‘একটি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে মুক্ত ও সম্মানজনক জীবনযাপনের অধিকার অর্জনের জন্য বাঙালি জাতি বহু শতাব্দি ধরে সংগ্রাম চালিয়ে এসেছে’- জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের পর দেয়া বঙ্গবন্ধুর প্রথম ভাষণ থেকে এই উক্তি আজ তার কন্যা শেখ হাসিনার জন্মদিনে স্মরণ করছি।
আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর ডাকে ১৯৭১ সালে সমগ্র জাতি যখন সশস্ত্র যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে আত্মোৎসর্গ করছে তখন বঙ্গবন্ধুর ২৪ বছর বয়সী অন্তঃসত্ত্বা কন্যা স্বামী, মা-বোন ও ভাইদের সঙ্গে পাকিস্তইন সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি ছিলেন। ধানমন্ডি ১৮ নম্বর সড়কের (এখনকার ৯/এ) একটি স্যাঁতস্যাঁতে বাড়িতে (২৬ নম্বর) তাদের ধরে এনে আটকে রাখা হয়। ২৫ মার্চ থেকে ১২ মে পর্যন্ত তারা খিলগাঁও, মগবাজার এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন। সঙ্গত কারণেই তাদের অবস্থান জানাজানি হয়ে যেত ও কোনো কোনো বাড়িওয়ালার অসহযোগিতায় তাদের বাসা ছেড়েও দিতে হতো।
এরকম রুদ্ধশ্বাস ও অস্বস্তিকর অবস্থায় ১২ মে সন্ধ্যার দিকে এক পাকিস্তানি মেজরের নেতৃত্বে সেনা পাহারায় তাদের সে বাড়িতে নিয়ে এসে বন্দি করা হয়। গেটের বাইরে ২০-২৫ জন সৈন্য পাহারায় রেখে দেয়া হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু-কন্যা যে বাড়িতে সবার সঙ্গে বন্দি ছিলেন সে বাড়িটিতে কোনো আসবাবপত্র এমনকি কোনো ফ্যানও ছিল না। দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর হোসেনের কাছে অনুরোধ করেও সেসবের ব্যবস্থা করা যায়নি। পুরো বন্দি জীবন তাদের থাকতে হয়েছিল ঘরের মেঝেতে। দেয়া হয়েছিল একটিমাত্র কম্বল।
ছোট দুই ভাই জামাল ও রাসেল, বোন রেহানা, স্বামী এম ওয়াজেদ মিয়া ও অসুস্থ মা-কে নিয়ে সে কী এক দুর্বিষহ জীবন কাটিয়েছেন, শেখ হাসিনার নানা কথোপকথন এবং ওয়াজেদ মিয়ার লিখে রাখা বর্ণনায় সেসবের বিবরণ পাওয়া যায়।
শেখ হাসিনার মুখেই শুনেছি, একটি কেরোসিনের চুলায় রান্না করা সীমিত খাবারের জন্য তাদের মা আধপেট খেতে বলতেন। কারণ খাবার ফুরিয়ে গেলে কারফিউর মধ্যে জোগাড় করা কঠিন হবে। পাকিস্তানি সেনারা তো কোনো সাহায্য করবে না।
জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে শেখ হাসিনাকে ডাক্তারের কাছে যেতে দিতে অনুমতি মেলে। বিশিষ্ট স্ত্রীরোগ চিকিৎসক-দম্পতি ডা. এম এ ওয়াদুদ ও ডা. সুফিয়া ওয়াদুদের পরামর্শ মেনে চলতেন শেখ হাসিনা। যে কেউ আজ অনুধাবন করবেন অন্তঃসত্ত্বা একজন বন্দি মায়ের কি সেসব পরামর্শ মেনে চলার কোনো সুযোগ ছিল, যারা প্রচণ্ড গরমের সময় আধপেট খেয়ে মেঝেতে থাকতেন? ডা. ওয়াদুদ স্নেহবশত কএনা টাকাপয়সা নিতেন না বলে কিছুটা রক্ষা ছিল বটে, কিন্তু আসন্ন সন্তানের পুষ্টি ও সুস্থতার জন্য এই মায়ের বা তার স্বামীর কী-ই বা করার ছিল?
ওয়াজেদ মিয়া লিখেছেন, “জুন মাসের প্রথম থেকে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর বিভিন্ন অবস্থান ও সরকারি ইলেক্ট্রিক সাব-স্টেশন, পুলিশ ফাঁড়ি ইত্যাদি স্থানে আক্রমণ জোরদার করতে থাকে। জুন মাসের শেষের দিকে এই আক্রমণ তীব্র আকার ধারণ করে। যখনই বাইরে গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়া যেত, পাহারারত সুবেদার মেজর স্টেনগান হাতে ‘ডক্টর সাব, ডক্টর সাব’ বলতে বলতে আমার রুমে ঢুকতো। সে সময়ে তারা আমাদেরকে নানাভাবে হয়রানি ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতো। বাড়ির ছাদে উঠে লাফালাফি করতো এবং লাইট জ্বালিয়ে রেখে ঘুমোতে দিত না। রাইফেলের মাথায় বেয়নেট লাগিয়ে কক্ষের জানালার ধারে দাঁড়িয়ে থাকত।” ভাবা যায়? এই গর্ভধারিণী মায়ের মন তখন কী স্বপ্নে বিভোর থাকার কথা!
জুলাই মাসের মাঝামাঝি ডা. ওয়াদুদের তত্ত্বাবধানে শেখ হাসিনা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। সন্তান প্রসবিনী মায়ের সঙ্গে আমাদের দেশের প্রচলিত সংস্কৃতি অনুযায়ী তার মায়েরই থাকার কথা। বেগম মুজিব যেন তার মেয়ের সঙ্গে হাসপাতালে থাকতে পারেন সে অনুমতি চাইলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর ইকবাল নামের একজন অত্যন্ত বাজে আচরণ করে।
ওয়াজেদ মিয়া লিখেছেন, “মেজর ইকবাল নামক এক সামরিক কর্মকর্তা বাসায় এসে আমার শাশুড়িকে রূঢ় ভাষায় বলে, আপনি তো নার্স নন যে হাসপাতালের কেবিনে আপনার মেয়ের সঙ্গে থাকা বা দেখাশুনা করার প্রয়োজন রয়েছে।”
এ পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর ছোট বোন খাদিজা হোসেন লিলি (লিলি ফুপু, বাংলাদেশ সরকারের সাবেক অতিরক্ত সচিব এ টি এম হোসেনের স্ত্রী) সারাক্ষণ শেখ হাসিনার সঙ্গে হাসপাতালে থাকতেন। ২৭ জুলাই রাত ৮টার দিকে নির্ধারিত সময়ের ছয় সপ্তাহ আগে শেখ হাসিনার প্রথম সন্তান জয়-এর জন্ম হয়। গর্ভকালে এই শিশু মায়ের সঙ্গে মায়ের পেটে বন্দি ছিল। ভূমিষ্ঠ হয়েও সে বন্দি। ‘মুক্ত জীবনের অধিকার’ এই সদ্যোজাত শিশুরও ভাগ্যে ছিল না।
দু-একজন আত্মীয়-স্বজন এই শিশুকে দেখতে এলে পাকিস্তানি সৈন্যরা খারাপ ব্যবহার করত। একদিন শেখ হাসিনার লিলি ফুপু ছাড়া দেখতে আসা আর সব আত্মীয়কে পাকিস্তানিরা ভয় দেখিয়ে কেবিন থেকে বের করে দেয়। তারা জানায়, তাদের কাছে সরকারি নির্দেশ রয়েছে যে এই কেবিনে একজনের বেশি সেবিকা থাকতে পারবে না।
ধানমন্ডির বন্দিশালায় গিয়েও পাকিস্তানি সৈন্যরা বেগম মুজিবকে এই বলে হুমকি দিয়ে আসে, ‘আপনারা জয় বাংলা রেডিও শোনেন। এটা বন্ধ না করলে জামালকে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে ঘরের সিলিং-এ পা বেঁধে ঝুলিয়ে পিটিয়ে তার পিঠের চামড়া উঠানো হবে।’
হাসপাতালে বড় বোনের কাছে সদ্য মামা হওয়া এই ভাইয়ের জন্য আশংকার খবর পৌঁছানোর পর তখন শেখ হাসিনার কেমন লেগেছিল আজকের দিনে যে কোনো সংবেদনশীল মানুষেরই তা উপলব্ধি হওয়ার কথা।
এই শিশু সন্তান নিয়ে শেখ হাসিনা যখন ধানমন্ডির বন্দি গৃহে ফেরেন সেই মেঝেতেই তাদের ঠাঁই হয় একটি মাত্র কম্বল বিছিয়ে। একদিন জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনে সন্তানের জন্য ডাক্তার ডাকার প্রয়োজন হলে সেনারা গেট থেকে আটকে দেয়। শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনার প্রসবোত্তর অতি-জরুরি চিকিৎসার জন্য (যাতে তার জীবনাশঙ্কা হয়েছিল) কিছুতেই ডাক্তার ওয়াদুদ-কে আসতে দেয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে ডাক্তার ব্যবস্থাপত্র লিখে দিলে তা নিয়ে কারফিউ শুরুর মাত্র কয়েক মিনিট আগে জরুরি ওষুদ কিনে এনে সে যাত্রায় রক্ষা হয়।
এই ক্রমাগত বাধা আর অত্যাচারের যন্ত্রণা দায়িত্বশীল স্বামী হিসেবে, আদর্শ পিতা হিসেবে ওয়াজেদ মিয়াকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তখন বহন করতে হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু আগে থেকেই তার পছন্দ বলে রেখেছিলেন- শেখ হাসিনা যেন তার ছেলে সন্তান হলে নাম রাখেন ‘জয়’ ও মেয়ে হলে ‘জয়া’। বন্দিশালায় সদ্যোজাত ছেলে সন্তানের নাম যখন ‘জয়’ রাখা হল তখন এ নিয়েও পাকিস্তানিরা প্রশ্ন তুলেছে। কটাক্ষ করে তারা বলত, ‘পশ্চিম পাকিস্তানমে এক নমরুদকো পাকড়াও করকে রাখা হুয়া, লেকিন এধার এক কাফের পয়দা হুয়া।’
বঙ্গবন্ধু-পুত্র শেখ জামাল একদিন কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে চলে যান। জামালের অনুপস্থিতি ও জানা আশঙ্কার মধ্যে একদিন বাসায় কর্মরত এক তরুণ সদস্য ফরিদকে পাকিস্তানি সৈন্যরা ধরে নিয়ে নির্মম অত্যাচার করে। টুঙ্গিপাড়ায় বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দিলে বঙ্গবন্ধুর অসুস্থ বাবা-মাকে ঢাকায় এনে আত্মীয়ের বাড়িতে রাখা হয়েছিল।
অক্টোবরে ওয়াজেদ মিয়াও অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং চিকিৎসার জন্য ডাক্তারদের পরামর্শে তাকে তখনকার পিজি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। একই সময়ে যুদ্ধ ঘনীভূত হলে ও ঢাকায় ক্রমাগত গেরিলা আক্রমণ শুরু হলে পাকিস্তানি বাহিনীর সতর্ক দৃষ্টি পড়ে বঙ্গবন্ধুর পরিবার ও পরিবারের সদস্যদের প্রতি। সেসব কঠোর পাহারার মধ্যে ধানমন্ডির বন্দি গৃহে বেগম মুজিব ও শেখ হাসিনাসহ অন্যরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।
১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের পরও তারা মুক্ত হতে পারেননি। বাড়ির পাহারা পাকিস্তানিরা ত্যাগ করেনি। মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে ওয়াজেদ সাহেব তাদের ১৮ ডিসেম্বর মুক্ত করতে সমর্থ হয়েছিলেন।
জেনারেল অরোরা নিজে এসে ১৮ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। সে বাসায় কোনো চেয়ার ছিল না বলে জেনারেল অরোরাকে কোথায় বসতে দেবেন তা ভেবে বেগম মুজিব খুব বিব্রত বোধ করছিলেন। (তথ্যসূত্র: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথোপকথন ও এম এ ওয়াজেদ মিয়ার বই ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’)।
এই যে একাত্তরের বন্দি জীবন সে জীবনেও শেখ হাসিনার একটি জন্মদিন ছিল, ২৮ সেপ্টেম্বর। জয়-এর জন্মের মাত্র দুই মাস পরের কথা, শুনেছি আপার তা মনেও ছিল না। আমরা আজও জানি না বঙ্গবন্ধু-কন্যার সেই বন্দিদশা আদৌ মুক্ত হয়েছে কী না।
কারণ, বঙ্গবন্ধুর উক্তি ‘একটি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে মুক্ত ও সম্মানজনক জীবনযাপনের অধিকার অর্জনের জন্য বাঙালি জাতি বহু শতাব্দি ধরে সংগ্রাম চালিয়ে এসেছে’; সেই সংগ্রামের হাল ধরে শেখ হাসিনা নিজে মুক্ত, স্বাধীন ও সম্মানজনক জীবন প্রতিষ্ঠার লড়াই করছেন ও নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার মুক্তি কোথায়?
যুদ্ধের দিনে অভাব-অনটনে, কষ্ট-অপমানে জন্ম নেয়া একটি বন্দি শিশুর জন্য শেখ হাসিনার যে মাতৃত্ববোধ তা আজ সমগ্র জাতির কাছে ছড়িয়ে গেছে। তিনি যখন বলেন ‘আত্মমর্যাদা অর্জন করেই বাঙালিকে বাঁচতে হবে, আমি দেশের মানুষের সে আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্যই লড়াই করছি’ তখন আমাদের মনে হয়- এই সংগ্রাম কবে শেষ হবে?
যদি শেষ হতো, একবার সবাই মিলে আপার জন্মদিনে টুঙ্গিপাড়া যেতাম। আপা বসে থাকতেন বঙ্গবন্ধুর শয়নের পাশে। আমরা একটি দূরের উঁচু ঢিবি থেকে দেখতাম পাখিগুলো ফিরে যাচ্ছে আপন মনে।
শেখ হাসিনার জন্মদিনে আজ এই প্রার্থনা করি- বাঙালির জীবনে পাখি দেখার সেই দিন আসুক, আমরা তখন বেঁচে থাকি বা না থাকি।
লেখক: রেজা সেলিম, পরিচালক, আমাদের গ্রাম
ই-মেইল: [email protected]
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন কারণে বাতিল হওয়া প্রার্থিতা ফিরে পেতে প্রথম দিনে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) ৪২ জন প্রার্থী আপিল করেছেন।
ইসির তফশিল অনুযায়ী, মঙ্গলবার আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এসব আবেদন জমা পড়ে। খবর বাসসের
বাতিল হওয়া প্রার্থিতা ফিরে পেতে ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে বেশি আবেদন পড়েছে। এবার ময়মনসিংহ অঞ্চলে মোট ৩২৭ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এর মধ্যে ৮৪ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়। রাজশাহী অঞ্চলে কোনো আপিল জমা পড়েনি।
নির্বাচন কমিশন চত্ত্বরে একটি কেন্দ্রীয় বুথসহ অঞ্চলভিত্তিক ১০টি বুথে বাতিল হওয়া প্রার্থীরা তাদের আপিল দাখিল করছেন। আগামী ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে। আর ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব আপিল নিষ্পত্তি হবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে সারা দেশে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ২ হাজার ৭১৬ জন। এর মধ্যে ১ হাজার ৯৮৫ জনের মনোনয়নপত্র গৃহীত এবং ৭৩১ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
হরতাল-অবরোধ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের পরিস্থিতি নষ্ট করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।
শেরপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মঙ্গলবার বিকেলে তিনি এ কথা বলেন।
কমিশনার আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব প্রস্তুতি রয়েছে। বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করতে এবং ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে স্বাধীনভাবে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে সে জন্য আমাদের যা যা করা দরকার তা করব।’
তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে। এ নিয়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
বিএনপির ডাকা অবরোধের কারণে ভোটে কোনো প্রভাব পড়বে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যারা এসব করছে তাদের জন্য আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে এবং এটা অ্যালার্মিং পর্যায়ে যায়নি। সারা দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। গাড়ি-ঘোড়া চলছে। সাধারণ মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য করছে।
‘বিরোধীদলের আন্দোলন নির্বাচনে বিঘ্ন হবে না। তাই ভোটের দিনও ভোটাররা ভয় পাবে না। তারা ভোটকেন্দ্রে যাবে এবং ভোট দেবে।’
আরও পড়ুন:পুরো নভেম্বর মাসজুড়েই ছিল বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকা হরতাল ও অবরোধ। শুক্র ও শনিবার বাদে সপ্তাহের মাত্র এক কর্মদিবস ছিল এসব কর্মসূচির আওতামুক্ত। তারপরও এ মাসে দুর্ঘটনার কমতি ছিল না।
নভেম্বরে সারা দেশে সড়ক, নৌ ও রেলপথে মোট ৬০৩টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৫০৩ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন অন্তত ৬৩০ জন। দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৫৬৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৭৫ জন নিহত এবং ৬০৫ জন আহত হয়েছেন। একই সময় রেলপথে ৩১টি দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত ও ২৫ জন আহত হয়েছেন এবং নৌ-পথে ৬টি দুর্ঘটনায় ৫ জন নিহত ও একজন নিখোঁজ রয়েছেন।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর পাঠানো এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ-পথের দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে সংগঠনটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত নভেম্বর মাসে ১৪৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৭৩ জন নিহত ও ৮৫ জন আহত হয়েছে। যা মোট দুর্ঘটনার ২৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ, নিহতের ৩০ দশমিক ৫৬ শতাংশ ও আহতের ১৫ দশমিক ০১ শতাংশ। এ মাসে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৮৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১১৫ জন নিহত ও ১৩৮ জন আহত হয়েছে। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে সিলেট বিভাগে। এ বিভাগে ২২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত ও ২৬ জন আহত হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ২১ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১৩৩ জন চালক, ৫৪ জন পথচারী, ২০ জন পরিবহন শ্রমিক, ৬৭ জন শিক্ষার্থী, ৩ জন শিক্ষক, ৬৪ জন নারী, ৪৪ জন শিশু, ২ জন সাংবাদিক, ২ জন চিকিৎসক, ১ জন আইনজীবী, ২ জন প্রকোশলী, ১ জন মুক্তিযোদ্ধা এবং ১২ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে। এদের মধ্যে নিহত হয়েছে- ৪ জন পুলিশ সদস্য, ২ জন চিকিৎসক , ২ জন সাংবাদিক, ১ জন আইনজীবী, ১ জন মুক্তিযোদ্ধা, ২ জন প্রকোশলী, ১০৬ জন বিভিন্ন পরিবহনের চালক, ৪৫ জন পথচারী, ৫১ জন নারী, ৩২ জন শিশু, ৩৬ জন শিক্ষার্থী, ১৩ জন পরিবহন শ্রমিক, ৩ জন শিক্ষক ও ৭ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী নভেম্বর মাসে সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হচ্ছে- ট্রাফিক আইনের অপপ্রয়োগ, দুর্বল প্রয়োগ, ট্রাফিক বিভাগের অনিয়ম দুর্নীতি ব্যাপক বৃদ্ধি, মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও তিন চাকার যানের ব্যাপক বৃদ্ধি ও এসব যানবাহন সড়ক মহাসড়কে অবাধে চলাচল, সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কে বাতি না থাকা ও রাতের বেলায় ফগ লাইটের অবাধ ব্যবহার, চলতি বর্ষায় সড়ক মহাসড়কের ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়া, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা, উল্টো পথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাঁদাবাজি এবং অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানো।
সংস্থাটির দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সুপারিশগুলো হচ্ছে- জাতীয় নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনি ইশতেহারে সড়ক নিরাপত্তা ও স্মার্ট গণপরিবহন গড়ে তোলার বিষয়ে অঙ্গীকার রাখা, মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের মতো ছোট ছোট যানবাহন আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা, দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ, ডিজিটাল পদ্ধতিতে যানবাহনের ফিটনেস প্রদান, রাতের বেলায় বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল চালকদের রিফ্লেক্টিং ভেস্ট পোশাক পরিধান বাধ্যতামূলক করা, সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, চালকদের বেতন ও কর্ম ঘণ্টা সুনিশ্চিত করা, রাতের বেলায় চলাচলের জন্য জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে পর্যাপ্ত আলোক সজ্জার ব্যবস্থা করা, চলতি বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার মাঝে সৃষ্ট ছোট বড় গর্ত দ্রুত অপসারণ করা এবং গণপরিবহন বিকশিত করা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও মেরামত সুনিশ্চিত করা, নিয়মিত রোড সেইফটি অডিট করা।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের কোনো প্রভাব পড়বে না বলে কোনো ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।
মঙ্গলবার দুপুরে সাভারের তালবাগ এলাকায় নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান মন্ত্রী।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম সরাসরি বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পশ্চিমে অগ্রসর হয়ে ভারতের তামিলনাড়ু, কর্ণাটক এবং অন্ধ্রপ্রদেশে আঘাত হেনে আস্তে আস্তে ভুবনেশ্বরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এটা শক্তি হারিয়েছে এবং বাংলাদেশে এটার কোনো প্রভাব পড়বে না, যার জন্য আমরা কোনো প্রস্তুতি নেইনি। এর প্রভাবে বাংলাদেশে হয়ত আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকবে ও বৃষ্টিপাত হবে।’
বাংলাদেশে আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোনো অনুমান করতে যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন দেশটির স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার।
স্থানীয় সময় সোমবার স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে দেশটির এ অবস্থানের কথা জানান তিনি।
ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ বিষয়ে প্রশ্নকারী সাংবাদিক মিলারের উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশে ২০ হাজারের বেশি বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীকে আটকের মাধ্যমে বর্তমান সরকার নজিরবিহীন কায়দায় নির্বাচন করতে যাচ্ছে। হেফাজতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। গত ছয় দিনে তিনজন বিরোধীদলীয় কর্মীর এমন মৃত্যু হয়েছে। লক্ষ্যে থাকা ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
প্রশ্নকারী আরও বলেন, নবগঠিত কিং’স পার্টির মাধ্যমে সরকার বিজয় নিশ্চিত করতে চাইছে, যেখানে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ বড় সব দল নির্বাচন বর্জন করেছে।
উল্লিখিত বাস্তবতায় বাংলাদেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সম্ভাবনাকে কীভাবে মূল্যায়ন করছে যুক্তরাষ্ট্র, তা মিলারের কাছে জানতে চান প্রশ্নকারী সাংবাদিক।
জবাবে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র বলেন, ‘আমি (বাংলাদেশে) নির্বাচনের ফল নিয়ে অনুমান করতে যাচ্ছি না। আমি তাই বলব, যেটা ইতোপূর্বে অনেকবার আমরা বলেছি। আর তা হলো আমরা সরকার, বিরোধী দল, সুশীল সমাজ ও অন্য অংশীজনদের সঙ্গে সম্পৃক্তি অব্যাহত রেখে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে তাদের তাগিদ দেব।’
আরও পড়ুন:জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষ হয়েছে সোমবার। যাচাই-বাছাই শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বাতিল করা মনোনয়ন ফিরে পেতে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) চলছে আপিল গ্রহণ।
আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের নিচে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হয় প্রার্থীদের আপিল আবেদন গ্রহণ প্রক্রিয়া। এ জন্য ইসিতে ১০টি অঞ্চলের জন্য ১০টি আলাদা বুথ করা হয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে কেন্দ্রীয় একটি বুথ।
আজ ৫ ডিসেম্বর থেকে আগামী ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে করা যাবে এ আপিল।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আইন শাখার উপসচিব মো. আব্দুছ সালামের স্বক্ষরিত আপিল দায়ের, শুনানি ও নিষ্পত্তি সংক্রান্ত নোটিশে বলা হয়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাতিল ও গ্রহণাদেশের বিরুদ্ধে কোনো প্রার্থী বা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান রিটার্নিং অফিসারের আদেশে সংক্ষুব্ধ হয়ে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পরবর্তী পাঁচ দিনের মধ্যে, অর্থাৎ ৫ ডিসেম্বর থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন বরাবর স্মারকলিপি আকারে (আপিলের মূল কাগজপত্র ১ সেট ও ছায়ালিপি ৬ সেটসহ) আপিল করতে পারবেন।
নোটিশে আরও বলা হয়, আপিলের জন্য নির্বাচন ভবনে ১০টি অঞ্চলের জন্য ১০টি বুথ করা হয়েছে। ১০ জন কর্মকর্তার কাছে আপিল আবেদন জমা দিতে হবে। আপিলের পর ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে আপিল শুনানি।
সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা কর্তৃক বাতিল হওয়া মনোনয়ন প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশন ভবনে আসতে শুরু করেন। বেশির ভাগ প্রার্থী আসেন মূলত খোঁজখবর নিতে। কারণ অনেকেই জানেন না কী কী কাগজ নিয়ে আপিল করতে হবে।
ইসি কার্যালয়ের আপিল বুথে আসা বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর আখতারুজ্জামান বলেন, ‘রিটার্নিং অফিসার আমাকে দুটি কারণে মনোনয়ন বাতিল করেছেন। প্রথমটি হলো অতীতে আমার নামে কোনো মামলা আছে কি না, সেই জায়গায় আমি কিছু লিখি নাই। এটি একটি কারণ।
‘আমি যতটুকু জানি, কেউ যদি সাজাপ্রাপ্ত হয়, তাহলে সেটি লিখতে হয়, কিন্তু আমি যেহেতু সাজাপ্রাপ্ত নই, তাই আমি ওই জায়গাটা লিখি নাই। কারণ আমরা যারা বিএনপি করি, আমাদের নামে তো হাজার হাজার মামলা। কোনটা থেকে কোনটা বলব?’
তিনি আরও বলেন, “আরেকটি জায়গায় তথ্য চেয়েছিল। সেখানে আমি লিখেছিলাম, ‘প্রযোজ্য নয়’। এই দুই কারণে আমার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
“আজকে আমি এখানে এসেছি জানতে। এখানে এসে জানলাম। আগামী ২/১ দিনের মধ্যেই আমি আপিল আবেদন করব।”
আরও পড়ুন:রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় ঋণের পরিবর্তে অনুদান হিসেবে সহায়তা দিতে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক তথা এডিবির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
সংস্থাটি সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কাছ থেকে এক বিলিয়ন ডলার চেয়েছে বাংলাদেশ, যার ৫৩৫ মিলিয়ন ডলারই ঋণ এবং ৪৬৫ মিলিয়ন অনুদান। রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাংলাদেশের বাধ্য হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। রোহিঙ্গা সংকটের মতো বৈশ্বিক মানবিক সংকট মোকাবিলার জন্য ঋণ নয়, সহায়তা অনুদান হিসেবে প্রদানের জন্য বিশ্বব্যাংক এবং এডিবির সঙ্গে আলোচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
‘পাশাপাশি এই নিপীড়নমূলক মানবিক সংকট মোকাবিলায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে ন্যায্য ও যথাযথভাবে এগিয়ে আসতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘টিআইবি মনে করে, রোহিঙ্গা সংকটের মতো এমন একটি মানবিক সংকট মোকাবিলার সকল ভার শুধু বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া পুরোপুরি অন্যায্য এবং তা মোটেই কার্যকর ও টেকসই সমাধান নয়। এই সংকট সমাধানের জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত পদক্ষেপ এবং বৈশ্বিক সংহতি। মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় প্রদান ও বছরের পর বছর ভরণপোষণের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে নিজেদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চই করেছে বাংলাদেশ।
‘এই বাড়তি অর্থনৈতিক বোঝা সম্মিলিতভাবেই বহন করার দায়িত্ব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের। নির্যাতনে দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে বলে এই অর্থনৈতিক বোঝার পুরোটাই অনন্তকাল ধরে বাংলাদেশের কাঁধে চাপিয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। বিশেষত, যখন বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে, সেই মুহূর্তে এই ঋণ চাওয়ার সিদ্ধান্ত দ্বিগুণ উদ্বেগজনক।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক ও এডিবি থেকে ঋণ গ্রহণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা এবং রোহিঙ্গা সংকট সংশ্লিষ্ট সকল খরচের সুষ্ঠু ও ন্যায়সঙ্গত বণ্টন নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংলাপের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই। ঋণ নয় অনুদান হিসেবে সহায়তা প্রদানের জন্য বিশ্বব্যাংক এবং এডিবির প্রতি আমরা আহ্বান জানাই।
‘রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের সহায়তার হাত বাড়িয়ে বিশ্বব্যাংক ও এডিবি প্রমাণ করার একটি সুযোগও পাচ্ছে, তাদের লক্ষ্য শুধু নির্বিচার ঋণ ব্যবসাতে সীমাবদ্ধ নয়।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য