সামনে মেডিটেরেনিয়ান সাগর। নীল জলরাশি। চারপাশে নানা দেশের, নানা বয়সী মানুষ। ছানাপোনারা দৌড়ে বেড়াচ্ছে, বালির প্রাসাদ গড়ছে-ভাঙছে-গড়ছে। কোথাও চলছে বিচ ভলিবল, কোথাও সানগ্লাস চোখে স্রেফ বসে থাকা। জলের কাছে ফেরার উৎসব। রোদ পোহানোর উৎসব। এমন আনন্দযজ্ঞে বসে কবিতা লিখতে পারলে বেশ হতো। কিন্তু ভাবনায় ফেলে দিলো ছোট্ট দুই ভাইবোন, জেরেমি আর জেসেমি। এরা বেশ অনেকক্ষণ আমার কাছাকাছি বসেই খেলছে। কী খেলছে, কী করছে তেমন খেয়াল করে দেখিও নি। সমস্ত মনোযোগ নিয়ে ঘুরে তাকালাম আসলে একটা মাত্র কথা শুনে। ‘চিকো সালভারা আ চিকা’। ‘বয় সেভস দ্য গার্ল’। ‘ছেলেরাই মেয়েদেরকে উদ্ধার করে’।
দুই ভাইবোনের ঝগড়া তখন তুঙ্গে। জেসেমি ছোট বোন। তার এক দফা, এক দাবি: তার পুতুলকে উদ্ধার অভিযানে যেতে দিতে হবে। কেন? কারণ দুইবার তার পুতুল বালির প্রাসাদে বন্দী ছিল, বড় ভাই জেরেমির পুতুল তাকে উদ্ধার করেছে। আর দশ বছর বয়সী জেরেমির সহজ, স্বাভাবিক (!) উত্তর, ‘ছেলেরাই মেয়েদেরকে উদ্ধার করে।’ ভেবে দেখলাম, জেরেমির উত্তরের পক্ষে রেফারেন্সও আছে অনেক। আমাদের রাজপুত্র থেকে শুরু করে জেমস বন্ডরা যুগ যুগ ধরে রাজকন্যা এবং বন্ডগার্লদের উদ্ধার করে আসছে। জেরেমির হাতে ধরা স্পাইডারম্যানের অ্যাকশন ফিগার। সে বেচারাকে আমি নিজেই ২০০২ থেকে নায়িকা উদ্ধারে নিয়োজিত দেখছি, জেরেমির আর কী দোষ!
২
‘উদ্ধারের অপেক্ষায় থাকা’ এই নারী চরিত্রের প্রয়োজন কেন? কারণ এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় পুরুষের বীরত্ব, তার ভালোমানুষি। অর্থাৎ নারী চরিত্রের উপস্থিতি শুধুমাত্র পুরুষ চরিত্রটির গল্প বলবার জন্যই। ভিজ্যুয়াল মিডিয়ায় নারী মানেই সে নায়কের প্রেমিকা, স্ত্রী, মা, বোন বা স্রেফ ‘সাইড কিক’। নায়কের সাথে নারীর সম্পর্ক, নায়কের চোখে নারীর যে রূপ তা-ই সেসব চরিত্রের একমাত্র পরিচায়ক। আবার প্রায়ই গল্পে কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা না থাকার পরও ভীষণ সুন্দরী নায়িকারা পর্দায় আসেন। হাইহিল আর ঝাঁ-চকচকে পোশাকের নায়িকারা যখন হেঁটে যান, ক্যামেরা তার পা থেকে প্যান করে কপাল পর্যন্ত উঠে যায়। এই পরিবেশনা কতটা বাস্তব বা রুচিসম্মত সেই আলোচনা করা হয় না, কেননা পর্দার ‘অর্নামেন্টেশনের’ জন্য আকর্ষণীয় নায়িকার উপস্থিতি প্রয়োজন।
এই প্রথার বিশ্লেষণে পঞ্চাশের দশকের নির্মাতা বাড বয়েট্টিচার বলে গিয়েছেন, ‘পর্দায় নারীর উপস্থিতি প্রয়োজন, কেননা তারাই পুরুষ চরিত্রটির মধ্যে প্রেম, যৌন অনুভূতি বা ভয় জাগাবে। পর্দার সেই নারী চরিত্রটির জন্য নায়ক যা অনুভব করে, সেটিই তো দর্শক অনুভব করবে।’
আরও পরে ১৯৭৫ সালে চলচ্চিত্র নির্মাতা ও গবেষক লরা মালভিও লিখলেন সিনেমায় ‘মেল গেজ’-এর প্রাবল্যের কথা। মালভির মতে, মেল গেজ বা পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি পর্দায় নারীদেরকে ‘সেক্সুয়াল অবজেক্ট’ হিসেবে তুলে ধরে। নারীকে ‘সেক্স সিম্বল’ হিসেবে দেখতে গিয়ে এই মেল গেইজ তাকে আর ‘চরিত্র’ হিসেবে দেখতে পায় না। ফলে সৌন্দর্য, যৌন আবেদনময়তার বাইরে তার চরিত্রের আর কোনো দিকই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে না।
বিষয়টিকে আরও সহজ করে বুঝিয়ে বলেছেন প্রযোজক ও পরিচালক ড্যানিয়েল পালাডিনো। পালাডিনো বললেন, ‘আপনার সিনেমার কোনো দৃশ্যে আপনি একটি চেয়ার ব্যবহার করলেন। এর কারণ হতে পারে দুটো। এক, অভিনেতারা সেটি বসতে, হেলান দিতে বা ছুড়ে ফেলতে ব্যবহার করবে। দুই, অভিনেতারা সেটি ছুঁয়েও দেখবে না। তবে সুন্দর একটি চেয়ারের ব্যবহারের কারণে হয়তো দৃশ্যটি সুন্দর লাগবে। পর্দায় নারীর উপস্থিতি আর চেয়ারের উপস্থিতিতে কোনো পার্থ্যক্য নেই। কেননা পর্দায় নারী মানেই অনুষঙ্গ বা অলংকার।’
কিন্তু এর কারণ কী? ইতিহাস বলে, আমাদের চারপাশের মতো নাট্যজগত, সিনেমাজগত, মিডিয়াও বরাবরই পুরুষতান্ত্রিক। মিডিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ পুরুষের তুলনায় অনেক কম। তাই যুগের পর যুগ আমরা পর্দায় যে নারীদের দেখি, তারা মূলত পুরুষের চোখে দেখা, পুরুষের লেখায় ফুটে ওঠা, পুরুষ দর্শকের জন্য তৈরি নারী চরিত্র। সোজা কথায়, এরা পুরুষ যা দেখতে চায়, সে কথা ভেবে তৈরি নারী চরিত্র। এখানে নারীর বাস্তবতা নেই, নারীর নিজস্ব গল্প নেই। ঠিক যেমনটা পালাডিনো বলেছিলেন, এই নারী চরিত্রদের ব্যাপ্তি ও গভীরতা ততটুকুই। এরা অনুষঙ্গ অথবা অলংকার অথবা দুটোই।
তবে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, লেখক, চিত্রনাট্যকার, পরিচালক, নির্দেশক পুরুষ না নারী, এ বিবেচনা কেন আলোচনায় আসবে? আসত না, আসার কথাও না। সমতায় বিশ্বাসী কোনো মানুষই সিনেমা দেখবার আগে, নাটক দেখবার আগে, বিজ্ঞাপন দেখবার আগে ভেবে দেখবেন না এটি নারী নির্মাতার তৈরি নাকি পুরুষ নির্মাতার। কিন্তু এ কথাও সত্যি যে, নারীরা যখন নারী চরিত্র সৃষ্টি করেন, তারা পুরুষের নির্মিত নারী চরিত্রের তুলনায় অনেক বেশি সংবেদনশীল হয়ে ওঠেন। ঠিক শুনেছেন, আমি বলছি, বেশিরভাগ পুরুষ চিত্রনাট্যকার ও নির্মাতাই নারী চরিত্রের প্রতি সুবিচার করতে পারেন না (চানও না)।
তাই বেলার মতো চরিত্র সৃষ্টি করার জন্য ওয়াল্ট ডিজনি স্টুডিওর একজন লিন্ডা উলভারটনকে প্রয়োজন হয়। লিন্ডা যখন বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট (১৯৯১) এর চিত্রনাট্য লেখেন, বেলা তখন সিন্ডারেলা বা স্নো হোয়াইটের মতো ‘ড্যামসেল ইন ডিস্ট্রেস’ হয়ে যায় না, স্লিপিং বিউটির মতো রাজপুত্রের অপেক্ষায় জীবন কাটানোই তার একমাত্র কাজ হয় না। বেলা বই পড়ে, বেলার নিজস্ব ভাবনার জগতটা আমাদের সামনে আসে। রাজপুত্রের সাথে রোম্যান্টিক সম্পর্কই তার চরিত্রের একমাত্র দিক না। বেলা বাবাকে ভালোবাসে, বাবাকে রক্ষা করতে চায়। বেলা নিজের সুরে বন্ধুদের সাথে গান গায়, গল্প করে; সেই গান বা গল্পের মূল উদ্দেশ্য রাজপুত্রের সন্ধান করা নয়। মোট কথা, বেলা স্রেফ নায়িকা না, একটি পূর্ণাঙ্গ চরিত্র। নায়কের পার্শ্ববর্তী ‘সুন্দর অলংকার’ হওয়া ছাড়াও তার কিছু বলার ছিল।
এখানে বলতেই হয় যে, বেলার স্রষ্টা লিন্ডা উলভারটন ছিলেন অ্যানিমেটেড সিনেমার চিত্রনাট্য লেখা প্রথম নারী। অথচ লিন্ডা চিত্রনাট্য লেখার আরো ষাট বছর আগে থেকে যাত্রা শুরু করেছে ওয়াল্ট ডিজনি পিকচার্স, লিন্ডার বিউটি আন্ড দ্য বিস্ট-এর আগে আরও ১৭৮টি সিনেমা ডিজনি থেকেই প্রযোজিত হয়েছে। তার কোনোটিতেই বেলার মতো নারী চরিত্রের দেখা মেলে না। তারা রাজপুত্রের অপেক্ষায় থাকা সুন্দরী রাজকন্যা হয়েই রয়ে যান।
৩
শুধু ডিজনি কেন, এবার মূলধারার হলিউডে ফিরি। হলিউডে ‘বেচডেল টেস্ট’ নামে ভারী মজার এক পরীক্ষা বেশ জনপ্রিয়। ফিকশনে নারী কীভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে তাই নিয়ে এক কমিক স্ট্রিপ আঁকতে গিয়ে আশির দশকে এই টেস্টের উদ্ভাবন করেন কার্টুনিস্ট অ্যালিসন বেচডেল। নারীকে পুরুষের অনুষঙ্গ নয়, বরং স্বতন্ত্র সত্তা হিসেবে দেখানো হচ্ছে কিনা, তা যাচাই করতে ফিকশনকে তিনটি সহজ শর্ত পূরণ করতে হবে।
এক, ফিকশনে অন্তত দুটি নারী চরিত্র থাকতে হবে।
দুই, এই নারী চরিত্রগুলোর মাঝে কথোপকথনের অন্তত একটি দৃশ্য থাকতে হবে ।
তিন, এই কথোপকথনের বিষয়বস্তু হতে হবে পুরুষ চরিত্রটি ছাড়া অন্য কোনো কিছু।
চলচ্চিত্র গবেষক ম্যাট ড্যানিয়েলসের নেতৃত্বে এই বেচডেল টেস্টের আওতায় আনা হয় ১৯৯৫-২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সবচেয়ে ব্যবসা সফল ২০০টি হলিউডি চলচ্চিত্রকে। ফলাফল প্রকাশিত হয় তিন ধাপে। এক, যে চলচ্চিত্রগুলোর চিত্রনাট্য লেখার টিমে কোনো নারী ছিলেন না, সেগুলোর মধ্যে ৪৭ শতাংশ এই বেচডেল টেস্টে সফল। দুই, যে চলচ্চিত্রগুলোর চিত্রনাট্য লেখার টিমে অন্তত একজন নারী ছিলেন, সেগুলোর মধ্যে ৬২ শতাংশ বেচডেল টেস্ট উতরে যায়। তিন, যে চলচ্চিত্রগুলোর চিত্রনাট্য লেখার টিমে শুধুমাত্র নারীরাই ছিলেন, তার সবগুলো অর্থাৎ ১০০ শতাংশ বেচডেল টেস্টে সফল। ম্যাট ড্যানিয়েলসের এই পরীক্ষাটি একটি সহজ বিষয় স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে। পুরুষদের নিয়ে চিন্তাভাবনা বা কথা বলা ছাড়াও যে নারীদের জগতে অন্য কিছু থাকতে পারে, এই অতি স্বাভাবিক বিষয়টিও হলিউডের বেশিরভাগ পুরুষ চিত্রনাট্যকার বুঝতে চান না বা পারেন না।
৪
বলিউডও ব্যতিক্রম নয়। সেখানে একজন মেঘনা গুলজার যখন সিনেমায় সারোগেসির গল্প বলেন, সৃষ্টি হয় ফিলহাল (২০০২)। সন্তান ধারণ নিয়ে গল্প বলতে এসেও মেঘনা নারী চরিত্রদের স্রেফ মাতৃত্বের তাড়নায় ভুগতে থাকা লিঙ্গ হিসেবে রেখে দেননি। তাদের নিজস্ব গল্প আছে, বন্ধুত্বের বন্ধন আছে, মাতৃত্বের হাহাকারের বাইরেও তাদের অন্যান্য অনুভূতি আছে। এই সারোগেসিকে যখন পুরুষ নির্মাতার চোখ দিয়ে দেখা হয়, তৈরি হয় হার দিল জো পেয়ার কারেগা (২০০০), চোরি চোরি চুপকে (২০০১)। দুটি সিনেমাতেই নারী চরিত্রের ব্যাপ্তি প্রেমিকা, স্ত্রী, পুত্রবধূ এবং মা হয়ে ওঠা পর্যন্তই। বংশ রক্ষা ও নায়কের প্রতি প্রবল প্রেমের চার দেয়ালে তারা এমনভাবে বন্দী যে তাদের আর কোনো স্বপ্ন নেই, অনুভূতি নেই, গল্পও নেই। যদি গল্প থেকেও থাকে, সেটিও যৌন আবেদনময়তার মোড়কে এমন করে মুড়িয়ে দেয়া যে সূক্ষ্ম সব অনুভূতি সেখান থেকে দৌড়ে পালায়। অথচ জুহি চতুর্বেদীর লেখা ভিকি ডোনার (২০১২) দেখে অবাক হয়ে যাই। প্রায় সমপর্যায়ের সংবেদনশীল বিষয় স্পার্ম ডোনেশন নিয়ে নির্মিত এই সিনেমায় নায়ক বা নায়িকা কেউই অনর্থক যৌন আবেদনময় হয়ে উঠছে না। নায়ককেন্দ্রিক কমার্শিয়াল সিনেমা বলে জুহির গল্পে নারীরা স্ত্রী, প্রেমিকা, মা, দাদী হিসেবে থেকে যান না। ভিকির সত্তোর্ধ্ব বিজিকেও (দাদী) আমাদের মনে রাখতে হয়। কেননা, হিন্দি-পাঞ্জাবির মিশেলে কথা বলতে থাকা আধুনিক বিজিরও নিজস্ব একটা গল্প আছে। আর সেই গল্প শুধু নায়কের সাথে তার সম্পর্কের সংজ্ঞায় শেষ হয়ে যায় না।
প্রবাসী গৃহবধূরা কী করেন? কেমন জীবন তাদের? সেই গল্প দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে (১৯৯৫)তে চাইলে খানিকটা আদিত্য চোপড়াও বলতে পারতেন। বলেননি। অমন মা ও গৃহবধূদের গল্পটা শুনতে তাই আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে গৌরি শিন্দের ইংলিশ ভিংলিশ (২০১২) এর জন্য। প্রাপ্তবয়স্কা অবিবাহিত নারীরা কেমন হয়? সারাক্ষণ বিয়ের জন্য পাগল হয়ে থাকেন? কারান জোহরের মিসেস ব্র্যাগেনজার মতো কর্মক্ষেত্রেও তারা যৌন অনুভূতি ছাড়া তেমন কিছু ভাবতে পারেন না? অবিবাহিত, যৌন আবেদনসম্পন্ন নারী মানেই কি অপ্রকৃতিস্থ কমিক রিলিফ? এই প্রশ্নের সংবেদনশীল উত্তর পেতেও আমাদের অপেক্ষা করতে হয় কামনা চন্দ্র ও তনুজা চন্দ্রের কারিব কারিব সিঙ্গেল, জুহি চতুর্বেদীর পিকুর জন্য। কারিব কারিব সিঙ্গেল-এর জায়া প্রেম করতে চায় বলে বোধবুদ্ধি খোয়ায়নি! বলিউডের জন্য সে কী অবাক করা কথা!
জুহির পিকুও সিনেমার নায়িকা বটে, তবে তার তেমন কোনো নায়ক নেই। প্রেমের সম্পর্ক বা সংসার তার চরিত্রের মূল দিক না। বরং বৃদ্ধ বাবার সাথে তার সম্পর্কের গল্পই এই সিনেমার মূল উপজীব্য। পিকুকে আমরা নায়িকা না, নিজস্ব গল্প এবং মতামত সম্বলিত পূর্ণাঙ্গ চরিত্র হিসেবে দেখি। তাকে অফিস যেতে হয়, ঘর সামলাতে হয়, বাবার খেয়াল রাখতে হয় বলে যে সে প্রেম করতে চায় না তা-ও না। পিকুর সেক্সুয়াল নিডকে জুহি আড়ালে সরিয়ে রাখেননি, আবার সেক্সুয়াল নিড আছে বলেই বলিউডের চিরাচরিত নারী চরিত্রগুলোর মতো তাকে সেক্স সিম্বল হিসেবে তৈরি করেননি।
ইদানিং বলিউডে দেশকে বাচাঁনোর, সমাজকে বাঁচানোর সিনেমার জয়জয়কার। সেখানে নারী চরিত্ররা কী ভূমিকা রাখেন? তারা সাধারণত অক্ষয় কুমার, সালমান খান বা অজয় দেবগনের পাশে তাদের ‘লাভ ইন্টারেস্ট’ হয়ে নিজেদের দায়িত্ব পালন করেন। অক্ষয় কুমার যখন পর্দায় স্যানিটেশন নিয়ে বিপ্লব করছেন, নায়িকা ভূমি পেডেঙ্কারের আবদার করা ছাড়া কোনো ভূমিকা থাকে না। অক্ষয় কুমার যখন পর্দায় স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে সচেতনতা বাড়াচ্ছেন, মেয়েদের জন্য করা এই বিপ্লবেও রাধিকা আপ্তে শুধুমাত্র স্ত্রী ও সোনম কাপুর শুধুমাত্র ‘দ্য আদার ওম্যান’। এমনকি ভারতের মঙ্গলগ্রহ অভিযানে নারীদের অবদান নিয়ে নির্মিত মিশন মংগল-এর কেন্দ্রীয় চরিত্র কে জানেন? অক্ষয় কুমার! চার-চার জন গুণী অভিনেত্রীর উপস্থিতি সত্ত্বেও পুরুষের জন্য, পুরুষের দ্বারা নির্মিত এই সিনেমায় দিনশেষে ‘হিরো’ হয়ে ওঠেন একজন আলফা মেলই!
অথচ মেঘনা গুলজার যখন রাজি (২০১৮) নির্মাণ করছেন, নারী চরিত্রটি স্বচ্ছন্দে ‘হিরো’ হয়ে উঠছে। সে জন্য তাকে সিনেমার পুরুষ চরিত্র নির্মাণে অবহেলা করতে হয়নি, তাদের দুর্বল পুরুষ হিসেবে দেখাতে হয়নি। আলিয়া ভাট কেন্দ্রীয় চরিত্র বলে ভিকি কৌশলের চরিত্রটির কোনো গল্প নেই, সে ‘স্বামী’ মাত্র - এমন তো হয়নি! তবে রোহিত শেঠির সিম্বা (২০১৮) তে কেন সারা আলী খানের মুখে আমরা ডায়ালগের চেয়ে বেশি গান শুনি? কারণ বেশিরভাগ পুরুষ চিত্রনাট্যকার ও নির্মাতারা নারী চরিত্র লিখতে জানেন না!
৫
লেখা শুরু করেছিলাম জেরেমি আর জেসেমির গল্প দিয়ে। তাদের কাছেই ফেরত যাই। জেরেমির পৃথিবীতে স্বাভাবিক সত্য হচ্ছে ছেলেরাই মেয়েদেরকে রক্ষা করবে। আমি কি তবে এর উল্টোটা চাইছি? রাজকন্যারা রাজপুত্রদের ঘুম ভাঙবে? ওয়ান্ডার ওম্যানরূপী গ্যাল গাডোটরা সুপার হিরো হবে? হতেই পারে। হোক, তাতে জেসেমিদের পক্ষেও রেফারেন্স পাওয়া যায়।
তবে রক্ষাকর্ত্রী হয়ে ওঠা নিয়ে আসলে এই আলোচনা না। সিনেমা নারীকেন্দ্রিক হলেই সেখানে নারীর উপস্থাপন যথার্থ হবে তাও না। হলিউড এখনও ভাবছে নারীকেন্দ্রিক সিনেমা মানে পুরুষালি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন, যুদ্ধংদেহী এক নারী। ‘ইয়াং লেডি’ ডাকায় ক্যাপ্টেন মার্ভেলকে তাই চোখমুখ শক্ত করে হুমকি দিতে হয়। হলিউডের পুরুষ নির্মাতারা যেন ধরেই নিয়েছেন নারীর শক্তির প্রথম পরিচায়ক হলো ‘নারীত্ব’কে ছুঁড়ে ফেলা!
বলিউড ভাবছে নারীর যথার্থ উপস্থাপন মানে তাকে দেবীজ্ঞান করতে হবে। তাকে মা দুর্গা হতে হবে, অথবা অন্তত স্বরস্বতী! অথচ নারীকে রক্তমাংসের মানুষ হিসেবে দেখতে শিখলেই বিরোধ মিটে যায়। নারীকে আলাদা করে নারী না, মানুষ হিসেবে দেখেছেন বলে অ্যামি শারমান-পালাডিনো দ্য মার্ভেলাস মিসেস মেইজেল লিখতে পারেন, জোয়া আখতার গালি বয় লিখতে পারেন, অপর্ণা সেন পারমিতার একদিন লিখতে পারেন। সেখানে লিঙ্গাত্মক বিরোধ থাকে না, কেউ কারো ছায়ায় ঢাকা পড়ে যায় না।
দাবি করেছিলাম, বেশিরভাগ পুরুষ নির্মাতা, চিত্রনাট্যকাররা নারী চরিত্র নির্মাণ করতে জানেন না। উল্টো উদাহরণ টানার আগেই বলে নিচ্ছি, ব্যতিক্রম উদাহরণও আছে। তাই ফারাহ খানের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় দুর্দান্ত পুরুষতান্ত্রিক ম্যায় হু না বা ওম শান্তি ওম নির্মিত হয়। হলিউডের দীর্ঘদিনের চর্চিত নীতি ‘ক্যারিয়ারিস্ট নারী মানেই অনুভূতিহীন, রুঢ়, অসুখী নারীর’ স্টেরিওটাইপ মেনে নিয়ে অ্যালিন ব্রশ ম্যাকেনাও লেখেন ডেভিল উইয়ারস প্রাডা। আবার ঝলমলে, উচ্ছ্বসিত যে নায়িকারা নায়কের জীবন পালটে দেন, তাদেরও যে নিজস্ব যুদ্ধ থাকে, সেই গল্পটা পর্দায় প্রথম বলেছেন পরিচালক মাইকেল গন্ড্রি। রোজা ডিয়াজ, অ্যামি স্যান্টিয়াগো, জিনার মতো দুর্দান্ত, বাস্তবিক নারী চরিত্রগুলো পর্দায় এসেছে নির্মাতা ড্যান গুর আর মাইকেল স্কারের হাত ধরে। আরতি, অদিতি বা দয়াময়ী তো সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্টি। আমি যখন জুহি চতুর্ভেদীর পিকু বা ভিকি ডোনার-এর কথা বলছি, তখন এও তো বলতে হয় যে দুটো সিনেমারই নির্মাতা সুজিত সরকার।
কিন্তু ব্যতিক্রমের দোহাই দিলে আর চলছে না। বেচডেল টেস্টের জরিপ দেখতে গেলেই বোঝা যায়, নারীরা নারীর চরিত্র ভালো লেখেন, যথার্থভাবে পর্দায় তুলে ধরেন। বেশিরভাগ পুরুষ নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার এতে ব্যর্থ। তবে কি এখন নারীরাই শুধু নারীদের চরিত্র লিখবেন? অ্যামি শারমান প্যালাডিনো ২০১১ সালের এক সাক্ষাতকারে সেই উত্তর দিয়ে রেখেছেন, ‘যা জানেন না বা বোঝেন না, তা নিয়ে লিখতে হলে রিসার্চ করে লিখুন।’
তাবাসসুম ইসলাম: পোস্টগ্রাজুয়েট শিক্ষার্থী, ইউনিভার্সিটি অফ বার্সেলোনা
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফলে একটা দায়বদ্ধতা তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক বলেছেন, দেশের সব ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনে কাজ করতে হবে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে শিরীন হক বলেন, ‘আমাদের মূল ধারা হবে সকল ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্যের নিরসন এবং নারী-পুরুষের জেন্ডার বৈষম্য কমাতে কাজ করতে হবে। নারীর উন্নয়ন বিকাশে বাধাগুলো নিয়ে বিষয় চিহ্নিত করা।
‘অন্য সকল সংস্কার কমিশনে নারী অধিকারের প্রাধান্য নিশ্চিত করতে হবে। এটা আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছি। ক্রান্তিকালে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও অগ্রগতির জন্য কাজ করার সর্বোত্তম সুযোগ।’
অনুষ্ঠানে সমাজে যৌন হয়রানি, সহিংসতা ও বাল্যবিয়ে বন্ধ এবং জলবায়ু, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও সবুজায়ন এবং ক্রীড়াঙ্গনে নারী নেতৃত্ব বিকাশে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ তিন ক্যাটাগরিতে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের তিনজনকে ‘নাসরীন স্মৃতিপদক ২০২৫’ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ বছর পদক গ্রহণ করেন ডনাইপ্রু নেলী, রিনা খাতুন ও আফরোজা খন্দকার।
দিবস উদ্যাপন আয়োজনে নারীদের সাফল্য প্রদর্শন ও পুরস্কার প্রদানসহ ছিল আলোচনা সেশন।
একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবিরের সঞ্চালনায় এ আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞরা। ওই সময় দেশের সব ক্ষেত্রে নারীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিতে বর্তমান অবস্থা, চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা ও করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
আলোচনা সভায় বক্তাদের একজন বলেন, দেশে নারীর ক্ষমতায়নে সামগ্রিক চিত্রের অগ্রগতি হলেও তা উল্লেখযোগ্য নয়। এখনও অনেক পিছিয়ে আছেন নারীরা। ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে বিভিন্ন স্তরের নারীদের সামনে থাকা কাঠামোগত চ্যালেঞ্জগুলোর বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। একই সঙ্গে নারীর ক্ষমতায়নের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা এবং সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণকে উৎসাহিত করাসহ নারী ও কন্যাশিশুরা যেন সমান সুযোগ পায় এবং উন্নতি করতে পারে, সে লক্ষ্যে সব ক্ষেত্রে পদক্ষেপের গতি বাড়াতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নারীদের উল্লেখযোগ্য নেতৃত্বের কথা স্বীকার করে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান ও নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরীন পারভীন হক বলেন, ‘নারীদের অগ্রগতিতে পেছনে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এটা কারা করছে, কেন করছে সেটা বের করা দরকার। জুলাইয়ের আন্দোলনে মেয়েরাই রোকেয়া হল থেকে সবার আগে বের হলো। কিন্তু পরে এত দ্রুত মেয়েরা সরে গেল কেন?
‘জায়গা কেউ ইচ্ছে করে ছেড়ে দেয়নি। চাপ সৃষ্টি করে জায়গা ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নারীদের অন্তর্ভুক্তি আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। মেয়েদের পেছনে রাখার প্রবণতা দেখা গেছে।
‘আমরা দেখেছি আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে নারীরা দারুণ সাহস দেখিয়েছে। এত তাড়াতাড়ি মেয়েদের মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে আশা করিনি।’
নারীদের ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে কমিউনিটি উন্নয়নে একশনএইড কীভাবে অবদান রেখে চলেছে তা তুলে ধরেন ফারাহ কবির।
তিনি বলেন, ‘দেশের নারীদের অগ্রগতিতে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে চলেছে একশনএইড বাংলাদেশ। নারী সুরক্ষা, অবৈতনিক কাজের স্বীকৃতি, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে অবস্থান ও নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নসহ সমানাধিকারভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছি আমরা। আমরা চাই, নারী ক্ষমতায়ন কার্যক্রমে আরও গতি আসুক।’
ওই সময় নারী উন্নয়নে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত ও বৃদ্ধির আহ্বান জানান তিনি।
আরও পড়ুন:‘কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও নারীর ক্ষমতায়ন বা সামাজিক মর্যাদা বাড়েনি। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন জরুরি।
‘অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিতে নারীদের কথা বলার জায়গাটা তৈরি করে দিতে হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গাগুলোতে নারীদের নিয়ে আসতে হবে।’
আন্তর্জাতিক নারী দিবস সামনে রেখে বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম।
তিনি বলেন, ‘নারী পরিচয়ের আগে আমার বড় পরিচয় হলো আমি একজন মানুষ। নারী-পুরুষ ভেদাভেদ তৈরি, নারীকে হেয় করা, শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরুষের চেয়ে দুর্বল মনে করা হয় আজও।’
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের মূল্যায়ন সম্পর্কে সাদেকা হালিম বলেন, ‘সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এমন হয়েছে যে সমাজে নারীকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে দেখা হয়; যদিও বাংলাদেশের সংবিধানে নারী ও পুরুষ সমান। কিন্তু বাস্তবে কোনো দেশই খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে নারীকে পুরুষের সমান ভাবা হয়।’
‘সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীত্ব নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। সেটা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাঙ্গন, ভাগ-বাটোয়ারার ক্ষেত্র, এমনকি ধর্মীয়ভাবেও। পৃথিবীতে এমন কোনো ধর্ম খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীকে সমান অধিকার দেয়া হয়েছে।’
‘এমনকি নারীর সন্তান জন্ম দেয়ার বিষয় নিয়েও রাজনীতি করা হয়। সন্তান জন্মের পর পরই সন্তানের অধিকার কিভাবে হবে সেটা আমরা ধর্মীয়ভাবে নির্ধারণ করি। বাবা ও মায়ের অধিকার কতটুকু, আমাদের সিভিল ল’তে কতটুকু, শরিয়া ল’তে কতটুকু- এসব বিষয় অনেকটাই পুরুষকেন্দ্রিক। পুরুষকে সব সময় প্রাধান্য দেয়া হয়। পুরুষরাই এ সমাজে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে।’
এই উপমহাদেশে নারীদের ভূমিকা সম্পর্কে ড. সাদেকা হালিম বলেন, ‘ভারত উপমহাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন যে এখন হয়েছে তা নয়। অবিভক্ত ভারত উপমহাদেশে নারীরা কিন্তু ইউরোপের নারীদের আগেই ভোটাধিকার পেয়েছিল। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় নারীরা যুদ্ধে অংশ নিয়েছে, রানি হয়েছে, ট্যাক্স সংগ্রহ করেছে।
‘আধুনিক রাষ্ট্রে পুঁজিবাদের বিস্তার ঘটার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের কাজের পরিধি বেড়েছে, কিন্তু নারীদের পণ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। তার কাজকে কাজ হিসেবে আমরা দেখিনি। নারীরা স্ত্রী, মা বা মেয়ে হিসেবে যে ভূমিকা পালন করে সেটিকেও অবমূল্যায়ন করা হয়।
‘কোনো নারী চাকরি করলেও তাকে আমরা প্রশ্ন করি তার স্বামী কী করে। সে যদি স্বামীর থেকে বেশি বেতন পায়, তাহলে পুরুষও হীনম্মন্যতায় ভোগে।’
সমাজের সাধারণ নারীদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে জবি উপাচার্য বলেন, ‘অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন তো নারীদের অনেকেরই হয়েছে। গার্মেন্ট সেক্টর, চিংড়ি মাছের ঘের, কল-কারখানায় নারীরা কাজ করছে। এটি ভারত বা পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু নারীর সামাজিক মর্যাদা কি বেড়েছে? এটা খুবই জটিল একটি বিষয়।
‘চরম দারিদ্র্যের শিকার নারীরা কোনো কিছু ভাবে না, বা ভাবার সুযোগ পায় না। তারা জানে তাদেরই কাজ করতে হবে, ক্ষুধা মেটাতে হবে। তারাই শিশুদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। সাধারণ নারীরা অনেক পরিশ্রমী। সামাজিক সমালোচনা গ্রাহ্য না করে তারা চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় তাদের বাদ দেয়া হচ্ছে।’
নারীর সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়ে সাদেক হালিম বলেন, ‘আমরা নারীর নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে পারিনি। বাংলাদেশে বা প্রবাসে যে পরিমাণ নারী কাজ করে সেখানেও আমরা দেখি যে নারীরা নিরাপদ নয়। এমনকি খুব নিকট আত্মীয়ের মাধ্যমে তারা ধর্ষণের শিকার হয়।’
তিনি বলেন, ‘তবে বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পিকার নারী, বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী। এবারকার কেবিনেটে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নারী মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী হয়ে আসছেন। এটা ইতিবাচক দিক।
‘সংখ্যার দিক থেকে নারীর অংশগ্রহণ অনেক বেশি, কিন্তু নারীর ক্ষমতায়ন বা সামাজিক মর্যাদার জায়গায় গুণগত মানের দিক থেকে কতটা বদলেছে সেটি বড় বিষয়। যখন নারীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণে আসবে, নেতৃত্ব দেবে, তখনই বদলাবে সমাজ।’
আরও পড়ুন:আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ। প্রতি বছর ৮ মার্চ নারীর উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হয়।
এ বছর নারী দিবসে জাতিসংঘের প্রতিপাদ্য হল ‘নারীদের ওপর বিনিয়োগ করুন, দ্রুত উন্নতি আনুন।’ এর মাধ্যমে লিঙ্গ সমতা আনতে যে যথেষ্ট অর্থ বিনিয়োগ করা হচ্ছে না সেই বিষয়টাতে মনোযোগ দেয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের এ বছরের থিম ‘ইনস্পায়ার ইনক্লুশন’, যার লক্ষ্য হচ্ছে নারীদের জন্য এমন পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে তারা সমাজে নিজের জায়গা সম্পর্কে জানতে পারে। এর সঙ্গে এ গল্পগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ।
দিবসটির উৎপত্তি ২০ শতকের গোড়ার দিকে, যা উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের শ্রমিক আন্দোলন থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম জাতীয় নারী দিবস পালন করা হয়।
পরবর্তীতে ১৯১০ সালে মার্কসবাদী তাত্ত্বিক এবং ‘নারী অধিকার’ আন্দোলনের বিশিষ্ট নেত্রী ক্লারা জেটকিন কোপেনহেগেনে আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রস্তাব করেন। ধারণাটি সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়েছিল ১৯১১ সালে। যেখানে ১০ লাখেরও বেশি অংশগ্রহণকারী নারীর অধিকারের পক্ষে ছিলেন।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস শুধু নারীদের অর্জন উদযাপনের দিন নয়, এটি লিঙ্গ সমতা, এর প্রতিফলন, সমর্থন, এবং বিশ্বজুড়ে নারী এবং মেয়েদের জন্য বাধাগুলো ভেঙে ফেলার পদক্ষেপকে উৎসাহিত করে।
আরও পড়ুন:মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না মর্মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠিত কমিটির প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে।
বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চে সোমবার এই নীতিমালা দাখিল করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আদালত এই নীতিমালার ওপর শুনানির জন্য মঙ্গলবার দিন ঠিক করেছে।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।
দাখিল করা নীতিমালায় বলা হয়েছে- কোনো ব্যক্তি, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ল্যাবরেটরি কোনো লেখা বা চিহ্ন বা অন্য কোনো উপায়ে শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করতে পারবে না। এ বিষয়ে কোনোরকম বিজ্ঞাপন দিতে পারবে না। সরকারের মন্ত্রণালয়গুলো ডাক্তার, নার্স, পরিবার পরিকল্পনা কর্মী, টেকনিশিয়ান কর্মীদের নেতিবাচক ফলাফল সম্পর্কে ট্রেনিং দেবে এবং নৈতিকতা ও পেশাগত আচরণ বিষয়ে ট্রেনিং দেবে।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে- হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ মেডিক্যাল সেন্টারগুলো এ সংক্রান্ত সব ধরনের টেস্টের ডাটা সংরক্ষণে রাখবে। হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ মেডিক্যাল সেন্টারগুলো ডিজিটাল ও প্রিন্ট মাধ্যমে লিঙ্গ সমতা এবং কন্যাশিশুর গুরুত্ব তুলে ধরে বিভিন্ন মেসেজ প্রচার করবে।
এর আগে ২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ রোধে নীতিমালা তৈরি করতে রুল জারি করে হাইকোর্ট।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রুল জারি করেছিলেন।
রুলে অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় রোধে নীতিমালা বা নির্দেশনা তৈরি করতে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় নির্ধারণে নীতিমালা তৈরি করতে বিবাদীদের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।
হাইকোর্টের ওই রুলের পর নীতিমালা তৈরির জন্য কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এর আগে ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি গর্ভের শিশুর লিঙ্গ পরিচয় জানার উদ্দেশ্যে পরীক্ষা ও লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে জনস্বার্থে রিট করেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।
প্রথমবারের মতো কৃষ্ণাঙ্গ কোনো ব্যক্তিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি।
স্থানীয় সময় শুক্রবার ক্লদিন গেকে নিয়োগ দেয় প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে নেতৃত্ব দেয়া দ্বিতীয় নারী ক্লদিন।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ম্যাসাচুসেটসের গভর্নর ও হার্ভার্ড গ্র্যাজুয়েট মাউরা হ্যালি শুক্রবার বিকেলে দেয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্লদিনের নিয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট গে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে আপনার দায়িত্বপ্রাপ্তি সত্যিই ঐতিহাসিক। আপনার প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও সমর্থন।’
প্রেসিডেন্ট পদে ব্যাপক অনুসন্ধানের পর হার্ভার্ডের প্রধান নিয়ন্ত্রক বোর্ড হার্ভার্ড করপোরেশন ক্লদিন গেকে নিয়োগ দেয়।
১৬৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ক্লদিনকে। তিনি ১৯৯৮ সালে সরকার বিষয়ে হার্ভার্ড থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নেন। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি।
এর আগে কলা ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ক্লদিন। তিনি রাজনৈতিক আচরণের ওপর শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ।
২০১৭ সালে ‘ইনইকোয়ালিটি ইন আমেরিকা ইনিশিয়েটিভ’ নামের উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন ছিলেন তিনি। এ উদ্যোগের উদ্দেশ্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য নিয়ে গবেষণা।
আরও পড়ুন:লন্ডনে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনার বক্তারা মেরিন একাডেমিতে নারীদের অন্তর্ভুক্ত করাসহ মেরিটাইম শিল্পে নারীদের উৎসাহিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন।
লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনের উদ্যোগে সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনে (আইএমও) ‘এমপাওয়ারিং উইমেন ইন মেরিটাইম অ্যান্ড ওশান ডিপ্লোম্যাসি’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সূত্র: ইউএনবি
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন। তিনি আইএমও-তে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং উইমেন ইন ডিপ্লোম্যাসি নেটওয়ার্ক (ডব্লিউডিএন), লন্ডনের সভাপতির দায়িত্বে নিয়োজিত।
বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, আইএমও-তে নিয়োজিত স্থায়ী প্রতিনিধি, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞসহ ১০০ জনেরও বেশি প্রতিনিধি এতে অংশ নেন।
বৈশ্বিক সামুদ্রিক শিল্পে নারীদের কম উপস্থিতির কথা তুলে ধরে হাইকমিশনার তাসনিম বলেন, বিশ্বব্যাপী ১ দশমিক ২ মিলিয়ন সনদপ্রাপ্ত নাবিকের মধ্যে নারী মাত্র ১ দশমিক ২৮ শতাংশ। অন্যদিকে ক্রুজ শিল্পে শ্রমশক্তির মাত্র ২ শতাংশ নারী।
হাইকমিশনার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেরিন ইন্ডাস্ট্রিতে নারী ক্যাডেট নিয়োগের দূরদর্শী সিদ্ধান্তের জন্য গর্ব বোধ করি। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে নেভিগেশন অফিসার, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার এমনকি ক্যাপ্টেনের মতো সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট পদসহ বিভিন্ন ভূমিকার জন্য বার্ষিক ১০০ জনেরও বেশি মহিলা নাবিক নিয়োগ করা হয়।
‘এই রূপান্তরমূলক প্রচেষ্টাগুলো ঐতিহ্যগতভাবে পুরুষ-প্রধান সামুদ্রিক শিল্পে লিঙ্গ বৈচিত্র্যের প্রচারে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে।’
দূত নারী-পুরুষ সমতা বাড়াতে ও সামুদ্রিক খাতে নারীদের কণ্ঠ জোরদার করতে বিআইএমসিওসহ আইএমও সচিবালয়, আইএমও-এর সহযোগী সদস্য, উইমেনস ইন্টারন্যাশনাল শিপিং অ্যান্ড ট্রেডিং অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউআইএসটিএ) ইন্টারন্যাশনাল, উইমেন ইন মেরিটাইম অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউআইএমএএস) এবং নেতৃস্থানীয় শিপিং শিল্প সমিতিগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় কাজ করার জন্য ডাব্লিউডিএন-এর দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী নারী নাবিকসহ নাবিকদের অবদানের ওপর বাংলাদেশ হাইকমিশনের তৈরি একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়, যা অংশগ্রহণকারীদের বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করে ও প্রশংসিত হয়।
উচ্চ পর্যায়ের এই আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন- লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড এক্সটারনাল রিলেশনস ডিভিশনের ডিরেক্টর ডোরোটা লস্ট সিমিনস্কা, যুক্তরাজ্যে মালদ্বীপের হাইকমিশনার ড. ফারাহ ফয়জল, জর্জিয়ার আইএমও-এর রাষ্ট্রদূত ও জনসংযোগ সোফি কাস্ত্রাভা, অ্যান্টিগুয়া ও বারমুডার হাইকমিশন কারেন-মাই হিল ওবিই, স্টেট ডিপার্টমেন্ট ফর শিপিং অ্যান্ড মেরিটাইম কেনিয়ার প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি ডব্লিউ কারিগিথু, আইএমওর মার্শাল আইল্যান্ডের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার ও কার্গোস অ্যান্ড কন্টেইনার ক্যারেজ অন আইএমও সাব-কমিটির চেয়ার মেরিয়ান অ্যাডামস, আইএমওতে আর্জেন্টিনার জনসংযোগ এবং ইউএস জারেড ব্যাংকসের জনসংযোগ ফার্নান্দা মিলিশে, সৌদি আরবের এপিআর হায়াত আল ইয়াবিস এবং এডিটর অব ম্যাগাজিন লন্ডনের সম্পাদক এলিজাবেথ স্টুয়ার্ট।
এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটলিয়নে (এপিবিএন) দেশে প্রথমবারের মতো নারী পুলিশ সদস্যদের ডগ হ্যান্ডলার হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।
সাতজন নারী পুলিশ সদস্য বেসিক কেনাইন হ্যান্ডলার ট্রেনিং কোর্সে অংশ নিয়ে নতুন এ যুগের সূচনা করেছেন।
নারীদের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন যুক্তরাজ্য ও নিউজিল্যান্ডের পেশাদার ডগ স্কোয়াড প্রশিক্ষক টনি ব্রাইসন ও মেলিন ব্রডউইক।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ও এয়ারপোর্ট এপিবিএনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচিটি নারী পুলিশ সদস্যরা সফলতার সঙ্গে শেষ করেছেন।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের হাতে বৃহস্পতিবার সকালে সমাপনী সনদ তুলে দেন এয়ারপোর্ট এপিবিএন অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি তোফায়েল আহম্মদ, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম ও ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মোহাম্মদ জিয়াউল বলেন, ‘২০১৭ সালে দুইটি ল্যাবরেডর, দুইটি জার্মান শেফার্ড ও চারটি বেলজিয়ান ম্যালিনয়েস জাতের কুকুর এবং ১৬ জন হ্যান্ডলার নিয়ে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কেনাইন ইউনিট যাত্রা শুরু করে। শুধু বিমানবন্দরের নিরাপত্তা রক্ষায় ডেডিকেটেড এই ডগ স্কোয়াড বিমানবন্দরে আসা যাত্রী, সহযাত্রী এবং তাদের ব্যাগেজ স্ক্রিনিংয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ছাড়াও ক্যানোপি নিরাপত্তা, পার্কিং এরিয়া এবং যানবাহনে বিস্ফোরক পদার্থের উপস্থিতি সার্চ, ব্যাগেজ বেল্ট এলাকার নিরাপত্তা রক্ষা এবং ভিভিআইপি নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে।’
এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের ডগ স্কোয়াডে ২০২৫ সালের মধ্যে কুকুরের সংখ্যা ৬৬টি করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানান জিয়াউল হক।
তিনি বলেন, ‘তৃতীয় টার্মিনালের সম্ভাব্য বিশাল অপারেশনের কথা মাথায় রেখে এই পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ২০২৩ সালের মধ্যে ব্রিটেন এবং নেদারল্যান্ডস থেকে আরও অন্তত ১৫টি ডগ এই স্কোয়াডে যুক্ত হবে। বর্তমানে ভগগুলো এক্সপ্লোসিভ সার্চের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হলেও অচিরেই নারকোটিকস ডগ, ট্রাকিং ডগ, কারেন্সি শিফিং ডগও এই বহরে যুক্ত হবে। এ সকল ট্রেনিংয়ে কারিগরি ও লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়ে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নকে সহায়তা করবে ঢাকার ইউএস অ্যাম্বাসি।’
পরিপূর্ণ ডগ স্কোয়াড বিমানবন্দরে নাশকতা, মাদক চোরাচালান, স্বর্ণ চোরাচালন, মুদ্রা পাচার রোধে অসামান্য ভূমিকা রাখতে পারে বলে জানান অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকরা।
মন্তব্য