জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্যারিসে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইয়ের ফরাসি সংস্করণ ‘জার্নাল দে প্রিজন’ (Journal de Prison)-এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে।
এ আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। নিউ ইয়র্ক থেকে অনলাইনে সংযুক্ত হন তিনি।
উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ফরাসি লেখক, দার্শনিক ও চলচ্চিত্রকার বের্নার্ড-অঁরি লেভি ( Mr. Bernard-Henri Lévy)।
বিশেষ বক্তা হিসেবে ঢাকা থেকে অংশগ্রহণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি মফিদুল হক।
অনুষ্ঠানে দূতাবাসে সশরীরে উপস্থিত ছিলেন ফরাসি ভাষায় এ গ্রন্থের অনুবাদক অধ্যাপক ফিলিপে বেনোয়াঁ (Professor Phillipe Benoit)। বইটির প্রকাশক সংস্থা স্লাটকিন অ্যান্ড সিএ-এর প্রতিনিধি বার্টান্ড ফাভিউ (Mr. Bertrand Favreul)।
কোভিড অতিমারির কারণে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে এ আয়োজনে সশরীরে অংশগ্রহণ করেন অনুবাদক, প্রকাশক সংস্থার প্রতিনিধি এবং দূতাবাসের কর্মকর্তারা। অনলাইনে অংশ নেন ফ্রান্সে অবস্থিত অন্যান্য রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত, বিশিষ্ট গুণীজনসহ প্রবাসী অনেক বাংলাদেশি।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে ফ্রান্সে বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন জানান, বঙ্গবন্ধুর কারাগারের রোজনামচা বইটি বঙ্গবন্ধুর পাকিস্তানের কারাগারে বন্দিজীবনের দিনলিপি।
তিনি বলেন, কারাবন্দি অবস্থায় বঙ্গবন্ধু নিজের পরিবার-পরিজনের চেয়েও দেশ, দেশের মানুষের কথা চিন্তা করেছেন। কীভাবে পাকিস্তানি শাসক বাহিনীর অত্যাচার, নিপীড়নের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার ছিলেন, দেশের মানুষকে মুক্তির আন্দোলনে দিকনির্দেশনা প্রদান করেছিলেন তা বিধৃত হয়েছে এ গ্রন্থে।
রাষ্ট্রদূত আশা ব্যক্ত করেন যে, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শ, তার জীবনদর্শন সারা বিশ্বের ফরাসি ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দিতে এ বইটির অনুবাদ বিশেষ অবদান রাখবে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গ্রন্থটির অনুবাদ জাতির পিতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধু তার জীবনের ১৩টি বছর পাকিস্তানের কারাগারে কাটিয়েছেন, পরিবার-পরিজনকে ছেড়ে কারাগারে অন্তরিন জীবন যাপন করেছেন। বঙ্গবন্ধু বিশ্ব সচেতনতা তৈরিতে এক সোচ্চার কণ্ঠস্বর।
টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় বাংলায় প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ভাষণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষায় বিশ্বময় শান্তি প্রতিষ্ঠা অনিবার্য। শান্তির যে বার্তা তিনি প্রচার করে গেছেন, সেটাই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল মন্ত্র- ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’। বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মাঝে নেই কিন্তু তাঁর জীবনদর্শন আমাদের অনুপ্রেরণার প্রধান উৎস।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ জাতিসংঘের সকল ভাষায় অনুবাদ, বঙ্গবন্ধুর নামে ইউনেস্কোতে সৃজনশীল অর্থনীতিতে আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন নিঃসন্দেহে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে বিশেষ অবদান রাখবে।
এরপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, এমপি ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে এবং বের্নার্ড-অঁরি লেভি দূতাবাসে যৌথভাবে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন।
বিশিষ্ট ফরাসি লেখক, দার্শনিক ও চলচ্চিত্রকার বের্নার্ড-অঁরি লেভি তার বক্তব্যের শুরুতেই বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন, ‘এ বইয়ে আমি বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠস্বর শুনতে পাই।’
বের্নার্ড অঁরি জানান, তিনি ফ্রান্সে বসবাসরত শেষ প্রজন্মের মানুষ, যিনি বঙ্গবন্ধুকে দেখেছেন। এ উদ্যোগ তাকে ভীষণভাবে আবেগাপ্লুত করেছে।
‘এ গ্রন্থের মাধ্যমে একদিকে যেমন মিষ্টতার প্রকাশ অনুভব করতে পেরেছি, তেমনি দৃঢ়তাও ফুটে উঠেছে। তার ওপর যন্ত্রণার অনুভূতি যেমন প্রকাশ পেয়েছে, তেমনি ভবিষ্যতের আশাবাদও ব্যক্ত হয়েছে।’
বের্নার্ড অঁরি আরও বলেন, ‘এ গ্রন্থের মাধ্যমে জনমানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর মমত্ববোধ আস্বাদন করতে পেরেছি। এটি স্থায়ীভাবে এ গ্রন্থে গ্রথিত হলো। বঙ্গবন্ধু তার বইয়ে যেভাবে ফরাসি বিপ্লবের কথা বলেছেন, ফরাসি জনগোষ্ঠীর সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতাকে সমর্থন করেছেন, সে একইভাবে ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে বিশিষ্ট ফরাসি দার্শনিক অঁন্দ্রে মার্লোও বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনে তার সমর্থন প্রকাশ করেন।
‘বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের সাম্প্রতিক পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, তার বীজ এ গ্রন্থে আমি দেখতে পাই।’
এ বইয়ের অনুবাদক ফিলিপে বেনোয়াঁ বইটি থেকে উল্লেখযোগ্য উদ্ধৃতি বাংলা, ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় পড়ে শোনান। জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজনীতির ক্ষেত্রে সহিংসতা বিরোধী ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর লেখনীরও ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তার অনুবাদে বঙ্গবন্ধুর আবেগকে প্রকাশ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন বলে জানান তিনি।
বইটির প্রকাশক সংস্থার প্রতিনিধি বার্টান্ড ফাভিউ জানান, এ উদ্যোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হতে পেরে তিনি গর্বিত এবং বিশ্বময় ফরাসি ভাষাভাষীদের কাছে এ গ্রন্থ পৌঁছে দিতে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।
ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, মুজিববর্ষে কারাগারের রোজনামচা ফরাসি অনুবাদকৃত গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
এ গ্রন্থটি শুক্রবার থেকে ফ্রান্সের বিভিন্ন বইয়ের দোকানে পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন:বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়া হয়েছে।
চিফ প্রসিকিউটরের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার বরাবর আজ এই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ এই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেওয়ার জন্য উপস্থাপন করা হবে।
গত বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, তদন্ত সংস্থা আবু সাঈদ হত্যার যে তদন্ত প্রতিবেদন আমাদের কাছে জমা দিয়েছে, সেখানে ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনটি যাচাই-বাছাই করে ট্রাইব্যুনাল-২ এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ হিসেবে উপস্থাপন করা হবে।
এই মামলায় গ্রেফতার চার আসামির মধ্যে পুলিশের সাবেক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়কে আগামী ১৮ জুন এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী আকাশকে ১৯ জুন জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
২০২৪ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে, তখন ১৬ জুলাই দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন আবু সাঈদ (২৫)। তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
আবু সাঈদ কোটা সংস্কার আন্দোলনের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পুলিশের গুলিতে তার হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদেই সোচ্চার হন ছাত্র-জনতা। এতে আরও গতিশীল হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। ওই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা।
কুমিল্লার মুরাদনগরে ধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী আত্মহত্যা করেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে, তা পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছে স্বাধীন ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্টওয়াচ।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আত্মহত্যার খবরটি সঠিক নয়। কুমিল্লা জেলার একাধিক সাংবাদিক ও মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান ফ্যাক্টওয়াচকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চে ভুক্তভোগী ওই নারীর আত্মহত্যার বিষয়ে জাতীয় ও কুমিল্লার আঞ্চলিক সংবাদমাধ্যমে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টগুলোতেও দাবিটির পক্ষে কোনো সূত্র উল্লেখ করা হয়নি। অর্থাৎ, ফেসবুকে দাবিটি সূত্রহীনভাবেই প্রচার হচ্ছে।
পরে এ বিষয়ে অধিকতর যাচাইয়ে জাতীয় সংবাদমাধ্যমে কর্মরত কুমিল্লার একাধিক সাংবাদিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফ্যাক্টওয়াচ। কুমিল্লা জেলা ও স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, ভুক্তভোগী ওই নারীর আত্মহত্যার খবরটি গুজব।
এছাড়া মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমানের সঙ্গে দাবিটি সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হয়। তিনি ফ্যাক্টওয়াচকে জানান, তিনি ঘটনাস্থলেই আছেন। ভুক্তভোগী নারীর আত্মহত্যার দাবিটি গুজব।
ফ্যাক্টওয়াচ জানায়, সুনির্দিষ্ট বস্তুনিষ্ঠ তথ্যের ভিত্তিতে এটা নিশ্চিত যে, কুমিল্লার মুরাদনগরের ধর্ষণের আলোচিত ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী আত্মহত্যার দাবিটি কোনো সূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে ফেসবুকে প্রচার হচ্ছে। এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। তাই ফ্যাক্টওয়াচ দাবিটিকে মিথ্যা হিসেবে চিহ্নিত ও প্রমাণ করছে।
দেশে বিভিন্ন বিষয়ে গুজব, অপতথ্য ও ভুল তথ্যের বিভ্রান্তিকর অপপ্রচার বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিভিন্ন ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠান শনাক্ত করছে।
বাংলাদেশে গুজব, ভুয়া খবর ও অপতথ্য প্রতিরোধ এবং জনগণের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়ায় দায়িত্ব পালন করছে ফ্যাক্টওয়াচ। এটি লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় (ইউল্যাব) অনুমোদিত এবং সেন্টার ফর ক্রিটিক্যাল অ্যান্ড কোয়ালিটিভেটিভ স্টাডিজ (সিকিউএস) দ্বারা পরিচালিত।
কুড়িগ্রামের চরবেষ্টিত উপজেলা চিলমারীসহ বিভিন্ন দুর্গম স্থানে ডাকাতি ও অপরাধ প্রতিরোধে আকাশ ও নদীপথে প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি শুরু করেছে পুলিশ। দুর্গম চরাঞ্চল ও ব্রহ্মপুত্র নদের ঝুঁকিপূর্ণ রুটে পুলিশের টহল জোরদার করার পাশাপাশি আকাশে ড্রোন উড়িয়ে নজরদারি চলছে প্রতিনিয়ত।
বিশেষ করে, হাটের দিন চিলমারী-রৌমারী-রাজিবপুর নৌরুটে পুলিশের একাধিক ইউনিট—গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), নৌপুলিশ ও থানা পুলিশ সমন্বিতভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিতে মাঠে থাকছে।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অতীতে বিভিন্ন সময় চিলমারী-রৌমারী-রাজিবপুর রুটে একাধিক ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার পর থেকেই নৌপথ ও চরাঞ্চলের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নজরদারি বাড়ানো হয়। বর্তমানে শুধুমাত্র টহল নয়, আধুনিক ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে চরাঞ্চলের জঙ্গলাকীর্ণ ও নজরদারির বাইরে থাকা এলাকাগুলোতেও তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
ড্রোন ক্যামেরায় চরাঞ্চলে ঝোপঝাড় কিংবা গোপন জায়গায় অপরাধীরা অবস্থান করলেও সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহারে ডাকাতি ও মাদকপাচারের মত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে।
উপজেলার জোড়গাছ এলাকায় প্রতি সপ্তাহের রবিবার ও বুধবার বড় হাট বসে। এসব দিনে চরাঞ্চল ও আশপাশের উপজেলা থেকে ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা নৌপথে হাটে আসেন।
জেলা পুলিশ জানায়, হাটের দিনগুলোতে জোড়গাছ হাট, রমনা ঘাট, কাঁচকোল, ফকিরের হাট ও চিলমারী ইউনিয়নের চরাঞ্চলগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। এসব পয়েন্টে ড্রোন ব্যবহার ছাড়াও নৌপুলিশ ও থানা পুলিশের আলাদা টহল দল সক্রিয় থাকে।
চিলমারী ইউনিয়নের বাসিন্দা আজগর আলী মণ্ডল (৬৫) বলেন, ‘আগে মাঝেমধ্যেই ডাকাতি হতো। এখন তা প্রায় নেই বললেই চলে। আকাশে ড্রোন উড়তে দেখলে বুঝি, পুলিশ সব জায়গা নজরদারি করছে। এতে নিরাপত্তা অনেক বেড়েছে।’
জোড়গাছ এলাকার ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম জানান, ‘আগে হাটে আসার সময় ভয় লাগত, কিন্তু এখন নৌকায় পুলিশের টহল, নদীতে উপস্থিতি ও ড্রোন নজরদারি দেখে আমরা অনেকটাই নিশ্চিন্ত। পুলিশের এমন নজরদারির খবর ছড়িয়ে পড়ায় অপরাধীরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়েছে। তারা অপরাধ ঘটানোর সাহস পাচ্ছে না। এতে আমরাও নিরাপদ।’
কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘চিলমারী নদীবন্দর ও আশপাশের নৌরুটে অপরাধ দমনে ড্রোন ব্যবহারের মাধ্যমে সর্বক্ষণ মনিটর (পর্যবেক্ষণ) করা হচ্ছে। পুলিশের নিয়মিত টহল ও গোয়েন্দা নজরদারির ফলে দীর্ঘদিন ধরে নৌ-ডাকাতি নেই বললেই চলে। আমরা প্রযুক্তিনির্ভর পুলিশিংয়ের মাধ্যমে চিলমারীকে নিরাপদ রাখতে বদ্ধপরিকর।’
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) দুইদিনব্যাপী ‘ক্যারিয়ার ফেস্ট ২০২৫’ উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্র ও শনিবার ২৭ ও ২৮ জুনের এই আয়োজনে শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার সচেতনতা, দক্ষতা উন্নয়ন এবং বাস্তবমুখী অভিজ্ঞতা অর্জনের লক্ষ্য সামনে রেখে বিভিন্ন কর্মসূচি ও সেশন আয়োজন করা হয়।
২৭ জুন সকাল থেকে দিনব্যাপী নানা কার্যক্রমে উৎসবে মুখর থাকে ক্যাম্পাস। সকালে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর ইউএনডিপি’র বিশেষ সেশন এবং দেশের খ্যাতনামা ক্যারিয়ার বিশেষজ্ঞ আসিফ ইকবালের দিকনির্দেশনামূলক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
এরপর এক্সটেম্পোর বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিকভাবে নিজেদের চিন্তা ও বক্তব্য উপস্থাপনের দক্ষতা প্রদর্শনের সুযোগ পান।
দুপুরের পর শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে মক ইন্টারভিউ সেশন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বাস্তব ইন্টারভিউ পরিস্থিতির অনুশীলনের সুযোগ তৈরি হয়। এরপর শুরু হয় ব্যবসায়িক কেস প্রতিযোগিতা, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা বাস্তবভিত্তিক সমস্যা সমাধানে নিজেদের দক্ষতা তুলে ধরেন। দিনব্যাপী নানা আয়োজনে শেষ ভাগে ছিল আকর্ষণীয় ট্রেজার হান্ট এবং ক্যারিয়ার বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা। নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রাণবন্ত পরিবেশে সম্পন্ন হয় ক্যারিয়ার ফেস্টের প্রথম দিনের কার্যক্রম।
২৮ জুন ক্যারিয়ার ফেস্টের আয়োজনে দেশের বিভিন্ন খাতের অভিজ্ঞ পেশাজীবীরা অংশ নেন এবং শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ ও বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। শিক্ষার্থীরা তাদের আলোচনা থেকে কর্পোরেট দুনিয়া, উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি খাতের চাকরির সুযোগ-চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে বাস্তব ধারণা লাভ করেন।
বিভিন্ন বিষয়ে সেশন নেন ও বক্তব্য প্রদান করেন খন্দকার তানভির আহসান, সাবেক এইচআর ও অ্যাডমিন, PLAMPAY; মাহমুদ হাসান প্রিন্স, সায়েন্টিস্ট, ইস্পাহানি গ্রুপ; ফজলে রাব্বি, সহকারী প্রোগ্রামার, পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (PDBF), স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়; রাহুল দত্ত, ট্রেনিং অফিসার (WIS), ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (BAT) বাংলাদেশ; মীর মোহাম্মদ আলী, সহকারী অধ্যাপক ও সাবেক চেয়ারম্যান, ফিশারিজ ও মেরিন সায়েন্স অনুষদ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়; জাভেদ মিয়াঁদাদ, ম্যানেজার, Anticipatory Action, সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ; আদনান নাসের ধ্রুব, বিজনেস ডেভেলপমেন্ট প্রফেশনাল ও উদ্যোক্তা; মো. আসিকুর রহমান আসিক, রিজিওনাল অপারেশন হেড, বিডি অ্যাপস (BDAPPS), বরিশাল বিভাগ; মাহবুবুর নাহিদ, সাহিত্যিক, কলামিস্ট, ১৭টি গ্রন্থের লেখক, নেক্সট বিডি’র নির্বাহী সম্পাদক এবং স্পোর্টস ২৪৭ মিডিয়া হাউসের সম্পাদক; এবং রুহান জুনাইদুল ইসলাম, প্রতিনিধি, ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড।
দুইদিনব্যাপী ক্যারিয়ার ফেস্টে অংশগ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা বাস্তব অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হন এবং নিজেদের ক্যারিয়ার পরিকল্পনা নিয়ে আরও সচেতন ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে এ ধরনের ক্যারিয়ার উন্নয়নমূলক অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে আরও বেশি শিক্ষার্থী ও পেশাজীবী এতে সম্পৃক্ত হতে পারেন।
উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি একই এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
সোমবার (৩০ জুন) আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুকের সই করা আবহাওয়ার সামুদ্রিক সতর্কবার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বার্তায় বলা হয়েছে, লঘুচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। এর ফলে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্র বন্দরগুলোর ওপর দিয়ে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
নদীবন্দরে ১ নম্বর সংকেত
এদিকে, আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব কিংবা পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়োহাওয়াসহ অস্থায়ীভাবে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এসব এলাকার নৌবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
হাসিনা সরকারের দমনপীড়নের কারণেই শান্তিসূচকে বাংলাদেশের ব্যাপক অবনতি ঘটেছে বলে বিশ্ব শান্তিসূচক সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)-এর ফ্যাক্টচেক ও মিডিয়া রিসার্চ টিম বাংলাফ্যাক্ট।
বাংলাফ্যাক্ট জানায়, বিশ্ব শান্তিসূচক সংক্রান্ত মূল রিপোর্টের দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় এক্সিকিউটিভ সামারি অংশে লেখা রয়েছে, হাসিনা সরকারের দমনপীড়নের কারণেই শান্তিসূচকে বাংলাদেশের ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। বিশ্ব শান্তিসূচকে বাংলাদেশ ৩৩ ধাপ পিছিয়েছে, যার অন্যতম কারণ জুলাই-আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের চালানো হত্যাযজ্ঞ।
রিসার্চ টিম জানায়, অনেকে এই অবনতিকে বর্তমান সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলে ধরছেন এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের শিরোনাম ও ফটোকার্ড দেখে অনেক পাঠক বিভ্রান্ত হচ্ছেন। প্রকৃতপক্ষে বিশ্ব শান্তিসূচক রিপোর্টটি এ বছর প্রকাশিত হলেও এই সূচক তৈরি হয়েছে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কাল বিবেচনা করে।
মূল রিপোর্টের দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় এক্সিকিউটিভ সামারি অংশে বাংলাদেশের সূচকের এই অবনতির কারণ হিসেবে লেখা রয়েছে, হাসিনা সরকারের দমনপীড়নের কারণেই শান্তিসূচকে বাংলাদেশের ব্যাপক অবনতি ঘটেছে।
বাংলাদেশে চলমান গুজব, ভুয়া খবর ও অপতথ্য প্রতিরোধ এবং জনগণের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়ায় দায়িত্ব পালন করছে বাংলাফ্যাক্ট।
ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কখনোই বন্ধ হবে না বলে দাবি করেছেন জতিসংঘে দেশটির রাষ্ট্রদূত আমির-সাঈদ ইরাভানি। তিনি বলেন, পরমাণু অস্ত্রবিস্তাররোধ চুক্তির অধীনে শান্তিপূর্ণ জ্বালানির উদ্দেশ্যে তাদের এই প্রকল্প অনুমোদিত।
রবিবার (২৯ জুন) সিবিএস নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সমৃদ্ধকরণ আমাদের অধিকার, এটি একটি অখণ্ড অধিকার এবং আমরা এই অধিকার বাস্তবায়ন করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, ইরান আলোচনার জন্য প্রস্তুত, কিন্তু নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ আলোচনার নাম নয়, এটি আমাদের প্রতি একটি নীতি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা।
তবে ইরাভানি বলেন, “তেহরান আলোচনার জন্য প্রস্তুত, কিন্তু এই আগ্রাসনের পর নতুন করে আলোচনা শুরুর মতো কোনো উপযুক্ত পরিবেশ নেই এবং প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক বা আলোচনার জন্য কোনো অনুরোধও নেই।”
জাতিসংঘে ইরানের এই দূত আরও দাবি করেন, আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি কিংবা সংস্থার পরিদর্শকদের প্রতি তাদের সরকারের পক্ষ থেকে কোনো হুমকি নেই।
যদিও কিছু ইরানি কর্মকর্তা এই পরিদর্শকদের অভিযুক্ত করেছেন ইসরায়েলের হামলাকে যৌক্তিকতা দিতে তারা সাহায্য করছে বলে। বর্তমানে আইএইএ পরিদর্শকরা ইরানে অবস্থান করছেন, তবে তারা দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে প্রবেশের অনুমতি পাচ্ছেন না।
মন্তব্য