২৮ আগস্ট দেশের দৈনিক সংবাদপত্র এবং বৈদ্যুতিক প্রচারমাধ্যম থেকে জানতে পারলাম, সেদিন মহামান্য হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ পলাতক তারেক জিয়ার বক্তব্য-ভাষণ প্রচার বন্ধ করা এবং সরিয়ে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষকে (বিটিআরসি) নির্দেশনা দেয়ার পর বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা উক্ত বেঞ্চে ঘৃণ্য ধরনের হট্টগোল শুরু করে, মাননীয় বিচারপতিদ্বয়ের প্রতি ফাইল এবং কাগজের ঢিল নিক্ষেপ করে, যে অবস্থায় বিচারপতিদ্বয় আদালত ছেড়ে খাস কামরায় যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।
আদালতে বিএনপি-জামায়াতিদের এ ধরনের গুণ্ডামি এটিই প্রথম নয়। ২৮ আগস্টের ঘটনা আমাকে স্মরণ করিয়ে দিল ২০১১ সালের একই ধরনের মাস্তানির কথা। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া আমাদের পবিত্র সংবিধান সম্পর্কে আপত্তিকর কথা বলার অভিযোগে আমার নেতৃত্বে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চে শুনানি চলাকালে বেশ কিছু বিএনপি সদস্য আইনজীবী আমাদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছিল। ঢিল, বোতল, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছিল। আমি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দিলে, তিনি চিহ্নিত কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করলে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
২০১১-এর ঘটনা ছাড়াও বিএনপি-জামায়াত সদস্য আইনজীবীরা প্রতিনিয়ত এ ধরনের মাস্তানি করে যাচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে এবং এমনকি আদালতের ভেতরেও। সর্বশেষ খবরে প্রকাশ, বিএনপি-জামায়াতের আইনজীবীরা সারা দিন আদালত কক্ষ দখলে রেখেছিলেন যে কারণে, সেই আদালতে বাকি দিন কোনো কাজ হতে পারেনি। ফলে বহু বিচার প্রার্থীকে বিচারবঞ্চিত হতে হয়েছে।
অথচ এই বিএনপি-জামায়াতি আইনজীবীরাই সর্বদা গলা উঁচু করে গণতন্ত্র, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আর আইনের শাসনের কথা বলে শান্ত সমুদ্রে ঝড় তুলতে ভুল করেন না, ভোলেন না তাদের বিদেশি প্রভুদের কাছে নালিশ করতে।
মামলাটি করা হয়েছে খুনের অপরাধে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি তারেক জিয়ার বক্তব্য গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচার বন্ধের আদেশ প্রার্থনা করে। গত কয়েক বছর ধরে এই পলাতক আসামির বক্তব্য বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে বলে এই মামলার প্রয়োজন হয়েছে কেন না পলাতক আসামির বক্তব্য প্রচার করা শুধু বেআইনিই নয়, দণ্ডনীয় অপরাধও বটে।
আইনের ভাষায় একজন পলাতক আসামিকে বলা হয় ‘আউট ল’। জগৎশ্রেষ্ঠ ব্ল্যাক ল ডিকশনারিতে দেয়া সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, আউট ল ‘সেই ব্যক্তি যে আইনে প্রদত্ত সুবিধা এবং সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত, সে ব্যক্তি একজন অভ্যাসগত অপরাধী, বিশেষ করে একজন পলাতক আসামি (fugitive)। ’ ব্ল্যাক ল ডিকশনারির সংজ্ঞা থেকে এটি পরিষ্কার যে, ফেরারি আসামি আইনের সুরক্ষা বা সুবিধা কোনোটিই পেতে পারে না।
এ বিধান পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই প্রচলিত, যার কারণে পলাতক থাকাকালে তার পক্ষে প্রতিনিধি বা আইনজীবী কোনো আদালতে বা কর্তৃপক্ষের কাছে হাজির হতে পারে না। সোজা কথায় সে আইনের দৃষ্টিতে একজন অদৃশ্য ব্যক্তি। অদৃশ্য ব্যক্তি বিধায় তার ভাষণ প্রচার হতে পারে না।
এ মামলায় তারেক জিয়া এবং কয়েকজন রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা ছাড়া কেউ পক্ষভুক্ত নয়। তারেক জিয়া পলাতক বিধায় তার পক্ষে আদালতে কেউ হাজির হতে পারে না। তা সত্ত্বেও বিএনপির কিছু আইনজীবী তারেক জিয়ার পক্ষে কথা বলতে আদালতে অন্যায় এবং বেআইনিভাবে হাজির হয়েছেন শুধু আদালতের কার্যক্রম ব্যাহত করতে। তারা সংশ্লিষ্ট মামলায় কোনো পক্ষের আইনজীবী নয় বিধায়, আদালত তাদের কথা বলার সুযোগ দিতে পারে না।
কেউ কেউ বলছেন, তারেক জিয়ার ভাষণ প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া নাকি তার মানবাধিকার লঙ্ঘন। আইনে ন্যূনতম জ্ঞান থাকলে এটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, পলাতক থাকা অবস্থায় কোনো আসামি কোনো ধরনের অধিকারই ভোগ করতে পারে না, যে কথা ব্ল্যাক ল ডিকশনারিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। তদুপরি আমাদের সংবিধানের ৩৯ক অনুচ্ছেদে মত প্রকাশের যে অধিকার প্রদান করা হয়েছে, সেটি নিশ্চিতভাবে এমন মানুষের জন্য যে একজন প্রকাশ্য, দৃশ্যমান ব্যক্তি, কোনো পলাতক বা অদৃশ্য ব্যক্তিকে এই স্বাধীনতা দেয়া হয়নি।
একজন ফেরারিকে এই স্বাধীনতা দেয়ার অর্থ তাকে ফেরারি আসামি হিসেবে বিরাজ করতে সহায়তা করা। ৩৯ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত অধিকার অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা বা আদালত অবমাননার জন্য ভোগ করা যায় না। একজন পলাতক আসামির ক্ষেত্রে দুটি নিষেধাজ্ঞাই বিরাজমান, কেন না, তার ভাষণ প্রচার করার অধিকার মানে পলাতক থাকার এবং আদালত অবমাননার অপরাধ চালিয়ে যাওয়া। তার ওপর আদালতের নির্দেশ রয়েছে আত্মসমর্পণ করার।
তা ছাড়াও ৩৯ অনুচ্ছেদের দেয়া অধিকার কেবল বাংলাদেশের নাগরিকরাই ভোগ করতে পারেন। উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ অনেক আগেই জানিয়েছে যে, বিদেশে পালিয়ে থাকা সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক জিয়া অনেক আগেই বাংলাদেশের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
আমাদের দণ্ডবিধির ৫২ক ধারায় কোনো পলাতক আসামিকে সহায়তা করা মারাত্মক অপরাধ। তারেক জিয়াকে পালিয়ে থাকতে সহায়তা করার অপরাধে সহায়তাকারীরও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। দন্ডণ্ডধির সংশ্লিষ্ট ধারায় বলা হয়েছে, ‘আশ্রয় দেওয়া মনে পলাতকের জন্য আবাসের ব্যবস্থা করা, খাবার, পানীয়, অর্থ প্রদান, পরিধেয় বস্ত্র প্রদান, অস্ত্র প্রদান, চলাচলের ব্যবস্থা করা, অথবা এই ধারায় নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নাই এমন অন্য যে কোনো উপায়ে সহায়তা প্রদান করা।’
সুতরাং আশ্রয় শব্দটির ব্যাখ্যা অনেক ব্যাপক, অর্থাৎ এমন কাজও ‘আশ্রয় প্রদানের’ ব্যাখ্যার অন্তর্ভুক্ত, যার কথা উক্ত ধারায় বিশেষ করে উল্লেখিত নয়। সেই অর্থে তারেক জিয়ার ভাষণ প্রচারকারীরাও দন্ডবিধির ৫২ক ধারার দায়ে অপরাধী। জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য তারা সাংবাদিকদের বলেছে যে, তারা মাননীয় প্রধান বিচারপতির কাছে এই মর্মে দরখাস্ত করেছে যে, এই বেঞ্চের ওপর তাদের আস্থা নেই। এ কথা এতই হাস্যকর যে, কোনো আইনজীবীর মুখে এ ধরনের অবান্তর কথা শোভা পায় না।
মাননীয় প্রধান বিচারপতির কাছে এ ধরনের দরখাস্ত সে ব্যক্তিই করতে পারেন, যে সংশ্লিষ্ট মামলায় একজন পক্ষ। কোনো আগন্তুক এ ধরনের দরখাস্ত করতে পারেন না। জানা গেছে, একজন আইনজীবী তার এক অনির্দিষ্ট মক্কেলকে পক্ষভুক্ত করার জন্য দরখাস্ত করেছিলেন, যেই আবেদন সংশ্লিষ্ট আদালত অত্যন্ত যৌক্তিক এবং আইনসংগত কারণেই নাকচ করে দিয়েছেন।
এ মামলার বিষয়বস্তু এমন কিছু নয়, যাকে পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন বলা যায়। এখানে বিষয় একটিই, তা হলো তারেক জিয়া পলাতক আসামি বিধায় তার ভাষণ প্রচার করা যায় কি না। সুতরাং এ বিষয়ে অন্য ব্যক্তির কোনো স্বার্থ, যাকে আইনের ভাষায়, লোকাস স্টেন্ডাই, বলে, থাকতে পারে না। এ ধরনের দরখাস্ত করার মানে হচ্ছে আদালতের সময় ইচ্ছাকৃতভাবে নষ্ট করা, যার জন্য এসব আইনজীবীর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
তা ছাড়াও মাননীয় প্রধান বিচারপতির কাছে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দরখাস্ত করতে হয়। পক্ষভুক্তির দরখাস্ত নাকচ হওয়ার পর তারা আপিল বিভাগে দরখাস্ত করতে পারত, কিন্তু সেটি তারা করে নাই, সম্ভবত এই জেনে যে, এ ধরনের অমূলক দরখাস্ত, যার পেছনে কোনো যুক্তি, হেতু বা বিষয়বস্তু নেই, নিয়ে গেলে আপিল বিভাগ ক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পারেন। তাই তারা ধূম্রজাল সৃষ্টির জন্য পরে সংশ্লিষ্ট আদালতের ওপর অনাস্থার দাবি করেছে। আদালত এমন কোনো আদেশই দেয়নি যার জন্য অনাস্থা প্রকাশ করা যায়। একটি সম্পূর্ণ মেধাহীন দরখাস্ত নাকচ করে আদালত আইনের নির্দেশকেই মান্য করেছেন।
এই মাস্তানি কাণ্ডের সময় আদালত যে ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে, তা অভূতপূর্ব। ২০১১ সালে আমার বেঞ্চে মাস্তানি করার সময় আমি সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ ডেকে সব মাস্তানকে ধরিয়ে দিয়েছিলাম আদালতের মর্যাদা, স্বাধীনতা এবং নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব রক্ষার স্বার্থে। এ ধরনের মাস্তানিকে প্রশ্রয় দিলে শুধু বিচার বিভাগের স্বাধীনতাই নয়, ধূলিসাৎ হবে আইনের শাসন, সংবিধানের সার্বভৌমত্ব এবং গণতন্ত্র। তাই এসব মাস্তানের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।
তারা শুধু আদালত অবমাননাই করেনি, আরও কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে। তাদের ছেড়ে দেওয়ার অর্থ হবে বিচারহীনতাকে প্রশ্রয় দেয়া। বার কাউন্সিলকেও তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আদালতের মর্যাদা এবং কর্তৃত্ব নষ্ট হলে কিছুই বাকি থাকবে না, যেসব আইনজীবী মাস্তানি করছেন তাদেরও পথে বসতে হবে।
লেখক: আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি
আরও পড়ুন:প্রচ্ছায়া লিমিটেডের আট পরিচালকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
দেশ ত্যাগে যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে তারা হচ্ছেন: প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বুশরা সিদ্দিক, শেহতাজ মুন্নাসী খান, শহিদ উদ্দিন খান, শাহিন সিদ্দিক, শফিক আহমেদ শফিক, পারিজা পাইনাজ খান, নওরিন তাসমিয়া সিদ্দিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা আনজুম।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ও তাঁর ছোট বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
প্রচ্ছায়া লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডারগণ যাতে সপরিবারে গোপনে দেশ ত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি দেশত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধানকাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। এজন্য অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রা রোধে আদালতের আদেশ দেয়া একান্ত প্রয়োজন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়, খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন, তার ভাই শেখ সোহেল ও শেখ জালাল উদ্দিন রুবেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিন দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এই ব্যক্তিরা তাদের নামে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
শুনানি শেষে আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নামে রাজধানীর উত্তরায় থাকা একটি ফ্ল্যাট ও মোট ১৮ কাঠার তিনটি প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদন সূত্রে জানা যায়, হারুনের নামে থাকা পৃথক তিনটি প্লট রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত। এছাড়াও জব্দের আদেশ দেয়া ১৫৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটিও উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত।
এদিন হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
আবেদনে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
অনুসন্ধান চলাকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তিনি এসব সম্পদ বিক্রয় বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। এজন্য সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়া প্রয়োজন।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হারুন অর রশিদের ১০০ বিঘা জমি, পাঁচটি ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাবে থাকা ১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়।
পাশাপাশি এদিনই তার ভাই এবিএম শাহরিয়ারের ৩০ বিঘা জমি জব্দ, ১১টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন ঢাকার আদালত।
রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার তাদের গাইবান্ধা ও চট্টগ্রাম থেকে পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ।
এর মধ্যে এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মো. মেহেরাজ ইসলামকে (২০) গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৩ এবং ৩ নম্বর আসামি মাহাথির হাসানকে (২০) চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানা পুলিশ।
বিকেলে র্যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সারওয়ার মাহাথির হাসানের গ্রেপ্তারের বিষয়িটি দৈনিক বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব-১৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) বিপ্লব কুমার গোস্বামী জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে জনা যায়, পাভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মেহেরাজ ইসলাম গাইবান্ধায় অবস্থান করছে। পরে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গাইবান্ধা সদরের ভবানীপুর গ্রামে অভিযান চলানো হয়। অভিযানে এরশাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সারওয়ার দৈনিক বাংলাকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে পারভেজ হত্যা মামলার ৩ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি মাহাথির হাসানের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে গতকাল সকালে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানায় আনা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার রাতে পারভেজ হত্যা মামলায় তিন আসামিকে রাজধানীর মহাখালী ও আশপাশের এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন- আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) এবং আল আমিন সানি (১৯)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া গত সোমবার রাতে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রাম থেকে হৃদয় মিয়াজি (২৩) নামে মামলার এজহারনামীয় আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ১ ও র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের যৌথ দল। পরে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাকে বনানী থানায় হস্তান্তর করা হয়। সব মিলিয়ে পারভেজ হত্যা মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি দোকানে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। একই সময় পারভেজ তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় হাসছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রীর অভিযোগ পারভেজ তাদের দেখে হাসছিলেন। তাদের মধ্যে একজন প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পিয়াসের বান্ধবী। পরে বান্ধবীরা মুঠোফোনে খবর দিলে পিয়াস ও তার দুই বন্ধু মেহরাজ ও মাহথির এসে পারভেজের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়ান। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
একপর্যায়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি মীমাংসার করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পর পারভেজকে একদল যুবক ছুরিকাঘাত করে। তার বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরদিন রোববার তার ভাই হুমায়ুন কবির প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয় ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেন।
রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৬১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ৯০৬ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৭০৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এসব অভিযানে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ১টি দেশীয় পাইপগান, ১টি একনালা বন্দুক, ১ রাউন্ড কার্তুজের খোসা ও ২ রাউন্ড অকেজো কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত সোমবার ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১ হাজার ৬৩১ জনকে। তার মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ১ হাজার ১৩ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৬১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার আগে গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় বিশেষ অভিযানে ১ হাজার ৫৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি আগামীকাল।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায় মামলাটি বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে বিষয়টি আগামীকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মূলতবি/নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে প্রধান বিচারপতি আলোচিত এই মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য এই হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় করা মামলার বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
বিচারিক আদালতের রায়ের পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, দণ্ডিত আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পড়ে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে, সঠিক নয়।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগে নতুন উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথিপত্র ডিবি হেফাজতে পুড়ে যাবার তথ্যটি সঠিক নয়।’
‘সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সময় আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে কেউ কেউ ডিবির নথি পুড়ে যাওয়ার নিউজ করছেন, যা সঠিক না,’ যোগ করেন তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আদালতে আগুনে এসব নথি পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। এডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ রউফ বলেছেন, ডিবির অধিকাংশ অফিসার বদলি হওয়ায় পুরনো নথি খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ।’
‘এ জন্য রাষ্ট্রপক্ষ নয় মাস সময় চাইলে বাদীপক্ষ তিন মাস সময়ের কথা বলেন। পরবর্তীতে আদালত ছয়মাস সময় দেন,’ যোগ করেন তিনি।
এরআগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পুড়ে গেছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আরসাদুর রউফ বলেন, ‘আমি এমন কোনো কথা কখনোই বলিনি। সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি পোড়েনি। আমি বলেছি, এটা পুরনো মামলা।’
মন্তব্য