বিশ্বজুড়ে নানা ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হন নারীরা। বিভিন্ন দেশে নারীরা সবচেয়ে বেশি যেসব ক্যানসারে আক্রান্ত হন, তার মধ্যে চতুর্থ সর্বোচ্চ স্থানে আছে জরায়ুমুখ ক্যানসার, বাংলাদেশে যেটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
৯৯.৮ শতাংশের ক্ষেত্রে হিউম্যান প্যাপিলমা ভাইরাসের (এইচপিভি) সংক্রমণের ফলে রোগের সূচনা হয়। এ ক্যানসারের একটি পূর্বাবস্থা থাকে, যা ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। সাধারণত যৌন সঙ্গমের ফলে ভাইরাসটি দেহে অনুপ্রবেশ করে।
জরায়ুমুখ ক্যানসার ছাড়াও এইচপিভির মাধ্যমে যোনিদ্বার, যোনি, মুখগহ্বর, পিনাইল/পুরুষাঙ্গ ক্যানসার হয়ে থাকে।
আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি কাদের
বাল্যবিবাহ, কম বয়সে সন্তান প্রসব, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, বেশিসংখ্যক সন্তান প্রসব কিংবা যৌন রোগ থাকলে জরায়ুমুখ ক্যানসার হতে পারে। নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে একাধিক যৌনসঙ্গী থাকলে এ রোগ হতে পারে।
এর বাইরে আর্থ-সামাজিক অবস্থা কিংবা স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাবে রোগটি হতে পারে।
জরায়ুমুখ ক্যানসার নির্মূলে বৈশ্বিক তৎপরতা
আগামী ১০০ বছরের মধ্যে পৃথিবী থেকে জরায়ুমুখ ক্যানসার, গুটি বসন্ত ও পোলিওর মতো রোগ নির্মূল করা সম্ভব। এ উদ্দেশ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বরে ঘোষণা দেয়, জরায়ুমুখ ক্যানসার নির্মূল করতে ২০৩০ সালের মধ্যে কিছু লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হবে।
সংস্থাটি জানায়, ৯০ শতাংশ কিশোরীকে এইচপিভি টিকা দিতে হবে। এ ছাড়া ২৫ থকে ৬০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে ৭০ শতাংশকে স্ক্রিনিং বা পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। এর বাইরে ক্যানসারপূর্ব অবস্থা বা জরায়ুমুখ ক্যানসার থাকা ৯০ শতাংশ নারীকে ২০৩০ সালের মধ্যে চিকিৎসা দেয়ার পাশাপাশি পেলিয়েটিভ কেয়ারের আওতায় আনতে হবে। এ ব্যবস্থাকে ডব্লিউএইচওর ৯০-৭০-৯০ ম্যানডেট বলা হচ্ছে।
ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক ডা. টেডরোস আধানম গেব্রিয়েসুস ২০১৮ সালের মে মাসে জরায়ুমুখ ক্যানসার নির্মূলে বৈশ্বিক তৎপরতার ডাক দেন। পরবর্তী সময়ে ২০২০ সালের আগস্টে এ ক্যানসার নির্মূলে বৈশ্বিক কর্মকৌশল গ্রহণ করে ডব্লিউএইচও। একই বছরের ১৭ নভেম্বর সে কর্মকৌশলের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। বাংলাদেশসহ ১৯৪টি দেশ এ কর্মকৌশলে নিজেদের সম্পৃক্ত করে।
বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়
জাতিসংঘের ২০২০ সালের ডেটা অনুযায়ী, আমাদের জনসংখ্যা ১৭ কোটি। উন্নয়নশীল দেশ থেকে আমরা বর্তমানে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পথে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ২০২০ সালের ডেটা অনুযায়ী, আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬৪ ডলার। এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে ২১.৮ শতাংশ মানুষ।
পৃথিবীর অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও জরায়ুমুখ ক্যানসারের প্রকোপ অনেক বেশি। গ্লোবকনের ২০২০ সালের ডেটা অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ৮ হাজার ২৬৮ জন নারীর জরায়ুমুখ ক্যানসার শনাক্ত হয়। এ ক্যানসারে বার্ষিক মৃত্যু হয় ৪ হাজার ৯৭১ নারীর।
যেহেতু এখন পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো বেড়ে চলেছে এবং অপর্যাপ্ত পরীক্ষা হয়েছে, সেহেতু বাংলাদেশে স্তন ক্যানসারের পরই জরায়ুমুখ ক্যানসারে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে নারীরা।
২০০৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১৪.৩ শতাংশ নারীর ভিজ্যুয়াল ইন্সপেকশন উইথ অ্যাসেটিক অ্যাসিড তথা ভিআইএ পদ্ধতির মাধ্যমে জরায়ুমুখ ক্যানসার পরীক্ষা করা হয়েছে।
২০১০ সালে বাংলাদেশে হাজারে মাতৃমৃত্যু ছিল ৩১০। ২০১৫ সালে সেটি কমে দেড়শতে নেমে আসে। সেদিক থেকে দেখলে জরায়ুমুখ ও অন্যান্য ক্যানসারজনিত রোগে মৃত্যুহার বেড়েছে।
আমাদের করণীয় কী
জরায়ুমুখ ক্যানসার নির্মূল ও আক্রান্তদের রক্ষায় আমাদের বেশ কিছু করণীয় আছে। সেগুলো এখন তুলে ধরছি।
১. আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত এইচপিভি টিকাদান। এ নিয়ে ২০০৮ সালে বাংলাদেশ সার্ভিক্যাল ক্যানসার ভ্যাকসিনেশন (জরায়ুমুখ ক্যানসার টিকাদান) কমিটি একটি পাইলট কর্মসূচি চালু করে। সে কর্মসূচির আওতায় ছিল ৬৭ জন মেয়ে, যাদের বয়স ৯ থেকে ১৫ বছর। তাদের মধ্যে ৫০ জনকে টিকা দেয়া হয়। ১৭ জন কন্ট্রোল হিসেবে থাকে। ৯৭.৫ শতাংশ মেয়ের সেরো কনভারশন হয়। ৭ বছর পর তাদের ৯৩.৩ শতাংশের দেহে অ্যান্টি এইচপিভি ১৬/১৮ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে গাজীপুরে আরেকটি পাইলট কর্মসূচি নেয়া হয়। ৬ মাসের ব্যবধানে দুটি টিকা দেয়া হয় ১০ বছর বয়সের মেয়েদের। সে কর্মসূচির প্রথম বছরে ৮৯ শতাংশ এবং দ্বিতীয় বছরে ৯৮ শতাংশ মেয়েদের টিকা দেয়া হয়।
টিকাদানের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
(ক) ২০২২ সালের মধ্যে এইচপিভি টিকা সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) আওতাভুক্ত করতে হবে।
(খ) বর্তমানে ৯০ শতাংশ টিকাদান কর্মসূচি হয় স্কুলভিত্তিক। স্কুলের বাইরে মেয়ের টিকা দিতে হবে। ছেলেদেরও টিকা দিতে হবে।
(গ) কিছু বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। যেমন: বাল্যবিয়ে না করা, একাধিক যৌনসঙ্গী না রাখা, অল্প বয়সে সন্তান ধারণ না করা, অল্প সময়ের ব্যবধানে বারবার সন্তান প্রসব না করা, ধূমপান না করা, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ৫ বছরের বেশি সময় গ্রহণ না করা, যৌনস্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা।
১০ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের মধ্যে টার্গেট গ্রুপ হলো ৮ লাখ ৩১ হাজার।
২. জরায়ুমুখ ক্যানসার মোকাবিলায় দ্বিতীয় লক্ষ্য হবে ৭০ শতাংশ নারীকে স্ক্রিনিং বা পরীক্ষার আওতায় আনা। উন্নত দেশে পাপ্স স্মেয়ার প্রচলিত আছে। যথেষ্ট ল্যাবরেটরি ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল না থাকায় বাংলাদেশে ভিআইএ বা ভায়া স্ক্রিনিং পদ্ধতির মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে স্ক্রিনিং শুরু করা হয়।
এ নিয়ে ২০০৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমউ) পাইলট প্রকল্প শুরু হয়। ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল নাগাদ ন্যাশনাল সেন্টার ফর ভায়া অ্যান্ড সিবিই সক্রিয় কার্যক্রম চালায়। ২০১৮-২১ মেয়াদে ‘ইলেকট্রনিক ডেটা ট্র্যাকিং উইথ পপুলেশন বেইজড সার্ভিক্যাল অ্যান্ড ব্রেস্ট ক্যানসার স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম’ নামের কর্মসূচি পরিচালনা করা হয়।
বর্তমানে দেশে ভিআইএ কেন্দ্র আছে ৫০০টি। এ মুহূর্তে ভিআইএ সম্পৃক্তদের মধ্যে ২ হাজার ৩৮৬ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তাদের মধ্যে ৪০০ চিকিৎসক, ১ হাজার ৯৫৬ নার্স, এফডব্লিউভি ও প্যারামেডিকস রয়েছেন।
দেশে ৭ কোটি ৫ লাখ নারীর মধ্যে টার্গেট গ্রুপ হলো ৩ কোটি। ২০১৯ সাল পর্যন্ত ভিআইএ পদ্ধতির মাধ্যমে ১০ শতাংশ এবং ২০২১ সালে ১৪.৩ শতাংশের পরীক্ষা হয়েছে। এ সময়ে পরীক্ষা করা হয়েছে ২৪ লাখ ৪৭১ জনকে। তাদের মধ্যে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ বা ১ লাখ ৮ হাজার ৩২৬ জনের ফল পজিটিভ এসেছে।
স্ক্রিনিংয়ের ক্ষেত্রে বেশ কিছু করণীয় রয়েছে। সেগুলো নিচে উল্লেখ করছি।
(ক) দেশের পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, ৮৬ শতাংশ নারীর স্ক্রিনিং হয়নি। এ কারণে পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনতে হবে। অর্থাৎ ভিআইএর সঙ্গে প্রাথমিক স্ক্রিনিং টেস্ট হিসেবে এইচপিভি ডিএনএ টেস্টের প্রবর্তন করতে হবে।
(খ) পলিসি প্রবর্তন গাইডলাইন তৈরি করতে হবে।
(গ) ন্যাশনাল স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম বা জাতীয় পরীক্ষা কর্মসূচির আওতায় ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সী নারীদের টার্গেট গ্রুপ হিসেবে নিতে হবে।
(ঘ) ডব্লিউএইচওর মতে, একজন নারীর জীবনে দুবার পরীক্ষা করালে আর জরায়ুমুখ ক্যানসারের প্রয়োজন হয় না। দুবার পরীক্ষার মধ্যে কমপক্ষে ৫ বছর বিরতি দিতে হবে। সে বিষয়টি মাথায় রেখে কর্মসূচি সাজাতে হবে।
(ঙ) হাসপাতালভিত্তিক পরীক্ষার পরিবর্তে জনসংখ্যাভিত্তিক পরীক্ষা হতে হবে। এ ক্ষেত্রে টার্গেট জনসংখ্যা হবে ৩ কোটি।
এ ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ের কথা উল্লেখ করা যায়। যেমন: ‘সি অ্যান্ড ট্রিট’ নামে কুড়িগ্রামে একটি পাইলট প্রকল্প চালু করা হয়। ২০১৯ সালের প্রথম সপ্তাহে চালু হওয়া এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সাল পর্যন্ত।
এ প্রকল্পের আওতায় ভিআইএ-মিনি কলপোস্কোপি-থার্মোকোয়াগুলেশন পদ্ধতিতে টার্গেট জনসংখ্যা ধরা হয় ৬০ হাজার। এর মধ্যে কাভারেজে এসেছে ৩০ হাজার ৭৫২ বা ৫০ শতাংশ।
কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমেও জরায়ুমুখ ক্যানসার পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতি কমিউনিটি ক্লিনিকে ৬০০ থেকে ৭০০ নারীকে পরীক্ষা করা হবে। মোট ১৩ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে ৯১ লাখ নারীর স্ক্রিনিং সম্ভব হবে।
৩. জরায়ুমুখ ক্যানসার নির্মূল পরীক্ষার লক্ষ্য নিশ্চিতের পাশাপাশি আরেকটি দিক মাথায় রাখতে হবে। সেটি হলো পরীক্ষার বিষয়টি বাস্তবায়ন কারা করবে। এ ক্ষেত্রে কিছু বিষয় নজরে আনতে হবে।
(ক) বিভাগীয় পর্যায়ে ৮টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ক্যানসার সেন্টার এবং অন্যান্য সেন্টারে জরায়ুমুখ ক্যানসার পরীক্ষা করাতে হবে। ২৫ থেকে ৬০ বছর বয়সী নারীদের এর আওতায় আনতে হবে।
(খ) চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এইচপিভি জিনোটাইপের জন্য পিসিআর ল্যাব প্রস্তুত করতে হবে।
(গ) সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও ৮টি বিভাগীয় ক্যানসার সেন্টারে পিসিআর ল্যাব তৈরি করতে হবে।
(ঘ) লক্ষ্য অর্জনে বর্তমানে উন্নয়নশীল ১০টি দেশ প্রাইমারি স্ক্রিনিং হিসেবে ভিআইএর পরিবর্তে এইচপিভি ডিএনএ পদ্ধতিতে পরীক্ষা করছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ঢাকায় ৬৮টি পিসিআর ল্যাব, অন্যান্য শহরে ৫০টি পিসিআর ল্যাবসহ ১১০টি ল্যাবকে এইচপিভি জিনোটাইপিংয়ের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। বর্তমানে বিএসএমএমইউ, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং ওজিএসবি হাসপাতালে এ ধরনের ল্যাব আছে।
(ঙ) নারীরা যেন নিজেরাই সোয়াবের মাধ্যমে স্যাম্পল নিতে পারেন, সে জন্য ভিডিও প্রদর্শনীর আয়োজন করতে হবে।
(চ) শিক্ষার্থী, সমাজকর্মী, ক্যানসার সারভাইভার, সেবাদানকারী মিলে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
৪. জরায়ুমুখ ক্যানসার নির্মূলে তৃতীয় লক্ষ্য হলো ক্যানসারপূর্ব অবস্থায় থাকা এবং শনাক্ত হওয়া ৯০ শতাংশ নারীকে চিকিৎসা দেয়া।
বিএসএমএমইউয়ের গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজি বিভাগ, এনআইসিআরএইচ, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে এ চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে।
প্রতিটি জরায়ুমুখ ক্যানসারজনিত মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক। কারণ এই ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব। বর্তমানে বছরে ৪ লাখ নারীর স্ক্রিনিং হচ্ছে। কাজেই ৭০ শতাংশ নারীকে স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনা খুব কঠিন হবে।
২০৩০ সালের মধ্যে লক্ষ্য অর্জন করতে হলে আমাদের আরও পর্যালোচনা দরকার।
পরীক্ষায় পজিটিভ হওয়া নারীদের দুইভাবে চিকিৎসা দেয়া যেতে পারে। ডব্লিউএইচওর মতে, আলাদাভাবে ট্রেয়াজের মাধ্যমে একত্রিত করা। এ ক্ষেত্রে ভিআইএর আওতাধীন কলপোস্কপি/সিটোলোজি কিংবা ট্রিটিং স্ক্রিন অ্যান্ড ট্রিট তথা একই সময়ে শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা প্রদান করা যেতে পারে।
চিকিৎসার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
(ক) প্রতিটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা হাসপাতালে কলপোস্কপি ক্লিনিক তৈরি
(খ) বিভাগীয় ৮টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ক্যানসার সেন্টারে
চিকিৎসকদের কলপোস্কপি, ক্রিয়োথেরাপি, থার্মাল অ্যাবলেশন, লিপ প্রসিডিউর বিষয়ে প্রশিক্ষণ।
(গ) ক্যানসারের সার্জারির জন্য আরও উচ্চতর প্রশিক্ষণদান।
(ঘ) এনজিও, সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ডেটাবেজ তৈরি।
(ঙ) ক্যানসার রেজিস্ট্রি, মৃত্যুহার রেজিস্ট্রির মধ্যে সংযোগ স্থাপন।
(চ) রেডিও থেরাপি ও কেমোথেরাপির প্রসার।
(ছ) পেলিয়েটিভ সেবার প্রসার।
(জ) স্বাস্থ্যবিমার প্রবর্তন।
আসুন আমরা সবাই মিলে সচেতন হই ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি। প্রত্যেকে নিজ নিজ স্থানে থেকে জরায়ুমুখ ক্যানসারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে পৃথিবীর বুকে নতুন ইতিহাস রচনা করি।
লেখক: অধ্যাপক ও ইউনিট প্রধান, গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং সদস্য সচিব, অনকোলজি কমিটি ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক সচিব, ওজিএসবি
প্রতি বছরই এডিস মশাবাহী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি সংক্রমিত সংখ্যাও বাড়ছে। গত বছরের শুরু থেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও মার্চ থেকে তা কমে আসে, অন্তত আগের বছরের তুলনায়। তবে গত বছর আগস্ট থেকে আবারও বাড়তে থাকে সংক্রমণের সংখ্যা।
অন্যদিকে চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ১৪ জনের মৃত্যু হওয়ার খবর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিশ্চিত করেছে। যাদের মধ্যে ৭১ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ২৮ দশমিক ৬ শতাংশ নারী। তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১ হাজার ৯০২ জন। এর মধ্যে ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ নারী।
এদিকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার (৪ এপ্রিল) সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ সময়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১০ জন। শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এতে বলা হয়, নতুন করে আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪ জন, আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ৬ জন রোগী।
এদিকে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু দুটোই বাড়ছে। গত বছর প্রথম ৯ মাসে ১৬৩ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে শুধু গত সেপ্টেম্বরেই মারা গেছেন ৮০ জন। আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, গত বছরের শুরু থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩০ হাজার ৯৩৮ জন। এর মধ্যে শুধু সেপ্টেম্বরেই আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ হাজারের বেশি মানুষ।
এ বছরও ডেঙ্গু সংক্রমণের সঙ্গে এডিস মশার বিস্তার বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বৃষ্টির মৌসুম শুরু না হতেই চলতি বছর আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় এ আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। পুরোপুরি বৃষ্টি শুরু হলে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা নিয়ে আশঙ্কা তাদের। তাই এখুনি ডেঙ্গু মোকাবিলায় কার্যত পদক্ষেপই পারবে এ থেকে পরিত্রাণ মিলাতে।
ডেঙ্গু মূলত বর্ষাকালের রোগ। ২০০০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বাড়ে আগস্ট মাসে। কিন্তু ২০২১ সাল থেকে সেই চিত্রের কিছুটা পরিবর্তন হয়। এখন ডেঙ্গু রোগীর সর্বোচ্চ সংখ্যা সেপ্টেম্বর কিংবা অক্টোবর মাসে হচ্ছে। ২০২২ সালে দেশে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয় অক্টোবর মাসে। এবারও এ মাসে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কার কারণ আগের মাসগুলোর অস্বাভাবিক বৃষ্টি।
রমজানের দীর্ঘ এক মাস রোজার পর ঈদ আসে আনন্দ ও খুশির বার্তা নিয়ে। তবে এই আনন্দ অনেকের জন্য কিছুটা অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যদি খাবারের ব্যাপারে সতর্কতা না নেওয়া হয়।
ঈদে ও পরের কয়েক দিন অতিরিক্ত খাওয়া, তৈলাক্ত ও ভারী খাবারের আধিক্য এবং অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাসের কারণে অনেকেই পেটের সমস্যায় ভোগেন।
বদহজম, গ্যাস, বমি, ডায়রিয়া, অ্যাসিডিটি ইত্যাদি সমস্যা এড়াতে খাবারের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে দীর্ঘ দিনের সংযমের পর হঠাৎ করে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
হেল্থ এইড হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার আফিফ বাসার এই বিষয়ে বলেন, “রোজার এক মাস শরীর একটি নির্দিষ্ট খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যায়। হঠাৎ করে অতিরিক্ত তেল-মসলাযুক্ত খাবার খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে। তাই ঈদের দিন ও পরের কিছুদিন খাদ্য তালিকা ভারসাম্যপূর্ণ রাখা খুবই জরুরি।”
ঈদের দিনে খাবারের পরিকল্পনা
ঈদের দিনে অনেকেই প্রচুর পরিমাণে সেমাই, পায়েস, বিরিয়ানি, কোরমা, রোস্ট, মিষ্টান্ন ইত্যাদি খেয়ে ফেলেন।
তবে পার্সোনা হেলথের পুষ্টিবিদ শওকত আরা বলছেন, “খাবার অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে এবং দিনের বিভিন্ন সময় ভাগ করে খাওয়া উচিত।”
ঈদের খাবারে পোলাও, মাংস, বিরিয়ানি, মিষ্টিজাতীয় খাবার
এই ধরনের খাবার বেশি খাওয়া হয়। আর অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে বদহজম, গ্যাস, অ্যাসিডিটি, এবং অন্যান্য পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এসব খাবার কেমন পরিমাণে এবং কীভাবে খাওয়া উচিত, তা জানা জরুরি।
পোলাও ও বিরিয়ানি
পরিমাণ: ১ কাপ (১৫০ থেকে ২০০ গ্রাম) পর্যন্ত খেতে পারেন, তবে এটি পুরো প্লেট ভরে না খেয়ে সালাদ ও টক দইয়ের সঙ্গে খাওয়া উচিত।
খাওয়ার পদ্ধতি: দুপুরের খাবারে খেলে ভালো হয়, রাতে এড়িয়ে চলা ভালো। কারণ এতে কার্বোহাইড্রেইট বেশি থাকে, যা রাতে ধীরে হজম হয় এবং ওজন বাড়তে পারে।
গরু ও খাসির মাংস
পরিমাণ: দিনে দুতিন টুকরার বেশি খাওয়া ঠিক নয় (প্রায় ৭৫-১০০ গ্রাম)।
খাওয়ার পদ্ধতি: বেশি তেল-মসলা ছাড়া রান্না করা হলে ভালো হয়। গ্রিল্ড, সেদ্ধ বা হালকা ভাজা অবস্থায় খাওয়া ভালো। রাতে ভারী মাংস না খাওয়াই শ্রেয়।
মুরগির রোস্ট ও কাবাব
পরিমাণ: দুতিন টুকরা (৭৫-১০০ গ্রাম) খাওয়া নিরাপদ।
খাওয়ার পদ্ধতি: গ্রিল্ড, বেইকড বা কম তেল-মসলাযুক্ত রোস্ট বা কাবাব খাওয়া ভালো। মুরগির মাংস গরুর মাংসের তুলনায় হজমে সহজ, তাই এটি দুপুর বা রাতের যে কোনো সময় খাওয়া যেতে পারে।
ফিরনি, জর্দা ও অন্যান্য মিষ্টিজাতীয় খাবার
পরিমাণ: দুতিন টেবিল-চামচ (৬০-৮০ গ্রাম) পর্যন্ত খাওয়া নিরাপদ।
খাওয়ার পদ্ধতি: ভারী খাবারের পর পরই না খেয়ে অন্তত দুয়েক ঘণ্টা পর খাওয়া ভালো। রাতে মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়াতে হবে। কারণ এটি হজম হতে সময় নেয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
বিকালের খাবার
গ্রিল্ড, বেইকড কাবাব বা রোস্ট, হালকা নাশতা (ফল, বাদাম, দই) খাওয়া হবে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
ঈদের পরের কয়েক দিনের খাবার যেমন হওয়া উচিত
সকালে
ঈদের সকাল ও পরের কয়েক দিন শুরু হোক হালকা ও সহজপাচ্য খাবারের মাধ্যমে। এসময় পেটের জন্য হালকা ও স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নেওয়া ভালো। এমন খাবারের মধ্যে রয়েছে-
এক গ্লাস গরম দুধ বা টক দই
দুতিনটি খেজুর
দুয়েকটি খোসাসহ ফল (আপেল, নাশপাতি, কলা)
সামান্য বাদাম ও চিয়া সিডস
এক টুকরা ব্রাউন ব্রেড বা রুটি
ক্যালোরি পরিমাণ: এই নাশতা থেকে ২৫০ থেকে ৩শ’ ক্যালোরি পাওয়া যায়, যা সকাল শুরু করার জন্য যথেষ্ট।
দুপুর (হালকা ও পরিমিত খাবার)
ঈদের দিনে দুপুরের খাবারে ভারী খাবার খাওয়ার পরের দিনগুলোতে বেশি তেল-মসলাযুক্ত খাবার না খাওয়াই ভালো।
এক প্লেট লাল চালের ভাত বা আটার রুটি
এক বাটি ডাল
এক টুকরো মাছ বা গ্রিল্ড চিকেন
প্রচুর পরিমাণে সালাদ
এক গ্লাস লাচ্ছি বা টক দই
ক্যালোরি পরিমাণ: ৪শ’ থেকে ৫শ’ ক্যালোরির মধ্যে রাখা উচিত, যাতে শরীর পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় কিন্তু অতিরিক্ত ভারী না লাগে।
বিকেল (হালকা খাবার ও পানীয়)
ঈদের দিন ও পরের কয়েকদিন বিকেলে অতিথিদের আপ্যায়নে সাধারণত বিভিন্ন ভাজাপোড়া খাবার পরিবেশন করা হয়। তবে এসব খাবার বেশি না খেয়ে বিকেলের নাশতা স্বাস্থ্যকর হওয়া উচিত।
ছোলা, গাজর, শসা, টমেটো, ধনেপাতা, টকদই মিশিয়ে চটপটি বা সালাদ
এক গ্লাস ফলের স্মুদি (আম, কলা, স্ট্রবেরি বা পেয়ারা)
এক মুঠো বাদাম ও কিশমিশ
দই বা দই-চিড়া।
ক্যালোরি পরিমাণ: ৩শ’ থেকে ৩৫০ ক্যালোরির মধ্যে রাখা উচিত, যাতে রাতের খাবারের জন্য পেট যথেষ্ট খালি থাকে।
রাতের খাবার (সহজপাচ্য ও কম মসলাযুক্ত খাবার)
ঈদের রাতের খাবারে ভারী ও মসলাযুক্ত খাবারের পরের কয়েক রাতে হালকা ও সহজপাচ্য খাবার বেছে নেওয়া উচিত। এমন খাবারের মধ্যে থাকতে পারে-
মুরগি বা সবজি খিচুড়ি
গ্রিল্ড মাছ বা মুরগি
প্রচুর সালাদ ও টক দই
এক টুকরা ডার্ক চকলেট (মিষ্টি খেতে হলে)
ক্যালোরি পরিমাণ: ৪শ’ থেকে ৫শ’ ক্যালোরি হওয়া উচিত, যাতে ঘুমের আগে হজমের সমস্যা না হয়।
পেটের সমস্যা এড়াতে কিছু পরামর্শ
অতিরিক্ত তৈলাক্ত ও ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলা
ঈদের দিনে প্রচুর পানি পান (৮-১০ গ্লাস) করতে হবে।
এছাড়া ঈদের দিনে ফলমূল ও শাকসবজিও খেতে হবে।
উৎসবের সময়ে একবারে বেশি না খেয়ে বারবার ছোট পরিমাণে খাবার খেতে হবে। পাশাপাশি মিষ্টিজাতীয় খাবার পরিমিত পরিমাণে উপভোগ করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
ভারী খাবার খাওয়ার পরপরই অনেকে শুয়ে পড়েন। সেটা না করে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করতে হবে। ঈদের দিনে খাবার টেবিলে টক দই রাখা প্রয়োজন, যা হজমে সহায়ক।
বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর তালিকায় চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। নগরীর এই বাতাসকে বাসিন্দাদের জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
শনিবার (২৯ মার্চ) সকাল ৯টার ২০ মিনিটে ১৫৮ একিউআই স্কোর নিয়ে শহরটি মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকিকে আবারও বাড়িয়ে তুলেছে।
নেপালের কাঠমান্ডু, থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই এবং মায়ানমারের ইয়াঙ্গুন যথাক্রমে ১৯৪, ১৮১ এবং ১৭১ একিউআই স্কোর নিয়ে তালিকার প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
যখন কণা দূষণের একিউআই মান ৫০ থেকে ১০০ এর মধ্যে থাকে তখন বায়ুর গুণমানকে ’মাঝারি’ বলে বিবেচনা করা হয়। একিউআই সূচক ১০১ থেকে ১৫০ এর মধ্যে হলে ’সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ সময় সাধারণত সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় ধরে বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
১৫১ থেকে ২০০ এর মধ্যে হলে ’অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচিত হয়, ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে হলে ’খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলে মনে করা হয়। এছাড়া ৩০১ এর বেশি হলে ’বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা বাসিন্দাদের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক পাঁচটি দূষণের ওপর নির্ভরশীল। সেগুলো হলো-বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), এনও২, সিও, এসও২ ও ওজোন। ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় জর্জরিত। এর বায়ুর গুণমান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে এবং বর্ষাকালে উন্নত হয়।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটির দিনগুলোতে যাতে চিকিৎসা ব্যবস্থার কোনো ঘাটতি না হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. শাহিনুল আলম।
রোগীদের সুবিধার্থে ২৯ মার্চ ও ২ এপ্রিল খোলা থাকবে বিএমইউর বহির্বিভাগ।
এ দুই দিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বহির্বিভাগে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নোমান মোহাম্মদ মোছলেহ উদ্দিনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিদিনই বিএমইউ হাসপাতালের ইনডোর ও জরুরি বিভাগ প্রচলিত নিয়মে খোলা থাকবে।
হাসপাতালের জরুরি ল্যাব কার্যক্রম সেবাও চালু থাকবে।
বিএমইউর রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বহির্বিভাগ বন্ধ থাকবে ২৮, ৩০, ৩১ মার্চ এবং ১, ৩ ও ৪ এপ্রিল। এর মধ্যে পবিত্র শবে কদর উপলক্ষে শুক্রবার এবং সাপ্তাহিক ছুটি উপলক্ষে ৪ এপ্রিল বহির্বিভাগ বন্ধ থাকবে। বন্ধের দিনগুলোতে ২৯ মার্চ শনিবার থেকে ৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস, অফিস, বৈকালিক স্পেশালাইজড কনসালটেশন সার্ভিস, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের কনসালটেশন সার্ভিস বন্ধ থাকবে।’
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, হাসপাতালে রোগীদের জন্য উন্নতমানের খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন ক্রাচ, লাঠি কিংবা বাঁশের সাহায্যে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছিল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্নভাবে পা হারানো ১০ ব্যক্তি। সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা নিয়ে এ ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়িয়েছে সেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বপ্ন নিয়ে’।
স্বপ্ন নিয়ের উদ্যোগে গত ২০ মার্চ ঢাকার শ্যামলীতে অবস্থিত কৃত্রিম পা, হাত ও ব্রেইস সংযোজন কেন্দ্র ইজি লাইফ ফর বাংলাদেশে ১০ জনের কৃত্রিম পা সংযোজনের কার্মক্রম শুরু হয়।
পা সংযোজন ও সাত দিন প্রশিক্ষণ শেষে বুধবার এ ১০ জনের কৃত্রিম পা প্রদান করা হয়।
ওই সময় উপস্থিত ছিলেন স্বপ্ন নিয়ের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নূরুস সাবা, ইজি লাইফ ফর বাংলাদেশের পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম, স্বপ্ন নিয়ের প্রতিষ্ঠাতা আশরাফুল আলম হান্নান, পরিচালক (অপারেশন) ইমতিয়াজ আহমেদ, পরিচালক (প্রশাসন) মীর তানভীর আহমেদ, পরিচালক (ডেভেলপমেন্ট) অ্যাডভোকেট তসলিম, সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) আমিনুল ইসলাম আরিফ, সহকারী পরিচালক (স্বাস্থ্য) ইলিয়াস হোসেন, সহকারী পরিচালক (আইটি) ইফতেখার হৃদয় ও সদস্য জীবন চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্টরা।
কৃত্রিম পা লাগানোর প্রসঙ্গে “স্বপ্ন নিয়ে’র প্রতিষ্ঠাতা আশরাফুল আলম হান্নান বলেন, ‘আমরা প্রায়ই আমাদের চারপাশে পক্ষাঘাতগ্রস্ত অসহায় মানুষ দেখে থাকি। আমরা স্বপ্ন নিয়ের মাধ্যমে সকলের সহযোগিতায় এর আগে ১১৭ জনের কৃত্রিম পা সংযোজন করে দিয়েছি। আমাদের সকলের যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী এ সকল মানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসা উচিত।
‘পক্ষাঘাতগ্রস্ত অসহায় ও গরিব মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য আসার পাশাপাশি যেন গতির সঞ্চার হয় এবং এর মাধ্যমে তাদের জীবন যাপন আরো সহজ ও সুন্দর হয়, সে লক্ষ্যেই স্বপ্ন নিয়ে এমন উদ্যোগ নিয়েছে। এ উদ্যোগকে বাস্তবায়ন করতে যারা আমাদেরকে অর্থসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন, তাদের প্রতি আমরা গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
আরও পড়ুন:ধরুন ঘড়ির কাঁটায় বেলা ১২টা বাজছে। আপনি হয়তো তখন খবরটি পড়ছেন। এর মানে আপনি গত রাতে ঘুমিয়েছিলেন; এখন জেগে রয়েছেন।
আচ্ছা জেগে তো রয়েছেন, আপনি কি নিজেকে সজীব-সতেজ অনুভব করছেন? প্রতিদিনের কাজে নিজেকে প্রাণবন্ত অনুভব করছেন?
একজন মানুষ ঘুম থেকে ওঠার পর তার ঠিকঠাক বিশ্রাম অনুভব হচ্ছে কি না, তার শরীরের অবসাদ বা ক্লান্তি ঘুমানোর পর কেটেছে কি না, সে প্রশ্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এ জন্য পরিমাণ মতো ঘুমানোর পাশাপাশি ঘুম পরিপূর্ণ হওয়াও জরুরি বলেছেন ঘুম বিশেষজ্ঞরা।
বার্তা সংস্থা এপির খবরে বলা হয়, বেশির ভাগ মানুষ তার জীবনের এক-তৃতীয়াংশ ঘুমের জন্য ব্যয় করেন। তবে প্রতি রাতে আট ঘণ্টার বেশি বা কম ঘুমালেই সেটি যথেষ্ট। আবার বয়সের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ঘুমের পরিমাণেরও পরিবর্তন ঘটে।
সাধারণত শিশু ও কিশোরদের তুলনামূলক বেশি ঘুমের প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে ৬৫ বা তার বেশি বয়সী মানুষ ৭ থেকে ৯ ঘন্টা বা এরচেয়ে কিছুটা কম ঘুমালেও চলে।
তবে সুস্থ থাকার জন্য একজন মানুষের কতটুকু ঘুমানো দরকার, এ ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ কোনো ভেদাভেদ রয়েছে কি না, এ প্রশ্নও কিন্তু অনেকের মনেই ঘুরপাক খায়। এমন বাস্তবতায় জেনে নেওয়া যাক এ বিষয়ে ঘুম বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য।
গুরুত্বপূর্ণ ঘুম ভালো হওয়া
ঘুম যেন আস্ত একটি রহস্যের জগৎ। কত শত রহস্য যে এর মধ্যে লুকিয়ে আছে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই।
এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে গবেষেণাও হয়েছে অনেক। কিছু প্রশ্নের উত্তর মিলেছে, কিছু অজানা।
সে যাই হোক, ঠিকঠাক ঘুম হওয়া মানুষের শরীরের সুস্থতার জন্য অতীব প্রয়োজনীয়।
যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘুম বিশেষজ্ঞ ড. রাফায়েল পেলায়ো বলেন, ‘আমরা কেন ঘুমাই, এটার কোনো নির্দিষ্ট কারণ এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ঘুম আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজন। তাই আমরা প্রতিদিন ঘুমাই।’
তিনি বলেন, ‘ঘুমের সময় অসাধারণ কিছু ঘটে। ঘুম হলো মানুষের নিজের প্রতি যত্ন নেওয়ার সবচেয়ে স্বাভাবিক একটি পন্থা।’
জনস হপকিনস হাসপাতালের ঘুমবিষয়ক চিকিৎসক মলি অ্যাটউড বলেন, ‘একজন ব্যক্তি দৈনিক সাত থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমালে তার স্বাস্থ্যঝুঁকি সবচেয়ে কম থাকে। আবার ছয় ঘণ্টার কম বা ৯ ঘণ্টার বেশি ঘুমালে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। যদিও সব মানুষের শারীরিক অবস্থা একরকম নয়।
বিহেভিওরিয়াল স্লিপ মেডিসিন নিয়ে কাজ করেন এ গবেষক। মানে ঘুমের সমস্যা, ঘুম-সংক্রান্ত বিভিন্ন লক্ষণ ও অনিদ্রার চিকিৎসা দিয়ে আসছেন তিনি।
সাত কিংবা ৯ ঘণ্টা ঘুমালেই হবে না; ঘুম ভালো হওয়াটা দরকারি বলে মত দিয়েছেন ড. রাফায়েল।
তিনি বলেন, ‘আপনি কত ঘণ্টা ঘুমিয়েছেন, তার থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো ঘুম থেকে উঠে আপনি সতেজ বোধ করছেন কি না।’
অনেকক্ষণ ঘুমানোর পরেও যদি কেউ শরীরে ক্লান্তি অনুভব করেন, তাহলে নিশ্চয়ই ওই ব্যক্তির ঘুমে কোনো সমস্যা থাকতে পারে বলে ধারণা ড. রাফায়েলের।
তিনি বলেন, ‘প্রিয় খাবারের দোকানে গিয়ে কারও ক্ষুধার্ত হয়ে বের হতে নেই।’
অর্থাৎ একজন মানুষের ঘুমালে তার শরীরে ক্লান্তি থেকে যাওয়াটা একদমই উচিত নয় বলে মত দিয়েছেন ড. রাফায়েল।
বয়সের সঙ্গে প্রয়োজনীয় ঘুমের পরিমাণে পরিবর্তন
ঘুম প্রতিটি মানুষের জন্যই প্রয়োজন, তবে পরিমাণে তারতম্য রয়েছে।
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ঘুমের প্রয়োজনীয়তায় পরিবর্তন হতে থাকে। যেমন: নবজাতকের সবচেয়ে বেশি ঘুম প্রয়োজন। সেটি প্রায় ১৪ থেকে ১৭ ঘণ্টা।
মলি বলেন, ‘শিশু ও কিশোরদের বেশি ঘুম দরকার। কারণ এ বয়সে তাদের খুব দ্রুত শারীরিক বৃদ্ধি ঘটে থাকে।’
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের সুপারিশ অনুযায়ী, ২৬ থেকে ৬৪ বছর বয়সী প্রাপ্তবয়স্কদের দৈনিক সাত থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। ৬৫ বা তার বেশি বয়সীদের কিছুটা কম (সাত ঘণ্টার কাছাকাছি), আর ১৬ থেকে ২৫ বছর বয়সী তরুণদের সাত ঘণ্টার সামান্য বেশি ঘুম দরকার।
মানুষের ঘুম প্রায় প্রতি ৯০ মিনিটে একটি চক্রে আবর্তিত হয় বলে জানান মলি।
তিনি বলেন, রাতের প্রথম ভাগে ঘুম চক্রে গভীর ঘুমের অংশ বেশি থাকে। এটি শরীরের সেরে ওঠা ও সতেজ করে তোলার জন্য অপরিহার্য।
এ সময়েই শরীর থেকে ‘গ্রোথ হরমোন’ নিঃসৃত হয় বলে জানান তিনি।
হরমোনটি মানুষের শারীরিক বৃদ্ধি ও উচ্চতার জন্য প্রয়োজন। হাড়ের গঠন, পেশির বিকাশে এর অবদান রয়েছে।
রাতের শেষভাগের ঘুমে মানুষ সাধারণত স্বপ্ন দেখে থাকে। মানুষের স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য ধাপটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন ঘুম বিশেষজ্ঞ মলি।
তিনি বলেন, শিশুরা অর্ধেক সময়ই গভীর ঘুমে থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ পরিমাণ কমতে থাকে।
ঘুমে নারী-পুরুষের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে কি না
গবেষণাতে এমন কোনো তথ্য পাওয়া না গেলেও গড়ে পুরুষদের তুলনায় নারীরা কিছুটা বেশি ঘুমান বলে মনে করেন মলি অ্যাটউড।
এ পার্থক্য ছোটবেলা থেকেই শুরু হয়ে যায় উল্লেখ করে ড. রাফায়েল বলেন, ‘কিশোরদের তুলনায় কিশোরীরা সাধারণত কম ঘুমান। এমনকি কিছু কিছু কিশোরীকে অনিদ্রা নিয়ে অভিযোগ করতেও শোনা যায়।’
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলির ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ও ঘুম গবেষক অ্যালিসন হার্ভে বলেন, প্রথমবার মা হওয়ার পর রাতে শিশুর দায়িত্ব বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মায়েদের ওপর পড়ে। এতে তাদের ঘুম কম হয়। এ ছাড়া গর্ভাবস্থা ও মেনোপজের সময় হরমোনের প্রভাবেও নারীদের ঘুমের পরিমাণ ও গুণগত মান পরিবর্তিত হতে পারে।
মায়ো ক্লিনিকের স্নায়ু বিশেষজ্ঞ ডা. মিথরি জুনা বলেন, ‘মেনোপজের সময় বিশেষভাবে নারীদের ঘুমের মান কমে যায়। এ সময় রাতে বারবার ঘুম ভেঙে যায়। এতে ঘুমের স্থায়িত্ব বেড়ে যায়।’
মলি বলেন, ‘মাসিক চক্র শুরু হওয়ার ঠিক আগে নারীদের কিছুটা বেশি ঘুমের প্রয়োজন হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘মাঝেমধ্যে মানুষের শরীর জানান দেয় যে, তার আরও কিছুটা ঘুম প্রয়োজন। এটি সবার গ্রাহ্য করা উচিত।’
ঘুম আমাদের শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। ঠিকঠাক ঘুম না হলে মানুষের শরীরে ক্লান্তি অনুভব হয়, মেজাজে বিরক্তি আসে, অমনোযোগী হয়ে ওঠেন তারা।
দীর্ঘমেয়াদে এ সমস্যাগুলো মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। এমনকি প্রাণঘাতীও হয়ে উঠতে পারে।
মলি জানান, যদি কোনো ব্যক্তির পর্যাপ্ত ঘুম না হয়, অনিদ্রা বা স্লিপ অ্যাপনিয়ার (ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা, যাতে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে) সমস্যা থাকলে, ঠিকঠাকভাবে চিকিৎসা না করানো হলে, তা হতাশা বাড়িয়ে দিতে পারে।
শুধু তাই নয়, পর্যাপ্ত ঘুম না হলে উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের মতো হৃদরোগজনিত সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায় বলে জানান তিনি।
মলি বলেন, ‘ঘুমের ঘাটতি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়। এমনকি আলঝেইমার্স রোগেরও শিকার হতে পারেন কেউ কেউ।’
আলঝেইমার্স এক ধরনের স্নায়বিক রোগ। এতে মানুষ ধীরে ধীরে স্মৃতিশক্তি হারাতে থাকেন।
রোগটির অবনতির সঙ্গে সঙ্গে রোগীর অবস্থা খারাপ হতে থাকে। এমনকি রোগীরে মৃত্যুও হতে পারে।
ঘুম নিয়ে কোনো ধরনের সমস্যা হলে তা অবহেলা না করতে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রতিনিয়ত ঘুমে সমস্যা হলে প্রাথমিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলেছেন মলি। এতেও যদি সমস্যার সমাধান না হয়, ঘুম বিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন:কল্পনা করুন, আপনি বছরের পর বছর ধরে একটি নির্দিষ্ট পথে হাঁটছেন। এ পথ আপনি ভালোভাবে চেনেন, পথও আপনাকে চেনে।
হঠাৎ সেই পথ বদলে নতুন একটি কঠিন রাস্তায় হাঁটা শুরু করলেন, যার জন্য আপনি প্রস্তুত নন। এ নতুন রাস্তা সম্পর্কে আপনার ভালো ধারণা নেই। কোথাও ভাঙা আছে, ডাকাত আছে, ময়লা পানি জমে আছে ইত্যাদি।
যেহেতু আপনি শুনেছেন কেউ একজন এ পথে গিয়েছে, আপনিও যাওয়া শুরু করলেন প্রস্তুতি ছাড়াই। ব্যাপারটাতে অনেক ঝুঁকি আছে, যা আপনি না নিলেও পারতেন।
আপনার শরীরও ঠিক তেমন। ওজন কমানোর প্রয়াসে, দীর্ঘদিনের কার্বোহাইড্রেটভিত্তিক খাদ্যাভ্যাস থেকে হঠাৎ কিটো ডায়েটে চলে যান, এর নানান রকম কঠিন ঝুকি আছে। স্বাস্থ্য কমাতে জীবনটাই যদি হারিয়ে ফেলেন, সেটা কি ভেবে দেখেছেন?
কিটো ডায়েট মূলত উচ্চ ফ্যাট, কম কার্বোহাইড্রেট এবং মাঝারি প্রোটিননির্ভর খাদ্যাভ্যাস। এটা শরীরের জন্য কার্যকর হতে পারে, কিন্তু পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়া এটি বিশাল ক্ষতির কারণও হতে পারে। একটু দেখা যাক ক্ষতিটা কীভাবে হতে পারে।
আপনি যখন কিটো ডায়েট শুরু করবেন, শরীরে কার্বোহাইড্রেট আকস্মিকভাবে হ্রাস পায়। শরীর তখন গ্লুকোজের পরিবর্তে কেটোন ব্যবহার করতে শুরু করে। এ রূপান্তরের প্রথম ধাপেই শরীরে দেখা দেবে ‘কিটো ফ্লু’। মানে মাথাব্যথা, ক্লান্তি, বমি বমি ভাব এবং পেশির টান, শরীর যেন বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
শরীর শুধু শক্তির জন্যই নয়, হজমের প্রক্রিয়াতেও দীর্ঘদিনের অভ্যাসে অভ্যস্ত। কার্বোহাইড্রেটের ঘাটতি মানে হলো কম ফাইবার, যা কোষ্ঠকাঠিন্য, ফাঁপা পেট বা ডায়রিয়ার মতো সমস্যার জন্ম দেয়। আপনার পরিপাকতন্ত্র, যা এতদিন ফলমূল, শস্য, আর শাকসবজি থেকে পুষ্টি পেয়েছে, হঠাৎ তা থেকে বঞ্চিত হয়ে হজমের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবে।
কিটো ডায়েটের সীমাবদ্ধ খাবারের তালিকা শরীরে ভিটামিন সি, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম এবং বি ভিটামিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির ঘাটতি ঘটায়। দীর্ঘদিন এভাবে চললে শরীর দুর্বল হতে শুরু করে। হাড়ের ক্ষয়, ক্লান্তি আর ইমিউন সিস্টেমের দুর্বলতা ধীরে ধীরে প্রকট হয়ে ওঠে।
কিটো ডায়েটের আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো কিডনির ওপর চাপ। যদি প্রোটিনের পরিমাণ বেড়ে যায়, তাহলে কিডনি অতিরিক্ত নাইট্রোজেন বের করতে হিমশিম খায়। যারা আগে থেকেই কিডনি সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য এটি বড় বিপদের কারণ হতে পারে।
আর হৃদরোগ? উচ্চ স্যাচুরেটেড ফ্যাট গ্রহণ যদি সুষম না হয়, তবে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। দীর্ঘমেয়াদে এটি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে।
কিটো ডায়েট শুধু শারীরিক নয়, মানসিক দিক থেকেও চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। আমরা সামাজিক জীব। খাবার নিয়ে আমাদের উৎসব আর বন্ধনের অনুভূতি জড়িত। কিটো ডায়েটের কঠোর নিয়ম এ সামাজিক সংযোগে একটি অদৃশ্য দেয়াল তুলে দেয়। এতে মানসিক চাপ, খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তা, এমনকি খাদ্যাভ্যাস নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হতে পারে।
শরীর আর মন শুধু বর্তমানের সঙ্গে নয়, অতীতের অভ্যাসের সঙ্গেও যুক্ত। যখন দীর্ঘদিনের অভ্যাসকে হঠাৎ বদলে দেওয়া হয়, তখন শরীরের প্রতিক্রিয়া হতে পারে ধীরে ধীরে।
কিটো ডায়েট বন্ধ করার পর হঠাৎ কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ শুরু করলে ওজন দ্রুত বেড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। শরীর পানি আর কার্বোহাইড্রেট ধরে রাখে, যা অতিরিক্ত চর্বি হিসেবে জমা হয়।
তাহলে সমাধান কী? এ পথ ধরতে হলে প্রয়োজন পর্যাপ্ত প্রস্তুতি। কিটো ডায়েট হোক বা অন্য কোনো বড় পরিবর্তন, শুরু করার আগে শরীর আর মনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন জরুরি। ধীরে ধীরে কার্বোহাইড্রেট কমানো, সুষম ফ্যাট গ্রহণ করা এবং শরীরের সংকেতগুলো বোঝার মতো ছোট ছোট পদক্ষেপগুলো ধীরে ধীরে এগিয়ে নিতে হবে সম্পূর্ণ রুপান্তরের আগে।
খাবার শুধুই শরীরের জন্য জ্বালানি নয়, এটি জীবনের অংশ। প্রতিটি পরিবর্তনে, বিশেষত এমন একটি চ্যালেঞ্জিং ডায়েটে, আপনার শরীর ও মনের চাহিদাকে সম্মান করা জরুরি।
জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখাই আসল বুদ্ধিমত্তা। আর এ ভারসাম্য আসে ধৈর্য আর সচেতনতার মাধ্যমে।
লেখক: হলিস্টিক হেলথ কোচ
ইমেইল: [email protected]
আরও পড়ুন:
মন্তব্য