নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাজশাহীর রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে দেয়া বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় স্বভাবতই সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে স্বাস্থ্যখাত। এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোয় আওয়ামী লীগ নেতারা প্রকাশ করেছেন সন্তুষ্টি। অপরদিকে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। আবার যা দেয়া হয়েছে তাও বাস্তবায়ন হয় কি না সন্দেহ।
তাদের কথায় উঠে এসেছে কৃষিখাত, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প, মহামারির মধ্যে স্বল্প আয়ের মানুষ ও ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা, প্রণোদনা, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ নানা বিষয়।
তবে অনেকেই মনে করেন, বাজেট বাস্তবায়ন করায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বরাদ্দ থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই তার পূর্ণ বাস্তবায়ন হয় না।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ডা. গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘আমাদের যে বাজেট আসে, তা সম্পূর্ণ ব্যবহার করতে পারি না। এই জায়গায় আমরা পিছিয়ে আছি। এজন্য বাজেট বাস্তবায়নকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।’
স্বাস্থ্যখাত নিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতে যে সমস্যাটা হয় সেট হলো, সঠিক জায়গায় অর্থের ব্যবহার এবং পরিমাণমত ব্যবহার হয় না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সবাইকে অনুরোধ করব, এবার চোখে আঙুল দিয়ে স্বাস্থ্যবিভাগের যে ফাঁক-ফোকরগুলো দেখা গেল, সেগুলোকে যেন এবারের বাজেটের মাধ্যমে উত্তোরণ ঘটাতে পারি।’
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, ‘বাজেটে সরকার সিলিন্ডার গ্যাসের দাম কমিয়েছে। কোভিডের ক্ষেত্রে বাজেট বাড়িয়েছে; প্রণোদনার ব্যবস্থাও করেছে। এই বাজেটের আকার যা তাতে মনে হচ্ছে, জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে।
তিনি আরও বলেন, ‘মেগা প্রজেক্টগুলো করোনার সময় একটু স্লো হয়ে গেছে। আমাদের রাজশাহীর অনেক দাবিই প্রধানমন্ত্রী পূরণ করেছেন। আমাদের বিমানবন্দর প্রশস্ত করা, রাস্তাঘাট এসব করে দিয়েছেন। আমাদের অনেক কাজের ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ হয়ে গেছে।
‘আমাদের বিসিক-২ এর কাজ চলছে। দ্বিতীয় অর্থনৈতিক জোন হলে আমাদের কর্মসংস্থান অনেক বাড়বে।’
রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল অবশ্য মনে করেন বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ যথেষ্ট নয়।
তার দাবি, করোনা মহামারির মধ্যে বাজেটের যে সম্ভাব্যতা যাচাই করা উচিত ছিল, সেটি এখনও হয়নি। গত এক বছর স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো উন্নয়ন হয়নি। দেশকে রক্ষায় স্বাস্থ্যবিভাগের জন্য আলাদা বিশেষ বাজেট দেয়া উচিত ছিল।
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি উপজেলাতে পাঁচটি করে আইসিইউ ও জেলাতে ২৫টি আইসিইউ শয্যা দেয়া উচিত। এটি এখনই প্রকল্পের মাধ্যমে আসা দরকার ছিল। আমার মনে হয় এটি এই বাজেটে আসেনি। একটি থোক বরাদ্দ যথাযথ মনে করছি না।’
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি সাহসী বাজেট হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘একটি ভালো বাজেট হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা লাগবে। এটি ব্যবসায়ীদের জন্য ভালো বাজেট। কৃষি বিভাগের জন্য ছাড় দিয়েছে। এটি আমাদের উপকারে আসবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই অঞ্চল কৃষি আর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের এলাকা। বাজেটে কৃষিতে ছাড় দেয়ায় ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। করোনার মধ্যে এত বড় বাজেট দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।’
বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনবান্ধব নেত্রী। তিনি সব সময় জনগণের ভালোর জন্য কাজ করছেন। দেশের জন্য কাজ করছেন। সুতরাং এই বাজেটও জনমুখী হবে।’
বগুড়া হোটেল মোটেল অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান বলেন, ‘সারা দেশের উন্নয়ন ঘটাতে গেলে সুষম বাজেটের কোনো বিকল্প নেই। আপাতত মনে হচ্ছে এই বাজেট গণমুখী হবে। তবে বিস্তারিত না পড়ে মন্তব্য করা কঠিন।’
বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বগুড়া ৬ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মো. সিরাজ বলেন, ‘বাজেট সম্পর্কে দলীয়ভাবে এখন মন্তব্য করা যাবে না। আগামীকাল এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাব।’
নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি উমা চৌধুরী জলি বলেন, ‘এই বাজেটে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। বিশেষ করে কৃষিখাত ও স্বল্প আয়ের মানুষকে সুরক্ষা দেবার ব্যবস্থা রেখেছে সরকার। এ বাজেট জনকল্যাণমুখী।’
ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, ‘চলতি বাজেটে ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়েছে। করোনার সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই ব্যবসা ক্ষেত্রে বাজেটে বাড়তি নজর দেয়া উচিত ছিল।’
সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, বাজেট হতে হবে জনকল্যাণমুখী। কোনো শুভঙ্করের ফাঁকি বা ভাউতাবাজির বাজেট নয়।
‘ইতোপূর্বে এ রকম বাজেট হওয়ার কারণে দেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতারা কালো টাকার পাহাড় গড়তে পেরেছেন।’
সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কে এম হোসেন আলী হাসান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করে, দেশের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে বাজেট ঘোষণা করে থাকে। এবারও একইভাবে সুন্দর একটা বাজেট ঘোষণা হয়েছে। এজন্য অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।’
সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইমদাদুল হক বলেন, ‘সিরাজগঞ্জ জেলাটি তাঁত শিল্পে সমৃদ্ধ। গত দুই বছর ধরে তাঁতশিল্পে দুর্দিন যাচ্ছে। তাঁতীরা আজ তাঁত বিক্রি করে অন্য পেশা খুঁজছেন।
‘তাঁত শিল্পকে রক্ষা করতে ব্যবসায়ীদের প্রণোদনাসহ সব সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সুন্দর একটা বাজেট আমরা চাই।’
নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নির্মূল কৃষ্ণ সাহা বলেন, ‘মহামারি অর্থনীতির অনেকখাতে আঘাত হেনেছে। কিন্তু দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য এবার এই বিশাল বাজেট জাতীয় সংসদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে।
‘আওয়ামী লীগ সরকার চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করে। এটা মহামারির সময়ে এত বড় বাজেটে প্রমাণ হয়। এটি দেশের সকল মানুষের কল্যাণে ভূমিকা রাখবে।’
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নাজমুল হক সনি বলেন, ‘বাজেটের আকার বড় কিন্তু বাজেটের সঠিক বণ্টন হয় না। স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ আরও বাড়ানো প্রয়োজন, কিন্তু স্বাস্থ্যখাত তো দুর্নীতির আখড়া।
‘অন্যদিকে করোনার এই সময় আরও বেশি অসহায় ও নিম্ন আয়ের মানুষের সুরক্ষার বিষয়টি অগ্রাধিকার দেয়া উচিত ছিল। এই বাজেটের অর্থ সঠিকভাবে পরিচালনা হবে কি না তা নিয়েও সন্দেহ আছে।’
নওগাঁর ব্যবসায়ী এনামুল হক বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতির মধ্যেও এবার বড় বাজেট পেশ করা হয়েছে। আশা করছি যদি সঠিকভাবে দেশের উন্নয়নকল্পে ব্যয় হয়, তবে মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে।’
জয়পুরহাট-১ আসনে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট সামছুল আলম দুদু বলেন, ‘প্রতি বছরই আওয়ামী লীগ সরকার জনবান্ধব বাজেট পেশ করেছে। এবারও তার প্রতিফলন থাকবে। কারণ জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার সর্বসাধারণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে।’
জয়পুরহাট জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক তিতাস মোস্তাফা জানান, ‘সরকার ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয় কীভাবে বাড়ায় তা দেখার বিষয়। পাশাপাশি তা যেন হয় জনকল্যাণকর।
‘জনগণের ওপর যেন করের বেশি বোঝা না চাপানো হয়। কারণ করোনার ধকলে স্থানীয়দের অর্থনীতির মেরুদণ্ড একবারে ভেঙ্গে পড়েছে।’
প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন বগুড়া প্রতিনিধি খোরশেদ আলম, নাটোর প্রতিনিধি নাজমুল হাসান, নওগাঁ প্রতিনিধি সবুজ হোসেন, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি গোলাম মোস্তফা রুবেল, জয়পুরহাট প্রতিনিধি রাজীব হাসান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি আব্দুর রব নাহিদ।
আরও পড়ুন:কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হাসেম আলী (৩৫) নামে এক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার (২২ জুন) সকাল ৯টার দিকে উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের হোসেনাবাদ গোড়ের পাড়া গ্রামে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত হাসেম আলী দৌলতপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোবরগাড়া গ্রামের মৃত আছান শেখের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্মাণাধীন একটি ভবনে ইট ভেজাতে গিয়ে বৈদ্যুতিক মোটরে কাজ করার সময় অসাবধানতাবশত বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন হাসেম আলী। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা বলেন, “বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) এক ছাত্রীকে অচেতন করে ধর্ষণের অভিযোগে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. মোখলেসুর রহমানকে প্রধান করে শনিবার এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো সাইফুল ইসলাম এবং ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং ও টি টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক বেলাল শিকদার।
এসব তথ্য জানিয়ে শাবি প্রক্টর মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। নির্ধারিত সময়ে রিপোর্ট দেবো। এর সাথে আরও কেউ জড়িত কি না তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হবে। যাদেরই সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এরআগে শুক্রবার বিকেলে ওই ছাত্রী বাদি হয়ে সিলেটের কতোয়ালি থানায় ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
মামলায় শান্ত তারা আদনান এবং স্বাগত দাস পার্থ’র নাম উল্লেখ করে অজ্ঞতনামা আরও তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।
আদনান ও পার্থকে বৃহস্পতিবার রাতেই আটক করে পুলিশ। পরে মামলায় তদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তারা দু'জনই শাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার শান্ত তারা আদনান নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি শাবি ছাত্রলীগের সভাপতি খলিলুর রহমানের অনুসারী ছিলেন। আওয়ামী লীগ শাসনামলে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসীূচতে তাকে দেখা গেছে। আদনান বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যান্ড দল ‘নোঙর’-এরও সদস্য ছিলেন।
অপরদিকে, ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া আরেক শিক্ষার্থী স্বাগত দাস পার্থ গত বছরের জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে সক্রিয় ছিলেন বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষার্থী। তার ফেসবুকে প্রোফইলেও জুলাই আন্দোলনের সমর্থনে ছবি যুক্ত রয়েছে। তবে কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিযোগ, পার্থ ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। তবে তিনি তেমন সক্রিয় ছিলেন না।
এদিকে, পার্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যসংগঠন ‘দৃক থিয়েটার’-এর কর্মী ছিলেন বলে জানা গেছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে ভুক্তভোগী ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর ধর্ষণের লিখিত অভিযোগ করেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগ এবং বিশ্ববিদ্যালের শৃঙ্খলা-বডি সূত্রে জানা যায়- গত ২ মে সন্ধ্যারাতে সহপাঠী শান্ত তারা আদনান এবং স্বাগত দাস পার্থের সঙ্গে শহরের কনসার্টে যাচ্ছিলেন ওই ছাত্রী। কনসার্টে যাওয়ার পূর্বে তারা ওই ছাত্রীকে সুরমা এলাকার একটি মেসে নিয়ে যান। এ সময় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে অচেতন করে ধর্ষণ করেন আদনান এবং পার্থ। একইসাথে এই ঘটনার ভিডিও এবং মেয়েটির নগ্ন ছবি ধারণ করেন। পরে ওইসকল ভিডিও ও নগ্ন ছবি দেখিয়ে আদনান এবং পার্থ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে নিয়মিত ব্ল্যাকমেইল করছিলেন এবং ঘটনা জানাজানি করলে ভিডিও ও ছবি অনলাইনে ছেড়ে দেওয়ার হুমকিও দেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী প্রক্টর বরাবর অভিযোগ করলে প্রক্টর অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে পুলিশকে জানান। পরে পুলিশ আদনান এবং পার্থকে আটক করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসেন। এরপর প্রক্টরের সঙ্গে আলোচনা শেষে তাদেরকে থানায় পুলিশ হেফাজতে নেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান বলেন, 'বৃহস্পতিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থী শ্লীলতাহানির বিষয়ে অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনার সত্যতা পেয়েছি আমরা। বর্তমানে অপরাধীরা পুলিশ হেফাজতে আছে এবং মামলার বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া চলমান।'
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম বলেন, 'প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে যে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন তা নেওয়া হচ্ছে।'
র্যাবের অভিযানে ০৫ টি ডাকাতি, ০২ টি অস্ত্র আইনের মামলাসহ মোট ০৯ টি মামলার আসামী জলিল ডাকাতকে পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ হতে গ্রেফতার করেছে সিপিসি-১, র্যাব-৮ এবং সিপিএসসি, র্যাব-৬, খুলনার যৌথ আভিযানিক দল।
র্যাব-৮, সিপিসি-১ (পটুয়াখালী) এবং র্যাব-৬, সিপিএসসি (খুলনা) এর যৌথ গোয়েন্দা ও অভিযানিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ২১ জুন ২০২৫ ইং তারিখ বিকেল আনুমানিক ১৭৪৫ ঘটিকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া থানায় সংঘটিত চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস ডাকাতি মামলার মূল হোতা মোঃ আঃ জলিল খাঁন (৪০), পিতা- আলী আকবর খাঁন, সাং-হোসনাবাদ, থানা- বেতাগী, জেলা- বরগুনা’কে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ভুক্তভোগী মোঃ গিয়াস উদ্দিন একজন প্রবাসী, যিনি সৌদি আরব থেকে ৯ জানুয়ারি ২০২৫ ইং দেশে ফেরেন। গত ৮ এপ্রিল ২০২৫ ইং তারিখ গভীর রাতে, আনুমানিক ০৩:০০ ঘটিকায় তার মঠবাড়িয়া থানাধীন বাড়িতে একদল সশস্ত্র ডাকাত হামলা চালায়। ১০-১২ জনের এই ডাকাত দল বাড়ির গ্রিল কেটে ঘরে প্রবেশ করে পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। তারা ঘরের মালামাল ভাংচুর করে এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে নগদ অর্থ ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়। ডাকাতরা ওই সময় ঘর থেকে প্রায় ৩,৫০,০০০ (তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা নগদ, ২৯ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, ২টি স্মার্টফোন এবং ১টি ল্যাপটপসহ মোট আনুমানিক ৪৫,২০,০০০ (পঁয়তাল্লিশ লক্ষ বিশ হাজার) টাকার সম্পদ লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মঠবাড়িয়া থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়। ঘটনার পরপরই র্যাব গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায়, ২১ জুন ২০২৫ তারিখ বিকালে পরিচালিত অভিযানে মোঃ আঃ জলিল খাঁনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র্যাব। তাকে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
কৃষকের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে ষাড়ের মই দৌড় প্রতিযোগিতা। কিন্তু নানা কারণে এ খেলাটি দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে শুকনো মৌসুমে শেরপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করা হয়ে থাকে এ খেলা। শেরপুর সদরের চরশেরপুর নাগপাড়ায় মই দৌড় খেলার আনন্দে মেতে উঠে কৃষক সহ সাধারণ মানুষ।
শেরপুর জেলার কৃষকদের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে ষাড়ের মই দৌড় খেলা। শুকনো মৌসুমে মাঝে মাঝেই জেলার বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করা হয় ষাড়ের মই দৌড় প্রতিযোগিতা। যেখানেই আয়োজন করা হয় এ মই দৌড় খেলা, সেখানেই হাজির হয় হাজার হাজার বয়স্ক, যুবক শিশু-কিশোরসহ সর্বস্তরের মানুষ।
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ খেলাকে অনেকেই এখনো দেখেই নি। নতুন করে এ খেলা দেখে তারা খুব আনন্দ পেয়ে থাকে। যে এলাকায়ই ষাড়ের মই দৌড় খেলা অনুষ্ঠিত হয় সেখানেই উৎসবের আমেজ বয়ে যায়। ১৯ জানুয়ারি এমনই এক খেলার আয়োজন করে উৎসবে মেতে উঠে শেরপুর সদরের চরশেরপুর নাগপাড়া এলাকার মানুষ।
একটি মইয়ে ৪টি ষাড় গরু থাকে। আর এরকম দুটি করে মই দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। অনেক সময় নির্ধারিত দাগের বাইরে চলে যায় ষাড়ের মই। এতে আউট ধরা হয় ওই মইকে। এখানে থাকে দুজন মইয়াল। আরো থাকে ৩ জন ধরাল। রেফারীরর বাশিঁ ফুকানোর সঙ্গে সঙ্গেই মইগুলোর ষাড়েরা দৌড়ানো শুরু করে। যে মই বিজয়ী হয় তখন তারা মেতে ওঠে আনন্দে। আর চারদিকে দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার নারী, পুরুষ, শিশুর উল্লাস ধ্বনিতে মূখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। এ খেলা দেখাতে পেরে ময়ালরাও অনেক খুশি।
গ্রামবাংলার ষাড়ের দৌড় খেলা হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মকে জানান দিতে নাগপাড়ায় প্রথমবারের মতে এ খেলার আয়োজন করা হয়। স্থানীয়দের আগ্রহের কারণে পরবর্তীতেও আয়োজন করা হবে ঐতিহ্যবাহী ষাড়ের মই দৌড় প্রতিযোগিতা। এমনটাই জানালেন আয়োজকরা।
বিভিন্ন স্থান থেকে ৮টি মই দৌড় দল এ খেলায় অংশ গ্রহণ করে। এতে জামালপুর জেলা ইসলামপুরের চন্দনপুরের হাবু বেপারি চ্যাম্পিয়ন হয়।
খেলাশেষে বিজয়ী ও বিজিতদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করবে ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী। সফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব সোহানুর রহমান সাইম, শিক্ষক আসমত আলীসহ আরো অনেকে।
আয়োজক আসমত আলী বলেন, ‘এ খেলার প্রতি কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের আগ্রহ আছে, তাই আমরা প্রতিবছর এ খেলার আয়োজন করব।’
সীমান্তের ওপারে ভারতের ভেতরে সিলেটের এক যুবকের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দুপুরে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উৎমাছড়া সীমান্তের ওপারে জাকারিয়া আহমদ (২৩) নামের ওই যুবকের লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে বলে খবর পান পরিবারের সদস্যরা। বিষয়টি বিজিবি ও পুলিশকে জানিয়েছে পরিবার।
নিহত জাকারিয়া (২৩) কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার লামারগ্রাম কামালবস্তির আলাউদ্দিন আলাইয়ের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার ভোরে জাকারিয়া বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ১২৫৭ নম্বর মেইন পিলারের ২০ নম্বর ছাফ পিলারের নিকটবর্তী ভারতের অভ্যন্তরে একটি গাছের ডালে দড়িতে ঝুলন্ত একটি মরদেহ দেখা গেছে। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর নিহত ব্যক্তির পরিবার মরদেহটি জাকারিয়ার বলে শনাক্ত করে।
তার পরিবারের সদস্যরা জানান, গত সোমবার একই ইউনিয়নের কাকরাইল গ্রামের এক তরুণীর সঙ্গে জাকারিয়ার বিয়ে হয়েছিল।
সিলেট কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ জানান, ‘সীমান্তের পিলারের ওপারে এক যুবক আত্মহত্যা করেছেন। লাশ উদ্ধারের জন্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)র উৎমাছড়া ক্যাম্পের কমান্ডারের সাথে আলাপ হয়েছে। নিহতের পরিবার থেকে সাধারণ ডায়েরি করা হলে পরবর্তীতে বিজিবি ও পুলিশের সদস্যরা গিয়ে লাশ উদ্ধার করতে পারবে। যেহেতু সীমান্তের ওপারে তাই কিছু আইনি জটিলতার জন্য লাশ উদ্ধারে বিলম্ব হচ্ছে।’
এদিকে , বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) উৎমা বিওপি ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষা বাহিনী (বিএসএফ) সমন্বয়ে মরদেহ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতির খবর পাওয়া যায়নি।
কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানিতে ফেনীর ফুলগাজীতে মুহুরী নদীর একটি স্থানে বাঁধ ভেঙে লোকালয় পানি ঢুকেছে । এতে চার গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ২০২৪ এর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার বছর না পেরোতেই আবারও বাঁধ ভাঙনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দায়সারা কাজকে দুষছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জনগণ বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদারের দায়সারা সংস্কার ও মেরামতের কারণে এখানকার জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দিবাগত রাত ১০টার দিকে এ ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাত ১০টার দিকে ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর বরইয়া বণিকপাড়া সহদেব বৈদ্যের বাড়ি-সংলগ্ন মুহুরী নদীর বাঁধের একটি স্থানে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় জনগণ প্রাণপণ চেষ্টা করেও এ ভাঙ্গন ঠেকাতে পারেনি।
এতে উত্তর বরইয়া, দক্ষিণ বরইয়া, বণিকপাড়া, বসন্তপুর এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এ ছাড়া গতকাল সন্ধ্যা থেকে ফুলগাজী তরকারি বাজার-সংলগ্ন স্থানে মুহুরী নদীর পানি প্রবেশ করে বাজারের একটি অংশ প্লাবিত হয়েছে। আজ শুক্রবার বৃষ্টি না
হাওয়ায় ফুলগাজী বাজার থেকে পানি নেমে গেছে।
প্রতি বছর দায়সারা বাঁধ মেরামত ও নদী সংস্কার না করার কারনে স্থানীয় এলাকাবাসী পানি উন্নয়ন বোর্ডেকে এজন্য দায়ী করছেন। এখানকার জনগণ প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পানিতে প্লাবিত হওয়ার কারণে কোন ত্রাণ নয়, তারা চায় টেকসই বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত।
ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার ফেনীর ফুলগাজী বাজার ও ভাঙ্গন স্থান পরিদর্শন করেছেন। তিনি স্থানীয় জনগণকে আতঙ্কিত না হয় সজাগ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, উজানে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় ফেনীতে নদীর পানি বাড়ছে। তবে মুহুরী নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। বাঁধের ভাঙ্গন স্থল রক্ষায় স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের নিরাপত্তায় আমাদের কাজ অব্যাহত রয়েছে।
বরগুনার আমতলী উপজেলার আমড়াগাছিয়া নামক স্থানে সোয়া ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে গুলিশাখালী খালের ওপরে নির্মিত সেতুটি কোনো কাজে আসছে না। মই বেয়ে ওঠতে হয় সেতুতে। যা রীতিমতো ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী, কুকুয়া ও চাওড়া এই তিন ইউনিয়নের সংযোগস্থল আমড়াগাছিয়া বাজারের পশ্চিমপাশে গুলিশাখালী খালের ওপর ৬৬ মিটার দৈর্ঘ্য ৬.৭৭ মিটার প্রস্থের এই গার্ডার সেতু ৬ কোটি ২২ লাখ ৫৮ হাজার ৩২৩ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণের চুক্তি করে বরগুনা এলজিইডি। কাজটি পায় বরিশালের মেসার্স কহিনুর এন্টার প্রাইজ অ্যান্ড ত্রিপুরা জেভি নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২৩ সালের ১৯ মে কার্যাদেশ পেয়ে কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালের জুনে নির্ধারিত সময়ের আগেই মূল সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেন। কিন্ত বিপত্তি দেখা দেয় সংযোগ সড়ক নির্মাণ নিয়ে। সেতুর পশ্চিম পাশের সেতুর ঢালের ৫ ফুটের মাথায় রয়েছে পূর্ব খেকুয়ানি গ্রামের চলাচলের জন্য সড়ক। সেতুর ডিজাইন এবং উচ্চতা অনুযায়ী সংযোগ সড়ক নির্মাণ করলে এই সড়কটি বন্ধ হয়ে যাবে এ নিয়ে দেখা দেয় বিপত্তি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সেতু নির্মাণের ১১ মাস ধরে সংযোগ সড়ক ছাড়া এভাবে পরে আছে। এতে তিন ইউনিয়নের ২০ গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পড়েছে ভোগান্তিতে। যাতায়াতের জন্য স্থানীয়রা সেতুর পশ্চিম পারে কাঠ ও বাঁশের মই বানিয়ে কোনো রকমে যাতায়াতের উপযোগী করে চলাচল করছে। এই মই বেয়ে বয়স্ক ও শিশুরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। কোনো ধরনের যানবাহন সেতুতে ওঠতে না পারায় পণ্য পরিবহনে নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। পণ্য পরিবহন করতে দশ কি. মি. ঘুরে মহিষকাটা সেতু পাড় হয়ে যেতে হচ্ছে তাদের। গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। এতে ব্যবসায়ী সাধারণ মানুষসহ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেতুটি গুলিশাখালী, চাওড়া ও কুকুয়া এই তিন ইউনিয়নের সংযোগস্থল । এই সেতু পার হয়ে গুলিশাখালী ইউনিয়নের পূর্ব খেকুয়ানী, গুলিশাখালী, ডালাচারা, বাইবুনিয়া, কলাগাছিয়া গ্রামের শত শত মানুষ আমতলী সদর, বরিশাল, ঢাকাসহ সারা দেশে চলাচল করে। চাওড়া ও কুকুয়া ইউনিয়নের মানুষও এই সেতু পার হয়ে গুলিশাখালী ইউনিয়নে যাতায়াত করেন। দীর্ঘদিন ধরে সেতুটির সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় আমাদের চলাচলে অনেক কষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে পণ্য পরিবহন, রোগী আনা-নেওয়ায় অনেক সমস্যা হচ্ছে। মরদেহ আনা-নেওয়ায়ও সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। দ্রুতই সেতুটির সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে যাতায়াতের সুব্যবস্থার দাবি করছেন এলাকাবাসী । ঠিকাদার মো. কাওছার মিয়া বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই মূল সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করেছি। সংযোগ সড়কের জন্য আলাদা দরপত্র হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ পাবে তারাই কাজ করবে। এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. ইদ্রিস মিয়া বলেন, সেতুর উচ্চতা অনুযায়ী সংযোগ সড়ক তৈরি করতে গেলে পাশের একটি সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। সে কারণে বিকল্প হিসেবে সেখানে আন্ডারপাস নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে যাতে মূল সড়কটি ঠিক থাকে। এতে ব্যয় কিছুটা বাড়বে। এ লক্ষ্যে নতুন করে নকশা ও বাজেট তৈরি করে প্রকল্প পরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন পেলেই দরপত্র আহ্বান করে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।
মন্তব্য