করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীকে বিচ্ছিন্ন রাখতে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা আদৌ কোনো কাজে আসছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সড়কপথে রাজধানীতে আসতে হলে যে চার জেলার সড়ক পাড়ি দিতে হয়, সেই মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও গাজীপুরে কঠোর বিধিনিষেধ দিয়ে গণপরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। ঢাকায় ঢুকতে বা বের হতে পারছে না কোনো গাড়ি।
গাজীপুরের পথে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে উত্তরার আবদুল্লাহপুর, মানিকগঞ্জের পথে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গাবতলী, নারায়ণগঞ্জের পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সাইনবোর্ড এবং মুন্সিগঞ্জের পথে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে জুরাইন ব্রিজ ও কেরানীগঞ্জের বাবুবাজার ব্রিজ অতিক্রম করতে পারছে না কোনো গাড়ি।
গত মঙ্গলবার থেকেই এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রতিটি স্থানেই পুলিশ সেতুর আগে ও পরে তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে। পুরো সড়কেই দেয়া হয়েছে বার।
কিন্তু এই বাধা অতিক্রম করে মানুষ যার যার মতো করে হেঁটে আসছেন, আবার যারা উল্টো পথে যেতে চান, তারা ঠিকই একইভাবে ফিরছেন।
এই মানুষগুলো আবার হাঁটছেন দল বেঁধে, গাড়িতে উঠছেন গাদাগাদি করে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেনিন চৌধুরীর চোখেও পড়েছে এই বিষয়টি। তিনি বলেছেন, গাড়িতে করে না আসলে করোনা সংক্রমণ হয় না, এমনটি তো নয়। কাজেই বিধিনিষেধ যদি দেয়া হয়, তাহলে সেটি কার্যকরভাবেই দেয়া উচিত।
অন্যদিকে যারা রাজধানী লাগোয়া জনপদ থেকে ঢাকায় আসেন, তাদের প্রশ্ন, তাদের চাকরির কী হবে। অফিসে বা ব্যবসার জন্য রাজধানীতে আসতেই হয়। তাদের কেন বাধা দেয়া হবে।
সাভার থেকে প্রতিদিন ঢাকায় অফিস করেন এস এম নুরুজ্জামান। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সাভার কিন্তু ঢাকার বাইরে নয়। তাই বাস সাভার পর্যন্ত চলাচল করা উচিত। অন্যদিকে কাউকেই কিন্তু আটকে রাখা যাচ্ছে না। ব্রিজের এই পাশে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে আবার ঢাকায় ঢুকতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তি বাড়ছে। করোনার ঝুঁকি কমছে না।’
ছয় প্রবেশপথে একই চিত্র
নারায়ণগঞ্জ থেকে যেসব গাড়ি আসে, সেগুলো সাইনবোর্ড এলাকায় বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু ঢাকায় প্রতিদিনই বিপুলসংখ্যক মানুষকে ব্যবসা, চাকরি, চিকিৎসা অথবা অন্য কোনো কারণে আসতে হয়।
গত মঙ্গল থেকে বৃহস্পতিবার প্রতিদিনই শত শত গাড়ি এসেছে সাইনবোর্ড পর্যন্ত। কিন্তু আর আগাতে না পারার কারণে দেখা দিয়েছে দীর্ঘ যানজট।
কিন্তু সেখান থেকে ফিরে যেতে দেখা যায়নি কাউকে। গাড়ি থেকে নেমে আধা কিলোমিটারের মতো হেঁটে যাত্রাবাড়ীর কাছাকাছি আসেন মানুষজন। সেখান থেকে ইজিবাইক, পিকআপ বা মোটরচালিত রিকশায় করে ভেতরের সড়ক দিয়ে ধুপখোলা মাঠ হয়ে সায়েদাবাদের দিকে আসেন।
জুরাইন ব্রিজ এলাকাতেও একই চিত্র। গাড়ি আটকে দিলে হেঁটে সেতু পার হয়ে এপারে কোনো একটি বাহনে করে চলে আসেন তারা যাত্রাবাড়ীর দিকে।
বাবুবাজার ব্রিজের চিত্রটিও একই রকম। সেখানে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে সেতু পার হতে হয় না। বিপুলসংখ্যক ভ্যানগাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে, আরও আছে ইজিবাইক, রিকশা। এগুলো দিয়ে তারা বিনা বাধায় আসেন তাঁতীবাজারের দিকে। পরে গুলিস্তানের দিকে বা অন্য যেকোনো গন্তব্যে যান।
যারা ঢাকা ছেড়ে উল্টোপথে যেতে চান, তারাও এই তিন পথে ব্যারিকেড পর্যন্ত গিয়ে হেঁটে সেটি পার হন। এরপর সেখান থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়কে টেম্পো বা বাসে করে চাষাঢ়ার দিকে যান। আর যারা কাঁচপুরের দিকে প্রথমে ইজিবাইক বা অন্য কোনো বাহনে চড়েন। এরপর আরও একটি তল্লাশিচৌকির আগে থামেন। সেটি পার হয়ে আবার বাহনে চড়েন।
ঢাকা-সাভার সড়কে যেতে বাধা গাবতলী ব্রিজের আগে। সেখানেও সেই একই চিত্র। কোনো যানবাহন পার হতে পারে না আমিনবাজার হয়ে। কিন্তু হেঁটে ঢাকায় যাওয়া বা আসার পথে বাধা দেয়া হয় না কাউকে।
হেঁটে সেতু পার হয়ে আরও কিছুটা পথ এগিয়ে গেলে কোনো না কোনো বাহন পাওয়া যায়। আর সেভাবেই ঢাকা ছাড়ছেন হাজার হাজার মানুষ। একইভাবে ঢুকছেন হাজারো মানুষ।
রাজধানীতে আসা এই মানুষদের একটি অংশ সাভারের, আবার দূরের জেলারও আছে যারা ভেঙে ভেঙে তল্লাশিচৌকি হেঁটে কোনো না কোনো বাহনে করে এগিয়েছেন।
ঢাকা-গাজীপুর সড়ক ধরে এগোতে চাইলে বা ঢাকায় আসতে হলে আব্দুল্লাহপুরের টঙ্গী ব্রিজের দুই পাশে কয়েক কিলোমিটার হাঁটতে হয়। সেখানেও এই ভোগান্তি ছাড়া আর যেটা হয়, সেটি হলো স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে চলতে হচ্ছে মানুষকে। আবার সেই সব বাহনে ভিড় স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি, আর বেশি ভিড় মানেই করোনা সংক্রমণের বাড়তি ঝুঁকি।
এই এলাকায় ঢাকার আরেকটি প্রবেশমুখ সাভারের বেড়িবাঁধ এলাকায়। টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কটি দিয়ে যানবাহন বেড়িবাঁধ হয়ে একদিকে মিরপুর ও অপরদিক দিয়ে আব্দুল্লাহপুর প্রবেশ করে থাকে।
কিন্তু লকডাউন শুরুর প্রথম দিন থেকে বেড়িবাঁধের কিছু আগেই ঢাকা জেলার শেষ সীমানায় যানবাহন থামিয়ে দিচ্ছে পুলিশ। পরে রাজধানীমুখী যাত্রীরা ৫ মিনিট হাঁটলেই পৌঁছে যাচ্ছেন ডিএমপির সীমানায়। সেখান থেকে রাজধানীর অভ্যন্তরে চলাচলরত বাসে তারা ঢুকে পড়ছেন ঢাকায়।
আমিনবাজার ব্রিজ পার হয়ে বলিয়ারপুর পর্যন্ত হেঁটে অথবা রিকশায় যাওয়া যাচ্ছে। সেখানে কিছু ছোট লোকাল বাসে উঠে সাভার ও এর আশপাশে পৌঁছানো যায়।
হাঁটার পর বাড়তি ভাড়া
আবদুল্লাহপুর টঙ্গী ব্রিজ পার হলে গাজীপুর যাওয়ার ব্যবস্থা আছে। ঢাকা থেকে গাজীপুরমুখী বাসগুলো আব্দুল্লাহপুর এসে ঘুরিয়ে নিলেও সাধারণ যাত্রীরা এই পাশে এসে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে গাজীপুর চৌরাস্তা যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ভাড়া ২০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।
একটি অটোরিকশায় তোলা হয় পাঁচজন। পেছনে তিনজন, আর সামনে চালকের দুই পাশে দুইজন।
যারা সাভারের দিকে যেতে চান, তারা আমিনবাজার সেতু পার হয়ে বলিয়ারপুর পর্যন্ত হেঁটে বা রিকশায় গিয়ে চড়েন বাসে। স্বাভাবিক সময়ে এই রুটের ভাড়া ২০ টাকা হলেও এখন আদায় করা হচ্ছে ৪০ টাকা। আর দেড় কিলোমিটার কেউ রিকশায় চড়লে ভাড়া দিতে হচ্ছে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা। মঙ্গলবার বিধিনিষেধ শুরু হওয়ার পর এটুকু পথ পাড়ি দিতে এক চালককে ২৫০ টাকা ভাড়া হাঁকতে দেখা যায়।
বাবুবাজার ব্রিজ স্বাভাবিক সময়ে ভ্যানগাড়িতে ১০ টাকা ভাড়া নেয়া হলেও এখন নেয়া হয় ২০ টাকা। আর ইজিবাইক ৫০ টাকা নেয় ন্যূনতম।
জুরাইন থেকে মাওয়া ঘাট পর্যন্ত সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা। যাত্রী তোলা হচ্ছে পাঁচজন। আর পিকআপে যাত্রী তোলা হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ জন, ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা।
এই রুটে বাস বন্ধ আছে।
পরিবহনসংশ্লিষ্টরা কী বলছেন
আশুলিয়া ক্ল্যাসিক পরিবহন লিমিটেডের চেয়ারম্যান আশরাফ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের বাস আশুলিয়ার নবীনগর থেকে ছাইড়া যায়। পরে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের ধউরের একটু আগে বাস থামায় দেয় পুলিশ। মূলত ওইটায় ঢাকা জেলার শেষ সীমানা। পরে ওখান থাইকা পাঁচ মিনিট হাঁটলেই ডিএমপির এলাকা শুরু। যাত্রীরা পরে ওখান থাইকা ঢাকার ভেতরের বাস দিয়া যার যার মতো চলে যায়।’
ওয়েলকাম পরিবহনের পরিচালক জি এম মিন্টু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তিন দিন ধরেই আমিনবাজার থেকে আমাদের গাড়ি ঘুরিয়ে দিচ্ছে পুলিশ। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সালেহপুর ব্রিজ পার হলেই ইউটার্ন থেকে গাড়ি ঘোরাতে হয়। ঢাকার মধ্যে কোনো গাড়ি পুলিশ ঢুকতে দেয় না। তবে যাত্রীরা ওখান থেকে যে যার মতো পায়ে হেঁটে ঢাকায় যান।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ যা বলছেন
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক লেনিন চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসলে আমাদের আগে বুঝতে হবে করোনা সংক্রমণ হয় মানুষ থেকে মানুষে। মানুষ যারা এক জায়গায় থেকে অন্য জায়গায় যাচ্ছে, সেটা কি গাড়ি কি পায়ে হেঁটে, তাতে সংক্রমণ ছড়ানো বা না ছড়ানোর কিছু নেই। যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয় মানুষের চলাচলকে সীমিত করার জন্য। তবে মানুষের চলাচল যদি সীমিত করা না হয় তবে কোনো ফল আসবে না।’
তিনি বলেন, ‘এভাবে তাহলে যান চলাচল সীমিত করা অর্থহীন। যে করোনা ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে সেটি নিঃসন্দেহে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। বাস্তবে তাই দেখা যাচ্ছে।’
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো লকডাউন কেন সফল হচ্ছে না তা নিয়ে কোনো গবেষণা কিন্তু হচ্ছে না। কারণগুলো খুঁজে বের করে তা সমাধান করা হচ্ছে না। যারা সাভার বা মানিকগঞ্জ থেকে অফিস করে তাদের কী হবে সেটি কিন্তু জানানো হয়নি।’
কী বলছে কর্তৃপক্ষ
সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ করিম খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আমিনবাজারে কিছুই করছি না। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে যা করার করছে।’
টঙ্গীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাব্বির আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, ‘দেখেন আপনি তো এভাবে কোনো মানুষকে আটকাতে পারবেন না। একটা লোককে তো রাস্তায় রেখে যেতে পারব না। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী তাদের তো বের হওয়া উচিত হয়নি। কিন্তু তারা বের হয়েছে। এটা অন্যায় করেছেন তারা।’
প্রজ্ঞাপনে গাড়ির সঙ্গে সাধারণ মানুষের চলাচল সীমিত করার কথা বলা হয়েছে। তবে মানুষের চলাচল কে নিয়ন্ত্রণ করবে তা জানা নেই কারও।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এই বিষয়ে জানান, ‘বাস্তবায়নকারী সংস্থা কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনী নয়, সেটা হলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীকে তারা রিকোয়েস্ট করছে তারা যেন এই কাজটি করে। সে অনুযায়ী আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী কাজটি করছে। তারা যেখানে যেভাবে লকডাউন করার কথা বলে, পুলিশ সেখানে সহযোগিতা করে থাকে।’
আরও পড়ুন:প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন বহাল রেখেই শিক্ষাপঞ্জির অন্যান্য ছুটি কমিয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে আন্তর্জাতিক স্বাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মূল কাজই হচ্ছে স্বাক্ষরতা। স্কুল স্তরে যদি স্বাক্ষরতা করতে হয়, কতগুলো প্রতিবন্ধকতা আমাদের পার হতে হচ্ছে। কেন আমরা সহজে এগোতে পারছি না। এই বিষয়গুলো আমি আপনাদের সামনে প্রকাশ করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘স্কুলে যদি পড়াশোনা হতে হয় তবে প্রয়োজনীয় একটি শর্ত হচ্ছে কন্ট্রাক্ট আওয়ার, অর্থাৎ একজন শিক্ষক ছাত্রকে কতটুকু সময় দিতে পারছেন। এই কন্ট্রাক্ট আওয়ার প্রথমত নির্ভর করছে কত দিন স্কুল খোলা থাকে। আপনারা ক্যালেন্ডার দেখেন, ৩৬৫ দিনের মধ্যে আমার স্কুল খোলা থাকে মাত্র ১৮০ দিন। খেয়াল করেছেন ব্যাপারটা? পড়াশোনাটা যে হবে, স্কুল কত দিন খোলা পাচ্ছি? এর মানে আমাদের অনেক অপ্রয়োজনীয় ছুটি রয়ে গেছে।’
‘আমরা চেষ্টা করছি ছুটি যদি কিছু কমিয়ে আনা যায়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে এটা করছি, কারণ বিচ্ছিন্নভাবে করলে হবে না।’
ছুটি কমানোর ক্ষেত্রে সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন থেকে কমিয়ে এক দিন করার চিন্তা আছে কিনা— জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘আপাতত লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ক্যালেন্ডারে ছুটি কিছুটা কমানো। আমরা যদি সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিনকে এক দিন করতে চাই, সেটা সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেহেতু একই রকম তাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আলাদাভাবে করা কঠিন। শিক্ষকদের পক্ষ থেকে এক ধরনের দাবি আছে, শিক্ষকরা হচ্ছেন ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্টে, নন-ভ্যাকেশন হতে চাইলে এটা সঙ্গে সরকারের আর্থিক সংশ্লেষের প্রসঙ্গ আছে। ফলে এ ধরনের একটা চিন্তা আছে, তবে এ বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। তবে আমাদের ক্যালেন্ডারে যে ছুটি আছে সেক্ষেত্রে আমাকে কিছুটা কমিয়ে আনব।’
কোন কোন দিন ছুটি কমাবেন সেটা ঠিক হয়েছে কিনা— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা চূড়ান্ত হলে আপনাদের জানিয়ে দেব।’
সরকারি স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করে গর্ভকালীন মাতৃ মৃত্যুহার, অপুষ্টি জনিত শিশু মৃত্যুর হার কমানোসহ সংক্রামক রোগের সংক্রমন প্রতিরোধে ঝিনাইদহে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার সকালে হরিণাকুন্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মিলনায়তনে এ কর্মশালার আয়োজন করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এসডিএফ)। এতে হরিণাকুন্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.আলমগীর হোসেন, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নাছরীনসহ এসডিএফ'র জেলা ব্যবস্থাপক মাহমুদ হাসান, জেলা স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কর্মকর্তা ডা. অনুদীপা রানী, আইটি এন্ড এসআইএস মো. সাদ আহম্মেদ, ক্লাস্টার অফিসার বাণী বৈরাগীসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন।
উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য বিভাগের সরকারি প্রতিনিধি ও এসডিএফ-এর কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে আয়োজিত এ কর্মশালায় পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হয়। কর্মশালায় এসডিএফ-এর পক্ষ থেকে খাদ্য ও পুষ্টি, অপুষ্টিজনিত সমস্যার প্রতিকার, কিশোর-কিশোরীদের পুষ্টির গুরুত্ব, ইপিআই কর্মসূচির মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ, স্বাস্থ্যসম্মতভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস এবং বসতভিটায় পুষ্টিবাগান স্থাপনের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়গুলো বিশেষভাবে উপস্থাপন করা হয়। কর্মশালাটি সংশ্লিষ্টদের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সচেতন করার পাশাপাশি বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগ করার জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
দীর্ঘ ৮ বছর পর আগামী ৮ই সেপ্টেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জেলা বিএনপির দ্বি-বাষিক সম্মেলন। এই সম্মেলন ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উচ্ছাস, উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে।
সর্বশেষ ২০১৭ সালে বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন বাঁধার মুখে আর হতে পাড়েনি কোন সম্মেলন। এবারে অভ্যুত্থানে পরে অনেকটাই আন্দন ও উৎসাহ নিয়েই প্রস্তুতী চলছে এই সম্মেলনের। ইতিমধ্যে মঞ্চ তৈরীর কাজ চলছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে টাঙ্গানো হয়েছে ব্যানার ফেস্টুন। তবে প্রার্থী,কাউন্সিলর ও বিএনপির বিভিন্ন স্থরের নেতারা বলছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
সম্মেলনের নির্বাচন কমিশনের দেয়া তথ্য মতে, সম্মেলনে ১১ জন প্রার্থী মনোনয়ন নিয়েছিলেন। এর মধ্যে ৬ জন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহারও করেছেন। সবশেষ সভাপতি পদে রয়েছেন ১জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করবেন ৪জন প্রার্থী। এছাড়া সম্মেলনে কাউন্সিলর রয়েছেন ৮০৮জন।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত হবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এছাড়া সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধান বক্তা হিসেবে থাকবে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান সামসুজ্জামান দুদু। এছাড়াও রংপুর বিএনপির তিনজন সাংগঠনিক সম্পাদক সহ বিভিন্ন স্থরের নেতাকর্মীরা থাকবেন।
সম্মেলনের প্রার্থীরা বলছেন বিএনপির এই সম্মেলন আগামী জাতীয় নির্বাচনে জোড়ালো ভূমিকা রাখবে। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে যেই আসুক না কেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের নির্দেশেই এগিয়ে যাবে দলটি।
এদিকে সম্মেলনের কাউন্সিলর ও বিএনপির বিভিন্ন স্থরের নেতা-কর্মীরা বলছেন,এই সম্মেলনের মাধ্যমেই জেলায় আরো বেশি শক্তিশালী হবে বিএনপি। আমরা প্রত্যাশা করছি কর্মীবান্ধব নেতৃত্বই আসবে এই সম্মেলন থেকে। তবে মহাসবিচ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যা বলছেন তাই মাথা পেতে নেবে সকলে। তঢাগীদের দলে পদ পদবিতে জায়গা হবে এটাই প্রত্যাশা দলের নেতাকর্মীদের।
সম্মেলনের নির্বাচন কমিশন অ্যাডভোকেট বদিউজ্জামান চৌধুরী বলেন,সম্মেলন নিয়ে সকল প্রস্তুতী সম্পূর্ণ রয়েছে বলে জানালেন নির্বাচন কমিশনার। আমরা আশা করছি একটি সুষ্ঠু সুন্দর সম্মেলন উপহার দিতে পাড়বো।
ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, সম্মেলন ঘিরে পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন স্থরের নেয়া হয়েছে ব্যবস্থা। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও থাকবে আমাদের সাথে।
ঢাকা কেরানীগঞ্জে ঘটে গলো এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ভোরের কোনো এক সময়ে মাত্র দুই বছর বয়সী শিশু আব্দুর রহমানকে প্রাণ হারাতে হয়েছে তার নিজের মায়ের হাতে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাত আনুমানিক ৪:০০ ঘটিকা থেকে সকাল ৭:০০ ঘটিকার মধ্যে আব্দুর রহমানকে তার মা মোছাম্মৎ আতিয়া শারমিন নিজের বাসায় প্রাণঘাতী আঘাত করেন এবং টুকরো করে খাটের নিচে রেখে দেন। পরে স্থানীয়রা শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশকে খবর দেয়।
খবর পেয়ে কেরানীগঞ্জ কলাতিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ নিরু মিয়ার নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে, এবং লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড হাসপাতালে) প্রেরণ করে।
এব্যাপারে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল হক ডাবলু বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে, শিশুটির মা মানসিক অসুস্থ ছিলেন। আমরা মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনা হবে।
স্থানীয়রা জানান, শিশুটির মা দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছিলেন। ঘটনায় এলাকায় শোক ও ক্ষোভের ছায়া নেমে এসেছে। অনেকেই বলছেন, সন্তানের নিরাপদ আশ্রয় মায়ের কোলে হলেও এ ঘটনা মানবিকতার সীমা ছাপিয়ে গেছে।
নিহত শিশুর বাবা টুটুল সাংবাদিকদের বলেন, আমি কখনো ভাবিনি এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটবে। আমার ছেলে আর ফিরে পাব না। আশা করি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে এবং ভবিষ্যতে কেউ এভাবে সন্তানকে হারাবে না।
ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের ফেনীর লেমুয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন শ্যামলী পরিবহন বাস এর সুপারভাইজার ও হেলপার এবং ড্রাইভার গুরুতর আহত হয়েছেন।
রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ভোর বেলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের ফেনীর লেমুয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ভোর পাঁচটার দিকে শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস ফেনীর দিকে আসছিল। ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের ফেনীর লেমুয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসার সামনে দ্রুতগতির শ্যামলী পরিবহনের বাসটি দাড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকের পিছনে ধাক্কা দেয়। এতে শ্যামলী পরিবহনের সামনের অংশ দুমড়ে মুচড়ে যায় । ঘটনাস্থলে বাসের হেলপার নিহত হন এবং দুইজন আহত হন। হতাহতদের ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বাসের সুপারভাইজারকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত বাসের সুপারভাইজার পাবনা সাথীয়া উপজেলার রঘুনাথপুর এলাকার ওয়াজেদ আলীর ছেলে রবিউল ইসলাম বাবু (৩৮)। অপর নিহত হেলপার সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর থানার গরিয়াপুরের শেখ মোঃ শাহাদাতের ছেলে মো: ইয়াহিয়া রাফি (১৮) ।
গুরুতর আহত হন বাসের ড্রাইভার । তিনি যশোর জেলার ঝিকরগাছা চাসরা মোবারকপুর গ্রামের মৃত: আবদুল আলী মোল্লার ছেলে মো: রফিক (৬০)। গুরুতর আহত হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ফেনী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো: আবদুল মজিদ বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে গাড়ি থেকে আহত ও নিহতদের উদ্ধার করে ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ফেনী মহিপাল হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হারুন অর রশিদ বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে গাড়ি দুটি সরিয়ে আহত ও নিহতদের উদ্ধার করে ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। গাড়ি দুটি উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে
রাজশাহী মহানগরীতে ধর্ষণ মামলার মূলহোতাসহ তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৫।
আজ রোববার সকাল পৌনে ৬টার দিকে আরএমপির চন্দ্রিমা থানাধীন উজিরপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, চন্দ্রিমা থানাধীন সাজ্জাদ আলীর ছেলে আরিয়ান শাফী ওরফে আরিফ (২৬), ভদ্রা জামালপুর এলাকার আলমের ছেলে শান্ত (২৫), বোয়ালিয়া থানাধীন কাদিরগঞ্জ গ্রেটাররোড এলাকার আসিফ হাসান সোহেলের ছেলে পিয়াম (২৫)।
পরে র্যাব-৫ এর মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, ২২ বছর বয়সী এক নারীর সঙ্গে মূলহোতা আরিয়ান শাফীর ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্পর্কের জেরে গত ৩০ আগস্ট বিকেলে আরিয়ান শাফী দেখা করার কথা বলে ওই নারীকে মতিহার থনাধীন ভদ্রা ব্রিজের উপর ডাকে। ভুক্তভোগী দেখা করতে গেলে আরিয়ান বন্ধুর বৌয়ের জন্মদিনের কেক কাটার কথা বলে তাকে রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। এ সুযোগে আরিয়ান তাকে রিকশা করে কুমারপাড়া আলুপট্টি মোড়ে পদ্মা মন্দিরের সামনে এজাহারভুক্ত ৪ নম্বর আসামি আজোয়াদ আব্দুল্লাহর বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করে। সেখানে পূর্ব থেকে অবস্থান করা আসামি শান্ত ও পিয়ামও ওই নারীকে ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ করে। এ ঘটনা কাউকে না জানাতে আসামিরা ভুক্তভোগীকে হুমকি দেয়।
গত ৩ সেপ্টেম্বর আরিয়ান ওই নারীকে আবার দেখা করার কথা বলে। দেখা না করলে তার ভিডিও সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এ ঘটনার পর ভুক্তভোগী নারী বোয়ালিয়া মডেল থানায় ধর্ষণের মামলা করেন। এরপর পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি র্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় অভিযান চালিয়ে ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা সংঘবদ্ধ ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। আসামিদের বোয়ালিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
আবাহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা নৌকাবাইচ। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বাংলার অনেক অতীত হারিয়ে গেলেও বর্ণিল নৌকাবাইচ এখনও টিকে আছে। শনিবার শরীয়তপুরের দাদপুর ভাষানচরের কীর্তিনাশা নদীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে গ্রামীণ ঐতিহ্যের নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা।
দুপুরে শুরু হওয়া এ প্রতিযোগিতা ঘিরে নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণীসহ নানান বয়সের মানুষ নদীর দুই পাড়ে ভিড় করে।
নৌকাবাইচ শুরুর তিন ঘণ্টা আগে থেকেই নদীর তীর মানুষে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ইঞ্জিন চালিত ট্রলার, বড় নৌকা, গাছ ও ভবনে উঠে মানুষ নৌকাবাইচ উপভোগ করেন।
প্রতিযোগিতায় অংশ নেন শরীয়তপুরসহ পার্শ্ববর্তী জেলার অসংখ্য মাঝিদল। বিশাল নৌকায় বৈঠা হাতে তরুণ ও অভিজ্ঞ মাঝিরা সমানতালে ছন্দ মিলিয়ে বৈঠা চালান। এ সময় বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে বৈঠার মন মাতানো শব্দের সঙ্গে উল্লাসে ফেটে পড়েন দর্শনার্থীরা। তারা নেচে-গেয়ে আনন্দ উল্লাস করে ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ উপভোগ করেন।
নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে নদীর দুই পাড়ে বসে অস্থায়ী মেলা। স্থানীয় পিঠা-পুলি, ঝালমুড়ি, ফুচকা ও বিভিন্ন খাবারের দোকানে জমে ওঠে মেলা। শিশু-কিশোরদের জন্য খেলনা ও বেলুন নিয়ে বিক্রেতারাও ভিড় করেন মেলায়।
আয়োজকদের পক্ষে উপজেলার আঙ্গারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আব্দুর রব হাওলাদার বলেন, নৌকা বাইচ শুধু বিনোদনের জন্য আয়োজন করা হয়নি, এটি গ্রামীণ ঐতিহ্য, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং ঐক্যের প্রতীক। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতিবছরই এ আয়োজন করা হয়। আগামী বছরগুলোতে আরও বড় পরিসরে এই ঐতিহ্য ধরে রাখা হবে।
দিনভর প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
মন্তব্য