কাজী আনোয়ার হোসেন ইন্তেকাল করার প্রেক্ষাপটে সাইবার প্রজাবৃন্দ আবার সেই আলোচনাটাকে সামনে এনেছেন: বাংলাদেশে পাঠকবৃদ্ধিতে তার ভূমিকা বা এরকম। এইরকম আলাপ-আলোচনা বছর দুয়েক আগে শেখ আবদুল হাকিমের সঙ্গে তার স্বত্বাধিকারের আইনি লড়াইয়ের প্রেক্ষাপটেও একবার উঠেছিল। এ দফায় তফাৎ হলো, সাইবার হৈ-চৈয়ের একটা গুরুত্বপূর্ণ জিজ্ঞাসা ছিল হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে তার প্রভাব-প্রতিপত্তির তুলনা। সারাংশে, কাজী আনোয়ার হোসেন আর হুমায়ূন আহমেদ দুজনের মধ্যে পাঠকসৃষ্টির রাজমুকুট কার মাথায় চড়ানো যাবে তাই নিয়ে এই বিতর্ক। দু-চারজন নেটপ্রজা হয়তো নেহায়েত রঙ্গরসের মুডে ছিলেন; উত্তরটা তাদের জরুরি তা ভঙ্গিতে বা স্বরে মনে হয়নি আমার। কিন্তু অন্য অনেক নেটপ্রজা এই বিতর্কের আশুনিষ্পত্তি ঘটানোর জন্য মরিয়া ছিলেন। যেন, রাজমুকুটটা তখনই দুজনের মধ্যে তার পছন্দের জনকে না দিতে পারলে পরকালে গুরুতর স্ট্যাটাস সংকটে পড়ে যাবেন লেখক।
পরিচিত অনেকেই লাগাতার বলতে থাকেন যে সাইবার হৈ-চৈ নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নাই। কিংবা এটাকে তারা সিরিয়াসলি নেন না। কিংবা এখানকার কোনো ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে ভেবে তিনি সময় ‘নষ্ট’ করেন না। আমি দীর্ঘকাল এই মতামত-প্রতিক্রিয়াগুলোকে প্রতিহত করেছি। কখনও আলাপের চেষ্টা করেছি। এটা অনেকটা লেগুনার যাত্রীদের অপছন্দ করার মতো, কিংবা পাবলিক বাসের যাত্রীদের। নিশ্চয়ই কেউ সেটা করতে পারেন। কিন্তু কোনো একটা যানবাহন নিজে যাত্রীর গুণাগুণ বা বৈশিষ্ট্য উৎপাদন করে না; করে কেবল মূল্যমান। ফলে, ফেসবুক বা সাইবার জগতের আলাপ-আলোচনাকে, মূল্যায়নকে যারা না-গুরুত্ব দেবার ঘোষণা দিতে থাকেন, তাদের কোথাও কিছু একটা বাধে।
তাহলে কী দাঁড়ালো? আমি একে ধন্বন্তরী বা ঐশীবাণী মর্যাদায় দেখি? অবশ্য, এটা ভালো প্রশ্ন হলো না। কারণ, তাতে ঐশীবাণী বা ধন্বন্তরীকে আমি কীভাবে দেখি তার আলাপ করা লাগে। আমি, সাইবার রাজ্যের প্রতিক্রিয়াকে জগতের সকল প্রতিক্রিয়ার মতোই পাঠযোগ্য হিসাবে দেখি। অবশ্যই সেগুলোকে শতায়ূ বা দীর্ঘস্থায়ী হিসাবে দেখি না। কিন্তু হ্রস্বস্থায়ী মাত্রই গৌণ নয়। মশার আয়ু সাত দিন আর কাছিমের ৫০০ বছর বলে আমরা যে খাবার টেবিলে বসে কাছিমের জীবন নিয়েই অধিক আলাপ-আলোচনা করি, মশার তুলনায়, তার প্রমাণ পাওয়া মুশকিল।
মুক্তধারা বা পুঁথিঘরের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই? কিংবা ঝিনুক পুস্তিকা? অথবা বুক কো-অপারেটিভ? এটা কয়েকটা মাত্র নাম। নাম নেয়াটাও ইচ্ছাকৃত। বাস্তবে স্বাধীন বাংলাদেশে, কিংবা তার আগেই বাংলা ভাষায় কয়েক ডজন প্রকাশকের নাম নেয়া যায়; একটু খোঁজখবর করলেই তা সম্ভব। এদের সকলেরই বিপুল পরিমাণ বই বের হতো। এবং একেকটা বইয়ের বিপুল সংখ্যক কপি ছাপা হতো। উদাহরণ হিসাবে সত্যেন সেনের মতো সিরিয়াস এবং শ্রমিক-ইতিহাসনির্ভর বইগুলোও হেসেখেলে কয়েক হাজার কপি বিক্রি হতো। মহকুমা শহরগুলোতে গণ-গ্রন্থাগার বা পাবলিক লাইব্রেরির অস্তিত্ব এই ধরনের বইয়ের পাঠকবিস্তারে সহায়তা রেখেছে। অর্থাৎ, রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের পাঠাগারগুলোর ভূমিকা রয়েছে ধারাবাহিক ও নিয়মনিষ্ঠ পাঠক তৈরিতে। সত্যেন সেনের নামটাও আমার তরফে একটা বাছাই মাত্র, নিজের পছন্দের দিক থেকে। কিন্তু সেখানেই সীমিত নয়।
‘ঝিনুক পুস্তিকা’ থেকে নজরুল থেকে শুরু করে শরৎ পর্যন্ত সকল রচনাবলী অতিশয় সুলভ মূল্যে বিপণন-সরবরাহ করা হয়েছিল। জীবনীগ্রন্থের একটা বড় চালান আসতো এবং সেগুলোর বিশাল পাঠক বাহিনী ছিল। বাংলাবাজারের এসব প্রকাশকের বিপণন-নেটওয়ার্ক ছিল সারা বাংলাদেশ ঘিরে। ৩০০ কপি বই ছেপে লেখক পয়দা করার পুরা প্রক্রিয়াটাই ৯০ পরবর্তী শাহবাগ-কাঁটাবনকেন্দ্রিক প্রকাশনা-বিস্তারের আশু ফসল। অনুবাদের একটা বিস্তর গ্রহণযোগ্যতা ছিল। বাংলা একাডেমি এই বিষয়ে অগ্রগণ্য হলেও মুক্তধারাকেও পাশাপাশিই রাখতে হবে। মনে করতে পারা ভাল যে, এমনকি ইসমত চুগতাই বা সাদত হাসান মান্টোর উর্দু সাহিত্যের অনুবাদও ১৯৭২-এর বাংলাদেশে সুলভ এবং এর পাঠক সংখ্যা ছিল বিশাল। আর কিছু বাদ দিলেও বাংলাদেশে সাদত হাসান মান্টোর যে বিশাল একটা পাঠক বাহিনী ছিলেন, সেটা টের পাবার জন্য কারো বিশেষ কোনো রকমের গবেষণা করারই দরকার পড়বে না।
আমার মনে পড়ে, জনৈক সদরুল্লাহ, যিনি মাণিকগঞ্জের কোনো এক পোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টার ছিলেন, তিনি সংস্কৃত থেকে জয়দেব অনুবাদ করেছিলেন, আর চাইলে আরবি থেকেও অনুবাদের দক্ষতা তার ছিল বলে খোঁজ পেয়েছিলাম। ‘গীতগোবিন্দ’ বইয়ের সেই অনুবাদটি ১৯৮৭ সালে নিউ মার্কেটের একটা দোকান থেকে আমাকে আমার অগ্রজ বন্ধু ফিরোজ কিনে দিয়েছিলেন। বইটিতে কিছু চিত্রসংযোজন ছিল। সেগুলো আমার অত পছন্দের ছিল না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এই যে আজ এত বছর পর যখন বইটি আর খুঁজে পাই না, আমি অনুবাদক সদরুল্লাহ সাহেব কিংবা প্রকাশক জয়বাংলা প্রকাশনী নিয়ে অনেকের কাজে জিজ্ঞাসা করেছি। এদের খোঁজ আমি পাইনি। হয়তো আমি যাদেরকে জিজ্ঞাসা করেছি, তার বাইরে কেউ বলতেও পারতেন।
পশ্চিমবাংলার প্রকাশনীগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে আলাপ করলে অনেকেই গাল ফোলাতে পারেন। কিন্তু বাদ দিয়েই বা আলাপ হবে কীভাবে! পশ্চিমবাংলা আর বাংলাদেশের মধ্যকার প্রকাশনা ও বিপণনের সম্পর্কের ম্যানিপুলেশন নিয়ে স্বতন্ত্র আলাপের দরকার আছে। তারপরও সেই আলাপ পুস্তক উৎপাদকদের করাই সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক। কিন্তু যখন আমরা পাঠকবিস্তারের প্রসঙ্গে কথা বলছি, তখন তো আর বিদ্যমান প্রবণতাকে উড়িয়ে বা এড়িয়ে আলাপ চলতে পারে না। যদি অন্য কোনো প্রকাশকের কথা বাদও দিই, মিত্র ও ঘোষ এবং দে’জ প্রকাশনীর সুবিপুল পুস্তক সংখ্যা এবং সাশ্রয়ী মূল্যের প্রসঙ্গ সামনে আনতেই হবে। বিশেষত, সেই সময়ে এটা আরো প্রাসঙ্গিক যখন ভারতীয় বইয়ের দাম বাংলাদেশে মুদ্রিত মূল্যমানের সাড়ে তিন গুণ ছিল। মিত্র ও ঘোষ কেবল অপেক্ষাকৃত কম দামে নানাবিধ রচনাসমগ্র হাজিরই করেনি, উপরন্তু বাংলাদেশে বাহ্যত অজনপ্রিয়-থাকতে-পারতেন এমন দুইজন কর্ণধারের দুর্দান্ত বাংলা রচনার সাথে পাঠককে পরিচিত করিয়েছেন – যথাক্রমে গজেন্দ্রকুমার মিত্র এবং সুবোধ ঘোষ। খুব অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে, গজেন মিত্র এমনকি বাংলাদেশের প্রথম দিকের স্যাটেলাইট জমানাতেই ধারাবাহিকের বিষয়বস্তু হয়েছিলেন – আফসানা মিমি পরিচালিত ‘পৌষ ফাগুনের পালা’। টেলিভিশনে চিত্রায়নের সূত্র ধরে কোনো কিছু প্রমাণ করতে চাইছি না আমি। কিন্তু বাংলাদেশের টেলিভিশনে গড়ে ধ্রুপদী সাহিত্যনির্ভর কাহিনির যে প্রবণতা, তাতে পশ্চিমবাংলার অপেক্ষাকৃত বড় তারকার বাইরে কারো সাহিত্যকে অধিগ্রহণ পরিচালকীয় সাহিত্যরুচিকে যেমন স্পষ্ট করে; তেমনি পাঠকবিস্তারের প্রসঙ্গটাকে বুঝতে এটা সহগ উপাদান।
সুবোধ ঘোষ তার বন্ধুর মতো উপন্যাসনিষ্ঠ মানুষ ছিলেন না। তুলনায় ভ্রমণকাহিনি আর ছোটগল্পের ওস্তাদ তিনি। ভ্রমণকাহিনিকে উপন্যাসের/ফিকশনের স্বাদে পুষ্ট করাতে তিনি ঈর্ষণীয় দক্ষতারও ছিলেন। আমি যে সুবোধ ঘোষের ‘রম্যাণী বীক্ষ’ গ্রন্থটির প্রায় সবগুলো খণ্ডই (সম্ভবত ২৩টা) পড়ে ফেলেছিলাম, সেটারও কারণ এই যে, ওই মহকুমা (পরে জেলা) পাবলিক লাইব্রেরিতেই সুবোধ ঘোষ সংযোজিত ছিলেন।
হুমায়ূন আহমেদ যে তখন জন্মেছিলেন কোনোই সন্দেহ নেই, তবে কিতাব লিখেছিলেন কিনা খোঁজ নিতে হবে। ‘মাসুদ রানা’ তখন বিরাজেন, লাইব্রেরির তাকে শোভা পান, এবং প্রচুর তরুণের প্রথম পছন্দের তাক সেগুলো। আমি ‘মাসুদ রানা’র ভক্ত ছিলাম না, সেটা দৈবাৎ হিসাবে দেখি। কোনো কিছু লঘুগুরু প্রমাণের চেষ্টায় বলছি না। এটা আমার একটা প্রস্তাব যে, ‘মাসুদ রানা’র জনপ্রিয়তার সাথে ১৯৭৫ পরবর্তী সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক জমিনে মার্কিনী তারুণ্য ও সামরিকমনস্ক যুবকত্ব একটা প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু এটা প্রমাণের জন্য যতটা কাঠখড় পোড়াতে হবে, তা এক্ষুনি আমি চাইছি না।
বাংলাদেশের পাঠকসংখ্যা এখানকার জনসংখ্যার সাপেক্ষে নিশ্চয়ই কম। কিন্তু জনসংখ্যাকে সাপেক্ষ ধরে আলাপগুলো বিশেষ সুবিধার হয় না। তাহলে ক্রীড়ানৈপুণ্য কেবল ভারত আর চীনেরই দেখাতে পারার কথা। ফিলিস্তিনি বা আলবেনীয় সাহিত্য নিয়ে, জামাইকান সঙ্গীত নিয়ে কিংবা জর্জীয় চলচ্চিত্র নিয়ে আলাপ বা আগ্রহের মানেই হয় না।
যা হোক, যেসব হামানদিস্তা চিন্তাকাঠামো নিয়ে আমার সমস্যা, সেগুলো নিয়ে বলতে গিয়েই এই উল্লেখ করলাম মাত্র। এই কম সংখ্যক পাঠকের দেশেও পাইরেটেড বইয়ের গুরুত্বও সমধিক। সেটা অনুধাবনের জন্য একদম লেটারপ্রেসের কালেই যেতে হবে আমাদের। পাইরেসি সংক্রান্ত যে নৈতিক চাপ সেগুলো অনেক কম ছিল। কিন্তু এখানে আমি চাই পাঠকেরা মনোযোগ দিন অন্য একটা জায়গায়। একটা বইয়ের কপি হাতে পাবার পর সেটাকে পড়ে পড়ে নিকটবর্তী কোনো অপেক্ষাকৃত সস্তা বিনিয়োগের একটা ছাপাখানায় আদ্যোপান্ত বইটির হরফ পুনর্সজ্জিত হলো; সেটাকে ছাপাখানায় তুলে নিউজপ্রিন্টে ছাপা হলো। পেপারব্যাক বা নরম বাঁধাই হলেও একটা দ্বিরঙা পাতলা প্রচ্ছদ ছাপানো হলো। তারপর লঞ্চঘাট কিংবা রেলস্টেশনে গরিব ফিরিওয়ালার কাঁধে চেপে-চেপে বইগুলো বিক্রি হচ্ছে। এই পুরো প্রক্রিয়ায় লগ্নিকারের যদি কোনোরকম লভ্যাংশের সম্ভাবনা না থাকে, তাহলে এই কাজটাতে তিনি হাত দেবেন কেন? এই ধরনের বইয়ের বিপুল একটা বাজার ছিল। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় থেকে আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, নীহাররঞ্জন গুপ্ত থেকে নিমাই ভট্টাচার্য, ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় থেকে বিমল মিত্র, কখনও কখনও এমনকি আশাপূর্ণা দেবী।
যে ধরনের ছাপাখানা থেকে এই ‘বেআইনি’ বইগুলো মুদ্রিত হতো, সেই একই ধরনের ছাপাখানা থেকে নূরানি নামাজ-শিক্ষার বই, বিখ্যাত ব্যক্তিদের বাণীমালা কিংবা পঞ্জিকাও বের হতো – তারাচাঁদ পঞ্জিকা, লোকনাথ পঞ্জিকা। এসব পঞ্জিকার একটা ছিল পকেট সংস্করণ, আরেকটা বড় সংস্করণ। পঞ্জিকার মুদ্রণকে ঠিক হাজারের সংখ্যা দিয়ে বোঝা সম্ভব হতো না। সম্ভবত ওগুলো ছিল লাখের অংকে। এখন কেউ চাইলে পঞ্জিকাকে পাঠাভ্যাসবিস্তারী কোনো পুস্তক হিসাবে দেখতে নাও চাইতে পারেন। কিন্তু আমি হলফ করে বলতে পারি যে, দুপাতা পঞ্জিকা তিনি দক্ষপাঠ করে প্রমাণ দিতে পারবেন না যে ‘পড়তে পারেন’। পঞ্জিকার ক্রমবর্ধমান চাহিদার মধ্যে একটা ফিউশনও ঘটে – মোহাম্মদী পঞ্জিকার আবির্ভাব ঘটে এবং এরও বিপুল পাঠক।
আচ্ছা, নিকট অতীতে তসলিমা নাসরিনকেই বা কোথায় রাখব? তসলিমা নাসরিন বহুলপঠিত, অতিশয় জনপ্রিয়, নতুন পাঠক সৃষ্টিকারী লেখক ছিলেন। এই সারসত্যটিকে না দেখতে পারার জন্য অহংকারী পুরুষ ও পুরুষালি আধিপত্যের নিবিড় প্রজা হওয়া দরকার। তসলিমা যে একজন অতিকায় প্রপঞ্চ ছিলেন, সেটা বোঝার জন্য ‘ক’ উপন্যাস পরবর্তী বিশাল পত্রিকা হাউজগুলোর পক্ষ থেকে তাকে নিয়ে হাসিঠাট্টার আয়োজনের বহর থেকেই বোঝা যায়। এই আত্মজৈবনিক উপন্যাসটির গুণমাণ এবং লিঙ্গ-রাজনীতি নিয়ে স্বতন্ত্র আলাপ হতে পারে। কিন্তু তাকে প্রতিহত করার আয়োজনে আমার মনোযোগ পড়েছে আরও বেশি। কিন্তু আমি আরও আটপৌরে চিত্র হাজির করি বরং। হুমায়ূন আহমেদ সাহেবের জনপ্রিয়তার আগেই তসলিমা নাসরিন জনপ্রিয় ছিলেন। গদ্যের জন্য যেমন, কবিতার জন্যও তেমন। যশোলোভী পুরুষ সাহিত্যিকদের জন্য অশান্তির হলেও এটাই বাস্তব। এমনিতে হুমায়ূন সাহেবের সাহিত্যিক জনপ্রিয়তাকে দেখা দরকার প্যাকেজ নাটক ও স্যাটেলাইট উত্থানের সাথে মিলিয়ে। এটা একটা প্রস্তাব মাত্র, এবং উপেক্ষা-অযোগ্য প্রস্তাব। এখানে তুলবার কারণ হলো, তসলিমার জনপ্রিয়তা এসব মাত্রাও পায়নি। তার আগে দৈনিকের পর্যালোচনার পাতায় হাতেগুণে সম্ভবত এক দুইজন নিয়মিত নারীকে পাওয়া গেছে – আনোয়ারা সৈয়দ হক একজন। মনে পড়ে, পত্রিকার পাতায় তাকে কলামিস্ট হিসাবে আনবার কৃতিত্ব জাহিরি কিছু বক্তৃতাও ‘ক’-উত্তর কালে দুচারজন সম্পাদক ঝাড়ছিলেন। এই হলো ঢাকা!
যাদের মনে নেই, তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিই, ওই সময়কালে তসলিমা কার্যত নিষিদ্ধ ছিলেন। বাস্তবে মানুষজনের মনে পড়বে যে ‘ক’ নিষিদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু তার জীবনে নিষিদ্ধ হওয়া নতুন কিছু নয়। ‘লজ্জা’ আমার পছন্দের উপন্যাস নয়; কিন্তু নিষিদ্ধ হওয়াতে খুশিও হইনি। সেটা ১৯৯৩ সালে। ১৯৯৯ তে ‘আমার মেয়েবেলা’ও নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু কথা আসলে বই নিষিদ্ধ নিয়ে হচ্ছে না। কার্যত পুস্তক ব্যবসায়ীদের একাংশ কোনো না কোনো কারণে তসলিমাকে ‘বয়কট’ করে রাখছিলেন।
‘লালন আখড়া রক্ষা আন্দোলন’-এর গুরুত্ব যাই হোক, আমি ছিলাম একজন কর্মী। পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলাতে সমন্বয়ের কাজ নিয়ে গেছি। ১৩ এপ্রিল ২০০১-এর নৈশ বাসে। যে বাড়িতে শেষরাতে আশ্রয় নিয়েছি, স্থানীয় একজন কলেজ শিক্ষক, সকালে ঘুম থেকে উঠে তার বাড়িতে নাস্তা করে বেরোনোর কথা। ঠিকঠাকমতো নাস্তা করার আগেই রমনা বটমূলের কথিত ‘মৌলবাদী’ হামলার খবর এসেছে। লালন আখড়া আন্দোলন মাথায় উঠল, আসলে নাস্তাও বিশেষ রুচল না মুখে। এ ছাড়া, অস্বীকার করব না, ‘মৌলবাদী হামলা’ থিসিসটার প্রতি গুরুত্বপূর্ণ আস্থা বজায় রাখতেও পারছিলাম না। সারাদিন ভুমমারা মুখে বসে আছি এখানে-ওখানে। রাতের বাস ধরব। বিকাল নাগাদ বসে আছি স্থানীয় একটা বইয়ের দোকানে। থমথমে মুখে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে আলাপ করছি দোকানের কর্ণধার, একজন সাংবাদিক, একজন শিক্ষক, আমি – ভ্রমণকারী সংগঠক। বোদা কলেজ থেকে দুজন ছাত্রী এলেন। মাথায় ওড়না পেঁচানো। তখনো হিজাব নিখিল বাংলাদেশি জনপ্রিয় পোশাক হিসাবে আবির্ভূত হয়নি। নিচু গলায় তারা জানতে চাইলেন, যে বই দুটো বলে গেছিলেন তা আনা হয়েছে কিনা। বিক্রেতাও বেশি কথা না বাড়িয়ে কাগজের ঠোঙায় দুইখানা তসলিমার বই সরবরাহ করে দিলেন। তসলিমা নাসরিন এমনই এক লেখকের নাম। একেবারেই নিকট অতীতের বাংলাদেশে।
খুবই হ্রস্বস্মৃতির মানুষজন চারপাশে। প্রতি বছরই যেমন মানুষ বলতে থাকেন ‘এ বছরের মতো গরম আমার বাপের জন্মে দেখিনি।’ এসব কথাকে বস্তুগত সত্য হিসাবে গ্রহণ বা অনুধাবন করা যাবে না। জাস্ট কথার কথা আরকি!
লেখক: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হাসেম আলী (৩৫) নামে এক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার (২২ জুন) সকাল ৯টার দিকে উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের হোসেনাবাদ গোড়ের পাড়া গ্রামে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত হাসেম আলী দৌলতপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোবরগাড়া গ্রামের মৃত আছান শেখের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্মাণাধীন একটি ভবনে ইট ভেজাতে গিয়ে বৈদ্যুতিক মোটরে কাজ করার সময় অসাবধানতাবশত বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন হাসেম আলী। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা বলেন, “বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের মৌখিক পরীক্ষায় (ভাইভা) অংশগ্রহণ করা সব প্রার্থীকে সনদ প্রদানের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে পুলিশ।
রবিবার (২২ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এর ফলে ওই এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
এর আগে, সকাল ১১টার দিকে আন্দোলনকারীরা প্রেসক্লাবের সামনে থেকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ বারবার সরে যেতে বললেও স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। পরে সাড়ে ১১টার দিকে তাদের ওপর জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর জানান, ঘটনাস্থল থেকে তিনজনের সঙ্গে কথা বলছে পুলিশ এবং প্রেসক্লাব ফাঁড়িতে বসেই তাদের কথা হবে।
আন্দোলনকারীরা জানান, ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও ভাইভায় রেকর্ড ২০ হাজার ৬৮৮ জন প্রার্থীকে ইচ্ছে করে ফেল করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তাদের দাবি, ফলাফল পুনর্মূল্যায়ন করে ভাইভায় অংশ নেওয়া সবাইকে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দিতে হবে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ জুন তারা এনটিআরসির সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।
ইরান-ইসরায়েলের চলমান সংঘাতে জড়াতে পারে যুক্তরাষ্ট্র- এমন আশঙ্কার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনের আকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে রহস্যময় জাম্বো জেট। বিশালাকার সেই বিমানটি চোখে পড়তেই সাধারণ মার্কিনিদের চোখ কপালে উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের একাংশের দাবি, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে বড় কোনো পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই কারণে গুপ্তঘাঁটি থেকে অতিশক্তিশালী ওই বিমানকে বের করেছে মার্কিন বিমান বাহিনী। যদিও বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি দেশটির প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মঙ্গলবার রাজধানী ওয়াশিংটনের যুগ্ম সামরিক ঘাঁটি ‘অ্যান্ড্রুজ’-এ হঠাৎই অবতরণ করে মার্কিন বিমান বাহিনীর রহস্যময় জাম্বো জেট ‘ই-৪বি নাইটওয়াচ’। কেউ কেউ অবশ্য একে ‘ডুম্সডে’ (কেয়ামত) উড়োজাহাজ বলেও উল্লেখ করে থাকেন।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে’ জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়দার ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলার সময়ে শেষ বার বিমানটিকে ওয়াশিংটনে উড়তে দেখা গিয়েছিল। প্রায় আড়াই দশক পর গায়ের ধুলো ঝেড়ে ‘নাইটওয়াচ’-এর প্রকাশ্যে আসাকে কেন্দ্র করে তাই তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা।
যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ নির্মাণকারী সংস্থা বোয়িংয়ের তৈরি ‘৭৪৭-২০০’ মডেলের ‘নাইটওয়াচ’ বিমানটিকে দীর্ঘ দিন ধরেই আপৎকালীন পরিস্থিতিতে ব্যবহার করে আসছে মার্কিন সরকার। এটি মাঝ-আকাশে ‘ন্যাশনাল এয়ারবর্ন অপারেশন্স সেন্টার’ বা এনএওসি হিসাবে কাজ করে থাকে। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের একাংশের কাছে এর পরিচয় ‘উড়ন্ত পেন্টাগন’। পরমাণু যুদ্ধ বা ওই ধরনের কোনো জরুরি অবস্থা তৈরি হলে প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ অন্যান্য জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সুরক্ষা এবং পারমাণবিক যুদ্ধের সময় কমান্ড সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করার উদ্দেশে এটি নির্মাণ করেছে বোয়িং।
পেন্টাগন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে তাদের হাতে মোট চারটি ‘নাইটওয়াচ’ বিমান রয়েছে। এগুলো পরিচালনার দায়িত্ব রয়েছে মার্কিন বিমান বাহিনীর এয়ার কমব্যাট কমান্ডের হাতে। সংশ্লিষ্ট বিমানটি সরাসরি পারমাণবিক ডুবোজাহাজ এবং আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বা আইসিবিএমের (ইন্টার কন্টিনেন্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল) ইলেকট্রনিক ব্যবস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম।
এদিকে বিমানটিতে অত্যন্ত কম এবং উচ্চ কম্পাঙ্কের দুধরনের অ্যান্টেনা রয়েছে, যার মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো স্থানে যোগাযোগ করতে পারেন পাইলট ও ক্রু সদস্যেরা। শুধু তাই নয়, এই বিমানটিকে সব সময় সর্বশেষ প্রযুক্তিতে আপডেট করার প্রক্রিয়া চালু রেখেছে পেন্টাগন।
যুক্তরাষ্ট্রের এই জাম্বো জেটের পারমাণবিক বিস্ফোরণ, তড়িচ্চুম্বকীয় ক্ষেত্র এবং যেকোনো ধরনের ইলেকট্রনিক হামলা সহ্য করার সক্ষমতা রয়েছে। সেই কারণে বিমানটিতে কোনো জানালা রাখা হয়নি। একবার জ্বালানি ভরলে ৭ হাজার মাইল পর্যন্ত উড়তে পারে বিমানটি। তবে এক নাগাড়ে বেশ কয়েক দিন আকাশেও থাকতে পারে, কারণ আকাশেই জ্বালানি ভরার ব্যবস্থা রয়েছে এতে। এছাড়াও বিমানে রয়েছে আধুনিক ডিজিটাল যোগাযোগ ও সাইবার সুরক্ষা ব্যবস্থা।
‘নাইট ওয়াচ’ সম্পর্কে একটি প্রচলিত ধারণা হলো, এটি একদিকে যেমন পরমাণু অস্ত্র উৎক্ষেপণ করতে পারে আবার পারমাণবিক যুদ্ধের সময় একে কমান্ড সেন্টার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবে ওয়াশিংটন। আর ঠিক সেই কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, ইরানে হামলার জন্য বিমানটিকে কি পশ্চিম এশিয়ায় নিয়ে যাবে মার্কিন বিমান বাহিনী?
গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলমান ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত হওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই পরিস্থিতিতে ইরানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে মার্কিন বিমান বাহিনীর সংশ্লিষ্ট বিমানটির প্রয়োজন পড়তে পারে বলেই ধারণা করছেন অনেকে।
প্রসঙ্গত, গত শতাব্দীতে ‘স্নায়ু যুদ্ধের’ সময়ে প্রথম বার পরমাণু হামলা সহ্য করার মতো উড়োজাহাজ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে যুক্তরাষ্ট্র। সেইমতো ১৯৭০-এর দশকে বোয়িংয়ের হাত ধরে জন্ম নেয় ‘নাইটওয়াচ’। কারণ স্নায়ু যুদ্ধের সময় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের (বর্তমান রাশিয়া) থেকে পরমাণু হামলার আশঙ্কায় ভুগছিল যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের ধারণা ছিল- যেকোনো সময় পারমাণবিক হামলা চালাবে মস্কো। তখন পাল্টা আক্রমণের জন্য প্রয়োজন হবে ‘ডুম্সডে’ বিমানের।
কিন্তু ১৯৯১ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হলে সংশ্লিষ্ট বিমানটির প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়। তার পর থেকে আর কখনোই একে ওড়ায়নি মার্কিন বিমান বাহিনী। তবে মাঝেমধ্যে বিভিন্ন মহড়ায় অংশ নিয়েছে ‘ডুম্সডে’। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিদেশ ভ্রমণের জন্য ব্যবহৃত ‘এয়ারফোর্স ওয়ান’- এর ব্যাকআপ হিসেবেও মাঝেমধ্যে নাইটওয়াচকে ব্যবহার করেছে ওয়াশিংটন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন। সাক্ষাৎকালে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয় এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছেন তারা।
রবিবার (২২ জুন) সকাল ১০টার দিকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে জানিয়েছেন বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।
বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদও উপস্থিত ছিলেন।
এমন এক সময় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো যখন ফখরুলসহ বিএনপির আরও আট নেতার চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) আমন্ত্রণে আজই বেইজিং সফরে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে।
নেত্রকোণার বিএনপি দলীয় জেলা কার্যালয় ভাংচুর ও নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা সৈয়দ ওয়াসিউল্লাহ্ রাসেলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার দিবাগত রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে নেত্রকোণা জেলা শহরের উত্তর সাতপাই এলাকার নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নেত্রকোণা সদর মডেল থানার সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তারকৃত সৈয়দ ওয়াসিউল্লাহ্ রাসেল ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিভিন্ন পদে দ্বায়িত্বরত ছিলেন। বর্তমানে আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকলেও রাসেল তা অমান্য করে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন। তাছাড়া শুক্রবার সকালে হওয়া আওয়ামীলীগের মিছিলে সৈয়দ ওয়াসিউল্লাহ্ রাসেল পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল বলেও জানায় পুলিশ।
এব্যাপারে নেত্রকোণা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) চম্পক দাম জানান, সৈয়দ ওয়াসিউল্লাহ্ রাসেলকে বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে বিএনপি কার্যালয় ভাংচুর ও নাশকতার ঘটনায় পরবর্তীতে দায়ের করা মামলায় সন্দিগ্ধ আসামী হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শনিবার দুপুরে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে রিমান্ড আবেদন করা হবে বলেও জানান তিনি।
দেশের কৃষি প্রধান খাদ্য উদ্বৃত্ত ও সর্ববৃহৎ ধান ও চাল উৎপাদনকারী জেলা নওগাঁ। বোরোর মৌসুম মাত্র শেষ হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ফসল ভালো হয়েছে, আবার ফসল নষ্টও হয়নি। তারপরও নওগাঁয় অস্থির চালের দাম।
সপ্তাহের ব্যবধানে প্রকারভেদে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে ২-৪ টাকা। পাইকারিতে চালের দাম বাড়ায় স্থানীয় খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। খুচরা বাজারে বেড়েছে ৫-৬ টাকা। এদিকে ঠাৎ করে চালের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষ।
কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সুযোগ বুঝে চালের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কিছু ব্যবসায়ী ও মিলার ধান সংগ্রহ করে কৃত্রিমভাবে চাল মজুদ করে, যার ফলে দাম বেড়ে যায় বলে দাবি খুচরা চাল ব্যবসায়ীদের। এজন্য প্রশাসনের নজরদারির অভাবকে দায়ি করা হচ্ছে।
নওগাঁ জেলার সবচেয়ে বড় চালের মোকাম শহরের আলুপট্টি চাল বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রকারভেদে প্রতি কেজি চালের দাম ২-৪ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে জিরাশাইল ৬৮-৭০ টাকা, শুভলতা ৬০-৬২টাকা, কাটারি ৭০-৭২, ব্রি আর-২৮ চাল ৬২-৬৪ টাকা এবং স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫৫-৫৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও জিরাশাইল ৬৪-৬৬ টাকা, কাটারি ৬৬-৬৮ টাকা,শুভলতা ৫৭-৫৮ টাকা, ব্রি আর-২৮ জাতের চাল ৫৯-৬০ টাকা এবং স্বর্ণা-৫ চাল ৫৩-৫৪ টাকা করে বিক্রি হয়েছিল।
এদিকে নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চালবাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে মানভেদে কেজি প্রতি ৫-৬ টাকা বেড়ে জিরাশাইল ৭০-৭২ টাকা, কাটারি ৭৫-৮০ টাকা, শুভলতা ৬২-৬৪ টাকা, ব্রি আর-২৮ চাল ৬৫-৬৬ টাকা এবং স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫৮-৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এক সপ্তাহে আগে জিরাশাইল ৬৫-৬৬ টাকা, কাটারি ৭০-৭২ টাকা, শুভলতা ৫৭-৫৮ টাকা, ব্রি আর-২৮ চাল ৫৯-৬০ টাকা এবং স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫২-৫৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
চাল কিনতে আসা রিক্সা চালক আশরাফুল আলম ও গৃহিণী রেকেয়া বেগম বলেন, আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ হঠাৎ এমনভাবে চালের দাম বাড়লে আমরা বেকায়দায় পড়ে যাচ্ছি। শুধু চাল নয় আরও অনেক জিনিসপত্র কিনতে হয় সবমিলে কঠিণ হয়ে যাচ্ছে জীবন ধারণ।
কথা হলে পৌর ক্ষুদ্র চালবাজার সমিতির সভাপতি মকবুল হোসেন বলেন, বড় বড় বয়বসায়ীরা বেশি দাম দিয়ে ধান কিনছে। ছোট ব্যবসায়ীরা বড় বড় মিলারদের সাথে পেরে উঠতে পারছে না। এটা পুরো একটা সিন্ডিকেট। বাংলাদেশে যে ধান আছে, তা দিয়ে একবছর চলে যাব। সরকারি নজরদারি না থাকার সুযোগে কৃত্রিম মজুদ করেছে তারা। তাই বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে দ্রুত অভিযান দরকার।
বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে যার ফলে চালের দাম কিছুটা বেড়েছে দাবি করে নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন বলেন, চালের দাম সাধারণ ২-৩ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ৬ টাকা পর্যন্ত দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ব্র্যান্ডিং কোম্পানির। তবে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে কৃষকদের কাছ থেকে বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে। যার কারণে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও আমরা বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণ চাই। এই জন্য আমাদেরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আর দৃশ্যমানভাব যেসকল মিলে অতিরিক্ত মজুদ আছে সেখানে অভিযান চালনো উচিত। বাজারে স্বস্তি ফেরাতে চাইলে ধান-চালের অবৈধ মজুতদারদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ফরহাদ খন্দকার বলেন, চালের বাজার স্বাভাবিক রাখতে ওএমএস (খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রি) কর্মসূচি সচল রাখা হয়েছে। অবৈধ মজুত খুঁজে বের করতে জেলার বিভিন্ন মিল পরিদর্শন করা হচ্ছে। কোথাও অবৈধ মজুত পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হলে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, চালের দাম কি কারণে বেড়েছে এই জন্য খাদ্য কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছি। তারা যেন প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করে। অনুসন্ধানে যদি অপরাধ মনে হয়, তাহলে আমরা অবশ্যই অভিযান পরিচালনা করবো।
দুই দিন বিরতি দিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজ রবিবার রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু হয়েছে।
রবিবার (২২জুন) বেলা ১১টা ২০ মিনিটে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এ আলোচনায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন।
এতে সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। আগের আলোচনার সমাপ্তি টানতেই আজকের এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশন-নিউজ সরাসরি সম্প্রচার করছে। বৈঠকে আলী রীয়াজ ছাড়াও আরও উপস্থিত রয়েছেন ঐকমত্য কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান।
এর আগে, গত ১৭ জুন দ্বিতীয় পর্যায়ের অসমাপ্ত আলোচনায় অংশ নেয়নি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগের পর তার পরের দিন অবশ্য অংশ নিয়েছিল দলটি।
এদিকে সংসদের উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো এখনো কাছাকাছি আসতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনতেই এনসিসি গঠনের কথা বলা হচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি এবং সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন নিয়েও দলগুলোর ঐকমত্য হয়নি গত সপ্তাহে হওয়া চার দিনের সংলাপে। এ পর্যায়ে ঐকমত্যের সংজ্ঞা নিয়েও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য প্রকাশ পেয়েছে। কমিশন এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার কথাও ভাবছে।
গত সপ্তাহের সংলাপের অগ্রগতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এই বিষয়গুলোতে একদিকে রয়েছে বিএনপি এবং সমমনা পাঁচটি দল; তাদের কাছাকাছি অবস্থান বামপন্থি সিপিবি, বাসদের। বিএনপির বিপরীত অবস্থানে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, এবি পার্টিসহ বাকি দলগুলো। যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র গণঅধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি, জেএসডির অবস্থানও বিএনপির বিপরীতে।
নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে সংসদের প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা হ্রাসে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাবের বিপক্ষে অনড় অবস্থান ধরে রেখেছে বিএনপি এবং সমমনা এলডিপি, এনডিএম, লেবার পার্টি, ১২ দলীয় জোট এবং ১১ দলীয় জোট।
চার দিনের সংলাপে ৩০ রাজনৈতিক দল এবং জোট শুধু ৭০ অনুচ্ছেদ শিথিলে শর্ত সাপেক্ষে ঐকমত্য হয়েছে। যদিও জামায়াত বলেছে, শুধু অর্থবিল এবং আস্থা প্রস্তাব নয়, সংবিধান সংশোধনেও এমপিরা দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারবেন না। বিএনপি বলেছে, যুদ্ধাবস্থায়ও দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারবেন না এমপিরা।
মন্তব্য