৩৮তম বিসিএসে উর্ত্তীর্ণ হয়েও যারা ক্যাডার পাননি তাদের মধ্যে থেকে শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে তৃতীয় দফায় ৭৮০ জনকে প্রথম শ্রেণির নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)।
বুধবার সরকারি কর্ম কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফল থেকে এ তথ্য জানা যায়।
এ বিষয়ে পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) নূর আহমদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘৩৮তম বিসিএস থেকে আজ তৃতীয় দফায় মোট ৭৮০ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।’
সুপারিশকৃত পদসমূহ:
৩৮তম বিসিএসের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও পদ স্বল্পতায় ৬ হাজার ১৭৩ জন ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ পাননি। তাদের মধ্য থেকে প্রথম শ্রেণির নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য ৫ হাজার ৩২ জন কমিশনে আবেদন করেন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে খুব শিগগিরই দেশের সব জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিতে যাচ্ছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই নতুন ডিসিদের নিয়োগ চূড়ান্ত করা হবে। এরই মধ্যে নতুন ফিটলিস্ট তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইতোমধ্যে সিলেট জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এবার ডিসি নিয়োগে কোনো ধরনের রাজনৈতিক সুবিধাভোগী বা বিতর্কিত কর্মকর্তাকে স্থান দেওয়া হবে না। কেউ ছলচাতুরী বা তথ্য গোপন করে ডিসি পদে নিয়োগ পেলে এবং পরে তা প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইতোমধ্যে গত সোমবার সিলেটের নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ পেয়েছেন প্রশাসনের আলোচিত সেই ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম। উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা সারওয়ার আলম বর্তমানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের একান্ত সচিব (পিএস) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি থেকে নতুন ফিটলিস্ট তৈরির কাজ শুরু করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর অংশ হিসেবে ছয় ধাপে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৫তম ও ২৭তম ব্যাচের ২৬৯ জন উপসচিবের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এর মধ্যে থেকে অর্ধশতাধিক কর্মকর্তাকে ফিটলিস্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মৌখিক পরীক্ষা চলছে।
জনপ্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২৫ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১২ জন কর্মকর্তা ডিসির দায়িত্বে রয়েছেন। তবে ২৪তম ব্যাচের ২১ জন কর্মকর্তা গত ২০ মার্চ যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেলেও এখনও মাঠ প্রশাসন থেকে তাদের প্রত্যাহার করা সম্ভব হয়নি।
এর আগে ২০২৩ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ১০৮ জন কর্মকর্তার একটি ফিটলিস্ট থেকে ৬১ জেলায় ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সেই নিয়োগ নিয়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়। অনেক কর্মকর্তা নিজেদের ‘বঞ্চিত’ দাবি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। মারামারি ও হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে, যা সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ণ করেছিল।
তাছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুবিধা পাওয়া একাধিক কর্মকর্তা গত বছরের ৫ আগস্টের পরও ডিসি পদে নিয়োগ পেয়েছেন। এসব নিয়ে সমালোচনার পর এবার সরকার অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করছে।
কেবল ডিসি নিয়োগই নয়, বর্তমানে একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিব নেই এবং ভারপ্রাপ্ত সচিব দিয়ে চলছে। কর্মকর্তাদের দাবি, প্রশাসনের শীর্ষ পদগুলোতে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া ছিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সবচেয়ে বড় ভুল।
তাদের মতে, এক দশক বা দেড় দশক আগে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তারা বর্তমানের ডিজিটাল প্রশাসন ব্যবস্থায় খাপ খাওয়াতে পারছেন না। তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণেও সাহস পান না। এর ফলে প্রশাসনে শৃঙ্খলার অভাব দেখা দিয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগ) মো. এরফানুল হক ইউএনবিকে বলেন, ‘ডিসি নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। কবে নাগাদ নিয়োগ হবে তা জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। তবে আমরা আশা করছি দ্রুতই নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান জানান, ‘ডিসি ফিটলিস্ট থেকেই নিয়োগ দেওয়া হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে, যাতে কোনো প্রশ্ন না ওঠে।’
সাবেক সচিব ও প্রশাসন বিশেষজ্ঞ এ কে এম আব্দুল আউয়াল মজুমদার বলেন, ‘১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি। বর্তমান প্রশাসনের দুর্বলতা দ্রুত সমাধান করতে হবে। একটি সৎ, দক্ষ ও পেশাজীবী আমলাতন্ত্র ছাড়া রাষ্ট্র পরিচালনা সম্ভব নয়। এখনো সময় আছে- সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ পদে যোগ্য লোক নিয়োগ দিয়ে প্রশাসনের প্রাণ ফিরিয়ে আনতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এ আমলাতন্ত্রের ওপর ভর করে রাষ্ট্র পরিচালনা করা সত্যিই অসাধ্য। তাই এখনো সময় আছে প্রশাসনের প্রাণ ফিরে আনতে হবে। মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও ডিসি সহ প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যোগ্য ও দক্ষ লোক নিয়োগ দিতে হবে।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, যুগ্ম সচিব ও তদূর্ধ্ব পদে নিয়োগ, বদলি ও শৃঙ্খলাজনিত বিষয়ে পরামর্শ প্রদানের জন্য চারজন উপদেষ্টা, মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং জনপ্রশাসন সচিবকে নিয়ে ‘জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিই ডিসি নিয়োগসহ অন্যান্য বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন।
পাঁচ বছরে দেশে মাছের উৎপাদন বেড়েছে ৭ দশমিক ৪১ লাখ টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে উৎপাদন ছিল ৪২ দশমিক ৭৭ লাখ টন। ২০২৩-২৪ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ দশমিক ১৮ লাখ টনে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) আয়োজিত মৎস্য সপ্তাহের সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়। গতকাল বুধবার রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে এই সেমিনার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
বিএফআরআইয়ের মহাপরিচালক অনুরাধা ভদ্রের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন। সম্মানিত অতিথি ছিলেন মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান ফারাহ শাম্মী ও মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবদুর রউফ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএফআরআইয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফরিদা আখতার বলেন, ‘আমরা প্রাকৃতিকভাবে এমন স্থানে আছি, যেখানে মাছ না খেয়ে বাঁচার উপায় নেই। দেশে ৬৪ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। সেখানে বিএফআরআইয়ের গবেষণার ফলে ৪১ প্রজাতির মাছ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।’
তিনি বলেন, সারাদেশে জলাশয়গুলো চিহ্নিত করে দেশি মাছের প্রজাতি রক্ষা করতে হবে। বিভিন্ন জলাশয়ে মাছের নানা প্রজাতি রয়েছে। এসব জলাশয় চিহ্নিত করে দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ ও বৃদ্ধি করতে হবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা আরও বলেন, অভয়াশ্রম গড়ে তোলা ও রক্ষা করা মৎস্যসম্পদ উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা মুক্ত জলাশয়ের পরিমাণ দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে কমছে।
এর পেছনের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এখানে আগে নীতি-নির্ধারণীতে হয়তোবা মনোযোগ কম ছিল, তাই আমরা এ খাতে গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের মুক্ত জলাশয় গড়ে তোলতে যা করণীয়, তা করতেই হবে।
জিনগত বিলুপ্তি রোধ করা দরকার উল্লেখ করে মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, মাছের প্রজাতিগুলো রক্ষা করা শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, বরং আন্তর্জাতিক মৎস্যসম্পদের প্রয়োজনেও করতে হবে। কারণ আমরা প্রাকৃতিকভাবে এমন এক স্থানে রয়েছি, যেখানে মাছ না খেয়ে বাঁচার কোনো উপায় নেই।
মাছ শিকারে বিষ ও বিদ্যুতের ব্যবহারকে উদ্বেগের কারণ হিসেবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, মানুষ কত নিষ্ঠুর। তারা মাছ শিকারে বিষ ও বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। এটি হচ্ছে মানুষের লোভ ও তাৎক্ষণিক লাভের কারণে।
প্লাস্টিক দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে উল্লেখ করে ফরিদা আখতার বলেন, মৎস্যসম্পদ ধ্বংসের পেছনে পানি ও প্লাস্টিক দূষণ অন্যতম ক্ষতির কারণ। সম্প্রতি প্লাস্টিক বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কোনো সমঝোতায় আসতে পারেনি। প্লাস্টিক চুক্তি প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় বাংলাদেশও স্বাক্ষর না করে চলে এসেছে।
মূল প্রবন্ধে মো. মশিউর রহমান বলেন, দেশে ৬৬৯টি অভয়াশ্রম আছে- জমির পরিমাণ ১ হাজার ১৬৯ হেক্টর। তিনি বলেন, পাঁচ বছরে মাছের উৎপাদন বেড়েছে ৭ দশমিক ৪১ লাখ টন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এখন থেকে নিজেরাই অভয়াশ্রম ঘোষণা করতে পারবে। সে জন্য আইন সংশোধন করা হয়েছে।
ঢাকার কেরানীগঞ্জে বুড়িগঙ্গার তীরের জায়গা দখল করে নির্মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে দুই দিনের অভিযান শুরু করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। অভিযানের প্রথম দিনে সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের অবৈধভাবে নির্মাণ করা একটি বাগানবাড়ি (বাংলো) গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযানে প্রায় দেড় একর জমি উদ্ধার করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার সকালে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কাউটাইল মৌজায় কোন্ডা ইউনিয়নের কাউটাইল এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে বুড়িগঙ্গা নদীর তীর দখল করে নির্মিত বাগানবাড়ির তিনটি দোতলা ভবন ও একটি ডকইয়ার্ডের প্রায় ২০০ ফুট সীমানা প্রাচীরও ভেঙে ফেলা হয়।
বিআইডব্লিউটিএর ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকার এরই মধ্যে ঢাকার চারপাশের বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদের সীমানা নির্ধারণ করে ৮০ কিলোমিটার এলাকায় পিলার স্থাপন করেছে। ২০০৯ সালে এসব নদীতীরে অবৈধভাবে গড়ে তোলা স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়। গত বছরের ৫ আগস্টের পর নানা প্রতিকূলতার কারণে উচ্ছেদ অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আজ উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হয়। বুড়িগঙ্গার স্বাভাবিক প্রবাহ রক্ষায় এ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। দখলদার যত প্রভাবশালীই হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আজ কাউটাইল ও দোলেশ্বর এলাকায় নদীতীরের সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।
অভিযানে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন, বিআইডব্লিউটিএর ঢাকা নদীবন্দরের উপপরিচালক আবু সালেহ এহতেশাম, ভৈরব নদীবন্দরের উপপরিচালক নুর হোসেন ও মেঘনা নদীবন্দরের উপপরিচালক রেজাউল করিম অংশ নেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে ঢাবি ক্যাম্পাসে সরব হয়ে উঠেছে ছাত্রসংগঠন ও শিক্ষার্থীরা। নির্বাচনে ২৮টি পদের বিপরীতে ৫০৯টি ফরম জমা পড়েছে। বিতরণকৃত ফরমের মধ্যে ১৪৯টি ফরম জমা পড়েনি। অন্যদিকে এখন পর্যন্ত ১২টি হলের হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৬৮৯ জন প্রার্থী। গতকাল বুধবার বিকালে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।
এদিকে হল সংসদে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ৬২টি, ফজলুল হক মুসলিম হলে ৬৫, জহুরুল হক হলে ৮০, মুহসিন হলে ৬৪, শামছুন্নাহার হলে ৩৬, জিয়াউর রহমান হলে ৭৮, শেখ মুজিবুর রহমান হলে ৬৮, সুফিয়া কামাল হলে ৪০, কুয়েত মৈত্রী হলে ৩১, ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ৩৬, বিজয় একাত্তর হলে ৬৭, এফ রহমান হলে ৬৭টি জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
ডাকসু ইলেকশন রিটার্নিং অফিসার কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের দিন, এর আগের দিন এবং পরেরদিন ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ করেছি।
ডাকসুর তফসিল অনুযায়ী, গত ১২ আগস্ট থেকে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হয় যা ১৮ আগস্টে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরে এক দিন বৃদ্ধি করে ১৯ আগস্ট করা হয়। মনোনয়ন জমাদানের শেষ সময়ও ১ দিন বাড়িয়ে ২০ আগস্ট করা হয়। মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের শেষ দিন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সংসদে ১০টি প্যানেল ও স্বতন্ত্রভাবে মোট মনোনয়ন নিয়েছেন ৬৫৮ জন এবং ১৭টি হল সংসদে মনোনয়ন বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৪২৭টি। যাচাই-বাছাই শেষে আজ বেলা ১টায় চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে।
২৫ আগস্ট মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর ২৬ আগস্ট চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে ৯ সেপ্টেম্বর এবং সেদিনই ফলাফল প্রকাশ করা হবে। এবারই প্রথমবারের মতো হলের বাইরে ছয়টি কেন্দ্রে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ইতোমধ্যে ডাকসু এবং হল সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। চূড়ান্ত তালিকায় মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন। এর মধ্যে ছাত্র ভোটার ২০ হাজার ৮৭১ জন ও ছাত্রী ভোটার ১৮ হাজার ৯০২ জন।
৯টি প্যানেলের জমজমাট লড়াই
এদিকে ডাকসু নির্বাচনে প্যানেল ঘোষণা করেছে বেশ কয়েকটি ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন। এর মধ্যে রয়েছে- ছাত্রদল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস), ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনসহ একাধিক স্বতন্ত্র প্যানেল।
এবারের ডাকসু নির্বাচনের প্যানেলগুলোতে এসেছে নতুনত্বের ছোঁয়া। শিবিরের ‘ইনক্লুসিভ প্যানেরের বিপরীতে ছাত্রদল স্থান দিয়েছে তরুণ ও পরীক্ষিতদের। আসন্ন ডাকসুতে শীর্ষ তিন পদসহ সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাঁচ নারী শিক্ষার্থী। এছাড়া প্যানেলগুলোতে নারী প্রার্থীর সংখ্যাও চোখে পড়ার মতো।
এবাবের ডাকসুতে লড়ছে- গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’, ছাত্রদলের প্যানেল, ছাত্রশিবিরের ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’, উমামা ফাতেমার নেতৃত্বে ‘স্বতন্ত্র ঐক্যজোট’, বামপন্থি শিক্ষার্থীদের ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’, ছাত্র অধিকার পরিষদের ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’, ইসালামী ছাত্র আন্দোলনের ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মাহিন সরকারের স্বতন্ত্র প্যানেল ‘ডিইউ ফার্স্ট’ এবং তিনটি বাম জোটের ‘অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪’ প্যানেলসহ অন্যান্য স্বতন্ত্র প্যানেল ও প্রার্থীরা।
এবারের ডাকসুতে ভিপি পদে লড়ছেন দুইজন নারী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সর্বপ্রথম স্বতন্ত্র প্যানেল গঠনের ঘোষণা দেন তিনি। এই স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম ঘোষিত না হলেও বর্তমানে ডাকসুর অন্যতম আলোচিত প্রার্থী উমামা।
এদিকে আরেক নারী শিক্ষার্থী ভিপি প্রার্থী তাসনিম আফরোজ ইমি। তিনি বামপন্থি সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে গঠিত জোট ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ প্যানেল থেকে নির্বাচন করবেন। এদিকে ছাত্র অধিকার পরিষদের প্যানেল থেকে জিএস পদে একমাত্র নারী প্রার্থী সাবিনা ইয়াসমিন। এছাড়া গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের প্যানেল থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপাত্র আশরেফা খাতুন ও স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী ফাতেহা শারমিন অ্যানিসহ সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে লড়ছেন। এছাড়া বিভিন্ন প্যানেলের সম্পাদক ও সদস্য পদে রয়েছেন একাধিক নারী প্রার্থী।
তবে গত বছরের ১৫ জুলাইয়ে আহত সানজিদা আহমেদ তন্বীর সম্মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে প্রার্থী দেয়নি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস)।
ডাকসু নির্বাচনের পূর্ণ প্যানেল ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলা ভাস্কর্যের সামনে থেকে ছাত্রদলের ২৮ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ প্যানেলটি ঘোষণা করেন দলটির কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব।
সংগঠনটি সহসভাপতি (ভিপি) হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের আবিদুল ইসলাম খান ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে কবি জসীম উদ্দীন হল ছাত্রদলের আহ্বায়ক ও উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের শেখ তানভীর বারী হামিমকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া এজিএস পদে বিজয় একাত্তর হল ছাত্রদলের আহ্বায়ক ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদকে মনোনয়ন দিয়েছে সংগঠনটি।
ছাত্রদলের প্যানেলে সদস্য প্রার্থী হিসেবে একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে রেখেছে সংগঠনটি। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ওই শিক্ষার্থীর নাম ইবনু আহমেদ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করছেন। এছাড়া সংগঠনটির প্যানেলে ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক পদে মনোনয়ন পেয়েছেন চিম চিম্যা চাকমা।
প্যানেল ঘোষণার সময়, দলটির কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, এবারের ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল তুলনামূলক জুনিয়র, নিয়মিত শিক্ষার্থী এবং ছাত্রসমাজের কাছে পরিচিত ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের মনোনীত করেছে।
অন্যদিকে ডাকসু নির্বাচনে সাদিক কায়েমকে ভিপি ও এসএম ফরহাদকে জিএস পদে প্রার্থী করে ২৮ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। এই প্যানেলে সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে মহিউদ্দিন খান নির্বাচন করবেন।
প্যানেলে দলীয় নেতা-কর্মীদের বাইরে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, ৪ জন নারী, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত শিক্ষার্থী, অ্যাপ বাংলাদেশ এবং ইনকিলাব মঞ্চের শিক্ষার্থীদের রাখা হয়েছে।
গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনের তৃতীয় তলায় ডাকসুর প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার কক্ষের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্যানেল ঘোষণা করে সংগঠনটি।
এই প্যানেলে চমক হিসেবে রয়েছে সর্ব মিত্র চাকমার অন্তর্ভুক্তি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এ ছাড়াও শিবিরের প্যানেল থেকে নির্বাচন করছেন ৪ নারী শিক্ষার্থী। এই প্যানেলে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে ফাতেমা তাসনিম জুমা, কমন রুম, রিডিং রুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে উম্মে সালমা এবং সদস্য পদে সাবিকুন নাহার তামান্না ও আফসানা আক্তার মনোনয়ন পেয়েছেন। প্যানেল থেকে জুলাই আন্দোলনে চোখ হারানো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খান জসিম আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে লড়বেন।
এছাড়া গতকাল বুধবার বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ নামে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে।
প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদে নির্বাচন করবেন আব্দুল কাদের, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে মো. আবু বাকের মজুমদার এবং সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে আশরেফা খাতুন প্রার্থী হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্যানেলটি ঘোষিত হয়।
অন্যদিকে ডাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্যানেল ঘোষণা করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। গত সোমবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন তিনি। এখনো পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষিত না হলেও এই প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদে উমামা ফাতেমা, জিএস পদে ঢাবি সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি আল সাদী ভূইয়া এবং সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে বর্তমান সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহী থাকতে পারেন বলে জানা গেছে।
‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ নামে বাম জোটের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। এই প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদে ইতি আফরোজ ইমি, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বসু এবং সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রার্থী বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল।
ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র কাউন্সিল, ছাত্র যুব আন্দোলন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও গণতান্ত্রিক ছাত্র মঞ্চ এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই প্যানেলে রয়েছেন।
‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’ নাম ও ‘ভোট ফর চেঞ্জ’ স্লোগান সামনে রেখে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে ছাত্র অধিকার পরিষদ। এই প্যানেলে ভিপি পদে দলটির কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, জিএস পদে সাবিনা ইয়াসমিন এবং এজিএস পদে ঢাবি শাখার সদস্য সচিব রাকিবুল ইসলামের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
ডাকসু নির্বাচনে ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’ নামের প্যানেল ঘোষণা করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র আন্দোলন।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত নির্বাচনে সহসভাপতি বা ভিপি পদে, সাধারণ সম্পাদক বা জিএস পদে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক খায়রুল আহসান মারজান এবং ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক সাইফ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন সহসাধারণ সম্পাদক পদে লড়বেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও এনসিপি নেতা মাহিন সরকারকে সঙ্গে নিয়ে ‘ডিইউ ফার্স্ট’ প্যানেল ঘোষণা করেছে স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক জামালুদ্দীন মুহাম্মাদ খালিদ।
এই প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদে জামালুদ্দীন মুহাম্মাদ খালিদ, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে মো. মাহিন সরকার লড়বেন। এজিএস পদে ফাতেহা শারমিন অ্যানি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
এদিকে ডাকসু নির্বাচনে এই প্যানেল থেকে জিএস পদে প্রার্থী হওয়ায় এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব মাহিন সরকারকে নিজের পদ ও দায়িত্ব থেকে বহিষ্কার করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ‘গুরুতর শৃঙ্খলাভঙ্গের’ অভিযোগে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানায় এনসিপি।
এদিকে গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে তিনটি বামপন্থি ছাত্রসংগঠন। ছাত্রসংগঠনগুলো হলো- ছাত্র ইউনিয়ন (মাহির-বাহাউদ্দিন), সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ) ও ছাত্রলীগ-বিসিএল (জাসদ)। প্যানেল ঘোষণা করেন ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা।
‘অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪’ নামের এই প্যানেলে মো. নাইম হাসানকে (হৃদয়) সহসভাপতি (ভিপি), এনামুল হাসান অনয়কে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও অদিতি ইসলামকে সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী করা হয়েছে।
ভারতের ভূখণ্ডে বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে, এমন কোনো তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের মাটিতে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যালয় ও কার্যক্রম বন্ধের জন্য দিল্লিকে অনুরোধ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে রণধীর জয়সওয়াল এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘ভারতের মাটিতে কথিত আওয়ামী লীগের সদস্যদের বাংলাদেশবিরোধী কোনো ধরনের কর্মকাণ্ড বা ভারতের আইনবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডের বিষয়ে তারা অবগত নন।’
তিনি আরো বলেন, ‘ভারত সরকার অন্য দেশের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেয় না। সুতরাং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুচিত।’
সেসময় রণধীর জয়সওয়াল পুনর্ব্যক্ত করেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছা ও ম্যান্ডেট নির্ধারণের জন্য শিগগিরই অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করছি।’
এর আগে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতি দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, ‘নিষিদ্ধ’ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের অফিস ভারতের রাজধানী দিল্লি এবং কলকাতায় স্থাপনের খবরে বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে।
বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যালয়গুলো অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
এছাড়া ভারতের মাটি ব্যবহার করে বাংলাদেশবিরোধী কোনো কার্যক্রম যাতে কেউ চালাতে না পারে, বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ভারত সরকারের প্রতি বাংলাদেশ অনুরোধ জানায়।
জুলাই সনদের খসড়া পর্যালোচনা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে নিজেদের মতামত জমা দিয়েছে বিএনপি। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় দলটির পক্ষ থেকে এই মতামত জমা দেওয়া হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের বরাত দিয়ে দলের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছিল দলটি ২১ আগস্ট তাদের মতামত জমা দেবে।
এদিকে জুলাই সনদের মতামত জমাদানের সময় আগামী ২২ আগস্ট বিকেল ৩টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। গতকাল বুধবার এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে গত শনিবার মতামত চেয়ে জুলাই সনদের খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সনদের পটভূমিতে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড এবং ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়ায় প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এই সনদের কোনো বিধান, প্রস্তাব ও সুপারিশ সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে বলবৎ হিসেবে গণ্য হবে বিধায় এর বৈধতা, প্রয়োজনীয়তা কিংবা জারির কর্তৃত্ব সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না।
জুলাই সনদের যেসব সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য বলে বিবেচিত, সেগুলো কোনো প্রকার কালক্ষেপণ না করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবে, তা বলা হয়েছে।
ঐকমত্য কমিশন বলছে, সনদে এমন অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলো কোনো কোনো দল একমত হননি। সেসব বিষয়ে দলগুলো নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন।
ওই সব বিষয়ও ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা ভিন্নমতের বিষয়গুলোও উল্লেখ করা হয়েছে জুলাই সনদের খসড়ায়।
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে দ্রুতগতির একটি প্রাইভেট কার উল্টে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও একজন।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সকাল ৬টার দিকে শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর এলাকায় এক্সপ্রেসওয়ের যাত্রী ছাউনির পাশে ঢাকামুখী লেনে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।
মুন্সীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক সফিকুল ইসলাম জানান, ঢাকামুখী বেপরোয়া গতির প্রাইভেট কারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক বিভাজনের রেলিংয়ের সঙ্গে ধাক্কা লেগে উল্টে যায়। গাড়িটিতে চারজনই ছিলেন।
তিনি আরও জানান, দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হন। অন্য দুজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠালে চিকিৎসকরা আরও একজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ দুর্ঘটনার কারণে প্রায় এক ঘণ্টা ওই সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়। পরে হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের উদ্ধার অভিযানের পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
হাসাড়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী জানান, গাড়িটি সরিয়ে নেওয়ার পর সকাল সোয়া ৭ টার দিকে ঢাকামুখী লেনে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
শ্রীনগর ফায়ার স্টেশনের স্টেশন অফিসার দেওয়ান আজাদ হোসেন বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় প্রাইভেট কারটির ভাঙা অংশের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে রক্ত। পড়ে আছে দুটি মরদেহ, আর আহত একজনের কান্না শোনা যাচ্ছিল।
মন্তব্য