গত এক দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব বিস্তৃত করার ভিত্তি তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর বাণিজ্যিক অংশীদার ভারত। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ধীরে ধীরে বেড়েছে। গত এক দশকের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়ে তিন গুণ হয়েছে।
উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীল উন্নতি অর্জন করায় এখন দুটি দেশই সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি সইয়ের ব্যাপারে ভাবছে, যাকে কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (সেপা) হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে।
এ চুক্তির পর বাংলাদেশে ভারতের অবাধ বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত হবে। ফলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত হবে। পণ্য রপ্তানির পাশাপাশি সেবা রপ্তানির সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। ভারতের বিশাল বাজারে এই সুবিধা পেলে বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে লাভবান হতে পারবে।
বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সাল থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে সেপা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বানিজ্য অঞ্চলের (সাফটা) মতো আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তির অকার্যকারিতার কারণেও এটি আলোচিত হতে থাকে। পরবর্তী সময়ে ২০১৯ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে সেপার সম্ভাবনা যাচাইয়ের জন্য একটি যৌথ কমিশন গঠন করা হয়, যার কাজ ছিল ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রণয়ন করা।
এর মধ্যে ২০২১ সালের মার্চ মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময়ে দুই দেশই নিজেদের মধ্যকার বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়ে সম্মত হয়। সে সময় যৌথ বিবৃতিতে ট্যারিফমুক্ত বাণিজ্যের প্রয়োজনীয়তা, বাণিজ্য সংক্রান্ত নীতি ও প্রক্রিয়ার প্রয়োজনীয়তা এবং বাংলাদেশ থেকে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সফরের ব্যাপারগুলো উঠে আসে।
এই চুক্তিতে পণ্য, সেবা ও বিনিয়োগ— এই তিনটি দিক অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির আওতায় ভারতে এখন শুধু পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। সেপার পর সেবা রপ্তানি উন্মুক্ত হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। বিশেষ করে ব্যাংক ও বিমা সার্ভিসের পরিধি বাড়বে।
সেপার প্রধান লক্ষ্য হলো বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বিশাল বাণিজ্য ঘাটতির লাগাম টানা এবং নতুন অর্থনৈতিক সুবিধাগুলো উন্মোচন করা, যার মধ্যে আছে সংযোগ, নতুন বাজার, সহযোগিতা ও অংশীদারত্ব। এ ছাড়া উপআঞ্চলিক সহযোগিতার ভিত্তিতে বহুমুখী সংযোগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে। এ চুক্তির ফলে অ্যান্টি ডাম্পিং ও রুলস অব অরিজিন শুল্ক বসিয়ে বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত করার সুযোগ থাকবে না। ফলে দুই দেশই সেপার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হবে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য অনুযায়ী ব্যবসা সহজ করতে রেলওয়ে, সড়ক ও বন্দর অবকাঠামো উন্নয়ন, সীমান্ত হাট ও বহুমুখী যোগাযোগের মাধ্যমে আঞ্চলিক সংযোগ চুক্তির আওতায় পারস্পরিক স্বার্থের বিভিন্ন বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এ ছাড়া এই চুক্তির আওতায় পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, তথ্য-প্রযুক্তি ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর মতো নতুন ক্ষেত্রগুলোর উন্নতিতে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে। সেপার মাধ্যমে নতুন নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এটি দ্বিমুখী বাণিজ্যের প্রভূত উন্নতি সাধন করবে। এ ছাড়াও বাংলাদেশ-ভারত অংশীদারত্ব শক্তিশালী করার জন্য এই চুক্তি চারটি দিকে ফোকাস করে। এগুলো হলো যোগাযোগ ও নিরবচ্ছিন্ন সাপ্লাই চেইন বজায় রাখা, প্রতিরক্ষা সামগ্রীর যৌথ উৎপাদন, বিনিয়োগের সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলো উন্মোচন এবং ভ্যাকসিন ও অন্যান্য ওষুধ সামগ্রীর যৌথ উৎপাদন।
সেপার সম্ভাবনা
দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সেপা সম্ভাবনার নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। চুক্তির প্রথম বছরেই দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়বে ৫ থেকে ৭ বিলিয়ন ডলার। চুক্তিটি ব্যবসা-বাণিজ্য, সাপ্লাই চেইন ও উৎপাদনের বিকাশে যৌথভাবে কাজ করার ফলে আমদানি, রপ্তানি ও ব্যবসা সম্পর্কিত নিয়ম-কানুনের সংস্কারসহ দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন গতির সূচনা হবে।
পরিবহন খরচ কম ও সময় সাশ্রয়ের কারণে বাংলাদেশি আমদানিকারকরা একই পণ্যের জন্য দূরপ্রাচ্যের দেশগুলোর বদলে ভারতমুখী হবে। সেপা বাস্তবায়ন হলে এর দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্ভাবনা হবে ৪০ বিলিয়ন ডলার। ভারতের সেবা ও বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির শক্তিশালী সম্ভাবনা সেপা বাস্তবায়ন হওয়ার জন্য যথেষ্ট।
বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশের জন্য সেপা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্যোগ। আঞ্চলিক সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব (আরসিইপি) থেকে সরে আসার পর থেকে ভারত প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার চেষ্টা করছে।
দ্বিতীয়ত, এ চুক্তি দ্বিপক্ষীয় ও উপআঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধি করবে যা বাংলাদেশ তাদের পলিসি ইনিশিয়েটিভের মধ্যে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংযোগই সমৃদ্ধি। সেপা বেশ কিছু দিক দিয়ে যোগাযোগের উন্নতি ঘটাবে, যা ভবিষ্যৎ এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দেবে।
বিবিআইএন, বিসিআইএম এবং বিমসটেক ভারত ও বাংলাদেশকে পেট্রাপোল-বেনাপোল, ফুলবাড়ী-বাংলাবান্ধা ও ডওকি-তামাবিল পয়েন্টে সংযুক্ত করেছে। এ ছাড়াও আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগের মাধ্যমে সংযোগ ঘটেছে। এ চুক্তি বাস্তবায়ন হলে ব্যক্তিগত, যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী কার্গো বাহনগুলো সীমান্ত অতিক্রম করতে পারবে। এটি সবচেয়ে বেশি দেখা যাবে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে, যেখানে পণ্যের দাম অন্তত ৪.৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাবে।
ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ও ট্রানজিট নতুন নতুন অর্থনৈতিক কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করবে, যার ফলে মানুষের আয় বৃদ্ধি পাবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ও ভোক্তাদের ব্যয় কমে আসবে।
এই সংযোগের মাধ্যমে আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুফল আসবে। যেমন: বিমসটেক চুক্তির মাধ্যমে থাইল্যান্ডের র্যানং বন্দরের সঙ্গে চেন্নাই, বিশাখাপাটনাম ও কলকাতা বন্দর সংযুক্ত হবে। বিমসটেকের নৌ-পরিবহন চুক্তি ও মুক্তবাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে ২ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সংযুক্ত হবে। ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তবাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে এটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে পিটিএ ও এফটিএ সম্পাদনের পথ তৈরি করবে। ইতোমধ্যে থাইল্যান্ড ও নেপালের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ।
তৃতীয়ত, এই চুক্তির মাধ্যমে সহযোগিতা ও অংশীদারত্বের নতুন জায়গা তৈরি হবে এবং যৌথ উৎপাদন হাব ও নিরবচ্ছিন্ন সাপ্লাই চেইন তৈরির সুযোগ তৈরি হবে। এটি উভয় দেশের জন্য নতুন বাজার তৈরি করবে ও নতুন নতুন বিনিয়োগ আসতে থাকবে।
বাংলাদেশ এরই মধ্যে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য তিনটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করেছে এবং ভারতীয় কোম্পানিগুলো টেলিযোগাযোগ, ওষুধ, এফএমসিজি ও অটোমোবাইলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করছে।
সেপা বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে এবং এ ধরনের বিনিয়োগ নতুন মাত্রা পাবে। এ চুক্তি বাস্তবায়ন হলে ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোর জন্য বাংলাদেশের রাসায়নিক সার, পাটজাত দ্রব্য, হিমায়িত মৎস্য পণ্য ও তৈরি পোশাক সহজলভ্য হবে।
চতুর্থত, অনুন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের মর্যাদা লাভের জন্য বাংলাদেশকে যেসব ক্ষেত্রে উন্নতি সাধন করতে হবে, এই চুক্তি সেসব ক্ষেত্রগুলোতে নতুন সুযোগ তৈরি করবে।
দুই দেশের স্থলভাগ ও জলসীমায় সংযোগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশেরই আয় বৃদ্ধি পাবে। পণ্য, সেবা ও জনসাধারণের বিনিময় বৃদ্ধি পাওয়ায় পর্যটন ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ ঘটবে, যা দুই দেশেই কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও মানবসম্পদের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। দুই দেশেরই ওষুধ শিল্প সমৃদ্ধ হওয়ায় যৌথ ওষুধ পণ্য ও প্রতিরক্ষা সামগ্রী উৎপাদনের ফলে উভয়ই লাভবান হবে।
করণীয় কী
ভারত-বাংলাদেশ উভয়ের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে সেপা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি এই চুক্তির পূর্ণ সফলতার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রথমত, যেকোনো অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তির পূর্ণ ফলাফল পাওয়ার জন্য অবকাঠামোগত অবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাণিজ্য, যোগাযোগ ও বিনিময়ের পূর্বশর্তই এটি।
দ্বিতীয়ত, দুই দেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক সম্পর্ক একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে আনার জন্য যাবতীয় অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে।
তৃতীয়ত, দুই দেশের মধ্যকার পরিবহন নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করার মাধ্যমে যোগাযোগ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।
চতুর্থত, পারস্পরিক লাভের জন্য ট্যারিফ ও নন ট্যারিফের বাধ্যবাধকতা ও রুলস অফ অরিজিন উঠিয়ে দিতে হবে। পাটজাত পণ্যের ডাম্পিং ও অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক, কাস্টমসের বিড়ম্বনা, নো ম্যান্স ল্যান্ডে পণ্যের লোডিং ও আনলোডিংয়ের সমস্যাগুলোকে বিবেচনা করতে হবে।
পঞ্চমত, ভারতীয় কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতাপূর্ণ খাতগুলোর উন্নতিতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
ষষ্ঠত, আইনি বাধ্যবাধকতাও এটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী মুক্তবাণিজ্য চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য অংশীদার দেশগুলোর মধ্যে অন্তত ৯০ শতাংশ পণ্য ও সব ধরনের সেবা পরিবহনে সমস্ত বর্ডার ডিউটি ও বিধিনিষেধ উঠিয়ে নিতে হবে।
সপ্তমত, মুক্তবাণিজ্যের পূর্ণ সফলতা পেতে হলে একটি দেশের রপ্তানি খাতের বৈচিত্র্য থাকতে হবে, যা দিয়ে সে বৈদেশিক বাণিজ্যে ভারসাম্য আনতে পারে।
বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশই পোশাক পণ্যের দখলে এবং এগুলো মূলত উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে রপ্তানি হয়ে থাকে। ভারতের বাজারে এসব পণ্যের চাহিদা কম। তাই সেপার সফলতার জন্য রপ্তানি খাত আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ করার উদ্যোগ নিতে হবে।
সর্বশেষ অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা সেপা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যেন কোনোরূপ প্রভাব না ফেলে তা খেয়াল রাখতে হবে। ২০১৮-১৯ সালে বিশেষ স্বার্থান্বেষী মহল আঞ্চলিক সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তিতে যোগদানে ভারতের বিরুদ্ধে সুপারিশ করেছিল।
দুই দেশের ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার বিবেচনায় সেপা একটি গেম চেঞ্জিং চুক্তি হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অভিযাত্রায় ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে যোগাযোগ এবং আর্থ-সামাজিক থেকে অবকাঠামো খাতে এই চুক্তি নতুন মাত্রা যুক্ত করবে।
বিস্তৃত উৎপাদন ব্যবস্থা ও আঞ্চলিক বাজার সৃষ্টির জন্য বাণিজ্য, পরিবহন ও বিনিয়োগের ত্রিমাত্রিক উন্নয়নে গঠনমূলক পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করার জন্য একটি সময়োপযোগী পরিকল্পনা নেয়া ও সে অনুযায়ী কাজ করা জরুরি।
লেখক: স্বাধীন গবেষক ও কলামিস্ট
আরও পড়ুন:নানা ধরনের সবজির মধ্যে বিশেষ একটি জায়গা দখল করে আছে ‘কাঁকরোল’। আর ব্যাপকভাবে এই সবজির চাষ হচ্ছে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার পাহাড়ি গ্রাম গোমড়ায়। গ্রামটিতে বসবাসকারী সবাই বিভিন্ন সবজির আবাদ করেন, যার মধ্যে কাঁকরোল অন্যতম। তাই গোমড়া গ্রামটি এখন ‘কাঁকরোল গ্রাম’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।
ভারতের মেঘালয় রাজ্যঘেঁষা গারো পাহাড়ের জেলা শেরপুর। এখানে ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের একটি গ্রাম ‘গোমড়া’। এই গ্রামের চারশ’ একর জমিতে প্রায় ১২শ’ কৃষক কাঁকরোল চাষকে তাদের জীবিকার অবলম্বন হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
সরজমিনে জানা যায়, এই এলাকায় কয়েক বছর আগেও পানি ও বিদুতের অভাবে বহু জমি পতিত ছিলো। এখন এ দুটি সুবিধা পাওয়ায় আর পতিত পড়ে থাকছে না এসব জমি। কৃষি বিভাগের সহায়তা ও পরামর্শে গ্রামের প্রায় সবাই নিজের কিংবা অন্যের জমি বর্গা নিয়ে মৌসুমী সবজি চাষ করছেন।
শরৎ ঋতুর এই সময়টাতে পুরো এলাকার সবজির ক্ষেত কাঁকরোলে ছেয়ে গেছে। যদিও এসব ক্ষেতে গরম ও শীতের আগাম সবজি বেশি আবাদ করেন স্থানীয়রা। এখানকার উৎপাদিত সবজির মান ভালো হওয়ায় স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। স্থানীয় বাজারে কাঁকরোল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে।
গোমড়া গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আগে এই এলাকায় পানির জন্য প্রায় সব জমিই পতিত থাকতো। কিন্তু এখন বিদ্যুৎ আসায় পানি সমস্যার সমাধান হয়েছে। আবাদের আওতায় এসেছে অনেক জমি।
‘আমরা মৌসুমভিত্তিক সবজির আবাদ করে থাকি। আমরা এখন সবজির মধ্যে কাঁকরোল লাগিয়েছি। সবজি আবাদ করে এলাকার কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।’
কৃষক হরমুজ আলী বলেন, ‘এটা পাহাড়ি এলাকা। এই এলাকায় আমরা সবজির আবাদই করি। আমি ৫০ শতাংশ জমিতে কাঁকরোল লাগাইছি। আমি এবার কাঁকরোল বিক্রি করে অনেকটা লাভবান হয়েছি। পোলাপানের লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছি। পাঁচ সদস্যের সংসার চলছে এই সবজি আবাদ করেই।’
কৃষক ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমরা পাহাড়ের মানুষ। আগে কী যে কষ্ট করছি! মানষের জমিতে সারাদিন কাম করে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পাইছি। কোনো কোনোদিন কামও পাইতাম না। এই টাকা নিয়া বাজার করবার গেলে কষ্ট হইছে। এখন বাড়ির পাশে রহমত ভাইয়ের জমিন বাগি (বর্গা) নিয়া শুরু করছি কাঁকরোলের চাষ। এখন আল্লাহর রহমতে নিজেরা ভালা আছি।’
তবে স্থানীয় চাষিদের অভিযোগ রয়েছে গ্রামের রাস্তা-ঘাট কাঁচা নিয়ে। যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় সবজির ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
কৃষক হারুন মিয়া বলেন, ‘আমাদের এদিকে কাঁচা রাস্তা হওয়ায় আমরা সবজি বাজারে তুলতে পারি না। নিলেও খরচ অনেক পড়ে যাওয়ায় লাভ কম হয়। সময়মতো বাজারে না নেয়ায় সঠিক দামও পাই না। আমরা কৃষকরা অবহেলিত।’
কৃষক খাইরুল বলেন, ‘এই এলাকার গ্রামীণ রাস্তাগুলো পাকা করলে আমাদের খুব উপকার হবে। আমরা কৃষকরা সবজি আবাদ করে দামটা বেশি পাইতাম। খারাপ রাস্তায় সব গাড়ি সহজে আসবার চায় না। আসলেও ভাড়া বেশি পইড়া যায়। এজন্য লাভটা কম হয়।’
যেভাবে চাষ
কাঁকরোলের বীজ কাঁকরোল গাছের নিচে হয়ে থাকে, যা দেখতে মিষ্টি আলুর মতো। মার্চ ও এপ্রিলে এই সবজির চাষ করা হয়। চারা গজানোর ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যেই এর ফলন পাওয়া সম্ভব। কাঁকরোল লতানো গাছ। স্ত্রী ফুল ও পুরুষ ফুল একই গাছে হয় না। তাই বাগানে দু’ধরনের গাছ না থাকলে পরাগায়ন ও ফলন কম হয়।
চাষে খরচ ও লাভ কেমন
কৃষকেরা বলছেন, কাঁকরোল চাষে বিঘাপ্রতি খরচ পড়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার। ফলন ভালো হলে প্রতি বিঘায় খরচ লাখ টাকার উপরে লাভ হয়ে থাকে।
কাঁকরোলের উপকারিতা
কাঁকরোল অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজি৷ এতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ক্যালসিয়াম, লৌহ, ফসফরাস, ক্যারোটিন, আমিষ, ভিটামিন এ, বি ও সি এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে৷ কাঁকরোলে ভিটামিন সি থাকায় শরীরের টক্সিন দূর করে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
কাঁকরোলে আছে বিটা ক্যারোটিন ও আলফা ক্যারোটিন, যা ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না; ত্বককে করে উজ্জ্বল। এছাড়া কাঁকরোলের ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুমায়ুন দিলদার জানান, পাহাড়ের পাদদেশে কাঁকরোলের পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের সবজির আবাদ হয়ে থাকে। সবজি চাষিদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে। এই সবজি কৃষক সরাসরি ঢাকার বাজারে পাঠাচ্ছে। সবজির মান ভালো হওয়ায় কৃষক দামও পাচ্ছে ভালো।
‘আমি মনে করি অন্যান্য কৃষি উদ্যোক্তা জমি ফেলে না রেখে মৌসুমভিত্তিক সবজি আবাদ করলে অবশ্যই লাভবান হবে। এ বছর এই উপজেলায় ৭০ হেক্টর জমিতে কাঁকরোলের আবাদ হয়েছে।’
আরও পড়ুন:পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে এক দিনের সরকারি ছুটি থাকায় সোমবার বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকবে।
বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে দুই দেশের মধ্যে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক রয়েছে বলে নিশ্চিত করেন ইমিগ্রেশন পুলিশের পরিদর্শক ওমর ফারুক মজুমদার।
বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ভারত থেকে পণ্যবোঝাই ৩০০ থেকে ৩৫০টি ট্রাক আসে। বাংলাদেশ থেকেও ২০০ ট্রাকেরও বেশি পণ্য যায় ভারতে।
শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচামালের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য আসে এ বন্দর দিয়ে। ভারত থেকে বাংলাদেশে আমদানি করা পণ্যের ৮০ ভাগই আসে বেনাপোল বন্দর দিয়ে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, ‘ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে আজ সোমবার সরকারি ছুটির কারণে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ থাকবে বলে দুই দেশের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে পত্র বিনিময় হয়েছে।’
বেনাপোল ইমিগ্রেশনের পুলিশ পরিদর্শক ওমর ফারুক মজুমদার জানান, ছুটিতে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকলেও দুই দেশের মধ্যে যাত্রী চলাচল স্বাভাবিক আছে।
বেনাপোল চেকপোস্ট কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, ‘ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে ছুটি থাকায় আজ দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকবে বলে ওপারের বন্দর কর্তৃপক্ষ ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে আবার স্বাভাবিকভাবেই আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য শুরু হবে।’
আরও পড়ুন:গভীর নিম্নচাপের কারণে বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় সুন্দরবনসহ বাগেরহাটের বিভিন্ন মৎস্য বন্দরে আশ্রয় নিয়েছে এক হাজারের বেশি ফিশিং ট্রলার। ফলে আপাতত সাগরে মাছ শিকার বন্ধ। এ অবস্থায় ভরা মৌসুমে ইলিশ আহরণে বিপর্যয় নেমে এসেছে।
ত্তাল সাগরে বিশাল বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ায় সাগরে টিকতে না পারায় এসব ফিশিং ট্রলার সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী-খালসহ বাগেরহাটের প্রধান মৎস্য বন্দর কেবি ঘাট, শরণখোলা, রায়েন্দা, মোংলা ও রামপাল ঘাটে এসে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে।
শনিবার দিনভর বাগেরহাটে ৫৭ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে মোংলা আবহাওয়া অফিস। বাগেরহাটে থেমে থেমে বৃষ্টির মধ্যে বয়ে যাচ্ছে ঝড়ো হাওয়া।
সাগর উত্তাল থাকায় উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
বৈরী আবহাওয়া কারণে মোংলা বন্দরের জেটি ও পশুর চ্যানেলের আউটার বারে অবস্থানরত সব বাণিজ্যিক জাহাজে পণ্য উঠা-নামার কাজ ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এদিকে মৎস্য আহরণে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা এখন মাছ ধরা নিয়ে সাগরে ব্যস্ত সময় কাটানোর কথা। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর বড় বাধা হয়ে দেখা দিয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ইলিশ আহরণে দেখা দিয়েছে চরম বিপর্যয়।
সামুদ্রিক মৎস্য আহরণে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয় ২৩ জুলাই। ওই সময় প্রথম সাগরে রওনা হয়েই টানা এক সপ্তাহের দুর্যোগের কবলে পড়তে হয়েছে জেলেদের।
গত রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) থেকে চলতি সপ্তাহে দু’দফা নিম্নচাপ ও মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে বঙ্গোপসাগর। উত্তাল ঢেউয়ে সাগরে কোনো ট্রলার নামতে পারছে না। ফের বন্ধ হয়ে গেছে ইলিশ আহরণ।
বর্তমানে বাগেরহাটের হাজারের বেশি ফিশিং ট্রলার সুন্দরবনসহ উপকূলীয় বিভিন্ন মৎস্য বন্দরে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। গত দেড় মাসে তিন দফা দুর্যোগে পড়ে কোটি কোটি টাকা লোকসানে পড়েছেন বাগেরহাটের শরণখোলাসহ উপকূলের মহাজন ও আড়ৎদাররা।
শনিবার দুপুরে শরণখোলার মৎস্য আড়ৎদাররা জানিয়েছেন, নিম্নচাপের কারণে গত রোববার থেকে টানা তিন দিন সাগরে জাল ফেলতে পারেনি জেলেরা। মাঝখানে দু’দিন (বুধ ও বৃহস্পতিবার) আবহাওয়া কিছুটা স্বাভাবিক হলে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা ট্রলারগুলো সাগরে ছুটে যায়। কিন্তু এরই মধ্যে ফের হানা দিয়েছে গভীর নিম্নচাপ। ফলে শুক্রবার ভোর থেকে আবারও সব ফিশিং ট্রলার নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরে আসে।
গভীর সাগর থেকে ফিরে আসা ট্রলারগুলো বর্তমানে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের মেহের আলীর চর এবং বাগেরহাটের প্রধান মৎস্য বন্দর কেবি ঘাট, শরণখোলা, রায়েন্দা, মোংলা ও রামপাল ঘাটে এসে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে।
শরণখোলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘একের পর এক দুর্যোগের কারণে সাগরে জাল ফেলা যাচ্ছে না। প্রতি ট্রিপে একেকটি ট্রলারে দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকা খরচ হয়। কিন্তু মাছ না পাওয়ায় অধিকাংশ মালিক-মহাজনের চালান খোয়াতে হচ্ছে। এমনিতেই এ বছর প্রত্যেক আড়ৎদার ও মহাজন লাখ লাখ টাকা লোকসানে রয়েছে।’
আবুল হোসেন আরও বলেন, ‘ইলিশের যখন ভরা মৌসুম তখনই ৬৫ দিন থাকে নিষেধাজ্ঞা। এর পর আবার অক্টোবর মাসে শুরু হবে ইলিশের প্রজনন মাস। তখন ২২ দিন দেশের সব নদী ও সমুদ্রে সব ধরনের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
ফলে ছয় মাসের ইলিশ মৌসুমের তিন মাস চলে যায় নিষেধাজ্ঞায়। বাকি সময় দফায় দফায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাগর-নদীতে ঠিকমতো জাল ফেলা যায় না। ফলে একদিকে লোকসানের ঘানি টানতে টানতে মহাজনরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে মৎস্য আহরণে নিয়োজিত লাখ লাখ জেলে চরম সংকটে পতিত হচ্ছে।’
আড়ৎদার, ট্রলার মালিক সর্বোপরি জেলেদের দুর্দশা বিবেচনা করে তাদের স্বার্থে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা আর না দেয়ার দাবি জানান এই ফিশিং ট্রলার মালিক নেতা।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু তিনদিনের ভারত সফর শেষে আজ শনিবার বিকেলে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন।
কূটনৈতিক সূত্র এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগের পরিচালক সামিয়া ইসরাত রনি ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ডোনাল্ড লু’কে স্বাগত জানান।
এর আগে শনিবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের আন্তর্জাতিক অর্থ বিষয়ক সহকারী সচিব ব্রেন্ট নেইম্যান ঢাকায় আসেন।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর এটিই ঢাকায় কোনো যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের প্রথম সফর।
যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলটির এই সফরে দুই দেশের মধ্যে বহুমাত্রিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হবে। তবে আলোচনার ফোকাস হবে আর্থিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা আগামীকাল রোববার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
পরে প্রতিনিধি দলটি পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন। ওইদিন বিকেলে প্রতিনিধি দল প্রধান নেইম্যান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
নেইম্যানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলে লু ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার (ইউএসএআইডি) উপ-সহকারী প্রশাসক অঞ্জলি কর ও যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ রয়েছেন।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের আন্তর্জাতিক অর্থ বিষয়ক সহকারী সচিব ব্রেন্ট নেইম্যান আজ শনিবার সকালে ঢাকায় পৌঁছেছেন। তিনি ঢাকা-ওয়াশিংটন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে আলোচনায় তার দেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (উত্তর আমেরিকা) খন্দকার মাসুদুল আলম ব্রেন্ট নেইম্যানকে স্বাগত জানান।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানানোর জন্য ঢাকা একটি ব্যাপক ও বহুমুখী আলোচনার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু আজই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। তিনি বর্তমানে নয়াদিল্লি সফর করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলটির প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস, পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও অন্যান্য আনুষ্ঠানিক বৈঠকে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন প্রতিনিধি দলের জন্য মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করবেন। এতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।
পররাষ্ট্র সচিব সফর প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আলোচনায় শুধু একটি বিষয় নয়, বিস্তৃত বিষয় থাকবে।’
যুক্তরাষ্ট্রর পররাষ্ট্র দফতরের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন অগ্রাধিকারে অবদান রাখতে পারে তা নিয়ে আলোচনা হবে।
স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, এই সফরকালে সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল জুড়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও আর্থিক স্থিতিশীলতা জোরদারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করবেন। ঢাকায় লু অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বৈঠকের জন্য একটি আন্তঃসংস্থা প্রতিনিধি দলে যোগ দেবেন।
প্রতিনিধি দলে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ, ইউএসএআইডি ও দেশটির বাণিজ্য প্রতিনিধি অফিসের প্রতিনিধিরা থাকবেন।
আরও পড়ুন:প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে শ্রমিক অসন্তোষের জেরে ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় বন্ধ হওয়া দুই শতাধিক কারখানার বেশির ভাগে শনিবার উৎপাদন শুরু হয়েছে।
শিল্পাঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতিও অনেকটাই স্বাভাবিক বলে জানিয়েছে শিল্প পুলিশ।
শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম শনিবার সকালে এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, আজ শিল্পাঞ্চলের কোথাও কোনো সড়ক অবরোধসহ কারখানায় হামলা বা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি অনেক স্বাভাবিক রয়েছে।
পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা মোতাবেক বন্ধ থাকা ৮৬টি কারখানার মধ্যে ৫০টি খুলেছে। আর সাধারণ ছুটি ঘোষণা হওয়া বাকি ১৩৩টি কারখানার মধ্যে বেশির ভাগ কারখানাই আজ খোলা রয়েছে। শুধু ১৩টি কারখানায় এখনও সাধারণ ছুটি রয়েছে।
তিনি আরও জানান, শিল্পাঞ্চলে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কারখানাগুলোর সামনে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশের বাড়তি সদস্য। এ ছাড়া শিল্পাঞ্চলে যৌথ বাহিনীর টহল অব্যাহত আছে।
আরও পড়ুন:আইএলও কনভেনশনে স্বাক্ষর করার সব শর্ত পূরণ করার অংশ হিসেবে শ্রমিকদের পাওনা যথাযথভাবে মেটানোর জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একই সঙ্গে শ্রমিক-মালিক সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ‘ন্যাশনাল বিজনেস ডায়ালগ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এই আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা জেনেভা কনভেনশনে যোগ দিতে পারিনি। এটা বহুদিন পড়ে আছে। শ্রমিক, মালিক, সরকার- সবাই যখন একটি টিম হলাম তখন ওটাও আমরা করে ফেলব।
‘ওটা না করলে সামনে এগুনো কষ্টকর হবে। যেখানেই যাবেন এটা বাধা দেবে। বলবে- তোমরা শ্রমিকদের যা শর্ত, প্রাপ্য এগুলোতে সই করছো না। কাজেই যদি আমাদের এগুতে হয় পরিষ্কারভাবে হতে হবে।’
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের সাহস দেন, এগিয়ে আসেন; আমরা সবাই মিলে আইএলও কনভেনশনে স্বাক্ষর করে ফেলি। আমার একটা বড় আশা, যে মেয়াদকাল আমরা এখানে থাকব, শ্রমিক-মালিক সম্পর্কটা সুন্দরভাবে গড়ে তুলব।’
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।
সংলাপে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ডিসিসিআই, এমসিসিআই, এফআইসিসিআই, বিএবি, বিকেএমইএ, বাংলাদেশ চেম্বার অফ ইন্ডাস্ট্রিজের মতো সংগঠনের নেতা ও সদস্যরা অংশ নেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য