× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বাজেট
ভাতার ৫০০ টাকায় কী হয়?
google_news print-icon

ভাতার ৫০০ টাকায় কী হয়?

ভাতার-৫০০-টাকায়-কী-হয়?
ভাতার কার্ড হাতে বরিশালের আনোয়ার বেগম। ছবি: নিউজবাংলা
নতুন বাজেটে এক কোটি ছাড়িয়ে যাবে সরকারের ভাতাভোগীর সংখ্যা। কিন্তু যে গরিব, অসহায় মানুষদের জন্য ভাতা দেয়া হয়, মাসে ৫০০ টাকা কতটা কাজে লাগে তাদের? কী করেন তারা এ ভাতা দিয়ে?

সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীরা মাসে ৫০০ টাকা ভাতা পান। তিন বছর ধরে এই একই পরিমাণ ভাতা পাচ্ছেন তারা।

এই তিন বছরে গড়ে সাড়ে ৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। কিন্তু ভাতার পরিমাণ বাড়েনি। এমনকি করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও তাদের ভাতার অঙ্ক বাড়ায়নি সরকার।

অনেকেই আশায় ছিলেন, এবারের বাজেটে ভাতা বাড়ানো হবে। কিন্তু ৩ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল যে বাজেট প্রস্তাব সংসদে উপস্থাপন করেছেন, তাতে তাদের সে আশা পূরণ হয়নি। এত দিন যে ভাতা পেতেন, সেই ভাতাই পাবেন তারা।

তবে ভাতাভোগীর সংখ্যা আরও ১৫ লাখ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

সরকারি হিসাবেই বাজারে মোটা চালের কেজি এখন ৫০ টাকা। গ্রামের মানুষ সাধারণত তিন বেলা ভাত খায়। সে ক্ষেত্রে একজনের জন্য প্রতিদিন প্রায় এক কেজির মতো চাল লাগে।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, একজন বয়স্ক, বিধবা বা স্বামী নিগৃহীতা নারী মাসে সরকারের কাছ থেকে যে ভাতা পান, ১০ কেজি চাল কিনতেই তা শেষ হয়ে যায়। অর্থাৎ একজনের ১০ দিনের চালের খরচও হয় না এই টাকা দিয়ে।

যাদের অন্য কোনো আয় নেই; কাজ করতে পারেন না, তাদের এই অল্প টাকা দিয়ে আসলে কিছুই হয় না।

কঠিন এই বাস্তবতায় এসব ভাতার পরিমাণ কমপক্ষে ১ হাজার টাকা করার দাবি উঠেছে সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে।

দেশের চার জেলায় যারা ভাতা পান, তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকম। তারা তাদের নিদারুণ কষ্টের কথা জানিয়ে ভাতা বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন।

তবে এই মুহূর্তে সরকার ভাতা বাড়াতে চায় না। ভাতাভোগীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়াতে চায়।

এ বিষয় নিয়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের সঙ্গে কথা বলতে তার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে কলটি রিসিভ হয়নি। এসএমএস করা হলেও কোনো জবাব আসেনি।

পরে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকার আসলে আপাতত ভাতার পরিমাণ বাড়াতে চায় না। গ্রামে একজন বয়স্ক মানুষের কাছে ৫০০ টাকা অনেক। আমাদের সরকারের এই মুহূর্তে প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, আগে সবাই পাক। তারপর ভাতার টাকা বাড়ানোর কথা ভাবা যাবে।

‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের এমন নির্দেশনাই দিয়েছেন। আমরা সে মোতাবেকই কাজ করছি। নতুন বাজেটে আরও ১৫০ উপজেলার সব বয়স্ক এবং বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত নারীকে ভাতার আওতাভুক্ত করা হবে।’

বিদায়ি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ১১২টি উপজেলার সব বয়স্ক এবং বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারীকে ভাতার আওতাভুক্ত করার ঘোষণা দেয়া হয়। বর্তমানে সারা দেশে ৪৯ লাখ বয়স্ক নাগরিককে মাসে ৫০০ টাকা করে ভাতা দেয় সরকার।

ভাতার ৫০০ টাকায় কী হয়?

নতুন বাজেটে আরও ১৫০ উপজেলায় সব বয়স্ককে ভাতার আওতাভুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এতে নতুন করে ৮ লাখ সুফলভোগী যোগ হবে। সব মিলিয়ে মোট ভাতাভোগীর সংখ্যা হবে ৫৭ লাখ।

২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে আরও ১৫০টি উপজেলায় সোয়া ৪ লাখ বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীকে নতুন করে ভাতার আওতায় আনার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। বর্তমানে ১১২টি উপজেলায় ২০ লাখ ৫০ হাজার নারীকে এই ভাতা দেয়া হয়।

এ ছাড়া নতুন বাজেটে অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা ২ লাখ ৮ হাজার জন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যে নতুন অর্থবছরের বাজেটে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা খরচের যে পরিকল্পনা অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল সাজিয়েছেন, তার মধ্যে ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি বরাদ্দ রেখেছেন সামাজিক নিরাপত্তা খাতে।

এই অঙ্ক মোট বাজেটের প্রায় ১৮ শতাংশ। আর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক ১১ শতাংশ।

নতুন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় বিভিন্ন ভাতাভোগীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ করা হলেও ভাতার অঙ্ক একই আছ। সব মিলিয়ে আরও প্রায় ১৫ লাখ গরিব মানুষ সরকারের সহায়তা পাবে।

এতদিন এই ভাতা পাচ্ছিলেন ৮৮ লাখ গরিব, অসহায় মানুষ। নতুন করে সুবিধাভোগীর সংখ্যা যোগ হলে ভাতা পাওয়া গরিবের সংখ্যা ১ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।

বয়স্ক ভাতা পেতে হলে পুরুষের বয়স কমপক্ষে ৬৫ এবং নারীর ৬২ বছর হতে হয়। এই ভাতা পেতে হলে মাসে আয় ১০ হাজার টাকার কম হতে হবে।

কেমন আছেন বরিশালের ভোতাভোগীরা

বরিশাল শহরের ৬ নং ওয়ার্ডের মাদ্রাসা রোডের বাসিন্দা আম্বিয়া খাতুন। বয়স ৬৯ বছর। চার বছর ধরে পান ভাতা। কিন্তু এই টাকা দিয়ে কিছুই হয় না তার।

নিউজবাংলার সঙ্গে আলাপকালে আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘স্বামী নাই আর পোলাও নাই। দুই মাইয়া আল্লে হেয়া বিয়া দিয়া দিছি মেলা আগে। হেরা বছ্ছরে একবার পারলে সাহায্য করে, না পারলে করে না। মোর ভরসা ওই বয়স্ক ভাতাডাই।

‘৪ বছর ধইরা পাই। যা পাই, ওয়া দিয়া ঘরের ল্যাম্পও জ্বালান যায় না, হেইরপরও ওইটাই ভরসা। ওইয়া দিয়াই চলতে হয়। অনেক সময় আশপাশের মানু মেলাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করে।’

ভাতার ৫০০ টাকায় কী হয়?
ভাতার কার্ড হাতে বরিশালের আম্বিয়া খাতুন। ছবি: নিউজবাংলা

নানা অভিযোগ অনুযোগ করে আম্বিয়া বলেন, ‘তিন মাস পরপর কাউন্সিলর অফিসে যাইয়া ১৫০০ টাহা আনতে হয়। আমনেরাই কন, এই দিয়া কিছু হয়? পেট তো চালান লাগে।

‘ছোডো একটু ঘরে থাহি। এক বেলা রাইন্দা দুই দিন খাই। টাহা তো লাগবে খাইতে। আর দোহানদাররা তো বাহিও দেতে চায় না মোরে। মুই তো হেয়া শোধ করতে পারমু না। সরকার যদি মোগো এই বয়স্ক ভাতার টাহাডা বাড়াইয়া দিত তাইলে অনেক ভালো হইত। এক হাজার টাহা দেলেও হেলে দুই বেলা তো খাইতে পারতাম একটু।’

একইভাবে ভাতা টাকা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন শহরের কসাইখানা এলাকার বাসিন্দা আনোয়ারা বেগম।

তিনি বলেন, ‘৭৪ বছর বয়স হইছে মোর। এহন চলতে ফেরতে কষ্ট হয় অনেক। কয়েক বছর ধইরা ভাতা পাই। হেয়া একটাহাও বাড়ে নাই। জিনিসপত্রের দামও তো অনেক বাড়ছে। হেইয়ার হিসেবে এহন যে তিন মাস পরপর ১৫০০ টাহা কইরা দেয় হেতে কি কিছু হয়?

‘মোর চক্ষুতে অনেক সমস্যা। ঠিকমতো চোহে দেহি না। কেমনে যে চলি আল্লাহই জানে। মাইয়ারে বিয়া দেওয়ার পর হে কি খালি বছরে কাপড় দেয়। আর পোলার চায়ের দোহানে এক ঘণ্টা সময় দেতে হয়। হেই পারপাস আমারে দেহাশুনা করে পোলায়।’

আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আগে চাউলের কেজি যে টাহা ছিল, হেই টাহা তো এহন আর নাই। সবকিছুর দাম বাড়ছে। কয়দিন পর দেখমু পানিটাও কিন্না খাওয়া লাগতে আছে। এইয়ার মধ্যে মোগো যে ভাতা দেতে আছে হেয়া তো বাড়ে না, মোগো আগের টাহাই দেতে আছে।

‘মালের দাম বাড়ার লগে লগে মোগো টাহাও যদি বাড়াইয়া দেয়, তাইলে অনেক ভালো হয়। নাইলে মোর চলতে অনেক সমস্যা। ওষুধপত্রসহ পোলার সংসারে তিনমাস পর পর ওই টাহা দেতে হয়। এই যুগে কী হয় ১৫০০ টাহায়?’

আম্বিয়া খাতুন, আনোয়ারা বেগমের মতো বয়স্কভাতা বাড়ানোর দাবি করেছেন বিএম কলেজ রোড এলাকার বৃদ্ধা ময়নামতি দাস, পলাশপুরের সোনা খাতুনসহ অনেকে।

গাইবান্ধা

তিন বছর ধরে বিধবা ভাতা পেয়ে আসছেন গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের উত্তর মরুয়াদহ গ্রামের বিধবা রোকেয়া বেওয়া। স্বামী পরিত্যক্তা মেয়ে কাছমতি বেগমকে নিয়ে তার সংসার।

মা-মেয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তারপরও তাদের মুখে খানিকটা হাসি এনে দিয়েছে সরকারের দেয়া বিধবা ভাতার মাসিক ৫০০ টাকা।

ভাতার ৫০০ টাকায় কী হয়?
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের উত্তর মরুয়াদহ গ্রামের বিধবা রোকেয়া বেওয়া

এই টাকা দিয়ে কী করেন জানতে চাইলে রোকেয়া বেওয়া বলেন, ‘টেকা তুলি বাজারঘাট করি। চাউল কিনি। ১৫০০ টেকা হামার কাছে মেলা টেকা। এই টেকা না দিলি বাঁচনো না হয় বাবা। না খায়া মনো হয়।’

এই টাকায় সংসার চলে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ। আর টেকা পামো কোনটে? এই টেকাই চলি ফিরি খাই। মানষের বাড়িত থাকি এনা-ওনা আনি। এগলে দিয়েই মিলিধিলি চলি বাবা।

‘কষ্ট হয় চলতি। তাও করিধরি বাঁচি আছি। আর এনা বেশি টেকা পালে ভালই চলবের পানো হয়। মানষের বাড়িত কাম করা নাগিল নে হয়।’

একই উপজেলার উত্তর দামোদরপুর গ্রামের বয়স্ক ভাতাভোগী মোন্তাজ আলী প্রামানিক বলেন, ‘ছয় মাস পর ঈদের আগত টেকা পাচি ৩ হাজার। টেকা তুলি বাড়িত যাবার পাই নাই। তার আগে শেষ। দোকানত বাকিবুকি। বাজারত বাকি সোগ শোধ কচ্চি।

‘পত্তি ওষুধপাতি খাম। টেকার জন্যি ওষুধ পামো না। বিছনেত পড়ি আছম। যে টেকা পামো, তাক দিয়ে এখান-ওখান হয়; পেটত ভাত দিবের পাম না।’

তিনি আরও বলেন, ‘মাসে একটা হাজার টেকা পালি যেন হলি হয়। ডাল-ভাত, ওষুধপাতি খাবার পানো হয়। ৫০০ টেকা দিয়ে কিছু হয় না রে বাপ।’

হবিগঞ্জ

হবিগঞ্জ পৌরসভার কামড়াপুর এলাকার মৃত তুফায়েল আলীর স্ত্রী খুদেজা খাতুন। দুই ছেলে এবং চার মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন, ছেলেরাও বিয়ে করে আলাদা থাকেন। তার ভরণ-পোষণের জন্য ছেলেরাই মাস খরচ দেন।

তিনি বলেন, ‘সরকার আমরারে বয়স্ক ভাতা দেয় মাসে ৫০০ টেকা কইরা। তিন মাস পরপর এই টেকা তুলতা পারি। সরকারি কর্মকর্তারার বেতন বাড়ছে, জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, কিন্তু আমরার ভাতা বাড়তাছে না।’

দুঃখ করে তিনি বলেন, ‘মাসে ৫০০ টেকা দিয়ে একজন মানুষ চলত পারে? ৫০০ টেকা দিয়া এখন ১০ কেজি চাউলও পাওয়া যায় না।’

তেঘরিয়া গ্রামের আবু মিয়া। তিন ছেলে দুই মেয়ে। তিনিও ছেলে মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেরা কেউ কেউ রিকশা চালান, কেউ শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। অভাব-অনটনের সংসারে অসুস্থ আবু মিয়া যেন ছেলের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘সংসার চালাইতে পুলাইনতের (ছেলেদের) অনেক কষ্ট হয়। এর মাঝে আমি অসুস্থ হওয়ার কারণে কয়দিন পরপর ওষুদ লাগে। এখন লকডাউনের লাইগা রিকশা চালাইত পারে না, অন্য কোনো কামও পায় না। অনেক কষ্টে আছি আমরা।

‘সরকার আমারে যে ভাতা দেয়, ইডা দিয়া আমার ওষুদের খরচই হয় না। এই ভাতা আরও বাড়ানো দরকার।’

সরকার ভাতা না বাড়িয়ে নতুন লোকদের ভাতার আওতায় আনতে চাচ্ছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যারা বুড়া হইছে, সবাইকেই ভাতা দেয়া উচিত। কিন্তু এত কম টেকা দিলে অইব কেমনে। আরও বেশি দিতইব।’

নীলফামারী

নীলফামারী শহরের নিউ বাবুপাড়া মহল্লার বাসিন্দা পলাশ হোসেন। ২০১০ সাল থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা পেয়ে আসছেন। সেখানকার আশরাফ হোসেন দুলাল ও শাবানা বেগম ছালেহার সন্তান পলাশ।

সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় মাসিক সাড়ে ৭০০ টাকা পাচ্ছেন পলাশ।

সরকারি ভাতা পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে পলাশ বলেন, ‘যে টাকা পাচ্ছি এ জন্য ধন্যবাদ জানাই তাকে। তবে এই সময়ে এসে মাসে সাড়ে ৭০০ টাকা কাজে আসে না।

‘চলাফেরা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ভাতার পরিমাণ হিসাব করলে যৎসামান্য। আমি দাবি জানাই, যেন এর পরিমাণ বাড়ানো হয়।’

মিলন পল্লী এলাকার প্রয়াত বিষাদু মামুদের স্ত্রী ছাবিয়া বেগম। ১৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে বয়স্ক ভাতা ভোগ করে আসছেন তিনি। নানা রোগ আষ্টেপৃষ্ঠে ধরেছে তাকে। প্রতি মাসে শুধু ওষুধই কিনতে হয় ১ হাজার ২০০ টাকার।

ছাবিয়া বেগম বলেন, ‘এই ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হলে উপকৃত হবেন আমার মতো দেশের লাখ লাখ অসহায় বয়স্ক মানুষরা।’

একই দাবি গাছবাড়ি মহল্লার খোঁচা মামুদের স্ত্রী আমিনা বেগমেরও। একমাত্র সন্তানের উপার্জনে সংসার চালাতে হয় পাঁচজনের খরচ। অভাব অনটন লেগেই থাকে।

আমিনা বেগম বলেন, ‘শরীরে ব্যথা লেগেই রয়েছে। সঠিক চিকিৎসা করাতে পারছি না। নানা রোগ শরীরে ধরেছে। আমাদের ভাতার টাকা যদি বাড়ানো হয় তাহলে কিছুটা উপকৃত হতাম।’

৯৮ সাল থেকে শুরু বয়স্ক ভাতা

অবহেলিত বয়স্ক জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছর থেকে চালু হয় বয়স্ক ভাতা। সে সময় ভাতার পরিমাণ ছিল ১০০ টাকা। ৪ লাখ ৪ হাজার জন পেতেন ভাতা। বাজেটে এ বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৪৮ হাজার ৫০ লাখ টাকা।

২০০৬-০৭ অর্থবছর ভাতার পরিমাণ বাড়িয়ে ২০০ টাকা করা হয়। ভাsতাভোগীর সংখ্যা বেড়ে হয় ১৬ লাখ।

২০০৯-১০ অর্থবছরে ভাতার অঙ্ক বাড়িয়ে করা হয় ৩০০ টাকা। সুবিধাভোগীর সংখ্যা হয় ২২ লাখ ৫০ হাজার।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভাতার পরিমাণ বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করে সরকার। ভাতাভোগীর সংখ্যা বাড়িয়ে করা হয় ৪০ লাখ।

৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটেও ভাতার অঙ্ক সেই ৫০০ টাকাই আছে। তবে সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৪৯ লাখ হয়েছে। বাজেটে বরাদ্দ বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা।

বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা শুরু ১৯৯৯ সাল থেকে

এই ভাতাও ১০০ টাকা দিয়ে শুরু হয়েছিল। বিভিন্ন সময়ে বেড়ে ৫০০ টাকায় ঠেকেছে। বর্তমানে ২০ লাখ ৫০ হাজার নারী এই ভাতা পাচ্ছেন। বাজেটে বরাদ্দ আছে এক হাজার ২৩০ কোটি টাকা।

এ ছাড়া সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ৭ লাখ ৭০ হাজার দরিদ্র মায়েদের মাতৃত্বকালীন ভাতা দেয়া হচ্ছে। ১৮ লাখ অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধীকে মাসে ৭৫০ টাকা করে ভাতা দিচ্ছে সরকার।

এসব ভাতা বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন কঠিন সময়। মহামারির এই সময়ে বাজেটের আকার, ঘাটতি বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামানোর প্রয়োজন আমি দেখছি না।

‘কোভিডের মধ্যে চলতি অর্থবছরে চার-সাড়ে চার শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও যথেষ্ট। আগামী অর্থবছরে ৫ শতাংশ হলেও ভালো। সরকার নতুন বাজেটে এসব ভাতা যাতে আরও বেশিসংখ্যক মানুষ পায়, সে ব্যবস্থা নিয়েছে। এটা খুবই ভালো। তবে একই সঙ্গে আমি ভাতার পরিমাণটা বাড়ানোরও অনুরোধ করছি। কেননা এই বাজারে ৫০০ টাকা দিয়ে আসলেই তেমন কিছু হয় না।’

[সহযোগী প্রতিবেদক: বরিশাল প্রতিনিধি তন্ময় তপু, গাইবান্ধা প্রতিনিধি পিয়ারুল ইসলাম, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি কাজল সরকার এবং নীলফামারী প্রতিনিধি নূর আলম]

আরও পড়ুন:
অন্তঃসত্ত্বা না হয়েও মাতৃত্বকালীন ভাতা
‘এডা টেহার কাট’ চান ৭৫ বছরের ফুলেছা
৮৮ লাখ ভাতাভোগীর তথ্যভান্ডার তৈরি
ঈদে এক কোটি পরিবারকে ৪৫০ কোটি টাকা
ভাতা বাড়িয়ে হাজার টাকা করতে চান মন্ত্রী

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বাজেট
Aim to build skilled human resources not certificates Baubi Vice Chancellor

সার্টিফিকেট নয়, দক্ষ মানবসম্পদ গড়াই বাউবির লক্ষ্য: উপাচার্য

বাউবির ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
সার্টিফিকেট নয়, দক্ষ মানবসম্পদ গড়াই বাউবির লক্ষ্য: উপাচার্য

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০২৫ মঙ্গলবার গাজীপুর ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর ও আনন্দঘন পরিবেশে পালিত হয়েছে। দিনব্যাপী নানা বর্ণাঢ্য কর্মসূচি ও অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করা হয়। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জাতীয় পতাকা ও বাউবি পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম। তার সঙ্গে প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন, প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, পরিচালক, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে শান্তির প্রতীক সাদা পায়রা ও রঙিন বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।

পতাকা উত্তোলন শেষে উপাচার্যের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত স্মারক ‘জুলাই জাগরণীতে’ শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ডসহ শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অংশগ্রহণে এক বর্ণাঢ্য আনন্দ র‍্যালি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে।

এরপর কেন্দ্রীয় সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়: দ্যুতিময় এক বছর’ শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন ও আলোচনা সভা।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম। উপাচার্য তার বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. এম. শমসের আলী ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বলেন, ‘বাউবি প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য হলো- অবহেলিত ও কর্মজীবী জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়া। এখন আমরা সেই লক্ষ্য পূরণের পথে আরও দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছি।’

স্বাগত বক্তব্যে রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘প্রশাসনিক কাঠামোর পুনর্বিন্যাস ও জনবলের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে বাউবির কার্যক্রম আরও গতিশীল হয়েছে। পরীক্ষায় নকলমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ায় একাডেমিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে।’

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন তথ্য ও গণসংযোগ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. খালেকুজ্জামান খান।

একইসঙ্গে দেশের সকল আঞ্চলিক এবং উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্রেও পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০২৫ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়।

মন্তব্য

বাজেট
I want only one Noakhali division

দাবি মোদের একটাই, নোয়াখালী বিভাগ চাই

দাবি মোদের একটাই, নোয়াখালী বিভাগ চাই

বিভাগ ঘোষণার দাবিতে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনী জেলার বাসিন্দারা সভা সমাবেশ, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। বর্তমানে এ ইস্যুতে উত্তাল নোয়াখালী। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সোনাইমুড়ী উপজেলার বিভিন্ন স্কুল মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী ও সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে এসব কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। সোনাইমুড়ী বাইপাস চত্বরে প্রায় ১ ঘণ্টার ব্লকেড কর্মসূচি পালন করা হয়।

কর্মসূচি পালন উপলক্ষে সোনাইমুড়ী উপজেলার বিভিন্ন স্কুল মাদ্রাসা থেকে ছাত্র-ছাত্রী ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ সোনাইমুড়ী বাইপাস চত্বরে জড়ো হন। এ সময় তারা স্লোগান দেন, ‘দাবি মোদের একটাই, নোয়াখালী বিভাগ চাই’। এতে তিন দিকের সড়কে বেশ কিছুক্ষণ যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। ভোগান্তিতে পড়ে বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীরা।

এ সময় কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ‘দাবি মোদের একটাই, নোয়াখালী বিভাগ চাই’। এই দাবি আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। দাবি আদায় না মানলে আরও কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানান।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে রাজনৈতিক নেতা, সমাজকর্মী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন ব্যক্তির প্রোফাইল সরব রয়েছে বিভাগের দাবিতে।

নোয়াখালী জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। নোয়াখালী জেলার মোট আয়তন ৪২০২.৭০ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশে ২২০০৭’ থেকে ২৩০০৮’ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০০৫৩’ থেকে ৯১০২৭’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে নোয়াখালী জেলার অবস্থান। রাজধানী ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব প্রায় ১৭১ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদর থেকে প্রায় ১৩৬ কিলোমিটার। এ জেলার পূর্বে চট্টগ্রাম জেলা ও ফেনী জেলা, উত্তরে কুমিল্লা জেলা, পশ্চিমে লক্ষ্মীপুর জেলা ও ভোলা জেলা এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত।

মন্তব্য

বাজেট
Chiri river in Joypurhat filled again in 3 years of excavation

খননের ৩ বছরেই ফের ভরাট জয়পুরহাটের চিরি নদী

নদী খননের সুফল পাচ্ছেন না দুইপাড়ের মানুষরা
খননের ৩ বছরেই ফের ভরাট জয়পুরহাটের চিরি নদী

খননের ৩ বছর না পেরোতেই আবারও ভরাট হয়ে যাচ্ছে জয়পুরহাটের চিরি নদী। প্রায় ২২ কিলোমিটার এ নদীর কোথাও কোথাও ভরে গেছে কচুরিপানায়। নদীর কোনো কোনো স্থানে পানি থাকলেও আবার অনেক স্থানে পানি নেই। এতে নদী খননের পর যে সুফল পাওয়ার আশা ছিল তা পাচ্ছেন না নদীর দুইপাড়ের মানুষরা। এতে উপকারের চেয়ে অপকারই হচ্ছে বেশি।

স্থানীয় বাসিন্দা ও নদী আন্দোলনের নেতারা জানান, অপরিকল্পিত খননে বালু ও মাটি আবারও নদীতে মিশে যাওয়া, বর্জ্য ফেলা ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আবারও ভরাট হচ্ছে এই নদী। তাই নদীর নাব্য টিকিয়ে রাখতে শুধু খনন করলেই হবে না, প্রয়োজন এর রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।

জানা যায়, জয়পুরহাট জেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে ৪টি নদী। এর মধ্যে আক্কেলপুর থেকে সদর পর্যন্ত প্রায় ২২ কিলোমিটার রয়েছে চিরি নদী। এটি শাখা নদী হিসেবে পরিচিতি। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে প্রায় ১২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি নদীর খননকাজ শুরু হয়, যা শেষ হয় ২০২২ সালের জুন মাসে। নদী খননের প্রকল্পের উদ্দেশ্যে ছিল জমিতে সেচ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সারা বছর সেচ সুবিধা নিশ্চিত করা, পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে বন্যার ঝুঁকি কমিয়ে আনা, পুনঃখননের মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত করা, নৌচলাচলের মাধ্যমে সহজ যোগাযোগ নিশ্চিত করা, পরিবেশ ও আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন সাধন করা। কিন্তু চিরি নদীতে এসব বেশিরভাগ উদ্দেশ্যে বাস্তবায়ন হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নদী খননের ফলে সারা বছর পানি থাকার আশা থাকলেও শুকনো মৌসুমে কোথাও পানি থাকছে, কোথাও থাকছে না। নদী খনন করার সময় বাঁধের ওপর রাখা মাটি আবারও নদীতে মিশে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও নদী ভরে আছে কচুরিপানায়। কোথাও পানি থাকলেও ময়লার কারণে হয়ে পড়েছে ব্যবহার অযোগ্য। এতে দিন দিন নদীটি নাব্য হারিয়ে ফেলছে। নদী রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি সচেতন মহলের।

সদর উপজেলার খঞ্জনপুর এলাকার বাসিন্দা আরিফুর রহমান বলেন, ‘নদী খনন করার আগে আমাদের বাড়ির কাছে চিরি নদীতে কিছু পানি থাকত। আমরা প্রতিদিনের কাজে পানি ব্যবহার করতাম। কিন্তু খননের পর আর পানি থাকছে না। নদী সংস্কার করেই আমাদের অসুবিধা হয়ে গেছে। পানি পাচ্ছি না, আবার কচুরিপানায় ভরে গেছে।’

একই এলাকার রমজান আলী বলেন, ‘ছোটবেলায় নদীতে অনেক মাছ ধরা হতো। মনে হয়েছিল নদী খনন করার পর নাব্য ফিরে আসবে। কিন্তু এখন তা দেখা যাচ্ছে না। বৃষ্টি হলেও বেশিরভাগ জায়গায় পানি নেই। আগে মাছ ধরা হতো। এখন পানি না থাকার কারণে মাছ ধরা যায় না। গোসল করা যায় না। নদী আমাদের কোনো উপকারে আসছে না।’

সদরের কুঠিবাড়ী ব্রিজ এলাকার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘কোটি কোটি টাকা খরচ করে নদী খনন করা হলো, পানি থাকবে বলে। কিন্তু নদীতে কোনো পানি নেই। উপকারের জন্য খনন করা হলো এখন উপকারের চেয়ে অপকারই হচ্ছে বেশি।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের জয়পুরহাট জেলার সমন্বয়ক লুৎফুল্লাহিল কবির আরমান বলেন, ‘চিরি নদী খনন করা হয়েছে পুরোপুরি অপরিকল্পিতভাবে। নদী খননের সময় মাটি ও বালু নদীর পাড়ের ওপর রাখা হয়েছিল। পরে বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে আবার নদীতে পড়ে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে করে কোনো সুফল পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। জনগণের কোটি কোটি টাকা খরচ করে নদী খনন করে কোনো লাভই হয়নি। নদী রক্ষাসহ পরিবেশ রক্ষা করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও আমাদের সবার সচেতন হতে হবে।’

জয়পুরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াদুল ইসলাম বলেন, ‘১২০ কোটি ৬৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকা ব্যয়ে জয়পুরহাটের ৪টি নদীর খননকাজ করা হয়েছে। এ থেকে সাধারণ মানুষ উপকৃত হচ্ছে। নদীগুলো খনন করায় বন্যার ঝুঁকি একেবারে কমে গেছে। তবে নদীগুলো বড় কোনো নদীর সঙ্গে সংযুক্ত না থাকার কারণে পানি কম থাকে। আর চিরি নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে বা কচুরিপানা জমে গেছে এ বিষয়ে আমাদের কেউ জানায়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাদ্দপ্রাপ্তি সাপেক্ষে কচুরিপানা সরানো বা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কাজ করা হবে।’

মন্তব্য

বাজেট
Due to the active movement of village courts the case entanglement has also reduced

গ্রাম আদালত সক্রিয়, নড়াইলে মামলা জটও কমে গেছে

গ্রাম আদালত সক্রিয়, নড়াইলে মামলা জটও কমে গেছে

ছোটখাটো বিষয় নিয়ে আদালতে মামলা করার আগ্রহ দিনে দিনে হারিয়ে ফেলছে সমাজের মানুষ। সরকার গ্রাম আদালত গঠন করার কারণে ফৌজদারি আদালতে মামলা জটও কমে গেছে। গ্রামের মানুষ এখন সময় এবং আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। গ্রাম আদালত উভয় পক্ষের আলোচনার ভিত্তিতে বেশিরভাগ বিরোধ নিষ্পত্তি করে থাকেন। যে কারণে গ্রাম আদালতের কার্যক্রম প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিশ্বস্ততা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

নড়াইলের জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান গতকাল বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (৩য় পর্যায়} প্রকল্পের আওতায় অনুষ্ঠিত সভায় এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, গ্রাম আদালতের কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করতে হবে। গ্রাম আদালতের কার্যক্রম সম্পর্কে জন সাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। বেশি করে প্রচার-প্রচারণা কার্যক্রম চালাতে হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের স্বচ্ছতা এবং আন্তরিকতার সাথে কাজ করার আহবান জানান। তিনি গ্রাম আদালতের কার্যক্রম এবং অংশীজনদের আপোস-মীমাংশার বিষয়বন্তু পাঠ্যপুস্তকে অর্ন্তভূক্তির দাবি জানান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলার তিনটি উপজেলার ৩৯টি ইউনিয়নের গ্রাম আদালতে চলতি বছরের (২০২৫) জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত মোট ৪১৭টি মামলা দায়ের হয়। এর মধ্যে উভয় পক্ষের আলোচনা ও সর্বসম্মতিতে ৩৯১টি মামলা শান্তিপূর্ণভাবে মীমাংশা হয়েছে। এসব ঘটনায় ৯২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ আদায়ও হয়েছে।

সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক জুলিয়া সুকায়না সভাপতিত্ব করেন। বক্তব্য দেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) লিংকন বিশ্বাস, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান, সমাজসেবা কার্যালয়েরে উপ-পরিচালক জেড, এম মিজানুর রহমান, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মৌসুমী রানী মজুমদার, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান, গ্রাম আদালতের ব্যবস্থাপক জেনারুল ইসলাম জিন্নাহ, নড়াইল সদর উপজেলা সমন্বয়কারি মো. ওমর ফারুক, লোহাগড়া উপজেলা সমন্বয়কারি রেজমিন সুলতান অনেকে বক্তব্য দেন।

সভায় সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ, গ্রাম আদালত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা,সাংবাদিক, আইনজীবী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

মন্তব্য

বাজেট
Torch procession of farmers party in protest against the rehabilitation of Awami League in Faridpur

ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের প্রতিবাদে কৃষক দলের মশাল মিছিল

ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের প্রতিবাদে কৃষক দলের মশাল মিছিল

ফরিদপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একে আজাদ এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন ও সন্ত্রাসীদের পুনর্বাসনের চেষ্টার প্রতিবাদে মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার রাতে মহানগর কৃষক দলের উদ্যোগে এই মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। ফরিদপুর শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড় থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে হেলিপোর্ট বাজারে গিয়ে শেষ হয়।

উক্ত মশাল মিছিলে ফরিদপুর মহানগর কৃষক দলের আহবায়ক অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ মামুন, সহ-সভাপতি আবু বকর সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জহির সহ মহানগর কৃষক দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশের সম্পদ লুটপাট করে এখন ভারতে পালিয়েছে। কিন্তু ফরিদপুরে তার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। একজন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা একে আজাদ ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন শুরু করতে চাচ্ছেন। তিনি ফরিদপুরের আমাদের নেত্রী চৌধুরী নায়াব ইউসুফকে নিয়েও ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন। ফরিদপুর মহানগর কৃষক দল বেঁচে থাকতে তার সেই স্বপ্ন পূরণ করতে দেবে না।

মন্তব্য

বাজেট
Children and teenagers are getting addicted to online gaming in Dhobaura

ধোবাউড়ায় অনলাইন গেমিংয়ে আসক্ত হচ্ছে শিশু-কিশোর

ধোবাউড়ায় অনলাইন গেমিংয়ে আসক্ত হচ্ছে শিশু-কিশোর

ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় অনলাইন গেমে আসক্ত হয়ে পড়েছে স্কুল পড়ুয়া শিশু এবং কিশোররা। ফলে হুমকির মুখে পড়ছে ভবিষৎ প্রজন্ম। পড়াশোনা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবক। অনেকটা অভিভাবকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে শিশুরা। এতে পড়াশোনার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। মোবাইলে আসক্ত এসব শিশু-কিশোররা মানছেন না শিক্ষকের নির্দেশনাও। উপজেলার আশেপাশে বিভিন্ন নির্জন স্থানে, রাস্তার মোড়ের পাশে শিশুরা-কিশোররা দলবেঁধে মাটিতে বসে স্মার্টফোন দিয়ে অনলাইন গেম খেলতে দেখা যাচ্ছে। যাদের বয়স ৮-৯ বছর এবং চতুর্থ পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া শিক্ষার্থী। এই বয়সে যাদের খেলাধুলা এবং আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠার কথা তারাই আজ স্মার্টফোন ও অনলাইন গেমে আসক্ত। এতে পড়াশোনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। ইতোমধ্যে পাবলিক পরিক্ষায় প্রকাশিত ফলাফলে ধোবাউড়ায় ব্যাপক ধস নেমেছে। অনলাইন গেমে শিশু-কিশোররা আসক্ত হয়ে পড়ায় সামাজিকবন্ধন থেকে দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। যা আগামী দিনে আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।

সরেজমিনে উপজেলা মিনি স্টেডিয়াম উপজেলা ডাক বাংলোর পাশেসহ বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন শিশু বসে অনলাইন গেম খেলছে। এমন চিত্র প্রায় প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা যাচ্ছে। এমনকি কিশোরদের কেউ কেউ জড়িয়ে যাচ্ছে অনলাইন জুয়াই। ফলে বাড়ছে নানা অপরাধ। সবত্রই স্মার্টফোন ছড়িয়ে থাকায় প্রত্যন্ত গ্রামের শিশুরাও অনলাইন গেম এবং মোবাইল আসক্ত হয়ে পড়ছে। ফলে স্কুল বিমুখ হয়ে যাচ্ছে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা।

সম্প্রতি স্কুল বিমুখ এবং মোবাইল আসক্ত এক ছাত্রকে স্কুলে ফিরিয়ে এনেছেন উপজেলার পাতাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আজহারুল ইসলাম। তৃতীয় শ্রেণির মাহফুজ নামে এক শিক্ষার্থীর হঠাৎ অনুপস্থিত দেখে বাড়িতে খোঁজ নিতে যান তিনি। গিয়ে দেখেন ওই শিক্ষার্থী মোবাইল আসক্ত হয়ে স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। তিনি তখন ওই শিক্ষার্থীকে বুঝিয়ে স্কুলে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। প্রাথমিক ছাড়াও মাধ্যমিকের অনেক শিক্ষার্থী মোবাইল আসক্ত হয়ে পড়াশোনা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

ধোবাউড়া বহুমুখি মডেল সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা স্কুলেও স্মার্টফোন চলে আসে এবং গেম খেলে, আমাদের নজরে আসলে অভিভাবক ডেকে এনে বিষয়টি অবগত করি, মোবাইল আসক্তিটা চরম আকার ধারণ করেছে, পাড়াশোনার ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে।

বিশিষ্ট্য শিক্ষানুরাগী ধোবাউড়া আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অব. অধ্যক্ষ আ. মোতালেব তালুকদার বলেন, বিদ্যালয় থেকে কোনো কোনো শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ছে সেগুলো চিহ্নিত করে উপজেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে অভিভাবক ডেকে সচেতন করা হলে হয়তো পরিস্থিতি উন্নতি হতে পারে।

এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার শরিফ খান বলেন, আমরা প্রতিটি স্কুলে একযোগে অভিভাবক সমাবেশের পরিকল্পনা করছি, এই সমাবেশে এই বিষয়টি নিয়ে গুরত্বসহকারে উপস্থাপনা করা হবে।

মন্তব্য

বাজেট
After the divorce the rain suddenly disappeared

বিবাহ-বিচ্ছেদের পর হঠাৎ উধাও হয়ে যায় বৃষ্টি

আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে গড়ছিল ভয়াবহ নেটওয়ার্ক
বিবাহ-বিচ্ছেদের পর হঠাৎ উধাও হয়ে যায় বৃষ্টি

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের দুর্গম চর পাটগ্রামে নাদিয়া আক্তার বৃষ্টির জন্ম দরিদ্র এক জেলে পরিবারে। বৃষ্টি তার ডাক নাম। দুইবোন আর এক ভাইয়ের মধ্যে বৃষ্টি সবার বড়। ছোটবেলা থেকেই দরিদ্র জেলের ঘরে জন্ম নেওয়া বৃষ্টির দিন যেন অন্যান্য পরিবারের ছেলে-মেয়ের মতোই চলছিল হাসি-আনন্দে। অল্প বয়সে হাস্যোজ্জ্বল বৃষ্টি পদ্মার চরাঞ্চলে খেতে খামারে খেলাধুলায় মেতে থাকত প্রতিদিন। দরিদ্র পরিবারে জন্ম হওয়ায় লেখাপড়া ততটা এগোয়নি। বাবার অভাবের সংসারে হাসির আড়ালে ভয়ংকর অদৃশ্য ছোবলে বৃষ্টির দিন এলোমেলো হতে শুরু করল বাল্যবিবাহতে। অভাবের সংসারে ছেলে-মেয়েদের ভরণ-পোষণে হিমশিম খেত বৃষ্টির বাবা। বাধ্য হয়ে ছয়-সাত বছর পূর্বে সামাজিকভাবে উঠতি বয়সেই বাল্যবিবাহ যেন ঘোর অন্ধকার নেমে এলো বৃষ্টির জীবনে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে ১২-১৩ বছর বয়সে বৃষ্টির বিয়ে দেওয়া হয় একই উপজেলার বয়ড়া ইউনিয়নের খালপাড় গ্রামের কাউসারের সাথে। অপ্রাপ্ত বয়সে সংসার আর খুটিনাটি ঝগড়া লেগেই থাকত বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। তবে স্বামীর বাড়ির আশপাশের লোকজনের ভাষ্যমতে বৃষ্টি ছিল শান্ত স্বভাবের। এক পর্যায়ে বৃষ্টির বিবাহ-বিচ্ছেদ হয় অন্য কারও সাথে সম্পর্কের অভিযোগে। দেনমোহরের লক্ষাধিক টাকাসহ ৪-৫ লাখ টাকার ক্ষতিসাধনের অভিযোগ করেছে বৃষ্টির শ্বশুর বাড়ির লোকজনরা। বিবাহ-বিচ্ছেদের পর হঠাৎ উধাও হয়ে যায় বৃষ্টি। এমনকি বাবার সংসারের কারওর সাথে নাকি বৃষ্টির কোনো রকম যোগাযোগই ছিল না বলে জানা গেছে। গ্রামে দরিদ্র পরিবারের মেয়ে বৃষ্টির চেহারাসুরুত (শ্যামলা) তেমনটা ভালো ছিল না বলে অনেকেই উপহাস করত। বছর দুয়েক পুর্বে আবার হঠাৎ আন্ধারমানিক ট্রলারঘাট দিয়ে বৃষ্টি চরাঞ্চলে নানির বাড়িতে আসছিল বলে অনেকেই দেখেছেন। তখন বৃষ্টির চেহারাসুরুত আর এমন পরিবর্তন দেখে অনেকেই অবাক। গ্রামের সহজ-সরল বৃষ্টির এমন হঠাৎ পরিবর্তন দেখে অনেকেই চতুর বৃষ্টির নতুন পরিচয় শুরু হয়। এমন হঠাৎ পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টি কারও কথা শোনত না। এমনকি নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত নিত। এছারা বৃষ্টির একাধিক ফেসবুক আইডির স্ট্যাটাস থেকে তথ্যানুযায়ী দেখা যায়, সমাজের প্রতি তার অদৃশ্য কারণ আর ঘৃণার ছবি ভিডিও স্পষ্ট ফুটে উঠেছেন। বৃষ্টির বেশ কয়েকটি ফেসবুক আইডি হতে ভালো-খারাপ মিলে মাঝে মধ্যে পোস্ট দেখা যেত। গ্রামের সহজ-সরল দরিদ্র জেলের ঘড়ে জন্ম নেওয়া বৃষ্টি সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কবে কখন কীভাবে এমন অন্ধকার জগতে গেল, সেটা সবার মনে প্রশ্ন জেগেছে।

বৃষ্টির বাবার পাশের বাড়ির লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বৃষ্টি শান্ত-স্বভাবের ছিল। পরিবারের অভাবের কারণে হয়তো এমন হতে পারে বলে তার পরিবার আর অনেকেই ধারণা করছে।

তবে বৃষ্টির শ্বশুর বাড়ির আশপাশের লোকজন এমনকি পরিচিতজনদের মধ্যে শাহিন, হাসেম ,ফরহাদ, নাসির জানান, বৃষ্টি শান্ত-স্বভাবের ছিল। তার শ্বশুর বাড়ির লোকজনদের সাথে মাঝে মধ্যে পারিবারিক ঝামেলা চলত। পরকিয়ার অভিযোগে বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়। এমনকি দেনমোহরের টাকাসহ পাঁচ লক্ষাধিক টাকার ওপরে শ্বশুর বাড়ির ক্ষতিসাধন করে বলে জানা গেছে। এরপর বৃষ্টিকে এলাকায় কেউ দেখেনি। হঠাৎ উধাও বৃষ্টির ছবি আর নিউজ দেখে অনেকেই চিনতে পারেনি। কারণ বৃষ্টির চেহারা সুরুতের এমন পরিবর্তন আর চলাফেরার ধরনে হতবাক সবাই।

আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে পর্নোগ্রাফির সঙ্গে জড়িত নাদিয়া আক্তার বৃষ্টিসহ বাংলাদেশি যুগলকে গত রোববার গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গত রোববার রাত সাতে ৩টার দিকে বান্দরবান জেলা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও বৃষ্টি (২৮)। এর মধ্যে আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামে, আর বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের পাটগ্রাম।

তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে গত সোমবার রাজধানীতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে সিআইডি।

বৃষ্টির বাবার সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি যখন জেলে ছিলাম, মাছ মেরে সংসার চালাতাম। তখন বৃষ্টির জন্ম হয়। এখন আমি চায়ের দোকান করি। আমার মেয়ে আমার কথা, পরিবারের কথা শোনেনি কখনো। তাকে মেয়ে পরিচয় দিতে আমার কষ্ট হয়। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে বৃষ্টি বড়। ৫-৬ বছর পূর্বে খালপাড় এলাকার কালার ছেলে কাউসারের বিবাহ হয়। মেয়েকে বলেছিলাম- কষ্ট হলেও সংসার করতে। কিন্ত মেয়ে শোনেনি। অভাবের সংসারে বিবাহ-বিচ্ছেদের পর সমাজের বোঝা মনে হয়তো বৃষ্টি আমাদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিছে। কিছুদিন পর স্বামীর সাথে ঝামেলা হয়ে মেয়ে কোথায় গেছে জানি না। আমি আমার মেয়েকে তেজ্য করেছি অনেক আগেই। তাকে আর মেয়ে হিসেবে পরিচয় দেই না।

মন্তব্য

p
উপরে