নৃশংস খুন। ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা। এরপর পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা হয়েছে মরদেহ। জিঘাংসা দেখে হতবাক পুলিশও।
নিহত কাজী সাবিরা রহমান একজন চিকিৎসক। কলাবাগান প্রথম লেনের ৫০/১ ভবনের তিনতলার একটি ফ্ল্যাটে থাকেন মেয়েকে নিয়ে। আগের দিন মেয়েকে দিয়ে আসেন নানির বাসায়।
ওই ফ্ল্যাটে সাবলেট হিসেবে থাকেন দুই জন নারী। একজন ঈদের আগে বাড়ি গিয়ে ফেরেননি। অপরজন ভোরে বাসা থেকে বের হন ব্যায়াম করতে। পৌনে ১০টায় ঘরে ফিরে দেখেন চিকিৎসকের কক্ষ থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে।
এই তরুণী একজন মডেল। স্নাতক পাস করেছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
এই তরুণীর বর্ণনা সঠিক হয়ে থাকলে খুনের ঘটনাটি ঘটেছে সকাল ছয়টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে।
প্রশ্ন হলো, সাবিরা যে তখন একা, সেটা খুনি বা খুনিরা কীভাবে জানল?
সেই বাসার নিচতলায় দারোয়ান থাকেন। সকালে কেউ বাসায় ঢুকেছেন, এমনটি দেখেননি বলে দাবি করেছেন তিনিও। তাকেও নিয়ে গেছে ডিবি।
সেই মডেলের এক ছেলেবন্ধুকেও নিয়ে গেছে পুলিশ।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সাবিরা তার কর্মস্থল গ্রিন লাইফ হাসপাতালে যাওয়ার কথা ছিল। সেখান থেকে কয়েকজনের সঙ্গে বাইরে যাওয়ার কথা ছিল বলে জানিয়েছেন একজন স্বজন। তবে কাদের সঙ্গে কোথায় যাওয়ার কথা ছিল, তা এখনও জানা যায়নি।
সাবিরা ৮ থেকে ৯ বছর ধরে গ্রিন রোডের গ্রিন লাইফ হাসপাতালে চাকরি করেছেন। বছর পাঁচেক আগে তার চাকরি স্থায়ী হয়। কাজ করতেন রেডিওলজি বিভাগে।
তার বয়স ৪৭। কার সঙ্গে কী নিয়ে দ্বন্দ্ব বা বিরোধ ছিল, তার ওপর কার ক্ষোভ ছিল, বিষয়টি হত্যার পর বড় হয়ে উঠলেও প্রথম দিন কোনো ধারণাও করতে পারছে না পুলিশ।
দুপুরের পর বাসায় গিয়ে দেখা যায়, ডা. সাবিরার কক্ষটি এলোমেলো। তবে কোনো জিনিসপত্র খোয়া গেছে কি না সেটি জানা যায়নি। আলমিরা তালাবদ্ধ অবস্থাতেই দেখা গেছে।
সেই বাসায় কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা নেই বলে জানিয়েছেন বাড়িওয়ালা। ফলে কে বা কারা ঘরে ঢুকেছেন সেটি দেখার সুযোগ নেই। খুনি সেই ফ্ল্যাটেও অবস্থান করতে পারেন, তবে আপাতত কাউকে সন্দেহও করতে পারছে না পুলিশ।
কয়েক বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় সাবিরার স্বামী মারা যান। পরে তিনি আরেকজনকে বিয়ে করেন।
তবে দ্বিতীয় স্বামী শামসুদ্দীন আজাদের সঙ্গে তার বনিবনা হচ্ছিল না। এক বছর ধরে তারা আলাদা থাকছিলেন। অবশ্য তাদের মধ্যে যোগাযোগও ছিল বলে জানিয়েছেন সাবিরার একজন স্বজন।
আজাদের বাসা ঢাকারই শান্তিনগরে। সাবিরা খুনের সংবাদ পেয়ে তিনি কলাবাগানের বাসায় আসেন।
সাবিরা কলাবাগানে থাকতেন নানা কারণে। তার চাকরিস্থল কাছে হওয়া ছাড়াও গ্রিন রোডেই তার মায়ের বাসা। অসুস্থ মাকেও দেখভাল করতে যেতে হতো মাঝেমধ্যে। আবার মেয়ের স্কুল ধানমন্ডিতে।
আগের সংসারেও সাবিরার একটি ছেলে আছে। তিনি ইংলিশ মিডিয়ামে ‘এ’ লেভেল শেষ করে বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। থাকেন গ্রিনরোডে নানির কাছে।
যেভাবে ঘটনা জানতে পারে পুলিশ
কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিতোষ চন্দ্র ঠাকুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাবিরার পাশের রুমে একজন মডেল থাকতেন। তিনি ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগ থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করেছেন। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মেয়েটি এই বাসায় সাবলেটে ওঠেন।
‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জেনেছি, সেই মডেল সকাল ৬টা ১০ মিনিটের দিকে ধানমন্ডি লেকে হাঁটতে যান। সকাল আনুমানিক ৯ টা ৪০ মিনিটে বাসার প্রধান গেট খুলে ভেতরে ঢুকে ধোঁয়া এবং পোড়া গন্ধ পান। তিনি তখন বাসার দারোয়ানকে জানান। এর পরে ফ্লাটের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা আরেক নারীকে জানান।
‘লোক জানাজানি হলে বাসার পাশের এক মিস্ত্রিকে এনে রুমের দরজার লক খুলে ভেতরে গিয়ে দেখেন ধোঁয়াচ্ছন্ন। যারা আসছিল তখন তারা আগুন মনে করে পানি মারে। এর পরে তারা ফায়ার সার্ভিসকে ফোন দিয়েছে বলে জানায়। আর পুলিশ পরে খবর পায়।’
প্রথমে বাসায় যায় কলাবাগান থানা-পুলিশ। পরে তারা খবর দেয় সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটকে। পরে ঘটনাস্থলে আসেন ডিবি, র্যাব, তদন্ত সংস্থা পিবিআই এর সদস্যরা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছেন বলে জানানো হয়েছে। তবে কী কী আলামত পাওয়া গেছে, সেটি জানানো হয়নি। এটা জানানো হয়েছে, যে ধারাল অস্ত্র দিয়ে খুন করা হয়েছে, সেটা নেই আলামতের তালিকায়।
জখম দেখে ওসি পরিতোষের ধারণা, ধারাল অস্ত্রটি চাকু ছিল।
শরীরে আঘাত চারটি, দেয়া হয়েছে আগুন
ওসি পরিতোষ জানান, ক্রাইম সিন ইউনিট ওই নারীর শরীরে রক্তাক্ত কাটা জখমের চিহ্ন পেয়েছে। এর মধ্যে দুটি ক্ষত বেশ গভীর, দুটি কম। গলার জখম দুটি বড়। পিঠের দুটি ছোট।
মরদেহ পড়েছিল খাটের ওপর উপুড় হয়ে। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে আঘাত করা হয়েছে পেছন থেকে।
ওসি পরিতোষ বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা যে তথ্য পেয়েছি, তাতে আমাদের কাছে এটি একটি হত্যাকাণ্ড মনে হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মডেল ও তার এক ছেলেবন্ধু এবং ওই বাসার দারোয়ানকে ডিবি নিয়ে গেছে।’
ঘটনাস্থলে যাওয়া ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের নিউমার্কেট জোনের উপ কমিশনার শরীফ মাহমুদ ফারুকুজ্জামান বলেন, ‘মৃতের পিঠে কোমরের ওপরে ধারাল অস্ত্রের দুটি আঘাতের জখম দেখা যায় এবং তার গলায় দুটি রক্তাক্ত ও গভীর (জবাই সদৃশ) জখম দেখা যায়। একজন নারী এসআই এবং নারী কনস্টেবলের সহায়তায় মরদেহের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।’
‘খুন শত্রুতা থেকে’
সাবিরাকে হত্যার খবর শুনে ঘটনাস্থলে আসা স্বামী শামসুদ্দিন আজাদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি বেলা ১১টার দিকে খবর পেয়ে এখানে আসি। পুলিশ প্রথমে ভেতরে ঢুকতে দেয় নাই। পরে পরিচয় জেনে দিয়েছে। আর ঢুকে দেখি রক্তাক্ত লাশ।’
কারা এই ঘটনা ঘটাতে পারে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি কাউকে সন্দেহ করতে পারছি না। পুলিশি তদন্তের মাধ্যমে আমি এর সঠিক বিচার চাই।’
সাবিরার খালাতো বোন জাকিয়া খন্দকার মমি বলেন, ‘আজকে সাবিরার অফিস ছিল এবং বেশ কয়েকজনের সঙ্গে বাইরে যাওয়ার কথা ছিল। মেয়ে গতকাল নানুর বাসায় গিয়েছিল। ছেলে নানুর বাসায় থাকে। আমার মনে হয় আশপাশের কেউ শত্রুতার জের ধরে তাকে হত্যা করেছে।’
নিহত চিকিৎসকের মামাতো ভাই রেজাউল হাসান দুলাল বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম গ্যাসের সিলিন্ডার ব্লাস্ট হইছে। পরে এসে দেখি মরদেহ উপুড় হয়ে পড়ে আছে। ঘাড়ে ও পিঠে ক্ষতের চিহ্ন আছে। এই হত্যাকাণ্ডকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আমি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’
কাকে বা কাদের সন্দেহ করছেন- এমন প্রশ্নে কলাবাগান থানার ওসি পরিতোষ চন্দ্র ঠাকুর বলেন, ‘বিষয়টি তদন্তাধীন। তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি নিয়ে গেছে। এখনও বলা যাচ্ছে না কে ঘটনাটি ঘটিয়েছে। তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি উঠে আসবে।’
‘তিনি মানুষ হিসেবে ছিলেন খুব ভালো’
গ্রিন লাইফ হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, ডা. সাবিরা রোববার রাতে বলে এসেছিলেন তিনি সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে আসবেন।
হাসপাতালের আয়া সাথি বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ম্যাডামের ফোন দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু ম্যাডাম রিসিভ করতেছিলেন না। সকাল সাড়ে ৯টায় রোগী দেখার টাইম দেয়া ছিল। ম্যাডাম বলে গেছিলেন আমি ৯ টায় আসব।’
হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের কম্পিউটার অপারেটর অমলা বিশ্বাস বলেন, ‘সব কিছু মিলিয়ে তিনি (সাবিরা) খুব ভালো মানুষ ছিলেন। উনি আমাদের সঙ্গে ডাক্তার হিসেবে মিশতেন না। উনি খুব মিশুক মানুষ ছিলেন। এখানে ছোট বড় সবাইকে খুব ভালোবাসতেন।’
আরও পড়ুন:ঈদুল আজহায় টানা ছুটির মাঝে বৃষ্টি হওয়ায় ঢাকার বাতাস মোটামুটি স্বাস্থ্যকর ছিল। তবে গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিহীন শুষ্ক পরিবেশ আর ক্রমেই রাজধানীর পুরনো ভিড় বাড়তে থাকায় দূষণও বাড়ছে সমান তালে।
রবিবার (১৫ জুন) সকাল ৯টার দিকে দেখা যায়, বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর তালিকায় ফের শীর্ষস্থানগুলোতে জায়গা করে নিয়েছে ঢাকা। এ সময়ে ১৪২ একিউআই স্কোর নিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় দূষিত বাতাসের শহর ছিল বাংলাদেশের রাজধানী, সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য যা অস্বাস্থ্যকর।
এ সময় ১৫৩ স্কোর নিয়ে শীর্ষ দূষিত শহর ছিল ইন্দোনেশিয়ার মেদান। এ ছাড়া ১২৬ ও ১২৪ স্কোর নিয়ে ঢাকার পরেই ছিল যথাক্রমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ও মিসরের কায়রো।
কণা দূষণের একিউআই মান যদি ০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকে, তবে তা ‘ভালো’ হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০-এর মধ্যে হলে সেটি ‘মাঝারি’।
একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।
রাজধানীর উত্তরায় র্যাব পরিচয়ে মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান ‘নগদের’ এক পরিবেশকের এক কোটি ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (১৪ জুন) সকাল ৮টা ৫২ মিনিটে উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর সড়কে এই ঘটনা ঘটেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানায়, ‘আব্দুল খালেক নয়ন নগদের একজন পরিবেশক। তিনি উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের একটি ফ্লাটে থাকেন। শনিবার সকালে তিনি তার চারজন এমপ্লয়িকে দুইটি মোটরসাইকেলযোগে বাসার পাশেই পরিবেশক অফিসে পাঠাচ্ছিলেন। সাথে এক কোটি টাকার বেশি ছিল।’
‘তাদের বহনকারী মোটরসাইকেল দুটি বারো নম্বর রোড ক্রস করে যখন তেরো নম্বর রোডে ঢুকছিল, তখন ওৎপেতে থাকা একটি কালো রংয়ের মাইক্রোবাস তাদের গতি রোধ করে। মাইক্রোবাস থেকে র্যাবের পোশাক পরিহিত তিন থেকে চারজন নেমে এসে টাকার ব্যাগ বহনকারী মোটরসাইকেল আরোহীদের ধাওয়া করে।’
পুলিশ আরও জানায়, এদের মধ্যে একজন আরোহী দৌড়ে পালিয়ে গেলেও তিনজনকে টাকার ব্যাগসহ তারা মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। পরবর্তীতে তারা উত্তরা সতেরো নম্বর সেক্টরে নগদ মাইক্রোবাস থেকে তাদের ফেলে দিয়ে টাকার ব্যাগ সহ পালিয়ে যায়।
যোগাযোগ করা হলে উত্তরা ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার মইদুল ইসলাম ইউএনবিকে জানান, ‘ঘটনার পরপরই তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সিসিটিভির ফোটেজ সংগ্রহ করেছেন। ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।’
ঈদ উপলক্ষে লম্বা ছুটিতে বেশ কিছুদিন ধরে একপ্রকার ফাঁকা হয়ে গেছে শহর ঢাকা। সড়কগুলোতে নেই যানবাহনের চাপ; স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতও বন্ধ; রাস্তায় লোকজনও হাতেগোনা। এই অবস্থায় গত কয়েকদিন বৃষ্টি কমে গেলেও রাজধানীর বাতাসের মানে খুব বেশি অবনতি হয়নি।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকাল ১০টার দিকে ঢাকার বাতাসের একিউআই স্কোর ছিল মাত্র ৬৬। আর দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান আরও অবাক হওয়ার মতো। প্রতিনিয়ত বায়ুদূষণে শীর্ষ শহরগুলোর তালিকায় জায়গা করে নিলেও ঢাকার অবস্থান আজ ৫৫তম।
কণা দূষণের একিউআই মান যদি ০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকে, তবে তা ‘ভালো’ হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০-এর মধ্যে হলে সেটি ‘মাঝারি’। ঢাকার বাতাস আজ মাঝারি হলেও ‘ভালো’ থেকে খুব বেশি দূরে নয়।
এই সময়ে ৬৭ একিউআই স্কোর নিয়ে দূষিত শহরের তালিকার ৫২তম স্থানে ছিল স্পেনের বার্সেলোনা, ৫০তম স্থানে সুইজারল্যান্ডের বেয়ার্ন, ৬৮ স্কোর নিয়ে ৪৯তম স্থানে যুক্তরাষ্ট্রের সল্ট লেক সিটি, ৭০ ও ৭১ স্কোর নিয়ে ৪৪ ও ৪৩তম স্থানে নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটন ডিসি, ৭৩ স্কোর নিয়ে ৩৮তম স্থানে কানাডার টরেন্টো, ৮০ স্কোর নিয়ে ২৭তম দূষিত শহর শিকাগো, ৯৯ স্কোর নিয়ে ১৫তম স্থানে ইতালির রোম এবং ১২৮ স্কোর নিয়ে তালিকার সপ্তম স্থানে রয়েছে মিলান।
তবে ১৬৮ একিউইউ স্কোর নিয়ে এই সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর ছিল ভারতের দিল্লি। ১৬২, ১৫৬ ও ১৩৭ স্কোর নিয়ে এর পরের তিন দূষিত শহর যথাক্রমে ইরাকের বাগদাদ, পাকিস্তানের লাহোর ও সৌদি আরবের রিয়াদ।
একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।
এডিস মশার বিস্তার রোধে তাৎক্ষণিক ফল পেতে ১৪ জুন থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন(ডিএসসিসি) এলাকায় দ্বিগুণহারে কীটনাশক প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এডিস মশার বিস্তার রোধে করণীয় নির্ধারণ ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও করোনা প্রতিরোধে ডিএসসিসি প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে আজ রাজধানীর ওয়াসা ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় অ্যাডাল্টিসাইডিং কার্যক্রমে (ফগার মেশিন দ্বারা পরিচালিত) বর্তমানে ব্যবহৃত ৩০ লিটার কীটনাশকের পরিবর্তে দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থাৎ ৬০ লিটার কীটনাশক প্রতিদিন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এ ছাড়া অঞ্চলভিত্তিক ডেঙ্গু মনিটরিং টিম গঠন ও জনবল ঘাটতি পূরণে উদ্যোগসহ জনগুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
সভায় মশক কর্মীদের সকাল ও বিকেলে নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা, সঠিক অনুপাতে কীটনাশক প্রয়োগ যাচাই, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা এবং মশক কর্মী দ্বারা বাড়ির ভিতর, আঙিনা ও ছাদের জমানো পানিসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক এবং সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে অঞ্চল ভিত্তিক ডেঙ্গু মনিটরিং টিম গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
এছাড়া, ডেঙ্গু ও করোনা বিষয়ে ডিএসসিসি সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফারিয়া ফয়েজকে ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা হিসেবে মনোনীত করা হয়।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি মাসের মধ্যে কীটতত্ত্ববিদদের সমন্বয়ে নগর ভবনে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে এবং প্রতিদিনের ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের হালনাগাদ তথ্য ডিএসসিসির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। মশক নিধনে জনবল ঘাটতি পূরণে নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখাসহ ডেঙ্গু ও করোনা রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় ডিএসসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. জিল্লুর রহমান, সচিব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. মাহাবুবুর রহমান তালুকদার, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত পারভীনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
আজ মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) এ কে এম মেহেদী হাসান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
গ্রেপ্তাররা হলেন- সেলিম (৪৫), রফিক (৪০), সাদ্দাম (৩০), উজ্জ্বল (৩২) ও শামীম (২৫)।
গতকাল সোমবার (৯জুন) মোহাম্মদপুর থানা এলাকার বিভিন্ন স্থানে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদের মধ্যে রয়েছে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ১জন, মাদক মামলায় ১জন, দূস্যতার মামলায় ১জন এবং অন্যান্য মামলায় ২জন।
গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
রাজধানীর পল্লবী থানার মিল্লাত ক্যাম্প এলাকায় পূর্বশত্রুতার জেরে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে পুলিশ খবর পেয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করেছে।
নিহত ওই যুবকের নাম রাকিবুল হাসান সানি (২৯)। ভোর ৪টা থেকে ৫টার মধ্যেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও মাদক চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সকাল সাতটার দিকে খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করেছি। পরে মরদেহ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে এবং পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ জানানো হবে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদক বিক্রির আধিপত্য বিস্তার ও দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে হত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে রাতের আঁধারে হত্যাকারীরা কীভাবে ঘটনাটি ঘটিয়েছে; তা এখনও স্পষ্ট নয়।
নিহতের পরিবারের দাবি, সানি একজন অটোরিকশাচালক ছিলেন। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, গেল রমজান মাসেও একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্র তার ওপর হামলা চালিয়েছিল।
ঘটনার পর থেকে মিল্লাত ক্যাম্প এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং এলাকায় পুলিশ ও সিআইডি সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।
গতকাল শনিবার পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে বন্ধ থাকার পর আজ রোববার থেকে ফের চালু হয়েছে মেট্রোরেল। তবে মেট্রোতে কোরবানির পশুর চামড়া, কাঁচা বা রান্না করা মাংস পরিবহন করা যাবে না।
রোববার সকাল ৮টা থেকে মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্রে জানা যায়, আজ (রোববার) প্রতি ৩০ মিনিট পরপর ট্রেন চলছে। আগামীকাল সোমবার থেকে মেট্রোরেল সরকারি ছুটির দিনের সময়সূচি অনুযায়ী চলাচল করবে।
গত মঙ্গলবার ডিএমটিসিএলের পরিচালক (প্রশাসন) এ কে এম খায়রুল আলমের স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মেট্রোরেলে কোরবানির পশুর চামড়া, কাঁচা বা রান্না করা মাংস পরিবহন করা যাবে না। মেট্রো স্টেশনের প্রতিটি গেটে যাত্রীদের যথাযথভাবে তল্লাশি করা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোনো যাত্রীর কাছে কাঁচা বা রান্না করা মাংস পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক তার মেট্রো স্টেশনে প্রবেশ আটকে দেওয়া হবে। মেট্রোরেলের নিরাপত্তা কর্মীদের এসব নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতেও বিজ্ঞপ্তিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য