× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

মতামত
Mastani of BNP again in the High Court
google_news print-icon

হাইকোর্টে বিএনপির আবার মাস্তানি

হাইকোর্টে-বিএনপির-আবার-মাস্তানি
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক
২০১১-এর ঘটনা ছাড়াও বিএনপি-জামায়াত সদস্য আইনজীবীরা প্রতিনিয়ত এ ধরনের মাস্তানি করে যাচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে এবং এমনকি আদালতের ভেতরেও। সর্বশেষ খবরে প্রকাশ, বিএনপি-জামায়াতের আইনজীবীরা সারা দিন আদালত কক্ষ দখলে রেখেছিলেন যে কারণে, সেই আদালতে বাকি দিন কোনো কাজ হতে পারেনি। ফলে বহু বিচার প্রার্থীকে বিচারবঞ্চিত হতে হয়েছে।

২৮ আগস্ট দেশের দৈনিক সংবাদপত্র এবং বৈদ্যুতিক প্রচারমাধ্যম থেকে জানতে পারলাম, সেদিন মহামান্য হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ পলাতক তারেক জিয়ার বক্তব্য-ভাষণ প্রচার বন্ধ করা এবং সরিয়ে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষকে (বিটিআরসি) নির্দেশনা দেয়ার পর বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা উক্ত বেঞ্চে ঘৃণ্য ধরনের হট্টগোল শুরু করে, মাননীয় বিচারপতিদ্বয়ের প্রতি ফাইল এবং কাগজের ঢিল নিক্ষেপ করে, যে অবস্থায় বিচারপতিদ্বয় আদালত ছেড়ে খাস কামরায় যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।

আদালতে বিএনপি-জামায়াতিদের এ ধরনের গুণ্ডামি এটিই প্রথম নয়। ২৮ আগস্টের ঘটনা আমাকে স্মরণ করিয়ে দিল ২০১১ সালের একই ধরনের মাস্তানির কথা। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া আমাদের পবিত্র সংবিধান সম্পর্কে আপত্তিকর কথা বলার অভিযোগে আমার নেতৃত্বে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চে শুনানি চলাকালে বেশ কিছু বিএনপি সদস্য আইনজীবী আমাদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছিল। ঢিল, বোতল, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছিল। আমি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দিলে, তিনি চিহ্নিত কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করলে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

২০১১-এর ঘটনা ছাড়াও বিএনপি-জামায়াত সদস্য আইনজীবীরা প্রতিনিয়ত এ ধরনের মাস্তানি করে যাচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে এবং এমনকি আদালতের ভেতরেও। সর্বশেষ খবরে প্রকাশ, বিএনপি-জামায়াতের আইনজীবীরা সারা দিন আদালত কক্ষ দখলে রেখেছিলেন যে কারণে, সেই আদালতে বাকি দিন কোনো কাজ হতে পারেনি। ফলে বহু বিচার প্রার্থীকে বিচারবঞ্চিত হতে হয়েছে।

অথচ এই বিএনপি-জামায়াতি আইনজীবীরাই সর্বদা গলা উঁচু করে গণতন্ত্র, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আর আইনের শাসনের কথা বলে শান্ত সমুদ্রে ঝড় তুলতে ভুল করেন না, ভোলেন না তাদের বিদেশি প্রভুদের কাছে নালিশ করতে।

মামলাটি করা হয়েছে খুনের অপরাধে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি তারেক জিয়ার বক্তব্য গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচার বন্ধের আদেশ প্রার্থনা করে। গত কয়েক বছর ধরে এই পলাতক আসামির বক্তব্য বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে বলে এই মামলার প্রয়োজন হয়েছে কেন না পলাতক আসামির বক্তব্য প্রচার করা শুধু বেআইনিই নয়, দণ্ডনীয় অপরাধও বটে।

আইনের ভাষায় একজন পলাতক আসামিকে বলা হয় ‘আউট ল’। জগৎশ্রেষ্ঠ ব্ল্যাক ল ডিকশনারিতে দেয়া সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, আউট ল ‘সেই ব্যক্তি যে আইনে প্রদত্ত সুবিধা এবং সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত, সে ব্যক্তি একজন অভ্যাসগত অপরাধী, বিশেষ করে একজন পলাতক আসামি (fugitive)। ’ ব্ল্যাক ল ডিকশনারির সংজ্ঞা থেকে এটি পরিষ্কার যে, ফেরারি আসামি আইনের সুরক্ষা বা সুবিধা কোনোটিই পেতে পারে না।

এ বিধান পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই প্রচলিত, যার কারণে পলাতক থাকাকালে তার পক্ষে প্রতিনিধি বা আইনজীবী কোনো আদালতে বা কর্তৃপক্ষের কাছে হাজির হতে পারে না। সোজা কথায় সে আইনের দৃষ্টিতে একজন অদৃশ্য ব্যক্তি। অদৃশ্য ব্যক্তি বিধায় তার ভাষণ প্রচার হতে পারে না।

এ মামলায় তারেক জিয়া এবং কয়েকজন রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা ছাড়া কেউ পক্ষভুক্ত নয়। তারেক জিয়া পলাতক বিধায় তার পক্ষে আদালতে কেউ হাজির হতে পারে না। তা সত্ত্বেও বিএনপির কিছু আইনজীবী তারেক জিয়ার পক্ষে কথা বলতে আদালতে অন্যায় এবং বেআইনিভাবে হাজির হয়েছেন শুধু আদালতের কার্যক্রম ব্যাহত করতে। তারা সংশ্লিষ্ট মামলায় কোনো পক্ষের আইনজীবী নয় বিধায়, আদালত তাদের কথা বলার সুযোগ দিতে পারে না।

কেউ কেউ বলছেন, তারেক জিয়ার ভাষণ প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া নাকি তার মানবাধিকার লঙ্ঘন। আইনে ন্যূনতম জ্ঞান থাকলে এটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, পলাতক থাকা অবস্থায় কোনো আসামি কোনো ধরনের অধিকারই ভোগ করতে পারে না, যে কথা ব্ল্যাক ল ডিকশনারিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। তদুপরি আমাদের সংবিধানের ৩৯ক অনুচ্ছেদে মত প্রকাশের যে অধিকার প্রদান করা হয়েছে, সেটি নিশ্চিতভাবে এমন মানুষের জন্য যে একজন প্রকাশ্য, দৃশ্যমান ব্যক্তি, কোনো পলাতক বা অদৃশ্য ব্যক্তিকে এই স্বাধীনতা দেয়া হয়নি।

একজন ফেরারিকে এই স্বাধীনতা দেয়ার অর্থ তাকে ফেরারি আসামি হিসেবে বিরাজ করতে সহায়তা করা। ৩৯ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত অধিকার অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা বা আদালত অবমাননার জন্য ভোগ করা যায় না। একজন পলাতক আসামির ক্ষেত্রে দুটি নিষেধাজ্ঞাই বিরাজমান, কেন না, তার ভাষণ প্রচার করার অধিকার মানে পলাতক থাকার এবং আদালত অবমাননার অপরাধ চালিয়ে যাওয়া। তার ওপর আদালতের নির্দেশ রয়েছে আত্মসমর্পণ করার।

তা ছাড়াও ৩৯ অনুচ্ছেদের দেয়া অধিকার কেবল বাংলাদেশের নাগরিকরাই ভোগ করতে পারেন। উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ অনেক আগেই জানিয়েছে যে, বিদেশে পালিয়ে থাকা সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক জিয়া অনেক আগেই বাংলাদেশের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

আমাদের দণ্ডবিধির ৫২ক ধারায় কোনো পলাতক আসামিকে সহায়তা করা মারাত্মক অপরাধ। তারেক জিয়াকে পালিয়ে থাকতে সহায়তা করার অপরাধে সহায়তাকারীরও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। দন্ডণ্ডধির সংশ্লিষ্ট ধারায় বলা হয়েছে, ‘আশ্রয় দেওয়া মনে পলাতকের জন্য আবাসের ব্যবস্থা করা, খাবার, পানীয়, অর্থ প্রদান, পরিধেয় বস্ত্র প্রদান, অস্ত্র প্রদান, চলাচলের ব্যবস্থা করা, অথবা এই ধারায় নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নাই এমন অন্য যে কোনো উপায়ে সহায়তা প্রদান করা।’

সুতরাং আশ্রয় শব্দটির ব্যাখ্যা অনেক ব্যাপক, অর্থাৎ এমন কাজও ‘আশ্রয় প্রদানের’ ব্যাখ্যার অন্তর্ভুক্ত, যার কথা উক্ত ধারায় বিশেষ করে উল্লেখিত নয়। সেই অর্থে তারেক জিয়ার ভাষণ প্রচারকারীরাও দন্ডবিধির ৫২ক ধারার দায়ে অপরাধী। জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য তারা সাংবাদিকদের বলেছে যে, তারা মাননীয় প্রধান বিচারপতির কাছে এই মর্মে দরখাস্ত করেছে যে, এই বেঞ্চের ওপর তাদের আস্থা নেই। এ কথা এতই হাস্যকর যে, কোনো আইনজীবীর মুখে এ ধরনের অবান্তর কথা শোভা পায় না।

মাননীয় প্রধান বিচারপতির কাছে এ ধরনের দরখাস্ত সে ব্যক্তিই করতে পারেন, যে সংশ্লিষ্ট মামলায় একজন পক্ষ। কোনো আগন্তুক এ ধরনের দরখাস্ত করতে পারেন না। জানা গেছে, একজন আইনজীবী তার এক অনির্দিষ্ট মক্কেলকে পক্ষভুক্ত করার জন্য দরখাস্ত করেছিলেন, যেই আবেদন সংশ্লিষ্ট আদালত অত্যন্ত যৌক্তিক এবং আইনসংগত কারণেই নাকচ করে দিয়েছেন।

এ মামলার বিষয়বস্তু এমন কিছু নয়, যাকে পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন বলা যায়। এখানে বিষয় একটিই, তা হলো তারেক জিয়া পলাতক আসামি বিধায় তার ভাষণ প্রচার করা যায় কি না। সুতরাং এ বিষয়ে অন্য ব্যক্তির কোনো স্বার্থ, যাকে আইনের ভাষায়, লোকাস স্টেন্ডাই, বলে, থাকতে পারে না। এ ধরনের দরখাস্ত করার মানে হচ্ছে আদালতের সময় ইচ্ছাকৃতভাবে নষ্ট করা, যার জন্য এসব আইনজীবীর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।

তা ছাড়াও মাননীয় প্রধান বিচারপতির কাছে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দরখাস্ত করতে হয়। পক্ষভুক্তির দরখাস্ত নাকচ হওয়ার পর তারা আপিল বিভাগে দরখাস্ত করতে পারত, কিন্তু সেটি তারা করে নাই, সম্ভবত এই জেনে যে, এ ধরনের অমূলক দরখাস্ত, যার পেছনে কোনো যুক্তি, হেতু বা বিষয়বস্তু নেই, নিয়ে গেলে আপিল বিভাগ ক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পারেন। তাই তারা ধূম্রজাল সৃষ্টির জন্য পরে সংশ্লিষ্ট আদালতের ওপর অনাস্থার দাবি করেছে। আদালত এমন কোনো আদেশই দেয়নি যার জন্য অনাস্থা প্রকাশ করা যায়। একটি সম্পূর্ণ মেধাহীন দরখাস্ত নাকচ করে আদালত আইনের নির্দেশকেই মান্য করেছেন।

এই মাস্তানি কাণ্ডের সময় আদালত যে ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে, তা অভূতপূর্ব। ২০১১ সালে আমার বেঞ্চে মাস্তানি করার সময় আমি সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ ডেকে সব মাস্তানকে ধরিয়ে দিয়েছিলাম আদালতের মর্যাদা, স্বাধীনতা এবং নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব রক্ষার স্বার্থে। এ ধরনের মাস্তানিকে প্রশ্রয় দিলে শুধু বিচার বিভাগের স্বাধীনতাই নয়, ধূলিসাৎ হবে আইনের শাসন, সংবিধানের সার্বভৌমত্ব এবং গণতন্ত্র। তাই এসব মাস্তানের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।

তারা শুধু আদালত অবমাননাই করেনি, আরও কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে। তাদের ছেড়ে দেওয়ার অর্থ হবে বিচারহীনতাকে প্রশ্রয় দেয়া। বার কাউন্সিলকেও তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আদালতের মর্যাদা এবং কর্তৃত্ব নষ্ট হলে কিছুই বাকি থাকবে না, যেসব আইনজীবী মাস্তানি করছেন তাদেরও পথে বসতে হবে।

লেখক: আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি

আরও পড়ুন:
আদালত প্রাঙ্গণে মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধের আদেশ অনুসরণের নির্দেশ
বনানীতে শেরাটন হোটেল ভবন নির্মাণের চুক্তি চূড়ান্তের নির্দেশ
চেক ডিজঅনার মামলায় বাদীকে ৩০ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ স্থগিত

মন্তব্য

আরও পড়ুন

মতামত
The husband of the husband to kill a wife without getting dowry

যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীকে হত্যা, স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীকে হত্যা, স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

সুনামগঞ্জে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়ে়ছে। রোববার সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ এই রায় দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন- সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার পৈলনপুর গ্রামের বাসিন্দা শাহীন মিয়া (৪৮)। তিনি পলাতক আছেন।

রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মো. শামছুর রহমান।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ছাতক উপজেলার পৈলনপুর গ্রামের শাহীন মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল একই উপজেলার মৈশাপুর গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী ছবদর আলীর মেয়ে সুহেনা বেগমের। বিয়ের পর থেকেই শাহীন মিয়া ব্যবসার জন্য বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দিতে সুহেনা বেগম চাপ দিতে থাকেন। বিভিন্ন সময় এ জন্য তাকে শারীরিক নির্যাতন করতেন। শাহীন ও সুহেনার দুই সন্তান আছে। সুহেনার বাবা ছবদর আলী মেয়ের সংসার টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন সময় টাকাও দিয়েছেন। এক পর্যায়ে শাহীন পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। কিন্তু সুহেনা বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দিতে অস্বীকার করেন। ২০১২ সালে ২০ মার্চ সন্ধ্যায় সুহেনা বেগম তার মা হালিমা বেগমকে ফোন করে জানান যৌতুকের টাকার জন্য তার স্বামী তাকে মারধর করেছেন। এরপর রাত ২টার দিকে শাহীন মিয়া হালিমা বেগমেক ফোন করে বলেন, সুহেনাকে পাওয়া যাচ্ছে না। হালিমার স্বামী তখন প্রবাসে। পরদিন সকালে তিনি পৈলনপুর গ্রামে মেয়ের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাননি। তখন শাহীনও বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে তিনি থানায় একটি জিডি করেন। এর দুদিন পর গ্রামের পাশের সুরমা নদীতে সুহেনার লাশ পাওয়া যায়।

এ ঘটনায় সুহেনার মা হালিমা বেগম ছাতক থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় আটজন সাক্ষ্য দেন। মামলার দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে রোববার রায় ঘোষণা করেন আদালতের বিচারক।

মন্তব্য

মতামত
The tribunal took three charges against Inu

ইনুর বিরুদ্ধে ৮ অভিযোগ আমলে নিল ট্রাইব্যুনাল

মানবতাবিরোধী অপরাধ
ইনুর বিরুদ্ধে ৮ অভিযোগ আমলে নিল ট্রাইব্যুনাল

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মিত্র জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদের) সভাপতি হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে ‘আনুষ্ঠানিক অভিযোগ’ আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
তার বিরুদ্ধে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিভিন্ন পর্যায়ে উসকানি, ষড়যন্ত্র, হত্যা, আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র প্রয়োগ ও নিপীড়নমূলক কৌশলে সমর্থনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের আটটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২-এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউশন। শুনানির পর তা আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।
এই ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য হলেন বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার।
অভিযোগ আমলে নেওয়ার পর প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক অভিযোগটি ৩৯ পৃষ্ঠার। চারটি ভলিউমে এক হাজার ৬৭৯ পৃষ্ঠার ডকুমেন্টারি এভিডেন্স আমরা দাখিল করেছি। সঙ্গে তিনটি অডিও ও ছয়টি ভিডিও দাখিল করা হয়েছে। এই মামলায় ২০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। মামলার একমাত্র আসামি হাসানুল হক ইনু। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর এই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখাতে ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
প্রথম অভিযোগ (গণমাধ্যমে প্ররোচনা): জুলাই আন্দোলনকারীদের বিএনপি-জামায়াত, সন্ত্রাসী ট্যাগ দিয়ে আন্দোলন দমন এবং আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে আসামি হাসানুল হক ইনু জাসদের প্রধান হিসেবে গত বছর ১৮ জুলাই ‘মিরর নাও’ নামের একটি ভারতীয় গণমাধ্যমে উসকানি দিয়েছেন।
দ্বিতীয় অভিযোগ (দেখামাত্র গুলি) : গত বছর ১৯ জুলাই গণভবনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ১৪ দলীয় জোটের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ইনু উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে দেশব্যাপী সেনা মোতায়েন, কারফিউ জারি এবং আন্দোলনকারীদের ‘শুট অ্যাট সাইট’ অর্থাৎ দেখামাত্র গুলি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। হাসানুল হক ইনু ওই সিদ্ধান্ত গ্রহণ, বাস্তবায়নে প্ররোচনা ও উসকানি দেওয়ার পাশাপাশি তাতে সহায়তা করেছেন।

তৃতীয় অভিযোগ (কুষ্টিয়ায় দমন-পীড়ন): গত বছর ২০ জুলাই হাসানুল হক ইনু তার নিজ জেলা কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপারকে ফোন করে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছাত্র-জনতার ছবি দেখে তালিকা তৈরি এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশের ফলে কুষ্টিয়া পুলিশের একটি অংশ এবং ১৪ দলীয় জোটের সশস্ত্র ক্যাডাররা গত বছর ৫ আগস্ট পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালালে ছয়জন নিহত হন।
চতুর্থ অভিযোগ (লিথাল উয়েপন): সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে আন্দোলন দমনে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ ব্যবহার, ছত্রীসেনা নামিয়ে ও হেলিকপ্টার দিয়ে বোম্বিং করে আন্দোলনকারীদের হত্যা ও নির্যাতনের ষড়যন্ত্র করেন ইনু। গত বছর ২০ জুলাই তিনি এ নিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন।

পঞ্চম অভিযোগ (টিভি চ্যানেলে উসকানি): গত বছরের ২৭ জুলাই আসামি হাসানুল হক ইনু নিউজ টোয়েন্টিফোর চ্যানেলে আন্দোলনকারীদের বিএনপি, জামায়াত, সন্ত্রাসী ও জঙ্গি আখ্যা দিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। ওইসময় তিনি দেশে সরকারের কারফিউ জারি, আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার ও নির্যাতনের কৌশলকে সমর্থন করেন তিনি।

ষষ্ঠ অভিযোগ (জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব): গত বছর ২৯ জুলাই অনুষ্ঠিত ১৪ দলীয় জোটের সভায় হাসানুল হক ইনু আন্দোলনকারীদের বিএনপি, জামায়াত, সন্ত্রাসী ও সাম্প্রদায়িক বলে আখ্যা দেন। তিনি জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী জোটের ক্যাডারদের পরিচালিত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনকে বৈধতা দেন।

সপ্তম অভিযোগ (কারফিউ ও গুলিবর্ষণে সমর্থন): গত বছর ৪ আগস্ট বিকেলে শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে আন্দোলন দমনে কারফিউ জারি ও আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণের সিদ্ধান্ত সমর্থন ব্যক্ত করে তার দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন ইনু।

অষ্টম অভিযোগ (কুষ্টিয়ায় আন্দোলনে হত্যা): সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং হাসানুল হক ইনুর ষড়যন্ত্র ও নির্দেশে গত বছর ৫ আগস্ট কুষ্টিয়ায় ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা পুলিশের উপস্থিতিতে নিরীহ আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালায়। তাদের গুলিতে শ্রমিক আশরাফুল ইসলাম, সুরুজ আলী বাবু, শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মুস্তাকিন, মো. উসামা, ব্যবসায়ী বাবলু ফরাজী এবং চাকরিজীবী ইউসুফ শেখ শহীদ হন।

মন্তব্য

মতামত
Order issuing the Red Notice to Interpol against three persons including S Alam Group Chairman

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির আদেশ

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির আদেশ

ঢাকার একটি আদালত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ ও পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ হাসানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির আদেশ দিয়েছেন।

আজ দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ সাব্বির ফয়েজ এ আদেশ দেন। দুদকের জনসংযোগ বিভাগের উপ-পরিচালক আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।

আবেদনে বলা হয়, সাইফুল আলম, আব্দুস সামাদ ও আব্দুল্লাহ হাসান পরস্পরের যোগসাজশে অপরাধমূলক অসদাচরণ ও বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে ‘এএম ট্রেডিং’ নামে একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে জাল নথি তৈরি ও ব্যবহার করেছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঋণের নামে ১০৪ কোটি ২০ লাখ ৭৭ হাজার ৭০৮ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সাইফুল আলম দুর্নীতির মাধ্যমে এই অর্থ এস আলম সুপার ইডিবল ওয়েলের স্বার্থে স্থানান্তর বা পুনর্বিন্যাস বা রূপান্তর করেছেন, যার পরিমাণ ৩৪০ কোটি টাকা বলে অভিযোগে উল্লেখ আছে।

তদন্ত চলাকালে আসামিরা বিদেশে পলাতক থাকায় তাদের আটক করা যায়নি। তাই আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করে।

মন্তব্য

মতামত
Demanding the expulsion of lawyers in protest of media workers
আদালতে সাংবাদিককে মারধর

গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতিবাদ, আইনজীবীকে বহিষ্কারের দাবি

গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতিবাদ, আইনজীবীকে বহিষ্কারের দাবি

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এজলাসকক্ষে সময় টিভির প্রতিবেদক আসিফ হোসাইনকে মারধরের প্রতিবাদে গতকাল রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গণমাধ্যমকর্মীরা মানববন্ধন করেন।

মানববন্ধনে অভিযুক্ত আইনজীবীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ তাঁকে আদালত থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান গণমাধ্যমকর্মীরা।

গণমাধ্যমকর্মীরা বলেছেন, সাংবাদিকদের মারধর করা এখন প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। এজলাসের মতো জায়গায় বিচারকের সামনে সাংবাদিককে মারধর করা হলো, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

৪ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার সাংবাদিক মনজুরুল আলমের (পান্না) জামিন শুনানি চলাকালে মারধরের শিকার হন আসিফ হোসাইন। তিনি অভিযোগ করেন, আইনজীবী মহিউদ্দিন মাহি তাকে মারধর করেছেন। তবে আইনজীবী তা অস্বীকার করেছেন।

মানববন্ধনে অভিযুক্ত আইনজীবীর শাস্তি দাবি করে সময় টিভির সাংবাদিক ফারুক ভূঁইয়া বলেন, ‘আদালতের এজলাসে মব সৃষ্টি করে হামলা একটি নজিরবিহীন ঘটনা। এই ঘটনা দেখিয়ে দিল বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। এত বড় ঘটনা ঘটে গেল, কিন্তু কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা গেল না।’ এই ঘটনায় কোনো বিচার হবে কি না, সে ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।

সময় টিভির আরেক সাংবাদিক হারুনর রশীদ বলেন, অপরাধীকে আদালত থেকে বহিষ্কার করা হোক। সাংবাদিকদের সুরক্ষা দিতে হবে।

একাত্তর টিভির সাংবাদিক শাহনাজ শারমিন বলেন, সাংবাদিকেরা নির্যাতিত হলে কেউ প্রতিবাদ করে না। সবার কাছেই সাংবাদিকেরা মার খায়। সাংবাদিক মারা এখন প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। একসময় সাংবাদিকেরা মার খেলে সরকারের উচ্চপর্যায় পর্যন্ত এসে সুরাহা করত। কিন্তু এখন প্রতিবাদটুকুও হয় না। কারণ, সাংবাদিকদের মধ্যে সেই ঐক্য নেই। সাংবাদিকদের এক হতে হবে।

মানববন্ধনে গণমাধ্যমকর্মীরা বলেন, সাংবাদিকেরা এখন আদালতেও মার খাচ্ছেন। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দিতে হবে, স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। এজলাসে হামলার মতো ঘটনা লজ্জার।

মানববন্ধনে বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য

মতামত
Jatiya Party Chairman GM Quader with his wife

স্ত্রীসহ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

স্ত্রীসহ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

‎‎‎জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও রংপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) ও তার স্ত্রী শেরীফা কাদেরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ইব্রাহিম মিয়া এ আদেশ দেন।

আজ দুদক-এর জনসংযোগ বিভাগের উপ-পরিচালক আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।

আবেদনে বলা হয়েছে, গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও অন্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধানটি চলমান রয়েছে।

অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে এবং দেশের বাইরে দুর্নীতি ও অবৈধভাবে অর্জিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। গোপন ও বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় যে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও তার স্ত্রী দেশ ছেড়ে বিদেশে পালানোর জন্য তাদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন।

তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধানকার্য ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বিধায়, অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন।

মন্তব্য

মতামত
Former IGP Mamuns statement of Hasinas misery Chief Prosecutor

সাবেক আইজিপি মামুনের জবানবন্দি হাসিনার দুঃশাসনের অকাট্য দলিল: চিফ প্রসিকিউটর

সাবেক আইজিপি মামুনের জবানবন্দি হাসিনার দুঃশাসনের অকাট্য দলিল: চিফ প্রসিকিউটর

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাজসাক্ষী হয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের জবানবন্দি শেখ হাসিনার দুঃশাসনের এক অকাট্য দলিল।

চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বুধাবার বাসস’কে বলেন, ‘চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন যে জবানবন্দি দিয়েছেন, তা অবশ্যই শেখ হাসিনার দুঃশাসনের অকাট্য দলিল।’

জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ মঙ্গলবার জবানবন্দি দেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

সেসময় তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল তাকে ফোন করে জানান যে আন্দোলন দমনে সরাসরি প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তখন তিনি পুলিশ সদর দপ্তরে ছিলেন এবং তার সামনে ছিলেন তৎকালীন অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ারদার। পরে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের এই নির্দেশনা তৎকালীন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ সারাদেশে পৌঁছে দেন প্রলয় কুমার। সেদিন থেকেই মারণাস্ত্র ব্যবহার শুরু হয়।

চৌধুরী মামুন আরও জানান, এই মারণাস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে অতি উৎসাহী ছিলেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর ও ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। এ ক্ষেত্রে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নির্দেশ ছিল, যেকোনো মূল্যে আন্দোলন দমন করতে হবে।

সাবেক আইজিপি তার জবানবন্দিতে বলেন, শেখ হাসিনাকে মারণাস্ত্র ব্যবহারে প্ররোচিত করতেন ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান, আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম, ফজলে নূর তাপস ও মোহাম্মদ আলী আরাফাত।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দমাতে হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহার বিষয়ে জবানবন্দিতে তিনি বলেন, হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে। যার পরামর্শ দিয়েছিলেন র‌্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক হারুন অর রশীদ। আন্দোলনপ্রবণ এলাকাগুলো ভাগ করে ব্লক রেইড দিয়ে হেলিকপ্টার, ড্রোন ও মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত অসংখ্য ছাত্র-জনতাকে হত্যা ও আহত করা হয়। আন্দোলন দমনে সরকারকে উৎসাহিত করেন আওয়ামীপন্থী বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী ও ব্যবসায়ীরা।

জবানবন্দিতে ‘কোর কমিটি’র মিটিং বিষয়ে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই থেকে প্রায় প্রতি রাতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ধানমন্ডির বাসায় ‘কোর কমিটি’র বৈঠক হত। সব বৈঠকেই আন্দোলন দমনসহ সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হত। একটি বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের আটক করার সিদ্ধান্ত হয়।

ডিজিএফআই এই প্রস্তাব দেয় উল্লেখ করে মামুন বলেন, তিনি এর বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে পরে রাজি হন। আর সমন্বয়কদের আটকের দায়িত্ব তৎকালীন ডিবি প্রধান হারুনকে দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত মোতাবেক ডিজিএফআই ও ডিবি তাদের আটক করে ডিবি হেফাজতে নিয়ে আসে। সমন্বয়কদের ডিবি হেফাজতে এনে আন্দোলনের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আপস করার জন্য চাপ দেওয়া হয় এবং তাদের আত্মীয়স্বজনদের ডিবিতে এনে চাপ দেওয়া হয়। একপর্যায়ে সমন্বয়কদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে টেলিভিশনে বিবৃতি দিতে বাধ্য করা হয়। এ ব্যাপারে তৎকালীন ডিবি প্রধান হারুন অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন সাবেক এই আইজিপি। তিনি জানান, ডিবির তৎকালীন প্রধান হারুনকে ‘জিন’ বলে ডাকতেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

২০২৪ সালের ৪ আগস্ট বেলা ১১টায় গণভবনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নিরাপত্তা সমন্বয় কমিটির বৈঠক সম্পর্কেও তথ্য দিয়েছেন আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি জানান, ওই বৈঠকে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধান, এসবির প্রধান, ডিজিএফআইয়ের প্রধান, এনএসআইয়ের প্রধানের সঙ্গে তিনিসহ মোট ২৭ জন উপস্থিত ছিলেন। জুলাই আন্দোলন দমন এবং নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। সেখানে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন তুলে ধরছিল। কিন্তু চারদিকে পরিবেশ-পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হওয়ায় বৈঠকটি মুলতবি করা হয়।

তবে ওইদিন রাতে গণভবনে আবারও বৈঠক ডাকা হয় বলেও জবানবন্দিতে জানান সাবেক আইজিপি মামুন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে শেখ রেহানা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধান, র‌্যাবের মহাপরিচালক ও সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মজিবুর রহমানসহ তিনিও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তবে তৎকালীন ডিজিএফআই প্রধান ও এসবির প্রধান বাইরে অপেক্ষমাণ ছিলেন।

ওই বৈঠকে ৫ আগস্ট আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঠেকানোর পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়, পুলিশ ও সেনাবাহিনী সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করবে। ওই বৈঠক থেকে সেনাবাহিনীর অপারেশন কন্ট্রোল রুমে যান বলে জবানবন্দিতে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, সেখানে (কন্ট্রোল রুম) তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধান, র‌্যাবের মহাপরিচালক, ডিজিএফআইয়ের প্রধান, এসবির প্রধান ও মজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ঢাকা শহরের প্রবেশমুখে কঠোর অবস্থান নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় এবং ৪ আগস্ট রাত সাড়ে ১২টায় সেনাবাহিনীর অপারেশন কন্ট্রোল রুম থেকে তারা সবাই চলে যান।

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের বিষয়ে জবানবন্দিতে তিনি জানান, সেদিন সকালে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে আমার দপ্তরে যাই। এর মধ্যে উত্তরা-যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন পথ দিয়ে ছাত্র-জনতা স্রোতের মত প্রবেশ করতে থাকে। দুপুর ১২টা থেকে ১টার মধ্যে জানতে পারি ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন প্রধানমন্ত্রী। ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে তিনি কোথায় যাবেন তা জানতাম না। এরপর বিকেলে আর্মির হেলিকপ্টার এসে পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে আমাকে প্রথমে তেজগাঁও বিমানবন্দরের হেলিপ্যাডে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ক্যান্টনমেন্টের অফিসার্স মেসে নিয়ে যাওয়া হয়। হেলিকপ্টারে আমার সঙ্গে এসবি প্রধান মনিরুল, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিব ও ডিআইজি আমেনা ছিলেন।

পরে হেলিকপ্টারে এডিশনাল ডিআইজি প্রলয়, এডিশনাল আইজি লুৎফুল কবিরসহ অন্যদেরও সেখানে নেওয়া হয়। পরদিন ৬ অগাস্ট আইজিপি হিসেবে তার নিয়োগ চুক্তি বাতিল করা হয় এবং ক্যান্টনমেন্টে থাকাকালে ৩ সেপ্টেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলেও জানান মামুন।

আন্দোলনের দিনগুলোর বর্ণনা দিতে গিয়ে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ২৭ জুলাই আন্দোলন চলাকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আমরা নারায়ণগঞ্জে আন্দোলনের পরিস্থিতি দেখতে যাই। পথে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে আমরা কিছুক্ষণ অবস্থান করি।

ওই সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মোবাইলে একটি ভিডিও দেখান ওয়ারি জোনের ডিসি ইকবাল। ভিডিও দেখিয়ে ইকবাল বলেন যে, ‘গুলি করি, একজন মরে। সেই যায়। বাকিরা যায় না।’ পরবর্তীতে এই ভিডিও সারাদেশে ভাইরাল হয়।

২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজির দায়িত্বে ছিলেন উল্লেখ করে জবানবন্দিতে আল-মামুন বলেন, তখন পুলিশের আইজিপি ছিলেন জাবেদ পাটোয়ারী। নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্সে ৫০ শতাংশ ব্যালট ভর্তি করে রাখার পরামশর্ও শেখ হাসিনাকে এই জাবেদ পাটোয়ারী দিয়েছিলেন বলেও দাবী করেন।

পরবর্তীতে সরকারের পক্ষ থেকে ডিসি, এসপি, ইউএনও, এসি ল্যান্ড, ওসি ও দলীয় নেতা-কর্মীদের সেই নির্দেশনা দেওয়া হয় এবং তারা সেটা বাস্তবায়ন করেন। যেসব পুলিশ কর্মকর্তা এই নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করেছেন, তাদের পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কৃত করা হয়।

২০২০ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত র‌্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, র‌্যাব সদর দপ্তর পরিচালিত উত্তরাসহ র‌্যাব-১ এর কার্যালয়ের ভেতরে টিএফআই সেল (টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন সেল) নামে একটি বন্দিশালা ছিল। র‌্যাবের অন্যান্য ইউনিটের অধীনেও অনেক বন্দিশালা ছিল। এসব বন্দিশালায় রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী এবং সরকারের জন্য হুমকি হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের আটকে রাখা হত, যা একটা কালচারে (সংস্কৃতি) পরিণত হয়েছিল।

তার ভাষ্যমতে, অপহরণ, গোপন বন্দিশালায় আটক, নির্যাতন এবং ক্রসফায়ারের মাধ্যমে হত্যার মত কাজগুলো র‌্যাবের এডিজি (অপারেশন) এবং র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালকেরা সমন্বয় করতেন। আর র‌্যাবের মাধ্যমে কোন ব্যক্তিকে উঠিয়ে আনা, আটক রাখা কিংবা হত্যা করার নির্দেশনাগুলো সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আসত এবং এই নির্দেশনাগুলো সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকের মাধ্যমে আসত বলে জানতে পারেন বলেও জবানবন্দি দেন সাবেক আইজিপি।

সেসব নির্দেশনা চেইন অব কমান্ড ভঙ্গ করে সরাসরি এডিজি (অপারেশন) ও র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালকদের কাছে পাঠানো হতো বলে উল্লেখ করেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

ব্যারিস্টার আরমান আটক থাকার বিষয়টি তিনি আইজিপি’র দায়িত্ব গ্রহণের সময় জানানো হয় বলেও উল্লেখ করেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বলেন, র‌্যাবের সাবেক ডিজি বেনজীর আহমেদ বিষয়টি আমাকে অবহিত করেন। তাকে তুলে আনা এবং গোপনে আটক রাখার সিদ্ধান্ত সরকারের ছিল।

বিষয়টি জানার পর আমি প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকের সঙ্গে কথা বলি। তিনি আমাকে বলেন, ‘ঠিক আছে, রাখেন। পরে বলব।’ কিন্তু পরে আর কিছু তিনি জানাননি। এরপর আমি কয়েকবার বিষয়টি তুলেছিলাম, কিন্তু কোন প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমন করতে গিয়ে সরকারের আদেশে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে নৃশংস হত্যাকাণ্ড হয়েছে উল্লেখ করে জবানবন্দিতে সাবেক আইজিপি বলেন, আমি পুলিশ প্রধান হিসেবে লজ্জিত, অনুতপ্ত ও ক্ষমাপ্রার্থী। জুলাই আন্দোলনে যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তার জন্য আমি অপরাধবোধ ও বিবেকের তাড়নায় রাজসাক্ষী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরবর্তী সময়ে আমি ট্রাইব্যুনালে স্বজন হারানোদের কান্না, আকুতি ও আহাজারি দেখেছি। ভিডিওতে নৃশংসতা দেখে অ্যাপ্রুভার হওয়ার সিদ্ধান্ত আমি যৌক্তিক মনে করছি।

তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে হত্যাকাণ্ডের পর আগুন দিয়ে লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার মত বিভৎসতা আমাকে ভীষণভাবে মর্মাহত করেছে। আমি সাড়ে ৩৬ বছর পুলিশে চাকরি করেছি। পুলিশের চাকরি খুবই ট্রিকি। সব সময় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে। চাকরি জীবনের শেষ পর্যায়ে আমার দায়িত্বশীল সময়ে এসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এর দায় আমি স্বীকার করছি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে এই গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। আমি প্রত্যেক নিহতদের পরিবার, আহত ব্যক্তি, দেশবাসী ও ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমা চাইছি। আমাকে দয়া করে ক্ষমা করে দিবেন। আমার এই সত্য ও পূর্ণ বর্ণনার মাধ্যমে সত্য উদঘাটন হলে আল্লাহ যদি আমাকে আরও হায়াত (বাঁচিয়ে রাখেন) দান করেন, বাকি জীবনে কিছুটা হলেও অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পাব।

এদিকে, সাবেক আইজিপি’র জবানবন্দি দেওয়ার পর চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, রাজসাক্ষী হওয়া চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ক্ষমা পাবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত ট্রাইব্যুনাল নেবেন। তিনি নিজের বিবেকের তাড়নায় অপরাধ স্বীকার করেছেন। নিজের পক্ষ থেকে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেছিলেন।

তাজুল ইসলাম আরও বলেন, সাবেক আইজিপি ট্রাইব্যুনালে যে সাক্ষ্য দিয়েছেন, বিশ্বের কোন আদালতেই এ সাক্ষ্যকে দুর্বল প্রমাণ করার সুযোগ নেই। এটি একটি অকাট্য অপ্রতিরোধ্য সাক্ষ্য। এটি শুধু জুলাই-আগস্টের ঘটনা নয়, বাংলাদেশে গত ১৫ বছরে যত গুম-খুন হয়েছে তার বিরুদ্ধে অকাট্য দলিল হিসেবেও কাজ করবে।

ট্রাইব্যুনালে এই মামলায় প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। সঙ্গে ছিলেন বিএম সুলতান মাহমুদ, প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, মঈনুল করিম, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্য প্রসিকিউটররা।

এই মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। আর সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মন্তব্য

মতামত
In the hands of the subordinate court in the hands of the Supreme Court High Court judgment

অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিম কোর্টের হাতে: হাইকোর্টের রায়

অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিম কোর্টের হাতে: হাইকোর্টের রায়

অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিধানের ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এ ছাড়াও রায়ে আগামী তিন মাসের মধ্যে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন বাতিল করে পূর্বের (১৯৭২ সালের) অবস্থায় ফিরিয়ে দিয়ে এ সংক্রান্ত রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি আহমেদ সোহেল ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ আজ এই রায় দেন।

আদালতে এ সংক্রান্ত রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। অ্যামিকাস কিউরি (আদালত বন্ধু) হিসেবে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া। আর ইন্টারভেনর হিসেবে শুনানি করেন আইনজীবী আহসানুল করিম।

সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ, ২০১৭ সালের জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং বিচার বিভাগীয় পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার নির্দেশনা চেয়ে গত বছরের ২৫ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের সাত আইনজীবী রিটটি করেন। তারা হলেন মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন, মো. জহিরুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, আবদুল্লাহ সাদিক, মো. মিজানুল হক, আমিনুল ইসলাম শাকিল ও যায়েদ বিন আমজাদ।

এই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছর ২৭ অক্টোবর বিচারপতি ফারাহ মাহবুব (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন। রুলে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ এবং এ সংক্রান্ত ২০১৭ সালের জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালা কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বিচার বিভাগীয় পৃথক সচিবালয় কেন প্রতিষ্ঠা করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়।

আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। একই সঙ্গে বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অগ্রগতি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে ৬০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

গত ২৫ মার্চ বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। পরে প্রধান বিচারপতি বিষয়টি শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি আহমেদ সোহেল ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান। সে অনুযায়ী এই বেঞ্চে উভয় পক্ষে কয়েকদিন রুল শুনানির পর ২ সেপ্টেম্বর (আজ) রায়ের দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট।

মন্তব্য

p
উপরে