কে আছে মজেনি এখনও, হৃদয়কাড়া সেই সুর আর সহজ কথার যাদুতে!
এখন তো সবার মুখে-মুখে, আর মোবাইল ফোনে ঘুরে বেড়াচ্ছে গানটি- ‘আইলারে নয়া দামান আসমানেরও তেরা/ বিছানা বিছাইয়া দেও শাইল ধানের নেড়া/ দামান বও দামান…’।
সিলেট অঞ্চলের এই গান একদল চিকিৎসকের মাধ্যমে ঝড় তুলছে সারা দেশে। ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে। দেশের ভেতরে তো বটেই, দেশের বাইরে থাকা বাঙালিদের হৃদয়ও কেড়েছে গানটি। আর ফেসবুক-ইউটিউব-টিকটকে তরুণদের মধ্যে এই গান গাওয়ার রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। রিমিক্স-ফিউশনের মাধ্যমে নেচে গেয়ে তারা পরিবেশন করেছেন- নতুন বরকে বরণের এই গান।
হালের ট্রেন্ড হয়ে ওঠা এই গানটি কবেকার? গানটি কে লিখেছিলেন? সুরই বা কার? কে গেয়েছিলেন প্রথম? একেবারেই মানুষের মুখে মুখে, বিশেষত গ্রামীণ নারীদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই গানের বিষয়ে এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া সহজ নয়। তবুও নিউজবাংলা খোঁজার চেষ্টা করেছে গানটির উৎস।
গানের কথাই বলে দিচ্ছে, এটি মূলত সিলেট অঞ্চলের বিয়ের গান। আঞ্চলিক ভাষায় রচিত গানটি অর্ধশতাধিক বছর ধরে গীত হয়ে আসছে সিলেটের বিভিন্ন বিয়ের আসরে। হাস্যকৌতুক মিশ্রিত সহজ কথা আর বাংলার লোকসুরের এই গানের মাধ্যমে নতুন বরকে বরণ করা হয়।
এ গানে বরকে আকাশের তারার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। আর তাকে বসার জন্য ধানের খড় বিছিয়ে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। পরের অন্তরাতেই নতুন বরকে পান খাওয়ার অনুরোধ করে কৌতুকচ্ছলে বলা হচ্ছে, যাওয়ার কথা বললে কান কেটে রাখা হবে।
সিলেটের ছেলে একুশ তাপাদার ঢাকার একটি পত্রিকার রিপোর্টার। তিনি বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই মায়ের মুখে এই গীত শুনে আসছি। বিয়ের আসরে কয়েকজন নারী মিলে এটি গাইতেন। হিন্দু-মুসলমান সবাই মিলেই গাইতেন।’
সিলেটের নানা বয়সের আরও অন্তত ১০ জনের সঙ্গে কথা হয় এই গান নিয়ে। সবাই জানালেন, বিয়ের আসরেই শুনেছেন এই গান। তবে এর গীতিকার বা সুরকার কে, তা কেউই বলতে পারেননি।
সিলেট অঞ্চলের বিয়ের অনুষ্ঠানে নৃত্য-গীত একটি আবশ্যিক অনুষঙ্গ। হিন্দু, মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের বিয়েতেই স্বজন ও প্রতিবেশী নারীরা সম্মিলিতভাবে গান গেয়ে পরিবেশ আরও উৎসবমুখর করে তোলেন।
হালের কমিউনিটি সেন্টারনির্ভর বিয়ের আধিক্য আর বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাবে কিছুটা কমেছে যদিও, তবু গ্রামাঞ্চলে মুসলিম বিয়েতে নারীদের গানের আসর বসানোর দৃশ্য এখনও দুর্লভ নয়। আর বছর বিশেক আগে তো এটি প্রায় আবশ্যিকই ছিল।
এখন অবশ্য ভিন্ন ফর্মে আবার ফিরেছে তা। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে, বিয়ের ভিডিওচিত্র নির্মাণে ফিরে এসেছে নৃত্য-গীতের আয়োজন।
সাম্প্রতিক সময়ে ‘নয়া দামান’ গানের এমন ভাইরাল হওয়ার পেছনেও ভূমিকা রেখেছে এরকম একটি ভিডিওচিত্র। ছায়াছবি নামের একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের ইউটিউব পেজে দেয়া এই ভিডিওচিত্রে খুলনার এক কনের বন্ধু-স্বজন নারীদের এই গানে নাচতে-গাইতে দেখা যায়। এটা এরইমধ্যে কোটি দর্শক দেখে ফেলেছেন।
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. জফির সেতু সিলেট অঞ্চলের বিয়ের গান সংগ্রহ করে নিজ সম্পাদনায় বছর তিনেক আগে বের করেছিলেন ‘সিলেটের বিয়ের গীত’ নামে একটি বই।
বইটির ১৪৯তম পৃষ্ঠায় ‘বর-বরণ’ শিরোনামে ১৫ লাইনের পুরো ‘নয়া দামান’ গানটি তুলে ধরা হয়েছে। তবে এখানেও গানের গীতিকার-সুরকারের নাম নেই।
অধ্যাপক সেতু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই গানটি সিলেট অঞ্চলের মুসলিম সম্প্রদায়ের বিয়ের গান। অনেক তথ্য তালাশ করেও এই গানের গীতিকার কে তা জানতে পারিনি। তবে সময়ের পরিক্রমায় গানের কথায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। আবার সিলেটেরই বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে গানের কথা কিছু বদলে গেছে।’
তবে শুক্রবার সকালে সুষমা দাশ নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, এই গানটি কার লেখা তা তিনি জানেন না। মায়ের লেখা বলে তিনি কখনও শোনেননি।
নয়া দামানের গীতিকার হিসেবে অনেক জায়গায় হাছন রাজার নামও ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে লোকসংস্কৃতি গবেষক সুমনকুমার দাশ নিশ্চিত করেছেন, এটি হাছন রাজার নয়, এতটা পুরোনোও নয়।
তিনি বলেন, ‘গানের স্থায়ীটা (উৎসমুখ) একই রকম রেখে বাকি অন্তরাগুলোর বিভিন্ন সময় পরিবর্তন, পরিমার্জন ও পরিবর্ধন হয়েছে। একেকজন একেকভাবে গেয়েছেন।
‘এই গানটি খুব বেশি পুরানো নয়। ৫০-৬০ বছর আগের হবে। গানের ভণিতায় গীতিকারের নাম না থাকায় বিভ্রান্তি বেড়েছে। ফলে এটি এতকাল ধরে লোকগান হিসেবেই বিবেচিত হয়ে আসছে। লোকের মুখে মুখেই যা ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও ২০১৩ সালে আমাকে প্রদত্ত এক সাক্ষাৎকারে সংগীতজ্ঞ রামকানাই দাশ গানটি তার মায়ের রচনা বলে জানিয়েছিলেন। অবশ্য সে গানের পঙক্তিতে “দামান” শব্দের বদলে “জামাই” শব্দ রয়েছে।’
সিলেট বেতারের জন্য ১৯৭৩ সালের দিকে এয়ারুন্নেছা খানম নামের এক শিল্পীর কণ্ঠে গানটি প্রথম রেকর্ড হয় বলে জানান সুমন।
১৯৭৩-৭৪ সালের দিকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রথম এই গানটি সমবেত কণ্ঠে পরিবেশন করেন সিলেটের কয়েকজন শিল্পী। সেই দলে ছিলেন সিলেটের প্রবীণ সঙ্গীত শিল্পী হিমাংশু বিশ্বাস।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘১৯৭৩ কি ৭৪ সালে নওয়াজেশ আলী খানের পরিচালনায় ‘বর্ণালী’ অনুষ্ঠানে আমরা বিটিভিতে এই গানটি পরিবেশন করি। এর আগে সিলেট অঞ্চলের বাইরে এই গানটি পরিবেশন করা হয়েছে কি না তা আমার জানা নেই।’
গানের রচনাকাল সম্পর্কে হিমাংশু বলেন, ‘স্বাধীনতার পরে সিলেট নগরের মিরের ময়দানে বাংলাদেশ বেতারের সিলেট কেন্দ্র স্থাপন হয়। এর পরই বেতারে গানটি প্রথমবারের মতো রেকর্ড করা হয়। এর আগে এর কোনো রেকর্ড ছিল না। তখন সিলেট বেতার কেন্দ্রে এই অঞ্চলের অনেক বিয়ের গান প্রচারিত হতো।
‘বেতারের জন্য এই গানটির সুর করেছিলেন সিলেট বেতারের সঙ্গীত প্রযোজক আলী আকবর খান। এখন তার সুরেই গানটি গাওয়া হয়।’
তবে গানটির গীতিকারের নাম জানা যায়নি বলে জানান তিনিও।
হিমাংশুর কথার সত্যতা মিলল বাংলাদেশ বেতারের সিলেট কেন্দ্রে খোঁজ নিয়েও। বেতারে ৩৫ বছর আগে কয়েকজন নারী শিল্পীর সমবেত কণ্ঠে গাওয়া এই গানের একটি রেকর্ড রয়েছে।
বাংলাদেশ বেতারের সিলেট কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক প্রদীপ চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমাদের আর্কাইভে থাকা সবচেয়ে পুরোনো রেকর্ডে এই গানের সুরকার হিসেবে আলী আকবর খানের নাম রয়েছে। আর গীতিকারের জায়গায় লেখা রয়েছে অজ্ঞাত।’
আলী আকবর খান প্রয়াত হয়েছেন। তার ছেলে মতি খান বর্তমানে বাংলাদেশ বেতারে কর্মরত। তিনিও এই গানের গীতিকার কে তা জানাতে পারেননি।
আমেরিকা প্রবাসী মিউজিশিয়ান মুজার উদ্যোগে সিলেটের সংগীত শিল্পী তোশিবা বেগমের গাওয়া ‘নয়া দামান’-এর নতুন ভার্সনটি সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাতে বাঁশি বাজিয়েছেন মিম হক। অনেকেই তাদের গানের সঙ্গে নেচে ভিডিওচিত্র ধারণ করে ইউটিউবে ছাড়ছেন। সেগুলোও দর্শকদের আকৃষ্ট করছে। এই ভার্সনটিই গায়ে হলুদের ভিডিওতে ব্যবহার করেছে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান ‘ছায়াছবি’।
সম্প্রতি গানটির সবশেষ ভার্সনের সংগীত শিল্পী তোশিবা তার পোস্ট করা এক টিকটক ভিডিওতে অনুযোগ করে বলেন, গানটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার নাম সামনে আসলেও তার নাম রয়ে যায় আড়ালে। আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন, এই গান সিলেট থেকে ভাইরাল হয়েছে, তার গায়কীতে গানটি এখন নতুন করে জনপ্রিয় হয়েছে। কিন্তু আলোচনায় তার নাম কোথাও নেই। বরং আলোচিত হচ্ছে ছায়াছবির ভিডিও ও মুজা।
তবে এই গানটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি হইচই ফেলেছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের তিন চিকিৎসক। করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের উৎসাহ দিতে ঢাকা মেডিক্যালের করিডোরে এই গানের সঙ্গে তারা নেচেছেন। সেই ভিডিওচিত্র ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে, ব্যাপক প্রশংসিতও হয়েছে।
এ নিয়ে কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান বৃহস্পতিবার ফেসবুকে লেখেন, ‘নয়া দামান। একটি লোকগান কী পরিমাণ নাড়া দিল মানুষকে! হাসপাতালের ডাক্তারদের নৃত্যসহযোগে গাওয়া গানটা যতবার দেখি মুগ্ধ হই। এটাই ফোকলোরের শক্তি। গ্রামগঞ্জের ওই হেঁদিপেদি জনগণের সংস্কৃতিই বাঙালির মূল সংস্কৃতি। গ্রামের আউল-বাউল-বয়াতি গায়েন-ফকিররাই শেষ পর্যন্ত বাঙাল মানুষের চিত্ত দখল করে নেয়।’
পুরো গানটির কথা
আইলারে নয়া দামান আসমানের তেরা
বিছানা বিছাইয়া দেও শাইল ধানের নেরা।।
দামান বও, দামান বও।
বও দামান কওরে কথা খাওরে বাটার পান।
যাইবার লাগি চাওরে যদি কাটিয়া রাখমু কান।।
দামান বও, দামান বও।
আইলারে দামান্দের ভাই হিজলের মোরা।
ঠুনকি দিলে মাটি পড়ে ষাইট-সত্তইর উড়া।।
দামান বও, দামান বও।
আইলারে দামান্দের বইন কইবা একখান কথা।
কইন্যার ভাইর চেরা দেইখ্যা অইগেলা বোবা।।
দামান বও, দামান বও।
আইলারে দামান্দের বইন মোটা ভাইবৌ মোটা বটর গাইল।
উঠতে বইতে সময় লাগে করইন আইল তাইল।।
দামান বও দামান বও।
(এই গানের নানা ভার্সন রয়েছে। বিভিন্ন সময় কথার পরিবর্তন-পরিবর্ধন হয়েছে। এই কথাগুলো জফির সেতু সম্পাদিত ‘সিলেটের বিয়ের গীত’বই থেকে সংগৃহিত।)
আরও পড়ুন:ঝালকাঠি পৌর এলাকার পুরাতন কলেজ ও পৌরসভা খেয়াঘাটের উন্মুক্ত ইজারায় উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ জারি হয়েছে।
রিটকারী আইনজীবী তরিকুল ইসলাম শুক্রবার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
উন্মুক্ত ইজারা স্থগিত করায় মাঝিমাল্লা সম্প্রদায়ের ইজারা পেতে আর কোনো বাধা থাকল না।
মাঝিমাল্লা বহুমুখী সমবায় সমিতি সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর শতকরা ১০ ভাগ মূল্য বৃদ্ধিতে এ সমিতি ইজারা নিয়ে ঘাট পরিচালনা করে আসছে। এ বছর উন্মুক্ত ইজারা আহ্বান করায় উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করে মাঝিমাল্লা বহুমুখী সমবায় সমিতি। পিটিশনের প্রেক্ষিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছে।
উচ্চ আদালতের আদেশের অ্যাডভোকেট প্রত্যয়ন কপিসহ ইজারাদার কর্তৃপক্ষ ঝালকাঠি পৌর মেয়র বরাবরে আবেদন করেন মাঝিমাল্লা সমিতির নেতারা। পরে নির্বাহী প্রকৌশলীকে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদার।
রিটকারী আইনজীবী তরিকুল ইসলাম জানান, ঝালকাঠির খেয়াঘাট সমূহের জন্য ঝালকাঠি পৌরসভা একটি উন্মুক্ত ইজারা আহ্বান করেছে। নীতিমালা অনুযায়ী মাঝিমাল্লা (পাটনি) সম্প্রদায়ের পাওয়ার কথা। উন্মুক্ত ইজারাকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করা হয়। পিটিশনের শুনানি শেষে আদালত উন্মুক্ত ইজারা স্থগিত করেছে।
তিনি আরও জানান, এখন থেকে প্রথমে মাঝিমাল্লা সমিতি ইজারা নেবে। যদি কোনো কারণে সমিতির পক্ষ থেকে ইজারা নিতে অস্বীকার বা অপারগতা প্রকাশ করে তাহলে উন্মুক্ত ইজারা আহ্বান করতে পারবে। উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের মাধ্যমে মাঝিমাল্লা সম্প্রদায় তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পেয়েছে।
পৌর সচিব শাহিন সুলতানা বলেন, ‘আমরা শুধু আবেদিত দরপত্রসমূহ উন্মুক্ত করে প্রকাশ করছি। বাছাই করে গুছিয়ে রাখছি। আমরা এর বেশি কিছুই করতে পারব না।’
নির্বাহী প্রকৌশলী অলোক সমদ্দার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঝালকাঠির পুরাতন কলেজ ও পৌর খেয়াঘাটের ইজারা বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা আছে। এ মুহূর্তে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না। দরপত্র আহ্বানের পরে টেক কমিটি আছে তারাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী অলোক সমদ্দার, পৌর সচিব শাহিন সুলতানাসহ পৌর কর্মচারী ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ দুপুরে এসব ঘাট ইজারার দরপত্র বাক্স উন্মুক্ত করা হয়।
আরও পড়ুন:নাটোরের নলডাঙ্গায় এক স্কুলছাত্রকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
উপজেলার পিপরুল ইউনিয়ন পরিষদের পরিত্যক্ত ভবনে বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো হিমেল হোসেন (১৫) উপজেলার পিপরুল গ্রামের ফারুক সরদারের ছেলে। সে পাটুল-হাপানিয়া স্কুল ও কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল।
নলডাঙ্গা থানার ওসি মো. মনোয়ারুজ্জামান জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে হিমেলকে তার সহপাঠী ফোন করে বাড়ি থেকে ডেকে নেয়। এরপর থেকে হিমেলের মোবাইল ফোনটি বন্ধ পান তার স্বজনরা। পরে রাত হলেও বাড়িতে না ফিরলে পরিবারের লোকজন তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন এবং বিষয়টি পুলিশকে জানান।
ওসি বলেন, পুলিশ হিমেলকে উদ্ধারে অভিযানে নামে। অভিযানে হিমেলের বন্ধু পার্থকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। পার্থের দেয়া তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে পিপরুল ইউনিয়ন পরিষদের পরিত্যক্ত ভবনে রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় হিমেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। হিমেলের মাথায় আঘাত, গলা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় মেহেদি, শিমুল ও সুজন নামে আরও তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এ বিষয়ে একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার পুটখালী সীমান্তে পায়ুপথে স্বর্ণের বার পাচারের ঘটনায় একজনকে আটক করেছে খুলনা-২১ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা।
মসজিদবাড়ী এলাকার বিজিবি চেকপোস্টের সামনে থেকে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাকে আটক করা হয়।
আটক হওয়া মনোর উদ্দিনের বাড়ি বেনাপোল পোর্ট থানার পুটখালী গ্রামে।
খুলনা-২১ বিজিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘খুলনা-২১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পুটখালী ক্যাম্পের কমান্ডার সুবেদার মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে সীমান্তের মেইন পিলার ১৭ এর ৭ এস এর ১৬৮ আর পিলার হতে ৫০০ গজ বাংলাদেশের ভেতরে মসজিদবাড়ী বিজিবি চেকপোস্ট এলাকায় গোপন অবস্থান করে।
‘স্বর্ণ পাচারকারী মনোর উদ্দিন একটি ইজিবাইকে করে স্বর্ণের চালানটি ভারতে পাচারের উদ্দেশে সীমান্তের দিকে যাচ্ছিল। তখন মনোর উদ্দিনকে সন্দেহজনকভাবে আটক করা হয়।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘প্রথমে তার শরীর তল্লাশি করে কোনো স্বর্ণ পাওয়া যায়নি। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে স্বীকার করে তার পায়ুপথে স্বর্ণের বারগুলো আছে।
‘এ সময় তাকে আটক করে বেনাপোল বাজারে রজনী ক্লিনিকে শরীর স্ক্যানিং করে পায়ুপথে ছয় পিস স্বর্ণের বারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তারপর তার কাছ থেকে স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়, যার ওজন ৭০০ গ্রাম।’
খুলনা-২১ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খুরশিদ আনোয়ার স্বর্ণসহ এক পাচারকারী আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, উদ্ধারকৃত স্বর্ণের চালানটি যশোর ট্রেজারিতে আছে। আটক ব্যক্তিকে বেনাপোল পোর্ট থানায় পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:আগামী জুনের মধ্যে ১০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন করবে সরকার। সে জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রুমানা আলী।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে শুক্রবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে এ কথা জানান তিনি।
প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী বলেন, শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কেউ যেন প্রতারিত না হয় কিংবা কেউ যেন প্রতারণা না করতে পারে সে জন্য সরকার সব ব্যবস্থা নেবে। আগামী জুনের মধ্যেই ১০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন করা হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ কেন্দ্রে পরিদর্শন করেছি। সেখানে খুব ভালোভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে, তবে এ বছর নিয়োগ পরীক্ষায় প্রার্থীর সংখ্যা কিছুটা কম।’
এ সময় প্রতিমন্ত্রী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় ও শেষ ধাপের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় আজ। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে বেলা ১১টা পর্যন্ত চলে লিখিত পরীক্ষা।
এ ধাপে কুমিল্লা জেলায় ৩২ হাজার ১৯৯ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে নারী ১৪ হাজার ৭৬৭ জন এবং পুরুষ ১৭ হাজার ৪৩২ জন।
আরও পড়ুন:কুমিল্লার বরুড়ায় ভাইকে হত্যার দায়ে ছোট ভাই, বোন ও ভগ্নিপতিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
উপজেলার শালুকিয়া গ্রাম থেকে বৃহস্পতিবার তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে বুধবার সকালে নিজ বসতঘর থেকে শরিফ হোসেন (৩৫) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন শরিফের ছোট ভাই আরিফ হোসেন, বড় বোন খুকি আক্তার ও ভগ্নিপতি নাছির উদ্দিন।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানান, মরদেহ উদ্ধারের পর বুধবার নিহত শরীফের মা বরুড়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা নাজমুল বলেন, ‘শরীফ মাদকাসক্ত ছিল। কিছুদিন আগে শরীফ মাদকের টাকা যোগাড়ের জন্য ভাই আরিফের অটোরিকশা বিক্রি করে দেয়। মাদকের টাকার জন্য মাকেও মারধর করত সে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে শরিফের ছোট ভাই আরিফ ও তার বোন খুকি মিলে পরিকল্পনা করে শরীফকে পঙ্গু করে ঘরে রেখে দেবে। বাকি জীবন তাকে ঘরে বসিয়ে খাওয়াবে। পরিকল্পনা মোতাবেক ২৬ মার্চ রাত ১ টার দিকে পুকুরপাড়ে শরীফকে হাত পা বেঁধে পেটানো হয়। বাড়িতে এনে আরেক দফা পেটানো শেষে হাত পা বেঁধে ঘরের ভেতর ফেলে রাখা হয়। এ অবস্থায় শরীফ মারা যায়।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল জানান, তথ্য প্রযুক্তিসহ নিজস্ব গোয়েন্দা ব্যবহার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাদের আদালতে প্রেরণ করলে সেখানে তারা ১৬৪ ধারায় খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়।
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজার শহরে বুধবার ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ভেতরে গ্রাহককে অজ্ঞান করে ৮১ হাজার টাকা লুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তানভীর হাবিব চৌধুরী রুমেল নামের ওই গ্রাহক মৌলভীবাজার মডেল থানায় অভিযোগটি করেন।
ব্যাংকের ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, বুধবার বেলা ১১টা সাত মিনিটে ঘটনাটি ঘটে।
অভিযোগের বিষয়ে মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি কে এম নজরুল বলেন, ‘মৌলভীবাজারের শহরের সেন্ট্রাল রোডে অবস্থিত ডাচ-বাংলা ব্যাংক পিএলসিতে বুধবার সকালে ১১টার দিকে প্রবাস থেকে আসা টাকা তুলতে যান ব্যবসায়ী তানভীর। দুই লাখ টাকা তুলে তানভীর এক হাজার টাকার নোট দেয়ার জন্য ব্যাংক কর্মকর্তাকে বলেন। এ সময় ব্যাংক কর্মকর্তা এক হাজার টাকার বান্ডিল দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে তাকে ৫০০ টাকা নোটের বান্ডেল প্রদান করেন।
‘তখন কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একজন রুমেলকে বলেন, তিনি এক হাজার টাকার বান্ডেল এক্সচেঞ্জ করবেন। তখন রুমেলের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তিনি গুনতে থাকেন। টাকা হাতে নেয়ার পর রুমেল কিছু সময়ের জন্য অজ্ঞান অনুভব করেন। তখন ওই চক্র ৮১ হাজার টাকা নিয়ে চলে যায়।’
অভিযোগকারী রুমেল বলেন, ‘ওই ব্যক্তির হাতে থাকা টাকার বান্ডেল আমাকে গুনতে দিয়ে আমাকে একটি চেয়ারে নিয়ে বসান। আমি টাকা হাতে নেয়ার পর নিস্তেজ অনুভব করি। সবকিছু আমার কাছে কিছু সময়ের মধ্যে এলোমেলো মনে হয়। প্রায় পাঁচ মিনিট পরে একটু স্বাভাবিক হলে গুনে দেখি, তারা আমার কাছ থেকে ৮১ হাজার টাকা নিয়ে চলে যায়।
‘পরবর্তী সময়ে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, তারা ১১টা সাত মিনিটে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে যায়। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে ওই চক্রের ছবি শনাক্ত করা হয়।’
ডাচ-বাংলা ব্যাংক পিএলসির মৌলভীবাজার শাখা ব্যবস্থাপক আবদুল কাদের বলেন, ‘সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখলাম, ব্যাংকের একজন গ্ৰাহকের সঙ্গে কয়েকজন লোক গল্পগুজব করে উনার সঙ্গে বিদায় নিয়ে চলে গেছে। এরপর তিনি বুঝতে পারেন, উনার টাকা নিয়ে চলে গেছে। তিনি পুলিশে অভিযোগ করেন।’
মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি কে এম নজরুল বলেন, ‘একজন ব্যাংক গ্ৰাহক অভিযোগ করেন। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।’
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় নদীতে গোসল করতে নেমে বজ্রপাতে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।
উপজেলার চর বাউশিয়া বড়কান্দি গ্রাম সংলগ্ন গোমতী নদীতে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। প্রাণ হারানো শাহেদ (১৪) ওই গ্রামের মোশারফ মিয়ার ছেলে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিকেলে গোমতী নদীতে বন্ধুদের সঙ্গে গোসল করতে যায় শাহেদ। ওই সময় হঠাৎ করে বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হলে বজ্রপাতে মারা যায় সে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠালে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানা যায়, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তাদের হাসপাতালে শাহেদকে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গজারিয়া থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) আজাদ রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমরা অবগত রয়েছি, নিহতের লাশ গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে।’
নিহতের পরিবারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য