মেসেঞ্জারে প্রায়ই অনেক অপরিচিতদের মেসেজ পাই, যারা মেরিনার হতে চান। কেউ বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিতে ভর্তির বিষয়ে পরামর্শ চান, কেউ মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পেশা সম্পর্কে জানতে চান।
মেরিনার বা মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে আমাদের দেশের মানুষের জ্ঞান খুবই অগভীর। এখনও মেরিন অফিসার আর নেভি অফিসারের মধ্যে পার্থক্য অনেকে গুলিয়ে ফেলেন।
আমি যখন ২০১০ সালে এইচএসসি পাশ করি, তখন ‘মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি’ কোচিংয়ের বিজ্ঞাপনে কতগুলো পয়েন্ট উল্লেখ করা হতো। যেমন-
১. এটা চ্যালেঞ্জিং প্রফেশন
২. একজন মেরিনার একজন অ্যাম্বাসেডর
৩. বিনা মূল্যে বিশ্বভ্রমণের সুযোগ
৪. মাত্র ৬-৮ বছরে ক্যাপ্টেন/চিফ ইঞ্জিনিয়ার হয়ে ১০ হাজার ডলারের বেশি বেতন
৫. স্বল্প সময়ে স্টাব্লিশড হওয়ার সুযোগ
১, ২, ৩ নম্বর পয়েন্ট নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। সমস্যা হচ্ছে ৪ আর ৫ নম্বর নিয়ে। হয়ত এক যুগ আগে ৪, ৫ পয়েন্ট নিয়েও কোনো দ্বিমত ছিল না, তবে এখন খুব জোরালোভাবে দ্বিমত করা যায়।
উপরের পয়েন্টগুলো দেখে এইচএসসি পাশ করা এক জন ছেলের (এখন মেয়েদেরও ভর্তির সুযোগ আছে) মাথা ঘুরে যাওয়া স্বাভাবিক। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেদের ক্ষেত্রে এটা খুবই স্বাভাবিক।
তারা ভাবে হাজার ডলার বেতন পেয়ে বাবা-মা, ভাই-বোনের সব স্বপ্ন পূরণের জন্য মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির বিকল্প আর কিছু হতে পারে না। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই দূর হয়ে যাবে সব কষ্ট।
এ কারণে বাবা-মা জমি বিক্রি করে/বন্ধক রেখে, আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধার-দেনা করে হলেও ছেলেকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ান। মেরিনারদের নিয়ে যত স্বল্প ধারণাই থাকুক না কেন, সবাই ভাবেন মেরিনার মানেই টাকা! ডলার!
তবে আসলে যে কত টাকা আর কত ডলার বেতন বর্তমানে দেয়া হয়, সে বিষয়টি জানার চেষ্টা কেউ করেন না। শুধু ডলারে বেতন শুনেই তাদের অন্তর জুড়ায়।
আমাদের সময়ে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি কোচিংয়ের প্রসপেক্টাসে লেখা হতো, ক্যাডেটদের মাসিক বেতন ৪০০ থেকে ৫০০ ডলার! অর্থাৎ পাসিং আউটের পরে জাহাজে পা রাখলেই ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা। যেখানে আমাদের অভিভাবকেরা বহু বছর চাকরি করে এই টাকা বেতন পান, সেখানে ক্যারিয়ারের শুরুতেই একজন মেরিন ক্যাডেটের বেতন তাদের সমান বা বেশি!
তবে এটা হলো প্রসপেক্টাসের হিসাব। ৪০০ থেকে ৫০০ ডলার পাওয়া ক্যাডেট যে নেই তা নয়, কিন্তু আমাদের দেশের বেশির ভাগ ক্যাডেটের ক্ষেত্রে সেটি প্রযোজ্য হয় না।
বিদেশি জাহাজ কোম্পানিতে স্কলারশিপ পান হাতেগোনা ১০-১৫ জন ক্যাডেট। বাকি সব ক্যাডেটের ভরসা দেশি কোম্পানিগুলো। ২০১০-২০১২ সালের পর দেশি কোম্পানির জাহাজ সংখ্যাও প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে, ফলে ক্যাডেট এবং অফিসারদের চাকরির সুযোগও কমেছে।
বোঝার জন্য বলছি, ধরুন ৮০টি জাহাজে যদি ১৬০ জন ক্যাডেট নেয়া যায়, তাহলে ৪০টি জাহাজে ক্যাডেট নেয়া যাবে তার অর্ধেক। ২০১৩-এর পর এটাই মূল সমস্যা হয়েছে। জাহাজের সংখ্যা কমেছে, কিন্তু ক্যাডেট পাস আউট হয়েছে চাহিদার দ্বিগুণ। ফলে আমাদের পরের ব্যাচগুলোর অনেক জুনিয়রকে জাহাজে জয়েন করতে দুই-তিন বছরও অপেক্ষা করতে হয়েছে।
আরেকটা বড় সমস্যা হলো, ক্যাডেট (ট্রেইনি) প্রতি জাহাজে দুই থেকে চার জন করে নেয়ার সুযোগ থাকলেও অফিসার র্যাংকে এক জনের বেশি নেয়া হয় না। মানে ৮০টি জাহাজে ৮০ জন ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার বা থার্ড অফিসার থাকবেন। সে হিসেবে একই সঙ্গে ক্যাডেটশিপ শেষ করা কয়েক জন ক্যাডেট অফিসার হিসেবে একসঙ্গে একই জাহাজে উঠতে পারবেন না! এই সংকট আরও বাড়িয়ে দিচ্ছেন আগের ব্যাচ থেকে অপেক্ষারত সিনিয়রেরা।
আমি বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির ৪৭তম ব্যাচের একজন ক্যাডেট। আমাদের ব্যাচে সারা বাংলাদেশ থেকে ২০০ জনকে ভর্তি করা হয়েছিল। আমরা ক্যাডেটশিপ মোটামুটি ভালোভাবে শেষ করতে পারলেও অফিসার হিসেবে জয়েন করতে পারছি না অনেকেই।
২০১২ সালের ডিসেম্বরে বের হয়ে ২০২০ সালে এসেও ২০০ জনের সবাই জুনিয়র অফিসার হতে পারিনি। অথচ প্রসপেক্টাস অনুযায়ী, এর মধ্যে আমাদের ক্যাপ্টেন/চিফ ইঞ্জিনিয়ার হয়ে ১০ হাজার ডলারের বেশি বেতন পাওয়ার কথা!
এবার বর্তমানে বেশির ভাগ ক্যাডেট আর জুনিয়র অফিসারদের বেতন নিয়ে একটু ধারণা দিই। জেনে অবাক হবেন, কয়েক বছর আগেও দেশি কিছু কোম্পানিতে কোনো বেতন ছাড়াই ক্যাডেটদের জাহাজে কাজ করানো হয়েছে। ক্যাডেটদের শুধু তিন বেলা খাবার আর অভিজ্ঞতার জন্য ‘কাবিখা’ (কাজের বিনিময়ে খাদ্য) গ্রুপে নাম লেখাতে হয়েছিল!
বেশির ভাগ দেশি কোম্পানিতে ক্যাডেটদের বেতন ১৫০ থেকে ৩০০ ডলার। এভাবে এক-দেড় বছর বসে থেকে জাহাজে জয়েন করে অফিসার হওয়ার পরীক্ষা দিতে আবার লাখ তিনেক টাকার জোগান দিতে হয়, যা পরিবার থেকে না নিয়ে উপায় থাকে না। এই পরীক্ষার ঝামেলা শেষ করে অফিসার হিসেবে জয়েন করতে আরও বছরখানেকের অপেক্ষা।
অনেকে আবার পরীক্ষা শেষে সমুদ্রগামী জাহাজে জয়েনিংয়ের সুযোগ না পেয়ে কোস্টাল শিপে চাকরি করছেন কেবল পরিবারের খরচ চালাতে, কারণ কোস্টাল শিপে চাকরি করলে সেই অভিজ্ঞতা পরে সমুদ্রগামী জাহাজের ক্ষেত্রে কোনো কাজে আসে না। এমনকি পরবর্তী ধাপের পরীক্ষাও দেয়া যায় না কোস্টাল জাহাজের অভিজ্ঞতা দিয়ে।
সমুদ্রগামী দেশি কোম্পানির জাহাজে ট্রেইনি জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার/অফিসারদের বেতন ৩৫০ থেকে ৫০০ ডলার! দিনে মাত্র ১২ থেকে ১৬ ডলার, ডিউটি টাইম অন্তত ১০ ঘণ্টা। পাসিং আউটের ৩/৪ বছর পর মেরিন অফিসার হয়ে ডলারে বেতন পাওয়ার স্বপ্ন তো পূরণ হয়েছে- সেটিই তখন একমাত্র সান্ত্বনা।
এরপর আরও ৮/১০ মাস পর ট্রেইনি অফিসার থেকে ভালো পারফর্ম করে পুরোপুরি অফিসার হিসেবে জয়েন করতে কত সময় লাগবে সেটি অনিশ্চিত। অফিসার হবার পরেও বেতন হবে প্রসপেক্টাস এবং প্রত্যাশার চেয়ে অনেক অনেক কম, সেই সঙ্গে জয়েনিং ডিলে তো আছেই।
ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে উপরের ৪ আর ৫ নম্বর পয়েন্ট যে ফাঁকা বুলি সেটি আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
এই পেশায় ভারতীয় আর ফিলিপিনোরা সংখ্যাগতভাবে এগিয়ে আছে। মোটামুটি সব ছোট-বড় শিপিং কোম্পানির রিক্রুটিং অফিস আছে ভারত ও ফিলিপাইনে। এরপরেও ওদের দেশের ক্যাডেট আর জুনিয়র অফিসারদের একই দশা। বছরের পর বছর ধরে তারাও অপেক্ষা করেন জাহাজের জন্য।
ওই দুটি দেশের অনেক কোম্পানি ২০১৪ সালের পর ক্যাডেটসংখ্যা কমিয়েছে, এমনকি বন্ধও করে দিয়েছে ক্যাডেট রিক্রুটিং প্রোগ্রাম। আমাদের দেশে হচ্ছে তার উল্টো, ক্যাডেটের চাকরির সুযোগ না বাড়িয়ে আরও বেশি করে ক্যাডেট ভর্তি করা হচ্ছে।
সরকারি মেরিন একাডেমি একটি থাকতে আরও চারটি চালু করা হচ্ছে। আমার পরিচিত অনেকে বুয়েট, মেডিক্যাল ছাড়াও অনেক ভালো ভালো বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে মেরিনার হয়ে এখন আফসোস করেন। কেউ কেউ নিরুপায় হয়ে অন্য পেশা খুঁজছেন।
অনেকে ভাবতে পারেন, আমি মেরিন একাডেমিতে ভর্তির বিরুদ্ধে বলছি। এক্ষেত্রে বলব, আমি কাউকে মেরিনার হতে নিরুৎসাহিত করছি না। শুধু বলব, চটকদার বিজ্ঞাপনে বিভ্রান্ত হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। ভালোমতো জেনে-বুঝে সিদ্ধান্ত নিন। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে সরকারি-বেসরকারি, পুরুষ-নারী মিলিয়ে মোট ৮১৩ জন ক্যাডেট ভর্তির সার্কুলার দেয়া হয়েছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় এর যৌক্তিকতা নিয়ে আমার শঙ্কা রয়েছে।
বর্তমানে সব ক্যাডেট বা জুনিয়র অফিসার যে খারাপ অবস্থায় আছেন তা নয়। ১০ শতাংশ খুব ভালো আছেন, ২০-৩০ শতাংশ মোটামুটি অবস্থায় আর বাকিদের অবস্থা খুবই নাজুক।
আপনি যদি স্কলারশিপ বা ভালো কোম্পানিতে জায়গা করে নেয়ার সামর্থ্যের বিষয়ে কনফিডেন্ট থাকেন, তাহলে ভিন্ন কথা। তবে কল্পিত স্বপ্নে গা ভাসালে বিপদ মোটামুটি নিশ্চিত, সেটিও মাথায় রাখতে হবে।
লেখক: এক্স ক্যাডেট (৪৭তম ব্যাচ), বাংলাদেশ মেরিন অ্যাকাডেমি
আরও পড়ুন:এইচ এসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে, পঞ্চগড় জেলার তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করেনি।
বৃহস্পতিবার ফলাফল প্রকাশ হলে এ তথ্য জানা যায়, পঞ্চগড় জেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে।
পঞ্চগড় জেলার মোট ৩৮টি কলেজ এইচএসসি পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন ৬৭১২ জন, তাদের মধ্যে ২৮৯৯ পাস করেন, ফেল করেন ৩৮১৩ জন, জিপিএ -৫-১১৩ জন,পাশের পার্সেন্ট ৪৩.১৯%
মাদরাসা ১৬টি কলেজ, ৪০০ জন শিক্ষার্থী, পাস করেন ২১৩ জন, ফেল করেন ১৮৭ জন, জিপিএ -৫ -১ জন, পাসের পার্সেন্টেজ ৫৩.২৫%
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—বোদা উপজেলার বোদা পাইলট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মাড়েয়া মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং তেঁতুলিয়া উপজেলার আলহাজ্ব তমিজ উদ্দীন কলেজ। প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো এমপিওভুক্ত হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বোদা পাইলট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ১২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়, যার মধ্যে ৪ জন অনুপস্থিত ছিল। মাড়েয়া মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ জন, আর আলহাজ্ব তমিজ উদ্দীন কলেজ থেকে অংশ নেয় ৪ জন শিক্ষার্থী, যার মধ্যে ২ জন অনুপস্থিত ছিল।
মাড়েয়া মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ অধ্যক্ষ সপেন্দ্রনাথ বর্মণ বলেন, আমাদের কলেজ শাখা এমপিওভুক্ত হয়নি। কয়েক বছর ধরে নেই কোনো শিক্ষক। এজন্য একজন পরীক্ষায় অংশ নিলেও পাস করতে পারেনি।
বোদা পাইলট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নার্গিস পারভিন মৌসুমী বলেন, ভর্তি হওয়ার পরে সবার বিয়ে হয়ে গেছে, এ জন্য কেউ পাস করতে পারেনি।
আলহাজ্ব তমিজ উদ্দীন কলেজের অধ্যক্ষ হাসান আলী বলেন, আমাদের কলেজের চারজনের মধ্যে দুজন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। দুজনে পাস করার কথা ছিল। আমরা বোর্ড চ্যালেঞ্জ করব।
ভারপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা খায়রুল আনাম মো. আফতাবুর রহমান হেলালী বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করতে পারেনি সেসব প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করা হবে। এই ফলাফলের কারণ খুঁজে বের করে এখান থেকে কিভাবে উত্তরণ করা যায়, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডেও ফল বিপর্যয় ঘটেছে। চলতি বছর এই বোর্ডে পাসের হার ৫৯ দশমিক ৪০ শতাংশ, যা সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, চলতি বছর রাজশাহী বোর্ডে ১ লাখ ৩৪ হাজার ১৪৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। এর মধ্যে পাস করেছেন ৭৭ হাজার ৭৪২ জন। আরও জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১০ হাজার ১৩৭ জন।
এ বছর রাজশাহী বোর্ডে ছাত্রদের পাসের হার ৫০ দশমিক ৬৯ শতাংশ, আর ছাত্রীদের পাসের হার ৬৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এছাড়া ছাত্রদের মধ্যে ৪ হাজার ৪৫৫ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন, আর ছাত্রীদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৮২ জন।
এর আগে ২০২৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮১ দশমিক ২৪ শতাংশ, ২০২৩ সালে ছিল ৭৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ, ২০২২ সালে ৮১ দশমিক ৬০ শতাংশ, ২০২১ সালে ৯৭ দশমিক ২৯ শতাংশ, ২০২০ সালে ১০০ শতাংশ এবং ২০১৯ সালে ৭৬ দশমিক ৩৮ শতংশ।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। সব শিক্ষা বোর্ড থেকে একযোগে এ ফল প্রকাশ করা হয়।
এ বছর দেশের ৯টি সাধারণ ও কারিগরি এবং মাদরাসা বোর্ড মিলিয়ে ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় পাসের হার কমেছে ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও সাঘাটা উপজেলার দুই কলেজে এ বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সব পরিক্ষার্থীই অকৃতকার্য হয়েছেন। মোট ৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিলেও একজনও পাস করতে পারেননি। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে ব্যাপক হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
বৃহস্পতিবার পরিক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর একাধিক মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জানা গেছে, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ঘাগোয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন মাত্র ৫ জন শিক্ষার্থী। অপরদিকে, সাঘাটা উপজেলার জুমারবাড়ি মহিলা কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন মাত্র ১ জন। কিন্তু দুই কলেজের কেউই পাস করতে পারেননি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাসে অনুপস্থিতি, শিক্ষক সংকট, পর্যাপ্ত প্রস্তুতির অভাব এবং প্রশাসনিক নজরদারির ঘাটতির কারণে এ ধরনের ফলাফল হয়েছে। বিশেষ করে উপজেলার প্রান্তিক এলাকার ছোট কলেজগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে পাঠদানের মান কমে যাওয়ায় এমন বিপর্যয় ঘটছে বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতনজনরা।
এছাড়াও স্থানীয় অভিভাবক ও সাধারণ মানুষ বলছেন, বছরের পর বছর শিক্ষক সংকট ও একাডেমিক দুর্বলতার কারণে উপজেলার অনেক কলেজেই এখন শিক্ষার মান প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।
গাইবান্ধা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘কোনো কলেজ থেকে শতভাগ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়া অত্যন্ত হতাশাজনক। আমরা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট দুই প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাদের সন্তোষজনক জবাব না পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
চলতি বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় গজারিয়া উপজেলায় সবচেয়ে খারাপ ফলাফল করেছে বালুয়াকান্দি ডা.আব্দুল গাফফার স্কুল এন্ড কলেজ। ভয়াবহ ফলাফল বিপর্যয়ে পড়া এই প্রতিষ্ঠানটি থেকে পাশ করেছে মাত্র একজন শিক্ষার্থী।
খবর নিয়ে জানা যায়, বালুয়াকান্দিতে অবস্থিত ডা. আব্দুল গাফফার স্কুল এন্ড কলেজ থেকে চলতি বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ১৭জন শিক্ষার্থী। প্রকাশিত ফলাফলে প্রতিষ্ঠানটি থেকে শুধুমাত্র একজন শিক্ষার্থী পাশ করেছে। পাসের হার মাত্র ৫.৮৮ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটির এমন ফলাফলে সমালোচনামুখর অভিভাবক শ্রেণি।
স্থানীয় বাসিন্দা সোলায়মান জানান, চলতি বছর ১৭জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও তাদের মধ্যে ১৪ জনই অনিয়মিত শিক্ষার্থী। নিয়মিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ৩ জন। মাত্র ৪জন জনবল নিয়ে কোনরকমে কার্যক্রম চালাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। মানবিক বিভাগের অনিয়মিত শিক্ষার্থী ইয়াসিন ব্যতীত এই প্রতিষ্ঠানটি থেকে কেউ পাশ করতে পারেননি।
স্থানীয় বাসিন্দা হোসেন আলী বলেন, ' প্রতিষ্ঠানটির স্কুল শাখা অত্যন্ত ভালো। তবে কলেজ শাখা এমপিওভুক্ত নয় সেজন্য কলেজ পরিচালনা করার ক্ষেত্রে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এসব সীমাবদ্ধতার সাথে লড়াই করে কোনো রকমের টিকে আছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে না পারলে প্রতিষ্ঠানটি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে'।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ বশির উল্লাহর মোবাইলে কল করা হলে তিনি বলেন, ' আমি এখন ব্যস্ত আছি এ বিষয় নিয়ে কয়েকদিন পরে আপনাদের সাথে কথা বলব'।
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির কলেজ শাখা এমপিওভুক্ত নয় সেজন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থী স্বল্পতাসহ নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ফলাফল খারাপের বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সাথে বসব’।
চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে নীলফামারী জেলার ১০টি কলেজের কোনো শিক্ষার্থীই পাস করতে পারেনি। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ফলাফলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মহা. তৌহিদুল ইসলাম।
তিনি জানান, বোর্ডের অধীনে নীলফামারীর ১০টি কলেজের ৪০ জন শিক্ষার্থীর কেউই উত্তীর্ণ হয়নি।
কলেজগুলো হলো, নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ সৃজনশীল কলেজের মানবিক বিভাগের ১ জন, সৈয়দপুর উপজেলার সাতপাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগের ১ জন, কিশোরগঞ্জ উপজেলার নয়নখাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগের ৮ জনের মধ্যে ৫ জন ফেল ও ৩ জন অনুপস্থিত, জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগের ১৮ জনের মধ্যে ১৫ জন ফেল ও ৩ জন অনুপস্থিত, একই উপজেলার চেওড়াডাঙ্গী স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগের ৯ জনের মধ্যে ৬ জন ফেল ও ৩ জন অনুপস্থিত, গোলমুন্ডা আদর্শ কলেজের মানবিক বিভাগের ৩ জন, ডিমলা উপজেলার জেলা পরিষদ স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ১ জন ও মানবিক বিভাগের ১ জন,একই উপজেলার নাউতারা বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগের ৩ জন,ডিমলা সীমান্ত কলেজের মানবিক বিভাগের ২ জন এবং গয়াখড়িবাড়ি মহিলা কলেজের মানবিক বিভাগের ৩ জনের মধ্যে ২ জন ফেল ও ১ জন অনুপস্থিত।
নীলফামারী জেলা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর (২০২৫) জেলায় ৯৩টি কলেজের ১২ হাজার ১৮৯ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করেছে ৭ হাজার ৫২৪ জন এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৮১ জন।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় (এইচএসসি) পাসের হার বিগত ৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এবারের পাসের হার ৫২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। যা গত বছরের তুলানায় ১৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ কম। গতবছর পাসের হার ছিল ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ।
এছাড়া এবার জিপিএ-৫ কমেছে অর্ধেকেরও বেশি। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬ হাজার ৯৭ জন। যা গতবার পেয়েছিল ১০ হাজার ২৬৯ জন শিক্ষার্থী। ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর গড়ে এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার কমেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড মিলনায়তনে ফল ঘোষণা করেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বোর্ডের চেয়ারম্যান ইলিয়াছ উদ্দিন আহাম্মদ এবং সচিব এ কে এম সামছু উদ্দিন আজাদ।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার পরীক্ষার্থী ছিলেন ১ লাখ ২ হাজার ৯৭০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছেন ৫৩ হাজার ৫৬০ জন। ছাত্রদের পাসের হার ৪৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ; ছাত্রীদের পাসের হার ৫৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এর মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীতে পাসের হার ৭০ দশমিক ৯০ শতাংশ। জেলায় পাসের হার ৪৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
এছাড়া তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙামাটিতে পাসের হার ৪১ দশমিক ২৪ শতাংশ, খাগড়াছড়িতে ৩৫ দশমিক ৫৩ এবং বান্দরবানে ৩৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। কক্সবাজার জেলায় পাসের হার ৪৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার সবচেয়ে বেশি ৭৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ৫৫ দশমিক ৩০ শতাংশ ও মানবিক বিভাগে পাসের হার ৩৭ দশমিক শূন্য ৮০ শতাংশ।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর ড. পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী ফলাফলের বিষয়ে বলেন, এবার মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা ছিল খাতার মূল্যায়ন যেন মেধার ভিত্তিতে হয়। শিক্ষার্থী খাতায় লিখে যে নম্বরটি পাবে, সেটাই যেন মারকিং করা হয়। অতি মূল্যায়নের সুযোগ ছিল না। আমি পরীক্ষার পর সব প্রধান নিরীক্ষকদেও ডেকে এটাই বুঝিয়েছিলাম; রুব্রিক্স পদ্ধতিতে যেন খাতা কাটা হয়। তাছাড়াও জুলাই আন্দোলনের জন্য শিক্ষার্থীদের পড়াশুনায় বিঘ্ন ঘটেছিল। যা সার্বিক ফলাফলে প্রভাব পড়েছে বলেন তিনি।
ঢাকা বিশ্বদ্যালয়ের আরবি বিভাগ থেকে মাস্টার্সের ফলাফলে ৩.৯৭ সিজিপিএ পেয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করলেন ইমরান হোসেন। একই সাথে অসামান্য সাফল্যের জন্য ডিনস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ইমরান হোসেন।
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ডিনস অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের হাত থেকে ইমরান হোসেন ডিনস অ্যাওয়ার্ড অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন।
ইমরান হোসেন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার ডহরপাড়া গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে।
ইমরান হোসেন ঢাবির আররি বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী। স্নাতকে তিনি ৩.৮৫ সিজিপিএ পেয়ে প্রথম শ্রেণিতে পঞ্চম হন। এবার মাস্টার্সের ফলাফলেও তিনি ৩.৯৭ সিজিপিএ পেয়ে যৌথভাবে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছেন।
ইমরান হোসেন ২০১৬ সালে বলুহার ইসলামীয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও ২০১৮ সালে ঢাকা মাদ্রাসা ই আলিয়া থেকে আলিম পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বিভাগে ভর্তি হন।
এছাড়া তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া বাঁশবাড়িয়া মাদ্রাসা থেকে ২০০৯ সালে কুরআনের হিফজ সম্পন্ন করেন। এসময় গওহরডাঙ্গা আঞ্চলিক বোর্ড ১০ম স্থান অর্জণ করেন।
ঢাকার ফরিদাবাদ মাদ্রাসা থেকে দাওরা হাদিস সম্পন্ন করেন। এছাড়া ঢাকার মাদ্রাসাতুস সালমান থেকে মুফতি ডিগ্রি অর্জন করেন।
ইমরান হোসেন বলেন, ১৪ বছর আগে বাবা পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে পড়ায় ভেবেছিলাম লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে। তখন ছোট ভাই রেজোয়ান ইসলাম পরিবারের হাল ধরে আগলে রাখেন। পরিবারের সকলের সহযোগিতার জন্য আমার লেখাপড়া অব্যাহত থাকে এবং এই ফলাফল অর্জনে সক্ষম হই।
কোটালীপাড়া সাংবাদিক ফোরামের আহবায়ক মনিরুজ্জামান শেখ জুয়েল বলেন, একটি কৃষক পরিবার থেকে উঠে আসা ইমরান হোসেনের এই ফলাফল সত্যিই আমাদের জন্য গর্বের। ইমরান হোসেন কোটালীপাড়ার মুখ উজ্জ্বল করেছে। পরবর্তী প্রজন্ম ইমরান হোসেনের এই ফলাফলে অনুপ্রাণিত হবে।
মন্তব্য