রাজধানী ঢাকার অনেক এলাকায় শুক্রবার ভোর থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। সেটা থেমে থেমে চলছেই। থেমে থেমে এমন বৃষ্টিপাত সারা দিনই থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সারা দিনই আকাশ থাকবে আংশিক মেঘলা থেকে মেঘাচ্ছন্ন। সেই সঙ্গে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় বৃষ্টি থেমে গেলেও আবহাওয়ায় অনুভূতি হতে পারে অস্বস্তিকর।
শুক্রবার সকালে নিউজবাংলাকে দিনের আবহাওয়া নিয়ে এমন পূর্বাভাসের কথাই জানালেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মোহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক।
তিনি বলেন, ‘আজ সারা দিনই ঢাকায় থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হবে। আকাশ থাকবে আংশিক মেঘলা থেকে মেঘাচ্ছন্ন। আর বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ থাকবে ৯০ থেকে ১০০ শতাংশের মধ্যে। এ কারণে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় আবহাওয়ায় অনুভূতি হবে অস্বস্তিকর।
‘আর্দ্রতা যেহেতু অনেক বেশি, তাই যখনই বৃষ্টি থেমে যাবে তখন অস্বস্তি বোধ হবে। তাপমাত্রা গড়ে ৩২ থেকে ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। সুতরাং এই তাপমাত্রায় যদি আর্দ্রতা বেশি থাকে তাহলে অস্বস্তি হবেই।’
বৃষ্টিপাতের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে মল্লিক বলেন, ‘মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা বা নিষ্ক্রিয়তার ওপর সাধারণত বৃষ্টিপাত হয়। এখন বাংলাদেশের ওপর মৌসুমি বায়ু সক্রিয়। এই কারণেই বৃষ্টিপাত হচ্ছে।’
ঢাকায় বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টিপাতের কারণে জলাবদ্ধতা হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কাল সকাল থেকে আজ সকাল পর্যন্ত ঢাকায় ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিতে আকস্মিক জলাবদ্ধতার প্রশ্নই আসে না যদি ড্রেনেজ সিস্টেম ভালো থাকে।’
রাত থেকে বৃষ্টি হওয়ায় রাজধানীর কিছু জায়গায় জলাবদ্ধতা চোখে পড়ে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
সারা দেশের দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, হিমালয়ের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।
আরও পড়ুন:মুষলধারার বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা। টানা ৬ ঘণ্টার বর্ষণে বিভিন্ন সড়কে পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ যানজট। অবর্ণনীয় ভোগান্তির শিকার হয়েছেন ঘরমুখো মানুষ।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর পরই পুরো আকাশ ঢেকে রাজধানীতে নেমে আসে মুষলধারার বৃষ্টি। তা বিরামহীন চলে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। এতে পানি জমে অনেক সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নগরীর বিজয় সরণি, রোকেয়া সরণিসহ বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয় যানজট। নীলক্ষেত, কাঁটাবন, হাতিরপুল এলাকার সড়কেও পানি জমে থাকতে দেখা যায়।
সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ অন্য অনেক গাড়ি পানি ঢুকে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে। রাত পৌনে ১১টার দিকেও রাজপথের বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট লেগে থাকে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ঢাকায় ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি বর্তমানে দক্ষিণ বিহার এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।
বৃষ্টিপাতের বিষয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। বৃষ্টির প্রভাবে সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
আরও পড়ুন:রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ১৬ জেলায় ঝড় ও বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। মঙ্গলবার রাত ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরসমূহের জন্য দেয়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক স্বাক্ষরিত ওই পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পাবনা, টাঙ্গাইল, ঢাকা, ময়মনসিংহ, যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, মাদারীপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট অঞ্চল সমূহের উপর দিয়ে দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
পূর্বাভাসে এসব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ পূর্বাভাসে দেশের আট বিভাগের বেশকিছু অঞ্চলে অস্থায়ীভাবে দমকা হওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
সোমবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার জন্য দেয়া ওই পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়; রংপুর, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
পূর্বাভাসে তাপপ্রবাহের বিষয়ে বলা হয়েছে, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, নীলফামারী, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, বরিশাল, পটুয়াখালী এবং ভোলা জেলাসমূহের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা কিছু কিছু জায়গা থেকে প্রশমিত হতে পারে।
এ ব্যাপারে আবহাওয়াবিদ খোন্দকার হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, মৌসুমী বায়ুর অক্ষ ভারতের রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এছাড়া মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।
এই অবস্থায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।
এদিকে, আগামী দুই দিনে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে এই সময়ে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে বলেও জানানো হয়েছে।
আগামী পাঁচ দিনে আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় সর্বোচ্চ ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পাশাপাশি আজ সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে বান্দরবানে, ২৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রংপুরে, ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকায় গতকাল সর্বোচ্চ ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
দীর্ঘ ৬ দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পে লণ্ডভণ্ড মরক্কোর মধ্যাঞ্চল। প্রাণঘাতী এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর তৈরি হয়েছে আরেক অনিশ্চয়তা। স্বজন ও আশ্রয়হারা মানুষগুলোর দিন কাটছে খোলা আকাশের নিচে।
৬ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পটি আঘাত হানে শুক্রবার রাতে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এই ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ১২২ জন মারা গেছে। আহত হয়েছে আড়াই হাজারের মতো মানুষ, যাদের মধ্যে প্রায় দেড় হাজারের অবস্থাই গুরুতর।
অ্যামিজমিজ শহরে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার জন্য একটি পরিবার ভ্যানে জিনিসপত্র প্যাক করছে। ছবি: সংগৃহীত
জাতিসংঘের অনুমান, এই ভূমিকম্পে তিন লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে জানিয়েছে- ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল আল হাউজ প্রদেশের ইঘিল শহরের কাছে, মারাকেশ শহর থেকে ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং এটলাস পর্বতমালা এলাকার ১৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার গভীরে।
উচ্চ এটলাস পর্বতমালায় অবস্থিত মনোরম গ্রাম এবং উপত্যকার জন্য এই অঞ্চলটি ব্যাপকভাবে পরিচিত।
আমিজমিজ শহরে ভূমিকম্পে বাস্তুচ্যুত হওয়ার পর তাঁবুতে আশ্রয় নেয়া একটি পরিবার।
শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ১১টা ১১ মিনিটে ভূমিকম্পটি আঘাত হানার পর লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসে। ভূমিকম্পটির ১৯ মিনিট পর আবারও ৪ দশমিক ৯ মাত্রার ভূ-কম্পন অনুভূত হয়।
ভূমিকম্পে অনেকেই ঘর হারিয়েছেন। অনেক ঘর ধসে না পড়লেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার অনেকে আফটার-শকের ভয়ে মারাকেশের রাস্তায় বা মৌলে ব্রাহিমের মতো কঠিন-বিধ্বস্ত অ্যাটলাস মাউন্টেন শহরে অস্থায়ী ছাউনির নিচে রাত কাটাচ্ছেন। গত চারদিনেও তারা ঘরে ফিরে যাননি।
বিশেষ করে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মারাকেশ, হাউজ, অ্যাটলাস পর্বতমালা এলাকার বহু মানুষই আবার ভূমিকম্প হওয়ার ভয়ে নিজেদের ঘরে ফিরে যায়নি। তাদের দিন কাটছে খোলা আকাশের নিচে।
ভূমিকম্প উপদ্রুত এলাকায় তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় বাস্তুচ্যুত লোকদের আশ্রয় দেয়ার জন্য তাঁবু স্থাপন করা হয়েছে।
অ্যাটলাস ও অ্যামিজমিজে- উভয় শহরের বাসিন্দারাই নিজেদের এই দুরবস্থার মাঝেও দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন দূর অঞ্চলে থাকা স্বজনদের কথা ভেবে।
অ্যাটলাস পর্বতমালার মতো মরক্কোর আরও অনেক অঞ্চলেই জরুরি সেবা পৌঁছাতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
বিশেষত প্রত্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় গ্রামবাসী হাত দিয়ে বা তাদের কাছে থাকা বেলচা, শাবল দিয়ে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে আটকে পড়া মানুষ উদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার কিছুক্ষণ পর ওই বেলচা আর শাবল দিয়েই মরদেহ দাফনের জন্য কবরও খুঁড়তে হচ্ছে তাদের।
তাঁবুর ভেতরে রান্নার ব্যস্ততা।
বিবিসিকে এরকম একটি গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘মানুষের কাছে আর কিছুই বাকি নেই। গ্রামে কোনও খাবার নেই, শিশুরা পানির পিপাসায় কষ্ট পাচ্ছে। খোলা আকাশের নিচে মানুষগুলো ক্ষুধা আর পিপাসায় তড়পাচ্ছে।’
মারাকেশ থেকে ৫৫ কিলোমিটারের দক্ষিণের পাহাড়ি শহর আমিজমিজের প্রায় পুরোটাই মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।
স্থানীয় হাসপাতাল ভবনটিও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই ভবনের ভেতরে চিকিৎসা কার্যক্রম চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ায় হাসপাতালের সামনে মাঠে তাঁবু খাটিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে আহতদের।
আমিজমিজ শহরের কেন্দ্রে ঢালাওভাবে পাটি বিছিয়ে টানা তিন রাত কাটিয়ে দিয়েছে শত শত মানুষ। আবারও ভূমিকম্প হতে পারে, এমন আশঙ্কায় তারা ঘরে ফিরতে পারছে না।
আমিজমিজ শহর ছেড়ে যাচ্ছে মানুষ।
মরক্কোর বাদশাহ ষষ্ঠ মোহাম্মদ ভূমিকম্পের পরদিন শনিবার দেশটিতে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন। সেনাবাহিনী যেন উদ্ধার কাজে এবং জরুরি সেবা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে, সেই নির্দেশও দেন তিনি।
তারপরও দেশটির বিভিন্ন এলাকায়, বিশেষ করে অ্যাটলাস পর্বতমালা অঞ্চলের অনেক গ্রামে, জরুরি সেবা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এক ভয়াবহ অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনযাপন করছেন সাধারণ মানুষ।
আরও পড়ুন:রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘শরৎ’ কবিতায় লিখেছিলেন- ‘আজি কি তোমার মধুর মূরতি হেরিনু শারদ প্রভাতে!’
কবিতার পংক্তিমালা মন ছুয়ে যায়! দিশেহারা হয়ে ছুটে যায় মন- কোথায় আছে এমন ধবল সাদা কাশবন?
ঋতু পরিবর্তনের নিয়মে এসেছে শরৎ। তাই তো কাশফুল ফুটে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে প্রাণ-প্রকৃতিতে।
নদীর ধার, পুকুর পাড় কিংবা বিস্তীর্ণ বালুচরে বড্ড অবহেলায় ফোটে কাশফুল। লাগে না কোনো যত্ন-আত্তি।
প্রকৃতির এই দান দূর থেকে দেখে মনে হয়, শরতের আকাশের সাদা মেঘ যেন নেমে এসেছে ধরণীর বুকে। মৃদুমন্দ বাতাসে ওরা একে অপরের গায়ে লুটোপুটি খায়, নাচতে থাকে আপন ছন্দে। মুগ্ধ না হয়ে কি উপায় আছে!
কাশফুলের ছন্দ অগোচরেই যেন দোলা দিয়ে যায় সব বয়সীদের হৃদয়ে। ইট-পাথরের যান্ত্রিক কোলাহল ছেড়ে ক্ষণিক প্রশান্তির খোঁজে মানুষ ছুটে আসে কাশফুলের সংস্পর্শ পেতে।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে চা গবেষণা কেন্দ্রের মোড় পেরিয়ে খানিকটা এগুলেই পথের ধারে মিলবে কাশবনের সমারোহ। সে যেন গাঢ় সবুজের মাঝে শুভ্র কাশফুলের চাদরে ঢাকা রূপসী বাংলার একখণ্ড ছবি। আঁকাবাঁকা পথের দুধারে সারি সারি চা বাগান কিংবা সন্ধ্যায় ঝলমলে আলোর মাঝে পর্যটকরা মনভরে উপভোগ করেন কাশফুলের অপার সৌন্দর্য।
শুভ্র কাশবনে ছেয়ে আছে পাহাড়ি ছড়া, ঘন চা বাগান এলাকা। এঁকেবেঁকে বয়ে চলা পাহাড়ি ছড়ার দুই পাশ দিয়ে উঁচু-নিচু টিলা। ঋতুভেদে চা বাগানগুলোতেও প্রকৃতির রঙ বদলায়।
শ্রীমঙ্গল শহর থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে ভানুগাছ সড়কের পাশে বেলতলী সংলগ্ন ভুড়ভড়িয়া ছড়ার পাশে কাশফুলের বালুচরের অবস্থান।
ভানুগাছে যাওয়ার রাস্তা ধরে সামনে এগুলেই চা বাগানের ছড়ার পাশে দেখা মিলবে কাশফুলের বালুচর।
প্রতিবছর আগস্টের শেষের দিক থেকে অক্টোবরের প্রথম পর্যন্ত এই শুভ্র ফুল ফোটে। তাই বছরের দুই মাস এখানে পর্যটক ও স্থানীয় প্রকৃতিপ্রেমীদের ভিড় লেগেই থাকে। শীতে কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে বাগানগুলো। চা বাগানসহ শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলা জুড়েই দিনে কিংবা রাতে পর্যটকরা মনভরে উপভোগ করেন কাশফুলের এই সৌন্দর্য।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন বয়সী লোকজন এসেছেন এখানে। কাউকে আবার দেখা যায় কাশফুলের মাঝে দাঁড়িয়ে বা বসে ছবি তুলতে। অনেকে আবার মুক্ত বাতাসে পুরো বালুচর ঘুরে বেড়িয়ে আনন্দ উপভোগ করছেন।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছর আগস্টের শুরু কিংবা শেষের দিকে কাশফুল ফুটতে শুরু করে। সেপ্টেম্বর মাসে এসে সাদা কাশফুলে ছেয়ে যায় পুরো দুই কিলোমিটার এলাকা। সেপ্টেম্বরের শেষে কিংবা অক্টোবরের প্রথম দিকে ফুলগুলো ঝরে যায়। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এ কাশবনে মানুষের ভিড় লেগেই থাকে।
কাশফুল দেখতে আশা দর্শনার্থী মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঋতু পরিক্রমায় বাংলার প্রকৃতিতে এখন শরৎকাল। রাশি রাশি কাশফুল ছড়াচ্ছে শ্বেত শুভ্র নৈসর্গিকতা। আর তা মুগ্ধ করছে প্রকৃতিপ্রেমীদের।’
কাশফুল ও চায়ের রাজ্য দেখতে আসা সিলেট মহিলা কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অনাজিলা ধোহা বলেন, ‘কলেজ বন্ধ থাকায় একটু সময় বের করে বের হয়েছি। তাই বলে একা নই, পরিবারের সদস্যরাও এসেছেন। জায়গাটি অনেক সুন্দর। কাশফুলের মুগ্ধতা থেকেই এখানে আসা। কাশফুলের সঙ্গে ছবি তুললে ছবিগুলোও অনেক সুন্দর হয়। তাই এখানে আসা।’
শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সাংগঠনিক সম্পাদক এস কে দাশ সুমন বলেন, ‘চায়ের রাজধানী হিসেবে শ্রীমঙ্গলের খ্যাতি দেশ-বিদেশে। এখানে চা-বাগানের পাশাপাশি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা অনেক জায়গা আছে। চার-পাচঁ বছর ধরে কাশফুলের বালুচরটি সবার কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। শ্রীমঙ্গলে আসা পর্যটকরাও এখানে চলে আসেন প্রকৃতি দেখতে। কাশবন ও কাশফুলের সৌন্দর্য তাদেরকে বাড়তি বিনোদন দেয় নিঃসন্দেহে।’
আরও পড়ুন:আবারও ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল সিলেট। শনিবার বিকাল ৪টা ১৮ মিনিটে সিলেটে মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তবে এতে ক্ষয়ক্ষতির কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
৪ দশমিক ৯ মাত্রার এই কম্পনের উৎপত্তিস্থল সিলেটের পার্শ্ববর্তী ভারতের আসামে বলে জানা গেছে।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ সজিব হোসাইন ভূমিকম্পের তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
এর আগে গত ২৯ আগস্ট দুপুর ১টা ১৩ মিনিটের দিকে সিলেটে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ভূমিকম্পটি কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী ছিল। ওই ভূমিম্পের উৎপত্তিস্থল সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলা থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে ছিল।
তারও আগে গত ১৪ আগস্ট রাত ৮টা ৪৯ মিনিটের দিকে সিলেটে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। সেই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল সিলেটের সীমান্তবর্তী কানাইঘাট উপজেলার কাছাকাছি বলে জানা যায়। রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ৫ দশমিক ৫।
ভূমিকম্পের ডেঞ্জার জোনে থাকা সিলেটে ঘন ঘন ছোটমাত্রার ভূমিকম্পের কারণে বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা করছেন বিশেষষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন:বাকলে গর্ত বা ফাটল। শুকিয়ে গেছে কাণ্ড বা শাখার অংশ। পাতা বিবর্ণ কিংবা দাগযুক্ত। কাণ্ডে গজিয়েছে মাশরুম বা অন্যান্য ছত্রাক। মাটি থেকে শিকড় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
গাছের এমন চিত্র দেখলে মনে হয় এটি মৃত। অনেকেই হয়তো ভাবেন, প্রকৃতিকে তার দেয়ার মতো আর কিছু নেই, কিন্তু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টার (ডব্লিউআরসি) পরিদর্শন করে এ বিষয়ে নতুন কিছু জানার সুযোগ হলো।
জাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টার বা ডব্লিউআরসি দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাণী উদ্ধার ও সংরক্ষণ কেন্দ্র। ২০০৪ সালে অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজের উদ্যোগে ডব্লিউআরসি গঠন করা হয়। এখানে প্রকৃতিকে নিজের মতো করে গড়তে দেয়া হয়েছে।
সেন্টারটি গাছপালা ও প্রাণীদের নিরাপদ আবাসস্থল। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের পাশাপাশি এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ডব্লিউআরসিতে প্রায় ১০০ প্রজাতির গাছ আছে। এখানে প্রকৃতি যে পরিবেশ তৈরি করেছে, তাতে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা হয় না।
তিনি বলেন, ‘এখানে মৃত গাছগুলো রেখে দেয়া হয়; কেটে ফেলা হয় না। এগুলো প্রকৃতিতে অন্যান্য প্রাণী, পোকামাকড়ের আবাসস্থল অথবা খাবারের জোগান দেয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফর্নিয়ার পরিবেশ বিশেষজ্ঞ অ্যান্ড্রু উয়েন ‘লাইফ আফটার ডেথ’ শিরোনামের এক প্রতিবেদনে মৃত গাছের কিছু উপকারিতা ব্যাখ্যা করেন।
গবেষণার বরাত দিয়ে তিনি লিখেন, একটি গাছ প্রকৃতপক্ষে জীবিত থাকার চেয়ে মৃত অবস্থায় বন্যপ্রাণীদের অধিক বাসস্থান তৈরি করতে পারে। দাঁড়িয়ে থাকা মৃত গাছকে ‘ট্রি স্ন্যাগস’ বা বন্যপ্রাণীর গাছ বলা হয়।
তার গবেষণায় বলা হয়, বিভিন্ন ধরনের পাখি, বাদুড়, কাঠবিড়ালী ও ইঁদুরসহ অনেক প্রাণী ফাঁপা গহ্বর ও মৃত কাঠের ফাটলে বাসা তৈরি করে। অন্যান্য শিকারি প্রাণীর হাত থেকে বাঁচতেও তারা এসব গহ্বরে আশ্রয় নিতে পারে।
ওই প্রতিবেদনে মৃত গাছ সম্বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়, যেগুলো নিচে দেয়া হলো।
‘লাইফ আফটার ডেথ’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, মৃত গাছের আশপাশে কিছু বন্যপ্রাণী বা পাখি বেশি দেখা যায়। যেমন:
কাঠঠোকরা: এ পাখি গাছের মধ্যে ছিদ্র করে বাসা তৈরি করে ও এক বাসায় ওরা বেশি দিন থাকে না। এ বাসা পরবর্তী সময় যেসব প্রাণী নিজেদের জন্য কাঠ গর্ত করে বাসা তৈরি করতে পারে না (যেমন: কাঠবিড়ালী, বাদুড়), তাদের উপকারে আসে।
বাজপাখি ও শকুন: গাছের উঁচু শাখায় বসে এরা শিকারকে শনাক্ত করতে পারে, যাকে বলে ‘বার্ডস আই ভিউ’। উঁচু থেকে পাখির চোখে দেখা। যেহেতু মৃত গাছে পাতা থাকে না, ফলে এগুলোতে উঁচুতে বসে নিচে শিকারের গতিবিধি লক্ষ্য করা সহজ হয়।
বলা হয়ে থাকে, ‘ডেড ট্রিজ আর গুড হোম ফর ওয়াইল্ড লাইফ’। একটি বন চিন্তা করলে স্বাভাবিকভাবেই সবুজ গাছপালার কথাই কল্পনায় আসবে, কিন্তু শুকনো ডালপালা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পাতাহীন মৃত গাছ ছাড়াও বন অসম্পূর্ণ।
আরও পড়ুন:মহানগরীর সড়ক বিভাজক জুড়ে গাছ আর গাছ। আর তা নগরকে করেছে যেমন দৃষ্টিনন্দন, তেমনই প্রকৃতি নির্মল করতেও রাখছে ভূমিকা। মিলছে তপ্ত সড়ক ধরে ছুটতে গিয়ে যানজটে আটকে পড়া বাহনের চাল ও যাত্রীদের আপাত শীতলতা।
শিল্প নগরী খুলনার মুজগুন্নী এলাকার এমন চিত্র অতীত হতে চলেছে। কেটে ফেলা হচ্ছে সড়ক বিভাজকের সব গাছ। ইতোমধ্যে ২৫টির বেশি অস্তিত্ব হারিয়েছে। অন্যগুলোও কেটে ফেলার তোড়জোড় চলছে।
এই নিধন যজ্ঞ চালাচ্ছে খোদ খুলনা সিটি করপোরেশন। নগর কর্তৃপক্ষের যুক্তি, ব্যক্তি-উদ্যোগে লাগানো গাছগুলো বড় হয়ে গেছে। এতে করে এগুলোর শেকড়ের চাপে ভেঙে যাচ্ছে সড়ক বিভাজক। তাই সব গাছ কেটে ফেলে সৌন্দর্য্য বর্ধনে নতুন করে গাছ লাগানো হবে।
বুধবার সকাল থেকে ১২-১৩ জন শ্রমিক মুজগুন্নী এলাকার সড়কে গাছ কাটা শুরু করেন। তারা বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের নয়, আমরা ছয় নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নিয়োগ করা লোক। তার নির্দেশেই গাছ কাটছি।’
গাছ কাটায় নিয়োজিত ইসমাইল হোসেন নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘শুনেছি এই বড় সব গাছ কেটে সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য ঝাউগাছ লাগানো হবে।’
ইতোমধ্যে তারা কতগুলো কাজ কেটে ফেলেছেন সেই হিসাব তিনি দিতে পারেননি। শুধু বলেছেন, ‘নতুন রাস্তা মোড় থেকে কালভার্ট পর্যন্ত অংশের গাছগুলো সব কেটেছি। পরবর্তীতে এই সড়কের অন্যান্যা অংশের গাছগুলোও কাটা হবে।’
স্থানীয় বাসিন্দা ও বিএল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষক ইকবাল হোসেন বলেন, ‘সকালে এই পথে আমরা মর্নিং ওয়াক করি। গাছগুলো দেখে ভালো লাগে। কেন গাছগুলো কেটে ফেলা হলো ঠিক বুঝতে পারছি না। পরিবেশের যে প্রতিকূলতা, তাতে খুব বেশি অসুবিধা না হলে গাছ না কাটাই উচিত। বরং আমাদের আরও বেশি বেশি করে গাছ লাগাতে হবে।’
‘সকালে গাছগুলো কাটতে দেখে খারাপ লাগলো। শ্রমিকদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে জানলাম যে খোদ সিটি করপোরেশনই গাছগুলো কাটছে। এই গাছগুলো চোখের সামনে পাঁচ/ছয় বছর ধরে দেখছি। এখন একদম ফাঁকা, মনের ভেতর খা খা করছে;’ যোগ করেন তিনি।
সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে খুলনা সোনাডাঙ্গা-মুজগুন্নি সড়কের নতুন রাস্তার মোড় থেকে বিজিবি ক্যাম্প পর্যন্ত ৪০০ মিটার অংশের গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। ঠিক কতগুলো গাছ ছিল তা নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। তবে মাঝারি ও বড় গাছের কাঁটা অংশ পাওয়া গেছে ২৫টির বেশি।
শ্রমিকরা গাছগুলো গোড়া থেকে কেটে সড়কের পাশে নিয়ে ডালপালা ছেটে আলাদা করে ভ্যানে করে নিয়ে যাচ্ছেন। শ্রমিকদের কেউ কেউ কোদাল দিয়ে কাঁটা অংশের গোড়াগুলো মাটি দিয়ে সমান করছেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) খুলনার সমন্বয়কারী বাবুল হাওলাদার বলেন, ‘এটি আহাম্মকী কাজ। লাগানো গাছ কেটে নতুন করে গাছ লাগানো এক ধরনের প্রহসন। অর্থ লোপাটের ব্যবস্থা করা আর কি।
‘এই গাছ যদি কেউ ব্যক্তি-উদ্যোগে লাগিয়ে থাকেন তাতে অসুবিধা কোথায়? এই মহাসড়কের ডিভাইডারে লাগানো ছোট ছোট বাদাম গাছগুলো ছায়া দিত। দেখতেও সুন্দর লাগতো। কেটে ফেলা গাছগুলোর মধ্যে একটি বট গাছের ছবি এখনও চোখে ভাসছে আমার।’
‘উন্নয়ন সবসময় পরিবেশ-বান্ধব হওয়া উচিত। রাস্তার দোহাই দিয়ে, ডিভাইডার ভালো রাখার অজুহাত দিয়ে খুলনা সিটি করপোরেশনের এই গাছগুলো কাটা ঠিক হচ্ছে না। এই কাজ এখনই বন্ধ করা উচিত’, বলেন তিনি।
খুলনা সিটি করপোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ প্রিন্স বলেন, ‘বড় গাছ যেমন রেইন ট্রিসহ অন্যান্য গাছ কাটা হচ্ছে। কারণ এসব গাছ বড় হয়ে ডিভাইডার ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু ছোট গাছ এবং খুবই প্রয়োজনীয় যেমন নিমসহ অন্যান্য গাছ রেখে দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ছোট গাছ লাগানো হবে।’
খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, ‘ডিভাইডার-এর উপরে লাগানো বড় গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে কারণ এগুলোর জন্য ডিভাইডার ফেটে যাচ্ছে। তাছাড়া এই গাছগুলো লাগানো হয়েছে ব্যক্তি-উদ্যোগে। কেন তারা সড়ক ডিভাইডারে গাছ লাগাবে?
‘ইচ্ছেমতো তো এখানে গাছ লাগানো যাবে না। এই ডিভাইডার সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ভাড়া দেয়া হয়েছে। তারা তাদের মতো করে গাছ লাগাবে।’
মন্তব্য