কোথাও ভোটার উপস্থিতি, কোথাও বর্জন, কোথাও সংঘাত, কোথাও জাল ভোটের মধ্য দিয়ে তৃতীয় ধাপের পৌর নির্বাচনেও প্রথম দুই ধাপের মতোই বড় জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
শনিবারে ভোটে ৬২ পৌরসভার মধ্যে বিএনপি জিতেছে কেবল তিনটিতে। ১৪টিতে জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যাদের ১০ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে ভোটের লড়াইয়ে ছিলেন। বাকি ৪৫টিতেই জিতেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।
যেখানে আওয়ামী লীগ জিতেছে, তার বেশিরভাগে ভোটের ব্যবধান দেখা গেছে অনেক বেশি। এর মধ্যে ফেনী পৌরসভায় জয়ের ব্যবধান হয়েছে সবচেয়ে বেশি। বিএনপির তুলনায় ৬৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন দল। এর মধ্যে নয়টি কেন্দ্রে ঘটেছে অস্বাভাবিক ঘটনা। বিএনপির পক্ষে কোনো ভোটই পড়েনি সেখানে।
কারচুপির অভিযোগ এনে বিএনপির প্রার্থীরা মোট নয়টি পৌরসভায় ভোট বর্জন করেন দিনের নানা সময়।
এর আগে ২৮ ডিসেম্বর ও ১৬ জানুয়ারি প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপেও আওয়ামী লীগ বড় জয় পেয়েছিল। তবে এবারের মতো এত বেশি স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হননি।
শনিবার ভোট হওয়ার কথা ছিল ৬৪ পৌরসভায়। এর মধ্যে একটিতে সব প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় এবং একটিতে মেয়র প্রার্থী মারা যাওয়ায় ভোট হয়েছে ৬২ টিতে।
সকাল আটটায় ভোট শুরুর পর বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারের লাইন দেখা গেলেও কোথাও কোথাও ফাঁকাও দেখা গেছে। তবে কুয়াশা কেটে গেলে আবার ভোটার ফিরেছে বহু এলাকায়।
প্রথম ধাপের ২৪ পৌরসভায় সবগুলোতে এবং দ্বিতীয় ধাপের ৬০ পৌরসভায় অর্ধেক কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোট হলেও এবার সবগুলোতে ভোট নেয়া হয়েছে ব্যালট পেপারে। বিতর্ক এড়াতে দ্বিতীয় ধাপের মতো এবারও কেন্দ্রে ব্যালট পাঠানো হয়েছে সকালে।
কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুরে।
জাল ভোট দেয়ায় টাঙ্গাইলের ভুঞাপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে এক যুবলীগ কর্মীকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
কোথায় কে জিতল?
রংপুর বিভাগ
দিনাজপুরের হাকিমপুর পৌরসভায় টানা দ্বিতীয় জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের জামিল হোসেন চলন্ত। তিনি পেয়েছেন ১০ হাজার ৯৯২ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সাখাওয়াত হোসেন শিল্পী পেয়েছেন চার হাজার ৯৩৭ ভোট।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে নির্বাচন করে জয় পেয়েছেন মুকিতুর রহমান রাফি। তিনি ভোট পেয়েছেন ১১ হাজার ১৪৯। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ফারুক আহমেদ পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৪৯৪ ভোট। আওয়ামী লীগের খন্দকার জাহাঙ্গীর আলম পেয়েছেন ৫ হাজার ৩৯ ভোট।
কুড়িগ্রাম উলিপুরে টানা তৃতীয় জয় পেয়েছেন নৌকার প্রার্থী মামুন সরকার মিঠু। ভোট পেয়েছেন ১৫ হাজার ৫৬৭। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির হায়দার আলী মিঞা পেয়েছেন ৭ হাজার ৪১৩ ভোট।
নীলফামারীর জলঢাকায় জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ইলিয়াছ হোসেন বাবলু। পেয়েছেন ১৪ হাজার ৭৯৮ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ফাহমিদ ফয়সাল চৌধুরী কমেট পান ১০ হাজার ৬০৮ ভোট।
রাজশাহী বিভাগ
রাজশাহীর মুন্ডুমালায় স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইদুর রহমান জিতেছেন পাঁচ হাজার ৪৫৯ ভোট পেয়ে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের আমির হোসেন আমিন পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৩৯৮ ভোট।
কেশরহাট পৌরসভায় দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের শহিদুজ্জামান শহিদ। ভোট পেয়েছেন ১০ হাজার ৯১৪টি। নিকটতম বিএনপির খুশবর রহমানের ধানের শীষে পড়েছে এক হাজার ৩২৫ ভোট।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরে জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মতিউর রহমান খান। ভোট পেয়েছেন সাত হাজার ৬২৭। নিটকতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের গোলাম রাব্বানী বিশ্বাস পেয়েছেন সাত হাজার ৬২ ভোট।
নওগাঁ পৌরসভায় টানা তৃতীয় জয় পেয়েছেন বিএনপি নেতা নজমুল হক সনি। তার ধানের শীষে ভোট পড়ে ২৯ হাজার ২৬৯ টি। প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের নির্মল কৃষ্ণ সাহার নৌকায় ভোট পড়েছে ২৪ হাজার ৯৪৪টি।
একই জেলার ধামইরহাটে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র পদে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের আমিনুর রহমান।
তিনি ভোট পেয়েছেন সাত হাজার ৯৮৩। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মাহবুবুর রহমান চৌধুরী চপল পেয়েছেন তিন হাজার ৪৯ ভোট।
নাটোরের সিংড়ায় টানা দ্বিতীয় জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের জান্নাতুল ফেরদৌস। তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪২১ ভোট। নিকটতম প্রতিন্দ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী তায়জুল ইসলাম পেয়েছেন এক হাজার ৩১২ ভোট।
পাবনা পৌরসভায় নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ১২২ ভোটে হারিয়েছেন একই দল থেকে বিদ্রোহী হয়ে লড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ উদ্দিন প্রধান।
শরীফ উদ্দিন প্রধান পেয়েছেন ২৭ হাজার ৯৬৯ ভোট। আওয়ামী লীগের আলী মুর্তজা বিশ্বাস সনি পেয়েছেন ২৭ হাজার ৮৪৭ ভোট।
বগুড়ার শিবগঞ্জে টানা দ্বিতীয় জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। ১২ হাজার ৩৯৮ ভোট পেয়ে জিতেছেন তৌহিদুর রহমান মানিক। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মতিয়ার রহমান মানিক পেয়েছেন ২ হাজার ৩৬৬ ভোট।
কাহালু পৌরসভায় জিতেছেন বিএনপির আব্দুল মান্নান। ভোট পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৩২১টি। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের হেলাল উদ্দিন কবিরাজ পেয়েছেন চার হাজার ২৯০ ভোট।
ধুনটে জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এজিএম বাদশাহ। তিনি তৃতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন তিন হাজার ৯০২ ভোট পেয়ে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের টিআইএম নুরুন্নবী তারিক পেয়েছেন দুই হাজার ৯৩২ ভোট।
গাবতলী পৌরসভায় মেয়র হয়েছেন বিএনপির সাইফুল ইসলাম। পেয়েছেন ছয় হাজার ৯৫৯ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের মোমিনুল হক শিলু পেয়েছেন পাঁচ হাজার ১১৬ ভোট।
নন্দীগ্রাম পৌরসভার জিতেছেন আওয়ামী লীগের আনিছুর রহমান। ভোট পেয়েছেন সাত হাজার ৬৬৯। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সুশান্ত কুমার সরকার শান্ত পেয়েছেন পাঁচ হাজার ১৮৮ ভোট।
খুলনা বিভাগ
খুলনার পাইকগাছায় টানা তৃতীয় জয়ে হ্যাট্ট্রিক করেছেন আওয়ামী লীগের সেলিম জাহাঙ্গীর। ভোট পেয়েছেন আট হাজার ৩৬৫টি। দ্বিতীয় হয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবির নেতা প্রশান্ত কুমার মণ্ডল। ভোট পেয়েছেন এক হাজার ৬২৩টি।
চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় টানা তৃতীয়বার মেয়র হয়েছেন আওয়ামী লীগের মতিয়ার রহমান। তিনি ভোট পেয়েছেন ১৭ হাজার ৭৪২। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির হাবিবুর রহমান পেয়েছেন এক হাজার ৯১ ভোট।
যশোরের মণিরামপুরে টানা দ্বিতীয় জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের কাজী মাহামুদুল হাসান। ভোট পেয়েছেন ১৪ হাজার ১৯৬ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শহীদ ইকবাল হোসেন পেয়েছেন এক হাজার ৭০০ ভোট।
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থী সহিদুজ্জামান সেলিম জিতেছেন আট হাজার ৩৪২ ভোট পেয়ে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির এস কে এম সালাহউদ্দীন বুলবুল সিডল পেয়েছেন সাত হাজার ১২৮ ভোট।
একই জেলার হরিণাকুন্ডুতে জয় পেয়েছে নৌকা। সাত হাজার ৩৪৭ ভোট পেয়ে জিতেছেন আওয়ামী লীগের ফারুক হোসেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম টিপু পেয়েছেন চার হাজার ৯১৩ ভোট।
নড়াইল পৌরসভায় প্রথম এক নারী মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের হয়ে জিতেছেন আনজুমান আরা। পেয়েছেন ১৯ হাজার ২৬ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির জুলফিকার আলী পেয়েছেন তিন হাজার ৬২৬ ভোট।
একই জেলার কালিয়া পৌরসভায় আওয়ামী লীগের ওয়াহিদুজ্জামান হীরা ১২ হাজার ২১১ ভোট পেয়ে জিতেছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ওহিদুজ্জামান মিলু পেয়েছেন ৬২৬ ভোট।
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় আওয়ামী লীগের মনিরুজ্জামান বুলবুল ১৩ হাজার ৪৫৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। নিটকতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী নার্গিস সুলতানা পেয়েছেন মাত্র এক হাজার ৬৮৮ ভোট।
বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনিরুল হক তালুকদার।
বরিশাল বিভাগ
১৪ হাজার ৫৬৪ ভোট পেয়ে ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভায় বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল ওয়াহেদ খান। নিকটতম প্রার্থী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের শাহজালাল পেয়েছেন ৯২৪ ভোট।
বরিশালের গৌরনদী পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র তৃতীয়বারের মতো জিতেছেন আওয়ামী লীগের হারিছুর রহমান হারিছ। তিনি পেয়েছেন ২৩ হাজার ২৭২ ভোট। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী জহির সাজ্জাদ হান্নান পেয়েছেন ৬৭৯ ভোট।
একই জেলার মেহেন্দিগঞ্জে টানা দ্বিতীয়বারের মতো জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের কামাল উদ্দিন খান। তিনি পেয়েছেন ১০ হাজার ১৫১ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলনের জাহাঙ্গীর হোসেন খোকন পেয়েছেন দুই হাজার ৪৪১ ভোট।
বরগুনা পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী কামরুল আহসান মহারাজ জিতেছেন নয় হাজার ২৯৭ ভোট পেয়ে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন পেয়েছেন ছয় হাজার ৯০৩ ভোট।
একই জেলার আরেক পৌরসভা পাথরঘাটাতেও জিতেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। নৌকার প্রার্থী আনোয়ার হোসেন আকন পেয়েছেন ছয় হাজার ৬৭ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াত নেতা মাহবুবুর রহমান খান পেয়েছেন দুই হাজার ২৩২ ভোট।
ভোলার বোরহানউদ্দিন পৌরসভায় আওয়ামী লীগের রফিকুল ইসলাম ৭ হাজার ১৯৪ ভোট পেয়ে তৃতীয় বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।
নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মনিরুজ্জামান কবির পেয়েছেন ৬৬২ ভোট।
দৌলতখান পৌরসভায় আওয়ামী লীগের জাকির হোসেন তালুকদার পাঁচ হাজার ৮০০ ভোট পেয়ে তৃতীয় বারের মতো জিতেছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আনোয়ার হোসেন কাকন পেয়েছেন ৮৩০ ভোট।
পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে আওয়ামী লীগের গোলাম কবির টানা দ্বিতীয় বারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন তিন হাজার ৯৫২ ভোট পেয়ে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহমুদুর রহমান খান পেয়েছেন তিন হাজার ১৪৪ ভোট।
ময়মনসিংহ বিভাগ
শেরপুরের নকলায় দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের হাফিজুর রহমান লিটন ১২ হাজার ৬ ভোট পেয়ে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক মেয়র আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মিজানুর রহমান (নারিকেল গাছ) পেয়েছেন চার হাজার ১৫০ ভোট।
একই জেলার নালিতাবাড়ী পৌরসভায় ১২ হাজার ৯৫৬ ভোট পেয়ে মেয়র হয়েছেন আওয়ামী লীগের আবু বক্কর সিদ্দিক। বিএনপির আনোয়ার হোসেন পেয়েছেন দুই হাজার ৪১১ ভোট।
নেত্রকোণার দুর্গাপুরে আওয়ামী লীগের আলাল উদ্দিন আলাল জিতেছেন ১১ হাজার ১২৩ ভোট পেয়ে। বিএনপির জামাল উদ্দিন পেয়েছেন এক হাজার ৮৯৯ ভোট পেয়ে।
ময়মনসিংহে ভালুকা পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেজবাহ উদ্দিন কাইয়ুম জিতেছেন ১৩ হাজার ৭৯৪ ভোট পেয়ে। প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে হাতেম খান পেয়েছেন চার হাজার ১০৯ ভোট।
একই জেলার ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভায় জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার। ভোট পেয়েছেন নয় হাজার ৩৭। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান পেয়েছেন সাত হাজার ৯৬০ ভোট।
গৌরীপুর পৌরসভায় স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ রফিকুল ইসলাম নারকেল গাছ প্রতীক নিয়ে জিতেছেন সাত হাজার ৮৭৮ ভোট পেয়ে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের শফিকুল ইসলাম হবি পেয়েছেন সাত হাজার ২৬৬ ভোট।
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে জিতেছেন আওয়ামী লীগের মনিরউদ্দিন মনির। ভোট পেয়েছেন ২৭ হাজার ৪৯৯। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ফয়জুল কবির তালুকদার পেয়েছেন তিন হাজার ৪৭১ ভোট।
ঢাকা বিভাগ
মুন্সীগঞ্জ পৌরসভায় জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের ফয়সাল বিপ্লব। পেয়েছেন ২৭ হাজার ২৭৬ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শহীদুল ইসলাম পেয়েছেন দুই হাজার ৬০৪ ভোট।
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পৌরসভায় টানা দ্বিতীয় জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শওকত উসমান। ভোট পেয়েছেন ১৩ হাজার ৩৪৬। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির তোফাজ্জল হোসেন খাঁন পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৩৯৫ ভোট।
টাঙ্গাইলের পাঁচটি পৌরসভা নির্বাচনের সবগুলোতেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা বড় জয় পেয়েছেন।
টাঙ্গাইল পৌরসভায় এসএম সিরাজুল হক আলমগীরের নৌকায় ভোট পড়েছে ৬৬ হাজার ৬১৭ টি। প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী মাহমুদুল হক সানু পেয়েছেন ২২ হাজার ৯০০ ভোট।
সখীপুর পৌরসভা আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু হানিফ আজাদ টানা তৃতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন সাত হাজার ৮৩৩ ভোট পেয়ে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী সানোয়ার হোসেন সজিব পেয়েছেন সাত হাজার ৫৪৪ ভোট।
মির্জাপুরে নৌকা প্রতীকের সালমা আক্তার ১২ হাজার ৪৭৮ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি শফিকুল ইসলাম পেয়েছন দুই হাজার ৯২৪ ভোট।
ভূঞাপুরে টানা তৃতীয় জয়ে হ্যাটট্রিক করলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুদুল হক মাসুদ। তিনি নয় হাজার ৪১৩ ভোট পেয়ে জিতেছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির জাহাঙ্গীর হোসেন পেয়েছেন চার হাজার ৪১৩ ভোট।
মধুপুর পৌরসভায় মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন নৌকা নিয়ে লড়া সিদ্দিক হোসেন খান। পেয়েছেন ২৫ হাজার ৯৯২ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আব্দুল লতিফ পান্না পেয়েছেন এক হাজার ৬৫১ ভোট।
রাজবাড়ীর পাংশায় আওয়ামী লীগ ওয়াজেদ আলী মণ্ডল জিতেছেন ১১ হাজার ১৬১ ভোট পেয়ে। চার হাজার ২৪৩ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ফজলুল হক ফরহাদ।
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ পৌরসভার জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল বাশার চোকদার। পেয়েছেন তিন হাজার ৮৮৬ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান হাওলাদার পেয়েছেন দুই হাজার ৩৩৮ ভোট।
জাজিরায় জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ইদ্রিস মিয়া। পেয়েছেন ছয় হাজার ৬০৩ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের আব্দুল হক কবিরাজ পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৭৭৪ ভোট।
নড়িয়ায় জিতেছেন আওয়ামী লীগের আবুল কালাম আজাদ। পেয়েছেন ১২হাজার ৮৭৫ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সৈয়দ রিন্টু পেয়েছেন ৪৫৪ ভোট।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন আওয়ামী লীগের তোজাম্মেল হক টুটুল।
সিলেট বিভাগ
সিলেটের জকিগঞ্জে দুই ভোটের ব্যবধানে এখানে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল আহাদ। তিনি ভোট পেয়েছেন দুই হাজার ৮৩। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারুক আহমদ পেয়েছেন দুই হাজার ৮১ ভোট।
একই জেলার গোলাপগঞ্জে স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল ইসলাম রাবেল জিতেছেন পাঁচ হাজার ৮৫১ ভোট পেয়ে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকারিয়া আহমদ পাপুল পেয়েছেন চার হাজার ৫৫৮ ভোট।
মৌলভীবাজার পৌরসভায় টানা দ্বিতীয় জয় পাওয়া আওয়ামী লীগের ফজলুর রহমান পেয়েছেন ১৩ হাজার ৭০০ ভোট। ভোটের আগের দিন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো বিএনপি নেতা অলিউর রহমানের ধানের শীষে পড়ে তিন হাজার ৭৩২ ভোট।
চট্টগ্রাম বিভাগ
কুমিল্লার বরুড়ায় ১০ বছর পর বরুড়ায় হারল বিএনপি। টানা দুইবারের মেয়র জসিম উদ্দিন পাটোয়ারীকে হারিয়ে জিতেছেন আওয়ামী লীগের বক্তার হোসেন ওরফে বখতিয়ার। নৌকায় সেখানে ভোট পড়েছে ১৬ হাজার ২২৮টি। আর ধানের শীষে তিন হাজার ৭৫৩টি।
একই জেলার চৌদ্দগ্রামে ১৫ হাজার ৯২৮ ভোট পেয়ে জয় পেয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির হারুন অর রশীদ পেয়েছেন এক হাজার ৮৮০ ভোট।
নোয়াখালীর চৌমুহনীতে জয় পেলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী খালেদ সাইফুল্লাহ। মোবাইল প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ১৩ হাজার ৪১৭ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের আকতার হোসেন ফয়সাল পেয়েছেন ১০ হাজার ৯৩৮ ভোট।
নোয়াখালীর হাতিয়ায় আওয়ামী লীগের কে এম ওবায়দুল্লাহ বিল্পব জিতেছেন ১৬ হাজার ৯৯২ ভোট পেয়ে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আবদুর রহিম পেয়েছেন ২ হাজার ৮৫৫ ভোট।
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে টানা দ্বিতীয় জয় পেলেন আওয়ামী লীগের আসম মাহবুব উল আলম লিপন। ভোট পেয়েছেন ২৩ হাজার ৬৫৭ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আব্দুল মান্নান খান বাচ্চু পেয়েছেন ১১ হাজার ৫৪৯ ভোট।
ফেনী পৌরসভায় আওয়ামী লীগের নজরুল ইসলাম স্বপন জিতেছেন ৬৯ হাজার ৩০৯ ভোট পেয়ে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আলাল উদ্দিন আলাল পেয়েছেন এক হাজার ৯৪৯ ভোট।
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের আবুল খায়ের পাটোয়ারী জিতেছেন ১৬ হাজার ৬০১ ভোট পেয়ে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দী তোফাজ্জল হোসেন বাচ্চু পেয়েছেন দুই হাজার ১০১ ভোট।
আরও পড়ুন:প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং কোনো দাবির কারণে ভোট পিছিয়ে দেওয়া হবে না।
ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ড. কমফোর্ট ইরোর নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৃহস্পতিবার আলোচনায় অধ্যাপক ইউনূস এ কথা বলেন।
তিনি জানান, সরকার নির্বাচনের জন্য দুটি সম্ভাব্য সময়সীমা নির্ধারণ করেছে এবং নির্ধারিত তারিখ পরিবর্তন করা হবে না।
ভোটের তারিখের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যদি রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের আগে সীমিতসংখ্যক সংস্কার চায়, তাহলে নির্বাচন এ বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। আর যদি বৃহত্তর সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের কোনো কারণ নেই। আসন্ন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।
দেশে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও যথাযথ প্রস্তুতি নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বুধবার এক বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন তিনি।
এর আগে গত ১৭ মার্চ প্রধান উপদেষ্টা মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন ও কী ধরনের সুবিধাগুলো পেয়ে থাকেন, তা নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।
আজকের বৈঠকে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের উত্থাপিত বিষয়গুলোর সমাধান খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তাদের, বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অবস্থার উন্নয়নে তাৎক্ষণিক বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন ড. ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার আজকের মূল নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে পুলিশে প্রচলিত ঝুঁকি ভাতার সিলিং তুলে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা, পুলিশের জন্য নতুন ৩৬৪টি পিকআপ ও ১৪০টি প্রিজনার ভ্যান কেনার উদ্যোগ নেওয়া, পুলিশের চলমান নির্মাণ প্রকল্পের ৭০ শতাংশের নিচে সম্পাদিত হওয়া প্রকল্পগুলোতে অর্থ ছাড় করা, ভাড়াকৃত ভবনে অবস্থিত ৬৫টি থানার জমি অধিগ্রহণের জন্য অর্থ ছাড় করা এবং পুলিশের এসআই ও এএসআই পদবির কর্মকর্তাদের মোটরসাইকেল কেনার জন্য সুদমুক্ত ঋণের বিষয়টি বিবেচনা করা।
কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে জেলা পুলিশকে শ্রেণিবদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন প্রধান উপদেষ্টা। এ ছাড়াও তিনি নিম্ন কর্মদক্ষতার ইউনিটগুলোর কর্মক্ষমতা উন্নত করার লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চালানোর ওপরও জোর দেন।
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। এ সময়ের মধ্যে নির্বাচনের সময়সূচি নির্ভর করবে সরকার গৃহীত প্রয়োজনীয় সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের ওপর, যা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য বলে মনে করা হচ্ছে।
তিনি সম্প্রতি বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘যদি সংস্কার কার্যক্রম আমাদের প্রত্যাশিত দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করা যায়, তাহলে ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার প্রক্রিয়া প্রয়োজন হয়, তাহলে আমাদের আরও কয়েক মাস লাগতে পারে।’
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর যখন তাকে দায়িত্ব নিতে বলা হয়, তখন তিনি ‘হতচকিত’ বোধ করেন।
বিবিসিকে ড. ইউনূস বলেন,‘আমি কখনও ভাবিনি যে আমি সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেব। আমি আগে কখনও প্রশাসনিক দায়িত্বে ছিলাম না। তাই সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য আমাকে উপায়গুলো খুঁজে নিতে হয়েছে।
‘যখন বিষয়টি ঠিক হলো, তখন আমরা সংগঠিতভাবে কাজ শুরু করলাম।’
শান্তিতে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আমার কাছে দেশের জন্য আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার এবং অর্থনীতি পুনর্গঠন মূল অগ্রাধিকার ছিল।’
বিবিসির আজকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ এ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়, যা অধ্যাপক ইউনূস এ বছরের শেষের দিকে আয়োজনের আশা করছেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।
ঢাকার সরকারি বাসভবনে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইউনূস বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচনে অংশ নিতে চায় কি না। আমি তাদের জন্য এই সিদ্ধান্ত নিতে পারি না।’
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন,‘নির্বাচন কমিশন ঠিক করবে কারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে।’
তিনি বলেন, ‘শান্তি ও শৃঙ্খলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পাশাপাশি অর্থনীতি। এটি একটি বিচূর্ণ অর্থনীতি, একটি বিপর্যস্ত অর্থনীতি।
‘এমন মনে হচ্ছে যেন গত ১৬ বছর ধরে কোনো ভয়ংকর টর্নেডো চলছে আর আমরা এখন সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে টুকরোগুলো তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছি।’
আরও পড়ুন:জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ মত তুলে ধরেন তিনি।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘সারা দেশে জনপ্রতিনিধি না থাকায় জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) অতিরিক্ত সময় দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এমনকি অতিরিক্ত চাপ থেকে মুক্তি পেতে তারাও দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চান।’
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা খুব পরিষ্কারভাবে বলেছি, জাতীয় নির্বাচন আগে হতে হবে, তারপর স্থানীয় সরকার নির্বাচন।’
অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন জনগণের দাবি উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, তারাও এ মতের পক্ষে।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশে একটি বিশেষ পরিস্থিতি যাচ্ছে। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন সংস্থায় জনপ্রতিনিধিরা নেই। তাদের দায়িত্বগুলো বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকরা পালন করছেন।
‘সেই জায়গা থেকে তাদের যে সমস্যাগুলো তৈরি হচ্ছে, আজকের ডিসি সম্মেলনে আমরা সেগুলো শুনেছি এবং এগুলো অ্যাড্রেস করেছি।’
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের সম্ভাবনা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিভাগীয় কমিশনারদের প্রত্যেকেই মূল দায়িত্বের বাইরে কিছু না কিছু অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। জেলা প্রশাসকদের অতিরিক্ত সময়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। সমস্যাটা হলো একজন অফিসার যখন নিজ দায়িত্বের বাইরে আরও দুই-তিনটা দায়িত্ব পালন করেন, তার পক্ষে কোনোটাই যথাযথভাবে পালন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না, যে কারণে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, জাতীয় নির্বাচনের আগেই স্থানীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বে নিয়ে আসা উচিত।’
অন্তর্বর্তী সরকারের এ উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সর্বশেষ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মিটিংয়েও স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনা এখনও চলমান আছে। চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত এখনও সরকার নেয়নি।
‘আশা করছি খুব দ্রুতই কোনো একটা সিদ্ধান্ত আসবে। হয় আমরা দ্রুতই জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করব, অন্যথায় প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের সমস্যাগুলো সমাধান করা হবে।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের নাগরিকরা যেন কোনো বাধা বা হুমকি ছাড়াই অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন, সেই প্রক্রিয়া তৈরি করার ওপর জোর দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস শোয়াবের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ অভিমত দেন।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ডব্লিউইএফের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে ক্লাউস শোয়াব ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘গত বছর জুলাই মাসে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে বৈষম্য নিরসনের দাবি নিয়ে রাজপথে নেমেছিল।’
তিনি উল্লেখ করেন, আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীরা ঢাকার দেয়ালগুলোতে গ্রাফিতি এঁকে তাদের আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন প্রকাশ করেছে।
ড. ইউনূস বলেন, গত ১৬ বছরে বাংলাদেশে যারা নতুন ভোটার হয়েছেন, তাদের ভোট দেওয়ার সুযোগই হয়নি, যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার এজেন্ডা তুলে ধরে ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ৮৪ বছর বয়সী এ অর্থনীতিবিদ বলেন, দেশের মানুষ কোন ধরনের নির্বাচন চায়, সেটি না জেনে সরকার নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে না।
তিনি বলেন, সরকার নির্বাচন আয়োজনের অপেক্ষায় রয়েছে, তবে এখন দেশের জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রক্রিয়াটি কেমন হবে। তারা কী ছোট পরিসরের সংস্কার কর্মসূচিতে যাবে, নাকি দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার চাইবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি মানুষ দ্রুত সংস্কার চায়, তাহলে আমরা এ বছরের শেষ নাগাদ নির্বাচন করার লক্ষ্য নিয়েছি। আর যদি বলে, না আমাদের দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার দরকার, তাহলে আমাদের আরও ছয় মাস সময় লাগবে।’
বর্তমান প্রজন্মকে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রজন্ম আখ্যায়িত করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এ প্রজন্মের অমিত সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তি বর্তমান প্রজন্মকে বদলে দেওয়ার কারণে তারা এখন শুধু বাংলাদেশি আর তরুণ নয়, বরং সারা বিশ্বের তরুণ প্রজন্মের অংশ হয়ে গেছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, এ প্রজন্ম পুরোনো বাংলাদেশে ফিরে যেতে চায় না। তাই একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তরুণদের কাজের প্রতিটি অংশে ঐকমত্য গড়ে তোলার জন্য একটি ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হচ্ছে। সব রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের সংগঠনের ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘জুলাই সনদ’ প্রস্তুত করা হবে।
আরও পড়ুন:নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, কাউকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে নয়, নির্বাচন ব্যবস্থাকে দুর্নীতিমুক্ত করতেই সংস্কার কমিশন সুপারিশ করেছে।
কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে দুর্নীতি অনেকাংশে কমে যাবে বলে প্রকাশ করেন তিনি।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে মঙ্গলবার নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে দেওয়া প্রস্তাব ও তা বাস্তবায়নে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের করণীয় নিয়ে এ বিটের সাংবাদিকদের সংগঠনের (আরএফইডি) সদস্যদের সঙ্গে আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা ক্ষুণ্ন করা হয়নি; বরং এ সংস্থার ক্ষমতায়নে বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন।’
ফেরারি আসামি, বিচারিক আদালতে দোষী হলেই অযোগ্য, গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত বা অর্থ পাচারকারীরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
বিষয়টি বিতর্কিত কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম বলেন, ‘হত্যাকারীরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। এটা জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।’
নির্বাচন কমিশনকে জবাবদিহিতায় আনতে গিয়ে তাদের ক্ষমতা খর্ব হবে না বলেও মত দেন তিনি।
এদিকে আরেক অনুষ্ঠানে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এএসএম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের বায়োমেট্রিক প্রক্রিয়ায় ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেড় সপ্তাহের মধ্যে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র। চোখ এবং আঙুলে ক্ষতিগ্রস্তদের ইসির নির্দেশনায় দেওয়া হবে এনআইডি। নতুন ভোটার ছাড়াও স্মার্ট কার্ড এবং ভুল সংশোধনের সুযোগও পাবেন আহতরা।
‘এ ছাড়াও সারা দেশের সব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আন্দোলনে আহত এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা পাবেন এ সেবা।’
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তীকালীন সরকারঘোষিত সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাছির উদ্দিন।
রাজধানীর আগারগাঁয়ের নির্বাচন ভবনে রবিবার এক অনুষ্ঠানে সিইসি এ কথা জানান।
গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তবে কম সংস্কার হলে নির্বাচন ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে হতে পারে।
নির্বাচন ভবনের অনুষ্ঠানে সরকারঘোষিত সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন কমিশন কাজ করছে কি না জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি মাথায় রেখেই কাজ করছি।’
ওই সময় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বলেন, ভোটার তালিকা নিয়ে সব সন্দেহ দূর করতে নির্বাচন কমিশন কাজ করছে।
তিনি বলেন, ‘সংশয় দূর করার জন্য আমরা এটা (ভোটার তালিকা হালনাগাদ) করছি। আমরা মাঠে অনেক মানুষকে সম্পৃক্ত করছি।’
সারা দেশে সোমবার থেকে শুরু হতে যাওয়া ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য কিছু উপকরণ সহায়তা দেয় জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)।
ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফেন লিলার ১৭৫টি ল্যাপটপ, ২০০টি স্ক্যানার ও ৪ হাজার ৩০০ ব্যাগ সিইসির কাছে হস্তান্তর করেন।
নাছির উদ্দিন জানান, তারা ছয় মাসের মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শেষ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন এবং প্রায় ৬৫ হাজার মানুষ বিশাল এ কর্মসূচিতে কাজ করবেন।
তিনি বলেন, ‘এই ছয় মাসের মধ্যে কাজটি শেষ করার জন্য আমাদের প্রাণান্তকর চেষ্টা করতে হবে।’
চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে বিএনপির জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি জানান, তারা রাজনৈতিক বক্তব্য (বিতর্ক) করেন না এবং আইন ও বিধিবিধানের মধ্যে থাকবেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে চাই।’
ইউএনডিপির সহায়তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, তারা আমাদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য