বিশ্বজুড়ে নানা ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হন নারীরা। বিভিন্ন দেশে নারীরা সবচেয়ে বেশি যেসব ক্যানসারে আক্রান্ত হন, তার মধ্যে চতুর্থ সর্বোচ্চ স্থানে আছে জরায়ুমুখ ক্যানসার, বাংলাদেশে যেটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
৯৯.৮ শতাংশের ক্ষেত্রে হিউম্যান প্যাপিলমা ভাইরাসের (এইচপিভি) সংক্রমণের ফলে রোগের সূচনা হয়। এ ক্যানসারের একটি পূর্বাবস্থা থাকে, যা ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। সাধারণত যৌন সঙ্গমের ফলে ভাইরাসটি দেহে অনুপ্রবেশ করে।
জরায়ুমুখ ক্যানসার ছাড়াও এইচপিভির মাধ্যমে যোনিদ্বার, যোনি, মুখগহ্বর, পিনাইল/পুরুষাঙ্গ ক্যানসার হয়ে থাকে।
আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি কাদের
বাল্যবিবাহ, কম বয়সে সন্তান প্রসব, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, বেশিসংখ্যক সন্তান প্রসব কিংবা যৌন রোগ থাকলে জরায়ুমুখ ক্যানসার হতে পারে। নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে একাধিক যৌনসঙ্গী থাকলে এ রোগ হতে পারে।
এর বাইরে আর্থ-সামাজিক অবস্থা কিংবা স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাবে রোগটি হতে পারে।
জরায়ুমুখ ক্যানসার নির্মূলে বৈশ্বিক তৎপরতা
আগামী ১০০ বছরের মধ্যে পৃথিবী থেকে জরায়ুমুখ ক্যানসার, গুটি বসন্ত ও পোলিওর মতো রোগ নির্মূল করা সম্ভব। এ উদ্দেশ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বরে ঘোষণা দেয়, জরায়ুমুখ ক্যানসার নির্মূল করতে ২০৩০ সালের মধ্যে কিছু লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হবে।
সংস্থাটি জানায়, ৯০ শতাংশ কিশোরীকে এইচপিভি টিকা দিতে হবে। এ ছাড়া ২৫ থকে ৬০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে ৭০ শতাংশকে স্ক্রিনিং বা পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। এর বাইরে ক্যানসারপূর্ব অবস্থা বা জরায়ুমুখ ক্যানসার থাকা ৯০ শতাংশ নারীকে ২০৩০ সালের মধ্যে চিকিৎসা দেয়ার পাশাপাশি পেলিয়েটিভ কেয়ারের আওতায় আনতে হবে। এ ব্যবস্থাকে ডব্লিউএইচওর ৯০-৭০-৯০ ম্যানডেট বলা হচ্ছে।
ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক ডা. টেডরোস আধানম গেব্রিয়েসুস ২০১৮ সালের মে মাসে জরায়ুমুখ ক্যানসার নির্মূলে বৈশ্বিক তৎপরতার ডাক দেন। পরবর্তী সময়ে ২০২০ সালের আগস্টে এ ক্যানসার নির্মূলে বৈশ্বিক কর্মকৌশল গ্রহণ করে ডব্লিউএইচও। একই বছরের ১৭ নভেম্বর সে কর্মকৌশলের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। বাংলাদেশসহ ১৯৪টি দেশ এ কর্মকৌশলে নিজেদের সম্পৃক্ত করে।
বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়
জাতিসংঘের ২০২০ সালের ডেটা অনুযায়ী, আমাদের জনসংখ্যা ১৭ কোটি। উন্নয়নশীল দেশ থেকে আমরা বর্তমানে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পথে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ২০২০ সালের ডেটা অনুযায়ী, আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬৪ ডলার। এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে ২১.৮ শতাংশ মানুষ।
পৃথিবীর অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও জরায়ুমুখ ক্যানসারের প্রকোপ অনেক বেশি। গ্লোবকনের ২০২০ সালের ডেটা অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ৮ হাজার ২৬৮ জন নারীর জরায়ুমুখ ক্যানসার শনাক্ত হয়। এ ক্যানসারে বার্ষিক মৃত্যু হয় ৪ হাজার ৯৭১ নারীর।
যেহেতু এখন পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো বেড়ে চলেছে এবং অপর্যাপ্ত পরীক্ষা হয়েছে, সেহেতু বাংলাদেশে স্তন ক্যানসারের পরই জরায়ুমুখ ক্যানসারে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে নারীরা।
২০০৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১৪.৩ শতাংশ নারীর ভিজ্যুয়াল ইন্সপেকশন উইথ অ্যাসেটিক অ্যাসিড তথা ভিআইএ পদ্ধতির মাধ্যমে জরায়ুমুখ ক্যানসার পরীক্ষা করা হয়েছে।
২০১০ সালে বাংলাদেশে হাজারে মাতৃমৃত্যু ছিল ৩১০। ২০১৫ সালে সেটি কমে দেড়শতে নেমে আসে। সেদিক থেকে দেখলে জরায়ুমুখ ও অন্যান্য ক্যানসারজনিত রোগে মৃত্যুহার বেড়েছে।
আমাদের করণীয় কী
জরায়ুমুখ ক্যানসার নির্মূল ও আক্রান্তদের রক্ষায় আমাদের বেশ কিছু করণীয় আছে। সেগুলো এখন তুলে ধরছি।
১. আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত এইচপিভি টিকাদান। এ নিয়ে ২০০৮ সালে বাংলাদেশ সার্ভিক্যাল ক্যানসার ভ্যাকসিনেশন (জরায়ুমুখ ক্যানসার টিকাদান) কমিটি একটি পাইলট কর্মসূচি চালু করে। সে কর্মসূচির আওতায় ছিল ৬৭ জন মেয়ে, যাদের বয়স ৯ থেকে ১৫ বছর। তাদের মধ্যে ৫০ জনকে টিকা দেয়া হয়। ১৭ জন কন্ট্রোল হিসেবে থাকে। ৯৭.৫ শতাংশ মেয়ের সেরো কনভারশন হয়। ৭ বছর পর তাদের ৯৩.৩ শতাংশের দেহে অ্যান্টি এইচপিভি ১৬/১৮ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে গাজীপুরে আরেকটি পাইলট কর্মসূচি নেয়া হয়। ৬ মাসের ব্যবধানে দুটি টিকা দেয়া হয় ১০ বছর বয়সের মেয়েদের। সে কর্মসূচির প্রথম বছরে ৮৯ শতাংশ এবং দ্বিতীয় বছরে ৯৮ শতাংশ মেয়েদের টিকা দেয়া হয়।
টিকাদানের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
(ক) ২০২২ সালের মধ্যে এইচপিভি টিকা সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) আওতাভুক্ত করতে হবে।
(খ) বর্তমানে ৯০ শতাংশ টিকাদান কর্মসূচি হয় স্কুলভিত্তিক। স্কুলের বাইরে মেয়ের টিকা দিতে হবে। ছেলেদেরও টিকা দিতে হবে।
(গ) কিছু বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। যেমন: বাল্যবিয়ে না করা, একাধিক যৌনসঙ্গী না রাখা, অল্প বয়সে সন্তান ধারণ না করা, অল্প সময়ের ব্যবধানে বারবার সন্তান প্রসব না করা, ধূমপান না করা, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ৫ বছরের বেশি সময় গ্রহণ না করা, যৌনস্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা।
১০ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের মধ্যে টার্গেট গ্রুপ হলো ৮ লাখ ৩১ হাজার।
২. জরায়ুমুখ ক্যানসার মোকাবিলায় দ্বিতীয় লক্ষ্য হবে ৭০ শতাংশ নারীকে স্ক্রিনিং বা পরীক্ষার আওতায় আনা। উন্নত দেশে পাপ্স স্মেয়ার প্রচলিত আছে। যথেষ্ট ল্যাবরেটরি ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল না থাকায় বাংলাদেশে ভিআইএ বা ভায়া স্ক্রিনিং পদ্ধতির মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে স্ক্রিনিং শুরু করা হয়।
এ নিয়ে ২০০৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমউ) পাইলট প্রকল্প শুরু হয়। ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল নাগাদ ন্যাশনাল সেন্টার ফর ভায়া অ্যান্ড সিবিই সক্রিয় কার্যক্রম চালায়। ২০১৮-২১ মেয়াদে ‘ইলেকট্রনিক ডেটা ট্র্যাকিং উইথ পপুলেশন বেইজড সার্ভিক্যাল অ্যান্ড ব্রেস্ট ক্যানসার স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম’ নামের কর্মসূচি পরিচালনা করা হয়।
বর্তমানে দেশে ভিআইএ কেন্দ্র আছে ৫০০টি। এ মুহূর্তে ভিআইএ সম্পৃক্তদের মধ্যে ২ হাজার ৩৮৬ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তাদের মধ্যে ৪০০ চিকিৎসক, ১ হাজার ৯৫৬ নার্স, এফডব্লিউভি ও প্যারামেডিকস রয়েছেন।
দেশে ৭ কোটি ৫ লাখ নারীর মধ্যে টার্গেট গ্রুপ হলো ৩ কোটি। ২০১৯ সাল পর্যন্ত ভিআইএ পদ্ধতির মাধ্যমে ১০ শতাংশ এবং ২০২১ সালে ১৪.৩ শতাংশের পরীক্ষা হয়েছে। এ সময়ে পরীক্ষা করা হয়েছে ২৪ লাখ ৪৭১ জনকে। তাদের মধ্যে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ বা ১ লাখ ৮ হাজার ৩২৬ জনের ফল পজিটিভ এসেছে।
স্ক্রিনিংয়ের ক্ষেত্রে বেশ কিছু করণীয় রয়েছে। সেগুলো নিচে উল্লেখ করছি।
(ক) দেশের পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, ৮৬ শতাংশ নারীর স্ক্রিনিং হয়নি। এ কারণে পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনতে হবে। অর্থাৎ ভিআইএর সঙ্গে প্রাথমিক স্ক্রিনিং টেস্ট হিসেবে এইচপিভি ডিএনএ টেস্টের প্রবর্তন করতে হবে।
(খ) পলিসি প্রবর্তন গাইডলাইন তৈরি করতে হবে।
(গ) ন্যাশনাল স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম বা জাতীয় পরীক্ষা কর্মসূচির আওতায় ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সী নারীদের টার্গেট গ্রুপ হিসেবে নিতে হবে।
(ঘ) ডব্লিউএইচওর মতে, একজন নারীর জীবনে দুবার পরীক্ষা করালে আর জরায়ুমুখ ক্যানসারের প্রয়োজন হয় না। দুবার পরীক্ষার মধ্যে কমপক্ষে ৫ বছর বিরতি দিতে হবে। সে বিষয়টি মাথায় রেখে কর্মসূচি সাজাতে হবে।
(ঙ) হাসপাতালভিত্তিক পরীক্ষার পরিবর্তে জনসংখ্যাভিত্তিক পরীক্ষা হতে হবে। এ ক্ষেত্রে টার্গেট জনসংখ্যা হবে ৩ কোটি।
এ ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ের কথা উল্লেখ করা যায়। যেমন: ‘সি অ্যান্ড ট্রিট’ নামে কুড়িগ্রামে একটি পাইলট প্রকল্প চালু করা হয়। ২০১৯ সালের প্রথম সপ্তাহে চালু হওয়া এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সাল পর্যন্ত।
এ প্রকল্পের আওতায় ভিআইএ-মিনি কলপোস্কোপি-থার্মোকোয়াগুলেশন পদ্ধতিতে টার্গেট জনসংখ্যা ধরা হয় ৬০ হাজার। এর মধ্যে কাভারেজে এসেছে ৩০ হাজার ৭৫২ বা ৫০ শতাংশ।
কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমেও জরায়ুমুখ ক্যানসার পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতি কমিউনিটি ক্লিনিকে ৬০০ থেকে ৭০০ নারীকে পরীক্ষা করা হবে। মোট ১৩ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে ৯১ লাখ নারীর স্ক্রিনিং সম্ভব হবে।
৩. জরায়ুমুখ ক্যানসার নির্মূল পরীক্ষার লক্ষ্য নিশ্চিতের পাশাপাশি আরেকটি দিক মাথায় রাখতে হবে। সেটি হলো পরীক্ষার বিষয়টি বাস্তবায়ন কারা করবে। এ ক্ষেত্রে কিছু বিষয় নজরে আনতে হবে।
(ক) বিভাগীয় পর্যায়ে ৮টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ক্যানসার সেন্টার এবং অন্যান্য সেন্টারে জরায়ুমুখ ক্যানসার পরীক্ষা করাতে হবে। ২৫ থেকে ৬০ বছর বয়সী নারীদের এর আওতায় আনতে হবে।
(খ) চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এইচপিভি জিনোটাইপের জন্য পিসিআর ল্যাব প্রস্তুত করতে হবে।
(গ) সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও ৮টি বিভাগীয় ক্যানসার সেন্টারে পিসিআর ল্যাব তৈরি করতে হবে।
(ঘ) লক্ষ্য অর্জনে বর্তমানে উন্নয়নশীল ১০টি দেশ প্রাইমারি স্ক্রিনিং হিসেবে ভিআইএর পরিবর্তে এইচপিভি ডিএনএ পদ্ধতিতে পরীক্ষা করছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ঢাকায় ৬৮টি পিসিআর ল্যাব, অন্যান্য শহরে ৫০টি পিসিআর ল্যাবসহ ১১০টি ল্যাবকে এইচপিভি জিনোটাইপিংয়ের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। বর্তমানে বিএসএমএমইউ, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং ওজিএসবি হাসপাতালে এ ধরনের ল্যাব আছে।
(ঙ) নারীরা যেন নিজেরাই সোয়াবের মাধ্যমে স্যাম্পল নিতে পারেন, সে জন্য ভিডিও প্রদর্শনীর আয়োজন করতে হবে।
(চ) শিক্ষার্থী, সমাজকর্মী, ক্যানসার সারভাইভার, সেবাদানকারী মিলে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
৪. জরায়ুমুখ ক্যানসার নির্মূলে তৃতীয় লক্ষ্য হলো ক্যানসারপূর্ব অবস্থায় থাকা এবং শনাক্ত হওয়া ৯০ শতাংশ নারীকে চিকিৎসা দেয়া।
বিএসএমএমইউয়ের গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজি বিভাগ, এনআইসিআরএইচ, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে এ চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে।
প্রতিটি জরায়ুমুখ ক্যানসারজনিত মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক। কারণ এই ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব। বর্তমানে বছরে ৪ লাখ নারীর স্ক্রিনিং হচ্ছে। কাজেই ৭০ শতাংশ নারীকে স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনা খুব কঠিন হবে।
২০৩০ সালের মধ্যে লক্ষ্য অর্জন করতে হলে আমাদের আরও পর্যালোচনা দরকার।
পরীক্ষায় পজিটিভ হওয়া নারীদের দুইভাবে চিকিৎসা দেয়া যেতে পারে। ডব্লিউএইচওর মতে, আলাদাভাবে ট্রেয়াজের মাধ্যমে একত্রিত করা। এ ক্ষেত্রে ভিআইএর আওতাধীন কলপোস্কপি/সিটোলোজি কিংবা ট্রিটিং স্ক্রিন অ্যান্ড ট্রিট তথা একই সময়ে শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা প্রদান করা যেতে পারে।
চিকিৎসার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
(ক) প্রতিটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা হাসপাতালে কলপোস্কপি ক্লিনিক তৈরি
(খ) বিভাগীয় ৮টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ক্যানসার সেন্টারে
চিকিৎসকদের কলপোস্কপি, ক্রিয়োথেরাপি, থার্মাল অ্যাবলেশন, লিপ প্রসিডিউর বিষয়ে প্রশিক্ষণ।
(গ) ক্যানসারের সার্জারির জন্য আরও উচ্চতর প্রশিক্ষণদান।
(ঘ) এনজিও, সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ডেটাবেজ তৈরি।
(ঙ) ক্যানসার রেজিস্ট্রি, মৃত্যুহার রেজিস্ট্রির মধ্যে সংযোগ স্থাপন।
(চ) রেডিও থেরাপি ও কেমোথেরাপির প্রসার।
(ছ) পেলিয়েটিভ সেবার প্রসার।
(জ) স্বাস্থ্যবিমার প্রবর্তন।
আসুন আমরা সবাই মিলে সচেতন হই ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি। প্রত্যেকে নিজ নিজ স্থানে থেকে জরায়ুমুখ ক্যানসারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে পৃথিবীর বুকে নতুন ইতিহাস রচনা করি।
লেখক: অধ্যাপক ও ইউনিট প্রধান, গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং সদস্য সচিব, অনকোলজি কমিটি ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক সচিব, ওজিএসবি
বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রোববার ও সোমবার দুই ঘণ্টা কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখা। বলা হয়েছে, এই দুদিন চিকিৎসকরা প্রাইভেট প্র্যাকটিসও করবেন না।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সামনে চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠনের অংশগ্রহণে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়। সূত্র: ইউএনবি
বিএমএ চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, স্বাধীনতা প্রকাশ পরিষদ, চট্টগ্রাম প্রকাশ সমিতিসহ ৯টি সংগঠন অংশ নেয়।
বিএমএ নেতারা বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে চিকিৎসকরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। বিচার না হওয়ায় চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনা বাড়ছে। চিকিৎসকরা তাদের কর্মস্থলে খুবই অনিরাপদ।
চিকিৎসকদের ওপর হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনারও দাবি জানান তারা।
মুজিবুল হক বলেন, ‘হামলার বিচার পাওয়ার জন্য আমরা পাঁচদিন অপেক্ষা করেছি। কিন্তু কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি।’
প্রসঙ্গত, ১০ এপ্রিল হৃদরোগে আক্রান্ত এক রোগীর চিকিৎসা দিতে দেরি হওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের হামলায় গুরুতর আহত হন চট্টগ্রামের পটিয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক রক্তিম দাস।
পরে ১৪ এপ্রিল ভুল চিকিৎসায় এক বছরের শিশুর মৃত্যুর অভিযোগে রোগীর স্বজনদের হামলায় রিয়াজ উদ্দিন শিবলু নামে আরেক চিকিৎসক আহত হন।
আরও পড়ুন:স্বাস্থ্যসেবায় চিকিৎসকদের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেছেন, ‘কোনো চিকিৎসকের ওপর হামলা যেমন মেনে নেব না, তেমনই চিকিৎসায় কোন ধরনের অবহেলা হলে সেটাও মেনে নিতে পারব না।’
বুধবার বিকেলে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন শেষে চিকিৎসদের নিয়ে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) চট্টগ্রামের পটিয়ায় চিকিৎসদের ওপর হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে চিকিৎসা কাজে চিকিৎসকদের আরও বেশি মনোযোগী ও আন্তরিক হওয়ার পরামর্শ দেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকদের যেমন সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্ব আমার, রোগীদের সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্বও আমার। কোনো চিকিৎসকের বিরুদ্ধে পেশাগত দায়িত্ব পালনে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবা বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের তুলনায় এগিয়ে আছে। বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবা নিয়ে সম্প্রতি ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক ভূয়সী প্রশংসা করেন। ভুটান রাজার আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকার ভুটানে বার্ন হাসপাতাল করার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত করোনার টিকা নেয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে চর্ম রোগ দেখা দেয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যে কোনো ড্রাগেই এলার্জি প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। তবে এ বিষয়টি আমি এখনও শুনিনি।’
এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত এমপি বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার করোনার প্রধান মুখপাত্র প্রফেসর ফলস-এর গবেষণায় এখনও এমন কোনো তথ্য উঠে আসেনি। তবে এমনও হতে পারে যে করোনার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো এখন দেখা দিচ্ছে।’
এর আগে চান্দিনার মাধাইয়া ইউনিয়নের সোনাপুর কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর একান্ত সচিব কমল কুমার ঘোষ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সারওয়ার হোসেন, কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান, জেলা সিভিল সার্জন ডা. নাছিমা আক্তার, চান্দিনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা তপন বক্সী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাবের মো. সোয়াইব, পৌর মেয়র শওকত হোসেন ভূইয়া, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আরিফুর রহমান প্রমুখ।
আরও পড়ুন:পাবনায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় দুই প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। প্রাথমিক তদন্ত করে হাসপাতালটি সিলগালা করে দিয়েছেন সিভিল সার্জন। একইসঙ্গে অভিযোগ তদন্তে ডেপুটি সিভিল সার্জনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে ঘটনার পর থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গা-ঢাকা দিয়েছে।
সোমবার ঘটনাটি জানাজানি হলে জেলা সিভিল সার্জন সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টির প্রাথমিক তদন্ত করে হাসপাতালটি সিলগালা করে দেন।
পাবনা সদর পৌর এলাকার শালগাড়িয়া হাসপাতাল সড়কে অবস্থিত বেসরকারি আইডিয়াল হাসপাতালে রোববার (১৪ এপ্রিল) রাত ৩টার দিকে পৃথক চিকিৎসক দ্বারা সিজারিয়ান অপারেশনের সময় এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। এর আগে দুপুরে রোগীদের সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য হাসপাতালটিতে ভর্তি করা হয়।
অভিযোগে জানা যায়, কুষ্টিয়ার শিলাইদহ এলাকার মাহবুব বিশ্বাসের স্ত্রী ইনসানা খাতুনের প্রসব বেদনা উঠলে রোববার দুপুরে তাকে পাবনা আইডিয়াল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় জাহিদা জহুরা লীজা নামক এক চিকিৎসক অপারেশন করতে গেলে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়।
অপর ঘটনায় একই সময়ে পাবনার আটঘরিয়ার স্বপ্না খাতুন নামক এক রোগী কাজী নাহিদা আক্তার লিপির কাছে সিজারিয়ান অপারেশন করতে আসেন। ভুল চিকিৎসায় তারও মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঘটনা ধামাচাপা দিতে কর্তৃপক্ষ রাতেই রোগীসহ স্বজনদের হাসপাতাল থেকে বের করে দিয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। পরে রোগী মারা যাওয়ার ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়লে তা ধামাচাপা দিতে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে মরদেহসহ স্বজনদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
এ ঘটনায় সঠিক তদন্ত শেষে হাসপাতাল-সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন সিভিল সার্জন। সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে সিজারিয়ান অপারেশন করার সময়ে যেসব উপকরণ ও মেডিসিন ব্যবহার হয়েছে সেগুলোর নমুনা সংগ্রহ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
সিভিল সার্জন ডা. শহীদুল্লা দেওয়ান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ স্যালাইন বা ওষুধ সেবনের ফলে তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় চিকিৎসকসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যারা জড়িত রয়েছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বেসরকারি ক্লিনিকটি যেহেতু স্বাস্থ্য বিভাগের রেজিস্ট্রেশনভুক্ত, তাই নিয়ম মেনে সব কার্যক্রম চলছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।’
পাবনা সদর থানার ওসি রওশন আলী বলেন, ‘ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় এখনও কোনো পরিবার থানা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়নি।’
আরও পড়ুন:দেশে প্রথমবারের মতো ক্যাডাভেরিক কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট (ব্রেন ডেথ রোগীর অঙ্গ প্রতিস্থাপন) করা হয়। গত বছরের জানুয়ারি মাসে সারাহ ইসলাম নামে একজনের অঙ্গদানের মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্য সেবা খাতে এমন রেকর্ড সৃষ্টি হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) শামীমা আক্তার ও হাসিনা নামে দুই রোগীর শরীরে ওই কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে সে সময় নিউজবাংলায় প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়।
সারাহ ইসলামের কিডনি প্রতিস্থাপন করা রোগীদের একজন শামীমা আক্তার মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে বিএসএমএমইউ’র আইসিইউতে মারা গেছেন। কিডনি গ্রহীতা অপরজন হাসিনা হাসিনা এর আগে গত বছরের অক্টোবরে মারা যান। এর ফলে সারাহর কিডনি পাওয়া দুই নারীরই মৃত্যু হলো।
বিএসএমএমইউ’র ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল মঙ্গলবার রাতে শামীমা আক্তারের মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘কিডনি গ্রহীতা প্রথম জন (হাসিনা) ফুসফুসের সংক্রমণে মারা গিয়েছিলেন। অপরজন শামীমাও চলে গেলেন। এটি খুবই কষ্টের। শামীমা শেষ ছয় মাস আমাদের আওতার বাইরে ছিলেন।’
তিনি বলেন, সম্প্রতি শামীমার ভাই জানায় যে শামীমার ক্রিয়েটিনিন বেড়ে গেছে, একেবারে শুকিয়ে গেছে। তিন সপ্তাহ আগে আবারও তাকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। শুরুর দিকে কিছুটা উন্নতি হলেও শামীমার শুকিয়ে যাওয়ার কারণটা ধরতে পারছিলেন না চিকিৎসকরা।
‘ক্রিয়েটিনিন পুনরায় বাড়ায় ওয়ার্ড থেকে তাকে কেবিনে আনা হয়। তারপরও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় চার দিন আগে আইসিইউতে নেয়া হয়।’
ডা. হাবিবুর রহমান জানান, শামীমার শরীরে হেপাটাইটিস-সি ধরা পড়ে। কারও হেপাটাইটিস-সি পজিটিভ হলে রক্ত কাজ করে না। এজন্য বিশেষ রক্ত লাগে। সেটি দেয়ার পরও কিন্তু শেষ মুহূর্তে রেসপন্স করেনি। আর বাড়িতে থাকার সময় অবস্থা খারাপ হলেও সময়মতো আমাদের জানানো হয়নি।’
আরও পড়ুন:জাতিসংঘের শিশু তহবিল থেকে দেশের শিশুদের শতভাগ ভ্যাকসিন নিশ্চিত করা ও নিরাপদ মাতৃত্বসহ স্বাস্থ্যখাতের অন্যান্য দিক নিয়ে ইউনিসেফ দেশে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
সচিবালয়ে রোববার সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দপ্তরে ইউনিসেফের জাতিসংঘ শিশু তহবিলের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট এবং জাতিসংঘ শিশু তহবিলের হেলথ সেকশনের চিফ মায়া ভ্যানডেন্টের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে এ কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘ইউনিসেফ করোনার সময় গোটা বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশেও নানাভাবে সহযোগিতা করেছে। এখন জাতিসংঘের শিশু তহবিল থেকে দেশের শিশুদের শতভাগ ভ্যাকসিন পাওয়া নিশ্চিত করা, নিরাপদ মাতৃত্বসহ স্বাস্থ্যখাতের অন্যান্য দিক নিয়েও জাতিসংঘের এই বিশেষ সংস্থাটি দেশে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নিরাপদ মাতৃত্ব, ভ্যাকসিন কার্যক্রমকে ফলপ্রসূ করা, দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনে সহায়তা করা, তৃণমূল পর্যায়ে শিশুদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অবকাঠামো নির্মাণ করাসহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজেও ইউনিসেফ ভূমিকা রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
‘এগুলোর সঙ্গে, শিশুদের জন্য তৃণপর্যায়ে স্বাস্থ্য অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ইউনিসেফ প্রতিনিধিদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানালে তারা সেটিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন।’
বৈঠকে জাতিসংঘের শিশু তহবিলের প্রতিনিধি দল করোনাকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নানারকম ফলপ্রসূ উদ্যোগের প্রশংসা করেন। দেশের স্বাস্থ্যখাত আগের থেকে আরও উন্নত হচ্ছে বলেও জানান তারা। টিকাদানে বাংলাদেশকে বিশ্বের একটি উদাহরণ হিসেবেও উল্লেখ করেন প্রতিনিধিরা।
আরও পড়ুন:দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে মানুষের জন্য সহজলভ্য করতে যা যা করার দরকার তাই করবেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা সামন্ত লাল সেন।
শনিবার রাজধানীর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ঐতিহাসিক নেতৃত্ব এবং দেশের উন্নয়ন’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, ‘ইদের পর থেকে তৃণমূল স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে আমি আবারও মাঠে নেমে পড়ব। প্রয়োজনে প্রত্যন্ত গ্রামে গঞ্জে চলে যাব। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে মানুষের জন্য সহজলভ্য করতে যা যা করার দরকার আমি তাই করব।’
সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘কথা কম বলে অসুস্থ মানুষের সেবায় কাজ করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ করতে হবে আমাদের। বঙ্গবন্ধু এই দেশকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন। তিনি ২৩ বছর লড়াই সংগ্রাম করেছেন বাংলাদেশ একদিন স্বাধীন হবে সেই জন্য। তার দীর্ঘদিনের স্বপ্নের দেশ স্বাধীন হয়েছে। তিনি কিন্তু দেশকে তার স্বপ্নের মতো করে সাজানোর সুযোগ পাননি।
‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) মাত্র তিন বছরের মত সময় ক্ষমতায় ছিলেন। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হলেও দেশে তেমন কোনো সম্পদ বা অর্থ ছিল না। সেই দুর্ভিক্ষ পীড়িত দেশের দায়িত্ব নিয়েই তিনি এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে তিনি কাজ শুরু করেননি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতের সব ভালো উদ্যোগ জাতির পিতাই শুরু করে দিয়েছিলেন। তিনি যেভাবে শুরু করেছিলেন দেশের বিভিন্ন কুচক্রী মহলের কারণে সেগুলো সেভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। এখন তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা পিতার কাজগুলো এক এক করে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, জনগণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করা। সেই কাজ করতে মুখে আমাদেরকে বড় বড় কথা বললেই হবে না, আমাদেরকে কাজ করে দেখাতে হবে। এজন্য আমরা যেন মুখে কথা কম বলে কাজ করেই আমাদের সক্ষমতা বুঝিয়ে দিতে পারি সে লক্ষ্যেই মাঠে নেমে পড়তে হবে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী, বিএসএমএমইউ এর ভিসি ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক টিটো মিয়া, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাকসুরা নূর, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান (অতিরিক্ত সচিব)-সহ অন্যান্যরা।
দেশে আরও ৪২ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার এই হিসাব দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।
এতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় কারও মৃত্যু হয়নি। এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৪৯ হাজার ৩২৯ জনে। এ পর্যন্ত ভাইরাসটিতে মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৪৯৩ জনের।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৮৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ সময়ে শনাক্তের হার ৬ দশমিক ১১ শতাংশ। মোট পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৭ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৩৭ জন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ১৬ হাজার ৫৫৫ জনে।
মন্তব্য