× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

চাকরি-ক্যারিয়ার
When will the job tangle open?
google_news print-icon

কবে খুলবে চাকরির জট?

কবে-খুলবে-চাকরির-জট?
করোনাকালীন জট লেগেছে নিয়োগ প্রক্রিয়ায়। ছবি: সংগৃহীত
প্রতিবছর দেশে ১৮ লাখ লোক শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। করোনায় দেড় বছর ধরে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ বন্ধ। বেসরকারি খাতও স্থবির। এ রকম অবস্থায় দেশে কর্মসংস্থানের চিত্রটি আগের যে কোনও সময়ের চেয়ে নাজুক।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৭ সালের সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ বলছে, দেশে নারী-পুরুষ মিলিয়ে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৬ কোটি ৩৫ লাখ। এদের মধ্যে শ্রমবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ৬ কোটি ৮ লাখ। আবার কর্মক্ষম কিন্তু কাজ নেই– এমন বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ। অর্থাৎ দেশে বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ।

২০১৭ সালের পর বিবিএসের আর কোনো শ্রমশক্তি জরিপ হয়নি।

করোনা ও দফায় দফায় লকডাউনের দেশে একদিকে প্রায় দেড় বছর ধরে সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় সব ধরনের নিয়োগপ্রক্রিয়া বন্ধ।

অন্যদিকে করোনা ও লকডাউনের বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নেতিবাচক প্রভাবে দেশে শিল্প খাতে উৎপাদন ও সেবা সরবরাহ ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। বাধাগ্রস্ত হয়েছে আমদানি-রপ্তানি। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতার কারণে বেসরকারি খাতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও কমে গেছে।

পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন নিয়োগ তো দূরের কথা, উলটো কর্মীদের ছাঁটাই করছে। এ ছাড়া চাকরির বাইরে যারা ব্যবসা-বাণিজ্য বা অন্য কোনো খাতে সম্পৃক্ত থেকে আত্ম-কর্মসংস্থানমূলক উদ্যোগে ছিল, তাদের অনেকেই সক্ষমতা হারিয়ে বেকারের খাতায় নাম লিখিয়েছে। নতুন শিক্ষার্থীরাও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বেকারের তালিকায়। শিক্ষাজীবন শেষ হয়েছে, কিন্তু চাকরির সুযোগ হয়নি। এতে শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিতের পাশাপাশি দক্ষ-অদক্ষ বেকারের হারও এই সময়ে ঊর্ধ্বমুখী।

সব মিলিয়ে দেশে বেকারের মিছিল দীর্ঘ হয়েছে সবাই এমনটা ধারণা করলেও আক্ষরিক অর্থে এখন বেকারের প্রকৃত সংখ্যা কত, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই সরকারি-বেসরকারি কোনো সংস্থার হাতে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা তথ্য বলছে, দেশে মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী তরুণের এক-তৃতীয়াংশ বা ৩৩ দশমিক ৩২ শতাংশ পুরোপুরি বেকার। আর ১৮ দশমিক ১ শতাংশ পার্টটাইম বা খণ্ডকালীন কাজে নিয়োজিত।

শ্রমবাজারসংক্রান্ত বিবিএসের সর্বশেষ জরিপ আরও বলছে, প্রতিবছর দেশে ১৮ লাখ লোক শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) দাবি করছে, এ সংখ্যা ২০ লাখের কম নয়।

এ দিকে বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন (বিইএফ) জানিয়েছে, প্রতিবছর শ্রমবাজারে যে সংখ্যক লোক প্রবেশ করছে, তাদের মধ্যে সরকারি খাত কর্মসংস্থানের জোগান দিচ্ছে মাত্র ৪ শতাংশ, বাকি ৯৬ শতাংশেরই কর্মসংস্থান ঘটছে বেসরকারি খাতে, যেখানে অভ্যন্তরীণ বেসরকারি খাতের অবদান ৮০ শতাংশের বেশি। বাকি অংশ কাজের খোঁজে যাচ্ছে বিদেশে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) সাবেক সভাপতি কামরান টি রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, অভ্যন্তরীণ শ্রমবাজারে কাজের উৎস্য দুটি: প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক। প্রাতিষ্ঠানিক খাতে বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ৮৫ লাখ লোক কাজ করছে। এর বিপরীতে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করছে এমন লোকের সংখ্যা ৫ কোটি ২৩ লাখেরও বেশি। তবে যারা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করছে, তাদের বেশির ভাগেরই চাকরির অনিশ্চয়তা, অপেক্ষাকৃত কম বেতন-ভাতা এবং সেটিও নিয়মিত পাওয়ার অনিশ্চয়তা আছে। মূলত এসব কারণেই প্রাতিষ্ঠানিক খাতে চাকরিপ্রত্যাশীদের ঝোঁক বেশি। তাই কর্মপ্রত্যাশায় উদ্গ্রিব বেকাররা একটি চাকরির বিজ্ঞপ্তির আশায় চাতক পাখির মতো তাকিয়ে শ্রমবাজারের দিকে।

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের কান্ট্রি ইকোনমিস্ট ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক ড. নাজনীন আহমেদ এ প্রসঙ্গে নিউজবাংলাকে জানান, ‘শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো বিশ্বই একটা ক্রাইসিসের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। এরই প্রভাব পড়েছে সরকারি কিংবা বেসরকারি অর্থাৎ দেশের পুরো শ্রমবাজারে। পরিস্থিতিটাই আসলে প্রতিকূল। প্রতিটি নিয়োগের একটি প্রক্রিয়া আছে। এই পরিবেশে চাইলেই তো কিছু জায়গায় এখন নিয়োগটা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সরকারের রেগুলার নিয়োগে যেমন কিছুটা সমস্যা হয়েছে, একইভাবে বেসরকারি খাতেও সেই সমস্যা হয়েছে। এটা আমাদের মেনে নিতে হবে। একই সঙ্গে ভালো সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’

সরকারি চাকরির যে অবস্থা

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গত ১৫ জুন প্রকাশিত সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস, ২০২০’ এর তথ্য মতে, দেশে এখন পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে মোট অনুমোদিত পদ রয়েছে ১৮ লাখ ৮৫ হাজার ৮৬৮টি। এর মধ্যে বর্তমানে ১৫ লাখ ৪ হাজার ৯১৩ জন কর্মরত অবস্থায় সরকারি বেতন-ভাতার সুবিধা ভোগ করছেন। যেখানে নারী রয়েছেন ৪ লাখ ১৪ হাজার ৪১২ জন।

অর্থাৎ অনুমোদিত পদের বিপরীতে দেশে সরকারি চাকরিতে শূন্য পদ ৩ লাখ ৮০ হাজার ৯৫৫টি। প্রথম শ্রেণির ৪৬ হাজার ৬০৩টি ও দ্বিতীয় শ্রেণির ৩৯ হাজার ২৮টি পদ শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া তৃতীয় শ্রেণির শূন্য পদ ১ লাখ ৯৫ হাজার ৯০২টি এবং চতুর্থ শ্রেণির ৯৯ হাজার ৪২২টি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারি চাকরির লোভনীয় পদগুলোর (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেয়া হয় সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে। এ ছাড়া সরকারি বিভিন্ন দপ্তর-অধিদপ্তর কিংবা বিভাগ নিজেদের মতো করে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদগুলোতে নিয়োগ দেয়। এর বাইরে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি (বিএসসি) নিয়োগ দিয়ে থাকে রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা পদে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক বছর চার মাসে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ এসব পদে ৯৯ শতাংশেরও বেশি নিয়োগ অসম্পন্ন থেকে গেছে। করোনার কারণে এসব নিয়োগ আটকে গেছে অথবা নিয়োগ বিধিমালা চূড়ান্ত না হওয়া কিংবা মামলা জটিলতাসহ নানা কারণে সম্পন্ন করা যায়নি।

এতে করে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। একটি চাকরির আশায় দিন পার করতে গিয়ে ইতিমধ্যে দেশের প্রায় দেড় লাখ চাকরিপ্রত্যাশীর আবেদনের বয়স শেষ হয়ে গেছে বা শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন তথ্য মতে, ৪১তম বিসিএসে আবেদন করে পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে পৌনে ৫ লাখ বেকার। এর বাইরে শুধু খাদ্য অধিদপ্তরের ১৬৬টি পদের বিপরীতে নিয়োগ আবেদন জমা পড়েছে প্রায় ১৪ লাখ। প্রায় পৌনে ৭ লাখ বেকারের আবেদন জমা পড়েছে সমাজসেবা অধিদপ্তরের ইউনিয়ন সমাজকর্মী হওয়ার আশায়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ১৪১টি পদে নিয়োগ পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন ২ লাখের বেশি প্রার্থী। এর বাইরে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ৪ হাজার ৭৫০টি পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করে পরীক্ষার অপেক্ষায় আছেন ৬ লাখের বেশি প্রার্থী।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ) মো. লাইসুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একটি বিশেষ পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছে দেশ। এ কারণে সরকারি নিয়োগের বেশ কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়নি। তবে থেমেও ছিল না। করোনার মধ্যেই স্বাস্থ্য খাতে ডাক্তার, নার্সসহ মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের কার্যালয় এবং বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, জনতা ব্যাংকসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে দু-একটি পদের বিপরীতে কিছুসংখ্যক প্রার্থীর নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে, যেগুলো আটকে আছে, সেগুলোও নিয়োগের প্রক্রিয়ার মধ্যেই রয়েছে।’

সরকারি খাতে কর্মসংস্থানের হার কী পরিমাণ বেড়েছে, জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা জানান, গত ১০ বছরে প্রায় ১০ লাখ নতুন পদ সৃজন করা হয়েছে।

নতুন সৃষ্টি করা পদগুলোয় কী পরিমাণ নিয়োগ হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জনপ্রশাসনের কাজ পদ সৃজন করা। আগে যে কোনও নিয়োগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে জানানো হতো, সম্মতি নেয়া হতো। এখন সেটি হয় না। প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ নিজেরাই নিজেদের মতো করে নিয়োগ দেয়। বিচ্ছিন্নভাবে নিয়োগ হয় বলে নতুন কত নিয়োগ হলো, সেটি মন্ত্রণালয়ের হাতে নেই। তবে লকডাউন প্রত্যাহার হওয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে চলেছে। নিয়োগ প্রক্রিয়াও ধীরে ধীরে শুরু করা হচ্ছে। চাকরিপ্রত্যাশীরা অচিরেই এর সুফল পাবে।’

কী অবস্থা বেসরকারি খাতে

করোনাকালে সরকারি চাকরির পাশাপাশি বেসরকারি নতুন চাকরিও ব্যাপক হারে কমেছে। গত বছরের মার্চে দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করলেও চলতি বছরের মার্চের শেষ সপ্তাহে আবার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। এমন অবস্থায় গত ৫ এপ্রিল থেকে সরকার নিষেধাজ্ঞা (লকডাউন) জারি করে, যা শেষ হয় গত ২৩ জুলাই। আবারও লকডাউনে পড়ার আশঙ্কা নিয়ে এখন গত কয়েক দিন ধরে আবারও স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টায় বেসরকারি খাত।

কিন্তু গত প্রায় দেড় বছরে দেশের অর্থনীতিতে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে, তার প্রভাবে স্থবির হয়ে পড়েছে গোটা বেসরকারি খাত। এতে বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে চাকরির বাজার। বন্ধ রয়েছে নতুন নিয়োগ। অনেক কোম্পানি তাদের পুরাতন কর্মীদের ছাঁটাইও করেছে। ফলে বেড়েই চলেছে কর্মহীনদের সংখ্যা।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বেকারত্বের সংকট আছে। এটা দিন দিন বাড়ছে। সরকার স্কুল-কলেজগুলো বন্ধ রেখে এটাকে একটু কম দেখাচ্ছে। অনেকে মনে করছেন তারা এখনও পরীক্ষা দিচ্ছেন। প্রতিবছর ২০ লাখ লোক শ্রমবাজারে আসছে। সেটা হয়তো এখন ৪০-৫০ লাখে দাঁড়িয়েছে। নতুনভাবে চাকরিচ্যুত হচ্ছে। সব মিলিয়ে দেশে ১ কোটি লোকের কর্মসংস্থানের একটা বিশাল সমস্যা তৈরি হয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকার বলছে বেকারত্বের হার ৪ শতাংশ। এর মানে হচ্ছে, আমরা ইউরোপ-আমেরিকার চেয়ে ভালো আছি। এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? কর্মসংস্থানের সুব্যবস্থা করতে হলে আগে প্রকৃত বেকারত্বের চিত্র তুলে আনতে হবে। এরপর পরিকল্পনা ধরে এগোতে হবে।’

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা তথ্য মতে, প্রাতিষ্ঠানিক খাতে চাকরি করে এমন ১৩ ভাগ মানুষ করোনায় কাজ হারিয়েছেন। তবে চাকরি আছে কিন্তু বেতন নেই, এমন মানুষের সংখ্যা আরো বেশি। আর ২৫ ভাগ চাকরিজীবীর বেতন কমে গেছে। সব মিলিয়ে করোনার প্রভাবে ১ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ‘ট্যাকলিং দ্য কোভিড-১৯ ইয়ুথ এমপ্লয়মেন্ট ক্রাইসিস ইন এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক’ শীর্ষক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, ‘করোনার প্রভাবে বাংলাদেশে স্বল্প মেয়াদে কর্মসংস্থান হারাবে ১১ লাখ তরুণ। আর দীর্ঘ মেয়াদে এ সংখ্যা ১৬ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে।’

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সাতটি খাতে বেশি কাজ হারানোর আশঙ্কার উল্লেখ করে বলা হয়, এসব খাতে কাজ হারাতে পারে কর্মক্ষম যুবকদের ৭৫ দশমিক ৯ শতাংশ। খাতগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের কৃষি খাতে কাজ হারানো তরুণদের হার ২২ দশমিক ৯ শতাংশ, নির্মাণ খাতে কাজ হারাতে পারে এমন তরুণের হার ১২ দশমিক ৮ শতাংশ, বস্ত্র ও পোশাক খাতে ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ ও খুচরা বাণিজ্যে ১২ দশমিক ১ শতাংশ। হোটেল ও রেস্টুরেন্টে ২ দশমিক ৬ শতাংশ, অভ্যন্তরীণ পরিবহন খাতে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ এবং অন্যান্য সেবা খাতে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ।

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের হিসেবে করোনার মধ্যে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ১০ হাজার পোশাক শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) সাবেক সভাপতি কামরান টি রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা ঠিক, করোনায় দফায় দফায় লকডাউনের কারণে বেশির ভাগ শিল্প-কারখানা বন্ধ ছিল। উৎপাদনে থাকলেও শতভাগ সক্ষমতা ছিল না। এতে শিল্প পরিচালনায় সমস্যা ছিল। ফলে লোকজনও বেকার হয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে করোনার কারণে দেশে বিভিন্ন খাতে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ বেকার হয়েছে।

‘তবে এটাও শুনতে পাই, পরিস্থিতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে তাদের অন্তত ৭০ শতাংশই আবার কাজে ফিরে এসেছে। কিন্তু যারাই ফিরে এসেছে, তাদের বড় একটা অংশ আগের কাজে ফিরতে পারেনি। তারা পেশা পরিবর্তন করেছে। যারা উৎপাদন ও সেবা খাতের সঙ্গে যুক্ত ছিল কেউ কেউ কৃষিকাজে যোগ দিয়েছে। এ কারণে তাদের আয়েও পরিবর্তন এসেছে।’

সংকটের কথা স্বীকার করলেও ইউএনডিপির কান্ট্রি ইকোনমিস্ট ড. নাজনীন আহমেদ দাবি করেন, ‘শ্রমবাজারে মহাপ্রলয় ঘটে যাওয়ার মতো এমন কোনো কিছু হয়নি। প্রতিবছর ২০ লাখ লোক শ্রমবাজারে প্রবেশ করে বলে করোনার কারণে কারো চাকরি হয়নি, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই।’

তিনি বলেন, ‘নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না তা নয়। প্রতিবছর এমনিতেই ১৩-১৪ লাখ নিয়োগ হয়। এর বাইরে বিদেশ যায় ২-৩ লাখ। তবে অবশ্যই এবার কিছুটা কম হয়েছে। কিন্তু কত কম হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান এখনও নেই।’

ড. নাজনীন দাবি করেন, ‘সব জায়গা কিন্তু বন্ধ ছিল না। কৃষি খাতে নিয়োগ হয়েছে। যেসব খাত ভালো করছে, যেমন আইটি সেক্টর, টেলিকম, ই-কমার্স খাত, ফার্মাসিউটিক্যালস, সেখানেও নিয়োগ হয়েছে। আমাদের গ্রোথ হয়েছে। যখন ইকোনমিতে গ্রোথ হয়, তখন বুঝতে হবে সেখানে নিশ্চয়ই নেতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। অতিদরিদ্র মানুষ কাজে ফেরত এসেছে। তারা বসে নেই। লকডাউনেও কাজ করেছে। সমস্যা কিছুটা হয়েছে নিম্ন মধ্যবিত্তের।’

জট খুলবে না গণটিকা ছাড়া

বিশ্ব থেকে করোনা সহজে যাবে না। কিছুদিন পর পর লকডাউন দিয়েও করোনা মোকাবিলা সম্ভব হবে না। আগামী কয়েকটি বছর করোনাকে সঙ্গী করেই আগামীর পথে হাঁটতে হবে। বাংলাদেশকেও এর বাস্তবতা মেনে করণীয় নির্ধারণের পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) সাবেক সভাপতি কামরান টি রহমান মনে করেন,আগের অবস্থায় ফিরে আসতে হলে শিল্প-কারখানার স্বাভাবিক উৎপাদন করতে হবে। এর জন্য লকডাউন থেকে বেরিয়ে মানুষের চলাফেরা স্বাভাবিক রাখতে হবে। সবাইকে ভ্যাক্সিনেশনের আওতায় আনতে হবে। এগুলো করা না গেলে শ্রমবাজারের পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি আশা করা যায় না।’

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘যত দিন পর্যন্ত না লকডাউন যাবে এবং মানুষকে ভ্যাক্সিনেশনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে, তত দিন শ্রমবাজার পরিস্থিতির তেমন উন্নতির সম্ভাবনা দেখছি না।’

ইউএনডিপির কান্ট্রি ইকোনমিস্ট ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘যে সময়টা পার করছি, সেটি মেনে নেয়ার বিষয় আছে। তবে সরকারে প্রকল্পগুলো যদি ঠিকমতো বাস্তবায়ন হয়, ভ্যাক্সিনেশনটা হয়ে যায়, তাহলে আমরা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসব। তখন চলমান সংকটেরও উত্তরণ সম্ভব হবে। তাই আমি বলব, সরকারের আগামী দিনের কর্মকাণ্ডের মূল ফোকাস হওয়া উচিত ভ্যাক্সিনেশন ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি।’

আরও পড়ুন:
চাকরির বয়স স্থায়ীভাবে ৩২ চায় ‘টিম ৩২’
সরকারি চাকরির বয়সসীমায় ২১ মাস ছাড়
বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১২ কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরিচ্যুত
ছাড় নয়, চাকরির বয়সসীমা ৩২ করার দাবি
সরকারি চাকরি প্রার্থীদের বয়সে ২১ মাস ছাড়

মন্তব্য

আরও পড়ুন

চাকরি-ক্যারিয়ার
On the occasion of the martyrdom anniversary of Shaheed President Ziaur Rahman
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে

জনতা ব্যাংক জাতীয়তাবাদী অফিসার কল্যাণ সমিতির আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত

জনতা ব্যাংক জাতীয়তাবাদী অফিসার কল্যাণ সমিতির আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে গত ০২ জুন, সোমবার আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে জনতা ব্যাংক জাতীয়তাবাদী অফিসার কল্যাণ সমিতি।

জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মুহঃ ফজলুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মজিবর রহমান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ গোলাম মরতুজা, মোঃ ফয়েজ আলম ও মোঃ আশরাফুল আলম বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সংগঠনের সভাপতি সাইফুল আবেদিন তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভা সঞ্চালনায় ছিলেন কার্যকরী সভাপতি শাহ জাহান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইকবাল হোসেন। অনুষ্ঠানে সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি এস. এফ. এম. মুনির হোসেন, সহসভাপতি মজিবুর রাহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ছানোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

মন্তব্য

চাকরি-ক্যারিয়ার
Return is not obligated to get a credit card and trade license purchased by savings

সঞ্চয়পত্র কেনা, ক্রেডিট কার্ড ও ট্রেড লাইসেন্স নিতে রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা নেই

সঞ্চয়পত্র কেনা, ক্রেডিট কার্ড ও ট্রেড লাইসেন্স নিতে রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা নেই

১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনায় আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। আবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার সময় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। ট্রেড লাইসেন্স নিতেও রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দাখিলের বাধ্যবাধকতায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্রের বাধ্যবাধকতায় এসব পরিবর্তন আনা হয়েছে। এত দিন ৪৬টি সেবায় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখানোর বাধ্যবাধকতা ছিল।

এখন ১১ ধরনের সেবা নিতে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীদের (টিআইএন) সিস্টেম জেনারেটেড প্রত্যয়নপত্র দাখিল করলেই হবে। ওই ১১টি সেবা হলো সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় নতুন ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণে; সমবায় সমিতির নিবন্ধন প্রাপ্তিতে; সাধারণ বিমার তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ারের নতুন লাইসেন্স গ্রহণে; ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ ও নবায়নে; চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, চার্টার্ড সেক্রেটারি, আইনজীবী ও কর আইনজীবী, অ্যাকচুয়ারি, প্রকৌশলী, স্থপতি, সার্ভেয়ার হিসেবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ গ্রহণে; পাঁচ লাখ টাকার অধিক পোস্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব খোলায়; এমপিওভুক্তির মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে দশম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মচারীর কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের ক্ষেত্রে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেকট্রনিক উপায়ে টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোনের হিসাব রিচার্জের মাধ্যমে কমিশন, ফি বা অন্য কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্ট্যাম্প, কোর্ট ও কার্টিজ পেপারের ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে লাইসেন্স নিবন্ধন ও তালিকাভুক্তিতে; ত্রি-চক্র মোটরযানের নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নে; ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে লাইসেন্সিং অথরিটির কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণে।

মন্তব্য

চাকরি-ক্যারিয়ার
Proposes to increase the special advantage of government employees in the budget

বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব

বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

আজ সোমবার (২ জুন) বাংলাদেশ টেলিভিশনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ও দেশের ইতিহাসে ৫৪তম বাজেট।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার সময় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করছি, যা জিডিপির ১২.৭ শতাংশ। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।

তিনি বলেন, এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে চাই যে, ২০১৫ সালের পর এখন পর্যন্ত বেতন কাঠামো প্রণীত না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।

মন্তব্য

চাকরি-ক্যারিয়ার
Online shopping will be more expensive

অনলাইন কেনাকাটা হবে আরও ব্যয়বহুল

অনলাইন কেনাকাটা হবে আরও ব্যয়বহুল

ঘরে বসে যেসব ক্রেতারা কেনাকাটা করতে চান, তাদের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে কেনাকাটা আগামী অর্থবছর থেকে খানিকটা ব্যয়বহুল হতে পারে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ই-প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় থেকে কমিশনের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করতে চাইছে। সেক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পণ্যের দাম বেশি হতে পারে।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই ভ্যাটের হার ছিল ৫ শতাংশ।

জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশে ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে ভিন্ন আঙ্গিকে পেশ হলো বাজেট। এবার সংসদ না থাকায় সংসদের আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ থাকছে না। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বাজেট উপস্থাপন করার পর ৩০ জুন তা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে কার্যকর করা হবে।

তবে অতীতের রেওয়াজ মেনে বাজেট ঘোষণার পরদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে বাজেট নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া পুরো জুন মাসজুড়ে অংশীজনদের মতামত নেওয়ার কথাও তিনি বলেছেন।

মন্তব্য

চাকরি-ক্যারিয়ার
Inflation will come down to 5 percent this June Finance Advisor 

চলতি জুনেই মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে : অর্থ উপদেষ্টা 

চলতি জুনেই মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে : অর্থ উপদেষ্টা 

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে সরকারের ধারাবাহিক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করায় এবং সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাওয়ায় মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় এ কথা বলেন। তার এ বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে আমাদের সরকার যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে তখন আমাদের সামনে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরে মানুষকে স্বস্তি দেয়া।

তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে আমরা ধারাবাহিকভাবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করেছি। এর ফলে নীতি সুদের হার ১৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত কার্যক্রমকে সহায়তা করতে সংকোচনমূলক রাজস্বনীতি অনুসরণ করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনায় সার্বিকভাবে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠতে শুরু করেছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ১০.৮৯ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। আশার কথা হলো এবারের রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্মরণকালের মধ্যে সবচাইতে স্থিতিশীল ছিল। এ ধারা অব্যাহত থাকলে এই জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কোঠায় নেমে আসবে। মূল্যস্ফীতির সাথে এ লড়াইয়ের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে।’

মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকা জরুরি উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল থাকা অত্যাবশ্যক। প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক হওয়ায় এবং রপ্তানি স্থিতিশীল থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এপ্রিল মাসে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সে কারণে আমরা বিগত ১৪ মে তারিখে বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালু করেছি।

মন্তব্য

চাকরি-ক্যারিয়ার
In the twilight of international finance the new challenge of IMF

আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থার সন্ধিক্ষণে: আইএমএফের নতুন চ্যালেঞ্জ

আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থার সন্ধিক্ষণে: আইএমএফের নতুন চ্যালেঞ্জ

১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আর্থিক অস্থিরতা সামাল দিতে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ। এর মূল লক্ষ্য ছিল বৈশ্বিক মুদ্রানীতি সমন্বয় সাধন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে উৎসাহ দেওয়া এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা। বহু দেশ সংকটে পড়ে এই সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছে- কেউ সাময়িকভাবে রক্ষা পেয়েছে, কেউ আবার দীর্ঘমেয়াদি ঋণনির্ভরতার ফাঁদে পড়ে গেছে।

আজ, যখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য ক্রমশ পশ্চিমকেন্দ্রীকতা থেকে সরে পূর্ব ও দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন আইএমএফ তার প্রাসঙ্গিকতা ও নৈতিক অবস্থান নিয়ে এক নতুন প্রশ্নের সম্মুখীন।

ঋণ সহায়তা, নাকি ঋণের ফাঁদ?

আইএমএফ সাধারণত এমন শর্তে ঋণ দেয়, যার মধ্যে থাকে কঠোর ব্যয়সংযম, ভর্তুকি হ্রাস, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারমুখী সংস্কার; কিন্তু এই শর্তগুলো অনেক সময় জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। স্থানীয় শিল্প ধসে পড়ে, বৈষম্য বেড়ে যায় এবং সাধারণ মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে ওঠে। আর্জেন্টিনার অভিজ্ঞতা এর এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ২০১৮ সালে আইএমএফ ইতিহাসের বৃহত্তম ঋণ প্যাকেজ ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমোদন করে। ফল ছিল বিপরীত- মুদ্রাস্ফীতি ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, দারিদ্র্য আরও বেড়ে যায় এবং দেশটি আবার মন্দার মুখে পড়ে।

এই অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে শুধু অর্থনৈতিক সমীকরণ দিয়ে কোনো দেশের সামাজিক বাস্তবতা নির্ধারণ চলে না।

আইএমএফের নীতিনির্ধারণ কাঠামো এখনো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী শক্তির ভারসাম্যের প্রতিচ্ছবি। উন্নত দেশগুলো (বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন) সংগঠনের ভোটের অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অংশগ্রহণ প্রায় অনুপস্থিত। এই গণতান্ত্রিক ঘাটতি আজ দক্ষিণের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে গভীর অসন্তোষ ও অবিশ্বাসের জন্ম দিচ্ছে।

আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থার সন্ধিক্ষণে: আইএমএফের নতুন চ্যালেঞ্জ

বিকল্প প্রতিষ্ঠানের উত্থান

এই প্রেক্ষাপটে বিকল্প আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন- নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (NDB), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (AIIB) এবং ল্যাটিন আমেরিকান রিজার্ভ ফান্ড (FLAR) নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে। (NDB) এর সহায়তা তুলনামূলকভাবে শর্তমুক্ত এবং অংশগ্রহণমূলক। এখানে প্রতিটি দেশের ভোটের ও প্রতিনিধিত্বের সমান সুযোগ আছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলো আরও আগ্রহী করে তুলেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন শুধু আর্থিক বিকল্প নয়- এরা এক নতুন উন্নয়ন দর্শনের বাহক। সেই দর্শনে উন্নয়ন নির্ধারিত হয় স্থানীয় বাস্তবতা ও প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে, বাইরের চাপ বা রূঢ় শর্ত নয়।

বিশ্ব আজ বহুমেরু। অর্থনৈতিক শক্তি ছড়িয়ে পড়ছে নানা অঞ্চলে। এই বাস্তবতায় টিকে থাকতে হলে আইএমএফকে নিজস্ব কাঠামো ও দর্শনে রূপান্তর আনতে হবে। প্রয়োজন গভর্ন্যান্সের সংস্কার, নীতিনির্ধারণে সমান অংশগ্রহণ, এবং সর্বোপরি সহানুভূতিশীল ঋণ নীতিমালা।

আইএমএফ যদি সত্যিই বৈশ্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতার অভিভাবক হতে চায়, তাহলে তাকে হতে হবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক, এবং আঞ্চলিক বাস্তবতাসম্মত এটি শুধু আইএমএফের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রশ্ন নয়; এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার ও সার্বিক উন্নয়নের প্রশ্ন।

মন্তব্য

চাকরি-ক্যারিয়ার
There is no new surprise in the budget Devpriya Bhattacharya

বাজেটে নতুন চমক থাকছে না: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

বাজেটে নতুন চমক থাকছে না: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ছবি: সংগৃহীত

জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচার হওয়া অর্থ জব্দ কর তা বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার পরমর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এ সময়ে এবারের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শনিবার (৩১ মে) রাজধানীর এফডিসিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচারকৃত অর্থ জব্দের মাধ্যমে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করলে তা হতে পারে এবারের বাজেটের একটি অভিনব উৎস।’

‘গত সরকারের রেখে যাওয়া বিদেশি ঋণের চাপ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। এই সরকারের এই সময়ে অন্যতম সাফল্য ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলার পরিশোধ করে বিদেশি ঋণের চাপ কমিয়ে আনা,’ যোগ করেন তিনি।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই ঋণ বিলিয়ন ডলার করে বছর বছর বাড়ছিল। সামগ্রিকভাবে এই সরকারের সাফল্যের জায়গাটা হলো বহির্খাত, রেমিট্যান্স, রপ্তানি, দায়-দেনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, মজুদ বাড়ানো ও টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল রাখা।’

তবে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণ আদায়, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত এবং করের আওতা বাড়ানোর মতো নতুন কোনো কিছু না থাকায় এবারের বাজেটে কোনো চমক থাকছে না।’

‘যে প্রকল্পগুলো সরকারের কাছে আছে, তা অতিমূল্যায়িত ও তার ৪০ শতাংশ ব্যয়ই ভুয়া। আগের যে প্রকল্পগুলো থেকে রক্তক্ষরণ হতো, সেগুলো অব্যাহত আছে,’ বলেন তিনি।

সিপিডির এই সম্মানীয় ফেলো বলেন, ‘রাজস্ব ব্যয় সঠিকভাবে না করলে করদাতাদের উৎসাহ থাকে না। আমাদের কর কাঠামো বৈষম্যনির্ভর। আমাদের বৈদেশিক খাতে কিছুটা স্থিতিশীলতা অর্জিত হলেও ব্যক্তি খাতে স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ এখনো আশানুরূপ অর্জিত হয়নি।’

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি নামের একটি বিতর্ক সংগঠন এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

‘রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করা আসন্ন বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত’ শীর্ষক ছায়া সংসদে ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজকে পরাজিত করে ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা বিজয়ী হন।

মন্তব্য

p
উপরে