স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় রাজপথ অচল করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে সরকারকে বাধ্য করার হুমকি দেন তারা।
রাজধানীর নীলক্ষেত মোড়ে রোববার দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা এ মানববন্ধন করেন। এ সময় তারা অনলাইনে ক্লাস নয় জানিয়ে আগামী ১ জুনের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি জানান।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় বারবার আশ্বাস দিয়েও স্কুল-কলেজ খোলার বিষয়ে কোনো প্রস্তুতি নিচ্ছে না। আমরা কোনো আশ্বাসের বাণী শুনতে চাই না। শিক্ষামন্ত্রী এমনভাবে কথা বলেন যেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় করোনার আশ্রয়স্থল। ধিক্কার জানাই এমন সিদ্ধান্তের।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী এক দিনের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে হবে। যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে না দেয়া হয় তাহলে রাজপথ অচল করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে বাধ্য করা হবে।’
আরেক শিক্ষার্থী ইসমাইল সম্রাট বলেন, ‘আমি শিক্ষামন্ত্রীকে বলতে চাই শুধু শিক্ষার্থীদের সাথে কেন প্রহসন করা হয়। আগামী ১ জুনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
‘শিক্ষামন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে টালবাহানা করে আসছেন। কেন শিক্ষার্থীদের সাথে বৈষম্য করা হয়। যদি ১ জুনের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে না দেয়া হয় তাহলে বৃহৎ কর্মসূচির ডাক দেয়া হবে।’
একই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও হল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে সমাবেশ হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সমাবেশ শেষে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে বিভিন্ন প্রতিবাদী গান ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন তারা।
আগামী ২১ ও ২৮ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং এর অধীনে সব কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর কার্যালয় খোলা থাকবে। শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও ওই দুই দিনও খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মূলত রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। গতকাল বুধবার এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে এনবিআর। গত ২ জুন আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। ২২ জুন বাজেট চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) মোট ৩ লাখ সাড়ে ২১ হাজার কোটি টাকা আদায় করেছে। এটি সাময়িক হিসাব। ভ্যাটের রিটার্ন দাখিলের হিসাবের এই সংখ্যা আরও বাড়বে। লক্ষ্য অর্জনে শুধু জুন মাসেই সব মিলিয়ে ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে হবে এনবিআরকে।
এনবিআরকে চলতি অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সংশোধিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। মূল লক্ষ্য ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ২০২৬-২৭ মেয়াদের জন্য ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) কাউন্সিলের ক্যাটাগরি ‘সি’-এর সদস্য হিসেবে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে।
আসন্ন এ নির্বাচনে বাংলাদেশের পক্ষে নরওয়েসহ অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থন কামনা করেছেন নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
গতকাল বুধবার বাংলাদেশে নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হকোন অ্যারাল্ড গুলব্র্যান্ডসেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে সাক্ষাৎ করতে এলে উপদেষ্টা এ সমর্থন কামনা করেন।
উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম মেরিটাইম কান্ট্রি। আমাদের ১টি গভীর সমুদ্র বন্দরসহ মোট ৪টি সমুদ্র বন্দর রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। এ দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ বিভিন্নভাবে নদনদী ও মেরিটাইম সেক্টরের ওপর নির্ভরশীল। বিদ্যমান তিনটি বৃহৎ সমুদ্র বন্দরের পাশাপাশি মাতারবাড়িতে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রায় চুয়ান্নটি প্রধান নদীবন্দর রয়েছে। হাজারের ওপর নদনদী দেশজুড়ে জালের মতো বিস্তৃত। দেশে ১০ হাজার কিলোমিটারের অধিক বিস্তৃত অভ্যন্তরীণ নৌপথ রয়েছে। দেশের দক্ষিণে বিশাল বঙ্গোপসাগরের অবস্থান আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বকে বৃদ্ধি করেছে। বাংলাদেশের তৈরি জাহাজ বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের মেরিটাইম সেক্টরকে আরো এগিয়ে নিতে এবং মেরিটাইম সেক্টরের বৈশ্বিক পর্যায়ে অবদান রাখতে বাংলাদেশ আইএমও কাউন্সিল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ঘোষণা করেছে।
এ সময় উপদেষ্টা বাংলাদেশের সামুদ্রিক ঐতিহ্য, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে কৌশলগত অবস্থান এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যে ক্রমবর্ধমান অবদান তুলে ধরেন।
তিনি জানান, মেরিটাইম সেক্টরে বাংলাদেশের শক্তিশালী অংশ গ্রহণ রয়েছে। এ সেক্টরের উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক নৌ-সংস্থার (আইএমও) সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মেরিটাইম সেক্টরের বিভিন্ন নীতি নির্ধারণী বিষয়েও বাংলাদেশের ভূমিকা রয়েছে। প্রতি বছর বাংলাদেশে ৫ হাজারের বেশি জাহাজ, ৯৫টি সমুদ্রগামী ও ২০ হাজারের বেশি উপকূলীয় জাহাজ আসে।
তিনি টেকসই সামুদ্রিক উন্নয়নের প্রতি দেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন এবং আইএমওয়ের কার্বনমুক্ত ভবিষ্যৎ লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশের দৃঢ় সমর্থনের কথা জানান।
তিনি আরও বলেন, জাহাজ পুনর্ব্যবহার খাতে বাংলাদেশ বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং ১২০ জনের বেশি নারীসহ ২১ হাজার প্রশিক্ষিত নাবিক দেশের সামুদ্রিক নিরাপত্তা, নাবিক কল্যাণ ও জেন্ডার অন্তর্ভুক্তিতে অবদান রাখছে। উপদেষ্টা বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জাহাজ শিল্পে নরওয়ে সরকারকে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
নরওয়ের রাষ্ট্রদূত বলেন, দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক, উন্নয়ন সহযোগিতা ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জাহাজ নির্মাণ ও পুনর্ব্যবহার খাতে নরওয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। নরওয়ের বিভিন্ন কোম্পানি ও জাহাজ শিল্পসহ অন্যান্য সেক্টরে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এ সময় রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের পরিবেশ সুরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, আইএমও কনভেনশন বাস্তবায়ন, ডিজিটালাইজেশন ও সমুদ্র দূষণ রোধে বাংলাদেশের সতর্ক অবস্থানের প্রশংসা করেন।
তিনি বাংলাদেশের জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পে পরিবেশ সুরক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
উপদেষ্টা আরো বলেন, মাতারবাড়ি ও মোংলা গভীর সমুদ্রবন্দরের ডকইয়ার্ড নির্মাণে নরওয়ে কারিগরি সহায়তা ও আর্থিক বিনিয়োগ করতে পারে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া ও ক্ষমতার পরিসর নিয়ে আজ আলোচনার শুরুতেই একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টা করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দ্বিতীয় পর্বের আলোচনার শুরুতে এই কথা জানান কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে সময় কম। যত দ্রুত সম্ভব সবাইকে একমত হয়ে জুলাই মাসের মধ্যে “জুলাই সনদ” চূড়ান্ত করতে হবে। কমিশনের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। এসবের মধ্যেও আলোচনা ফলপ্রসূ করতে সবার সাহায্য প্রয়োজন।’
আলী রিয়াজ জানান, যেসব বিষয়ে আজও সমঝোতা হবে না, সেগুলো নিয়ে আগামী সপ্তাহে ফের আলোচনায় বসা হবে।
আজ চতুর্থ দিনের আলোচনায় যে বিষয়গুলো থাকছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো— প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, সংবিধান ও রাষ্ট্রের মূলনীতি এবং নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণ।
গতদিন যেসব বিষয়ে সমঝোতা হয়নি, সেগুলো নিয়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে আজকের আলোচনার সূচনা হবে বলে জানান কমিশনের সহ-সভাপতি।
বৃহস্পতিবারের এই বৈঠকে বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জামায়াতে ইসলামীসহ প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। এনসিপির হয়ে রয়েছেন দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। আর জামায়াতের প্রতিনিধি হিসেবে আছেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন সরকারি সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি কিছু কিছু পত্রিকায় ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন সম্পর্কে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টার বক্তব্য বিচ্ছিন্নভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে। এপ্রেক্ষিতে বিভ্রান্তি দূর করার স্বার্থে জানানো যাচ্ছে যে, ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন সরকারি সিদ্ধান্ত হয়নি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আইন উপদেষ্টা তার সর্বশেষ বক্তব্যে বলেছেন, সময়মতো রাজনৈতিক দল, ছাত্রনেতৃত্ব ও বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে এবিষয়ে কি করা যায়; তা চিন্তা করা হবে।
‘তিনি তার বিভিন্ন সময়ের বক্তব্যেও বলেছেন, এধরনের কমিশন গঠনের কথা ভাবা যেতে পারে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকালে সংঘটিত গণহত্যার বিচার হওয়ার পর এবং গণঅভ্যুত্থানে পতিত দলটির নেতাদের অনুশোচনা প্রকাশ সাপেক্ষে। তার বক্তব্য ছিল, গণহত্যাকারীরা যে জাতি থেকে বিচ্ছিন্ন ও পরিত্যাজ্য এটি প্রতিষ্ঠার জন্যও এধরনের কমিশন গঠনের কথা ভাবা যায়,’ বলা হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
এরআগে গেল ১০ মে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘দেশে একটি ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠন করা হবে। এই লক্ষ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য প্রধান বিচারপতি ও আইন উপদেষ্টাসহ একটি প্রতিনিধি দল দক্ষিণ আফ্রিকাতে যাচ্ছে। ফিরে এসে এই কমিশন গঠন করার সময় বিশিষ্টজনের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’
রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশ, ২০২৫’ (দ্বিতীয় খসড়া) বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আইন মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তখন এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন লেখক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক পিনাকী ভট্টাচার্য। তিনি এই খসড়া আইনের বেশকিছু ধারা নিয়ে নিজস্ব মতামত তুলে ধরেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘অনন্তকাল হানাহানি করে এ জাতির মুক্তি হবে না, তাই জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। যারা গণহত্যার মতো, মানবতা বিরোধী অপরাধের মতো ঘৃণ্য অপরাধ করেছে, তারা খুব বেশি সংখ্যক না। তাদের উপযুক্ত ও যথেষ্ট পরিমাণ শাস্তির ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে। তারা যে এই জাতির মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন, সেটাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য হলেও ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন করতে হবে।’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘যারা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তাদের উপযুক্ত বিচার করে, তাদেরকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার জন্য যা যা করা যায়, সেটা করতে সরকার বদ্ধপরিকর। একই সাথে সরকার গুমসহ বিভিন্ন অপরাধের বিচারের জন্য আইন করে যাবে, যাতে এই অপরাধগুলো ভবিষ্যতে আর না হয়।’
টানা চতুর্থ দিনের মতো ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে আন্দোলন ও বিক্ষোভ করছেন সরকারি কর্মচারীরা। অধ্যাদেশটি বাতিল না হলে আরও কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ভবনের নিচে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীরা একত্রিত হয়ে আন্দোলন ও বিক্ষোভ করেন কর্মচারীরা। পরে সচিবালয়ের ভিতরে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা।
এ সময় বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যাননুরুল ইসলাম জানান, চাকরি অধ্যাদেশ পুরোপুরি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।
গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের পর সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের খসড়া বাতিলের দাবিতে গত ২৪ মে আন্দোলনে নামেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা।
কর্মচারীদের আন্দোলনের মধ্যেই ২৫ মে রাতে এই অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। অধ্যাদেশ অনুযায়ী, চার ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধের জন্য বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধু কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকরিচ্যুত করা যাবে।
সরকারি কর্মচারীরা অধ্যাদেশটিকে নিবর্তনমূলক ও কালো আইন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। । এটি বাতিল করার জন্য সচিবালয়ে বিক্ষোভ মিছিল, কর্মবিরতি, অবস্থান কর্মসূচি ছাড়াও কয়েকজন উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা।
রাজধানী ঢাকার ৩ হাজার ১৪৭টি বাড়ি থেকে গত ফেব্রুয়ারিতে নমুনা সংগ্রহ করে ৪৬৩ বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। সেই হিসাবে রাজধানীর ১৪ দশমিক ৭১ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার অস্তিত্ব রয়েছে।
গতকাল বুধবার বিকালে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে আইইডিসিআরের অডিটোরিয়ামে ডেঙ্গুরোগের বাহকের কীটতাত্বিক জরিপে (২০২৪-২০২৫) এই তথ্য উঠে এসেছে। আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন জরিপের তথ্য তুলে ধরেন।
জরিপের তথ্যে বলা হয়, এ বছর বহুতলা ভবনে এডিস মশার লার্ভা বেশি পাওয়া গেছে, যা ৫৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এছাড়া নির্মাণাধীন ভবন ১৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আলাদ ভবন ও আধাপাকা ভবনে ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ, পরিত্যক্ত ভবনে ২ দশমিক ৮ শতাংশ এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে।
ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের ১৩টি ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩১ ও ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি মিলেছে, যা ডেঙ্গু রোগের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে মশার ঘনত্ব পাওয়া গেছে।
ঝিনাইদাহ, মাগুরায় এডিস মশার ঘনত্ব বেশি
তাহমিনা শিরীন বলেন, ঢাকার বাইরে ঝিনাইদহ, মাগুরা, পটুয়াখালী ও পিরোজপুরে এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি বেশি। ঝিনাইদাহ শহর এলাকায় এডিসের জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২৭০টা বাড়ি পরিদর্শন করে ৫৪টি এডিসের লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ঝিনাইদহে ব্রুটো ইনডেক্স ৬০ পাওয়া গেছে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
পিরোজপুর ও মাগুরায় ১০০ শতাংশ ভেক্টর এডিস অ্যালবোপেক্টাস পাওয়া গেছে। প্লাস্টিক ড্রাম, প্লাস্টিক বাস্কেট ও দইয়ের খালি পাত্রে লার্ভার উপস্থিতি বেশি পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে পাহাড়ি টিলা কেটে প্রায় ১ একর জায়গাজুড়ে স্থাপিত হয়েছে ব্যক্তি মালিকানাধীন পার্ক। বাঁশখালী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের উত্তর জলদি এলাকায় স্থাপিত এই পার্কটির নামকরণ করা হয়েছে ‘আমানা পার্ক’। স্থানীয়দের অভিযোগ, নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে পাহাড়ি টিলার সঙ্গে প্রায় ৫ হাজার গাছ কেটে ওই পার্কটি নির্মাণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশখালী পৌরসভার মিয়ার বাজার থেকে পূর্বপাশে ২ কিলোমিটারের মধ্যেই চোখে পড়ে পাহাড়ি অঞ্চল। মিয়ার বাজার থেকে দুর্গম পথ ধরে পৌঁছাতে হয় সেই পার্কে। বর্ষায় যাতায়াতের রাস্তা চলার অযোগ্য হয়ে ওঠায় দর্শনার্থী তেমন চোখে পড়েনি। যে কয়জন চোখে পড়ল দম্পতি কিংবা জুটি বেঁধে আসা তরুণ-তরুণী। প্রবেশ মুখেই টিকেট কাউন্টার, প্রতি টিকিটের প্রবেশ মূল্য নেওয়া হচ্ছে ৩০ টাকা। টিলায় উঠার জন্য দৃষ্টিনন্দন সিড়ি করে দেওয়া হয়েছে। টিলার ওপরে বন্য পশুর আদলে গড়ে তোলা হয়েছে ভাস্কর্য। দর্শনার্থীদের বসার জন্য তৈরি করা হয়েছে কংক্রিটের আসন। আয়োজন বলতে এইটুকুই।
স্থানীয়রা জানান, ‘২০২৪ সালের শুরুর দিকে ওই স্থানে টিলা কেটে পার্ক স্থাপনের কাজ শুরু হয়। ১ বছর পর ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে এটি দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ধারণা করা হচ্ছে, চারপাশে বনাঞ্চল বেস্টিত পার্কটির জায়গায় এক সময় গাছ ছিল। স্থানীয় বাসিন্দারাও দাবি করেছেন, উক্ত জায়গায় প্রায় ৫ হাজারের মত বিভিন্ন প্রজাতির গাছগাছালি ছিল। স্বাভাবিকভাবে এই পাহাড়ি টিলা বনবিভাগের জায়গা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পার্কটির উদ্যোক্তা মোহাম্মদ মুমিন বলেন, ‘ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে আমি এই পার্ক স্থাপণ করেছি। এটি আমার মালিকানাধীন জায়গা। আমি গাছপালা ও পাহাড় কাটিনি। উপজেলা প্রশাসন কিংবা বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে এই স্থাপনা করেছেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি এবং প্রতিবেদককে কোন প্রকার অনুমতি পত্র তিনি দেখাতে পারেননি।
কলেজ পড়ুয়া এনামুল হক নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, ‘পার্কে উঠতি বয়সি ছেলেমেয়েদের আনাগোনা বেশি, আর ইউটিউবার-টিকটকার যায়। পার্ক হওয়ার মত কিংবা অবলোকন করার মত কিছুই তো নেই সেখানে। শুধু পাহাড়ের পরিবেশ নষ্ট করার জন্য এটি করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ এমন একটা জায়গায় পার্ক করার অনুমতি কীভাবে পেল? পাহাড়ের মোহনীয়তা তো প্রকৃতির দান এর বাইরে আর কিছু নেই।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস্ ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান বলেন, ‘পাহাড় কেটে পার্ক তৈরি করা এটি তো আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। স্থানীয় প্রশাসনকে হাইকোর্ট থেকেও নির্দেশ দেওয়া আছে, পাহাড় ও গাছ কাটলে কঠোর আইণানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। এরপরও যদি পাহাড় কাটা হয়, গাছ কাটা হয় তাহলে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হল। এসব কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
কলেজ শিক্ষক নুরুল মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘বন বিভাগ এবং উপজেলা প্রশাসনের অবহেলার সুযোগে একের পর এক পাহাড় বন ধ্বংস হচ্ছে। বাঁশখালীর একাধিক জায়গায় ভূমিদস্যুরা পাহাড় ও বনভূমি উজাড় করলেও উপজেলা প্রশাসন এবং বন বিভাগ এ বিষয়ে কখনোই পদক্ষেপ নেয় না।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা দীপান্বিতা ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি। জায়গা যদি ব্যক্তিমালিকানাধীন হয়, তবে এটি উপজেলা প্রশাসন দেখার কথা। যদি বন বিভাগের জায়গা হয় সেক্ষেত্রে বিষয়টা বন বিভাগ দেখবে।’
এ বিষয়ে চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের জলদি রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান শেখ বলেন, ‘বন অধিদপ্তর থেকে কোন প্রকার অনুমতি গ্রহণ করা হয়নি। তাকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বর্ষার পর জরিপ করে সীমানা চিহ্নিত করা হবে। সেখানে বন বিভাগের জায়গা থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
বাঁশখালীসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের বনাঞ্চলের পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে লোকালয়ে হাতির আনাগোনা বেড়ে যায় এবং অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের বনাঞ্চলের পরিবেশ ক্ষুন্ন হয় এমন ঘটনা চলমান থাকলে সামনে আরও বিপর্যয় ডেকে নিয়ে আসবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ প্রয়োজন।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জামশেদুল আলম বলেন, ‘আমি বাঁশখালীতে যোগদানের আগেই এটি তৈরি করা হয়েছে। পার্কটির সম্পর্কে গতকালকে আমি অবগত হলাম। ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জায়গা হলেও ব্যবসায়িক উদ্দেশে সেখানে স্থাপনা করলে উপজেলা প্রশাসনের অনুমতির একটি ব্যাপার-স্যাপার থাকে। আমি আরও খোঁজখবর নিয়ে দেখতেছি।’
মন্তব্য