দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে সুনামগঞ্জ পৌরসভায় মাঠে সরব মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তবে আলোচনায় মেয়র প্রার্থীদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরাই। এ পৌরসভায় নির্বাচন আগামী ১৬ জানুয়ারি।
মেয়র পদে তিনজন প্রার্থী থাকলেও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নাদের বখতকে একতরফা বিজয়ী ধরেই নিয়েছে পৌরসভার জনগণ। এ কারণে মেয়র পদের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ নেই তাদের। সে সুযোগে মাঠে তৎপর কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
নির্বাচন অফিস থেকে জানা যায়, এই পৌরসভায় সুনামগঞ্জে তিনজন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র নাদের বখত, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মুর্শেদ আলম এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ্।
সাধারণ কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ৪৯ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৩ জন প্রার্থী।
মেয়র পদের আওয়ামী লীগ প্রার্থী নাদের বখত তার বড় ভাই আয়ূব বখত জগলুলের মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে মেয়র হয়েছিলেন। এলাকায়ও তিনি জনপ্রিয়। অন্যদিকে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির প্রার্থী তুলনামূলক দুর্বল হওয়ায় নির্বাচনে মেয়র পদে তেমন কোন আগ্রহ নেই সাধারণ ভোটারদের।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, পাড়ার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বাজারগুলোতে কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে চলছে আলাপ-আলোচনা। প্রার্থীরাও তাদের নির্বাচনি প্রচারের জন্য প্রতিনিয়ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাচ্ছেন মানুষের কাছে।
তবে এবারের ভোটে তরুণদের দিকেই নজর দিচ্ছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। বিভিন্ন সভা, গণসংযোগে তরুণ ভোটাদের কাছেই বার্তা ও ওয়ার্ডবাসীর উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারা। এ ছাড়া এবারের নির্বাচনে বেশ কয়েকজন তরুণ প্রার্থীও মাঠে থাকায় কাউন্সিলর পদে পরিবর্তনের আশা করছেন ভোটাররা।
নাগরিক অসুবিধার কারণে মাইকিং বন্ধ করে দিয়েছেন মেয়র প্রার্থীসহ বেশ কয়েকজন কাউন্সিলররা।
পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা পুর্নেন্দু তালুকদার জানান, এ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে চার জন প্রার্থী রয়েছেন। তারা প্রত্যেকেই পরিচিত। পাড়া মহল্লার আড্ডায় এখন কাউন্সিলর প্রার্থীদেরই কথা।
এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘আমি আশাবাদি আমি নির্বাচনে জয়ী হবো, সাধারণ মানুষ আমাকে খুব ভালোভাবেই গ্রহণ করেছে। জয়ী হলে অবশ্যই আমি সাধারণ মানুষের জীবনমান ও ওয়ার্ডের উন্নয়নে কাজ করে যাব।’
পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, তারা তাদের কাউন্সিলর হিসেবে সাবেক কাউন্সিলর আবাবিল নূরকেই বিজয়ী দেখতে চান। কারণ তিনি করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছেন এবং অসহায় ও দরিদ্রদের খাবার পৌঁছে দিয়েছেন।
পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে লড়ছেন নয় জন প্রার্থী। সবচেয়ে বেশি প্রার্থী এই ওয়ার্ডেই। অন্যদিকে ভোটার সংখ্যা কম। তবে আলোচনার কেন্দ্রে সাবেক কাউন্সিলর গোলাম সাবেরীন ও কাউন্সিলর প্রার্থী বিমান কান্তি রায়।
২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও সাবেক কাউন্সিলর সৈয়দ ইয়াছিনুর রশিদ বলেন,‘আমাকে আমার ভোটারেরাই আবার দাড় করিয়েছেন। বিগত নির্বাচনের মতো এবারও তারা আমার পাশে থাকবেন বলে আমি আশাবাদী।’
এদিকে আওয়ামী লীগ মনোনিত মেয়র পদ প্রার্থী নাদের বখত ও তার সমর্থকদের অন্য সময়ের তুলনায় প্রচার কম। তার পক্ষে দলীয় নেতাকর্মীরাই বিভিন্ন জায়গায় মতবিনিময় করছেন। বাকি দুই প্রার্থী তাদের ইমেজ নিয়ে সংকটে পড়লেও ভোটের মাঠে লড়ছেন।
সুনামগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক মেয়র নাদের বখত বলেন, ‘দল এবারও আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন এবং সাধারণ মানুষের কাছে আবারও নিজেকে নিয়ে যেতে পারবো।’
বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মুর্শেদ আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পৌরসভা নির্বাচনে দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে তাই আমি প্রার্থী হয়েছি। যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে বিজয় আমাদেরই হবে। সবার বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি, গণসংযোগ করতেছি। মানুষ আমাদের পাশে রয়েছে।’
সুনামগঞ্জ জেলার নির্বাচনি কর্মকর্তা মুরাদ উদ্দিন হাওলাদার জানান, নির্বাচনি পরিস্থিতি এখনও পর্যন্ত ভালো রয়েছে।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে মোট ১৬টি কেন্দ্রে ভোটার রয়েছেন ৪৭ হাজার ১৫ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ২৩ হাজার ২৩৮ এবং নারী ভোটার রয়েছেন ২৩ হাজার ৭৭৭ জন।
আরও পড়ুন:আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের দুই থানা ও রেঞ্জের ২৩ থানার ওসিকে বদলি করা হয়েছে।
পুলিশ হেডকোয়াটার্সের অ্যাডিশনাল আইজি (প্রশাসন) মো. কামরুল আহসান ও মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামের সাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
যেখানে পটুয়াখালীর বাউফল থানার ওসি এটিএম আরিচুল হককে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থানায়, আর বরিশালের বানারীপাড়া থানার ওসি এস. এম মাসুদ আলম চৌধুরীকে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের এয়ারপোর্ট থানায় বদলি করা হয়েছে।
অপরদিকে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আনোয়ার হোসেনকে জেলার গৌরনদী মডেল থানায় আর এয়ারপোর্ট থানার ওসি মো. হেলাল উদ্দিনকে বেতাগী থানায় বদলি করা হয়েছে।
এ দিকে রেঞ্জের বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ থানার ওসি এস এম মাকসুদুর রহমান বাবুগঞ্জ থানায়, গৌরনদী মডেল থানার ওসি আফজাল হোসেনকে বাকেরগঞ্জ থানায়, মুলাদী থানার ওসি মাহবুবুর রহমানকে বরগুনা জেলার বেতাগী থানায়, বাবুগঞ্জ থানার ওসি তুষার কুমার মন্ডলকে বরগুনার বামনা থানায় বদলি করা হয়েছে।
পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী থানার ওসি নুরুল ইসলাম মজুমদারকে দশমিনা থানায়, দশমিনা থানার ওসি আনোয়ার হোসেন তালুকদারকে মহিপুর থানায়, মহিপুর থানার ওসি ফেরদৌস আলম খানকে গলাচিপা থানায়, গলাচিপা থানার ওসি শোনিত কুমার গায়েনকে বাউফল থানায় বদলি করা হয়েছে।
ভোলা জেলার দুলারহাট থানার ওসি আনোয়ারুল হককে তজুমদ্দীন থানায়, ভোলা সদর মডেল থানার ওসি শাহীন ফকিরকে বোরহান উদ্দিন থানায়, তজুমদ্দীন থানার ওসি মাকসুদুর রহমান মুরাদকে দুলারহাট থানায়, বোরহানউদ্দিন থানার ওসি মনির হোসেন মিয়াকে ভোলা সদর মডেল থানায় বদলি করা হয়েছে।
পিরোজপুরের নাজিরপুর থানার ওসি হুমায়ুন কবিরকে কাউখালী থানায়, কাউখালী থানার ওসি জাকারিয়াকে বরিশালের মুলাদী থানায়, পিরোজপুর সদর থানার ওসি আবির মোহাম্মদ হোসেনকে ভান্ডারিয়া থানায়, ভান্ডারিয়া থানার ওসি আসিকুজ্জামানকে পিরোজপুর সদর থানায় বদলি করা হয়েছে।
বরগুনার পাথরঘাটা থানার ওসি শাহ আলম হাওলাদারকে পিরোজপুরের নাজিরপুর থানায়, বেতাগী থানার ওসি আনোয়ার হোসেনকে ঝালকাঠি সদর থানায়, বামনা থানার ওসি মাইনুল ইসলামকে বরিশালের বানারীপাড়া থানায় বদলি করা হয়েছে।
ঝালকাঠির কাঠালিয়া থানার ওসি শহিদুল ইসলামকে পাথরঘাটা থানায়, ঝালকাঠি সদর থানার ওসি নাসির উদ্দিন সরকারকে কাঠালিয়া থানায় বদলি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:সিলেট-৫ আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির সিলেট মহানগর শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ।
এদিকে ধর্মভিত্তিক সংগঠন আনজুমানে আল ইসলাহর সভাপতি মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী এ আসনে হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণার পর মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসেছেন তিনি।
এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সীমান্তিকের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আহমদ আল কবির। এলাকায় তারও নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে মাসুক উদ্দিনের ভোটে ভাগ বসাতে পারেন আহমদ আল কবিরও।
সিলেট-৫ আসনে এ তিনজন ছাড়াও প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় পার্টির শাব্বীর আহমদ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) মো. খায়রুল ইসলাম, তৃণমূল বিএনপির কুতুব উদ্দিন শিকদার ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. বদরুল আলম।
জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন না হলে এ আসনে ত্রিমুখী লড়াই হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মূল লড়াই হতে পারে মাসুক উদ্দিন, আহমদ আল কবির ও হুছামুদ্দীনের মধ্যে, তবে আওয়ামী লীগ থেকে হুছামুদ্দীনকে ছাড় দেয়া হলে পাল্টে যাবে এ হিসাব।
মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরীর বাবা ফুলতলী হুজুর হিসেবে পরিচিত আল্লামা আবদুল লতিফ চৌধুরী। সিলেটজুড়ে রয়েছে তার অসংখ্য ভক্ত ও মুরিদ। আবদুল লতিফ চৌধুরী গড়ে তোলেন ধর্মভিভিত্তিক সংগঠন আনজুমানে আল ইসলাহ। তার মৃত্যুর পর ছেলে হুছামুদ্দীনই এ সংগঠনটি পরিচালনা করছেন।
তিনি ইসলামপন্থি নেতাদের মধ্যে আওয়ামী ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। সিলেট-৫ আসনের অন্তর্ভুক্ত জকিগঞ্জে তার বাড়ি।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঙ্গলবার তার সাক্ষাতের পর এখানে আওয়ামী লীগের ছাড়ের বিষয়টিও আলোচনা হচ্ছে। সাক্ষাতের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই তাকে ডেকে পাঠান বলে জানান মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী।
সাক্ষাতের বিষয়ে হুছামুদ্দীন চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গত বছর ১২ জানুয়ারি নতুন কারিকুলাম ও পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলামি বিশ্বাসবিরোধী বিষয়সমূহ বাদ দিয়ে তা সংশোধন, মাদ্রাসার জন্য স্বতন্ত্র কারিকুলাম প্রণয়নসহ ১০ দফা দাবি তুলে ধরেছিলাম। এবারও সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
‘ওই সময় প্রধানমন্ত্রী সিলেট-৫ থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় আমাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে সিলেট বিভাগের অন্য আসনে আওয়ামী লীগকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।’
সিলেট-৫ আসন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে আশ্বস্ত করেছেন নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে। এ ছাড়া আমাকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন। দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। সবকিছু এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়, তবে ছাড়ের বিষয়ে কোনো আলাপ হয়নি।’
সিলেট-৫ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য পূবালী ব্যাংক ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সবেক চেয়ারম্যান হাফিজ আহমদ মজুমদার। বয়সজনিত কারণে এবার প্রার্থী হননি এই আওয়ামী লীগ নেতা, তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগে তার নিজস্ব বলয় রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৫ আসনে আওয়ামী লীগ ত্রিধারায় বিভক্ত। এসব বলয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন হাফিজ আহমদ মজুমদার, মাসুক উদ্দিন আহমদ ও আহমদ আল কবির। এ কারণে এবার আওয়ামী লীগের ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর সুবিধা পেতে পারেন হুছামুদ্দীন।
এ সূত্র আরও জানায়, জকিগঞ্জে হুছামুদ্দীনের শক্ত অবস্থান থাকলেও কানাইঘাট উপজেলায় তার তেমন ভোট নেই।
ছাড় বা দলে বিভক্তির কথা অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাসুক উদ্দিন বলেন, ‘নেত্রী আমাকে নৌকা দিয়ে এলাকায় পাঠিয়েছেন। জোট বা ছাড়ের বিষয়ে আমাকে কিছু বলেননি। এ ছাড়া জকিগঞ্জ-কানাইঘাটে আওয়ামী লীগও ঐক্যবদ্ধ।’
আরও পড়ুন:ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ৩৩টি থানাসহ সারা দেশের ৩৩৮টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বদলি করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অনুমোদনে পর ওসিদের এ বদলি কার্যক্রম শুরু হয়।
বৃহস্পতিবার পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশের ৩৩৮ থানার ওসিকে বদলির অনুমোদন দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
গত ৩০ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে যেসব থানার ওসিদের বর্তমান কর্মস্থলে ছয় মাসের বেশি চাকরির মেয়াদ হয়েছে, তাদের অন্যত্র বদলি করতে চিঠি দেয় ইসি। এর পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার ৩৩৮ থানার ওসির বদলির প্রস্তাব পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর ওসি বদলির অনুমোদন দেয় নির্বাচন কমিশন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার বাতিল করা মনোনয়ন ফিরে পেতে তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার ইসিতে আপিল করেছেন ১৫৫ জন প্রার্থী। এ নিয়ে গত তিন দিনে মোট আপিলের সংখ্যা ৩৩৮ হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব ও মুখপাত্র মো. জাহাংগীর আলম।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে নিয়ে কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বাতিল হওয়া ৭৩১ জন প্রার্থীর মধ্যে প্রথম দিন আপিল করেছিলেন ৪২ জন, দ্বিতীয় দিন করেন ১৪১ জন আর তৃতীয় দিনে করেছেন ১৫৫ জন। সব মিলিয়ে আজ পর্যন্ত আপিল করেছেন ৩৩৮ জন।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন ৩৩৮ জন থানার ওসি বদলিতে সম্মতি জ্ঞাপন করেছে। একইসঙ্গে ইউওনদের বদলির ক্ষেত্রে তিন ধাপে প্রস্তাব এসেছিল; প্রথম ধাপে ৪৭ জন, দ্বিতীয় ধাপে ১১০ জন এবং তৃতীয় ধাপে ৪৮ জন। মোট ২০৫ জনের বদলির প্রস্তাবে নির্বাচন কমিশন সম্মতি দিয়েছে।’
এছাড়া ৪০তম বিসিএস থেকে উপজেলা থানা নির্বাচন অফিসার হিসেবে নন ক্যাডার ৮৩ জনকে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ প্রদান করেছে। তারা ১২ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে যোগদান করবেন বলে জানান তিনি।
দেশের সুবিধাবাদী বুদ্ধিজীবীদের মুখোশ উন্মোচন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘বিএনপিই দেশের প্রথম কিংস পার্টি। কারণ জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে সরকার গঠন করেছিলেন। তারপর তিনি সরকারের ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে দল গঠন করেছিলেন।’
হাছান মাহমুদ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মতবিনিময়কালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
রাজনীতিতে নাগরিক সমাজ ও বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নাগরিক সমাজ সময়ে সময়ে যেসব কথাবার্তা বলে সেগুলো আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখি। কিন্তু দেশজুড়ে এক মাসের বেশি সময় ধরে যে অগ্নিসন্ত্রাস পরিচালনা করা হচ্ছে, অনেক মানুষ এই অগ্নিসন্ত্রাসের বলি হয়েছে, সেই আওয়াজটা সচেতন নাগরিক, সাংবাদিক সমাজ এবং নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে আসা প্রয়োজন। কিন্তু নাগরিক সমাজের কোনো বক্তব্য-বিবৃতি নেই। এটি খুবই দুঃখজনক।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমি মনে করি, নাগরিক সমাজ বা বুদ্ধিজীবী বলে যারা পরিচিত তারা সময়ে সময়ে বিবৃতি দেন আর এখন নিশ্চুপ, তাদেরকে চিহ্নিত করা প্রয়োজন। এরা সুবিধাবাদী এবং এদের মুখোশ উন্মোচন হয়েছে।’
‘আওয়ামী লীগ দল ভাগানোর রাজনীতি করছে’- বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর এমন মন্তব্য প্রসঙ্গে মন্ত্রী হাছান বলেন, ‘আসলে বিএনপি থেকে সবাই পালিয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্র থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত নেতারা বিএনপি থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপি নেতাদের কাছে আমার প্রশ্ন- এই দলটা কেন করেন, যে দল আপনাদেরকে সংসদ নির্বাচন, উপজেলা বা জেলা পরিষদ নির্বাচন তো দূরের কথা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনও করতে দেয় না?’
তিনি বলেন, ‘এক সময় রিজভী সাহেবরা দেখবেন যে ওনারা কয়েকজন ছাড়া আর কেউ নেই, ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী। কারণ বিএনপির এই অপরাজনীতির সঙ্গে দলটির নেতারাই একমত নন। রিজভী সাহেবের মতো কিছু মানুষ আছেন- ইয়েস স্যার, হ্যাঁ স্যার, জি স্যার। তারাই তারেক রহমানের নির্দেশনা মেনে এই অগ্নিসন্ত্রাসের আহ্বান জানাচ্ছেন। এই অপরাজনীতি থেকে তাদের বের হয়ে আসা প্রয়োজন।’
বিএনপি অংশ না নিলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে কি না- এ প্রশ্নে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘একটি দল নির্বাচনে না এলে সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না এমন তো সংবিধানে লেখা নেই। পৃথিবীর কোনো আইনেও লেখা নেই। বাংলাদেশে বহু নির্বাচন হয়েছে যেখানে বহু দল অংশ নেয়নি। যেমন ১৯৭০ এর নির্বাচনেও অনেক বড় নেতার নেতৃত্বাধীন দল অংশগ্রহণ করেনি। কিন্তু মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিলো এবং সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়েছে।’
‘এবার অনেকের প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার পরও প্রতি আসনে প্রায় ৭ জন করে প্রার্থী আছেন। গ্রামে-গঞ্জে নির্বাচনের উৎসব শুরু হয়ে গেছে। সুতরাং দেখতে পাবেন ৭ জানুয়ারির নির্বাচনেও জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ থাকবে।’
আরও পড়ুন:নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে অনুসন্ধান কমিটির শোকজের জবাব দিয়েছেন আলোচিত আইনজীবী স্বতন্ত্রপ্রার্থী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির কাছে তিনি লিখিত ব্যাখ্যা দেন।
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাজনীতিবিদ হিসেবে বা একজন প্রার্থী হিসেবে আমার আত্মপ্রকাশ মাত্র দু’সপ্তাহের, কিন্তু এর আগেই একজন ফুটবলার হিসেবে বা ফেসবুকের একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি হিসেবে আমি যেখানেই দাঁড়াই, সেখানেই কিছু মানুষ এসে যায়। পথসভার মাধ্যমে জনগণের চলাচলে বাধা সৃষ্টির অভিযোগের সঙ্গে আমি কোনোভাবেই জড়িত নই। আর যেহেতু ওখানে কোনো কর্মসূচি ছিল না, তাই পুলিশকে জানানো হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আইনের মানুষ হিসেবে আমার সবসময়ই লক্ষ্য থাকে, যেন কোনো বিধি লঙ্ঘিত না হয়। আমি আমার ব্যাখ্যা দিয়েছি, এখন বাকিটা আদালতের বিষয়।’
গত ৪ ডিসেম্বর নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে হবিগঞ্জ-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে লিখিত ব্যাখ্যা দাখিলের নির্দেশ দেন ওই আসনের নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির প্রধান হবিগঞ্জ আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ সবুজ পাল।
নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির পত্রে বলা হয়, গত ২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় চুনারুঘাট উপজেলার আসামপাড়া বাজারে এক নির্বাচনি জনসভা করেন ব্যারিস্টার সুমন। প্রথমত, এটি একটি জনাকীর্ণ বাজার। দ্বিতীয়ত, উক্ত নির্বাচনি সমাবেশের জন্য বাজারের তিন রাস্তার মোড়সহ বাজারের ওপর দিয়ে চলাচলকারী প্রধান তিনটি সড়ক বন্ধ করে জনগণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করা হয়। তৃতীয়ত, উক্ত নির্বাচনি সমাবেশের বিষয়ে স্থানীয় পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়নি। ফলে, সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮-এর বিধি ৬ (খ, গ, ঘ) ভঙ্গ করা হয়েছে বলে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।
৭ ডিসেম্বর তারিখের মধ্যে ব্যারিস্টার সুমনকে এই কমিটির কাছে লিখিত ব্যাখ্যা দেয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামনের বছর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দেড় কোটি ভোট পাওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন।
রিপাবলিকান দল থেকে প্রেসিডেন্ট পদে আবারও মনোনয়নপ্রত্যাশী ট্রাম্প স্থানীয় সময় বুধবার ফক্স চ্যানেল আয়োজিত এক ইভেন্টে দর্শক-সমর্থকদের সামনে এ কথা বলেন। খবর এনডিটিবির।
তিনি সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট থাকতে আপনাদের সঙ্গে নিয়ে যা করেছি তা আর কাউকে করতে দেখিনি। আমি মনে করি ৭৫ লাখ নয়, দেড় কোটি ভোটার আমার সঙ্গে আছে।’
ট্রাম্প দর্শকদের ইঙ্গিত করে বলেন, ‘নিরাপদ সীমান্ত, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী, কম ট্যাক্স ও কম খরচ সবারই চাওয়া, যা আমি করেছি এবং করব। আপনি নিশ্চয়ই খুব সহজে কম মূল্যে নিজের বাড়িটি কিনতে চাইবেন।’
২০২৪ এর নির্বাচনে ট্রাম জিতে গেলে যুক্তরাষ্ট্র একজন স্বৈরাচারি শাসক পাবে বলে বেশ কয়েকদিন যাবত ভোটারদের সর্তক করে আসছেন বিরোধী ডেমোক্র্যাট ও তার দলের কিছু রিপাবলিকান রাজনৈতিক কর্মী ও বিশ্লেষকরা।
এ বিষয় তিনি ভোটারদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘আমি কখনোই স্বৈরশাসক হব না।’
ডোনাল্ড ট্রাম্প রিপাবলিকান দলের প্রার্থী হিসেবে ২০১৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০২১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন কিন্তু পরবর্তী নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে হেরে যান।
দেশটির আইন অনুযায়ী একজন ব্যক্তি দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে থাকতে পারেন। তাই ট্রাম্পের আরও একবার এ পদে দায়িত্ব পালনের সুযোগ আছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য