আগামী অর্থবছরের বাজেট পেশের আগেই এটিকে বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে মূল্যায়ন করেছে বিএনপি। করোনাকালে গতানুগতিক বাজেট না দিয়ে ছয় মাসের জন্য বিশেষ বাজেট দেয়ার প্রস্তাব করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আগামী ৩ জুন প্রস্তাব করা হচ্ছে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট। তার পাঁচ দিন আগে বিএনপির বাজেট ভাবনা তুলে ধরতে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে আসেন ফখরুল।
গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত বছরও তাদের পরামর্শ উপেক্ষা করে সরকার যে বাজেট দিয়েছে, সেটা বাস্তবায়ন করা যায়নি, আগামী বাজেটও বাস্তবায়ন করা যাবে না।
ফখরুল বলেন, ‘সরকার এবার ৬ লাখ ২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকার যে বাজেট দিতে যাচ্ছে সেটি বিশাল, অবাস্তবায়নযোগ্য, উচ্চাভিলাষী, গতানুগতিক।
‘আসন্ন অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু প্রথম আট মাসে আদায় হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৫১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা, যা ৫০ শতাংশেরও নিচে। বাকি চার মাসে আদায় করতে হবে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা’- বলেন বিএনপি নেতা।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন ৪৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বলে বাস্তবায়ন, পরীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ- আইএমইডির প্রতিবেদনও উল্লেখ করেন ফখরুল। বলেন, ‘দুই মাসে খরচ করতে হবে ১ লাখ ৬ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা।
অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ছবি: সংগৃহীত
‘এমনিতেই বরাদ্দ কম, তার ওপর বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করতে পারে না মন্ত্রণালয়। তাহলে এ বাজেটের অর্থ কী?’- প্রশ্ন রাখেন বিএনপি নেতা।
গত বছরও বিএনপি একই দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু সরকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার যে বাজেট দিয়েছে, সেটি গতানুগতিক, অবাস্তবায়নযোগ্য হয়েছে বলে দাবি করেন ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘এই বাজেট যা জাতিকে হতাশ করেছে। শেষ পর্যন্ত এই বাজেটের কোনো লক্ষ্যই সেভাবে পূরণ হয়নি। না রাজস্ব আহরণে, না প্রক্ষেপণকৃত উন্নয়ন, প্রণোদনা ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নে।’
করোনাভাইরাসে অর্থনীতি বিপর্যস্ত হওয়ায় রাজস্ব আদায়ে সরকার ব্যর্থ হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জেনেশুনে এ ধরনের অবাস্তব টার্গেট তাই তামাশা ছাড়া আর কী হতে পারে?’
এবার বাজেট ঘাটতি অনুমান করা হয়েছে ২ লাখ ১৩ হাজার ৮০২ কোটি টাকা, যা জিডিপির সাড়ে ৬ শতাংশ। ফখরুল বলেন, এত বিশাল পরিমাণ বাজেট ঘাটতি এই প্রথম।
ক্রান্তিকালে গতানুগতিক বাজেট নয়
করোনা মহামারির কথা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ‘জীবন ও জীবিকার টানাটানিতে জনজীবন ও অর্থনীতি দুটোই মহাসংকটে রয়েছে। করোনা সংক্রমণ রোধ করতে না পারলে কোনোভাবেই অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়।’
গতানুগতিক বাজেট না দেয়ার দাবি করে তিনি বলেন, ‘করতে হবে বিশেষ সময়ের বিশেষ বাজেট। এর মুখ্য উদ্দেশ্য হবে করোনার প্রভাব মোকাবিলার মাধ্যমে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা ও দুর্ভোগ উপশম করা। ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করে স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনা। এ জন্য দরকার হবে সহায়ক নীতি-সহায়তা।’
তিনি বলেন, ‘অনেকে মনে করেন, করোনার ভয়াবহতা না কমলে গতানুগতিক বাজেট করে কোনো লাভ নেই। লক্ষ্য হওয়া উচিত আগামী ছয় মাসের জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট করা।’
করোনার কারণে পূর্ণাঙ্গ বাজেটের কোনো লক্ষ্যই অর্জিত হবে না দাবি করে তিনি বলেন, ‘অর্থনীতির অস্বাভাবিক সংকোচনে প্রচলিত বাজেটব্যবস্থা থেকে সরে এসে তিন বছরের মধ্যমেয়াদি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার আলোকে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘জীবন-জীবিকার টানাটানির এ দুর্যোগকালে প্রবৃদ্ধি কোনো ইস্যু নয়। এখন প্রবৃদ্ধির কথা না বলে বরং কর্মসংস্থান এবং মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষার কথাই বলতে হবে। কারণ, জীবন ও জীবিকার সমন্বয়ের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
‘তবে মনে রাখতে হবে জীবিকার চেয়ে জীবন আগে। তাই এবারের বাজেট হতে হবে মূলত জীবন বাঁচানোর বাজেট। এ বাজেট হওয়া উচিত ঝুঁকি মোকাবিলা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার বাজেট। এ বাজেট হতে হবে জনস্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষার বাজেট।’
মাথাপিছু আয় কীভাবে বাড়ল?
সরকার জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ হাজার ২২৭ ডলার হয়েছে। এই পরিসংখ্যানে সংশয় প্রকাশ করেন ফখরুল। বলেন, ‘মানুষের অর্থনৈতিক জীবন বিপর্যয়ের যে চিত্র চারদিকে তাতে তো তা প্রতিভাত হয় না।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের আয় কমেছে ৩৭ শতাংশ। বেতননির্ভর মানুষের আয় কমেছে ৪৯ শতাংশ। দেশে গত কোভিড সময়ে ২ কোটি ৪৫ লাখ নতুন দরিদ্রের সৃষ্টি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘তাহলে মাথাপিছু আয় বাড়লটা কার?’
কালোটাকা সাদা করার সুযোগের সমালোচনা
বিএনপির প্রতিটি বাজেটেই এই সুযোগ দেয়া হলেও ফখরুল এখন এর বিরোধিতা করছেন। তিনি বলেন, ‘হরিলুট করে সঞ্চিত কালোটাকা জায়েজ করার দরজা অবারিত করে দিলেন অর্থমন্ত্রী, যা অনৈতিক এবং ন্যায়নীতি মেনে আইন পালনকারী নাগরিকদের প্রতি অবিচার।’
‘কোভিডকালীন এত কালোটাকা কারা আয় করেছে জাতি তা জানতে চায়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জাতি জানতে চায়, এরা কারা? যদিও এরই মধ্যে সরকারদলীয় ও সরকারের মদদপুষ্ট অনেক রাঘব বোয়ালের নাম বেরিয়ে পড়েছে।’
অপ্রদর্শিত আয়ের বিরাট অংশ পাচার হয়ে যাচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, বছরে পাচার হয় ১ লাখ কোটি টাকার অধিক। সাত বছরে পাচার হয়েছে ৫ হাজার ২৭০ কোটি ডলার, টাকার অঙ্কে যা সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা, যা ২০১৯-২০ সালের জাতীয় বাজেটের প্রায় সমান।
প্রণোদনা পাচ্ছে না সবাই
কোভিড থেকে উত্তরণে সরকার যে প্রণোদনা দিচ্ছে, সেটি টার্গেট গ্রুপের কাছে পৌঁছাতে পারেনি বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল।
তিনি বলেন, বড় শিল্পপতিরা প্রণোদনা তহবিল যতটা পেয়েছে, তার চেয়ে কম পেয়েছে মাঝারি শিল্প এবং তার চেয়েও কম পেয়েছে ছোট উদ্যোক্তারা। কুটিরশিল্প পেয়েছে আরও কম। অথচ উচিত ছিল সবচেয়ে ছোট যারা, তাদের ক্ষেত্রেই তহবিলের সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন। কারণ, তাদের প্রয়োজনটাই বেশি।
প্রণোদনা প্যাকেজে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত, দুস্থ, গরিব, দিনমজুর, শ্রমিকেরা উপকৃত হয়নি অভিযোগ করে বিএনপি নেতা বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজের ৫০ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা বিতরণই সম্ভব হয়নি, যা মোট অর্থের প্রায় ৪২ শতাংশ।
মেগা বাজেটে বরাদ্দের সমালোচনা
বাজেটে ১০টি মেগা প্রকল্পের জন্য ৫০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, এসব মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ কমিয়ে সে অর্থ নিঃস্ব, বেকার, ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে নগদ অর্থ বণ্টনের জন্য বরাদ্দ করা যেত।
স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতায় মানুষ মারা যাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল। বলেন, গত এক দশকের মধ্যে এবারই সবচেয়ে কম উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। বরাদ্দের মাত্র ২৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ ব্যয় করতে পেরেছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।
স্বাস্থ্য খাতের মতো এমন গুরুত্বপূর্ণ খাতকে অবহেলিত রেখে বিশাল বাজেট প্রণয়ন করে কী হবে?- প্রশ্ন রাখেন বিএনপি নেতা।
বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ১৫ শতাংশ এবং জিডিপির কমপক্ষে ৫ শতাংশ করারও দাবি জানান বিএনপি নেতা। তার অভিযোগ, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশই সবচেয়ে কম ব্যয় করে এই খাতে।
টিকা নিয়ে ‘বালখিল্যতা’
করোনার টিকা আনতে শুরু থেকেই একাধিক দেশের সঙ্গে চুক্তি না করারও সমালোচনা করেন ফখরুল। বলেন, ‘আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে শুরু থেকেই জোর দিয়ে বলেছিলাম টিকার জন্য একক উৎসের ওপর নির্ভর না করে বিকল্প সূত্র খুঁজতে। তখন সরকার বলেছিল, বিএনপি নাকি টিকা নিয়ে রাজনীতি করছে। অথচ সরকার এখন চীন এবং রাশিয়া থেকে টিকা আনার চেষ্টা করছে। অবশেষে প্রমাণিত হলো, টিকা নিয়ে বিকল্প অন্বেষণে আমাদের পরামর্শটিই সঠিক ছিল।’
গণটিকা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর টিকা নিচ্ছেন এক নারী। ফাইল ছবি
তিনি বলেন, বিএনপির পরামর্শ শুরুতে মানলে সরকারকে এখন ‘লেজেগোবরে’ অবস্থায় পড়তে হতো না।
টিকা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশেই উৎপাদনের পরামর্শও দেন ফখরুল।
দেশে শ্রেণিবৈষম্য ব্যাপক আকার ধারণ করেছে অভিযোগ করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘বিত্তবান-বিত্তহীনের ব্যবধান দশমিক ৪ পর্যন্ত সহনীয় বলে মনে করা হয়। আমাদের দেশে এটা বর্তমানে দশমিক ৫-এর কাছাকাছি রয়েছে। এটা অসহনীয় একটি অবস্থা।
‘সমাজে যখন ন্যায়-অন্যায়ের কোনো ব্যবধান থাকে না, দুর্নীতি আর অসৎ পন্থাই অর্থ আয়ের প্রধান হাতিয়ার হয়ে দাঁড়ায়, তখন সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়তে থাকে।’
ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান কমাতে হলে সবার আগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলেও মনে করেন বিএনপি নেতা।
মেগা প্রকল্পের বাজেট বেশি ধরা হয়েছে বলে আগের করা দাবি নতুন করে আবার তুলে ধরেন বিএনপি নেতা। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবিও তুলে ধরেন।
সড়ক নির্মাণে বিশ্বে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় দাবি করে ফখরুল বলেন, ‘এতেই বোঝা যায় নির্মাণ খাতে কী ধরনের রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হচ্ছে।’
তিনি বলেন, কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চার লেনের সড়কের চেয়ে ইউরোপে চার লেনের সড়ক নির্মাণের খরচ অর্ধেক।
ব্যাংকে লুটপাট
ব্যাংকিং খাতকে রীতিমতো লুট করা হয়েছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, করোনাভাইরাসের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের বিশেষ নীতিমালার কারণে ঋণ গ্রহীতারা ঋণ পরিশোধ করছে না।
ঋণখেলাপিদের কবল থেকে দেশকে ও অর্থনীতিকে মুক্ত করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঋণ খেলাপির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলা হলেও তাদের আবার বিপুল ঋণ অবলোপন করে দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ ঋণ খেলাপি ও ব্যাংকমালিকদের অনৈতিক সুযোগ দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ আদায়ে জোরদার হওয়ার চেয়ে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে অবলোপনের দিকে, যা কোনো ভালো সমাধান নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক তার ঐতিহাসিক নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা আগের মতো পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা। বলেন, ‘ব্যাংকমালিকদের পরিবারের সদস্যদের অনৈতিকভাবে বছরের পর বছর পরিচালক পদে বহাল থাকার স্থায়ী সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র ঋণখেলাপিরা তুলনামূলকভাবে কম খেলাপি।’
বিএনপির মতে বাজেট যেমন হওয়া উচিত
স্বাস্থ্য খাতকে বাজেটের সর্বাধিক তালিকায় রাখা স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ ব্যয় করা, প্রতিটি মানুষকে জাতীয় স্বাস্থ্যকার্ড প্রদান, প্রতিটি জেলায় ডেডিকেটেড সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, সামাজিক সুরক্ষার বরাদ্দ বাড়ানো ও নতুন দরিদ্রদের চিহ্নিত করে তাদের কাছে সামাজিক সুরক্ষার অর্থ পৌঁছে দেয়া, দরিদ্রদের জন্য তিন মাসের জন্য ১৫ হাজার টাকা এককালীন নগদ প্রদান, উপকারভোগীদের তালিকা নিরপেক্ষভাবে করা, এসএমই, শিল্প ও কৃষি খাতে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে বিশেষ প্রণোদনা অর্থ বরাদ্দ, প্রবাসীদের রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ঋণ, নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য পাঁচ বছর করছাড়, সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো, কৃষি খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ, ছাঁটাই না করার শর্তে প্রণোদনা দেয়া, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা, তৈরি পোশাকসহ রপ্তানি খাতে সহায়তা অব্যাহত রাখা, দারিদ্র্য ও বৈষম্য দূরীকরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর জোর দেয়ার দাবি জানান ফখরুল।
শীর্ষ অর্থনীতিবিদদের নিয়ে উচ্চপর্যায়ে একটি অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করারও পরামর্শ দেয় বিএনপি।
এ ছাড়া অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ ভর্তুকি বাদ দেয়া, অনিবন্ধিত বিদেশি নাগরিকের কাছ থেকে আয়কর আদায়, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো থেকে কর বৃদ্ধি, দেশি কোম্পানিকে পুনর্নিরীক্ষণ, বিদেশি অনুদান বাড়ানোর চেষ্টা করার পরামর্শ দেন ফখরুল।
ব্যাংক খাত থেকে আর ঋণ না নেয়া, মুদ্রা সম্প্রসারণ নীতি অব্যাহত রাখার কথাও বলেন ফলরুল।
আরও পড়ুন:চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমলেও বেড়েছে মাথাপিছু আয়। বিবিএসের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায় ২০২৪–২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশে, যা আগের অর্থবছর ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ছিল ৪ দশমিক ২২ শতাংশ।
মঙ্গলবার (২৭ মে) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এই প্রাথমিক হিসাবের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।
এর আগের অর্থবছর ২০২২–২৩ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। জিডিপি (সামগ্রিক দেশজ উৎপাদন) মানে হলো নির্দিষ্ট সময়ে দেশের ভেতরে উৎপাদিত সকল পণ্য ও সেবার চূড়ান্ত মূল্য।
বিবিএস জানায়, দেশের মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ হাজার ৮২০ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। আগের অর্থবছরে এ আয় ছিল ২ হাজার ৭৩৮ ডলার। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে ৮২ ডলার আয় বেড়েছে।
এর আগে ২০২১–২২ অর্থবছরে দেশের সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৭৯৩ ডলার। তবে ডলার বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ার কারণে পরবর্তী দুই অর্থবছরে এই আয় কমে যায়। এরপর ২০২২–২৩ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ৭৪৯ ডলারে। সর্বশেষ ২০২৩–২৪ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় আরও কমে হয় ২ হাজার ৭৩৮ ডলার।
মূলত ডলার বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণে বিবিএসের গণনায় মাথাপিছু আয়ের হিসাবে পার্থক্য দেখা যায়। চলতি অর্থবছরে প্রতি ডলারের গড় বিনিময় হার আনুমানিক ধরা হয়েছে ১২০ দশমিক ২৯ টাকা, যেখানে আগের অর্থবছরে এই হার ছিল ১১১ দশমিক ০৬ টাকা।
এই অর্থবছরে টাকার হিসাবে মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২২১ টাকা, যা গত অর্থবছরের ৩ লাখ ৪ হাজার ১০২ টাকা থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
মাথাপিছু আয় যেভাবে গণনা করা হয়
মাথাপিছু আয় বলতে কোনো ব্যক্তি এককভাবে যত টাকা আয় করেছেন তা নয়। এটি হলো দেশের মোট জাতীয় আয় (দেশীয় আয় + প্রবাসী আয়) কে জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে যে গড় আয় পাওয়া যায়, সেটিই মাথাপিছু আয় হিসেবে ধরা হয়।
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, সরকারি যাকাত তহবিল দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তহবিলটি শক্তিশালী করলেই দারিদ্র্য নিরসনে কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করা সম্ভব হবে।
মঙ্গলবার (২৭ মে) বিকেলে সাতকানিয়ার বাবুনগর জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে স্থানীয় দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের মাঝে সরকারি যাকাত তহবিলের অর্থ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
ধর্ম উপদেষ্টা যাকাত গ্রহীতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, সরকারি যাকাত তহবিল থেকে প্রাপ্ত অর্থ পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগাতে হবে। নিজেদেরকে স্বাবলম্বী করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আয়বর্ধক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে হবে।
তিনি গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালন, মৎস্য চাষ, শাকসবজি উৎপাদন ও কুটির শিল্প স্থাপনসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা কার্যক্রম শুরু করার পরামর্শ দেন, যা দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক হবে।
সরকারি যাকাত তহবিলকে শক্তিশালী করার জন্য যাকাত প্রদান বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে ড. খালিদ বলেন, তহবিল শক্তিশালী হলে দেশের দরিদ্র জনগণের জীবনমান পরিবর্তিত হবে এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। তিনি সমাজের বিত্তবানদের দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ জানান।
এ সময় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক সরদার সরোয়ার আলম ও সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সরকারি যাকাত তহবিল থেকে মোট ৬৪ জন দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের মাঝে ছয় লাখ পনের হাজার টাকার চেক বিতরণ করা হয়।
পরে ধর্ম উপদেষ্টা নূরে হাবিব ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় দুই শতাধিক গরীব-অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন।
নিজের মন্ত্রণালয় নিয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। মঙ্গলবার (২৭ মে) দুপুরে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে স্থানীয় জেলে সম্প্রদায় ও বাওড় মৎস্যজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় হাওড় বাওড় সমস্যা নিয়ে এ অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন।
উপদেষ্টা বলেন, আমি যেটা খুব অবাক হই, আমার নিজের মন্ত্রণালয় হিসেবে আমাদের খুব অসহায় লাগে আপনাদের মতই। আমরা জেলেদের মন্ত্রণালয়। আমাদের জেলেদের জীবন-জীবিকা যেখানে চলে সেই হাওড়-বাওড় ভুমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে। তারা হাওড় বাওড় ইজারা দেয়, আর আমরা তখন কাতর হয়ে বলি—এটা আমাদের দেন।
উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, জল যার জলা তার, এই নীতি বাস্তবায়নে আমরা কাজ করব। তরুণ প্রজন্ম আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছে। এই প্রজন্মই সমাজের সকল বৈষম্য দূর করবে। প্রকৃত মৎসজীবীদের মাঝে বাওড়ের অধিকার ফিরিয়ে দিতে আমি ভূমি মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সকল দপ্তরের কথা বলব। বাওড়পাড়ের বাসিন্দাদের কাছে বাওড়ের প্রকৃত মালিকানা ফিরিয়ে দিয়ে তাদের দুঃখ দুর্দশা দূর করতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। রাজনৈতিক ও সামাজিক সকল পকে এ বিষয়ে সংহত হতে হবে।
এর আগে সকালে উপজেলার বলুহর বাওড় পরিদর্শন করেন উপদেষ্টা। সেসময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আওয়াল, খেত মজুর সমিতির সভাপতি ফজলুর রহমান, মৎস্য অধিদপ্তরের অভ্যন্তরীণ মৎস্য কর্মকর্তা মোতালেব হোসেনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের শিল্পকলা-ভিত্তিক অনুদান ‘কানেকশনস থ্রু কালচার (সিটিসি)’ গ্রান্টসের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হয়েছে। এই অনুদানের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য এবং বাংলাদেশসহ ১৯টি অংশীদার দেশের শিল্পী ও সৃজনশীল প্রতিষ্ঠান শিল্পকলা ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সৃজনশীল এবং সাংস্কৃতিক প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করতে পারবেন। আগামী ২৩ জুন রাত আটটা (বাংলাদেশ সময়) পর্যন্ত এ অনুদানের জন্য আবেদন করা যাবে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং আবেদন করতে ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।
‘কানেকশনস থ্রু কালচার’ প্রকল্পটির মাধ্যমে শিল্প ও সংস্কৃতিতে উদ্ভাবনী এবং আন্তর্জাতিক উদ্যোগের জন্য ১০,০০০ পাউন্ড পর্যন্ত অনুদান প্রদান করা হবে। এর মধ্যে রেসিডেন্সি, পারফরম্যান্স, পলিসি ল্যাব, প্রদর্শনী, গবেষণা ও উন্নয়নের পাশাপাশি আরও অনেক উদ্যোগ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে যা অর্থবহ সংলাপ এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি করতে এবং দীর্ঘমেয়াদী আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব জোরদার করতে সহায়তা করবে। এই অনুদান স্থাপত্য, নকশা, ফ্যাশন ও কারুশিল্প, থিয়েটার, নৃত্য ও সার্কাস, সাহিত্য, চলচ্চিত্র ও সৃজনশীল প্রযুক্তি, ভিজ্যুয়াল আর্টস, সঙ্গীত, অথবা মাল্টিডিসিপ্লিনারি উদ্যোগ সহ সকল শাখা হতে আবেদন গ্রহণের উপযুক্ত। প্রকল্পের মাধ্যম ডিজিটাল, স্বশরীরে অংশগ্রহণ, কিংবা হাইব্রিড হতে পারে। প্রকল্পের সময়কাল অক্টোবর ২০২৫ হতে ৩১ অক্টোবর ২০২৬ পর্যন্ত। আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কিত তথ্য ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।
গত বছর এই অনুদানের মাধ্যমে ৪টি বাংলাদেশী প্রকল্প সহ মোট ৮৪টি বৈশ্বিক প্রকল্প সহায়তা পেয়েছিল। বিগত বছরের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এই বছরও নতুন প্রকল্পের আহবান জানানো হচ্ছে। এবারের পর্বে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৯০টি যৌথ উদ্যোগকে অনুদান প্রদান করা হবে, যা যুক্তরাজ্য এবং বাংলাদেশসহ ১৯টি অংশগ্রহণকারী দেশের যৌথ সৃজনশীল প্রকল্পকে অর্থায়ন করবে।
এই উদ্যোগ নিয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিল সাউথ এশিয়ার রিজিয়নাল আর্টস ডিরেক্টর জিল রিচেনস বলেছেন, “কানেকশনস থ্রু কালচার শুধুমাত্র একটি গ্রান্ট প্রোগ্রামই নয়, এ উদ্যোগ সৃজনশীল অংশীদারিত্বে পরিবর্তন আনতে একটি প্রভাবকের ভূমিকা পালন করবে। যেসব প্রকল্প শিল্পকলা ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য ও উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করবে এবং সংস্কৃতি ও সমাজের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখবে, আমরা সেসব প্রকল্প বাস্তবায়নে পাশে থাকতে চাই।”
ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর স্টিফেন ফোর্বস বলেন, “বাংলাদেশে প্রথমবারের মত আয়োজিত কানেকশনস থ্রু কালচার গ্রান্টের সাফল্যের ভিত্তিতে আমরা এবারের পর্বে শিল্পী ও শিল্পকলা নিয়ে যারা কাজ করছে, তাদের এই উদ্যোগে অংশ নিতে আহ্বান জানাই; আমরা আশা করি তারা নতুন উদ্যম ও উদ্দীপনা নিয়ে এ বছরের উদ্যোগের সাথে যুক্ত হবেন। এ আয়োজনের মাধ্যমে শিল্পী ও শিল্পকলা নিয়ে কাজ করে যে সংগঠনগুলো তাদের ক্ষমতায়নে কাজ করতে চাই, যেন একসাথে আমরা নতুন ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে পারি। অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সৃজনশীল কাজ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের মাধ্যমে ভৌগোলিক সীমারেখা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরে অর্থবহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে, যা সামাজিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রাখছে। সিটিসি গ্রান্টস প্রোগামও একই লক্ষ্যে কাজ করবে।”
যুক্তরাজ্য এবং বাংলাদেশ সহ আরও যেসকল দেশ এই উদ্যোগে অংশ নিচ্ছেঃ অস্ট্রেলিয়া, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বাংলাদেশ, চীনের মূল ভূখণ্ড, জর্জিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কাজাখস্তান, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, নেপাল, নিউজিল্যান্ড, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, ইউক্রেন, উজবেকিস্তান ও ভিয়েতনাম।
বিস্তারিত জানতে এবং আবেদন করতে ভিজিট করুন ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট।
(ওয়েব নিউজের জন্য)
আবেদন করতে ও অংশগ্রহণের মানদণ্ড ও যোগ্যতা সম্পর্কে জানতে: https://britishcouncilarts.grantplatform.com/
পূর্বে অনুদানপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলো সম্পর্কে জানতে: https://arts.britishcouncil.org/projects/connections-through-culture-grants
উপকূলীয় অঞ্চলকে দেশের শীর্ষস্থানীয় উৎপাদন ও রপ্তানিমুখী মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলে রূপান্তর করতে মাতারবাড়ী এলাকার গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলোর উন্নয়নে আরো দ্রুততার সাথে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন উদ্যোগ (MIDI) এর অগ্রগতি পর্যালোচনা শেষে এই নির্দেশনা দেন প্রফেসর ইউনূস।
এই অঞ্চলের কৌশলগত গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, "আমরা মাতারবাড়িকে দেশের বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর, পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ এবং জ্বালানি উৎপাদনের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছি। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য, আমাদের বিপুল অঙ্কের বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হবে।"
তিনি এই খাতে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কথা তুলে ধরেন এবং এই ধরনের বিনিয়োগ সহজতর করার জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান করার ওপর জোর দেন।
প্রধান উপদেষ্টা সড়ক পরিবহন ও নৌপরিবহন সচিবদের মহেশখালী-মাতারবাড়ী অঞ্চলের সাথে দেশের অন্যান্য অংশের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো উন্নত করতে সড়ক অবকাঠামো নির্মান কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার এবং সমুদ্রগামী কন্টেইনার জাহাজগুলিকে ধারণ করতে সক্ষম টার্মিনাল নির্মাণের নির্দেশনা দেন।
তিনি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল এবং সংশ্লিষ্ট শিল্প-কারখানাগুলোর শ্রমিকদের জন্য একটি পরিকল্পিত শহর নির্মাণসহ নগর উন্নয়নের উপরও গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আগামী ২৮ মে থেকে শুরু হতে যাওয়া জাপান সফরে MIDI অঞ্চলের উন্নয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা হিসেবে তুলে ধরা হবে।
আসন্ন জাপান সফরে প্রধান উপদেষ্টার ৩০ মে টোকিওতে আয়োজিত ৩০তম নিক্কেই ফিউচার অফ এশিয়া সম্মেলনে যোগদান এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করার কথা রয়েছে, যার লক্ষ্য হবে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলির জন্য তহবিল নিশ্চিত করা।
বৈঠকে মহেশখালী-মাতারবাড়ি অর্থনৈতিক অঞ্চলে জাপান তাদের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলেও জানানো হয়।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানের প্রথম অর্থনৈতিক অঞ্চলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এটি ইতিমধ্যে উল্লেখযোগ্য বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছে।
এছাড়াও, সৌদি আরবের পেট্রোকেমিক্যাল জায়ান্ট আরামকো, আবুধাবি পোর্টস, সৌদি আরবের বন্দর পরিচালনাকারী সংস্থা রেড সি গেটওয়ে, জাপানি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানি জেরা এবং মালয়েশিয়ার পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানি পেট্রোনাসসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক কোম্পানি এই অঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ সম্প্রতি মাতারবাড়িতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের জন্য জাপানি সংস্থা পেন্টা-ওশান কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এবং টোয়া (TOA) কর্পোরেশনের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (জাইকা) সহযোগিতায় গৃহীত এ প্রকল্পটি হবে MIDI উদ্যোগের কেন্দ্রবিন্দু এবং এই অঞ্চলের সংযোগ এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বৃদ্ধি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন উদ্যোগটি বাংলাদেশ এবং জাপানের একটি যৌথ উদ্যোগ যা সরবরাহ ব্যবস্থা, জ্বালানি এবং শিল্প উন্নয়নের মাধ্যমে এ অঞ্চলকে একটি কৌশলগত অর্থনৈতিক করিডোরে রূপান্তরিত করবে।
প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়ার সভাপতিত্বে বৈঠকে এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোর্শেদ, সড়ক পরিবহন, নৌপরিবহন, জ্বালানি, বিদ্যুৎ এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন। MIDI- সেলের মহাপরিচালক সারওয়ার আলম সভায় চলমান MIDI প্রকল্পগুলির একটি বিষদ পর্যালোচনা উপস্থাপন করেন।
আগামীকাল বুধবার (২৮ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় (বাদ মাগরিব) ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মুকাররম সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে।
১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র জিলহজ্ব মাসের চাঁদ দেখা এবং পবিত্র ঈদুল আজহার তারিখ নির্ধারণের লক্ষ্যে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আজ এই তথ্য জানিয়ে বলা হয়, সভায় সভাপতিত্ব করবেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
বাংলাদেশের আকাশে কোথাও পবিত্র জিলহজ্ব মাসের চাঁদ দেখা গেলে তা টেলিফোন নম্বর: ০২-২২৩৩৮১৭২৫, ০২-৪১০৫০৯১২, ০২-৪১০৫০৯১৬ ও ০২-৪১০৫০৯১৭ এবং ফ্যাক্স নম্বর: ০২-২২৩৩৮৩৩৯৭ ও ০২-৯৫৫৫৯৫১ এ অথবা সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক অথবা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানোর জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, আমানতকারীদের অর্থ নিরাপদ করার লক্ষ্যে সংকটে থাকা কয়েকটি ইসলামী ব্যাংককে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় একীভূত করা হবে।
মঙ্গলবার (২৭ মে) বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
গভর্নর বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল অগ্রাধিকার হলো আমানতকারীদের টাকা রক্ষা করা। ব্যাংক বাঁচবে কি না, তা পরের বিষয়।’
এক প্রশ্নের উত্তরে ড. মনসুর বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ও বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে দায়িত্ব বিভাজনের জটিলতা অনেক সময় অর্থপাচার সংক্রান্ত মামলার তদন্তে বিলম্ব ঘটায়।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন’ সংশোধনের পর তদন্ত কার্যক্রমে নতুন গতি আসবে। কারণ, এতে টাস্কফোর্সকে অধিক ক্ষমতা দেওয়া হবে, যা পাচার করা অর্থ দ্রুত ও কার্যকরভাবে উদ্ধার করতে সহায়ক হবে।
এদিকে, বাংলাদেশ ২০২৪ সালের বাসেল অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং (এএমএল) সূচকে ১৩ ধাপ এগিয়েছে। এ সূচকে দেশের অবস্থান ৪৬তম থেকে উন্নীত হয়ে ৫৯তম হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএফআইইউ প্রধান এএফএম শাহিনুল ইসলাম।
একই সংবাদ সম্মেলনে এএফএম শাহিনুল ইসলাম বলেন, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে সাম্প্রতিক সময়ে গৃহীত কঠোর ও জোরালো পদক্ষেপগুলোর ফলেই এই অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত সময়কালে ১৭টি সংস্থা মোট ২৭ হাজার ১৩০টি সন্দেহজনক লেনদেন (এসটিআর) ও সন্দেহজনক কার্যক্রম (এসএআর) রিপোর্ট করেছে। এর মধ্যে বিএফআইইউ একাই ১৭ হাজার ৩৪৫টি এসটিআর ও এসএআর রিপোর্ট পেয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেশি।
তিনি আরও জানান, বিএফআইইউ ১১৪টি গোয়েন্দা প্রতিবেদন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও অনুসন্ধানকারী সংস্থার কাছে পাঠিয়েছে।
এছাড়া, মানি লন্ডারিং তদন্তে ১ হাজার ২২০টি তথ্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএফআইইউ’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য