুল’, যেখানে মোবাইল ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শেখানো হবে: সামুদ্রিক প্রাণী রক্ষা, প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনা, মাছ ধরার নিরাপদ পদ্ধতি, পরিবেশ-সম্পর্কিত আইনি অধিকার । এই স্কুল হবে সচেতনতা তৈরির কেন্দ্র, আইনগত সহায়তার সেতুবন্ধন, এবং সমাজের একটি জাগরণ কেন্দ্র।
সমাপ্তি: আমরা না বাঁচালে, কে বাঁচাবে?
আজকের তরুণদের প্রতি আমার আহ্বান—আমাদের কণ্ঠই হোক প্রাকৃতিক সম্পদের রক্ষাকবচ। সমুদ্রের গভীরতা যতই গভীর হোক না কেন, আমাদের দায়বদ্ধতা যেন হয় ততটাই অটল। আমরা যেন সেই প্রজন্ম না হই যারা কেবল বিবৃতি দিয়েছে—কিন্তু কিছু করেনি। আমরা যেন হই সেই প্রজন্ম যারা গর্জে উঠেছে, দাঁড়িয়েছে, এবং প্রভাব ফেলেছে।
লেখক: যুব নেতৃত্ব প্রশিক্ষক ও অ্যাডভোকেট
মন্তব্য