দ্বিতীয় ধাপের পৌর নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়ে উঠা আবদুল কাদের মির্জা বলেছেন, নোয়াখালীর বসুরহাটে তিনি হারলে প্রতিদ্বন্দ্বীকে অভিনন্দন জানিয়ে মিষ্টি খেয়ে বাড়ি ফিরবেন।
ভোটের আগের দিন শুক্রবার নিউজবাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে নৌকা মার্কার এই প্রার্থী বলেছেন, যদি একটি ভোটও হেরফের হয়, তাহলে নির্বাচনি কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করতে হবে।
কাদের মির্জা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই। এবারের পৌর নির্বাচনকে ঘিরে তার দিকে দৃষ্টি আকর্ষিত হওয়ার কারণ নানা বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড।
বাংলাদেশের নির্বাচনগুলোতে সাধারণত বিরোধীদলের প্রার্থীরা ভোট নিয়ে সংশয়ের কথা বলে থাকেন, হুঁশিয়ারি দিয়ে থাকেন। তবে এই এলাকায় এই সতর্কতা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী কাদের মির্জা।
তার অনুসারীরা সুষ্ঠু ভোটের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছেন। জেলা প্রশাসককে বলেছেন, কোথাও কারচুপি হলে ভোট বন্ধ করে দেয়া হবে।
কাদের মির্জা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বলেছেন, কোনো অভিযোগ এলে ভোট বর্জন না করে তাকে জানাতে। তিনি তাদেরকে নিয়ে রাজপথে নামবেন।
বিস্ময়কর হলো, নোয়াখালীর এই পৌরসভায় কাদের মির্জার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতা কামাল উদ্দিন চৌধুরী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোশাররফ হোসাইনের ভোটের পরিবেশ নিয়ে আপত্তি তো নেইই, বরং বাংলাদেশে বিরোধীদের মধ্যে যে ঢালাও অভিযোগের প্রবণতা আছে তার বিপরীতে গিয়ে তারা বলছেন, এলাকায় নির্বাচনের পরিবেশ ভালো আছে।
সরকারি দলের প্রার্থী হয়ে এই ধরনের বক্তব্য এর আগে দেশে কখনো কেউ দেয়নি। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের খবর জানতে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা এখন অবস্থান করছেন বসুরহাটে।
নিউজবাংলাকে এই প্রার্থী বলেছেন, তিনি ভোটের প্রচারে যেসব আশঙ্কার কথা বলেছিলেন, তা এখন আর করছেন না। সুষ্ঠু ভোটের নিশ্চয়তা পেয়েছেন।
জয়ের ব্যাপারে কতটুকু আশাবাদী?
আমাদের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।
আপনি কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করে এসেছেন। পরিবেশ কেমন দেখছেন?
অত্যন্ত সুন্দর।
এখন আপনার কোনো অভিযোগ আছে কি?
আমার অভিযোগ ছিল। আমাদের জাতীয় নেতৃবৃন্দ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এখানে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। এ জন্য দেখছি এখানে মোটামুটি পরিবেশ ভালো। কোনো সমস্যা নাই।
যদি ভোটে হেরে যান?
এই অপরাজনীতির বিরুদ্ধে আমার বক্তব্য আগামীকাল শুনবেন।
(তার কার্যালয়ের সামনে মাইক দেখিয়ে বলেন) এখানে মাইকগুলা এই যে আপনি দেখেন, এখনও কিন্তু ৩২টা লাগিয়া রাখছি। আমি যদি নির্বাচনে হেরে যাই প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে অভিনন্দন জানাব। আমার নেতাকর্মীদের নিয়ে মিষ্টি-চা খেয়ে বাড়িতে ফিরব। এককথায় ফলাফল যাই হোক মেনে নেব।
অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা বলছেন, এসব বক্তব্য নির্বাচনে জয়লাভের একটা কৌশল। সেটাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
আমি কৌশলী না কি সেটা আগামীকাল প্রমাণ পাবেন। আমি এর চেয়ে বেশি কিছু এখন বলতে চাই না।
আপনার চাওয়া তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন…
আমি শতভাগ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। যেহেতু আমি বলেছি অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করব, এই অনিয়মের নির্বাচনের সঙ্গে আমি নাই।
আজকে সকালবেলা প্রত্যেকটা প্রিজাইডিং অফিসার এবং অ্যাসিসটেন্ট প্রিজাইডিং অফিসারের সঙ্গে আমি আলাপ করেছি। ওনাদের বলে দিছি, একটা ভোটে অনিয়ম যদি হয়, এর দায়দায়িত্ব আপনাদের বহন করতে হবে।
আপনার বিপরীতে যারা প্রার্থী আছেন তাদের কতটা শক্তিশালী মনে করছেন?
প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে। এখানে তো সকল দল অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে প্রচার চালিয়েছে। আপনারা শুনেছেন কি না জানি না, এ ক্ষেত্রে কোনো বাধা প্রদান করা হয়নি। আমি মনে করি সকল দলই আমার প্রতিদ্বন্দ্বী।
নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা বা সংঘর্ষের আশঙ্কা তাহলে এখন আর করছেন না?
এই আশঙ্কা আমরা এখন দেখতেছি না। যেহেতু জাতীয় নেতৃবৃন্দ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নোয়াখালীর এমপি এবং ফেনীর এমপি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছিলেন। এখন আমার মনে হচ্ছে যে, জাতীয় নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে বা যে কোনো কারণে হোক ওই ধরনের পরিস্থিতি আর নেই।
তারাও তো আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন, তাহলে আপনাকে ঠেকিয়ে তাদের স্বার্থটা কী?
তাদের অপরাজনীতির বিরুদ্ধে আমি কথা বলেছি। বলার কারণে আমার প্রতি তাদের একটি খারাপ মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। সেখান থেকেই তারা আমার বিরোধিতা করেছেন।
আপনি বলেছিলেন অস্ত্রধারী ব্যক্তিরা প্রবেশ করার চেষ্টা করবে। যদি এ রকম কিছু হয়?
অবশ্যই প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদেরও প্রস্তুতি আছে। আমাদের কাছে তো অস্ত্র নাই, আমাদের কাছে আছে জনগণ। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এটা প্রতিরোধ করা হবে।
আপনি যখন এই আশঙ্কা করছেন, তখন ভোটাররা কি ভয় পেতে পারেন না?
না, সে পরিস্থিতি এখন নাই। ভোটাররা এখানে উজ্জীবিত। তারা যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে ভোট দেয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।
ভোট চুরির শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন কেন?
এটা আসলে প্রশাসনের কারণে আমি সন্দেহ প্রকাশ করেছি। নোয়াখালীর ডিসি, ওনার যে একটিভিটিজ… উনি যদি একজন এমপির, যার সঙ্গে আমার রাজনৈতিক কারণে একটা বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে, তার মাস্ক লাগাইয়া যদি তার চেয়ারে বসেন, তাহলে নিরপেক্ষতা তো এখানে প্রশ্নবিদ্ধ। সে জন্য আমরা আশঙ্কা করছিলাম যে, প্রশাসনের লোকজন দিয়ে সে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এখানে কিছু একটা করতে পারে।
আগের নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে?
গত নির্বাচনগুলোতে হইছে, প্রশাসনই করছে। এবার যেহেতু ইভিএমে ভোট হচ্ছে, ওই ব্যাপারে আমার এখন কোনো অভিযোগ নাই।
এবারই প্রথম ভোটাররা ইভিএমে ভোট দেবেন। সেটা তাদের কাছে জটিল মনে হতে পারে কি না।
একটু জটিলতা তো আছেই। নতুন একটা সংযোজন এটা। নতুন যেহেতু একটু সমস্যা তো হবেই।
ইভিএমে কারচুপির সুযোগ নাই বলতে চাচ্ছেন?
আমি কারচুপির বিষয়টা বলছি। ডিসি সাহেব ষড়যন্ত্র করেন, উনি প্রশাসন দিয়ে… এখানে একটা কারচুপি করার সুযোগ আছে। ইভিএমেও এক পারসেন্ট সুযোগ আছে কারচুপি করার।
সে এক পারসেন্ট থেকে আপনার শঙ্কা এসেছিল যে এখানেও কারচুপি হতে পারে?
জ্বি।
দুর্নীতির নিয়েও আপনি অভিযোগ করেছেন। আপনি তো মেয়র ছিলেন। আপনার এলাকায় কি এই দুর্নীতি দৃশ্যমান ছিল?
না, আমার এলাকায় না। এইগুলা নোয়াখালীতে। নোয়াখালীর এমপিসহ তার পরিবার পুরোপুরি দুর্নীতিবাজ। এই পরিবারটা নোয়াখালীতে অপরাজনীতি শুরু করছে। টেন্ডারবাজি, চাকরি বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। আমাদের উপজেলার চেয়ারম্যান মহোদয় অনেক ভালোমানুষ এবং সাদা মনের মানুষ। উনি উপজেলার ভাতাসহ কোনো সুবিধা সেখান থেকে নেন না।
আপনি দলের প্রার্থী। বড় ভাই বড় পদে। আপনি কি মনে করেন, আপনার বক্তব্য দল বা আপনার ভাইয়ের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে?
কী জন্য প্রভাব পড়বে? আমি তো সত্য কথা বলছি। আমি তো বলছি, আমি সাহস করে সত্য কথা বলব। এখনও তিন বছর আমাদের সময় আছে। আমি তো সারা বাংলাদেশের কথা বলতে পারব না। আমি আমার এলাকার যে পরিস্থিতি দেখছি, আগামী নির্বাচনে (এলাকায়) তো আমাদের ভরাডুবি হবে। এই কারণে আমি অপরাজনীতি বন্ধের কথা বলছি।
আপনি আগে কেন এই কথাগুলো বলেননি?
এই কথাগুলো তো বার বার বলা হইছে। আমি চিকিৎসা নেয়ার জন্য আমেরিকাতে গেছি। আমার দুইটা টিউমার হইছে। ভাবছিলাম আমার দেশে আর আসা হবে না। আল্লার মেহেরবানী ও সবার দোয়া আছে। আমার ওই টিউমারে কোনো ক্যান্সার ছিল না।
বাংলাদেশে ফিরে বিষয়গুলো আমাকে নাড়া দিয়েছে। নোয়াখালীর ও ফেনীর অপরাজনীতি, অনিয়মগুলো আমার বিবেকে নাড়া দিয়েছে, যার কারণে আমি বিমানবন্দরে এসে বলছি। আমি সাহস করে সত্য কথা বলব। অন্যায়, অবিচার, অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলব।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং কোনো দাবির কারণে ভোট পিছিয়ে দেওয়া হবে না।
ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ড. কমফোর্ট ইরোর নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৃহস্পতিবার আলোচনায় অধ্যাপক ইউনূস এ কথা বলেন।
তিনি জানান, সরকার নির্বাচনের জন্য দুটি সম্ভাব্য সময়সীমা নির্ধারণ করেছে এবং নির্ধারিত তারিখ পরিবর্তন করা হবে না।
ভোটের তারিখের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যদি রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের আগে সীমিতসংখ্যক সংস্কার চায়, তাহলে নির্বাচন এ বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। আর যদি বৃহত্তর সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের কোনো কারণ নেই। আসন্ন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।
দেশে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও যথাযথ প্রস্তুতি নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বুধবার এক বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন তিনি।
এর আগে গত ১৭ মার্চ প্রধান উপদেষ্টা মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন ও কী ধরনের সুবিধাগুলো পেয়ে থাকেন, তা নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।
আজকের বৈঠকে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের উত্থাপিত বিষয়গুলোর সমাধান খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তাদের, বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অবস্থার উন্নয়নে তাৎক্ষণিক বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন ড. ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার আজকের মূল নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে পুলিশে প্রচলিত ঝুঁকি ভাতার সিলিং তুলে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা, পুলিশের জন্য নতুন ৩৬৪টি পিকআপ ও ১৪০টি প্রিজনার ভ্যান কেনার উদ্যোগ নেওয়া, পুলিশের চলমান নির্মাণ প্রকল্পের ৭০ শতাংশের নিচে সম্পাদিত হওয়া প্রকল্পগুলোতে অর্থ ছাড় করা, ভাড়াকৃত ভবনে অবস্থিত ৬৫টি থানার জমি অধিগ্রহণের জন্য অর্থ ছাড় করা এবং পুলিশের এসআই ও এএসআই পদবির কর্মকর্তাদের মোটরসাইকেল কেনার জন্য সুদমুক্ত ঋণের বিষয়টি বিবেচনা করা।
কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে জেলা পুলিশকে শ্রেণিবদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন প্রধান উপদেষ্টা। এ ছাড়াও তিনি নিম্ন কর্মদক্ষতার ইউনিটগুলোর কর্মক্ষমতা উন্নত করার লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চালানোর ওপরও জোর দেন।
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। এ সময়ের মধ্যে নির্বাচনের সময়সূচি নির্ভর করবে সরকার গৃহীত প্রয়োজনীয় সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের ওপর, যা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য বলে মনে করা হচ্ছে।
তিনি সম্প্রতি বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘যদি সংস্কার কার্যক্রম আমাদের প্রত্যাশিত দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করা যায়, তাহলে ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার প্রক্রিয়া প্রয়োজন হয়, তাহলে আমাদের আরও কয়েক মাস লাগতে পারে।’
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর যখন তাকে দায়িত্ব নিতে বলা হয়, তখন তিনি ‘হতচকিত’ বোধ করেন।
বিবিসিকে ড. ইউনূস বলেন,‘আমি কখনও ভাবিনি যে আমি সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেব। আমি আগে কখনও প্রশাসনিক দায়িত্বে ছিলাম না। তাই সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য আমাকে উপায়গুলো খুঁজে নিতে হয়েছে।
‘যখন বিষয়টি ঠিক হলো, তখন আমরা সংগঠিতভাবে কাজ শুরু করলাম।’
শান্তিতে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আমার কাছে দেশের জন্য আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার এবং অর্থনীতি পুনর্গঠন মূল অগ্রাধিকার ছিল।’
বিবিসির আজকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ এ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়, যা অধ্যাপক ইউনূস এ বছরের শেষের দিকে আয়োজনের আশা করছেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।
ঢাকার সরকারি বাসভবনে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইউনূস বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচনে অংশ নিতে চায় কি না। আমি তাদের জন্য এই সিদ্ধান্ত নিতে পারি না।’
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন,‘নির্বাচন কমিশন ঠিক করবে কারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে।’
তিনি বলেন, ‘শান্তি ও শৃঙ্খলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পাশাপাশি অর্থনীতি। এটি একটি বিচূর্ণ অর্থনীতি, একটি বিপর্যস্ত অর্থনীতি।
‘এমন মনে হচ্ছে যেন গত ১৬ বছর ধরে কোনো ভয়ংকর টর্নেডো চলছে আর আমরা এখন সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে টুকরোগুলো তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছি।’
আরও পড়ুন:জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ মত তুলে ধরেন তিনি।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘সারা দেশে জনপ্রতিনিধি না থাকায় জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) অতিরিক্ত সময় দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এমনকি অতিরিক্ত চাপ থেকে মুক্তি পেতে তারাও দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চান।’
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা খুব পরিষ্কারভাবে বলেছি, জাতীয় নির্বাচন আগে হতে হবে, তারপর স্থানীয় সরকার নির্বাচন।’
অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন জনগণের দাবি উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, তারাও এ মতের পক্ষে।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশে একটি বিশেষ পরিস্থিতি যাচ্ছে। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন সংস্থায় জনপ্রতিনিধিরা নেই। তাদের দায়িত্বগুলো বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকরা পালন করছেন।
‘সেই জায়গা থেকে তাদের যে সমস্যাগুলো তৈরি হচ্ছে, আজকের ডিসি সম্মেলনে আমরা সেগুলো শুনেছি এবং এগুলো অ্যাড্রেস করেছি।’
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের সম্ভাবনা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিভাগীয় কমিশনারদের প্রত্যেকেই মূল দায়িত্বের বাইরে কিছু না কিছু অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। জেলা প্রশাসকদের অতিরিক্ত সময়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। সমস্যাটা হলো একজন অফিসার যখন নিজ দায়িত্বের বাইরে আরও দুই-তিনটা দায়িত্ব পালন করেন, তার পক্ষে কোনোটাই যথাযথভাবে পালন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না, যে কারণে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, জাতীয় নির্বাচনের আগেই স্থানীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বে নিয়ে আসা উচিত।’
অন্তর্বর্তী সরকারের এ উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সর্বশেষ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মিটিংয়েও স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনা এখনও চলমান আছে। চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত এখনও সরকার নেয়নি।
‘আশা করছি খুব দ্রুতই কোনো একটা সিদ্ধান্ত আসবে। হয় আমরা দ্রুতই জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করব, অন্যথায় প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের সমস্যাগুলো সমাধান করা হবে।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের নাগরিকরা যেন কোনো বাধা বা হুমকি ছাড়াই অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন, সেই প্রক্রিয়া তৈরি করার ওপর জোর দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস শোয়াবের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ অভিমত দেন।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ডব্লিউইএফের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে ক্লাউস শোয়াব ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘গত বছর জুলাই মাসে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে বৈষম্য নিরসনের দাবি নিয়ে রাজপথে নেমেছিল।’
তিনি উল্লেখ করেন, আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীরা ঢাকার দেয়ালগুলোতে গ্রাফিতি এঁকে তাদের আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন প্রকাশ করেছে।
ড. ইউনূস বলেন, গত ১৬ বছরে বাংলাদেশে যারা নতুন ভোটার হয়েছেন, তাদের ভোট দেওয়ার সুযোগই হয়নি, যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার এজেন্ডা তুলে ধরে ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ৮৪ বছর বয়সী এ অর্থনীতিবিদ বলেন, দেশের মানুষ কোন ধরনের নির্বাচন চায়, সেটি না জেনে সরকার নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে না।
তিনি বলেন, সরকার নির্বাচন আয়োজনের অপেক্ষায় রয়েছে, তবে এখন দেশের জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রক্রিয়াটি কেমন হবে। তারা কী ছোট পরিসরের সংস্কার কর্মসূচিতে যাবে, নাকি দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার চাইবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি মানুষ দ্রুত সংস্কার চায়, তাহলে আমরা এ বছরের শেষ নাগাদ নির্বাচন করার লক্ষ্য নিয়েছি। আর যদি বলে, না আমাদের দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার দরকার, তাহলে আমাদের আরও ছয় মাস সময় লাগবে।’
বর্তমান প্রজন্মকে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রজন্ম আখ্যায়িত করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এ প্রজন্মের অমিত সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তি বর্তমান প্রজন্মকে বদলে দেওয়ার কারণে তারা এখন শুধু বাংলাদেশি আর তরুণ নয়, বরং সারা বিশ্বের তরুণ প্রজন্মের অংশ হয়ে গেছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, এ প্রজন্ম পুরোনো বাংলাদেশে ফিরে যেতে চায় না। তাই একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তরুণদের কাজের প্রতিটি অংশে ঐকমত্য গড়ে তোলার জন্য একটি ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হচ্ছে। সব রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের সংগঠনের ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘জুলাই সনদ’ প্রস্তুত করা হবে।
আরও পড়ুন:নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, কাউকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে নয়, নির্বাচন ব্যবস্থাকে দুর্নীতিমুক্ত করতেই সংস্কার কমিশন সুপারিশ করেছে।
কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে দুর্নীতি অনেকাংশে কমে যাবে বলে প্রকাশ করেন তিনি।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে মঙ্গলবার নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে দেওয়া প্রস্তাব ও তা বাস্তবায়নে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের করণীয় নিয়ে এ বিটের সাংবাদিকদের সংগঠনের (আরএফইডি) সদস্যদের সঙ্গে আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা ক্ষুণ্ন করা হয়নি; বরং এ সংস্থার ক্ষমতায়নে বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন।’
ফেরারি আসামি, বিচারিক আদালতে দোষী হলেই অযোগ্য, গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত বা অর্থ পাচারকারীরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
বিষয়টি বিতর্কিত কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম বলেন, ‘হত্যাকারীরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। এটা জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।’
নির্বাচন কমিশনকে জবাবদিহিতায় আনতে গিয়ে তাদের ক্ষমতা খর্ব হবে না বলেও মত দেন তিনি।
এদিকে আরেক অনুষ্ঠানে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এএসএম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের বায়োমেট্রিক প্রক্রিয়ায় ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেড় সপ্তাহের মধ্যে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র। চোখ এবং আঙুলে ক্ষতিগ্রস্তদের ইসির নির্দেশনায় দেওয়া হবে এনআইডি। নতুন ভোটার ছাড়াও স্মার্ট কার্ড এবং ভুল সংশোধনের সুযোগও পাবেন আহতরা।
‘এ ছাড়াও সারা দেশের সব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আন্দোলনে আহত এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা পাবেন এ সেবা।’
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তীকালীন সরকারঘোষিত সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাছির উদ্দিন।
রাজধানীর আগারগাঁয়ের নির্বাচন ভবনে রবিবার এক অনুষ্ঠানে সিইসি এ কথা জানান।
গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তবে কম সংস্কার হলে নির্বাচন ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে হতে পারে।
নির্বাচন ভবনের অনুষ্ঠানে সরকারঘোষিত সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন কমিশন কাজ করছে কি না জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি মাথায় রেখেই কাজ করছি।’
ওই সময় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বলেন, ভোটার তালিকা নিয়ে সব সন্দেহ দূর করতে নির্বাচন কমিশন কাজ করছে।
তিনি বলেন, ‘সংশয় দূর করার জন্য আমরা এটা (ভোটার তালিকা হালনাগাদ) করছি। আমরা মাঠে অনেক মানুষকে সম্পৃক্ত করছি।’
সারা দেশে সোমবার থেকে শুরু হতে যাওয়া ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য কিছু উপকরণ সহায়তা দেয় জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)।
ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফেন লিলার ১৭৫টি ল্যাপটপ, ২০০টি স্ক্যানার ও ৪ হাজার ৩০০ ব্যাগ সিইসির কাছে হস্তান্তর করেন।
নাছির উদ্দিন জানান, তারা ছয় মাসের মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শেষ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন এবং প্রায় ৬৫ হাজার মানুষ বিশাল এ কর্মসূচিতে কাজ করবেন।
তিনি বলেন, ‘এই ছয় মাসের মধ্যে কাজটি শেষ করার জন্য আমাদের প্রাণান্তকর চেষ্টা করতে হবে।’
চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে বিএনপির জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি জানান, তারা রাজনৈতিক বক্তব্য (বিতর্ক) করেন না এবং আইন ও বিধিবিধানের মধ্যে থাকবেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে চাই।’
ইউএনডিপির সহায়তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, তারা আমাদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য