বিশ্বজুড়ে নানা ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হন নারীরা। বিভিন্ন দেশে নারীরা সবচেয়ে বেশি যেসব ক্যানসারে আক্রান্ত হন, তার মধ্যে চতুর্থ সর্বোচ্চ স্থানে আছে জরায়ুমুখ ক্যানসার, বাংলাদেশে যেটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
৯৯.৮ শতাংশের ক্ষেত্রে হিউম্যান প্যাপিলমা ভাইরাসের (এইচপিভি) সংক্রমণের ফলে রোগের সূচনা হয়। এ ক্যানসারের একটি পূর্বাবস্থা থাকে, যা ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। সাধারণত যৌন সঙ্গমের ফলে ভাইরাসটি দেহে অনুপ্রবেশ করে।
জরায়ুমুখ ক্যানসার ছাড়াও এইচপিভির মাধ্যমে যোনিদ্বার, যোনি, মুখগহ্বর, পিনাইল/পুরুষাঙ্গ ক্যানসার হয়ে থাকে।
আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি কাদের
বাল্যবিবাহ, কম বয়সে সন্তান প্রসব, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, বেশিসংখ্যক সন্তান প্রসব কিংবা যৌন রোগ থাকলে জরায়ুমুখ ক্যানসার হতে পারে। নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে একাধিক যৌনসঙ্গী থাকলে এ রোগ হতে পারে।
এর বাইরে আর্থ-সামাজিক অবস্থা কিংবা স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাবে রোগটি হতে পারে।
জরায়ুমুখ ক্যানসার নির্মূলে বৈশ্বিক তৎপরতা
আগামী ১০০ বছরের মধ্যে পৃথিবী থেকে জরায়ুমুখ ক্যানসার, গুটি বসন্ত ও পোলিওর মতো রোগ নির্মূল করা সম্ভব। এ উদ্দেশ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বরে ঘোষণা দেয়, জরায়ুমুখ ক্যানসার নির্মূল করতে ২০৩০ সালের মধ্যে কিছু লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হবে।
সংস্থাটি জানায়, ৯০ শতাংশ কিশোরীকে এইচপিভি টিকা দিতে হবে। এ ছাড়া ২৫ থকে ৬০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে ৭০ শতাংশকে স্ক্রিনিং বা পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। এর বাইরে ক্যানসারপূর্ব অবস্থা বা জরায়ুমুখ ক্যানসার থাকা ৯০ শতাংশ নারীকে ২০৩০ সালের মধ্যে চিকিৎসা দেয়ার পাশাপাশি পেলিয়েটিভ কেয়ারের আওতায় আনতে হবে। এ ব্যবস্থাকে ডব্লিউএইচওর ৯০-৭০-৯০ ম্যানডেট বলা হচ্ছে।
ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক ডা. টেডরোস আধানম গেব্রিয়েসুস ২০১৮ সালের মে মাসে জরায়ুমুখ ক্যানসার নির্মূলে বৈশ্বিক তৎপরতার ডাক দেন। পরবর্তী সময়ে ২০২০ সালের আগস্টে এ ক্যানসার নির্মূলে বৈশ্বিক কর্মকৌশল গ্রহণ করে ডব্লিউএইচও। একই বছরের ১৭ নভেম্বর সে কর্মকৌশলের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। বাংলাদেশসহ ১৯৪টি দেশ এ কর্মকৌশলে নিজেদের সম্পৃক্ত করে।
বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়
জাতিসংঘের ২০২০ সালের ডেটা অনুযায়ী, আমাদের জনসংখ্যা ১৭ কোটি। উন্নয়নশীল দেশ থেকে আমরা বর্তমানে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পথে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ২০২০ সালের ডেটা অনুযায়ী, আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬৪ ডলার। এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে ২১.৮ শতাংশ মানুষ।
পৃথিবীর অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও জরায়ুমুখ ক্যানসারের প্রকোপ অনেক বেশি। গ্লোবকনের ২০২০ সালের ডেটা অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ৮ হাজার ২৬৮ জন নারীর জরায়ুমুখ ক্যানসার শনাক্ত হয়। এ ক্যানসারে বার্ষিক মৃত্যু হয় ৪ হাজার ৯৭১ নারীর।
যেহেতু এখন পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো বেড়ে চলেছে এবং অপর্যাপ্ত পরীক্ষা হয়েছে, সেহেতু বাংলাদেশে স্তন ক্যানসারের পরই জরায়ুমুখ ক্যানসারে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে নারীরা।
২০০৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১৪.৩ শতাংশ নারীর ভিজ্যুয়াল ইন্সপেকশন উইথ অ্যাসেটিক অ্যাসিড তথা ভিআইএ পদ্ধতির মাধ্যমে জরায়ুমুখ ক্যানসার পরীক্ষা করা হয়েছে।
২০১০ সালে বাংলাদেশে হাজারে মাতৃমৃত্যু ছিল ৩১০। ২০১৫ সালে সেটি কমে দেড়শতে নেমে আসে। সেদিক থেকে দেখলে জরায়ুমুখ ও অন্যান্য ক্যানসারজনিত রোগে মৃত্যুহার বেড়েছে।
আমাদের করণীয় কী
জরায়ুমুখ ক্যানসার নির্মূল ও আক্রান্তদের রক্ষায় আমাদের বেশ কিছু করণীয় আছে। সেগুলো এখন তুলে ধরছি।
১. আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত এইচপিভি টিকাদান। এ নিয়ে ২০০৮ সালে বাংলাদেশ সার্ভিক্যাল ক্যানসার ভ্যাকসিনেশন (জরায়ুমুখ ক্যানসার টিকাদান) কমিটি একটি পাইলট কর্মসূচি চালু করে। সে কর্মসূচির আওতায় ছিল ৬৭ জন মেয়ে, যাদের বয়স ৯ থেকে ১৫ বছর। তাদের মধ্যে ৫০ জনকে টিকা দেয়া হয়। ১৭ জন কন্ট্রোল হিসেবে থাকে। ৯৭.৫ শতাংশ মেয়ের সেরো কনভারশন হয়। ৭ বছর পর তাদের ৯৩.৩ শতাংশের দেহে অ্যান্টি এইচপিভি ১৬/১৮ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে গাজীপুরে আরেকটি পাইলট কর্মসূচি নেয়া হয়। ৬ মাসের ব্যবধানে দুটি টিকা দেয়া হয় ১০ বছর বয়সের মেয়েদের। সে কর্মসূচির প্রথম বছরে ৮৯ শতাংশ এবং দ্বিতীয় বছরে ৯৮ শতাংশ মেয়েদের টিকা দেয়া হয়।
টিকাদানের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
(ক) ২০২২ সালের মধ্যে এইচপিভি টিকা সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) আওতাভুক্ত করতে হবে।
(খ) বর্তমানে ৯০ শতাংশ টিকাদান কর্মসূচি হয় স্কুলভিত্তিক। স্কুলের বাইরে মেয়ের টিকা দিতে হবে। ছেলেদেরও টিকা দিতে হবে।
(গ) কিছু বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। যেমন: বাল্যবিয়ে না করা, একাধিক যৌনসঙ্গী না রাখা, অল্প বয়সে সন্তান ধারণ না করা, অল্প সময়ের ব্যবধানে বারবার সন্তান প্রসব না করা, ধূমপান না করা, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ৫ বছরের বেশি সময় গ্রহণ না করা, যৌনস্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা।
১০ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের মধ্যে টার্গেট গ্রুপ হলো ৮ লাখ ৩১ হাজার।
২. জরায়ুমুখ ক্যানসার মোকাবিলায় দ্বিতীয় লক্ষ্য হবে ৭০ শতাংশ নারীকে স্ক্রিনিং বা পরীক্ষার আওতায় আনা। উন্নত দেশে পাপ্স স্মেয়ার প্রচলিত আছে। যথেষ্ট ল্যাবরেটরি ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল না থাকায় বাংলাদেশে ভিআইএ বা ভায়া স্ক্রিনিং পদ্ধতির মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে স্ক্রিনিং শুরু করা হয়।
এ নিয়ে ২০০৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমউ) পাইলট প্রকল্প শুরু হয়। ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল নাগাদ ন্যাশনাল সেন্টার ফর ভায়া অ্যান্ড সিবিই সক্রিয় কার্যক্রম চালায়। ২০১৮-২১ মেয়াদে ‘ইলেকট্রনিক ডেটা ট্র্যাকিং উইথ পপুলেশন বেইজড সার্ভিক্যাল অ্যান্ড ব্রেস্ট ক্যানসার স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম’ নামের কর্মসূচি পরিচালনা করা হয়।
বর্তমানে দেশে ভিআইএ কেন্দ্র আছে ৫০০টি। এ মুহূর্তে ভিআইএ সম্পৃক্তদের মধ্যে ২ হাজার ৩৮৬ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তাদের মধ্যে ৪০০ চিকিৎসক, ১ হাজার ৯৫৬ নার্স, এফডব্লিউভি ও প্যারামেডিকস রয়েছেন।
দেশে ৭ কোটি ৫ লাখ নারীর মধ্যে টার্গেট গ্রুপ হলো ৩ কোটি। ২০১৯ সাল পর্যন্ত ভিআইএ পদ্ধতির মাধ্যমে ১০ শতাংশ এবং ২০২১ সালে ১৪.৩ শতাংশের পরীক্ষা হয়েছে। এ সময়ে পরীক্ষা করা হয়েছে ২৪ লাখ ৪৭১ জনকে। তাদের মধ্যে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ বা ১ লাখ ৮ হাজার ৩২৬ জনের ফল পজিটিভ এসেছে।
স্ক্রিনিংয়ের ক্ষেত্রে বেশ কিছু করণীয় রয়েছে। সেগুলো নিচে উল্লেখ করছি।
(ক) দেশের পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, ৮৬ শতাংশ নারীর স্ক্রিনিং হয়নি। এ কারণে পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনতে হবে। অর্থাৎ ভিআইএর সঙ্গে প্রাথমিক স্ক্রিনিং টেস্ট হিসেবে এইচপিভি ডিএনএ টেস্টের প্রবর্তন করতে হবে।
(খ) পলিসি প্রবর্তন গাইডলাইন তৈরি করতে হবে।
(গ) ন্যাশনাল স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম বা জাতীয় পরীক্ষা কর্মসূচির আওতায় ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সী নারীদের টার্গেট গ্রুপ হিসেবে নিতে হবে।
(ঘ) ডব্লিউএইচওর মতে, একজন নারীর জীবনে দুবার পরীক্ষা করালে আর জরায়ুমুখ ক্যানসারের প্রয়োজন হয় না। দুবার পরীক্ষার মধ্যে কমপক্ষে ৫ বছর বিরতি দিতে হবে। সে বিষয়টি মাথায় রেখে কর্মসূচি সাজাতে হবে।
(ঙ) হাসপাতালভিত্তিক পরীক্ষার পরিবর্তে জনসংখ্যাভিত্তিক পরীক্ষা হতে হবে। এ ক্ষেত্রে টার্গেট জনসংখ্যা হবে ৩ কোটি।
এ ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ের কথা উল্লেখ করা যায়। যেমন: ‘সি অ্যান্ড ট্রিট’ নামে কুড়িগ্রামে একটি পাইলট প্রকল্প চালু করা হয়। ২০১৯ সালের প্রথম সপ্তাহে চালু হওয়া এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সাল পর্যন্ত।
এ প্রকল্পের আওতায় ভিআইএ-মিনি কলপোস্কোপি-থার্মোকোয়াগুলেশন পদ্ধতিতে টার্গেট জনসংখ্যা ধরা হয় ৬০ হাজার। এর মধ্যে কাভারেজে এসেছে ৩০ হাজার ৭৫২ বা ৫০ শতাংশ।
কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমেও জরায়ুমুখ ক্যানসার পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতি কমিউনিটি ক্লিনিকে ৬০০ থেকে ৭০০ নারীকে পরীক্ষা করা হবে। মোট ১৩ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে ৯১ লাখ নারীর স্ক্রিনিং সম্ভব হবে।
৩. জরায়ুমুখ ক্যানসার নির্মূল পরীক্ষার লক্ষ্য নিশ্চিতের পাশাপাশি আরেকটি দিক মাথায় রাখতে হবে। সেটি হলো পরীক্ষার বিষয়টি বাস্তবায়ন কারা করবে। এ ক্ষেত্রে কিছু বিষয় নজরে আনতে হবে।
(ক) বিভাগীয় পর্যায়ে ৮টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ক্যানসার সেন্টার এবং অন্যান্য সেন্টারে জরায়ুমুখ ক্যানসার পরীক্ষা করাতে হবে। ২৫ থেকে ৬০ বছর বয়সী নারীদের এর আওতায় আনতে হবে।
(খ) চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এইচপিভি জিনোটাইপের জন্য পিসিআর ল্যাব প্রস্তুত করতে হবে।
(গ) সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও ৮টি বিভাগীয় ক্যানসার সেন্টারে পিসিআর ল্যাব তৈরি করতে হবে।
(ঘ) লক্ষ্য অর্জনে বর্তমানে উন্নয়নশীল ১০টি দেশ প্রাইমারি স্ক্রিনিং হিসেবে ভিআইএর পরিবর্তে এইচপিভি ডিএনএ পদ্ধতিতে পরীক্ষা করছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ঢাকায় ৬৮টি পিসিআর ল্যাব, অন্যান্য শহরে ৫০টি পিসিআর ল্যাবসহ ১১০টি ল্যাবকে এইচপিভি জিনোটাইপিংয়ের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। বর্তমানে বিএসএমএমইউ, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং ওজিএসবি হাসপাতালে এ ধরনের ল্যাব আছে।
(ঙ) নারীরা যেন নিজেরাই সোয়াবের মাধ্যমে স্যাম্পল নিতে পারেন, সে জন্য ভিডিও প্রদর্শনীর আয়োজন করতে হবে।
(চ) শিক্ষার্থী, সমাজকর্মী, ক্যানসার সারভাইভার, সেবাদানকারী মিলে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
৪. জরায়ুমুখ ক্যানসার নির্মূলে তৃতীয় লক্ষ্য হলো ক্যানসারপূর্ব অবস্থায় থাকা এবং শনাক্ত হওয়া ৯০ শতাংশ নারীকে চিকিৎসা দেয়া।
বিএসএমএমইউয়ের গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজি বিভাগ, এনআইসিআরএইচ, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে এ চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে।
প্রতিটি জরায়ুমুখ ক্যানসারজনিত মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক। কারণ এই ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব। বর্তমানে বছরে ৪ লাখ নারীর স্ক্রিনিং হচ্ছে। কাজেই ৭০ শতাংশ নারীকে স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনা খুব কঠিন হবে।
২০৩০ সালের মধ্যে লক্ষ্য অর্জন করতে হলে আমাদের আরও পর্যালোচনা দরকার।
পরীক্ষায় পজিটিভ হওয়া নারীদের দুইভাবে চিকিৎসা দেয়া যেতে পারে। ডব্লিউএইচওর মতে, আলাদাভাবে ট্রেয়াজের মাধ্যমে একত্রিত করা। এ ক্ষেত্রে ভিআইএর আওতাধীন কলপোস্কপি/সিটোলোজি কিংবা ট্রিটিং স্ক্রিন অ্যান্ড ট্রিট তথা একই সময়ে শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা প্রদান করা যেতে পারে।
চিকিৎসার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
(ক) প্রতিটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা হাসপাতালে কলপোস্কপি ক্লিনিক তৈরি
(খ) বিভাগীয় ৮টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ক্যানসার সেন্টারে
চিকিৎসকদের কলপোস্কপি, ক্রিয়োথেরাপি, থার্মাল অ্যাবলেশন, লিপ প্রসিডিউর বিষয়ে প্রশিক্ষণ।
(গ) ক্যানসারের সার্জারির জন্য আরও উচ্চতর প্রশিক্ষণদান।
(ঘ) এনজিও, সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ডেটাবেজ তৈরি।
(ঙ) ক্যানসার রেজিস্ট্রি, মৃত্যুহার রেজিস্ট্রির মধ্যে সংযোগ স্থাপন।
(চ) রেডিও থেরাপি ও কেমোথেরাপির প্রসার।
(ছ) পেলিয়েটিভ সেবার প্রসার।
(জ) স্বাস্থ্যবিমার প্রবর্তন।
আসুন আমরা সবাই মিলে সচেতন হই ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি। প্রত্যেকে নিজ নিজ স্থানে থেকে জরায়ুমুখ ক্যানসারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে পৃথিবীর বুকে নতুন ইতিহাস রচনা করি।
লেখক: অধ্যাপক ও ইউনিট প্রধান, গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং সদস্য সচিব, অনকোলজি কমিটি ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক সচিব, ওজিএসবি
আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে আগামী অর্থবছরের বাজেটে ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘বিগত বছরের মতো এবারও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সে লক্ষ্যে ওষুধ, চিকিৎসা পণ্য এবং কিছু স্বাস্থ্যসেবা পণ্য উৎপাদনের জন্য রেয়াতি হারে কাঁচামাল আমদানির বিদ্যমান সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করছি।’
জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট পেশ করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এটি অর্থমন্ত্রী হিসেবে তার পঞ্চম এবং বাংলাদেশ সরকারের ৫২তম জাতীয় বাজেট।
দেশের ইতিহাসে এবারের বাজেটই সবচেয়ে বড় আকারের। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের জন্য তাজউদ্দীন আহমেদ প্রথম ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট উত্থাপন করেছিলেন।
দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ৯৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তবে এই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
এ নিয়ে চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অন্যান্য বছরের একই সময়ের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গছে। এর মধ্যে চলতি মাসে এক হাজার রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বুধবার অধিদপ্তরের দেয়া বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গেছে, বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৫ জন। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে রোগী ভর্তি হন ৮৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ৮২ জন আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ১৩ জন ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ভর্তি রয়েছেন ২৮৩ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ২৪২ জন আর অন্যান্য বিভাগের হাসপাতালে ৪১ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ২২ জন। তাদের মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন এক হাজার ৭২৬ জন। মারা গেছেন ১৩ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৫৬৬ জন। তাদের মধ্যে মারা যান ছয়জন। এ ছাড়া ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন ভর্তি হন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয় তিনজনের। মার্চে কারও মৃত্যু না হলেও হাসপাতালে ভর্তি হয় ১১১ জন। এপ্রিলে ভর্তি হয় ১৪৩ জন, আর মৃত্যু হয় দুজনের। চলতি মাসে মৃত্যু হয়েছে দুজনের। আর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৩৬ জন।
দেশে ২০০০ সালে প্রথম ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ২০১৯ সালে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয় দেশে। সে বছর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল এক লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। তাদের মধ্যে মারা যান ১৭৯ জন। এ ছাড়া ২০২১ সালে শনাক্ত হয় ২৮ হাজার ৪২৯ জন, যাদের মধ্যে মৃত্যু হয় ১০৫ জনের। আর গত বছর ডেঙ্গু শনাক্ত হয় মোট ৬২ হাজার এবং মারা যান ২৮১ জন।
আরও পড়ুন:বর্ষা আসতে আরও বেশ কিছুদিন বাকি। কিন্তু বর্ষার রোগ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ডেঙ্গুর প্রকোপ ইতোমধ্যে বাড়তে শুরু করেছে। একইসঙ্গে হাসপাতালে বাড়ছে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
সাধারণত জুন মাসের পর ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিলেও এ বছর মে মাস থেকেই এই রোগের প্রকোপ বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় মে মাসেই চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ডেঙ্গুর এই আগাম প্রকোপের নেপথ্যে বেশকিছু কারণ উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, ‘আগের বছর ডেঙ্গুর সিজনটা দেরিতে শুরু হয়েছিল। গত বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চসংখ্যক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এই ধারাটা নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি পর্যন্ত চলে এসেছে।
‘বর্তমান সময়ে এসে সারা বছরই ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। এর নেপথ্য কারণ হিসেবে যা দেখেছি সেটি হলো রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নগরায়নের বেশ কিছু পরিবর্তন হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত একদমই বৃষ্টিপাত থাকে না। আমরা বার বার বলে এসেছি যে বৃষ্টির সঙ্গে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার একটি সম্পর্ক থাকলেও এখন আর সেটি নেই। ডেঙ্গু এখন আর মৌসম বুঝে হবে না, এটি সারা বছরই বাংলাদেশে থাকবে। বহুতল ভবনগুলোতে পার্কিং স্পেস তৈরি করা হয়েছে। পার্কিংয়ের এই জায়গাতে গাড়ি ধোয়া-মোছা করা হয়। সেখানে যে পানি জমে তাতে আমরা এডিস মশার লার্ভা পাই।
‘একেকটি বহুতল ভবনের নির্মাণ কাজ ১০-১২ বছর ধরে চলে। নির্মাণাধীন সেসব ভবনের বেসমেন্টে আমরা এডিস মশা পাই। ঢাকায় যেসব জায়গায় পানির সংকট আছে, ওয়াসার পানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নেই, সেসব এলাকায় ভবন মালিকরা সার্বক্ষণিক পানির সরবরাহ দেন না। এ অবস্থায় ওইসব ভবনের বাসিন্দারা পাত্রে পানি সংরক্ষণ করে রাখেন। সেখানেও আমরা এডিস মশা পাই।’
কবিরুল বাশার বলেন, ‘এডিস মশার এই যে তিনটি প্রজনন ক্ষেত্রের কথা বললাম সেগুলোর সঙ্গে বৃষ্টিপাতের কোনো সম্পর্ক নেই। এই ক্ষেত্রগুলো সারা বছর বিদ্যমান। বাংলাদেশের তাপমাত্রা সারা বছরই এডিস মশা প্রজননের উপযোগী। তাই বৃষ্টিহীন সময়েও স্থায়ী প্রজনন ক্ষেত্র থাকার কারণে আমাদের দেশে মৌসুম ছাড়াও ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিচ্ছে।
‘মে মাসে যখন বৃষ্টি হয়েছে তখন এডিস মশা নতুন প্রজনন ক্ষেত্র পেয়েছে। প্রকৃতিতে যেহেতু এডিস মশা ছিলোই, তাই এদের প্রজনন বৃদ্ধি পেয়েছে জ্যামিতিক হারে। তাই মে মাসেই ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়ে গেছে, যেটা আমাদের দেশে আগে কখনোই ছিল না।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ব্যান-ম্যাল এবং ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা) ইকরামুল হক বলেন, ‘এডিস মশা বংশ বিস্তারের জন্য যে আবহাওয়া দরকার বাংলাদেশে এখন সেটিই বিরাজ করছে। বিগত ৫০ বছরের ইতিহাসে শীর্ষ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে এ বছরের মার্চ-এপ্রিলে। বলা হচ্ছে, দেশের গড় যে তাপমাত্রা তার চেয়ে এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে ডেঙ্গু চার থেকে পাঁচ গুণ বাড়তে পারে।
‘গত বছরের তুলনায় এবার মে মাসেই ডেঙ্গু রোগী পাঁচ গুণ বাড়ার প্রথম কারণ আবহাওয়া পরিবর্তন। দ্বিতীয়ত, বাতাসে যে আর্দ্রতা থাকে, সেটি স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে ৫০-৮০ শতাংশ। সেটা স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে ২৫-৩০ শতাংশে নেমে এসেছে। এটা এডিস মশার বংশবিস্তারের জন্য খুবই সহায়ক। অর্থাৎ আমাদের দেশের তাপমাত্রা এডিস মশার বংশবিস্তারের উপযোগী।
‘এই আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাব শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের সব উষ্ণ দেশেই পড়ছে। আর এর প্রভাবে সেসব দেশেও ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সার্ভে করে দেখেছি, ঢাকা শহরে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে। সেসব নির্মাণস্থল এবং বিভিন্ন বিল্ডিংয়ে হঠাৎ বৃষ্টিতে পানি জমে থেকে এডিস মশার প্রজনন বাড়ছে।’
আরও পড়ুন:টাঙ্গাইলে পারভীনের রিপোর্ট দেখে পারভেজ নামে এক ব্যক্তির পিত্তথলি কর্তনের ঘটনায় জড়িত চিকিৎসক ও সোনিয়া নার্সিং হোমের মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন হয়েছে।
সোমবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ফয়সাল আহমদ রনি ও তনয় কুমার সাহা এই রিট দায়ের করেন।
‘পারভীনের রিপোর্ট দেখে পারভেজের পিত্তথলি কাটলেন চিকিৎসক’ শিরোনামে অনলাইন পোর্টাল নিউজবাংলা২৪-এ সংবাদ প্রকাশ হয়। সেই সংবাদ যুক্ত করে জনস্বার্থে দুই আইনজীবী রিটটি দায়ের করেন।
পারভীনের রিপোর্ট দেখে পারভেজের পিত্তথলি কাটলেন চিকিৎসক
রিটে এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক মো. তুহিন তালুকদার ও সোনিয়া নার্সিং হোমের মালিক আবুল কালাম রিজভির বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- এই মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি এ ঘটনার তদন্ত করতে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
রিট আবেদনে স্বাস্থ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল, টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, সদর থানার নির্বাহী কর্মকর্তা, সোনিয়া নার্সিং হোমের মালিক ও চিকিৎসককে বিবাদী করা হয়েছে।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মোহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চে রিটটির শুনানি হতে পারে বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন রিটকারী আইনজীবী তনয় কুমার সাহা।
নিউজবাংলায় প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক নারী রোগীর রিপোর্ট দেখে সে অনুযায়ী অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এক যুবকের পিত্তথলি কাটার অভিযোগ উঠেছে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে।
২১ মে দুপুরে ওই যুবকের পিত্তথলির অস্ত্রোপচার করেন শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত সোনিয়া নার্সিং হোমের সার্জারি বিশেষজ্ঞ মো. তুহিন তালুকদার।
ভুল চিকিৎসার শিকার মো. পারভেজ প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসক ও জেলা সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বুয়ালী এলাকার আবদুল কাদের শেখের ছেলে মো. পারভেজ প্যানক্রিয়াসের ব্যথা হওয়ায় ২৭ এপ্রিল সোনিয়া নার্সিং হোমের সার্জারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মো. তুহিন তালুকদারের কাছে যান। ওই চিকিৎসক পারভেজকে দেখে আল্ট্রাসনোগ্রাম ও এক্স-রে পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযারী ওই নার্সিং হোম থেকে রোগী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রিপোর্ট চিকিৎসককে দেখান। পরে চিকিৎসক রিপোর্ট দেখে তাৎক্ষণিক অপারেশনের কথা জানান। চিকিৎসকের কথায় ওইদিনই পারভেজের পেটে অস্ত্রোপচার করে পিত্তথলি কেটে ফেলেন চিকিৎসক তুহিন তালুকদার।
অভিযোগে আরও বলা হয়, অপারেশনের পর পিত্তথলি তার স্বজনদের দেখালেও এতে কোনো পাথর ছিল না। পরে রোগীর স্বজনদের জানানো হয় কেটে ফেলা পিত্তথলিতে কোনো ক্যানসারের জীবাণু রয়েছে কি না সেটি পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানোর কারণে পিত্তথলি নার্সিং হোমে রেখে দেয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়, কয়েকদিন চিকিৎসা শেষে বকেয়া টাকা আদায় শেষে নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষ রোগীকে ছাড়পত্র দেন। তারপর রোগীর স্বজনরা ছাড়পত্র নিয়ে দেখতে পান রোগী পারভেজ ভুল চিকিৎসার শিকার। পারভীন নামের এক নারীর রিপোর্ট দেখে সার্জারি চিকিৎসক পারভেজের পিত্তথলি কেটে ফেলেছেন।
পরে বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসক ও নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে তারা ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেন রোগী ও তার স্বজনদের কাছে।
আরও পড়ুন:কোভিড-১৯ টিকা কার্যক্রমে এবার দেশে এসেছে নতুন বুস্টার ভ্যাকসিন ভিসিভি (ভ্যারিয়েন্ট কন্টিনিউইং ভ্যাকসিন)। নতুন এ টিকার ৩য় ও ৪র্থ ডোজ চলতি সপ্তাহেই দেয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক।
সোমবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ফাইজার-ভিসিভি কোভিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রম শুরু সংক্রান্ত একটি সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটির মাধ্যমে ৩০ লাখ ডোজ ভিসিভি টিকা হাতে পাওয়া গেছে। এ টিকার ৩য় ও ৪র্থ ডোজ চলতি সপ্তাহ থেকেই দেশের সিটি করপোরেশন, জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা পর্যায়ের স্থায়ী কোভিড-১৯ টিকাদান কেন্দ্রে দেয়া হবে।’
‘ভিসিভি ভ্যাকসিন ব্যবহারে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এটি ব্যবহারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাও ইতিবাচক মতামত দিয়েছে।’
শুরুতে কারা এ টিকা পাবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘ভিসিভির তৃতীয় ডোজ পাবেন ১৮ বছর বা তদুর্দ্ধ বয়সী ব্যক্তিরা; চতুর্থ ডোজ পাবেন ৬০ বছর বা তদুর্দ্ধ বয়সী জনগোষ্ঠী এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত ১৮ বছর বা তদুর্দ্ধ বয়সী ব্যক্তি, গর্ভবতী মহিলা ও সম্মুখসারির যোদ্ধারা।
‘তৃতীয় ডোজ দেয়া হবে টিকার দ্বিতীয় ডোজ প্রাপ্তির ৪ মাস পর আর চতুর্থ ডোজ পাবেন তৃতীয় ডোজ প্রাপ্তির ৪ মাস পর।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘চলমান কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় সফলভাবে টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করছে বাংলাদেশ। বিশ্বে যত ভ্যাকসিন হয়েছে তার ১১ শতাংশ ভ্যাকসিন পেয়েছি আমরা। তা থেকে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৮৮.৫১ শতাংশ মানুষকে প্রথম ডোজ, ৮২.১৮ শতাংশকে দ্বিতীয় ডোজ, ৩৯.৬২ শতাংশকে তৃতীয় ডোজ ও ১.৮৫ শতাংশ মানুষকে টিকার ৪র্থ ডোজ এর মধ্যেই দেয়া হয়েছে।’
এ সময় স্বাস্থ্য অধিপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল) নাজমুল হক খানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:দেশে ডেঙ্গু ও করোনার প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে। প্রতিদিনই রাজধানীসহ সারা দেশে ভর্তি হচ্ছেন এডিস মশার কামড় খাওয়া ও করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীরা।
২৪ ঘণ্টার হিসাবে রোববার সর্বশেষ ডেঙ্গুতে দেশে ৬৭ জন এবং করোনায় ৭৩ জন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তাদের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, মৌসুমের আগেই বৃষ্টি হওয়ায় ডেঙ্গু রোগী বাড়তে থাকবে। বাড়বে করোনাও। এখনই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতে হবে।
ডেঙ্গু
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ৬৭ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে ঢাকায় নতুন ভর্তি রোগী ৫৮ জন এবং ঢাকার বাইরে ৯ জন।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ভর্তি রোগী ২০৯ জন এবং ঢাকার ৫৩টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ভর্তি রোগী ১৮০ জন। অন্যান্য বিভাগে বর্তমানে ভর্তি রোগী ২৯ জন।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৮ মে পর্যন্ত মোট ভর্তি রোগী ১ হাজার ৭৭১ জন। এর মধ্যে ঢাকায় মোট ভর্তি রোগী ১১৭৭ জন। ঢাকার বাইরে ভর্তি রোগী ৫৯৪ জন।
এ পর্যন্ত ১ হাজার ৫৪৯ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৯৮৭ জন, ঢাকার বাইরে ৫৬২ জন।
এ বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
করোনা
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৩২৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৭৩ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
আগের দিন ৯২৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছিল ৬১ জনের। সংক্রমণ কমেছে ১ দশমিক ০৭ শতাংশ। শনিবার শনাক্তের হার ছিল ৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। রোববার কমে হয়েছে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
দেশে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৫৪ লাখ ১৮ হাজার ৮১৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৯৭১ জন। এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ২২ শতাংশ।
করোনা আক্রান্ত হয়ে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় কেউ মারা যাননি। এখন পর্যন্ত করোনায় মৃতের সংখ্যা ২৯ হাজার ৪৪৬ জন। মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
করোনা আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছে ১৮ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে ২০ লাখ ৬ হাজার ২১২ জন। সুস্থতার হার ৯৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ। শনিবার সুস্থতার হার ছিল ৯৮ দশমিক ৪০ শতাংশ। সূত্র: বাসস
আরও পড়ুন:মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই বৃষ্টি শুরু হওয়ায় এ বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা বেশি। তাই রাজধানীবাসীসহ দেশের মানুষকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
রোববার মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশে সাধারণত জুন থেকে ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হয়। কারণ ওই সময়ে শুরু হয় বর্ষাকাল। এই প্রাদুর্ভাব চলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এ বছর মৌসুম শুরুর আগেই হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
সিটি করপোরেশনকে আরও বেশি তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, প্রাক মৌসুমে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ অনেক জনবহুল, তার ওপর এখানে দ্রুত নগরায়ন হচ্ছে। ফলে এখানে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সহজ না। এরই মাঝে অপ্রত্যাশিত কিছু মৃত্যু হয়েছে। মে মাসে যেটুকু হয়েছে, তা অন্যান্য সময়ে হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, নগরায়নের কারণে ঢাকা মহানগরে রোগীর সংখ্যা বেশি। আমাদের পরিসংখ্যান না দেখে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকা শহরে ৯ ধরনের গবেষণা করে থাকি। এসব গবেষণার মাধ্যমে ডেঙ্গু পরিস্থিতি দেখি এবং পরামর্শ ও চিকিৎসা দিয়ে থাকি।
তিনি বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় যেখানে ঘনবসতি সেখানে মশার উপদ্রব বেশি। তবে নির্দিষ্ট করে কোন এলাকায় সবচেয়ে বেশি সেটি বলা এ মুহূর্তে কঠিন। রোগীদের তথ্য যাচাই করে তারপর বলা যাবে। আমরা পুরো ঢাকা শহরকেই বিবেচনায় নিচ্ছি। আমাদের কাজ রোগী ব্যবস্থাপনা। ডেঙ্গু কোথায় বেশি এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব স্থানীয় সরকারের।
অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন বলেন, ঢাকায় অপরিকল্পিতভাবে নগরী গড়ে উঠছে। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে আমরা প্লাটিলেটকে সামনে আনি। অথচ এটি সেভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের উচিত সচেতনতায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া।
ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু সংক্রমণের পরীক্ষা সর্বোচ্চ মূল্য ৫০০ টাকা ও সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু সংক্রমণ পরীক্ষা ১০০ টাকা। কোনো হাসপাতালে এর বেশি নেওয়া হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঢাকা মহানগরীর পর কক্সবাজারে বেশি ডেঙ্গু রোগী জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় থাকা রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১০৬৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। আর কক্সবাজারে থাকা বাংলাদেশীদের মধ্যে এই সংখ্যা ৪২৬। এ বছর সব মিলিয়ে ১৭৫০ জন ডেঙ্গু নিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১১৬০ জন ঢাকায় এবং বাকিরা ঢাকার বাইরের। এ বছর ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ১৩ জন, যাদের দশজন ঢাকার।
রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেড়েই চলেছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলতি বছর ১ হাজার ৬৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে এ ক্যাম্পে ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা কঠিন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানুষের ঘনত্ব বেশি এবং পানি সংকটের কারণে দীর্ঘ সময় ধরে সেখানে পানি পাত্রে জমিয়ে রাখা হয়, আর এ পানিতেই মশা জন্ম নেয়। তবে ভাষাগত সমস্যা ও ক্যাম্পের ভেতরে প্রবেশজনিত সমস্যার কারণে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সেখানকার উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সের টিম গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছে।
সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক রাশেদা ইসলাম, অধ্যাপক কাজী তারিকুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য