মেসেঞ্জারে প্রায়ই অনেক অপরিচিতদের মেসেজ পাই, যারা মেরিনার হতে চান। কেউ বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিতে ভর্তির বিষয়ে পরামর্শ চান, কেউ মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পেশা সম্পর্কে জানতে চান।
মেরিনার বা মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে আমাদের দেশের মানুষের জ্ঞান খুবই অগভীর। এখনও মেরিন অফিসার আর নেভি অফিসারের মধ্যে পার্থক্য অনেকে গুলিয়ে ফেলেন।
আমি যখন ২০১০ সালে এইচএসসি পাশ করি, তখন ‘মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি’ কোচিংয়ের বিজ্ঞাপনে কতগুলো পয়েন্ট উল্লেখ করা হতো। যেমন-
১. এটা চ্যালেঞ্জিং প্রফেশন
২. একজন মেরিনার একজন অ্যাম্বাসেডর
৩. বিনা মূল্যে বিশ্বভ্রমণের সুযোগ
৪. মাত্র ৬-৮ বছরে ক্যাপ্টেন/চিফ ইঞ্জিনিয়ার হয়ে ১০ হাজার ডলারের বেশি বেতন
৫. স্বল্প সময়ে স্টাব্লিশড হওয়ার সুযোগ
১, ২, ৩ নম্বর পয়েন্ট নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। সমস্যা হচ্ছে ৪ আর ৫ নম্বর নিয়ে। হয়ত এক যুগ আগে ৪, ৫ পয়েন্ট নিয়েও কোনো দ্বিমত ছিল না, তবে এখন খুব জোরালোভাবে দ্বিমত করা যায়।
উপরের পয়েন্টগুলো দেখে এইচএসসি পাশ করা এক জন ছেলের (এখন মেয়েদেরও ভর্তির সুযোগ আছে) মাথা ঘুরে যাওয়া স্বাভাবিক। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেদের ক্ষেত্রে এটা খুবই স্বাভাবিক।
তারা ভাবে হাজার ডলার বেতন পেয়ে বাবা-মা, ভাই-বোনের সব স্বপ্ন পূরণের জন্য মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির বিকল্প আর কিছু হতে পারে না। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই দূর হয়ে যাবে সব কষ্ট।
এ কারণে বাবা-মা জমি বিক্রি করে/বন্ধক রেখে, আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধার-দেনা করে হলেও ছেলেকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ান। মেরিনারদের নিয়ে যত স্বল্প ধারণাই থাকুক না কেন, সবাই ভাবেন মেরিনার মানেই টাকা! ডলার!
তবে আসলে যে কত টাকা আর কত ডলার বেতন বর্তমানে দেয়া হয়, সে বিষয়টি জানার চেষ্টা কেউ করেন না। শুধু ডলারে বেতন শুনেই তাদের অন্তর জুড়ায়।
আমাদের সময়ে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি কোচিংয়ের প্রসপেক্টাসে লেখা হতো, ক্যাডেটদের মাসিক বেতন ৪০০ থেকে ৫০০ ডলার! অর্থাৎ পাসিং আউটের পরে জাহাজে পা রাখলেই ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা। যেখানে আমাদের অভিভাবকেরা বহু বছর চাকরি করে এই টাকা বেতন পান, সেখানে ক্যারিয়ারের শুরুতেই একজন মেরিন ক্যাডেটের বেতন তাদের সমান বা বেশি!
তবে এটা হলো প্রসপেক্টাসের হিসাব। ৪০০ থেকে ৫০০ ডলার পাওয়া ক্যাডেট যে নেই তা নয়, কিন্তু আমাদের দেশের বেশির ভাগ ক্যাডেটের ক্ষেত্রে সেটি প্রযোজ্য হয় না।
বিদেশি জাহাজ কোম্পানিতে স্কলারশিপ পান হাতেগোনা ১০-১৫ জন ক্যাডেট। বাকি সব ক্যাডেটের ভরসা দেশি কোম্পানিগুলো। ২০১০-২০১২ সালের পর দেশি কোম্পানির জাহাজ সংখ্যাও প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে, ফলে ক্যাডেট এবং অফিসারদের চাকরির সুযোগও কমেছে।
বোঝার জন্য বলছি, ধরুন ৮০টি জাহাজে যদি ১৬০ জন ক্যাডেট নেয়া যায়, তাহলে ৪০টি জাহাজে ক্যাডেট নেয়া যাবে তার অর্ধেক। ২০১৩-এর পর এটাই মূল সমস্যা হয়েছে। জাহাজের সংখ্যা কমেছে, কিন্তু ক্যাডেট পাস আউট হয়েছে চাহিদার দ্বিগুণ। ফলে আমাদের পরের ব্যাচগুলোর অনেক জুনিয়রকে জাহাজে জয়েন করতে দুই-তিন বছরও অপেক্ষা করতে হয়েছে।
আরেকটা বড় সমস্যা হলো, ক্যাডেট (ট্রেইনি) প্রতি জাহাজে দুই থেকে চার জন করে নেয়ার সুযোগ থাকলেও অফিসার র্যাংকে এক জনের বেশি নেয়া হয় না। মানে ৮০টি জাহাজে ৮০ জন ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার বা থার্ড অফিসার থাকবেন। সে হিসেবে একই সঙ্গে ক্যাডেটশিপ শেষ করা কয়েক জন ক্যাডেট অফিসার হিসেবে একসঙ্গে একই জাহাজে উঠতে পারবেন না! এই সংকট আরও বাড়িয়ে দিচ্ছেন আগের ব্যাচ থেকে অপেক্ষারত সিনিয়রেরা।
আমি বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির ৪৭তম ব্যাচের একজন ক্যাডেট। আমাদের ব্যাচে সারা বাংলাদেশ থেকে ২০০ জনকে ভর্তি করা হয়েছিল। আমরা ক্যাডেটশিপ মোটামুটি ভালোভাবে শেষ করতে পারলেও অফিসার হিসেবে জয়েন করতে পারছি না অনেকেই।
২০১২ সালের ডিসেম্বরে বের হয়ে ২০২০ সালে এসেও ২০০ জনের সবাই জুনিয়র অফিসার হতে পারিনি। অথচ প্রসপেক্টাস অনুযায়ী, এর মধ্যে আমাদের ক্যাপ্টেন/চিফ ইঞ্জিনিয়ার হয়ে ১০ হাজার ডলারের বেশি বেতন পাওয়ার কথা!
এবার বর্তমানে বেশির ভাগ ক্যাডেট আর জুনিয়র অফিসারদের বেতন নিয়ে একটু ধারণা দিই। জেনে অবাক হবেন, কয়েক বছর আগেও দেশি কিছু কোম্পানিতে কোনো বেতন ছাড়াই ক্যাডেটদের জাহাজে কাজ করানো হয়েছে। ক্যাডেটদের শুধু তিন বেলা খাবার আর অভিজ্ঞতার জন্য ‘কাবিখা’ (কাজের বিনিময়ে খাদ্য) গ্রুপে নাম লেখাতে হয়েছিল!
বেশির ভাগ দেশি কোম্পানিতে ক্যাডেটদের বেতন ১৫০ থেকে ৩০০ ডলার। এভাবে এক-দেড় বছর বসে থেকে জাহাজে জয়েন করে অফিসার হওয়ার পরীক্ষা দিতে আবার লাখ তিনেক টাকার জোগান দিতে হয়, যা পরিবার থেকে না নিয়ে উপায় থাকে না। এই পরীক্ষার ঝামেলা শেষ করে অফিসার হিসেবে জয়েন করতে আরও বছরখানেকের অপেক্ষা।
অনেকে আবার পরীক্ষা শেষে সমুদ্রগামী জাহাজে জয়েনিংয়ের সুযোগ না পেয়ে কোস্টাল শিপে চাকরি করছেন কেবল পরিবারের খরচ চালাতে, কারণ কোস্টাল শিপে চাকরি করলে সেই অভিজ্ঞতা পরে সমুদ্রগামী জাহাজের ক্ষেত্রে কোনো কাজে আসে না। এমনকি পরবর্তী ধাপের পরীক্ষাও দেয়া যায় না কোস্টাল জাহাজের অভিজ্ঞতা দিয়ে।
সমুদ্রগামী দেশি কোম্পানির জাহাজে ট্রেইনি জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার/অফিসারদের বেতন ৩৫০ থেকে ৫০০ ডলার! দিনে মাত্র ১২ থেকে ১৬ ডলার, ডিউটি টাইম অন্তত ১০ ঘণ্টা। পাসিং আউটের ৩/৪ বছর পর মেরিন অফিসার হয়ে ডলারে বেতন পাওয়ার স্বপ্ন তো পূরণ হয়েছে- সেটিই তখন একমাত্র সান্ত্বনা।
এরপর আরও ৮/১০ মাস পর ট্রেইনি অফিসার থেকে ভালো পারফর্ম করে পুরোপুরি অফিসার হিসেবে জয়েন করতে কত সময় লাগবে সেটি অনিশ্চিত। অফিসার হবার পরেও বেতন হবে প্রসপেক্টাস এবং প্রত্যাশার চেয়ে অনেক অনেক কম, সেই সঙ্গে জয়েনিং ডিলে তো আছেই।
ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে উপরের ৪ আর ৫ নম্বর পয়েন্ট যে ফাঁকা বুলি সেটি আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
এই পেশায় ভারতীয় আর ফিলিপিনোরা সংখ্যাগতভাবে এগিয়ে আছে। মোটামুটি সব ছোট-বড় শিপিং কোম্পানির রিক্রুটিং অফিস আছে ভারত ও ফিলিপাইনে। এরপরেও ওদের দেশের ক্যাডেট আর জুনিয়র অফিসারদের একই দশা। বছরের পর বছর ধরে তারাও অপেক্ষা করেন জাহাজের জন্য।
ওই দুটি দেশের অনেক কোম্পানি ২০১৪ সালের পর ক্যাডেটসংখ্যা কমিয়েছে, এমনকি বন্ধও করে দিয়েছে ক্যাডেট রিক্রুটিং প্রোগ্রাম। আমাদের দেশে হচ্ছে তার উল্টো, ক্যাডেটের চাকরির সুযোগ না বাড়িয়ে আরও বেশি করে ক্যাডেট ভর্তি করা হচ্ছে।
সরকারি মেরিন একাডেমি একটি থাকতে আরও চারটি চালু করা হচ্ছে। আমার পরিচিত অনেকে বুয়েট, মেডিক্যাল ছাড়াও অনেক ভালো ভালো বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে মেরিনার হয়ে এখন আফসোস করেন। কেউ কেউ নিরুপায় হয়ে অন্য পেশা খুঁজছেন।
অনেকে ভাবতে পারেন, আমি মেরিন একাডেমিতে ভর্তির বিরুদ্ধে বলছি। এক্ষেত্রে বলব, আমি কাউকে মেরিনার হতে নিরুৎসাহিত করছি না। শুধু বলব, চটকদার বিজ্ঞাপনে বিভ্রান্ত হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। ভালোমতো জেনে-বুঝে সিদ্ধান্ত নিন। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে সরকারি-বেসরকারি, পুরুষ-নারী মিলিয়ে মোট ৮১৩ জন ক্যাডেট ভর্তির সার্কুলার দেয়া হয়েছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় এর যৌক্তিকতা নিয়ে আমার শঙ্কা রয়েছে।
বর্তমানে সব ক্যাডেট বা জুনিয়র অফিসার যে খারাপ অবস্থায় আছেন তা নয়। ১০ শতাংশ খুব ভালো আছেন, ২০-৩০ শতাংশ মোটামুটি অবস্থায় আর বাকিদের অবস্থা খুবই নাজুক।
আপনি যদি স্কলারশিপ বা ভালো কোম্পানিতে জায়গা করে নেয়ার সামর্থ্যের বিষয়ে কনফিডেন্ট থাকেন, তাহলে ভিন্ন কথা। তবে কল্পিত স্বপ্নে গা ভাসালে বিপদ মোটামুটি নিশ্চিত, সেটিও মাথায় রাখতে হবে।
লেখক: এক্স ক্যাডেট (৪৭তম ব্যাচ), বাংলাদেশ মেরিন অ্যাকাডেমি
আরও পড়ুন:বুধবার, ২০শে আগষ্ট, ২০২৫, সকাল ১১ টায় বিশেষ অতিথিদের নিয়ে আরবী ভাষা ও সংস্কৃতির উপর এক প্রাণবন্ত অনুষ্ঠান উদযাপন করলো এমারেল্ড ইন্টারন্যশনাল স্কুল ঢাকা।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই তিনজন সম্মানিত অতিথিকে স্কুলের ম্যানেজমেন্ট টিম এবং প্রধান উপদেষ্টা জনাব এম এম রনক (Mr. M M Ronok) ফুলের তোড়া ও তাদের নামের ইসলামিক ক্যালিওগ্রাফি দিয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের লিবীয় দূতাবাসের মিশন উপপ্রধান জনাব আব্দালফাত্তাহ এ. এ. খিতরেশ (Mr. Abdalfattah A. A. Khitresh)। তার সঙ্গে ছিলেন চৌধুরী লেদার অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব ইমরান চৌধুরী (Mr. Imran Chowdhury) এবং বিজনেস ইন বাংলাদেশের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জনাব রাজিব (Mr. Rajib)।
শিক্ষার্থীরা আজ কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তাদের মেধার ও আরবী ভাষায় লব্ধ জ্ঞানের এক মনোমুগ্ধকর প্রদর্শনী দিয়ে অতিথিদের মুগ্ধ করে। এমারেল্ড এর শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসী ও সাবলীল আরবি কথোপকথনের মাধ্যমে তাদের ভাষার দক্ষতা প্রদরশীত হয়, যা দর্শকদের মন ভুলিয়ে দেয় এবং তাদের ভাষা কার্যক্রমের সাফল্য EISD তুলে ধরে। নতুন প্রজন্ম থেকে আলোকিত ও সপ্রতিভ শিক্ষার্থী তৈরি করে বিশ্বকে আত্মবিশ্বাসী ও মুসলিম নেতৃত্ব দেয়ার যে প্রতিশ্রুতি EISD স্কুল দিয়েছে, আজকের তাদের পরিবেশনা তারই একটি প্রমাণ।
শিক্ষার্থীদের পরিবেশনা শেষে, অতিথিদেরকে মধ্যাহ্নভোজের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়, যেখানে তারা স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে আরও গভীরভাবে মতবিনিময় করার সুযোগ পান। এই অনুষ্ঠানটি কেবল সংস্কৃতি এবং ভাষার উদযাপনই ছিল না, বরং শিক্ষাবিদ ও পেশাদার জগতের মধ্যে এক অর্থপূর্ণ চিন্তাধারার আদান-প্রদানও ছিল।
ইআইএসডি-তে আরবি সপ্তাহের সাফল্য একটি সামগ্রিক শিক্ষা পদ্ধতিকে তুলে ধরে, যা শিক্ষা, নৈতিকতা এবং ইসলামী সংস্কৃতির সমন্বয় সাধন করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের জন্য পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
বুধবার (২০ আগস্ট) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এই প্যানেল ঘোষণা করেন।
প্যানেল থেকে ভিপি পদে (সহ-সভাপতি) নির্বাচন করবেন আবিদুল ইসলাম খান, জিএস পদে (সাধারণ সম্পাদক) শেখ তানভীর বারী হামিম এবং এজিএস পদে (সহকারী সাধারণ সম্পাদক) তানভীর আল হাদী মায়েদ।
প্যানেল থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক পদে নির্বাচন করবেন আরিফুল ইসলাম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক পদে এহসানুল ইসলাম, কমনরুম, পাঠকক্ষ ও ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক পদে চেমন ফারিয়া ইসলাম মেঘলা।
আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে মো. মেহেদী হাসান, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক পদে আবু হায়াত মো. জুলফিকার জিসান, ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক পদে চিম চিম্যা চাকমা, ছাত্র পরিবহন বিষয়ক সম্পাদক পদে মো. সাইফ উল্লাহ (সাইফ) নির্বাচন করবেন।
গবেষণা ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক পদে ১৫ জুলাইয়ে আহত সানজিদা আহমেদ তন্বীর সম্মানে খালি থাকবে বলে জানিয়েছেন রাকিব।
সমাজসেবা সম্পাদক পদে সৈয়দ ইমাম হাসান অনিক, ক্যারিয়ার উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক পদে মো. আরকানুল ইসলাম রূপক, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক পদে আনোয়ার হোসাইন এবং মানবাধিকার ও আইন বিষয়ক সম্পাদক পদে মো. মেহেদী হাসান মুন্না নির্বাচিত হবেন।
এছাড়া সদস্যপদের জন্য প্যানেল থেকে নির্বাচন করবেন মো. জারিফ রহমান, মাহমুদুল হাসান, নাহিদ হাসান, মো. হাসিবুর রহমান সাকিব, মো. শামীম রানা, ইয়াসিন আরাফাত আলিফ, মুনইম হাসান অরূপ, রঞ্জন রায়, সোয়াইব ইসলাম ওমি, মেহেরুন্নেসা কেয়া, ইবনু আহমেদ, সামসুল হক আনান এবং নিত্যানন্দ পাল।
২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করেছেন ১০ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ জন শিক্ষার্থী। গত ৩০ জুলাই থেকে শুরু হওয়া আবেদনের সময় শেষ হওয়ার কথা ছিল ১১ আগস্ট। তবে পরে বাড়িয়ে দেওয়া হয় ১৫ আগস্ট রাত ৮টা পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যেই আবেদন জমা পড়ে প্রায় সাড়ে ১০ লাখ।
গতকাল সোমবার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর মো. রিজাউল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবারের আবেদনে বোর্ডভিত্তিক ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে—২ লাখ ২৯ হাজার ৫৪৩ জন। মাদরাসা বোর্ডে আবেদন করেছেন ১ লাখ ৫৭ হাজার ১৮২ জন শিক্ষার্থী। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড থেকেও আবেদন পড়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক, ১ লাখ ২৯ হাজার ১৪ জন।
রাজশাহী ও যশোর বোর্ড থেকে যথাক্রমে ১ লাখ ১৯ হাজার ৪৬৩টি আবেদন জমা পড়েছে। চট্টগ্রাম বোর্ডে আবেদন ৯২ হাজার ১৬১, কুমিল্লা বোর্ডে ৯২ হাজার ৪৮৪, সিলেট বোর্ডে ৬২ হাজার ৩৭৯, ময়মনসিংহ বোর্ডে ৫১ হাজার ৮৭১ এবং বরিশাল বোর্ডে পড়েছে ৪০ হাজার ৬৩৪টি আবেদন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে আবেদন জমা পড়েছে ৩৮ হাজার ৬৮৭টি, আর বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এইচএসসি প্রোগ্রামে আবেদন করেছেন মাত্র ৭০১ জন।
দেশের ৯ হাজার ১৮১টি কলেজ ও মাদরাসায় একাদশ শ্রেণিতে আসন রয়েছে ২২ লাখের বেশি। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পর্যায়ে রয়েছে প্রায় ৯ লাখ আসন এবং সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিকে রয়েছে আরও ২ লাখ ৪১ হাজার আসন। সব মিলিয়ে একাদশ শ্রেণি ও সমমানের প্রতিষ্ঠানে মোট আসন রয়েছে প্রায় ৩৩ দশমিক ২৫ লাখ। অথচ এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন। ফলে ভর্তি নিয়ে শিক্ষার্থীদের তেমন কোনো চাপ নেই।
গত ২৪ জুলাই প্রকাশিত ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী, এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় পাস করা শিক্ষার্থীরা অনলাইনে আবেদন করেছেন পছন্দক্রম অনুযায়ী। এতে অটো মাইগ্রেশন সুবিধা প্রযোজ্য থাকবে। যারা পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করেছেন, যোগ্য হলে তারাও আবেদন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছেন।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, চলতি খ্রিষ্টাব্দসহ ধারাবাহিকভাবে পূর্ববর্তী দুই খ্রিষ্টাব্দে দেশের যেকোনো শিক্ষা বোর্ড ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ভর্তি হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রকাশিত ষষ্ঠ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনকারী প্রার্থীদের মধ্য থেকে যোগ্য প্রার্থীদের প্রাথমিক সুপারিশের ফল চলতি সপ্তাহে প্রকাশ করা হতে পারে। এ জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি শেষ করেছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)।
গতকাল রোববার এনটিআরসিএর সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র বলছে, ফল প্রকাশের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনুমতি পেলেই দ্রুততম সময়ে সুপারিশের ফল প্রকাশ করা হবে।
এ বিষয়ে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ষষ্ঠ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সুপারিশ প্রকাশের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়া মাত্রই ফল প্রকাশ করা হবে।
জানা গেছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান) শিক্ষক নিয়োগের জন্য গত ১৬ জুন ষষ্ঠ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। এতে শূন্য পদ ছিল ১ লাখ ৮২২টি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফরম পূরণ ও ফি পরিশোধ করে সফলভাবে আবেদন করেন ৫৭ হাজার ৮৪০ জন।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, একজন প্রার্থী শূন্য পদের তালিকা থেকে তার আবেদনে সর্বোচ্চ ৪০টি প্রতিষ্ঠানে পছন্দ দিতে পেরেছেন।
২০০৫ সাল থেকে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দিচ্ছে এনটিআরসিএ। তবে শুরুর ১০ বছর শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা ছিল সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটির হাতে।
২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর সরকার এনটিআরসিএকে সনদ দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশের ক্ষমতাও দেয়।
এরপর পাঁচটি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ১ লাখ ৩২ হাজার ৮৯৮ জন শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করে এনটিআরসিএ।
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাসুম ইকবাল ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে যোগদান করেছেন। রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালযয়ের ৩১ জুলাই ২০২৫ তারিখের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাকে উক্ত পদে নিয়োগ দেয়া হয়। গত ০৭ আগস্ট ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজজের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খানের কাছে তিনি যোগদানপত্র হস্তান্তর করেন।
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাসুম ইকবাল ২০০২ সালে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে একাডেমিক ও প্রশাসনিক বিভিন্ন পদে বিভাগীয় প্রধান, সহযোগী ডিন এবং ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার কৃতী সন্তান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাসুম ইকবাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্সে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিং-এ এমবিএ ও বিবিএস সম্পন্ন করেছেন।
ড. ইকবাল মালয়েশিয়ার ইউসিসিআই ইউনিভার্সিটির অতিথি অধ্যাপক এবং তুরস্কের আনাদোলু ইউনিভার্সিটিতে এরাসমাস+ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেন। তিনি একজন প্রখ্যাত গবেষক। তার ৫০টিরও বেশি গবেষণা প্রবন্ধ স্কোপাস ও ওয়েব অব সায়েন্সে প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশ ওপেন ইউনিভার্সিটির সাথে যৌথভাবে সার্ভিস মার্কেটিং বিষয়ে একটি পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ করেছেন।
তিনি ডিআইইউ-এর ইউনুস সোশ্যাল বিজনেস সেন্টার এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড রিসার্চ সেন্টার-এর পরিচালক হিসেবে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও পাঠ্যক্রম উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তিনি নিয়মিতভাবে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন এবং সোশ্যাল বিজনেস শিক্ষার অঙ্গনে একজন স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। তার দূরদর্শী নেতৃত্ব, একাডেমিক সততা এবং উদ্ভাবনের প্রতি অঙ্গীকার তাকে বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যবসায় শিক্ষার ভবিষ্যত গঠনে একটি সম্মানিত শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং হল সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ শুরু হবে আজ মঙ্গলবার থেকে। প্রতিটি মনোনয়ন ফরমের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০০ টাকা।
গতকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়টির জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রার্থীরা ১২ আগস্ট থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১৯ আগস্ট, বিকেল ৩টা।
এতে আরও বরা হয়, প্রার্থীরা সশরীরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনের তৃতীয় তলায় অবস্থিত চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিস থেকে এ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিল করতে পারবেন। একই সময়ে হল সংসদের মনোনয়নপত্র প্রার্থীকে সংশ্লিষ্ট হল রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সশরীরে সংগ্রহ ও দাখিল করতে হবে।
ডাকসু ও হল সংসদ আচরণ বিধিমালা-২০২৫ অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমাদানের সময় কোনো মিছিল বা শোভাযাত্রা করা যাবে না এবং পাঁচজনের বেশি সমর্থক নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ বা জমা দেওয়া যাবে না।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন-২০২৫-এর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের পরও তালিকায় বহিষ্কৃত ও মামলায় অভিযুক্ত কোনো শিক্ষার্থীর নাম অন্তর্ভুক্ত থাকলে উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ পাওয়া সাপেক্ষে তার নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেছেন, হলগুলোকে ছাত্ররাজনীতিমুক্ত রাখার গত বছর নেওয়া সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।
শনিবার (৯ আগস্ট) ভোরে তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের এ কথা বলেন। এর আগে শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে ঢাবিতে হল রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করতে থাকেন শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার(৮ আগস্ট) সকালে ছাত্রদল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলে কমিটি ঘোষণা করার পর এই বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
২০২৪ সালের ১৭ জুলাই শিক্ষার্থীরা হল প্রশাসনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হল থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বর্তমানে নিষিদ্ধ) নেতাকর্মীদের অপসারণ ও হলগুলোকে রাজনীতিমুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে বাধ্য করে।
রাত সাড়ে ১২টার বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে, ১-২-৩-৪, হল রাজনীতি আর নয়, স্বাধীনতা না দাসত্ব, স্বাধীনতা-স্বাধীনতা ইত্যাদি বিভিন্ন স্লোগান দেয়।
প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত হলো হল স্তরে কোনো ছাত্ররাজনীতির অনুমতি দেওয়া হবে না। তারা কেন্দ্রীয় স্তরে, মধুর ক্যান্টিনে এটি করতে পারে। এটাই ছিল বোঝাপড়া। তবে, আমরা কোনো ছাত্র সংগঠনকে 'আপনি এটি বাতিল করুন' বলতে বাধ্য করতে পারি না। আমরা জানিয়েছি, ১৭ জুলাই যা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল তা বলবৎ থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিয়ম লঙ্ঘনের বিষয়ে আজ প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির একটি সভা হবে। এরপর, যেসব ছাত্র সংগঠনের নাম উঠে এসেছে, তাদের সঙ্গেও আমাদের কথা বলব।’
মন্তব্য