শেষ হতে যাচ্ছে দীর্ঘ শাটডাউন। বুধবার সকাল থেকে স্বাভাবিক রূপে ফিরবে জনজীবন। এ জন্য লঞ্চ চালুর সব প্রস্তুতি নিচ্ছেন সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সরকার ঘোষিত শাটডাউন তুলে নেয়ার শেষ ঘণ্টাটি কখন বাজবে সেই অপেক্ষায় আছেন তারা।
মঙ্গলবার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় সারি সারি নোঙর করা আছে বিভিন্ন কোম্পানির লঞ্চ। এগুলো ধোয়ামোছার কাজ চলছে।
সব প্রস্তুতি সেরে রেখেছে এমভি রয়েল ক্রজ, সুন্দরবন, কর্ণফুলী, অ্যাডভেঞ্চার, এমভি ঈগল, এমভি ইয়াদ, গ্লোবি অফ নেভিগেশন, মেসার্স সোহান শিপিং লাইন্স কোম্পানির লঞ্চ মানিক ও পারাবত লঞ্চ।
লঞ্চসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ বিধিনিষেধ, লকডাউন, শাটডাউনে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন তারা। কখন শাটডাউন উঠবে এ নিয়ে তর সইছে না তাদের।
লঞ্চ মানিকের কোয়ার্টার মাস্টার শাহ আলম বলেন, ‘প্রথমে ৫৫ দিনের লকডাউন, এরপর আবার শাটডাউন ঘোষণা করা এবং ধাপে ধাপে তা বাড়িয়ে আজ আমাদের নিঃস্ব করে দেয়া হয়েছে। এখন পেটে ভাত নাই, বাজার করতে পারি না। অনেকের ঘরের বউ ছেড়ে চলে গেছে। আর যেন লকডাউন বা শাটডাউনের বিধিনিষেধ না আসে।’
এমভি রয়েল ক্রুজের পরিদর্শক মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগামীকাল সরকার ঘোষিত শাটডাউনের শেষ দিন। রাত ১২টার পর নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও আমরা বৃহস্পতিবার বিকেল ছাড়া কোনো যাত্রী পাব না।
‘একমাত্র ঈদের সময় ছাড়া সাধারণত দিনের বেলায় কোনো যাত্রী পাওয়া যায় না। এবার ঢাকা থেকে ফেরার যাত্রী খুব একটা হবে না বলে আমরা আশঙ্কা করছি।’
সুন্দরবন লঞ্চের ক্যাশিয়ার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ছেড়ে যাওয়ার সময় তেল খরচার পয়সা উঠবে কি না আমরা এ নিয়ে খুব চিন্তিত আছি। ঈদের আগে যেসব মানুষ ঢাকা ছেড়ে গেছে, তারা অনেকেই ফেরে নাই।’
লঞ্চ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা নিয়ে মেসার্স সোহান শিপিং লাইন্সের লঞ্চ ‘মানিক’-এর কোয়ার্টার মাস্টার মো. শাহ আলম নিউজবাংলাকে অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গে জানান, প্রতিদিন লঞ্চের পরিচর্যা করতে হয়। সে ক্ষেত্রে লঞ্চ ধোয়ামোছার কাজ অব্যাহত থাকে। লঞ্চে যাত্রী তোলার আগে আবার পানি মেরে ধোয়ামোছা করা হয়।
বিআইডব্লিউটিএর প্রবেশ গেটের টিকিট বিক্রেতা হুমায়ুন কবির জানান, লঞ্চগুলো টার্মিনালে নোঙর করার পর যেসব লঞ্চ এখানে আর জায়গা পায় না, তারা শ্যামবাজার-ফরাশগঞ্জের ঘাটে গিয়ে নোঙর করে। তবে সে ক্ষেত্রে লঞ্চপ্রতি ১২০ টাকা করে ঘাটের ভাড়া দিতে হয়।
কারণ হিসেবে তিনি জানান, ওই ঘাট সরকারিভাবে ডাকা হয়। যারা সরকারের ডাক পায় তারাই ঘাট নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনায় নামে-বেনামে প্রায় ১ হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম।
অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাটহাজারী থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দপ্তরের প্রধান বাদী হয়ে নাম জানা ৯৮ জন ও অজ্ঞাতনামা ৮ শত থেকে ১ হাজার জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তা দপ্তরের লুট হওয়া দেশীয় অস্ত্র লুটপাটের ঘটনায় ডায়েরি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।’
উল্লেখ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় এক দারোয়ানের সঙ্গে এক ছাত্রীর তর্কাতর্কিকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। পরে তা দ্রুতই রূপ নেয় বড় ধরনের সংঘর্ষে। এতে উভয় পক্ষের প্রায় ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন বলে জানা গেছে। আহত হয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন গ্রামবাসীও।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এমন সহিংসতা কখনোই কাম্য নয় এবং দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনার পর থেকে ক্যাম্পাস এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা জোরদার করেছে। চলমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
শেখ হাসিনার পতনের পর দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে দ্রুত বদল আনতে চাইছে পাকিস্তান। বাংলাদেশে ১৩ বছর পর শীর্ষ পর্যায়ের সফরে এসে সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের ঘোষণা দিয়ে গেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার।
মূলত হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশে কূটনৈতিক সুযোগ দেখছে ইসলামাবাদ। এমন অবস্থায় বাণিজ্য ও কূটনীতিতে এগোচ্ছে ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্ক।
গতকাল মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি তাদের প্রতিবেদনে বলছে, গত ২৩ আগস্ট ভোরে ঝোড়ো হাওয়া আর মেঘলা আকাশে ঢাকা বিমানবন্দরে নামেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। ১৩ বছর পর এবারই কোনো শীর্ষ পাকিস্তানি কর্মকর্তা বাংলাদেশে এলেন, যে দেশটি আজ থেকে ৫৪ বছর আগে পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়েছিল।
একইসঙ্গে উপপ্রধানমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করা ইসহাক দার এ সফরকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে বলেন, এটি হবে দুই দেশের ‘অংশীদারিত্বের নতুন অধ্যায়’। তিনি স্বীকার করেন, গত এক বছরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে অগ্রগতি হয়েছে।
ইসহাক দার বলেন, ‘আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে এমন এক পরিবেশ গড়ে তুলতে, যেখানে করাচি থেকে চট্টগ্রাম, কোয়েটা থেকে রাজশাহী, পেশোয়ার থেকে সিলেট এবং লাহোর থেকে ঢাকা— দুই দেশের তরুণরা হাতে হাত মিলিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে, ভাগাভাগি করবে তাদের স্বপ্ন।’
তার এ সফর মূলত মাসের পর মাস ধরে চলা কূটনৈতিক ও সামরিক যোগাযোগের পর বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষত, ২০২৪ সালের আগস্টে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র নেতৃত্বাধীন গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্ক দ্রুত উষ্ণ হয়ে উঠেছে। শেখ হাসিনা ভারতের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং বর্তমানে ভারতে পালিয়ে আছেন।
তবে পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিক মাসুদ খালিদ সতর্ক করে বলেন, অতীত এখনো দুই দেশের আস্থা তৈরিতে বাধা হয়ে আছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নতুন সরকার পাকিস্তানের উদ্যোগে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। সম্পর্কের পথে কৃত্রিম বাধাগুলো এখন দূর হয়েছে।’
কিন্তু সম্পর্ক গভীর করতে হলে ‘গঠনমূলক সংলাপের মাধ্যমে ভুল বোঝাবুঝি দূর করার একটি কাঠামো’ প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
সামরিক ও কূটনৈতিক যোগাযোগ বেড়েছে
শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। বিশ্লেষকরা এত দ্রুত সম্পর্ক উষ্ণ হয়ে উঠবে, তা ধারণা করেননি।
এ বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান ইসলামাবাদে গিয়ে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর ফেব্রুয়ারিতে যান বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান। এরপর এপ্রিল মাসে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বেলুচ ঢাকায় আসেন।
এরপর মে মাসে ভারত-পাকিস্তানের চার দিনের সংঘাতের কারণে ইসহাক দারের সফর পিছিয়ে যায়। তবে জুলাইয়ে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভি ঢাকা সফর করেন। অবশেষে আগস্টে দার ঢাকায় এলেন, একই সময়ে পাকিস্তানে যান বাংলাদেশের কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ ফয়জুর রহমান। সেখানে তিনি পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর জয়েন্ট চিফস কমিটির চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জার সঙ্গে বৈঠক করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দিলওয়ার হোসেন মনে করেন, পাকিস্তানের এই ‘তড়িঘড়ি’ কৌশলগত। তিনি বলেন, ‘হাসিনা সরকারের আমলেও পাকিস্তান সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালিয়েছে। এখন তারা ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ের মতো সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার সুযোগ দেখছে।’
তিনি মনে করিয়ে দেন, ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতায় আসা জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছিলেন। তবে বাংলাদেশে শাসন পরিবর্তন প্রায়ই ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন তৈরি করেছে। পাকিস্তান হয়তো বর্তমান বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের টানাপড়েনকেও কাজে লাগাতে চাইছে।
মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস এখনো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে গভীর ছায়া ফেলছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগী বাহিনীর হাতে লাখো বাঙালি নিহত হয়, প্রায় দুই লাখ নারী ধর্ষণের শিকার হন। ভারতীয় সেনা সহযোগিতায় শেখ মুজিবুর রহমান ও তার আওয়ামী লীগ দেশকে স্বাধীন করে।
পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব আইজাজ চৌধুরী মনে করেন, ভারতীয় ‘আঞ্চলিক আধিপত্য’ মোকাবিলায় পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে এক হতে হবে। গত মে মাসে কাশ্মিরে হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের চার দিনের আকাশযুদ্ধে এই বিরোধ আবার প্রকট হয়ে ওঠে।
অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহাব এনাম খান মনে করেন, ঢাকা-নয়াদিল্লি সম্পর্ক এখন কিছুটা শীতল হলেও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্রনীতি সাধারণত অর্থনীতিনির্ভর। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক কেবল নিরাপত্তা বা সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং আঞ্চলিক সহযোগিতা ও অর্থনীতির ভিত্তিতেই গড়ে উঠতে পারে।’
চীনের প্রভাব
চীন বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বাড়াচ্ছে। বেইজিং পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হলেও হাসিনা সরকারের সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো ছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পরও চীন তার অবস্থান ধরে রেখেছে। মার্চে ইউনূস বেইজিং সফর করেন। আগস্টে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এক সপ্তাহের সফরে যান চীনে।
বাংলাদেশ ১২টি চীনা জে-১০সি যুদ্ধবিমান কেনার বিষয় বিবেচনা করছে। পাকিস্তান ইতোমধ্যে এসব যুদ্ধবিমান ব্যবহার করছে। পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের সামরিক ও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বও গভীর। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এসব কারণে ঢাকা ও ইসলামাবাদের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হতে পারে।
বাণিজ্য ও রাজনীতি
দারের দুই দিনের সফরে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর মধ্যে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে শীর্ষ ভূমিকা রাখা ছাত্রনেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টিও (এনসিপি) ছিল।
পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিক আবদুল বাসিত বলেন, বাংলাদেশে ২০২৬ সালের শুরুতে নির্বাচন হবে, তার আগে এসব বৈঠক তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, ‘যে কোনো পরিস্থিতিতেই পাকিস্তান ও বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। অতীতের সমস্যাগুলো দক্ষতার সঙ্গে সামলাতে হবে।’
অর্থনীতিতেও উভয় দেশ উপকৃত হতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশ ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে, পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি মাত্র ২.৫ শতাংশ। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যও এখনো সীমিত। ২০২৪ সালে পাকিস্তান বাংলাদেশে ৬৬১ মিলিয়ন ডলার পণ্য রপ্তানি করেছে, বিপরীতে আমদানি মাত্র ৫৭ মিলিয়ন ডলার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিলওয়ার হোসেন বলেন, পাকিস্তান থেকে তুলা, টেক্সটাইল, চাল, সিমেন্ট, ফল ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য আমদানি করতে পারে বাংলাদেশ। অন্যদিকে, পাকিস্তান আমদানি করতে পারে বাংলাদেশের পাটজাত পণ্য, কেমিক্যাল, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ও তামাকজাত দ্রব্য।
তিনি উল্লেখ করেন, দুই দেশের সম্মিলিত জনসংখ্যা ৪৩০ মিলিয়ন—যা পশ্চিম ইউরোপের দ্বিগুণেরও বেশি।
অতীতের ক্ষত
তবে ১৯৭১-এর ক্ষত এখনো বড় বাধা। বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছে এখনো আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা চায়। এছাড়া, বাংলাদেশে বসবাসরত দুই লাখেরও বেশি উর্দুভাষী মুসলমানের বিষয়টি অমীমাংসিত। তারা মূলত বিহার থেকে পূর্ব পাকিস্তানে এসেছিলেন, তবে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ তাদের পূর্ণ নাগরিক অধিকার দেয়নি এবং পাকিস্তানও তাদের নিতে অনিচ্ছুক।
এছাড়া, মুক্তিযুদ্ধের আগে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সম্পদ ভাগাভাগি এবং ১৯৭০ সালের বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য ঘোষিত সাহায্যও এখনো বিতর্কের বিষয়।
তবুও পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব আইজাজ চৌধুরী বলেন, দুই দেশের জনগণ পুনর্মিলনের পক্ষে। ১৯৭১ সালের ঘটনার জন্য পাকিস্তানের মানুষও সমানভাবে দুঃখিত। এখন সবাই সামনে এগিয়ে যেতে চায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিলওয়ার হোসেন বলেন, হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হলেও মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে বাংলাদেশের জনমত অপরিবর্তিত। অতীত ভুলে থাকা সম্ভব নয়, তবে কূটনীতি সবসময়ই গতিশীল। দুই দেশ অর্থনীতি, কূটনীতি ও সংস্কৃতিতে সহযোগিতা বাড়াতে পারে, পাশাপাশি অতীতের ক্ষত নিরাময়ের প্রক্রিয়াও চালিয়ে যেতে পারে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত অপরাধের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। গণঅভ্যুত্থানের সময় শহীদ প্রত্যেকের পরিবার, আহত ব্যক্তি, দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই জবানবন্দি দেন আবদুল্লাহ আল-মামুন। গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে আসামি হিসেবে রয়েছেন তিনি। সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এ মামলায় দোষ স্বীকার করে নিয়ে ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এ মামলার ৩৬তম সাক্ষীর জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামুন বলেন, ‘আমি সাড়ে ৩৬ বছর পুলিশে চাকরি করেছি। পুলিশের চাকরি খুবই ট্রিকি চাকরি। সব সময় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে। আমার এই চাকরিজীবনে আমার বিরুদ্ধে কখনো কোনো অভিযোগ আসেনি। আমি সব সময় যথেষ্ট মানবিকতা ও সচেতনতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। চাকরিজীবনের শেষ পর্যায়ে এসে এত বড় গণহত্য আমার দায়িত্বকালীন সময়ে সংঘটিত হয়েছে, তার দায় আমি স্বীকার করছি।’
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নির্দেশে এসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বলেন, ‘আমি গণহত্যার শিকার প্রত্যেকের পরিবার, আহত ব্যক্তিবর্গ, দেশবাসী এবং ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমাকে দয়া করে ক্ষমা করে দেবেন।’
সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ‘আমার এই সত্য ও পূর্ণ বর্ণনার মাধ্যমে সত্য উদ্ঘাটিত হলে আল্লাহ যদি আমাকে আরও হায়াত দান করেন, বাকিটা জীবন কিছুটা হলেও অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পাব।’
তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগের রাতে ৫০ শতাংশ ভোট ব্যালট বাক্সে ভরে রাখতে শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন তৎকালীন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারী। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে।
২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশ পুলিশের ২৭তম মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন জাবেদ পাটোয়ারী। পরবর্তী সময়ে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে পুলিশ থেকে অবসর গ্রহণের পর তাকে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
জবানবন্দিতে সাবেক এই আইজিপি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর পুলিশে রাজনৈতিক প্রভাব আরও বেড়ে যায়। প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন কিছু কিছু কর্মকর্তা। ঊর্ধ্বতন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে তাদের সরাসরি যোগাযোগ ছিল।
তিনি বলেন, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান ও এসবির সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনীতে দুটি গ্রুপ গড়ে উঠেছিল। একটির নেতৃত্ব দিতেন হাবিব ও আরেকটির নেতৃত্বে ছিলেন মনির।
চৌধুরী মামুন আরো বলেন, ‘এসব কর্মকর্তা প্রায় রাতেই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় বৈঠকে করতেন। গোপন সেসব বৈঠক গভীর রাত পর্যন্ত চলত। বৈঠকে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা হলেন সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন-অর-রশীদ, এসবির মনিরুল ইসলাম, ঢাকার ডিআইজি নুরুল ইসলাম, অ্যাডিশনাল ডিআইজি বিপ্লব কুমার, এএসপি কাফী, ওসি মাজহার, ফোরকান অপূর্বসহ আরো অনেকে। এর মধ্যে কারো কারো সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি যোগাযোগ ছিল।’
মামুন বলেন, সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের ব্যক্তিদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকায় চেইন অব কমান্ড মানতেন না এসব কর্মকর্তা। কিন্তু আমি চাইতাম তারা পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করুক। মূলত পুলিশ বাহিনীতে গড়ে তোলা দুটি গ্রুপই এসব কর্মকাণ্ড চালাত। এছাড়া দুই গ্রুপের নেতৃত্বদানকারীরা চাইতেন তাদের নিজস্ব বলয়ের লোকজন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পোস্টিং পাক এবং ঢাকায় থাকুক।
জবানবন্দিতে র্যাবে থাকাকালীন টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন বা টিএফআই সেলসহ বহু বন্দিশালার বর্ণনাও দেন তিনি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের আটকের প্রস্তাব প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই) দিয়েছিল বলে জবানবন্দি দেন আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) তৎকালীন প্রধান মোহাম্মদ হারুন রশীদকে সমন্বয়কদের আটকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
মামুন বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন শুরু হওয়ার পর সারাদেশে সেনা মোতায়েন করা হয়। এরপর ১৯ জুলাই থেকে প্রায় প্রতি রাতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ধানমন্ডির বাসায় কোর কমিটির বৈঠক হতো। বৈঠকে তাদের আন্দোলন দমনসহ সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হতো।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, এই কোর কমিটির বৈঠকে তিনি, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাংগীর আলম, অতিরিক্ত সচিব টিপু সুলতান, অতিরিক্ত সচিব রেজা মোস্তফা, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিএমপির ডিবির প্রধান মোহাম্মদ হারুন রশীদ, র্যাবের মহাপরিচালক হারুন অর রশিদ, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম আমিনুল হক, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, ডিজিএফআই ও এনএসআইয়ের প্রধানেরা উপস্থিত থাকতেন।
কোর কমিটির একটি বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের আটক করার সিদ্ধান্ত হয় বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বলেন, ডিজিএফআই এই প্রস্তাব দেয়। তিনি এর বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি রাজি হন। আটকের দায়িত্ব ডিবিপ্রধান হারুনকে দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত মোতাবেক ডিজিএফআই ও ডিবি তাদের আটক করে। ডিবি হেফাজতে নিয়ে আসে।
জবানবন্দিতে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, সমন্বয়কদের ডিবি হেফাজতে এনে আন্দোলনের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আপস করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। তাদের আত্মীয়স্বজনকেও ডিবিতে নিয়ে এসে চাপ দেওয়া হয়। সমন্বয়কদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে টেলিভিশনে বিবৃতি প্রদানে বাধ্য করা হয়। এ ব্যাপারে ডিবিপ্রধান হারুন অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
ডিবির তৎকালীন প্রধান হারুনকে ‘জিন’ বলে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ডাকতেন উল্লেখ করেন সাবেক আইজিপি। তিনি বলেন, হারুন সরকারের যেকোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পারদর্শী ছিলেন।
সাবেক আইজিপি ট্রাইব্যুনালে আরও বলেন, আন্দোলন দমনে মারণাস্ত্র ব্যবহার, হেলিকপ্টার থেকে গুলি ও ব্লক রেইডের সিদ্ধান্ত হয় রাজনৈতিকভাবে।
তিনি জানান, লেথাল উইপেন ব্যবহারের নির্দেশনা এসেছিল শেখ হাসিনার কাছ থেকে। আর সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান হাবিব, ডিবির হারুন ছিলেন মারণাস্ত্র ব্যবহারে অতিউৎসাহী।
মামুন জবানবন্দিতে বলেন, র্যাব-১ এ টিআইএফ নামে গোপন বন্দিশালা ছিল। অন্যান্য র্যাবের ইউনিটে ছিল এমন বন্দিশালা। রাজনৈতিক ভিন্নমত ও সরকারের জন্য হুমকি হয় এমন মানুষদের ধরে আনা হতো এখানে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আসত এসব নির্দেশনা। কখনো নির্দেশনা দিতেন তারেক সিদ্দিকী। আর আয়নাঘরে আটক ও ক্রসফায়ারে হত্যার মতো কাজগুলো করতেন র্যাবের এডিসি অপারেশন ও গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক।
এ বছরের ২৪ মার্চ মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি জানান, স্বেচ্ছায় আসামি থেকে রাজসাক্ষী হয়ে সত্য উন্মোচন করতে চান তিনি।
এর আগে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনে আহত, শহীদ পরিবারের সদস্য, চিকিৎসকসহ ৩৫ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ মাসেই এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হওয়ার প্রত্যাশা করছে প্রসিকিউশন।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গ্রেপ্তার হন তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেশজুড়ে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল ও জেলা তাঁতীদলের পক্ষ থেকে বৃক্ষরোপণ ও বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। দৈনিক বাংলার জেলা ও উপজেরা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত;
মাগুরা প্রতিনিধি জানান, মাগুরায় বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মাগুরা সরকারী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার মাগুরা সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন মাগুরা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলহাজ মনোয়ার হোসেন খান। এ সময় আরও ছিলেন মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক রেজভী জামান, মাগুরা জেলা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষকদল ও ছাত্রদলের নেত-ওকর্মীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আলহাজ মনোয়ার হোসেন খান বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান গাছ লাগানো পছন্দ করতেন। তার স্মরণে আমরা যদি কিছু গাছ লাগায় ও কিছু গাছ মানুষকে বিতরণ করি এই গাছের ফল হলে, গাছের যত্ন নিলে ছাদগায় জারিয়া হবে। আমাদের নেতার রুহের প্রতি ছোয়াবটুকু পৌঁছে যাবে। সেই জন্য আমাদের উদ্দেশ্য লোক দেখানো নয় সত্যিকার অর্থে গাছ লাগিয়ে পরিবেশ রক্ষা এবং মানুষের কল্যাণে গাছ লাগানো।
এছাড়া গত সোমবার বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শহরে র্যালি ও সমাবেশ শেষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বগুড়া প্রতিনিধি জানান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা তাঁতীদলের উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে শহরের রেলওয়ে ঈদগাহ মাঠে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বৃক্ষরোপণ করেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও বগুড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. রেজাউল করিম বাদশা। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা সাবেক এমপি কাশেম ইসরাইল, জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও শহর বিএনপির সভাপতি অ্যাড. সাইফুল ইসলাম হিরু, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও শাজাহানপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আল-হেলাল, জেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ মো. শাহনেওয়াজ হোসেন প্রমুখ।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা তাঁতীদলের সভাপতি সানাউল হক সানা, সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার আলী বাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক খোরশেদ ইসলাম মিলন, সহসভাপতি মাসুদ রানা, জেলা তাঁতীদলের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমান আজাদ, উপদেষ্টা আলমগীর কবির সুমনসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
নওগাঁ প্রতিনিধি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) গৌরবময় ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নওগাঁ জেলা বিএনপির উদ্যোগে একটি ব্যতিক্রমী ও পরিবেশবান্ধব কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে নওগাঁ শহরের বাইপাস সড়ক সংলগ্ন এলাকায় অনুষ্ঠিত হয় এ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, যেখানে ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতামূলক বার্তা তুলে ধরা হয়। এই কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন জেলা বিএনপির সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নু ও সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসমবায়বিষয়ক সম্পাদক নজমুল হক সনি, জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক নূর ই আলম মিঠু, বিএনপি নেতা খায়রুল আলম গোল্ডেন, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি দেওয়ান মোস্তাক আহমেদ রাজা, পৌর বিএনপির সভাপতি ডা. মিজানুর রহমান, জেলা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল ও মহিলা দলের নেতা-কর্মীসহ শতাধিক নেতা-কর্মীরা।
কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ‘বিএনপি শুধু রাজনৈতিক দল নয়, এটি একটি জনআন্দোলনের নাম, যা দেশের সার্বিক উন্নয়ন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং পরিবেশ সুরক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। বর্তমান জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বৃক্ষরোপণ অত্যন্ত জরুরি, আর বিএনপি সেই দায়িত্ব থেকেই জনসচেতনতা বাড়াতে এই কর্মসূচি পালন করছে। বক্তারা আরও বলেন, ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শুধু একটি রাজনৈতিক দর্শন নয়, তিনি ছিলেন প্রকৃতি ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের পক্ষে। তার আদর্শ অনুসরণ করে বিএনপি সবুজ, পরিচ্ছন্ন ও টেকসই বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে।
নেতারা দেশের চলমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সংকট থেকে উত্তরণে বিএনপির প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং বলেন, ‘বিএনপি সবসময়ই জনগণের পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে। আমরা বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক দায়িত্ববোধের পাশাপাশি সামাজিক ও পরিবেশগত দায়িত্বও পালন করা রাজনৈতিক দলের অন্যতম কর্তব্য।
এ বি চৌধুরী নাদিম, নেত্রকোনা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সোনালী ব্যাংক পিএলসি, জিয়া পরিষদ নেত্রকোনা অঞ্চলের পক্ষ থেকে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ উপস্থিত সোনালী ব্যাংক পিএলসি জিয়া পরিষদের শতাধিক নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে ওই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জিয়া পরিষদ নেত্রকোনা অঞ্চলের সম্মানিত সভাপতি জনাব মো. জাহের উদ্দিন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জিয়া পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রোকন উদ্দিন। সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব মো. রুবেল মিয়া। এছাড়া ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন শাখা থেকে আগত উপস্থিত নেতারা। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন ও জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সার্বিক সফলতা কামনা করেন।
পরিশেষে মিষ্টি বিতরণের মাধ্যমে ওই প্রতিষ্টাবার্ষিকী পালন অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে।
নাসির উদ্দিন শাহ মিলন, নীলফামারী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ড. অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) নীলফামারী জেলা শাখার উদ্যোগে এবং জেলা বিএনপির সহযোগিতায় ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, ব্লাড গ্রুপিং ও স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি দিনব্যাপী হয়েছে। মঙ্গলবার জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন নীলফামারী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. জিম্মা হোসেন। এ সময় জেলা ড্যাবের আহ্বায়ক ডা. মো. সোহেলুর রহমান সোহেলের সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্য আনিসুর রহমান কোকো, শেফাউল জাহাঙ্গির সেপু, হারুন অর রশিদ খোকন, আকবর আলি, পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফুল আলম চৌধুরী শুভ, কৃষক দলের আহ্বায়ক মগনী মাসুদুল আলম দুলাল, সদস্য সচিব ওয়ালিউর রহমান হেলাল, জেলা যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আল নোমান কল্লোল, সাবেক ছাত্রনেতা সানাউল হক তনি, ডা. রেদোয়ান জুবায়ের রিয়াদ, সদস্য সচিব ড্যাব নীলফামারী জেলা এবং জেলা বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতারা।
ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে ৩০০ জনেরও বেশি রোগীকে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ প্রদান করা হয়। পাশাপাশি ব্লাড গ্রুপিং কার্যক্রম ও স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচিতেও স্থানীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
মেহেরপুর প্রতিনিধি মেহেরপুর জেলা বিএনপির কমিটিকে ছোট দল আখ্যা দিয়ে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি মাসুদ অরুন বলেছেন, মেহেরপুর জেলায় যে কমিটি হয়েছে সেটি বিএনপির ছোট দল। কমিটি ছোট হোক তারপরেও ওই বিএনপিকেও আমাদের রক্ষা করতে হবে। এই কমিটিতে যারা আছেন তারাও আমাদের ভাই। মঙ্গলবার বিকালে মেহেরপুর শহীদ সামসুজ্জোহা পার্কে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত বিশাল জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
মেহেরপুরের নবাগত এসপি ও ডিসিকে উদ্দেশ্য করে মাসুদ অরুন আরও বলেন, নতুন কমিটির ফোনে কাজ করার আগে জনগণের ভাষা বোঝবেন। জনগণের ভাষা বোঝে যদি কাজ না করেন, আগামীতে পার্কে সমাবেশ হবে না, সমাবেশ হবে ডিসি অফিসের সামনে, হবে এসপি অফিসের সামনে। আগামীতে কাউকে জনগণের স্বার্থের বাইরে এক পা ফেলতে দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ কেউ চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি করছেন। এখন তাদের নাম প্রকাশ করছি না। তবে, আগামীতে চাঁদাবাজি করতেও দেওয়া হবে না।
মেহেরপুর পৌর বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মেহেরপুর সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মারুফ আহমেদ বিজন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, কৃষক দলের সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাহবুব, যুবদলের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, শ্রমিক দলের সভাপতি আহসান হাবীব সোনা, বিএনপির মহিলা দলের সভাপতি সৈয়দা নয়ন, ছাত্রদলের সভাপতি আকিব জাভেদ সেনজির প্রমুখ। সমাবেশে মেহেরপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মী শহীদ সামসুজ্জোহা পার্কে এসে জড়ো হয়।
কুমিল্লা দক্ষিণ প্রতিনিধি জানান কুমিল্লাতে নতুন উদ্যোগে মাঠে নেমেছে সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, কুমিল্লায় ব্যাপক শোডাউন, বর্ণাঢ্য র্যালি ও আনন্দঘন পরিবেশে বাংলাদেশ জাতীয়তবাদী দল বিএনপি র ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও কুমিল্লা দ. জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুল হক সাক্কু ও তার অনুসারী বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। ১ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা নগরীর নানুয়ার দীঘিরপাড় এলাকায় মনিরুল হক সাক্কুর বাসভবনের সামনে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ড ৬টি ইউনিয়ন থেকে হাজার হাজার নারীপুরুষ মিছিল করে সমবেত হয়। বেলা সাড়ে ১১টায় পবিত্র কোরান তেলোয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
এরপর জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। রঙিন বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন মনিরুল হক সাক্কু।এ সময় তিনি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেযারপারসন তারেক রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে উপস্থিত হাজার হাজার নেতা-কর্মীর সামনে বিএনপির প্রতিষ্ঠার ইতিহাস তুলে ধরে বলেন বিএনপি হলো সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের রাজনৈতিক দল।
শহীদ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের দুঃসময়ে দেশের দ্বায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশকে স্বনির্ভরতার পথে এগিয়ে নিয়েছিলেন। শহীদ জিয়া দেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে খাল খনন কর্মসূচি চালু করেছিলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কখনো কোনো অন্যায় বা প্রলোভনের কাছে আপস করেননি।
তাই তিনি আপসহীন নেত্রী। আগামী সংসদ নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতির লক্ষ্যে আজ বুধবার থেকে সকল ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডগুলোর গণসংযোগ করে তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করবেন এবং সমাবেশ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। পরে প্রায় ২০ হজার নারী পুরুষের একটি আনন্দ র্যালী বের করে নগরীর ছাতিপট্টি, রাজগঞ্জ, মনোহরপুর, কান্দিরপাড়, জিলা স্কুল রোড, সার্কিট হাউসরোড মোগলটুলি, রাজগঞ্জ বজ্রপুর, নানুয়ার দিঘীরপাড় হয়ে পুনরায় মেয়র সাক্কুর বাড়ির সামনে এসে মিছিলটি শেষ হয়।
এদিকে কুমিল্লা নগরীর ২নং ওয়ার্ডের বিএনপির নব কার্যালয়ে বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। ১ সেপ্টেম্বর রাত ৯টায় ২নং ওয়ার্ডের ছোটরা বিএনপির নব কার্যালয়ের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়ে ছোটরা, বাটপাড়া, বৃঞ্চপুর, আদালতপাড়া, কোলনি এলাকা হয়ে দলীয় কার্যালয়ে এসে হোন্ডা মিছিলটি শেষ হয়।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ব্যতিক্রম আয়োজন করা হয়, বিশাল কেক কেটে অনুষ্ঠানটি পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে ২নং ওয়ার্ড সভাপতি মিসেস নাহিদা আক্তার মুন্নীর সভাপতিত্বে খলিলুর রহমান বিপ্লবের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখেন মহানগর বিএনপির সভাপতি উৎবাতুল বারি আবু,
বিশেষ অতিথি ছিলেন কুমিল্লা দ. জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান ওয়াসিম ভিপি, মেয়র প্রার্থী নিজামউদ্দীন কায়ছার, সাবেক কাউন্সিলর বিল্লাল হোসেন,
এ সময় উপস্থিত ছিলেন নারী পুরুষসহ প্রায় দুই শতাধিক নেতা-কর্মী। প্রধান অতিথির বক্তব্য বলেন বিল্লাল ভাই একজন ভালো মনের মানুষ, স্বৈরাচার হাসিনার আমলে বাহারের ইন্দনে মিথ্যা মামলায় বারবার জেল খেঠেছেন, আমি, ওয়াসিম ভাইও জেলে ছিলাম, আমরা প্রতিপক্ষের সঙ্গে খারাপ আচরণ করব না, তাদের বিচার আল্লাহ করবে। পরে কেক কেটে সবার মধ্যে বিতরণ করা হয়।
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঠাকুরগাঁওয়ে আনন্দ শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা করেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। গত সোমবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির আয়োজনে তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়।
মিছিলে জেলা বিএনপি, উপজেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলাদল, শ্রমিক দলের নেতা-কর্মীরা অংশ নেয়।
পরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমিনসহ দলটির নেতারা এ সময় বক্তব্য দেন। এ সময় বক্তরা আগামী নির্বাচনের জন্য দলের সকল স্থরের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিও করেন।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদের জাল নাগরিক সনদপত্র তৈরির অপরাধে তিন জনকে আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার মানিকগঞ্জ পৌরসভার বেউথা এলাকায় অবস্থিত পাসর্পোট অফিসের সামনে থেকে সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার শেখ মেজবাহ-উল-সাবেরিন তাদেরকে আটক করে।
আটককৃতরা হলেন, মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পুটাইল ইউনিয়নের ঘোস্তা জাহাঙ্গীরনগর এলাকার মানিক মিয়ার ছেলে সোহানুর রহমান (২২) এবং পৌরসভার বেউথা এলাকার ফরহাদ হোসেনের ছেলে আরিফ হোসেন (৩৬) ও পৌরসভার পশ্চিম উড়িয়াজানি এলাকার মৃত মোকছেদ আলীর ছেলে মনির হোসেন (৪৫)। এদের মধ্যে আরিফ হোসেন ও মনির হোসেন (দালাল)।
জানা যায়, আসল কাগজপত্রে ঝামেলা থাকায় ১৬ হাজার টাকার শর্তে পাসর্পোট তৈরি করতে পৌরসভার বেউথা এলাকার আরিফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পুটাইল ইউনিয়নের ঘোস্তা জাহাঙ্গীরনগর এলাকার সোহানুর রহমান। এরপর আরিফ হোসেনের পরামর্শে জাল নাগরিক সনদপত্র তৈরি করে মনির হোসেন। কিন্তু সহকারী কমিশনার প্রশিক্ষণে থাকার পরও ভুলক্রমে জাল নাগরিক সনদপত্রে সহকারী কমিশনার ভূমির সই ও নাম-পদবী ব্যবহার করে আরিফ হোসেন ও মনির হোসেন। এরপর নতুন করে আরেকটি জাল নাগরিক সনদপত্র তৈরি করে এবং সেখানে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মেজবাহ-উল-সাবেরিনের সই ও নাম-পদবী ব্যবহার। পরে বিষয়টি উপজেলা নির্বাচন অফিসের নজরে আসলে সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পুটাইল ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক শেখ মেজবাহ-উল-সাবেরিনকে অবগত করা হয়। পরে ইউএনও শেখ মেজবাহ-উল-সাবেরিন অভিযান চালিয়ে তিনজনকে আটক করেন।
ইউএনও শেখ মেজবাহ-উল-সাবেরিন জানান, জিজ্ঞাসাবাদে জাল নগরিক সনদপত্র তৈরি করে ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সই ও নাম পদবী কথার স্বীকার করেছে। পরে আটককৃতদের বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি মামলার প্রক্রিয়া চলছে। জাল নগরিক সনদপত্র তৈরি করে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে সুবিধা নিচ্ছে বলেও তিনি জানান।
মনিকগঞ্জ সদর থানার ওসি এস.এম.আমান উল্লাহ জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে। মামলার পর আইনগত প্রক্রিয়া শেষে আদালতে প্রেরণ করা হবে।
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) পতিত স্বৈরাচার প্রশাসনের প্রনীত গবেষণা নীতি বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন ও উপাচার্য বরাবর তিন দফা দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে মানববন্ধন শেষে উপাচার্যের কার্যালয়ে উক্ত স্মারকলিপি প্রদান করেন ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা।
তাদের তিন দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, পতিত স্বৈরাচার প্রশাসনের প্রণীত গবেষণা নীতি অবিলম্বে বাতিল করা, ঢাবি প্রণীত নীতিমালার সঙ্গে সমন্বয় করে ইবির নতুন গবেষণা নীতি প্রণয়ন করা, বিদ্যমান ভর্তি পরীক্ষা নীতি বাতিল করে নতুন নীতি প্রনয়ন এবং পুনরায় এম.ফিল ও পিএইচ.ডি ভর্তির সুযোগ দেওয়া।
সে সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি মাহমুদুল হাসান, সভাপতি নূর আলম ও সাধারণ সম্পাদক আহমাদ গালিব, সহসভাপতি মাজিদুল ইসলাম উজ্জ্বল, সাংগঠনিক সম্পাদক তাহমিদ হাসানসহ আরও অনেকে।
মানববন্ধনে ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ গালিব বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এম. ফিল ও পিএইচডি পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষায় সিজিপিএ রাখা হয় ৩.৫০ পয়েন্ট। যেখানে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শর্ত আরোপ থাকে ৩.০০ পয়েন্ট এবং বিশেষ ক্ষেত্রে ২.৫০ ও দেখেছি। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পতিত স্বৈরাচার প্রশাসনের প্রণীত নীতিমালার ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি শিক্ষার্থীদের বৃহৎ অংশকে গবেষণার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার এক সুস্পষ্ট নীল নকশা। এই নীল নকশা প্রত্যাখ্যান করে নতুন নীতি প্রনয়ন করতে হবে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, আমরা রিসার্চটাকে কোনভাবে নষ্ট করতে চাইনা। যেহেতু এটা এমফিল পিএইচডি সেহেতু কিভাবে মানসম্মত রিসার্চ ডিগ্রি দেওয়া যায় সেই পথ তৈরির চেষ্টা করতেছি।
থাকার কষ্ট, খাবারের কষ্ট, বর্ষা কিংবা বৃষ্টি এলেই ভাঙা চালে বৃষ্টির পানি। ৬০ বছরের বৃদ্ধা ফজিলা বেগমের জীবনের প্রতিদিনই যেন একেকটি সংগ্রাম। খাবার জোটে অন্যের দান-খয়রাতে, আর বৃষ্টি এলে ভাঙা ঘরে শোয়ার জায়গাটুকুও থাকে না।
টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কালিয়া ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামের মৃত ওমর ফারুকের স্ত্রী ফজিলা বেগম এক যুগ আগে স্বামীহারা হন। দাম্পত্য জীবনে তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলে ইফতিখার ও মেঝো ছেলে সোহেল মারা গেছেন। একমাত্র জীবিত ছেলে জুয়েলও প্রতিবন্ধী। নাতনি জান্নাতকে (১০) নিয়ে জরাজীর্ণ একটি ঘরেই চলছে ফজিলার জীবন। ফজিলা বেগম জানান, গত ২২ বছর ধরে স্বামীর রেখে যাওয়া একমাত্র ঘরে বসবাস করছেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘরের টিনের চাল মরিচা ধরে ফুটো হয়ে গেছে। বৃষ্টির পানি ঠেকাতে ছাউনি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে পলিথিন ও পুরোনো কম্বল। ভাঙাচোরা দরজা-জানালা ও বেড়ায় পানি ঢুকে ঘরটিকে করে তুলেছে আরও অস্বাস্থ্যকর। একই অবস্থা শৌচাগারেরও।
ফজিলা বেগম বলেন, ‘একটা থাকার মতো ঘর পেলে জীবনের শেষ বয়সে শান্তিতে মরতে পারতাম। আশপাশের মানুষ খাবার দিলে খাই, না দিলে না খেয়েই থাকি। প্রতিবন্ধী ছেলের চিকিৎসা বা নাতনিকে ভালো খাবার খাওয়ানো কোনোদিন সম্ভব হয়নি।’
তিনি জানান, মেঝো ছেলে মারা যাওয়ার পর তার রেখে যাওয়া একমাত্র কন্যা জান্নাতকে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছেন। কিন্তু পড়াশোনার খরচ বা খাবারের ব্যবস্থা করতে না পারায় দিন কাটছে কষ্টে। এর মধ্যেই গত ৩১ আগস্ট রাতে তার ভাঙা ঘর থেকে চাল ও একটি মোবাইল চুরি হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মামুন সিকদার বলেন, তার খুব অসহায় অবস্থায় দিন যাচ্ছে। ভাঙা ঘরে বৃষ্টি-বাদল ও শীতকালে ভোগান্তি বাড়ে। তার জন্য দ্রুত একটি ঘরের ব্যবস্থা করা জরুরি।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মনসুর আহমেদ জানান, ‘বৃদ্ধা ফজিলার ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। শিগগিরই তার বিধবা ভাতার ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি ঘর নির্মাণে অর্থ সহায়তার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলা হবে।
মন্তব্য