মোহাম্মাদ নিজাম উদ্দিন। রাজধানীর দুটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক তিনি। গত বছরের শুরু দিকেও দুটি স্কুলের ৬০০ ছাত্রছাত্রী ও ৩০ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়ে বেশ ভালোই সময় কাটাচ্ছিলেন তিনি।
তবে করোনা মহামারির কারণে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো তার দুটি স্কুলও বন্ধ রয়েছে প্রায় ১৪ মাস ধরে। স্বাচ্ছন্দ্যের জীবন এখন তার কাছে অতীত। করোনা আসলেই তাকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। দুবেলা দুমুঠো খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাটাই এখন তার একমাত্র সংগ্রাম।
এই জীবনসংগ্রামে টিকতে না পারলে গ্রামে ফিরে যাওয়ার চিন্তায় আছেন তিনি, যদিও এই স্কুলের জন্যই গ্রামের শেষ সম্বলও খুইয়ে বসে আছেন।
নিজাম উদ্দিন ২০০৩ সালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আদাবরে স্থাপন করেন আঞ্জুমান রেসি. মডেল স্কুল। আর ২০১২ সালে গাবতলীতে দেন ইউিএনবি মডেল স্কুল। দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই প্রধান শিক্ষক তিনি।
করোনা মহামারিতে স্কুল দুটি বন্ধ হয়ে গেলে প্রথমে ধার করে কিছুদিন চললেও একটা পর্যায়ে তাকে আর কেউ সে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেননি। সুদের বিনিময়ে টাকা জোগাড়ের চেষ্টা করেও সফল হননি। এমন পরিস্থিতিতে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২৮ জন শিক্ষক ও দুই কর্মচারীর বেতন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। বাধ্য হন নিজের ভাড়া বাসা ছেড়ে পরিবার নিয়ে আঞ্জুমান স্কুলের দুটি কক্ষে উঠতে।
কিন্তু সংসার চলবে কীভাবে? সেই দুশ্চিন্তা থেকে গত বছরের মে মাসে স্কুলের পাশেই ছোট একটি দোকান ভাড়া নেন। নাম দেন সততা লন্ড্রি। কিন্তু শুধু লন্ড্রির কাজ করে সংসার চালাতে পারছিলেন না। একপর্যায়ে সেই লন্ড্রির দোকানেই তোলেন অল্প করে চাল-ডাল, বিস্কুট-চানাচুরের মতো পণ্য। এতেও কাজ না হওয়ায় সর্বশেষ এই রমজান মাসের শুরুতে সেই সততা লন্ড্রিতেই চা বিক্রি শুরু করেন এই শিক্ষক।
কেমন চলছে দিনকাল- জানতে চাইলে নিজাম উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ছেলেমেয়ে নিয়ে কোনোরকম দুবেলা খেয়ে বেঁচে আছি ভাই। জানি না আর কত দিন বাঁচতে পারব! এখনো প্রতি মাসেই ধারদেনা করতে হয়। তবে অনেকেই এখন আর ধার দিতে চায় না।’
তিনি জানান, দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন এবং লন্ড্রির দোকানের ভাড়া মাসে মোট ৪০ হাজার টাকা। দোকান থেকে আয় হয় ১০-১৫ হাজার টাকা। দোকান খরচ ৪ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে মাসে ৩০ হাজার টাকা ঘাটতি থাকে।
নিজাম উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টিকে থাকার জন্য ভাড়াবাসা ছেড়ে দিয়ে স্কুলেরই দুই রুমে পরিবার নিয়ে উঠে পড়েছি। আগামী জুন-জুলাই মাস পর্যন্ত দেখব। তারপর সব ছেড়ে রংপুরে গ্রামে চলে যাব ভাবছি।’
কন্নাজড়িত কণ্ঠে এই শিক্ষক বলেন, ‘আমার কথা না-ইবা বললাম। এই ঈদে ছেলেমেয়েকে কিছু দিতে পারিনি, ভাই। এমনকি ভালোমন্দ কিছু খাওয়াতেও পরি না। এমনও দিন গেছে দুই কেজি চালও কিনতে পারিনি।
‘আমরা খাই আর না খাই প্রতি মাসে ৪০ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়। অথচ আমার এই দোকানে প্রতি মাসে আয় হয় মাত্র ১০-১৫ হাজার টাকা, যা দিয়ে কোনো রকম সংসার চলে।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুটির জন্য গত এক বছরে গ্রামের বাড়ির শেষ সম্বলও খুইয়েছেন নিজাম উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘গত এক বছরে গ্রামে আমার নামে থাকা সব সম্পদ বিক্রি করা শেষ। ঢাকার দুই স্কুলভবনের মালিকই অন্য রকম মানুষ। তারা ভালো বলে গত পাঁচ-ছয় মাস ভাড়া নেননি। স্কুল খুললে সব দিয়ে দেব বলে কথা দিয়েছি। তারাও আপত্তি করেননি।
‘দুই-আড়াই লাখ টাকা দেনা হয়ে গেছি। এই ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে চলছি। ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখছি, ভাই।’
লন্ড্রির দোকান দেয়ায় আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতরা ‘নানা কথা’ বললেও তাতে এখন আর কিছু যায়-আসে না নিজাম উদ্দিনের। সবকিছু আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘লন্ড্রির দোকান দিয়েছি বলে আত্মীয়স্বজন আর পরিচিত মানুষ অনেক রকম কথা বলে। আগে লজ্জা পেতাম। এখন আর পাই না। লজ্জা পেলে তো আর আমার জীবন চলবে না।
‘প্রথমে লন্ড্রির দোকান দিলাম। সেখান থেকে ৫-৭ হাজার আয় হতো। পরে দোকানে ছোট পরিসরে মুদিখানার মাল উঠালাম। তাতেও চলে না। তাই কয়েক মাস আগে দোকানের সামনে চা বানানোর টেবিল বসিয়েছি। এখন দেখি আর কত দিন চালাতে পারি। এখন সব আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিয়েছি।’
নিজাম উদ্দিন তার কষ্টের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘এমনও দিন গেছে টাকার অভাবে ডাক্তারের কাছে মেয়েকে নিয়ে যেতে পারিনি। তবে ছেলেমেয়ে এখন একটু বোঝে। তাই তারাও আর বেশি আবদার করে না। মেয়ের বয়স ১৪ বছর। আর ছেলের ৩ বছর। ছেলে মাঝে মাঝে দোকানে এসে এটা-ওটা আবদার করে। চকলেট বা বিস্কুট হাতে দিলে আর কিছু বলে না। চুপচাপ চলে যায়।’
জানুয়ারি মাসে স্কুল খুলতে পারে- এমন খবরে সুদিনের আশায় নিজাম উদ্দিন দুই লাখ টাকার বেশি খরচ করেন প্রায় বছর ধরে পড়ে থাকা স্কুল দুটিতে। এই দুই লাখ টাকা তিনি জোগাড় করেন সুদ দেয়ার শর্তে। এটাই এখন তার গলার কাঁটা হয়ে বিঁধছে।
নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘আমার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়ে গেছে জানুয়ারি মাসে। ওই সময় শুনলাম সরকার স্কুলগুলো খুলে দেবে। এ কারণে দুই লাখ টাকা ধার করে স্কুল সংস্কার করে খোলার প্রস্তুতি নিলাম। পরে তো আর স্কুল খুলল না। এই ধকল এখন আর কাটিয়ে উঠতে পারছি না।’
আরও পড়ুন:দুর্নীতিগ্রস্ত কোনো ব্যক্তিকে নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেন, প্রতিটি অপরাধ ও দুর্নীতির সঙ্গে রাজনীতির যোগসূত্র থাকে। শীর্ষ পর্যায়ে দুর্নীতি রেখে সামগ্রিকভাবে দেশকে ভালো করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সততা আনতে পারলেই দেশের দুর্নীতি দমনে পরিবর্তন আসবে। আমরা জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে সৎ লোককে চাই।
গতকাল মঙ্গলবার দুদকের সম্মেলনকক্ষে রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশন (র্যাক) সদস্যদের এক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আব্দুল মোমেন বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেন কোনো দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি মনোনয়ন না পায়, এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনে মনোনয়ন বেচাকেনা বন্ধ করতে হবে। এটি যদি বন্ধ না করা যায়, তাহলে দুর্নীতি কখনোই নির্মূল হবে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে বহু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী দুর্নীতির মাধ্যমে দেশকে প্রায় সর্বস্বান্ত করে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন। এসব দুর্নীতির তদন্ত দুদক ভয়ভীতিহীনভাবে চালিয়ে যাচ্ছে।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যসহ পলাতক দুর্নীতিবাজদের দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশসহ বিভিন্ন আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরানো কঠিন হলেও দুদকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এ বিষয়ে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন দুদক সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীম, মহাপরিচালক আবদুল্লাহ-আল-জাহিদ এবং আবু হেনা মোস্তফা জামান।
চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জাসদের সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি আগামী ২৩ অক্টোবর। এছাড়া ইনুর সঙ্গে তার আইনজীবীর তিন দিন দুই ঘণ্টা করে সাক্ষাতের অনুমতি দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
ইনুর আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গতকাল মঙ্গলবার এই আদেশ দেন। ইনুর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী নাজনীন নাহার।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় কুষ্টিয়ায় ছয়জনকে হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ রয়েছে হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে, মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেক মামলায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফসহ চারজনকে আগামী ২৩ অক্টোবরের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় জড়িত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য আসামি চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দাখিল করেছে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গত ১৪ আগস্ট মামলায় শেখ হাসিনাসহ মোট ২৮৬ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে এই প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ওই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আসামিদের অনুপস্থিতিতেই বিচারকাজ শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
গতকাল মঙ্গলবার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এই আদেশ দেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৭৩ জন ও অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা রুজু করে সিআইডি। বিষয়টি সিআইডি থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
সিআইডি জানায়, মামলা রুজুর পর সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, সার্ভার ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথ্য সংগ্রহ এবং ফরেনসিক বিশ্লেষণ কার্যক্রম শুরু করে সিআইডি। পাশাপাশি সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় সকল সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করে। এভাবে পাঁচ মাসেরও কম সময়ে শেখ হাসিনাসহ মোট ২৮৬ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে সিআইডি।
সিআইডি আরও জানায়, ২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর জুমে একটি মিটিং করে ‘জয় বাংলা ব্রিগেড’ নামের একটি অনলাইন প্লাটফর্ম। সেখানে অংশগ্রহণ করেন দেশ ও বিদেশ থেকে অনেকেই। সিআইডি জনাতে পারে, ওই মিটিংয়ে বর্তমান সরকারকে উৎখাতের আহ্বান, গৃহযুদ্ধ সৃষ্টির পরিকল্পনা এবং পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠার ঘোষণাসহ রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য রয়েছে। এসব তথ্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের কাছে অভিযোগ দায়েরের জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত মার্চে সিআইডিকে অনুমতি দেয়।
এসব তথ্য-উপাত্ত পরীক্ষার জন্য পাঠালে সেখানে শেখ হাসিনা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ড. রাব্বি আলমসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের এই রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পায়। অন্যান্য মামলায় ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য সিআইডি বিজ্ঞ আদালতকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার মাধ্যমে মোট ৯১ জনের গ্রেপ্তার নিশ্চিত করে। এছাড়া বাকি ১৯৫ জন আসামি পলাতক রয়েছেন।
গতকাল মামলাটির শুনানি ধার্য ছিল। অধিকাংশ আসামি অনুপস্থিত থাকায় আদালত জাতীয় পত্রিকাতে বিজ্ঞাপন প্রকাশের মাধ্যমে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচারিক আদালতে বিচারকার্য পরিচালিত হওয়ার আদেশ দেন।
রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে একটি পোশাক কারখানা ও একটি কেমিক্যাল গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় এখনো অনেকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনেরা। অগ্নিকাণ্ডের পর ঘটনাস্থল ও আশপাশের হাসপাতালগুলোতে নিখোঁজ স্বজনদের খুঁজে ফিরছেন অসংখ্য মানুষ। অনেকে প্রিয়জনের ছবি হাতে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এই আগুনের সূত্রপাত ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম গণমাধ্যমকে বলেন, রূপনগরে আগুনের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ জন হয়েছে। প্রথমে ৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল, পরে আবার ৭ জনের মরদেহ নতুন করে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিসের ডিরেক্টর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, গার্মেন্টস ভবনের আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে কেমিক্যাল ভবনের আগুন এখনো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং উদ্ধারে বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরাও কাজ করছে। পোশাক কারখানার ভেতরে ঢুকতে পারলেও এখনো রাসায়নিকের গুদামে প্রবেশ করা যায়নি। এই অবস্থায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। সকল লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
এর আগে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে ফায়ার সার্ভিসের কাছে আগুনের সংবাদ আসে। সংবাদ পাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ১১টা ৫৬ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
ঘটনাস্থলে গিয়ে শিয়ালবাড়িতে চারতলা ভবনে থাকা ‘আনোয়ার ফ্যাশন’ নামের একটি পোশাক কারখানা এবং তার পাশে থাকা টিনশেড ঘরে রাসায়নিকের গুদামে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পানি ছিটিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন।
এর মধ্যে কারখানা থেকে ৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন। পরে সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ জন হওয়ার কথা জানায় ফায়ার সার্ভিস।
বিকেলে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘তল্লাশি অভিযান এখনো চলমান। পাশের যে কেমিক্যাল গোডাউন রয়েছে, সেখানে এখনো আগুন জ্বলছে। এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ওখানে কাউকে যেতে দিচ্ছি না। আমরা সর্বোচ্চ প্রযুক্তি দিয়ে, ড্রোন দিয়ে এসব কার্যক্রম করছি।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, আগুনের সূত্রপাত এখনো জানা যায়নি। যারা শুরুতে আগুন নেভাতে এসেছেন, তারা রাসায়নিকের গুদাম ও গার্মেন্টস দুই দিকেই আগুন দেখেন।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, পোশাক কারখানার নিচ তলায় ‘ওয়াশ ইউনিট’ রয়েছে। সেখানে প্রথম আগুন লাগে। সেই আগুন পাশের রাসায়নিকের গুদামে ছড়িয়ে পড়লে সেখানে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর আগুন চার তলা পোশাক কারখানার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
আগুন লাগার পর কারখানা থেকে শ্রমিকেরা নানাভাবে বের হয়ে আসার চেষ্টা করেন। এর মধ্যেই অনেকে আটকা পড়েন।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম বলেন, রাসায়নিকের গুদামে ব্লিচিং পাউডার, প্লাস্টিক, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ছিল প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
ঘটনার পর থেকে রাসায়নিকের গুদামের মালিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের জানান ফায়ার ব্রিগেডের পরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, দেখে মনে হচ্ছে, এই রাসায়নিকের গুদামের অনুমোদন নেই। যাচাই-বাছাই করে তদন্ত করে বিস্তারিত পরে জানা যাবে।
এদিকে এ ঘটনায় কেন এত মৃত্যু হলো, প্রাথমিকভাবে তার কয়েকটি কারণ জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তাদের ধারণা, কারখানার পাশে থাকা রাসায়নিকের গুদামে বিস্ফোরণের পর সেখান থেকে বিষাক্ত সাদা ধোঁয়া বা টক্সিক গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে, যা ছিল প্রাণঘাতী।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, ‘আগুন খুব দ্রুত ‘ডেভেলপ স্টেজ’ বা তৃতীয় ধাপে পৌঁছে যায়, ফলে ভুক্তভোগীরা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন।’ এছাড়া যে পোশাক কারখানার ভবন থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়েছে, সেই ভবনের ছাদের দরজায় দুটি তালা লাগানো ছিল। এর ফলে কারখানার শ্রমিকেরা কেউ ওপরে উঠতে পারেননি। এছাড়া পোশাক কারখানার ভবন ও রাসায়নিকের গুদাম কোনোটিরই অগ্নিনিরাপত্তা সনদ ছিল না বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
কারখানা ভবন ও রাসায়নিকের গুদামে আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং কারখানা ভবনে তল্লাশি অভিযান চলার মধ্যে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।
পোশাক কারখানা ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে জানিয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, রাসায়নিকের গুদামের আগুন এখনো জ্বলছে। সেখানে এখনো ধোঁয়া ও আগুনের শিখা দেখা যাচ্ছে। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগবে। ওই গুদামে ৬-৭ ধরনের রাসায়নিক ছিল।
ঘটনাস্থল থেকে ১৬টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, মরদেহগুলো পোশাক কারখানার ভবনের দোতলা ও তিন তলায় বিভিন্ন স্থানে পাওয়া গেছে। মরদেহগুলোর অবস্থা এমন যে সেগুলো ডিএনএ টেস্ট ছাড়া শনাক্ত করা সম্ভব নয়।
কীভাবে এই আগুনের সূত্রপাত, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। এর আগে বিকেলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছিলেন, যারা শুরুতে আগুন নেভাতে এসেছেন, তারা রাসায়নিকের গুদাম ও পোশাক কারখানার দুই দিকেই আগুন দেখেছেন।
তবে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, রাসায়নিকের গুদামের পাশে একটি ‘ওয়াশ ইউনিট’ রয়েছে। সেখানে প্রথম আগুন লাগে। সেই আগুন পাশের রাসায়নিকের গুদামের ছড়িয়ে পড়লে সেখানে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর আগুন পোশাক কারখানার ওই পাঁচ তলা ভবনে ছড়িয়ে পড়ে।
ওই কারখানা ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় আরএন ফ্যাশন নামের একটি পোশাক কারখানা রয়েছে। সেখানে গেঞ্জি তৈরি করা হতো। দোতলায় ছিল টি-শার্ট প্রিন্ট ফ্যাক্টরি, নাম স্মার্ট প্রিন্টিং। আর পাঁচ তলায় বিসমিল্লাহ ফ্যাশন নামে আরেকটি প্রিন্ট কারখানা চলছিল। আগুন লাগার পর কারখানা ভবন থেকে শ্রমিকেরা নানাভাবে বের হয়ে আসার চেষ্টা করেন। এর মধ্যেই অনেকে আটকা পড়েন।
ঘটনার পর থেকে রাসানিকের গুদামের মালিক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে ফায়ার ব্রিগেডের পরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, পোশাক কারখানা ও রাসায়নিক গুদামটির কোনো ফায়ার সেফটি প্ল্যান বা লাইসেন্স ছিল না।’
প্রধান উপদেষ্টার শোক
অগ্নিকাণ্ডে ১৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এক শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা নিহত ব্যক্তিদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এই দুর্ঘটনায় নিরীহ মানুষের মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও হৃদয়বিদারক। আমরা এই শোকের সময়ে তাদের পরিবারের পাশে আছি।’
প্রধান উপদেষ্টা অগ্নিকাণ্ডে আহত ব্যক্তিদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দেন।
তারেক রহমানের শোক
মিরপুরে আগুনের ঘটনায় ১৬ জনের প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই শোকবার্তা দেন। শোকবার্তায় তারেক রহমান নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং আহতদের দ্রুত পূর্ণ সুস্থতার দোয়া করেন।
তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তার মান নিশ্চিত করার জন্য আমাদের অবশ্যই কাজ করতে হবে। যাতে অবহেলার কারণে আর কোনো প্রাণহানি না ঘটে। সরকারকে স্বচ্ছতার সঙ্গে অগ্নিদুর্ঘটনার তদন্ত করার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান দায়ীদের অবিলম্বে জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানান।
তিনি বলেন, ‘প্রিয়জনদের হারানো অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও হৃদয়বিদারক। আমরা এই শোকের সময়ে তাদের পরিবারের পাশে আছি।’
শেরপুরের নকলায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের বসতবাড়ি ও মাঠে চাষযোগ্য জমিতে আগাম শীতকালীন শাক-সবজি আবাদের জন্য বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার উপজেলা পরিষদ চত্বরে বীজ ও সার বিতরণের উদ্বোধন করেন নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম।
অনুষ্ঠানে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার মুরসালিন মেহেদী বলেন, বীজ ও সার মাঠে আবাদ না করে যদি কোনো কৃষক বিক্রির উদ্দেশ্যে অসদুপায় অবলম্বন করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওই প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ২৩০ কৃষকের মাঝে জনপ্রতি ৯ প্যাকেট করে মোট ২ হাজার ৭০ প্যাকেট সবজির বীজ এবং ৪০৫ কৃষকের মাঝে মাঠে চাষযোগ্য ২০ শতাংশ জমির জন্য লাউ, বেগুন, শসা, মিষ্টিকুমড়াসহ যেকোনো সবজির ১ প্যাকেট করে বীজসহ ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার দেওয়া হবে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় যৌথ অভিযানে প্রায় ১৪ কোটি টাকার অবৈধ চায়না দুয়ারি ও কারেন্ট জাল জব্দ করেছে কুষ্টিয়া ৪৭ বিজিবি ব্যাটালিয়ন।
গত সোমবার সন্ধ্যায় বিজিবি জানায়, গত ১১ ও ১২ অক্টোবর উপজেলার সীমান্তবর্তী আশ্রায়ণ বিওপির আওতাধীন এলাকায় অভিযানকালে উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চল্লিশপাড়া ও মদনের ঘাট এলাকায় ৩৫ হাজার কেজি অবৈধ চায়না দুয়ারি ও কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় ১৪ কোটি টাকা। পরে গত সোমবার দুপুরে এসব অবৈধ জাল ধ্বংস করেন পরিচালক (অপারেশন) যশোর সদর দপ্তর, দক্ষিণ-পশ্চিম রিজিয়ন লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মিজানুর রহমান শিকদারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব মুর্শেদ রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হাই সিদ্দিকী ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হোসেন আহমেদ।
রাঙামাটির বিলাইছড়িতে নদীতে পড়ে অন্তঃসত্ত্বা এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল নয়টায় এ ঘটনা ঘটে। নিখোঁজ হওয়ার দুঘণ্টা পর স্থানয়ীরা মাছের জাল দিয়ে নিহত নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে। নিহত নারী হলেন লতা মার্মা (৩৩)। তিনি কেংড়াছড়ি গ্রামের মিলন কান্তি চাকমার স্ত্রী। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
বিলাইছড়ি থানার অফিসার ভারপ্রাপ্ত মানস বড়ুয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন লাশ উদ্ধার করা হয়েছে আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হবে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে কেংড়াছড়ি থেকে নৌকাযোগে বিলাইছড়ি বাজার আসার পথে কেরণছড়ি এলাকায় এসে নদীতে পড়ে নিখোঁজ হন। পরবর্তীতে স্থানীয়রা মাছের জাল দিয়ে তল্লাশির পর বেলা সারে এগারটায় তার মরদেহ উদ্ধার হয়। নিহতের স্বামী মিলন কান্তি চাকমা জানিয়েছেন তার স্ত্রী তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। তাদের সংসারে দুই মেয়ে এক ছেলে রয়েছে।
মন্তব্য