করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই আরেকটি বাজেট দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ৩ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাংলাদেশের ৫০তম যে বাজেট উপস্থাপন করা হবে তার প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘জীবন ও জীবিকার প্রাধান্য, আগামীর বাংলাদেশ’।
শোষণ–বঞ্চনার পথ পেরিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত যে দেশ ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র তকমা নিয়ে শুরু করেছিল যাত্রা, সেই বাংলাদেশ উন্নতির গতিতে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে পূর্ণ করেছে ৫০ বছর।
সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের অংশ হিসেবে এবারের বাজেট হয়তো জাঁকজমকপূর্ণভাবে উপস্থাপন করতেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। কিন্তু করোনাভাইরাস সেই আনন্দকে ফিকে করে দিয়েছে। গতবারের মতো এবারও সাদামাটাভাবে বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। তার বক্তব্যও হবে আগেরবারের মতো ছোট।
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা নজিরবিহীন এক মহামারির বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে অনিশ্চিত আগামীর জন্য বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী। এ সময়ে এসে সরকারকে একদিকে অর্থনীতির ধস ঠেকানোর কথা ভাবতে হচ্ছে, অন্যদিকে করতে হচ্ছে মানুষের প্রাণ বাঁচানোর চিন্তা।
দুই বছর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ‘সমৃদ্ধ আগামীতে’ পৌঁছানোর লক্ষ্য স্থির করে যে পথযাত্রা বাংলাদেশ শুরু করেছিল, এক ভাইরাসের প্রবল ত্রাসে তা থমকে গেছে। টানা তিন মেয়াদে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওই বাজেটের শিরোনাম দেয়া হয়েছিল ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাাংলাদেশ; সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাাংলাদের’।
ওই বাজেট শেষ না হতেই আসে করোনার ধাক্কা। শুরু হয় ভিন্ন পেক্ষাপট। ২০২০ সালের মার্চ থেকে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও তছনছ হয়ে যায়; ওলটপালট হয়ে যায় সব হিসাব-নিকাশ।
সেই কঠিন পরিস্থিতিতে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে ভাবতে হয়েছিল আগের উন্নয়ন দর্শনের বাজেটের চেয়ে ভিন্নভাবে। তাই তো তিনি তার বাজেটের শিরোনাম দিয়েছিলেন ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’।
পরিস্থিতি এখন আরও খারাপ। মহামারির প্রথম ঢেউয়ের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই শুরু হয়েছে দ্বিতীয় ঢেউ। শঙ্কা আছে, তৃতীয়, চতুর্থ ঢেউয়ের ধাক্কার। কবে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে দেশ, তা নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছে না।
এমন অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যেই ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। তার এবারের বাজেটের প্রধান লক্ষ্য অর্থনীতির ক্ষত সারিয়ে তোলা; মানুষের প্রাণ বাঁচানো। যে কাজ হারিয়েছে, তাকে কাজও দেওয়া। যে কষ্টে আছে, তার কষ্টা লাঘব করা।
আর তাই তিনি তার নতুন বাজেটের শিরোনাম দিয়েছেন ‘জীবন ও জীবিকার প্রাধান্য, আগামীর বাংলাদেশ’।
নিজের তৃতীয় এই বাজেট প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী নিউজবাংলাকে বলেন, “সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই আমরা এবারের বাজেটের নাম দিয়েছি ‘জীবন ও জীবিকার বাজেট’। এই বাজেট বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের অর্থনীতিকে যেমন আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনব, তেমনি দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষকে টিকা প্রদানসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে জীবন বাঁচিয়ে জীবিকার সংস্থান করা হবে।”
এই কঠিন বাস্তবতায় বছরের ব্যয়ের ফর্দ সাজাতে গিয়ে অর্থমন্ত্রীকে মাথায় রাখতে হচ্ছে স্বাস্থ্য খাত যেন মহামারি সামাল দেওয়ার সক্ষমতা পায়। উৎপাদন যেখানে বড় ধাক্কা খেয়েছে, সেখানে কৃষক যেন অন্তত ফসল ফলাতে পারে। ১৭ কোটি মানুষের এই দেশে খাদ্য সংকট যেন না হয়, হঠাৎ কর্মহীন হয়ে পড়া নিম্ন আয়ের মানুষকে যেন সামাজিক নিরাপত্তা দেওয়া যায় এবং বেকারত্ব যেন সমাজকে নতুন সংকটের পথে না নিয়ে যায়।
এসব দিক সামাল দিয়ে আগামী এক বছরে সরকারের ব্যয় নির্বাহের জন্য অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল মোটামুটি ছয় লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা খরচের একটি পরিকল্পনা ৩ জুন জাতীয় সংসদের সামনে উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন, যা আকারে বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ বেশি।
এই দুর্যোগের মধ্যে বিদায়ী অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি যে ৮ দশমিক ২ শতাংশের লক্ষ্যের ধারেকাছেও পৌঁছাতে পারবে না, সে বিষয়ে মোটামুটি একমত দেশি-বিদেশি অর্থনীতিবিদরা। নিশ্চিত সরকারও। সে কারণে লক্ষ্য কমিয়ে ৭ দশমিক ২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। সেটাও অর্জিত হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় দেখা দিয়েছে।
এমন পেক্ষাপটে এবার প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৭ শতাংশের ঘরে নামিয়ে এনে নতুন বাজেট দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রীর এ ভাবনার সঙ্গে একমত পোষণ করে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন কঠিন সময়। মহামারির এই সময়ে বাজেটের আকার, ঘাটতি বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামানোর প্রয়োজন আমি দেখছি না।
‘কোভিডের মধ্যে চলতি অর্থবছরে চার-সাড়ে চার শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও যথেষ্ট। আগামী অর্থবছরে ৫ শতাংশ হলেও ভালো।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন যে করেই হোক, যেখান থেকেই হোক, যত টাকাই লাগুক, টিকা এনে সারা দেশের মানুষকে দিতে হবে; মানুষের জীবন বাঁচাতে হবে। একই সঙ্গে যারা করোনার আঘাতে চাকরি হারিয়েছে, তাদের চাকরি বা কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। যাদের আয় কমে গেছে, তাদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে সংসার চালানোর সুযোগ করে দিতে হবে।
‘অর্থাৎ অসহায় মানুষের যার যেমন সহায়তা দরকার, সেটা করতে হবে। নতুন বাজেটে সরকার এমনটাই করবে, এটাই আমার প্রত্যাশা।’
আগামী অর্থবছরের বাজেটটি অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালের তৃতীয় বাজেট এবং আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদের ত্রয়োদশ বাজেট।
চলতি অর্থবছরে ৫ লাখ ৬৮ হাজার বাজেট ঘোষণা হয়েছিল গত বছরের ১১ জুন। এরপর মাত্র ৯ দিনের বাজেট আলোচনা ছিল, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সংক্ষিপ্ততম অধিবেশন।
২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথম বাজেটের সময় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় মুস্তফা কামাল সংসদে ভালোভাবে বাজেট পেশ করতে পারেননি। তার পক্ষে বাজেট উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্বিতীয়বার ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেট উপস্থাপনের সময় দেশে পুরোদমে করোনাভাইরাসের প্রকোপ। তৃতীয়বার, অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরেও করোনার প্রকোপ সামনে রেখেই বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী।
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী
মহামারির বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমেই মূলত দেশের মানুষের ‘জীবন ও জীবিকার’ জন্য অর্থ ব্যয় করবেন অর্থমন্ত্রী। এর বাইরে বিভিন্ন খাতে নানা ধরনের প্রণোদনা দিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখার চেষ্টা করবেন।
আর সে কারণে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ অনেক বাড়ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নতুন বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে সব মিলিয়ে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দের প্রস্তাব করবেন অর্থমন্ত্রী। এই বরাদ্দ বিদায়ী অর্থবছরে বাজেটের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেশি।
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ আছে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা।
বয়স্ক, বিধবাসহ বর্তমানে আট ধরনের ভাতা আছে, যা সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এর বাইরে মহিলা ও শিশু, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ অনেক মন্ত্রণালয়ের আলাদা সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি চালু রয়েছে।
এখন ৮৮ লাখ দরিদ্র লোক বয়স্ক, বিধবাসহ বিভিন্ন ধরনের ভাতা পাচ্ছেন। মোবাইলের মাধ্যমে সরকার এখন সুবিধাভোগীদের কাছে সরাসরি টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে।
নতুন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দ নিয়ে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে একটি বিশেষ সভা হয়। ওই সভায় আরও ১৫০ উপজেলার সব বয়স্ক এবং বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত নারীকে ভাতার আওতাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এ ছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ১২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য অতিরিক্ত তিন হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি নির্মাণেও বাজেটে বরাদ্দ রাখা হবে। বর্তমানে সারা দেশে এক লাখ ৮৬ হাজার ৪০৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেয়ে থাকেন।
বিদায়ী বাজেটে ১১২টি উপজেলার সব বয়স্ক এবং বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারীকে ভাতার আওতাভুক্ত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। বর্তমানে সারা দেশে ৪৯ লাখ বয়স্ক নাগরিককে মাসে ৫০০ টাকা করে ভাতা দেয় সরকার। নতুন করে ১৫০ উপজেলায় সব বয়স্ককে ভাতার আওতাভুক্ত করা হলে ভাতাভোগীর সংখ্যা আরও আট লাখ বাড়তে পারে।
একইভাবে সোয়া পাঁচ লাখ বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারী নতুন করে ভাতার আওতাভুক্ত হবেন। বর্তমানে সারা দেশে ২০ লাখ ৫০ হাজার নারীকে ৫০০ টাকা করে ভাতা দেয় সরকার।
সামাজিক নিরাপত্তার ১২৩টি কর্মসূচি রয়েছে। ৩০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
নতুন বাজেটে হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মানোন্নয়নে সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হবে। বর্তমানে ৮৬ হাজার জনকে এ ভাতা দেওয়া হচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে এ ভাতা দেওয়া হবে ৯৫ হাজার জনকে।
সড়ক ও নৌপরিবহন শ্রমিকরাও পাবেন নগদ টাকা
নতুনভাবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আসছেন সড়ক ও নৌপরিবহন শ্রমিকরা। করোনার কারণে গণপরিবহন ও নৌপরিবহন বন্ধ ছিল বেশ কিছুদিন। সামনেও বন্ধ রাখা লাগতে পারে। ফলে এসব যানবাহনে কর্মরত ড্রাইভার, হেলপার ও সুপারভাইজারদের আয়ের পথ বন্ধ ছিল বা ভবিষ্যতেও বন্ধ থাকতে পারে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে (দুই সিটে একজন) চালানোর কারণে পরিবহন মালিকদের আয়ও কমে গেছে। এতে ড্রাইভার, হেলপার ও সুপারভাইজারদের টাকাও (মজুরি-বেতন) কমিয়ে দিয়েছে মালিকরা।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সড়ক ও নৌ খাতের পরিবহন শ্রমিকদের নগদ সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব শ্রমিককে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের নগদ টাকা দেবে সরকার।
রাজধানীসহ দেশের যেসব স্থানে লকডাউনের কারণে শপিং মল-দোকানপাট বন্ধ ছিল। সেসব বিপণিবিতানের কর্মচারীদেরও নতুন বাজেটে নগদ টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হবে। এ জন্য নতুন বাজেটে একটি বরাদ্দ রাখা হবে।
এ ছাড়া দরিদ্র মায়ের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা, কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা, সরকারি চাকরিজীবীদের অবসরকালীন পেনশনও দেওয়া হবে এই সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায়।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. শামসুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, “মহামারির কঠিন সময় বিবেচনায় নিয়েই সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বলয় বাড়াতে হবে। যারা সত্যিই সত্যিই কষ্টে আছে…তাদের সবাইকে সহায়তা দেবে সরকার। সে কারণেই আমরা বলছি, এবারের বাজেট হবে ‘জীবন ও জীবিকার’ বাজেট।”
আরও পড়ুন:এপনিক ফাউন্ডেশনের আইএসআইএফ এশিয়া প্রোগ্রামের মর্যাদাপূর্ণ অনুদান অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তা খাতে এক নতুন অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছে টিম ফিনিক্স গ্রুপ। এই অনুদানের সহায়তায় সংস্থাটি বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তা খাতকে রূপান্তরিত করার এক অগ্রণী উদ্যোগ ‘সিকিউরনেট বিডি’ (SecureNet BD) চালু করতে যাচ্ছে।
এই প্রকল্পের আওতায় দেশে প্রথমবারের মতো গড়ে উঠবে সাইবার সিকিউরিটি সেন্টার অব এক্সিলেন্স (CCoE) এবং কমিউনিটি-নির্ভর সিকিউরিটি অপারেশনস সেন্টার (SOC) / কম্পিউটার সিকিউরিটি ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম (CSIRT), যা হবে দেশের ডিজিটাল সক্ষমতা বৃদ্ধিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
বাংলাদেশে দ্রুত ডিজিটাল রূপান্তরের সঙ্গে সঙ্গে সাইবার হামলা এবং অনলাইন নিরাপত্তা হুমকির সংখ্যা ও জটিলতা অভূতপূর্ব হারে বাড়ছে। বিশেষত বড় শহরের বাইরে থাকা প্রতিষ্ঠান, এনজিও এবং কমিউনিটিগুলোতে নিরাপত্তা অবকাঠামো বা প্রশিক্ষণের সুযোগ সীমিত। এই প্রেক্ষাপটে সিকিউরনেট বিডি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, সহযোগিতামূলক এবং কমিউনিটি-চালিত সাইবার নিরাপত্তার ব্যবস্থা গড়ে তুলবে।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে দেশব্যাপী ১,০০০ এরও বেশি ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, যার মধ্যে নারীদের অংশগ্রহণ কমপক্ষে ৩০% নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া তৈরি হবে আধুনিক সাইবার রেঞ্জ (Cyber Range), যা হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ, স্থানীয় গবেষণা এবং বাস্তব সাইবার প্রতিরক্ষা অনুশীলনের সুযোগ সৃষ্টি করবে। প্রকল্পের অংশ হিসেবে চালু হবে ফেলোশিপ ও মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম, যা ভবিষ্যতের সাইবার নিরাপত্তা নেতৃত্ব গড়ে তুলবে। পাশাপাশি কমিউনিটি এসওসি/সিএসআইআরটি একাডেমিক প্রতিষ্ঠান, অলাভজনক সংস্থা এবং স্থানীয় সংগঠনগুলোকে সাইবার হুমকি মোকাবিলায় সহায়তা করবে।
টিম ফিনিক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চিফ অব রিসার্চ এ. এস. এম. শামীম রেজা বলেন, “এই প্রকল্প শুধু প্রযুক্তি নিয়ে নয়, বরং মানুষের ক্ষমতায়নের গল্প। বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ ও কমিউনিটি-চালিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে সিকিউরনেট বিডি সাইবার নিরাপত্তাকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই এবং বাংলাদেশের বাস্তবতার সঙ্গে খাপ সামঞ্জস্যপূর্ণ করবে। আমাদের লক্ষ্য, ভবিষ্যৎমুখী কর্মশক্তি তৈরি করা এবং বাংলাদেশকে আঞ্চলিক সাইবার উদ্ভাবনের কেন্দ্রে রূপান্তর করা।”
সিকিউরনেট বিডি–এর এই দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ও প্রগতিশীল উদ্যোগ বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তাকে আরও শক্তিশালী করবে এবং দেশটিকে দক্ষিণ এশিয়ায় কমিউনিটি-চালিত সাইবার নিরাপত্তার নেতৃত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারী।
বাংলাদেশ সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টার দপ্তরে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারী বলেন, নেপালে ১১টি জুট মিল রয়েছে। নেপালের জুট মিলগুলো তাদের চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ থেকে কাঁচাপাট আমদানির ওপর নির্ভরশীল। সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে কাঁচাপাট রপ্তানি বন্ধ করায় মিলগুলো কিছুটা সমস্যায় পড়েছে। এ সময় তিনি বাংলাদেশ থেকে কাঁচাপাট রপ্তানির অনুমতি শিথিল করার আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানান।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে বাংলাদেশের পাটপণ্য ও কাঁচাপাটের চাহিদা রয়েছে। কাঁচাপাট রপ্তানি না করে বাংলাদেশ সেমি-ফিনিশড (আধা-প্রক্রিয়াজাত) পাটপণ্য রপ্তানি করতে চায়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ উচ্চমানের ও পরিবেশবান্ধব সেমি-ফিনিশড পাটপণ্য উৎপাদন করছে। নেপাল এই পণ্যগুলো আমদানি করলে দুই দেশের বাণিজ্য ভলিউম বাড়বে এবং উভয় দেশই লাভবান হবে।
চীনা কোম্পানি অক্টোবর ৪১২৮ (বিডি) লিমিটেড চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে অবস্থিত বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে উচ্চ মানসম্পন্ন গার্মেন্ট উৎপাদনকারী একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে ১৯.৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে।
এ লক্ষ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বেপজা কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) এবং অক্টোবর ৪১২৮ (বিডি) লিমিটেডের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেনের উপস্থিতিতে বেপজার সদস্য (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. আশরাফুল কবীর এবং অক্টোবর ৪১২৮ (বিডি) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ তৌফিকুল আহসান নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। বেপজার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এই প্রতিষ্ঠানটি বার্ষিক ৩০ লাখ পিস স্কি, স্নো স্পোর্টস, হান্টিং ও মোটর রাইডার গিয়ার, ইনসুলেটেড শীতকালীন কোট, ডাউন জ্যাকেট ও প্যান্ট, রেইন গিয়ার, ওয়ার্কওয়্যার, রানিংওয়্যার, ইয়োগাওয়্যার, এবং ওয়াটার স্পোর্টসওয়্যার তৈরি করবে।
প্রতিষ্ঠানটিতে ২ হাজার ৭৮৮ জন বাংলাদেশি নাগরিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সংস্থার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলকে বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে বেছে নেওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে ধন্যবাদ জানান এবং সুষ্ঠু ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিশ্চিত করতে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
অক্টোবর ৪১২৮ (বিডি) লিমিটেডসহ এ পর্যন্ত মোট ৪৯টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। যাদের মোট প্রস্তাবিত বিনিয়োগ প্রায় ১.০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ৬টি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে উৎপাদন শুরু করেছে। ক্রমাগত উন্নয়ন ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের কারণে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় বিনিয়োগ গন্তব্য হয়ে উঠেছে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বেপজার সদস্য (প্রকৌশল) আবদুল্লাহ আল মামুন, সদস্য (অর্থ) আ ন ম ফয়জুল হক, বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ এনামুল হক, নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) এ.এস.এম. আনোয়ার পারভেজ এবং অক্টোবর ৪১২৮ (বিডি) লিমিটেডের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈশ্বিক অর্থনীতির অনিশ্চয়তা, মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত ও বিনিয়োগে ধীরগতির প্রবণতার মধ্যেও বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে নিট এফডিআই প্রবাহ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ৬১ দশমিক ৫ শতাংশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সংস্থাটির মতে, এই প্রবৃদ্ধি প্রমাণ করে বিদেশি কোম্পানিগুলোর আস্থা বাংলাদেশের বাজারে বাড়ছে এবং তারা ব্যবসা সম্প্রসারণে আরও বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে কার্যরত লাভজনক বিদেশি কোম্পানিগুলো তাদের মুনাফার একটি বড় অংশ পুনরায় বিনিয়োগ করছে। পুনঃবিনিয়োগের পরিমাণও গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ৬১ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ, বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু মুনাফা স্থানান্তর করছে না, বরং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণের সম্ভাবনা দেখেই নতুন বিনিয়োগে এগিয়ে আসছে।
বিশ্বব্যাপী নতুন মূলধনের (গ্রিনফিল্ড এফডিআই) প্রবাহ কমলেও বাংলাদেশে এ খাতে রেকর্ড হয়েছে ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। পাশাপাশি বিদেশি মূল কোম্পানিগুলোর স্থানীয় ইউনিটগুলোতে অর্থায়ন বা ইন্টার-কোম্পানি ঋণের হার এক বছরে বেড়েছে ২২৯ শতাংশ।
শুধু ছয় মাস নয়, পুরো অর্থবছরের চিত্রও আশাব্যঞ্জক। জুলাই ২০২৪ থেকে জুন ২০২৫ অর্থবছরে নিট এফডিআই প্রবাহ আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ১৯ শতাংশেরও বেশি।
এদিকে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে দেশের পাঁচটি বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থা- বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা), বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ (বিএইচটিপিএ) ও বিসিকের মাধ্যমে নিবন্ধিত হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোম্পানির মোট ১ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রস্তাবিত বিনিয়োগ। এর মধ্যে ৬৫ কোটি ডলারেরও বেশি এসেছে সরাসরি বিদেশি কোম্পানির পক্ষ থেকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪৮৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭০ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার, ২০২৩ সালে বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৯২৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, তবে ২০২৪ সালে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৬৭৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারে। আর ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসেই এ বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯২ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলারে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বৈশ্বিক মন্দার মধ্যেও এই প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ পরিবেশের প্রতি বিদেশিদের আস্থার প্রতিফলন। তাদের মতে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অবকাঠামো উন্নয়ন ও দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ আগামী বছরগুলোতে আরও বড় পরিসরে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের পণ্য রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি কমেছে ২০ শতাংশ। আর গত চার মাসে এই পতনের হার প্রায় ৪০ শতাংশে পৌঁছেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ভারত সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ২৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়া নতুন শুল্ক কাঠামোর পুরোপুরি প্রভাব পড়েছে সেপ্টেম্বর মাসে। এই শুল্কের মধ্যে রয়েছে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধে ভারতের অস্বীকৃতির কারণে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ জরিমানা।
দিল্লিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের (জিটিআরআই) সহ-প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, শুল্ক বৃদ্ধির পর যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাজারে পরিণত হয়েছে।
জিটিআরআইয়ের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, শ্রমনির্ভর খাতগুলোর মধ্যে বস্ত্র, রত্ন ও গয়না, প্রকৌশলজাত পণ্য এবং রাসায়নিক খাত সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে। এসব খাতে রফতানি আয় ব্যাপকভাবে কমে গেছে।
মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি ছিল ৮ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। সেপ্টেম্বর নাগাদ তা নেমে আসে ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস পায়। পর পর চার মাস ধরে রপ্তানি কমতে থাকায় ভারতের বাণিজ্য ঘাটতিও বেড়েছে। সেপ্টেম্বরে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার, যা গত ১৩ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
তবে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধি কিছুটা ভারসাম্য রক্ষা করেছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
দীর্ঘ বিরতির পর গত মাসে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনা আবার শুরু হয়। চলমান আলোচনার লক্ষ্য আগামী মাসের মধ্যে একটি প্রাথমিক বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করা। একটি ভারতীয় প্রতিনিধি দল বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছে।
বুধবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে আশ্বস্ত করেছেন যে ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করবে। ওয়াশিংটন মনে করছে, এর মাধ্যমে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ক্রেমলিনের ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়ানো সম্ভব হবে।
তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জ্বালানি সহযোগিতা বাড়াতে আলোচনা চলছে। বর্তমান মার্কিন প্রশাসন এই সহযোগিতা গভীর করতে আগ্রহ দেখিয়েছে।
অবশ্য কৃষি ও দুগ্ধ খাতের বাজার প্রবেশাধিকার নিয়ে এখনও বড় ধরনের মতপার্থক্য রয়ে গেছে। বহু বছর ধরে ওয়াশিংটন ভারতের কৃষি খাতকে সম্ভাবনাময় বাজার হিসেবে দেখছে। কিন্তু নয়াদিল্লি খাদ্যনিরাপত্তা, কৃষকের জীবিকা ও অভ্যন্তরীণ বাজার রক্ষার কারণ দেখিয়ে এই খাতকে রক্ষা করে আসছে।
কিছু দিন আগেও যুক্তরাষ্ট্রই ছিল ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। ২০২৪ সালে দুই দেশের পারস্পরিক বাণিজ্য দাঁড়িয়েছিল ১৯০ বিলিয়ন ডলারে। ট্রাম্প ও মোদি দুজনই এই অঙ্ক ৫০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক শুল্কযুদ্ধ সেই লক্ষ্যকে এখন গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
সর্বস্তরের জনগণকে ব্যাংকিং সেবা প্রদানের লক্ষ্যে শরীয়াহ্ ভিত্তিক ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি’র রয়েছে বিভিন্ন মেয়াদি আকর্ষণীয় বিশেষ আমানত প্রকল্প। পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইউনিয়ন ব্যাংকের যে কোন একটি আমানত প্রকল্প বেছে নেওয়ার জন্য ১৭৪ টি শাখা ও উপশাখায় আপনাকে স্বাগতম।
দি প্রিমিয়ার ব্যাংক পিএলসি ‘ইন্টিগ্রিটি ও এথিকস প্র্যাকটিস ইন ব্যাংকিং’ শীর্ষক এক গুরুত্বপূর্ণ কর্মশালার আয়োজন করে। সম্প্রতি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে লার্নিং অ্যান্ড ট্যালেন্ট ডেভেলপমেন্ট সেন্টারে (LTDC) এই কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয় ।
অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন দি প্রিমিয়ার ব্যাংক পিএলসি ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ আবু জাফর, এবং অনুষ্ঠানে অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য প্রদান করেন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সম্মানিত চেয়ারম্যান ডাঃ আরিফুর রহমান। তিনি টেকসই ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সততা ও নৈতিকতার গুরুত্বের ওপর বিশেষভাবে আলোকপাত করেন।
কর্মশালার মূল লক্ষ্য ছিল ব্যাংকিং কার্যক্রমের প্রতিটি স্তরে নৈতিক মান, স্বচ্ছতা এবং উত্তম শাসননীতি প্রচার ও বাস্তবায়ন করা। প্রধান কার্যালয় এবং বিভিন্ন শাখার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন, যেখানে দৈনন্দিন ব্যাংকিং কার্যক্রমে সততা ও নৈতিক মূল্যবোধ বজায় রাখার বাস্তবসম্মত দিকগুলো আলোচিত হয়।
প্রযুক্তিগত অধিবেশনগুলো পরিচালনা করেন দি প্রিমিয়ার ব্যাংক পিএলসি স্বতন্ত্র পরিচালক এম. নুরুল আলম, এফসিএস, বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)-এর যুগ্ম পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান খান, যুগ্ন পরিচালক, এবং বাংলালিংকের কমপ্লায়েন্স ডিরেক্টর মোহাম্মদ আদিল হোসেন, সিসিইপি। তাঁরা ব্যাংকিং খাতে নৈতিক সংস্কৃতি শক্তিশালীকরণ, নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিধি মেনে চলা এবং দায়িত্বশীল ব্যবসায়িক আচরণ বিষয়ে মূল্যবান মতামত ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।
মন্তব্য