ঘাটতি না উদ্বৃত্ত বাজেট – এ বিতর্ক বহু পুরোনো। বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই বর্তমানে ঘাটতি বাজেট করা হয়। বাংলাদেশ শুরু থেকে এ নিয়ম অনুসরণ করে জাতীয় বাজেট ঘোষণা করে আসছে।
তবে এবারের বাজেটে যে ঘাটতি ধরা হয়েছে, তা সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। মূলত, করোনাকালে ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতি চাঙা করতে ধার করে বেশি ব্যয়ের লক্ষ্য নিয়ে ঘোষণা করা হয় প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট।
তত্ত্ববধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক অর্থসচিব ড. আকবর আলি খান রচিত বাংলাদেশে বাজেট অর্থনীতি ও রাজনীতি বইয়ে বলা হয়েছে: ‘ইতিহাস বলে বেশির ভাগ সময়ই রাজাদের অর্থাভাব ছিল। আয় ও বেশি ব্যয়ের ফলে আর্থিক অনটনের সমস্যা দেখা যেত।’
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এখন ঘাটতি বাজেট করা হয়। বাংলাদেশে বাজেট ঘাটতি সহনীয় থাকলেও করোনার অভিঘাতে তা বেড়ে যায়। এ ছাড়া আমাদের রাজস্ব ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল, যে কারণে বাজেট অর্থায়নে ধার বা ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে।
বিশ্বের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদদের মধ্যে অর্থনীতিতে ঘাটতির প্রভাব নিয়ে তর্ক আছে। যারা এর বিপক্ষে, তাদের মতে, বাজেট ঘাটতি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বোঝা সৃষ্টি করে। কারণ, ঋণের প্রতিটি টাকা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শোধ করতে হবে।
তাদের মতে, অর্থনীতিকে চাঙা করতে হলে কর হার কমিয়ে বেসরকারি খাতকে সুবিধা দিতে হবে, যাতে তারা বিনিয়োগে উৎসাহিত হয়।
অপরদিকে যারা ঘাটতি বাজেটের পক্ষে তাদের মতে, ঘাটতি হলেই মূল্যস্ফীতি হবে না। বরং ব্যয় বেশি করলে উৎপাদন কর্মকাণ্ড বেগবান হবে। ফলে অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে। বাড়বে কর্মসংস্থান।
ড. আকবর আলি খান বলেন, ‘বাজেট ঘাটতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এই ঘাটতি শুধু দায় সৃষ্টি করে না। ঘাটতি দিয়ে যদি অবকাঠামো খাতে ব্যয় করা হয়, তা হলে আয়ও সৃষ্টি করতে পারে।’
ঋণের সুদের পেছনে ব্যয়
বাজেটের বড় একটি অংশ ব্যয় হয় ঋণের সুদ পরিশোধে। এটা এখন মোট বাজেটের ১৮ শতাংশের বেশি। প্রতি বছর বাজেটে এই বরাদ্দ বাড়ছেই। এবার রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে সুদ পরিশোধে মোট বরাদ্দ দেয়া হয় ৬৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। এর ৯০ শতাংশ দিয়ে অভ্যন্তরীণ ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করা হবে। বাকি ১০ শতাংশ বিদেশি ঋণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেটে সামগ্রিকভাবে ঘাটতি ধরা হয়েছে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ, টাকার অঙ্কে যা ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এটি এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিয়ে এই ঘাটতি পূরণ করা হবে।
যে অর্থবছরটি শেষ হতে যাচ্ছে, তাতেও ঘাটতি জিডিপির ৬ শতাংশ। তবে অর্থমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, চূড়ান্ত হিসাব শেষে এই ঘাটতি কমবে।
কারণ, অর্থবছরের শুরুতে সরকার ব্যয়ের বিশাল যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, শেষ পর্যন্ত তা খরচ করতে পারবে না।
সরকারি অর্থ ও বাজেট ব্যবস্থাপনা
জিডিপির সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ ঘাটতি ধরে বাংলাদেশে বাজেট প্রণয়নের রেওয়াজ আছে। এতদিন তা মেনেই বাজেট ঘোষণা করে আসছিল সরকার।
কিন্তু করোনাকালে এই নিয়মের ব্যতয় ঘটিয়ে ঘাটতি ৬ শতাংশের বেশি ধরে দুটি বাজেট দেয়া হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে: বেশি বেশি খরচ করে মন্দায় অচল অর্থনীতিকে চাঙা করা।
বাজেট বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত পাঁচ অর্থবছরে ঘাটতি মেটাতে ঋণের সুদ পরিশোধে মোট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা, যা দিয়ে ৯টি পদ্মা সেতু বানানো যেত। পাঁচ বছরে এ খাতে মোট বরাদ্দের পরিমাণ বিদ্যমান বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির চেয়ে বেশি।
পাঁচ বছরে ঘাটতির চিত্র
অর্থমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি মেটাতে ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ বরাদ্দ দেয়া হয় ৬৩ হাজার ৮২৩ কোটি কোটি টাকা।
এতে মূল বাজেটের আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা এবং ঘাটতি জিডিপির ৬ শতাংশ বা ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরে সুদ পরিশোধে বরাদ্দ ছিল ৫৮ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা। ওই অর্থবছর মূল বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা এবং ঘাটতি ৫ শতাংশ।
সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের শেষ সময়ে অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মূল বাজেটের আকার ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা।
ওই বাজেটে সুদ পরিশোধে বরাদ্দ ছিল ৪৯ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। আর ঘাটতি ছিল ৪ দশমিক ৯ শতাংশ।
ওই বাজেটকে তার জীবনের শ্রেষ্ঠ বাজেট বলে দাবি করেছিলেন মুহিত।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে সুদ পরিশোধ বাবদ বরাদ্দ ছিল ৪১ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। মূল বাজেটের আকার ছিল ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা এবং ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশ।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, মূল বাজেট ঘোষণার পর সংশোধন করা হয়। অর্থবছর শেষে দেখা যায়, সংশোধিত বাজেটও ঠিকমতো খরচ হয় না। ফলে প্রকৃত খরচেরে পর ঘাটতি কমে আসে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণে দুর্বলতার কারণেই বাজেট ঘাটতি পূরণে বেশি ঋণ নিতে হচ্ছে সরকারকে। এতে উদ্ধিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
কারণ, করোনাকালে সরকারের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, ভোগ ব্যয় বাড়িয়ে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি চাঙা করা। এ জন্য ঋণের টাকা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষাসহ অবকাঠামো খাতে ব্যয় করার পরামর্শ দেন তারা।
সাবেক অর্থউপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘ঘাটতি বেশি হওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ দেখছি না আমি। এখন আমাদের বেশি বেশি খরচ করতে হবে ধার করে। তবে এই টাকা ব্যয় করতে হবে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অবকাঠামো খাতে। এর ফলে নতুন নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
বিদেশি ঋণ সস্তা
বিদেশি ঋণের সুদ হার নমনীয় হওয়ায় এটি বেশি করে সংগ্রহের পরামর্শ দেন অর্থনীতিবিদরা। যে পরিমাণ ঋণ জমেছে, তার বিপরীতে বছরে গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি ডলার সুদ পরিশোধ করতে হয় সরকারকে।
তবে এ কথাও সত্যি, বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বেড়েছে। এ কারণে ঋণের পরিমাণও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিআরআই-এর নির্বাহী পরিচালক ও আইএমএফ-এর সাবেক কর্মকর্তা ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘দেশীয় উৎস থেকে নেয়া ঋণের সুদের হার অনেক বেশি, গড়ে ১১ থেকে সাড়ে ১২ শতাংশ। আর বিদেশি ঋণের জন্য মাত্র ১ থেকে দেড় শতাংশ হারে সুদ দিতে হয়। অর্থাৎ দেশীয় ঋণের খরচ অনেক বেশি। এ কারণেই দেশি ঋণে সুদ অনেক বেড়ে যায়।’
সক্ষমতা বেড়েছে
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা বলেন, ঋণ পরিশোধের সক্ষমতার জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়িয়েছে বাংলাদেশ। দেশের ক্রেডিট রেটিংও ভালো।
বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমাদের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা অনেক ভালো। ঋণ-অনুপাত জিডিপির ৪০ শতাংশের নিচে। এ ক্ষেত্রে ভারত ও চীনের চেয়ে আমরা ভালো অবস্থানে আছি।
ইআরডির এক কর্মকর্তা বলেন, বিদেশি ঋণ একদিকে বাড়ছে, অন্যদিকে বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতাও কয়েক গুণ বেড়েছে। বাংলাদেশ কখনও খেলাপি হয় নি। ঋণ পরিশোধে সক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে উন্নয়ন সহযোগীরা ঋণ দিতে আগ্রহী।
আরও পড়ুন:দেশে চলমান ডলার সংকট সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এরপরও সংকটের সমাধান হচ্ছে না। বাজার নিয়ন্ত্রণে রিজার্ভ থেকে ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রি করছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
এমন পরিস্থিতিতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে ৫৩৩ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ডলার। মূলত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার বিক্রির কারণে রিজার্ভ কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ২৭ মার্চ পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। এক সপ্তাহ আগে বা ২০ মার্চ তা ছিল ১৯ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার।
মার্চের প্রথম সপ্তাহে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২১ বিলিয়ন ডলারের উপরে। এরপর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধ এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রির ছাড়পত্রের পর রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর আমদানি বিল মেটাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ডলার সংকট কাটাতে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি কারেন্সি সোয়াপ কার্যক্রম চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আওতায় প্রায় ১৭৫ কোটি ডলার রেখে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকার বেশি তারল্য সহায়তা নিয়েছে সংকটে থাকা কয়েকটি ব্যাংক।
ব্যাংকগুলোর জমা রাখা ডলার বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভে যোগ হচ্ছে। এর মাধ্যমে রিজার্ভ বাড়ানোর চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে চলতি মাসে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন (আকু) ও অন্যান্য আমদানি বিল পরিশোধের চাপে রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে।
ব্যাংকিং শিল্প-সংশ্লিষ্টরা সংবাদ মাধ্যমেক বলেন, সংকটের কারণে রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রচুর ডলার বিক্রি করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে মুদ্রা অদলবদলের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও ডলার ফেরত নিচ্ছে।
আরও পড়ুন:ব্যাংকিং নিয়মে নয়, নিজের বানানো নিয়মে ব্যাংকের কার্যক্রম চালাতেন সিরাজগঞ্জের বেলকুচির জনতা ব্যাংকের তামাই শাখার ব্যবস্থাপক আল আমিন। নিজের ইচ্ছেমতো গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন ও জমা দিতেন।
এদিকে ব্যাংকের ক্যাশ ভল্টের ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার হদিস এখনও মেলিনি।
বুধবার সকালে জনতা ব্যাংকের তামাই শাখায় গিয়ে দেখা যায়, গ্রাহকদের হিসাবে থাকা টাকা তাদের অজান্তে তুলে নেয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি ক্যাশ ভল্টের ওই পরিমাণ টাকাই শেষ কথা নয়? গ্রাহকদের অজান্তে তাদের হিসাবে জমা বিপুল পরিমাণ টাকাও হাতিয়ে নেয়া হয়েছে?
শাখাটিতে অবস্থানকালে সাংবাদিকদের কথা হয় তামাই বাজারের মেসার্স মুসলিম উইভিং ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারী আব্দুল মোতালেব জোয়ারদারের সঙ্গে।
তিনি জানান, তার একটি ৪৮ লাখ টাকার সিসি লোন করা ছিল। তবে তিনি এখনও লোনটি উত্তোলন করেননি। অথচ তার ব্যাংক হিসাব ঘেটে দেখা যায় যে তিনি পুরো টাকাই উত্তোলন করেছেন। তার এই টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে তার সিরিয়ালের চেক ব্যবহার করা হয়নি। অন্য একটি চেকে ওই পরিমাণ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
এমন ঘটনায় মোতালেব জোয়ারদার হতবাক! এ অবস্থায় তার করণীয় কী হতে পারে বুঝতে পারছেন না।
শুধু আব্দুল মোতালেব নন, আরও অনেক গ্রাহকের ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা ঘটেছে। একই এলাকার ব্যবসায়ী চান টেক্সটাইলের আকন্দের হিসাব থেকে তার অজান্তেই ১০ লাখ টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। আল ফারুক স্টোরের শহিদুল ইসলামের ২৪ লাখ টাকার সিসি লোনের মধ্যে তার অজান্তেই চেক জালিয়াতে করে ৫ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
ব্যক্তিগত সঞ্চয় হিসাবেও এমন জালিয়াতির ঘটনা উঠে আসছে। ঝিন্না মোল্লার ব্যক্তিগত হিসাবে ৪ লাখ ৩৫ হাজার ৯১০ টাকা থাকার কথা। কিন্তু ওই হিসাবে আছে মাত্র এক লাখ ৫ হাজার ১১২ টাকা।
তাৎপর্যের বিষয় হল, এসব লেনদেনের ক্ষেত্রে গ্রাহকরা তাদের মোবাইল ফোনে এসএমএস পাওয়ার কথা থাকলেও কোন এসএমএস আসেনি। গ্রাহকরা এ বিষয়ে ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বললে তিনি তাদেরকে জানান- সার্ভারে ত্রুটি থাকার কারণে গ্রাহক এসএমএস পাচ্ছেন না।
বুধবার সকালে দেখা যায়, তামাই শাখার নতুন ব্যবস্থাপক কামরুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের পাঁচজন সদস্য বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছেন।
জনতা ব্যাংক হেড অফিসের এজিএম সাদিকুর রহমানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে আরও রয়েছেন- ব্যাংকের এসপিও মোস্তফা কামাল, সিনিয়র অফিসার মাসুদুর রহমান, প্রিন্সিপাল অফিসার শরীফ মোহাম্মদ ইশতিয়াক ও এরিয়া ম্যানেজার সঞ্জিত কুমার।
এর আগে ২৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের বগুড়া অফিসের যুগ্ম পরিচালক এস এম সাজ্জাদ হোসেনকে প্রধান করে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তামাই শাখার ক্যাজুয়াল পিয়ন শহিদুল ইসলাম জানান, গত ৭ /৮ মাস ধরে শাখা ব্যবস্থাপক আল আমিনের কথা অনুসারে তিনি বিভিন্ন গ্রাহকের চেকে নিজে স্বাক্ষর দিয়ে টাকা উত্তোলন করেছেন। ব্যবস্থাপকের কথায় অনেক জমা ভাউচারেও তিনি স্বাক্ষর করেছেন।
কেন স্বাক্ষর করেছেন- এমন প্রশ্নে শহিদুল বলেন, ‘আমরা তাদের চাকরি করি। তিনি যা অর্ডার করতেন আমাদের তাই করতে হতো। আমি তো শুধু স্বাক্ষর দিয়েছি, ব্যাংকের অন্যান্য কর্মকর্তার আইডির মাধ্যমে টাকাগুলো দেয়া হতো। অনেক সময় গ্রাহকের হিসাবে টাকা না থাকলেও ম্যানেজার নিজে এসে তাদের টাকা দিতেন।’
এসব বিষয়ে নতুন ব্যবস্থাপক কামরুল হাসান বলেন, ‘তদন্ত চলছে। এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা সম্ভব নয়। তদন্ত শেষে স্যাররাই ব্যবস্থা নেবেন।’
তদন্ত কমিটির প্রধান এজিএম সাদিকুর রহমান বলেন, ‘ঠিক কত টাকা গরমিল হয়েছে তার তদন্ত চলছে। গ্রাহকদের টাকার বিষয়ে হেড অফিস সিদ্ধান্ত নেবে। যেসব গ্রাহকের হিসাবে ঝামেলা হয়েছে তাদেরকে দরখাস্ত দিতে বলা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এর বাইরে কিছু বলা যাচ্ছে না।’
ব্যাংকের বিপুল টাকার হদিস না পাওয়ার এই ঘটনায় রোববার রাতে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। তারা হলেন- সিরাজগঞ্জের বেলকুচি জনতা ব্যাংক তামাই শাখার ব্যবস্থাপক আল আমিন, সহকারী ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম ও ব্যাংক অফিসার রাশেদুল ইসলাম।
আল আমিন সিরাজগঞ্জের ধানবান্দি পৌর এলাকার মো. হারান শেখের ছেলে, রেজাউল করিম বগুড়ার ধুনট থানার বেলকুচি গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে এবং রাশেদুল ইসলাম সিরাজগঞ্জের বনবাড়িয়া কাদাই গ্রামের জিয়াউল হকের ছেলে। তারা বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
প্রসঙ্গত, ২৪ মার্চ রোববার জনতা ব্যাংক পিএলসি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার তামাই শাখার ক্যাশ ভল্টে ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার গরমিল ধরা পড়ে।
পরে এ বিষয়ে জনতা ব্যাংক পিএলসি সিরাজগঞ্জের এরিয়া অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. নজরুল ইসলাম তামাই শাখার ম্যানেজারসহ চারজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
এ ঘটনায় ব্যাংকের ব্যবস্থাপকসহ তিন জনকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। হিসাব অনুসারে ভল্টে মোট ৭ কোটি ১১ লাখ ২৪০ টাকা থাকার কথা থাকলেও পাওয়া গেছে এক কোটি ৭৭ লাখ ৬১ হাজার ২৪০ টাকা। বাকি ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার কোনো খোঁজ মেলেনি।
ঈদের ছুটির আগেই গার্মেন্টসসহ সব সেক্টরের শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস পরিশোধ করতে হবে। ঈদের আগে কোনো শ্রমিক ছাঁটাই করা যাবে না। আর কোনোক্রমেই ঈদের ছুটি সরকারি ছুটির কম হবে না। সূত্র: ইউএনবি
ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের (টিসিসি) ৭৭তম সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী। বুধবার শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মালিক-শ্রমিক উভয়ের মধ্যে আলোচনা ও সম্মতির ভিত্তিতে সরকারি ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করে যাতায়াতের সুবিধা অনুযায়ী আসন্ন ঈদের ছুটি দেয়া হবে।’
সভায় অংশ নেন- শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব মো. মাহবুব হোসেন, শ্রম অধিদপ্তরে মহাপরিচালক মো. তরিকুল আলম, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি আরদাশির কবির, বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টারস এসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান, বাংলাদেশ মুক্ত শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. শহীদুল্লাহ বাদল এবং বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান।
আরও পড়ুন:ভারত থেকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর তা আমদানি করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশ (টিসিবি)।
বুধবার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়। সূত্র: ইউএনবি
তবে বৈঠকে পেঁয়াজের দাম প্রকাশ করা হয়নি। কারণ প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য আবারও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে আসবে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, ভারতের ন্যাশনাল কো-অপারেটিভ এক্সপোর্ট লিমিটেডের কাছ থেকে জিটুজি (সরকার বনাম সরকার) ভিত্তিতে এসব পেঁয়াজ আমদানি করবে টিসিবি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব সাংবাদিকদের জানান, ক্রয় প্রস্তাবটি সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে আসার পর পেঁয়াজের দাম প্রকাশ করা হতে পারে।
রমজানে চাহিদা বাড়ায় ভারত থেকে আমদানি করা আলুর আরেকটি চালান বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দেশে এসেছে।
বার্তা সংস্থা ইউএনবির প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে ১৩ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত ৩২টি ট্রাকে এক হাজার টন আলু নিয়ে আসা হয়েছে বেনাপোলে।
আলুর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হলো ইন্টিগ্রেটেড ফুড অ্যান্ড বেভারেজ এবং রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের পেপসিকো ইন্ডিয়া হোল্ডিংস। আলুর চালান বন্দর থেকে খালাস নিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করেছে ট্রান্সমেরিন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
বেনাপোল চেকপোস্ট কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বুধবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘ভারতের পেট্রাপোল বন্দর হয়ে ১৩ ও ১৪ মার্চ ২০০ টন করে এবং ১৯ মার্চ ৩০০ ও ২৪ মার্চ রাতে ৩০০ টন আলু আমদানি করা হয়।’
ট্রান্সমেরিন লজিস্টিক লিমিটেড সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের প্রতিনিধি মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘চারটি চালানে ভারতীয় ৩২টি ট্রাকে এক হাজার টন আলু আমদানি করা হয়। প্রতি টন আলুর আমদানি খরচ পড়েছে ১৯৪ ডলার।’
এ বিষয়ে বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘আমদানি করা আলুর তিনটি চালানের ৭০০ টন ইতোমধ্যে বন্দর থেকে খালাস করা হয়েছে। শেষ চালানের ৩০০ টন বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় আছে।
‘আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খালাসের অনুমতি চাইলে দ্রুত ছাড়করণে সব ধরনের সহায়তা করা হবে।’
এর আগে গত বছরের ২ ডিসেম্বর ভারত থেকে তিনটি ট্রাকে ৭৪ টন আলু আমদানি করা হয়। এরপর চলতি মাসে চারটি চালানে আরও এক হাজার টন আলু আমদানি করা হয়েছে।
দেশের ব্যাংকগুলোতে ক্যাশ ডলার হোল্ডিং বাড়তে শুরু করেছে। মূলত বাংলাদেশিদের বৈদেশিক মুদ্রার অ্যাকাউন্ট খোলা ও পরিচালনার অনুমতি দেয়া এবং অনাবাসী বাংলাদেশি ও বিদেশিদের জন্য সুবিধাজনক রিটার্নের বিনিময়ে ডলার জমা রাখার সুবিধার্থে অফশোর ব্যাংকিং আইন প্রণয়নের ফলে ডলার হোল্ডিং ক্রমাগত বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২৪ মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকে নগদ ডলারের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন ডলারে। আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে তা ছিল ৩২ মিলিয়ন এবং জানুয়ারিতে ছিল ২৮ মিলিয়ন ডলার।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী রোববার এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে সাম্প্রতিক অফশোর ব্যাংকিং আইন পাসের পর বিদেশি আমানতকারী ও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা শিগগিরই বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বৃদ্ধির প্রত্যাশা করছি।’
ব্যাংকাররা জানান, ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের আরএফসিডি (রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট) অ্যাকাউন্টে জমা দেয়া ডলারের ওপর ৭ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিতে শুরু করেছে। পাশাপাশি এই হিসাবের ডলার কোনো বাছবিচার ছাড়াই দেশে ও বিদেশে গিয়ে খরচ করা যাচ্ছে। প্রতিবার বিদেশ ভ্রমণের সময় এই হিসাব থেকে নগদ ১০ হাজার ডলার জমা রাখার অফার ঘোষণা করেছে একাধিক ব্যাংক। এসব কারণে এখন ব্যাংকে ক্যাশ ডলার বাড়ছে।
বর্তমানে নগদ ডলারের বড় অংশ মজুত আছে ইস্টার্ন, দি সিটি, ব্র্যাক, ডাচ্-বাংলা, প্রাইম, পূবালী, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, এইচএসবিসি, ইসলামীসহ আরও বেশ কয়েকটি ব্যাংকে। ডলারের পাশাপাশি পাউন্ড, ইউরো, অস্ট্রেলিয়ান ডলার, কানাডিয়ান ডলার, সিঙ্গাপুরি ডলারেও আরএফসিডি হিসাব খোলা যায়।
বেসরকারি একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান বলেন, আরএফসিডি অ্যাকাউন্টে ছাড় দেয়ার কারণে ব্যাংকের ক্যাশ ডলার বাড়তে পারে। কারণ এখানে মানুষ এখন কোনও প্রশ্ন ছাড়াই বিদেশ ভ্রমণ শেষে ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত রাখতে পারছে। একটা মুনাফাও পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এখন কার্ব মার্কেট ও ব্যাংকের দেয়া ডলার রেটের মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই। কার্ব মার্কেটে ১১৭-১১৮ টাকা পেলেও ব্যাংকগুলো প্রতি ডলারের বিপরীতে ১১৪-১১৫ টাকা করে দিচ্ছে। তাই যাদের কাছে ক্যাশ ডলার আছে, তারা ব্যাংকেই রাখছেন।
তবে ক্যাশ ডলার বাড়লেই যে ব্যাংক সেটা বিক্রি করতে পারবে তেমন নয়। কারণ অনেকে আছেন যারা নিয়মিত বিদেশ ভ্রমণ করেন, কয়েক দিন পর আবার প্রয়োজন হতে পারে, স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্টে রাখতে পারেন, চিকিৎসার আগে বিদেশে যাওয়ার জন্যও রাখতে পারেন। তবে এগুলো নির্ধারিত সময় পর তারা নিয়ে যাবেন। এগুলো ব্যাংকের পক্ষে বিক্রয়যোগ্য নয়। তাই এগুলো কতটা টেকসই ডলার আগে সেটা দেখতে হবে, যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছরের ৩ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে মানুষের ঘরে রাখা ডলার ব্যাংকে ফেরাতে আবাসিক বৈদেশিক মুদ্রা আমানত বা রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (আরএফসিডি) হিসাবের ওপর সুদসহ বাড়তি সুবিধা দেয়ার সুযোগ করে দেয়।
এরপরই দি সিটিসহ কিছু ব্যাংক বাড়তি উদ্যোগ নিয়ে এই হিসাব খুলতে শুরু করে। বিদেশ থেকে এসেছেন, বয়স ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে– এমন যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক ব্যাংকে গিয়ে আরএফসিডি হিসাব খুলতে পারেন।
এ ক্ষেত্রে কবে বিদেশ ভ্রমণ করেছেন তা মুখ্য বিষয় নয়। মুখ্য বিষয় হলো, বিদেশে গেছেন তার প্রমাণপত্র অর্থাৎ পাসপোর্ট ও ভিসার নথিপত্র ব্যাংকে জমা দিতে হবে। হিসাব খোলার জন্য আরও প্রয়োজন দুই কপি ছবি, নমিনি, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন)।
এই হিসাবের বিপরীতে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কোনো চেক বই না দিয়ে ডেবিট কার্ড দেয়, যা থেকে খরচে কোনো অনুমোদন লাগে না।
একজন নাগরিক প্রতিবার বিদেশ ভ্রমণের জন্য ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত আরএফসিডি হিসাবে জমা রাখতে পারবেন। ফলে গত এক বছরে যদি কেউ ১০ বার বিদেশ ভ্রমণ করে থাকেন, তিনি চাইলে তার হিসাবে কোনো নথিপত্র ছাড়াই এক লাখ ডলার পর্যন্ত জমা দিতে পারবেন।
তবে প্রতিবার ভ্রমণের ক্ষেত্রে এর বেশি পরিমাণ ডলার জমা দিতে চাইলে তাকে বেশি ডলার দেশে আনার জন্য কাস্টমসের ঘোষণাপত্র জমা দিতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো এখন এই হিসাবের বিপরীতে ৭ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়, এই হিসাবে জমা অর্থের ওপর ব্যাংকগুলো বেঞ্চমার্ক রেটের সঙ্গে আরও অন্তত দেড় শতাংশ সুদ দেবে।
সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (সোফর) এখন ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। সে অনুযায়ী আরএফসিডি হিসাবে সুদ হার দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৮১ শতাংশ।
আরও পড়ুন:পাঠাও-বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, নিয়ে এলো ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা ‘পাঠাও পে’। এটি একটি অত্যাধুনিক ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা, যার লক্ষ্য বাংলাদেশের ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল ল্যান্ডস্কেপ বদলে দেওয়া। পাঠাও পে-এর বিশাল পরিধির সেবা আর্থিক লেনদেনকে সহজতর করবে, যাতে এর ব্যবহারকারীগণ যেভাবে চান সেভাবে লেনদেন করতে পাবেন, প্রয়োজনে অর্থের যোগান পাবেন এবং যেভাবে উচিত সেভাবে নিজের আয়-ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। এই সফট লঞ্চে, শুধুমাত্র ছোট পরিসরে মনোনীত ইউজারদের পাঠাও-এর ইনার সার্কেল-এ যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান করা হয়েছে, যারা পাবেন পাঠাও পে-এর প্রিমিয়াম ফিচারগুলোর এক্সক্লুসিভ এক্সেস ও এক্সাইটিং সব অফার।
পাঠাও পে বিভিন্ন সার্ভিস প্রদানের মাধ্যমে পেমেন্ট এক্সপেরিয়েন্সকে দ্রুত, ফ্লেক্সিবল এবং ঝামেলাহীন করবে। ব্যবহারকারীগণ পাবেন কিছু নতুন ধরনের সুবিধা, যেমন: Split Pay-এর মতো আকর্ষণীয় ফিচার, যা একাধিক ব্যবহারকারীদের নিজেদের মধ্যে বিলটি ভাগ করে পরিশোধ করার সুবিধা দিবে। এছাড়াও রয়েছে ATOM, যা ব্যবহারকারীদের পাঠাও পে ব্যবহার করে ওয়ালেটে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স না থাকলেও সরাসরি সোর্স অফ ফান্ড থেকে সেই সময়েই অর্থ পরিশোধ করার সুযোগ দিবে। ইউজারগণ তাদের কার্ড, ব্যাংক ট্রান্সফার বা নগদ-এর মাধ্যমে সহজেই ফান্ড অ্যাড করতে পারবেন। ফান্ড জমা হলেই, ইউজার তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, কার্ড বা পার্টনার এটিএম-এ ক্যাশআউট অপশন থেকে ক্যাশ টাকা তুলতে পারবেন।
এই সফট লঞ্চে থাকছে ব্যবহারকারীদের জন্য বিশাল ক্যাশব্যাক পাওয়ার একটি দুর্দান্ত সুযোগ। প্রত্যেক ব্যবহারকারী পাঠাও পে-এর মাধ্যমে পাঠাও সার্ভিসের জন্য পেমেন্ট করে পাবেন ৫৫০ টাকা পর্যন্ত, ৫০% ক্যাশব্যাক। পাঠাও ফুড-এর দু’টি অর্ডারে পাঠাও পে দিয়ে পেমেন্ট করে পাবেন সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা ক্যাশব্যাক (প্রতি অর্ডারে ১২৫টাকা পর্যন্ত)। একইভাবে, পাঠাও কার-এর দু’টি রাইডে পাবেন সর্বোচ্চ ২০০ টাকা ক্যাশব্যাক (প্রতি রাইডে ১০০টাকা পর্যন্ত), পাঠাও বাইক-এর দুটি রাইডে পাবেন সর্বোচ্চ ১০০ টাকা ক্যাশব্যাক (প্রতি রাইডে ৫০ টাকা পর্যন্ত)। ইউজার এই ক্যাশব্যাক পাবেন ক্রেডিট ট্রানজেকশন হওয়ার পরবর্তী কার্যদিবসে।
দেরি না করে এখনই আপডেট করে ফেলুন পাঠাও অ্যাপ অথবা জয়েন করুন ইনার সার্কেল-এর ওয়েটলিস্টেঃ https://forms.gle/nJZFG4jGtF61sEME8
এই লঞ্চের মাধ্যমে পাঠাও পে, পাঠাও-এর ডিজিটাল ইকোসিস্টেমের পরিধি উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি করেছে, এবং সার্বজনীন ও সহজতর ফিন্যান্সিয়াল ল্যান্ডস্কেপে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে, যা বাংলাদেশী ব্যবহারকারীদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্য-পূর্ণ, সুবিধাজনক হয়ে আর্থিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত পাঠাও বাংলাদেশের ডিজিটাল অবকাঠামো তৈরির মাধ্যমে নতুন সুযোগ সৃষ্টি, সাধারণ মানুষের ক্ষমতায়ন ও জীবনমানের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে আসছে। পাঠাও বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ডিজিটাল সার্ভিস প্ল্যাটফর্ম; রাইড শেয়ারিং, ফুড ডেলিভারি ও ই-কমার্স লজিস্টিকস সেবা খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান। পাঠাও আপনাদের সাথে আছে ১ কোটিরও বেশি গ্রাহক এবং ৩ লাখ চালক-ডেলিভারি এজেন্ট, ১ লক্ষ মার্চেন্ট ও ১০ হাজার রেস্টুরেন্টের সুবিশাল নেটওয়ার্ক নিয়ে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ৫ লক্ষেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে পাঠাও এবং তাঁদের উপার্জনক্ষম করে তোলার পাশাপাশি বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতিতে ও অবদান রাখছে। প্রেস রিলিজ
মন্তব্য