করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই আরেকটি বাজেট দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ৩ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাংলাদেশের ৫০তম যে বাজেট উপস্থাপন করা হবে তার প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘জীবন ও জীবিকার প্রাধান্য, আগামীর বাংলাদেশ’।
শোষণ–বঞ্চনার পথ পেরিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত যে দেশ ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র তকমা নিয়ে শুরু করেছিল যাত্রা, সেই বাংলাদেশ উন্নতির গতিতে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে পূর্ণ করেছে ৫০ বছর।
সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের অংশ হিসেবে এবারের বাজেট হয়তো জাঁকজমকপূর্ণভাবে উপস্থাপন করতেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। কিন্তু করোনাভাইরাস সেই আনন্দকে ফিকে করে দিয়েছে। গতবারের মতো এবারও সাদামাটাভাবে বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। তার বক্তব্যও হবে আগেরবারের মতো ছোট।
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা নজিরবিহীন এক মহামারির বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে অনিশ্চিত আগামীর জন্য বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী। এ সময়ে এসে সরকারকে একদিকে অর্থনীতির ধস ঠেকানোর কথা ভাবতে হচ্ছে, অন্যদিকে করতে হচ্ছে মানুষের প্রাণ বাঁচানোর চিন্তা।
দুই বছর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ‘সমৃদ্ধ আগামীতে’ পৌঁছানোর লক্ষ্য স্থির করে যে পথযাত্রা বাংলাদেশ শুরু করেছিল, এক ভাইরাসের প্রবল ত্রাসে তা থমকে গেছে। টানা তিন মেয়াদে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওই বাজেটের শিরোনাম দেয়া হয়েছিল ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাাংলাদেশ; সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাাংলাদের’।
ওই বাজেট শেষ না হতেই আসে করোনার ধাক্কা। শুরু হয় ভিন্ন পেক্ষাপট। ২০২০ সালের মার্চ থেকে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও তছনছ হয়ে যায়; ওলটপালট হয়ে যায় সব হিসাব-নিকাশ।
সেই কঠিন পরিস্থিতিতে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে ভাবতে হয়েছিল আগের উন্নয়ন দর্শনের বাজেটের চেয়ে ভিন্নভাবে। তাই তো তিনি তার বাজেটের শিরোনাম দিয়েছিলেন ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’।
পরিস্থিতি এখন আরও খারাপ। মহামারির প্রথম ঢেউয়ের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই শুরু হয়েছে দ্বিতীয় ঢেউ। শঙ্কা আছে, তৃতীয়, চতুর্থ ঢেউয়ের ধাক্কার। কবে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে দেশ, তা নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছে না।
এমন অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যেই ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। তার এবারের বাজেটের প্রধান লক্ষ্য অর্থনীতির ক্ষত সারিয়ে তোলা; মানুষের প্রাণ বাঁচানো। যে কাজ হারিয়েছে, তাকে কাজও দেওয়া। যে কষ্টে আছে, তার কষ্টা লাঘব করা।
আর তাই তিনি তার নতুন বাজেটের শিরোনাম দিয়েছেন ‘জীবন ও জীবিকার প্রাধান্য, আগামীর বাংলাদেশ’।
নিজের তৃতীয় এই বাজেট প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী নিউজবাংলাকে বলেন, “সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই আমরা এবারের বাজেটের নাম দিয়েছি ‘জীবন ও জীবিকার বাজেট’। এই বাজেট বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের অর্থনীতিকে যেমন আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনব, তেমনি দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষকে টিকা প্রদানসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে জীবন বাঁচিয়ে জীবিকার সংস্থান করা হবে।”
এই কঠিন বাস্তবতায় বছরের ব্যয়ের ফর্দ সাজাতে গিয়ে অর্থমন্ত্রীকে মাথায় রাখতে হচ্ছে স্বাস্থ্য খাত যেন মহামারি সামাল দেওয়ার সক্ষমতা পায়। উৎপাদন যেখানে বড় ধাক্কা খেয়েছে, সেখানে কৃষক যেন অন্তত ফসল ফলাতে পারে। ১৭ কোটি মানুষের এই দেশে খাদ্য সংকট যেন না হয়, হঠাৎ কর্মহীন হয়ে পড়া নিম্ন আয়ের মানুষকে যেন সামাজিক নিরাপত্তা দেওয়া যায় এবং বেকারত্ব যেন সমাজকে নতুন সংকটের পথে না নিয়ে যায়।
এসব দিক সামাল দিয়ে আগামী এক বছরে সরকারের ব্যয় নির্বাহের জন্য অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল মোটামুটি ছয় লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা খরচের একটি পরিকল্পনা ৩ জুন জাতীয় সংসদের সামনে উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন, যা আকারে বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ বেশি।
এই দুর্যোগের মধ্যে বিদায়ী অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি যে ৮ দশমিক ২ শতাংশের লক্ষ্যের ধারেকাছেও পৌঁছাতে পারবে না, সে বিষয়ে মোটামুটি একমত দেশি-বিদেশি অর্থনীতিবিদরা। নিশ্চিত সরকারও। সে কারণে লক্ষ্য কমিয়ে ৭ দশমিক ২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। সেটাও অর্জিত হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় দেখা দিয়েছে।
এমন পেক্ষাপটে এবার প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৭ শতাংশের ঘরে নামিয়ে এনে নতুন বাজেট দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রীর এ ভাবনার সঙ্গে একমত পোষণ করে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন কঠিন সময়। মহামারির এই সময়ে বাজেটের আকার, ঘাটতি বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামানোর প্রয়োজন আমি দেখছি না।
‘কোভিডের মধ্যে চলতি অর্থবছরে চার-সাড়ে চার শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও যথেষ্ট। আগামী অর্থবছরে ৫ শতাংশ হলেও ভালো।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন যে করেই হোক, যেখান থেকেই হোক, যত টাকাই লাগুক, টিকা এনে সারা দেশের মানুষকে দিতে হবে; মানুষের জীবন বাঁচাতে হবে। একই সঙ্গে যারা করোনার আঘাতে চাকরি হারিয়েছে, তাদের চাকরি বা কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। যাদের আয় কমে গেছে, তাদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে সংসার চালানোর সুযোগ করে দিতে হবে।
‘অর্থাৎ অসহায় মানুষের যার যেমন সহায়তা দরকার, সেটা করতে হবে। নতুন বাজেটে সরকার এমনটাই করবে, এটাই আমার প্রত্যাশা।’
আগামী অর্থবছরের বাজেটটি অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালের তৃতীয় বাজেট এবং আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদের ত্রয়োদশ বাজেট।
চলতি অর্থবছরে ৫ লাখ ৬৮ হাজার বাজেট ঘোষণা হয়েছিল গত বছরের ১১ জুন। এরপর মাত্র ৯ দিনের বাজেট আলোচনা ছিল, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সংক্ষিপ্ততম অধিবেশন।
২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথম বাজেটের সময় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় মুস্তফা কামাল সংসদে ভালোভাবে বাজেট পেশ করতে পারেননি। তার পক্ষে বাজেট উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্বিতীয়বার ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেট উপস্থাপনের সময় দেশে পুরোদমে করোনাভাইরাসের প্রকোপ। তৃতীয়বার, অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরেও করোনার প্রকোপ সামনে রেখেই বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী।
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী
মহামারির বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমেই মূলত দেশের মানুষের ‘জীবন ও জীবিকার’ জন্য অর্থ ব্যয় করবেন অর্থমন্ত্রী। এর বাইরে বিভিন্ন খাতে নানা ধরনের প্রণোদনা দিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখার চেষ্টা করবেন।
আর সে কারণে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ অনেক বাড়ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নতুন বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে সব মিলিয়ে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দের প্রস্তাব করবেন অর্থমন্ত্রী। এই বরাদ্দ বিদায়ী অর্থবছরে বাজেটের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেশি।
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ আছে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা।
বয়স্ক, বিধবাসহ বর্তমানে আট ধরনের ভাতা আছে, যা সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এর বাইরে মহিলা ও শিশু, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ অনেক মন্ত্রণালয়ের আলাদা সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি চালু রয়েছে।
এখন ৮৮ লাখ দরিদ্র লোক বয়স্ক, বিধবাসহ বিভিন্ন ধরনের ভাতা পাচ্ছেন। মোবাইলের মাধ্যমে সরকার এখন সুবিধাভোগীদের কাছে সরাসরি টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে।
নতুন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দ নিয়ে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে একটি বিশেষ সভা হয়। ওই সভায় আরও ১৫০ উপজেলার সব বয়স্ক এবং বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত নারীকে ভাতার আওতাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এ ছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ১২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য অতিরিক্ত তিন হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি নির্মাণেও বাজেটে বরাদ্দ রাখা হবে। বর্তমানে সারা দেশে এক লাখ ৮৬ হাজার ৪০৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেয়ে থাকেন।
বিদায়ী বাজেটে ১১২টি উপজেলার সব বয়স্ক এবং বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারীকে ভাতার আওতাভুক্ত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। বর্তমানে সারা দেশে ৪৯ লাখ বয়স্ক নাগরিককে মাসে ৫০০ টাকা করে ভাতা দেয় সরকার। নতুন করে ১৫০ উপজেলায় সব বয়স্ককে ভাতার আওতাভুক্ত করা হলে ভাতাভোগীর সংখ্যা আরও আট লাখ বাড়তে পারে।
একইভাবে সোয়া পাঁচ লাখ বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারী নতুন করে ভাতার আওতাভুক্ত হবেন। বর্তমানে সারা দেশে ২০ লাখ ৫০ হাজার নারীকে ৫০০ টাকা করে ভাতা দেয় সরকার।
সামাজিক নিরাপত্তার ১২৩টি কর্মসূচি রয়েছে। ৩০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
নতুন বাজেটে হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মানোন্নয়নে সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হবে। বর্তমানে ৮৬ হাজার জনকে এ ভাতা দেওয়া হচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে এ ভাতা দেওয়া হবে ৯৫ হাজার জনকে।
সড়ক ও নৌপরিবহন শ্রমিকরাও পাবেন নগদ টাকা
নতুনভাবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আসছেন সড়ক ও নৌপরিবহন শ্রমিকরা। করোনার কারণে গণপরিবহন ও নৌপরিবহন বন্ধ ছিল বেশ কিছুদিন। সামনেও বন্ধ রাখা লাগতে পারে। ফলে এসব যানবাহনে কর্মরত ড্রাইভার, হেলপার ও সুপারভাইজারদের আয়ের পথ বন্ধ ছিল বা ভবিষ্যতেও বন্ধ থাকতে পারে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে (দুই সিটে একজন) চালানোর কারণে পরিবহন মালিকদের আয়ও কমে গেছে। এতে ড্রাইভার, হেলপার ও সুপারভাইজারদের টাকাও (মজুরি-বেতন) কমিয়ে দিয়েছে মালিকরা।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সড়ক ও নৌ খাতের পরিবহন শ্রমিকদের নগদ সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব শ্রমিককে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের নগদ টাকা দেবে সরকার।
রাজধানীসহ দেশের যেসব স্থানে লকডাউনের কারণে শপিং মল-দোকানপাট বন্ধ ছিল। সেসব বিপণিবিতানের কর্মচারীদেরও নতুন বাজেটে নগদ টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হবে। এ জন্য নতুন বাজেটে একটি বরাদ্দ রাখা হবে।
এ ছাড়া দরিদ্র মায়ের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা, কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা, সরকারি চাকরিজীবীদের অবসরকালীন পেনশনও দেওয়া হবে এই সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায়।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. শামসুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, “মহামারির কঠিন সময় বিবেচনায় নিয়েই সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বলয় বাড়াতে হবে। যারা সত্যিই সত্যিই কষ্টে আছে…তাদের সবাইকে সহায়তা দেবে সরকার। সে কারণেই আমরা বলছি, এবারের বাজেট হবে ‘জীবন ও জীবিকার’ বাজেট।”
আরও পড়ুন:সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার (১৪ জুলাই) পুঁজিবাজারে সূচকের পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন কমেছে। ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সোমবার (১৪ জুলাই) ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৬১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১ পয়েন্ট বেড়ে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৮ পয়েন্ট কমে যথাক্রমে ১১০৪ ও ১৯০০ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
এদিন ডিএসইতে ৫৬৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে, যা আগের কার্যদিবসের চেয়ে ১০০ কোটি টাকা কম। আগের দিন ডিএসইতে ৬৬৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছিল।
সোমবার (১৪ জুলাই) ডিএসইতে ৩৯৫টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ১৫৬টি কোম্পানির, কমেছে ১৬৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৭৬টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দর।
এদিন লেনদেনের শীর্ষে থাকা ১০টি প্রতিষ্ঠান হলো- ব্র্যাক ব্যাংক, খান ব্রাদার্স, বিচ হ্যাচারি, বিএটিবিসি, সী পার্ল, ওরিয়ন ইনফিউশন, ইসলামী ব্যাংক, আলিফ ইন্ডাস্ট্রি, রহিমা ফুড ও মিডল্যান্ড ব্যাংক।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক সূচক সিএএসপিআই সোমবার (১৪ জুলাই) ২৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৪ হাজার ৯৭ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৩৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১০৮টির, কমেছে ৯৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩২টি কোম্পানির শেয়ার দর।
সোমবার (১৪ জুলাই) সিএসইতে ৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় ১ কোটি টাকা কম। আগের দিন সিএসইতে ৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছিল।
প্রথমবারের মতো নিলামের মাধ্যমে রোববার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ১৭ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রপ্তানি আয় বাড়ার ফলে মার্কিন ডলারের দাম টাকার তুলনায় গত এক সপ্তাহ ধরে কমছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে।
এই ডলার কেনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি ডলারের দাম ১২১ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করেছে, যা বেশিরভাগ ব্যাংকের দেওয়া প্রায় ১২০ টাকা দামের চেয়ে বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাসস’কে জানান, টাকার বিপরীতে ডলারের দাম স্থির রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ডলার কিনেছে।
তিনি বলেন, যদি ডলারের বিনিময় হার টাকার তুলনায় বেড়ে যায়, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক একইভাবে নিলামের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করবে।
তিনি আরও বলেন, টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার যেন স্থির থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ ব্যাংক যেকোনো সময় বাজারে হস্তক্ষেপ করতে পারে।
একটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন ট্রেজারি কর্মকর্তা জানান, রোববার প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২০ টাকা। আজ তা বেড়ে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রোববার অধিকাংশ ব্যাংক প্রতি ডলারের বিনিময় হার প্রায় ১২০ টাকা নির্ধারণ করেছিল। এক সপ্তাহ আগে এই হার ছিল ১২৩ টাকারও বেশি।
চীনের রপ্তানি ৫.৮ শতাংশ বেড়েছে গত জুন মাসে, যা পূর্বাভাসের চেয়েও ভালো ফলাফল। এ সময় ওয়াশিংটন ও বেইজিং পরস্পরের ওপর আরোপিত উচ্চ শুল্ক কমাতে একটি প্রাথমিক চুক্তিতে পৌঁছায়।
বেইজিং থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
চীনের শুল্ক প্রশাসনের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, জুনে রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫.৮ শতাংশ বেড়েছে। যদিও অর্থনীতিবিদদের নিয়ে ব্লুমবার্গের করা সমীক্ষায় ৫ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল।
এছাড়া, একই মাসে চীনের আমদানিও ১.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেটিও পূর্বাভাস দেওয়া ০.৩ শতাংশের চেয়ে ভালো।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের প্রথম ১২ দিনে ১০৭ কোটি ১০ লাখ (১.০৭ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাস করা প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ (এক ডলার ১২১ টাকা ধরে) প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাইয়ের প্রথম ১২ দিনে ১০৭ কোটি ১০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। যা গত বছরের একই সময়ে আসে (২০২৪ সালের জুলাইয়ের ১২ দিন) ৯৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ কোটি ৩০ লাখ ডলার বা প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বেশি এসেছে।
এর আগে সদ্যবিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে পাঠিয়েছেন প্রায় প্রায় ২৮১ কোটি ৮০ লাখ (২.৮২ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স। দেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৩৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকার বেশি। আর প্রতিদিন গড়ে দেশে এসেছে ৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা ১ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা।
এটি একক মাস হিসেবে তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এর আগে মে মাসে দেশে এসেছে ২.৯৭ বিলিয়ন ডলার, যা ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
অন্যদিকে বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত পুরো সময়ে মোট ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে এসেছে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ, অক্টোবরে এসেছে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, নভেম্বর মাসে এসেছে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে এসেছে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে আসে ২৭৫ কোটি ডলার, মে মাসে এসেছে ২৯৭ কোটি ডলার এবং সবশেষ জুন মাসে এসেছে ২৮২ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স।
কানাডা থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ১ আগস্ট থেকে এ শুল্ক কার্যকর হবে।
বৃহস্পতিবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নিকে পাঠানো এক চিঠিতে তিনি এই কথা জানান।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, সোমবার থেকে এ পর্যন্ত ট্রাম্পের এমন ধরনের ২০টিরও বেশি চিঠি গেছে বিশ্বের নানা দেশের নেতার কাছে। চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের অংশ হিসেবেই এসব পদক্ষেপ নিচ্ছেন তিনি।
কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে একটি বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী ২১ জুলাইয়ের মধ্যে সমঝোতায় পৌঁছানোর লক্ষ্য রয়েছে। তবে ট্রাম্পের সর্বশেষ এই হুমকিতে আলোচনার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
একইসঙ্গে কানাডা ও মেক্সিকো উভয়ই ট্রাম্পকে সন্তুষ্ট করতে চেষ্টা করছে, যাতে উত্তর আমেরিকার তিন দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (ইউএসএমসিএ) আবার সঠিক পথে ফিরে আসে।
২০২০ সালের জুলাইয়ে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে পুরোনো (নাফটা) বাতিল করে ইউএসএমসিএ চালু করা হয়। ২০২৬ সালের জুলাইয়ে এর পরবর্তী পর্যালোচনা হওয়ার কথা। তবে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প নানা দেশে শুল্ক আরোপ করে পর্যালোচনার প্রক্রিয়াই অস্থির করে তুলেছেন।
শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র ২৫ শতাংশ শুল্ক বসায় কানাডা ও মেক্সিকোর বহু পণ্যের ওপর। কানাডার জ্বালানির ক্ষেত্রে অবশ্য কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়।
বাণিজ্যের পাশাপাশি অবৈধ অভিবাসন ও মাদক পাচার ঠেকাতে যথেষ্ট উদ্যোগ না নেওয়ার অভিযোগে প্রতিবেশী এ দুই দেশকে একাধিকবার সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প।
তবে পরবর্তীতে ইউএসএমসিএ চুক্তির আওতায় থাকা পণ্যের ক্ষেত্রে তিনি ছাড় দেন, যার ফলে বড় পরিসরের পণ্য শুল্কমুক্ত হয়।
বৃহস্পতিবারের চিঠিটি এমন এক সময় এলো, যখন ট্রাম্প ও কার্নির মধ্যে সম্পর্ক কিছুটা উষ্ণ হচ্ছিল। এমনকি এর আগে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য বানানো নিয়েও মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প।
গত ৬ মে কানাডার প্রধানমন্ত্রী হোয়াইট হাউসে এসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর পরের মাসে কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলনেও আবার দেখা হয় দুই নেতার। সম্মেলনে ট্রাম্পকে বাণিজ্যযুদ্ধ থেকে সরে আসার আহ্বান জানান বিশ্বনেতারা।
এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর কানাডা যে কর আরোপ করেছিল, তা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে ট্রাম্প আলোচনার টেবিল ত্যাগ করলেও পরে আবার আলোচনা শুরুর পথ খুলে যায়।
অন্যদিকে, এনবিসি’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, যেসব দেশকে এখনো এ ধরনের চিঠি পাঠানো হয়নি, তাদের ওপরও ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের বিষয়টি বিবেচনায় আছে। সেটিও কার্যকর হবে ১ আগস্ট থেকে।
তিনি জানান, ব্রাজিলের জন্য সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে, যদি এর আগেই কোনো সমঝোতা না হয়।
এনবিসি’কে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ টি দেশের উদ্দেশে চিঠি পাঠানো হবে ‘আজ বা আগামীকাল (শুক্রবার)’।
এদিকে, ট্রাম্পের হুমকির পর বৃহস্পতিবার ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী। তবে দেশটি পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করছে।
ট্রাম্পের পাঠানো চিঠিতে ব্রাজিলের সাবেক ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর প্রতি আচরণ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে।
খুলনা অঞ্চলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পাট, পাটজাত পণ্য, চিংড়ি, সবজি ও ফলমূল রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৫ হাজার ৯৭১ কোটি ৪০ লাখ টাকা।রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) দেওয়া তথ্যমতে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে বিদেশে নতুন বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হওয়ায় খুলনা থেকে পাট, পাটজাত পণ্য এবং চিংড়ি রপ্তানি বেড়েছে।
ইপিবি আরও জানায়, বিশ্ব অর্থনীতির উন্নতির কারণেও রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত খুলনা অঞ্চলের রপ্তানি আয় ছিল ৫ হাজার ৩৭৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা। আর চলতি অর্থবছরে একই সময়ে আয় দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৭১ কোটি টাকায়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ১৩ হাজার ১৯ দশমিক ৮০ টন হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি করে আয় হয়েছে ১ হাজার ৯৯০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
এছাড়া কুচিয়া, কাঁকড়া, সবজি, কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানিও বেড়েছে।
মাসভিত্তিক রপ্তানি আয়ের হিসাবে দেখা যায়, খুলনা অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা জুলাইয়ে ৫১৭ কোটি ৬৮ লাখ, আগস্টে ৪৪৭ কোটি ৫৩ লাখ, সেপ্টেম্বরে ৬০১ কোটি ৯৮ লাখ, অক্টোবরে ৫৬৬ কোটি ৯৬ লাখ, নভেম্বরে ৫২৩ কোটি ১৩ লাখ, ডিসেম্বরে ৪৫৭ কোটি ৩৭ লাখ, জানুয়ারিতে ৪২৩ কোটি ৬৫ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ৪০২ কোটি ৫২ লাখ, মার্চে ৪৩৮ কোটি ৯১ লাখ, এপ্রিলে ৫৫০ কোটি ৮৭ লাখ, মে মাসে ৬১১ কোটি ৬৯ লাখ এবং ২০২৫ সালের জুনে ৪২৯ কোটি ১১ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি করেছেন।
খুলনা ইপিবির পরিচালক জিনাত আরা জানান, বৈশ্বিক অর্থনীতির উন্নতি, বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীলতা এবং বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ফিরে আসায় রপ্তানি বেড়েছে।
তিনি বলেন, ‘পূর্ববর্তী সরকারের আমলে সরকারি পাটকল ও চিংড়ি কারখানা বন্ধসহ নানা কারণে খুলনা অঞ্চলের রপ্তানি কমে গিয়েছিল।’
পাট ও বস্ত্র উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সম্প্রতি খুলনা সফর করেছেন উল্লেখ করে তিনি জানান, খুলনা অঞ্চল পাট, চিংড়ি ও অন্যান্য পণ্য রপ্তানিতে তার আগের গৌরব ফিরে পাবে। সরকার বন্ধ থাকা পাটকলগুলো বেসরকারি খাতে ইজারা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে, যাতে সেগুলো পুনরায় চালু করা যায়।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফইএ)’র সাবেক সহ-সভাপতি মো. আবদুল বাকী বাসসকে বলেন, ‘খুলনার ব্যবসায়ীরা মনে করছেন দেশে অনুকূল ব্যবসায়িক পরিবেশের কারণে চিংড়ি, পাট, পাটজাত পণ্য ও অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
তিনি আরও জানান, খুলনায় মোট ৬৩টি চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা থাকলেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উৎপাদন ও বৈদেশিক চাহিদা কমে যাওয়ায় ৩৩টি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়।
যোগাযোগ করা হলে পাট ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ পাট অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএ)-এর সাবেক সহ-সভাপতি ও পাট ব্যবসায়ী শরীফ ফজলুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববাজারে কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। খুলনায় এর বড় সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সরকারের নীতির তীব্র সমালোচনা করে তিনি অভিযোগ করেছেন, পতিত সরকার দেশের পাট খাত ধ্বংস করে দিয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিরীক্ষক এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের আর্থিক প্রতিবেদন ও নিরীক্ষায় আরও স্বচ্ছতা ও সততা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা যখন একটি দেশের ব্যবসা পরিবেশ সম্পর্কে স্পষ্ট ও নির্ভরযোগ্য তথ্য পান, তখন তারা সেই অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন।’
রাজধানীর একটি হোটেলে ‘অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড অডিটিং সামিট’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিশ্বব্যাংক এবং ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) যৌথভাবে ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক শাসনে এফআরসি’র ভূমিকা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুর, ঢাকাস্থ বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর সৌলেমানে কুলিবালি এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।
অর্থসচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) চেয়ারম্যান ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়া মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নিরীক্ষা ও হিসাবরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে যারা এসব কাজে জড়িত তাদের স্বচ্ছতা ও সততা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ।
ড. আহসান এইচ. মনসুর বলেন, দেশীয় ও বিদেশি উভয় বিনিয়োগকারীর আস্থা অর্জনের জন্য ব্যাংকগুলোর নিরীক্ষা প্রতিবেদন স্বচ্ছভাবে এবং যথাযথ তথ্যসহ উপস্থাপন করা উচিত।
তিনি বলেন, একটি সুদৃঢ়, সহনশীল ও ভবিষ্যতমুখী আর্থিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে দেশের সব ব্যাংকে রিস্ক-বেসড সুপারভিশন (আরবিএস) চালু করা হবে।
মূল প্রবন্ধে এফআরসি চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, বাংলাদেশ যখন একটি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন সুসংগঠিত প্রতিষ্ঠান ও সুশাসন কাঠামোর প্রয়োজনীয়তা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
তিনি বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল একটি সুস্পষ্ট ম্যান্ডেট নিয়ে কাজ করছে যা আর্থিক প্রতিবেদন, নিরীক্ষা, মূল্যায়ন এবং সঠিক মানদণ্ডে সততা, শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।’
তিনি আরও বলেন, এফআরসি চায় সব পক্ষ যেন পূর্ণ প্রকাশসহ সত্য আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করে, যাতে অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা বজায় থাকে এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রকৃত ও কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব—আয়কর ও ভ্যাট—সংগ্রহ করতে পারে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘ভুয়া বা মিথ্যা আর্থিক প্রতিবেদনই কর ফাঁকি ও কর এড়ানোর প্রধান হাতিয়ার।’
মন্তব্য