বুবু,
আজ বাসায় কি আজ পোলাও-রোস্ট রান্না হবে? আমার জন্মদিন তো, কী ভুলে গেলে? ওই যে আমরা যখন সবাই একসাথে থাকতাম। তখন মা এই দিনে স্পেশাল রান্না করতেন। দুপুরে বাবার জন্য অপেক্ষা করতে থাকতাম। বাবা ঘরে ঢুকলে চুরুটের ঘ্রাণের সাথে পোলাও-রোস্টের ঘ্রাণ মিলেমিশে একাকার হতো। কখন একসাথে খেতে বসবো, দৌড়ে যেতাম তাই। তাড়া দিতে দিতে খাবার ঠান্ডা হয়ে যেত। মনে করতে পারো বুবু?
বত্রিশ নম্বরের বাড়িটা একদম খা খা করে। এখন একটুও হইচই নেই। আমার খেলার সাথীরা নেই। অথচ এমন দিনগুলোতে আমরা সবাই মিলে কত না খেলায় মেতে থাকতাম। আমার আবারও খেলতে ইচ্ছে করে। তোমাদের সাথে লুকোচুরি খেলা। ছোট্ট সবুজ লনে গড়াগড়ি করতে মন চায়। বাবার কোলের পাশে বসে রাজ্যের গল্প, বহু বছর শুনি না। ভাইয়াদের আড্ডায় উঁকি দেয়া হয় না। আমার মতন তুমি আর ছোটবু একা হয়ে গেছো। অনেক একা।
ঐ যে সেই দিন। অন্ধকার নেমে এসেছিল যেদিন। অসহায় ভয়ে কুঁকড়ে ছিলাম বহুক্ষণ। মায়ের কাছে যাব, বলেছিলাম আমি। ওরা যেতে দেয়নি আমায়। ছোট্ট বুকটা ভেঙে দিয়েছিল। অনেক রক্ত বের হচ্ছিল। শুধু মাকে খুঁজছিলাম, কোথাও পাচ্ছিলাম না দেখতে। অনেক বেশি ঠান্ডা লাগছিল। মা আমায় বুকে জড়িয়ে ধরবে। মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে। ব্যাথা কমে যাবে, ঠান্ডা কমে যাবে। ছোপ ছোপ রক্তে ভেজা জামা দেখে বকবে কিছুক্ষণ। তারপর ধুয়ে মুছে ঠিক আদর করে সব বদলে দদেবে।
ভাগ্যিস তুমি আর ছোটবু ছিলে না সেদিন। ভাগ্যিস তোমাদের কিছু হয়নি। এত ব্যথা কী করে সহ্য করতে বলো? না, বেশিক্ষণ সহ্য করতে হয়নি আমার। খুব দ্রুত চারিদিক শীতল থমথমে ঘন কুয়াশায় ঢেকে এসেছিল। তার মাঝেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম, চুপ করে। মাকে আর দেখা হয়নি আমার।
তারপরও ভালো থেকো বুবু। ছোটবুকে নিয়ে অনেক অনেক ভালো থেকো। আমাদের জন্য চিন্তা করো না। আমরা ঠিক ঠিক বেঁচে আছি, বাংলাদেশের মানুষের হৃদকম্পে। তোমার রাসেল এখনও খেলে বেড়ায় অনন্তরেখার দেশে। আমার জন্মদিনের কেকটা একটু বেশি করে খেও। তোমাকে আর ছোটবুকে ভাগটা দিয়ে দিলাম।
ভালবাসা আর আদর
তোমাদের ছোট্ট ভাইটি
শেখ রাসেল
শাওন মাহমুদ: নগরচাষী ও কলাম লেখক
২০২০ সালের শেষ প্রান্তিক। দেশজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারির থাবা। বেসরকারি অন্য অনেক খাতের মতো সংবাদমাধ্যমেও চরম অনিশ্চয়তা আর উদ্বেগ। ঠিক এমন সময়ে ‘খবরের সব দিক, সব দিকের খবর’ স্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে আবির্ভাব হয় নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
ওই বছরের পয়লা অক্টোবর যাত্রা শুরু করা সংবাদমাধ্যমটি আজ পা রাখল চতুর্থ বছরে। দিবসের হিসাবে হাজার দিনের মাইলফলক অতিক্রম করেছে নিউজবাংলা। মহাকালের পরিক্রমায় একে অতি দীর্ঘকাল বলা না গেলেও সংবাদমাধ্যমের বাস্তবতায় নিজেকে জানান দেয়ার জন্য যথেষ্ট সময় হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। সেই সময়ে অসীম চ্যালেঞ্জের মধ্যে অমিত সম্ভাবনার পথে চলার চেষ্টা করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
স্লোগানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা শুরু থেকেই কোনো খবরের আদ্যোপান্ত জানানোর চেষ্টা করেছি পাঠকদের। সংবাদের পূর্ণাঙ্গ একটি গল্প বলেই আমরা দায়িত্ব শেষ করিনি; সেই সংবাদে নতুন মাত্রা যোগ হলে তা পাঠককে জানানোর তাগিদ অনুভব করেছি। আমাদের প্রতি আস্থা রেখে সেই প্রচেষ্টার প্রতিদান দিয়েছেন পাঠকরা।
সংবাদ পরিবেশনে পেশাদারত্ব ছিল সবসময়ই আমাদের প্রাধান্যের শীর্ষে, যে কারণে আগে দেয়ার উত্তেজনা সামলে দেরিতে হলেও সঠিক সংবাদটি পাঠকদের জানাতে চেয়েছি। এ মনোভাব পাঠকের কাছে অনেক সংবাদমাধ্যমের তুলনায় আমাদের ভিন্ন ভাবমূর্তি তৈরি করেছে।
যেকোনো সংবাদের গল্পের খণ্ডিত চিত্রের পরিবর্তে পূর্ণাঙ্গ দিক তুলে ধরার চেষ্টা ছিল বরাবরই, যা পাঠক মহলে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা ও পেশাদারত্বকে তুলে ধরেছে।
পেশাদারত্বের অংশ হিসেবে আমরা প্রথম দিন থেকেই রোজকার জনদুর্ভোগ, সেবাপ্রার্থীদের ভোগান্তিগুলোকে তুলে ধরেছি ধারাবাহিকভাবে। আমাদের এসব সংবাদে টনক নড়েছে দায়িত্বশীল মহলের, তৈরি হয়েছে ভোগান্তি কমার পথ।
সংকট ও সম্ভাবনা নিয়েই আমাদের জগৎ। বিষয়টি মাথায় রেখে দেশের আনাচ-কানাচে ছড়িয়ে থাকা সম্ভাবনাগুলো আমরা তুলে ধরেছি। আমাদের রিপোর্টারদের বিরামহীন প্রচেষ্টায় অনুপ্রেরণা জোগানো অদম্য মানুষদের কথা উঠে এসেছে একের পর এক।
প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রতিনিয়তই বিপুলসংখ্যক মানুষের ভোগান্তির কারণ হচ্ছে। আমরা সেসব অনিয়ম, দুর্নীতি তুলে ধরেই দায়িত্ব শেষ মনে করিনি; সেসব অনিয়মের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে ধারাবাহিকভাবে চেষ্টা চালিয়েছি।
কৃষিপ্রধান দেশে কৃষিকেন্দ্রিক উদ্যোগগুলোকে তুলে ধরাকে আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। শুরু থেকেই চাষি ও কৃষি উদ্যোক্তাদের সংকট ও সম্ভাবনাগুলোকে ধারাবাহিকভাবে আমরা সামনে এনেছি। স্থানীয় সংস্কৃতির বিভিন্ন অনুষঙ্গ নিয়মিতই উঠে এসেছে আমাদের সংবাদ গল্পগুলোতে।
সুস্থ মানুষ ছাড়া উন্নত জাতি গড়া যায় না বলে আমরা বিশ্বাস করেছি। সুস্থতার জন্য প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধকে জরুরি মনে করা অনেক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে একমত হয়ে সেই দিকটিতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়ার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন রোগের কারণ, লক্ষণ নিয়ে আমরা একের পর এক কনটেন্ট পরিবেশ করেছি। পাশাপাশি প্রতিকার নিয়েও কথা বলেছি।
স্বাধীনতার পর দেশ অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে গেলেও সমাজে উঁচু-নিচুর ভেদাভেদ এখনও বাস্তবতা। আমরা তা ভাঙার চেষ্টা করেছি। আমরা কথা বলেছি জেন্ডার নিয়ে, সচেতন করার চেষ্টা করেছি পাঠকদের। আমরা অনেকের কাছে ‘ট্যাবু’ হয়ে থাকা নারী স্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিক ও যৌনতা নিয়ে কথা বলেছি। এ ধরনের কনটেন্ট পাঠক মহলে আমাদের ভিন্নতা তৈরি করেছে।
একটি দেশের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি তার অর্থনীতি। আমরা দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়ে পাঠকদের নিয়মিত জানানোর চেষ্টা করেছি। আমরা উন্নয়নের মহাযজ্ঞগুলো যেমন তুলে ধরেছি, তেমনি বাধাগুলোও সামনে এনেছি।
সংবাদমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব প্রচলিত ভুলগুলোকে চ্যালেঞ্জ করা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জয়জয়কারের যুগে অসত্য তথ্যকে সত্য হিসেবে চালিয়ে দেয়া নতুন বিষয় নয়। আমরা সেসব অসত্যকে চ্যালেঞ্জ করে সত্য তথ্যটা পাঠকদের দেয়ার চেষ্টা করেছি।
আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই আমাদের সংবাদে স্থান পেয়েছে। আমরা শিশুদের প্রতিভা বিকাশে সহায়ক শক্তি হওয়ার চেষ্টা করেছি। তরুণদের কর্মসংস্থানসহ অন্য সমস্যাগুলো নিরসনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের তাগিদ অনুভব করেছি। বৃদ্ধদের সঙ্গে হওয়া অন্যায়-অনিয়ম নিয়ে কথা বলাকে করণীয় মনে করেছি।
আমাদের চলার এ পথ কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। ভাইরাসজনিত মহামারির রেশ না কাটতেই ইউক্রেন যুদ্ধে ভাঙতে থাকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বিন্যাস। আমরা সেই কঠিন সময়ে ঝড়ের মুখে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছি। প্রতিটি সংকটকে সম্ভাবনায় রূপান্তরের চেষ্টা ছিল আমাদের। চেষ্টায় কতটা সফল হয়েছি, সেই বিবেচনার ভার পাঠকের হাতে ছেড়ে দিয়েছি।
শুরুর পর থেকে আমরা ধীরে ধীরে এক হাজার দিনের মাইলফলক পেরিয়েছি। এ যাত্রায় আমরা টিকে ছিলাম পাঠকের আস্থায়। আমরা টিকে আছি তাদের ভালোবাসায়। আমরা বহু দূর যেতে চাই পাঠকের ভরসায়।
লেখক: ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, নিউজবাংলা ও দৈনিক বাংলা
আরও পড়ুন:বিশ্বায়নের এই সময়ে সবকিছু দ্রুত বদলে যাচ্ছে। তথ্য-প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় প্রতিটি ক্ষেত্রে এখন বাড়তি গতি। তাল মিলিয়ে চলতে না পেরে অনেকে পিছিয়ে পড়ছে; হারিয়ে যাচ্ছে। সেই জায়গা দখল করে নিচ্ছে অন্যরা। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন ক্ষেত্র।
সংবাদমাধ্যমেও ঘটে চলেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। প্রযুক্তিতে ভর করে এগিয়ে যাচ্ছে অনলাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম। সংবাদপত্রের পাতা ও টেলিভিশনের পর্দা থেকে পাঠক-দর্শকের দৃষ্টি কেড়ে নিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, এক্স (সাবেক টুইটার), ইউটিউব।
প্রযুক্তির উৎকর্ষে ভর করে সামনের দিনগুলোতে সংবাদমাধ্যম কোন পথে ধাবিত হবে, সেই উপলব্ধি থেকেই জন্ম ‘নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকম’-এর। ২০২০ সালের ১ অক্টোবর আত্মপ্রকাশের পর সংবাদমাধ্যমটি ইতোমধ্যে পাড়ি দিয়েছে তিনটি বছর।
সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে চতুর্থ বর্ষে হাঁটা শুরু করল নিউজবাংলা।
‘খবরের সব দিক, সব দিকের খবর’ স্লোগানকে ধারণ করে যে আদর্শ ও লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা থেকে কখনোই বিচ্যুত হয়নি এই নিউজ পোর্টাল। হাজারো খবরের ভেতর থেকে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদটি বের করে সবার আগে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেয়ার কাজটি আন্তরিকতার সঙ্গে করে চলেছেন প্রতিষ্ঠানের সংবাদকর্মীরা।
খবরকে খবরের মতো করেই তুলে ধরার চেষ্টা থেকেছে সবসময়। তাতে রং চড়ানো বা নিজস্ব মতামত যুক্ত করে পাঠকের কাছে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা থাকেনি কখনোই।
খবর পরিবেশনের ক্ষেত্রে এর বিষয়বস্তু প্রাধান্য পেয়েছে; কোনো দল, গোষ্ঠী বা ব্যক্তি বড় বিবেচ্য হয়ে ওঠেনি। সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতাই করে চলেছে নিউজবাংলা।
নীতি-আদর্শ নিয়ে এগিয়ে চলার সময়টাতে সতত পাশে থেকেছেন বোদ্ধা পাঠক। তারা সাদরে গ্রহণ করেছেন শুভ এই প্রয়াসকে। মতামত দিয়ে উৎসাহিত করেছেন। সে সুবাদে বেড়েছে পরিচিতি। দিনে দিনে বেড়েছে পাঠক। তৈরি হয়েছে নতুন নতুন পাঠকশ্রেণি। ভারি হয়েছে অর্জনের পাল্লা।
নিউজবাংলার তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে এসে যতটুকু অর্জন ও অগ্রগতি, তার বড় অংশই প্রাপ্য প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা মালিক কর্তৃপক্ষের। তারা পাশে থেকেছেন বলেই দায়িত্বরত সংবাদকর্মীরা স্বাধীনভাবে লিখতে পেরেছেন। পাঠক পেয়েছে প্রকৃত খবরটি।
নিউজবাংলার প্রাণভোমরা প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা-মালিক ও সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি সংবাদকর্মীর কাছে তিনি প্রিয় নাফিজ ভাই।
স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও মহান মুক্তিযুদ্ধ ইস্যুতে কোনো আপস নয়—এটাই হলো তার প্রথম নির্দেশনা। এর বাইরে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে তিনি প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিকদের দিয়েছেন অবারিত স্বাধীনতা।
সত্য প্রকাশে তার পক্ষ থেকে কখনোই বাধা আসেনি; বরং তিনি উৎসাহ জুগিয়ে চলেছেন। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যত প্রভাবশালীই হোক, তাদের অযাচিত কোনো চাপ এলে তিনি সামনে থেকে মোকাবিলা করে যাচ্ছেন।
প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা সম্পাদক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মজুমদারের নামও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতে হয়। প্রতিষ্ঠান সাবলীলভাবে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি বরাবরই সহায়তার হাত বাড়িয়ে রেখেছেন।
নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর প্রকাশক শাহনুল হাসান খান, যার সার্বক্ষণিক সতর্ক দৃষ্টি থাকে এই পোর্টালে। প্রকাশিত খবরে কোনো ভুল, অসঙ্গতি বা ঘাটতি দেখামাত্র তিনি হাতে তুলে নেন টেলিফোন। ও প্রান্ত থেকে আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্বশীল সংবাদকর্মীদের ধরিয়ে দেন খবরের অসম্পূর্ণতা বা বিচ্যুতি। আর সে সুবাদে পাঠক পায় সর্বাঙ্গীন নির্ভুল খবর।
চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত দৈনিক বাংলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। এই ক্রীড়া ব্যক্তিত্বের কণ্ঠের সঙ্গে পরিচিত নন এমন মানুষ দেশে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে প্রখ্যাত এ ক্রীড়া ধারাভাষ্যকারের।
ঐতিহ্যবাহী পত্রিকা দৈনিক বাংলার পাশাপাশি নিউজবাংলার দায়িত্বও কাঁধে তুলে নিয়েছেন চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত। সে সুবাদে এই নিউজ পোর্টালের কর্মীরা পেয়েছেন একজন প্রাণপ্রিয় অভিভাবক।
বিশাল ব্যক্তিত্বের অধিকারী মৃদুভাষী মানুষটির ধীরস্থির ভাবনা, সিদ্ধান্ত ও সময়োপযোগী নির্দেশনা নিউজবাংলার পথচলায় বাড়তি উদ্যম এনেছে। প্রতিটি কর্মী তার কাজের প্রতি হয়েছেন আরও আন্তরিক। তার স্নেহমাখা নির্দেশনায় কর্মীরা কাজের প্রতি হয়েছেন আরও আন্তরিক।
সাফল্যমাখা দীর্ঘ কর্মময় জীবনে চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত সাংবাদিকতা পেশায় সেভাবে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন না। তবে জানার ব্যাপ্তি ও কর্মোদ্যম দিয়ে তিনি সুচারুভাবে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন দেশের প্রথম সারির দুটি সংবাদমাধ্যমকে। তার দিকনির্দেশনা থেকে সংবাদকর্মীরা প্রতিনিয়ত শিখছেন নতুন আঙ্গিকে, নতুনভাবে। আর তাতে সমৃদ্ধ হচ্ছে নিউজবাংলা।
কাজপাগল আরেক ব্যক্তিত্বের নাম বিশেষভাবেই নিতে হয়। তিনি হলেন নিউজবাংলা ও দৈনিক বাংলার নির্বাহী পরিচালক আফিজুর রহমান। সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা সার্বক্ষণিক ব্যস্ত রয়েছেন প্রতিষ্ঠানের সার্বিক দিক নিয়ে।
কোনো প্রতিষ্ঠান সুচারুরূপে চলতে গেলে তার আয়ের দিকটি বড় একটি বিষয়। অবসরপ্রাপ্ত মেজর আফিজুর রহমান সে বিষয়টি বেশ ভালোভাবেই সামাল দিয়ে চলেছেন। আর তাতে শক্ত ভিত্তি পাচ্ছে প্রতিষ্ঠান দুটি।
নির্বাহী পরিচালকের সতর্ক দৃষ্টি থাকে নিউজপোর্টালের খবরেও। গুরুত্বপূর্ণ কোনো খবর দৃষ্টি এড়িয়ে গেল কি না, দায়িত্ব পালনে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, প্রশাসনিক পদক্ষেপগুলো ঠিকমতো নেয়া হচ্ছে কি না- এমন নানা বিষয়ে থাকে তার সতর্ক দৃষ্টি।
তৃতীয় বর্ষপূর্তির এই ক্ষণে এবার কথা বলতে হয় নিউজবাংলার পথপরিক্রমা নিয়ে। যাত্রার শুরু থেকে এ পর্যন্ত সুযোগ্য অনেক সংবাদকর্মী যুক্ত হয়েছেন এই প্রতিষ্ঠানে। তাদের অনেকে চলে গেছেন। আবার নতুন করে যুক্ত হয়েছেন অনেকে।
নিউজবাংলার যাত্রাটা হয়েছিল অভিজ্ঞদের পাশাপাশি একঝাঁক তরুণ সংবাদকর্মীকে নিয়ে। তাদের মধ্যে সর্বাগ্রে নাম নিতে হয় সঞ্জয় দে’র। বার্তাপ্রধানের চেয়ারে বসে তিনি যোগ্যতার সঙ্গে পুরো টিমের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে নির্বাহী সম্পাদক হাসান ইমাম রুবেল, পরিকল্পনা সম্পাদক শিবব্রত বর্মণ ও প্রধান বার্তা সম্পাদক ওয়াসেক বিল্লাহ আল ফারুক সৌধ’র।
বিশেষ সংবাদদাতা আবদুর রহিম হারমাছি, বাণিজ্য সম্পাদক আবু কাওসার, যুগ্ম বার্তা সম্পাদক রুবায়েত ইসলাম (ক্রীড়া), প্রধান প্রতিবেদক তানজীর মেহেদী, যুগ্ম বার্তা সম্পাদক আজহারুল ইসলাম, মুস্তফা মনওয়ার হাশেম সুজন, ভিজ্যুয়াল টিমের মোস্তাফিজুর রহমান ও আইটি বিভাগের অর্ণব- বলতে হয় তাদের কথাও।
এস এম নূরুজ্জামান, ইমতিয়াজ সনি ও বনি আমিনের সমন্বয়ে গড়া ‘ইনভেস্টিগেটিভ সেল’-এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলো নিউজবাংলার পথচলাকে আরও গতিশীল করেছে।
বস্তুত নিউজবাংলা টিমে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মেধার সমাবেশ ঘটেছে, যাদের সম্মিলিত চেষ্টাতে প্রতিষ্ঠানটি শক্ত ভিত্তি পেয়েছে। নিউজ পোর্টালটিকে পাঠকপ্রিয় করে তুলতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে তারা সবাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
সুযোগ্য এই সংবাদকর্মীদের অনেকেই বর্তমানে নিউজবাংলার সঙ্গে নেই। ছড়িয়ে পড়েছেন মিডিয়া জগতের নানা স্থানে। কেউ কেউ উচ্চ শিক্ষার্থে ও কর্মের তাগিদে পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে।
অনুরূপ অনেক প্রতিভাবান, অভিজ্ঞ ও নিজ নিজ ক্ষেত্রে যোগ্য সংবাদকর্মী যুক্ত হয়েছেন এ প্রতিষ্ঠানে। সমাবেশ ঘটেছে একঝাঁক তারুণ্যের। সম্মিলিত চেষ্টা আর অফুরান প্রাণশক্তি নিয়ে কাজ করে চলেছেন তারা। সে সুবাদে পাঠক পাচ্ছেন ভিন্ন আঙ্গিকের নতুন নতুন খবর। পথচলায় গতি বাড়ছে নিউজবাংলার।
নিউজবাংলার সাফল্যগাঁথা নিয়ে কিছু বলতে গেলে গুরুত্বের সঙ্গে স্মরণ করতে হবে দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রতিষ্ঠানটির স্থানীয় সাংবাদিকদের। ব্যুরো, অফিস ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে দায়িত্বরত এ সংবাদকর্মীরা এককথায় নিউজবাংলার প্রাণ। দায়িত্ব পালনে তারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন। নিত্যদিন জোগান দিচ্ছেন নতুন নতুন খবরের। নানামুখী প্রতিকূলতা, ঝুঁকি আর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তারা তুলে আনছেন খবরের ভেতর থেকে খবর। প্রতিভাবান ও কর্মঠ এমন কর্মীবাহিনী পেয়ে গর্বিত নিউজবাংলা।
অনলাইন নিউজ পোর্টালকে বলা হয় ‘নিউজ হাব’। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মানুষকে আরও বেশি করে খবরমুখী করেছে। বেড়েছে পাঠকের চাহিদা। যোগ হয়েছে নতুন নতুন মাত্রা। সেই চাহিদা পূরণে নিউজবাংলা দেশ-জাতির গুরুত্বকে সামনে রেখে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
নিউজবাংলা পাঠক চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখতে পারছে তার প্রমাণ মেলে পাঠকের সাড়ায়। দিন দিন বাড়ছে এই পোর্টালের পাঠক সংখ্যার ব্যাপ্তি। আর তাতে অনুপ্রাণিত হয়ে আরও নতুন কিছু পাঠকের সামনে তুলে ধরার প্রয়াশ পাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা।
পাঠক, শুভানুধ্যায়ী ও বিজ্ঞাপনদাতাদের অকৃপণ সহায়তা এবং কর্মীবাহিনীর আন্তরিক চেষ্টায় নিউজবাংলা এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে- এমনটা প্রত্যাশা।
লেখক: বার্তা সম্পাদক, নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকম
আরও পড়ুন:‘একটি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে মুক্ত ও সম্মানজনক জীবনযাপনের অধিকার অর্জনের জন্য বাঙালি জাতি বহু শতাব্দি ধরে সংগ্রাম চালিয়ে এসেছে’- জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের পর দেয়া বঙ্গবন্ধুর প্রথম ভাষণ থেকে এই উক্তি আজ তার কন্যা শেখ হাসিনার জন্মদিনে স্মরণ করছি।
আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর ডাকে ১৯৭১ সালে সমগ্র জাতি যখন সশস্ত্র যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে আত্মোৎসর্গ করছে তখন বঙ্গবন্ধুর ২৪ বছর বয়সী অন্তঃসত্ত্বা কন্যা স্বামী, মা-বোন ও ভাইদের সঙ্গে পাকিস্তইন সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি ছিলেন। ধানমন্ডি ১৮ নম্বর সড়কের (এখনকার ৯/এ) একটি স্যাঁতস্যাঁতে বাড়িতে (২৬ নম্বর) তাদের ধরে এনে আটকে রাখা হয়। ২৫ মার্চ থেকে ১২ মে পর্যন্ত তারা খিলগাঁও, মগবাজার এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন। সঙ্গত কারণেই তাদের অবস্থান জানাজানি হয়ে যেত ও কোনো কোনো বাড়িওয়ালার অসহযোগিতায় তাদের বাসা ছেড়েও দিতে হতো।
এরকম রুদ্ধশ্বাস ও অস্বস্তিকর অবস্থায় ১২ মে সন্ধ্যার দিকে এক পাকিস্তানি মেজরের নেতৃত্বে সেনা পাহারায় তাদের সে বাড়িতে নিয়ে এসে বন্দি করা হয়। গেটের বাইরে ২০-২৫ জন সৈন্য পাহারায় রেখে দেয়া হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু-কন্যা যে বাড়িতে সবার সঙ্গে বন্দি ছিলেন সে বাড়িটিতে কোনো আসবাবপত্র এমনকি কোনো ফ্যানও ছিল না। দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর হোসেনের কাছে অনুরোধ করেও সেসবের ব্যবস্থা করা যায়নি। পুরো বন্দি জীবন তাদের থাকতে হয়েছিল ঘরের মেঝেতে। দেয়া হয়েছিল একটিমাত্র কম্বল।
ছোট দুই ভাই জামাল ও রাসেল, বোন রেহানা, স্বামী এম ওয়াজেদ মিয়া ও অসুস্থ মা-কে নিয়ে সে কী এক দুর্বিষহ জীবন কাটিয়েছেন, শেখ হাসিনার নানা কথোপকথন এবং ওয়াজেদ মিয়ার লিখে রাখা বর্ণনায় সেসবের বিবরণ পাওয়া যায়।
শেখ হাসিনার মুখেই শুনেছি, একটি কেরোসিনের চুলায় রান্না করা সীমিত খাবারের জন্য তাদের মা আধপেট খেতে বলতেন। কারণ খাবার ফুরিয়ে গেলে কারফিউর মধ্যে জোগাড় করা কঠিন হবে। পাকিস্তানি সেনারা তো কোনো সাহায্য করবে না।
জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে শেখ হাসিনাকে ডাক্তারের কাছে যেতে দিতে অনুমতি মেলে। বিশিষ্ট স্ত্রীরোগ চিকিৎসক-দম্পতি ডা. এম এ ওয়াদুদ ও ডা. সুফিয়া ওয়াদুদের পরামর্শ মেনে চলতেন শেখ হাসিনা। যে কেউ আজ অনুধাবন করবেন অন্তঃসত্ত্বা একজন বন্দি মায়ের কি সেসব পরামর্শ মেনে চলার কোনো সুযোগ ছিল, যারা প্রচণ্ড গরমের সময় আধপেট খেয়ে মেঝেতে থাকতেন? ডা. ওয়াদুদ স্নেহবশত কএনা টাকাপয়সা নিতেন না বলে কিছুটা রক্ষা ছিল বটে, কিন্তু আসন্ন সন্তানের পুষ্টি ও সুস্থতার জন্য এই মায়ের বা তার স্বামীর কী-ই বা করার ছিল?
ওয়াজেদ মিয়া লিখেছেন, “জুন মাসের প্রথম থেকে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর বিভিন্ন অবস্থান ও সরকারি ইলেক্ট্রিক সাব-স্টেশন, পুলিশ ফাঁড়ি ইত্যাদি স্থানে আক্রমণ জোরদার করতে থাকে। জুন মাসের শেষের দিকে এই আক্রমণ তীব্র আকার ধারণ করে। যখনই বাইরে গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়া যেত, পাহারারত সুবেদার মেজর স্টেনগান হাতে ‘ডক্টর সাব, ডক্টর সাব’ বলতে বলতে আমার রুমে ঢুকতো। সে সময়ে তারা আমাদেরকে নানাভাবে হয়রানি ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতো। বাড়ির ছাদে উঠে লাফালাফি করতো এবং লাইট জ্বালিয়ে রেখে ঘুমোতে দিত না। রাইফেলের মাথায় বেয়নেট লাগিয়ে কক্ষের জানালার ধারে দাঁড়িয়ে থাকত।” ভাবা যায়? এই গর্ভধারিণী মায়ের মন তখন কী স্বপ্নে বিভোর থাকার কথা!
জুলাই মাসের মাঝামাঝি ডা. ওয়াদুদের তত্ত্বাবধানে শেখ হাসিনা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। সন্তান প্রসবিনী মায়ের সঙ্গে আমাদের দেশের প্রচলিত সংস্কৃতি অনুযায়ী তার মায়েরই থাকার কথা। বেগম মুজিব যেন তার মেয়ের সঙ্গে হাসপাতালে থাকতে পারেন সে অনুমতি চাইলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর ইকবাল নামের একজন অত্যন্ত বাজে আচরণ করে।
ওয়াজেদ মিয়া লিখেছেন, “মেজর ইকবাল নামক এক সামরিক কর্মকর্তা বাসায় এসে আমার শাশুড়িকে রূঢ় ভাষায় বলে, আপনি তো নার্স নন যে হাসপাতালের কেবিনে আপনার মেয়ের সঙ্গে থাকা বা দেখাশুনা করার প্রয়োজন রয়েছে।”
এ পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর ছোট বোন খাদিজা হোসেন লিলি (লিলি ফুপু, বাংলাদেশ সরকারের সাবেক অতিরক্ত সচিব এ টি এম হোসেনের স্ত্রী) সারাক্ষণ শেখ হাসিনার সঙ্গে হাসপাতালে থাকতেন। ২৭ জুলাই রাত ৮টার দিকে নির্ধারিত সময়ের ছয় সপ্তাহ আগে শেখ হাসিনার প্রথম সন্তান জয়-এর জন্ম হয়। গর্ভকালে এই শিশু মায়ের সঙ্গে মায়ের পেটে বন্দি ছিল। ভূমিষ্ঠ হয়েও সে বন্দি। ‘মুক্ত জীবনের অধিকার’ এই সদ্যোজাত শিশুরও ভাগ্যে ছিল না।
দু-একজন আত্মীয়-স্বজন এই শিশুকে দেখতে এলে পাকিস্তানি সৈন্যরা খারাপ ব্যবহার করত। একদিন শেখ হাসিনার লিলি ফুপু ছাড়া দেখতে আসা আর সব আত্মীয়কে পাকিস্তানিরা ভয় দেখিয়ে কেবিন থেকে বের করে দেয়। তারা জানায়, তাদের কাছে সরকারি নির্দেশ রয়েছে যে এই কেবিনে একজনের বেশি সেবিকা থাকতে পারবে না।
ধানমন্ডির বন্দিশালায় গিয়েও পাকিস্তানি সৈন্যরা বেগম মুজিবকে এই বলে হুমকি দিয়ে আসে, ‘আপনারা জয় বাংলা রেডিও শোনেন। এটা বন্ধ না করলে জামালকে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে ঘরের সিলিং-এ পা বেঁধে ঝুলিয়ে পিটিয়ে তার পিঠের চামড়া উঠানো হবে।’
হাসপাতালে বড় বোনের কাছে সদ্য মামা হওয়া এই ভাইয়ের জন্য আশংকার খবর পৌঁছানোর পর তখন শেখ হাসিনার কেমন লেগেছিল আজকের দিনে যে কোনো সংবেদনশীল মানুষেরই তা উপলব্ধি হওয়ার কথা।
এই শিশু সন্তান নিয়ে শেখ হাসিনা যখন ধানমন্ডির বন্দি গৃহে ফেরেন সেই মেঝেতেই তাদের ঠাঁই হয় একটি মাত্র কম্বল বিছিয়ে। একদিন জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনে সন্তানের জন্য ডাক্তার ডাকার প্রয়োজন হলে সেনারা গেট থেকে আটকে দেয়। শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনার প্রসবোত্তর অতি-জরুরি চিকিৎসার জন্য (যাতে তার জীবনাশঙ্কা হয়েছিল) কিছুতেই ডাক্তার ওয়াদুদ-কে আসতে দেয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে ডাক্তার ব্যবস্থাপত্র লিখে দিলে তা নিয়ে কারফিউ শুরুর মাত্র কয়েক মিনিট আগে জরুরি ওষুদ কিনে এনে সে যাত্রায় রক্ষা হয়।
এই ক্রমাগত বাধা আর অত্যাচারের যন্ত্রণা দায়িত্বশীল স্বামী হিসেবে, আদর্শ পিতা হিসেবে ওয়াজেদ মিয়াকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তখন বহন করতে হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু আগে থেকেই তার পছন্দ বলে রেখেছিলেন- শেখ হাসিনা যেন তার ছেলে সন্তান হলে নাম রাখেন ‘জয়’ ও মেয়ে হলে ‘জয়া’। বন্দিশালায় সদ্যোজাত ছেলে সন্তানের নাম যখন ‘জয়’ রাখা হল তখন এ নিয়েও পাকিস্তানিরা প্রশ্ন তুলেছে। কটাক্ষ করে তারা বলত, ‘পশ্চিম পাকিস্তানমে এক নমরুদকো পাকড়াও করকে রাখা হুয়া, লেকিন এধার এক কাফের পয়দা হুয়া।’
বঙ্গবন্ধু-পুত্র শেখ জামাল একদিন কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে চলে যান। জামালের অনুপস্থিতি ও জানা আশঙ্কার মধ্যে একদিন বাসায় কর্মরত এক তরুণ সদস্য ফরিদকে পাকিস্তানি সৈন্যরা ধরে নিয়ে নির্মম অত্যাচার করে। টুঙ্গিপাড়ায় বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দিলে বঙ্গবন্ধুর অসুস্থ বাবা-মাকে ঢাকায় এনে আত্মীয়ের বাড়িতে রাখা হয়েছিল।
অক্টোবরে ওয়াজেদ মিয়াও অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং চিকিৎসার জন্য ডাক্তারদের পরামর্শে তাকে তখনকার পিজি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। একই সময়ে যুদ্ধ ঘনীভূত হলে ও ঢাকায় ক্রমাগত গেরিলা আক্রমণ শুরু হলে পাকিস্তানি বাহিনীর সতর্ক দৃষ্টি পড়ে বঙ্গবন্ধুর পরিবার ও পরিবারের সদস্যদের প্রতি। সেসব কঠোর পাহারার মধ্যে ধানমন্ডির বন্দি গৃহে বেগম মুজিব ও শেখ হাসিনাসহ অন্যরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।
১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের পরও তারা মুক্ত হতে পারেননি। বাড়ির পাহারা পাকিস্তানিরা ত্যাগ করেনি। মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে ওয়াজেদ সাহেব তাদের ১৮ ডিসেম্বর মুক্ত করতে সমর্থ হয়েছিলেন।
জেনারেল অরোরা নিজে এসে ১৮ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। সে বাসায় কোনো চেয়ার ছিল না বলে জেনারেল অরোরাকে কোথায় বসতে দেবেন তা ভেবে বেগম মুজিব খুব বিব্রত বোধ করছিলেন। (তথ্যসূত্র: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথোপকথন ও এম এ ওয়াজেদ মিয়ার বই ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’)।
এই যে একাত্তরের বন্দি জীবন সে জীবনেও শেখ হাসিনার একটি জন্মদিন ছিল, ২৮ সেপ্টেম্বর। জয়-এর জন্মের মাত্র দুই মাস পরের কথা, শুনেছি আপার তা মনেও ছিল না। আমরা আজও জানি না বঙ্গবন্ধু-কন্যার সেই বন্দিদশা আদৌ মুক্ত হয়েছে কী না।
কারণ, বঙ্গবন্ধুর উক্তি ‘একটি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে মুক্ত ও সম্মানজনক জীবনযাপনের অধিকার অর্জনের জন্য বাঙালি জাতি বহু শতাব্দি ধরে সংগ্রাম চালিয়ে এসেছে’; সেই সংগ্রামের হাল ধরে শেখ হাসিনা নিজে মুক্ত, স্বাধীন ও সম্মানজনক জীবন প্রতিষ্ঠার লড়াই করছেন ও নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার মুক্তি কোথায়?
যুদ্ধের দিনে অভাব-অনটনে, কষ্ট-অপমানে জন্ম নেয়া একটি বন্দি শিশুর জন্য শেখ হাসিনার যে মাতৃত্ববোধ তা আজ সমগ্র জাতির কাছে ছড়িয়ে গেছে। তিনি যখন বলেন ‘আত্মমর্যাদা অর্জন করেই বাঙালিকে বাঁচতে হবে, আমি দেশের মানুষের সে আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্যই লড়াই করছি’ তখন আমাদের মনে হয়- এই সংগ্রাম কবে শেষ হবে?
যদি শেষ হতো, একবার সবাই মিলে আপার জন্মদিনে টুঙ্গিপাড়া যেতাম। আপা বসে থাকতেন বঙ্গবন্ধুর শয়নের পাশে। আমরা একটি দূরের উঁচু ঢিবি থেকে দেখতাম পাখিগুলো ফিরে যাচ্ছে আপন মনে।
শেখ হাসিনার জন্মদিনে আজ এই প্রার্থনা করি- বাঙালির জীবনে পাখি দেখার সেই দিন আসুক, আমরা তখন বেঁচে থাকি বা না থাকি।
লেখক: রেজা সেলিম, পরিচালক, আমাদের গ্রাম
ই-মেইল: [email protected]
মিরপুরে চলছে বৃষ্টির লুকোচুরি। প্রথম ধাপে প্রায় দুই ঘণ্টা বৃষ্টি নামার পর দ্বিতীয় ধাপে এক ঘণ্টা ৪০ মিনিটের মতো। মধ্যখানে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে একবার খেলা শুরুর কথা থাকলেও বেরসিক বৃষ্টি আবার অপেক্ষা বাড়ায়। এতে আর মাঠে নামা হয়নি ক্রিকেটারদের, তবে শেষ পর্যন্ত বৃষ্টির কাছে হার মানে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ। ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে রেফারি। রাত ৮টা ২৬ মিনিটের দিকে আসে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের প্রথম কোনো ম্যাচ পরিত্যক্ত হলো। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে পরিত্যক্ত হওয়া মাত্র দ্বিতীয় ওয়ানডে এটি।
ক্রিকেটের চিরচেনা শত্রু বৃষ্টির শঙ্কা মাথায় নিয়েই আজ শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দুপুর ২টায় দ্বিতীয় ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। বরাবরের মতো টসের দিকে চোখ থাকবে দুই দলের। দুই দলই চায় আজকের ম্যাচটা জিতে সিরিজ জয়ের দিকে এগিয়ে যেতে। সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন কুমার দাস।
বাংলাদেশ এবং নিউজিল্যান্ড উভয় দল তিন ম্যাচের এই সিরিজটিকে রিজার্ভ বেঞ্চ পরখ করে দেখার মিশন হিসেবে নিয়েছে। উভয় দলই নিজেদের সেরা খেলোয়াড়দের বিশ্রামে রেখে নামছে ম্যাচে। নিউজিল্যান্ড দলের বেশির ভাগ ক্রিকেটার অপরিচিত হলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা নয়। ১৫ জনের সবারই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
এদিক থেকে বাংলাদেশ দলকে এগিয়ে রাখতে হবে। এই সিরিজ দিয়ে তামিম ইকবাল ফিরছেন। আফগানিস্তান সিরিজে হঠাৎ অবসর ঘোষণা, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার, কোমরের চোটের কারণে এশিয়া কাপ থেকে ছুটি নেয়া এবং পুনর্বাসন সম্পন্ন করে নিউজিল্যান্ড সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন বাঁহাতি এ ওপেনার। নিউজিল্যান্ড সিরিজের জন্য বাংলাদেশ স্কোয়াডে ফিরে এসেছেন অলরাউন্ডার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। মাহমুদউল্লাহ দীর্ঘ অফ ফর্মের কারণে দলের বাইরে ছিলেন।
নিউজিল্যান্ড সিরিজে বিশ্রাম দেয়া হয়েছে নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মেহেদি হাসান মিরাজ এবং তিন পেসার তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ ও শরিফুল ইসলামকে। সাকিবের অনুপস্থিতিতে প্রথম ওয়ানডের মতো দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব ব্যাটার লিটন দাস। বাংলাদেশ দল এবং তার জন্য এ সিরিজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ টাইগার রিজার্ভ বেঞ্চে একজনও ভালো মানের বিকল্প ওপেনার নেই। নাঈম শেখ টানা ম্যাচ খেলে রান করতে পারেননি। এনামুল হক বিজয় টিম ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনায় নেই।
প্রথম ম্যাচ যেহেতু বৃষ্টিতে ভেসে গেছে। তাই আজকের ম্যাচ দিয়ে এশিয়া কাপের ব্যর্থতা ভুলে ঘুরে দাঁড়াতে চায় বাংলাদেশ। আর সে লক্ষ্যে ব্যাটসম্যানদেরকেই দায়িত্বটা নিতে হবে। উইকেট কামড়ে পড়ে থাকলে রান আসবেই এই উইকেটে- আগের দিন তা দেখিয়েছেন ইয়াং-নিকোলস। পরিকল্পনা হয়ে গেছে, এখন প্রয়োগ করতে হবে মাঠে। বড় পার্টনারশিপ গড়ে তুলতে পারলে হয়তো যেকোনো কিছুই সম্ভব।
এবার একটু পরিসংখ্যানের দিকে মনোযোগ দেয়া যাক। বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড এ পর্যন্ত ৩৯টি এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের জয় ১০টিতে অন্যদিকে ব্ল্যাক ক্যাপসদের জয় ২৮টিতে। আর এই সিরিজের প্রথম ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়েছে। বাংলাদেশের ১০ জয়ের মধ্যে ৮ জয় দেশের মাটিতে। আর দুটি জয় নিরপেক্ষ ভেন্যুতে। অ্যাওয়েতে বাংলাদেশ কোনো ম্যাচ জয়লাভ করতে পারেনি।
নিউজিল্যান্ড বাংলাদেশের এই কন্ডিশনে ধাতস্থ হওয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ পায়নি। এ কন্ডিশনে খেলাটা বরাবরই কঠিন তাদের জন্য। প্রথম ওয়ানডেতে কোনো প্রতিরোধই গড়তে পারেনি তারা। তাই নজর থাকবে আজকের ম্যাচে। ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে, তবে কন্ডিশন যাই হোক না কেন, কিউই ফাস্ট বোলাররা কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে, সেটি সবসময় হাড়ে হাড়েই টের পেয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ১৫০ কিলোমিটার গতিবেগের বল ও সুইং সামলাতে তালগোল পাকিয়ে হিমশিম খেয়েছেন সবাই।
যদিও মিরপুরে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে খেলা হওয়ায় কিউইদের বিপক্ষে ‘হোম অ্যাডভান্টেজ’ নেয়ার চেষ্টা থাকবে বাংলাদেশের। তিনজন স্পিনার আর দুই পেসার রেখে একাদশ সাজাতে পারেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান কোচ নিক পোথাস। ডান ও বাঁহাতি অফ স্পিনারের সঙ্গে রাখা হতে পারে লেগি রিশাদ হোসেনকে। কারণ, তাকেও ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। বিশ্বকাপেও বিকল্প বোলার কোটায় রাখা হতে পারে তাকে। বৃষ্টিভেজা কন্ডিশনে তিন পেসার নিয়েও খেলতে পারেন স্বাগতিকরা। পরীক্ষা আর পরখ করে দেখার সিরিজ হলেও ফলাফল কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের জয় চাই-ই চাই।
আর প্রেডিকশনের কথা যদিও বলতেই হয়, তাহলে আমি বাংলাদেশের জয় দেখছি। যদিও মাঠের কাজটা টাইগারদের করে দেখাতে হবে। মাঠে সব বিভাগ ঠিকঠাক পারফর্ম না করলে অতীত পরিসংখ্যান, চেনা দর্শক আর কন্ডিশনের কিছুই যায়-আসে না।
আসলে দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের কাছে গত ১৩ বছরে কোনো ওয়ানডে ম্যাচে হারেনি বাংলাদেশ। কিংবদন্তি ড্যানিয়েল ভেট্টরিকে দিয়ে হোয়াইটওয়াশের শুরু, পরে কাইল মিলসেকে একই ফল উপহার দিয়েছেন মুশফিকুর রহিমরা। বিশ্বকাপ দলের আট ক্রিকেটারকে বিশ্রামে রেখে খেলতে আসা নিউজিল্যান্ড দলের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক লকি ফার্গুসনকেও কি সেই ঐতিহ্যের স্বাদ দিতে চলেছে বাংলাদেশ? সেটি আজ দেখার পালা।
লেখক: ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, দৈনিক বাংলা
আরও পড়ুন:নানা নাটকীয়তায় ভরা এশিয়া কাপের ১৬তম আসরের ফাইনাল থেকে আর মাত্র ১ দিন বাকি। শিরোপা ঘরে তোলা লড়াইয়ে আগামীকাল ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কা। বলতে গেলে ফাইনাল নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের যে উচ্ছ্বাস ছিল তা অনেকটাই কমে গেছে পাকিস্তান ফাইনালে না ওঠায়।
এশিয়া কাপের ৩৯ বছরের ইতিহাসে যা হয়নি তা এবার দেখতে চেয়েছিল পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। সেটি হলো ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল। এক ম্যাচ হাতে রেখে ভারত ফাইনাল নিশ্চিত করতে পারলেও অঘোষিত সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কার কাছে আবার ফাইনালে ওঠা হয়নি পাকিস্তানের, তবে ফাইনাল যে ফাইনালের মতোই হবে সেটা নিশ্চয়ই দেখতে পারবেন দর্শকরা। কেননা লড়াইটা হবে এশিয়া কাপের সর্বোচ্চ চ্যাম্পিয়ন ভারত ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কার মধ্যে।
এশিয়া কাপে সবসময় ফেভারিট হিসেবে খেলতে নামা ভারত এবারও শিরোপার অন্যতম দাবিদার। তাদের আছে বিশ্বমানের ব্যাটিং লাইন। আইসিসির সর্বশেষ হালনাগাদকৃত র্যাঙ্কিংয়ে সেরা দশে আছে ভারতের তিন ব্যাটার। দুই নম্বরে শুভমান গিল, আটে বিরাট কোহলি আর নয় নম্বরে রোহিত শর্মা। তাছাড়া দারুণ ছন্দে আছেন চোট থেকে ফেরা উইকেটরক্ষক ব্যাটার লোকেশ রাহুল। আছেন মারমুখী ব্যাটার ইশান কিশান। তাদের কেউ একজন দাঁড়াতে পারলে প্রতিপক্ষের জন্য তা হবে ভয়ংকর।
মিডল অর্ডারে আছেন অভিজ্ঞ দুই অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া ও রবীন্দ্র জাদেজা। তারা ব্যাট কিংবা বল হাতে জ্বলে উঠতে পারেন যেকোনো ম্যাচে। তাদের সঙ্গে বোলিং লাইন সামলাবেন জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ সিরাজ, কুলদ্বীপ যাদবের মতো বিশ্বমানের বোলার। তাই সবদিক দিয়েই ফাইনালে এগিয়ে থাকবে ভারত।
অন্যদিকে শ্রীলঙ্কাকেও কোনোভাবে পিছিয়ে রাখা যাবে না। কেননা গত আসরের চ্যাম্পিয়ন তারা। এ ফরম্যাটে সর্বশেষ ১৩ ম্যাচের একটিতে হেরেছে তারা। গত আসরের প্রথম ম্যাচ হারলেও বাকি ম্যাচগুলোতে জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা। এবারের এশিয়া কাপে তাদের একমাত্র হার সুপার ফোরে ভারতের বিপক্ষে। তাই তারা চাইবে ফাইনালে এই হারের প্রতিশোধ নিতে।
লঙ্কানদের ব্যাটিং লাইনকেও খুব একটা মন্দ বলা যায় না। তাদের আছে কুশল মেন্ডিস, পাথুম নিশাঙ্কা, সাদিরা সামারবিক্রমা, চারিথ আশালাঙ্কার মতো টপ অর্ডার। মিডল অর্ডারে অধিনায়ক দাসুন শানাকা, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা কিংবা দুনিথ ওয়েলালাগের মতো অলরাউন্ডার। তারাও যেকোনো ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম।
শ্রীলঙ্কার বোলিং লাইন সব সময়ই প্রতিপক্ষের জন্য ভয়ংকর, তবে চোটের কারণে এবার নেই অভিজ্ঞ ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাসহ আরও দুই পেসার। তাদের অবর্তমানে মহেশ থিকশিনা, মাথিশা পাথিরানা, প্রোমদ মাদুশানরা যেভাবে লঙ্কানদের এগিয়ে নিয়েছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তাই ভারতের বিপক্ষে তারাও যেকোনো অঘটন ঘটিয়ে দিতে পারে।
পরিসংখ্যানও সে কথাই বলে। এ পর্যন্ত এশিয়া কাপে ২২টি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে ভারত ও শ্রীলঙ্কা। যেখানে ভারতের ১১ জয়ের বিপরীতে শ্রীলঙ্কাও জিতেছে ১১টি ম্যাচে। অর্থাৎ এবারের আসরের ফাইনাল যারা জিতবে তারাই এগিয়ে যাবে।
তাই বলা যায়, এই ফাইনাল দর্শকদের আনন্দ বাড়িয়ে দেবে। দুই দলই চাইবে তাদের সেরা খেলাটা উপহার দিতে। এখন যারা বেশি ভালো খেলবে তারাই জিতবে।
লেখক: ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, দৈনিক বাংলা
আরও পড়ুন:কয়েকটি সাধারণ প্রশ্নের মধ্যে একটি ছিল যে তহবিলকে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে কি না। গত বছর পর্যন্ত অনুমোদিত তহবিলগুলো আয়কর রিটার্ন দাখিল থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত ছিল। যাই হোক, সাম্প্রতিক অনুমোদিত আয়কর আইন ২০২৩-এ এই বিষয়ে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে।
বিশেষত, আয়কর আইন ২০২৩-এর ধারা ১৬৬(২)-এ অনুমোদিত তহবিলসমূহকে পূর্বে বাধ্যতামূলক আয়কর রিটার্ন দাখিল থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। ফলে অনুমোদিত তহবিলসমূহের জন্য এখন আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক।
যেহেতু তহবিলসমূহকে রিটার্ন জমা দেয়া প্রয়োজন, তাই এখন প্রশ্ন আসে যে, কখন আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে। এটি নিশ্চিত করার জন্য আমাদের বুঝতে হবে আয়কর আইন ২০২৩-এর ধারা ২(২২) এ বর্ণিত সংজ্ঞা অনুসারে, তহবিলসমূহকে ‘করদাতা’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। আয়কর আইন ২০২৩-এর ধারা ২(৩১)(ঞ) অনুসারে, ‘কোম্পানি’-এর সংজ্ঞা থেকে তহবিলসমূহকে বাদ দেয়া হয়েছে। আরও উল্লেখ্য যে, ‘করদিবস’ আয়কর আইন ২০২৩ এর ধারা ২(২৩)-এ সংজ্ঞায়িত হয়েছে, যেখানে এটি উল্লেখ করা হয়েছে যে, কোম্পানি করদাতা ব্যতীত অন্য করদাতাদের ক্ষেত্রে কর দিবস হবে ৩০ নভেম্বর। অতএব ইহা বলা যেতে পারে যে, তহবিলসমূহকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
এটা মনে রাখা দরকার, আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে বিলম্ব হলে প্রতি মাসে ৪ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। এই আর্থিক প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল নিশ্চিত করার জন্য অবিলম্বে সক্রিয় পদক্ষেপ শুরু করার জন্য তহবিলসমূহকে পরামর্শ দেয় হয়েছে।
তহবিলসমূহের জন্য করের হার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ। প্রযোজ্য করের হার, ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ বা ৩০ শতাংশ, তা নগদ লেনদেনের সীমা মেনে চলার ওপর নির্ভর করে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, তহবিলসমূহ করপোরেট সংস্থা ও অন্যান্য উৎস হতে অর্থপ্রাপ্ত হয়ে থাকে এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে লেনদেন পরিচালনা করে থাকে।
এই পরিচালনা কাঠামোর পরিপ্রেক্ষিতে এটা প্রত্যাশা করা যায় যে, তহবিলসমূহের সিকিউরিটিজ বা বিকল্প কোনো উৎস হতে প্রাপ্ত আয়ের ওপর সম্ভাব্য করপোরেট করের হার হবে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ। অনুগ্রহ করে মনে রাখবেন যে, সঞ্চয়পত্রের সুদ থেকে উৎসে কর্তিত কর (টিডিএস) তহবিলসমূহের জন্য একটি ন্যূনতম কর দায়, চূড়ান্ত কর দায় নয়। এর মানে হলো, তহবিলসমূহকে এখন উক্ত আয়ের ওপর অতিরিক্ত কর দিতে হতে পারে, যা তার মোট কর দায়ের উপর নির্ভর করবে। যাই হোক, তহবিলসমূহ মূলধনী লাভের ওপর ১৫ শতাংস করের হার উপভোগ করতে পারবে।
যেহেতু এটা বলা যেতে পারে যে, তহবিলসমূহের আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে ও করের হার সম্ভবত ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ, এখন প্রশ্ন আসে, তাদের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী জমা দিতে হবে কি না।
আয়কর আইন ২০২৩-এর ধারা ৭৩ অনুসারে, কোনো তহবিলের টার্নওভার তিন কোটি টাকার বেশি হলে তহবিলকে অবশ্যই নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী দাখিল করতে হবে। এ ছাড়া শ্রম আইন অনুযায়ী, আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করা বাধ্যতামূলক। তাই স্বচ্ছতার স্বার্থে তহবিলসমূহ আয়কর রিটার্নের সঙ্গে নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী দাখিল করতে পারে।
এখন একটি প্রশ্ন উঠতে পারে যে, তাদের আয় বছরের সময়কাল কি হবে। আয়কর আইন ২০২৩-এর ধারা ২(১৫)-এ ‘আয়বর্ষ’-এর সংজ্ঞা অনুসারে, এটি হবে জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত।
নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে এনবিআর থেকে অনুমোদন নিয়ে কোম্পানি বা তার প্রতিনিধি বা লিয়াজোঁ অফিস তাদের মূল কোম্পানির অর্থবছরের সঙ্গে মিলিয়ে জানুয়ারী থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আয়ের বছর বেছে নিতে পারে, বিশেষ করে বহুজাতিক করপোরেশন, ব্যাংক, বিমা কোম্পানিগুলোর ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সহযোগী কোম্পানিসমূহের ক্ষেত্রে ইহা প্রযোজ্য।
যাই হোক তহবিলসমূহের জন্য একটি স্বতন্ত্র আয় বছরের সময়কাল জুলাই-থেকে-জুন বাধ্যতামূলকভাবে মেনে চলার আন্ডারস্কোর করা জরুরি।
তহবিলসমূহের আর্থিক বিবরণী জানুয়ারী’২২ থেকে ডিসেম্বর’২২ পর্যন্ত হওয়ায় তহবিলসমূহ চলতি কর বছরে প্রথমবার আয়কর রিটার্ন দাখিল করার সময় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য দুটি বিকল্প পদ্ধতি বিবেচনা করা যেতে পারে:
(ক) প্রথম বিকল্পের মধ্যে রয়েছে, জুলাই থেকে জুন আয়বর্ষ নির্ধারণ করে জানুয়ারি ২০২৩ থেকে জুন ২০২৩ পর্যন্ত সময়কালের জন্য একটি আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করা।
(খ) দ্বিতীয় বিকল্পটি হলো জুলাই ২০২২ থেকে জুন ২০২৩ পর্যন্ত সময়কালের জন্য একটি আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করা।
আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য প্রথম বিকল্প (ক) নির্বাচন করার ক্ষেত্রে, ইহা মনে রাখতে হবে যে, এর ফলে কর কর্তৃপক্ষের পক্ষ হতে চ্যালেঞ্জের সম্ভাবনার সৃষ্টি হতে পারে, কারণ তহবিলসমূহের জন্য নির্ধারিত আয়বর্ষ ১২ মাস সময়কাল থাকা বাধ্যতামূলক। বিপরীতভাবে, দ্বিতীয় বিকল্পটি (খ) একটি নির্দিষ্ট স্তরের জটিলতা তৈরি করতে পারে।
যেহেতু আমাদের ২০২২-এর ১ জুলাই প্রারম্ভিক জের চিহ্নিত করতে হবে ও তারপরে আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করতে হবে। আবার যারা ২০২২ সালের (জানুয়ারি ২০২২ থেকে ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত) অডিট সম্পন্ন করেছে, তাদের অডিটরগণ ইতোমধ্যেই ডিভিসি (DVC) গ্রহণ করেছে। এখন যেহেতু বছরের অর্ধেক পুনরায় অডিট করতে হবে, তাদের অডিটরগণ কি ওই একই সময়ের জন্য আবার ডিভিসি নিতে পারবে? এ ক্ষেত্রে, ফাইন্যান্স অ্যাক্ট ২০১৬-এর মাধ্যমে আয়বর্ষের সংজ্ঞা যেভাবে স্পষ্ট করা হয়েছিল, আমরা ২০২৩ সালের পরিপত্রে তহবিলের আয়কর সংক্রান্ত বিষয়ে একইভাবে স্পষ্টীকরণ আশা করছি।
আরেকটি বিষয়ে লক্ষ্য রাখা উচিত যে, তহবিলসমূহের করযোগ্য আয় ৬ লাখ টাকার বেশি হলে ১৫ সেপ্টেম্বর, ১৫ ডিসেম্বর, ১৫ মার্চ, এবং ১৫ জুন তারিখে চারটি সমান কিস্তিতে তহবিলসমূহকে অগ্রিম আয়কর প্রদান করতে হবে। বাকি কর ৩০ নভেম্বর আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় প্রদান করতে হবে।
লেখক: পরিচালক, এসএমএসি অ্যাডভাইজারি সার্ভিসেস লিমিটেড
আরও পড়ুন:এশিয়ার বিশ্বকাপখ্যাত ‘এশিয়া কাপ’ প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। টুর্নামেন্ট ভারত সব সময়ই ফেভারিটের তকমাটা নিজের করে রেখেছে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। ইতোমধ্যেই টুর্নামেন্টের ফাইনালে গিয়ে বসে রয়েছে সাতবারের চ্যাম্পিয়নরা। অন্যদিকে সুপার ফোরে বাংলাদেশ দুটি ম্যাচই হেরে লড়াই থেকে ছিটকে গেছে সাকিব বাহিনী। ভারতের বিরুদ্ধে শুক্রবারের ম্যাচটি শুধুই নিয়মরক্ষার।
বাংলাদেশ বিদায় নিলেও তুলনামূলক খর্ব শক্তির দল নিয়ে আলোচনা কিংবা হিসাবের বাইরে থেকেও ফাইনালের দৌড়ে টিকে রয়েছে পাকিস্তানের সঙ্গে সহ-আয়োজক শ্রীলঙ্কা। মনে করে দেখুনতো, এশিয়া কাপ শুরুর আগে একবারের জন্যও কেউ কি ভেবেছিল শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে। উত্তরটাও সবার জানা। অবশ্যই না, কেননা শ্রীলঙ্কার এই দলটা যেভাবে টুর্নামেন্ট শুরু করেছে তাতে এমন ভাবাটাও দোষের কিছু নয়।
আপনার-আমার ভাবনা-চিন্তায় যা-ই থাকুক না কেন শ্রীলঙ্কা টিকে আছে। শুধু টিকে আছেই নয়, ফাইনালে ওঠার যথেষ্ট সম্ভাবনাও রয়েছে ছয়বারের চ্যাম্পিয়নদের। সে লক্ষ্যেই আজ লঙ্কায় হতে চলেছে লঙ্কা কাণ্ড। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে গত আসরের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আজ মাঠে নামছে পাক ফাইটাররা। শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তান ম্যাচটি অঘোষিত সেমিফাইনালে পরিণত হয়েছে। কেননা ম্যাচের বিজয়ী দল ফাইনালে উঠবে, তবে যদি বৃষ্টি বা অন্য কোনো কারণে ম্যাচ বাতিল হয়ে যায়, তাহলে অঙ্কটা কী দাঁড়াবে?
এই ম্যাচের জন্য কোনো রিজার্ভ ডে নেই। আজ কলম্বোতে আবার বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের ৭৩ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টির কারণে কোনো ফলাফল না হলে কী হবে তখন? সেক্ষেত্রে দুই দলের মধ্যে পয়েন্ট ভাগাভাগি হবে এবং সমান পয়েন্টই থাকবে পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার। তখন দেখা হবে নিট রানরেট আর সেটা হলে পাকিস্তানের কপাল পুড়বে। কারণ বাবর আজমদের (-১.৮৯২) চেয়ে ভালো নিট রান রেট (-০.২০০) রয়েছে শ্রীলঙ্কার। তাই তারা ফাইনালে উঠে যাবে। আসলে ভারতের কাছে ২২৮ রানের বিশাল ব্যবধানে হারের পর পাকিস্তানের নিট রানরেট কমে গেছে। যেটা বড় ধাক্কা হয়েছে বাবরদের জন্য। পাকিস্তান তাই চাইবে, যেকোনো পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার যেন পুরো খেলাটাই হয়। খেলা না হলে লাভবান হবে শ্রীলঙ্কা। তাই আজ পাকিস্তানের প্রতিপক্ষ শুধু শ্রীলঙ্কাই নয়, তার সঙ্গে বৃষ্টিও তাদের তৃতীয় এবং সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ।
যদিও ক্রিকেট বিশ্ব চাইবে ম্যাচটা পাকিস্তান জিতে আরও একবার পাক-ভারত যুদ্ধের দামামা বেজে উঠুক; কিন্তু আপনার-আমার চাওয়াতে কী আসে যায়। ভুলে গেলে চলবে না যে, গত আসরেও এই শ্রীলঙ্কা হিসাবের বাইরে থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কেননা এই আসর এলেই নিভু নিভু প্রদীপ শিখা থেকে দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে ভারত মহাসাগরের দ্বীপ দেশটি।
কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে ম্যাচটি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলতে নামার আগে ইনজুরি আক্রান্ত দুই পেসার হারিস রউফ ও নাসিম শাহকে নিয়ে চিন্তায় পাকিস্তান। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে রউফ কোমর এবং নাসিম ডান কাঁধের ইনজুরিতে পড়েন। তাদের ব্যাকআপ হিসেবে দলে ডাকা হয়েছে অনভিজ্ঞ দুই পেসার শাহনাওয়াজ দাহানি ও জামান খানকে। ফলে আসরের শুরুতে পাকিস্তান যে বিধ্বংসী পেস অ্যাটাক নিয়ে যাত্রা করেছিল সেই বর্শা খানিকটা হলেও ভোঁতা হয়েছে।
যদিও পাকিস্তান স্বয়ংসম্পূর্ণ দল। তাদের যেমন আছে ব্যাটিং লাইন, তেমনি আছে বিশ্বমানের বোলিং লাইনও। ব্যাটিংয়ের অন্যতম ভরসা বাবর আজম। তাকে সঙ্গ দেয়ার জন্য আছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। অন্যদিকে দুই ওপেনার ফাখার জামান ও ইমাম-উল-হক যদি শুরুটা ভালো করতে পারেন তাহলে রেজাল্ট তাদের পক্ষেও আসতে পারে।
এবার তাকাতে চাই দু’দলের পরিসংখ্যানের দিকে। পরিসংখ্যানে শ্রীলঙ্কার চেয়ে বেশ এগিয়ে পাকিস্তান। এখন পর্যন্ত ১৫৫ বার ৫০ ওভারের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে দু’দল। এতে এগিয়ে রয়েছে অবশ্য মেন ইন গ্রিনরাই। ১৫৫ ম্যাচের মধ্যে ৯২টিতে জয় পেয়েছে পাক ইউনিট। অন্যদিকে ৫৮ ম্যাচে জয় সাঙ্গাকারার উত্তরসূরিদের। লঙ্কানদের নিয়ে প্রতিটি লেখায় একটা কথা আমি সব সময়ই বলি আর সেটি হলো এশিয়ার বিশ্বকাপের মঞ্চটা বেশ পছন্দের শ্রীলঙ্কার। দেখুন না তাদের পাকিস্তানের বিপক্ষে এশিয়া কাপের পরিসংখ্যান। দু’দল এখন পর্যন্ত ১৭ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কা ১২টিতে জিতেছে আর হেরেছে মাত্র ৫টিতে! কি, চোখ কপালে উঠে গেল। ওঠারই কথা। ব্যবধানটা কিন্তু কম নয়।
গুরুত্বপূর্ণ এ লড়াইটাও আবার লঙ্কানদের ঘরের মাঠে। চেনা কন্ডিশনে এবং আপন মানুষজনের উপস্থিতিতে। তাই বাড়তি সুবিধাও পাবে নিঃসন্দেহে। কলম্বোর গত কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে পিচ কন্ডিশন নিয়ে দু-চার কথা না বললেই নয়। যেহেতু টানা বৃষ্টির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে স্বাভাবিকভাবে আউটফিল্ড স্লো থাকবেই। আর এই পিচে ভারত-শ্রীলঙ্কার ম্যাচের মতো স্পিনাররাই থাকবেন চালকের আসনে। যদিও কলম্বোর পিচ আগে থেকেই স্পিন স্বর্গ, তবে বৃষ্টি সেটিকে আরও প্রকট করেছে। এই দিক থেকে দু’দলই সমানে সমানে। পাকিস্তান যখন পেসারদের ইনজুরি নিয়ে মাথায় হাত দিয়েছিল তখন এমন খবর তাদের জন্য স্বস্তিরই বটে। অন্যদিকে ভারতের বিপক্ষে লঙ্কার স্পিনাররা যেভাবে ম্যাচে ছড়ি ঘুরিয়েছে তাতে লড়াই জমে উঠবে বলার অপেক্ষায় রাখে না। তাই আজ হয়তো দু’দল বাড়তি স্পিনার নিয়েই মাঠে নামবে। এ ছাড়া মাঠে রান তাড়া করে জেতাটা কঠিন হবে, যা এবারের এশিয়া কাপে শতভাগ প্রমাণিত। বাংলাদেশ বলেন কিংবা পাকিস্তান অথবা শ্রীলঙ্কা- নিজেই ছোট লক্ষ্যও তাড়া করে জিততে পারেনি। তাই লক্ষ্য থাকবে টসের ওপরও। টস জেতাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এর ওপর নির্ভর করছে ম্যাচের পরিণতি।
গত এশিয়া কাপ শ্রীলঙ্কা যেখান থেকে শেষ করেছে। এবার যেন ঠিক সে জায়গা থেকেই শুরু করেছে। শিরোপার লক্ষ্যে বেশ ভালোভাবে এগোচ্ছে দলটি। দ্বিতীয় সারির এই বোলিং অ্যাটাক নিয়ে টুর্নামেন্টে অনেকটা পথ অতিক্রম করেছে তারা। এখন দেখার পালা, গতবারের প্রতিশোধ নিয়ে পাকিস্তান ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হতে পারে কি না?
লেখক: ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, দৈনিক বাংলা
আরও পড়ুন:
মন্তব্য