রাজধানীর কলাবাগানের বাসায় গ্রিন লাইফ হাসপাতালের চিকিৎসক কাজী সাবিরা রহমানকে কারা, কেন খুন করেছে, এ বিষয়ে কোনো ক্লু পাচ্ছে না পুলিশ।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ঘটনায় স্বজনদের পক্ষ থেকে মামলাও করা হয়নি। তবে খুনিদের শনাক্ত করতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা।
সোমবার দুপুরে চিকিৎসক সাবিরার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাতে তিনি বাসায় একাই ছিলেন। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় সাবিরার গলা ও শরীরে ধারালো অস্ত্রের একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে তার মুখমণ্ডল ও শরীরের কিছু অংশ আগুনে পোড়ানো ছিল।
সাবিরার মরদেহটি বিছানায় উপুড় হয়ে পড়ে ছিল, বিছানার কিছু অংশও ছিল পোড়া। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক টিমের সন্দেহ, সাবিরাকে রোববার মধ্যরাতে হত্যা করা হয়। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে সোমবার সকালে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছিল।
হত্যার রহস্য উন্মোচনে কাজ করছে কলাবাগান থানার পুলিশ, ডিবি ও পিবিআই। কিন্তু মঙ্গলবার পর্যন্ত সাবেরা হত্যার কোনো ক্লু পায়নি তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একজন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, নিহতের পরিবারের কোনো সদস্য কাউকে সন্দেহ করতে পারছেন না। পরিবারে কারও সঙ্গে চিকিৎসকের কোনো বিবাদের বিষয়ও সামনে আসছে না। বাসা থেকে কিছু খোয়া যাওয়ার বিষয়ও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সেই সঙ্গে ওই বাসায় কোনো সিসিটিভি ক্যামেরাও ছিল না। সব মিলিয়ে হত্যাকাণ্ডের পর তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ক্লু বা মোটিভ পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে এই হত্যার তদন্তে আমাদের বেগ পেতে হবে।’
ঘটনাটির ছায়া তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) মহানগর উত্তর বিভাগ। কোনো ধরনের ক্লু না পাওয়ার তথ্য আসে সেখান থেকেও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিবিআইয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘মরদেহটি প্রাথমিক পরীক্ষা করেই বোঝা গেছে, রোববার মাঝরাতে হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়। সকালে বিছানায় আগুন ধরিয়ে দিয়ে মরদেহটি পুড়িয়ে ফেলতে চেয়েছিল হত্যাকারী, যেন হত্যাকে অগ্নিদুর্ঘটনায় রূপ দেয়া যায়।
‘তাই হত্যাকারী বিছানায় আগুন ধরিয়ে দিয়ে দরজার লক চেপে পালিয়ে যায়। কিন্তু আগুন লাগাতে কোনো দাহ্য পদার্থ ব্যবহার না করায় বিছানায় আগুন কিছুটা জ্বলে আবার নিভে যায়। তাই মরদেহের কিছু অংশ পুড়ে গেলেও অক্ষত ছিল। এতে আমরা পরিষ্কার ধারণা পেয়েছি, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এবং হত্যাকারী ঠাণ্ডা মাথায় এ কাজ করেছে। কিন্তু প্রথামিকভাবে কে, কেন এ কাজ করল তার উত্তর পাচ্ছি না।’
তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিতোষ চন্দ্র নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনও নিহতের কোনো স্বজন অভিযোগ নিয়ে আমাদের থানায় আসেননি। তারা বলেছেন, মরদেহ দাফনের পর মামলা করবেন।
‘তারা যে অভিযোগই দেবে, আমরা সেটা গ্রহণ করব। আমরা মামলার জন্য অপেক্ষা না করে তদন্তকাজ চালিয়ে যাচ্ছি। কিছু জটিল বিষয় আছে, সেটা তদন্তের স্বার্থে বলা যাচ্ছে না। তবে সিআইডির ক্রাইম সিনসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা আমাদের কিছু তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করছে। আমরা আশা করছি, শিগগিরই তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানাতে পারব।’
তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা আশা করছেন, ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ফিঙ্গারপ্রিন্ট হত্যাকারী পর্যন্ত পৌঁছাতে সাহায্য করবে।
তারা জানান, ঘটনার পর সিআইডির ক্রাইম সিন বিভাগ নানান আলামত সংগ্রহ করেছে। সেখানে কয়েকটি ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। তারা বিশেষ নজর দিচ্ছে চিকিৎসক সাবেরার রুমের দরজার ভেতরের দিকের নবটিতে পাওয়া ফিঙ্গারপ্রিন্টের ওপর। কারণ হত্যার সঙ্গে যে বা যারাই জড়িত থাকুক না কেন, তারা ডোরনবের লক চেপে দরজা বন্ধ করে গেছে।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ জন ডিবি হেফাজতে
তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মহানগরের রমনা ডিবির উপকমিশনার এইচ এম আজিমুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে এসেছি। এ ছাড়া সন্দেহের তালিকায় আরও অনেককেই রাখা হয়েছে। আমরা ধারাবাহিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে যাব। তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে এর বেশি এখন বলা যাবে না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিবির একজন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাবিরার বাসায় সাবলেট থাকা একজন তরুণী ও তার দুই বন্ধু, সাবিরার বাসার খণ্ডকালীন গৃহকর্মী এবং ওই বাসার দারোয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
‘মঙ্গলবার সকালে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় রোববার সন্ধ্যা থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত কার অবস্থান কোথায় ছিল এবং তারা কখন কার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা কী কী করেছেন, প্রতিটি পদক্ষেপের বিস্তারিত তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। তারা সেগুলো লিখিত আকারে দেবেন। এরপর তাদের বর্ণনা মিলিয়ে দেখবেন গোয়েন্দারা। সেটা যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
গলা কেটে হত্যার প্রমাণ ময়নাতদন্তে
ধারালো অস্ত্র দিয়ে শ্বাসনালি কেটে ফেলায় সাবিরার মৃত্যু হয়েছে বলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছে।
মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে সাবিরার মরদেহের ময়নাতদন্ত শুরু হয়। ঘণ্টাব্যাপী ময়নাতদন্ত শেষে মর্গ থেকে বেরিয়ে আসেন ঢাকা মেডিক্যালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ মাকসুদ। কিন্তু তিনি ময়নাতদন্তের বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি।
পরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফরেনসিক বিভাগের আরেক চিকিৎসক নিউজবাংলাকে জানান, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ওই চিকিৎসকের (সাবেরা) শ্বাসনালি কাটা হয়েছে। এতেই তার মৃত্যু হয়। এ ছাড়া তার শরীরে ধারালো অস্ত্রের একাধিক আঘাত পাওয়া গেছে।
তিনি আরও জানান, তার মৃত্যুর সম্ভাব্য সময় রোববার রাত। পরদিন সোমবার তার মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। ভিসেরা রিপোর্ট ও কেমিক্যাল অ্যানালাইসিসের জন্য মরদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:রাজধানীর খিলগাঁওয়ের গোড়ানে খেলতে গিয়ে একটি ভবনের ছাদ থেকে পড়ে এক শিশু নিহত হয়েছে।
শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে পাঁচ তলা ভবনটির ছাদ থেকে পড়ে নিহত হয় সে।
নিহত শিশুর নাম খাদিজা আক্তার (৫)। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন শিশুটির ফুফা মোহাম্মদ ইসহাক মিয়া (২০ বছর)।
খাদিজার বাবা মোহাম্মদ ফয়সাল আহমাদ জানান, দুপুরে পাঁচ তলার ছাদে খাদিজা খেলাধুলা করার সময় ছাদ থেকে নিচে পড়ে যায়। এ সময় খাদিজার ফুফা দৌড়ে ধরতে গেলে তিনিও নিচে পড়ে যান।
তিনি জানান, পরে তাদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খাদিজা রাত সাড়ে ৮টার দিকে মারা যায় এবং ফারিয়ার ফুফাকে ভর্তি রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া থানা এলাকায়। খিলগাঁওয়ের গোড়ান নবাবীর মোড় বতর্মানে১৪৮ /১ রায়হান সাহেবের বাড়ির ভাড়াটিয়া আমরা।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মহম্মদ বাচ্চু মিয়া বলেন, শিশুটির মরদেহ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত ছাড়া স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে বলে খিলগাঁও থানার সাথে কথা হয়েছে।
গ্যাস পাইপলাইনে জরুরি কাজের জন্য শনিবার সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে।
গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছে। খবর ইএনবির
তিতাস জানায়, যেসব এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে সেগুলো হলো- শনির আখড়া, বড়ইতলা, ছাপড়া মসজিদ, দনিয়া, জুরাইন, ধোলাইরপাড় ও কদমতলী।
এ সময় আশপাশের এলাকায় গ্যাস সরবরাহে চাপ কম থাকতে পারে বলেও জানিয়েছে তিতাস। গ্রাহকদের সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে কোম্পানি।
রাজধানীর মুগদায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি ময়লার গাড়ির ধাক্কায় এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে।
মুগদার বড়বাজারের সামনে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো মাহিন আহমেদ (১৩) মতিঝিল সরকারি আইডিয়াল স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল। সে পরিবারের সঙ্গে উত্তর মুগদার মদিনাবাগে একটি বাসায় থাকত।
মাহিনের খলাত ভাই হিমেল জানান, মাহিনের বাবা একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে মাহিন দ্বিতীয়। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল মাহিন, ওই সময় ময়লার গাড়িটি তাকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়।
পরে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে মাহিনের মৃত্যু হয়।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মাসুদ মিয়া জানান, ময়নাতদন্তের জন্য শিশুটির মরদেহ ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে এবং বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে জানানো হয়েছে।
এ ঘটনায় সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িটি জব্দ করে চালককে আটক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:মেট্রোরেলের চলমান প্রকল্পটি সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে স্থানীয় নাগরিক সমাজ।
বৃহস্পতিবার সকালে সাভার উপজেলা পরিষদের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় মেট্রোরেলের এমআরাটি-৫ ও এমআরটি-৬-এর চলমান প্রকল্পটি হেমায়েতপুর থেকে নবীনগর জাতীয় স্মৃতিসৌধ অথবা দিয়াবাড়ি থেকে সাভারের রেডিও কলোনি পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এই প্রকল্পে সরকার যদি কোনোরকম জটিলতা মনে করে তাহলে এমআরটি-৬ প্রকল্প উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে বিরুলিয়া হয়ে সাভার রেডিও কলোনি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। পর্যায়ক্রমে তা নবীনগর জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবিও জানান তারা।
কর্মসূচিতে সড়কের উপর দিয়ে সম্ভব না হলে মাটির নিচ দিয়ে মেট্রোরেলের যে প্রকল্প রয়েছে, সেই প্রকল্পে সাভারকে যুক্ত করার দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধন কর্মসূচির সভাপতিত্ব করেন সাভার নাগরিক কমিটির সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সভাপতি কামরুজামান খান।
তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেলের প্রকল্প সাভার পৌর এলাকার শেষ সীমানা পর্যন্ত সম্প্রসারণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বরাবর আবেদন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিবকে এ ব্যাপারে অবগতপত্র দেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে রেলমন্ত্রী, সচিব ও মহাপরিচালকে পত্র দিয়ে এবং সরাসরি সবকিছু অবগত করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুবিধাবঞ্চিত সাভারবাসী রেলসেবা পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছে। সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাভারের লাখ লাখ মানুষ মেট্রেরেলের সুবিধা প্রত্যাশা করেন। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন সাভার উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া হক, সাভার নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষানুরাগী সালাহউদ্দিন খান নঈম, সাভার পৌর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মিজানুর রহমান মাসুদ, সংস্কৃতিকর্মী স্বরণ সাহা, প্রভাত ডি রোজারিও, বন্ধুরহাট যুব সংগঠনের আলোকুর রহমান, জাগরণী থিয়েটারের সভাপতি আজিম উদ্দিনসহ আরও অনেকে।
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, ‘পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ একটি অমিত সম্ভাবনাময় দেশ। ষড়ঋতুর এ দেশকে প্রকৃতি যেমন দুহাত ভরে তার বৈচিত্র্যময় সম্পদ ঢেলে দিয়েছে, তেমনি এদেশের মেহনতি মানুষ তাদের আপন শৈল্পিক কারুকার্যের মাধ্যমে অনন্যসাধারণ সামগ্রী প্রস্তুত করে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সুনাম ও খ্যাতি বৃদ্ধি করেছে।’
তিনি বলেন, ‘মাটি, বায়ু, পানি, পরিবেশ, কারিগরদের দক্ষতা প্রভৃতি স্বতন্ত্র ও অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে ছোট এ ভূখণ্ডের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য ভৌগলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব পণ্যকে জিআই হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের পাশাপাশি এর গুণগত মান ও টেকসই সংরক্ষণের দিকে নজর দিতে হবে।’
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বেইলি রোডে বাংলাদেশ ফরিন সার্ভিস অ্যাকাডেমির মাল্টিপারপাস হলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) আয়োজিত বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল শাড়ি, গোপালগঞ্জের রসগোল্লা ও নরসিংদীর অমৃত সাগর কলাসহ ১৪টি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের নিবন্ধন সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ডিপিডিটির মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব জাকিয়া সুলতানা, ফরিন সার্ভিস অ্যাকাডেমির রেক্টর রাষ্ট্রদূত মাশফী বিনতে শামস ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কামরুন নাহার সিদ্দীকা।
মন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জিআই পণ্যের প্রচার ও প্রসারে আমাদের এখনই কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিতে হবে। বিদেশের বাংলাদেশ মিশনসমূহ, দেশের সকল আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কেন্দ্রীয়ভাবে এসব পণ্য প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া দেশে-বিদেশে বিভিন্ন মেলায় জিআই পণ্যসমূহ প্রদর্শন করা যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ডিপিডিটি, বিসিক ও এসএমই ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এসব পণ্যের উন্নয়ন ও প্রসারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে।’
নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন কোনো খালি বাস্কেট নয়, এটি একটি পরিপূর্ণ ভরা বাস্কেট। আমাদের সম্পদের কোনো অভাব নেই, শুধু প্রয়োজন এর সদ্ব্যবহারের। প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা, কারিগরি সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এসব সম্পদ ও পণ্যের প্রচার-প্রসার ঘটাতে হবে।’
জ্যেষ্ঠ শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে জিআই হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে এমন ৫০০টি পণ্যের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছি। একটু দেরিতে হলেও আমরা এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় আমরা ২০১৩ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন প্রণয়ন করি এবং পরবর্তীতে ২০১৫ সালে এ সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের জিআই পণ্যকে সুরক্ষা দিতে হবে এবং একই সঙ্গে এর পেটেন্ট দিতে হবে। জিআই পণ্যের প্রচার-প্রসারে বিভিন্ন উৎসব, পালাপার্বণ ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে এসব পণ্যকে আমরা উপহার হিসেবে প্রদান করতে পারি। তাছাড়া এসব পণ্য সম্পর্কে টিভিসি (বিজ্ঞাপন), ডকুমেন্টারি তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।’
অনুষ্ঠানে টাঙ্গাইল শাড়িসহ বাংলাদেশের মোট ১৪টি ঐতিহ্যবাহী পণ্যকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সনদ প্রদান করা হয়।
সেগুলো হলো যথাক্রমে- গোপালগঞ্জের রসগোল্লা, নরসিংদীর অমৃত সাগর কলা, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম, কুমিল্লার রসমালাই, কুষ্টিয়ার তিলের খাজা, বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম, মৌলভীবাজারের আগর, মৌলভীবাজারের আগর আতর, মুক্তাগাছার মণ্ডা, যশোরের খেজুরের গুড়, রাজশাহীর মিষ্টি পান এবং জামালপুরের নকশিকাঁথা।
এ নিয়ে ডিপিডিটি কর্তৃক জিআই সনদপ্রাপ্ত বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্যের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩১টিতে।
আরও পড়ুন:প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আসন্ন উপজেলা নির্বাচন ব্যর্থ হলে ৭ জানুয়ারি (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন) যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেটি ব্যর্থ হবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বিষয় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সিইসি বলেন, ‘দেশের নির্বাচনে আবেগ-অনুভূতির জন্য কিছুটা বিশৃঙ্খলা হয়। ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। যেকোনো মূল্যে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হবে। এই নির্বাচনে ব্যর্থ হলে বিগত সংসদ নির্বাচনে যে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে, তা ক্ষুণ্ন হতে পারে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে, তা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে।’
সভায় দেশের সব জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক জয় চৌধুরীর নেতৃত্বে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন সাংবাদিকরা।
টেলিভিশন ক্যামেরাম্যান জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের (টিসিএ) উদ্যোগে বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বিএফইউজে সভাপতি ওমর ফারুক, মহাসচিব দীপ আজাদ, ডিইউজে সভাপতি সাজ্জাদ আলম তপু ও সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মুজতবা ধ্রুব, বাচসাস সভাপতি রাজু আলীম, সাধারণ সম্পাদক রিমন মাহফুজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাবু প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, সাংবাদিকরা নানা ক্ষেত্রে আজ নির্যাতিত। তারা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানাভাবে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। চলচ্চিত্রে যারা অভিনয় করেন তাদেরকে আমরা মননশীল মনে করি। কিন্তু তারা যখন মাস্তানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন, তখন তারা সমাজে কী বার্তা দেন?
নারকীয় এই হামলায় নেতৃত্ব দেয়া জয় চৌধুরী, শিবা শানু ও আলেকজান্ডার বোসহ হামলায় জড়িত সবাইকে শিল্পী সমিতির সদস্যপদ বাতিলসহ আইনের আওতায় আনার দাবি জানান বক্তারা।
মানববন্ধনে আরও অংশ নেন বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত বিনোদন বিটের সাংবাদিকরা।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার বিকেলে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে শিবা শানু, জয় চৌধুরী ও আলেকজান্ডার বোর নেতৃত্বে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হয়। এতে প্রায় ২০ জন সাংবাদিক আহত হন। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন চারজন।
তদন্ত কমিটি
এদিকে হামলার ঘটনা তদন্তে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি ও সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে পাঁচ জন করে রাখা হয়েছে। আর উপদেষ্টা হিসেবে আছেন প্রযোজক আরশাদ আদনান।
দশজনের তদন্ত কমিটিতে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে লিমন আহমেদ, রাহাত সাইফুল, আহমেদ তৌকির, বুলবুল আহমেদ জয় ও আবুল কালাম এবং শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে মিশা সওদাগর, ডি এ তায়েব, নানাশাহ, রুবেল ও রত্না রয়েছেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য