গত দুই দশকে বাংলাদেশের বাংলা ভাষা নতুন এক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে; তার নাম হতে পারে ডিজিটাল বাস্তবতা। আমরা এখন যান্ত্রিকভাবে লেখাকে বিন্যস্ত করতে পারি। আর তাই মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটারের পর্দায় বাংলা ভাষাকে আমরা উৎপাদিত ও পুনরুৎপাদিত হতে দেখি। বই, পত্রিকাসহ বহুবিধ প্রকাশনা আজ ঠাঁই নিয়েছে ডিজিটাল পর্দায়। এক সময় সাইন বোর্ড, ব্যানার, পোস্টার, বিজ্ঞপ্তি লেখা হত হাতে। এখন আর তার প্রয়োজন পড়ে না।
প্রযুক্তির সহায়তায় প্রচারিত এই বাংলা ভাষাকেই বলতে পারি ‘ডিজিটাল বাংলা’। নতুন এই বাংলার প্রয়োগ ও প্রচারে সরকারি, বেসরকারি নানা উদ্যোগকে স্বাগত জানাতেই হবে। কিন্তু একইভাবে গভীর শোকের সঙ্গে বলতে হবে, ভালো নেই ডিজিটাল বাংলা ভাষা; যার বিস্মৃতি-অযোগ্য প্রমাণ: ‘মুজিব বর্ষ’কে ‘মুজিবর্ষ’ হিসেবে উপস্থাপন। সামান্য চোখ বুলালেই দেখতে পাব, ভাষাটি ডুবে আছে দুর্দশার অতলে। ডুবে থাকার সেই বৃত্তান্তে সরকারি বাংলাই সব চেয়ে বেশি দুর্দশাগ্রস্ত।
দুর্দশা চিহ্নিতকরণে প্রধান মানদণ্ড হতে পারে রীতিসিদ্ধ ব্যাকরণ এবং বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম। উল্লেখ্য যে, ২০১২ সালের ৩১ অক্টোবর সরকারি কাজে বাংলা একাডেমির প্রমিত বানানের নিয়ম অনুসরণের নির্দেশ জারি করেছিল বাংলাদেশ সরকার। সরকারি পরিপত্রে ‘বানানের শুদ্ধতা’ ও ‘ভাষারীতির সমরূপতা’র প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল। সরকারি ওই ঘোষণার লক্ষ্য ছিল, ‘সরকারি কাজে বাংলা ভাষার সামঞ্জস্য বিধান।’ এই পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ দুটি প্রকাশনা নিয়ে এসেছিল: সরকারি কাজে ব্যবহারিক বাংলা (২০১৫) এবং সরকারি কাজে প্রমিত বাংলা ব্যবহারের নিয়ম (২০১৭)। এসবের অনুসরণে বাংলাদেশের সরকারি ওয়েবসাইটগুলোর যে প্রান্তেই চোখ রাখি না কেন, দেখতে পাব ভুলের অবিরল চিহ্ন।
রাষ্ট্রপতির দপ্তর: শীর্ষ থেকে শুরু
রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের ওয়েব সাইটে চোখে পড়ে বানানের সমন্বয়হীনতা, ভুল বানান, সংশয়। আর তাই একই সঙ্গে সেখানে আছে: কার্যাবলি/ কার্যাবলী, গ্যালারি/ গ্যালারী। ভুল বানানে লেখা হয়েছে: মুল, পুনঃর্বাসন, হত্যাকান্ড, স্বীকৃতিস্বরুপ, গুরুর্তপূর্ন, শরনার্থী, ব্রাহ্মনবাড়িয়া। বাংলা একাডেমির প্রমিত বানান অনুসরণ না করে লেখা হয়েছে: জানুয়ারী, আবুধাবী, সৌদী আরব, জার্মানী, ইতালী। এমনকি ‘বাঙালি’কে লেখা হয়েছে ‘বাঙ্গালী’। বিভক্তির প্রয়োগে আছে দ্বিধা; তাই লেখা হয়েছে: রিপোর্ট এর, পাকিস্তান-এর। কিশোরগঞ্জ হয়েছে কিশোগঞ্জ। শব্দের শেষে বিসর্গ বর্জিত হলেও লেখা হয়েছে: মূলতঃ।
মহামান্য রাষ্ট্রপতির জীবনাখ্যান থেকে শুরু করে বিজ্ঞপ্তি ও লেখায় নজরে পড়বে নানা ধরনের ভুল। শিক্ষা সংক্রান্ত কাজ প্রসঙ্গে তিনটি লাইন লেখা হয়েছে; তার মধ্যে আছে দুটি ভুল। বহুবচন ব্যবহারে সমস্যা দেখা যাচ্ছে; যেমন : ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের চ্যান্সেলর।’ একই বাক্যে বসেছে ‘সকল’ ও ‘সমূহ’। শেষ বাক্যে সমাবর্তন শব্দটিকে লেখা হয়েছে ‘সমার্বতন’। রাষ্ট্রপতির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম বিষয়ে লেখা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে বঙ্গভবনে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, বিজয় দিবস, ঈদ-উল-ফিতর, ঈদ-উল-আযহা, দুর্গাপূজা, জন্মাষ্টমী, বুদ্ধপূর্ণিমা এবং বড়দিন উপলক্ষে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। দেশি বিদেশি বিভিন্ন শ্রেণি পেশার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।’ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে? নাকি বঙ্গভবনের উদ্যোগে? দেশি-বিদেশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন? নাকি ‘এ ধরনে’র অনুষ্ঠানে অংশ নেন?
বাদ যায়নি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ওয়েবসাইটেও খুঁজে পাওয়া যায় বিচিত্র ধরনের ভুল। আরবি-ফারসি উৎসজাত আপস শব্দটিকে লেখা হয়েছে আপোষ। দপ্তরগুলো সম্ভবত সমঝোতায় আসতে পারেনি যে, শহিদ লিখবে, নাকি শহীদ। অকারণে দুটি শব্দকে যুক্তভাবে করা হয়েছে। যেমন : এরফলে, বেশকিছু, শান্তিরবৃক্ষ। লিডারশিপ শব্দটিকে লেখা হয়েছে লিডারশীপ; যুক্তরাষ্ট্র হয়ে গেছে যুক্তরাস্ট্র, স্বয়ম্ভরতা হয়ে গেছে সয়ম্ভরতা। প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে লেখা হয়েছে, ‘দরিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন তাঁর জীবনের অন্যতম লক্ষ্য।’ প্রশ্ন থেকে যায়, দরিদ্র্য বিমোচন, নাকি দারিদ্র্য বিমোচন? গরিবি না কমালে গরিব কমবে কী করে? প্রধানমন্ত্রীর বইগুলোর নাম উল্লেখ করতে গিয়ে যথাযথভাবে উদ্ধৃতিচিহ্ন ব্যবহার করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে পাওয়া যাচ্ছে: ধ্বস, অন্তভুক্তিকরণ, উদ্বাস্ত, মূদ্রা, স্বয়-সম্পূর্ণ, অন্তভুর্ক্ত, তদুর্ধ্ব ইত্যাদি বানান।
শিক্ষা সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়: ভাষার দুর্গতি
বাংলা ভাষার অপপ্রয়োগের মর্মান্তিক নিদর্শন শিক্ষা সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটগুলো। সেখানে বানান ও ব্যাকরণের অজ্ঞতা ব্যাপকভাবে চোখে পড়ে। পাশাপাশি আছে উদযাপন ও উদ্যাপন, ডিগ্রি ও ডিগ্রী। পাওয়া যাচ্ছে, সময়কালে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সাইটে প্রাপ্ত ভুল বানান : সম্মূখ, ওয়াকশপ, লীড, ভূক্তি, বিতরন, অংগ, পাঠ্যপুসত্মক, ডিগ্রী, ভূক্ত, পরিবীক্ষন, গ্রহন, কাযকারিতা, বস্তনিষ্ঠা, নৃতাত্বিক, ঝুকি, দেশাত্ববোধ, পরিমন্ডল, সংশিষ্ট, গুরত্ব, প্রনয়ণ, প্রনোদনা ইত্যাদি। তে, কে, এর রূপ হয়েছে এরকম: কর্মসূচি-তে, সমিতি-কে, যোগ্যতা-র। বাংলা ও রোমান হরফের মিশ্রণে লেখা হয়েছে: ‘32 হাজার 667 টি মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম স্থাপন করা হয়েছে।’ একটি অংশে বলা হয়েছে: ‘মাধ্যমিক পর্যায়ে পরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কারণ।’ অভিধানে সংস্কারণ শব্দটির হদিস পেলাম না। আরেকটি অংশে পেলাম, ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি/গভর্নিং বডি পূর্ণ:প্রতিষ্ঠা।’ কোলনযুক্ত বা কোলনছাড়া ‘পূর্ণ:প্রতিষ্ঠা’ বলতে কোনো শব্দ আছে কি?
‘এবং’ ব্যবহারের নমুনা দেখা যাক: ‘এই সংস্থা শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান সংরক্ষণ এবং প্রকাশ করে থাকে এবং মন্ত্রণালয়ের ইএমআইএস অংগ হিসেবে কাজ করে।’ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সম্পর্কে লেখা হয়েছে: ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এটি একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান।’ স্বায়ত্বশাসিত বানানটি ভুল। পাশাপাশি আছে, এটি ও একটি। একটু পরেই পাওয়া যাচ্ছে ‘ইহা’ – ‘ইহা মাধ্যমিক পর্যায়ের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মানসম্মত শিক্ষা উন্নয়নের নিমিত্ত পরিদর্শন ও নিরীক্ষার দায়িত্ব পালন করে থাকে।’
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় লিখেছে: মিসন, রুপকল্প, কর্মবন্টণ, অধিনস্ত। মন্ত্রী মহোদয়ের পরিচিতি অংশে লেখা হয়েছে, তিনি রৌমারী উপজেলার যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা ‘আহব্বায়ক’। আরও দুঃখজনক ব্যাপার এই যে, মন্ত্রী মহোদয়ের নামের নিচে লেখা ‘মন্ত্রনালয়’ বানানটি ভুল। আওয়ামী লীগ শব্দ দুটিকে বারবার যুক্তভাবে লেখা হয়েছে : আওয়ামীলীগ। জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি লিখেছে একাডেমী, স্বায়ত্বশাসিত, লক্ষ্য এবং উদ্দ্যেশ্য, সমুহ, অভিক্ষাপদ, প্রণয়ণ, অন্তর্ভূক্ত, বিশ্লেষন, বছরগুলু। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাইটে পাচ্ছি: বন্টন, অধীনস্ত, পরবর্তীতে, গনশিক্ষা, মন্ত্রনালয়, প্রাইমারী। বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিটের সাইটের ব্যানারে লেখা হয়েছে ‘পরিবীক্ষন।’ এই সাইটে মাননীয় মন্ত্রীর নামের নিচে গণশিক্ষা শব্দটিকে লেখা হয়েছে গনশিক্ষা। কোষ শব্দটিকে লেখা হয়েছে কোস: ‘পরিবীক্ষণ কোস/সেল’। মজার ব্যাপার হলো, অফিসের পরিচিত অংশে একই প্যারা দুবার লেখা হয়েছে। নিশ্চিতকরণ বানানটিকে লেখা হয়েছে নিশ্চিৎকরণ।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সাইটে আছে রীতিগত মিশ্রণ। তবে সামগ্রীক, সহযোগীতা, সরকারী, বেসরকারী, কর্মকান্ড ইত্যাদি নজরে পড়ে সবার আগে। এই সংস্থার ‘আউট অব স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন প্রোগ্রাম’-এর সাইট জুড়ে চোখে পড়ে অসহনীয় ভুল। এমনকি প্রোগ্রামটির স্লোগানে থাকা দীক্ষা শব্দটিই লেখা হয়েছে ভুল বানানে: ‘সেকেন্ড চান্সে হবে দিক্ষা/ সকল শিশু পাবে শিক্ষা।’ আমার মনে হয়, প্রোগ্রামের উদ্যোক্তাদের সবার আগে শিক্ষা দেয়া দরকার। আরেকটি স্লোগানে আছে: ‘সেকেন্ড চান্সে লেখাপড়া/ গুনে মানে জীবন গড়া।’’ গুন বানানটি ভুল। শুধু তা-ই নয়, বৈশিষ্ট্যকে লেখা হয়েছে বৈশিষ্ঠ্য: ‘শিখন কেন্দ্রের বৈশিষ্ঠ্য’; বিশিষ্ট হয়েছে ‘বিশিষ্ঠ’, শ্রেণিকক্ষ হয়েছে ‘শ্রেনীকক্ষ’। আরও ভুল: বহির্ভুত, অভীষ্ঠ, বাস্তবায়ীত, সুষ্ঠ। এখানেও পাওয়া যাচ্ছে রীতিগত মিশ্রণ - ‘তাহাই কোহর্ট মডেল।’
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ লিখেছে: পরিক্ষা, দুরুহ, সৃতিময়, সূবর্ণজয়ন্তী। উচ্চশিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন লিখেছে: পরীক্ষন, অন্তর্ভূক্ত, প্রস্তত, জবাবদিহীতা, সুবিধাদী, কর্মকান্ড, প্রাসংঙ্গিক, উদিয়মান, জাতয়ি, শক্তিশালীকরন। পাশাপাশি আছে: মন্ত্রণালয়/ মন্ত্রনালয়, পূরণে/ পূরনে। বাংলা লেখায় বাংলা সংখ্যার পাশাপাশি ব্যবহৃত হয়েছে রোমান সংখ্যা : 1টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, 4 লক্ষ শিক্ষার্থী।
বৃক্ষ তোমার নাম কী?
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুটি শাখার একটিতে আছে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা। মাদ্রাসা শিক্ষা বিষয়ক আরেকটি প্রতিষ্ঠান ‘মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট’। আবার দেখা যাচ্ছে, কারিগরী শিক্ষা অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। প্রশ্ন জাগে, কোনটি ঠিক– মাদ্রাসা, না মাদরাসা? জাতীয় তথ্য বাতায়নে দ-এর নিচে হসন্ত প্রয়োগ করা হয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সাইটে এক জায়গায় লেখা হয়েছে: মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। আরও কিছু ভুল ও অপপ্রয়োগ: উল্লেখেযোগ্য কার্যাবলী, ভূক্ত, অধদিপ্তর, এমপওি, ভূক্তকরণ, লক্ষ্য-ও-উদ্দেশ্য, আধুনিকীকরন, যুগোপযোগি, জবাবদিহীতা, বাঙালী, বিবচনা, পূরন, গুনগতমান, তদারকী, কর্মকান্ড, প্রনয়ন, প্রতিষ্ঠান্ সমুহ, তৈরী, তত্বাবধান, অধিনস্ত। মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সাইটে ভুল বানানের ছড়াছড়ি। যেমন: ম্লোগান, চৌধরী, যতদুর, শীর্ষখ প্রকল্প, মোদরাসা, পুরুস্কার। অভ্যুদয় শব্দটিকে দুবার লিখেছে ‘অদ্ভুদয়’: ‘‘বাংলাদেশের অদ্ভুদয় ঘটে।’’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়: ভালো মন্দ মিলায়ে সকলি
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট জুড়েও আছে এ জাতীয় ভুল। যদিও এ মন্ত্রণালয়ের ভাষা বিষয়ক কাজ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এর অধীন আছে বাংলা ভাষা বাস্তবায়ন কোষ। মন্ত্রণায়লটির খুব প্রিয় শব্দ ‘এবং’; কয়েকটি উদাহরণ দেখা যাক, ‘সার্ভিস এবং পদের শ্রেণিবিন্যাস সংক্রান্ত নীতি এবং এগুলোর মর্যাদা নির্ধারণ।’, ‘দেশে এবং বিদেশে প্রকল্পে এবং চাকরিতে বিশেষজ্ঞ/পরামর্শক হিসেবে কাজ করার নিমিত্ত সরকারি কর্মচারীদের মনোনয়ন।’, ‘সরকারি কার্যাদি উন্নততর এবং সাশ্রয়ীভাবে নির্বাহ করার জন্য প্রশাসনিক গবেষণা, ব্যবস্থাপনা এবং সংস্কার।‘, ‘সরকার এবং স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা, কল্যাণ এবং যৌথ বিমা তহবিল এবং কল্যাণ মঞ্জুরি’র প্রশাসন এবং ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত বিষয়াদি।’ তারা লিখেছে: আত্তীকরণ, মঞ্জুরিকরণ, সহজিকরণ ও সহজীকরণ। বিভক্তির প্রয়োগ নিয়ে দ্বিধা তাদেরও আছে; তাই লেখা হয়েছে ‘পরিসংখ্যান-এর সংকলন’, ‘এই মন্ত্রণালয়ের’, ‘অন্যান্য ক্যাডার এর’। স্বায়ত্তশাসিত শব্দটিকে তারা ঠিকভাবে লেখেনি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ও লিখেছে: কর্ণার, গ্যালারী, দায়িত্বাবলী, শ্বাশত। এই মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমি লিখেছে, পরবর্তীতে, জৈষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা, শুধুমাত্র, গুরত্বপূর্ণ, নাগরিক এর, কর্মকান্ড, গুরূত্ব, ত্বাত্তিক, ইংরেজী, দূর্নীতি ইত্যাদি।
বানান কল্যাণ মন্ত্রণালয়?
সরকারি বাংলার দশা আরও বেশি নাজুক ছোট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরগুলোর ওয়েবসাইটে। অপপ্রয়োগ ও অসচেতনতায় বাংলা ভাষার চেহারা ম্লান ও বিষণ্ন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত পরিচিতিমূলক প্রথম বাক্যই ভুল; ওখানে বলা হয়েছে, ‘সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের পিছিয়েপড়া এবং অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মানবসম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, কল্যাণ, উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন সাথে সংশ্লিষ্ট একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়।’ এই বাক্যে লুকিয়ে আছে ব্যাকরণগত বিচ্যুতি। আছে বানান ভুল: কর্মকান্ড, জারী। অপপ্রয়োগ: সাম্যতাবিধান।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সাইটে পাচ্ছি: বদলী, আদেশাবলী, আপীল, গ্যালারী, দূর্নীতি, জরুরী। সমাজসেবা অধিদফতর লিখেছে: বিস্তৃত্তি, জাতিগঠণমূলক, স্বার্থক, আয়ত্বাধীন, কিডনী, প্রতিয়মান, সমুহ, গরীব, বেশী, মানদন্ড, বাড়ী, নিয়ন্ত্রনকারী। বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ লিখেছে: সমুহ, গরীব, কারিগরি, উদ্ভুত, নির্মান, জলবায়ূ, পরবর্তি, উদ্ভত, গবেষনা, প্রকাশণা, অনুদান বিতরন।
ভুলের সমুদ্রে মুদ্রণ ও প্রকাশনা
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের সাইটে ব্যবহৃত বাংলা ভুলে ভরা। প্রযুক্তির কারণে সৃষ্ট ভুল মেনে নেওয়া যায়, কিন্তু অজ্ঞতা ও অসচেতনতা ক্ষমার অযোগ্য। সাইটের ব্যানারে গণপ্রজাতন্ত্রী শব্দটিকে লেখা হয়েছে: গনপ্রজাতন্ত্রী। শিল্প এলাকা হয়েছে শিল্ল এলাকা। স্টেশনারি শব্দটির বহুরূপী বানান চোখে পড়েছে: স্টেশনারী, ষ্টেশনারী। ষ-কেন্দ্রিক ভুলের তালিকায় আছে: ষ্ট্যান্ডার্ড, ষ্ট্যাম্প। ভুলের তালিকায় আছে: সৃস্টি, ব্যবস্হাপনা, সংস্হার, নিম্নরুপ, নিবাচনী, প্রধানগন, বন্টন, গুরুত্বপূর্ন। বগুড়াকে লেখা হয়েছে বগুরা, চট্টগ্রাম হয়ে গেছে চট্রগ্রাম। রীতিগত মিশ্রণের কারণে লেখায় ঢুকে পড়েছে ইহা, তাঁহারা।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বিষয়ক সভার (১৮ মার্চ ২০২১) কার্যবিবরণীতে দেখা যাচ্ছে কয়েক রকম ভুল: সর্বশ্রেষ্ট বাঙ্গালি, অত:পর, আলোকসজ্জায় সজ্জিতকরণ, মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার, সুবর্ণজয়ন্তী কর্ণার। অথচ প্রতিষ্ঠানটি দাবি করেছে, ‘মানসম্মত মুদ্রণ, প্রকাশনা ও সরবরাহ সেবার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অনন্য ও নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান।’
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়: এত ভুল সইব কেমন করে?
মন খারাপ করা ভুলের সমাহার দেখা যায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে। ক্রিয়ার কাল, বানান, শব্দ প্রয়োগ– প্রতিটি ক্ষেত্রে পাওয়া যাবে ব্যাপক ভুল। মন্ত্রণালয়ের কার্যাবলি বোঝাতে গিয়ে লেখা হয়েছে কার্য়াবলী। কর্মসূচি হয়েছে কর্মসূচী। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রাসঙ্গিক ২৩ পৃষ্ঠার একটি লেখায় আছে অসংখ্য ভুল বানান। বঙ্গ লিখতে গিয়ে যোগ করা হয়েছে বাড়তি চন্দ্রবিন্দু– বঙ্গেঁর। বাঙালি রূপ পেয়েছে বাঙ্গালী। ভুল বানানের ছোট্ট একটি তালিকা: স্বায়ত্বশাসন, বিশববিদ্যালয়, উন্মক্ত, আহবান, হত্যাকান্ড, বহির্বিশব, বিশেবর, খন্ড, প্রাঙ্গন। বিদেশি শব্দের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে ঈ-কার, ঊ-কার: জানুয়ারী, ফেব্রুয়ারী, উর্দূ। ইংরেজি উৎসজাত শব্দে ষ ব্যবহার করে লেখা হয়েছে: ব্যারিষ্টার, কমিউনিষ্ট। আবার দন্ত্য স-এর জায়গায় এসে গেছে মূর্ধন্য ষ: শাষকগোষ্ঠী। অপপ্রয়োগের উদাহরণ হিসেবে আছে: পরবর্তীতে, সময়কালে। গভীর মর্মবেদনার বিষয় হলো ব্যক্তিনামের ক্ষেত্রে ভুল; ইতিহাস প্রাসঙ্গিক লেখাটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামটি তারা সম্ভবত একবার শুদ্ধভাবে লিখতে পেরেছে।
তথ্য, সম্প্রচার, ভাষা ও প্রযুক্তি: বিরহী সম্পর্ক
বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ‘গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প পরিচালনা করছে। কিন্তু এই বিভাগের সাইটেও পাওয়া যাচ্ছে বানান-বিভ্রাট। তারা লিখেছে: কোম্পানী, ফেব্রুয়ারী, অভীষ্ট্য, সমুহ, ইর্ন্টানশীপ, ইংরেজী, স্বরুপ। এই সাইটে বঙ্গবন্ধু প্রসঙ্গে লেখা হয়েছে ‘হাজার বছরের শেষ্ঠ বাঙালি’। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের সাইটে পাচ্ছি: কর্মকান্ড, রক্ষণাবেক্ষন, উদ্ধুদ্ধকরণ, জনগন, বিরুপ, ক্ষতিগ্রস্থ, তদুর্ধ, সচ্ছ, পরবর্তীতে, মন্ত্রানালয়। লিখেছে: প্রাদুর্ভাবকালীন সময়ে, বাস্তবায়নের সময়কাল।
শব্দের শেষে বিসর্গ বাদ দেবার কথা থাকলেও তথ্য ও যোগাযোগ অধিদপ্তর লিখেছে: বিশেষতঃ। একটি বাক্য খেয়াল করা যাক: ‘তথ্য ও যো’গাযোগ প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট আইন, নীতিমালা, গাইডলাইন ও প্রমিতকরণ প্রস্তুতকরণ।’ ‘প্রমিতকরণ প্রস্তুতকরণ’ ব্যাপারটি কী? এরকম অনেক বাক্য পাওয়া যাবে, যেগুলো গঠনগত দিক থেকে দুর্বল ও দুর্বোধ্য হয়ে উঠেছে।
এবার বাংলা বাক্যে দেখা যাক ইংরেজির শোভা: ‘করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন সংগ্রহের শুরু থেকেই এই টিম কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম নিয়ে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট শুরু করে।’ মজার ব্যাপার হলো, এই অধিদপ্তর থেকে সম্পন্ন হয়েছে ‘সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ও ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাব স্থাপন’ প্রকল্প।
ভুল বানানের মেলা বসেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে। সিটিজেন চার্টারের পাতায় পাতায় দেখা যায় বানান বিষয়ক দ্বিধা; তারা লিখেছে: বানিজ্য, আমাদানী, রপ্তানি, অঙ্গিকারনামা, পরিমান, মুল কপি, চেকলিষ্ট, সলভেনসী, স্বচ্ছলতা। একই লেখায় রেখে দিয়েছে দুটি বানান: কাহিনী/কাহিনি, নির্মান/নির্মাণ; সরকারি ঠিক থাকলেও বেসরকারি হয়ে গেছে বেসরকারী।
কোলন, হাইফেনের অসতর্ক প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়। বিসর্গের বদলে কোলন এবং কোলনের বদলে বিসর্গ ব্যবহারের উদাহরণ দেখা যায় অহরহ। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় বিসর্গের বদলে লিখেছে কোলন; যেমন: আন্ত:ব্যক্তিক যোগাযোগ, আন্ত: বিদ্যালয়। কোলনের বদলে বিসর্গ উপস্থিত: অর্পিত দায়িত্বঃ। অন্য অনেক মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সাইটেও এ জাতীয় প্রয়োগ পাওয়া যাবে।
ভুলের জগতে পর্যটন
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ও বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের সাইট ঘুরে আসার মানে হলো ভুলের জগত পর্যটন করে আসা। ট্যুরিজম বোর্ড লিখেছে: প্রতিযোগীতা, সউদী আরব, মন্ডিত, প্রত্ম, সম্ভাভ্যতা, রিকোভারী, গভর্ণিং বডি, বৈশিষ্ঠ্যতা, বর্হি:বিশ্ব, ভাবমুর্তি, তিঁনি, কারন, শ্রমঘণ শিল্প, অনুষংগ, প্রনয়ণ, নির্মান, ক্ষতিগ্রস্থ, বিনির্মান, ঘনিষ্ট, কর্মসুচি, সভাপত্বিত, প্রতীকি, কর্ণার, কতৃক, ফেষ্টুন, এঁর, ডকুমেন্টারী, পুরুস্কার, সূযোদয়, উত্তোলণ, প্রাথর্না, ঘোষনা। পর্যটন করপোরেশন লিখেছে: সুদূর প্রসারি, সৃস্টি, আকর্ষন, বিপণী, আমদানী, শুরুকরে, স্বায়ত্বশাসিত, এষ্টেট, প্রনয়ণ, পর্যটনক, জলকষ্ঠ, জরীপ, রেললাইস। নিজেদের কাজ সম্পর্কে করপোরেশন লিখেছে, ‘প্রকৃতি ও নৃতাত্ত্বিক ভিত্তিক ইকো-ট্যুরিজমকে উনড়বয়ন করা।’
উনড়বয়ন? ফন্ট বদল? প্রযুক্তির হস্তক্ষেপ?
কলঙ্ক মাখা চাঁদ
অজস্র ভুল বানান ও অপপ্রয়োগের দৃষ্টান্ত বহন করছে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট। সুন্দর ও বহুমাত্রিক পরিকল্পনানির্ভর একটি তথ্যপূর্ণ সাইট হওয়া সত্ত্বেও এটি ভুল বানান ও ব্যাকরণের কাছে মার খেয়ে গেছে। ভুল বানানে লেখা হয়েছে: জাতিসত্ত্বা, ব্রষ্মপুত্র, উপনিত, নিপুন, রুপকল্প, আকষনীয়, কর্মকান্ড, অলঙ্ককরণ, মন্ডিত, গ্রামীন, কর্ণার। ‘দক্ষিণ-পশ্চিমে শীতলক্ষ্যা’কে লেখা হয়েছে ‘দক-পশ্চিমে থীতলক্ষ্যা।’’ মহিলারা হয়েছে মাহলারা। একই লেখায় আছে জামদানি ও জামদানী। সোনারগাঁয়ের সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গিয়ে লেখা হয়েছে ‘শ্যামললিমা’। বিভ্রান্তিকর একটি বাক্য পড়া যাক: ‘সেই সঙ্গে অত্যন্ত আকর্ষণীয় বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের বয়নশিল্পের কমপরিবেশ ও বিপণন চিত্রে তুলা থেকে বস্ত্র তৈরির সামগ্রিক ধারাবহিক চিত্র প্রদর্শন করা হয়েছে।’ দুর্বোধ্য বাক্যের নজির আরও আছে; আরও পড়া যাক: ‘‘সুশৃঙ্খল সূত্রমাফিক তৈরি করা হলেও কারুশিল্পে থাকে ঐতিহ্যের সমাচার। এরপরও তা সৃজনশীলতা পাশাপাশি বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাসে বাংলাদেশের কারুশিল্প ও কারুশিল্পীদের অবদান অনস্বীকার্য। আবহমানকাল থেকেই এদেশের লোক ও কারুশিল্প নিজ নিজ ধারায় প্রবহমান।’
পড়ুয়ারা কেমন পড়েন?
জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সাইটে আছে: অঙ্গণে, সংগহ, সাঈজ, মূদ্রণ, তরান্বিত, বেসরকারী, জনসাধারন। রীতিগত মিশ্রণও পাওয়া যাচ্ছে: প্রতিবছর সদস্যতা নবায়ন করতে হবে নতুবা সদস্যতা বাতিল বলে গণ্য হবে। গ্রন্থ ও উন্নয়ন যোগে গ্রন্থোন্নয়ন শব্দটিকে লেখা হয়েছে গ্রন্থন্নোয়ন।
গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের কাজ সংক্রান্ত তালিকায় প্রাপ্ত ভুল বানান: প্রদর্শণী, পুণর্গঠন, ভ্রাম্যমান। গ লোপ পেয়ে গণতন্ত্র শব্দটি হয়ে গেছে ‘ণতন্ত্র’। ইন্টারনেট সেবা প্রদানের নীতিমালার একটি পৃষ্ঠায় পাওয়া গেছে: পরবর্তীতে, চলাকালীন সময়, অনাকাংখিত, জরুরী। এ ছাড়া পাওয়া যাচ্ছে: বিচ্ছুরন, স্মরনিকা। কমপ্লেক্স হয়েছে কমপ্রেক্স।
ভয়ানক দৃষ্টিকটু ভুলের সমাহার দেখা যাচ্ছে আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের সাইটে। দপ্তরটি শুধু প্রাচীন নথিপত্রেরই আরকাইভ নয়, বাংলা ভাষার অপপ্রয়োগ ও ভুলেরও আরকাইভ। এখানে ঘুরে দেখা যাচ্ছে: বাড়ী, করাচী, বাঙ্গালি, পরিমান, সময়কাল, বিবরনী, ধারনা, কর্মকান্ড, পেীরসভা, অন্তর্ভূক্ত, উপনিবেশিক, প্রাকাশনা, পার্লামেন্টারী, ইউনিস্কো, বহুমূখী, চট্রগ্রম, শ্রেণিরর, গ্রন্থপুঞ্জি, পৃষ্টা, চাদা, আওতাভূক্ত, পত্রপেষ, আনুষাঙ্গিক, নির্মান, বিধী, অনুসরন, পান্ডিত, সংস্কৃতিক সংঘঠন, সংরক্ষন।
একটি বাক্য পড়া যাক: ‘বর্তমান জাতীয় গ্রন্থাগার আধুনিকায়ন শীর্ষক প্রকল্প দুটি চচঘই চলকান আছে।’ এর একটু পরেই আছে: ‘বর্তমানে জাতীয় গ্রন্থাগার মান উন্নয়ন শীর্ষক একটি চলমান চচঘই রয়েছে।’ আরেকটি বাক্য: ‘এখন জাতীয় গ্রন্থাগার ডিজিটাল লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার মাথ্যমে সরকারের ম্যনিফেষ্টো পুরুণের চেষ্টা কওে চলেছে।‘’
আরও কিছু
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের ওয়েব সাইট ঘুরেও দেখা যাবে ভুল। ব্যবহৃত হয়েছে ‘ব্যবহূত’। পাওয়া যাচ্ছে: আহবায়ক, উদ্যাপন, কংক্রীট, লাইব্রেরী। বিখ্যাত স্লোগানটিতে রাষ্ট্রভাষার বদলে পাওয়া যাচ্ছে: রাষ্টভাষা বাংলা চাই। র, য় বিভক্তি বিষয়ক সংকট পাওয়া যাচ্ছে: ইউনেস্কো-য়, ইউনেস্কো-র। বাংলাদেশ টেলিভিশন লিখেছে: উদ্ধোধন, ঘন্টা, পরবর্তীতে, অনুষ্ঠানসুচি, প্রচারসুচি, বহি:বিশ্ব, ইটালী, পান্ডুলিপি, স্পন্সরশীপ, তৈরী, পুন:প্রচার, এজেন্সী, রিয়োলিটি শো। চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর লিখেছে: গণযোযোগ, সমপৃক্ত, কর্মকান্ড। প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ লিখেছে গুরুপূর্ণ। শিল্পকলা একাডেমি লিখেছে: সংরক্ষন, উদ্দেশে। একই লেখায় একই সঙ্গে আছে একডেমি ও একাডেমী।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় লিখেছে: সার্কিট হাইজ, কমপ্রেক্স, বাড়ী, রক্ষণাবেক্ষন, দায়িত্ববলী, বাড়ি-ঘড়, ব্যবস্থপনা, পূনর্বাসন, পরিত্যত্ত, সমুহ, গবেষনা, অনুপ্রেরনা, তারুন্য, তৃণমুল, গুন, আবৃত্তি চর্চ্চা, মূলত: গুন; এই মন্ত্রণালয়ের সাইটের ব্যানারে লেখা হয়েছে ‘গৃহায়ন’; জাতীয় তথ্য বাতায়নে লেখা হয়েছে ‘গৃহায়ণ’। তারা বঙ্গবন্ধুর নাম লিখেছে শেখ মজিবুর রহমান।
ডিজিটাল বাংলা কি দায়সারা বাংলা?
ব্যাকরণ কিংবা নিয়ম না জানার ফলেই ভুলগুলো ঘটেছে, তাও নয়; এক ফরম্যাটের ফাইল থেকে অন্য ফরম্যাটের ফাইলে তথ্য গ্রহণ, বর্জন ও সংযোজনের কারণেও ভাষার বিচ্যুতি তৈরি হয়েছে। বাংলার ভেতর ঢুকে গিয়েছে রোমান হরফ কিংবা অন্য কোনো প্রতীক। আবার ভুল ফরম্যাটে তৈরিকৃত একটি জাতীয় বিজ্ঞপ্তি, নকশা, লোগো, টেমপ্লেট সব দপ্তরে প্রচারিত ও প্রদর্শিত হওয়ায় সেসব ভুল স্থায়িত্ব পেয়ে গেছে। যেমন: গ্যালারী, সিষ্টেম, ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় ইত্যাদি। এসব লেখা ‘ভুল’ কিংবা ‘নিয়মসিদ্ধ’ নয়, এই কথাটিই হয়তো কারো মনে পড়েনি। কিন্তু ভুল যে কারণেই ঘটুক না কেন, ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত তা সংশোধন করে নেওয়ার সুযোগ ছিল। অথচ বছরের পর বছর থেকে গেছে একই ভুল। তাহলে কি সরকার, দপ্তর বাংলা ভাষার মান্যায়ন প্রক্রিয়াকে মেনে নেয়নি? কিংবা রাষ্ট্রের আইন এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন মেনে নেয়নি? রাষ্ট্র তো প্রমিত বাংলার সমর্থক।
কিছু সাইটের প্রশংসা না করলেই নয়। শব্দ, বানান, ব্যাকরণ, বিন্যাসগত দিক থেকে বাংলা একাডেমি, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের সাইট বেশ পরিচ্ছন্ন ও সুপরিকল্পিত। প্রাসঙ্গিকভাবে বলা দরকার, সরকারের জাতীয় তথ্য বাতায়ন সাইটটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। খুব সহজেই দরকারি তথ্য এতে পাওয়া যায়। কিন্তু সামগ্রিকভাবে বলতেই হবে সরকারি বাংলার ভেতর কোনো সমন্বয় নেই। বানানের ব্যাপারে মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলো স্বেচ্ছাচারী। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ঘুরলে দেখা যাবে একই শব্দের দুই-তিন রকম বানান। বাঙালি, বাঙালী, বাঙ্গালি, বাঙ্গালী নিয়ে মন্ত্রণালয়গুলোর ব্যাপক দ্বিধা। বহুবচনবাচক শব্দ নিয়েও আছে সংশয়; জাতীয় তথ্যবাতায়নে লেখা হয়েছে নীতিমালাসমূহ। মালার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সমূহ। শব্দনির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের দরকারি মনোযোগ নেই। ইংরেজি থেকে বাংলা করতে গিয়ে সংস্কৃতের কাছে হাত পেতে বক্তব্যকে জটিল করে তুলেছে কোনো কোনো দপ্তর। ‘মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু কর্নার’ লিখতে গিয়ে অনেক অফিস-দপ্তরই পীড়িত হয়েছে। কর্নার ও কর্ণার– দুভাবেই লেখা হয়েছে। লেখা হয়েছে: মুজিব বর্ষ ও মুজিববর্ষ।
‘র’ বিভক্তির প্রয়োগ নিয়ে কোনো কোনো দপ্তরের সংশয় চলে গেছে উন্মাদনার পর্যায়ে। লেখা হয়েছে: শেখ মুজিবুর রহমান এঁর, সংগ্রামী জীবনের এর উপর, দীপু মনি-র। দুঃখজনক তথ্য এই, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে লেখা হয়েছে ‘স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্ত্রী’।
সব মিলিয়ে ডিজিটাল বাংলাকে বলা চলে ‘দায়সারা বাংলা’; এই বাংলার চর্চাকারীদের ভাবনা যেন অনেকটা এরকম: বাংলাদেশের একটি প্রধান ভাষা বাংলা– বাংলায় না লিখলে কেমন দেখায়, তাই লিখে দাও কয়েক ছত্র। কে বা কারা যে লেখে এই সব এক-দুই পাতার পরিচিতিমূলক গদ্য, সেও এক গভীর বিস্ময়। কেউ কেউ বলে থাকেন অফিসের কেরানিকুল এসব লিখে থাকেন, কম্পোজ করে থাকেন, বড় কর্তারা এসব পড়েও দেখেন না, কারণ পড়ে দেখার সময় তাদের নেই। কিন্তু এই বড় কর্তা ও ছোট কর্তার ভারসাম্যহীনতা কি কোনো অজুহাত হতে পারে?
ডিজিটাল বাংলার দশা ও দুর্দশাকে ভাষাবিজ্ঞানের অবস্থান থেকে ভাবা যেতে পারে। কয়েকটি অনুসিদ্ধান্ত আমার মধ্যে তৈরি হয়েছে:
এক. বাংলাদেশে প্রচলিত বাংলার প্রমিতায়ন বা মান্যায়ন বিষয়ক ভাবনার প্রয়োজন আছে। নতুন প্রযুক্তি, গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিদ্যাজাগতিক পরিবর্তনের সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলাদেশের বাংলা ভাষার মান্যায়ন প্রসঙ্গে দরকারি চিন্তা করা যেতে পারে।
দুই. প্রমিতায়ন সংশ্লিষ্ট কাজের একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলা একাডেমিকে চিহ্নিত করার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সকল ধরনের শিক্ষাকেন্দ্র, শিক্ষা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান, ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম বিষয়ক প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন ইত্যাদির সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। ভাষার প্রয়োগ ও অপ্রয়োগকে একটি সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে সবার আগে।
তিন. প্রযুক্তি মাধ্যমে বাংলা সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে সক্ষম হয়নি। ভাষাবিজ্ঞানের ভাষা-পরিকল্পনা নামক শাস্ত্রটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাষার আধুনিকায়নের কথা বলে থাকে। বাংলাদেশি বাংলার আধুনিকায়ন জরুরি। বাংলা ভাষা ও প্রযুক্তির সম্পর্ক বিষয়ক গবেষণা একান্তভাবে প্রযুক্তিবিদ কিংবা সরকারি আমলার কাজ নয়।
ডিজিটাল বাংলার এই রূপ দেখে মনে হয়, দপ্তরগুলো যেন ধরেই নিয়েছে ওসব লেখা কেউ পড়বে না; পড়ে সময় নষ্ট করার মতো গাঁজাখুরি কাজ কেউ কোনোদিন করবে না! কিন্তু তারা কি ভেবেছেন, এই সরকারি বাংলা প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রের তরফে বাংলা ভাষার উপস্থাপন। ভুলে ভরা এই বাংলা কি এটাই বোঝায় না যে, রাষ্ট্র বা সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বাংলার কোনো অর্থমূল্য বা সাংস্কৃতিক মূল্য নেই। তারা বাংলা ভাষার প্রমিত রূপ ব্যবহারের কথা বলবেন, অথচ রাষ্ট্রের দপ্তরে তা যথাযথভাবে ব্যবহার করবেন না– এই দ্বিচারিতা অগ্রহণযোগ্য। বাংলা ভাষাকে তারা নিয়ে এসেছেন হাস্যকর স্তরে। ভাষাজ্ঞানের অভাব, অদক্ষতা কিংবা অসচেতনতা– যা-ই বলি না কেন, এসব প্রকৃতপক্ষে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের দিক থেকে সংঘটিত মারাত্মক অপরাধ। শুধু অপরাধ নয়, বাংলা ভাষা, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ প্রতারণা।
আরও পড়ুন:মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ২০২৫ সালের মানবপাচার (টিআইপি) বিষয়ক প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় স্তরে স্থান দেওয়া হয়েছে। দেশের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন এবং বিশ্বব্যাপী অভিবাসনের চাপ সংশ্লিষ্ট চলমান চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও মানবপাচার মোকাবিলায় বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য এবং টেকসই অগ্রগতির স্বীকৃতি এটি।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার মানবপাচার নির্মূলের সর্বনিম্ন মান সম্পূর্ণরূপে পূরণ না করলেও আগের তুলনায় এখন উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা চলছে। বর্তমান সরকার পূর্ববর্তী প্রতিবেদনের সময়ের তুলনায় সামগ্রিকভাবে ক্রমবর্ধমান প্রচেষ্টা প্রদর্শন করেছে। সে কারণে বাংলাদেশের অবস্থান এই তালিকায় দ্বিতীয় স্তরে।
প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশ মানবপাচার রোধে ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আন্তঃসংস্থা সমন্বয়ের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে।
ভুক্তভোগী শনাক্তকরণ এবং সুরক্ষা পরিষেবা বৃদ্ধি, সম্মুখ সারির কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণ এবং আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ‘ন্যাশনাল রেফারেল মেকানিজম’ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রশংসা করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
সরকার ১ হাজার ৪৬২ জন পাচারের শিকারকে শনাক্ত করেছে। শনাক্ত হওয়াদের মধ্যে ১৪৪ জন যৌনকর্মী হিসেবে পাচারের শিকার হয়েছে এবং ২৮৫ জনকে জোরপূর্বক শ্রম দিতে বাধ্য করা হয়েছে। এছাড়া ১ হাজার ৩৩ জন অন্যান্য ধরনের পাচারের শিকার হয়েছে। পূর্ববর্তী প্রতিবেদনে একই সময়ে ১ হাজার ২১০ জন ভুক্তভোগীকে শনাক্ত করা হয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীদের শনাক্ত করার পর সরকার তাদের সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক, সমাজকল্যাণ, প্রবাসী কল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় পরিচালিত কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে এসব ভুক্তভোগীদের স্বাস্থ্যসেবা, আইনি সহায়তা ও আশ্রয়ের সুযোগও প্রদান করা হচ্ছে।
সরকার সুশীল সমাজের সঙ্গে সমন্বয় করে ভুক্তভোগীদের সেবার ব্যাপারে পুলিশ, অভিবাসন কর্মকর্তা ও শ্রম পরিদর্শকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এই পদক্ষেপগুলো আন্তর্জাতিক মানবপাচার-বিরোধী মানদণ্ডের সঙ্গে জাতীয় চর্চাকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার মূল পদক্ষেপ হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানবপাচার নেটওয়ার্ক তদন্তে ইন্টারপোল, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বৈশ্বিক অংশীজনদের সঙ্গে বাংলাদেশের চলমান সহযোগিতার কথাও স্বীকার করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
পাচারবিরোধী পক্ষগুলোকে শক্তিশালী করার এবং অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এবং কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)-এর মধ্যে সমন্বয় সুদৃঢ় করার জন্য সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টার কথাও তুলে ধরা হয়েছে এতে।
সরকার জাতীয় মানবপাচার বিরোধী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শক্তভাবে পাচার প্রতিরোধ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাচার প্রতিরোধ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রমের জন্য এ বছর ৬২১ দশমিক ৪৯ মিলিয়ন টাকা বরাদ্দ করে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৮-২০২৫ বাস্তবায়ন অব্যাহত রেখেছে। আগের বছরের তুলনায় এবার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে।
জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের পাচার-বিরোধী কমিটি বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় মুদ্রিত পত্রিকা, রেডিও এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে।
এভাবে প্রচারের মাধ্যমে নিরাপদ অভিবাসন, শ্রম অধিকার এবং প্রতারণামূলক নিয়োগের ঝুঁকি সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো ১০৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে এবং বিদেশগামী কর্মীদের জন্য প্রস্থান-পূর্ব প্রশিক্ষণ সেশন চালু করেছে। এর মধ্যে নারী গৃহকর্মীদের জন্য ৩০ দিনের একটি বিশেষায়িত কোর্সও রয়েছে।
বিদেশে আমাদের দেশ থেকে যাওয়া শ্রমিকদের শোষণের ঝুঁকি কমানোই এসব পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য।
সরকার মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও ব্রুনাইয়ের মতো প্রধান গন্তব্যস্থলের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক শ্রম চুক্তি জোরদার করেছে। এছাড়া, অভিবাসী শ্রমিকদের অতিরিক্ত ফি থেকে বাঁচানোর জন্য নিয়োগকর্তা প্রদত্ত নিয়োগ মডেল প্রতিষ্ঠা করেছে।
অভিবাসীদের ভবিষ্যত বিবেচনায় জাতীয় একটি নীতিও চালু করা হয়েছে। প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য গৃহীত একটি সমন্বিত পরিকল্পনা এটি। পাচার থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরাও এর অন্তর্ভুক্ত, যেন প্রত্যাবর্তনের পর তারা জীবিকার সুযোগ পায়।
ক্ষতিগ্রস্তদের প্রত্যাবাসন এবং আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা সহজ করার জন্য ২০১৫ সালে ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কাজ অব্যাহত রেখেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে পাচারবিরোধী সমন্বয় জোরদার করার জন্য ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে কাজ করছে।
প্রতিবেদনে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, দেশের চলমান সংস্কার, প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা সব ধরনের মানবপাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করার দৃঢ় রাজনৈতিক ইচ্ছার প্রতিফলন।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্তরে স্থান পাওয়ার বিষয়টি আইনের শাসন জোরদার, অভিবাসী কর্মীদের সুরক্ষা এবং পাচারের শিকারদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার প্রতি দেশটির ক্রমবর্ধমান প্রতিশ্রুতিকে নির্দেশ করে। সরকার মানবপাচার রোধে কাঠামোগত উন্নয়নে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে। সূত্র : বাসস
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বিশ্বে বিরাজমান অস্থিতিশীল অবস্থা দূরীকরণ ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বুদ্ধের শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
আগামীকাল ৫ অক্টোবর বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ‘শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা ও কঠিন চীবর দান’ উপলক্ষ্যে আজ দেয়া এক বাণীতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীকে তিনি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মহামতি গৌতম বুদ্ধ আজীবন মানুষের কল্যাণে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় অহিংসা, সাম্য ও মৈত্রীর বাণী প্রচার করেছেন। শান্তি ও সম্প্রীতির মাধ্যমে আদর্শ সমাজ গঠনই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য। তাঁর আদর্শ মানবিকতা ও ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল। তাঁর অহিংস বাণী ও জীবপ্রেম আজও বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সাথে হাজার বছরের বৌদ্ধ ঐতিহ্য মিশে আছে। প্রাচীনকালে বর্তমান বাংলাদেশের অঞ্চলটি এশিয়ার বৌদ্ধধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল, যার প্রমাণ হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার দেখা যায়।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আবহমানকাল ধরে এদেশে বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের মানুষ সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করে। জাতি হিসেবে আমাদের সকল অর্জন ও প্রাপ্তিতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অবদান রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশের মানুষের মাঝে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহিষ্ণুতা আরো দৃঢ় ও অটুট হবে এবং জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে একটি বৈষম্যহীন, ন্যায়ানুগ ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন রাষ্ট্র গঠনের অভিযাত্রা মসৃণ ও সাফল্যমন্ডিত হবে-এটাই আমার প্রত্যাশা।’
প্রধান উপদেষ্টা ‘শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা ও কঠিন চীবর দান’ উৎসবের সার্বিক সফলতা কামনা করেন। সূত্র : বাসস
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হবে। সবাই ভোট দিতে পারবেন। ভোট হবে দিনের বেলা, রাতের বেলা নয়। নতুন নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পুরোনো ঠিকানায় চলে যাব। আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। সুযোগ সব সময় আসে না। একবার সুযোগ আসতে ৫৪ বছর লেগে যায়। আবার কবে সুযোগ আসবে জানি না। তাই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ঐক্যবদ্ধ হই। ঐক্যই শক্তি, শক্তিই শান্তি।’
রাজধানীর বকশিবাজারে গতকাল বুধবার সকালে সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার ২৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে ৫৪ বছর পর সুযোগ এসেছে। এ সুযোগ কোনোভাবেই হাতছাড়া করা যাবে না।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘অতি আধুনিক শিক্ষার নামে মাদ্রাসা শিক্ষায় কোরান-হাদিস থেকে সরে গিয়ে কোণঠাসা হয়ে গেছে। মনে রাখতে হবে মাদ্রাসা শিক্ষা বিশেষায়িত শিক্ষা। আধুনিকতার পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষার মূল ভিত্তি থাকতে হবে কোরান এবং হাদিস, ফেকাহ।’
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশে আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি মাদ্রাসার ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। আলিয়া পদ্ধতির মাদ্রাসার অবদান স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মতো। অনেক যোগ্য ব্যক্তি এখানে তৈরি হয়েছেন। আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি মাদ্রাসার ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। আরবি, ইংরেজি জানলে বিভিন্ন দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও বৃত্তি পাবেন।’
রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনে যুগ যুগ ধরে আলিয়া মাদ্রাসা ভূমিকা রাখছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ধারা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা করি। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতির নামে দুর্বৃত্তপনা বন্ধ করতে হবে। এ সময় ঐক্যের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমদের আল্লাহ এক, কোরান এক, কেবলা এক। এই মিল আমাদের এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসবে।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, বাহিরের ইন্ধনে দুষ্কৃতকারীরা পূজাকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছিল। তারা সফল হতে পারেনি।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের ইছাপুরায় শ্রী শ্রী সার্বজনীন দুর্গাপূজা মণ্ডপ পরিদর্শনকালে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, পূজার শুরুতে ধর্ষণের ঘটনা প্রচার করে পূজাকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হয়েছে। এ কাজে বাহিরের ইন্ধন ছিল কিন্তু দুষ্কৃতকারীরা সফল হতে পারেনি।
এবার বাংলাদেশের সব জায়গায় ভালোভাবে উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে পূজা সম্পন্ন হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীল বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, দুর্গাপূজা ও বৌদ্ধদের বিজু উৎসব যাতে ভালোভাবে হতে না পারে তার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশের সহযোগিতায় কিছু সন্ত্রাসী এ ধরনের কাজ করেছে।
তিনি বলেন, স্থানীয় প্রশাসন এবং বিশেষ করে পূজা কমিটির সহযোগিতায় এ বছর শান্তিপূর্ণভাবে পূজা সম্পন্ন হয়েছে। এ জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা আক্তার, সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল ) মো. ইব্রাহিম, পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাদর পাল। সূত্র : বাসস
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দ্রুত প্রত্যাহার হবে এমন কোন সম্ভাবনা নেই।
বরিশাল নগরীর শংকর মঠ পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আজ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, যখন একটা দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়, স্থায়ী কি অস্থায়ী এ ধরনের প্রশ্ন থাকে। আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের উপর দেয়া নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়া হবে এরকম কোনো সম্ভাবনা আমি দেখছি না।
বিদেশি গণমাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অশান্ত পাহাড় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাহাড়কে যারা অশান্ত করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার।
তিনি আজ দুপুরে বরিশাল সার্কিট হাউজে পৌঁছে নগরীর নতুন বাজার সংলগ্ন শংকর মঠ পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সাঙ্গে সাক্ষাৎ ও কুশল বিনিময় করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, পুলিশ সুপার মো. শরীফ উদ্দীন, শংকর মঠ পূজা মণ্ডপ কমিটির সভাপতি কানু লাল সাহা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক তম্ময় তপু প্রমুখ।
বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থের একটি অংশ আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আশাবাদী অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি মঙ্গলবার এ কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মাধ্যমে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া ক্রমান্বয়ে এগোচ্ছে। এটি সময়সাপেক্ষ বিষয়, একদিনে সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, যারা বিদেশে টাকা পাচার করে তারা সাধারণত খুব কৌশলী ও প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ হয়। ফলে ফেরত আনার কাজ দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল হয়ে পড়ে।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘অর্থ ফেরত আনা মানে সুইস ব্যাংকে ফোন দিয়ে টাকা নিয়ে আসা নয়। আন্তর্জাতিক আইনি ও আর্থিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই এটি করতে হয়। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে কিছু অগ্রগতি হয়েছে এবং বেশ কিছু বিখ্যাত আইনি সংস্থার সঙ্গে আলোচনা চলছে। কিছু নির্দিষ্ট বিচার ব্যবস্থার সঙ্গেও আলোচনা এগোচ্ছে। আমরা আশা করি ফেব্রুয়ারির মধ্যে কিছু ফল পাওয়া যাবে।’
অর্থ উপদেষ্টা জানান, সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ইতোমধ্যে ১১-১২ টি মানিলন্ডারিং মামলা চিহ্নিত করেছে এবং সংশ্লিষ্ট সম্পদের তদন্ত অব্যাহত আছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পদ জব্দ করেছে, বিদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করেছে এবং সংশ্লিষ্টদের পাসপোর্ট ও বসবাসের তথ্য সংগ্রহ করেছে। এসব মামলা আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এগোচ্ছে।’
আগামী নির্বাচনের পর নতুন সরকার আপনাদের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে কি না-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘বাধ্য হয়ে তাদের চালিয়ে যেতে হবে। কারণ আমরা প্রক্রিয়াগুলো চালু করে গেলাম, সেটা অব্যাহত না থাকলে তো টাকা ফেরত আনতে পারবে না। তারা বসে থাকলে টাকা ফেরত আসবে না। আর যদি আনতে হয় এই প্রক্রিয়াগুলো মানতে হবে। এটা তো ইন্টারন্যাশনাল প্র্যাকটিস। আমরা যে প্রক্রিয়া শুরু করেছি তা বজায় রাখতে হবে।’
খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘পর্যাপ্ত মজুত থাকা সত্ত্বেও সরকার সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আতপ চালের একটি বাফার মজুত রাখি। অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটলে যাতে সংকট না হয় সে জন্য নীতিগতভাবে আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, সার বিশেষ করে-ডিএপি ও ইউরিয়া আমদানিতে সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সুখবর হচ্ছে-আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম কিছুটা কমেছে। আমরা বাজার স্থিতিশীল রাখতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করছি, পাশাপাশি যথেষ্ট চাল ও সারের মজুদও রাখছি।
সাম্প্রতিক বিবিএস প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সরকার শিশু ও মাতৃকল্যাণ বিষয়ে সতর্ক। তাই ভিজিএফ কর্মসূচি এবং উপকূলীয় ও হাওর অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, আসন্ন মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞাকালে জেলেদের প্রতিটি পরিবারকে ২০ কেজি চাল দেওয়া হবে।’
বর্তমান বাজার পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মজুত ভালো থাকায় চালের দাম সম্প্রতি কমেছে। তবে শাকসবজি ও অন্যান্য দ্রুত নষ্ট হওয়া পণ্যের দাম মৌসুমি কারণে ওঠানামা করে। পাইকারি ও খুচরা বাজারে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীর কারসাজি এখনো অব্যাহত রয়েছে। ‘ এ কারণেই আমরা এখনো পূর্ণ সাফল্য দাবি করতে পারছিনা,’ স্বীকার করেন তিনি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সিটি লেভেল কো-অর্ডিনেশন কমিটি (সিএলসিসি) এর প্রথম সভা আজ নগর ভবন অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ডিএসসিসি প্রশাসক জনাব মোঃ শাহজাহান মিয়া এঁর সভাপতিত্বে স্থানীয় সরকার বিভাগের "সিটি কর্পোরেশন নাগরিক সম্পৃক্ততকরণ নির্দেশিকা" এর আলোকে গঠিত সিএলসিসির ৭১ জন সদস্য উপর্যুক্ত সভায় অংশগ্রহণ করেন।
সিটি লেভেল কো-অর্ডিনেশন কমিটি (সিএলসিসি) সভায় আলোচনাপূর্বক উন্নয়ন ও সেবামূলক কর্মপরিকল্পনা সুপারিশ করতে পারে। এ সভায় সিটি কর্পোরেশনের বার্ষিক বাজেট ও উন্নয়ন পরিকল্পনা, আর্থিক বিবরণীসহ বার্ষিক অর্জন সম্পর্কিত প্রতিবেদন, নাগরিক জরিপ, সামাজিক সমস্যাবলি সমাধানের জন্য গৃহীত পদক্ষেপ, সিটি কর্পোরেশনের সেবাসমূহের মান উন্নয়ন, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও নাগরিকদের যথাযথভাবে সেবা প্রদানে চ্যালেঞ্জসমূহ আলোচিত হতে পারে।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে ডিএসসিসি প্রশাসক বলেন, "জুলাই পরবর্তী নাগরিক প্রত্যাশা পূরণে সিএলসিসি কমিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেননা তাদের মাধ্যমে সরাসরি নাগরিকদের মতামতের প্রতিফলন হয়।" এ সময় প্রশাসক ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ও জলাবদ্ধতা নিরসনে ডিএসসিসির গৃহীত পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরে জনগণকে এ বিষয়ে আরও সচেতন ও সম্পৃক্ত করতে সিটি লেভেল কো-অর্ডিনেশন কমিটির সদস্যদের সহযোগিতা কামনা করেন।
সভায় সদস্যবৃন্দ ডিএসসিসির সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা ও সুপারিশ প্রদান করেন এবং সিটি কর্পোরেশন নাগরিক জরিপে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে ডিএসসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোঃ জহিরুল ইসলাম, সচিব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, সকল বিভাগীয় প্রধান এবং মিস নাউকু আনজাই, টিম লিডার, সিফরসি২ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য