স্বপ্নের শহর হবে হবিগঞ্জ পৌরসভা, এমন প্রত্যাশা ছিল বাসিন্দাদের। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ তো দূরের থাক, পৌরবাসীকে বাঁচতে হচ্ছে হাই-হুতাশ করে।
পৌরসভার চেয়ার বদল হয়েছে অনেকবার। কিন্তু বদলায়নি পৌরবাসীর ভাগ্য। নানা সমস্যার সঙ্গে লড়াই করে বসবাস করতে হচ্ছে প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভার বাসিন্দাদের।
২৮ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জ সদর পৌরসভায় ভোট সামনে রেখে ভোটাররা জানিয়েছেন তাদের চাওয়াপাওয়ার কথা।
বছর বছর কর বাড়লেও, বাড়েনি সুযোগসুবিধা। অপ্রশস্ত রাস্তাঘাট, যানজট, অকেজো ড্রেনেজ ব্যবস্থা, যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনার স্তূপ, অল্প বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতাসহ নানা সমস্যা নিয়েই বাস করতে হচ্ছে পৌরবাসীকে।
১৮৮১ সালে ৯.৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে হবিগঞ্জ পৌরসভা গঠিত হয়। পরে ১৯৯০ সালে হবিগঞ্জ পৌরসভাকে প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত করা হয়। এ পৌরসভার জনসংখ্যা প্রায় ৯৫ হাজার।
যানজটে নাকাল পৌরবাসী
হবিগঞ্জ পৌরসভার সবচেয়ে বড় সমস্যা যানজট। এই পৌরসভার সড়কগুলো সরু হওয়ায় দিনের পর দিন যানজট লেগেই থাকে। হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার সামনে থেকে চৌধুরী বাজার পর্যন্ত মাত্র দেড় কিলোমিটারের রাস্তা। অথচ এই সড়কে প্রতিদিন চলাচল করে পাঁচ হাজারেরও বেশি টমটম ইজিবাইক। সেই সঙ্গে কয়েক হাজার রিকশা।
নগর পরিকল্পনাবিদরা মনে করেন, ছোট শহর হবিগঞ্জে ১ হাজার ২০০ টমটম-ইজিবাইকের বেশি চলাচল করা সম্ভব নয়। অথচ পাঁচ হাজারের বেশি টমটম-ইজিবাইকের অনুমোদন দিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে নতুন করে আরও শতাধিক টমটম-ইজিবাইকের অনুমোদন দিয়েছে পৌরসভা। এ কারণে যানজটের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষকেই দুষছেন তারা।
হবিগঞ্জ পৌরসভার শ্যামলী এলাকার বাসিন্দা পল্লব চৌধুরী বলেন, ‘শহরের যানজটের অবস্থা কী বলব। প্রতিবছর ট্যাক্স বেড়ে দ্বিগুণ হয়। বাড়ি বানাতে ট্যাক্স লাগে, গাছ কাটতে ট্যাক্স লাগে। কিন্তু এত টাকা ট্যাক্স দিয়েও আমাদের সুযোগসুবিধা বৃদ্ধি পায়নি। যানজটের কারণে শহরে বের হওয়া যায় না।’
মামুনুর রহমান নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘হবিগঞ্জ ছোট্ট একটা শহর। অথচ এই শহরে প্রতিদিন যত টমটম চলে তার জন্য এই যানজট। তার জন্য কে দায়ী? অবশ্যই পৌর কর্তৃপক্ষ। তারা অনুমোদন না দিলে এগুলো চলাচল করতে পারত না।’
অকেজো ড্রেনেজ ব্যবস্থা
হবিগঞ্জ শহরে ৫৩.৬ কিলোমিটার ড্রেন রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ ড্রেনের অবস্থাই নাজুক। হবিগঞ্জ শহরের প্রধান দুটি সড়কের দুই পাশের ড্রেনগুলোর অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ। কোথাও ড্রেন ভেঙে গেছে, কোথাও ভরাট হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে ড্রেনগুলো সংস্কার ও পরিষ্কার না করার কারণে পানিনিষ্কাশন হয় না। যে কারণে অল্প বৃষ্টিতেই শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
অন্যদিকে, শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডের ছোট ছোট ড্রেনগুলো ময়লা-আবর্জনায় ভরে গেছে। এ ছাড়া পৌরসভার চিড়িয়াকান্দি, কর্মকার পট্টি ও ইনাতাবাদ এলাকায় বড় বড় ড্রেনগুলোর অবস্থাও একই রকম। ড্রেনগুলোতে ময়লা পানি জমে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
অকেজো ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে বৃষ্টি হলে পানিতে তলিয়ে যায় সার্কিট হাউস, জেলা প্রশাসকের বাসভবন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অফিসসহ গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরও। এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার বাসাবাড়িতেও পানি ঢুকে যায়।
স্থানীয়রা বলছেন, পৌর এলাকায় গত ১০ বছরে ৫০টির বেশি পুকুর, জলাশয় ও খাল ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে বাসাবাড়িসহ নানা স্থাপনা। ফলে বৃষ্টির পানি যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে কর্মকার পট্টির বাসিন্দা বিপ্লব রায় সুজন বলেন, ‘অনেক বছর ধরে ড্রেনগুলো ময়লা-আবর্জনায় ভরে আছে। আমরা কাউন্সিলরসহ মেয়রকে বারবার বললেও তারা ড্রেনগুলো পরিষ্কারের কোনো ব্যবস্থাই নেননি।’
চিড়াকান্দি এলাকার বাসিন্দা এলাকার সৈয়দ ইব্রাহী বলেন, ‘মাত্র ১ ঘণ্টা সময় বৃষ্টি হলেই রাস্তাঘাট ডুবে যায়। এ সময় ড্রেনের যত ময়লা আবর্জনা রাস্তায় উঠে পড়ে। কোনো কোনো বাসা বাড়িতেও ময়লা পানি ঢুকে যায়। আমরা কতটা কষ্টে আছি, সেটা কেবল আমরাই জানি।’
গলার কাঁটা ময়লার স্তূপ
শহরের যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনার স্তূপ। পাশাপাশি শহরের ময়লা ফেলা হচ্ছে খোয়াই নদীর পার ও বাইপাস সড়কের দুই পাশে। কয়েক বছর আগে জমি কিনেও নানা জটিলতায় থমকে আছে পৌরসভার ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ।
ময়লার দুর্গন্ধে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে বাইপাস সড়কটি। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে জেলা আধুনিক স্টেডিয়াম, জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বৃন্দাবন সরকারি কলেজ, আদালত, আনসার ভিডিবি ক্যাম্পসহ বিভিন্ন এলাকায়। এতে ক্ষোভের অন্ত নেই স্থানীয় বাসিন্দাদের।
বাইপাস সড়কের দুই পাশে ময়লা ফেলা বন্ধ করতে কয়েকবার চিঠি দেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনকে। সেই সঙ্গে পরিবেশবাদীদের আন্দোলন তো আছেই। তাতেও কোনো ফল মিলছে না।
এ ব্যাপারে জেলা বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘পৌরসভার বিভিন্ন স্থানের হাজার হাজার টন ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে শহরের বাইপাস সড়কে। রাস্তার দুই পাশের সরকারি খালও পৌরসভার ময়লা ফেলে ভরাট করে ফেলা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ময়লার দুর্গন্ধে নান সমস্যায় পড়তে হচ্ছে স্থানীয়দের। মাঝেমধ্যে এই ময়লা স্তূপে পৌরসভার কর্মীরা আগুন ধরিয়ে দিচ্ছেন। এতে গ্যাসের সৃষ্টি হয়ে এলাকার পরিবেশ আরও বিষাক্ত করে তুলছে।’
লেখক তাহমিনা বেগম গিনি বলেন, ‘হবিগঞ্জ একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। অথচ এ পৌরসভার নাগরিকদের সমস্যার শেষ নেই। বিভিন্ন সমস্যার সঙ্গে প্রতিদিন লড়তে হয় পৌরসভার বাসিন্দাদের। অথচ সমস্যাগুলো সমাধানে পৌর কর্তৃপক্ষের কোনো মাথা ব্যথাই দেখা যায় না।’
এ ব্যাপারে মেয়র মিজানুর রহমান মিজান বলেন, ‘উপনির্বাচনের পাস করার পর আমি মাত্র ১৮ মাস সময় পেয়েছি। কিন্তু এই সময়েও হবিগঞ্জ পৌরসভার ২১ কোটি টাকার কাজ সম্পন্ন করেছি।
‘শহরের জলাবদ্ধতা অনেকটা কমিয়ে এনেছি। যানজট নিরসনে রাস্তা প্রশস্তে কাজ ও ড্রেন নির্মাণ চলমান রয়েছে। আশা করি এবার নির্বাচনে জয়ী হলে দ্রুত একটি আধুনিক পৌরসভা উপহার দিতে পারব।’
আরও পড়ুন:প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং কোনো দাবির কারণে ভোট পিছিয়ে দেওয়া হবে না।
ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ড. কমফোর্ট ইরোর নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৃহস্পতিবার আলোচনায় অধ্যাপক ইউনূস এ কথা বলেন।
তিনি জানান, সরকার নির্বাচনের জন্য দুটি সম্ভাব্য সময়সীমা নির্ধারণ করেছে এবং নির্ধারিত তারিখ পরিবর্তন করা হবে না।
ভোটের তারিখের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যদি রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের আগে সীমিতসংখ্যক সংস্কার চায়, তাহলে নির্বাচন এ বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। আর যদি বৃহত্তর সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের কোনো কারণ নেই। আসন্ন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।
দেশে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও যথাযথ প্রস্তুতি নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বুধবার এক বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন তিনি।
এর আগে গত ১৭ মার্চ প্রধান উপদেষ্টা মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন ও কী ধরনের সুবিধাগুলো পেয়ে থাকেন, তা নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।
আজকের বৈঠকে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের উত্থাপিত বিষয়গুলোর সমাধান খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তাদের, বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অবস্থার উন্নয়নে তাৎক্ষণিক বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন ড. ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার আজকের মূল নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে পুলিশে প্রচলিত ঝুঁকি ভাতার সিলিং তুলে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা, পুলিশের জন্য নতুন ৩৬৪টি পিকআপ ও ১৪০টি প্রিজনার ভ্যান কেনার উদ্যোগ নেওয়া, পুলিশের চলমান নির্মাণ প্রকল্পের ৭০ শতাংশের নিচে সম্পাদিত হওয়া প্রকল্পগুলোতে অর্থ ছাড় করা, ভাড়াকৃত ভবনে অবস্থিত ৬৫টি থানার জমি অধিগ্রহণের জন্য অর্থ ছাড় করা এবং পুলিশের এসআই ও এএসআই পদবির কর্মকর্তাদের মোটরসাইকেল কেনার জন্য সুদমুক্ত ঋণের বিষয়টি বিবেচনা করা।
কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে জেলা পুলিশকে শ্রেণিবদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন প্রধান উপদেষ্টা। এ ছাড়াও তিনি নিম্ন কর্মদক্ষতার ইউনিটগুলোর কর্মক্ষমতা উন্নত করার লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চালানোর ওপরও জোর দেন।
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। এ সময়ের মধ্যে নির্বাচনের সময়সূচি নির্ভর করবে সরকার গৃহীত প্রয়োজনীয় সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের ওপর, যা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য বলে মনে করা হচ্ছে।
তিনি সম্প্রতি বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘যদি সংস্কার কার্যক্রম আমাদের প্রত্যাশিত দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করা যায়, তাহলে ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার প্রক্রিয়া প্রয়োজন হয়, তাহলে আমাদের আরও কয়েক মাস লাগতে পারে।’
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর যখন তাকে দায়িত্ব নিতে বলা হয়, তখন তিনি ‘হতচকিত’ বোধ করেন।
বিবিসিকে ড. ইউনূস বলেন,‘আমি কখনও ভাবিনি যে আমি সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেব। আমি আগে কখনও প্রশাসনিক দায়িত্বে ছিলাম না। তাই সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য আমাকে উপায়গুলো খুঁজে নিতে হয়েছে।
‘যখন বিষয়টি ঠিক হলো, তখন আমরা সংগঠিতভাবে কাজ শুরু করলাম।’
শান্তিতে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আমার কাছে দেশের জন্য আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার এবং অর্থনীতি পুনর্গঠন মূল অগ্রাধিকার ছিল।’
বিবিসির আজকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ এ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়, যা অধ্যাপক ইউনূস এ বছরের শেষের দিকে আয়োজনের আশা করছেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।
ঢাকার সরকারি বাসভবনে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইউনূস বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচনে অংশ নিতে চায় কি না। আমি তাদের জন্য এই সিদ্ধান্ত নিতে পারি না।’
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন,‘নির্বাচন কমিশন ঠিক করবে কারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে।’
তিনি বলেন, ‘শান্তি ও শৃঙ্খলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পাশাপাশি অর্থনীতি। এটি একটি বিচূর্ণ অর্থনীতি, একটি বিপর্যস্ত অর্থনীতি।
‘এমন মনে হচ্ছে যেন গত ১৬ বছর ধরে কোনো ভয়ংকর টর্নেডো চলছে আর আমরা এখন সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে টুকরোগুলো তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছি।’
আরও পড়ুন:জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ মত তুলে ধরেন তিনি।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘সারা দেশে জনপ্রতিনিধি না থাকায় জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) অতিরিক্ত সময় দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এমনকি অতিরিক্ত চাপ থেকে মুক্তি পেতে তারাও দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চান।’
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা খুব পরিষ্কারভাবে বলেছি, জাতীয় নির্বাচন আগে হতে হবে, তারপর স্থানীয় সরকার নির্বাচন।’
অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন জনগণের দাবি উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, তারাও এ মতের পক্ষে।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশে একটি বিশেষ পরিস্থিতি যাচ্ছে। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন সংস্থায় জনপ্রতিনিধিরা নেই। তাদের দায়িত্বগুলো বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকরা পালন করছেন।
‘সেই জায়গা থেকে তাদের যে সমস্যাগুলো তৈরি হচ্ছে, আজকের ডিসি সম্মেলনে আমরা সেগুলো শুনেছি এবং এগুলো অ্যাড্রেস করেছি।’
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের সম্ভাবনা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিভাগীয় কমিশনারদের প্রত্যেকেই মূল দায়িত্বের বাইরে কিছু না কিছু অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। জেলা প্রশাসকদের অতিরিক্ত সময়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। সমস্যাটা হলো একজন অফিসার যখন নিজ দায়িত্বের বাইরে আরও দুই-তিনটা দায়িত্ব পালন করেন, তার পক্ষে কোনোটাই যথাযথভাবে পালন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না, যে কারণে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, জাতীয় নির্বাচনের আগেই স্থানীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বে নিয়ে আসা উচিত।’
অন্তর্বর্তী সরকারের এ উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সর্বশেষ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মিটিংয়েও স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনা এখনও চলমান আছে। চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত এখনও সরকার নেয়নি।
‘আশা করছি খুব দ্রুতই কোনো একটা সিদ্ধান্ত আসবে। হয় আমরা দ্রুতই জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করব, অন্যথায় প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের সমস্যাগুলো সমাধান করা হবে।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের নাগরিকরা যেন কোনো বাধা বা হুমকি ছাড়াই অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন, সেই প্রক্রিয়া তৈরি করার ওপর জোর দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস শোয়াবের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ অভিমত দেন।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ডব্লিউইএফের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে ক্লাউস শোয়াব ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘গত বছর জুলাই মাসে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে বৈষম্য নিরসনের দাবি নিয়ে রাজপথে নেমেছিল।’
তিনি উল্লেখ করেন, আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীরা ঢাকার দেয়ালগুলোতে গ্রাফিতি এঁকে তাদের আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন প্রকাশ করেছে।
ড. ইউনূস বলেন, গত ১৬ বছরে বাংলাদেশে যারা নতুন ভোটার হয়েছেন, তাদের ভোট দেওয়ার সুযোগই হয়নি, যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার এজেন্ডা তুলে ধরে ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ৮৪ বছর বয়সী এ অর্থনীতিবিদ বলেন, দেশের মানুষ কোন ধরনের নির্বাচন চায়, সেটি না জেনে সরকার নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে না।
তিনি বলেন, সরকার নির্বাচন আয়োজনের অপেক্ষায় রয়েছে, তবে এখন দেশের জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রক্রিয়াটি কেমন হবে। তারা কী ছোট পরিসরের সংস্কার কর্মসূচিতে যাবে, নাকি দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার চাইবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি মানুষ দ্রুত সংস্কার চায়, তাহলে আমরা এ বছরের শেষ নাগাদ নির্বাচন করার লক্ষ্য নিয়েছি। আর যদি বলে, না আমাদের দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার দরকার, তাহলে আমাদের আরও ছয় মাস সময় লাগবে।’
বর্তমান প্রজন্মকে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রজন্ম আখ্যায়িত করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এ প্রজন্মের অমিত সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তি বর্তমান প্রজন্মকে বদলে দেওয়ার কারণে তারা এখন শুধু বাংলাদেশি আর তরুণ নয়, বরং সারা বিশ্বের তরুণ প্রজন্মের অংশ হয়ে গেছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, এ প্রজন্ম পুরোনো বাংলাদেশে ফিরে যেতে চায় না। তাই একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তরুণদের কাজের প্রতিটি অংশে ঐকমত্য গড়ে তোলার জন্য একটি ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হচ্ছে। সব রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের সংগঠনের ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘জুলাই সনদ’ প্রস্তুত করা হবে।
আরও পড়ুন:নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, কাউকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে নয়, নির্বাচন ব্যবস্থাকে দুর্নীতিমুক্ত করতেই সংস্কার কমিশন সুপারিশ করেছে।
কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে দুর্নীতি অনেকাংশে কমে যাবে বলে প্রকাশ করেন তিনি।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে মঙ্গলবার নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে দেওয়া প্রস্তাব ও তা বাস্তবায়নে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের করণীয় নিয়ে এ বিটের সাংবাদিকদের সংগঠনের (আরএফইডি) সদস্যদের সঙ্গে আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা ক্ষুণ্ন করা হয়নি; বরং এ সংস্থার ক্ষমতায়নে বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন।’
ফেরারি আসামি, বিচারিক আদালতে দোষী হলেই অযোগ্য, গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত বা অর্থ পাচারকারীরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
বিষয়টি বিতর্কিত কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম বলেন, ‘হত্যাকারীরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। এটা জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।’
নির্বাচন কমিশনকে জবাবদিহিতায় আনতে গিয়ে তাদের ক্ষমতা খর্ব হবে না বলেও মত দেন তিনি।
এদিকে আরেক অনুষ্ঠানে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এএসএম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের বায়োমেট্রিক প্রক্রিয়ায় ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেড় সপ্তাহের মধ্যে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র। চোখ এবং আঙুলে ক্ষতিগ্রস্তদের ইসির নির্দেশনায় দেওয়া হবে এনআইডি। নতুন ভোটার ছাড়াও স্মার্ট কার্ড এবং ভুল সংশোধনের সুযোগও পাবেন আহতরা।
‘এ ছাড়াও সারা দেশের সব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আন্দোলনে আহত এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা পাবেন এ সেবা।’
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তীকালীন সরকারঘোষিত সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাছির উদ্দিন।
রাজধানীর আগারগাঁয়ের নির্বাচন ভবনে রবিবার এক অনুষ্ঠানে সিইসি এ কথা জানান।
গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তবে কম সংস্কার হলে নির্বাচন ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে হতে পারে।
নির্বাচন ভবনের অনুষ্ঠানে সরকারঘোষিত সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন কমিশন কাজ করছে কি না জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি মাথায় রেখেই কাজ করছি।’
ওই সময় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বলেন, ভোটার তালিকা নিয়ে সব সন্দেহ দূর করতে নির্বাচন কমিশন কাজ করছে।
তিনি বলেন, ‘সংশয় দূর করার জন্য আমরা এটা (ভোটার তালিকা হালনাগাদ) করছি। আমরা মাঠে অনেক মানুষকে সম্পৃক্ত করছি।’
সারা দেশে সোমবার থেকে শুরু হতে যাওয়া ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য কিছু উপকরণ সহায়তা দেয় জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)।
ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফেন লিলার ১৭৫টি ল্যাপটপ, ২০০টি স্ক্যানার ও ৪ হাজার ৩০০ ব্যাগ সিইসির কাছে হস্তান্তর করেন।
নাছির উদ্দিন জানান, তারা ছয় মাসের মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শেষ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন এবং প্রায় ৬৫ হাজার মানুষ বিশাল এ কর্মসূচিতে কাজ করবেন।
তিনি বলেন, ‘এই ছয় মাসের মধ্যে কাজটি শেষ করার জন্য আমাদের প্রাণান্তকর চেষ্টা করতে হবে।’
চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে বিএনপির জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি জানান, তারা রাজনৈতিক বক্তব্য (বিতর্ক) করেন না এবং আইন ও বিধিবিধানের মধ্যে থাকবেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে চাই।’
ইউএনডিপির সহায়তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, তারা আমাদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য