দ্বিতীয় ধাপের পৌর নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়ে উঠা আবদুল কাদের মির্জা বলেছেন, নোয়াখালীর বসুরহাটে তিনি হারলে প্রতিদ্বন্দ্বীকে অভিনন্দন জানিয়ে মিষ্টি খেয়ে বাড়ি ফিরবেন।
ভোটের আগের দিন শুক্রবার নিউজবাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে নৌকা মার্কার এই প্রার্থী বলেছেন, যদি একটি ভোটও হেরফের হয়, তাহলে নির্বাচনি কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করতে হবে।
কাদের মির্জা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই। এবারের পৌর নির্বাচনকে ঘিরে তার দিকে দৃষ্টি আকর্ষিত হওয়ার কারণ নানা বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড।
বাংলাদেশের নির্বাচনগুলোতে সাধারণত বিরোধীদলের প্রার্থীরা ভোট নিয়ে সংশয়ের কথা বলে থাকেন, হুঁশিয়ারি দিয়ে থাকেন। তবে এই এলাকায় এই সতর্কতা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী কাদের মির্জা।
তার অনুসারীরা সুষ্ঠু ভোটের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছেন। জেলা প্রশাসককে বলেছেন, কোথাও কারচুপি হলে ভোট বন্ধ করে দেয়া হবে।
কাদের মির্জা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বলেছেন, কোনো অভিযোগ এলে ভোট বর্জন না করে তাকে জানাতে। তিনি তাদেরকে নিয়ে রাজপথে নামবেন।
বিস্ময়কর হলো, নোয়াখালীর এই পৌরসভায় কাদের মির্জার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতা কামাল উদ্দিন চৌধুরী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোশাররফ হোসাইনের ভোটের পরিবেশ নিয়ে আপত্তি তো নেইই, বরং বাংলাদেশে বিরোধীদের মধ্যে যে ঢালাও অভিযোগের প্রবণতা আছে তার বিপরীতে গিয়ে তারা বলছেন, এলাকায় নির্বাচনের পরিবেশ ভালো আছে।
সরকারি দলের প্রার্থী হয়ে এই ধরনের বক্তব্য এর আগে দেশে কখনো কেউ দেয়নি। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের খবর জানতে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা এখন অবস্থান করছেন বসুরহাটে।
নিউজবাংলাকে এই প্রার্থী বলেছেন, তিনি ভোটের প্রচারে যেসব আশঙ্কার কথা বলেছিলেন, তা এখন আর করছেন না। সুষ্ঠু ভোটের নিশ্চয়তা পেয়েছেন।
জয়ের ব্যাপারে কতটুকু আশাবাদী?
আমাদের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।
আপনি কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করে এসেছেন। পরিবেশ কেমন দেখছেন?
অত্যন্ত সুন্দর।
এখন আপনার কোনো অভিযোগ আছে কি?
আমার অভিযোগ ছিল। আমাদের জাতীয় নেতৃবৃন্দ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এখানে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। এ জন্য দেখছি এখানে মোটামুটি পরিবেশ ভালো। কোনো সমস্যা নাই।
যদি ভোটে হেরে যান?
এই অপরাজনীতির বিরুদ্ধে আমার বক্তব্য আগামীকাল শুনবেন।
(তার কার্যালয়ের সামনে মাইক দেখিয়ে বলেন) এখানে মাইকগুলা এই যে আপনি দেখেন, এখনও কিন্তু ৩২টা লাগিয়া রাখছি। আমি যদি নির্বাচনে হেরে যাই প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে অভিনন্দন জানাব। আমার নেতাকর্মীদের নিয়ে মিষ্টি-চা খেয়ে বাড়িতে ফিরব। এককথায় ফলাফল যাই হোক মেনে নেব।
অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা বলছেন, এসব বক্তব্য নির্বাচনে জয়লাভের একটা কৌশল। সেটাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
আমি কৌশলী না কি সেটা আগামীকাল প্রমাণ পাবেন। আমি এর চেয়ে বেশি কিছু এখন বলতে চাই না।
আপনার চাওয়া তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন…
আমি শতভাগ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। যেহেতু আমি বলেছি অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করব, এই অনিয়মের নির্বাচনের সঙ্গে আমি নাই।
আজকে সকালবেলা প্রত্যেকটা প্রিজাইডিং অফিসার এবং অ্যাসিসটেন্ট প্রিজাইডিং অফিসারের সঙ্গে আমি আলাপ করেছি। ওনাদের বলে দিছি, একটা ভোটে অনিয়ম যদি হয়, এর দায়দায়িত্ব আপনাদের বহন করতে হবে।
আপনার বিপরীতে যারা প্রার্থী আছেন তাদের কতটা শক্তিশালী মনে করছেন?
প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে। এখানে তো সকল দল অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে প্রচার চালিয়েছে। আপনারা শুনেছেন কি না জানি না, এ ক্ষেত্রে কোনো বাধা প্রদান করা হয়নি। আমি মনে করি সকল দলই আমার প্রতিদ্বন্দ্বী।
নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা বা সংঘর্ষের আশঙ্কা তাহলে এখন আর করছেন না?
এই আশঙ্কা আমরা এখন দেখতেছি না। যেহেতু জাতীয় নেতৃবৃন্দ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নোয়াখালীর এমপি এবং ফেনীর এমপি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছিলেন। এখন আমার মনে হচ্ছে যে, জাতীয় নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে বা যে কোনো কারণে হোক ওই ধরনের পরিস্থিতি আর নেই।
তারাও তো আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন, তাহলে আপনাকে ঠেকিয়ে তাদের স্বার্থটা কী?
তাদের অপরাজনীতির বিরুদ্ধে আমি কথা বলেছি। বলার কারণে আমার প্রতি তাদের একটি খারাপ মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। সেখান থেকেই তারা আমার বিরোধিতা করেছেন।
আপনি বলেছিলেন অস্ত্রধারী ব্যক্তিরা প্রবেশ করার চেষ্টা করবে। যদি এ রকম কিছু হয়?
অবশ্যই প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদেরও প্রস্তুতি আছে। আমাদের কাছে তো অস্ত্র নাই, আমাদের কাছে আছে জনগণ। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এটা প্রতিরোধ করা হবে।
আপনি যখন এই আশঙ্কা করছেন, তখন ভোটাররা কি ভয় পেতে পারেন না?
না, সে পরিস্থিতি এখন নাই। ভোটাররা এখানে উজ্জীবিত। তারা যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে ভোট দেয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।
ভোট চুরির শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন কেন?
এটা আসলে প্রশাসনের কারণে আমি সন্দেহ প্রকাশ করেছি। নোয়াখালীর ডিসি, ওনার যে একটিভিটিজ… উনি যদি একজন এমপির, যার সঙ্গে আমার রাজনৈতিক কারণে একটা বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে, তার মাস্ক লাগাইয়া যদি তার চেয়ারে বসেন, তাহলে নিরপেক্ষতা তো এখানে প্রশ্নবিদ্ধ। সে জন্য আমরা আশঙ্কা করছিলাম যে, প্রশাসনের লোকজন দিয়ে সে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এখানে কিছু একটা করতে পারে।
আগের নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে?
গত নির্বাচনগুলোতে হইছে, প্রশাসনই করছে। এবার যেহেতু ইভিএমে ভোট হচ্ছে, ওই ব্যাপারে আমার এখন কোনো অভিযোগ নাই।
এবারই প্রথম ভোটাররা ইভিএমে ভোট দেবেন। সেটা তাদের কাছে জটিল মনে হতে পারে কি না।
একটু জটিলতা তো আছেই। নতুন একটা সংযোজন এটা। নতুন যেহেতু একটু সমস্যা তো হবেই।
ইভিএমে কারচুপির সুযোগ নাই বলতে চাচ্ছেন?
আমি কারচুপির বিষয়টা বলছি। ডিসি সাহেব ষড়যন্ত্র করেন, উনি প্রশাসন দিয়ে… এখানে একটা কারচুপি করার সুযোগ আছে। ইভিএমেও এক পারসেন্ট সুযোগ আছে কারচুপি করার।
সে এক পারসেন্ট থেকে আপনার শঙ্কা এসেছিল যে এখানেও কারচুপি হতে পারে?
জ্বি।
দুর্নীতির নিয়েও আপনি অভিযোগ করেছেন। আপনি তো মেয়র ছিলেন। আপনার এলাকায় কি এই দুর্নীতি দৃশ্যমান ছিল?
না, আমার এলাকায় না। এইগুলা নোয়াখালীতে। নোয়াখালীর এমপিসহ তার পরিবার পুরোপুরি দুর্নীতিবাজ। এই পরিবারটা নোয়াখালীতে অপরাজনীতি শুরু করছে। টেন্ডারবাজি, চাকরি বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। আমাদের উপজেলার চেয়ারম্যান মহোদয় অনেক ভালোমানুষ এবং সাদা মনের মানুষ। উনি উপজেলার ভাতাসহ কোনো সুবিধা সেখান থেকে নেন না।
আপনি দলের প্রার্থী। বড় ভাই বড় পদে। আপনি কি মনে করেন, আপনার বক্তব্য দল বা আপনার ভাইয়ের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে?
কী জন্য প্রভাব পড়বে? আমি তো সত্য কথা বলছি। আমি তো বলছি, আমি সাহস করে সত্য কথা বলব। এখনও তিন বছর আমাদের সময় আছে। আমি তো সারা বাংলাদেশের কথা বলতে পারব না। আমি আমার এলাকার যে পরিস্থিতি দেখছি, আগামী নির্বাচনে (এলাকায়) তো আমাদের ভরাডুবি হবে। এই কারণে আমি অপরাজনীতি বন্ধের কথা বলছি।
আপনি আগে কেন এই কথাগুলো বলেননি?
এই কথাগুলো তো বার বার বলা হইছে। আমি চিকিৎসা নেয়ার জন্য আমেরিকাতে গেছি। আমার দুইটা টিউমার হইছে। ভাবছিলাম আমার দেশে আর আসা হবে না। আল্লার মেহেরবানী ও সবার দোয়া আছে। আমার ওই টিউমারে কোনো ক্যান্সার ছিল না।
বাংলাদেশে ফিরে বিষয়গুলো আমাকে নাড়া দিয়েছে। নোয়াখালীর ও ফেনীর অপরাজনীতি, অনিয়মগুলো আমার বিবেকে নাড়া দিয়েছে, যার কারণে আমি বিমানবন্দরে এসে বলছি। আমি সাহস করে সত্য কথা বলব। অন্যায়, অবিচার, অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলব।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে স্থগিত হওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ঝালকাঠির দুটি উপজেলায় (রাজাপুর ও কাঠালিয়া) রোববার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ নির্বাচনে ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, চেয়ারম্যান পদে রাজাপুর উপজেলায় মোটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে মিলন মাহমুদ বাচ্চু ২১ হাজার ৫০ ভোট পেয়ে এবং কাঠালিয়া উপজেলায় দোয়াত কলম প্রতীকের এমাদুল হক মনির ২০ হাজার ৩৭৫ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচন পরবর্তী সরকারের গেজেট এবং শপথ অনুষ্ঠানের পরেই এই দুই মসনদে বসবেন আওয়ামী লীগের দুই নেতা। এ ছাড়া কাঠালিয়ায় পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোহাম্মদ আব্দুল জলিল মিয়াজী এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাহিদা আক্তার বিন্দু বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। অপরদিকে রাজাপুর উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল বাপ্পি এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নাসরিন আক্তার নির্বাচিত হয়েছেন।
ভোট গণনা শেষে রোববার রাতে এ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন বেসরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন।
রাজাপুরেরর মিলন মাহমুদ বাচ্চু এর আগে ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর কাঁঠালিয়ায় এমাদুল হক মনির এবার টানা দ্বিতীয়বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
এই দুই উপজেলায় চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির নেতাও ছিলেন। তারা সেখানকার সংসদ সদস্য শাহজাহান ওমরের লোক। ব্যারিস্টার মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগে যোগদান করলেও বিএনপির অনুসারীরা (ওমর সেনা) শাহজাহান ওরমরকে তাদের দলের লোক মনে করেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।
আরও পড়ুন:পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার বাহেরচর এলাকার বাসিন্দা ১১০ বছর বয়সী এরফান ফকির। শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে ভোগা এ ব্যক্তি সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না। এমন অবস্থায় রোববার দুই ভাতিজার কাঁধে ভর করে কেন্দ্রে গিয়ে গিয়েছেন উপজেলা নির্বাচনের ভোট।
গরমের মধ্যে আংগারিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভোট দেন এরফান। যে স্কুলটিতে তিনি ভোট দিয়েছেন, সেটি নির্মাণের সময় রাজমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেছেন এ ব্যক্তি। স্কুলের পাশের মসজিদ নির্মাণকাজেও যুক্ত ছিলেন তিনি।
জীবন সায়াহ্নে এসে ভোট দেয়ার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে এরফান ফকির বলেন, ‘জীবনে কোনো ভোটই মিস করি নাই। তাই শতকষ্টের মধ্যেও এবার আসছি ভোট দিতে। জীবনে আর ভোট দিতে পারি কি না জানি না।’
এ বয়সে ভোট দিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করেন এরফান।
তিনি আরও বলেন, ‘যে প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছি, সেই প্রতিষ্ঠানে ভোট দিতে এলাম।’
কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার দীপংকর চন্দ্র শীল বলেন, ‘সকাল থেকে আমার কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি অনেক বেশি। নিজেকে গর্বিত মনে করেছি যে, উনার মতো (এরফান ফকির) একজন বয়োজ্যেষ্ঠ মুরুব্বিকে আমি নিজে বুথে নিয়ে তার ভোটটা প্রয়োগ করাতে পেরেছি।
‘যেহেতু তার হাত এবং পাঁ কাপতেছিল, সেহেতু তিনি যেখানে সিল মারতে বলেছেন, আমি সেখানেই সিল মেরে উনাকে দেখিয়েছি। ১১০ বছর বয়সী উনার মতো একজন ভোটার আমার কেন্দ্রে আমাদের সকলের সহযোগিতায় ভোট দিতে পেরেছে। তাতে আমি ধন্য হয়েছি।’
আরও পড়ুন:ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপের স্থগিত হওয়া ১৯ উপজেলার ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।
উপজেলাগুলোর বিভিন্ন কেন্দ্রে রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। শুক্রবার মধ্যরাত ১২টায় শেষ হয় নির্বাচনি প্রচার।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে স্থগিত হওয়া ১৯টি উপজেলায় ভোটের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
ভোটের এলাকায় টহলে র্যাব, বিজিবি, পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরাও। নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালনে মাঠে নিয়োজিত রয়েছেন প্রতি তিন ইউনিয়নে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। আর নির্বাচনি অপরাধ আমলে নিয়ে সংক্ষিপ্ত বিচার পরিচালনায় নিয়োজিত রয়েছেন ১৯ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট।
ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম জানান, বাগেরহাট জেলার শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ ও মোংলা; খুলনা জেলার কয়রা, পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া; বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া; পটুয়াখালী জেলার সদর, মির্জাগঞ্জ ও দুমকি; ভোলার লালমোহন ও তজুমদ্দিন; ঝালকাঠির রাজাপুর ও কাঠালিয়া; বরগুনার বামনা ও পাথরঘাটা এবং নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ী উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে ব্যালট পেপারে।
আর পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ হচ্ছে।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১১৯ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৩২ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে ৩০ লাখ ৪৬ হাজার ৮৮ জন ভোটার এক হাজার ১৮১ কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন।
৮ মে থেকে ধাপে ধাপে দেশের উপজেলাগুলোয় ভোটগ্রহণ করছে নির্বাচন কমিশন। ৯ জুন তা শেষ হবে, তবে কয়েকটি উপজেলায় মেয়াদপূর্তি না হওয়ায় নির্বাচন হবে আগামী বছর।
আরও পড়ুন:ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ঝালকাঠির দুটি উপজেলায় (রাজাপুর ও কাঠালিয়া) ভোটগ্রহণ হবে রোববার। তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে গত ২৯ মে এই দুই উপজেলায় ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা থাকলেও ঘূর্ণিঝড় ‘রিমালে’ কারণে তা পিছিয়ে যায়।
এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা লেগেই আছে।
সর্বশেষ বুধবার রাত পৌনে ৮টার দিকে রাজাপুরের পুটিয়াখালিতে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
রাজাপুর থানার ওসি মো. আতাউর রহমান জানান, ভোটের পরিবেশ শান্ত রাখতে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।
এর আগেও কাঠালিয়া এবং রাজাপুর উপজেলায় প্রার্থীদের সমর্থকরা কয়েক দফায় বিশৃঙ্খলা করেছেন বলে জানায় স্থানীয়রা। যার প্রভাব পড়েছে সাধারণ ভোটারদের মাঝে।
দুটি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আমির হোসেন আমু এমপির দুজন প্রার্থী রয়েছেন। অন্য প্রার্থীরাও আওয়ামী লীগের নেতা। এই দুই উপজেলায় চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির নেতাও রয়েছেন।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ঝালকাঠির দুটি উপজেলায় (নলছিটি ও সদর) ভোটগ্রহণ হয়েছে। ওই নির্বাচনের আগেও ঝালকাঠি সদরে এমপি আমু সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকরা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ওপর প্রকাশ্যে হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় ভোটের দিন বেশির ভাগ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি এতোটাই কম ছিল যা চোখে পড়ার মতো।
সেই ঘটনার রেশ যেতে না যেতেই রাজাপুরে ভোটের আগ মুহূর্তে এ ধরনের হামলার পর কেন্দ্রে যেতে অনীহা প্রকাশ করছেন নারীসহ বেশির ভাগ ভোটাররা। ঝালকাঠি সদরের মতো একই প্রভাব পড়তে শুরু করেছে রাজাপুর ও কাঠালিয়া উপজেলায়ও।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজাপুরের ভোটারদের পক্ষে এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা আতঙ্কিত, তবে প্রার্থীরা ভোটারদের কেন্দ্রে নিতে প্রাণপণ চেষ্টা করবেন, কিন্তু নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই কেন্দ্রে যেতে আমাদের অনীহা।’
সাধারণ ভোটার শাহেদ আলি, পেশায় রিকশা চালক। প্রতিদিনের আয় দিয়ে চালান নিজের সংসার।
তিনি বলেন, ‘মারামারি হইলে যদি মোরা আহত হই, হেলে মোগো ডাক্তার খরচ কেউ দেবে না। তাই ভোট দিতেও যামুনা।’
শাহেদ আলির মতো সাধারণ ভোটাররাও কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছেন না। ভোট কেন্দ্রে যেতে আগ্রহ হারিয়েছেন এখানকার ভোটাররা, তবে ভোটারদেরকে কেন্দ্রে গিয়ে নির্বিঘ্নে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে সব ধরনের নিরাপত্তা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।
ঝালকাঠির পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল পিপিএম বলেন, ‘আগামী ৯ জুন রাজাপুর ও কাঠালিয়ার প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের জন্য শান্তিময় পরিবেশ ভোটারদেরকে উপহার দেয়া হবে। ভোটের আগের দিন থেকেই পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে দুই উপজেলায়।’
আরও পড়ুন:বড় ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়াই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। এ ধাপে ২৬ জেলার ৬০ উপজেলায় ৩৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
বুধবার ভোটগ্রহণ শেষে বিকেল রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি।
এদিন সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এখন ভোট গণনা চলছে।
সিইসি বলেন, ‘৬০ উপজেলায় ভোট হয়েছে। ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে। কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এজন্য ২৮ জনকে গ্রেপ্তার ও ৯ জনকে বিভিন্ন অপরাধে দণ্ড দেয়া হয়েছে।
‘এছাড়া ব্যালট বক্স ছিনতাইয়ের ঘটনায় ভৈরব উপজেলায় ভোট স্থগিত করা হয়েছে। বরিশালে সংঘর্ষে ৫ জন আহত হয়েছেন। তবে ইভিএমে ভালো কাজ হয়েছে।’
ভোট নিয়ে আপনি কি সন্তুষ্ট, এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে, এটা নিয়ে সন্তুষ্ট। তবে পলিটিক্যাল (রাজনৈতিক) বিচার বিশ্লেষণ করবো না।
উপজেলায নির্বাচন আয়োজনে এবার চার ধাপে ভোটগ্রহণের জন্য তফসিল দেয় ইসি। তবে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে স্থগিত ২০টি উপজেলায় আগামী ৯ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
চতুর্থ ধাপের ৬০টি উপজেলায় একজন চেয়ারম্যান, তিনজন ভাইস চেয়ারম্যান ও একজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২৫১, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৬৫ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২০৫ জনসহ মোট ৭২১ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আরও পড়ুন:টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় বুধবার।
এ দিন ভোরে মারা যান উপজেলার নগদা শিমলা ইউনিয়নের রামপুর চতিলা গ্রামে আলমগীর হোসেন ও আবুল কাশেম। সকাল ১০টায় চতিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পর্যায়ক্রমে তাদের জানাজা নামাজ হয়।
স্কুলটিতে ভোটকেন্দ্র হওয়ায় সকাল ৮টা থেকে ভোট চলছিল। এমতাবস্থায় প্রিসাইডিং অফিসারের অনুমতি সাপেক্ষে মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় হাজার খানেক মানুষ অংশ নেন। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মুশফিকুর রহমান সেলিম এবং নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সাব ইন্সপেক্টর মো. শাহজাহান জানান, সকাল থেকে কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। তারা অনেকটা অলস সময় পার করছিলেন। এমতাবস্থায় জানাজা নামাজে গ্রামের হাজার খানেক মানুষকে স্কুল মাঠে উপস্থিত হতে দেখে তারা অনুপ্রাণিত হন। কারণ তারা অধিকাংশই ছিলেন ওই কেন্দ্রের ভোটার।
ওই কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা দুই হাজার ৭৮ জন। দুপুর দুইটা পর্যন্ত শতাধিক ভোটার ভোট দিয়েছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সিনিয়র জেলা নির্বাচনি অফিসার মোহাম্মদ মতিয়ুর রহমান বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হচ্ছে। ভোটারের উপস্থিতি সন্তোষজনক।’
আরও পড়ুন:সিলেটে উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যায় সবচেয়ে আক্রান্ত উপজেলাগুলোর দুটি কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ। এই দুটি উপজেলায়ই বুধবার ভোটগ্রহণ চলছে।
সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারদের নৌকায় করে আসতে দেখা গেছে, তবে বেশির ভাগ কেন্দ্রেই ভোটার উপস্থিতি একেবারেই কম চোখে পড়ে।
জকিগঞ্জের কোনাগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, পুরুষ ভোটারদের কক্ষের সামনে পাঁচ থেকে ছয়জন দাঁড়ানো। নারী ভোটারদের কক্ষের সামনে ছিলেন দুজন।
এ ছাড়া প্রেমনগর গ্রামের পুরুষ ভোটারদের ২ নম্বর কক্ষে পৌনে দুই ঘণ্টায় ভোট পড়েছে দুটি।
উপজেলার বারহাল ইউনিয়নের কোনাগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আসার সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নৌকায় করে অনেক ভোটারকে কেন্দ্রে আসতে দেখা যায়।
এই কেন্দ্রের ভোটার রজত দেব বলেন, ‘বন্যার কারণে সড়ক ডুবে গেছে। ঘর থেকে বের হওয়ারই উপায় নেই। প্রার্থীর লোকজন বাড়িতে নৌকা পাঠিয়েছেন। তাই ভোট দিতে আসছি।’
প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জ্যোতিষ মজুমদার বলেন, ‘বন্যার কারণে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম। এ ছাড়া সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি থামলে ভোটার উপস্থিতি বাড়তে পারে।’
সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়ন প্লাবিত রয়েছে। এ উপজেলার ১১৩টি গ্রাম এখন পর্যন্ত প্লাবিত রয়েছে। এসব এলাকায় বন্যা কবলিত মানুষের সংখ্যা এক লাখ ৫৬ হাজার ১৪৭ জন। উপজেলার ৫৫ আশ্রয়কেন্দ্রে ৪০৮ জন মানুষ অবস্থান করছেন।
অন্যদিকে কানাইঘাট উপজেলাতেও পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়ন প্লাবিত রয়েছে। বন্যায় এই উপজেলায় ১৯০টি গ্রাম এখনও প্লাবিত। এসব এলাকায় বন্যাকবলিত মানুষের সংখ্যা ৮০ হাজার ৬১০ জন। বুধবার পর্যন্ত ৩২টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৪১ জন অবস্থান করছেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, কানাইঘাট উপজেলায় দুই লাখ আট হাজার ৯৯৯ জন ভোটার রয়েছেন। এছাড়া জকিগঞ্জে মোট ভোটার এক লাখ ৯১ হাজার ৫১৩ জন।
দুই উপজেলায় ২৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে জকিগঞ্জে চেয়ারম্যান পদে চারজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে চারজন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুইজন। অন্যদিকে কানাইঘাট উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে সাতজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে চারজন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুইজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এই নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল হাসান বলেন, ‘পানি উঠে যাওয়ায় জকিগঞ্জের পাঁচটি ও কানাইঘাটের চারটি ভোটকেন্দ্র পরিবর্তন করা হয়েছে। বাকিগুলোতে কোনো সমস্যা নেই। শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটগ্রহণ চলছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য