মঞ্চজুড়ে হালকা আলো; সাদামাটা কক্ষে পায়চারি করছেন শেখ মুজিব। দীপ্তিময় প্রক্ষেপণ তার অবয়ব ছাড়িয়েছে। তাতে অনাড়ম্বর পাঞ্জাবির গোটানো হাতা সবিশেষ সাদাসিধে; পায়ের চটি জোড়া স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল।
মুজিব হাঁটছেন মেঝের এ প্রান্ত হতে সে প্রান্তে। অতপর দাঁড়ালেন মাঝ বরাবর। চুরুটের ধোঁয়ায় হালকা আচ্ছন্ন। সব নৈর্বক্তিকতা ছাপিয়ে হাজারো দর্শকের জোড়াচোখ আরেকবার দেখলো এ দেশের মানচিত্র কিংবা তার বিশাল বুক। আকস্মাৎ ঘরে ঢুকলেন তাজউদ্দিন।
মুজিব আড়মোড় ভেঙে বলে উঠলেন- ‘তাজউদ্দিন, এ্যাতো ফরমালিটি করো ক্যান? তুমি হলে গিয়ে বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী। আমার ঘরে যহন কেউ থাকবে না, হানিপকে জিজ্ঞাসা করবা- ভিতোরে ঢুকে পড়বা। আর এটা তো গণভবন না, এটা তো বত্রিশ নম্বর বাড়ি, নাকি!’
-আপনি এখন দেশের প্রেসিডেন্ট। আমি অর্ডিনারি সিটিজেন। পার্থক্যটুকু আমাদের থাকতেই হবে।
-তাজউদ্দিন, আমি তোমার কাছে মুজিব ভাই হয়েই থাকতে চাই।
স্পষ্ট উচ্চারণে বললেন শেখ মুজিব। দরাজ কণ্ঠের অনুরণন ছড়িয়ে পড়লো অডিটরিয়ামের দেয়ালে দেয়ালে।
ততোক্ষণে অজস্র করতালি। জয় বাংলা ধ্বনিতে আরেকবার কম্পিত হলো লন্ডনের লোগান হল। অতপর দু ঘন্টা ধরে চলা নাটকের বাঁকে বাঁকে তৈরি হলো ক্লাইমেক্স। অন্তঃচাপের নিস্তবন্ধতা ভেঙে বাঙালি আবারও জেগে উঠল। কেউ কেউ বললেন, জয় বঙ্গবন্ধু।
বলছিলাম ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ নাটকের প্রথম মঞ্চায়ন আবহ। সময়টা ২০০৪ সালের মার্চ। শীতের সুবায়ু কিছুটা থাকলেও মানসিক প্রদাহ ছিল মনে-মননে। বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসন তখন চলমান। তমসাঘন সময়ে নাটক দূরে থাক বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণেও ঝুঁকি ছিল। জীবন মুঠোয় রেখে ‘প্রোটাগনিস্ট ক্যারেকটার’ করেছিলেন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি একাধারে নাট্যজন, লেখক ও সাংবাদিক। ক্রান্তিকালে শেখ মুজিবের ভূমিকায় অভিনয় করাটা ছিল তার জীবনের আরেকটি ঝুঁকিপূর্ণ অধ্যায়। ২৩ সেপ্টেম্বর কিংবদন্তি পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন। আজকের দিনে তিনি ছাড়িয়ে গেলেন বয়স ৭২। তার জন্য শতায়ু প্রার্থনা।
শ্যাম বেনেগাল থেকে শুরু করে কেউ কেউ জাতির জনককে মহিমান্বিত করতে সগৌরবে কাজ করছেন। কিন্তু এও সত্য যে, বহুমাত্রিক লেখক আবদুল গাফফার চৌধুরীর ডাকে ২০০৩-২০০৪ সালে কেউ সাড়া দেননি। লন্ডন-আমেরিকায় গিয়ে মঞ্চ নাটক করবেন, সিরাজ-উদ্দৌল্লার মতো করুণ মৃত্যুদশা তুলে ধরবেন-এ ছিল এক শূন্য কল্পনা।
‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ ডকু-ড্রামার নেপথ্যের কাহিনী জানতে চাইলে নাট্যজন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, পলাশীর প্রান্তরে মীরজাফরের দল যা করেছিল ধানমন্ডি ৩২ নম্বরেও তার সবিশেষ মিল পেয়েছিলেন বোদ্ধা সাংবাদিক গাফফার চৌধুরী। কাহিনীটিকে মঞ্চনাটকে রূপ দিতে বেশ কজন লিজেন্ড অভিনেতার সঙ্গে কথাও বলেন। কিন্তু কেউ রাজি হননি শেখ মুজিবের চরিত্রে অভিনয় করতে। বহু খোঁজাখুঁজির পর পীযূষ ব্যানার্জীকে পেয়েছিলেন। প্রস্তাব দিলে অতপর পীযূষও রাজি হয়ে যান।
অবশ্য এর একটা বিশেষ সুবিধা খুঁজে পেয়েছিলেন নাট্যকার গাফফার চৌধুরী। পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি ফরিদপুরে। কৈশোরে বেড়ে ওঠা গোপালগঞ্জে। কথাবার্তায় বঙ্গবন্ধুর যে বিশিষ্টতা তার পুরোটাই ছিল পীযূষের মধ্যে। আঞ্চলিকতার মিষ্টি ভাব, ভাষার সারল্যপনা ও অহমবোধ ঠিক রাখতেই ওই এলাকার একজনকে খুঁজছিলেন গাফফার চৌধুরী।
কথায় কথায় পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ২০০১ সালের পর থেকে দেশব্যাপী যে বর্বরতা চালিয়েছিল জোট সরকার তাতে ভয় পেয়েছিল বহু মানুষ। কিন্তু পরবাসী গাফফার চৌধুরী লন্ডনে থেকে দমে যাননি। ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ নাটকটি মঞ্চোপযোগী করতে জাতির জনকের ছোট মেয়ে শেখ রেহানার সঙ্গেও আলোচনা করেছেন। উপদেশ পেয়েছেন বড় মেয়ে শেখ হাসিনার কাছ থেকেও। কিন্তু দিন-ক্ষণ এগিয়ে আসতেই সব তালগোল পাকিয়ে যায়। যারাই কথা দিয়েছিল তারা আর অভিনয় করতে চাইছিলেন না। সেই অবেলায় হাসান ইমাম, লায়লা হাসান, প্রফেসর রতন সিদ্দিকীসহ আরও কজনের সার্বিক সহযোগিতা ছিল উল্লেখ করার মতো। উদীচী ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কেউ কেউ এগিয়ে এসেছিল রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে। বাংলাদেশ থেকে কোনো নাট্যকর্মী যাতে লন্ডনে যেতে না পারেন বিভিন্ন সংস্থা সেব্যাপারে সজাগ ছিল। প্রচণ্ড মানসিক চাপ উপেক্ষা করে শেষতক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় পাড়ি জমান লন্ডনে। শুরু করলেন রিহার্সাল।
শেখ মুজিবের চরিত্রে অভিনয় করবেন-দিনরাত তাই মুজিবের খুঁটিনাটি সংগ্রহ করতেই ব্যস্ত থাকা। দিনের পর দিন নিউ মার্কেট খুঁজে উদ্ধার করতে হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর মোচ। কেমন সেন্ডেল পড়তেন, চুল আঁচড়াতেন কিভাবে, পানজাবির হাতা কেমন করে গোটাতেন আর কেমন করেই বা চুরুট ধরিয়ে ধোঁয়া ছাড়তেন-সবই রপ্ত করতে হয়েছিল পীযূষকে।
পূর্ব লন্ডনের একটি বাড়িতে রিহার্সাল হতো। ইউরোপের আরও কটি দেশ থেকে কুশীলবেরা এসেছিল। যাদের কেউ কেউ একেবারে নবীন। অভিনয় সম্পর্কে তেমন ধারণাও ছিল না। চেতনার বশে দুজন ছুটে এসেছিল নিউ ইয়র্ক থেকে। মানিক ও মাহবুবুলের অবদান এখনো মনে ধরে পীযূষের। অর্থাৎ একদিকে জোট সরকারের চলমান বর্বরতা অপরদিকে সঙ্গোপনে গণনাটকের প্রস্তুতি। শম্ভ মিত্র, উৎপল দত্ত, বিজন ভট্টাচার্যদের আদলে রাস্তার মোড়, গঞ্জের ভিড় কিংবা অপেরা হাউজের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছিল জাতির জনকের আত্মত্যাগ। ইতিহাস বিকৃতির বিপরীতে ইউরোপবাসীকে জানাতে চেয়েছিল নানামুখী ডামাডোলের কারণে ‘প্রমিথিউস’ মুজিবের নাম কেনো ভুলতে বসেছিল বাঙালি। এমনকি শেখ সাহেবকে যাতে ভুলতে বাধ্য হয় তার জন্য প্রকল্পও নেয়া হয়েছিল রাষ্ট্রিয়ভাবে।
পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় সাক্ষাতকার দেন। অকপটে বলে যান ওই সময়ের ঘনঘটা। নানান ধরনের ডকুমেন্ট ঘেঁটে আবদুল গাফফার চৌধুরী নিশ্চিত হয়েছিলেন যে, জিয়াউর রহমানই শেখ মুজিবের খুনি। ইতিহাসের ছাত্র গাফফার চৌধুরী সে সময় বহু ধরনের চোথা ঘেঁটে আবিষ্কার করেছিলেন মুজিব সম্পর্কে অজানা সব তথ্য।
নাটকটি বাংলাদেশে মঞ্চস্থ করা একেবারেই অসম্ভব ছিল। লন্ডন পুলিশের অনুমতি মিললেও বাঙালি প্রতিপক্ষদের ব্যারিকেড ছিল। চেষ্টা হয়েছিল হামলা করে লন্ডভন্ড করার। লন্ডন থেকে বাংলাদেশে নাটকটির স্ক্রিপ্ট এসেছিল যারপরনাই সঙ্গোপনে। বঙ্গবন্ধুর মেয়েদের তত্ত্বাবধান না হলে প্রক্রিয়াটি বাধাগ্রস্থ হতো-বলেন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়।
২০০৮ সালের নির্বাচনে ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ পাথেয় হিসেবে কাজ করেছে- পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় নিবিড়ভাবে ব্যাপারটি বিশ্বাস করেন। মানুষের আস্থা ও চেতনা ফেরাতে ২০০৫ সালে ডকু ড্রামাটির ভিডিয়ো ধারণ হয়েছিল। তাও বেশ গোপনে। কলকাতার একটি স্টুডিওতে চলে শ্যুটিং। মঞ্চের যারা কুশীলব ছিল তারা বিভিন্ন দেশ থেকে কলকাতায় জড়ো হয়েছিল। স্বাধীন দেশে চেতনামুক্তির কাজ তারা ছিল বদ্ধপরিকর। চলতেন গেরিলা কায়দায়, ফোনে কথাও বলতো ইঙ্গিতে। এরপরও বাড়ে ঝুঁকি, আসে আঘাত। পুলিশ হেফাজতে চলাচল করতে হয় পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
জীবনের ৭২ টি শীত-বসন্ত পেরুনো নাট্যজন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরেকটি স্মৃতি বিশেষ মনে পড়ে। ২০০৫ সালের কোনো এক সন্ধ্যায় ব্রুকলিনে অভিনীত হয়েছিল ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি।’ হলভর্তি দর্শক সেদিন অনেক। একেকটি ডায়ালগ শেষ হতেই মুহুর্মূহু করতালি আর জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগান। মঞ্চে সেদিন আলোর প্রক্ষেপণও ছিল ব্যাকরণ মেনে। সবমিলে শো শেষ হবার পর এক বৃদ্ধা এসেছিলেন গ্রিণ রুমে মুজিবের সঙ্গে দেখা করতে। হাতটা ধরে করুণভাবে বলেছিলেন, শেখ মুজিবকে দেখিনি। তোমাকে দেখে মনটা ভরে গেলো।
পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনে হয়েছিল অভিনয়জীবনটা সার্থক হলো আজ। একই সময়ে এ্যাস্টোরিয়াতে ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’র শো হয়েছিল। সেখানেও হলভর্তি দর্শক ছিল কিন্তু ব্রকলিনের ঘটনা আজও ভুলতে পারেন না। । নিউ ইয়র্কের মঞ্চায়ন এতোটাই গোছানো ছিল যে, অন্য স্টেটের বাঙালিরা একের পর এক আমন্ত্রণ জানাতে থাকে। যেমন করে আগের দিনে যাত্রাদলের বায়না হতো।
অতপর বিভিন্ন দেশ থেকে ডাক আসে। কিন্তু এতোবড় লটবহর নিয়ে দেশে দেশে মঞ্চায়ন করাটা ছিল সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। কর্মজীবীদের একসঙ্গে হওয়াটাও ছিল আরেক চ্যালেঞ্জ। পরে সিদ্ধান্ত হয়-এভাবে মঞ্চায়ন নয়, ভিডিওতে রূপ দিয়ে সিডি পাঠাতে হবে দেশে দেশে। শেষতক তাই হলো। ২০০৬ সালে কলকাতায় শেষ হয় দৃশ্যধারণের কাজ। ইউটিউবের কল্যাণে ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ ডকু ড্রামা এখন সবাই দেখতে পান।
পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বঙ্গবন্ধুকে এখন প্রতিদিন দেখে মানুষ। প্রতিক্ষণ তার কণ্ঠ শোনেন। কিন্তু ওই সময়টাতে হামলা-মামলা উপেক্ষা করে প্রমিথিউস মুজিবকে জনতার অন্তর্গহীনে দাঁড় করানোটা ছিল ঝুঁকিপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং।
- এখন কমার্শিয়াল ভেঞ্চার থেকে সিনেমা হচ্ছে জাতির জনককে নিয়ে। পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশা, এসব কাহিনী সবার মনে দাগ কাটবে। কিন্তু ২০০৪ সালে গাফফার চৌধুরীর প্রয়াসটি যেমন ধ্রপদী তেমনি সন্ধ্যাদ্বীপের মতো জাজ্বল্যমান।
-যে কথা না বললেই নয়-বলেন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়।
গাফফার চৌধুরী যখন রিস্কটা নিতে বলেছিলেন তখন থেকেই ঘুমের আগে-পরে কল্পনাতে শুধুই ছিলেন বঙ্গবন্ধু। জীবদ্দশায় বহুবার সামনে থেকে কিংবদন্তিকে দেখলেও তার জীবনভূমিকায় অভিনয় করা ছিল সর্বোপরি দুঃসাহসিক। তার মধ্যে ডুব না দিলে কিংবা অস্তস্থলে লীন না হলে মুজিবের ঢেউ দোলা দিবে না। সুতরাং উদ্বিগ্ন সময়ে বসবাস করে আরেকটি স্রোতকে প্রোজ্জ্বল করে তোলাই ছিল সেদিনের পরম দায়িত্ব।
পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আক্ষেপ, বহুজন এখনো শেখ মুজিবকে বুঝতে চায় না। আন্তরিক দীনতা থেকেই তার চেতনাকে আঘাত হানে বারংবার। কখনো শারীরিকভাবে, কখনো সোশ্যাল মিডিয়াতে কিংবা অযথাই হেয় করে মানসিকভাবে প্রতিশোধ নিতে চায় বিপরীত স্রোতের মানুষগুলো।
খুব জোর দিয়ে বলেন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, বঙ্গবন্ধুর কন্যারা আছেন বলেই নির্ভয়ে থাকি। ঘুমাই নিশ্চিন্তে।
(লেখক: প্রধান বার্তা সম্পাদক, একুশে টেলিভিশন। Email: [email protected])
দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে ওয়েস্টিন পারনাস হোটেলে আজ থেকে ০৩(তিন) দিনব্যাপী (১৬-১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) গ্লোবাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার কো-অপারেশন কনফারেন্স (জিআইসিসি)-২০২৫ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেতু বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক জনাব মোহাম্মদ আবদুর রউফ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন। সম্মেলনে সেতু সচিব সেতু বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পের উপর প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। সেতু সচিব প্রেজেন্টেশনে উল্লেখ করেন সেতু বিভাগের কয়েকটি প্রকল্পে কোরিয়ান ইডিসিএফ/ইডিপিএফ (EDCF/EDPF) অর্থানয়ের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের পরিবহন খাতে দক্ষিণ কোরিয়ার কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে।
জিআইসিসি-২০২৫ সম্মেলনের লক্ষ্য কোরিয়ান নির্মাণ সংস্থাগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি করা এবং বিভিন্ন দেশের প্রকল্প বাস্থবায়নকারীদের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপন করা। এটি মূলত একটি বিজনেস-টু-বিজনেস প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে, যেখানে কোরিয়ান কোম্পানিগুলো বিদেশী সরকার, প্রজেক্ট ডেভেলপার এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে। সম্মেলনে প্রায় ৫০০ জন অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন, যার মধ্যে ৩০টি দেশের মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এবং কোরিয়ান শীর্ষস্থানীয় নির্মাণ সংস্থাগুলির কর্মকর্তারা রয়েছেন।
এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্যগুলো হলো: বিভিন্ন দেশের আসন্ন অবকাঠামো প্রজেক্ট সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও আদান-প্রদান, বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন, নতুন প্রজেক্টে অংশগ্রহণের জন্য চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং কোরিয়ান উন্নত প্রযুক্তি যেমন স্মার্ট সিটি, হাই-স্পিড রেল, এবং স্মার্ট পোর্ট সিস্টেমের সাথে পরিচিতি করা।
এছাড়াও সম্মেলনের বাকী অংশে বিভিন্ন দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের প্যানেল আলোচনা, বিভিন্ন দেশের প্রজেক্ট ব্রিফিং, ব্যক্তিগত বিজনেস মিটিং, কোরিয়ান শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলো তাদের নতুন প্রযুক্তি প্রদর্শন করবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, সারা দেশে দেশীয় মাছের সংকট প্রকট হয়ে উঠছে। এই সংকট নিরসনে উন্মুক্ত জলাশয়ের কোন বিকল্প নাই। সরকার দেশের নদ-নদীতে মাছের অভয়ারণ্য তৈরি করতে কার্যক্রম গ্রহণ করছে।
উপদেষ্টা আজ সকালে কুড়িগ্রামে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান,নারী কৃষক এবং স্হানীয় এনজিও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। জেলা প্রশাসন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর আলোচনা সভার আয়োজন করে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, বন্যায় নদীগুলোতে পলি পরার কারণে নাব্যতা হ্রাস, পানি দূষণ, চায়না জাল ব্যবহার ও ইলেকট্রিক শর্ট দিয়ে মাছ কারণে দিনদিন মাছের পরিমাণ কমছে। জোরালো অভিযান চালিয়ে এসব অবৈধ মাছ ধরার যন্ত্রপাতি উদ্ধার করতে হবে। অভিযান চলমান রাখতে নদীগুলোতে স্পীড বোটের ব্যবহার করা হবে।
চরাঞ্চলের মানুষের জীবনমান প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে তারা সরকারি অনেক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া তিনি প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে এই অঞ্চলের মানুষের জন্য বিশেষ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানান।
খামারিদের উৎপাদিত দুধ সংরক্ষণ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, যথাযথ সংগ্রহ ও সংরক্ষণের অভাবে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই এই অঞ্চলে চিলিং সেন্টার স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
জুলাই যোদ্ধাদের আত্মত্যাগ প্রসঙ্গে বলেন, জুলাই যোদ্ধাগণ অনেকে জীবন উৎসর্গ করেছেন আবার অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। তাদের এই ঋণ ভুলবার নয়। এজন্য তিনি সরকারি ও এনজিওর উদ্যোগে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে আহ্বান জানান।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজের সভাপতিত্বে আরো উপস্হিত ছিলেন সিভিল সার্জন ডা. স্বপন কুমার বিশ্বাস, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোক্তাদির খান, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. হাবিবুর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণের অতিরিক্ত উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ রানাসহ জেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
এরপর উপদেষ্টা কুড়িগ্রাম সদরের পাঁচগাছি ইউনিয়নের ছড়ারপাড় গ্রামে নারী কৃষকের বাড়ি পরিদর্শন করেন।
সরকার দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনীত করেছে। বৃহস্পতিবার তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব খাদিজা তাহের ববির সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘প্রেস কাউন্সিলের ৫ নম্বর ক্রমিকের প্রতিনিধি নিউএজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবীর পদত্যাগ করায় তার পরিবর্তে সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার সম্পাদক সমিতির প্রতিনিধি হিসেবে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনয়ন প্রদান করা হলো।’
বর্তমান কাউন্সিলের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য এ মনোনয়ন কার্যকর থাকবে। জনস্বার্থে জারিকৃত এ প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
প্রেস কাউন্সিলের বর্তমান চেয়ারম্যান বিচারপতি একেএম আব্দুল হাকিম, সচিব (উপসচিব) মো. আব্দুস সবুর।
এছাড়া ১২ জন সদস্য হচ্ছেন—১. বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, ২. ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মিস দৌলত আকতার মালা, ৩. ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম, ৪. ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম, ৫. দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, ৬. দৈনিক বণিক বার্তার প্রকাশক ও সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ৭. দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, ৮. দৈনিক পূর্বকোণের সম্পাদক ডা. রমিজ উদ্দিন চৌধুরী, ৯. নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়ার) উপদেষ্টা আখতার হোসেন খান, ১০. বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, ১১. বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম এবং ১২. বার কাউন্সিলের ভাইস-চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন।
অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মিয়া শাহবাজ শরিফের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। পাকিস্তানের ইসলামাবাদে পিএম হাউসে উভয়ের এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ধর্ম উপদেষ্টা ও তার প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানিয়ে পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং সখ্যের বন্ধনে আবদ্ধ। এ সম্পর্ক আগামী দিনগুলোতে আরও জোরদার হবে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক ও কায়রোতে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকের কথা উল্লেখ করে দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে তার অবদানের প্রশংসা করেন। এছাড়া তিনি পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সম্পর্ককে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার আকাঙ্ক্ষাকে সাধুবাদ জানান।
এদিকে ধর্ম উপদেষ্টা বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি পত্র পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রীকে লেখা এ পত্রে প্রধান উপদেষ্টা পাকিস্তানে নজিরবিহীন বন্যায় সে দেশের সরকার ও জনগণের প্রতি গভীর সহমর্মিতা ও আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং ভয়াবহ এ দুর্যোগে নিহতদের পরিবার ও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
এ পত্রে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, কঠিন এ সময়ে বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণের পাশে রয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আপনার সুদক্ষ নেতৃত্বে পাকিস্তানের জনগণ তাদের অসাধারণ ধৈর্য ও সহনশীলতার মাধ্যমে এ চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করবে। প্রয়োজনে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে বাংলাদেশ সর্বাত্মক সহযোগিতা ও সহায়তা প্রদানে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
সাক্ষাৎকালে ঢাকা ও করাচীর মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচল দ্রুত পুনঃস্থাপনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এছাড়া কৃষি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ধর্মতত্ত্ব ও চিকিৎসা বিষয়ে উভয়দেশের শিক্ষার্থী বিনিময়ে বৃত্তি প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার, প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ, ধর্মবিষয়ক ও আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি মন্ত্রী সরদার ইউসুফ খান, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী আতা তারার, ইসলামাবাদে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. ইকবাল হোসেন খান, উপদেষ্টার একান্ত সচিব ছাদেক আহমদ ও শরীফ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রভাষক মুফতি জাহিদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশের একটি স্বাধীন তদন্ত সার্ভিস গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্ব করেন।
পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশের একটি স্বাধীন তদন্ত সার্ভিস গঠন করা হবে, যাতে কোনো রাজনৈতিক বা অন্য কোনো প্রভাব ছাড়াই তদন্ত সম্পন্ন করা যায়।’ এর পাশাপাশি পুলিশের ভেতরে অভ্যন্তরীণ অভিযোগ যাচাইয়ের জন্য একটি কমিশন গঠনের বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ‘এই দুই সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য আইন মন্ত্রণালয় কাজ করবে। এ কাজে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান খান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখশ চৌধুরী যুক্ত থাকবেন।’
সভায় স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বারবার জোর দিয়েছেন যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও ক্ষমতায়িত করতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন যেন নিজস্ব তহবিল সংগ্রহ ও স্বচ্ছভাবে পরিচালনা করতে পারে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
স্বাস্থ্য খাত নিয়েও সভায় আলোচনা হয়। শফিকুল আলম জানান, ‘কিছু মেডিকেল কলেজে যোগ্য শিক্ষকের সংকট রয়েছে। তাই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পরামর্শক বা অন্যভাবে সম্পৃক্ত করে শিক্ষা কার্যক্রমের মান উন্নত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
নেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের বিষয়েও সভায় আলোকপাত করা হয়। প্রেস সচিব বলেন, ‘নেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা ভালো আছেন, দূতাবাস তাদের দেখভাল করছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বিশেষ ফ্লাইটে জাতীয় ফুটবল দলকে দেশে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
এ বৈঠক প্রসঙ্গে শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘আজকের বৈঠকের প্রতিটি সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি, শাসনব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।’
ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
ক্যাডার কর্মকর্তাদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের মেয়াদ ছয় মাস থেকে কমিয়ে চার মাস করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন মাস প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে এবং এক মাস মাঠপর্যায়ে ওরিয়েন্টেশন ও গ্রাম সংযুক্তি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় প্রশিক্ষণ কাউন্সিলের নবম সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান উপস্থিত ছিলেন।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, কর্মকর্তাদের মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্সে ভর্তির সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৪৭ বছর করা হবে। পিএইচডি কোর্সে অধ্যয়নকালে প্রতি বছর তত্ত্বাবধায়কের অগ্রগতিমূলক প্রত্যয়ন মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে, অন্যথায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বেতন বন্ধ রাখা হবে।
সভায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকারি যত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে সেগুলোর ওপর মূল্যায়ন করতে হবে। কী ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, প্রশিক্ষণের ধরন-মান ইত্যাদির মানদণ্ড নির্ধারণ করে ক্যাটাগরিভিত্তিক প্রতিটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে র্যাংকিং করতে হবে এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি স্বাধীন ইউনিট গঠন করতে হবে। তারা সমস্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ওপর পদ্ধতিগতভাবে, স্বাধীনভাবে মূল্যায়ন করবে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সামগ্রিক দর্শন জানতে হবে। সেগুলো সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি না দেখতে হবে। সরকারি কর্মকর্তারা যারা বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন তাদের তথ্য সেখানে থাকবে।’
সভায় সঞ্জীবনী প্রশিক্ষণের নাম পরিবর্তন করে ‘দক্ষতা নবায়ন প্রশিক্ষণ’ করার সিদ্ধান্ত হয়। এ প্রশিক্ষণ হালনাগাদকৃত কারিক্যুলামে মাঠপর্যায়ে সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আয়োজন করা হবে। এছাড়া উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা আংশিক বৃত্তিপ্রাপ্ত হলেও প্রেষণ অনুমোদন করা যাবে।
কর্মচারীদের সততা ও নৈতিকতা বিকাশ এবং দুর্নীতি বিরোধী মনোভাব তৈরিতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্সে সদ্গুণ, নৈতিকতা, আচরণবিজ্ঞান ও আচরণবিধি অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক মূল্যায়ন এবং প্রশিক্ষণ বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে গবেষণা, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে সভাপতি করে একটি নির্বাহী কমিটি (ইসিএনটিসি) গঠন করা হয়।
জাতীয় লেখক ফোরাম আয়োজিত সাপ্তাহিক সাহিত্য আড্ডা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজধানীর ধানমন্ডিতে হওয়া এ সাহিত্য আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন সংগঠেনর সভাপতি ড. দেওয়ান আযাদ রহমান, মহাসচিব কবি-কথাসাহিত্যিক জাহাঙ্গীর হোসাইন এবং উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য মো. আবদুল মান্নানসহ বাংলাদেশের খ্যাতিমান লেখকরা। অনুষ্ঠানটি একটি সাধারণ প্রাণবন্ত আড্ডার মধ্যেই শুরু হয়। অনুষ্ঠানটি ৩টি পর্বে সাজানো হয়েছে। প্রতি পর্বে চারজন কবিকে মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা তাদের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য এবং কবিতা পাঠ করেছেন। পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেছেন কবি-কথা সাহিত্যিক জাহাঙ্গীর হোসাইন।
মন্তব্য