× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

মতামত
The plight of digital Bengali language
google_news print-icon

ডিজিটাল বাংলা ভাষার দুর্দশা

ডিজিটাল-বাংলা-ভাষার-দুর্দশা
ডিজিটাল বাংলার এই রূপ দেখে মনে হয়, দপ্তরগুলো যেন ধরেই নিয়েছে ওসব লেখা কেউ পড়বে না; পড়ে সময় নষ্ট করার মতো গাঁজাখুরি কাজ কেউ কোনোদিন করবে না! কিন্তু তারা কি ভেবেছেন, এই সরকারি বাংলা প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রের তরফে বাংলা ভাষার উপস্থাপন। ভুলে ভরা এই বাংলা কি এটাই বোঝায় না যে, রাষ্ট্র বা সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বাংলার কোনো অর্থমূল্য বা সাংস্কৃতিক মূল্য নেই।

গত দুই দশকে বাংলাদেশের বাংলা ভাষা নতুন এক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে; তার নাম হতে পারে ডিজিটাল বাস্তবতা। আমরা এখন যান্ত্রিকভাবে লেখাকে বিন্যস্ত করতে পারি। আর তাই মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটারের পর্দায় বাংলা ভাষাকে আমরা উৎপাদিত ও পুনরুৎপাদিত হতে দেখি। বই, পত্রিকাসহ বহুবিধ প্রকাশনা আজ ঠাঁই নিয়েছে ডিজিটাল পর্দায়। এক সময় সাইন বোর্ড, ব্যানার, পোস্টার, বিজ্ঞপ্তি লেখা হত হাতে। এখন আর তার প্রয়োজন পড়ে না।

প্রযুক্তির সহায়তায় প্রচারিত এই বাংলা ভাষাকেই বলতে পারি ‘ডিজিটাল বাংলা’। নতুন এই বাংলার প্রয়োগ ও প্রচারে সরকারি, বেসরকারি নানা উদ্যোগকে স্বাগত জানাতেই হবে। কিন্তু একইভাবে গভীর শোকের সঙ্গে বলতে হবে, ভালো নেই ডিজিটাল বাংলা ভাষা; যার বিস্মৃতি-অযোগ্য প্রমাণ: ‘মুজিব বর্ষ’কে ‘মুজিবর্ষ’ হিসেবে উপস্থাপন। সামান্য চোখ বুলালেই দেখতে পাব, ভাষাটি ডুবে আছে দুর্দশার অতলে। ডুবে থাকার সেই বৃত্তান্তে সরকারি বাংলাই সব চেয়ে বেশি দুর্দশাগ্রস্ত।

দুর্দশা চিহ্নিতকরণে প্রধান মানদণ্ড হতে পারে রীতিসিদ্ধ ব্যাকরণ এবং বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম। উল্লেখ্য যে, ২০১২ সালের ৩১ অক্টোবর সরকারি কাজে বাংলা একাডেমির প্রমিত বানানের নিয়ম অনুসরণের নির্দেশ জারি করেছিল বাংলাদেশ সরকার। সরকারি পরিপত্রে ‘বানানের শুদ্ধতা’ ও ‘ভাষারীতির সমরূপতা’র প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল। সরকারি ওই ঘোষণার লক্ষ্য ছিল, ‘সরকারি কাজে বাংলা ভাষার সামঞ্জস্য বিধান।’ এই পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ দুটি প্রকাশনা নিয়ে এসেছিল: সরকারি কাজে ব্যবহারিক বাংলা (২০১৫) এবং সরকারি কাজে প্রমিত বাংলা ব্যবহারের নিয়ম (২০১৭)। এসবের অনুসরণে বাংলাদেশের সরকারি ওয়েবসাইটগুলোর যে প্রান্তেই চোখ রাখি না কেন, দেখতে পাব ভুলের অবিরল চিহ্ন।

রাষ্ট্রপতির দপ্তর: শীর্ষ থেকে শুরু

রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের ওয়েব সাইটে চোখে পড়ে বানানের সমন্বয়হীনতা, ভুল বানান, সংশয়। আর তাই একই সঙ্গে সেখানে আছে: কার্যাবলি/ কার্যাবলী, গ্যালারি/ গ্যালারী। ভুল বানানে লেখা হয়েছে: মুল, পুনঃর্বাসন, হত্যাকান্ড, স্বীকৃতিস্বরুপ, গুরুর্তপূর্ন, শরনার্থী, ব্রাহ্মনবাড়িয়া। বাংলা একাডেমির প্রমিত বানান অনুসরণ না করে লেখা হয়েছে: জানুয়ারী, আবুধাবী, সৌদী আরব, জার্মানী, ইতালী। এমনকি ‘বাঙালি’কে লেখা হয়েছে ‘বাঙ্গালী’। বিভক্তির প্রয়োগে আছে দ্বিধা; তাই লেখা হয়েছে: রিপোর্ট এর, পাকিস্তান-এর। কিশোরগঞ্জ হয়েছে কিশোগঞ্জ। শব্দের শেষে বিসর্গ বর্জিত হলেও লেখা হয়েছে: মূলতঃ।

মহামান্য রাষ্ট্রপতির জীবনাখ্যান থেকে শুরু করে বিজ্ঞপ্তি ও লেখায় নজরে পড়বে নানা ধরনের ভুল। শিক্ষা সংক্রান্ত কাজ প্রসঙ্গে তিনটি লাইন লেখা হয়েছে; তার মধ্যে আছে দুটি ভুল। বহুবচন ব্যবহারে সমস্যা দেখা যাচ্ছে; যেমন : ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের চ্যান্সেলর।’ একই বাক্যে বসেছে ‘সকল’ ও ‘সমূহ’। শেষ বাক্যে সমাবর্তন শব্দটিকে লেখা হয়েছে ‘সমার্বতন’। রাষ্ট্রপতির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম বিষয়ে লেখা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে বঙ্গভবনে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, বিজয় দিবস, ঈদ-উল-ফিতর, ঈদ-উল-আযহা, দুর্গাপূজা, জন্মাষ্টমী, বুদ্ধপূর্ণিমা এবং বড়দিন উপলক্ষে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। দেশি বিদেশি বিভিন্ন শ্রেণি পেশার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।’ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে? নাকি বঙ্গভবনের উদ্যোগে? দেশি-বিদেশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন? নাকি ‘এ ধরনে’র অনুষ্ঠানে অংশ নেন?

বাদ যায়নি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ওয়েবসাইটেও খুঁজে পাওয়া যায় বিচিত্র ধরনের ভুল। আরবি-ফারসি উৎসজাত আপস শব্দটিকে লেখা হয়েছে আপোষ। দপ্তরগুলো সম্ভবত সমঝোতায় আসতে পারেনি যে, শহিদ লিখবে, নাকি শহীদ। অকারণে দুটি শব্দকে যুক্তভাবে করা হয়েছে। যেমন : এরফলে, বেশকিছু, শান্তিরবৃক্ষ। লিডারশিপ শব্দটিকে লেখা হয়েছে লিডারশীপ; যুক্তরাষ্ট্র হয়ে গেছে ‍যুক্তরাস্ট্র, স্বয়ম্ভরতা হয়ে গেছে সয়ম্ভরতা। প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে লেখা হয়েছে, ‘দরিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন তাঁর জীবনের অন্যতম লক্ষ্য।’ প্রশ্ন থেকে যায়, দরিদ্র্য বিমোচন, নাকি দারিদ্র্য বিমোচন? গরিবি না কমালে গরিব কমবে কী করে? প্রধানমন্ত্রীর বইগুলোর নাম উল্লেখ করতে গিয়ে যথাযথভাবে উদ্ধৃতিচিহ্ন ব্যবহার করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে পাওয়া যাচ্ছে: ধ্বস, অন্তভুক্তিকরণ, উদ্বাস্ত, মূদ্রা, স্বয়-সম্পূর্ণ, অন্তভুর্ক্ত, তদুর্ধ্ব ইত্যাদি বানান।

শিক্ষা সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়: ভাষার দুর্গতি

বাংলা ভাষার অপপ্রয়োগের মর্মান্তিক নিদর্শন শিক্ষা সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটগুলো। সেখানে বানান ও ব্যাকরণের অজ্ঞতা ব্যাপকভাবে চোখে পড়ে। পাশাপাশি আছে উদযাপন ও উদ্যাপন, ডিগ্রি ও ডিগ্রী। পাওয়া যাচ্ছে, সময়কালে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সাইটে প্রাপ্ত ভুল বানান : সম্মূখ, ওয়াকশপ, লীড, ভূক্তি, বিতরন, অংগ, পাঠ্যপুসত্মক, ডিগ্রী, ভূক্ত, পরিবীক্ষন, গ্রহন, কাযকারিতা, বস্তনিষ্ঠা, নৃতাত্বিক, ঝুকি, দেশাত্ববোধ, পরিমন্ডল, সংশিষ্ট, গুরত্ব, প্রনয়ণ, প্রনোদনা ইত্যাদি। তে, কে, এর রূপ হয়েছে এরকম: কর্মসূচি-তে, সমিতি-কে, যোগ্যতা-র। বাংলা ও রোমান হরফের মিশ্রণে লেখা হয়েছে: ‘32 হাজার 667 টি মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম স্থাপন করা হয়েছে।’ একটি অংশে বলা হয়েছে: ‘মাধ্যমিক পর্যায়ে পরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কারণ।’ অভিধানে সংস্কারণ শব্দটির হদিস পেলাম না। আরেকটি অংশে পেলাম, ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি/গভর্নিং বডি পূর্ণ:প্রতিষ্ঠা।’ কোলনযুক্ত বা কোলনছাড়া ‘পূর্ণ:প্রতিষ্ঠা’ বলতে কোনো শব্দ আছে কি?

‘এবং’ ব্যবহারের নমুনা দেখা যাক: ‘এই সংস্থা শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান সংরক্ষণ এবং প্রকাশ করে থাকে এবং মন্ত্রণালয়ের ইএমআইএস অংগ হিসেবে কাজ করে।’ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সম্পর্কে লেখা হয়েছে: ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এটি একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান।’ স্বায়ত্বশাসিত বানানটি ভুল। পাশাপাশি আছে, এটি ও একটি। একটু পরেই পাওয়া যাচ্ছে ‘ইহা’ – ‘ইহা মাধ্যমিক পর্যায়ের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মানসম্মত শিক্ষা উন্নয়নের নিমিত্ত পরিদর্শন ও নিরীক্ষার দায়িত্ব পালন করে থাকে।’

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় লিখেছে: মিসন, রুপকল্প, কর্মবন্টণ, অধিনস্ত। মন্ত্রী মহোদয়ের পরিচিতি অংশে লেখা হয়েছে, তিনি রৌমারী উপজেলার যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা ‘আহব্বায়ক’। আরও দুঃখজনক ব্যাপার এই যে, মন্ত্রী মহোদয়ের নামের নিচে লেখা ‘মন্ত্রনালয়’ বানানটি ভুল। আওয়ামী লীগ শব্দ দুটিকে বারবার যুক্তভাবে লেখা হয়েছে : আওয়ামীলীগ। জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি লিখেছে একাডেমী, স্বায়ত্বশাসিত, লক্ষ্য এবং উদ্দ্যেশ্য, সমুহ, অভিক্ষাপদ, প্রণয়ণ, অন্তর্ভূক্ত, বিশ্লেষন, বছরগুলু। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাইটে পাচ্ছি: বন্টন, অধীনস্ত, পরবর্তীতে, গনশিক্ষা, মন্ত্রনালয়, প্রাইমারী। বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিটের সাইটের ব্যানারে লেখা হয়েছে ‘পরিবীক্ষন।’ এই সাইটে মাননীয় মন্ত্রীর নামের নিচে গণশিক্ষা শব্দটিকে লেখা হয়েছে গনশিক্ষা। কোষ শব্দটিকে লেখা হয়েছে কোস: ‘পরিবীক্ষণ কোস/সেল’। মজার ব্যাপার হলো, অফিসের পরিচিত অংশে একই প্যারা দুবার লেখা হয়েছে। নিশ্চিতকরণ বানানটিকে লেখা হয়েছে নিশ্চিৎকরণ।

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সাইটে আছে রীতিগত মিশ্রণ। তবে সামগ্রীক, সহযোগীতা, সরকারী, বেসরকারী, কর্মকান্ড ইত্যাদি নজরে পড়ে সবার আগে। এই সংস্থার ‘আউট অব স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন প্রোগ্রাম’-এর সাইট জুড়ে চোখে পড়ে অসহনীয় ভুল। এমনকি প্রোগ্রামটির স্লোগানে থাকা দীক্ষা শব্দটিই লেখা হয়েছে ভুল বানানে: ‘সেকেন্ড চান্সে হবে দিক্ষা/ সকল শিশু পাবে শিক্ষা।’ আমার মনে হয়, প্রোগ্রামের উদ্যোক্তাদের সবার আগে শিক্ষা দেয়া দরকার। আরেকটি স্লোগানে আছে: ‘সেকেন্ড চান্সে লেখাপড়া/ গুনে মানে জীবন গড়া।’’ গুন বানানটি ভুল। শুধু তা-ই নয়, বৈশিষ্ট্যকে লেখা হয়েছে বৈশিষ্ঠ্য: ‘শিখন কেন্দ্রের বৈশিষ্ঠ্য’; বিশিষ্ট হয়েছে ‘বিশিষ্ঠ’, শ্রেণিকক্ষ হয়েছে ‘শ্রেনীকক্ষ’। আরও ভুল: বহির্ভুত, অভীষ্ঠ, বাস্তবায়ীত, সুষ্ঠ। এখানেও পাওয়া যাচ্ছে রীতিগত মিশ্রণ - ‘তাহাই কোহর্ট মডেল।’

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ লিখেছে: পরিক্ষা, দুরুহ, সৃতিময়, সূবর্ণজয়ন্তী। উচ্চশিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন লিখেছে: পরীক্ষন, অন্তর্ভূক্ত, প্রস্তত, জবাবদিহীতা, সুবিধাদী, কর্মকান্ড, প্রাসংঙ্গিক, উদিয়মান, জাতয়ি, শক্তিশালীকরন। পাশাপাশি আছে: মন্ত্রণালয়/ মন্ত্রনালয়, পূরণে/ পূরনে। বাংলা লেখায় বাংলা সংখ্যার পাশাপাশি ব্যবহৃত হয়েছে রোমান সংখ্যা : 1টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, 4 লক্ষ শিক্ষার্থী।

বৃক্ষ তোমার নাম কী?

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুটি শাখার একটিতে আছে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা। মাদ্রাসা শিক্ষা বিষয়ক আরেকটি প্রতিষ্ঠান ‘মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট’। আবার দেখা যাচ্ছে, কারিগরী শিক্ষা অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। প্রশ্ন জাগে, কোনটি ঠিক– মাদ্রাসা, না মাদরাসা? জাতীয় তথ্য বাতায়নে দ-এর নিচে হসন্ত প্রয়োগ করা হয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সাইটে এক জায়গায় লেখা হয়েছে: মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। আরও কিছু ভুল ও অপপ্রয়োগ: উল্লেখেযোগ্য কার্যাবলী, ভূক্ত, অধদিপ্তর, এমপওি, ভূক্তকরণ, লক্ষ্য-ও-উদ্দেশ্য, আধুনিকীকরন, যুগোপযোগি, জবাবদিহীতা, বাঙালী, বিবচনা, পূরন, গুনগতমান, তদারকী, কর্মকান্ড, প্রনয়ন, প্রতিষ্ঠান্ সমুহ, তৈরী, তত্বাবধান, অধিনস্ত। মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সাইটে ভুল বানানের ছড়াছড়ি। যেমন: ম্লোগান, চৌধরী, যতদুর, শীর্ষখ প্রকল্প, মোদরাসা, পুরুস্কার। অভ্যুদয় শব্দটিকে দুবার লিখেছে ‘অদ্ভুদয়’: ‘‘বাংলাদেশের অদ্ভুদয় ঘটে।’’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়: ভালো মন্দ মিলায়ে সকলি

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট জুড়েও আছে এ জাতীয় ভুল। যদিও এ মন্ত্রণালয়ের ভাষা বিষয়ক কাজ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এর অধীন আছে বাংলা ভাষা বাস্তবায়ন কোষ। মন্ত্রণায়লটির খুব প্রিয় শব্দ ‘এবং’; কয়েকটি উদাহরণ দেখা যাক, ‘সার্ভিস এবং পদের শ্রেণিবিন্যাস সংক্রান্ত নীতি এবং এগুলোর মর্যাদা নির্ধারণ।’, ‘দেশে এবং বিদেশে প্রকল্পে এবং চাকরিতে বিশেষজ্ঞ/পরামর্শক হিসেবে কাজ করার নিমিত্ত সরকারি কর্মচারীদের মনোনয়ন।’, ‘সরকারি কার্যাদি উন্নততর এবং সাশ্রয়ীভাবে নির্বাহ করার জন্য প্রশাসনিক গবেষণা, ব্যবস্থাপনা এবং সংস্কার।‘, ‘সরকার এবং স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা, কল্যাণ এবং যৌথ বিমা তহবিল এবং কল্যাণ মঞ্জুরি’র প্রশাসন এবং ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত বিষয়াদি।’ তারা লিখেছে: আত্তীকরণ, মঞ্জুরিকরণ, সহজিকরণ ও সহজীকরণ। বিভক্তির প্রয়োগ নিয়ে দ্বিধা তাদেরও আছে; তাই লেখা হয়েছে ‘পরিসংখ্যান-এর সংকলন’, ‘এই মন্ত্রণালয়ের’, ‘অন্যান্য ক্যাডার এর’। স্বায়ত্তশাসিত শব্দটিকে তারা ঠিকভাবে লেখেনি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ও লিখেছে: কর্ণার, গ্যালারী, দায়িত্বাবলী, শ্বাশত। এই মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমি লিখেছে, পরবর্তীতে, জৈষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা, শুধুমাত্র, গুরত্বপূর্ণ, নাগরিক এর, কর্মকান্ড, গুরূত্ব, ত্বাত্তিক, ইংরেজী, দূর্নীতি ইত্যাদি।

বানান কল্যাণ মন্ত্রণালয়?

সরকারি বাংলার দশা আরও বেশি নাজুক ছোট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরগুলোর ওয়েবসাইটে। অপপ্রয়োগ ও অসচেতনতায় বাংলা ভাষার চেহারা ম্লান ও বিষণ্ন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত পরিচিতিমূলক প্রথম বাক্যই ভুল; ওখানে বলা হয়েছে, ‘সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের পিছিয়েপড়া এবং অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মানবসম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, কল্যাণ, উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন সাথে সংশ্লিষ্ট একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়।’ এই বাক্যে লুকিয়ে আছে ব্যাকরণগত বিচ্যুতি। আছে বানান ভুল: কর্মকান্ড, জারী। অপপ্রয়োগ: সাম্যতাবিধান।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সাইটে পাচ্ছি: বদলী, আদেশাবলী, আপীল, গ্যালারী, দূর্নীতি, জরুরী। সমাজসেবা অধিদফতর লিখেছে: বিস্তৃত্তি, জাতিগঠণমূলক, স্বার্থক, আয়ত্বাধীন, কিডনী, প্রতিয়মান, সমুহ, গরীব, বেশী, মানদন্ড, বাড়ী, নিয়ন্ত্রনকারী। বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ লিখেছে: সমুহ, গরীব, কারিগরি, উদ্ভুত, নির্মান, জলবায়ূ, পরবর্তি, উদ্ভত, গবেষনা, প্রকাশণা, অনুদান বিতরন।

ভুলের সমুদ্রে মুদ্রণ ও প্রকাশনা

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের সাইটে ব্যবহৃত বাংলা ভুলে ভরা। প্রযুক্তির কারণে সৃষ্ট ভুল মেনে নেওয়া যায়, কিন্তু অজ্ঞতা ও অসচেতনতা ক্ষমার অযোগ্য। সাইটের ব্যানারে গণপ্রজাতন্ত্রী শব্দটিকে লেখা হয়েছে: গনপ্রজাতন্ত্রী। শিল্প এলাকা হয়েছে শিল্ল এলাকা। স্টেশনারি শব্দটির বহুরূপী বানান চোখে পড়েছে: স্টেশনারী, ষ্টেশনারী। ষ-কেন্দ্রিক ভুলের তালিকায় আছে: ষ্ট্যান্ডার্ড, ষ্ট্যাম্প। ভুলের তালিকায় আছে: সৃস্টি, ব্যবস্হাপনা, সংস্হার, নিম্নরুপ, নিবাচনী, প্রধানগন, বন্টন, গুরুত্বপূর্ন। বগুড়াকে লেখা হয়েছে বগুরা, চট্টগ্রাম হয়ে গেছে চট্রগ্রাম। রীতিগত মিশ্রণের কারণে লেখায় ঢুকে পড়েছে ইহা, তাঁহারা।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বিষয়ক সভার (১৮ মার্চ ২০২১) কার্যবিবরণীতে দেখা যাচ্ছে কয়েক রকম ভুল: সর্বশ্রেষ্ট বাঙ্গালি, অত:পর, আলোকসজ্জায় সজ্জিতকরণ, মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার, সুবর্ণজয়ন্তী কর্ণার। অথচ প্রতিষ্ঠানটি দাবি করেছে, ‘মানসম্মত মুদ্রণ, প্রকাশনা ও সরবরাহ সেবার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অনন্য ও নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান।’

মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়: এত ভুল সইব কেমন করে?

মন খারাপ করা ভুলের সমাহার দেখা যায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে। ক্রিয়ার কাল, বানান, শব্দ প্রয়োগ– প্রতিটি ক্ষেত্রে পাওয়া যাবে ব্যাপক ভুল। মন্ত্রণালয়ের কার্যাবলি বোঝাতে গিয়ে লেখা হয়েছে কার্য়াবলী। কর্মসূচি হয়েছে কর্মসূচী। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রাসঙ্গিক ২৩ পৃষ্ঠার একটি লেখায় আছে অসংখ্য ভুল বানান। বঙ্গ লিখতে গিয়ে যোগ করা হয়েছে বাড়তি চন্দ্রবিন্দু– বঙ্গেঁর। বাঙালি রূপ পেয়েছে বাঙ্গালী। ভুল বানানের ছোট্ট একটি তালিকা: স্বায়ত্বশাসন, বিশববিদ্যালয়, উন্মক্ত, আহবান, হত্যাকান্ড, বহির্বিশব, বিশেবর, খন্ড, প্রাঙ্গন। বিদেশি শব্দের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে ঈ-কার, ঊ-কার: জানুয়ারী, ফেব্রুয়ারী, উর্দূ। ইংরেজি উৎসজাত শব্দে ষ ব্যবহার করে লেখা হয়েছে: ব্যারিষ্টার, কমিউনিষ্ট। আবার দন্ত্য স-এর জায়গায় এসে গেছে মূর্ধন্য ষ: শাষকগোষ্ঠী। অপপ্রয়োগের উদাহরণ হিসেবে আছে: পরবর্তীতে, সময়কালে। গভীর মর্মবেদনার বিষয় হলো ব্যক্তিনামের ক্ষেত্রে ভুল; ইতিহাস প্রাসঙ্গিক লেখাটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামটি তারা সম্ভবত একবার শুদ্ধভাবে লিখতে পেরেছে।

তথ্য, সম্প্রচার, ভাষা ও প্রযুক্তি: বিরহী সম্পর্ক

বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ‘গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প পরিচালনা করছে। কিন্তু এই বিভাগের সাইটেও পাওয়া যাচ্ছে বানান-বিভ্রাট। তারা লিখেছে: কোম্পানী, ফেব্রুয়ারী, অভীষ্ট্য, সমুহ, ইর্ন্টানশীপ, ইংরেজী, স্বরুপ। এই সাইটে বঙ্গবন্ধু প্রসঙ্গে লেখা হয়েছে ‘হাজার বছরের শেষ্ঠ বাঙালি’। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের সাইটে পাচ্ছি: কর্মকান্ড, রক্ষণাবেক্ষন, উদ্ধুদ্ধকরণ, জনগন, বিরুপ, ক্ষতিগ্রস্থ, তদুর্ধ, সচ্ছ, পরবর্তীতে, মন্ত্রানালয়। লিখেছে: প্রাদুর্ভাবকালীন সময়ে, বাস্তবায়নের সময়কাল।

শব্দের শেষে বিসর্গ বাদ দেবার কথা থাকলেও তথ্য ও যোগাযোগ অধিদপ্তর লিখেছে: বিশেষতঃ। একটি বাক্য খেয়াল করা যাক: ‘তথ্য ও যো’গাযোগ প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট আইন, নীতিমালা, গাইডলাইন ও প্রমিতকরণ প্রস্তুতকরণ।’ ‘প্রমিতকরণ প্রস্তুতকরণ’ ব্যাপারটি কী? এরকম অনেক বাক্য পাওয়া যাবে, যেগুলো গঠনগত দিক থেকে দুর্বল ও দুর্বোধ্য হয়ে উঠেছে।

এবার বাংলা বাক্যে দেখা যাক ইংরেজির শোভা: ‘করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন সংগ্রহের শুরু থেকেই এই টিম কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম নিয়ে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট শুরু করে।’ মজার ব্যাপার হলো, এই অধিদপ্তর থেকে সম্পন্ন হয়েছে ‘সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ও ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাব স্থাপন’ প্রকল্প।

ভুল বানানের মেলা বসেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে। সিটিজেন চার্টারের পাতায় পাতায় দেখা যায় বানান বিষয়ক দ্বিধা; তারা লিখেছে: বানিজ্য, আমাদানী, রপ্তানি, অঙ্গিকারনামা, পরিমান, মুল কপি, চেকলিষ্ট, সলভেনসী, স্বচ্ছলতা। একই লেখায় রেখে দিয়েছে দুটি বানান: কাহিনী/কাহিনি, নির্মান/নির্মাণ; সরকারি ঠিক থাকলেও বেসরকারি হয়ে গেছে বেসরকারী।

কোলন, হাইফেনের অসতর্ক প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়। বিসর্গের বদলে কোলন এবং কোলনের বদলে বিসর্গ ব্যবহারের উদাহরণ দেখা যায় অহরহ। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় বিসর্গের বদলে লিখেছে কোলন; যেমন: আন্ত:ব্যক্তিক যোগাযোগ, আন্ত: বিদ্যালয়। কোলনের বদলে বিসর্গ উপস্থিত: অর্পিত দায়িত্বঃ। অন্য অনেক মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সাইটেও এ জাতীয় প্রয়োগ পাওয়া যাবে।

ভুলের জগতে পর্যটন

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ও বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের সাইট ঘুরে আসার মানে হলো ভুলের জগত পর্যটন করে আসা। ট্যুরিজম বোর্ড লিখেছে: প্রতিযোগীতা, সউদী আরব, মন্ডিত, প্রত্ম, সম্ভাভ্যতা, রিকোভারী, গভর্ণিং বডি, বৈশিষ্ঠ্যতা, বর্হি:বিশ্ব, ভাবমুর্তি, তিঁনি, কারন, শ্রমঘণ শিল্প, অনুষংগ, প্রনয়ণ, নির্মান, ক্ষতিগ্রস্থ, বিনির্মান, ঘনিষ্ট, কর্মসুচি, সভাপত্বিত, প্রতীকি, কর্ণার, কতৃক, ফেষ্টুন, এঁর, ডকুমেন্টারী, পুরুস্কার, সূযোদয়, উত্তোলণ, প্রাথর্না, ঘোষনা। পর্যটন করপোরেশন লিখেছে: সুদূর প্রসারি, সৃস্টি, আকর্ষন, বিপণী, আমদানী, শুরুকরে, স্বায়ত্বশাসিত, এষ্টেট, প্রনয়ণ, পর্যটনক, জলকষ্ঠ, জরীপ, রেললাইস। নিজেদের কাজ সম্পর্কে করপোরেশন লিখেছে, ‘প্রকৃতি ও নৃতাত্ত্বিক ভিত্তিক ইকো-ট্যুরিজমকে উনড়বয়ন করা।’

উনড়বয়ন? ফন্ট বদল? প্রযুক্তির হস্তক্ষেপ?

কলঙ্ক মাখা চাঁদ

অজস্র ভুল বানান ও অপপ্রয়োগের দৃষ্টান্ত বহন করছে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট। সুন্দর ও বহুমাত্রিক পরিকল্পনানির্ভর একটি তথ্যপূর্ণ সাইট হওয়া সত্ত্বেও এটি ভুল বানান ও ব্যাকরণের কাছে মার খেয়ে গেছে। ভুল বানানে লেখা হয়েছে: জাতিসত্ত্বা, ব্রষ্মপুত্র, উপনিত, নিপুন, রুপকল্প, আকষনীয়, কর্মকান্ড, অলঙ্ককরণ, মন্ডিত, গ্রামীন, কর্ণার। ‘দক্ষিণ-পশ্চিমে শীতলক্ষ্যা’কে লেখা হয়েছে ‘দক-পশ্চিমে থীতলক্ষ্যা।’’ মহিলারা হয়েছে মাহলারা। একই লেখায় আছে জামদানি ও জামদানী। সোনারগাঁয়ের সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গিয়ে লেখা হয়েছে ‘শ্যামললিমা’। বিভ্রান্তিকর একটি বাক্য পড়া যাক: ‘সেই সঙ্গে অত্যন্ত আকর্ষণীয় বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের বয়নশিল্পের কমপরিবেশ ও বিপণন চিত্রে তুলা থেকে বস্ত্র তৈরির সামগ্রিক ধারাবহিক চিত্র প্রদর্শন করা হয়েছে।’ দুর্বোধ্য বাক্যের নজির আরও আছে; আরও পড়া যাক: ‘‘সুশৃঙ্খল সূত্রমাফিক তৈরি করা হলেও কারুশিল্পে থাকে ঐতিহ্যের সমাচার। এরপরও তা সৃজনশীলতা পাশাপাশি বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাসে বাংলাদেশের কারুশিল্প ও কারুশিল্পীদের অবদান অনস্বীকার্য। আবহমানকাল থেকেই এদেশের লোক ও কারুশিল্প নিজ নিজ ধারায় প্রবহমান।’

পড়ুয়ারা কেমন পড়েন?

জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সাইটে আছে: অঙ্গণে, সংগহ, সাঈজ, মূদ্রণ, তরান্বিত, বেসরকারী, জনসাধারন। রীতিগত মিশ্রণও পাওয়া যাচ্ছে: প্রতিবছর সদস্যতা নবায়ন করতে হবে নতুবা সদস্যতা বাতিল বলে গণ্য হবে। গ্রন্থ ও উন্নয়ন যোগে গ্রন্থোন্নয়ন শব্দটিকে লেখা হয়েছে গ্রন্থন্নোয়ন।

গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের কাজ সংক্রান্ত তালিকায় প্রাপ্ত ভুল বানান: প্রদর্শণী, পুণর্গঠন, ভ্রাম্যমান। গ লোপ পেয়ে গণতন্ত্র শব্দটি হয়ে গেছে ‘ণতন্ত্র’। ইন্টারনেট সেবা প্রদানের নীতিমালার একটি পৃষ্ঠায় পাওয়া গেছে: পরবর্তীতে, চলাকালীন সময়, অনাকাংখিত, জরুরী। এ ছাড়া পাওয়া যাচ্ছে: বিচ্ছুরন, স্মরনিকা। কমপ্লেক্স হয়েছে কমপ্রেক্স।

ভয়ানক দৃষ্টিকটু ভুলের সমাহার দেখা যাচ্ছে আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের সাইটে। দপ্তরটি শুধু প্রাচীন নথিপত্রেরই আরকাইভ নয়, বাংলা ভাষার অপপ্রয়োগ ও ভুলেরও আরকাইভ। এখানে ঘুরে দেখা যাচ্ছে: বাড়ী, করাচী, বাঙ্গালি, পরিমান, সময়কাল, বিবরনী, ধারনা, কর্মকান্ড, পেীরসভা, অন্তর্ভূক্ত, উপনিবেশিক, প্রাকাশনা, পার্লামেন্টারী, ইউনিস্কো, বহুমূখী, চট্রগ্রম, শ্রেণিরর, গ্রন্থপুঞ্জি, পৃষ্টা, চাদা, আওতাভূক্ত, পত্রপেষ, আনুষাঙ্গিক, নির্মান, বিধী, অনুসরন, পান্ডিত, সংস্কৃতিক সংঘঠন, সংরক্ষন।

একটি বাক্য পড়া যাক: ‘বর্তমান জাতীয় গ্রন্থাগার আধুনিকায়ন শীর্ষক প্রকল্প দুটি চচঘই চলকান আছে।’ এর একটু পরেই আছে: ‘বর্তমানে জাতীয় গ্রন্থাগার মান উন্নয়ন শীর্ষক একটি চলমান চচঘই রয়েছে।’ আরেকটি বাক্য: ‘এখন জাতীয় গ্রন্থাগার ডিজিটাল লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার মাথ্যমে সরকারের ম্যনিফেষ্টো পুরুণের চেষ্টা কওে চলেছে।‘’

আরও কিছু

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের ওয়েব সাইট ঘুরেও দেখা যাবে ভুল। ব্যবহৃত হয়েছে ‘ব্যবহূত’। পাওয়া যাচ্ছে: আহবায়ক, উদ্যাপন, কংক্রীট, লাইব্রেরী। বিখ্যাত স্লোগানটিতে রাষ্ট্রভাষার বদলে পাওয়া যাচ্ছে: রাষ্টভাষা বাংলা চাই। র, য় বিভক্তি বিষয়ক সংকট পাওয়া যাচ্ছে: ইউনেস্কো-য়, ইউনেস্কো-র। বাংলাদেশ টেলিভিশন লিখেছে: উদ্ধোধন, ঘন্টা, পরবর্তীতে, অনুষ্ঠানসুচি, প্রচারসুচি, বহি:বিশ্ব, ইটালী, পান্ডুলিপি, স্পন্সরশীপ, তৈরী, পুন:প্রচার, এজেন্সী, রিয়োলিটি শো। চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর লিখেছে: গণযোযোগ, সমপৃক্ত, কর্মকান্ড। প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ লিখেছে গুরুপূর্ণ। শিল্পকলা একাডেমি লিখেছে: সংরক্ষন, উদ্দেশে। একই লেখায় একই সঙ্গে আছে একডেমি ও একাডেমী।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় লিখেছে: সার্কিট হাইজ, কমপ্রেক্স, বাড়ী, রক্ষণাবেক্ষন, দায়িত্ববলী, বাড়ি-ঘড়, ব্যবস্থপনা, পূনর্বাসন, পরিত্যত্ত, সমুহ, গবেষনা, অনুপ্রেরনা, তারুন্য, তৃণমুল, গুন, আবৃত্তি চর্চ্চা, মূলত: গুন; এই মন্ত্রণালয়ের সাইটের ব্যানারে লেখা হয়েছে ‘গৃহায়ন’; জাতীয় তথ্য বাতায়নে লেখা হয়েছে ‘গৃহায়ণ’। তারা বঙ্গবন্ধুর নাম লিখেছে শেখ মজিবুর রহমান।

ডিজিটাল বাংলা কি দায়সারা বাংলা?

ব্যাকরণ কিংবা নিয়ম না জানার ফলেই ভুলগুলো ঘটেছে, তাও নয়; এক ফরম্যাটের ফাইল থেকে অন্য ফরম্যাটের ফাইলে তথ্য গ্রহণ, বর্জন ও সংযোজনের কারণেও ভাষার বিচ্যুতি তৈরি হয়েছে। বাংলার ভেতর ঢুকে গিয়েছে রোমান হরফ কিংবা অন্য কোনো প্রতীক। আবার ভুল ফরম্যাটে তৈরিকৃত একটি জাতীয় বিজ্ঞপ্তি, নকশা, লোগো, টেমপ্লেট সব দপ্তরে প্রচারিত ও প্রদর্শিত হওয়ায় সেসব ভুল স্থায়িত্ব পেয়ে গেছে। যেমন: গ্যালারী, সিষ্টেম, ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় ইত্যাদি। এসব লেখা ‘ভুল’ কিংবা ‘নিয়মসিদ্ধ’ নয়, এই কথাটিই হয়তো কারো মনে পড়েনি। কিন্তু ভুল যে কারণেই ঘটুক না কেন, ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত তা সংশোধন করে নেওয়ার সুযোগ ছিল। অথচ বছরের পর বছর থেকে গেছে একই ভুল। তাহলে কি সরকার, দপ্তর বাংলা ভাষার মান্যায়ন প্রক্রিয়াকে মেনে নেয়নি? কিংবা রাষ্ট্রের আইন এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন মেনে নেয়নি? রাষ্ট্র তো প্রমিত বাংলার সমর্থক।

কিছু সাইটের প্রশংসা না করলেই নয়। শব্দ, বানান, ব্যাকরণ, বিন্যাসগত দিক থেকে বাংলা একাডেমি, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের সাইট বেশ পরিচ্ছন্ন ও সুপরিকল্পিত। প্রাসঙ্গিকভাবে বলা দরকার, সরকারের জাতীয় তথ্য বাতায়ন সাইটটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। খুব সহজেই দরকারি তথ্য এতে পাওয়া যায়। কিন্তু সামগ্রিকভাবে বলতেই হবে সরকারি বাংলার ভেতর কোনো সমন্বয় নেই। বানানের ব্যাপারে মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলো স্বেচ্ছাচারী। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ঘুরলে দেখা যাবে একই শব্দের দুই-তিন রকম বানান। বাঙালি, বাঙালী, বাঙ্গালি, বাঙ্গালী নিয়ে মন্ত্রণালয়গুলোর ব্যাপক দ্বিধা। বহুবচনবাচক শব্দ নিয়েও আছে সংশয়; জাতীয় তথ্যবাতায়নে লেখা হয়েছে নীতিমালাসমূহ। মালার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সমূহ। শব্দনির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের দরকারি মনোযোগ নেই। ইংরেজি থেকে বাংলা করতে গিয়ে সংস্কৃতের কাছে হাত পেতে বক্তব্যকে জটিল করে তুলেছে কোনো কোনো দপ্তর। ‘মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু কর্নার’ লিখতে গিয়ে অনেক অফিস-দপ্তরই পীড়িত হয়েছে। কর্নার ও কর্ণার– দুভাবেই লেখা হয়েছে। লেখা হয়েছে: মুজিব বর্ষ ও মুজিববর্ষ।

‘র’ বিভক্তির প্রয়োগ নিয়ে কোনো কোনো দপ্তরের সংশয় চলে গেছে উন্মাদনার পর্যায়ে। লেখা হয়েছে: শেখ মুজিবুর রহমান এঁর, সংগ্রামী জীবনের এর উপর, দীপু মনি-র। দুঃখজনক তথ্য এই, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে লেখা হয়েছে ‘স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্ত্রী’।

সব মিলিয়ে ডিজিটাল বাংলাকে বলা চলে ‘দায়সারা বাংলা’; এই বাংলার চর্চাকারীদের ভাবনা যেন অনেকটা এরকম: বাংলাদেশের একটি প্রধান ভাষা বাংলা– বাংলায় না লিখলে কেমন দেখায়, তাই লিখে দাও কয়েক ছত্র। কে বা কারা যে লেখে এই সব এক-দুই পাতার পরিচিতিমূলক গদ্য, সেও এক গভীর বিস্ময়। কেউ কেউ বলে থাকেন অফিসের কেরানিকুল এসব লিখে থাকেন, কম্পোজ করে থাকেন, বড় কর্তারা এসব পড়েও দেখেন না, কারণ পড়ে দেখার সময় তাদের নেই। কিন্তু এই বড় কর্তা ও ছোট কর্তার ভারসাম্যহীনতা কি কোনো অজুহাত হতে পারে?

অনুসিদ্ধান্ত

ডিজিটাল বাংলার দশা ও দুর্দশাকে ভাষাবিজ্ঞানের অবস্থান থেকে ভাবা যেতে পারে। কয়েকটি অনুসিদ্ধান্ত আমার মধ্যে তৈরি হয়েছে:

এক. বাংলাদেশে প্রচলিত বাংলার প্রমিতায়ন বা মান্যায়ন বিষয়ক ভাবনার প্রয়োজন আছে। নতুন প্রযুক্তি, গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিদ্যাজাগতিক পরিবর্তনের সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলাদেশের বাংলা ভাষার মান্যায়ন প্রসঙ্গে দরকারি চিন্তা করা যেতে পারে।

দুই. প্রমিতায়ন সংশ্লিষ্ট কাজের একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলা একাডেমিকে চিহ্নিত করার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সকল ধরনের শিক্ষাকেন্দ্র, শিক্ষা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান, ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম বিষয়ক প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন ইত্যাদির সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। ভাষার প্রয়োগ ও অপ্রয়োগকে একটি সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে সবার আগে।

তিন. প্রযুক্তি মাধ্যমে বাংলা সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে সক্ষম হয়নি। ভাষাবিজ্ঞানের ভাষা-পরিকল্পনা নামক শাস্ত্রটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাষার আধুনিকায়নের কথা বলে থাকে। বাংলাদেশি বাংলার আধুনিকায়ন জরুরি। বাংলা ভাষা ও প্রযুক্তির সম্পর্ক বিষয়ক গবেষণা একান্তভাবে প্রযুক্তিবিদ কিংবা সরকারি আমলার কাজ নয়।

ডিজিটাল বাংলার এই রূপ দেখে মনে হয়, দপ্তরগুলো যেন ধরেই নিয়েছে ওসব লেখা কেউ পড়বে না; পড়ে সময় নষ্ট করার মতো গাঁজাখুরি কাজ কেউ কোনোদিন করবে না! কিন্তু তারা কি ভেবেছেন, এই সরকারি বাংলা প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রের তরফে বাংলা ভাষার উপস্থাপন। ভুলে ভরা এই বাংলা কি এটাই বোঝায় না যে, রাষ্ট্র বা সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বাংলার কোনো অর্থমূল্য বা সাংস্কৃতিক মূল্য নেই। তারা বাংলা ভাষার প্রমিত রূপ ব্যবহারের কথা বলবেন, অথচ রাষ্ট্রের দপ্তরে তা যথাযথভাবে ব্যবহার করবেন না– এই দ্বিচারিতা অগ্রহণযোগ্য। বাংলা ভাষাকে তারা নিয়ে এসেছেন হাস্যকর স্তরে। ভাষাজ্ঞানের অভাব, অদক্ষতা কিংবা অসচেতনতা– যা-ই বলি না কেন, এসব প্রকৃতপক্ষে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের দিক থেকে সংঘটিত মারাত্মক অপরাধ। শুধু অপরাধ নয়, বাংলা ভাষা, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ প্রতারণা।

আরও পড়ুন:
ভাষাশহীদদের আত্মত্যাগে বাংলা পেয়েছে বিশ্ব মর্যাদা: পররাষ্ট্র সচিব
ভাষার ‘রাজা’ এশিয়া
ভাষাশহীদ সালামের ছবি অবশেষে বিশেষ প্রদর্শনীতে
ফটিকছড়িতে বিএনপির ওপর ‘ছাত্রলীগের’ হামলা, আহত ৬
নোম্যান্সল্যান্ডে দুই বাংলার মানুষের মিলনমেলা

মন্তব্য

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ

মতামত
Live to appeal hearing next Sunday in the August 28 grenade attack case

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় লিভ টু আপিল শুনানি আগামী রোববার

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় লিভ টু আপিল শুনানি আগামী রোববার

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল আগামী রোববার শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে।

আসামি পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আজ জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চে শুনানির জন্য আপিলটি ছিলো। কিন্তু এই মামলায় হাইকোর্টের অথর জাজ বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান আজ আপিল বিভাগের বেঞ্চে ছিলেন।

নিয়ম অনুযায়ী হাইকোর্টে রায় দানকারী বিচারপতি একই মামলা আপিল বেঞ্চে শুনানি গ্রহণ করতে পারেন না।

এজন্য আগামী রোববার পুনর্গঠিত বেঞ্চে আপিলটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে। আদালত বিষয়টিতে আজ নট টুডে আদেশ দিয়েছেন।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হন। ওই গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। ২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সিআইডি এই মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দিলে শুরু হয় বিচার।

তবে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই মামলায় অধিকতর তদন্তে আসামির তালিকায় যুক্ত করা হয় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে।

দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন আলোচিত মামলার রায় দেন।

আলোচিত ওই রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন- আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজি’র সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. উজ্জল, এনএসআই-এর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম ও হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ।

বিচারিক আদালতের রায়ে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন ও ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। সে রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামীরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই ও রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু।

এছাড়া, বিচারিক আদালতের রায়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) মো. আশরাফুল হুদা ও শহিদুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, ডিজিএফআই-এর মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, ডিএমপি’র সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, আরেক সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডি’র সাবেক বিশেষ সুপার মো. রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ ও সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এই মামলার আরেকটি ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন আদালত।

বিচারিক আদালতে এই রায়ের দেড় মাসের মাথায় ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্সসহ মামলার নথি হাইকোর্টে আসে। ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের আপিল ও জেল আপিল শুনানি শুরু হয়। বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি চলছিল।

তবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর হাইকোর্ট বেঞ্চ পুনর্গঠন হলে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি হয়। শুনানি শেষে গত ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এই মামলার সব আসামীকে খালাস দিয়ে রায় দেন। সে রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

মন্তব্য

মতামত
Earthquake

দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্প

দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্প প্রতীকী ছবি
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের ডেটা অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের সাগাইংয়ের ১৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে।

ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।

ভূমিকম্পটি শুক্রবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে অনুভূত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের ডেটা অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের সাগাইংয়ের ১৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে।

এ ভূমিকম্পে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন:
জাপানে শক্তিশালী ভূমিকম্প, সুনামি সতর্কতা
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প
চীনে ভূমিকম্পে নিহত ৫৩, আহত ৬২
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প
বছরের শুরুতেই ভূমিকম্পে কাঁপল সিলেট

মন্তব্য

মতামত
The United States will pay and 1 million for the Rohingya

রোহিঙ্গাদের জন্য ৭৩ মিলিয়ন ডলার দেবে যুক্তরাষ্ট্র

রোহিঙ্গাদের জন্য ৭৩ মিলিয়ন ডলার দেবে যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা ক্যাম্প। ছবি: বাসস
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক্সে একটি পোস্টে বলেন, ‘বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিওইএফ) মাধ্যমে এ খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা ১০ লাখেরও বেশি মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা প্রদান করবে। এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদাররা এ ধরনের জীবন রক্ষাকারী সহায়তার মাধ্যমে বোঝা ভাগ করে নেওয়ার সঙ্গে যুক্ত।’

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত বৃহত্তম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের সাহায্য কমে যাওয়ার ফলে সংকট আরও গভীর হওয়ার উদ্বেগের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, তারা জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ৭৩ মিলিয়ন (সাত কোটি ৩০ লাখ) ডলার নতুন আর্থিক সহায়তা দেবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক্সে একটি পোস্টে বলেন, ‘বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিওইএফ) মাধ্যমে এ খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা ১০ লাখেরও বেশি মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা প্রদান করবে।

‘এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদাররা এ ধরনের জীবন রক্ষাকারী সহায়তার মাধ্যমে বোঝা ভাগ করে নেওয়ার সঙ্গে যুক্ত।’

সিনহুয়া জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার প্রশাসন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ এজেন্ডার অংশ হিসেবে বিদেশি সহায়তায় ব্যাপক কাটছাঁট এবং ফেডারেল ব্যয় ব্যাপকভাবে হ্রাস এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কিছু অংশ ভেঙে ফেলার বিস্তৃত প্রচেষ্টার মধ্যেই এ অনুদান দেওয়া হলো।

জাতিসংঘের দুটি সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছিল যে, তহবিলের ঘাটতি গত আট বছর ধরে প্রতিবেশী মিয়ানমারে সহিংসতার কারণে পালিয়ে আসা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য রেশনের পরিমাণ কমিয়ে দেবে।

রোহিঙ্গারা আশঙ্কা করছেন, তহবিল হ্রাসের ফলে ক্ষুধা পরিস্থিতির অবনতি হবে। গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা এবং জ্বালানি হ্রাস পাবে।

পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সবচেয়ে বড় সহায়তা প্রদানকারী দেশ ছিল। প্রায় ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়ে আসছে দেশটি। কিন্তু জানুয়ারিতে ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর সাম্প্রতিক তহবিল স্থগিত করার ফলে কমপক্ষে পাঁচটি হাসপাতাল তাদের সেবা কমিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছে।

ট্রাম্প ও বিলিয়নেয়ার মিত্র ইলন মাস্ক প্রধান মার্কিন বৈদেশিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডি বন্ধ করে দিয়েছেন এবং এর অবশিষ্টাংশগুলোকে পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে একীভূত করেছেন। শত শত কর্মী এবং ঠিকাদারকে বরখাস্ত করেছেন এবং কোটি কোটি ডলারের পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছেন, যার ওপর বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ নির্ভরশীল।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফেব্রুয়ারিতে সমস্ত জীবন রক্ষাকারী সহায়তা এবং এ ধরনের সহায়তা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় যুক্তিসঙ্গত প্রশাসনিক খরচ মওকুফ করেছিলেন।

ওয়াশিংটন টাইমস জানায়, এ মাসের শুরুতে ইউএসএআইডি ভেঙে দেওয়ার তত্ত্বাবধানকারী ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তা রোহিঙ্গাদের জন্য পর্যায়ক্রমে সাহায্য বন্ধের প্রস্তাব করেছিলেন।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা হ্রাস করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে।

কক্সবাজার উপকূলের বিভিন্ন শিবিরের বাসিন্দারা এখন জনপ্রতি মাসিক ১২ ডলার করে খাদ্য বরাদ্দ পাবেন, যা আগের ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কম।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘ডব্লিউএফপি একটি চিঠিতে এই সিদ্ধান্তের কথা আমাদের জানিয়েছে, যা ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।’

তিনি আরও বলেন, ভাসানচরে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা জনপ্রতি ১৩ ডলার করে পাবে, যা কক্সবাজারের তুলনায় এক ডলার বেশি।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা কমানোর পরিকল্পনা ডব্লিউএফপি পূর্বে জানানোর পর এ পরিবর্তন এসেছে।

গত ৫ মার্চ বাংলাদেশের শরণার্থী কমিশন ডব্লিউএফপি থেকে একটি চিঠি পায়, যেখানে বলা হয়, তহবিল সংকটের কারণে এপ্রিল থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য মাসিক খাদ্য বরাদ্দ জনপ্রতি ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলার করা হবে।

চিঠিতে শরণার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

গত ১৪ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন।

তার সফরের সময় তাকে ছয় ডলারে রোহিঙ্গারা কী খাবার পাবে তার বিস্তারিত বিবরণ উপস্থাপন করা হয়েছিল। সে সময় অপর্যাপ্ত পরিমাণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন:
ঢাকা-বেইজিংয়ের মধ্যে ৯ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর
ঋণের সুদহার কমাতে ইতিবাচক সাড়া চীনের, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতার আশ্বাস
২৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল রিজার্ভ
রোহিঙ্গাবাহী নৌকাডুবি: উদ্ধার ২৫, বিজিবি সদস্যসহ নিখোঁজ অনেকে
যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে সতর্কতা যুক্তরাজ্য ও জার্মানির

মন্তব্য

মতামত
The government is working to implement the demands of the workers Home Ministry

শ্রমিকদের দাবি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

শ্রমিকদের দাবি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের লোগো। ফাইল ছবি
বিবৃতিতে বলা হয়, ‌‘গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানার শ্রমিকদের পাওনা বেতন-ভাতাদিসহ যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক ও একমত। শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে এবং এ ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে মালিকপক্ষ ও বিজিএমইএকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে এবং তাদের কর্মকাণ্ড মনিটর করা হচ্ছে।’

গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানার শ্রমিকদের পাওনা বেতন-ভাতাসহ যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে সরকার আন্তরিক ও একমত বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‌‘গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানার শ্রমিকদের পাওনা বেতন-ভাতাদিসহ যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক ও একমত। শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে এবং এ ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে মালিকপক্ষ ও বিজিএমইএকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে এবং তাদের কর্মকাণ্ড মনিটর করা হচ্ছে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘অন্যায্য ও অযৌক্তিক দাবির নামে গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি, অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ, নৈরাজ্য ও সহিংসতা কোনোভাবেই কাম্য নয় এবং তা কখনোই মেনে নেয়া হবে না।

‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় সরকার তা কঠোরভাবে প্রতিহত করবে। গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানায় সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখা এবং দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে সরকার এ বিষয়ে মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষ উভয়ের সহযোগিতা কামনা করছে।’

আরও পড়ুন:
গাজীপুরে শ্রমিক বিক্ষোভ, ছুটির পর চালু বিভিন্ন কারখানা
বকেয়া বেতন পরিশোধের আশ্বাস, রেলের অস্থায়ী শ্রমিকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার
ঈদ বোনাসসহ বিভিন্ন দাবিতে গাজীপুরে শ্রমিক বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ
ঐতিহ্য ও আভিজাত্যে মোড়া লা রিভের ঈদ কালেকশন
টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ধর্মঘট টেকনাফ স্থলবন্দরের শ্রমিকদের

মন্তব্য

মতামত
Environment adviser

আন্তসীমান্ত বায়ুদূষণ রোধে পদক্ষেপের আহ্বান পরিবেশ উপদেষ্টার

আন্তসীমান্ত বায়ুদূষণ রোধে পদক্ষেপের আহ্বান পরিবেশ উপদেষ্টার পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ছবি: ইউএনবি
তিনি দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর কাঠমান্ডু রোডম্যাপ ও অন্যান্য সমঝোতার কথা উল্লেখ করে বলেন, এগুলো যথেষ্ট নয়, আরও জোরালো উদ্যোগ প্রয়োজন।

পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আন্তসীমান্ত বায়ুদূষণ মোকাবিলায় কার্যকর আঞ্চলিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশের বায়ুদূষণের ৩০-৩৫ শতাংশ আসে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে। তাই এ সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক আলোচনার গণ্ডি পেরিয়ে বাস্তব পদক্ষেপ ও আঞ্চলিক সহযোগিতা জরুরি।

তিনি দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর কাঠমান্ডু রোডম্যাপ ও অন্যান্য সমঝোতার কথা উল্লেখ করে বলেন, এগুলো যথেষ্ট নয়, আরও জোরালো উদ্যোগ প্রয়োজন।

কলম্বিয়ার কার্টাগেনায় অনুষ্ঠিত ডব্লিউএইচওর দ্বিতীয় বৈশ্বিক সম্মেলনের বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া সাইড ইভেন্টে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে বৃহস্পতিবার ভোরে পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

ঢাকাস্থ বাসভবন থেকে সংযুক্ত হয়ে তিনি বাংলাদেশের বায়ুদূষণ সমস্যা, বিশেষ করে ঢাকার ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন।

উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশের বহুমাত্রিক বায়ুদূষণ সমস্যা মোকাবিলায় বায়ুমান নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা ডব্লিউএইচওর অন্তর্বর্তীকালীন লক্ষ্যমাত্রার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ আইনি বিধিমালায় দূষণকারী খাতগুলোর জন্য নির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের কাঠামো তৈরি করা হয়েছে।

তিনি জানান, ২০২৪ সালে চূড়ান্ত হওয়া জাতীয় বায়ুমান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার বাস্তবায়ন রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পিছিয়ে ছিল, তবে এখন তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো মানুষের দূষণজনিত ঝুঁকি কমানো ও পরিষ্কার বায়ুর দিন বৃদ্ধির মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

পরিবেশ উপদেষ্টা আরও জানান, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রকল্প চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, যা সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে শিগগিরই বাস্তবায়ন শুরু হবে। এ প্রকল্প নিয়ন্ত্রক কাঠামো শক্তিশালী করা, আইন প্রয়োগ জোরদার করা, শিল্প কারখানায় দূষণ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ এবং গণপরিবহন খাত আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব দেবে।

তিনি ঢাকার আশেপাশের এলাকাগুলোকে ইটভাটামুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করার পরিকল্পনার কথা জানান, যেখানে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ থাকবে।

এ ছাড়া ২০২৫ সালের মে থেকে পুরনো বাস ধাপে ধাপে তুলে দেওয়া হবে, যা পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে।

তিনি বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ ধুলাবালি দূষণ রোধে ঢাকা শহরের খোলা সড়কগুলোতে সবুজায়নের উদ্যোগ এবং রাস্তা পরিস্কারে আরও শ্রমিক নিয়োগের পরিকল্পনার কথা জানান।

উপদেষ্টা জানান, অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানের ফলে এরই মধ্যে বায়ুমানের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এ অগ্রগতি ধরে রাখতে কঠোর নজরদারি ও খাতগুলোর আধুনিকায়ন জরুরি।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ মানুষ বায়ুদূষণের কারণে মারা যায় এবং ঢাকার মতো দূষিত শহরগুলোতে মানুষের গড় আয়ু ৫-৭ বছর কমে যাচ্ছে। এই সংকট আমাদের সবার জন্য, আমাদের শিশু, বাবা-মা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকি। নিষ্ক্রিয়তার মূল্য অনেক বেশি। আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমি আশাবাদী। কারণ আমি বিশ্বাস করি, এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। প্রযুক্তি ও বিকল্প ব্যবস্থা আমাদের হাতে রয়েছে, শুধু প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়ন দরকার।

‘বায়ুদূষণ শুধুই পরিবেশগত ইস্যু নয়, এটি মানবিক সংকট।’

সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি, পরিবেশ ও জ্বালানি খাতের নীতিনির্ধারক, আন্তর্জাতিক ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, গবেষক, স্থানীয় প্রশাসন, পরিবহন ও শিল্প খাতের বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

তারা দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণ রোধে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।

আরও পড়ুন:
‘অস্বাস্থ্যকর বাতাস’ নিয়ে বিশ্বে পঞ্চম দূষিত শহর ঢাকা
বায়ুদূষণে বিশ্বে প্রতিদিন ২ হাজার শিশুর মৃত্যু: প্রতিবেদন
ছুটির দিনে বাতাসের নিম্ন মানে সপ্তম ঢাকা
সংবেদনশীল জনগোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর ঢাকার বাতাস
ছুটির দিনে মানে উন্নতি, তবু ‘অস্বাস্থ্যকর’ ঢাকার বাতাস

মন্তব্য

মতামত
Holy Lilatul Kadar today

পবিত্র ‘লাইলাতুল কদর’ আজ

পবিত্র ‘লাইলাতুল কদর’ আজ প্রতীকী ছবি
মহান আল্লাহ লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম।

পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর বৃহস্পতিবার। এর অর্থ ‘অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত’ বা ‘পবিত্র রজনী’।

আজ সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হবে কদরের রজনী।

যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে সারা দেশে রাতটি পালন করা হবে।

মহান আল্লাহ লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম।

এ রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষণ করা হয়। নির্ধারণ করা হয় মানবজাতির ভাগ্য।

৬১০ সালে কদরের রাতেই মক্কার নূর পর্বতের হেরা গুহায় ধ্যানরত মহানবী হযরত মুহাম্মদের (সা.) কাছে সর্বপ্রথম সুরা আলাকের পাঁচ আয়াত নাজিল হয়। এরপর আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)-এর বহনকৃত ওহির মাধ্যমে পরবর্তী ২৩ বছর ধরে মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট আয়াত আকারে বিভিন্ন সুরা নাজিল করা হয়।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কি জানো? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে।

‘শান্তিই শান্তি, বিরাজ করে ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত। (সূরা আল- কদর, আয়াত ১-৫)।’

হাদিসে বর্ণিত আছে, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ ১০ রাতে লাইলাতুল কদর সন্ধান করো (বুখারি ও মুসলিম)।’

মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় পবিত্র রাতটি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটিয়ে দেন। কামনা করেন মহান রবের অসীম রহমত, নাজাত, বরকত ও মাগফিরাত।

এরই ধারাবাহিকতায় আজ রাত থেকে পরের দিন ভোররাত পর্যন্ত মসজিদসহ বাসা-বাড়িতে এবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও আখেরি মোনাজাত করবেন তারা।

এই উপলক্ষে শুক্রবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে রাতব্যাপী ওয়াজ মাহফিল, ধর্মীয় বয়ান ও আখেরি মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে।

এ ছাড়া দেশের সব মসজিদেই তারাবির নামাজের পর থেকে ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন থাকবে।

পবিত্র লাইলাতুল কদর/শবে কদর উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি রেডিওগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে।

এ ছাড়া সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করা হবে।

মন্তব্য

মতামত
The chief adviser to create a clear roadmap to build a prosperous Asia

সমৃদ্ধ এশিয়া গড়তে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

সমৃদ্ধ এশিয়া গড়তে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার চীনের হাইনানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে বৃহস্পতিবার বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: পিআইডি
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘পরিবর্তনশীল এ বিশ্বে এশীয় দেশগুলোর ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। আমাদের অবশ্যই একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে যা অভিন্ন ভবিষ্যৎ এবং যৌথ সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে।’

এশীয় দেশগুলোকে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও যৌথ সমৃদ্ধির জন্য সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

চীনের হাইনানে বৃহস্পতিবার বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘পরিবর্তনশীল এ বিশ্বে এশীয় দেশগুলোর ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। আমাদের অবশ্যই একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে যা অভিন্ন ভবিষ্যৎ এবং যৌথ সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে।’

আর্থিক সহযোগিতা প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এশিয়াকে অবশ্যই একটি টেকসই অর্থায়ন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) ও অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোর এ প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেওয়া উচিত।

তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন নির্ভরযোগ্য তহবিল দরকার যা আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করবে।’

বাণিজ্য সহযোগিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এশিয়া এখনও বিশ্বের অন্যতম কম সংযুক্ত অঞ্চল।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এ দুর্বল সংযুক্তি বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমাদের অবশ্যই বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য দ্রুত কাজ করতে হবে।’

খাদ্য ও কৃষি সহযোগিতা বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এশীয় দেশগুলোকে অবশ্যই সম্পদ-সাশ্রয়ী কৃষিকে উৎসাহিত এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে। টেকসই প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষি সমাধান ও জলবায়ুবান্ধব চাষাবাদের ক্ষেত্রে উদ্ভাবন বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‌এশিয়াকে অবশ্যই একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে হবে, যা পুনর্গঠনমূলক, সমবণ্টনমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।

তিনি বলেন,‘আমাদের জ্ঞান, তথ্য ভাগ করে নিতে হবে এবং প্রযুক্তি ইনকিউবেশন ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করতে হবে। ডিজিটাল সমাধানে সহযোগিতা আমাদের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করবে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পরিশেষে বলব আমাদের সম্মিলিত কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে মেধা সম্পদ ও যুবশক্তিকে রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করতে হবে—একটি আত্মরক্ষা ও আত্মস্থায়ী সমাজ। আমাদের শূন্য-বর্জ্যের জীবনধারার ওপর ভিত্তি করে একটি পাল্টা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। ভোগ সীমিত রাখতে হবে মৌলিক প্রয়োজনের মধ্যে।

‘আমাদের অর্থনীতিকে সামাজিক ব্যবসার ওপর ভিত্তি করে গড়ে তুলতে হবে, যা ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক কাঠামো হিসেবে উদ্ভাসিত হবে, যেখানে উদ্ভাবন, লক্ষ্য ও দায়িত্ববোধ একীভূত থাকবে।’

অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, বোয়াও ফোরাম ও অন্যান্য অনুরূপ উদ্যোগগুলোকে যুবসমাজ ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে হবে, যেন আগামী প্রজন্মের জন্য এশিয়াকে আরও উন্নত করা যায়।

আরও পড়ুন:
চীনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধান উপদেষ্টা
জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা প্রধান উপদেষ্টার
স্টারলিংকের ইন্টারনেট বাণিজ্যিকভাবে চালু করতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
দেশবিরোধী আন্দোলনে উসকানিদাতাদের গ্রেপ্তার করা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ডাকটিকিট অবমুক্ত করলেন প্রধান উপদেষ্টা

মন্তব্য

p
উপরে