করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশ ভালো অবস্থায় রয়েছে বলে দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আর এ জন্য মূল কৃতিত্ব তিনি দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দেশের মানুষকে।
মুস্তফা কামালের ভাষায়, ‘অসম্ভব’ কর্মদক্ষতা নিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পথে চলেছেন শেখ হাসিনা। আর তাকে অব্যাহতভাবে সহযোগিতা করে চলেছেন এই দেশের ১৭ কোটি মানুষ।
তিনি বলেন, ‘মহামারির এই কঠিন সময়েও আমাদের দেশের মানুষ কাজ বন্ধ করেননি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা কাজ করে অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন। আমাদের দেশের মানুষ কর্মঠ, প্রচণ্ড আত্মপ্রতয়ী। জীবন-জীবিকা একসঙ্গে চালিয়ে তারা অর্থনীতিতে অবদান রেখে চলেছেন প্রতিনিয়ত।’
মহামারির মধ্যেই আরেকটি বাজেট দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন তিনি। এটা তার তৃতীয় বাজেট। আর বাংলাদেশের ৫০তম বাজেট।
অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল এবার তার বাজেটের শিরোনাম দিয়েছেন, ‘জীবন ও জীবিকার প্রাধান্য, আগামীর বাংলাদেশ’।
বাজেট ঘোষণার এক দিন আগে মঙ্গলবার নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, মহামারি শুরুর পর এখন পর্যন্ত ২৩টি প্যাকেজের আওতায় ১ লাখ ২৮ হাজার ৩০৩ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা, এরপর শিল্পোৎপাদন চালু করা সবই ছিল ‘সময়োপযোগী’ পদক্ষেপ।
‘পুরো দেশ এখন এর সুফল পাচ্ছে। সামষ্টিক অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্র ভালো করছে। প্রতিটি খাত উড়ন্ত অবস্থায় আছে। সব সূচকই ঊর্ধ্বমুখী। কোনো দেশেই এ অবস্থা খুঁজে পাওয়া যাবে না’, বলেন মুস্তফা কামাল।
প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসায় তিনি বলেছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিছু অমানুষ তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে দেয়নি।
‘পিতার মতোই দেশের মানুষকে ভালোবেসে এই দেশটাকে “সোনার বাংলাদেশ” গড়ার নেশায় রয়েছেন শেখ হাসিনা। শুধু আমি নই, দেশের মানুষও এখন দেখতে পাচ্ছেন, বাংলাদেশকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করে যাচ্ছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী।’
মহামারির এই সময়ে দেয়া সাক্ষাৎকারে দেশের নতুন বাজেট নিয়ে কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। তবে গাণিতিক কোনো সংখ্যা প্রকাশ করতে রাজি হননি। বাজেটের লক্ষ্য ও ধরন নিয়ে একটা ধারণা দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, ব্যাংক খাত, পুঁজিবাজারসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। নিচে তার সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো:
নিউজবাংলা: কোভিড-১৯ গোটা বিশ্বের অর্থনীতিকে তছতছ করে দিয়েছে। এর মধ্যে কেমন চলছে বাংলাদেশের অর্থনীতি?
মুস্তফা কামাল: আমি আপনার প্রশ্নের উত্তরটা এভাবে শুরু করতে চাই: ২০২০ সালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে আছে শুধু বাংলাদেশ, চীন ও ভিয়েতনাম। ২০২০ সালে বাংলাদেশের যে অর্জন, আমি মনে করি এটিই বড়ভাবে দেখা যেতে পারে। কারণ, গত বছরটা ছিল আমাদের জন্য ঐতিহাসিক বছর। গত বছর আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর পাশাপাশি বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছি। এই দেশের মানুষ যথাযথভাবে জাতির পিতাকে বিশ্বদরবারে আরও আলোকিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। কামার, কুমার, তাঁতি, জেলে, চাষি, ব্যবসায়ী, বিজ্ঞানীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষই কাজ করছেন। এ জন্য দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে সরকারের পক্ষ থেকে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই।
আমাদের সৌভাগ্য যে, আমরা শেখ হাসিনার মতো একজন নেতা, একজন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছি, যিনি সামনে দেখতে পান… দেশের সব মানুষকে তিনি জানেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর আগামী দেখার দক্ষতা রয়েছে। তিনি দেশের মানুষের নার্ভ বুঝতে পারেন। ওয়ান-টু-ওয়ান দেখতে পান।
মানুষকে যতটা সম্ভব দ্রুত কাজে ফেরার সুযোগ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি অর্থনীতি সচল রাখতে করোনাভাইরাসের প্রকোপের শুরুতেই এক লাখ দশ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন। যখন প্রধানমন্ত্রী এই প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন, তখন আমাদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছিল। পুরো দেশ এখন এর সুফল পাচ্ছে। সামষ্টিক অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্র ভালো করছে। প্রতিটি খাত উড়ন্ত অবস্থায় আছে। সামনের দিকে যাচ্ছে। সব সূচকই ঊর্ধ্বমুখী। কোনো দেশেই এ অবস্থা খুঁজে পাওয়া যাবে না।
আমি জোর দিয়ে বলতে পারি, সবকিছু মিলিয়ে ভালোভাবেই অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশ। সামনে আরও সুন্দর দিন অপেক্ষা করছে। বঙ্গবন্ধু যা করে যেতে পারেননি, সেগুলো করার জন্য তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলস পরিশ্রম করছেন। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সোনার বাংলা নির্মাণের মাধ্যমে সুবর্ণরেখা স্পর্শ করবেন।
আমাদের শক্তি হচ্ছে এ দেশের মানুষ। শেখ হাসিনা এই মানুষকে ভালোবেসে, গাইডলাইন দিয়ে একদম সামনে থেকে লিড দিয়ে সামনে নিয়ে যাচ্ছেন।
মহামারি করোনাভাইসের ধাক্কা সামলে আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে; অর্থনীতির সব সূচক এখন উর্ধ্বমুখী। কোভিড-১৯-এর আঘাতে পৃথিবীর বড় বড় দেশের অর্থনীতি যেখানে তছনছ হয়ে গেছে, আমরা সেখানে সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করে মাথা উঁচু করে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছি। আর এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কারণে।
নিউজবাংলা: বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে আপনি জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছিলেন ৮ দশমিক ২ শতাংশ। করোনার কারণে প্রথম দফায় তা কমিয়ে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ নামিয়ে এনেছিলেন। এখন তা আরও কমিয়ে ৬ দশমিক ১ শতাংশে এনেছেন। আসলে কত হবে?
মুস্তফা কামাল: এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক- এডিবি বলছে, এবার আমাদের প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৫ থেকে ৬ শতাংশের মতো হবে। বিশ্বব্যাংক অবশ্য বলছে কম হবে; ওরা প্রতিবারই কম বলে। কিন্তু বছর গেলে হিসাব শেষে দেখা যায়, তাদের হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে। এবারও তাই হবে।
এখানে একটা কথা আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, দেশের মানুষ আত্মনিবেদিত হয়ে এবং আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। যার যতটা সুযোগ আছে, সেখান থেকেই এ দেশের অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করছেন। এতে দেশের অর্থনীতি আরও অনেক ওপরে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সারা দেশের মানুষ কাজ করে চলেছেন। ফলে আমি মনে করি, এই মহামারির কঠিন সময়েও আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের কম হবে না। আর এটা যদি হয়, তাহলেই আমরা খুশি; কেননা, পৃথিবীর অনেক দেশই এই প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে না। কোনো কোনো দেশের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হবে।
এখানে আমি আরও একটা বিষয় বলতে চাই, ইতিমধ্যে কিন্তু আমরা মাথাপিছু আয়ে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছি। পাকিস্তানকে ছাড়িয়েছি তো অনেক আগেই। শ্রীলঙ্কাকে রিজার্ভ থেকে ঋণ দিতে যাচ্ছি। আর এসব নিয়ে বাংলাদেশকে প্রশংসা করে এই তিন দেশের মিডিয়ায় প্রায় প্রতিদিনই প্রতিবেদন প্রকাশ হচ্ছে। এতেই প্রমাণিত হয়, আমরা ভালো করছি; নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যেও এগিয়ে চলেছি।
নিউজবাংলা: দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আশার কথা শোনাচ্ছেন আপনি। সত্যিই কি অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরে এসেছে?
মুস্তফা কামাল: গত কয়েক বছর ধরেই আমাদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বেশ ভালো। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমরা ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। তার আগের বছরগুলোতেও ৭ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। কোভিড-১৯-এর কারণে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ জিডিপি অর্জিত হবে বলে আমাদের পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রাথমিক তথ্য দিয়েছে।
আমাদের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যাবে, দেশের অর্থনীতি কেমন চলছে। একটি বিষয় অবিশ্বাস্য রকম অবাক করে দিয়েছে আমাকে: এই মহামারির মধ্যেও আমাদের প্রবাসী ভাইবোনেরা রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়ে চলেছেন। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে আসে; প্রবৃদ্ধি ৪০ শতাংশের মতো। এর আগে কোনো অর্থবছর বা বছরেও এত রেমিট্যান্স দেশে আসেনি।
সবাই যখন আশঙ্কা করেছিল, মহামারির ধাক্বায় রেমিট্যান্স একেবারে কমে যাবে। কিন্তু তা না হয়ে উল্টো বেশি বেশি রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। এতে আমরা সাহস পাচ্ছি। মহামারি মোকাবিলা করাও আমাদের সহজ হচ্ছে।
এই রেমিট্যান্সে দেশে লাখ লাখ পরিবার চলছে। ছোট ছোট ব্যবসা হচ্ছে। রেমিট্যান্স আরও বাড়বে। কারণ সরকার এ ক্ষেত্রে প্রণোদনার মাধ্যমে পাঠানোর খরচ দিয়ে দিচ্ছে। এ ছাড়া রেমিট্যান্স পাঠাতে যে ফরম পূরণ করতে হয়, তা সহজ করা হয়েছে।
এখানে আরেকটি কথা আমি বলতে চাই, আমি যখন পরিকল্পনামন্ত্রী ছিলাম, তখনই একটা বিষয়ে আমি স্টাডি করেছিলাম। আমি হিসাব করে দেখেছিলাম, দেশে সব মিলিয়ে ৩৪-৩৫ বিলিয়ন ডলারের মতো রেমিট্যান্স দেশে আসত। এর মধ্যে অর্ধেকেরও কম ১২ থেকে ১৪ বিলিয়ন ডলার আসত ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বৈধ পথে। বাকিটা আসত হুন্ডির মাধ্যমে অবৈধ পথে।
এখন ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়ার কারণে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোর পরিমাণ অনেকটা কমেছে। এটাকে একেবারে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার চেষ্টা করছি আমরা।
নিউজবাংলা: অর্থনীতির আরেক গুরুত্বপূর্ণ সূচক বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভও বেশ সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। রিজার্ভ কি আরও বাড়বে বলে আপনার মনে হয়?
মুস্তফা কামাল: আমাদের আরেকটি স্বস্তির বিষয় হচ্ছে রিজার্ভ। মূলত রেমিট্যান্সের ওপর ভর করেই বর্তমানে আমাদের রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলারের ওপরে অবস্থান করছে। এ বছরের মধ্যেই রিজার্ভ ৫০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করবে বলে আমি প্রত্যাশা করছি।
নিউজবাংলা: প্রধানমন্ত্রী রিজার্ভ বিনিয়োগে নিয়ে আসার কথা বলেছেন। এ বিষয়ে কী ধরনের চিন্তাভাবনা করছেন?
মুস্তফা কামাল: প্রধানমন্ত্রীর কথা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে আমরা সরকারি প্রকল্পে রিজার্ভ থেকে অর্থায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণের মতো প্রকল্পে এই অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছি। বিদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রার ঋণ নিলে ৪ থেকে ৫ শতাংশ সুদ দিতে হয়। অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বিদেশে বিনিয়োগ করলে এক থেকে দেড় শতাংশের বেশি সুদ পাওয়া যায় না। ফলে এই অর্থ সরকার ব্যবহার করলে রাষ্ট্রেরই লাভ।
আমরা সেই কাজটিই শুরু করে দিয়েছি ইতিমধ্যে। রিজার্ভ থেকে প্রথম ঋণ পাচ্ছে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ। ঋণের পরিমাণ ৫ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা, যা দেয়া হবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একক মুদ্রা ইউরোয়। ১০ বছর মেয়াদে এই ঋণ দেবে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। এর মধ্যে তিন বছর গ্রেস পিরিয়ড। সোনালী ব্যাংক বাংলাদেশি টাকা দিয়ে ইউরো কিনে এই ঋণ দেবে।
নিউজবাংলা: অর্থনীতির অন্য সূচকগুলো সম্পর্কে কিছু বলবেন?
মুস্তফা কামাল: আমি যখন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নিই, তখন বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্য (ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট) ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি নেতিবাচক ছিল। এখন তা ইতিবাচক। কোভিড-১৯-এর কারণে আমাদের রপ্তানি আয়ে ধাক্কা লেগেছিল, সেটা কেটে গেছে। এই অর্থবছরের ১১ মাসে অর্থাৎ জুলাই-মে সময়ে ৯ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। মহামারির ধাক্কা সামলে উঠতে আমাদের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে ১০ হাজার কোটি টাকার মতো প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত এই বিচক্ষণ ঘোষণা রপ্তানি বাণিজ্য দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করেছে বলে আমি মনে করি।
অন্য সূচকগুলোর মধ্যে বরাবরের মতোই আমরা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখেছি। প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের ফলে বিনিয়োগেও গতি ফিরে এসেছে। গত কয়েক মাস ধরে আমদানি ব্যয়ও বাড়ছে। আশা করছি, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তা ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে।
নিউজবাংলা: আপনি বলছিলেন, নতুন বাজেটের গাণিতিক কোনো সংখ্যা প্রকাশ করবেন না। বাজেটের লক্ষ্য ও ধরন নিয়ে খানিকটা ধারণা দেবেন, প্লিজ।
মুস্তফা কামাল: বাজেট কেমন হচ্ছে, কী থাকছে তা জানার জন্য বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সেদিন সংসদে প্রচারিত হবে, সত্যিকার তথ্য আপনাদের সামনে চলে আসবে। এটা কোনোভাবেই আমরা ডিসক্লোজ করতে পারি না। তবে জেনারেলি আমরা এই কথা বলতে পারি যে, আমাদের লক্ষ্যই থাকবে দেশের মানুষকে বাঁচানো; ব্যবসায়ীদের বাঁচানো। সবার সবকিছু দেখেই আমরা এবার বাজেট উত্থাপন করব।
আমাদের সব পিছিয়ে পড়া মানুষ, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সঙ্গে রাখতে হবে। তাদের সঙ্গে রেখেই এগিয়ে যেতে চাই। সে কারণেই এভাবে বলতে চাই, আগামী বাজেট হবে ‘জীবন ও জীবিকা রক্ষার’ বাজেট।
সমাজের অতিদরিদ্র মানুষকে মূলধারায় নিয়ে আসা, গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙা করা এবং মহামারির কারণে বিধ্বস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলোকে টিকে থাকার সুযোগ করে দেয়ার কৌশল অবশ্যই থাকবে নতুন বাজেটে।
নিউজবাংলা: অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক ভালো থাকলেও বিনিয়োগে স্থবিরতা কিন্তু কাটছে না। এবারের বাজেটে বিনিয়োগ বাড়াতে কি পদক্ষেপ নেয়া হবে।
মুস্তফা কামাল: সামষ্টিক অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলায় বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোই আমাদের লক্ষ্য। বিনিয়োগ বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়বে। এ জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন জোগান দিতে সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি অব্যাহত রাখা হবে। গত বছরের এপ্রিল থেকে ব্যাংকঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ বাস্তবায়ন হচ্ছে। অর্থনীতির গতিশীলতার জন্য অনেক আগে থেকেই মুদ্রানীতি সম্প্রসারণমূলক রয়েছে। সুতরাং ভাবার কোনো কারণ নেই, একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ বিনিয়োগ হয়ে গেছে, ফলে আর নতুন বিনিয়োগ হবে না। অর্থনীতিতে গতি আনতে আরও নীতি-সহায়তা প্রয়োজনা হলে অবশ্যই দেয়া হবে।
এখানে আরেকটি বিষয় বলে রাখা খুবই প্রয়োজন বলে আমি মনে করছি: এই যে ৯ শতাংশ সুদহার বাস্তবায়ন করা হয়েছে, এটার পুরো কৃতিত্ব কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, শিল্পায়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিযোগিতা সক্ষমতা অর্জন করতে সুদহার কমাতে হবে। নতুবা আমরা কারোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকব না। এ জন্য ব্যাংকঋণের সুদহার কমানোও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ছিল। যার সুফল এখন ব্যবসায়ী, ব্যাংক সবাই পাচ্ছে।
অনেকেই বলেছিল, ব্যাংক এই সুদহারে কাজ করতে পারবে না। আমি বলেছিলাম, লোকসান হবে না। কারণ ১৪ বা ১৫ শতাংশ সুদে ঋণ দিয়ে বছর শেষে বড় অঙ্কের রাইট-অফ করতে হচ্ছে। কম সুদে কম আয় করলেও নিট আয় বেশি থাকবে, যদি রাইট-অফ করতে না হয়। এখন যে তথ্য পাচ্ছি, ব্যাংকগুলো ভালো ব্যবসা করছে। কোনো কোনো ব্যাংক ৯ শতাংশের কম সুদেও ঋণ দিচ্ছে।
নিউজবাংলা: রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর তো কোনো উন্নতি হচ্ছে না। সার্বিক ব্যাংক খাত নিয়ে কিছু বলবেন?
মুস্তফা কামাল: আমি আসার আগে প্রতিটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংককে প্রতিবছর সুন্দরভাবে মূলধন সরবরাহ করা হতো। মূলধন না দিলে তারা চলতে পারত না। আমি তাদের সঙ্গে একটা সভা করে সুস্পষ্টভাবে বলেছি, মূলধন আর সরবরাহ করা হবে না। উপার্জন বাড়িয়ে নিজেদের তহবিলে চলতে হবে।
এখন আর কাউকে টাকা দিতে হচ্ছে না। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো মুনাফা করছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলো প্রতিটি মুনাফা করছে। ব্যাংকগুলোকে এখন আর তহবিল নিয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে না।
খেলাপি ঋণ কমানোরও নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশা করছি, ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।
নিউজবাংলা: দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজারে খারাপ অবস্থা চলছিল। সবাইকে অবাক করে দিয়ে এই মহামারির মধ্যে বাজার চাঙাভাবে ফিরেছে। এর পেছনে কী কারণ দেখছেন আপনি?
মুস্তফা কামাল: আমাদের পুঁজিবাজার এখন অনেক শক্তিশালী। অন্য সময় ব্যাংক থেকে টাকা না দিলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে আসত না। এখন কিন্তু রেমিট্যান্সের টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হচ্ছে। পুঁজিবাজারে লেনদেন বাড়ছে; সূচক বাড়ছে।
এটি অর্থনীতির আরেকটি খাত, যেখানে অনেক মানুষ সম্পৃক্ত। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা- বিএসইসিকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসছে। আশা করছি, একটি ভালো পুঁজিবাজার আমরা দেখতে পাব।
আরও পড়ুন:জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদের রুহের মাগফিরাত এবং আহতদের সুস্থতা কামনা করে গতকাল মঙ্গলবার বাদ যোহর জনতা ব্যাংক পিএলসির প্রধান কার্যালয়ের নামাজ ঘরে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে নামাজ ঘরে এক আলোচনা সভায় ব্যাংকের পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান মুহ. ফজলুর রহমান প্রধান অতিথি এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মজিবর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। এ সময় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক ও উপমহাব্যবস্থাপকরা, জনতা ব্যাংক জাতীয়তাবাদী অফিসার কল্যাণ সমিতি ও জাতীয়তাবাদী কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃরাসহ সব স্তরের নির্বাহী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
আমদানি করা প্রসাধনী সামগ্রীর ওপর থেকে অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহার না করলে আগামী ৭ জুলাই এনবিআর ভবন ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কসমেটিকস ও টয়লেট্রিজ আমদানিকারকরা।
মঙ্গলবার (০১ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নতুন বাজেটে প্রসাধনী সামগ্রীর ওপর দেড়শ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বৃদ্ধির প্রতিবাদে আয়োজিত এক মানববন্ধনে ব্যবসায়ীরা এই হুঁশিয়ারি দেন।
ব্যবসায়ীরা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে লিপ কেয়ার, ফেস ক্রিম, পাউডারসহ বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রীর দাম কম হলেও শুল্ক বৃদ্ধির কারণে দেশের বাজারে বেড়েছে দাম। এতে বাজারে বাড়ছে অবৈধ পথে আসা প্রসাধনীর সরবরাহ। এতে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারানোর শঙ্কাও প্রকাশ করছেন ব্যবসায়ীরা।
বাজেটে প্রসাধনী পণ্যের ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানোর প্রস্তাব বৈধ আমদানিকে নিরুৎসাহিত করবে বলে আশঙ্কা করছে বাংলাদেশ কসমেটিকস অ্যান্ড টয়লেট্রিজ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিটিআইএ)। তাদের মতে, শুল্ক বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রা পাচার বাড়াবে, বাজারে নকল ও মানহীন পণ্যের দৌরাত্ম্য তৈরি করবে এবং ২৫ লাখের বেশি মানুষ বেকার হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
সংগঠনটির দাবি, এই শুল্ক কাঠামো বাস্তবায়নের ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে এবং দেশের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের উপর সরাসরি অর্থনৈতিক চাপ বাড়াবে।
বাংলাদেশ কসমেটিকস অ্যান্ড টয়লেট্রিজ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. জহিরুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘বর্তমানে আমদানিকৃত প্রসাধনী সামগ্রীর ওপর যে ন্যূনতম শুল্কহার বাস্তবায়ন করা হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক বাজারদরের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। এটি দেশের বৈধ আমদানির পথকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেবে, যা পরিণামে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাবে। বাজার ভরে যাবে নকল ও নিম্নমানের পণ্যে, যা শুধু ভোক্তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে ফেলবে না, বরং হাজার হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী এবং তাদের কর্মচারীরা জীবিকা হারাবেন।’
সাধারণ সম্পাদক মো. সাহিদ হোসেন বলেন, প্রধান উপদেষ্টার অন্যতম লক্ষ্য হলো নতুন নতুন ব্যবসা সৃষ্টির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। তবে, চলতি বাজেটে আমদানিকৃত প্রসাধনী পণ্যের উপর ১৫০% পর্যন্ত ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য বৃদ্ধি বাংলাদেশ ২.০-এর লক্ষ্য এবং প্রধান উপদেষ্টার অভিন্ন লক্ষ্যের সম্পূর্ণ বিরোধী।
এরপরও চলতি বাজেটে এসব পণ্যের ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, যা দেশের প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান ঘিরে থাকা এই খাতের ওপর এক সরাসরি আঘাত। এই বৈষম্যমূলক করনীতি কেবল বৈধ ব্যবসার পরিপন্থী নয়, বরং দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের স্বার্থের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক—যারা আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি।
সাহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে বিপুলসংখ্যক মানুষ কর্মসংস্থান হারাবে। চোরাচালান, ভুল ঘোষণা (misdeclaration) ও রাজস্ব ফাঁকির ঝুঁকি বহুগুণে বাড়বে। বেকারত্ব বাড়ায় সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে।’
চোরাচালান বাড়ার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি সিলেটে প্রসাধনীসহ শুল্ক বেড়েছে এমন সাত কোটি টাকার চোরাই পণ্য জব্দ করেছে বিজিবি। যা আমাদের আশঙ্কাকে সত্য প্রমাণিত করে। মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রসাধনী ব্যবসায়ী, অ্যাসোসিয়েশনের অন্যান্য নেতা ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের ঝুঁকি কমে এসেছে। সেই সঙ্গে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট ওপেক তেল উৎপাদন বৃদ্ধি করবে—মন খবর বাজারে আসায় তেলের বাজারে স্বস্তি ফিরেছে। এ পরিস্থিতিতে আজ সোমবার (৩০ জুন) বিশ্ববাজারে তেলের দাম প্রায় ১ শতাংশ কমেছে।
আগস্ট মাসের জন্য ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৬৬ সেন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ব্যারেলপ্রতি ৬৭ দশমিক ১১ ডলার। সেপ্টেম্বর মাসের জন্য দাম আরও কমেছে। সে ক্ষেত্রে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮৩ সেন্ট কমে গিয়ে ৬৫ দশমিক ৯৭ ডলার হয়েছে। সেই সঙ্গে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুড বা ডব্লিউটিও ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৯৪ সেন্ট বা ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ কমে ৬৪ দশমিক ৫৮ ডলারে নেমে এসেছে।
গত সপ্তাহে বড় ধরনের দরপতনের মুখে পড়েছিল তেলের বাজার। সাপ্তাহিক দরপতনের দিক থেকে ২০২৩ সালের মার্চ মাসের পর গত সপ্তাহে দাম কমেছে সবচেয়ে বেশি। তবে সামগ্রিকভাবে জুন মাসে তেলের দাম বেড়েছে। আজ সোমবার (৩০ জুন) শেষ দিনের দামের পূর্বাভাসসহ ধারণা করা হচ্ছে, জুন মাসে তেলের দাম ৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের একটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পর যুদ্ধ শুরু হয়। এরপর তেলের দাম বাড়তে থাকে। শেষ পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করলে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়ার পর তা দ্রুত নেমে আসে ৬৭ ডলারে।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আইজি মার্কেটসের বিশ্লেষক টনি সাইকামোর বলেন, বাজারে যে আতঙ্কজনিত বাড়তি মূল্য ছিল, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির পর তা অনেকটাই মুছে গেছে।’
এদিকে ওপেক ও সহযোগী জোটের চারজন প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তারা আগস্ট মাসে প্রতিদিন ৪ লাখ ১১ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন বাড়াতে যাচ্ছেন। মে, জুন ও জুলাই মাসেও একই পরিমাণে উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। আগামী ৬ জুলাই ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর বৈঠকে বসার কথা। এপ্রিল মাসে উৎপাদন হ্রাসের ধারার থেকে বের হওয়ার পর এটি হবে পঞ্চম দফায় উৎপাদন বৃদ্ধি।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে সক্রিয় তেল খনির সংখ্যা আরও ছয়টি কমে দাঁড়িয়েছে ৪৩২-এ, অক্টোবর ২০২১ সালের পর যা সর্বনিম্ন। এ তথ্য দিয়েছে খনিজ খাতের প্রতিষ্ঠান বেকার হিউজ।
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে অর্থবছরের শেষ দিন আজ সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের সব ব্যাংকের শাখাগুলোতে ব্যাংকিং লেনদেন চলবে।
সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান সমকালকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৩০ জুন সকাল ১০টা পর্যন্ত ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯২২ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরের চেয়ে এবার বেশি রাজস্ব আদায় হওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি রেমিট্যান্স খাতে এক নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে দেশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষ হতে এখনো দুদিন বাকি থাকলেও প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থ ইতোমধ্যে ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। টাকায় যার পরিমাণ প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা ধরে)। এটি দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ২৪.৭৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল, যা এবার ছাপিয়ে গেছে। ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান গতকাল রোববার এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
চলতি জুন মাসের প্রথম ২৮ দিনেই প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২.৫৪ বিলিয়ন ডলার (২৫৪ কোটি), যা প্রায় ৩১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। মাসের বাকি দিনগুলোতেও একই ধারা বজায় থাকলে জুন শেষে মোট রেমিট্যান্স ২.৭০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হুন্ডি প্রতিরোধে সরকারের কঠোর ব্যবস্থা, বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রণোদনা, প্রবাসীদের জন্য ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার সম্প্রসারণ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি—এসবই এই রেকর্ড প্রবাহে সহায়ক হয়েছে। চলতি বছর প্রাপ্ত পুরো রেমিট্যান্স এসেছে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে।
মাসভিত্তিক প্রবাহের চিত্র
২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাসভিত্তিক রেমিট্যান্স পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জুলাই মাসে এসেছে ১৯১ কোটি ডলার, আগস্টে ২২২ কোটি, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি, নভেম্বরে ২২০ কোটি এবং ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স। নতুন বছরের শুরুতে জানুয়ারিতে এসেছে ২১৯ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে ২৫২ কোটি, মার্চে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি এবং মে মাসে এসেছে ২৯৭ কোটি ডলার। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, মার্চ মাসে ৩৩০ কোটির বেশি ডলার এসেছে, যা দেশের ইতিহাসে একক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।
চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ এম হেলাল আহমেদ বলেন, ‘এটি শুধু সংখ্যাগত সাফল্য নয়, বরং দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার প্রতিফলন। সঠিক নীতিমালা, প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ ব্যাংকিং অবকাঠামো এবং আইনগত পদক্ষেপ একত্রে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়িয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও এই অর্থপ্রবাহ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্বস্তি দিয়েছে, ডলারের বাজারে চাপ কমিয়েছে এবং আমদানি ব্যয় মেটাতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। তবে এই ধারা টিকিয়ে রাখতে হলে বহুমুখী শ্রমবাজার, স্বচ্ছ অভিবাসন প্রক্রিয়া ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুসারে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের (জুলাই থেকে ২৮ জুন) মধ্যে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৩০.০৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬.৫ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে এই পরিমাণ ছিল ২৩.৭৪ বিলিয়ন ডলার।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের রেমিট্যান্সবান্ধব নীতিমালা এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের আস্থা ও সহযোগিতাই এই সাফল্যের পেছনে মূল চালিকা শক্তি।
২০২৪-২৫ অর্থবছর বাংলাদেশের রেমিট্যান্স খাতে এক নতুন ইতিহাস রচনা করেছে। এই গতি ধরে রাখতে হলে হুন্ডি প্রতিরোধ কার্যক্রম আরও জোরদার করা, প্রবাসীদের আস্থার জায়গা সুসংহত রাখা এবং বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিবেশ আরও সহজতর করা অপরিহার্য। রেমিট্যান্স এখন শুধু অর্থপ্রবাহ নয়, বরং অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার অন্যতম কৌশলগত হাতিয়ার।
ঢাকা, ২৯ জুন ২০২৫ – অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বাজারভিত্তিক উন্নয়নের প্রতি প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে আইডিই বাংলাদেশ ঢাকার লো মেরিডিয়ান হোটেলে আয়োজিত “Catalyzing Markets: iDE Bangladesh Private Sector Engagement Summit 2025”-এ তাদের প্রাইভেট সেক্টর এনগেজমেন্ট স্ট্র্যাটেজি ২০২৫–২০৩০ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে।
সামিটে সরকারি প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, উন্নয়ন সহযোগী এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি খাতের ২০০ জনেরও বেশি অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন। অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, এসিআই, এসএমসি, লাল তীর সিড লিমিটেড, এনআরবিসি ব্যাংক, রুরাল সার্ভিসেস ফাউন্ডেশন, রহিম আফরোজ, ইসপাহানি এগ্রো, ব্র্যাক, গ্রামীণ ড্যানন ফুডস লিমিটেড। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংক, এফসিডিও, ইউনিসেফ, জিআইজেড, ইউএনডিপি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইতালীয় ও ডেনিশ দূতাবাস-এর প্রতিনিধিরা।
সামিটে ১৪টি প্রাইভেট সেক্টর প্রতিষ্ঠানের সাথে সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয় এবং একটি প্রদর্শনী আয়োজন করা হয় যেখানে কৃষি, ওয়াশ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পুষ্টি ও ফিনটেক খাতের উদ্ভাবনী সমাধান তুলে ধরা হয়।
প্রধান অতিথি ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, নির্বাহী চেয়ারম্যান, পিপিআরসি ও চেয়ারপারসন, ব্র্যাক বলেন, “আইডিইর এই স্ট্র্যাটেজি একটি সময়োপযোগী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন উদ্যোগ, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য একটি কার্যকর কাঠামো তৈরি করবে।”
বিশিষ্ট বক্তাদের মধ্যে ছিলেন:
উজমা চৌধুরী, পরিচালক (ফাইন্যান্স), প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ
মোহাম্মদ মোহিউদ্দিন আহমেদ, অ্যাডিশনাল জেনারেল ম্যানেজার, এসএমসি
কাজি মো. সাফায়েত কবির, সিনিয়র EVP, এনআরবিসি ব্যাংক
ইঞ্জিনিয়ার সাদিদ জামিল, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, দি মেটাল প্রাইভেট লিমিটেড
নিতাই পদ সাহা, সিইও, রুরাল সার্ভিসেস ফাউন্ডেশন (RSF)
সামীর কার্কি, কান্ট্রি ডিরেক্টর, আইডিই বাংলাদেশ বলেন, “এই স্ট্র্যাটেজি কেবল একটি নীতি-নির্ধারণী দলিল নয়; এটি একটি যৌথ ভিশন—যেখানে ব্যবসা ও উন্নয়ন একসাথে কাজ করে টেকসই সমাধান তৈরি করে যা সকলের জন্য কার্যকর বাজার গড়ে তোলে।”
এই নতুন কৌশলগত রোডম্যাপ আইডিইর চার দশকের অভিজ্ঞতাকে ভিত্তি করে গঠিত, যার লক্ষ্য হলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা থেকে বৃহৎ কর্পোরেশন পর্যন্ত সকলের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে উদ্ভাবনী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাজারব্যবস্থা তৈরি।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনকারী অবকাঠামো পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর ৩ বছরপূর্তি ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার। ২০২২ সালের ২৬ জুনের এই দিনে বহু প্রতিক্ষিত পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। এরপর এক মুহুর্তের জন্য সেতুতে যান চলাচল বন্ধ হয়নি। আর এই তিন বছরে ১ কোটি ৯৪ লাখ ৭১ হাজার ৬৯২টি যান পারাপারে টোল আদায় হয়েছে ২ হাজার ৫ শ’ ৪ কোটি ৬৭ লাখ ৬২ হাজার ৮শ’ টাকা।
পদ্মা সেতু দক্ষিণের মানুষের বিড়ম্বনা লাঘব করে এগিয়ে যাওয়ার প্রতীক এখন। উত্তাল নদী পারপারের ভোগান্তি থেকে শুধু মুক্তিই দেয়নি এই সেতু পাল্টে দিয়েছে দক্ষিণের আর্থ সামাজিক অবস্থাও। উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত, শিল্প কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্যেও যুগান্তকারী পরিবর্তন। খুলে গেছে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার।
সেতুর উপর তলায় সড়ক পথ ও আর নিচ দিয়ে ছুটছে ট্রেন। রাতদিন দ্রত বেগে পদ্মার উপর দিয়ে চলছে ট্রেন ও সড়ক পথের যাত্রা। পদ্মা সেতুর ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধন হলেও পরদিন ২৬ জুন এই দিনে পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু হয়। পরের বছর ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর পদ্মা সেতুর রেলপথ উদ্বোধন হয়। পদ্মা সেতু হয়ে চালু হয় ঢাকা-ভাঙ্গা নতুন রেল নেটওয়ার্ক। আর ২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর রেল লিঙ্ক প্রকল্প পুরোপুরি চালু হয়। এদিন রাজধানী থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে ভাঙ্গা হয়ে নতুন পথে নড়াইল ও যশোর অতিক্রম করে খুলনা পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। রাজধানী থেকে মাত্র সাড়ে ৩ ঘন্টায় খুলনা ও বেনাপোল পৌছানো যাচ্ছে। তাই এখন দক্ষিণের মানুষ সড়ক ও ট্রেন পথের সুফল পাচ্ছে।
এর আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পায়রা ও রামপালের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হয় পদ্মা সেতু প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা খুঁটি ব্যবহার করে। সেতু উপর দিয়ে যাওয়া উচ্চ ক্ষমতার ইন্টারনেট লাইন ব্যবহার হচ্ছে। সেতুতে নির্মাণ করে রাখা গ্যাস লাইন ব্যবহারে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে দক্ষিণের জনপদ, এখন অপেক্ষা এখন। তাই খুশি সবাই।
পদ্মা সেতুর দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়াদ বলেন, কোন হেসেল ছাড়াই টানা দিন বছর সেতুতে নিরবিচ্ছিন্নভাবর যান পারাপার করা হয়। এটি একটি বড় মাইলফলক। পদ্মা সেতুর দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) যুগ্ম সচিব আলতাফ হোসেন সেখ বলেন, দেশের এই অবকাঠামো যেমন মানুষের উপকারে লাগছে, আবার রাজস্ব আয়ও হচ্ছে। সেতু ব্যবহারে টোল আদায় আরও সহজ করা হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যেই চলন্ত অবস্থায়ই টোল পরিশোধ করা যাবে।
স্বপ্নের সেতু চালুর তিন বছরে পারাপার হয়েছে ১ কোটি ৯৪ লাখ ৭১ হাজার ৬৯২টি। এর মধ্যে মাওয়া দিয়ে প্রবেশ করে ৯৬ লাখ ৭১ হাজার ১১২টি যান। আর ৯৮ লাখ ৫৮০টি যান জাজিরা প্রান্ত দিয়ে পদ্মা সেতুতে প্রবেশ করে। মাওয়া থেকে ১ লাখ ২৯ হাজার ৪শ’৬৮ বেশি যান জাজিরা প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করে পদ্মা সেতু অতিক্রম করে।
গত ৫ জুন পদ্মা সেতুতে এক দিনে রেকর্ড পরিমান ৫ কোটি ৪৩ লাখ ২৮ হাজার টাকার টোল আদায় হয়েছে। এই ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৫২ হাজার ৪৮৭টি যানবাহন পারাপার হয়। পদ্মা সেতুতে একদিনে সর্বোচ্চ টোল আদায় ও যানবাহন পারাপারের নতুন রেকর্ড এটি। এর আগে ২০২২ সালের ২৬ জুন পদ্মা সেতুর যান চলাচলের শুরুর দিনে সর্বোচ্চ ৫১ হাজর ৩১৬টি যানবাহন পারাপারের রেকর্ড ছিল। আর ২০২৪ সালের ৯ এপ্রিল ইদুল ফতরের আগে সর্বোচ্চ টোল আদায়ের রেকর্ড ছিল ৪ কোটি ৮৯ লাখ ৯৪ হাজার ৭শ' টাকা।
নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়াদ বলেন, সেতু চালুর প্রথম বছর ৫৬ লাখ ৯৪ হাজার ৮৯৯টি যানবাহন পারাপারে টোল আদায় হয়েছে ৭৯৮ কোটি ৬০ লাখ ৯৩ হাজার ৭শ’ টাকা। দ্বিতীয় বছর ৬৮ লাখ ১ হাজার ৩৭৪টি যানের বিপরীতে টোল পাওয়া যায় ৮৫০ কোটি ৪৩ লাখ ৫৬ হাজার ৩শ’ ৫০ টাকা। আর তৃতীয় বছর ২৫ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত ৬৯ লাখ ৯৫ হাজার ২২৯টি যান পারাপারে টোল আদায় হয় ৮৬১ কোটি ২২ লাখ ১৮ হাজার ৮৫৯ টাকা। মূল পদ্মা সেতু ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের দীর্ঘ। তবে অ্যাপ্রোচসহ প্রায় ১০ কিলোমিটার। সেতু নিরাপত্তাসহ ট্রাফিক আইন মেনে পদ্মা সেতুতে যানাবাহানের নির্বিঘ্ন চলাচলে সেতু এবং দুই প্রান্তের সড়ক জুড়ে অত্যাধুনিক ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সেতুতে যানবাহানের গতিও বৃদ্ধি করে দুই পারের এক্সপ্রেসওয়ের মতই ঘন্টায় সর্বোচ্চ গতি করা হয়েছে ৮০ কিলোমিটার।
মন্তব্য