নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাজশাহীর রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে দেয়া বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় স্বভাবতই সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে স্বাস্থ্যখাত। এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোয় আওয়ামী লীগ নেতারা প্রকাশ করেছেন সন্তুষ্টি। অপরদিকে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। আবার যা দেয়া হয়েছে তাও বাস্তবায়ন হয় কি না সন্দেহ।
তাদের কথায় উঠে এসেছে কৃষিখাত, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প, মহামারির মধ্যে স্বল্প আয়ের মানুষ ও ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা, প্রণোদনা, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ নানা বিষয়।
তবে অনেকেই মনে করেন, বাজেট বাস্তবায়ন করায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বরাদ্দ থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই তার পূর্ণ বাস্তবায়ন হয় না।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ডা. গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘আমাদের যে বাজেট আসে, তা সম্পূর্ণ ব্যবহার করতে পারি না। এই জায়গায় আমরা পিছিয়ে আছি। এজন্য বাজেট বাস্তবায়নকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।’
স্বাস্থ্যখাত নিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতে যে সমস্যাটা হয় সেট হলো, সঠিক জায়গায় অর্থের ব্যবহার এবং পরিমাণমত ব্যবহার হয় না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সবাইকে অনুরোধ করব, এবার চোখে আঙুল দিয়ে স্বাস্থ্যবিভাগের যে ফাঁক-ফোকরগুলো দেখা গেল, সেগুলোকে যেন এবারের বাজেটের মাধ্যমে উত্তোরণ ঘটাতে পারি।’
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, ‘বাজেটে সরকার সিলিন্ডার গ্যাসের দাম কমিয়েছে। কোভিডের ক্ষেত্রে বাজেট বাড়িয়েছে; প্রণোদনার ব্যবস্থাও করেছে। এই বাজেটের আকার যা তাতে মনে হচ্ছে, জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে।
তিনি আরও বলেন, ‘মেগা প্রজেক্টগুলো করোনার সময় একটু স্লো হয়ে গেছে। আমাদের রাজশাহীর অনেক দাবিই প্রধানমন্ত্রী পূরণ করেছেন। আমাদের বিমানবন্দর প্রশস্ত করা, রাস্তাঘাট এসব করে দিয়েছেন। আমাদের অনেক কাজের ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ হয়ে গেছে।
‘আমাদের বিসিক-২ এর কাজ চলছে। দ্বিতীয় অর্থনৈতিক জোন হলে আমাদের কর্মসংস্থান অনেক বাড়বে।’
রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল অবশ্য মনে করেন বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ যথেষ্ট নয়।
তার দাবি, করোনা মহামারির মধ্যে বাজেটের যে সম্ভাব্যতা যাচাই করা উচিত ছিল, সেটি এখনও হয়নি। গত এক বছর স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো উন্নয়ন হয়নি। দেশকে রক্ষায় স্বাস্থ্যবিভাগের জন্য আলাদা বিশেষ বাজেট দেয়া উচিত ছিল।
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি উপজেলাতে পাঁচটি করে আইসিইউ ও জেলাতে ২৫টি আইসিইউ শয্যা দেয়া উচিত। এটি এখনই প্রকল্পের মাধ্যমে আসা দরকার ছিল। আমার মনে হয় এটি এই বাজেটে আসেনি। একটি থোক বরাদ্দ যথাযথ মনে করছি না।’
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি সাহসী বাজেট হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘একটি ভালো বাজেট হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা লাগবে। এটি ব্যবসায়ীদের জন্য ভালো বাজেট। কৃষি বিভাগের জন্য ছাড় দিয়েছে। এটি আমাদের উপকারে আসবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই অঞ্চল কৃষি আর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের এলাকা। বাজেটে কৃষিতে ছাড় দেয়ায় ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। করোনার মধ্যে এত বড় বাজেট দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।’
বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনবান্ধব নেত্রী। তিনি সব সময় জনগণের ভালোর জন্য কাজ করছেন। দেশের জন্য কাজ করছেন। সুতরাং এই বাজেটও জনমুখী হবে।’
বগুড়া হোটেল মোটেল অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান বলেন, ‘সারা দেশের উন্নয়ন ঘটাতে গেলে সুষম বাজেটের কোনো বিকল্প নেই। আপাতত মনে হচ্ছে এই বাজেট গণমুখী হবে। তবে বিস্তারিত না পড়ে মন্তব্য করা কঠিন।’
বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বগুড়া ৬ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মো. সিরাজ বলেন, ‘বাজেট সম্পর্কে দলীয়ভাবে এখন মন্তব্য করা যাবে না। আগামীকাল এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাব।’
নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি উমা চৌধুরী জলি বলেন, ‘এই বাজেটে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। বিশেষ করে কৃষিখাত ও স্বল্প আয়ের মানুষকে সুরক্ষা দেবার ব্যবস্থা রেখেছে সরকার। এ বাজেট জনকল্যাণমুখী।’
ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, ‘চলতি বাজেটে ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়েছে। করোনার সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই ব্যবসা ক্ষেত্রে বাজেটে বাড়তি নজর দেয়া উচিত ছিল।’
সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, বাজেট হতে হবে জনকল্যাণমুখী। কোনো শুভঙ্করের ফাঁকি বা ভাউতাবাজির বাজেট নয়।
‘ইতোপূর্বে এ রকম বাজেট হওয়ার কারণে দেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতারা কালো টাকার পাহাড় গড়তে পেরেছেন।’
সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কে এম হোসেন আলী হাসান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করে, দেশের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে বাজেট ঘোষণা করে থাকে। এবারও একইভাবে সুন্দর একটা বাজেট ঘোষণা হয়েছে। এজন্য অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।’
সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইমদাদুল হক বলেন, ‘সিরাজগঞ্জ জেলাটি তাঁত শিল্পে সমৃদ্ধ। গত দুই বছর ধরে তাঁতশিল্পে দুর্দিন যাচ্ছে। তাঁতীরা আজ তাঁত বিক্রি করে অন্য পেশা খুঁজছেন।
‘তাঁত শিল্পকে রক্ষা করতে ব্যবসায়ীদের প্রণোদনাসহ সব সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সুন্দর একটা বাজেট আমরা চাই।’
নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নির্মূল কৃষ্ণ সাহা বলেন, ‘মহামারি অর্থনীতির অনেকখাতে আঘাত হেনেছে। কিন্তু দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য এবার এই বিশাল বাজেট জাতীয় সংসদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে।
‘আওয়ামী লীগ সরকার চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করে। এটা মহামারির সময়ে এত বড় বাজেটে প্রমাণ হয়। এটি দেশের সকল মানুষের কল্যাণে ভূমিকা রাখবে।’
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নাজমুল হক সনি বলেন, ‘বাজেটের আকার বড় কিন্তু বাজেটের সঠিক বণ্টন হয় না। স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ আরও বাড়ানো প্রয়োজন, কিন্তু স্বাস্থ্যখাত তো দুর্নীতির আখড়া।
‘অন্যদিকে করোনার এই সময় আরও বেশি অসহায় ও নিম্ন আয়ের মানুষের সুরক্ষার বিষয়টি অগ্রাধিকার দেয়া উচিত ছিল। এই বাজেটের অর্থ সঠিকভাবে পরিচালনা হবে কি না তা নিয়েও সন্দেহ আছে।’
নওগাঁর ব্যবসায়ী এনামুল হক বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতির মধ্যেও এবার বড় বাজেট পেশ করা হয়েছে। আশা করছি যদি সঠিকভাবে দেশের উন্নয়নকল্পে ব্যয় হয়, তবে মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে।’
জয়পুরহাট-১ আসনে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট সামছুল আলম দুদু বলেন, ‘প্রতি বছরই আওয়ামী লীগ সরকার জনবান্ধব বাজেট পেশ করেছে। এবারও তার প্রতিফলন থাকবে। কারণ জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার সর্বসাধারণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে।’
জয়পুরহাট জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক তিতাস মোস্তাফা জানান, ‘সরকার ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয় কীভাবে বাড়ায় তা দেখার বিষয়। পাশাপাশি তা যেন হয় জনকল্যাণকর।
‘জনগণের ওপর যেন করের বেশি বোঝা না চাপানো হয়। কারণ করোনার ধকলে স্থানীয়দের অর্থনীতির মেরুদণ্ড একবারে ভেঙ্গে পড়েছে।’
প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন বগুড়া প্রতিনিধি খোরশেদ আলম, নাটোর প্রতিনিধি নাজমুল হাসান, নওগাঁ প্রতিনিধি সবুজ হোসেন, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি গোলাম মোস্তফা রুবেল, জয়পুরহাট প্রতিনিধি রাজীব হাসান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি আব্দুর রব নাহিদ।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপে ঘরে ঢুকে এক নারী ও তার মেয়েকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
গত সোমবারের ঘটনায় বৃহস্পতিবার টেকনাফ মডেল থানায় অভিযোগটি করেন ছেনুয়ারা বেগম নামের নারী।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত সোমবার রাত দুইটার দিকে শাহপরীর দ্বীপের পূর্ব উত্তরপাড়া এলাকার নুর মোহাম্মদের স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগমের ঘরের দরজা ভেঙে আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন প্রবেশ করেন। তারা ছেনুয়ারা ও তার মেয়ের হাত-পা বেঁধে মুখে কাপড় ঢুকিয়ে এলোপাতাড়ি লাথি ও ঘুষি মারেন। একপর্যায়ে মা ও মেয়ে উভয়কে বিবস্ত্র করেন আইয়ুব ও তার লোকজন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, হামলাকারীরা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বর্ণ ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যান। যাওয়ার সময় তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের বিষয়ে কাউকে জানানো হলে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যান৷
এ বিষয়ে ছেনুয়ারা বেগম বলেন, ‘সন্ত্রাসী আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন যুবক আমার বাড়িতে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রবেশ করে। পরে বাড়ি থেকে আমাকে জোরপূর্বক কয়েকজন লোক বের করে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে এবং আমার মেয়েকে নির্যাতন করে স্বর্ণ ও টাকা নিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া বিষয়ে কাউকে বললে মেরে ফেলা হবে বলে চলে যায়।’
থানায় অভিযোগের পর আয়ুব হুমকি দিয়েছে জানিয়ে ছেনুয়ারা বলেন, ‘সেই আয়ুব খান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বলে, মামলা হলে কী হবে? জামিন নিয়ে বাহির হয়ে আমাকে আর আমার মেয়েকে মেরে ফেলা হবে বলে প্রাণনাশের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে আমি টেকনাফ মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।’
এ বিষয়ে সাবরাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রেজাউল করিম রেজু বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি এবং সঠিক তদন্ত করে পুলিশকে সহযোগিতা করব।’
অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘আমি ঘটনার সত্যতা পেয়েছি এবং আমি মামলা করার জন্য ওসি বরাবর সুপারিশ করেছি।’
টেকনাফ মডেল থানার ওসি ওসমান গণি বলেন, ‘আরও গভীরভাবে তদন্ত করে দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে।’
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজারে বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা নাশকতা মামলায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এমএ মুহিতসহ ১৪ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
উচ্চ আদালতের মঞ্জুরকৃত জামিন শেষ হওয়ায় তারা আদালতে হাজির হন।
মৌলভীবাজার মডেল থানায় ২০২৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে করা দুটি রাজনৈতিক মামলার ১৪ জন আসামি হাজির হলে আদালত তাদের সবার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করে।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- জেলা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক মুহিতুর রহমান হেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলে সাবেক সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর স্বাগত কিশোর দাস চৌধুরী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আহমেদ আহাদ, যুবদলের এমএ নিশাদ, যুবদলের সিরাজুল ইসলাম পিরুন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নুরুল ইসলাম, যুবদলের ওয়াহিদুর রহমান জুনেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুল হান্নান, স্বেচ্ছাসেবক দলের রোহেল আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের মামুনুর রশিদ ও যুবদলের জাহেদ আহমেদ।
মৌলভীবাজার জেলা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. ইউনুছ মিয়া জানান, ২০২৩ সালে নাশকতার অভিযোগে করা মামলায় মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন আসামিরা। আদালত শুনানি শেষে আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি থানাধীন সাজেকে শ্রমিকবাহী ডাম্প ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
বাঘাইছড়ি থানার সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল আওয়াল বুধবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তিনজনকে মৃত বলে জানান।
এর আগে বিকেলে সাজেকের উদয়পুর সীমান্ত সড়কের ৯০ ডিগ্রি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশের ভাষ্য, খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের উদয়পুর সীমান্তবর্তী সড়ক নির্মাণের জন্য ডাম্প ট্রাকে ১৪ জন শ্রমিক জামান ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সেতুর কাজে যাচ্ছিলেন। পথে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ের ঢালে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে ছয়জনের মৃত্যু হয়।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরিন আক্তার সাংবাদিকদের জানান, যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি খুবই দুর্গম এলাকা। আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী, তবে তাৎক্ষণিকভাবে কারও নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলায় ৭ (সাত) বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে সৈয়দ সরাফত আলী নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআইয়ের পরিদর্শক রিপন চন্দ্র গোপের নেতৃত্বে একটি অভিযানিক দল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
৬০ বছর বয়সী সৈয়দ সরাফত আলী রাজনগর থানার করিমপুর চা বাগান এলাকার বাসিন্দা।
পিবিআই জানায়, শিশুটিকে বাঁশের বাঁশি বানিয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে গত ১৪ এপ্রিল বেলা পৌনে দুইটার দিকে সৈয়দ সরাফত আলী তার বাড়ির পাশের বাঁশ ঝাড়ের নিচে নিয়ে যান। সেখানে তাকে মাটিতে ফেলে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হলে তিনি আত্নগোপন করেন।
অসুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে গত প্রথমে রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভর্তি করে চিকিৎসা করানো হয়।
এ বিষয়ে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে রাজনগর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
পিবিআই মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, ‘শিশু ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধীর পার পাওয়ার সুযোগ নেই। আইনের আওতায় এনে তাদের বিচার করা হবে। মামলার খুঁটিনাটি বিষয় বিবেচনায় রেখে নিখুঁত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।’
আরও পড়ুন:চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে দায়িত্ব পালনকালে রুহুল আমিন নামে এক ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি যশোরের বেনাপোলে। বাবার নাম কোরবান আলী।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের অধীন সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
শিবগঞ্জ থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন জানান, সোনামসজিদ স্থলবন্দরের পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের মধ্যে ট্রাক পরিদর্শন শেষে দুপুর পৌনে ১টার অফিস কক্ষে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন রুহুল আমিন। সহকর্মীরা তাকে দ্রুত শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন এসএম মাহমুদুর রশিদ জানান, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রুহুল আমিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার আগেই মারা যান। হাসপাতালে যারা নিয়ে এসেছিলেন তারা বলেছেন যে তিনি তৃষ্ণার্ত ছিলেন, পানি খেতে চেয়েছিলেন।
তবে তার মৃত্যু যে হিট স্ট্রোকে হয়েছে এটা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাবে না। অন্য কোনো রোগেও তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। তবে এখন যেহেতু প্রচণ্ড গরম চলছে তাই এটার প্রভাব থাকতে পারে।
সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ২৮৮ জন সদস্যকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া বিআইডব্লিটিএ জেটি ঘাট থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের টাগবোটে তুলে দেয়া হয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, গভীর সাগরে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে অপেক্ষায় থাকা মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ চিন ডুইনে তাদের তুলে দেয়া হবে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সেনা ও সীমান্তরক্ষীদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওই জাহাজ বুধবারই বাংলাদেশের জলসীমায় পৌঁছায়। ওই জাহাজে করেই ১৭৩ জন বাংলাদেশি ফিরে এসেছেন। যারা বিভিন্নভাবে মিয়ানমারে আটকা পড়েছিলেন বা সাজা পেয়ে জেলখানায় ছিলেন।
মিয়ানমার নৌবাহিনীর ওই জাহাজে করে দেশটির ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলও বুধবার দুপুরে কক্সবাজার পৌঁছায়। পরে তারা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়নে বিজিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। সেখানে পৌঁছানোর পর তারা মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের যাচাই-বাছাইসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়।
বিজিবি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ১১টি বাসে করে মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ জেটি ঘাটে নিয়ে আসা হয়।
সেখানে আনার পর ইমিগ্রেশন ও ডকুমেন্টেশনের আনুষ্ঠানিকতা সেরে শুরু হয় হস্তান্তর প্রক্রিয়া। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও কোস্ট গার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশশে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতসহ দেশটির প্রতিনিধি দলের কাছে তাদের হস্তান্তর করেন।
এরপর সকাল ৭টার দিকে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের কর্ণফুলি টাগবোটে তুলে দেয়া হয়। কোস্ট গার্ডের একটি ট্রলার টাগবোটটিকে পাহারা দিয়ে গভীর সাগরে নিয়ে যায়।
দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে, যার আঁচ লেগেছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাতেও। সীমান্তের ওপারের মর্টার শেল ও গুলি এসে এপারে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।
ওই সংঘাতের মধ্যে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ ৩৩০ জনকে প্রথম দফায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেরত পাঠিয়েছিল সরকার।
তাদের মধ্যে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপি ৩০২ জন, তাদের পরিবারের চার সদস্য, দুজন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং চারজন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন।
এরপর বান্দরবান ও কক্সবাজার সীমান্ত নিয়ে কয়েক দফায় আরো ২৮৮ জন সীমান্তরক্ষী ও সেনা সদস্য এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এবার তাদের ফেরত পাঠানো হলো।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মা নদীতে বুধবার রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় দুটি ড্রেজার জব্দ করেছে নৌ-পুলিশ।
মাওয়া নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে উপজেলার মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নের যশিলদিয়ায় বুধবার রাত দেড়টার দিকে পদ্মা নদীতে অভিযান চালানো হয়। ওই সময় নিয়ম অমান্য করে বালু উত্তোলন করায় ওই দুটি ড্রেজার জব্দ করা হয়।
তিনি আরও জানান, ড্রেজার জব্দ করার সময় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। জব্দকৃত ড্রেজার দুটির বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য