আজ ২৩ জুন। ১৯৪৯ সালে এদিনে পুরান ঢাকার টিকাটুলীর কেএম দাস লেন রোডের রোজ গার্ডেন প্যালেসে দুদিনব্যাপী একটি সংগঠনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২৪ তারিখ সম্মেলন শেষে জন্ম নেয় একটি নতুন রাজনৈতিক দলের। নামকরণ করা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ । কেউ তখন ভাবতে পারেনি এই সংগঠনটি পাকিস্তান নামক সদ্য প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের পতন ঘটিয়ে পূর্ব বাংলার জনগণের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ইতিহাসের প্রধান রাজনৈতিক দলে পরিণত হবে এবং দলটির নেতৃত্বে একটি মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত করার মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠিত হবে। স্বাধীনতার পর রাজনৈতিক নানা উত্থান পতনের মধ্য দিয়েও দলটি বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নিরন্তর সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান করছে। আজ সেই দলের ৭৩ বছরপূর্তি।
ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে যে দলটির জন্ম সেই দলটি ইতিহাসের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এই গৌরবোজ্জ্বল রাজনৈতিক দলটির নাম এখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। উপমহাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে আওয়ামী লীগ শুধু অন্যতম পুরাতন রাজনৈতিক দলই নয়, একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার সংগ্রামে লড়াইরত প্রতিষ্ঠানও। সেকারণে এই দলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের ইতিহাস। বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে আওয়ামী লীগ থেকে আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগকেও বাংলাদেশ রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন করার কোনো সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগ ইতিহাসের প্রয়োজনীয়তাকে উপলব্ধি শুধু করেনি, বাস্তবায়ন ঘটাতে রাজনৈতিক সব ঝুঁকি, বিপদ, কষ্ট, নির্যাতন, সহ্য করে ক্রমাগত বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান করেছে। অবশেষে ১৯৭১ সালে সফল হয়েছে। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশকে একটি আধুনিক রাষ্ট্রের আদর্শে পুনর্গঠন করার জন্য দলটি একইভাবে নিরন্তর লড়াই ও কাজ করে চলছে। এখানেই এই রাজনৈতিক দলের বিশেষত্ব। দলটির প্রয়োজনীয়তা তাই আদৌ ফুরিয়ে যায়নি। বরং অধিকতর গুরুত্ব বেড়েই চলছে।
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত উপমহাদেশ দ্বিখণ্ডিত হয়ে পাকিস্তান নামক যে রাষ্ট্রটি জন্ম নেয় তার পূর্বাঞ্চলে পূর্ব বাংলাকে যুক্ত করা হয়েছিল। সাম্প্রদায়িকতার জটিল রাজনৈতিক কূটচালের শিকার হলো পূর্ব বাংলার জনগণ। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান জনগণ ধরে নিয়েছিল যে পাকিস্তান রাষ্ট্রে তাদের সুখ শান্তি অবারিত হবে। ধর্মের পরিচয়ে অন্য একটি বড় জনগোষ্ঠী পাকিস্তানে সংখ্যালঘুতে পরিণত হলো। ভারত প্রজাতন্ত্রেও অনুরূপ সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘুতে নাগরিকরা পরিচিত হওয়ার বাস্তবতায় পড়ে গেল। পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলের জনগণ ভাষার প্রশ্নে রাষ্ট্রের বৈরী আচরণের মুখে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই পড়ে । উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার কথা আগে থেকেই উচ্চারিত হতে থাকে। তখনই ধীরে নতুন এই রাষ্ট্রের চরিত্র উন্মোচিত হতে থাকে। পাকিস্তান পূর্ব বাংলার জনগণের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক অধিকারকে রক্ষার পরিবর্তে বিলুপ্তির দিকে অগ্রসর হতে থাকে। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার জনগণের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ এবং দৃষ্টিভঙ্গি শুরু থেকেই প্রকাশ করতে থাকে। এর ফলে পূর্ব বাংলার জনগণের অধিকার রক্ষার তাগিদ থেকে সচেতন তরুণ এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা ধীরে ধীরে সংগঠন গড়ে তোলার পথে অগ্রসর হতে থাক। অথচ এই তরুণ এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীরাই কয়েকমাস আগেও পাকিস্তানকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন অচিরেই ভেঙে যায় । সেখান থেকেই ১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর তারিখে পাকিস্তান আন্দোলনে পুরোভাগের যুবকর্মীরা ঢাকায় অনুষ্ঠিত পূর্ব বাংলা কর্মী সম্মেলনে মিলিত হয়ে গণতান্ত্রিক যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। শামসুল হক এই সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হন। এই সংগঠনের সঙ্গে তরুণ কমরুদ্দিন আহাম্মদ, শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদ, শামসুদ্দিন আহাম্মদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, নুরুদ্দিন আহম্মদ, আবদুল ওদুদ প্রমুখ জড়িত ছিলেন। এরপর আরও কয়েকটি সংগঠন ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে থাকে।
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি শেখ মুজিবকে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফজলুল হক হল মিলনায়তনে এক সভায় ‘নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগ’ সংগঠনটি ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’ নামে পুনর্গঠিত হয়। পূর্ব বাংলায় তখন থেকে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় তরুণ ও যুবসমাজ, ভাষা আন্দোলন এবং অন্যান্য আন্দোলন গড়ে তুলতে থাকে। ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানের স্বৈরতান্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে রাজনীতির একটি মেরুকরণ সংগঠিত হতে থাকে। সরকার এই শক্তি দমনে সর্বাত্মক শক্তি প্রয়োগ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের একটি আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান করতে গিয়ে ১৯৪৯ সালের ১৯ মার্চ শেখ মুজিবসহ কজনকে গ্রেপ্তার করে। এরপর ২৬ এপ্রিলে টাঙ্গাইল উপনির্বাচনে খুররম খান পন্নীর বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক যুবলীগের প্রার্থী সভাপতি শামসুল হক বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। মুসলিম লীগের প্রথম পরাজয় দৃশ্যমান হয়। জয় পরাজয়ের এই অবস্থান থেকেই বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের প্রগতিশীল অংশের নেতৃবৃন্দ নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের লক্ষ্যে অগ্রসর হন। কলকাতায় অবস্থানরত সোহরাওয়ার্দী নতুন এই রাজনৈতিক সম্ভাবনার পক্ষে অবস্থান নেন। এরই মধ্যে ১৫০ মোগলটুলির শওকত আলীর বাসভবনকে কেন্দ্র করে পূর্ববঙ্গ কর্মী শিবির গড়ে ওঠে। জেলে অবস্থানকারী শেখ মুজিবুর রহমানও এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এর একটি সাংগঠনিক কমিটিও গঠিত হয়। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি এবং ইয়ার মুহম্মদ খানকে সম্পাদক করে এই কমিটি প্রাথমিকভাবে তৈরি হয়। এই কর্মী শিবিরই ২৩ ও ২৪ জুন রোজ গার্ডেনে দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে প্রদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বেশ কিছু নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সম্মেলনে উপস্থিত থাকেন। ২৪ তারিখ মওলানা ভাসানীকে সভাপতি, আতাউর রহমানসহ কয়েকজন সহসভাপতি, শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক, শেখ মুজিবকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ইয়ার মোহম্মদ খানকে কোষাধ্যক্ষ পদে নির্বাচিত করা হয়। আওয়ামী লীগ গঠনের সঙ্গে তখন তাজউদ্দীন আহমেদ, শওকত আলী, আনোয়ারা খাতুন, ফজলুল কাদের চৌধুরী, আবদুল জব্বার খদ্দর, মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ, আলী আমজাদ খান, শামসুদ্দীন আহমদ (কুষ্টিয়া), ইয়ার মুহম্মদ খান, মাওলানা শামসুল হক, মাওলানা এয়াকুব শরীফ, আবদুর রশিদ প্রমুখ যুক্ত ছিলেন। নবগঠিত দলের কর্মসূচি হিসেবে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন, বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা, গণতন্ত্র ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ৪২টি দাবি গ্রহণ করা হয়। ২৬ জুন তারিখ শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান। আওয়ামী লীগ সংগঠন গড়ে তোলার প্রস্তুতি গ্রহণ করলে দলটির ওপর সরকারি নির্যাতন শুরু হয়। মওলানা ভাসানী, শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেকেই বিভিন্ন মামলায় কারাভোগ করেন। সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক সরকারি নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে শেখ মুজিবুর রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এবং আতাউর রহমান সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৩ সালে দলের দ্বিতীয় সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ভাসানী সভাপতি পদে পুনর্নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালের ডিসেম্বরে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। ১৯৫৪ সালের ৮-১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। আওয়ামী লীগ এককভাবে ১৪৩টি আসন পায়। আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা তখন অন্য সব দলকে ছাড়িয়ে যায় কয়েকগুণ। ১৯৫৫ সালে অনুষ্ঠিত দলের ৩য় সম্মেলনে আওয়ামী লীগকে অসাম্প্রদায়িক আদর্শের রাজনৈতিক দলে পরিণত করা হয়। এরপরে ১৯৫৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত কাগমারী সম্মেলনে আওয়ামী লীগকে ত্যাগ করে মওলানা ভাসানীসহ বেশ কিছু নেতাকর্মী ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গঠনের উদ্যোগ নেন। জুলাইয়ে ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাপ গঠিত হয়। আওয়ামী লীগ তখন কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক সরকারের দায়িত্ব পালন করছিল। কিন্তু এই বিভাজনটি পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের রাজনৈতিক আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
১৯৫৮ সালে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে এবং আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ৬০-এর দশকে আইয়ুবের মৌলিক গণতন্ত্র ও প্রসিডেন্ট নির্বাচনের বিরুদ্ধে বৃহত্তর জোট গঠন করে। তবে ১৯৬৫-এর পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের পর ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিব ৬ দফা পেশ এবং মার্চে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ৬ দফা গ্রহণ, শেখ মুজিবকে সভাপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে সাধারণ সম্পাদক করে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠনের পর ৬ দফা আন্দোলন সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়া হয়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জেলে আটক রাখার পরও আন্দোলন দুর্বল করা যায়নি।
সরকার আওয়ামী লীগ ভাঙার চেষ্টা করলে সেটিও ব্যর্থ হয়। এরপর ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিবকে ১ নম্বর আসামি করে একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা হয়। ১৯৬৮ সালের শেষদিকে এই মামলার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও ছাত্র ঐক্য গড়ে ওঠে। ফলে ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হয় সেকারণে সরকার বাধ্য হয় মামলা প্রত্যাহার করে রাজবন্দিদের মুক্তি প্রদান করতে। এর মধ্য দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন। পাকিস্তানের রাজনীতিতে শেখ মুজিব এবং পূর্ব বাংলা তখন পশ্চিম পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের নিয়ামক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। কিন্তু ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ষড়যন্ত্র থেকেই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ও ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইটের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়। আওয়ামী লীগ সফলভাবে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদান করে এবং পাকিস্তানিদের পরাজিত করে। বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়।
বঙ্গবন্ধু স্বাধীন দেশ পুনর্গঠনে সফলভাবে নেতৃত্ব প্রদান করছিলেন। কিন্তু দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড, ক্ষমতা দখল, জেলের অভ্যন্তরে চার জাতীয় নেতাকে হত্যা এবং পুরোপুরি সামরিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশকে পাকিস্তানি ধারায় ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগ ভেঙে দেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করার পথে হাঁটছিলেন। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনাকে দলের সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। তিনি ৬ বছর পর দেশে ফিরে আসেন এবং আওয়ামী লীগের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেই সময় সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান অভ্যুত্থানে নিহত হলে দেশের রাজনীতিতে ঘোলাটে পরিস্থিতি তৈরি হয়। এরপর সামরিক বাহিনীর প্রধান এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং দেশে পুনরায় সামরিক শাসন জারি হয়।
১৯৯০ সালে সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে নির্বাচনের পথে দেশকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের বিশেষ ভূমিকা ছিল। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায়। আওয়ামী লীগকে নানা ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করতে হয়।
সর্বশেষ ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। শেখ হাসিনা সরকার গঠন এবং বাংলাদেশকে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে পরিবর্তনের রূপরেখা বাস্তবায়ন শুরু করেন। এই সময়ে দেশ বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে, ডিজিটাল হওয়ার সুযোগ পায়, ৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হয়, দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক সুরক্ষার নানা প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে থাকে। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পদার্পণ করে।
২০২১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করে। আগামী ২৫ জুন পদ্মা মহাসেতু উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এ সবই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মিশনারি ভিশনারি নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ অর্জন করতে পেরেছে। বঙ্গবন্ধু মেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে, তার কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল এবং আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। ৭৩ বছরে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশকে স্বাধীনতা, উন্নয়ন, আত্মমর্যাদা, গৌরবময় অহংকারের অনেক কিছু দিতে পেরেছে।
লেখক: গবেষক, অধ্যাপক।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, জুলাই সনদ স্বাক্ষর হওয়ার পর দেশে নির্বাচন নিয়ে আর কোন সমস্যা নেই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে বলে বিএনপি প্রত্যাশা করে।
শনিবার বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গা শহরের বড় বাজার এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করা প্রসঙ্গে দুদু বলেন, সবার গণতান্ত্রিক অধিকার আছে। সকলের ভিন্নমত পোষনের সুযোগ আছে। যেসব দল ভিন্নমত পোষণ করে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যায়নি আমাদের ধারণা তারা ভবিষ্যতে স্বাক্ষর করবে। কেননা, প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছেন, যেসব দল স্বাক্ষর করেনি, তাদের জন্য ভবিষ্যতেও সুযোগ আছে।
বিএনপি সরকার গঠন করলে ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়ন করে দেশের উন্নয়ন গতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হবে বলেও মন্তব্য করেন শামসুজ্জামান দুদু।
নির্বাচনী প্রচারণায় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাড. ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. শামীম রেজা ডালিম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক এম এ তালহাসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আহত ও শহীদ পরিবারের প্রতি অসম্মান করা হয়েছে অভিযোগ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, শহীদ পরিবার অনুষ্ঠানে প্রাপ্য সম্মান পাননি বরং প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে উচ্চবাচ্য করা হয়েছে।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
আখতার হোসেন বলেন, শহীদ পরিবাররাই জুলাই সনদ আয়োজনের মূল আকর্ষণ হলেও, তাদের মঞ্চ থেকে দূরে সরিয়ে বসিয়ে অমর্যাদা করা হয়েছে। আহতদের ওপর হামলা চালিয়ে এবং অসম্মান করে জুলাই সনদকে ‘পাওয়ার এলিট’-এর সেটেলমেন্ট বানানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শুক্রবার জুলাইয়ের শহীদ পরিবার ও আহতরা কিছু দাবি নিয়ে অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ঐক্যবদ্ধ কমিশন জুলাই সনদের অঙ্গীকারের পঞ্চম দফা সংশোধনের ঘোষণা দিলেও, শুরুতে যদি বিষয়টি আমলে নেওয়া হতো তাহলে তাদের রাজপথে নামতে হতো না।
তিনি বলেন, সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধান না করে আহত যোদ্ধাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি করছি।
এনসিপি সদস্য সচিব আরও বলেন, জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি ও বৈধতা নিশ্চিত না করেই এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জাতিকে পরিষ্কার ধারণা না দিয়েই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছে। জুলাই সনদের কোনো আইনভিত্তি না দেওয়া, বাস্তবায়ন আদেশ প্রকাশ না করা এবং পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা জাতির সামনে না আনার কারণে আমরা আনুষ্ঠানিকতার জন্য স্বাক্ষর থেকে বিরত থেকেছি।
তিনি বলেন, এনসিপি প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ৭২ সালের বন্দোবস্ত বিলোপ করে নতুন সাংবিধানিক অগ্রযাত্রায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে। বিচার সংস্কারের অংশ হিসেবে জুলাই সনদ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দাবিতে সারাদেশে ‘জুলাই পথযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করেছে এনসিপি। রাজধানী থেকে তৃণমূল পর্যন্ত জনগণ এই দাবিতে এনসিপিকে দৃঢ় সমর্থন দিয়েছে। একই সঙ্গে আমরা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কারে জোরালো ভূমিকা রেখেছি।
আখতার হোসেন বলেন, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে জাতিকে ধোঁয়াশায় রাখা হয়েছে। সনদের আইনিভিত্তি হিসেবে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ’-এর উল্লেখ নেই। আমরা বলেছি, অভ্যুত্থান-পরবর্তী যেকোনো বন্দোবস্তের নৈতিক ও আইনিভিত্তি থাকতে হবে। কিন্তু সনদে জনগণের সার্বভৌম ও গাঠনিক ক্ষমতার প্রকৃত মৌলিক সত্যের কোনো উল্লেখ নেই।
তিনি আরও বলেন, জুলাই সনদের আওতাভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলো সংবিধানের এমন কিছু অনুচ্ছেদ পরিবর্তনের বিষয়ে সম্মত হয়েছে, যা বিদ্যমান সংবিধানের তথাকথিত বেসিক স্ট্রাকচারের আওতাভুক্ত। ফলে ৭২ সালের সাংবিধানিক কাঠামোর অধীনে থেকে এই পরিবর্তনগুলো ভবিষ্যতে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। এতে জুলাই সনদ জনগণের সঙ্গে একটি সাংবিধানিক প্রতারণায় পরিণত হবে।
এ কারণে এনসিপি সরকারপ্রধান ড. ইউনূসকে গণভোটের পূর্বে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ’ জারির আহ্বান জানিয়েছে—যাতে এর আইনভিত্তি, বৈধতা ও জুলাই অবস্থান স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে।
শেষে আখতার হোসেন বলেন, জুলাই সনদের আইনিভিত্তি নিয়ে আগামী কয়েকদিনের আলোচনায় আমরা জনগণের পাশে থাকব। কোনো অবস্থাতেই জুলাই সনদকে জুলাই ঘোষণাপত্রের মতো আইনিভিত্তিহীন রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল বা ‘জেন্টলম্যানস অ্যাগ্রিমেন্টে’ পরিণত করা যাবে না। আমরা আশা করছি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের ইচ্ছাকে ধারণ করে জুলাই সনদের আইনিভিত্তি ও বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
যুব ও নারী সমাজ ইসলামকে দারুণভাবে ধারণ করছে উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ঢাকসু, জাকসু ও চাকসুতে যুব সমাজ ছাত্রশিবিরের ওপর আস্থা রেখেছে। সব জায়গায় একই চিত্র। মেয়েদের ও তরুণদের আস্থা ছাত্রশিবিরের ওপর। আজ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হচ্ছে। এর প্রতিচ্ছবি জাতি আগামীতে দেখবে ইনশাআল্লাহ।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত ঢাকা-১৫ নির্বাচনী আসনের এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি ইসলামের ইতিহাসে নারীদের ভূমিকা ও অবদানের কথা তুলে ধরেন বক্তব্যজুড়ে।
জামায়াত আমির বলেন, ‘আমরা অভিভূত হয়ে লক্ষ্য করছি, দুটো সমাজ ইসলামকে দারুণভাবে ধারণ করছে—একটি আমাদের যুবসমাজ, আরেকটি আমাদের মায়েদের সমাজ। আজ পর্যন্ত তিনটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন হয়ে গেছে। সব জায়গায় একই চিত্র—মেয়েদের আস্থা ছাত্রশিবিরের ওপর; তরুণদের আস্থা ছাত্রশিবিরের ওপর। এরই প্রতিচ্ছবি আগামীতে বাংলাদেশ দেখবে।’
জামায়াতের আমির বলেন, ‘৯১ শতাংশ মুসলমানের দেশে আমাদের মায়েদের সম্মান ঘরে-বাইরে কোথাও নেই। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আল্লাহর কোরআন এবং রাসূলের জীবনী থেকে সেই শিক্ষা নিয়েছে যে আমাদের মায়ের জাতিকে মায়ের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে হবে। এই রাষ্ট্রে বাস্তব প্রয়োজনে এবং যোগ্যতা অনুযায়ী পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও রাষ্ট্র গঠনে অবদান রাখবেন।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘ইমান, ধর্মবিশ্বাস—এসবের হিসাব নেওয়ার দায়িত্ব আমাদের নয়। আমরা এই রাষ্ট্রের মানুষকে সম্মান করব। তারা এ দেশের নাগরিক। আমরা দেখব না সে কোন ধর্মের, কোন দলের, তার গায়ের রং কী, মুখের ভাষা কী, সে পাহাড়ে থাকে নাকি সমতলে থাকে। সে আমার ভাই, সে আমার বোন, সে এই দেশের নাগরিক—সেই হিসেবে আমরা তাদেরকে পরিচালনা করব।’
শফিকুর রহমান আরও বলেন, ‘আমাদের অনেকগুলো প্রাধান্য আছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আছে। এ দেশের অর্থনীতি ভাঙাচোরা, উল্টে পড়া, ধসে যাওয়া। দুর্নীতিগ্রস্ত লোকদের হাত থেকে দেশকে উদ্ধার করে প্রকৃত সেবকদের হাতে তুলে দিতে হবে। সেই লোকটা আমাদের দলের হতে পারে, না-ও হতে পারে। সেই লোকটা মুসলমান হতে পারে, অন্য ধর্মেরও হতে পারে। যে এই দায়িত্বের জন্য উপযুক্ত, তার হাতে এই দায়িত্বের চাবি তুলে দেওয়া হবে। এমন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ আমরা গড়ে তুলতে চাই।’
জামায়াতের আমির বলেন, আমরা এমন একটি সমাজ চাইছি, যেখানে শাসকেরা জনগণের কাছে তাদের ত্রুটি ও ঘাটতির জন্য মাফ চাইবে। তারা কারও কাছ থেকে প্রশংসা চাইবে না, বাহবা চাইবে না, কোনো স্লোগান চাইবে না, যেমন “অমুক ভাই, তমুক ভাই জিন্দাবাদ”—এটা চাইবে না। তাদের অন্তর ভয়ে কাঁপবে, জনগণের এই বোঝা “আমার কাঁধে যেটা দেওয়া হয়েছে, আমি তা বহন করতে পারছি কি না”—এই ভেবে।
তিনি বলেন, যে সমাজে যুব সমাজ সিদ্ধান্ত নেয় এবং নারীরা এগিয়ে আসে, সেই সমাজ ও জাতি কখনো পরিবর্তন না হয়ে পারে না।
তিনি জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গীকার তুলে ধরে বলেন, আমাদের প্রথম অঙ্গীকার, একটি সুন্দর ও সুশৃঙ্খল শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলবো। শিক্ষা ভালো না হলে জাতি কখনো ভালো হতে পারে না। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড।
দ্বিতীয়ত, সমাজের প্রত্যেকটি স্তরে দুর্নীতি বাসা গেঁড়ে বসে আছে। এই দুর্নীতি থাকবে না। এজন্য যত ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, করবো ইনশাআল্লাহ। লড়াই করবো, হিমালয়ের মতো পর্বত সমান বাধা আসলেও দুর্নীতির অস্তিত্ব যেন আসমান থেকে মাটিতে নামিয়ে আনতে পারি।
তৃতীয়ত, প্রত্যেকটি মানুষ যেন তার প্রাপ্ত হক বা ন্যায়বিচার পান, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এজন্য যেন আবাল-বৃদ্ধ, বনিতা, নারী ও শিশু কাউকে চেষ্টা করতে না হয়।
জাতীয় নির্বাচন এবং গণভোট একসঙ্গে করার বিষয়ে আবারও জোরালো মত দিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
গতকাল বুধবার নয়াপল্টনে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। কারণ গণভোট আগে হলে জাতীয় নির্বাচনে বিলম্ব হবে। আর জনগণের নির্বাচিত সরকার দ্রুত না এলে সংকট আরো ঘনীভূত হবে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই সিনিয়র নেতা।
তিনি বলেন, আমি মনে করি যে যারা গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন, তারা সবাই এমন এক জায়গায় উপনীত হবেন যাতে আমাদের পরবর্তী গণতন্ত্রের অভিযাত্রার পথে আমাদের যেন বিঘ্ন না ঘটে। তা না হলে কালো ঘোড়া প্রবেশ করতে পারে, কালো ঘোড়া ঢুকে যেতে পারে।
রিজভী বলেন, উন্নত দেশ দীর্ঘদিনের গণতন্ত্র চর্চার দেশেও এখন কথা উঠেছে, এই পদ্ধতিতে (পিআর) জনমতের ট্রু রিফ্লেকশন হয় না। এ নিয়ে সেইসব দেশে আলাপ-আলোচনা, বির্তক চলছে। আপনি জানেন যে, জাপান গণতন্ত্রের দিক থেকে অতি উন্নত একটি দেশ এবং সেখানেও ৩৭ শতাংশ পিআর পদ্ধতি চালু আছে। যেখানে সারাবিশ্বেই পিআর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে, কোথাও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়িত হয়নি, সেখানে হঠাৎ করে আমাদের এখানে কেনো চালু করতে চাইবেন?
তিনি বলেন, আমরা মনে করি, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে আপনি হঠাৎ করে পিআরের কথা বলেন, এতে জনমনে বিভ্রান্ত তৈরি করবে। আমি এ পর্যন্ত যত জরিপ দেখেছি, বিশেষ করে গণমাধ্যমে- সেখানে অধিকাংশ মানুষের আনুপাতিক হারে ভোট পদ্ধতি সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। অনেকেই কনফিউজড অবস্থায় আছেন।
বিএনপির সিনিয়র এ নেতা বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ গণতান্ত্রিক দেশ যেগুলো অতি উন্নত গণতান্ত্রিক দেশ যেমন ব্রিটেন, আমেরিকা যদি আমরা বলি বা আরও অন্য দেশে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে পদ্ধতিটা চালু আছে- সরাসরি প্রার্থীকে ভোট দেওয়া। আমাদের এখানে কী এমন ঘটনা ঘটলো যে পিআর উৎকৃষ্ট গণতন্ত্রের মডেল? এটা আমার মনে হয়, অবান্তর কথা তারা (জামায়াতে ইসলামী) বলছেন। এটা বলে একটা বিভ্রান্তি তৈরি করছেন অথবা তাদের অন্য কোনো মাস্টার প্ল্যান আছে কি না আমি জানি না।
আইনি ভিত্তি ছাড়া জুলাই সনদে সই করবে না বলে জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর বাংলামোটরে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আইনি ভিত্তি ছাড়া কোনো নাটকীয়তায় অংশ নেবে না এনসিপি।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান কোনো ক্ষমতা পরিবর্তনের জন্য হয়নি। বরং একটি ফ্যাসিবাদী কাঠামো সংস্কারের জন্য হয়েছিল। সেই সূত্র ধরেই আমরা একটি নতুন বাংলাদেশের কথা বলেছিলাম।’
এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ সনদ স্বাক্ষরের আগেই প্রকাশ করতে হবে। জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়কে প্রাধান্য দিয়ে এ আদেশ প্রধান উপদেষ্টা জারি করবেন।’
তিনি বলেন, ‘স্বাক্ষরের আগেই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়ায় দলগুলোর ঐক্যমত হতে হবে। এর ওপর ভিত্তি করেই আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষরের বিষয়টা বিবেচনা করব। আদেশের টেক্সটের খসড়া আমরা আগে দেখতে চাই। প্রধান উপদেষ্টা যেহেতু জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শক্তিতে সরকার গঠন করেছেন, সেই জায়গা থেকে সেটা প্রেসিডেন্ট নয় বরং সরকার প্রধান হিসেবে তিনি সেটি জারি করবেন।’
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘গণভোট দ্বারা জনগণ সনদের পক্ষে ভোট দিলে পরের সংসদকে কনস্টিটিউট পাওয়ার দেওয়া হবে। সনদ অনুযায়ী সংবিধান সংস্কার করতে এই দাবির সঙ্গে মোটামুটি সবাই একমত। এটার সংশোধনী হবে কিনা আমাদের কাছে কিন্তু তা এখনও স্পষ্ট হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদে ৮৪টি সংস্কারের বিষয়ে গণভোট হবে। এতে নোট অব ডিসেন্টের আলাদা কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। গণভোটের প্রশ্ন কি হবে তা আগেই চূড়ান্ত করতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব ও আহ্বায়ক জাবেদ রাসিনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এসএম জিলানী বলেছেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের দল, মুক্তিযোদ্ধাদের দল। আমরা এই আদর্শকে ধারণ করি, লালন করি। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাক হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালীদের ওপর ঝাপিয়ে পড়েছিল, গণহত্যা চালিয়েছিল তখন একজন দেশপ্রেমিক সেনা অফিসার শহীদ জিয়াউর রহমান পাকিস্তানীদের এই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি বিদ্রোহ ঘোষণা করলাম পাকিস্তান সরকারের সাথে। আমি বিদ্রোহ ঘোষণা করলাম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে। বাংলাদেশ যদি স্বাধীন না হতো তাহলে কোর্ট মার্শালে জিয়াউর রহমানের ফাঁসি হতো এই বিদ্রোহ ঘোষণার কারণে। নিশ্চিত ফাঁসি জেনেও তিনি দেশ মাতৃকার জন্য বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার কাজি মন্টু কলেজ মাঠে আয়োজিত ‘সম্প্রীতি সমাবেশ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে এসএম জিলানী বলেন, ইতিহাস থেকে জেনেছি, যখন কোনো দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয় তখন সেই দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক দলের নেতা সে দেশের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে থাকেন। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে থাকেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য ছিল বাংলাদেশের মানুষের। কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা সেদিন স্বাধীনতার ঘোষণা দেন নাই। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ সেদিন দিকবেদিক নেতৃত্ব শূণ্যতায় ছিল। জিয়াউর রহমান অপেক্ষায় ছিলেন হয়তো স্বাধীনতার ঘোষণা কেউ দিবে। কিন্তু কোন রাজনৈতিক দলের নেতা যখন স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন না। জিয়াউর রহমান উপলব্ধি করলেন যদি স্বাধীনতার ঘোষণা না দেই তাহলে বাংলাদেশর মানুষ ঐক্যবদ্ধ হবে না। আর যদি বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ না হয় তাহলে স্বাধীনতা যুদ্ধে আমরা বিজয়ী হতে পারব না।
সমাবেশে কোটালীপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এস এম মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব কাজী আবুল খায়ের। অন্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন কোটালীপাড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল বশার হাওলাদার, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অলিউর রহমান হাওলাদার, মুক্তিযোদ্ধা মোদাচ্ছের ঠাকুরসহ জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নের সিনিয়র নেতারা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এখন চলছে ভোট গণনার প্রস্তুতি। এ নির্বাচনে ভোট হয়েছে ব্যালট পেপারে। গণনা হচ্ছে ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিডার) পদ্ধতিতে। ভোট গণনা সরাসরি দেখানো হবে এলইডি স্ক্রিনের মাধ্যমে। এজন্য রয়েছে ১৪টি এলইডি স্ক্রিন।
চাকসু নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, চাকসু নির্বাচনে হাতে লাগানো অমোচনীয় কালি উঠে যাওয়াসহ বিচ্ছিন্ন কিছু অভিযোগ ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ হয়েছে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৬০ শতাংশ ভোট পড়েছে।
উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, খুবই শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আগ্রহ-উদ্দীপনা দেখে সত্যি ভালো লাগছে। আমাদের পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সিভিল প্রশাসনের লোকবল রয়েছে। ক্যাম্পাসকে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা হয়েছে।
মন্তব্য