করোনা মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে শিক্ষা ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষার্থীদের সামাল দেয়ার যেসব বিকল্প উদ্যোগ তা প্রায় সবাই মেনে নিয়েছেন। কিন্তু সবকিছু যখন প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে, তখন শিক্ষা কর্তৃপক্ষের অনেক কিছুই আর মেনে নিতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। এর ফলে তারা রাস্তায় নেমেছেন, কেউবা চান পরীক্ষা দিতে, কেউ কেউ ফিরতে চান শ্রেণিকক্ষে।
প্রায় এক বছর আলাপ-আলোচনা করে, বিজ্ঞজনের পরামর্শ নিয়ে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে বার্ষিক ও পাবলিক পরীক্ষা বিষয়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এসব নিয়ে বিতর্ক থাকলেও বাস্তবতার কারণে বা বিকল্প না থাকায় অনেকেই তা মেনে নিয়েছেন। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া এখন সবকিছুই করোনাপূর্ব অবস্থায় ফিরে এসেছে। তাই ক্লাস পরীক্ষা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব যত দেখানো হচ্ছে, ততই বাড়ছে ক্ষোভ ও অস্থিরতা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার ক্ষেত্রেও সরকার সময়োচিত পদক্ষেপ নিয়েছিল। ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয় ১৭ মার্চ। যদিও ওই সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের জন্য জনমত সৃষ্টি হয়েছিল, মূল ধারার গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের পক্ষেই অবস্থান নেয়। এর ফলে সরকারের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়াটা হয়তো সহজ হয়েছিল।
এখনও কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেওয়ার দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন। ঢাকা ছাড়াও পরীক্ষা দেয়ার আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন জেলায় বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বলা যায়, শিক্ষা কর্তৃপক্ষের নানা সিদ্ধান্তহীনতা, অস্পষ্ট বক্তব্য এবং কথার সঙ্গে বাস্তবের মিল না থাকাসহ নানা কারণে কোটি কোটি শিক্ষার্থীর মধ্যে অস্থিরতা ছড়িয়েছে। এটা যে ইচ্ছাকৃত তা নয়, তবে কোটি কোটি শিক্ষার্থী নিয়ে সরকারের যে বিভাগ কাজ করে, সেখানে আরও বেশি সতর্কতা ও শৃঙ্খলা কাম্য। শিক্ষা নিয়ে একটি বক্তব্য, মন্তব্য বা সিদ্ধান্ত দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ে দেশের সর্বত্র। এ নিয়ে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হয় ব্যাপক।
গত সোমবার শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সময় ঘোষণা করেছেন ২৪ মে। এতে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। কারণ গত মাস দুয়েকের যে আলোচনা তাতে মার্চে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে, এমন একটি ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। এই ধারণা পেয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থীরাও প্রস্তুত হয়েছেন। কিন্তু প্রায় তিন মাস পর বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর আকস্মিক ঘোষণায় শিক্ষার্থীদের অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন। আবার স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত বিষয়ে সভা ডাকা হয়েছে ২৭ ফেব্রুয়ারি, শনিবার। তিন মাস পরে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত দিয়ে স্কুল-কলেজ ১ মার্চ থেকে খোলা হবে কি না, সেই আলোচনা চলছে চারদিকে।
শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন চলছে, তা মূলত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলমান তিনটি বড় পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত ঘিরে। গত সোমবার যারা শিক্ষামন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন ফলো করেছেন, তাদের অনেকেরই মন্তব্য হচ্ছে, শিক্ষামন্ত্রী বাছবিচার ছাড়াই তাৎক্ষণিক এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনের শেষ ভাগে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সব বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে ২৪ মে, কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তো পরীক্ষা চলছে। এর জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ওই পরীক্ষাও বন্ধ থাকবে।
এরপর দেশজুড়ে অস্থিরতা ছড়াতে থাকে। সোমবার রাত ৯টার দিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, পরীক্ষা যথারীতি চলবে। আবার রাত সাড়ে ৯টায় পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়েছে।
কী অদ্ভূত কাণ্ড! শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি বা অনাপত্তি নিয়েই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা শুরু করেছিল যা কয়েক সপ্তাহ ধরে চলছে। এই পরীক্ষা শুরুর প্রেক্ষাপট কিন্তু ভিন্ন।
মূলত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তিনটি পরীক্ষা চলছিল, এসব পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে সাড়ে ৫ লাখ ছাত্র-ছাত্রী। এর মধ্যে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে স্নাতক সম্মান ফাইনাল পরীক্ষা, যেখানে পরীক্ষার্থী ২ লাখ ২৬ হাজার। এই পরীক্ষার্থীরা আসলেই হতভাগা। তাদের পাঁচটি পরীক্ষা হওয়ার পর গত বছরের ১৭ মার্চ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা হয়। বাকি ছিল দুটি পরীক্ষা। এই দুটি পরীক্ষা ও ভাইবা নিয়ে তাদের বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দিতে চাইছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু সেই সুখ ওদের কপালে সইল না। করোনার আগে পাঁচটিসহ সাম্প্রতিক সময়ে সবকটি পরীক্ষা শেষ হলো। কিন্তু বাকি রয়ে গেল মৌখিক পরীক্ষা। এই পরীক্ষার জন্য যদি তাদের তিন মাস অপেক্ষা করতে হয়, তাহলে ফল প্রকাশেও লাগবে আরও তিন-চার মাস সময়। তাহলে বছর প্রায় শেষ হয়ে আসবে। অথচ গত বছরের জুনে তাদের স্নাতক সম্মান পরীক্ষার ফল প্রকাশ হওয়ার কথা ছিল।
আবার স্নাতকোত্তর চূড়ান্ত পরীক্ষাও শুরু হয়েছিল। তাদের পাঁচটি পরীক্ষা শেষ হয়েছে, দুটি বাকি আছে। মৌখিক পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল ২৭ ফেব্রুয়ারি। এরাও আটকে গেল। এই স্তরে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষাও শুরু করেছিল। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি এই পরীক্ষা শুরু হয়, শেষ হওয়ার কথা ছিল ২৩ মার্চ। তারাও আটকে গেল।
এই তিনটি পরীক্ষা শুরু করলেও পাইপলাইনে ছিল আরও চারটি বড় পরীক্ষা। কথা ছিল আগের তিনটি স্তরের পরীক্ষা শেষ হলেই পরের চারটি স্তরের পরীক্ষা শুরু হবে। কিন্তু সরকার চলমান পরীক্ষাগুলো স্থগিত করে দেয়ায় সেশনজট আরও বেড়ে যাবে।
আসলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ও দৃশ্যমান কাজ পরীক্ষা নেয়া ও ফল প্রকাশ করা। বছরে প্রায় ২০০ পরীক্ষা নেয় এই বিশ্ববিদ্যালয়। এর অধীনে কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীসংখ্যা প্রায় ২৮ লাখ। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পড়া শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ নিম্নবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য। তাদের লক্ষ্য থাকে পড়াশোনা শেষ করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার যুদ্ধে নেমে পড়া, হতদরিদ্র মা-বাবার মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করা।
যাই হোক, সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় চলমান পরীক্ষাগুলো স্থগিত করলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলায় কিন্তু ভিন্ন ঘটনা ঘটেছে, যা একই যাত্রায় দুই ফলের মতো। অধিভুক্ত সাতটি কলেজের বিষয়ে কিন্তু ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর কারণ, শিক্ষার্থীদের রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন। যেহেতু আন্দোলনের মুখে সাত কলেজের স্থগিত করা পরীক্ষা চালু হয়েছে, সেহেতু এবার মাঠে নেমেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়েছে, আবার ছেড়েও দেয়া হয়েছে। আগামী রোববার পর্যন্ত চূড়ান্ত সময় দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
এ কথা বলতে দ্বিধা নেই যে, তিন মাস পরে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্তটি অযৌক্তিক হয়েছে। তার মানে ধারণা করা হচ্ছে, অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও হয়তো ওই সময়ে খুলবে। সরকারের এই অতিসতর্কতা অনেকেরই পছন্দ হয়নি।
দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা এখন প্রতিদিন পাঁচ-সাতের কাছাকাছি। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ড পুরোদমে চলছে। রাস্তাঘাটে মানুষের ভিড়ে চলা দায়, সড়কে যানজট লেগেই থাকছে। এই দৃশ্য দেখে কষ্টে থাকা শিক্ষার্থীরা আর চুপ থাকতে পারছেন না। অনেকের টিউশনি ছুটে গেছে। হল বন্ধ থাকায় ঢাকায় এসে অবস্থান করার সুযোগ নেই। সেশনজট হাতছানি দিচ্ছে। কবে পরীক্ষা হবে, কবে ফল প্রকাশ হবে, সেই অনিশ্চয়তা ভর করেছে। করোনায় অভিভাবকদের অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। করোনায় অভিভাবকহারা সন্তানের সামনে এখন শুধুই অন্ধকার।
করোনা প্রত্যেক পরিবারের ওপর কমবেশি কালো থাবা বসিয়েছে। প্রচণ্ড ঝড়ে লন্ডভন্ড হওয়ার পর গাছপালা যেমন উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে, অসংখ্যা পরিবারের অবস্থা ঠিক তেমনই। এর মধ্যে কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থী থাকা পরিবারগুলোতে অস্থিরতা চলছে। এসব শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রেণিকক্ষে আনা জরুরি।
গত প্রায় এক বছরে মোবাইল ফোন, ট্যাব ও ল্যাপটপে শিক্ষার্থীর আসক্তি কতটা বেড়েছে তা চারপাশে তাকালেই টের পাওয়া যায়। চিকিৎসকের ভাষ্য অনুযায়ী, দেশে চশমাওয়ালার সংখ্যা অস্বাভাবিক বেড়েছে, শিক্ষার্থীদের অনেকেরই চোখের দৃষ্টিশক্তি ক্রমাগত লোপ পাচ্ছে। দিনভর এমনকি গভীর রাত পর্যন্ত এসব গ্যাজেট হচ্ছে শিক্ষার্থীর নিত্যসঙ্গী। অনেক মা-বাবাই এমন পরিস্থিতিতে অসহায়। সারা দিন মোবাইল ফোন বা ট্যাব হাতে সন্তান কী করছে, কার সঙ্গে যোগাযোগ করছে, তার মনমানসিকতায় কী প্রভাব ফেলছে, এসব নিয়ে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই।
এই প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হোক। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও শিক্ষার্থীদের তা মানতে উদ্বুদ্ধ করা বা প্রয়োজনে বাধ্য করার দায়িত্বটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। কোনো শিক্ষার্থী অসুস্থ হলে অভিভাবকের উচিত তাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে না পাঠানো, শিক্ষকের দায়িত্ব তাকে বুঝিয়ে বাসায় বা বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া। মাস্ক ব্যবহার, হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা এবং শরীরের তাপমাত্রা দেখাসহ কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করলে শিক্ষাবিদ, অভিভাবক থেকে শুরু করে আমজনতারও আপত্তি থাকবে না। গত দেড়-দুই মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাবে না, এমন মতামত কিন্তু কেউ দেননি। অতএব, জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনগণের মতামত শুনুন। শিক্ষার্থীদের বিষয়ে সরকার আন্তরিক ও সহানুভূতিশীল, করোনাকালেও তা প্রমাণিত। কিন্তু অতি সতর্কতার ফলে সামাজিক অস্থিরতা কাম্য নয়।
শরিফুজ্জামান পিন্টু, সাংবাদিক
আজ ১০ মহররম, পবিত্র আশুরা। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে দিনটি শোকের। ৬১ হিজরির এই দিনে ফোরাত নদী-তীরবর্তী কারবালার ময়দানে শহীদ হন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসেন (রা.)। শোকের দিন পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাজধানীর পুরান ঢাকায় তাজিয়া মিছিল বের করেছেন শিয়া মুসলিমরা। রোববার সকাল ১০টায় হোসাইনী দালান ইমামবাড়া থেকে ১০ মহররমের প্রধান তাজিয়া মিছিল বের হয়েছে।
হোসাইনী দালান ইমামবাড়ার সুপারিনটেনডেন্ট এম.এম. ফিরোজ হোসেন জানান, তাজিয়া মিছিলটি সাজানো হয়েছে সামনে কালো ব্যানার, বেহেস্তা (লাল-সবুজ নিশান), পাঞ্জা আলম মাতম, দুলদুল ঘোড়া, খুনি ঘোড়া ও একটি জারি তাজিয়া দিয়ে।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পবিত্র আশুরা জুলুম ও অবিচারের বিপরীতে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় মানবজাতিকে শক্তি ও সাহস যোগাবে।
তিনি পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বাণীতে আজ এ কথা বলেন।
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘পবিত্র আশুরা’র শোকাবহ এই দিনে আমি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) এবং কারবালার প্রান্তরে মর্মান্তিকভাবে শাহাদতবরণকারী সকলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।’
তিনি বলেন, ইসলাম সত্য, ন্যায় এবং শান্তির ধর্ম। ইসলামের এই সুমহান আদর্শকে সমুন্নত রাখতে গিয়ে হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম হজরত ইমাম হোসেন (রা.), তাঁর পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠ সহচরবৃন্দ বিশ্বাসঘাতক ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে কারবালার প্রান্তরে শহীদ হন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অত্যাচারীর অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ইসলামের বীর সৈনিকদের এই আত্মত্যাগ পৃথিবীর ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।
কারবালার বিয়োগাত্মক ঘটনা ছাড়াও পবিত্র আশুরা ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম ফজিলতপূর্ণ একটি দিন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সমগ্র পৃথিবী সৃষ্টিসহ নানা তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা এদিনে সংঘটিত হয়েছে। হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে দুটি রোজা রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।
এই মহিমান্বিত দিনটির তাৎপর্য ধারণ করে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভে সকলের প্রতি বেশি বেশি নেক আমল করার আহবান জানান। তিনি সমাজে সাম্য, ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি পবিত্র আশুরার এই দিনে তিনি মুসলিম উম্মার ঐক্য, সংহতি ও অব্যাহত অগ্রগতি কামনা করেন।
সাম্প্রতিক নিরাপত্তা অভিযানে ‘চরমপন্থি উগ্রবাদী’ আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে মালয়েশিয়ায় ৩৬ জন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার (৫ জুলাই) বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (এমওএফএ) বলেছে, ‘সন্ত্রাস-সংক্রান্ত তদন্তে মালয়েশিয়াকে সহযোগিতা করবে বাংলাদেশ।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ‘বাংলাদেশ হাইকমিশন কুয়ালালামপুরে তাৎক্ষণিকভাবে মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের পরিচয় এবং তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে তথ্য চেয়েছে।’
বাংলাদেশ সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ, সহিংস উগ্রবাদ এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষকে পূর্ণ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, গ্রেপ্তার বা আটককৃতদের মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার আদালতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক ঘটনার হালনাগাদ তথ্যে বাংলাদেশ জানিয়েছে, বাকি ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে বা তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর (ডিপোর্টেশন) প্রক্রিয়া চলছে। বাংলাদেশ সরকার ঘটনাপ্রবাহ ‘ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ’ করছে এবং কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশন মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানায়, প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন কাজ করে যাবে।
মালয়েশিয়ার সরকার শুক্রবার জানায়, মালয়েশিয়ার পুলিশ সম্প্রতি যে বাংলাদেশি চরমপন্থি গোষ্ঠী (জিএমআরবি) ভেঙে দিয়েছে, তা সিরিয়া ও বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর জন্য তহবিল সংগ্রহ ও সদস্য নিয়োগে লিপ্ত ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গ্রেপ্তার হওয়া ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৩৬ জন সন্দেহভাজনের মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ধারা ৬এ অনুযায়ী অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। ১৬ জনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০১২ (এসওএসএমএ)-এর আওতায় তদন্ত ও বিচারের জন্য আটক রাখা হয়েছে।
মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার হওয়া ৩৬ বাংলাদেশির বিষয়ে দেশটি ইতোমধ্যে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে বলে জানিয়ে বাংলাদেশ বলেছে, তারা এখন মালয়েশিয়ার উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার ৩৬ জন বাংলাদেশির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছি এবং এখন তাদের জবাবের অপেক্ষায় আছি।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ যাচাই করবে, তারা জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।
‘যদি তারা জড়িত থাকে, তাহলে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে,’ বলেন উপদেষ্টা হোসেন। তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি এখনো কিছুটা ‘ফ্লুইড’ বা অস্থির।
এই ঘটনা ভবিষ্যতে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য মালয়েশিয়ান ভিসা ইস্যুতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে কিনা, প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, যেকোনো নেতিবাচক ঘটনা ভিসা ইস্যুতে প্রভাব ফেলতে পারে, এবং তারা একথা বলতে পারেন না যে এর কোনো প্রভাবই পড়বে না।
তবে তিনি বলেন, যদি যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাহলে প্রভাব কমানো সম্ভব।
মালয়েশিয়ার পুলিশ মহাপরিদর্শক তান শ্রী মোহাম্মদ খালিদ ইসমাইল বলেন, এই গোষ্ঠীর সদস্যদের কাছ থেকে বার্ষিক সদস্যপদ ফি হিসেবে জনপ্রতি ৫০০ রিংগিত এবং আর্থিক সামর্থ অনুযায়ী অন্যান্য স্বেচ্ছা অনুদান গ্রহণ করে তহবিল সংগ্রহ করত।
প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, এই গোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা ছিল ১০০ থেকে ১৫০ জন, যারা সবাই মালয়েশিয়ায় কারখানা, নির্মাণকাজ ও পেট্রোল পাম্পে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত বাংলাদেশি নাগরিক।
তিনি বলেন, সংগৃহীত অর্থ ই-ওয়ালেট অ্যাপ এবং আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার সেবার মাধ্যমে বিদেশে পাঠানো হতো। গোষ্ঠীটি নতুন সদস্য নিয়োগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামের মতো মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করত।
মোহাম্মদ খালিদ বলেন, পুলিশ এখনো তদন্ত করছে ঠিক কত টাকা আইএস নেটওয়ার্কে পাঠানো হয়েছে।
তিনি জানান, গোষ্ঠীটি সোশ্যাল মিডিয়া ও মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করে আইএস-এর প্রচারণা ছড়াত, ‘বাইআহ’ (আনুগত্যের শপথ) সম্পন্ন করত এবং গোপন ধর্মীয় ক্লাস ও সদস্য সভার মতো কার্যক্রম আয়োজন করত।
তিনি বলেন, ‘যারা অনলাইনে আনুগত্যের শপথ করত, তাদেরকে সেল নেতা বানানো হতো, যাতে তারা গোষ্ঠীর প্রভাব আরও বাড়াতে পারে। নতুন সদস্যদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ছিল ধাপে ধাপে—স্ক্রিনিং থেকে শুরু করে অভিজাত দলের গঠন পর্যন্ত।’
তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই গোষ্ঠীতে কোনো মালয়েশিয়ান নাগরিকের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তবে এই গোষ্ঠী মালয়েশিয়ায় প্রায় এক বছর ধরে সক্রিয় ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যদিও গোষ্ঠীটি মালয়েশিয়ায় কোনো হামলার পরিকল্পনা করছিল না, তবে তারা দেশটিকে তহবিল সংগ্রহ ও সদস্য নিয়োগের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছিল। তদন্তে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ ও ইন্টারপোল সহায়তা করছে।
মোহাম্মদ খালিদ বলেন, মালয়েশিয়ান আইপি ঠিকানা ব্যবহার করে আইএস মতাদর্শ ছড়াতে থাকা বাংলাদেশিদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে প্রথমে গোষ্ঠীটির কার্যক্রম শনাক্ত করা হয়।
সিলেটে নতুন করে একজনের করোনা ও একজনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এই নিয়ে চলতি বছর ২৭ জনের করোনা ও ৩৮ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হলো।
আজ শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় থেকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে একজনের রিপোর্টে করোনা পজিটিভ আসে। এই বছর ৪৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৭ জনের করোনা ধরা পড়েছে এবং দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে দুইজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সিলেট স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় থেকে প্রেরিত ডেঙ্গু সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় একজনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এই নিয়ে জুলাই মাসে পাঁচজনের ডেঙ্গু শনাক্ত হলো। বর্তমানে ২৫০ শয্যার মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে তিনজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চলতি বছর ৩৮ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ১০ জন, সুনামগঞ্জ জেলায় তিনজন, মৌলভীবাজার জেলায় ১১ জন এবং হবিগঞ্জ জেলায় ১৪ জন। তবে, ডেঙ্গুতে সিলেট অঞ্চলে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।
চব্বিশের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ জুলাই মাসের শেষে কিংবা আগস্টের প্রথম সপ্তাহে শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রসিকিউসন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘জুলাই মাসের শেষের দিকে কিংবা আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে শেখ হাসিনার মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে বলে আমরা প্রসিকিউসনের পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করছি।’
এদিকে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার পলাতক আসামি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচারের মুখোমুখী করতে ট্রাইব্যুনালে এরইমধ্যে আর্জি জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর।
গত ১ জুলাই বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ অভিযোগ গঠন বিষয়ক শুনানিতে বিচারের এই আর্জি জানিয়ে চিফ প্রসিকিউটর আসামিদের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগ তুলে ধরেন। এসময় তিনি ট্র্যাইব্যুনালকে বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সারা বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইল জুড়ে সর্বত্র অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। পরিমাণে, সংখ্যায় এবং স্থানের ব্যপকতায় এই অপরাধ ছিল বিস্তৃত-ব্যাপক। আর এই অপরাধ ছিল সিস্টেমেটিক (পদ্ধতিগত)। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে নির্দেশ এসেছে এবং নির্দেশের চেইন অব কমান্ড অনুসারে বাস্তবায়নের মাধ্যমে পুলিশ এবং অন্যান্য সহযোগী বাহিনী সব জায়গায় একই পদ্ধতিতে অপরাধ সংঘটন করেছে। এছাড়া সারা বাংলাদেশের সর্বত্র একই পদ্ধতিতে প্রাণঘাতি অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। সুতরাং যে অপরাধ বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছে এবং যে অভিযোগগুলো আমরা দিয়েছি পুরোটাই ছিল বিস্তৃত এবং পদ্ধতিগত, যা মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে প্রমাণ করে। ফলে আমাদের সবিনয় প্রার্থনা হচ্ছে, এই মামলায় যে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো এনেছি, তার ভিত্তিতে অভিযোগ গঠন করে তাদের বিচারের মুখোমুখী করা হোক।’
চিফ প্রসিকিউটরের এই শুনানির পর শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন দুই সপ্তাহ সময় চাইলে বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ অভিযোগ গঠন বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী সোমবার দিন ধার্য রয়েছে।
এসময় ট্র্যাইব্যুনালে হাজির ছিলেন এই মামলায় গ্রেফতারকৃত পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল- মামুন। তার পক্ষে ট্র্যাইব্যুনালে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ। অভিযোগ গঠন বিষয়ক সেদিনের শুনানি ট্র্যাইব্যুনালের অনুমতি নিয়ে সরাসরি সম্প্রচার করে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)।
গত ১৬ জুন ট্র্যাইব্যুনাল-১ পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে আগামী সাতদিনের মধ্যে হাজির হতে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন এবং পরদিন দু’টি পত্রিকায় শেখ হাসিনা ও কামালকে সাতদিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। তবে বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পরেও পলাতক দুই আসামি ট্রাইব্যুনালে হাজির না হওয়ায় ট্র্যাইব্যুনাল ১ জুলাই অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করেন। সে ধারাবাহিকতা ১ জুলাই শুনানি শেষে পরবর্তী শুনানির জন্য আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গত ১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলায় অভিযুক্ত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউসন। এদিন প্রথম ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রথম মামলাটি (মিস কেস বা বিবিধ মামলা) হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে।
এই মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দু’টি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগ শাসনামলের সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। জাজ্বল্যমান এসব অপরাধের বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
ভোলা জেলা শহরের কালিনাথ বাজারে ঢাকা থেকে আসা ভোলাগামী এস এ পরিবহনের পন্য বহনকারী একটি কাভার্ড ভ্যানে তল্লাশি চালিয়ে অবৈধভাবে আনা প্রায় সাত কোটি টাকা মূল্যের ২০ লাখ মিটার কারেন্ট জাল, ৮০ কেজি পলিথিন, ৫ হাজার ৮৮৯ পিস আতশবাজি ও ১৯ হাজার ৬০০ শলাকা বিদেশি সিগারেট জব্দ করেছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ভোলা বেইস।
শনিবার (৫ জুলাই) দুপুরে কোস্টগার্ড ভোলা বেইসের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর রশিদ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল শুক্রবার বিকেল ৫টায় কোস্টগার্ডের ভোলা বেইসের সদস্যরা শহরের কালিনাথ রায়ের বাজারে একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযান চলাকালে ওই এলাকায় ঢাকা থেকে ভোলাগামী এস এ পরিবহন কুরিয়ার সার্ভিসের একটি কাভার্ডভ্যান তল্লাশি করে ৭ কোটি ৮ লাখ ২ হাজার ৩৬০ টাকা মূল্যের নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, পলিথিন, আতশবাজি ও শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা বিদেশি সিগারেট জব্দ করা হয়।
পরবর্তীতে জব্দকৃত কারেন্ট জাল সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে বিনষ্ট করা হয়। এ ছাড়া নিষিদ্ধ পলিথিন ভোলা পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয়। শুল্ক ফাকি দিয়ে আনা সিগারেট বরিশাল কাস্টমস ও আতশবাজি ভোলা সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ২৪ ঘণ্টা টহল জারি রেখেছে। যার মাধ্যমে কোস্টগার্ডের আওতাধীন উপকূলীয় এবং নদী-তীরবর্তী অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকাংশে উন্নত হয়েছে।
বাংলাদেশ কোস্টগার্ড কতৃক শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আসা চোরাচালানবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে।
শেরপুরে নালিতাবাড়ী উপজেলার কাটাবাড়ী সীমান্তের বিদ্যুতায়িত হয়ে আরও একটি একটি বন্যহাতি নিহত হয়েছে। বনবিভাগের মধুটিলা রেঞ্জের আওতাধীন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে শনিবার (৫ জুলাই) সকালে বনবিভাগের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে হাতিটির মরদেহ উদ্ধার করে।
খাদ্যের সন্ধানে পাহাড় থেকে নেমে আসা হাতিটি বৈদ্যুতিক ফাঁদে পড়ে নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বনবিভাগ।
মধুটিলা রেঞ্জের রেঞ্জার দেওয়ান আলী ঘটনাটি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, হাতিটির শুড়ে পোড়া ক্ষতের দাগ রয়েছে। এটির বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর হবে। এটি একটি মাদি হাতি। এ ব্যাপারে পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সাম্প্রতিককালে মধুটিলা রেঞ্জের আওতাধীন এলাকায় খাদ্যের সন্ধানে বন্যহাতি লোকালয়ে নেমে আসার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। খেতে ফসল না থাকায় হাতির দল বাড়িঘরেও হানা দিচ্ছে। এতে স্থানীয়ভাবে অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। যেখানে বন্যহাতির দেহটি পড়ে ছিল, সেখানে কোনো ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম না থাকলেও হাতিপাগাড় ক্যাম্পের আশপাশে অনেক বসতি ও বাড়িঘর রয়েছে।
এ নিয়ে চার মাসের কম সময়ের ব্যবধানে মধুটিলা রেঞ্জ এলাকায় তিনটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার করল বনবিভাগ।
এর আগে গত ২০ মার্চ পূর্ব সমশ্চুড়া গ্রামের লালনেংগড় এলাকায় বিদ্যুতায়িত হয়ে নিহত একটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তারপর গত ২৯ মে দাওধারা পাহাড় থেকে সদ্যোজাত একটি হাতিশাবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ঘন ঘন হাতির মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন পরিবেশ ও প্রকৃতিপ্রেমীরা।
নিধারঞ্জন কোচ নামে এক অধিকারকর্মী নিজের ফেসবুক ওয়ালে শনিবার নিহত হাতির মরদেহের ছবি পোস্ট করে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে লিখেছেন, ‘আবারো বন্যহাতির মৃত্যু। এর শেষ কোথায়? হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিসনে সরকারি উদ্যোগ কী? ক্ষতিপূরণ প্রদানই কি যথেষ্ট? হাতি-মানুষের সহাবস্থানের পথ খুঁজতে খুঁজতে এশিয়ান হাতি নাই হয়ে যাবে!’
মন্তব্য