মহামারির মধ্যে নতুন অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার যে বাজেট অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দিয়েছেন, তার ৬১ শতাংশই খরচ হবে সরকার পরিচালন বাবদ।
৩ লাখ ৬৬ হাজার ৬০৩ কোটি টাকার এই পরিচালন ব্যয় বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি।
আর এই টাকার প্রায় অর্ধেক, ১ লাখ ৬৬ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা খরচ হবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, পেনশন এবং সুদ মেটাতে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ ৬৯ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা চলে যাবে বেতন-ভাতায়, যা মোট রাজস্ব বাজেটের ১৯ দশমিক ০৩ শতাংশ।
সুদ পরিশোধে খরচ হবে ৬৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা বা ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। আর অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন বাবদ ব্যয় হবে ২৮ হাজার ২০৯ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ৭ শতাংশ।
এই তিন খাতের মধ্যে বেতন ও সুদ বাবদ ব্যয় চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরে বেশি ধরেছেন অর্থমন্ত্রী।
বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেটে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতায় বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৬৫ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা সামান্য কমে ৬৫ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা করেছেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থাৎ এই খাতে অর্থমন্ত্রী বরাদ্দ বেশি ধরেছেন ৩ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেশি।
সুদ পরিশোধে চলতি বছরের বরাদ্দ ছিল ৬৩ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮ হাজার ৫৮৯ কোটি। এই খাতে আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ বেশি ধরেননি অর্থমন্ত্রী।
পেনশনে মূল বাজেটের ২৭ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা থেকে কিছুটা কমে ২৭ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা হয়েছে। এই খাতেও অর্থমন্ত্রীকে কিছুটা বেশি বরাদ্দ রাখতে হয়েছে।
শেখ হাসিনার টানা তৃতীয় মেয়াদের সরকারের তৃতীয় বাজেট বৃহস্পতিবার সংসদে পেশ করেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। ৩০ জুন এই বাজেট পাস হবে। ১ জুলাই থেকে শুরু হবে নতুন অর্থবছর।
এমন একসময়ে এবার বাজেট দিতে হলো, যখন বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের মহামারিতে অর্থনীতি পড়েছে নাজুক দশায়। ফলে অর্থমন্ত্রীকে বাজেট সাজাতে গিয়ে মানুষের জীবন-জীবিকা বাঁচানোর পাশাপাশি অর্থনীতির ক্ষত সারানোর কথা মাথায় রাখতে হয়েছে।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ সরকারের ব্যয় স্বাভাবিকভাবেই প্রতিবছর বাড়ে। অন্য অনেক খাতে বরাদ্দ কমানো গেলেও ঋণের সুদ পরিশোধ এবং বেতন-ভাতায় কাঁচি চালানোর সুযোগ থাকে না।
অর্থনীতিতে বাজেটকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় বা পরিচালন বাজেটকে বলে রাজস্ব বাজেট। আর উন্নয়ন বাজেট পরিচিত সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-এডিপি হিসেবে।
২০২১-২২ অর্থবছরের এই বাজেটে অর্থমন্ত্রী ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা করেছেন। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় বা রাজস্ব বাজেট ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা।
নতুন বাজেটে এ তিন খাতে বেশি অর্থ ব্যয় ধরার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, মুনাফার হার বেশি হওয়ায় গত কয়েক ধরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি অনেক বেড়েছে। সেই সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে সরকারকে। তাতে এ খাতে ব্যয় বেশি হচ্ছে। অন্যদিকে দেশি-বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। তার সুদও শোধ করতে হবে।
সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতিবছর ইক্রিমেন্ট হয়; তার পেছনেও ব্যয় বাড়ে। অনেকের পদোন্নতি হওয়ায় বেতন বাড়ে। সে কারণে এ খাতেও সরকারের খরচ বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক।
‘একটা বিষয় লক্ষ্য করার মতো, এই মহামারির সংকটে অনেকেরই চাকরি চলে গেছে। অনেকের বেতন কমেছে। বিভিন্ন গবেষণায় বলা হচ্ছে, প্রায় আড়াই লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। মোট কথা, দেশের বেশির ভাগ মানুষ খুবই কষ্টে আছে। শুধু বহাল তবিয়তে আছে সরকারি কর্মকর্তারা। তাদের আয় কমেনি; উল্টো ইক্রিমেন্টসহ নানান সুবিধার কারণে বেড়েছে।
‘সে কারণেই সরকারকে তাদের জন্য এই কঠিন সময়েও বেশি খরচ হচ্ছে’- বলেন ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর।
মুস্তফা কামাল তার তৃতীয় বাজেটে বেতন ও ভাতা বাবদ যে বরাদ্দ রেখেছেন, তার মধ্যে ১১ হাজার ৯৫ কোটি টাকা কর্মকর্তাদের বেতনে খরচ করবেন। ২৫ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা খরচ করবেন কর্মচারীদের বেতনের জন্য। আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভাতার জন্য রেখেছেন ৩২ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা।
সুদ পরিশোধের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য রাখা হয়েছে ৬২ হাজার কোটি টাকা। আর বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য রেখেছেন ৬ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা।
অন্যান্য ব্যয়
সরবরাহ ও সেবা খাতের খরচের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৬ হাজার ১২১ কোটি টাকা। মেরামত ও সংরক্ষণ বাবদ নতুন বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১০ হাজার ৪১ কোটি টাকা।
২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি বাবদ ৩৪ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রণোদনায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১১ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা।
নতুন বাজেটে সরকারের ব্যয় নির্বাহের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন, সেখানে সামগ্রিক ঘাটতি দেখানো হয়েছে প্রায় সোয়া ২ লাখ কোটি টাকা। ঘাটতির এই পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৬ দশমিক ২ শতাংশ।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঘাটতি মেটাতে সরকারকে দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে ২ লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা ঋণ নিতে হবে।
অর্থমন্ত্রী পরিকল্পনা করেছেন, এবার বৈদেশিক উৎস থেকে মোট ১ লাখ ১২ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা ঋণ নেবেন। সেখান থেকে ১৪ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা আগের ঋণের কিস্তি পরিশোধে খরচ করবেন। ফলে সরকারের নিট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা।
ঘাটতির বাকি ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা নেয়া হবে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হবে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা, ব্যাংকবহির্ভূত উৎস থেকে নেয়া হবে ৩৭ হাজার ১ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে নেয়া হবে ৩২ হাজার কোটি টাকা। বাকি ৫ হাজার ১ কোটি টাকা অন্যান্য উৎস থেকে নেয়ার পরিকল্পনার ছক কষেছেন মুস্তফা কামাল।
বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেটে নিট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ধরা হয়েছিল ৭৬ হাজার ৪ কোটি টাকা, সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে ৬৮ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এ অর্থবছরের মূল বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা নিয়ে ঘাটতি মেটানোর কথা বলা হয়েছিল। সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ১ লাখ ১৫ হাজার ৫২ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়।
বিদায়ী অর্থবছরে মূল বাজেটে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ধার করার লক্ষ্য ছিল; সংশোধিত বাজেটে তা কমে ৭৯ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা নেয়ার লক্ষ্য ছিল। সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে ৩০ হাজার ৩০২ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।
বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, সংশোধিত বাজেটে তা অবশ্য কমে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা হয়েছে।
আরও পড়ুন:র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি), অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছেন, মব ভায়োলেন্স বা মব সন্ত্রাস করে এ দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করা যাবে না। অপরাধী যেই হোক বা যে দলেরই হোক, আমরা তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করব।
শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে ঘটে যাওয়া ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবস্থা গ্রহণের অগ্রগতিসহ আরও কয়েকটি ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে প্রেস ব্রিফিং করেন র্যাবের ডিজি। ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, ‘র্যাব এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেকোনো ধরনের অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের বিষয়ে তৎপর রয়েছে। দেশে বিগত কয়েক মাসে ঘটে যাওয়া অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের র্যাব গ্রেপ্তার করেছে। তাদের যেন শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়, সে ব্যাপারে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি। মব ভায়োলেন্স সৃষ্টির অপরাধে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ জন অপরাধীকে র্যাব আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে।’
‘গত ২ জুলাই লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানায় সন্ত্রাসী কর্তৃক মব সৃষ্টির মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের আহত করে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমরা ৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। এ ছাড়াও গত ৩ জুলাই কুমিল্লার মুরাদনগরে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় একই পরিবারের মা ও দুই সন্তানের ওপর মব ভায়োলেন্সের অযাচিত ঘটনায় ৬ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
সলিমুল্লাহ মেডিকেলের সামনে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত এজাহারনামীয় ৪ নম্বর আসামি আলমগীর (২৮) এবং ৫ নম্বর আসামি মনির ওরফে লম্বা মনিরকে (৩২) আমরা গতকাল (শুক্রবার) রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।’
‘এ ঘটনায় আমরা ছায়া তদন্ত করছি, আর পুরো বিষয়টি দেখছে ডিএমপির তদন্ত বিভাগ।’
র্যাবের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে (৩৯) নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনাকে খুবই দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর পুরান ঢাকার মিল ব্যারাকে পুলিশের বিশেষ কল্যাণ সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ব্যবসায়ী হত্যা ও মব সহিংসতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র বলেন, ‘ঢাকায় যে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে, সেটা খুবই দুঃখজনক। এ ঘটনায় এরই মধ্যে পাঁচজনকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। গতকালও র্যাব দুজন ও ডিএমপি দুজনকে ধরেছে। পরে আরও একজনকে ধরা হয়েছে।’
বাকিদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সতর্ক অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা মোটামুটি অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছি। ছোটখাট ঘটনায়ও সংঘাতে জড়িয়ে পড়ি। এই জিনিসটা বন্ধ করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এর আগে চাঁদপুরে, খুলনা ও চট্টগ্রামের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। যেগুলো হচ্ছে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
পুলিশের মিল ব্যারাক এলাকা পরিদর্শন নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে পরিদর্শনের উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের সঙ্গে একটু কথা বলা। তাদের থাকা ও খাবারের মান দেখা। আগামী নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজনে তাদের একটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব এখানে।’
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে চাই বলেও এ সময় মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কবে হবে, সেটা আমরা জানি না। সেটা জানাবে নির্বাচন কমিশন।’
অভিযানে গৌরবময় অবদান রাখায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের টাগবোট ‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ এবং এর ক্রুদের ‘প্রশংসাপত্র’ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও)।
শনিবার সকালে কোস্টগার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ বাসস’কে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থানকালে গত বছর ৫ অক্টোবর রাতে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) মালিকানাধীন তেলবাহী জাহাজ ‘এমটি বাংলার সৌরভ’-এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দ্রুত ও কার্যকর অগ্নিনির্বাপণ এবং সামুদ্রিক পরিবেশগত বিপর্যয় রোধে ‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ অসাধারণ ভূমিকা রাখে।
ঘটনার সময় ট্যাংকারটিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে এবং আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যা সামুদ্রিক জীববৈচিত্র ও পরিবেশের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। তৎক্ষণাৎ জরুরি উদ্ধার অভিযান শুরু করে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড।
‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ এবং এর সাহসী নাবিকরা ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সফল অভিযান পরিচালনা করেন। সেই অভিযানে ৪৮ জন নাবিককে উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি তেল ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে কার্যকর ব্যারিয়ার স্থাপন ও বর্জ্য সংগ্রহের মাধ্যমে গভীর সমুদ্রে দূষণরোধ করা হয়।
এই দৃষ্টান্তমূলক ও সাহসিকতাপূর্ণ অভিযানের জন্য আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) ‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ এবং এর ক্রুদের ‘লেটার অব কমান্ডেশন' দিয়েছে।
আইএমও এই অভিযানে প্রদর্শিত পেশাদারিত্ব, দক্ষতা, পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা এবং আন্তর্জাতিক নৌ নিরাপত্তা নীতিমালা অনুসরণের বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে মূল্যায়ন করেছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আইএমও’র এই স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও দেশের জন্য বড় অর্জন। এটি শুধু কোস্টগার্ড নয়, পুরো দেশের জন্যই গর্বের। এই স্বীকৃতি প্রমাণ করে, কোস্টগার্ড একটি আধুনিক ও দক্ষ বাহিনী হিসেবে যেকোন দুর্যোগে সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ কোস্টগার্ড সর্বদা সমুদ্রসীমায় নিরাপত্তা বিধান, বিপদগ্রস্তদের উদ্ধার, সমুদ্র দূষণ প্রতিরোধ ও পরিবেশ সুরক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভবিষ্যতেও বাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর থাকবে।
টানা চার দিনের মুষলধারে বৃষ্টিপাতের পর টানা দুদিন নোয়াখালীতে রোদ্রৌউজ্জ্বল আবহাওয়া বিরাজ করছে। এতে অধিকাংশ উপজেলায় জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর, দুর্গাপুর ও লক্ষীনারায়ণপুর গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামে পানি বেড়েছে। স্থানীয়দের ধারণা ফেনীর পানি ঢুকে বৃষ্টি না থাকলে এ অঞ্চলে পানি বেড়েছে।
শনিবার (১১ জুলাই) সকালে জেলার সদর, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দারা জানায় তাদের এলাকায় পানি নামছে ধীর গতিতে। এজন্য বেশিরভাগ এলাকায় এখনো বন্যার পানি জমে থাকায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার ছয়টি উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। এতে ৪৬ হাজার ৭০টি পরিবারের প্রায় ১ লাখ ৯২ হাজার ৫০৩ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। কবিরহাট ও সুবর্ণচর উপজেলায় আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৫টি বসতঘর। সুবর্ণচরে একটি বসতঘর সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ,পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাব এবং পানি নিষ্কাশনের নালা ও জলাশয় গুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় শহরবাসীর এ দুর্ভোগ। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন অনেকে। হালকা বৃষ্টিতেই নোয়াখালী পৌরসভা এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এদিকে মাইজদীর লক্ষ্মীনারায়ণপুর, সেন্ট্রাল রোড, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা শিল্পকলা একাডেমিসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় এখনো রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে রয়েছে। আশপাশের অনেক বাসাবাড়িতেও পানি জমে রয়েছে। টানা বৃষ্টির বিরতিতে মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেলেও জলাবদ্ধতা ও বন্যা পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।
জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে তেমন কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। আপাতত ভারী বৃষ্টিরও সম্ভাবনা নেই। তবে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে।
জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, পাঁচটি উপজেলায় ৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ১ হাজার ৮৫০ জন মানুষ এবং ১৭১টি গবাদি পশু। দুর্গতদের চিকিৎসায় ৫১টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে, যার মধ্যে ২৯টি কাজ শুরু করেছে। বন্যার ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, পানি নিষ্কাশনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বৃষ্টি না হলে জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, মিটফোর্ডের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারে সরকার বদ্ধপরিকর। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইনের অধীনে দ্রুততম সময়ে বিচার শেষ করা হবে।
উপদেষ্টা শনিবার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, মিটফোর্ডের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারে সরকার বদ্ধপরিকর। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৫ জনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
তিনি আরো বলেন, এই পাশবিক হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হবে এবং ধারা ১০-এর অধীনে দ্রুততম সময়ে বিচার নিশ্চিত করা হবে।
গত বুধবার রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯)। হত্যার আগে তাকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে ও ইট-পাথরের আঘাতে মাথা ও শরীর থেঁতলে দেওয়া হয়।
এই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ, মামলার এজাহার, নিহতের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এবং তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে হত্যাকাণ্ডের এমন বর্ণনা উঠে এসেছে।
মিটফোর্ড (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালের সামনের ব্যস্ত সড়কে প্রকাশ্যে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। তদন্তকারী কর্মকর্তারা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ চাঁদাবাজি। নিহত লাল চাঁদ একসময় যুবদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
এদিকে, অভিযুক্ত নেতা-কর্মীদের দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে বিএনপি। পাশাপাশি ঘটনার নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে আসকর আলী (২৪) নামে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন।
শনিবার (১২ জুলাই) ভোরে উপজেলার মিনাপুর সীমান্তের ৩৫৩ নম্বর প্রধান পিলারের কাছে ভারতের অভ্যন্তরে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আসকর আলী হরিপুর উপজেলার জীবনপুর গ্রামের কানুরার ছেলে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
স্থানীয় সূত্র ও বিজিবি জানায়, শনিবার ভোর আনুমানিক চারটার দিকে আসকর আলীসহ কয়েকজন মিনাপুর সীমান্তের ৩৫৩ নম্বর প্রধান পিলার সংলগ্ন এলাকা দিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে যান। এ সময় ভারতের কিষাণগঞ্জ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে আসকর আলী ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তার মরদেহ ভারতের প্রায় ২০০ গজ অভ্যন্তরে পড়ে আছে বলে জানা গেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সীমান্তে অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। অপরদিকে, ভারতের সীমান্তেও অতিরিক্ত বিএসএফ সদস্য মোতায়েন রয়েছে বলে জানা গেছে।
দিনাজপুর ৪২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু করেছে। নিহত যুবকের লাশ ফেরত আনার জন্য বিএসএফকে পতাকা বৈঠকে বসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
৪২ বিজিবি জানিয়েছে, "আমরা বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে লাশটি ফেরত আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক কার্যালয়ের আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুলের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের গুরুতর অভিযোগের তদন্ত চলাকালীন শুক্রবার এ সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি।
ডব্লিউএইচও’র এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ সরকার বলেছে, আমরা এটিকে জবাবদিহিতার পথে গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেখি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম শনিবার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে সরকারের এই বক্তব্য তুলে ধরেন।
সায়মা ওয়াজেদকে পদ থেকে অপসারণ প্রসঙ্গে তিনি লেখেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এর একটি স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন, যেখানে সায়মা ওয়াজেদকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হবে, তার সকল সুযোগ-সুবিধা বাতিল করা হবে এবং এই মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্বের সততা ও জাতিসংঘ ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধার করা হবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ও বিশ্ববাসী স্বচ্ছতা, সততা ও ন্যায়বিচারের আবির্ভাবে আনন্দিত।
মন্তব্য