× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

মতামত
That is why Masood Rana is popular
google_news print-icon

মাসুদ রানা জনপ্রিয় যে কারণে

মাসুদ-রানা-জনপ্রিয়-যে-কারণে
স্পাই চরিত্র মাসুদ রানার জনপ্রিয়তার জোয়ার শুরু হয়েছিল পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ড ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর। ওই সময় মার্কিনিবাদ বা আমেরিকানিজম পদ্ধতিগতভাবে বাংলাদেশে বিকশিত হয়েছে। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের সময়টাতে নাগরিকত্বের সামরিকায়ন এবং মার্কিনবাদিতা একটা স্বপ্নবলয়ের মতো রচিত হতে থাকে। এর অবধারিত অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে নতুন কল্পিত এক যৌবন, যার অবধারিত অনুষঙ্গ পৌরুষ। মাসুদ রানা সেখানে অধিকল্পনার মূর্ত অধীশ্বর হিসাবে পুনর্জাগরিত হয়েছেন।

মাসুদ রানার কি গোঁফ ছিল? মাসুদ রানার পাঠক হিসাবে আমার যোগ্যতা এত কম যে মনে করে বলতে পারব না যে তার গোঁফ কখনও আনোয়ার সাহেব (বা তার ভূতলেখকবৃন্দ) বানিয়েছিলেন কিনা। তবে এসবে সোহেল রানার সামান্যই ক্ষতিবৃদ্ধি হয়েছে। তিনি যখন প্রযোজক মাসুদ পারভেজ হিসাবে নিজেকে মাসুদ রানা ছায়াছবির নায়ক নিয়োজিত করলেন, তখন নিজের প্রাকৃতিক গোঁফ হঠানোর কোনো কারণ খুঁজে পাননি।

এটা ঠিকই, তার চুল হঠানোর তুলনায় গোঁফ হঠানো অধিক কসরৎ ও মনোবেদনার কারণ হতে পারত। বাস্তবে তিনি পর্দা-উপস্থিতিতে কখনই দুটোর কোনোটাকে অনুপস্থিত করেননি। পর্দায় একমাত্র ‘মাসুদ রানা’ সোহেল রানার গোঁফের উপর ভর করেই হাজির হলেন। তখনও বাংলাদেশের আম-মানুষজন গোঁফওয়ালা জাতীয় নেতা হিসাবে কেবল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেই চেনেন; জিয়াউর রহমানকে চিনে সারেননি। তবে কেবল গোঁফের কারণে মাসুদ রানাকে কোনোভাবে নিন্দিত হতে হয়েছে বলে শোনা যায়নি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের যতটুকু দর্শকতৃপ্তির ইতিহাস জানা যায় তাতে নিজের গোঁফ ও নাইলনের চুলসমেত সোহেল রানাই মাসুদ রানার সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য পর্দা-দাবিদার বলে বিবেচিত হয়েছেন।

মাসুদ রানাকে নিয়ে কিছু বলতে শুরু করার পর লোকে যদি জিজ্ঞাসা করে বসেন যে ‘কয়টা পড়ছ বই’, তাহলে খুবই বিপদে পড়ে যাব। জানা মতে, মাসুদ রানার খণ্ড শ’ চারেকের কাছে। আর স্মৃতিমতে আমার আস্ত পড়া কেবল পিশাচ দ্বীপ। সেটা কেন ও কীভাবে বাসাতে পেয়েছিলাম, তা ধারণা নাই। তবে আমার মামাদের দুজনের একজন সংগ্রাহক হতে পারেন। এর বাইরে আমি নিজে নিয়মিত লাইব্রেরিতে যাতায়াত শুরু করলে মাসুদ রানার বিপুল সম্ভার আমাকে কখনও টানে নাই। কুয়াশা বা দস্যু বনহুর-ও দু’চারটা খণ্ড পড়েছি, মাসুদ রানা একেবারেই নয়। সামনে পড়ে আছে, খুলে দু’পাতা পড়লাম – এরকম কিছু পরিস্থিতি বাদে। একেকবার মনে হয়, আমার শুচিতাবাদী মনের কারণে। কিন্তু ভেবেচিন্তে সেই অনুসিদ্ধান্ত বাদ দিতেই হয়। কারণ অশুচিতাবাদী যৌনতার অনেক সাহিত্যই আমি পড়েছি। চূড়ান্ত বিচারে হয়তো চুপচাপ তীক্ষ্ণ শার্লক হোমসের প্রতি আমার অনুরাগ সাঁই সাঁই ধরনের মাসুদ রানার প্রতি বিরাগের কারণ হয়ে থাকবে।

মাসুদ রানা জনপ্রিয় যে কারণে

জেমস বন্ডের ছায়ায় গড়ে উঠেছেন মাসুদ রানা। ছবি: সংগৃহীত

গোয়েন্দা বনাম স্পাই

বাংলা সাহিত্যের (আধুনিক) ইতিহাসে গোয়েন্দা অনেক। অপেক্ষাকৃত পরিচিতরা হলেন কিরীটী রায়, ব্যোমকেশ বক্সী, ফেলুদা। ঘনাদা বা স্বপন কুমার সম্ভবত ঠিক একই বর্গে পড়বেন না। কিন্তু গোয়েন্দারা গুপ্তচর নন। বাংলা সাহিত্যের গোয়েন্দারা কমবেশি শার্লক হোমসের বিদ্যাবুদ্ধির প্রচ্ছায়াতে গড়ে উঠেছেন। তাতে কেউ ধুতি পরতে পারেন, কেউ চুরুট খেতে পারেন, কেউ শাল গায়ে চড়াতে পারেন, কেউ সনাতনী বাংলায় দীর্ঘ কেইস-বিবরণী সবাইকে গোল করে বসিয়ে দিতে পারেন, আরেকজন ইংরাজি সঙ্গীতমুগ্ধ থাকতে পারেন। এরকম নানান ভিন্নতা সত্ত্বেও এরা সকলেই গোয়েন্দা, কিংবা ব্যোমকেশের ভাষায় সত্যান্বেষী। এসব ভিন্নতা সত্ত্বেও এরা শার্লকের উত্তরসূরী। ওদিকে গোয়েন্দা আর গুপ্তচরেই কেবল মামলা ফিনিস হয়ে যাচ্ছে না। আরো আছে অ্যাডভাঞ্চারাস কম্যুনিস্টসম ঝোড়ো চরিত্র। যেমন কিনা দস্যু বনহুর। দস্যু বনহুরকে মেলাতে হলে মেলাতে হবে রবিন হুডের সাথে। তুলনায় কুয়াশা বরাবরই কুয়াশাচ্ছন্ন। তবে যদি বলতেই হয়, মাসুদ রানার থেকে কুয়াশা অনেক বেশি গোয়েন্দা। মাসুদ রানা বরাবরই স্পাই, শুরু থেকেই। কুয়াশা খানিকটা আলাদীনের দৈত্যের মতো ভোজভাজি করে ফেলতে পারেন।

তাহলে দুই বাংলার মেলা মেলা গোয়েন্দা থাকলেও গুপ্তচর বা স্পাই আসলে ভালমতো কেবল মাসুদ রানাই। যদি গোয়েন্দাদের দল বিকশিত হয়ে থাকেন শার্লকের বুদ্ধিরূপের উপর দাঁড়িয়ে, তাহলে আমাদের স্পাই মাসুদ রানা দাঁড়িয়েছেন আরেক জগদ্বিখ্যাত স্পাই জেমস বন্ডের উপর ভর করে। এগুলো সাধারণ জানাশোনাই সকলের। তবে অতি সম্প্রতি জানতে পারলাম পশ্চিম বাংলায় মাসুদ রানা ততটা তেমন জনপ্রিয় হন নাই কখনও। জানতাম আসলে। তবে তথ্যটাতে অত গুরুত্ব দিই নাই কখনও। কিন্তু এ দফা জানার পর দুইটা বিষয় মনে হলো। একটা চিরপরিচিত। বাংলাদেশের কোনো পুস্তকই বা ইন্ডিয়ার বাংলাভাষীরা যত্ন করে গ্রহণ করেছেন! আর দ্বিতীয়টা নীতিসঙ্গত (বা রাজনীতিসঙ্গত) বিষয়। কেন বা কীভাবে ভারতের নাগরিকেরা পাকিস্তান বা বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর একজন কুঁদে-বেড়ানো সামরিক কর্মকর্তার জৌলুস গ্রহণ করবেন!

পর্দায় ধাঁই-ধাঁই স্পাই

যার মনে যাই থাকুক, সোজা-সরল সত্য হলো বাংলাদেশে জেমস বন্ডের মুখ্য কনজাম্পশন হয়েছে পর্দায়, বইতে নয়। যে সময়ের কথা হচ্ছে তখন বাংলাদেশে হাজারের উপরে প্রেক্ষাগৃহ ছিল। সঠিক হিসাব দেবার জন্য বাংলাদেশে মহাফেজখানার হাল আরও ভাল হতে হতো। তবে সেইসব হাজার প্রেক্ষাগৃহের অনেকগুলোতেই ইংরাজি ছবি প্রদর্শিত হতো। কোনো হলই কেবল ইংরাজির জন্য তালিকাভুক্ত ছিল না। কিন্তু কিছু প্রেক্ষাগৃহে ইংরাজি অপেক্ষাকৃত বেশি হারে দেখানো হতো। এ ছাড়া মফস্বলের হলগুলোতে প্রায়শই ছুটির দিনের আগের দিন, প্রথমে শনিবার, পরে বৃহস্পতিবার, এক টিকেটে দুই ছবির এক ধরনের চর্চা ছিল। ছুটির আগের দিনে মুক্তি পাক আর না পাক, ছুটির দিনটাতে তা চলতোই। হংকং কিংবা হলিউডের নরম-পর্নোগ্রাফিগুলো এই কাতারে থাকত। এসব ছবির দর্শকেরা ‘যেন বা লুকিয়ে’ দেখে আসতেন। কিন্তু, জেমস বন্ড এই লুকোছাপা চরিত্রের ছিলেন না। তা তিনি যতই প্রেমঘন দৃশ্যে হাজির হোন না কেন। কথিত আছে যে, জেমস বন্ড বা অন্যান্য ইংরাজি ছবির প্রণয়দৃশ্যগুলো সেন্সর বোর্ড ঠিকঠাক মতো কেটে দিতেন। তবে ‘এক টিকেটে দুই ছবি’র ওই নরম-পর্নোগুলোর বেলায় সেন্সর বোর্ডের কর্তারা কী করতেন তা জানা যায় না। জেমস বন্ড বলতে বাংলাদেশে, যদি ঠিক মনে পড়ে, শ্যেন কনোরি আর রজার ম্যুর বিরাজ করতে পেরেছিলেন। মানে সেলুলয়েড জমানার কথা হচ্ছে, সাম্প্রতিক ডিজিটাল ড্যানিয়েল ক্রেইগ নয়।

জেমস বন্ড চিরকালই পিটাপিটি করেন। করতেই হয়। মাসুদ রানাও অনেক পিটাই করে থাকেন। তবে শেষের দিকের বন্ড, প্রযুক্তির সাথে তাল মেলাতে গিয়ে বহু হাইটেক পিটাই করে থাকেন। শেষেরটাতে তো দেখলাম বন্ড প্রায় সংসারই পেতে বসেছেন। নো টাইম টু ডাই দেখার পর সহদর্শকদের বললাম যে অপুর সংসার-এর আদলে ছায়াছবিটার নাম ‘জেমসের সংসার’ বা ‘বন্ডের বন্ধন’ হতে পারত। এদিক থেকে মাসুদ রানা গুরুতরভাবে অগ্রসর বিবাহনিরপেক্ষ মানুষ। ৪০০ খণ্ডেও তিনি খণ্ডীকৃত হয়ে বিবাহ এবং/বা বান্ধাপ্রণয়ে বান্ধা পড়েননি। বাস্তবে সিনেমার পর্দায় যে স্পাইকে ধাঁই-ধাঁই বহু লোকে দেখে উঠে সারেননি, তারাই পাতায় পাতায় শব্দে-শব্দে মনশ্চক্ষে দেখেছেন সেই স্পাইকেই, মাসুদ রানার মাধ্যমে। ‘দেশে’র জন্য নিবেদিতপ্রাণ এক উর্দিহীন মিলিটারি!

নেতাদের প্রতিকৃতি বা আইকন

জাতীয় নেতা বলতে যদি রাজনীতি-জাতীয় নেতা বোঝাই তাহলে নিশ্চয়ই কোনো অন্যায্য কাজ হয় না। এখন শেরে বাংলা বা ভাসানীর যেসব ছবি প্রতিকৃতি সম্প্রচার করা হয়, কিংবা তাদের বিষয়ে যেসব বাণীমালা ভেসে বেড়ায় পাঠ্যপুস্তকে বা রাজনীতি-আলাপে, তাতে তাদেরকে ‘সিনেমাটিক হিরো’ হিসাবে গ্রহণ করা খুবই কঠিন। সিরাজ শিকদার হয়তো হতে পারতেন। তাকে নিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের সম্প্রচার নাই বললেই চলে। চললেও তিনি অধিকতর দস্যু বনহুর ধাঁচের হতেন, অবশ্যই কম মাসুদ রানা ধাঁচের। রইলেন বাকি তিনজন। কিন্তু মাসুদ রানার জব ডেসক্রিপশনের দুইটা অন্তত আমাদের বিবেচনায় রাখা দরকার। তার মধ্যে মিলিটারিত্বই যথেষ্ট, কারণ বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রশাসকের সাথে মাসুদ রানার কিছুমাত্র বনিবনা না হবার। আর থাকে (হেটারোসেক্সুয়াল) প্রণয়োদ্ভাস। দিকে দিকে, ক্ষণে ক্ষণে, এমনকি জনে জনে। মাসুদ রানার ব্যক্তিত্বের সব থেকে আকর্ষণীয় অংশই এটা, আমার জন্য বলছি। এটাকে হিসাব মানলে স্বাধীন বাংলাদেশে নেতাদের মধ্যে এরশাদের থেকে বড় দাবিদার কেউই থাকেন না। কিন্তু এরশাদ দুর্ভাগাও বটে। তিনি মানসপটে এসে হাজির হবার বহু আগেই মাসুদ রানা প্রতিষ্ঠিত এমনকি বিদারিত (স্যাটুরেইটেড)। তা ছাড়া, কোনো এক রহস্যজনক কারণে এরশাদ একজন ড্যাশিং হিরো হিসাবে আবির্ভূত হতেই পারেন নাই – স্ট্যাটিসটিকস, এইসথেটিক্স (এবং পোয়েটিক্স) যতই তার পক্ষে থাকুক না কেন।

তাহলে জিয়াই ছিলেন মাসুদ রানার সব চেয়ে নিকটজন। মিলিটারি হিসাবে তো বটেই, তুখোড় বুদ্ধিমান হিসাবে; সর্বোপরি ‘হিরো’র প্রতিকৃতি বা আইকন হিসাবে। মাসুদ রানা ছেঁড়া গেঞ্জি না পরতে পারেন, খালও না কাটতে পারেন, কিন্তু মনশ্চক্ষে যদি কোনো রাষ্ট্রনায়ককে ‘যেন বা মাসুদ রানা’ ভাবতে চান, তাহলে অনায়াসে জিয়াকেই ভাবতে পারা ঠিক হবে। এতে জিয়ার নিজস্ব গোঁফ যদি মনশ্চক্ষে অশান্তি উৎপাদন করে, কাজী আনোয়ার হোসেনকে গোঁফওলা মাসুদ রানা পয়দা করতে বলা যেতে পারত। তা ছাড়া, জিয়া ময়দানে আসার আগেই, যেমনটা বললাম, সোহেল রানা নিজের গোঁফ মাসুদ রানাকে দিয়ে দিয়েছিলেন। ছবিটাকে ঠিক ফ্লপও বলা যাবে না, রীতিমত হিটই ছিল জানা যায়। যদিও এই ছবির দর্শকসংখ্যা আর মাসুদ রানার পাঠকসংখ্যার মধ্যে কোনো কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন তুলনা সম্ভব নয়।

রুচিবান-শুচিবান যারা

বাংলার সাহিত্য-গোয়েন্দাগণ সকলেই অতিশয় রুচিবান। এমনকি শুচিবান; অতিশয় শুচিবান। তাদের শুচির মাত্রা এতটাই যে পাঠকদের পক্ষে তাদের অযৌন কল্পনা করা অত্যন্ত বিবেচনাপ্রসূত হবে। এদের মধ্যে কার থেকে কার রুচি বেশি, বা কার শুচি শক্ত তা নিশ্চিত হওয়া যায় না। কারণ এদের কস্ট্যুম, কাল, সঙ্গীতরুচি বেশ স্বতন্ত্র পরস্পরের থেকে। তবে ফেলুদা অপেক্ষাকৃত নবীন ও পাশ্চাত্যনিষ্ঠ হবার কারণে তিনি অধিক সম্ভাবনাময় ছিলেন শুচিগিরি ছাড়তে। এর মানে এই নয় যে, আমি পাশ্চাত্যীয় রুচিকে অশুচি বলছি। তা তো বলছিই না, উপরন্তু যৌনতাকে শুচি বা অশুচিতা দিয়ে আমি নিজে বোঝারও আগ্রহ বোধ করি না। আমার বক্তব্য এই যে, গড়ে পাশ্চাত্যের যে ইমেজ পাঠক-মনোজগতে বিরাজ করতে থাকে আর যৌনতা যেরকম অশুচিময় কাঠামোতে বন্দি, তাতে ফেলুদা অপেক্ষাকৃত যৌনমনস্ক থাকতে পারতেন; ও সেই সুবাদে ‘অশুচি’। কিন্তু তিনি এমনকি তার স্রষ্টা সত্যজিতের থেকেও কঠোর ব্রহ্মচর্য অনুশীলন করে গেছেন। ‘সচ্চরিত্র’ চরিত্র সৃষ্টিতে বাংলা অঞ্চলের লেখকেরা দুর্দান্ত অবদান রেখে গেছেন। সমরেশ বসুর জন্ম না হলে উত্তরকালের নায়ক-নায়িকাদের হয়তো চৈতন্যদেবের মতো গলায় উত্তরীয় দিয়ে নদীয়া অঞ্চলে ঘুরে বেড়াতে হতো।

যা হোক, মাসুদ রানাকে নিয়ে বলতে গিয়ে এত লোকের কথা চলে এসেছে। মাসুদ রানা এই নিখিল বঙ্গীয় অযৌন পুরুষ অ্যাডভাঞ্চারাস ‘হিরো’দের ব্রহ্মচর্য থেকে ঐতিহাসিক মুক্তি এনে দিয়েছেন। তাতে পূর্বসূরী গোয়েন্দাদের মন ভাল হয়েছে কিনা জানার কোনো সুযোগ নাই। তবে ওটিটির একটা ছায়াছবিতে কিরীটী রায়কে একজন বান্ধবী সহযোগে সম্প্রতি দেখা গেল। মোবাইল ফোন আর বান্ধবী এই দুইটা সংযোজন ঘটেছে। অভিনয় ও চিত্রনির্মাণ নিয়ে আজকে আলাপ না করাই উত্তম, আসলে কখনই আলোচনা না করা ভাল। মাসুদ রানা যে তার পূর্বতন ভার্চুয়াস/সচ্চরিত্র নায়কদের থেকে সরতে পারলেন, এই যোগ্যতার কারণে তিনি পাঠকদের, বিশেষত পুরুষ পাঠকদের, কাছে অনেক গ্রহণযোগ্য হতে পেরেছিলেন। আর প্রণয়কালে তাকে ঠিক মিলিটারির সামাজিক ইমেজসুলভ লাগেও না। চলতি ভাষায় যাকে রোমান্টিক বলা হয়ে থাকে, সেই যোগ্যতাই বরং তিনি বহন করে চলেছিলেন।

তদুপরি আমেরিকানিজম ও ইয়্যুথ

উর্দিহীন হলেও মাসুদ রানা মিলিটারি। তিনি কখনই মিলিটারিগিরির বাইরে থাকতেন না। সোহানা প্রমুখের সাথে একটু আরাম-আয়েশ করার সময়েও তার মাথা থাকত কিলবিল ইন্টেলিজেন্সের মাথা। অবশ্যই মাসুদ রানার জাতীয়তা বদলাতে হয়েছে। তিনি পাকিস্তানি ইন্টেলিজেন্সের কর্মকর্তা ছিলেন, পরে বাংলাদেশের গোয়েন্দা বিভাগের চর হলেন। এই জাতীয়তা বদলের বিষয়ে তার নিজের কিছুই করার ছিল না। কারণ, তিনি রাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর চাকরিজীবী ছিলেন। এখন রাষ্ট্র বদলে গেলে তিনি কী করতে পারেন! কিন্তু ভাবুন, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর যত বুদ্ধিমান কর্মকর্তাই হোন না কেন, যিনি ধরাধামে আবির্ভূত হন ১৯৬৬ সালে, তখন কি তার জন্য ঢাকা খুব আরামদায়ক জায়গা? নিখিল বাংলাদেশ কোনো আরামদায়ক জায়গা? আবার কাজী আনোয়ার হোসেন যতই দেশপ্রেমিক হোন না কেন, মাসুদ রানার কারিগর হিসাবে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর এক কর্মচারীকে তিনি তো আর ছয় দফা আন্দোলনের সৈনিক বানাতে পারেন না। সেটা বানাতে হলে তার দস্যু বনহুর কিসিমের কিছু লিখতে হতো। ফলে দুর্দান্ত ক্ষিপ্র সেমিবন্ড দেশিবন্ড জন্মাবধি বাংলা পাঠকের ‘জাতীয় মুক্তির স্বপ্ন’তে (বা মতান্তরে জাতীয়তাবাদী স্বপ্নতে) এক বেখাপ্পা ‘হিরো’ হিসাবে থাকার কথা। বিচিত্র নয় যে, তিনি আরো আরো জনপ্রিয় হলেন ১৯৭৫-এর পরবর্তী বাংলাদেশে।

এখন কেউ যদি আমাকে প্রমাণ করতে বলেন, আমি হাত-পা ছেড়ে দিয়ে আত্মসমর্পণ করব। কোনো জনপ্রিয়তার মাপনযন্ত্র আমার কাছে নাই; বাংলাদেশে নাই মহাফেজখানার কোনো চর্চা। কিন্তু এটা অনুভব করার জন্য এমনকি আমার ১৯৭৫ সালে গুরুতর বয়স্ক লোকও হতে হয় নাই। বস্তুত এটা আমার ১৯৭৫ সালের আবিষ্কার নয়। পরেরই। পঁচাত্তর হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের সামরিকমনস্কতার গুরুতর সব বদল ঘটতে থাকে। এটা ভোজভাজির মতো এক রাত্রিতেই হয়নি তা সত্য। কিন্তু মার্কিনিবাদ বা আমেরিকানিজম পদ্ধতিগতভাবে বাংলাদেশে বিকশিত হয়েছে। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে, সর্বমোট ছয় বছরও ক্ষমতায় ছিলেন না। বস্তুত তিনি চার বছরই ছিলেন। কিন্তু সেই সময়টাতে মার্কিনবাদিতা একটা স্বপ্নবলয়ের মতো রচিত হতে থাকে, বিকশিত হতে থাকে। সর্বোপরি, জনমানসে প্রোথিত হতে থাকে। এর অবধারিত অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে নতুন কল্পিত এক যৌবন/ইয়্যুথ, যার অবধারিত অনুষঙ্গ পৌরুষ। তাহলে পৌরুষদীপ্ত এক তারুণ্যময়তা দিয়ে মার্কিনি জীবনযাপনের অধিকল্পনা (ফ্যান্টাসি) এই সময়কালের মনোজগত বুঝতে খুবই জরুরি। অন্তত আমার প্রস্তাব সেটাই। মাসুদ রানা সেখানে অধিকল্পনার মূর্ত অধীশ্বর হিসাবে পুনর্জাগরিত হয়েছেন।

বাংলা সাহিত্যের কোনো গোয়েন্দাই ‘দেশমাতা’র সেবক হিসাবে বিকশিত নন। তারা মাইক্রো-ইভেন্টের ‘হিরো’; মাসুদ রানা ম্যাক্রো ইভেন্টের। ঠিক এই সময়কালটাতেই যে সারা বাংলাদেশের চাকরিজীবী মধ্যবিত্ত তাদের (পুরুষ) বাচ্চাদের সেনা অফিসার বানানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন সেই বাস্তবতাটাকে এর সাথে মিলিয়ে পাঠ করা যায়। যায় তো বটেই! কিন্তু আজকেই তা করে ফেলতে হবে তা তো নয়। আজকে উর্দিহীন মাসুদ রানাতেই শেষ করি আমরা! উর্দিহীন, তথাপি মিলিটারি, তথাপি রাষ্ট্রের পতাকাবাহী, কাঁধে করে নিয়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন। মাসুদ রানার ‘দেশাত্ম’বোধ তাই সামরিক-সীলমোহরসম্পন্ন রাষ্ট্রচৈতন্য।

মানস চৌধুরী: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক

আরও পড়ুন:
‘মাসুদ রানা’ উপন্যাসের বাকি অংশ শেষ করবেন কাজীদার ছেলে
মায়ের কবরে সমাহিত কাজীদা
কাজীদার শেষ শয্যা বনানীতে
বিদায় কাজীদা
মাসুদ রানার ২৬০ বইয়ের লেখক আব্দুল হাকিম

মন্তব্য

আরও পড়ুন

মতামত
Nahid Islam declared Akhtar Hossain a candidate in Rangpur 4 seat

রংপুর-৪ আসনে আখতার হোসেনকে প্রার্থী ঘোষণা করলেন নাহিদ ইসলাম

রংপুর-৪ আসনে আখতার হোসেনকে প্রার্থী ঘোষণা করলেন নাহিদ ইসলাম

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৪ (কাউনিয়া-পীরগাছা) আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র প্রার্থী হিসেবে দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেনের নাম ঘোষণা করেছেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

মঙ্গলবার রাত ১১টায় কাউনিয়া বাসস্ট্যান্ডে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আয়োজিত এক পথসভায় তিনি এ ঘোষণা দেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, আখতার হোসেনের নেতৃত্বে কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলা উন্নয়ন ও অগ্রগতির মূলধারায় প্রবেশ করবে।

এ সময় এনসিপি’র দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রধান সংগঠক মো. হাসনাত আবদুল্লাহ, আখতার হোসেনকে কাউনিয়ার সন্তান হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন এনসিপি’র কেন্দ্রীয় নেতারা।

তাদের মধ্যে ছিলেন- দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্থা শারমিন ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা।

সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন দলের উত্তরাঞ্চলীয় প্রধান সংগঠক সারজিস আলম।

অনুষ্ঠানে এনসিপি’র মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, এনসিপি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবানপুর গ্রামে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে জুলাই পদযাত্রা শুরু করে।

পদযাত্রা শুরু হয় সেই স্থান থেকে, যেখানে শহীদ আবু সাঈদকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গুলি করে পুলিশ।

সেখান থেকে রংপুর শহরের ডিসি মোড় পর্যন্ত হেঁটে যান নেতা-কর্মীরা।

পরে, পদযাত্রাটি কাউনিয়া উপজেলা শহরে পৌঁছায় এবং মধ্যরাতে পথসভার মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটে।

মন্তব্য

মতামত
Hasinas six month imprisonment for contempt of court

আদালত অবমাননার দায়ে শেখ হাসিনার ৬ মাসের কারাদণ্ড

আদালত অবমাননার দায়ে শেখ হাসিনার ৬ মাসের কারাদণ্ড

আদালত অবমাননার একটি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার অপসারণের পর এটাই প্রথম কোনো আদালতের রায়, যাতে তাকে দণ্ডিত করা হয়েছে।

বুধবার (২ জুলাই) আইসিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

একই মামলায় গাইবান্ধা জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন নেতা শাকিল আকন্দ বুলবুলকে দুই মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এই ধরনের মামলায় পলাতক আসামির জন্য আইনজীবী নিয়োগের পূর্ব নজির না থাকলেও ন্যায়বিচারের স্বার্থে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে একজন আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়।

মামলার বিবরণ অনুযায়ী, গত বছরের ২৫ অক্টোবর শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেতা শাকিলের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন।

সেই অডিও ক্লিপে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, ‘২২৬ জনকে মারার লাইসেন্স পেয়ে গেছি’—যা বিচারব্যবস্থার প্রতি সরাসরি হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে আদালত। পরে এই ঘটনায় আইসিটিতে মামলা করেন রাষ্ট্রপক্ষ।

গত ৩০ এপ্রিল এ-সংক্রান্ত শুনানিতে দুই আসামিকে ২৫ মে ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। ধার্য তারিখে তারা হাজির হননি। কিংবা আইনজীবীর মাধ্যমেও ব্যাখ্যা দেননি। সেদিন ট্রাইব্যুনাল দুই আসামিকে সশরীর হাজির হয়ে অভিযোগের বিষয়ে জবাব দেওয়ার জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিতে নির্দেশ দেন।

পরদিন দুটি সংবাদপত্রে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞপ্তিতে দুজনকে গত ৩ জুন ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে অভিযোগের বিষয়ে জবাব দিতে বলা হয়। সেদিনও তারা হাজির হননি। পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য ১৯ জুন তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল।

১৯ জুন এই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের আইনি সহায়তাকারী) হিসেবে নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। মামলার পরবর্তী শুনানি ধার্য করা হয় ২৫ জুন।

২৫ জুন মামলায় প্রস্তুতি নিতে অ্যামিকাস কিউরি মশিউজ্জামানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে এক সপ্তাহ সময় দেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই এই মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য করা হয় ২ জুলাই। আজ দুই আসামিকে কারাদণ্ড দিয়ে রায় দিলেন ট্রাইব্যুনাল।

মন্তব্য

মতামত
Bhola Inland Naurut launch launching

ভোলায় অভ্যন্তরীণ নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ, যাত্রীদের দূর্ভোগ

ভোলায় অভ্যন্তরীণ নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ, যাত্রীদের দূর্ভোগ

সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে গেল দু’দিন ধরে ভোলার অভ্যন্তরীণ নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে বইছে দমকা বাতাস।

বুধবার (২ জুলাই) সকালে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর উপ-পরিচালক মো. রিয়াদ হোসেন দৈনিক বাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সাগর উত্তাল হওয়ায় সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর ও নদী বন্দরে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে। এ অবস্থায় বিআইডব্লিউটিএ ভোলার ইলিশা-লক্ষীপুর, আলেকজান্ডার-দৌলতখান, মনপুরা-তজুমুদ্দিন ও মনপুরা-ঢাকাসহ জেলার অভ্যন্তরীণ বেশ কয়েকটি রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ রেখেছে।

এদিকে, লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। যাত্রীরা বলছেন, দ্বীপ জেলা ভোলা থেকে অন্য জেলায় যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌপথ। কিন্তু, বৈরী আবহাওয়ায় তারা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

বিআইডব্লিউটিএ এর উপ-পরিচালক মো. রিয়াদ হোসেন জানান, সমুদ্র উত্তাল হওয়ায় ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত চলছে। এছাড়াও নদীবন্দরে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত চলছে। যাঁর ফলে নদী ও সমুদ্র বেশ উত্তাল রয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভোলার অভ্যন্তরীণ বেশ কয়েকটি রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এসব রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে।

মন্তব্য

মতামত
Coronal

নোয়াখালীতে করোনায় বৃদ্ধের মৃত্যু

নোয়াখালীতে করোনায় বৃদ্ধের মৃত্যু

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত জেবল হক (৮০) কবিরহাট উপজেলার চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের লামছি গ্রামের মৃত গনু মিয়ার ছেলে।

বুধবার (২ জুলাই) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী। এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত ১০টার দিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তার মৃত্যু হয়।

ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ওই বৃদ্ধ হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে মারা যান তিনি। এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের এক জনের নমুনা পরীক্ষায় একজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা.মরিয়ম সিমি বলেন, মারা যাওয়া ব্যক্তি সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়। দুপুরে তার করোনা শনাক্ত হওয়ার পর সেখানে রাতে তার মৃত্যু হয়। এখন পর্যন্ত নোয়াখালীতে মোট ৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। কিট সল্পতার কারণে উপজেলা পর্যায়ে করোনা টেস্ট এখনো শুরু করা হয়নি।

মন্তব্য

মতামত
Ali Riyaz hopes to reach the place of a certificate in mid July

জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে একটি ‘সনদের’ জায়গায় পৌঁছানোর আশা আলী রীয়াজের

জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে একটি ‘সনদের’ জায়গায় পৌঁছানোর আশা আলী রীয়াজের

জুলাইয়ের মাঝামাঝি কিংবা তৃতীয় সপ্তাহের দিকে জুলাই সনদে পৌঁছানোর বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। তিনি বলেছেন, ‘চেষ্টা করলে জুলাই মাসের মাঝামাঝিতে আমরা একটি সনদের জায়গায় যেতে পারব।’

বুধবার (২ জুলাই) ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের আলোচনার শুরুতে তিনি এ মন্তব্য করেন।

আলী রীয়াজ বলেন, ‘এক বছর আগে, আমরা সবাই মিলে সব ধরনের বাধা-বিঘ্ন মোকাবিলা করে যে অর্জন করতে চেয়েছি, তার একটি পর্যায় অতিক্রম করে আজ এখানে আমরা সমবেত হয়েছি। বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামোর পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেন আমরা একটি জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র তৈরি করতে পারি, সেই চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যেন নাগরিকের গণতান্ত্রিক ও জীবনের অধিকার সুরক্ষিত হয়, যেন গুম-হত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও বিচারিক হত্যার শিকার হতে না হয় আমাদের।’

‘এটি আপনাদের (রাজনীতিবিদ) অবদান, আপনাদের কর্মীদের অবদান, নাগরিকদের অবদান। এটি সব রাজনৈতিক দলের ঊর্ধ্বে উঠে জনগণের সাফল্য।’

তিনি বলেন, ‘এই সাফল্য শুধু একটি পর্যায়ে এসে থেমে গেলে হবে না। এটিকে সুরক্ষিত করতে হবে এবং সেই সুরক্ষার উপায় খুঁজছি আমরা, যেন সংস্কারের কার্যক্রমে এগিয়ে যেতে পারি। আপনারা তাতে আন্তরিকভাবে সহায়তা করছেন, যদিও এ দায়িত্ব আমাদের সবার।’

‘কখনো কখনো আমরা অগ্রসর হই, কখনো আবার যতটা অগ্রসর হতে চাই, ততটা না পেরে খানিকটা হতাশ হই। কিন্তু তবুও আজকের এই দিনে দাঁড়িয়ে আমার মনে হচ্ছে, আমরা চেষ্টা করলে জুলাই মাসের মাঝামাঝিতে একটি সনদের জায়গায় যেতে পারব।’

ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, ‘আপনাদের সবার চেষ্টা ও সহযোগিতা হচ্ছে সবচেয়ে বড় জিনিস। দলগত, জোটগত ও ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা করে আমরা আশাবাদী হয়েছি। আমি মনে করি, আমরা এই জায়গাটিতে পৌঁছাতে পারব। কারণ, আমাদের সবার সেই আন্তরিক চেষ্টা আছে।’

জুলাই অভ্যুত্থানে হতাহতদের স্মরণে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা আমাদের বন্ধু, কর্মী ও ভাইবোনদের হারিয়েছি। অনেকে আহত অবস্থায় এখনো জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন; লড়াই করছেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও দায়বদ্ধতা থেকে এখানে আমাদের আসা।’

‘প্রতিদিনই আমরা পরস্পরকে জানছি ও বুঝছি। সে কারণে আমি আশাবাদী। আমরা আশাবাদী যে একটি জায়গায় পৌঁছাতে পারব। কেননা, যে দায় ও দায়বদ্ধতা—সেটি আপনারা প্রাণ দিয়ে উপলব্ধি করেন। আমরাও প্রাণ দিয়ে উপলব্ধি করি। মানুষেরও প্রত্যাশা আছে, তারা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। সেই জায়গায়, আমরা সবাই যেন অগ্রসর হতে পারি।’

জুলাইয়ের মাঝামাঝি কিংবা তৃতীয় সপ্তাহের দিকে জুলাই সনদে পৌঁছানোর বিষয়ে আশাবাদের কথা জানিয়ে উদ্বোধনী বক্তব্য শেষ করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি।

বৈঠকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি উপস্থিত আছেন, কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার ও ড. আইয়ুব মিয়া।

মন্তব্য

মতামত
Ashulia

আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল

আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে সাভারের আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনুষ্ঠানিকভাবে (ফরমাল চার্জ) অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।

বুধবার সকালে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার বরাবর প্রধান প্রসিকিউটরের পক্ষে প্রসিকিউটর ফারুক আহমেদ ও মো. সাইমুম রেজা তালুকদার এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

এই মামলায় এখন পর্যন্ত ৭ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছে প্রসিকিউশন।

মামলা দায়েরের পর চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, গত ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছয় তরুণকে গুলি করে হত্যার পর, তাদের মরদেহ একটি পুলিশ ভ্যানে রেখে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, আগুন দেওয়ার সময় অন্তত একজন তরুণ জীবিত ছিলেন এবং তার শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগানো হয়।

তিনি আরো বলেন, এটি ছিল একটি ভয়াবহ ও নৃশংস ঘটনা, যা মানবতাবিরোধী অপরাধের আওতায় বিচারযোগ্য।

মন্তব্য

মতামত
Padma bridge has found evidence of corruption initially in appointment of consultants
দুদক চেয়ারম্যান

পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে প্রাথমিকভাবে দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে

পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে প্রাথমিকভাবে দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে

পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে প্রাথমিকভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান আব্দুল মোমেন।

মঙ্গলবার দুদকের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ থাকার পরও এই মামলা পরিসমাপ্তি করা হয়। গেল জানুয়ারিতে শুরু হওয়া অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে প্রাথমিকভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণও মিলেছে।’

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, গায়ের জোরেই পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলায় আসামিদের অব্যাহতি দিয়েছিল তৎকালীন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সংস্থাটির চেয়ারম্যানের দাবি, বেশকিছু দুর্নীতির তথ্য মিলেছে। এই মামলায় আসামির অব্যাহতির পেছনে তৎকালীন কমিশনের দায় আছে কি না তাও খতিয়ে দেখার কথা জানান তিনি।

আব্দুল মোমেন বলেন, নতুন তদন্তে কারো সংশ্লিষ্টতা মিললে, তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।

প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতু পরামর্শক নিয়োগের বিষয়ে করা মামলা নিষ্পত্তির দীর্ঘ একযুগ পর; গত জানুয়ারি মাসে সেই মামলা পুনরায় অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। গঠন করা হয় উচ্চ পর্যায়ে কমিটি।

জানা যায়, ২০১২ সালে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যে সাতজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে মামলা করে দুদক। তবে ২০১৪ সালে অদৃশ্য কারণে মামলাটি পরিসমাপ্তি করে তৎকালীন বদিউজ্জামান ও শাহাবুদ্দিন চুপ্পু কমিশন।

মন্তব্য

p
উপরে