দেশে জঙ্গিদের সক্ষমতা আগের চেয়ে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার (ডিএমপি) মো. শফিকুল ইসলাম। বলেছেন, জঙ্গিদের বানানো বোমা এখন আগের চেয়ে শক্তিশালী। তবে তাদের দমনে পুলিশও বসে নেই।
কোরবানির ঈদ উপলক্ষে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে এসে দেশে জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে এসব তথ্য জানান ডিএমপি কমিশনার শফিকুল।
তিনি বলেন, ‘আমি কমিশনার হওয়ার আগে জঙ্গিরা এই শহরের পাঁচটি পুলিশ চেকপোস্টে বোমা হামলা করেছিল। তবে সেই বোমার কার্যকারিতা অনেক কম ছিল। কারণ সেগুলো অল্প কাজ জানা লোক তৈরি করেছিল। পুলিশের সদস্যরা সামান্য আহত হয়েছিলেন।
‘তবে এখন তারা আগের চেয়ে শক্তিশালী বোমা তৈরি করছে। আমরা গত কয়েক দিনে যে বোমা উদ্ধার করেছি তা অনেক শক্তিশালী। যেগুলো বিস্ফোরণ হলে একটা ম্যাসাকার হয়ে যেত। তাদের এখন সক্ষমতা বেড়েছে। তারা এখন এই ধরনের লোককে প্রশিক্ষিত করে বোমা তৈরির কাজ করছে।’
তবে ঈদ ঘিরে জঙ্গিদের হামলার তেমন সম্ভাবনা নেই জানিয়ে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা প্রস্তুত আছি এবং সতর্ক আছি; আমরা বসে নেই। কোনো ঘটনা ঘটার আগেই আমরা সঙ্গে সঙ্গে সেটি ব্যর্থ করে দিচ্ছি।’
ভারতে সম্প্রতি তিনজন বাংলাদেশি জঙ্গি ধরা প্রসঙ্গে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আমরা ইন্ডিয়ার সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করি। আমরা ইন্ডিয়ার সরকারকে জানাই, যদি আমাদের এখান থেকে কোনো জঙ্গি সেখানে যায়, একইভাবে ইন্ডিয়া থেকে তথ্য পাই। এই তিনজন ছেলে জিহাদের জন্য ভারতে গিয়েছিল সেটি আমরা তাদের জানিয়েছিলাম।’
শফিকুল ইসলাম জানালেন, ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে তিন ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পশুর হাটকেন্দ্রিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অজ্ঞান ও মলম পার্টি থেকে ব্যাপারীদেরকে সুরক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ঈদ উপলক্ষে জাল টাকা থেকে সবাইকে সতর্ক থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। জানান, জাল টাকা রোধে ডিএমপির টিম কাজ করছে। সেই সঙ্গে প্রতিটি বড় হাটে ব্যাংকের বুথে এবং বড় অঙ্কের টাকাসহ কাউকে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে রয়েছে পুলিশের এসকর্ট টিম।
ঈদের জামাত ঘিরে প্রতিবারের মতো এবারও রাজধানীতে কড়া নিরাপত্তা থাকবে বলে জানান ডিএমপি কমিশনার। বলেন, মেটাল ডিটেক্টর ভেতর দিয়ে ঈদগাহে প্রবেশ করতে হবে। ভেতরে সাদা পোশাকে পুলিশ থাকবে। যতক্ষণ জামাত ততক্ষণ পুলিশ থাকবে।
ঈদের ছুটিতে যারা বাড়ি যাচ্ছেন তাদের উদ্দেশে পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের দ্বারা লাখ লাখ ঘর পাহারা দেয়া সম্ভব না। তাই বাসা বাড়ির প্রাথমিক নিরাপত্তা তাদেরকেই নিশ্চিত করতে হবে।
এসময় যেসব চোরের উপদ্রব বেড়ে থাকে সেগুলোর জন্য ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা গ্রিলকাটা চোর গ্রেপ্তার করেছি। আমাদের টিম গত ১৫ দিন ধরে কাজ করছে। আমরা তালিকা তৈরি করে করে অপরাধীদের আটক করছি। আপনারা যারা বাড়িতে যাচ্ছেন তারা বাসার নিরাপত্তা কর্মীকে ভালোমতো বলে যাবেন। যোগাযোগ করবেন। বেশি সম্পদ থাকলে তা আত্মীয়ের বাসায় রেখে যান।’
আরও পড়ুন:সেপটিক ট্যাংকের ঝুঁকি ও করণীয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। আজ ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ গুলশান-২ এ শান্তা হোল্ডিংস কর্তৃক ১৬ তলা নির্মাণাধীন একটি ভবনে নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য এ সংক্রান্ত একটি প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। এতে ৭৫ জন নির্মাণ শ্রমিক অংশগ্রহণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক জনাব মোঃ ছালেহ উদ্দিন, বিএফএম (এস), সহকারী পরিচালক কাজী নজমুজ্জামান, পিএফএম; নির্মাণাধীন ভবনের চিফ প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট অফিসার মেজর (অবঃ) হাফিজ আল আসাদ ও অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
বেলা ১২:৩০ ঘটিকায় তত্ত্বীয় আলোচনা শেষে স্মোক ইজেক্টর ও এয়ার ভেন্টিলেটর ব্যবহার করে কিভাবে সেপটিক ট্যাংকে বাতাস দেয়া যায় বা কিভাবে সেপটিক ট্যাংক হতে ভেতরে থাকা দূষিত বাতাস বা গ্যাস অপসারণ করা যায় তা প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করে কিভাবে আগুন নেভানো যায় এবং গ্যাস সিলিন্ডারের আগুন কিভাবে নেভানো যায় তার কৌশল প্রদর্শন ও চর্চা করানো হয়। দুপুর ১৩:০০ ঘটিকায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শেষ হয়।
উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট মুন্সীগঞ্জে একটি সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করার সময় ৩ জন শ্রমিক নিহত হন। এছাড়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের হিসাব অনুযায়ী গত ৫ বছরে সেপটিক ট্যাংক ও সুয়ারেজ লাইন দুর্ঘটনায় ২২৮ জন নিহত হয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে (ডাকসু) ঢাবির কার্জন হলের ভেতরে সংবাদ সংগ্রহ করার সময় তরিকুল শিবলী (৪০) নামে এক সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি চ্যানেল এস টেলিভিশনের সিটি রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সেখানে উপস্থিত এক সাংবাদিক জানান, ছাত্র সংসদ নির্বাচনে (ডাকসু) ঢাবির কার্জন হলের ভেতরে সংবাদ সংগ্রহ করার সময় লাইভে ছিলেন তরিকুল শিবলী। হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়ে যান। পরে তার সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে এলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তরিকুল শিবলীর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানায়। বর্তমানে উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন বলে জানা গেছে।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে জানানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, চিকিৎসক জানিয়েছেন যে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ২ হাজার ৫৫০টি মামলা করেছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, অভিযানকালে ৪৩৯ টি গাড়ি ডাম্পিং ও ১১১টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে। সোমবার ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে এসব মামলা দায়ের করে ।
ঢাকা মহানগর এলাকায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে (ডাকসু নির্বাচন) এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনকে জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা যাবে না। ডাকসু, জাকসুসহ যেসব নির্বাচন হচ্ছে এগুলো জাতীয় নির্বাচনের মডেল হিসেবে বিবেচিত হবে।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে সংবাদিকদের এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
এর আগে তার সভাপতিত্বে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ডাকসু নির্বাচন ভালোভাবে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা অবনতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি। গণমাধ্যমেও অপ্রীতিকর ঘটনার সংবাদ প্রচার হয়নি। এটা আনন্দের খবর।
উপদেষ্টা বলেন, ডাকসু, জাকসুসহ যেসব নির্বাচন হচ্ছে এগুলো জাতীয় নির্বাচনের মডেল। ডাকসুর পর জাকসুসহ যে কয়েকটা নির্বাচন হবে সেগুলোও ভালো পরিবেশে হবে বলে আশা করছি।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করা সম্ভব হবে।
প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময় অনুযায়ী ফেব্রুয়ারিতে একটি উৎসবমুখর নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের মাঝে অ্যাসিসটিভ ডিভাইস বিতরণ করা হয়েছে। ৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকালে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিক ভাবে এসব উপকরণ বিতরণ করা হয়।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ের উদ্যোগে স্পেশাল এডুকেশন নিডস্ অ্যান্ড ডিজাবিলিটিস (সেন্ড) এর কার্যক্রম বাস্তবায়নের আওতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের মাঝে অ্যাসিসটিভ ডিভাইস বিতরণ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ডাঃ তামান্না তাসনীম।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার রমিতা ইসলাম এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে শিশুদের মাঝে ৪ জনকে হুইল চেয়ার, ২ জনকে শ্রবণ যন্ত্র, ১০ জনকে চশমা ও একজনকে জুতা জোড়া প্রদান করা হয়।
এসময় অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন কাপাসিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি এফ এম কামাল হোসেন, উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার রমজান আলী, লুৎফুন্নেছা, মনিরা খাতুন, আরিফুল ইসলাম, কাপাসিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাহেলী নাসরিন, একডালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন ভূঁইয়া, ধরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আতিকুল ইসলাম সহ শিশুদের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।
দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রায় প্রতিদিনই আসছে ভারতীয় চাল। গত ২১ আগস্ট থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭১ টি ভারতীয় ট্রাকে মোট ২ হাজার ৪৮৫ টন চাল এই স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে। সরকারের ইতিবাচক সিদ্ধান্তের ফলে দেশে চাল আমদানি অব্যাহত রয়েছে। তবে আমদানি স্বাভাবিক থাকলে ও বাজারে দামের কোন প্রভাব নেই। আগের সেই বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বন্দরের চাল আমদানিকারকরা জানান, চাল আমদানিতে সরকারের আহবানে সাড়া দিয়ে তারা আমদানি অব্যাহত রেখেছেন। যার কারণে বেনাপোলসহ দেশের বিভিন্ন বন্দর দিয়ে ভারত থেকে বিপুল পরিমানে চাল দেশে ঢুকছে। তবে দামের কোন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছেনা।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দুই মাস আগে ইরি-বোরো মৌসুম শেষ হয়েছে। কিন্তু দেশে পর্যাপ্ত ধানের আবাদ হলেও দেশের বাজারে হঠাৎ করেই দাম বাড়তে থাকে। তাই দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই সরকার বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম নাগালের মধ্যে রাখতে চাল আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই অবস্থায় গত ১২ আগস্ট আমদানিকারকদের নামে বরাদ্দ ইস্যু করে চাল আমদানি করার জন্য অনুমতি দেয়। এরপর ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হয়েছে।বেনাপোল বন্দর দিয়ে মেসার্স উষা ট্রেডিং, মেসার্স মৌসুমী ট্রেডার্স, মেসার্স হাজী মুছা করিম এন্ড সন্স, মেসার্স গণী এন্টারপ্রাইজ এবং মেসার্স প্রিয়ম এন্টারপ্রাইজ নামের আমদানিকারকরা সাধারণত ভারত থেকে চাল আমদানি করছেন।
প্রসিদ্ধ চাল আমদানিকারক গনি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আব্দুস সামাদ জানান, তার প্রতিষ্ঠানের নামে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দেশে চাল আমদানি করা হচ্ছে। ভারত থেকে চাল আসা শুরু হওয়ায় পাইকারী ও খুচরা বাজারে কিছুটা দাম কমেছে। এই ভাবে আমদানি অব্যাহত থাকলে আরও দাম কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি সরকারের কাছে চাল আমদানি অব্যাহত রাখার দাবী জানিয়েছেন।
আরেক আমদানিকারক শামীম আহমেদ জানান, বন্দরের মোকামে আমদানি করা চালের মধ্যে রয়েছে স্বর্ণা, সম্পা কাটারি, রত্নাসহ মিনিকেট জাতের চাল। সম্পা কাটারী জাতের চাল কেজি ৭০-৭১ টাকা, স্বর্ণা জাতের চাল কেজি ৫২-৫৩ টাকা টাকা এবং আঠাশ জাতের চাল কেজি ৫৫-৫৬ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। চাল আমদানি করে লাভ হচ্ছে না।
কারণ হিসেবে তিনি জানান, দেশে চাল আমদানি শুরু হওয়ার আগেই ভারতের ব্যবসায়ীরা কেজিতে ৩/৪ টাকা করে দাম বাড়িয়েছে। দাম না বাড়ালে দেশে চালের দাম কমে আসতো।
বেনাপোল বাজারের খুচরা বিক্রেতা হাজি স্টোরের হাফিজুর রহমান জানান, বর্তমানে চালের দাম নিয়ে কিছুটা হলেও ভোক্তাদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। গত ১০/১২ দিন আগে সম্পা কাটারি ৭২ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এখন কেজি ৭১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য চাল কিছুটা কমেছে।
ক্রেতা হারুনুর রশীদ ও আসাদুর রহমান জানান, আগের চেয়ে দাম কেজিতে এক থেকে দেড় টাকা করে কমেছে। আমরা দিন মজুরী করি। যত কমবে আমাদের জন্য তত ভালো। ভারত থেকে চাল আসার কারণে মনে হচ্ছে কমেছে। আগে দাম বেশি ছিল। হিসাবে আরও কমার কথা। দুই মাস আগে ইরি-বোরা মৌসুম গেল। সেই চাল তো বাজারে থাকার কথা। কিন্তু ব্যবসায়ীরা মজুদ করার কারণে সরকারকে আমদানি করতে হচ্ছে।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, চার মাস বন্ধ থাকার পর পুনরায় বেনাপোল বন্দরে চাল আমদানি শুরু হওয়ায় বন্দরটিতে আবার কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।আশা করা যাচ্ছে এবার চালের দাম কমে আসবে।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবীর তরফদার বলেন, গত দূই সপ্তাহে ৭১ ট্রাকে ২ হাজার ৪৮৫ টন চাল ভারত থেকে আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ২১ আগস্ট ৯ টি ট্রাকে ৩১৫ টন, ২৪ আগস্ট ৬ ট্রাকে ২১০ টন, ২৭ আগস্ট দুটি চালানে ১২ ট্রাকে ৪২০ টন, ২৮ আগস্ট ৩ ট্রাকে ১০৫ টন, ৩০ আগস্ট ৬ ট্রাকে ২১০ টন, ৩১ আগস্ট ৬ ট্রাকে ২১০ টন, ১ সেপ্টেম্বর ১২ ট্রাকে ৪২০ টন, ২ সেপ্টেম্বর ১৪ ট্রাকে ৪৯০ টন, ৩ সেপ্টেম্বর ৩ ট্রাকে ১০৫ টন এবং গতকাল সোমবার রাত ১১ টার দিকে ৬ ট্রাকে ২১০ টন চাল আমদানি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমদানিকৃত চাল দ্রুত ছাড়করণের জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল এই বন্দর দিয়ে সর্বশেষ চাল আমদানি হয়েছিল।
“তোমার বাড়ির রঙের মেলায় দেখেছিলাম বাইস্কোপ, বাইস্কোপের নেশায় আমায় ছাড়ে না” প্রেমিকের বাড়িতে বাইস্কোপ দেখার এমন আকুতি কোন প্রিয়া এখন আর করে না। বাইস্কোপও নেই, সেই বাইস্কোপওয়ালাও নেই। বাইস্কোপ দেখার আর কোনো আকুতি মিনতিও নেই। বাইস্কোপওয়ালারা এখন অন্য পেশায় জীবিকা নির্বাহ করে।
“ওই দেখা যায়, কেমন মজা/তাকদি না দিন জাবেদের ঘোড়া চইল্যা গেলো/ইলিয়াছ কাঞ্চণ আইস্যা গেলো/ চম্পাকে নিয়ে চইল্যা গেলো। আরে আরে কেমন মজা/ দেখেন তবে তক্কা মদিনা/তারপরেতে মধুবালা/এক্কাগাড়ীতে উত্তম কুমার আর সুচিত্রা সেন।” এরকম সুরের ধারা বর্ণনা দিয়ে গ্রাম্য জনপদে বাইস্কোপ দেখাতেন বাইস্কোপওয়ালারা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে- রূপগঞ্জে এখন আর এমন মজার বাইস্কোপ দেখা যায় না। ছোট্টবেলায় হাট-বাজারে, মেলায় দেখা যেতো বাইস্কোপ। আধুনিক বিজ্ঞানের মর্ডাণ সময়ে সেলুলয়েডের রঙিন যুগে এখন আর চোখেই পড়ে না এ মজার বাইস্কোপ। এখন শুধুই স্মৃতি। হাটবাজার মেলা ছাড়াও বাইস্কোপওয়ালারা মাথায় করে গ্রামে গ্রামে, বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বাইস্কোপের বাক্সটা নিয়ে মানুষকে ছবি দেখাত। তার হাতে থাকতো বাজনা বাজানোর জন্যে একটা বিষেশ ধরনের বাদ্যযন্ত্র। যে কারো বাড়িতে পৌছেই সেই বাজনা বাজিয়ে আওয়াজ দিত। বলতে শোনা যেত বাইস্কোপ দেখবেন গো বাইস্কোপ। তখন আশেপাশের ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা মা-দের কাছে কাকুতি মিনতি করতো ওই বাইস্কোপ দেখার জন্যে। মায়েরা তখন বিরক্ত হয়ে ধানের গোলা থেকে বা চালের মটকা থেকে এক সের ধান বা চাল দিতেন। আর পাবি না কিন্তু এও বলে দিত। ছেলে মেয়েরাও রাজী হয়ে বলতো হ মা আর নিমুনা, আর দেখুম না। এই বলেই ধান নিয়ে ছুটে যেতো বাইস্কোপওয়ালার কাছে। বাইস্কোপওয়ালা তার ব্যাগের মতো থলেতে ধান ঢেলে রেখে দিত। ধান নিতে দেরি, আর বাইস্কোপের কাছে হাঁটু গেড়ে বসতে দেরি হতো না।
পর্দা ওঠলো বাইস্কোপের, মুখের মাঝে দুই হাত দিয়ে চুপি দিয়ে দেখতে থাকতো বাইস্কোপ। বাইস্কোপওয়ালা এক হাতে বাইস্কোপের রিল ঘুরাতে থাকতো আর বলতে থাকতো কি যাচ্ছে আর সামনে কি আসছে। বলতে শোনা যেতো কি সুন্দর দেখা গেলো আলোমতি আইস্যা গেলো, কি সুন্দর দেখা গেলো প্রেমকুমার আইস্যা গেলো ইত্যাদি। বর্তমান সেলুলয়েডের রঙিন ফিতা, অনলাইন আর ইন্টানেটের যুগে এখন আর সেই মনোরম বাইস্কোপ দেখাই যায় না। ছোট্টবেলার সেই বাইস্কোপ এখন শুধুই স্মৃতি। মাত্র দশ পয়সা দিয়ে অথবা এক হেড় বা এক পট ধান বা চাল দিয়ে দেখা যেতো এই বাইস্কোপ।
খামারপাড়া গ্রামের বৃদ্ধজন আওয়াল আলী বলেন, কি হবে রে বাবা এসব ঘেঁটেগুঁটে। যা হারাবার তা হারিয়েই যাবে। যা চলে যাবার তা রুখবে সাধ্য কার? ধরে রাখবে কে? প্রযুক্তির যে জোয়ার। না হারিয়ে যাবে কোথায়? উপায় নাইরে বাজান, উপায় নাই। শিলপাটাটা ধারকাটাওয়ালা, ঘোলওয়ালা, কটকটিওয়ালা, কুলুরা, বেদেরা আজ কোথায় হারিয়ে গেলোগো বাবা? সবাই হয়তো আছে। শুধু পেশাটা বদলে ফেলেছে। আবার হয়তো অনেকেই মরে গেছে।
কিছুই করার নাই। মানুষের জীবনাচরন বদলে গেছে। তাই তার অনুষঙ্গ হারিয়ে যাবে এঁটাইতো স্বাভাবিক। ঈদের আনন্দ, হিন্দুদের পূজা পার্বন আর বিভিন্ন মেলায় দেখা যেত বাইস্কোপ। এগুলো এখন শুধুই স্মৃতি। ছোট্ট শিশু থেকে আরম্ভ করে বুড়োরাও দেখতো একটা বক্সের মধ্যে সুন্দর করে পোস্টার সাজানো বাইস্কোপ। গ্রামাঞ্চলে ভ্রাম্যমান সিনেমা হলের ছবি নামে পরিচিত । গাঁয়ের ছেলে-বুড়োরা ছুটত তার পেছন পেছন। আবার কেউ কেউ তাকে ছবিওয়ালাও বলত। হাতে থাকতো তার একটা ডুগডুড়ি।
বাজাতে বাজাতে গ্রাম্য মেঠো পথ ধরে হাঁটতো। দল বেঁধে সবাই একখানে জড়ো হতো গাঁয়ের শিশু-কিশোর ও কুলবধুরা। তারপর শুরু হতো সিনেমা। তার আগে অবশ্যই টিকিট কিনে নিতে হতো। বক্সের চারখানা ফুটোয় আট জোড়া চোখ লাগিয়ে সেই স্বপ্নের সিনেমা দেখতো গাঁও-গেরামের মানুষরা। সে সবই এখন সূদুর অতীত। কারো মনে পড়ে, কারো পড়ে না। এখন আর দেখা যায় না সেই ছবিওয়ালাকে। কালেরগর্ভে কোথায় যে হারিয়ে গেলো তারা তা বর্তমান প্রজন্মের কেউ জানেনা।
চাকরিজীবি ছালাম মুল্লা বলেন, আমি নিজে দেখেছি ওই বাইস্কোপ। দুপুরে বাড়ির উঠানে বক্সটা নিয়ে বসত। বাড়ির সবাই পর্যায়ক্রমে দেখতাম। মজাই লাগতো। সেই ছবিওয়ালা আজ আর নেই। আস্তে আস্তে সব বিলীন হয়ে যাবে আমাদের অতীতের সব ঐতিহ্য। আমরা এখন আকাশ সংস্কৃতির ঘেরাটোপে বন্দী।
রূপগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ভুইয়া পরিবারের সন্তান ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান দপিু ভুইয়া বলেন, ৩০ বছর আগেও বাইস্কোপওয়ালাকে আমার গ্রাম রূপসীতে ছবি দেখাতে আসতে দেখেছি। কতই না কান্ড করতাম এ বাইস্কোপ দেখার জন্যে। বাবা-মায়ের অনেক বকুনি খেয়েও বাইস্কোপ দেখতাম। আর কতই না মজা করতাম , আনন্দ পাইতাম এ বাইস্কোপ দেখে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। সভ্যতা আমাদের অনেক কিছু উপহার দিয়েছে। কেড়েও নিয়েছে বাইস্কোপের মতো আরো অনেক কিছু।
মন্তব্য